Saturday, June 3, 2023

ইখলাস অর্জনের দশ উপায়

 প্রশ্ন: আমরা কীভাবে ইখলাস অর্জন করতে পারব?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: মূল প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার পূর্বে আমাদের জেনে রাখা আবশ্যক যে, যেকোনো ইবাদত কবুলের জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। যথা:
১. ইখলাস তথা একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা।
২. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করা।
এই শর্তদ্বয় পূর্ণ না হলে মহান আল্লাহর কাছে কোন ইবাদত কবুল হবে না। ইখলাস হলো ইবাদতের প্রাণশক্তি। এ ছাড়া একজন মানুষ যতই এবাদত করুক না কেন তা হবে প্রাণহীন-অকার্যকর। তাই আমাদের প্রত্যেকটি ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মে ইখলাস অর্জনের চেষ্টা করা অপরিহার্য। এটি যেহেতু মানুষের মনের সাথে সম্পৃক্ত তাই বিষয়টি খুবই সূক্ষ্ম ও বিপদজনক। মনের অজান্তেই মনের মধ্যে ইখলাস পরিপন্থী বিষয় রিয়া তথা লোক দেখানো মনোভাব, মানুষের প্রশংসা পাওয়া বা নানা ধরনের দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা ঢুকে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অন্যথায় ইবাদত করে সওয়াবের পরিবর্তে আমাদের আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে। কেননা যে ইবাদতের মধ্যে রিয়া প্রবেশ করে হবে তা শিরকে আসগর বা ছোট শিরক হিসেবে পরিগণিত হয়। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।

এখন প্রশ্ন হল, আমরা ইবাদতের মধ্যে কীভাবে ইখলাস অর্জন করতে পারি?

🔹নিম্নে এর ১০টি উপায় বর্ণনা করা হলো:
১. যেকোনো ইবাদত করার পূর্বে অন্তরকে‌ সব ধরনের দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা ও লোক দেখানো মনোভাব থেকে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহমুখী করা এবং একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান আশা করা।

২. এই কথা মাথায় রাখা যে, ইবাদতের মধ্যে ইখলাস না থাকলে তা আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত হবে।

৩. ইখলাস বিহীন আমলের পরিণতি মনে জাগ্রত রাখা। আর তা হলো, ইখলাস হীন আমল (বা রিয়া যুক্ত আমল) শিরকে আসগর।

৪. মনের মধ্যে দুনিয়ার স্বার্থ চিন্তা জাগ্রত হলে মনে করতে হবে, কুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অথবা শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। তাই তৎক্ষণাৎ অন্তরের অনিষ্ট এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।

৪. যথাসম্ভব ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করবে। (যে সকল ইবাদত প্রকাশ্যে করতে হয় সেগুলো ছাড়া)। যেমন: রাতের শেষ প্রহরে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা, যখন কোন মানুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকে তখন নির্জনে সালাত আদায় করা, গোপনে দান-সদকা করা, নির্জনে দোয়া, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করার চেষ্টা করা ইত্যাদি। হাদিসে যেসব ঈমানদার ব্যক্তিগণ নিভৃতে চোখের পানি ফেলে ক্রন্দন করে এবং গোপনে এমন ভাবে দান করে যে ডান হাত দান করলে বাম হাত জানতে পারে না এমন ব্যক্তিদেরকে কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৫. ইখলাস অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। যেমন: ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইখলাস অর্জনের জন্য এই দোয়াটি পাঠ করতেন:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِي كُلَّهُ صَالِحًا وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا، وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيهِ شَيْئًا
“হে আল্লাহ, আপনি আমার সমস্ত আমলকে নেক বানিয়ে নিন এবং তা আপনার সন্তুষ্টির জন্য কবুল করে নিন। এতে মানুষের জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখবেন না।” [আদ‌ দা ওয়াদ দাওয়া (আল‌ জাওয়াবুল‌ কাফী)- ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ.]

৬. দ্বীনদারি এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে আপনার থেকে যারা এগিয়ে আছেন তাদের দিকে দেখুন। বিশেষ করে সাহাবি এবং তাবেঈদের জীবনী থেকে ঈমান এবং আমলে তাদের অগ্রগামীতার বিষয়টি জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনার নিজের আমল আপনার কাছে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে।

৭. ইবাদত-বন্দেগি করার পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন যে, তিনি আপনাকে তা করার তৌফিক দান করেছেন। তবে তা যেন আপনার অন্তরে অহংকার বা আত্মম্ভরিতা সৃষ্টি না করে সেদিকে সজাগ থাকুন। অন্যথায় উক্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।

৮. ইবাদত করার পরে অন্তরে এই ভয় জাগ্রত রাখুন যে, কোন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ তাআলা হয়তো এই ইবাদত প্রত্যাখ্যান করবেন।

৯. মানুষের প্রশংসায় গলে যাবেন না। আপনার ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ, রোজা, হজ, ওমরা, পর্দা, সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামের সেবায় অবদান, দান-সদকা ইত্যাদি দেখে মানুষ হয়তো আপনার প্রশংসা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার প্রশংসায় গলে যাবেন না। অন্যথায় তা অন্তরের ইখলাকে ধ্বংস করে দেবে।

১০. এই বিশ্বাস রাখুন যে, আপনার কবরে শুধু আপনি যাবেন আর সাথে যাবে আপনার কিছু সৎ আমল। যদি সেগুলো আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় তবেই তা কবরে কাজে লাগবে; অন্যথায় তা হবে পণ্ডশ্রম। এই মনোভাব অন্তরে ইখলাস সৃষ্টিতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
الله اعلم
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

স্ত্রীর জন্য আইসক্রিম কিনে দেওয়া মসজিদে দান করার থেকেও উত্তম এ কথাটা কি সঠিক

 “স্ত্রীর জন্য আইসক্রিম কিনে দেওয়া মসজিদে দান করার থেকেও উত্তম” এ কথাটা কি সঠিক? ইসলামে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য অর্থ খরচের মর্যাদা কতটুকু?

প্রশ্ন: ফেসবুকে একটা কথা প্রায় চোখে পড়ে। তা হল: “স্ত্রীর জন্য আইসক্রিম কিনে দেওয়া মসজিদে দান করার থেকে ও উত্তম।” এ কথাটা কতটুকু সঠিক? আর ইসলামে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য অর্থ খরচের মর্যাদা কতটুকু?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: “স্ত্রীর জন্য আইসক্রিম কিনে দেওয়া মসজিদে দান করার থেকে ও উত্তম।” আমার দৃষ্টিতে এ কথাটি সঠিক নয়। কেননা স্ত্রীকে আইসক্রিম কিনে খাওয়ানো স্বামীর ভরণ-পোষণ তথা অত্যাবশ্যকীয় খরচের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে যদি স্ত্রী আইসক্রিম খেতে চায় তাহলে খাওয়ানোটা অবশ্যই উত্তম তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে। এতেও স্বামীর জন্য সদকার সওয়াব রয়েছে। বরং সামর্থ্য থাকলে স্ত্রীর যে কোনও বৈধ আবদার পূরণ করলে স্বামী জন্য সওয়াব রয়েছে ইনশাআল্লাহ। কেননা হাদিসে স্ত্রী-সন্তানদের উদ্দেশ্যে অর্থ খরচ করাকে ‘সদকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন:

✪ আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا أَنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ يَحْتَسِبُهَا فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ
“একজন পুরুষ যখন স্ত্রী-পরিবারের জন্য সওয়াবের নিয়তে অর্থ খরচ করে তখন তা হয় তার সদকা স্বরূপ।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়: ২/ ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার নিয়ত অনুযায়ী।]
✪ অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فَمِ امْرَأَتِكَ
“তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও তারও।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ২/ ঈমান, পরিচ্ছেদ: ২/৪১ আমলসমূহ সংকল্প ও পুণ্যের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাপ্য তাঁর সংকল্প অনুযায়ী]

পক্ষান্তরে মসজিদে দান করা সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ »

“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি ছাড়া।(সেগুলো হলো) সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম (শরিয়ত বিষয়ক জ্ঞান) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।” [সহিহ মুসলিম, হা/৪৩১০]
➧ ‘সদকায়ে জারিয়া’ কী?
সদকায়ে জারিয়া অর্থ: এমন দান যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে (বা যার সওয়াব মৃত্যুর পরও দানকারীর আমলনামায় জমা হতে থাকে।)
ইমাম নওবি বলেন, الصدقة الجارية هي الوقف “সদকায়ে জারিয়া হল, ওয়াকফ।” (জায়গা-জমি, ভবন ইত্যাদি ইসলাম ও মানবতার সেবায় দান করা)। [শারহে সহিহ মুসলিম]। সুতরাং মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, ইসলামের প্রয়োজন বা জনকল্যাণ মূলক কাজের উদ্দেশ্যে জায়গা-জমি ওয়াকফ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ, দুঃস্থ, অসহায় ও এতিমদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন, ইসলামি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা বা তাতে বই-পুস্তক কিনে দেওয়া ইত্যাদি সবই সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
এ সব সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অনন্তকাল ধরে দান কারীর আমলনামায় জমা হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাধারণ সদকার থেকে সদকায়ে জারিয়া অধিক উত্তম। অত:এব মসজিদে দানের সাথে স্ত্রীকে আইসক্রিম কিনে খাওয়ানোর জন্য টাকা খরচ করার তুলনা করা তো দূরের কথা কথা অধিক উত্তম বা অধিক সওয়াবের বলার সুযোগ নেই। আল্লাহু আলাম।

❑ স্ত্রীর জন্য প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণের জন্য অর্থ খরচ করা নফল দান-সদকার থেকে উত্তম:

ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ তথা তাদের পোশাক-আশাক, খাবার ও জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে অর্থ খরচ করা স্বামীর জন্য মসজিদ-মাদরাসা বা অন্যান্য যে কোনও জনকল্যাণ খাতে দান করার চেয়ে উত্তম এবং অধিক সওয়াবের। কারণ মসজিদ-মাদরাসা বা জনকল্যাণ খাতে দান করা নফল ইবাদত। কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা স্বামীর জন্য ফরজ।

✪ আল্লাহ তাআলা বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
“পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।” [সূরা নিসা: ৩৪]
✪ অপর একটি হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِي أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ
“একটি দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) যা তুমি ফি সাবিলিল্লাহ (জি/হ/দের জন্য) ব্যয় করেছ, একটি দিনার যা তুমি দাস মুক্তির জন্য ব্যয় করেছ, একটি দিনার যা তুমি গরিব-অসহায় মানুষের উদ্দেশ্য ব্যয় করেছ এবং একটি দিনার তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। এগুলোর মধ্যে সাওয়াবের দিক সর্বোত্তম হল, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়: ১৩/ যাকাত, পরিচ্ছেদ: ৭. পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীদের প্রতি ব্যয় করার ফজিলত এবং তাদের হক নষ্ট কারী ব্যক্তির পাপ]

সুতরাং সামর্থ্য থাকার পরও ইচ্ছাকৃত ভাবে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ না দিলে তাকে গুনাহগার হতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সে যত টাকা খরচ করবে সওয়াবে নিয়ত থাকলে আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় তার বিনিময়ে সদকার সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

মোটকথা, স্ত্রী পরিবারের জন্য ভরণ-পোষণ ও অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে অর্থ খরচ করা ইসলামের বিভিন্ন প্রয়োজনে নফল দানের থেকে উত্তম। কিন্তু সদকায়ে জারিয়া মূলক বিভিন্ন খাতে অর্থ খরচ করা অধিক উত্তম স্ত্রীকে আইসক্রিম খাওয়ানো বা আবশ্যকীয় নয় এমন ক্ষেত্রে খরচ করার থেকে। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করলেও স্বামী সদকার সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য, আল্লাহ যদি তাকে পর্যাপ্ত অর্থ-সম্পদ দান করেন তাহলে স্ত্রী ও সন্তানদের বিভিন্ন বৈধ প্রয়োজনে উদার হাতে অর্থ খরচ করবে। পাশাপাশি মাদরাসা, মসজিদ, এতিমখানা ও বিভিন্ন জনকল্যাণ খাতেও প্রয়োজনীয় দান-সদকা করবে। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করবে। কিন্তু সামর্থ্য থাকার পরও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী-পরিবারের প্রয়োজনে অর্থ খরচ থেকে বিরত থাকে, ফলে যদি তারা কষ্ট পায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এ কারণে সে গুনাহগার হবে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাঠগড়ায় তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখতে পাবে এবং তাদের মাঝে কথোপকথন হবে

 কুরআনের বহু আয়াত, হাদিস এবং মুফাসসিরদের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত যে, জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখতে পাবে এবং তাদের মধ্যে কথোপকথন হবে।

নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষপে কুরআনের একটি চিত্র উপস্থাপন করা হল:

◈ জাহান্নাম বাসীরা জান্নাত বাসীদের কাছে আর্তনাদ করবে একটু পানি ও খাবারের জন্য। কিন্তু তারা জবাবে বলবে যে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম বাসীদের জন্য তা হারাম করে দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
“আর জাহান্নামিরা জান্নাতিদেরকে ডেকে বলবে, আমাদের উপর সামান্য পানি নিক্ষেপ কর অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছেন তা থেকেই কিছু দাও।” “তারা (জান্নাত বাসীগণ) বলবে, আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছেন।” [সূরা আরাফ: ৫০]

◈ জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদের ভয়ানক আজাব দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে যে, আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেছেন। আর জাহান্নাম বাসীরা জান্নাত বাসীদের সুখ ও আনন্দ দেখে শুধুই আফসোস করবে এবং পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে এসে ঈমানদার হওয়ার প্রত্যাশা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ -‏ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ إِنِّي كَانَ لِي قَرِينٌ- يَقُولُ أَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِينَ ‎- أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَدِينُونَ – قَالَ هَلْ أَنتُم مُّطَّلِعُونَ – فَاطَّلَعَ فَرَآهُ فِي سَوَاءِ الْجَحِيمِ – قَالَ تَاللَّهِ إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ -‏ وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ -‏ أَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِينَ ‎-إِلَّا مَوْتَتَنَا الْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ ‎- إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‎-‏ لِمِثْلِ هَٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ
অতঃপর তারা (জান্নাত বাসীগণ) একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের একজন বলবে, আমার এক সঙ্গী ছিল। সে বলত, তুমি কি বিশ্বাস কর যে, আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা প্রতিফল প্রাপ্ত হব?
আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি তাকে উকি দিয়ে দেখতে চাও? অতঃপর সে উঁকি দিয়ে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে। সে বলবে, আল্লাহর কসম, তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিলে। আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ না হলে আমিও যে গ্রেফতারকৃতদের সাথেই উপস্থিত হতাম। এখন আমাদের আর মৃত্যু হবে না। আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া এবং আমরা শাস্তি প্রাপ্তও হব না। নিশ্চয় এই মহা সাফল্য। এমন সাফল্যের জন্যে পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত।” [সূরা সাফফাত: ৫০/৬১]

◈ জাহান্নাম বাসীদের আফসোস:
আল্লাহ বলেন,
فَقَالُوا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
“তারা (জাহান্নাম বাসীরা) বলবে, কতই না ভাল হত, যদি আমরা পুনরায় দুনিয়ায় প্রেরিত হতাম; তা হলে আমরা আমাদের পালনকর্তার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।” [সূরা আনআম: ২৭]

◈ দুনিয়াতে যেসব পাপিষ্ঠ মুমিনদেরকে নিয়ে নানা উপহাস, তিরস্কার ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত এবং নানাভাবে নির্যাতন করতো তারা জাহান্নামের আগুনে যখন পুড়বে তা দেখে ইমানদারদের চক্ষু শীতল হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ‎-‏ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ-‏ وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ
“জান্নাতিরা জাহান্নাম বাসীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি। কিন্তু তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবে, “আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর। যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল। উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে।” [সূরা আরাফ: ৪৪, ৪৫ ও ৪৬]
ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
السور بين أهل الجنة والنار ، فيفتح لأهل الجنة أبواب ، فينظرون وهم على السُّرر إلى أهل النار كيف يعذّبون ، فيضحكون منهم ، ويكون ذلك مما أقرّ الله به أعينهم ، كيف ينتقم الله منهم ” .
“تفسير الطبري” (24 / 304) .
“জান্নাত বাসী ও জাহান্নাম বাসীদের মাঝে প্রাচীর থাকবে। জান্নাত বাসীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ফলে তারা খাট-পালঙ্কের উপরে উপবেশন গত অবস্থায় জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখবে কীভাবে তাদেরকে আজাব দেওয়া হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তারা হাসাহাসি করবে। মহান আল্লাহ কীভাবে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছেন, তা দেখানোর মাধ্যমে তিনি তাদের চক্ষু শীতল করবেন।” [তাফসিরে ত্ববারি-২৪/৩০৪]

❑ কারা সেই জাহান্নামের অধিবাসী জালেম সম্প্রদায়?
আল্লাহ তাআলা এদের সম্পর্কে বলছেন,
الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ
“তারা তাদের দীনকে তামাশা ও খেলনার বস্তু বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদের কে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল (অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকত যে তারা আখিরাতের কথা বেমালুম ভুলে থাকত) অতএব, আমি আজকে তাদেরকে ভুলে যাব যেমন তারা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।” [সূরা আরাফ: ৫১]
যাদের কাছে দীন-ধর্ম হল, হাসি-তামাশা বা খেলনার বস্তু কিংবা যাদের কাছে, টাকা-পয়সা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক স্ট্যাটাস, পড়া-শোনা, পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, স্ত্রী-সন্তান তথা এই দুনিয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ-যারা এ সবের ধোঁকায় পড়ে আখিরাতকে ভুলে বসেছে উপরের আয়াতগুলোতে তাদের পরিণতি বর্ণিত হয়েছে। হে ক্ষমাশীল, করুণার আধার, তুমি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। আর আমাদেরকে সর্বদা পরিচালিত কর তোমার সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। নিশ্চয় তুমি দুআ কবুল কারী। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

খালা মায়ের সমতুল্য এবং খালার হক ও এ সংক্রান্ত জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয়

 প্রশ্ন: হাদিসে এসেছে, “খালা মায়ের সমতুল্য।” এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে খালা, মায়ের সমতুল্য আর চাচা, বাবার সমতুল্য। এ বিষয়ে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে।
খালা মায়ের সমতুল্য-সংক্রান্ত একটি হাদিস:
◈ আলি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ -صححه الألباني في “صحيح أبي داود
“খালা মায়ের মর্যাদার।” [শাইখ আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ আবু দাউদ]
এর অর্থের ব্যাপারে ইমাম যাহাবি বলেন,
“أي : في البر والإكرام والصلة” انتهى
“অর্থাৎ সদাচরণ, সম্মান এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে মা খালার সমতুল্য।”

◈ এই অর্থটি প্রকাশিত হয় অপর একটি হাদিস থেকে। তা হল:

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَصَبْتُ ذَنْبًا عَظِيمًا فَهَلْ لِي تَوْبَةٌ؟ قَالَ: (هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟) قَالَ: لَا، قَالَ: (هَلْ لَكَ مِنْ خَالَةٍ؟) قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: (فَبِرَّهَا).
وصححه الألباني في “صحيح الترغيب” (2504)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসে বললেন, ‌ হে আল্লাহর রাসূল, আমি অনেক বড় একটি পাপ করে ফেলেছি। আমার কি তওবার সুযোগ আছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি মা আছে? লোকটি বলল, না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি খালা আছে? লোকটি বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তাহলে তার সাথে সদাচরণ করো।” (অর্থাৎ মায়ের মত খালার খেদমত ও সেবা-শুশ্রূষা করো, তাকে সম্মান করো, তাকে সাহায্য সহযোগিতা কর এবং বিভিন্নভাবে তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করো ইত্যাদি) [তিরমিজি, সহিহ তারগিব/২৫০৪]

এ হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, খালার প্রতি ইহসান সুলভ আচরণ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম।

◈ উম্মুল মুমিনিন মা-জননী আয়েশা রা. এর কোন সন্তান ছিল না। কিন্তু তিনি তার বোন আসমা রা. এর ছেলে আব্দুল্লাহ (বিন জুবায়ের)-এর দিকে সম্বন্ধ করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উম্মে আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা নামে নিজের কুনিয়ত (উপনাম) রাখার অনুরোধ করায় তিনি তা করেছিলেন। তাই তাকে উম্মে আব্দুল্লাহ (আব্দুল্লাহর মা) বলে সম্বোধন করা হতো।
وروى أبو داود (4970) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كُلُّ صَوَاحِبِي لَهُنَّ كُنًى، قَالَ: (فَاكْتَنِي بِابْنِكِ عَبْدِ اللَّهِ) يَعْنِي ابْن اخْتُهَا ، فَكَانَتْ تُكَنَّى بِأُمِّ عَبْدِ اللَّهِ
[সুনানে আবু দাউদ/৪৯৭০]
এতেও বুঝা যায়, খালা মায়ের সমতুল্য। আলহামদুলিল্লাহ।

🔹এ বিষয়ে কতিপয় জরুরি জ্ঞাতব্য:

✪ ১. সম্মান, মর্যাদা ও সদাচরণের ক্ষেত্রে খালা মায়ের সমতুল্য হলেও মায়ের জীবদ্দশায় মা বেশি অগ্রাধিকার যোগ্য।
✪ ২. মা মারা যাওয়ার পর খালাদেরকে সম্মান করা, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া, তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদের সেবা-শুশ্রূষা করা, যথাসাধ্য তাদের অভাব মোচন করা ও কষ্ট দূর করা, তাদেরকে মাঝেমাধ্যে উপহার দেওয়া, তাদের জন্য দুআ করা, সর্বোপরি সর্বদা সুখে-দুখে তাদের পাশে থাকা মায়ের সাথে সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। কারণ খালা হল, মায়ের সব থেকে বেশি ঘনিষ্টজনদের অন্তর্ভুক্ত।
✪ ৩. মায়ের মত খালাদেরকে কষ্ট দেওয়াও হারাম।
✪ ৪. খালার প্রতি ইহসান সুলভ আচরণ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম।
✪ ৫. খালার সন্তান-সন্ততিগণ (খালাতো ভাই-বোনেরা) নন মাহারাম। অর্থাৎ তাদের সাথে বিবাহ বৈধ। অতএব তাদের সামনে পর্দা করা ফরজ।
✪ ৬. অনুরূপভাবে খালুও নন মহরাম। অতএব মহিলার জন্য তার সামনেও পর্দা করা ফরজ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মানুষকে শয়তান বা ইবলিশ বলার বিধান

 প্রশ্ন: অনেকে ছোট বাচ্চা দুষ্টুমি করলে তাকে বলে, শয়তানি কেন করছ? আবার অনেক সময় একজন আরেকজনকে শয়তান বা ইবলিশ বলে সম্বোধন করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা কি ঠিক?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: শয়তানি করা মানে, দুর্বৃত্ততা, দুষ্টামি করা, ক্ষতি করা ইত্যাদি। কোন মানুষ যখন কারো সাথে দুর্বৃত্ততাপনা করে বা দুষ্টমি করে বা করো ক্ষতি সাধন করে তখন শয়তানি করা কথাটি বলা হয়। কিংবা এর অর্থ, শয়তানের কাজ করা বা শয়তানের মত কাজ করা।
تَشَيْطَنَ الوَلَدُ : قَامَ بِعَمَلِ الشَّيْطَانِ
সুতরাং এসব ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
কেননা এখানে কাজটিকে শয়তানের কাজ বা দুর্বৃত্তপনা বলা হচ্ছে; ব্যক্তিকে নয়।
🔹 কোন ব্যক্তিকে কি শয়তান বা ইবলিশ বলা যাবে কি? শয়তান হল, কাফের, আল্লাহর দুশমন। তার প্রকৃত নাম হলো ইবলিশ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বিতাড়িত ইবলিশ শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম” (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) বলার মাধ্যমে শয়তান থেকে মহান রবের কাছে আশ্রয় চাই।

সুতরাং কোন ইমানদারকে উদ্দেশ্য করে শয়তান বা ইবলিশ শব্দ ব্যবহার করা জায়েজ নাই।
তাছাড়া এটি নিকৃষ্ট গালাগালির শব্দ। আর মুসলিম কখনো নোংরা চরিত্রের গালিবাজ হতে পারে না।
– হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,
لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاحِشًا وَلاَ لَعَّانًا وَلاَ سَبَّابًا
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশালীন, লানতকারী (অভিসম্পাত কারী) ও গালিবাজ ছিলেন না।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৭৮/ আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৭৮/৪৪. গালি ও অভিশাপ দেয়া নিষিদ্ধ]
– অন্য হাদিসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
“মুসলিমকে গালি দেওয়া গুনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারি করা কুফুরি।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ২৮. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী: “মুসলিমদেরকে গালি-গালাজ করা গুনাহের কাজ এবং তাদের সাথে মারামারি করা কুফরি।”]

– আল্লামা শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয় যে, কখনো কখনো কিছু মানুষ অন্যকে উদ্দেশ্য করে মজার ছলে বলে থাকে ‘অমুক শয়তান’ বা ‘অমুক ইবলিশ’। এর বিধান কী?
তিনি বলেন,
هذا ما يجوز -هذا من الشتم والسب, أن يقال: فلان شيطان, فلان إبليس, او ما أشبه ذلك كلمات قبيحة لا يجوز, لا يجوز أن يقال: فلان فاسق, يا فاسق يا عدو الله فكيف يقال: فلان شيطان, أو فلان إبليس..للأسف! والعياذ بالله
“এটা জায়েজ নয়। ‘অমুক শয়তান, অমুক ইবলিশ’ বা এই জাতীয় শব্দগুলো কুৎসিত গালাগালির অন্তর্ভুক্ত। যা জায়েজ নয়। যেখানে কাউকে উদ্দেশ্য করে, অমুক ফাসেক, বা হে ফাসেক, হে‌ আল্লাহর দুশমন বলা জায়েজ নাই সেখানে কীভাবে “অমুক‌‌ শয়তান বা অমুক ইবলিশ” বলা জায়েজ হতে পারে? দুঃখজনক।আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”
[শাইখের অডিও প্রশ্নোত্তর থেকে অনূদিত]
মোটকথা, একজন আদর্শবান মুসলিম কখনোই অশ্লীল শব্দ ও কটু বাক্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবে না। মজার ছলে হলেও। এটি উত্তম চরিত্রের পরিপন্থী। তাছাড়া, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, মানুষ মুখ দিয়ে যা কিছু উচ্চারণ করুক না কেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত অতন্দ্র প্রহরী লেখক ফেরেশতা সাথে সাথে তা তার আমলনামায় লিখে নেন।
সুতরাং ঝগড়াঝাটি হোক কিংবা মজার ছলে হোক কোন অবস্থাতেই গালাগালি করা বা কোন মুসলিমকে উদ্দেশ্য করে ইবলিশ, শয়তান ইত্যাদি বলা জায়েজ নেই। আল্লাহ তৌফিক দান করুন আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত এবং মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত কোনটি সঠিক

 প্রশ্ন: মানুষকে বলতে শোনা যায় যে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আবার এটাও শোনা যায় যে, “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।” এ দুটি কথার মধ্যে মূলত: কোন হাদিসটি সঠিক দয়া করে জানাবেন।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর:
💠 “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত” এ কথাটা কোন হাদিস নয়। বরং বানোয়াট কথা। কিন্তু হাদিস হিসেবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছেে!! তবে স্ত্রীর কাছে স্বামীর সম্মানের কথা হাদিসে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে,
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
“যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৮৫৩; সহীহাহ, হা/১২০৩।]

– স্বামী জান্নাত অথবা জাহান্নাম:

হুসাইন বিন মিহসানের এক ফুফু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন প্রয়োজনে এলেন এবং তা পূরণ হয়ে গেলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
– তোমার কি স্বামী আছে?
সে বলল, জী, হ্যাঁ।
– তিনি বললেন, তার কাছে তোমার অবস্থান কী?
সে বলল, ’যথাসাধ্য আমি তার সেবা করি।’
– তিনি বললেন, ’’খেয়াল করো, তার কাছে তোমার অবস্থান কোথায়। যেহেতু সে তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।”

عَنِ الْحُصَيْنِ بْنِ مِحْصَنٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ أَتَتْ النَّبِيَّ ﷺ فِي حَاجَةٍ فَفَرَغَتْ مِنْ حَاجَتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ ﷺ أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلَّا مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِي أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ
[আহমদ, ১৯০০৩, নাসাঈ, হাকেম, বাইহাকি-সহিহ]

💠 “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত” হুবহু এ শব্দে বর্ণিত হাদিসটি খুব দুর্বল মতান্তরে বানোয়াট। কিন্তু তার অর্থটি সঠিক-যেমনটি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিস সমূহে:

🔰 মুআবিয়া ইবনে জাহিমা রা. হতে বর্ণিত। একদা আমার পিতা জাহিমা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,

يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا

‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক। আমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে।” [আহমদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/১২৪৯, সহীহু তারগীব ওয়াত তারহীব।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فالزَمها فإنَّ الجنَّةَ تحتَ رِجلَيها
“তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।” [সহিহ নাসাঈ, হা/৩১০৪]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিমা রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
أَلكَ والِدَانِ . قُلْتُ : نَعَمْ . قال : الزَمْهُما ، فإنَّ الجنةَ تَحْتَ أَرْجُلِهما
“তোমার কি পিতামাতা আছে?”
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, “তুমি তাদেরকে আঁকড়িয়ে থাকো। কারণ জান্নাত রয়েছে, তাদের পায়ের নিচে।” [সহিহ তারগিব, হাসান সহিহ, ২৪২৫]
এ বর্ণনায় পাওয়া গেলো, পিতামাতা উভয়ের পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।
🔰 আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, “তারা উভয় তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’। [ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪।] অর্থাৎ মায়ের সেবা করা জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম।

❌ ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ মর্মে নিন্মোক্ত শব্দে বর্ণিত দুটি হাদিস সহিহ নয়। যথা:
((الجنة تحت أقدام الأمهات)). وفي لفظ: ((الجنة تحت أقدام الأمهات، مَنْ شِئن أدخلن، ومَن شِئن أخرجن!))
ক. “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে।”
খ. অন্য শব্দে “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে। যাকে খুশি তারা জান্নাতে প্রবেশ করাবে আর যাকে খুশি বের করবে।”
এই শব্দে বর্ণিত হাদিস দুটি মুহাদ্দিসদের মতানুসারে জঈফ (দুর্বল) আর কারো মতে মউযু (বানোয়াট)। তবে ‘মায়ের পায়ের নিকট জান্নাত’ এর মর্মার্থটি পূর্বোল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের আলোক সহিহ। আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate