Sunday, October 31, 2021

অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ ও জিহ্বার হক

জিহ্বার কার্যকারিতা – জিহ্বা মহান আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি রহস্যের অন্যতম একটি। সাধারণত জিহ্বাকে আমরা এক টুকরো গোশত মনে করি, কিন্তু জিহ্বা হাড়বিহীন এক টুকরো গোশত হলেও এর রয়েছে অদম্য শক্তি। জিহ্বার শক্তি যে শুধু বর্তমানের উপর রয়েছে তা নয়, বরং জিহ্বা বর্তমান, ভবিষ্যত ও অতীতে সমানভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে যা হচ্ছে, অতীতে যা হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে, সব সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারে জিহ্বা।

• পক্ষান্তরে, চোখ দিয়ে শুধু বর্তমান উপস্থিত বস্তু দেখা যায়।
• কান দিয়ে কেবল বর্তমানে উচ্চারিত শব্দগুলোই শোনা যায়।
• জিহ্বা বুদ্ধির প্রতিনিধিস্বরূপ আর বুদ্ধির সীমানা তো সুবৃস্তিত।
তেমনি বুদ্ধিতে যা আসে এবং চিন্তা ও কল্পনা করে বুদ্ধি যা নিশ্চিত করে, জিহ্বা তাই বর্ণনা করতে সক্ষম হয়।
জিহ্বা ছাড়া অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের এরুপ শক্তি নেই, কেননা
আকার ও রঙ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর উপর চোখের অধিকার নেই।
আওয়াজ ব্যতীত অন্য কিছু উপর কানের অধিকার নেই।

তেমনিভাবে শরীরের এক একটা অঙ্গ এক একটা বিষয়ের উপর শক্তি প্রয়োগ করে থাকে। আর সমস্ত দেহরাজ্যের উপর মনের যেরূপ শক্তি তেমনি মনের উপর জিহ্বারও শক্তি রয়েছে। মনের সাথে জিহ্বা সমানভাবে কাজ করতে পারে। মন যেটা সংগ্রহ করে কিংবা ছবি আকারে গ্রহণ করে, জিহ্বা তা ভাষায় প্রকাশ করে মনকে সাহায্য করে।
মনের উপর জিহ্বার প্রভাব – একদিকে মন থেকে ছবি বা ভাব সংগ্রহ করে জিহ্বা যেরূপ ভাষায় প্রকাশ করে, তেমনি মনও জিহ্বার প্রকাশ থেকে ছবি বা ভাব গ্রহণ করে নিজের মনের মধ্যে অংকন করে নিতে পারে। এজন্য জিহ্বা যা প্রকাশ করে মন তা হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এক নতুন ভাব সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, ক্রন্দনের সময় বা কোন কিছু পড়ার সময় জিহ্বা প্রকাশ করে, আর মন তা আঁকড়ে ধরে। আবার মানুষ যখন আনন্দ অনুভব করে, তখন আনন্দে তার মনও প্রফুল্ল হয় এবং জিহ্বাও তাতে সায় দেয়।
এভাবে,মানুষ যেরূপ কথা বলে থাকে,তার মনেও অনুরূপ ভাব জন্মে থাকে। আর এজন্যই অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা শ্রবণ করলে মন অন্ধকারময় হয়ে যায়। ফলে অন্তরে কোন ভাল কথা স্থান পায় না। আবার জিহ্বার ভাল ও উত্তম কথা উচ্চারণের দ্বারা মন সুন্দর ও পবিত্র হয়।
জিহ্বার হেফাযত জরূরী – জিহ্বার হেফাযত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জিহ্বা বিভিন অনিষ্টের মূল। সেসব অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য জিহ্বার হেফাযত করা কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,”যে ব্যক্তি দু’ রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু’ চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হিজাযতের জিম্মাদার হবে, আমি তাকে জান্নাতে দাখিলের জিম্মাদার হব। “
• জিহ্বা দ্বারা মানুষ মিথ্যা কথা বলে মারাত্মক গুনাহগার হয়।
• জিহ্বার দ্বারা মানুষ পরচর্চা, পরনিন্দা গীবত চোগলখুরি করে গুনাহ কামায়।
• জিহ্বার দ্বারা কাউকে গালি দিয়ে কিংবা ঝগড়া করে পাপ করে।
এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”যে ব্যক্তি চুপ থাকে,সে মুক্তি পায়”। তিনি আরো বলেন,”পেট,যৌনেন্দ্রীয় ও জিহ্বার ক্ষতি হতে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, সে সকল বিপদ হতে রক্ষা পায়।”
হযরত মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন,কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় মুখের থেকে জিহ্বা বের করে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলেন। অর্থাৎ ইঙ্গিত করলেন,যবানের হিফাযত করা সবচেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপুর্ণ কাজ।

হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একবার হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু কে দেখতে পেলাম, তিনি নিজের হাত দ্বারা নিজের জিহ্বা টানছেন ও রগড়াচ্ছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধি ! আপনি একি করছেন? তিনি বললেন, “এ হাড়বিহীন ক্ষুদ্র অঙ্গটি আমার উপর অনেক দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জিহ্বা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল”।
মহানবী রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “সহজতম ইবাদত তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব”। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেছেন,”যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও কিয়ামতের উপর ঈমান আনে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে অতিরিক্ত কথা বলে,তার অধিক ভুল হয়। আর যে বড় পাপী হয়ে যায় তার জন্য দোযখের আগুন উপযুক্ত।”

জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বা অশ্লীল কথা বলা এবং বিভিন্নভাবে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্ট করা ছাড়াও অনেকে আবার জিহ্বা দ্বারা নানা স্বাদের হারাম খাবার চেখে আমল আখলাক বরবাদ করে। এছাড়াও জিহ্বা দ্বারা অন্যকে কুপরামর্শ বা অসৎ প্ররোচনা দিয়ে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ করে। ইত্যকার বিভিন্ন উপায়ে জিহ্বার দ্বারা পাপ সংঘটিত হয়। এসব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে জিহ্বার হেফাযত করা অত্যন্ত জরুরী। সেই সাথে জিহ্বাকে মহান আল্লাহর যিকির, কুরআন তিলাওয়াত, দ্বীনী আলোচনা ও দ্বীনের দাওয়াত প্রভৃতি সৎ কাজে নিয়োজিত করে অনেক নেকি অর্জন করা যায়।
মূল :কবীরা গুনাহ – ইমাম আযযাহবী (রহ)

যুবকদের প্রতি ৭৫টি নসীহত

 সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি বলেন: “তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আমি নসীহত করেছি এবং তোমাদেরকেও নসীহত করছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা নিসা-১৩১)

দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর ও রাসূল মুহাম্মদের উপর। যিনি বলেন: আমি তোমাদেরকে নসীহত করছি আল্লাহ ভীতির জন্য, ধর্মীয় নেতার কথা শোনা ও তাঁর আনুগত্য করার জন্য। আল্লাহ ভীতি হলো তাঁর আদেশ মান্য করা নিষেধ থেকে দূরে থাকা। তাকওয়াই হলো দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।

নিম্নে কতিপয় মূল্যবান ইসলামী নসীহত সন্নিবেশিত করা হল। নছীহতগুলো দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন- ইবাদত-বন্দেগী, লেন-দেন, আদব-শিষ্টাচার, চরিত্র-ব্যবহার ইত্যাদি। যে মুসলিম যুবক প্রয়োজনীয় ও উপকারী বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, আমরা সে যুবকের প্রতি তার স্মরণের উদ্দেশ্যে এ নছীহতগুলো পেশ করছি। আর স্মরণ মুমিনদের উপকারে আসবে। আমরা আল্লাহর দরবারে আশা রাখি- যে ব্যক্তি এগুলো শুনবে বা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে উপকৃত করুন। যে ব্যক্তি এগুলো লিখবে বা প্রচার করবে বা আমল করবে তাকে সুমহান প্রতিদান ও পুরস্কারে ভূষিত করুন। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্ম সম্পাদনকারী।

নছীহতগুলো নিম্নরূপ:

  1. আল্লাহ তায়ালার জন্য নিয়তকে পরিশুদ্ধ করবে। কথায় ও কাজে মানুষের প্রশংসা পাওয়া কিংবা দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য রিয়া পরিত্যাগ করবে।
  2. যাবতীয় কথা, কাজ ও আচার-আচরণে মুহাম্মদ মাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করবে।
  3. আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে। যাবতীয় নির্দেশ পালন এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে।
  4. আল্লাহর নিকট খাঁটি ভাবে তওবা করবে। বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
  5. তোমার কথা ও কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথা স্মরণ রাখবে। জেনে রাখ আল্লাহ্‌ তোমাকে দেখেন এবং তোমার হৃদয়ের গোপন খবরও তিনি জানেন।
  6. আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, নবী-রসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবস ও তকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করবে।
  7. বিনা দলীলে কারো তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করবে না।
  8. ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করবে।
  9. (রিয়াযুস্‌ সালেহীন) কিতাবটি সংগ্রহ করবে। নিজে পড়বে পরিবারের অন্যদেরকেও  পড়ে শোনাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়েমের (যাদুল মাআদ) গ্রন্থটিও সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। (কিতাব দুটি বাংলায় পাওয়া যায়।)
  10. প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল নাপাকি থেকে সর্বদা পবিত্র থাকবে।
  11. জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করতে সচেষ্ট থাকবে। বিশেষ করে এশা ও ফযর নামায।
  12. দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য পরিত্যাগ করবে। যেমন- কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসূন। এবং ধুমপান করে নিজেকে এবং মুসলমানদেরকে কষ্ট দিবে না।
  13. জামায়াতের বিশেষ ফজিলত হাসিলের লক্ষ্যে সর্বদা জামায়াতে নামায আদায় করবে।
  14. ফরয যাকাত আদায় করবে। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে হক্বদারেদের ব্যাপারে কৃপণতা করবে না।
  15. আগে ভাগে জুমআর নামাযে যাওয়ার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয় আযানের পর মসজিদে আসার অভ্যাস পরিত্যাগ করবে।
  16. ঈমানের সাথে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশায় রমযানের রোযা পালন করবে। এর মাধ্যমে তোমার পূর্বাপর যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
  17. শরীয়ত সম্মত কোন ওজর ব্যতীত রমযান মাসের কোন একটি রোযাও পরিত্যাগ করবে না। অন্যথা গুনাহগার হয়ে যাবে।
  18. রমযানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে বিশেষ করে লায়লাতুল ক্বাদরে-ঈমান ও প্রতিদানের আশায় কিয়াম করবে। যাতে করে তোমার পূর্বকৃত পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
  19. যদি সামর্থবান হয়ে থাক তবে দ্রুত হজ্ব-ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর দিকে সফর কর। দেরী করা থেকে সাবধান হও।
  20. পবিত্র কুরআন অর্থসহ পড়ার চেষ্টা কর। কুরআনের আদেশ পালন কর, নিষেধ থেকে দূরে থাক। যাতে করে প্রভুর দরবারে কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হয় এবং কিয়ামত ময়দানে তোমার জন্য সুপারিশ করে।
  21. সর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল থাকবে- প্রকাশ্যে-গোপনে, দাঁড়ানো, বসা ও শোয়াবস্থায়-সর্বদাই। আল্লাহর জিকির থেকে কখনো গাফেল হবে না।
  22. যিক্‌রের মজলিসে (ইলমী অনুষ্ঠানে) বসবে। কেননা এধরণের মজলিস জান্নাতের বাগান।
  23. হারাম এবং গোপন বিষয় দেখা থেকে তোমার দৃষ্টিকে নত রাখবে। সেদিকে দৃষ্টিপাত থেকে সর্বদা সাবধান থাকবে। কেননা নিষিদ্ধ দৃষ্টি হল শয়তানের পক্ষ থেকে একটি বিষাক্ত তীর।
  24. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে না। চলাফেরায় কখনো অহংকারী ভাব প্রকাশ করবে না।
  25. রেশমের কাপড় বা স্বর্ণের কোন কিছু পরিধান করবে না। কেননা তা পুরুষদের জন্য হারাম।
  26. মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না। আর তোমার পরিবারের কোন মহিলাকেও পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে দেবে না।
  27. দাড়ি ছেড়ে দাও। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমার গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছেড়ে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)
  28. হালাল ছাড়া অন্য কিছু ভক্ষণ করবে না এবং হালাল ব্যতীত অন্য কিছু পান করবে না। তাহলে তোমার দুয়া কবুল হবে।
  29. খানা-পিনার সময় বিসমিল্লাহ্‌ বলবে। শেষ করলে আলহামদু লিল্লাহ বলবে।
  30. ডান হাতে খানা-পিনা করবে। লেন-দেনের ক্ষেত্রে ডান হাতে গ্রহণ করবে এবং ডান হাতেই প্রদান করবে।
  31. কারো প্রতি জুলুম করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে জুলুম অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে।
  32. মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে সাথী হিসেবে গ্রহণ করবে না। আর তোমার খানা যেন ভাল মানুষ ব্যতীত অন্যে না খায়।
  33. সাবধান! ঘুষ খাবে না। নিবেও না দিবেও না, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাও করবে না। কেননা এরূপ যে করে সে অভিশপ্ত।
  34. আল্লাহ্‌কে নাখোশ করে মানুষের সন্তুষ্টি চেও না। কেননা আল্লাহ তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।
  35. শরীয়ত সম্মত প্রতিটি বিষয়ে নেতৃবৃন্দের আনুগত্য করবে এবং তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে।
  36. সাবধান! কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না। আর সত্য সাক্ষ্যও গোপন করবে না। (যে ব্যক্তি উহা গোপন করবে তার অন্তর পাপী। আর তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পরিজ্ঞাত। (সূরা বাকারা-২৮৩)
  37. (সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর এক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করবে।) (সূরা লোকমান-১৭।) আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন তাই সৎকাজ এবং তাঁরা যা নিষেধ করেছেন তাই অসৎকাজ।
  38. ছোট-বড় সব ধরণের হারাম কাজ পরিত্যাগ কর। কখনো আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করবে না। এক্ষেত্রে কাউকে সহযোগিতাও করবে না।
  39. কোন ভাল কাজকেই ছোট মনে করবে না। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোন বস্তু পরিত্যাগ করাটাও একটা ঈমানী কাজ। লজ্জাবোধ ঈমানের অংশ।
  40. ব্যভিচারের নিকটবর্তী হবে না। আল্লাহ বলেন: ”তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা উহা অশ্লীলতা এবং খুবই নিকৃষ্ট কাজ।” (সুরা বানী ইসরাইল-৩২)
  41. পিতামাতার সাথে সাদাচার করবে। সাবধান! তাদের কথা অমান্য করবে না যদি না তারা ইসলাম বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তারা যদি ইসলাম বিরোধী কাজের নির্দেশ দেয় তবে অবস্থায়ও ভদ্রতা বজায় রেখে তাদের সে নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকবে।)
  42. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারে সাবধান হবে।
  43. প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাকে কষ্ট দিবে না। সে কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করবে।
  44. সৎ ব্যক্তি এবং ঈমানী ভাইদের সাথে ঘন ঘন সাক্ষাৎ করবে।
  45. শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালবাসবে। আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করবে। কেননা এটা হল – ঈমানের সর্বাধিক মজবুত হাতল।
  46. সৎব্যক্তিদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করবে। অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করবে।
  47. কোন মুসলিমকে বিপদগ্রস্থ অবস্থায় দেখলে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাবে এবং তাদেরকে আনন্দিত রাখার চেষ্টা করবে।
  48. নম্রতা, ধীর স্থিরতা এবং ধৈর্যাবলম্বন করবে। তাড়াহুড়া পরিত্যাগ করবে।
  49. অন্যের কথার মাঝে বাধা সৃষ্টি করবে না। সুন্দরভাবে তা শোনার চেষ্টা করবে।
  50. জানা-অজানা সকল মুসলিম ভাইকে সালাম দিবে।
  51. সুন্নতি সালাম দিবে। বলবে: আসসালামু ওয়া আলাইকুম। হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করাকেই যথেষ্ট মনে করবে না।
  52. কাউকে গালিগালাজ করবে না। খারাপ ভাবে কারো বর্ণনা দিবে না।
  53. কাউকে অভিশাপ দেবে না। এমনকি তা যদি চতুষ্পদ জন্তু বা কোন জড় বস্তুও হয়।
  54. কোন মানুষের ইজ্জতে কোন প্রকার অপবাদ দিবে না বা তার কুৎসা রটনা করবে না। কেননা এরূপ করা কবিরা গুনাহ।
  55. চুগলখোরি করবে না। অর্থাৎ ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনকে বলবে না।
  56. গীবত করবে না। (গীবত হল তোমার মুসলিম ভায়ের দোষের কথা তার অসাক্ষাতে কারো কাছে বলা)।
  57. কোন মুসলিমকে ভয় দেখাবে না এবং তাকে কোন প্রকার কষ্ট দিবে না।
  58. মানুষের মাঝে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। কেননা এটা হল একটি উত্তম আমল।
  59. জবানের হেফাজত করবে। ভাল কথা বা কাজের কথা বলবে, অন্যথা চুপ থাকবে।
  60. সত্যবাদী হও মিথ্যা পরিত্যাগ কর। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের রাস্তা দেখায় আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়।
  61. দুমুখো হয়ো না। একই বিষয়ে এদের কাছে এক কথা অন্যদের কাছে আর এক কথা বলবে না।
  62. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করবে না। আর সত্য বিষয় হলেও বেশী বেশী কসম করার অভ্যাস করবে না।
  63. কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। কেননা তাকওয়ার মানদণ্ড ছাড়া কারো উপর কারো প্রাধান্য নেই।
  64. কোন জ্যোতির্বিদ, গণক বা যাদুকরের কাছে যাবে না। তাদের কোন কথা বিশ্বাস করবে না। এতে ঈমানের ক্ষতি হয়।
  65. কোন মানুষ বা প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে চিত্রকরদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
  66. তোমার বাড়িতে কোন প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা তাতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
  67. কেউ হাঁচি দেয়ার পর আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামু কাল্লাহ বলবে।
  68. কোন ক্রমেই তাবিজ-কবচ, তাগা ইত্যাদি  ব্যবহার করবে না। কেননা এগুলো ব্যবহার করা শিরক।
  69. প্রতিটি পাপকাজের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করবে। খারাপ কাজ হয়ে গেলেই ভাল কাজ করবে, যাতে উক্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। এরূপ বলবে না অচিরেই তওবা করব।
  70. আল্লাহ্‌ তায়ালার ক্ষমা ও করুণার আশাবাদী হও। আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখ।
  71. আল্লাহ্‌র শাস্তির ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত থাক। তার শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না।
  72. বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারী হও। এবং সুখের কালে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
  73. অধিকহারে সৎকাজ করবে। যাতে করে মৃত্যুর পরেও তার ছওয়াব জারি থাকে। যেমন মসজিদ তৈরি করা, ইসলামী জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার করা।
  74. আল্লাহর কাছে জান্নাত পাওয়ার প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করবে।
  75. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করবে।

 

ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যেনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলিহি ওয়াছাহবিহি ওয়া সাল্লাম।

কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবীদের প্রতি অবিরাম ধারায় রহমত ও শান্তি নাযিল করুন। আমীন।

Translate