Friday, June 20, 2025

নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে কুরবানি করা কি জায়েজ

 প্রশ্ন: প্রবাসিরা কোথায় কুরবানি করবেন? নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে কুরবানি করা কি জায়েজ?

▬▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর প্রবাসীরা কোথায় কুরবানি করবেন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্লেষণযোগ্য বিষয়। কারণ প্রবাসজীবনে বসবাসরতরা সাধারণত দুই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। প্রথমত অনেকেই প্রবাসে তাঁদের পরিবার তথা স্ত্রী, সন্তানসহ নিয়ে বসবাস করেন। দ্বিতীয়ত কেউ কেউ একাকী প্রবাসে অবস্থান করেন, অথচ তাঁদের পরিবার যেমন স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা ইত্যাদি মাতৃভূমিতেই অবস্থান করেন।
.
▪️(১).যে সকল প্রবাসীরা পরিবারসহ প্রবাসে বসবাস করেন:
.
মূলনীতি হলো কুরবানির সর্বোত্তম সুন্নাহ হলো তা সেই স্থানে সম্পন্ন করা, যেখানে ব্যক্তি নিজে ও তাঁর পরিবারসহ বসবাস করেন; যদি না সেখানে কোনো বড় ধরনের বাধা বা অসুবিধা থাকে। এতে একদিকে যেমন ইবাদতের আত্মিকতা অক্ষুণ্ণ থাকে, তেমনি সমাজিক ও মানবিক কল্যাণের এক অনন্য দিক উন্মোচিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ নিজ হাতে পশু জবাই করার মাধ্যমে কুরবানির মূল উদ্দেশ্য যেমন আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য, তাক্বওয়ার উৎকর্ষ সাধন, আত্মত্যাগের বাস্তব উপলব্ধি এবং নিয়তের দৃঢ়তা এসবের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। সেইসাথে নিজে মাংস ভোগ করা এবং গরিব-দুঃস্থদের মাঝে তা বণ্টন করার মাধ্যমে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চাও বাস্তবায়িত হয়।”এছাড়াও জবাইয়ের সময় দোয়া পড়া, ধৈর্য ধারণ করা, রক্তপাত প্রত্যক্ষ করা এবং এ সমস্ত কিছুর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা এসব মিলিয়ে কুরবানি এক পরিপূর্ণ ইবাদতে পরিণত হয়। কুরবানির মূল উদ্দেশ্য কেবল পশু জবাই নয়, বরং এর প্রকৃত লক্ষ্য হলো আল্লাহভীতির অনুশীলন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন: “আল্লাহর কাছে পশুর গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না; বরং তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।”(সূরা হজ্জ: ৩৭) তাছাড়া প্রিয় নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জীবনেও আমরা এই আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন দেখি। তিনি মদীনায় অবস্থানকালে নিজ বাড়িতেই ঈদের কুরবানি (উযহিয়া) ও আকীকা আদায় করতেন। কখনোই তিনি এসব কুরবানি মক্কায় প্রেরণ করেননি, যদিও মক্কা ছিল অধিক ফজিলতের স্থান এবং সেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ইবাদতের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ বা যুক্তির অনুসরণ করেননি, বরং আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ম ও নবুওয়তের সুন্নাহকেই কঠোরভাবে অনুসরণ করেছেন। যেমন তিনি হজের কুরবানির পশু (হাদী) মদীনায় জবাই করেননি, তেমনি উযহিয়া ও আকীকার পশুও মক্কায় প্রেরণ করেননি।এ থেকেই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে স্থান ও সময়ের পবিত্রতা নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশনা ও নবীর পথ অনুসরণই মুখ্য। তাই কুরবানির ইবাদত যথাসম্ভব নিজ অবস্থানস্থলেই আদায় করাই সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ ও সুন্নাহসম্মত।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে কুরবানী করা জায়েয হবে? নাকি আপনি এর বদলে নগদ অর্থ নিজের দেশে বা অন্য কোন মুসলিম দেশে পাঠাবেন? জবাবে তিনি বলেন: الأفضل أن تضحي في بلدك إذا كان أهلك عندك، وإذا كان أهلك في مكان آخر وليس عندهم من يضحي لهم، فأرسل دراهم لهم يضحوا هناك.”আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে যদি আপনার সাথে আপনার পরিবার থাকে তাহলে সেখানে কুরবানী করা উত্তম। আর যদি আপনার পরিবার অন্যত্র থাকে এবং তাদের সেখানে কুরবানী করার মত কেউ না থাকে তাহলে আপনি তাদের জন্য দিরহাম পাঠিয়ে দিন। যাতে করে তারা সেখানে কুরবানী করতে পারে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ২০৭)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:لقد كان النبي صلى الله عليه وسلم يذبح الأضحية والعقيقة في بيته بالمدينة ولا يبعث بهما إلى مكة ، مع أنها أفضل من المدينة ، وفيها فقراء قد يكونون أكثر حاجة من فقراء المدينة ، ومع هذا تَقَيَّد بالمكان الذي شرع الله أداء العبادة فيه ، فلم يذبح الهدي بالمدينة ، ولم يبعث بالأضحية والعقيقة إلى مكة ، بل ذبح كل نوع في مكانه المشروع ذبحه فيه ، ( وخير الهدي هدي محمد صلى الله عليه وسلم ، وشر الأمور محدثاتها ، وكل بدعة ضلالة ) “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় অবস্থানকালে তাঁর নিজ বাড়িতেই কুরবানি (উযহিয়া) ও আকীকার পশু জবাই করতেন। তিনি এগুলো মক্কায় পাঠাতেন না,যদিও মক্কা ছিল মদীনার তুলনায় অধিক মর্যাদাপূর্ণ স্থান এবং সেখানে এমন দরিদ্র লোক থাকতে পারত যারা মদীনার দরিদ্রদের চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্ত।তবুও তিনি ইবাদত সেই স্থানেই সম্পাদন করতেন, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তা নির্ধারণ করেছেন। তিনি কখনোই মদীনায় হাদী (হজের কুরবানির পশু) জবেহ করেননি এবং উযহিয়া বা আকীকার পশু মক্কায় পাঠাননি। বরং তিনি প্রতিটি ইবাদত সেই নির্দিষ্ট স্থানে আদায় করতেন, যেখানে তা শরীয়ত অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পথনির্দেশ হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথনির্দেশ। আর প্রতিটি নতুন সংযোজন (বিদআত) হলো বিভ্রান্তি, এবং প্রতিটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা।”(আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান; খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৫০)
.
▪️(২) যে সকল প্রবাসীরা একাকী প্রবাসে অবস্থান করেন, অথচ তাঁর পরিবার স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা প্রভৃতি স্বজনেরা মাতৃভূমিতেই অবস্থান করেন।
.
যেসব ব্যক্তি জীবিকার প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থান করছেন, অথচ তাঁদের পরিবার যেমন পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন নিজ দেশে অবস্থান করছেন, কুরবানির ক্ষেত্রে তাঁদের করণীয় হলো: যদি তারা আর্থিকভাবে সক্ষম হন, তাহলে উত্তম হবে যে তাঁরা দুই স্থানে কুরবানি দেন; একটি পশু প্রবাসে এবং অপরটি নিজ মাতৃভূমিতে পরিবারের পক্ষ থেকে।অথবা ইচ্ছা করলে তাঁরা অন্যদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে উভয় স্থানে কুরবানি আদায় করতে পারেন। তবে যদি একসঙ্গে দুই স্থানে কুরবানি দেওয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে যেখানে কুরবানি করা অধিক উপকারি ও কল্যাণকর হবে, সেই স্থানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এই প্রেক্ষাপটে যেহেতু তাঁদের পরিবার নিজ দেশে অবস্থান করছেন, তাই দেশেই কুরবানি দেওয়াকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেয় বিবেচনা করা উচিত।তাছাড়া ফিকাহবিদ আলেমগণ এই মর্মে একমত যে, কুরবানীর পশু জবাই করার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব সঠিক; যদি সে প্রতিনিধি মুসলিম হন। আর জবাই এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম,আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন: “যদি নিজ হাতে জবাই করে তাহলে সেটা উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো ডোরাকাটা লম্বা শিংওয়ালা দুইটি ভেড়া দিয়ে কুরবানী করেছেন। তিনি সে দুটোকে নিজ হাতে জবাই করেছেন। বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়েছেন। আল্লাহু আকবার বলেছেন। সে দুটোর ঘাড়ের পার্শ্বদেশের উপর পা রেখেছেন। এবং তিনি তাঁর হজ্জ আদায়কালে ৬৩টি উট নিয়ে গেছেন; যেগুলো তিনি নিজ হাতে নহর (রক্তপাত) করেছেন। আর যদি কেউ অন্যকে জবাই এর দায়িত্ব দেয় তাহলে সেটা জায়েয। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬৩টি উটের পর বাকীগুলো নহর করার জন্য অন্যকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ নিয়ে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। আর কুরবানীর পশুর জবাই এ উপস্থিত থাকা মুস্তাহাব।”(ইবনু কুদামাহ; আল-মুগনী; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩৮৯-৩৯০ থেকে সংক্ষেপে সমাপ্ত]
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: একজন কর্মী যিনি বিদেশে কাজ করেন,তার পরিবার নিজ দেশে রয়েছে, যারা এখানকার লোকদের চেয়ে বেশি দরিদ্র। তাহলে কি তার এখানেই কুরবানী দেওয়া উচিত, না কি দেশে টাকা পাঠানো উচিত, বিশেষ করে যখন কিছু দেশে মুসলিমরা দারুণ কষ্টে আছে?
তিনি উত্তরে বলেন: الذي أرى في هذه الحال أن يضحي هنا وهناك ، فإن لم يتمكن فليضح هناك لأجل أن يتمتع أهل بيته بالأضحية في هذه الأيام المباركة ” ان”এ অবস্থায় আমি মনে করি,সে উভয় জায়গায় কুরবানী করলে উত্তম। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের দেশে (পরিবারের কাছে) কুরবানী দিক, যাতে তার পরিবার ঈদের এই বরকতময় দিনগুলোতে আনন্দ লাভ করে।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-১/৪৪০)
.
ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:আমরা এই দেশের অধিবাসী নই। আমাদের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, এমনকি কুরবানীর মাংস ও চামড়ার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। এই অবস্থায় কি আমরা তাদের কাছে টাকা পাঠিয়ে কুরবানী করাতে পারি, যদিও কুরবানী ইসলামের একটি বড় নিদর্শন? তিনি জবাবে বলেন: إذا كان الإنسان في بلد وأهله في بلد آخر فلا حرج عليه أن يوكل من يضحي عنه عند أهله حتى يسر أهله بالأضحية ويتمتعوا بها ؛ لأنه لو ضحى في بلد الغربة فمن الذي يأكل الأضحية ؟ وربما لا يجد أحداً يتصدق عليه ، فلذلك نرى أن من له أهل فليبعث بقيمة الأضحية إلى أهله ويضحوا هناك “যদি কোনো ব্যক্তি এমন এক দেশে অবস্থান করে, আর তার পরিবার থাকে অন্য কোনো দেশে, তবে তার পরিবারের অবস্থানস্থলে তার পক্ষ থেকে কাউকে কুরবানি আদায়ের জন্য নিযুক্ত করাতে কোনো সমস্যা নেই, যেন তার পরিবার এতে আনন্দিত হয় এবং কুরবানির মাংস থেকে উপকৃত হতে পারে।কারণ, যদি সে বিদেশে কুরবানি করে, তাহলে সেই মাংস কে গ্রহণ করবে? সম্ভবত সে এমন কাউকে পাবে না যার মাঝে তা বিতরণ করতে পারে। অতএব, আমাদের দৃষ্টিতে উত্তম হলো যদি কারো পরিবার অন্যত্র অবস্থান করে, তবে সে যেন তাদের নিকট কুরবানির অর্থ পাঠিয়ে দেয়, যাতে তারা সেই স্থানে তার পক্ষ থেকে কুরবানি সম্পাদন করতে পারে।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-২/৩০৬)
.
▪️তৃতীয় আরেকটি অবস্থা রয়েছে তা হচ্ছে নিজ দেশ ব্যতিত ভিন্ন দরিদ্র কোন দেশে কুরবানির অর্থ প্রেরণ করা:
.
নিজ দেশ থেকে বাইরে কুরবানী (উযহিয়া) করা যাবে কি না বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেম এই পদ্ধতিকে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং নিজের দেশে কুরবানী করাকেই শ্রেয় মনে করেন। যেমন ড.ওয়াহবা যুহায়লি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন;أما نقلها إلى بلد آخر: فقال الحنفية: يكره نقلها كالزكاة من بلد إلى بلد، إلا أن ينقلها إلى قرابته، أو إلى قوم هم أحوج إليها من أهل بلده، ولو نقل إلى غيرهم: أجزأه مع الكراهة.وقال المالكية: ولا يجوز نقلها إلى مسافة قصر فأكثر، إلا أن يكون أهل ذلك الموضع أشد حاجة من أهل محل الوجوب، فيجب نقل الأكثر لهم، وتفرقة الأقل على أهله. وقال الحنابلة والشافعية كالمالكية: يجوز نقلها لأقل من مسافة القصر، من البلد الذي فيه المال، ويحرم نقلها كالزكاة إلى مسافة القصر وتجزئه..”কুরবানীর পশু অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করার ব্যাপারে হানাফিরা বলেন: যেভাবে যাকাত এক দেশ থেকে আরেক দেশে স্থানান্তর করা মাকরূহ, তেমনিভাবে কুরবানীর পশুও স্থানান্তর করা মাকরূহ; তবে যদি তা আত্মীয়দের নিকট পাঠানো হয় অথবা এমন কোনো গোষ্ঠীর নিকট পাঠানো হয় যারা তার নিজ এলাকার লোকদের তুলনায় অধিক দরিদ্র তাহলে (এমন স্থানান্তর) (মাকরূহ) অপছন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও তা সহীহ হবে। মালিকিরা বলেছেন: সালাত ক্বসর করার দূরত্ব (প্রায় ৮০ কি.মি বা তার বেশি) পর্যন্ত কুরবানী পাঠানো বৈধ নয়, যতক্ষণ না ঐ স্থানের মানুষের প্রয়োজন নিজ দেশের মানুষের চেয়ে অধিক হয়। (তবে যদি তা অধিক হয়), তাহলে কুরবানির অধিকাংশ অংশ ঐ স্থানেই পাঠাতে হবে এবং স্বল্প অংশ নিজ দেশে বিতরণ করতে হবে।” শাফিই ও হাম্বলি মাযহাবের অনুসারীরাও মালিকি মাযহাবের অনুসারীদের সঙ্গে একমত। তাঁদের বক্তব্য হলো, কুরবানির পশু অন্যত্র স্থানান্তর করা শুধু তখনই বৈধ, যখন তা কসর (সংক্ষিপ্ত নামায পড়ার অনুমোদিত) দূরত্বের মধ্যে থাকে এর চেয়ে অধিক দূরত্বে স্থানান্তর বৈধ নয়, যদিও এতে কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। এটি যাকাতের বিধানের মতোই।”(আল-ফিকহুল ইসলামি ও আদিলাতুহু, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৮২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: وعكس ذلك : أقوام يبذلون أموالهم ليضحَّى بها في أماكن أخرى ، وهذا غلط ! بعض الناس يعطي ” هيئة الإغاثة ” أو غيرها من الجهات دراهم ليضحَّى عنه في أماكن أخرى ، هذا لم يؤد الأضحية ، الأضحية شعيرة ينبغي أن تقام في كل بلد ، ومن نعمة الله عز وجل أنه لما اختص الحجاج بالهدايا يذبحونها تقرباً إلى الله في أيام العيد : شرع الله لمن لم يحج أن يضحي ، حتى يشاركوا الحجاج في شيء من شعائر الله عز وجل ، ( وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ ) الحج/ 36 ، فإذا كان هذا هو المقصود من الأضحية : قلنا للإنسان : لا تضح خارج بيتك ، ضحِّ في بلدك ، أقم هذه الشعيرة ، والأضحية في مكان يبعث بالدراهم إليه : مخالف للسنَّة ، يفوت بها مصالح كثيرة, ولهذا ننصح بألا تدفع الدراهم ليضحى بها خارج البلاد ، بل تضحى هنا ، وننصح – أيضاً – بأن من عنده فضل مال فليتصدق به على إخوانه المحتاجين في أي بلاد من بلاد المسلمين ، ولتكن الأضحية له من غير غلو ولا تقصير .”অন্য একটি দিক হলো বর্তমানে কিছু মানুষ তাদের কুরবানির টাকা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেন, যেন সেখানে তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি সম্পন্ন করা হয়। এটি একটি ভুল পন্থা।কারণ এতে আসল কুরবানীর উদ্দেশ্যই পূর্ণ হয় না। কেউ কেউ দাতব্য সংস্থাকে বা অন্য কাউকে টাকা দিয়ে বিদেশে কুরবানী করায়। অথচ এতে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের কুরবানী আদায় করছে না। কুরবানি একটি ইসলামী নিদর্শন ও ইবাদত, যা প্রতিটি দেশে প্রতিটি মুসলিম সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার এক বিশেষ অনুগ্রহ হলো তিনি হজ পালনকারীদের জন্য ‘হাদী’ (কুরবানির পশু) নির্ধারিত করেছেন, যা তারা ঈদের দিনে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে জবাই করে। আর যারা হজে যেতে পারেনি, তাদের জন্যও কুরবানির বিধান রেখেছেন, যেন তারাও হজযাত্রীদের মতো এই মহান ইবাদতে অংশ নিতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর কুরবানির উটগুলোকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছি।” [সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩৬] যেহেতু কুরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর এই নিদর্শনকে জীবন্ত করে তোলা এবং তা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, তাই আমরা প্রত্যেক মুসলিমের উদ্দেশ্যে বলি:“তুমি কুরবানির অর্থ অন্যত্র পাঠিয়ে দিও না; বরং নিজ এলাকায়, নিজ ঘরে এই ইবাদত প্রতিষ্ঠা করো। কোনো দূরবর্তী স্থানে অর্থ পাঠিয়ে কুরবানি করানো সুন্নাহ পরিপন্থী। এর মাধ্যমে কুরবানির অনেক হিকমত, শিক্ষা ও উপকারিতা হাতছাড়া হয়ে যায়। অতএব আমরা পরামর্শ দিই, কুরবানীর টাকা বিদেশে পাঠাবেন না। নিজের দেশে কুরবানী দিন। যদি অতিরিক্ত টাকা থাকে, তাহলে সেটা সাধারণ দান হিসেবে দরিদ্রদের দিন। কিন্তু কুরবানী নিজের জন্য নিজের দেশে করুন কোনো বাড়াবাড়ি ছাড়াই, আবার অবহেলাও নয়।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-২৬)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন: أيها المسلمون : الأضحية سنة مؤكدة في حق من يستطيعها ، تذبح في البيوت ، ويأكلون منها في بيوتهم ، ويهدون منها لجيرانهم ، ويتصدقون منها على من حولهم من الفقراء .وأما ما أحدثه بعض الناس من دفع ثمن الأضحية للجمعيات الخيرية لتذبح خارج البلد وبعيداً عن بيت المضحي : فهذا خلاف السنة ، وهو تغيير للعبادة ، فالواجب : ترك هذا التصرف ، وأن تذبح الأضاحي في البيوت ، وفي بلد المضحي ، كما دلت عليه السنَّة ، وكما عليه عمل المسلمين من عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى حصل هذا الإحداث ، فإني أخشى أن يكون بدعة ، وقد قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد ) ، وقال عليه الصلاة والسلام : ( وإياكم ومحدثات الأمور ، فإن كل محدثة بدعة ، وكل بدعة ضلالة ) .ومن أراد أن يتصدق على المحتاجين : فباب الصدقة مفتوح ، ولا تغير العبادة عن وجهها الشرعي باسم الصدقة ، قال تعالى : ( وما آتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوا الله إن الله شديد العقاب ) الحشر/ 7 .” مجلة الدعوة ” ، العدد “হে মুসলিমগণ!যার সামর্থ্য আছে, তার জন্য কুরবানি করা একটি সুন্নত (সুন্নাহ মু’আক্কাদাহ)। এটি ঘরে জবেহ করা উচিত, পরিবারের লোকজন তা থেকে খাবে, প্রতিবেশীদের উপহার দেবে এবং আশেপাশের গরিবদের মাঝে তা বিতরণ করবে। কিন্তু বর্তমানে অনেক মানুষ যা শুরু করেছ যেমন কুরবানীর অর্থ কোন দাতব্য সংস্থাকে দেওয়া যাতে তারা তা অন্য দেশে, কুরবানিদাতার বাড়ি থেকে অনেক দূরে জবেহ করে এটি সুন্নাহর পরিপন্থী এবং এটি ইবাদতের রীতি পরিবর্তন করার নামান্তর। তাই এই পদ্ধতি পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এবং কুরবানি যেন নিজের ঘরে, কুরবানিদাতার নিজের দেশে জবেহ করা হয় এটাই সুন্নাহ, যেমনটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুরু করে যুগের পর যুগ মুসলিমগণ পালন করে আসছেন, যতক্ষণ না এই নতুন রীতি চালু হলো। আমি আশঙ্কা করি, এটি বিদআতের পর্যায়ে পড়ে যেতে পারে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে এমন কিছু যুক্ত করে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরও বলেছেন: নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকো, কারণ প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। যে কেউ দান করতে চায়, তার জন্য দানের অনেক দরজা খোলা রয়েছে। কিন্তু ইবাদতের নির্ধারিত পদ্ধতি দানের নামে পরিবর্তন করা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো; আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।”(সূরা হাশর ৫৯: ৭; মাজাল্লাতুদ-দাওয়াহ সংখ্যা ১৮৭৮, তারিখ: ২৭/১১/১৪২৩ হি.)
.
উল্লেখ যে, কোনো কোনো আলেম অধিক কল্যাণকর বিষয় বিবেচনা করে বলেছেন, ইসলামে মানুষের কল্যাণ ও দরিদ্র মুসলিমদের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। যেহেতু কুরবানি একটি মুস্তাহাব ইবাদত এবং কুরআন ও সুন্নাহতে এর স্থানান্তর নিষিদ্ধের কোনো প্রমাণ নেই, তাই Greater Benefit-এর জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোরবানি পাঠানো জায়েয। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে নিজ দেশেই কোরবানি করা।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮৫০৩৯; ১৪৩৬১১)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate