Friday, March 15, 2024

স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ বা উমরা আদায়

 প্রশ্ন: আমি উমরা ও হজ আদায় করতে চাই। আমার মনে বারবার আল্লাহর ঘর দেখার তাড়না হচ্ছে। কিন্তু আমার মাহরাম কেউ রাজি নয়। আমার বাবা, ভাই, স্বামী কেউ যেতে চান না। আমার বোনের স্বামী ও বোন যাবে। বোন জীবিত অবস্থায় কি তার স্বামী আমার মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে? আমার জন্য দুআ করবেন যাতে আমার স্বামী রাজি হয়ে যান।

উত্তর: দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনার বায়তুল্লাহর জিয়ারতের স্বপ্ন পূরণ করুন। অতঃপর, ইসলামে স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে মহিলাদের জন্য দূরের সফর নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে হজ/ওমরা সফরেও যাওয়া জায়েজ নয়।

এ মর্মে হাদিস হল:

◈ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

– لا يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ باللَّهِ وَالْيَومِ الآخِرِ، تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَومٍ وَلَيْلَةٍ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا
“যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে জেনে রাখ! তার জন্য অনুমতি নেই যে, সে আপন স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর সমান দূরত্বে একাকী ভ্রমণ করবে।” [সহীহ মুসলিম]

◈ কোন নারী হজের উদ্দেশ্যেও মক্কাতেও একাকী যেতে পারে না:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بامْرَأَةٍ إلَّا وَمعهَا ذُو مَحْرَمٍ، وَلَا تُسَافِرِ المَرْأَةُ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقالَ: يا رَسولَ اللهِ، إنَّ امْرَأَتي خَرَجَتْ حَاجَّةً، وإنِّي اكْتُتِبْتُ في غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قالَ: انْطَلِقْ فَحُجَّ مع امْرَأَتِكَ

“কোন নারী নিজ মাহরাম সঙ্গী ছাড়া একাকী সফর করবে না। ”
তখন উপস্থিত এক সাহাবি আরজ করলেন, “আমি তো অমুক জিহাদে যাচ্ছি। আর এ দিকে আমার স্ত্রী হজে যেতে যাচ্ছে। (আমি কি করবো)?
জিহাদে বের হবো, নাকি স্ত্রীর সাথে হজের সফরে বের হব? কারণ আমি ছাড়া তার অন্য কোন মাহরারম সঙ্গী নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি জিহাদে না গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজের সফরে যাও।” [সহীহ বুখারী]

❑ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,
لا يجوز للمسلمة أن تحج بدون محرم، النبي ﷺ قال: لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم وقد ذهب بعض العلماء إلى جواز الحج مع ثقات النساء بدون محرم ولكنه قول مرجوح، والصواب: ما قاله النبي ﷺ: لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم لكن لو حجت مع النساء صح حجها، وعليها التوبة إلى الله؛ لأنها أخطأت وأثمت فعليها التوبة إلى الله والندم وأن لا تعود إلى مثل هذا وحجها صحيح إن شاء الله؛ لأنها.. أدت مناسك الحج، فصح مع الإثم في مخالفتها السنة، في حجها بدون محرم، والله ولي التوفيق، وله سبحانه وتعالى الحكمة البالغة وعليها التوبة من ذلك.
“কোনও মুসলিম নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ (যাদের সাথে স্থায়ীভাবে বিয়ে হারাম) ছাড়া হজ করা জায়েজ নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا تُسَافِرِ المَرْأَةُ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ
“কোন মহিলা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করবে না।” [সহিহ মুসলিম]
কতিপয় আলেম মাহরাম পুরষ ছাড়া বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে হজ করা বৈধ বললেও তা গ্রাধিকারযোগ্য মত নয়। বরং সঠিক কথা হল, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মহিলা মাহরাম পুরষ ছাড়া সফর করবে না।” তবে কেউ যদি একদল মহিলার সাথে হজ করে তাহলে তার হজ সহিহ হয়ে যাবে। কিন্তু সে ভুল কাজ করবে। এতে সে গুনাহগার হবে। তাই তার জন্য লজ্জিত অন্তরে তওবা করা আবশ্যক এবং ভবিষ্যতে আর কখনো এমনটি করবে না। কিন্তু ইনশাআল্লাহ তার হজ বিশুদ্ধ হবে। কারণ সে হজের কার্যাবলী আদায় করেছে। সুতরাং মাহরাম পুরুষ ছাড়া হজ করার কারণে গুনাহ এবং সুন্নতের বিরুদ্ধাচরণ সহকারে তার হজ সঠিক হবে। আল্লাহ তওফিক দানকারী এবং সুনিপুণ কৌশলের অধিকারী। ওই মহিলার কর্তব্য, এ কাজের জন্য তওবা করা।” [সূত্র: binbaz. অর্গ]
◈ বোনের স্বামী আপনার জন্য মাহরাম নয়। কেননা আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও তাকে তালাক দিয়ে আপনাকে বিয়ে করা তার জন্য জায়েয রয়েছে। সুতরাং আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও সে আপনার জন্য মাহরাম নয়। অত:এব আপনার বোন ও তার স্বামীর সাথে আপনার সফর করা বৈধ হবে না। দুআ করি, আল্লাহ যেন আপনার স্বামীর অন্তরে আল্লাহর ঘর জিয়ারতের আগ্রহ সৃষ্টি করে দেন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রথম রোজার সংবাদ দিলে জাহান্নামের আগুন হারাম মর্মে বর্ণিত হাদিসটি বানোয়াট ও জাল

 প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি প্রথম রোজার সংবাদ দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে” বর্তমানে ফেসবুকে এই কথাটা বেশ প্রচার হচ্ছে। কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে আপনার একটি পোস্ট চাই। যাতে করে সবাই সঠিকটা জানতে পারে।

উত্তর: এ কথা সত্য যে, রমজান ঘনিয়ে এলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাতীয় হাদিসটি প্রচারের হিড়িক পড়ে যায়। প্রচার করা হয় যে, এ বছর অমুক তারিখ থেকে রমজান মাসের রোজা শুরু হবে। অথচ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। অর্থাৎ এটি হাদিসের নামে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া রমজান মাসের সূচনা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল-যা জানার জন্য সরকার নির্ধারিত চাঁদ দেখা কমিটি বা আদালতের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । সুতরাং তা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির হিসেবে অগ্রিম সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং কেউ যদি অনেক আগে থেকে এই ঘোষণা প্রচার করে তাহলে তা হবে আরেকটি মিথ্যাচার।

◆ এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত ফতোয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট Islamqa-এ বলা হয়েছে,

لم يذكره من صنف في فضل رمضان من العلماء، ولو من باب التنبيه على عدم صحته، كما لم يذكره من صنف في الأحاديث الضعيفة والموضوعة؛ لذلك يبدو أنه وُضع حديثًا.

“যে সকল আলেমগণ রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বই লিখেছেন তাদের কেউ এই হাদিসটি উল্লেখ করেননি। এটি যে বিশুদ্ধ নয় সে ব্যাপারে সতর্ক করার জন্যও কেউ উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস সংকলনকারীগণ ও তা (এ সংক্রান্ত কোনও গ্রন্থেই উল্লেখ করেননি।) এতেই প্রমাণিত হয় যে, এটি সাম্প্রতিক কালের বানানো হাদিস।”
এরপর আরও লেখা হয়েছে, “সুতরাং এর উপরে ভিত্তি করে বলবো, এই হাদিস প্রচার বা শেয়ার করা জায়েজ নেই মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক করার উদ্দেশ্য ছাড়া।”

◆ কারা এসব বানোয়াট হাদিস প্রচার করে? অজ্ঞতা বশত: কেউ তা করে থাকলে তার জন্য করণীয়:

প্রকৃতপক্ষে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন গ্রুপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করে শর্টকাট পদ্ধতিতে জান্নাতে যেতে চায় এটি তাদের বানানো হাদিস। আর ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতি মানুষের এক ধরণের দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সস্তা লাইক-কমেন্ট কামানোর ধান্ধায় এসব কথা হাদিস বলে প্রচার করে এক শ্রেণির লোক। এভাবেই শয়তান দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত মানুষের সাথে ধর্মের নামে ধোঁকাবাজি করে চলেছে।

যাহোক কেউ যদি অজ্ঞতাবশত এই জাতীয় হাদিস ইতোপূর্বে প্রচার করে থাকে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো, অনতিবিলম্বে তা ডিলিট করা এবং এটি যে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা।

✪ আল্লাহর রসুলের নামে মিথ্যাচারে ভয়াবহতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস প্রচারের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য:

মনে রাখা কর্তব্য যে, মানুষের সাথে সাধারণ মিথ্যা কথা এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা কথা এক নয়। সাধারণ মিথ্যা কথা হারাম, কবিরা গুনাহ এবং মুনাফেকির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হাদিসের নামে মিথ্যাচার করার পরিণতি এর থেকেও ভয়াবহ। কেউ জেনে বুঝে তা করলে তার পরিণতি জাহান্নাম।

إنَّ كَذِبًا عَلَيَّ ليسَ كَكَذِبٍ علَى أَحَدٍ، مَن كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

“আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা), পরিচ্ছেদ: ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ গুরুতর অপরাধ]

কেননা এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা সমাজের ছড়িয়ে পড়ে এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামে বিকৃতি সাধিত হয়।
তাই বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলাম বিষয়ে কোন কিছু প্রচারের আগে তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা এবং তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া হওয়া অপরিহার্য। অন্যথায় ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রচার ও ইসলাম বিকৃতির অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পাশাপাশি তা প্রচারকারীর আমলনামায় গুনাহের জারিয়া বা প্রবহমান গুনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। যত মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং ইসলাম সম্পর্কে সব ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সাংগঠনিক জাহেলিয়াত এবং বিদআতি বাইয়াত

  প্রশ্ন-১: আমাদের গ্রামে একটা আহলে হাদিস মসজিদ আছে। এখানে এখন যারা মসজিদ কমিটিতে আছে তারা বলছে যে, সংগঠন করা বা না করা ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ চাইলে সংগঠন করবে আর কেউ না চাইলে করবে না। এর জন্য বিভেদ করা যাবে না। মসজিদের ইমাম সংগঠন করেন কিন্তু তিনিও খুতবায় একই কথা বলেছেন। কিন্তু এক পক্ষ আছে, যারা আমির মানা ও সংগঠন করাকে ‘ফরজ’ বলছেন। তারা সংগঠনের কেন্দ্র থেকে নেতাদেরকে এনে নিজেদের মত করে দশ জনকে নিজেদের ইচ্ছে মত সাংগঠনিক পদ দিয়ে দিয়েছে-যাদের ভিতর এমন লোকও রয়েছে যারা আদতে নামাজই পড়ে না। এখন তারা বর্তমান মসজিদ কমিটিকে বাতিল করতে চাচ্ছে এবং বলছে, যারা সংগঠন করে না তারা যেন মসজিদে না আসে। কেউ সংগঠন না করলে সে মসজিদের কোনও দায়িত্বেও থাকতে পারবে না। এখন করণীয় কী? এ নিয়ে হয়তো বিশাল এক মারামারি হতে পারে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

উত্তর: ব্যবস্থাপনার ভাষায়, বিশেষ কোনও লক্ষ্য অর্জনের জন্য যখন কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয় এবং ধারাবাহিকভাবে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে তাকে সংগঠন (organisation) বলে।”
সংগঠনের উদ্দেশ্য হল, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। সংগঠনের ফলে অনেক বড় বড় জটিল ও ব্যয়বহুল কাজ খুব সহজে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। কারণ এখানে দক্ষ ও উপযুক্ত জনশক্তির মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিত শ্রম, দক্ষতা, জ্ঞান-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, কলাকৌশল, অর্থ ইত্যাদি কাজে লাগানো হয়।

সুতরাং পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাওয়াতি কাজের ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা জায়েজ। বিজ্ঞ আলেমদের মতে, আল্লাহ ভীতি ও সৎ কর্মে পারস্পারিক সাহায্য-সহযোগিতা, মানুষের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে সংগঠন করা কল্যাণকর এবং এর পর্যাপ্ত উপকারিতা রয়েছে।

কিন্তু যারা সংগঠন করাকে ‘ফরজ’ বলেছেন তারা ভুলের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তারা মুসলিমদের জামাআত এবং আমিরের আনুগত্য সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে স্পষ্টই অপব্যাখ্যা করছে। কেননা হাদিসে বর্ণিত জামাআত দ্বারা উদ্দেশ্য, আল্লাহর কিতাব ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণকারী এবং শরিয়তের পাবন্দ মুসলিমগণ। তারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করুক না কেন। তাদের সংখ্যা কম বা বেশি যাই হোক না কেন। এমনকি চতুর্দিকে ফিতনা-ফ্যাসাদের সময় একজন ব্যক্তিও যদি আল্লাহর দীনকে আঁকড়ে থাকে তাকেও ‘জামাআত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আর আমির দ্বারা উদ্দেশ্য মুসলিম শাসক এবং তার প্রতিনিধি; তথাকথিত সংগঠনের আমির নয়।

“যারা সংগঠন করবে না তারা মসজিদে যেন না আসে” এমন বক্তব্য মানুষকে আল্লাহর ঘর থেকে বাধা দেওয়ার নামান্তর-যা স্পষ্টতই জুলুম এবং হারাম। আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا
“আর তার চাইতে কে বড় জালিম (অত্যাচারী) আর কে আছে যে, আল্লাহর মসজিদ সমূহে আল্লাহর নামের জিকির করতে বাধা প্রদান করে আর সেগুলোর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে?” [সূরা: বাকারা: ১১৪]
আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে জাহেলদেরকে ‘সাংগঠনিক জাহেলিয়াত’ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

 প্রশ্ন-২ : কোন একটি ইসলামি সংগঠনের দীনী কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে সমর্থন ও সহায়তার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে শপথ করে সেই দলের সাথে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। অত:পর জানা গেল যে, সেই দলের আকিদা-মানহাজ ত্রুটিপূর্ণ এবং তারা বিদআত ও ভ্রান্ত পথের অনুসারী। এমতাবস্থায় সেই দলের বাইয়াত ত্যাগ করে ফিরে আসলে কি আল্লাহর নামে কসম ভঙ্গের কাফফারা দেওয়া কি জরুরি?
উত্তর: কোনও কথিত ইসলামি সংগঠন (চাই সুন্নাহ পন্থী হোক বা বিদআত পন্থী হোক) অথবা পীরের হাতে বাইয়াত করা বিদআত। বিশেষ কোনও তরিকার পীরের নিকট বাইয়াত গ্রহণ হল, ভ্রান্ত সুফিবাদি বিদআতি বাইয়াত আর কথিত ইসলামি সংগঠনের আমির বা সংগঠনের কোনও দায়িত্বশীলের নিকট বাইয়াত নেওয়া হল, আধুনিক বিদআত।

কেউ অজ্ঞতা বশত তা করে থাকলে তার জন্য তা প্রত্যাখ্যান করা/ভঙ্গ করা জরুরি। কারণ বিদআতি কাজের উপরে স্থির থাকা জায়েজ নাই। কেননা ইসলামি শরিয়তে বাইয়াতের একমাত্র হকদার হচ্ছে, ওলিউল আমর তথা মুসলিম শাসক বা তার পক্ষ থেকে তার নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. বলেন, ওলিউল আমর (মুসলিম শাসক) ছাড়া আর কারও নিকট বাইয়াত নেওয়ার কোনও ভিত্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই।
فلا نعلم أصلًا لهذه البيعة، إلا ما يحصل لولاة الأمور، فإن الله شرع سبحانه أن يبايع ولي الأمر على السمع والطاعة في المنشط والمكره والعسر واليسر، وفي الأثرة على المبايع، كما بايع الصحابة وأرضاهم نبينا -عليه الصلاة والسلام- فالبيعة تكون لولاة الأمور على مقتضى كتاب الله وسنة رسوله -عليه الصلاة والسلام- وأن يقولوا بالحق أينما كانوا، وألا ينازعوا الأمر أهله، إلا أن يروا كفرًا بواحًا عندهم من الله فيه برهان.
أما بيعة الصوفية بعضهم لبعض فلا أعلم لها أصلًا، وهذا قد يسبب مشاكل، فإن البيعة قد يظن المبايع أنه يلزم المبايع طاعته في كل شيء، حتى ولو قال بالخروج على ولاة الأمور، وهذا شيء، شيء منكر لا يجوز.
তবে যদি আল্লাহর নামে কসম করা হয়ে থাকে তাহলে কসম ভঙ্গ করার জন্য কাফফারা দেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate