Monday, June 19, 2023

কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির মাংস দেওয়া জায়েজ নেই

 প্রশ্ন: আমরা ৬ ভাগে কুরবানি দিয়েছি। কিন্তু ভাগ করার সময়ে ৭ ভাগ করা হয়েছে। এখানকার নিয়ম নাকি ১ ভাগ কসাইদের দেওয়া। কিন্তু এমনটা করা জায়েজ নাই-বলার পরেও তারা শুনেনি। এখন আমাদের কুরবানি কি সঠিক হয়েছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত, চামড়া, মাথা, পা ইত্যাদি কোন কিছু দেওয়া জায়েজ নয়। কেননা হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।‌ যেমন:
আলি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لاَ أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا قَالَ ‏ “‏ نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (বিদায় হজের সময়) তার কুরবানির উটগুলোর দেখাশোনা করার নির্দেশ দিলেন এবং এগুলোর মাংস, চামড়া ও (উটের পিঠে ব্যবহৃত) ঝুল বা জিনপোশ দান করে দিতে বললেন। সেই সাথে তিনি এগুলো দ্বারা কসাইয়ের মজুরি দিতে নিষেধ করলেন।
আর বললেন, আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরি পরিশোধ করে দেব‌।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১৬। হজ, পরিচ্ছেদ: ৬১. কুরবানির গোশত, চামড়া ও উটের পিঠে ব্যবহৃত ঝুল দান করা এবং এসব দিয়ে কসাইয়ের পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা]
অর্থাৎ কুরবানির পশু জবেহ করা বা তা প্রস্তুত করার বিনিময়ে কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির মাংস, চামড়া, মাথা, পা ইত্যাদি কোন কিছু দেওয়া জায়েজ নাই। বরং আলাদা অর্থ দ্বারা তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দিতে হবে।
ইবনে কুদামা এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
لأن دفع جزء منها عوضاً عن الجزارة كبيعه، ولا يجوز بيع شيء منها. اهـ
“কারণ কুরবানির কিছু অংশ দ্বারা কসাইকে পারিশ্রমিক দেওয়া তা বিক্রয় করার নামান্তর। অথচ কুরবানির কোন কিছুই বিক্রি করা জায়েজ নেই।” [আল মুগনি] তবে আলাদা অর্থ দ্বারা পারিশ্রমিক দেওয়ার পর সাধারণ দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কুরবানির মাংস, চামড়া ইত্যাদি দিলে তাতে কোন সমস্যা নাই।
অত:এব উল্লেখিত প্রশ্ন অনুযায়ী কুরবানির গরুকে ৭ ভাগ করে একভাগ দ্বারা কসাইয়ের পারিশ্রমিক প্রদান করা শরিয়ত সম্মত হয়নি। সে কারণে যারা এমনটি করেছে তারা গুনাহগাহ হয়েছে কিন্তু এতে কুরবানি বাতিল হয়ে যায়নি।

এখন করণীয় হল, অজ্ঞতা পূর্ণ এ কাজের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং ভবিষ্যতে এমনটি আর না করা। নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন

 নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন? এ ব্যাপারে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

নিম্নে আমরা এ বিষয়টি কুরআন-সুন্নাহ ও বিশ্বখ্যাত আলেমদের অভিমতের আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। وبالله التوفيق

❑ জীবনের পরে আরেক জীবন:

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জীবন সমাপান্তে নতুন এক জীবনের কথা বলেছেন। সেটা হল, আখিরাতের জীবন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
“আখিরাতের গৃহই প্রকৃত জীবন যদি তারা জানত।” [সূরা আনকাবুত: ৬৪]

এ জীবনের সূচনা হয় মৃত্যুর পর থেকেই। কবর হলো আখিরাতের প্রথম স্টেজ। এটিকে বলা হয়, বারজাখি জীবন। বারজাখ (البَرْزَخ) শব্দের অর্থ প্রাচীর বা আড়। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রকৃত অবস্থা জীবিত মানুষদের চোখ থেকে আড় করে রাখা হয়েছে। আখিরাতের জীবন এবং দুনিয়ার জীবনের মাঝখানে একটা প্রাচীর তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই জীবন এক বাস্তব মহাসত্য। সে জীবন অনন্তকালের জন্য-যার কোন সমাপ্তি নেই। মৃত্যু বরণের মাধ্যমে নবি-রসূল, শহিদ, আল্লাহর প্রিয়ভাজন অলি-আউলিয়া, সাধারণ মুমিন-মুসলিমগণ, পাপিষ্ঠ ও ফাসেক মুসলিমগণ, এমনকি মোনাফেক, মুশরিক, কা/ফে/র, নাস্তিক ইত্যাদি সকল মানুষ সে নতুন জীবনে পদার্পণ করে।
এর প্রমাণ হল, অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত্যুর পরে ফেরেশতা মণ্ডলী মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসান এবং তিনটি প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারলে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা সুখময় জীবনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারা সেখানে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের সুঘ্রাণ পায় এবং জান্নাতি বিছানায় আরামে ঘুমায়‌। সেখানে নবি-রসুল, শহিদ এবং আল্লাহর প্রিয়ভাজন ব্যক্তিগণ আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত দ্বারা সম্মানিত হন। বিশেষভাবে আল্লাহর পথের শহিদগণ রিজিক প্রাপ্ত হন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا- بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তারা (সেখানে) রিজিক প্রাপ্ত হয়।” [সূরা আলে ইমরান: ১৬৯]
পক্ষান্তরে কা/ফে/র, মুশরিক, মুনাফিক, নাস্তিকদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ আজাব। এই আজাবে তারা কেয়ামত পর্যন্ত নিপতিত থাকে। পাপিষ্ঠ ইমানদারেরাও তাদের পাপাচারিতা অনুযায়ী কম বেশি শাস্তির সম্মুখীন হয়।

✪ কবরে মুনকার-নাকির ফেরেশতা দ্বয় কর্তৃক মৃতদেরকে প্রশ্ন করা সংক্রান্ত নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রসিদ্ধ:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণি, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“‏ إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ – أَوْ قَالَ أَحَدُكُمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالآخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ مَا كَانَ يَقُولُ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“মৃত মানুষকে অথবা তিনি বলেছেন, তোমাদের কাউকে যখন কব রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রসঙ্গে কী বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সত্য কোন মাবুদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রসূল…। (লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষ)। [সুনান আত তিরমিজী (তাহকীক কৃত), অধ্যায়: ৮/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ৭০. কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে-হাসান]
এ ছাড়াও সহিহ বুখারি-মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে কবরের মৃত ব্যক্তির সাথে কী করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। কোনও কোনও হাদিসে এসেছে, দাফন করার পর মৃত ব্যক্তিগণ দাফন কারীদের স্যান্ডেলের আওয়াজ শুনতে পায় ইত্যাদি।

❑ সকল নবি-রাসূল মৃত্যু বরণ করেছেন (ঈসা আ. ছাড়া):

মৃত্যু এক অবধারিত সত্যের নাম। এর থেকে কেউ পালাতে পারবে না। দুনিয়ার জীবনের নির্দিষ্ট সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর সকল মানুষকে আখিরাতের অনন্ত জীবনের দিকে পাড়ি জমাতে হবে। সেই অলঙ্ঘনীয় সিস্টেমের আলোকে প্রথম মানুষ আদম আ. থেকে শুরু কর সকল নবি-রসূল সহ যুগযুগান্তরের অসংখ্য বনি আদম দুনিয়া ছেড়ে সেই অনন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছে। এখনো যারা জীবিত আছে তাদেরকেও সেই পথেরই পথিক হতে হবে। এর মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
“প্রতিটি আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আনকাবুত: ৭৯]

◈ সকল নবী-রসূল মৃত্যু বরণ করেছেন (একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালাম ছাড়া): আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ
“আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৪৪]
তবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের হত্যা ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অলৌকিকভাবে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। [দেখুন: সূরা নিসা-এর ১৫৭ ও ১৫৮ নাম্বার আয়াতের তাফসির] সেখানে তিনি জীবিত অবস্থায় আছেন। কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদির শাসনামলে পুনরায় দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হবেন এবং স্বাভাবিক জীবন ধারণ করে অবশেষে তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন।

◈ আল্লাহ তাআলা নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর কথা বলেছেন,
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
“(হে নবি) নিশ্চয় আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।” [সূরা যুমার: ৩০]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তিরোধান সংক্রান্ত লম্বা হাদিসে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সাহাবি আবু বকর রা. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর খরব পেয়ে বাহির থেকে এসে আয়েশা রা. এর ঘরে প্রবেশ করে তাঁর পবিত্র মুখের উপর থেকে কাপড় উত্তোলন করলেন। অতপর তাঁর কপালে ভালবাসার চুম্বন এঁকে দিয়ে বললেন,
.‏ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي طِبْتَ حَيًّا وَمَيِّتًا
“(হে আল্লাহর রসুল,) আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আপনি জীবিত অবস্থায় যেমন পূত-পবিত্র তেমনি মৃত অবস্থায়ও পূত-পবিত্র।” অত:পর তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যু শোকে হতবিহ্ববল উমর রা.-এর সামনে সে ঐতিহাসিক বক্তব্যটি দেন যেটা শুনে তিনি শান্ত হয়ে যান। সে বক্তব্যের মধ্যে তিনি বলেছেন,
أَلاَ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ
“যে মুহাম্মদের ইবাদত করতো (সে জেনে রাখুক যে,) মুহাম্মদ মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদত করতো (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ চিরঞ্জীব-তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫০/ আম্বিয়া কিরাম, পরিচ্ছেদ: ২০৮৪]

এছাড়াও বহু বিশুদ্ধ হাদিসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর ঘটনা বিবৃত হয়েছে।

❑ নবি-রাসুলগণ কবরে জীবতি আছেন-এর ব্যাখ্যা কী?

বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় বরং সকল নবি-রসুলগণ কবরে জীবিত অবস্থায় আছেন এবং তারা সেখানে কখনো সালাত আদায় করেন। এসব হাদিসের ব্যাখ্যা জানার জন্য প্রথমে এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস উল্লেখ করে নবি-রসুলদের কবরের জীবিত থাকা প্রসঙ্গে মতামত ও ফতোয়া উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।

এ মর্মে কতিপয় সহিহ হাদিস নিম্নরূপ:

✪ ১. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
إنَّ الأنبياءَ أحياءٌ في قُبورِهم يُصَلُّونَ
“নবীগণ কবরে জীবিত অবস্থায় সালাত আদায় করছেন।” [মুসনাদে বাযযার, সিলসিলা সহিহা ২/১৮৭]
✪ ২. আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসা আ. কে তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। যেমন: আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏ مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ ‏‏
“আমি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি তার কবরে সালাত আদায় করছিলেন।” আলি রহ. এর শায়খ ঈসা রহ. এর হাদিসে অতিরিক্ত শব্দ রয়েছে, “আমাকে যে রাতে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে আমি (তার কবরের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করছিলাম-অর্থাৎ এটি মিরাজের রাতের ঘটনা।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৫/ ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ৩৮. মুসা আলাইহিস সালাম এর ফজিলত।”]
✪ ৩. এ বিষয়টি অন্য হাদিসে এসেছে,
مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمَرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে গেলাম। তখন তিনি লাল বালুকা স্তূপের কাছে তাঁর কবরের মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৫/ ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ৩৮. মুসা রা.-এর ফজিলত]
✪ ৪. আবু হুরায়রা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের ঘটনার বিবরণ প্রসঙ্গে বলেন,
وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ – يَعْنِي نَفْسَهُ – فَحَانَتِ الصَّلاَةُ فَأَمَمْتُهُمْ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنَ الصَّلاَةِ قَالَ قَائِلٌ يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ ‏.‏ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَبَدَأَنِي بِالسَّلاَمِ

“এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। মুসা আ. কে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানুয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় মধ্যম আকৃতি। তার চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা আ. কেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীর মতোই দেখতে অর্থাৎ মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। সালাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক। তাকে সালাম করুন। আমি তার দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৭৫. মরিয়ম পুত্র ঈসা আ. ও মাসিহুদ দজ্জাল-এর বর্ণনা]

✪ ৫. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের নিকটে যখন কেউ সালাম দেয় তখন তার রূহ ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি সালামের জবাব দেন। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ
“যে কোনও ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” [আবু দাউদ-বিশুদ্ধ সহিহ]
এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবী-রসুলগণ কবরে জীবিত।

❑ নবি-রসূলগণ কবরে জীবিত থাকা বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত:

◈ ১. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ. [২৪১ হিজরি] এর অন্যতম একটি আকিদা হল,
إنَّ الأنبياءَ أحياءٌ في قُبورِهم يُصَلُّونَ
“নবীগণ কবরে জীবিত অবস্থায় সালাত আদায় করেন।” [আবু বকর আল খাল্লাল বর্ণিত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রচিত আল আকিদা]

◈ ২. ইবনে তায়মিয়া রাহ. [মৃত্যু: ৭২৮ হিজরি] বলেন,
(الأنبياءُ أحياءٌ في قُبورِهم، وقد يُصَلُّون كما رأى مُحَمَّدٌ موسى -صَلَواتُ اللهِ وسلامُه عليهما وعلى سائِرِ الأنبياءِ- في قَبْرِه ليلةَ الإسراءِ)
“নবীগণ তাদের কবরে জীবিত এবং তারা কখনো সালাত আদায় করেন- যেমনটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে মুসা আলাইহিস সালাম এবং অন্যান্য সকল নবি-রসুলকে তাদের কবরে সালাত আদায় করতে দেখেছেন।” [আল মুসতাদরাক আল মাজমুউল ফাতাওয়া ১/১০১]

◈ ৩. ইবনে আব্দুল হাদি [মৃত্যু: ৭৪৪ হি.] বলেন,

“رد الروح على الميت في البرزخ ، ورد السلام على من يسلم عليه لا يستلزم الحياة التي يظنها بعض الغالطين ، وإن كان نوع حياة برزخية وقول من زعم أها نظير الحياة المعهودة مخالف للمنقول والمعقول ”

“বারজাখে (কবরে) মৃত্যুকে রূহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং যে তাকে সালাম দিবে তার সালামের জবাব দেওয়া দ্বারা সেই জীবন আবশ্যক হয় না যেটা কিছু ভুল কারীরা ধারণা করে থাকে। যদিও তা এক প্রকার বারজাখি জীবন। যে বলে যে, তা দুনিয়ার পরিচিত জীবনের অনুরূপ তার কথা দলিল ও যুক্তি বিরুদ্ধ কথা।” [আস সারিম আল মুনকি]

◈ ৪. ইমাম সাখাবি [মৃত্যু: ৯০২ হিজরি] বলেন,

نحن نؤمِنُ ونُصَدِّقُ بأنَّه صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ يُرزَقُ في قبرِه، وأنَّ جَسَدَه الشَّريفَ لا تأكُلُه الأرضُ، والإجماعُ على هذا

“আমরা ইমান রাখি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরে জীবিত অবস্থায় রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন এবং তার দেহ শরিফকে মাটি খেতে পারবে না। এ বিষয়ে ইজমা রয়েছে।” [আল কাউলুল বাদি, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৭]

◈ ৫. সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড:

” حياة الأنبياء والشهداء وسائر الأولياء : حياة برزخية لا يعلم حقيقتها إلا الله ، وليست كالحياة التي كانت لهم في الدنيا
“নবী, শহিদ এবং অপরাপর ওলি-আওলিয়াদের জীবন হল, বরজাখি জীবন-যার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। তা তাদের দুনিয়ার জীবনের অনুরূপ নয়।” [ফাতাওয়া লাজদাহ দায়েমা, ১ম গ্রুপ, ১/১৭৩ ও ১৭৪]

◈ ৬. শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. [১৩৩০ হি./১৯১২ খৃ.] বলেন,

قد صرَّح الكثيرون من أهلِ السُّنَّةِ بأنَّ النَّبِيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ في قبرِه حياةً برزخيَّةً لا يَعْلَمُ كُنْهَها وكيفيَّتَها إلَّا اللهُ سُبحانَه، وليست من جنسِ حياةِ أهلِ الدُّنيا، بل هي نوعٌ آخَرُ يَحصُلُ بها له صلَّى اللهُ عليه وسلَّم الإحساسُ بالنعيمِ، ويَسمَعُ بها سلامَ المُسلِّمِ عليه عندما يرُدُّ اللهُ عليه رُوحَه ذلك الوَقتَ

“অনেক আহলুস সুন্নাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবরে জীবিত আছেন। কিন্তু সেটা হল, বারজাখি জীবন। যার ধরণ ও প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তা দুনিয়ার জীবনের মত নয়। বরং তা এক ভিন্ন ধরণের জীবন-যার মাধ্যমে সে সুখ অনুভব করে, কোন ব্যক্তি সালাম দিলে তার সালাম শুনতে পায় যখন সে সময় আল্লাহর তার রূহকে ফিরিয়ে দেন।”

◈ ৭. আল্লামা আলবানি রাহ. [১৯৯৯ খৃ.] বলেন,

” اعلم أن الحياة التي أثبتها هذا الحديث للأنبياء عليهم الصلاة والسلام ، إنما هي حياة برزخية ، ليست من حياة الدنيا في شيء ، ولذلك وجب الإيمان بها ، دون ضرب الأمثال لها ومحاولة تكييفها وتشبيهها بما هو المعروف عندنا في حياة الدنيا
“জেনে রাখুন যে, এই হাদিসটি নবি-রসুলদের যে জীবন সাব্যস্ত করেছে তা হল, বারজাখি জীবন। দুনিয়ার জীবনের সাথে এর কোনও মিল নই। এই জন্য এর প্রতি বিশ্বাস রাখা ওয়াজিব। কিন্তু এটিকে দুনিয়ার জীবনে আমাদের জানাশোনা কোনও কিছুর সাদৃশ্য বা উপমা পেশ করা যাবে না।” এ ব্যাপারে আরও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের জগত বিখ্যাত আলেমদের মতামত রয়েছে-আল হামদুলিল্লাহ।

❑ কবর ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়?

কুরআনের আয়াত ও বহু হাদিস দ্বারা কবরে ও আখিরাতের জীবন প্রমাণিত। আলেমগণও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে মুসলিমদের জন্য যে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য তা হলো, দুনিয়ার জীবনের সাথে আখিরাতের জীবনের কোন সাদৃশ্য নেই। কবরের জীবনের ধরন ও প্রকৃতি কি তা মানুষের অজানা। তার ধরন ও প্রকৃতি কেমন হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। অর্থাৎ এটি ইলমে গায়েব দৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ কথা বলা যাবে না যে, তারা কবরের জীবনে দুনিয়ার জীবনের মতই খাওয়া-দাওয়া করে, বাজার-ঘাট করে, ঘুমায়, বিয়ে-শাদি করে ইত্যাদি। এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর জন্য আমরা নির্দেশিত নই। আমাদের করণীয় হল, যেভাবে হাদিসে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস ঈমানের ছয়টি রোকন এর মধ্যে অন্যতম।

❑ কিয়ামত পরবর্তী জীবন:

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে কবরের জীবনের সমাপ্ত হবে এবং এ পরে আখিরাতের জীবনের দ্বিতীয় স্টেজ শুরু হবে এবং মানুষের ব্যাপারে জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার পরে তার পরিধি চলবে অনন্তকাল ধরে। তবে তাওহিদপন্থী জাহান্নামিগণ এক পর্যায়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া এবং সুপারিশ কারীদের সুপারিশের মাধ্যমে।
তারপরে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ এবং বিচারের মাধ্যমে যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি তাদেরকে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় আর যারা বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পাবে তাদেরকে হয়তো ক্ষমা করে দেওয়া হয় অথবা জাহান্নামে গুনাহ মোচন সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়ার পরে অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।

মোটকথা, নবি-রসূল, শহিদ, অলি-আউলিয়া সহ পৃথিবীর সকল মানুষ মৃত্যু যবনিকার ওপারে আখিরাতের অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়। তবে নবি-রসূল শহিদ এবং অন্যান্য আল্লাহর প্রিয় ভাজন ব্যক্তিগণ আলমে বারজাখে বিশেষভাবে নেয়ামত প্রাপ্ত হয়। আরও বিশ্বাস রাখতে হবে যে, বারজাখি জীবন দুনিয়ার জীবনের অনুরূপ নয়। এটি গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যা কেবল বিশ্বাস করতে হবে। এর প্রকৃত অবস্থা ও প্রকৃতি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এটি হচ্ছে এ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত-এর আকিদার সারাংশ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

হজ বা উমরা সফরে মহিলাদের জন্য হোটেলে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদে হারামে সালাত আদায় করার থেকে

 প্রশ্ন: আমার মা এবার হজের যাবেন ইনশাআল্লাহ। হজের গাইড বইয়ে লেখা দেখলাম, “মহিলাদের মসজিদের জামাতের চাইতে হোটেলে সালাত পড়াই অধিক উত্তম।” কথাটা কতটুকু সত্য জানতে চাই।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: মহান আল্লাহ আপনার মাকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে ভালোভাবে হজ আদায়ের তওফিক দান করুন। আমিন। অতঃপর উক্ত কথাটি সঠিক। কেননা একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য তাদের নিজ গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। গৃহের মধ্যে সবচেয়ে নির্জন কক্ষে সালাত আদায় করা আরো অধিক উত্তম-মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার থেকেও। এই মর্মে হাদিস হলো,
عَنْ أُمِّ حُمَيْدٍ امْرَأَةِ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّهَا جَاءَتِ إلى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ، قَالَ: ” قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي “، قَالَ: فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ، فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ (رواه أحمد وابن خزيمة وابن حبان في صحيحيهما)
উম্মে হুমায়েদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন আবু হুমায়েদ রা. এর স্ত্রী। তিনি একবার নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করতে ভালবাসি।
রাসুলুল্লাহ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ’’আমি জানি, তুমি আমার সাথে সালাত আদায় করতে ভালবাস। কিন্তু তোমার জন্যে ক্ষুদ্র কুঠরীতে সালাত পড়া বাড়িতে (প্রশস্ত ঘরের মধ্যে) সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর বাড়িতে সালাত পড়া, বাড়ির উঠানে সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। নিজ বাড়ির উঠানে সালাত পড়া মহল্লার মসজিদে সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে সালাত পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম।’’ তারপর উম্মে হুমাইদ রা. আদেশে তার জন্যে তার নিজ ঘরের ভিতরে অন্ধকার স্থানে একটি সালাতের জায়গা বানিয়ে দেওয়া হল। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার কুঠরীতে সালাত আদায় করেছেন। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমাদ ৬/৩৭১, ইবনে খুযায়মা ৩/৯৫, ইবনে হিব্বান ৪/২২]। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিসে বর্ণনাকারী মহিলা সাহাবিকে মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করার চেয়েও তার নিজ গৃহে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম বলেছেন।
সুতরাং মহিলাদের জন্য মসজিদে সালাত আদায় করা জায়েজ হলেও সর্বাবস্থায় বাড়িতে সালাত আদায় করা এবং হজ ও ওমরা সফরে মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে হোটেলে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম। অর্থাৎ উক্ত হাদিস অনুযায়ী সে হোটেলে সালাত আদায় করলেও মক্কার মসজিদুল হারামে (এক লক্ষ গুণ), এবং মদিনার মসজিদে নববীতে (১০০০ গুন) সালাত আদায়ের থেকে বেশি সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছে করলে হারামে গিয়েও সালাত আদায় করতে পারে। কেননা হাদিসে এসেছে, ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদ সমূহে যেতে বাধা দিও না।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: জুমার সালাত, অনুচ্ছেদ: মহিলাদেরকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে, হা/ ৯০০ এবং সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: নারীদের মসজিদে গমন করা-নাফি‘ সূত্রে]

এ মর্মে আরো একাধিক হাদিস রয়েছে।

– এই ক্ষেত্রে যাতায়াতের পথে পূর্ণ পর্দা করবে (মুখমণ্ডল এবং দুই হাতের কব্জি ঢাকা সহকারে),
– আতর-সুগন্ধি ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে,
– মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সালাত আদায় করবে,
– পর পুরুষের শরীরের স্পর্শ যেন না লাগে সেজন্য ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ থেকে সতর্ক থাকবে।
– সর্বোপরি সব ধরনের ফিতনা থেকে দূরে থাকবে।

🔹আল্লামা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানিকে‌ প্রশ্ন করা হয় যে, হাদিসে আছে যে, “একজন মহিলার জন্য বাড়িতে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদ থেকে।” কিন্তু কোন মহিলা যদি মক্কায় থাকে তার জন্যও কি হারামে সালাত পড়ার থেকে হোটেলে সালাত পড়া অধিক উত্তম হবে?

উত্তরে তিনি বলেন,

إي واضح بالإيجاب ، ألا وهو أن صلاة المرأة حيث كانت ، في أيِّ بلد حلَّت ، حتى ولو كانت في مكة ، أو في المدينة ، أو في بيت المقدس ؛ فصلاتها في بيتها أفضل لها من صلاتها في المسجد ، كذلك هو الشأن بالنسبة للرجل فيما يتعلَّق بالنوافل من الصلوات ، فالأفضل له أن يصلي هذه النوافل في بيته وليس في المسجد ، حتى ولو كان المسجد الحرام ؛ ذلك لدليلين اثنين :
“হ্যাঁ, উত্তর স্পষ্ট। আর তা হল, একজন মহিলার সালাত-সে যেখানেই থাকুক না কেন, ‌যে শহরেই যাক না কেন-যদিও তা মক্কা, মদিনা বা বাইতুল মাকদিস হয় তার জন্য তার বাড়িতে সালাত করা অধিক উত্তম মসজিদ থেকে। যেমন বিষয়টি পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য বাড়িতে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। তার জন্য বাড়িতে নফল সালাত আদায় করা অধিক উত্তম; মসজিদে নয়। এমনকি মসজিদে হারাম থেকেও। তা দুইটি দলিলের কারণে। (এরপরে তিনি এ প্রসঙ্গে দুইটি হাদিসের দলিল উল্লেখ করেন)।‌” [সোর্স: al-albaby]
আল্লাহু আলম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-

স্বামীর পিতা চিরকালের জন্য মাহরাম এমনকি তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও

 প্রশ্ন: কোনও মহিলার তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও কি তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) তার জন্য মাহরাম থাকবে নাকি তিনি নন মাহরাম বলে গণ্য হবেন?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: স্বামীর পিতা (শ্বশুর) চিরকালের জন্য মাহরাম পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত যদিও তার স্বামীর সাথে তালাক সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে অথবা স্বামী মৃত্যু বরণ করে থাকেন। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,
وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ
“(এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত সন্তানদের স্ত্রীগণকে।” [সূরা নিসা: ২৩]

◍ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

: لا حرج عليك في الكشف لوالد زوجك السابق؛ لأنه محرم لك ولو طلقك ابنه، وزيارته في الأوقات المناسبة مع زوجك أو محرمك مناسبة، إذا كان من أهل الصلاح والخير، وهكذا لو زرته لوحدك إذا كان منزله قريبًا لا يحتاج إلى سفر ولا كلفة، بشرط أن يرضى زوجك بذلك
وفق الله الجميع لما يرضي
“আপনার প্রাক্তন স্বামীর পিতার সামনে মুখমণ্ডল খোলা বা বেপর্দা হওয়ায় কোনও অসুবিধা নেই। কারণ তিনি আপনার মাহরাম (তার সাথে চিরকালের জন্য বিয়ে হারাম) যদিও তার ছেলে আপনাকে তালাক দিয়েছে। অত:এব আপনার জন্য আপনার (নতুন) স্বামীর সাথে বা কোনও মাহরামের সাথে গিয়ে উপযুক্ত সময়ে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা বৈধ-যদি সে নেককার ও সৎ হয়। একাকীও তার বাড়িতে দেখা-সাক্ষাত করতে পারেন-যদি তার বাড়ি কাছাকাছি হয় এবং সেখানে যেতে সফর বা কষ্ট করতে না হয়। তবে শর্ত হল, এতে আপনার স্বামীর সম্মতি থাকতে হবে। আল্লাহ সকলকে ঐ কাজ করার তওফিক দান করুন যাতে তিনি সন্তুষ্ট হোন।” [মাজমু ফাতাওয়া ও মাকালাত শাইখ বিন বায (শাইখ বিন বায রাহ.-এর ফতোয়া ও প্রবন্ধ সমগ্র) ২১/২২। ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩/২/১৪১৮ হিজরি]

উল্লেখ্য যে,
◆ স্বামীর সাথে কেবল আকদ সংঘটিত হলেই তার পিতা (মহিলার শ্বশুর) চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে-চাই দাম্পত্য জীবন শুরু হোক অথবা না হোক। অর্থাৎ যদি কোনও কারণে বিয়ের ইজাব-কবুল হওয়ার পরপরই এবং দাম্পত্য জীবন শুরু করার পূর্বে তাদের মাঝে তালাক সংঘটিত হয়ে যায় তারপরও উক্ত মহিলার জন্য তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) চিরতরে হারাম বলে গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বিয়ে বন্ধন হারাম।

◆ অনুরূপভাবে স্ত্রীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে হয়ে গেলে বা স্ত্রী মৃত্যু বরণ করলেও তার মা (শাশুড়ি) এবং তার দাদি-নানিগণ (দাদি শাশুড়ি ও নানি শাশুড়িগণ) উক্ত পুরুষ ব্যক্তির জন্য মাহরাম বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং তাদের সামনে কোনও পর্দা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলাদেরকে পুরুষদের জন্য বিয়ে করা হারাম করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল, স্ত্রীর মা এবং দাদি-নানিগণ। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ
“(আরও হারাম করা হয়েছে), তোমাদের স্ত্রীদের মাগণ (তথা জন্মদাত্রী মা এবং দাদি-নানিগণ) কে।” [সূরা নিসা: ২৩]
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

দাঁড়িয়ে পানাহার করা কি হারাম বা মাকরূহ

 প্রশ্ন: আমি জানতে চাই, দাঁড়িয়ে বা হেঁটে খানা খাওয়া এবং পান করার ব্যাপার ইসলামের বিধান কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা জায়েজ তবে বসে করা উত্তম। অনেকে মনে করে, দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা হারাম (নিষেধ) অথবা মকরুহ (অপছন্দনীয়)। এ ধারণা ঠিক নয়।

নিন্মে এ বিষয়ে কতিপয় হাদীস, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এবং আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

❖ দাঁড়িয়ে পানাহার করা জায়েজ। এটিকে মাকরূহ বলা ঠিক নয়:
দলিল নিন্মোক্ত হাদিসগুলো:

❐ ১. আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি দাঁড়িয়ে পান করলেন। অত:পর বললেন,

إِنَّ نَاسًا يَكْرَهُ أَحَدُهُمْ أَنْ يَشْرَبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ

“কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে পান করাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঠিক এইভাবে পান করতে দেখেছি, যেভাবে তোমরা আমাকে পান করতে দেখলে।” [সহিহুল বুখারি: ৫৬১৫]

❐ ২. মুসনাদে আহমদে আলি রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন:

فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّاسُ كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوهُ فَقَالَ : مَا تَنْظُرُونَ ! إِنْ أَشْرَبْ قَائِمًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَائِمًا ، وَإِنْ أَشْرَبْ قَاعِدًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَاعِدًا

“তখন কিছু মানুষ তাঁর দিকে এমনভাবে তাকাল যে, বুঝা গেল, তারা যেন এটাকে গর্হিত কাজ মনে করে। তখন তিনি বললেন, তোমরা কী দেখছ? আমি যদি দাঁড়িয়ে পান করি তাহলে (জেনে রাখো যে,) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখেছি আর আমি যদি বসে পান করি তাহলেও (জেনে রাখ) যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বসে পান করতে দেখেছি।” [মুসনাদ আহমদ, হা/৭৯৭, আহমদ শাকের তাহকীক মুসনাদ আহমদে বলেন, এর সনদ সহীহ]

❐ ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشِي ، وَنَشْرَبُ وَنَحْنُ قِيَامٌ

“রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা চলতে চলতে আহার করতাম এবং দাঁড়িয়ে পান করতাম।” [সুনান তিরমিযী, হাদিস নাম্বার ১৮৮১, সহীহ-আলবানি]। এ সব হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে ও হাঁটা অবস্থায় পানাহার করতেন। সুতরাং এটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ রইল না।

❖ দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা:

কিছু হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করা ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম ২০২৪, তিরমিযী ১৮৭৯, আবু দাউদ ৩৭১৭, ইবনে মাজাহ ৩৪২৩, আহমদ ১১৭৭৫]

এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। এ মর্মে আরও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

❖ দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা এবং বৈধতার হাদিসের মাঝে সমন্বয়:
এই হাদিসগুলোর সমন্বয় সাধান করতে গিয়ে ইমাম নববী রহ. বলেন, “বসে পানাহার করা উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ কিন্তু দাঁড়িয়ে পানাহার করা জায়েজ। দাঁড়িয়ে খাওয়া পান করাকে মাকরূহ বলা ঠিক নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এবং তাঁর সম্মানিত সাহাবিগণ দাঁড়িয়ে ও চলা অবস্থায় পানাহার করেছেন। সুতরাং তারা যে কাজ করেছেন সেটাকে মাকরূহ বা অ পছন্দনীয় বলা মোটেই ঠিক হবে না।”

❑ দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত হাদিসটি রহিত:

সৌদি আবরের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,
الشرب قاعدًا أفضل، والشرب قائمًا لا بأس به، والحديث الذي فيه الاستقاء منسوخ؛ لأن الأحاديث الصحيحة دلت على أنه ﷺ كان يشرب قائمًا وقاعدًا، من حديث ابن عباس، ومن حديث علي رضي الله عنه فلا بأس أن يشرب قاعدًا وقائمًا، والقعود أفضل، أما: فليستقيء
“বসে পান করা উত্তম। দাঁড়িয়ে পান করায় কোনও অসুবিধা নেই। আর যে হাদিসে বমি করার কথা এসেছে তা মানসুখ (রহিত)। কারণ ইবনে আব্বাস রা. ও আলি রা থেকে একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ও বসে পানি পান করেছেন। সুতরাং দাঁড়িয়ে ও বসে পান করতে কোনও অসুবিধা নেই। বসা উত্তম। আর যে হাদিসে বলা হয়েছে যে, فليستقيء (যেন বমি করে দেয়)তা রহিত।” [binbaz]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ফতোয়া কী এবং ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না

 ফতোয়া কী? ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না (ফতোয়া প্রদানের শর্তাবলী)

প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি আলেম নন কিন্তু তার আকিদা সহিহ। তিনি সব বিষয়ে মানুষকে ফতোয়া দেন। তার থেকে ফতোয়া নেওয়া যাবে কি? আর ব্রাদার্সদের থেকে কি ফতোয়া গ্রহণ করা যাবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিম্নে ফতোয়ার পরিচয়, ফতোয়া প্রদানের শর্তাবলী, আমাদের দেশের মুফতিদের অবস্থা, ইলম বিহীন ফতোয়া প্রদানের ভয়াবহতা এবং সালাফদের ফতোয়া ভীতি ইত্যাদি সর্ম্পকে অতি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল। وبالله التوفيق

❑ ফতোয়া শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:

ফতোয়া (الفتوي) শব্দের অর্থ: মতামত, রায়, মত ও সিদ্ধান্ত ইত্যাদি। [আরবি-বাংলা অভিধান। ড. ফজলুর রহমান]
– ব্যাখ্যা দেওয়া। যেমন: আল্লাহর তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي رُؤْيَايَ إِن كُنتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُونَ
“হে পরিষদবর্গ! তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাক।” [সূরা ইউসুফ: ৪৩]
– পরামর্শ দেওয়া। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَتْ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي أَمْرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمْرًا حَتَّىٰ تَشْهَدُونِ
“বিলকিস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।” [সূরা নামল: ৩২]

আর পরিভাষায় ফতোয়া বলা হয়,
ذِكْرُ الحُكْم المسؤول عنه للسَّائل
“প্রশ্নকারীর নিকট তার প্রশ্ন কৃত বিষয়ের বিধান উল্লেখ করা।” [ফায়জুল কাদির-মুনাবি ১/১৫৮, আল মিসবাহুল মুনির পৃষ্ঠা: ২৩৯]

কোনও কোনও আলেম বলেন,
الإخبار بحكم الشرع، لا على وجه الإلزام
“শরিয়তের হুকুম জানানো-বাধ্য করার ভিত্তিতে নয়।” [ফাতায়া লিল ইমাম শাতেবি, পৃষ্ঠা: ৬৮] (বাধ্য করার অধিকার রাখে কেবল কাজি বা বিচারক; মুফতি নয়)

❑ ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা, আমাদের দেশের মুফতিগণের অবস্থা এবং ফতোয়ার শর্তাবলি:

ফতোয়া ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জীবন চলার পথে মানুষ নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ নানা ধরণের সংশয় ও জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হয়। দেশ, সমাজ, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সমস্যায় ভিন্নতা থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে সে সব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে আলেমদের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞ আলেমরা কুরআন-সুন্নাহর নির্যাস থেকে আমাদেরকে সমস্যার সমাধান এবং সে ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন। ফলে আমরা জটিলতা থেকে মুক্তি পাই এবং সহজে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি।

অতএব, জীবনের নানা সমস্যার সঠিক ইসলামিক সমাধান পেতে হলে আমাদের কর্তব্য, নির্ভরযোগ্য ও কুরআন-সুন্নাহর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন আলেমদেরকে নিকট থেকে ফতোয়া গ্রহণ করা। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‎
“অতএব তোমরা (কিতাব-সন্নাহর জ্ঞানে সুসজ্জিত) জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।” [সূরা নাহল: ৪৩ ও সূর আম্বিয়া: ৭] আল্লাহ তাআলা এখানে বিজ্ঞ আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা ইসলামের আলোকে মানুষের নানা সমস্যার সমাধান ও দিক নির্দেশনা দিবেন তাদের জন্য আবশ্যক হল, পূর্বসূরিদের বুঝ ও ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন-হাদিসের নির্যাস থেকে ফতোয়া প্রদান করা। ভাসাভাসা, অস্পষ্ট ও‌ দুর্বল জ্ঞান দ্বারা ফতোয়া প্রদান করা বৈধ নয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলেও বাস্তব কথা হলো, আমাদের দেশে যাদেরকে আমরা ‘আলেম’ বলে চিনি তাদের অধিকাংশের মধ্যেই ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা নেই‌ ব্রাদার্স, সাধারণ তালেবুল ইলম কিংবা সাধারণ দ্বীন চর্চা কারী ব্যক্তি তো দূরের কথা।

– ফতোয়ার শর্তাবলী:

আলেমগণ ফতোয়া দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো, ইলমুল কুরআন (নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, আম-খাস, মুতলাক-মুকাইয়াদ, শানে নুজুল ইত্যাদি), তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস (হাদিসের সহিহ-জয়ীফ মান নির্ণয়, রিজাল শাস্ত্র ইত্যাদি), আরবি ভাষা সাহিত্য (ইলমুল বালাগাহ বা অলঙ্কার শাস্ত্র, কবিতা ও গভীর ভাষাজ্ঞান) ও ব্যাকরণ (নাহু-সরফ), ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সালাফদের ফতোয়া, মতামত, মতবিরোধ ও ইজমা এবং বিশুদ্ধ আকিদা-এর পাশাপাশি ফিকহুল ওয়াকে (পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট) ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা। পাশাপাশি একজন মুফতি হবেন, তাকওয়াবান বা পরহেজগার-আল্লাহ ভীরু, আমানতদার বা বিশ্বস্ত, ব্যক্তিত্ববান, সুস্থ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন এবং বিচক্ষণ ইত্যাদি। আলেমগণ এ বিষয়গুলো বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম শাফেয়ী রাহ. খতিব বাগদাদি থেকে সংক্ষেপে মুফতির শর্তাবলী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
”لا يحل لأحد يفتي في دين الله إلا رجلا عارفا بكتاب الله : بناسخه ومنسوخه ، وبمحكمه ومتشابهه ، وتأويله وتنزيله ، ومكيه ومدنيه ، وما أريد به ، وفيما أنزل ، ثم يكون بعد ذلك بصيرا بحديث رسول الله – صلى الله عليه وسلم – ، وبالناسخ والمنسوخ ، ويعرف من الحديث مثل ما عرف من القرآن ، ويكون بصيرا باللغة ، بصيرا بالشعر ، وما يحتاج إليه للعلم والقرآن ، ويستعمل مع هذا الإنصاف ، وقلة الكلام ، ويكون بعد هذا مشرفا على اختلاف أهل الأمصار ، ويكون له قريحة بعد هذا ، فإذا كان هذا هكذا فله أن يتكلم ويفتي في الحلال والحرام ، وإذا لم يكن هكذا فله أن يتكلم في العلم ولا يفتي

“আল্লাহর দ্বীনের বিষয়ে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারও ফতোয়া দেওয়া বৈধ নয় যে, আল্লাহর কিতাবের নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, ব্যাখ্যা, শানে নুজুল, মক্কি-মাদানি, এর উদ্দেশ্য কী, কোন বিষয়ে নাজিল হয়েছে ইত্যাদি বিষয় জানে। পাশাপাশি আল্লাহর রসুলের হাদিসের নাসেখ-মনসুখ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান রাখে, হাদিস বিষয়ে তেমন জ্ঞান রাখে যেমন জ্ঞান রাখে কুরআনের বিষয়ে, আরবি ভাষা, আরবি কবিতা এবং কুরআন ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখে। এর সাথে সে ন্যায়-ইনসাফকে ব্যবহার করবে, কম কথা বলবে, তৎসঙ্গে বিভিন্ন দেশে আলেমদের মতবিরোধ বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে। তাহলে তার মধ্যে ফতোয়া প্রদানের পরিপক্বতা ও যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। এমন হলে তার জন্য হালাল-হারাম বিষয়ে কথা বলা ও ফতোয়া দেওয়া অনুমতি রয়েছে। অন্যথায় সে ইলমি কথাবার্তা বলতে পারে কিন্তু ফতোয়া দিবে না।” [আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ-খতিব বাগদাদি ২/২৩৪]

তাই সাধারণ মানুষের উচিত, দেখেশুনে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ইলমের জগতে সুপরিচিত বিদগ্ধ ও বড় আলেমদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যার তার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা দ্বীনের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।

❑ ইলম বিহীন ফতোয়া প্রদানের ভয়াবহতা এবং সালাফদের ফতোয়া ভীতি:

যারা ইচ্ছেমত ফতোয়া দেয় তাদের উচিত, আল্লাহকে ভয় করা। কেননা এটা অনেক বড় আমানত।‌ ইলম বিহীন ফতোয়া দেওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)

◆ ইমাম নওবি রাহ. বলেন,
اعلم أن الإفتاءَ عظيمُ الخطر، كبيرُ الموقع، كثيرُ الفضل؛ لأن المفتيَ وارثُ الأنبياء صلواتُ الله وسلامه عليهم، وقائمٌ بفرض الكفاية، لكنه مُعَرَّضٌ للخطأ؛ ولهذا قالوا: المفتي مُوَقِّعٌ عن الله تعالى

“জেনে রাখুন, ফতোয়া দেওয়ার বিষয়টি বড় বিপদ জনক এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী। কিন্তু বিশাল মর্যাদারও বিষয়। কারণ মুফতি (ফতোয়া প্রদানকারী) নবি-রসুলদের উত্তরাধিকারী এবং ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব পালনকারী কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত প্রদানের আশঙ্কাজনক অবস্থার সম্মুখীন। এ কারণে আলেমগণ বলেন যে, মুফতি হল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষর দান কারী।” [আদাবুল ফতোয়া, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৩]

এ জন্য সালাফগণ ফতোয়া প্রদানের ব্যাপারে খুবই ভীত থাকতেন এবং যথাসম্ভব এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন।

◆ আব্দুর রাহমান ইবনে আবি লায়লা বলেন,
أدركتُ عشرين ومئةً من الأنصارِ مِن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يُسأل أحدُهم عن المسألةِ، فيردُّها هذا إلى هذا، وهذا إلى هذا، حتى ترجعَ إلى الأوَّلِ
“আমি একশ বিশ জন আল্লাহর রসুলের আনসারি সাহাবিকে পেয়েছি যাদের কাছে, কোনও মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলে একজন অন্য জনের নিকট পাঠাতেন, তিনি আরেক জনের কাছে পাঠাতেন…এভাবে বিষয়টি আবার প্রথম জনের কাছে ফিরে আসতো।” [তারিখে বাগদাদ-খতিব আল বাগদাদি ১৩/৪১২, আল মারিফাতু ওয়াত তারিখ ৩/১১৫]

◆ আবু হুসাইন উসমান ইবনে আসিম বলেন,
إنّ أحدَهم ليُفْتي في المسألةِ، ولو وَرَدَتْ على عمرَ بن الخطَّاب رضي الله عنه لجَمَع لها أهلَ بدرٍ!
“তোমাদের কেউ কেউ এমন মাসআলায় ফতোয়া দিয়ে দাও যে, সেটা যদি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর কাছে পেশ করা হত তাহলে তিনি (এ মাসআলার সঠিক জবাব পাওয়ার জন্য) বদরি সাহাবিদেরকে জমা করে ফেলতেন।” [আল মাদখাল ইলাস সুনান লিল বায়হাকি, পৃষ্ঠা নাম্বার: ৮০৩]

তবে সাধারণ আলেম, বক্তা, ওয়ায়েজ, মসজিদের ইমামগণ-খতিব ও ব্রাদার্স প্রমুখগণ যদি বিজ্ঞ আলেমদের দলিল সমৃদ্ধ ফতোয়াগুলো মানুষের কাছে নকল করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেকেই ফতোয়া নকল করার ক্ষেত্রেও আমানতদারিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয় অথবা আদেতেই আলেমদের ফতোয়াকে সঠিকভাবে বুঝা একং তা সঠিক জায়গায় উপস্থাপন করার মত যোগ্যতাটুকুও তার নিকট নেই। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন। যাহোক, এই জাতীয় ফতোয়াগুলো সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে বাধা নেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হলে তা প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ নির্ভর যোগ্য আলেমদের নিকট থেকে ইসলামের নানা সমস্যায় ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার এবং মুফতিদেরকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক দিক ফতোয়া প্রদানের তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate