Monday, January 23, 2023

পরপুরুষ, পরমহিলা, অমুসলিম ইত্যাদির নিকট কাপড় ধৌত করা, ইস্ত্রি করা বা সেলাই করা সংক্রান্ত শরঈ মাসায়েল

 প্রশ্ন:

১. কাজের মহিলা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
২. কোনও মহিলা তার স্বামী-সন্তান ব্যতিরেকে তার শ্বশুর, দেবর-ভাসুর ইত্যাদি বাড়ির অন্যান্য পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
৩: মহিলাদের জামা-কাপড়, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা ইত্যাদি পোশাক আয়রন/ইস্ত্রি করার জন্য দোকানে দেওয়া জায়েজ হবে‌ কী?
৪. পাক অথবা নাপাক কাপড় বিধর্মী পরিচালিত লন্ড্রিতে ধৌত করতে দিলে তা কি পবিত্র হবে? অর্থাৎ সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে কী?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রদান করা হল:
وبالله التوفيق

◈ প্রশ্ন ১. কাজের মহিলা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
উত্তর: কাজের মহিলা যে বাড়িতে কাজ করে সে বাড়ির কর্তা ও ছেলেদের আন্ডারওয়্যার ধৌত করতে পারে। এতে কোনও বাধা নেই। তবে যদি আন্ডার ওয়্যারে বীর্য দৃশ্যমান থাকে তাহলে যারা তা ব্যবহার করে তাদের উচিৎ, সে অবস্থায় কাজের মহিলাকে ধোয়ার জন্য না দেয়া বরং তাদের উচিৎ, বীর্য লেগে শুকিয়ে গেলে তা আঙ্গুল দ্বারা ঘষে ফেলা বা ঐ অংশটুকু পানি দ্বারা পরিষ্কার করে নেওয়া। কারণ এটি স্বভাবত: একজন নারীর জন্য লজ্জাবোধের কারণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হাম্মাম ইবনে হারিস রাহ. বর্ণনা করেন যে,
ضَافَ عَائِشَةَ ضَيْفٌ فَأَمَرَتْ لَهُ بِمِلْحَفَةٍ صَفْرَاءَ فَنَامَ فِيهَا فَاحْتَلَمَ فَاسْتَحْيَا أَنْ يُرْسِلَ بِهَا وَبِهَا أَثَرُ الاِحْتِلاَمِ فَغَمَسَهَا فِي الْمَاءِ ثُمَّ أَرْسَلَ بِهَا فَقَالَتْ عَائِشَةُ لِمَ أَفْسَدَ عَلَيْنَا ثَوْبَنَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيهِ أَنْ يَفْرُكَهُ بِأَصَابِعِهِ وَرُبَّمَا فَرَكْتُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِأَصَابِعِي ‏
একবার আয়েশা রা. এর কাছে একজন মেহমান আগমণ করলো। তিনি তাকে একটি হলুদ রঙ্গের চাদরে বিশ্রাম করতে দিলেন। উক্ত মেহমান তা গায়ে জাড়িয়ে ঘুমালেন। কিন্তু ঘুমের মধ্যে তার স্বপ্নদোষ হলে বীর্যের দাগসহ চাদরটি আয়েশা রা.-এর কাছে ফেরত পাঠাতে তার খুব লজ্জাবোধ হল। তাই এটি পানিতে চুবিয়ে ধুয়ে তিনি তা ফেরত পাঠালেন। আয়েশা রা. তা দেখে বললেন, সে আমাদের কাপড়টা নষ্ট করল কেন? আঙ্গুল দিয়ে তা ঘষে ফেললেই তো যথেষ্ট হতো। অনেক দিনই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে আমি তা অঙ্গুল দিয়ে রগড়ে ঘষে সাফ করে দিয়েছি।” [ইবনে মাজাহ ৫৩৮, মুসলিম, তিরমিযি হা/১১৬-আল মাদানি প্রকাশনী]

◈ প্রশ্ন ২. কোনও মহিলা কি তার স্বামী-সন্তান ছাড়া শ্বশুর, দেবর, ভাসুর ইত্যাদি বাড়ির অন্যান্য পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া স্বামীর বাবা (শ্বশুর), ভাই (দেবর-ভাসুর) ইত্যাদি লোকজনের বিভিন্ন ধরণের সেবা করা, কাপড় ধৌত করা ইত্যাদি আবশ্যক না হলেও এটি আমাদের সমাজের প্রচলিত রীতি। অর্থাৎ আমাদের সমাজে যৌথ পরিবারে সাধারণত বৌরাই বাড়ির সকল সদস্যের জামা-কাপড় ধৌত করে থাকে।
তাই স্বামী যদি এতে অনুমতি বা নির্দেশ দেয় তাহলে স্ত্রী তার স্বামী-সন্তান ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাপড়-চোপড়ও ধৌত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অন্য পুরুষদের আন্ডার ওয়্যারও ধৌত করতে পারে যদি ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকে। কিন্তু স্বামী ব্যতিরেকে অন্য কোন পুরুষের আন্ডারওয়ার ধৌত করার বিষয়টি সামাজিকভাবে ঘৃণিত এবং আত্মমর্যাদা পরিপন্থী কাজ। তাই কোন মহিলাকে এই দায়িত্ব দেওয়া অনুচিত। অবশ্য বর্তমান আধুনিক যুগে ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে কাপড় ধৌত করা হলে এ ক্ষেত্রে সমস্যা আরও কমে যায় আল হামদুলিল্লাহ।

◈ প্রশ্ন ৩. মহিলাদের জামা-কাপড়, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা ইত্যাদি পোশাক আয়রন/ইস্ত্রি করার জন্য দোকানে দেওয়া জায়েজ হবে কী?
উত্তর: মহিলাদের ব্যবহৃত পোশাক প্রয়োজনবোধে ধৌত ও ইস্ত্রি করার উদ্দেশ্যে পুরুষ পরিচালিত লন্ড্রিতে বা ছেঁড়া-ফাটা কাপড় সেলাই করার উদ্দেশ্যে পুরুষ দর্জির দোকানে দিতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কেননা ইসলামি শরিয়তে এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কোনও নারী যদি ব্যক্তিগত আত্মমর্যাদার কারণে তার ব্যবহৃত পোশাক কোন পুরুষকে দেখাতে না চায় তাহলে তা‌ ধৌত করা, ইস্ত্রি/আইরন করা বা প্রয়োজনীয় সেলাইয়ের কাজ সম্ভব হলে কোন নারীর মাধ্যমে সম্পন্ন করবে অথবা নিজেই করবে।

◈ প্রশ্ন ৪. পাক অথবা নাপাক কাপড় বিধর্মী পরিচালিত লন্ড্রিতে ধৌত করতে দিলে কি তা পবিত্র হবে? অর্থাৎ সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে কি?
উত্তর: কোন অমুসলিমও যদি পাক পানি দ্বারা ভালোভাবে কাপড় ধৌত করে তাহলে তা পাক হবে। পক্ষান্তরে কোন মুসলিমও যদি নাপাক পানি দ্বারা কাপড় ধৌত করে তাহলে তা পাক হবে না। মোটকথা, কোন পানি দ্বারা কাপড় ধৌত করা হয় সেটাই ধর্তব্য। যে ধৌত করল সে মুসলিম কি না তা ধর্তব্য নয়। উল্লেখ্য যে, অমুসলিমরা ঈমান না থাকার কারণে বিধানগতভাবে নাপাক হলেও বাহ্যিকভাবে তাদের শরীর নাপাক নয় যদি তারা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সুতরাং তাদের সেলাই কৃত পোশাক-আশাক এবং তাদের তৈরি কৃত আসবাবপত্র ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ তৎকালীন দামেশক (সিরিয়া) ও ইয়েমেন থেকে আমদানিকৃত অমুসলিমদের তৈরি কৃত পোশাক-আশাক এবং আসবাব সামগ্রী ব্যবহার করতেন। আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফরজ গোসলের বিধান

 প্রশ্ন: রাতে স্বপ্নদোষ হলে এই শীতের সকালে গোসল সম্ভব নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে চাইলে কী করা উচিত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: স্বপ্নদোষ হওয়া বড় নাপাকির অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। সুতরাং এমনটি ঘটলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় পানি গরম করে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যে, সেখানে পানি গরমের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের কারণে অসুস্থ হওয়ার কিংবা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে এক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ। কিন্তু পানি গরমের ব্যবস্থা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না।
◆ আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা তাগাবুন: ১৬]
◆ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“আমি যদি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে তা পালন করবে।” [সহিহ বুখারি]

◆ হাদিসে আরও এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
احتَلمتُ في ليلةٍ باردةٍ في غزوةِ ذاتِ السُّلاسلِ فأشفَقتُ إنِ اغتَسَلتُ أن أَهْلِكَ فتيمَّمتُ، ثمَّ صلَّيتُ بأصحابي الصُّبحَ فذَكَروا ذلِكَ للنَّبيِّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فقالَ: يا عَمرو صلَّيتَ بأصحابِكَ وأنتَ جنُبٌ ؟ فأخبرتُهُ بالَّذي مَنعَني منَ الاغتِسالِ وقُلتُ إنِّي سَمِعْتُ اللَّهَ يقولُ:( وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) فضحِكَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ولم يَقُلْ شيئًا
“যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় এক প্রচণ্ড শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হল, আমি যদি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকজনকে নিয়ে সালাত আদায় করলাম। পরে তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেন, “হে আমর, তুমি নাকি জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছো?” তখন আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণী শুনেছি, (আল্লাহ বলেছেন,)
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’’ (সূরা নিসা: ২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।” [আবু দাউদ-সহিহ] এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মতির মাধ্যমে এমন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
إذا كان في محل لا يستطيع فيه تدفئة الماء وليس هناك كن يستكن به للغسل بالماء الدافي وخاف على نفسه فإنه يصلي بالتيمم
ولا حرج عليه
“যদি সে এমন জায়গায় থাকে যেখানে সে পানি গরম করতে পারে না এবং গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্য সেখানে এমন কোনো ঘর না থাকে যেখানে (ঠাণ্ডা থেকে) আত্মরক্ষা করবে এবং (ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের কারণে) শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করবে। এতে কোনও আপত্তি নেই।” [binbaz]

🔸উল্লেখ্য যে, এই বিধান স্বপ্নদোষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলন কিংবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের মাধ্যমে জুনুবি (নাপাক) হওয়ার ক্ষেত্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ও প্রসূতি নারীর পবিত্রতার জন্য গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

তাবলিগ জামাতকে না বলার ১২টি কারণ

 الحمد لله و الصلاة و السلام على رسول الله -أما بعد:

নিম্নে তাবলিগ জামাতকে ‘না’ বলার বা প্রত্যাখ্যান করার অসংখ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুতর ১২টি কারণ উল্লেখ করা হল:

◈ ১. তাবলিগ জামাতের অবস্থা হল, ঘরের ফাউন্ডেশন মজবুত ভাবে তৈরি না করে ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকার মত বা ভেঙ্গে পড়া ঘরকে মজবুত ভিত্তির উপরে নির্মাণ করার পরিবর্তে কোনমতে ঠেকা দিয়ে রাখার মত কিংবা যে গাছের শেকড়ে ঘুণ ধরেছে তার মূল সমস্যা বাদ দিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালার মত। কেননা মানুষের আকিদা সংশোধন, শিরক, বিদআত, ইসলামবিরোধী নানা মতবাদ, ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার থেকে এদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লম্বা দাড়ি রাখা, মাথায় পাগড়ি পরা, লম্বা জুব্বা পরা, বোরকা পরা, মিসওয়াক করা, চিল্লায় বের হওয়া ইত্যাদি।

◈ ২. চতুর্দিকে শিরকের জমজমাট আসর, মানুষ কবর পূজায় লিপ্ত ও বিভিন্ন বাতিল দল ও ফিরকায় দিশেহারা। কিন্তু এসব ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে!

◈ ৩. মানুষ বিদআত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি ‘হাজার বছরের ঐক্য’ নষ্ট হবে এবং মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি হবে।

◈ ৪. এই জামাতের ভিত্তি জাহালত বা মূর্খতার উপরে প্রতিষ্ঠিত। ফলে মানুষকে দীনী ইলম বা ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানান্বেষণের দিকে উৎসাহিত করার চেয়ে তাদের কথিত ‘চিল্লা’য় বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করাই তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। ফলশ্রুতিতে মূর্খরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফাজায়েলের কিতাব নিয়ে জনগণের সামনে ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর স্বভাবতই ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ও ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে।
অনুরূপভাবে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাও পাড়ায়-মহল্লায় দ্বীন সম্পর্কে সাধারণ মহিলাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ও বিদআতি কথাবার্তা প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে কথা বলা এবং আমল করার পূর্বে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।

◈ ৫. দীনী ইলম অর্জনে অনীহা ও গুরুত্ব হীনতা:

যার কারণে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাবলিগের একজন মুরুব্বি যে, ১০-১৫ বা ২০ বছর ধরে তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত তাকে যদি ইসলামের প্রাথমিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তার উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। যেমন:
– ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
– ইসলাম এবং ঈমানের রোকন কয়টি ও কী কী?
– দীনের স্তর কয়টি ও কী কী?
– ইবাদত কাকে বলে?
– ইবাদতের রোকন কয়টি ও কী কী?
– ইবাদত কবুলের শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
– ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সঠিক অর্থ এবং এর শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
– এছাড়াও শিরক, কুফর, নিফাক, উসিলা, শাফাআত ইত্যাদি। বিষয়টি আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

◈ ৬. উদ্ভট কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল-জইফ হাদিস বর্ণনা:
এই মূর্খদের ওয়াজ বা বয়ানের মূল ভিত্তি হলো, বুজুর্গদের বুজুর্গির বর্ণনা, উদ্ভট স্বপ্ন, কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-জইফ হাদিসের বয়ান এবং ভিত্তিহীন ফজিলতের ফুলঝুরি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনার পরিণতি জাহান্নাম।

◈ ৭. সংস্কার ও সংশোধনে অনীহা:

তাবলিগ জামাতের প্রধান সিলেবাস ফাজায়েল নামক কিতাবগুলো অসংখ্য ভ্রান্ত কথাবার্তা, জাল-জইফ হাদিস এবং ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে পরিপূর্ণ। এসব কিতাবের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় শত শত গ্রন্থ রচিত হলেও তারা মোটেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না‌। বরং তারা উল্টো সংস্কার প্রত্যাশীদেরকে গালাগালি, নানা অপবাদ ও তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করে ছলে-বলে-কৌশলে ভুলগুলোকেই সঠিক প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত!

◈ ৮. দলাদলি, কোন্দল ও রক্তপাত:

এই জামাতটি বর্তমানে দুই ভাগে (জুবায়ের পন্থী ও সাদ পন্থী) বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে চরম কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। মসজিদ ভাগাভাগি, মসজিদে মারামারি, এক মসজিদে দু গ্রুপের আলাদা আলাদা জামাত, একই ময়দানে আলাদা আলাদা ইজতিমা। এমনকি একদল আরেক দলকে কাফের বা ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল বলেও আখ্যায়িত করছে। সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দুই গ্রুপের লোমহর্ষক রক্তাক্ত মারামারি জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।

◈ ৯. এদের মাধ্যমে কিছু মানুষ দাড়ি ছেড়েছে, মাথায় টুপি পরেছে, মহিলারা বোরকা পরেছে, নামাজি হয়েছে, নানা পাপকর্ম থেকে ফিরে এসেছে তা ঠিক। কিন্তু শিরক যুক্ত ঈমান এবং বিদআত যুক্ত আমল আল্লাহর কাছে কোনই কাজে লাগবে না সে ব্যাপারে তারা নিতান্তই বেখবর। তাই তো আল্লাহ বলেছেন,
قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِینَ أَعۡمَـٰلًا
ٱلَّذِینَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا وَهُمۡ یَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ یُحۡسِنُونَ صُنۡعًا
“(হে নবী আপনি বলুন), আমি কি তোমাদেরকে সেসব মানুষের ব্যাপারে বলবো যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হল, সে সব লোক, যাদের কর্ম প্রচেষ্টা দুনিয়ার জীবনেই বাতিল যায় অথচ তারা মনে করে যে, তারা ভালো কাজ করেছে!” [সূরা কাহফ: ১০৩ ও ১০৪]

◈ ১০. এই জামাতটি নিজেদের টাকায় দাওয়াতি কাজ করে বলে গর্ব করে। কিন্তু তারা নিজেদের টাকায় মূলত: বিদআত প্রচারে লিপ্ত। নিজে বিদআত করার চেয়ে বিদআত প্রচারের ভয়াবহতা বেশি। কারণ এর দ্বারা যত মানুষ বিদআতি কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে।

◈ ১১. কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা:

তাবলিগ জামাত জি/হাদের আয়াতগুলোকে তাদের কথিত চিল্লা ও গাশতের পক্ষে ব্যবহার করে, ‘চিল্লা’র জন্য নির্ধারিত ৩ দিন, ৪০ দিন (এক চিল্লা), ১২০ দিন (তিন চিল্লা) বা ১ সাল ইত্যাদির পক্ষে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এগুলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা, টঙ্গীর মাঠে এক ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ৪৯ কোটি গুণ সওয়াবের বর্ণনা, তিন বার টঙ্গীর ইজতিমায় শরিক হলে এক হজের সমপরিমাণ সওয়াব বা এটিকে ‘গরিবের হজ’ বলা। (সাধারণ কিছু মূর্খ এমন কথা বললেও তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র থেকে এর প্রতিবাদ বা সংশোধনী মূলক বক্তব্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না)।
টঙ্গী ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ হল, আখেরি মুনাজাত। মানুষ এখন ফরজ সালাত আদায়ের চাইতে আখেরি মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরি মুনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য নামাজি, বেনামাজি, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদআতি, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি মানুষ দলে দলে টঙ্গীর ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকায় বসে, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতিমায় যোগদান করে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি এই মুনাজাত সম্প্রচারিত হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন আমিন বলতে থাকে। সে দিন ঢাকা শহরে অফিস-আদালতে অঘোষিত ছুটি পালিত হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই আখেরি মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করতে পারলে জীবনের সব গুনাহ মোচন হয়ে যায়। অথচ এভাবে নিয়ম করে সম্মিলিত মুনাজাত করাই বিদআত (দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত কাজ)। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

◈ ১২. উম্মতের শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক সালাফি আলেমগণ (যেমন: শাইখ বিন বায, শাইখ উমাইমিন, শাইখ আলবানি, শাইখ সালেহ আল ফাওযান প্রমুখ) তাবলিগ জামাতের সাথে বের হওয়া, তাদের বই পড়া এবং তাদের ইজতিমায় শরিক হওয়াকে হারাম বলেছেন এবং উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

➤ তাবলিগ জামাতের কোথায় কী সমস্যা এবং সেগুলোর খণ্ডন বিষয়ে নিম্নোক্ত বইগুলো পড়া যেতে পারে:

■ ১. শাইখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত তুওয়াইজিরি কর্তৃক রচিত এবং শায়খ মুখলেসুর রহমান বিন মনসুর অনুদিত নিম্নোক্ত গ্রন্থটি:
القول البليغ في التحذير عن جماعه التبليغ
“প্রচলিত তাবলীগ জামাত •সংশয় •সতর্কতা •সমাধান”
বইটি ক্রয় করা যাবে এখান থেকে:
■ ২. তাবলীগ জামা’ য়াত ও দেওবন্দিগণ
সম্পাদনায়: শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম
বইটি ক্রয় করা যাবে এখান থেকে:
➣ অথবা এখান থেকে:
■ ৩. ডাউনলোড করুন: (PDF): ইলিয়াসী তাবলীগ ও দীনে ইসলামের তাবলীগ

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate