Monday, December 20, 2021

সালাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর গুরুত্ব

 সলাত পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। যেকোন অবস্থায় এটি ফারয। অসুস্থ হলেও এটি আদায় করতে হবে। এর কোন কাযা বা কাফফারা নেই। এর কাফফারা হলো যখন স্মরণ হবে তখনই পড়ে নিবে। বর্তমানে সলাত আদায়কারী যেমন কমে গেছে। তেমনি সলাত সঠিক ভাবে আদায় কারীও কমে গেছে। যেমন রুকু সাজদাহতে এখন আর পিঠ সোজা রাখা হচ্ছে না। অথছ হাদীসে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ,দারেমী, মিশকাত হা/৮১৮)।

আত-তাহরীকে শ্রদ্ধেয় মুজাফফর বিন মুহসীন জাল হাদীসের কবলে সলাত নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশ করছেন। কিন্ত আমি লক্ষ্য করেছি যে, এমন কিছু নিয়ম আমাদের সমাজে মাজহাবের দোহাই দিয়ে রয়েছে যেগুলো কোন যইফ হাদীস কেন জাল হাদীসেও নেই। শুধুমাত্র অজ্ঞতা, অন্য মতের বিরোধিতা করেই এগুলো না করাই সুন্নাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এগুলোর বিপরীতে সহীহ হাদীস আছে যেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস অমান্য করা কুফরির শামিল।( হাদীস চর্চ্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ড: মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৬৭). যেমন সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানো।  এ দুটি বিষয় নিয়েই আমি আজ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

সলাত এমন একটি ইবাদাত যা দিনে পাঁচবার আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে, একে অন্যের কাছাকাছি আনে। খোঁজখবর জানা যায়। যেমন আমি আগে যে মাসজিদে সলাত আদায় করতাম, একজন নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম তিনদিন হলো তবুও তাঁকে পেলাম না মনটা খচখচ করছিলো। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি বাড়ী বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। তেমনি যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এবং আমি মেস ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলাম পরে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি এতদিন বাড়িতে ছিলাম নাকি? কেমন দিনকাল গেলো? সত্যি বলতে কি তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিলো। রাজশাহীতে এসে স্থানীয়দের মধ্যে যাদের সাথে আমার হৃদতা বা আন্তরিকত গড়ে উঠেছে তাদের সবার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়েছিলো মাসজিদে।

আমি মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র না। যখন ইসলাম শিক্ষা পড়তাম তখন একটি প্রশ্ন বারবারই আসতো সেটা হলো, নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা কর। এর উত্তর যা নোটে ও গাইডে পাওয়া যেত তাতে পয়েন্ট আকারে সামাজিক গুরুত্ব লেখা থাকতো । তাতে উল্লেখ থাকতো, সলাত সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে থাকে। সলাতের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এখানে কোন ধনী গরীবের ব্যবধান থাকে না। কিন্ত সলাত আদায় করতে গিয়ে দেখেছি যে, ধনী গরীব এর ব্যবধান না থাকলেও মতের ব্যবধান আছেই।  সলাত আদায় করতে গিয়ে কাতার সোজা করা হয় না। পায়ের সাথে পা মিলালেই পা সটান করে সরিয়ে নেয়। এটা কিসের ইঙ্গিত! এটা কি হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার ইঙ্গিত দেয় না। এখানে ব্যবধান কি? না ধর্মের না ঐশ্বর্যতার না অন্য কিছুর। কিছুই না এখানে বিরোধিতা অন্য মতকে বিরোধিতার।

সহীহ হাদীসে কাতার সোজা করার ও পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা বলা আছে। কিন্ত তা আমল করা হচ্ছে না। এটার বিরোধিতা করা হচ্ছে। প্রধানত হানাফী মাযহাবের মাসজিদগুলোতে এটা বেশী করা হচ্ছে। এটার প্রভাব এমন পড়েছে যে আহলে হাদীসের মাসজিদগুলোতে এমনকি আহলে হাদীসের সন্তানগুলোও আজ পায়ের সাথে পা মিলানো ভুলতে বসেছে। এটা না করানোটাই তাদের কাছে সুন্নাহ হয়েগেছে নাউযুবিল্লাহ।

আমি হানাফী মাযহাবের মুখতাসারুল কুদরী, হিদায়া পড়েছি কোথাও পায়নি যে, সলাতের সময় পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। তবে এসব কিতাবে সলাত কাতার সোজা করার গুরুত্ব উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাতার সোজা কিভাবে হবে তা বলা নেই। এর অর্থ হলো যে, সলাতে কাতার সোজা তখনই হবে যখন পায়ের সাথে মিলানো হবে। আল্লাহর  নাবী (সা) বলেছেন, সলাতে কাতার সোজা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে করতে হবে বলেন নি, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কিভাবে কাতার সোজা করতে হবে তাও বলেছেন, তিনি বলেছেন কাঁধে কাঁধ পায়ের সাথে পা মিলানো’র কথা বলেছেন। অথচ এ হাদীসের উপর আমল নেই। মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পড়ানো মিশকাতের কাতার সোজা করার অধ্যায়-এ হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত ব্যাখ্যা করার সময় একবারও পায়ের সাথে পা মিলানোর ব্যাখ্যা করেননি। একটা হাদীসও নেই তা জাল,যইফ হোক যে পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। এটা কিভাবে আসলো ? এটা এসেছে আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করে। আহলে হাদীসরা পায়ের সাথে পা মিলায়। অতএব আমরা তো আহলে হাদীস না, আমরা হানাফী অতএব আমাদের জন্য পা ফাঁক করে দাড়ানো ও পা না মিলানোই সুন্নাত। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (সা) কি আমাদের আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে বলেছেন নাকি ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপনার হিন্দু ধর্মের জাতপাতের ব্যবধানকে নিয়ে আসছেন। যেখানে এক জাতের ব্যক্তির অন্য জাতকে স্পর্শ করাও পাপ। একটু ভাববেন কি, আমরা যারা সলাতে পা ফাঁক করে দাড়াই এবং কেউ পা মিলালে সটান করে পা টান দিই। তাদের এই আচরণের সাথে হিন্দুদের আচরণের কি মিল নেই ? নাউযুবিল্লাহ আমরা সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ করছি। ধিক্‌ ধিক্।

পায়ের সাথে পা না মিলানোর যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে হাদীসে আছে দুপায়ের ব্যবধানে শুধুমাত্র চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখতে হবে। আমি জানতে চাই কোন হাদীসে আছে? এমন কথা যে দু পায়ের ব্যবধান চার আঙ্গুল রাখতে হবে। প্রকৃত পক্ষে কাতারে দাড়াতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। সুনানে আবু দাউদে উল্লেখ রয়েছে, কেউ সলাত জুতা জোড়া উভয় পায়ের মাঝখানে রাখার কথা রয়েছে। একজোড়া জুতা রাখলে কি চার আঙ্গুল ব্যবধান হবে কি? এই চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখার কথা বেশী বলে থাকে ইলিয়াসী তাবলীগীরা। এরাই আবার মজলিসে বসে বয়ান করলে আর হুয়াহু জিকর করলে বলে ফাকা হয়ে বসবেন না। মাঝে শয়তান প্রবেশ করবে। অথচ এই শয়তান প্রবেশ করার কথা তাদের সলাতের ক্ষেত্রে মনে থাকে না। অথচ হাদীসটি মজলিসের ক্ষেত্রে যতটা না উল্লেখ হয়েছে সলাতের ক্ষেত্রে অনেক বার  উল্লেখিত হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে আমি এ সামান্য (?) ব্যাপার নিয়ে এত কথা লিখছি কেন। ব্যাপারটি সামান্য যে নয় নিম্নোক্ত হাদীসগুলো পড়লেই জানা যাবে। এখন আমি কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর হাদীসগুলো উল্লেখ করছি।

মিশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ থেকেই হাদীসগুলোর উদ্ধৃতি দিচ্ছি। মিশকাতুল মাসাবীহ’র “কাতার সোজা করা” নামক অধ্যায়ে যেসব হাদীস উল্লেখিত রয়েছে তা হলো-

হযরত নোমান ইবনে বশীর(রা:) হইতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সা:)আমাদের সারিসমূহ সোজা করতেন এমনভাবে যে উহার সহিত তিনি তীর সোজা করতেছেন।তিনি এরূপ করতেন যতক্ষণ না তিনি বুঝতে পারতেন যে আমরা বিষয়টি তাহার নিকট হতে পুরাপুরি বুঝতে পেরেছি।একদা তিনি ঘর হতে বাহির এয় আসলেন এবং নামাযে দাড়ালেনতাকবীরে তাহরীমা বলিলেনএমন সময় দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি সারি হতে সামনে সিনা বাড়িয়ে দাড়িয়েছে।তখন রাসূল (ষঅ:) বলিলেনআল্লাহর বান্দাগণ!হয় তোমার তোমাদের সারি সোজা করে দাড়াবে নতুবা আল্লাহ তোমার মুখমন্ডলসমূহে অর্থ্যাত অন্তরসমূহে পার্থক্য করে দিবেন।–মুসলিম (মিশকাত ২য় খন্ড-হাদীস নং-১০১৭,মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পাঠ্য,মিশকাত শরীফ ৩য় খন্ড-এমদাদিয়া লাইব্রেরী,হাদীস নং-১০১৭)।

নুমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনতোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবেতা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃস্টি করে দিবেন। (বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হা/৬৬২, প্রথম খন্ড)।

দেখুন কতবড় হাদীস কি বড় কথা । মাঝে মাঝে এমন হাদীস এসে যায় যা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই।

আরো বর্ণিত আছে,

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,একদিন নামাযের ইকামত বলা হলো তখনরাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন  এবং বললেনতোমরা কাতার সোজা কর এবং পরষ্পর মিলিত হয়ে দাড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পিছনের দিকেও দেখতে পাই।–বুখারী (মিশকাত হা/১০১৮)।

বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,তোমরা তোমাদের ছফসমূহকেপূর্ণ কর।নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখতে পাই। (মিশকাত হা/১০১৮ শেষাংশ)

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা নামাযের সারিসমূহকে সোজা করিবে।কেননা সারি সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীভুত।–বুখারী ও মুসলিম।আর মুসলিমের বর্ণনায় আছে যেছফ সোজা করা বা কাতার সোজা করা নামায পূর্ণ করারই অন্যতম কাজ।( মিশকাত হা/১০১৯)।

হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)নামাযে (দাড়ালে) আমাদের বাহুমূলসমূহে হাত স্পর্শ করে পরষ্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন তোমরা সোজা হয়ে দাড়াওবিভিন্নরুপে দাড়িও নাতা হলে তোমাদের অন্তরসমূহও প্রভেদ হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা প্রবীণ ও বিজ্ঞ তারাই যেন আমার কাছাকাছি দাড়ায়।অত:পর যাহারা বয়স ও বিজ্ঞতায় তাদের কাছাকাছি তারা দাড়ায় অনুরুপভাবে বয়স ও জ্ঞান কম অনুসারে তার পরবর্তীগণ দাড়ায়। আবু মাসউদ (দু:খ করে) বলেন, আজ তোমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত বিভিন্নমুখী। (মুসলিম,মিশকাত হা/১০১৯)।

আমি কেন কথাগুলোর গুরুত্ব দিয়েছি তাদের জওয়াব এই হাদীসটি।

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনহযরত তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পর মিশে দাড়াও।সারিগুলোকে কাছাকাছি রাখ এবং তোমাদের ঘাড়গুলিকে সমভাবে সোজা রাখ। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণতার কসমনিশ্চয় আমি কালো ভেড়ার বাচ্চার মত শয়তানকে দেখি,যে সারির ফাকে প্রবেশ করে।–আবু দাউদ।(মিশকাত হা/১০২৫)।

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা প্রথমে সম্মুখের সারি পূর্ণ করবে। অত:পর তার সংলগ্ন পিছনের সারিকে পূর্ণ করবে। যদি কম্‌তি-ঘাটতি কিছু থাকে, তা থাকবে  সর্বশেষ সারিতে।

অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায় আগের সারি পূর্ণই হয় নি। অথচ পরের কাতার অর্ধেক হয়ে গেছে। কিভাবে আমরা সুন্নাতে বরখেলাপ করছি !

হযরত নোমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। যখন আমরা সলাতের উদ্দেশ্যে দাড়াতামরাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের সারি সোজা করতেন। আর যখন আমরা সোজা হয়ে  যেতাম তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত হা/১০২৯)।

এই হাদীসেরও বিরোধিতা আমাদের সমাজে প্রচলিত। আমাদের ইমাম সাহেবরা এটা বিরোধিতা করে থাকেন। তারা কাতার সোজা করতে বলেন না। অথচ এটা সুন্নাত। কেউ কেউ কাতার সোজা করতে বলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, সালাতে কি কাতার সোজা হবে আকাশ থেকে? নাকি পায়ের সাথে পা মিলাতে।

এজন্যই শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর “সিফাতু সলাতিন নাবী” বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সলাতে প্রচলিত ভুল গুলো উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সলাতের ইকামতের পর কাতার সোজা করার কথা না বলা একটি ভুল। কারণ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে এটার উপর আমল করার কথা রয়েছে। বুখারী শরীফে রয়েছে। সলাতের ইকামত বলার পর রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন, কাতার সোজা কর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দাড়াও। ( রাসুলুল্লাহ এর নামায, অনুবাদ-এ এন এম সিরাজুল ইসলাম,বিশ্ব প্রকাশনী, পৃষ্ঠা-১৬৫-১৬৭)।

অথচ আমাদের ইমাম সাহেবরা এই হাদীসের উপর কোন আমল করছেন না। তাই ইকামত শেষে কাতার সোজা করার কথা  ইমামকে বলতেই হবে বলে শায়খ আলবানী বলেছেন।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে, হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি) হতে বর্ণিথ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের) প্রথম সারির উপরে সলাত প্রেরণ করেন অর্থ্যাত অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ বললেনইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও তিনি বললেননিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও রাসূলুল্লাহ (সা) আবারও বললেন,নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুন: জিজ্ঞেস করলেনইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও রাসূল বললেনহ্যাঁদ্বিতীয় সারির উপরেও। অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনতোমরা তোমাদের সারি সোজা করবেতোমাদের বাহুমূলসমূহকে পরষ্পর সমান রাখবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতে বাহুমূলকে নরম রাখবে। (অর্থ্যাত কেউ ধরে সোজা করতে চাইলে তাহার আনুগত্য করবে) এবং তোমাদের মধ্যকার ফাকঁসমূহকে ভরে ফেলবে। কেননাশয়তান তোমাদের মধ্যে হাযফের মত ঢুকে পড়ে। হায্‌ফ হলো ছোট কাল ভেড়ার বাচ্চা। (মিশকাত হা/১০৩৩)।

আরও হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনতোমরা সারিসমূহকে পরষ্পরের সমান করসারির মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরে ফেলতোমাদের ভাইদের হাত নরম থাকবে। এবং শয়তানের জন্য মাঝখানে ফাকা স্থান রাখবেন না। যেই ব্যক্তি  সারিকে মিলানআল্লাহ তাআলাও তাহাকে (অনুগ্রহের সাথে) মিলান। আর যেই ব্যক্তি সারিকে বিচ্ছিন্ন করেআল্লাহ তাআলাও তাকে ( নিজ অনুগ্রহ হতে) বিচ্ছিন্ন করেন।–আবু দাউদনাসায়ীতেও অনুরূপ এসেছে। (মিশকাত হা/১০৩৪ )।

আবুল ক্বাসিম আল-জাদালী সুত্রে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনে বাশীর (রাযি) বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা) সমবেত লোকদেরকে দিকে ঘুরে দাড়িয়ে তিনবার বলিলেন: তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর।আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা করে দাড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নুমান (রাযি) বলেনঅত:পর আমি এক লোককে দেখলামসে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধতার হাটুর সাতে নিজের হাটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে। (আবু দাউদ হা/৬৬২)।

দেখুন সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ এ ব্যাপারে কত সতর্ক ছিলেন। বুখারী শরীফে পায়ের সাথে পাকাধেঁর সাথে কাঁধ এবং গিটের সাথে গিটের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

আবু দাউদে কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে তীরের মতো করে। ( আবু দাউদ হা/৬৬৩)

কাতার সোজা সম্পর্কে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস:

আল-বারাআ ইবনে আযিব (রাযি) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ (সা) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন।আর বলতেন: তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেননিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন। (আবু দাউদ হা/৬৬৫)

এ রকম অনেক হাদীস রয়েছে যা উল্লেখ করলে কলেবরই বৃদ্ধি হবে। এসব হাদীস থেকে আমাদের শিক্ষা:

১. সলাতে ধনী গরীবের বা অন্য কোন মতের পার্থক্যে কোন বালাই নেই।

২. সলাতে কাতার সোজা করতে হবে কেননা কাতার সলাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।

৩. সলাতে কাধেঁ কাধঁ, পায়ের সাথে পা মিলাতে হবে।

৪. যারা মিলিয়ে দাড়ায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত প্রদর্শন করেন।

৫. যারা মিলায় না তাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ হতে বিচ্ছিন্ন করেন।

. ঈমাম হিসেবে সলাত আদায় করলে কাতার সোজা করতে বলা ইমামের কর্তব্য ও এটা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাত।

৭. সলাতে ফাঁক হয়ে দাড়ালে শয়তান ফাক জায়গায় বসে।

৮. কেউ কাতার সোজা করতে চাইলে তাকে সহযোগীতা করা অবশ্যই কর্তব্য।

৯. কাতার সোজা করা সলাতের সৌন্দর্য।

আল্লাহ আমাদের  কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার তওফিক দিন।

শাহাদাত হুসাইন

তড়িত কৌশল ও ইলেকট্রনিক বিভাগ

রুয়েট, রাজশাহী।

একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত?

 মুসলিম হওয়া নি:সন্দেহে বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। ইসলাম আমাদের গর্ব। ইসলাম আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এর মাধ্যমেই এ পার্থিব জগতে যেমন শান্তি ও সাফল্য পাওয়া যাবে ঠিক তদ্রূপপরকালিন জীবনে পাওয়া যাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা। কিন্তু আজ অনেক মুসলিম পরিচয় দিতে হীনমন্যতায় ভোগে। এর কারণ, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। ইসলামের সৌন্দর্য মণ্ডিত দিকগুলোর ব্যাপার ওয়াকিবহাল না থাকা। যার কারণে তার মাঝে ইসলামি ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয় না। অত:এব আসুন, আমরা ইসলামী জীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করি এবং সেই আলোকে গড়ে তুলি আমাদের লাইফ স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বকে।

এখানে একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপার কয়েকটি পয়েন্টে তুলে ধরা হল:
? ** মুসলিম ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলবে। মিথ্যা কখনই বলবে না।
?** সে কখনো প্রতারণার আশ্রয় নিবে না। সে হবে বিশ্বস্ত এবং আস্থা ভাজন।
? ** সে অগোচরে কারো সমালোচনা করবে না বা কারো সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করবে না।
? ** সে হবে সাহসী। কাপুরুষতাকে সে ঘৃণা করবে।
? ** ন্যায়ের পক্ষে সে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিবে। সত্য এবং বাস্তব ব্যাপারে দ্বিধা হীনভাবে নিঃসংকোচে কথা বলবে।
? ** সে হবে ন্যায়-নিষ্ঠাবান যদিও এতে তার ক্ষতি হয় বা তার বিপক্ষে যায়।
? ** সে অন্যের অধিকারে কখনো হস্তক্ষেপ করবে না।
? ** কেউ তার প্রতি অন্যায় করুক বা জুলুম করুক তা ও সে কখনই বরদাস্ত করবে না।
? ** সে হবে শক্তিশালী। অন্যের পক্ষ থেকে সে লাঞ্ছনার শিকার হতে আদৌ রাজি নয়।
? ** মুসলিম ব্যক্তি সব কাজে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিবে। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সিদ্ধান্তে অবিচল থাকবে।
? ** সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাসাধ্য পূর্ণাঙ্গ রূপে পালন করবে।
? ** সে হবে বিনয়ী এবং দয়ালু। ভালো এবং জনকল্যাণ মূলক কাজ নিজে করবে এবং অন্যকে তা করার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে এবং অন্যকে তা থেকে নিষেধ করবে।
? ** সে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
? ** একজন মুসলিম নারী হিজাব পরিধান করবে এবং পরপুরুষের সামনে নিজেকে পূর্ণাঙ্গরূপে ঢেকে রাখবে।
অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল ।

যে সব ভুল-ভ্রান্তির কারণে দু’আ কবুল হয়না

 দু’আ করার সময় অনেক ভুলভ্রান্তি ঘটে এবং সেগুলো দু’আকে কবুল হওয়া থেকে বিরত করে। এই ভুলভ্রান্তিগুলো কি কি?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য,

দু’আ করার ক্ষেত্রে কৃত ভুলের সংখ্যা অনেক, যেগুলোর অধিকাংশই ‘সীমালঙ্ঘন’ শিরোনামের আওতাভুক্ত যেমনঃ

১. যখন দু’আর মধ্যে আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন তথা শিরক করা হয়-

যেমনঃ আল্লাহর সাথে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম ধরে কোন কিছু চাওয়া হয়, সেটা হতে পারে কোন ব্যক্তি কিংবা গাছ অথবা কবর, কারণ দু’আ হচ্ছে একটি ইবাদাত আর এটাকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে করা হলো শিরক আর শিরক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ যেটার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করা হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে যেঃ

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ কোনটি? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন-‘আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে বানানো অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’।”(বুখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত)

২. যখন দু’আ করার সময় কোন নতুন পদ্ধতির তাওয়াসসুল(আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়) প্রবর্তন করা হয়-

যেমনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর ব্যক্তিসত্তা কিংবা তাঁর মর্যাদার তাওয়াসসুল করা। ইসলাম ধর্ম হচ্ছে অনুসরণ করার জন্য , বিদ’আত তৈরির জন্য নয়।

৩. কারো ওপর বিপদ পতিত হওয়ার দরূণ মৃত্যুকামনা করা-

খাব্বাব(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছেঃ

যদি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে মৃত্যুকামনা করতে নিষেধ না করতেন, আমি মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতাম।”(বুখারী-৬৩৫০, মুসলিম-২৬৮১)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যেঃ

“তোমাদের কেউ যেন তার ওপর বিপদ আসার কারণে মৃত্যুকামনা না করে। যদি সে একান্তই তা করতে চায় তবে যেন বলে: ‘ও আল্লাহ্! আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যুদান করুন যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর ’।”(বুখারী-৬৫৩১, মুসলিম-২৬৮০)

৪. শাস্তি তাড়াতাড়ি প্রদানের প্রার্থনা করা-

আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে যাতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকা যায়, সেই দু’আ করা উচিত। একবার রাসূল (সাঃ) এক মুসলিম ব্যক্তিকে অসুস্থ ও মুরগির মত দুর্বল অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি(সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ

“তুমি কি কোন কিছুর জন্য দু’আ করেছিলে অথবা এই অবস্থার জন্য প্রার্থণা করেছিলে?” সে বললঃ “হ্যাঁ, আমি বলতাম: ‘ও আল্লাহ্! আখিরাতে আপনি আমাকে যে শাস্তি দেওয়া নির্ধারণ করেছেন, আমাকে তা এই দুনিয়াতেই প্রদান করুন।’ রাসূল (সাঃ) বললেনঃ “সুবহানাল্লাহ্! তুমি এটা সহ্য করতে পারবে না। তুমি কেন বললে না যে, ও আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে আমাদের হেফাযত করুন?” তারপর তিনি আল্লাহর কাছে তার জন্য দু’আ করলেন এবং আল্লাহ্ তাকে আরোগ্য করলেন। (মুসলিমঃ২৬৮৮)

৫. কারো পরিবার এবং সম্পদের বিরুদ্ধে দু’আ করা-

হাদীসে বর্ণিত আছে যেঃ

“নিজেদের বিরুদ্ধে দু’আ করো না, তোমাদের সন্তানাদির বিরুদ্ধে দু’আ করো না, এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু’আ করো না; কেননা এই আশঙ্কা হতে পারে যে এটা এমন এক সময়ের সাথে মিলে যেতে পারে যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া হয় আর তিনি তা কবুল করে নেন।”(মুসলিমঃ৩০০৯)

৬. পারিবারিক বন্ধন ছিন্নকরণের জন্য দু’আ করা- যেমনঃ কারো বিরুদ্ধে দু’আ করা এবং তার ও তার আত্নীয়-স্বজন অথবা স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক যাতে ছেদ হয়, সেই জন্য দু’আ করা।

৭. সীমিত রহমতের জন্য দু’আ করা- যেমনঃ ও আল্লাহ্! কেবল আমাদের যমীনে বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং এরকম কিছু।

৮. আল্লাহর কাছে দু’আ করার ক্ষেত্রে সঠিক আচরণ পালনে ব্যর্থতা- যেমনঃ এমনভাবে দু’আ করা যেটা সঠিক নয়। আল-খাত্তাবি বলেছেনঃ

“এইভাবে বলা ঠিক নয় যে ও কুকুরসমূহের সৃষ্টিকর্তা অথবা ও বানর ও শূকরসমূহের সৃষ্টিকর্তা, যদিও সকল সৃষ্টি আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট এবং এদের সকলের উপর তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে।”(শা’ন আল-দু’আঃ১৫৩)

আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় যতটুকু সম্ভব সঠিক আচরণ পালন করা এবং যথাসম্ভব উচিত বেমানান কোন কিছু বলা পরিহার করা। দু’আ করার দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত বিনয় ও আনুগত্যপূর্ণ।

আল্লাহ্ রাসূল(সাঃ) তাঁর দু’আর সময় আল্লাহকে এত অধিক পরিমাণে প্রশংসা করতেন যে মনে হত তিনি যথেষ্টভাবে আল্লাহকে প্রশংসা করছেন না। তিনি বলতেনঃ “আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই; আমি আপনার যথেষ্ট প্রশংসা করতে পারিনা।”

৯. দু’আ করার সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া-

আপনি দেখতে পাবেন যে কিছু লোক রয়েছে যারা নিজেরা গোনাহগার এই মর্মে নিজেরা আল্লাহর কাছে দু’আ করে না, তাই তারা সর্বদা অন্যদেরকে তাদের জন্য দু’আ করতে বলে ।

রমজানের পর ভাল কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার দশটি মাধ্যম

 আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান

রমজানের পর কি? রমজান মাসে আল্লাহর নিকট বেশি প্রার্থনা করেছি, অধিক পরিমাণে নফল আদায় করেছি। ইবাদতে স্বাদ অনুভব করেছি। অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করেছি। জামাতের স্বলাত ত্যাগ করিনি। হারাম জিনিস দেখা থেকে বিরত ছিলাম। কিন্তু রমজানের পর ইবাদতের স্বাদ হারিয়ে ফেলেছি যা রমজান মাসে পেতাম। আর আগে যে ইবাদতের প্রতি লোভ ছিল তা আর এখন পাই না। জামাতের সাথে অনেক সময় ফজরের স্বলাত ছুটে যায়, অনেক নফল ইবাদত এখন করা হয় না কোরআন তেলাওয়াতও এখন আর আগের মত করা হয় না। এই সমস্যার কোন সমাধান বা চিকিৎসা আছে কি? রমজানের পর ভাল কাজের

আপনাদের নিকট রমজানের পর ভাল কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার দশটি মাধ্যম পেশ করছি।

 ১। সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ তাআলার সাহায্য কামনা করতে হবে হেদায়েত এবং দৃঢ়তার উপর থাকার জন্য, আল্লাহ তাআলা গভীর জ্ঞানের অধিকারীদের দোয়ার প্রসংশা করেছেন।

رَبَّنَا لا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ ” )سورة أل عمران8)

হে আমাদের রব, আপনি হেদায়েত দেয়ার আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা আলে-ইমরান ৮ আয়াত)

 ২। ভাল লোকদের সাথে বেশি উঠা বসা করতে হবে, এবং ওয়াজ নছিহত ও বিভিন্ন ধরণের দ্বীনি আলোচনা যেখানে হয় সেখানে যাতায়াত করতে হবে।

 ৩। বই পত্র পড়া এবং ক্যাসেট শ্রবনের মাধ্যমে নেক লোকদের জিবনী জানা, বিশেষ করে সাহাবাদের জীবনী জানা। কেননা এর মাধ্যমে মনের ভিতর সাহস ও আশার সঞ্চার হয়।

 ৪। বেশি বেশি করে প্রভাব বিস্তারকারী ইসলামি ক্যাসেট শ্রবণ করা: যেমন ভাল ভাল খতীবদের আলোচনা ওয়াজ যেখানে পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করা। সময় সময় দোকানে যেয়ে খোজ খবর নেয়া যে নতুন কোন ক্যাসেট বা সিডি বাজারে এসেছে কিনা।

 ৫। ফরজের প্রতি যত্নশীল থাকা যেমন পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত রমজানের সওম কোন কারণে কাজা হয়ে থাকলে তা দ্রুত আদায় করা। কেননা ফরজের মধ্যে অনেক কল্যাণ রয়েছে।

 ৬। নফলের প্রতিও যত্নশীল হওয়া যদিও তা কম হয়, কিন্তু অবশ্যই তা এমন নফল কাজ হতে হবে যা আদায় করতে মনে ভাল লাগে, কেননা আল্লাহর নিকট ঐ আমল অধিক প্রিয় যা নিয়মিত হয় যদিও তা পরিমাণে কম হয়। রাসূল (ﷺ) এমনই বলেছেন।

 ৭। কোরআন হেফয করতে আরম্ভ করা এবং নিয়মিত তেলাওয়াত করা, আর যা হেফয করবে তা ফরজ নামাজে এবং নফল নমাজে পড়তে অভ্যাস গড়ে তোলা।

 ৮। বেশি বেশি জিকর ও ইস্তেগফার করা, কেননা এ কাজটি সহজ কিন্তু তার উপকার অনেক বেশি, ঈমান বৃদ্ধি করে এবং মন ও হৃদয়-কে শক্তিশালী করে।

 ৯। সম্পূর্ণরূপে এমন কিছু থেকে দুরে থাকা যা হৃদয়কে নষ্ট করে দেয়, যেমন অসৎ লোকের সঙ্গ, টেলিভিশন দেখা, ডিশ দেখা, কাম উদ্রেককারী গান শোনা, অশ্লীল অনুষ্ঠানে যাওয়া, অশ্লীল চিত্র দেখা ইত্যাদি।

 ১০। সর্বশেষ হে বন্ধুগণ! আপনাদের উপদেশ দিচ্ছি দ্রুত তওবা করার জন্য; খালেছ তওবা। যেখান থেকে আর পিছনে ফিরবেন না। আল্লাহ তাআলা বান্দা তওবা করলে অত্যন্ত খুশি হন। আপনারা ঐ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা আল্লাহকে চিনে না রমজান ছাড়া অন্য সময়ে। তাদের সম্পর্কে পূর্বসূরীরা বলেন: তারা হতভাগ্য যারা রমজান ছাড়া অন্য সময়ে আল্লাহকে চিনে না।

সমাপ্ত

তাবিজ ঝুলানো শির্ক তার দলিল

 ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু

‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে তামা/ স্বর্ণের আংটি দেখে বললেন,
‏« ﻭَﻳْﺤَﻚَ ﻣَﺎ ﻫَﺬِﻩِ ؟ ” ﻗَﺎﻝَ : ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺍﻫِﻨَﺔِ، ﻗَﺎﻝَ : ”
ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﺰِﻳﺪُﻙَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫْﻨًﺎ، ﺍﻧْﺒِﺬْﻫَﺎ ﻋَﻨْﻚَ، ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﻟَﻮْ
ﻣِﺖَّ ﻭَﻫِﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﻓْﻠَﺤْﺖَ ﺃَﺑَﺪًﺍ ‏»
“ধ্বংস তোমার, এটা কী? সে বলল: অহেনার [1] অংশ।

তিনি বললেন: মনে রেখ, এটা তোমার দুর্বলতা ব্যতীত কিছু বৃদ্ধি করবে না, এটা তোমার থেকে ছুড়ে মার, কারণ তুমি যদি মারা যাও আর এটা তোমার উপর থাকে,
তুমি কখনো সফল হবে না” [2]

উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
‏« ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻖَ ﺗَﻤِﻴﻤَﺔً، ﻓَﻠَﺎ ﺃَﺗَﻢَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻖَ
ﻭَﺩَﻋَﺔً، ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺩَﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ‏»
“যে তামিমাহ[3] ঝুলালো,
আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে শঙ্খ ঝুলালো আল্লাহ তাকে নিরাপত্তা দিবেন না”।
[4]
উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
দরবারে একদল লোক উপস্থিত হল।
তাদের নয়জনকে তিনি বায়আত করলেন একজনকে করলেন না।
তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন, আর তাকে ত্যাগ করলেন? তিনি বললেন:
‏« ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺗَﻤِﻴﻤَﺔً ” ، ﻓَﺄَﺩْﺧَﻞَ ﻳَﺪَﻩُ ﻓَﻘَﻄَﻌَﻬَﺎ، ﻓَﺒَﺎﻳَﻌَﻪُ،
ﻭَﻗَﺎﻝَ : ” ﻣَﻦْ ﻋَﻠَّﻖَ ﺗَﻤِﻴﻤَﺔً ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺷْﺮَﻙَ ‏»
“তার উপর তাবিজ রয়েছে,
তিনি স্বীয় হাত বের করে তা ছিঁড়ে ফেললেন, অতঃপর তাকে বায়আত করলেন, এবং বললেন যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল।[5]
একদা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু জনৈক ব্যক্তির হাতে জ্বরের তাগা দেখে কেটে ফেললেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:
﴿ ﻭَﻣَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻦُ ﺃَﻛۡﺜَﺮُﻫُﻢ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫُﻢ ﻣُّﺸۡﺮِﻛُﻮﻥَ ١٠٦
﴾ ‏[ ﻳﻮﺳﻒ : ١٠٥ ‏]
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহর
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়”। [6]
এ ঘটনা প্রমাণ করে তাগা ব্যবহার করা শিরক।
আবু বশির আনসারি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলেন। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, -মানুষেরা তখন ঘুমের বিছানায় ছিল-,
‏« ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳَﺒْﻘَﻴَﻦَّ ﻓِﻲ ﺭَﻗَﺒَﺔِ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻗِﻠَﺎﺩَﺓٌ ﻣِﻦْ ﻭَﺗَﺮٍ ﺃَﻭْ
ﻗِﻠَﺎﺩَﺓٌ ﺇِﻟَّﺎ ﻗُﻄِﻌَﺖْ ‏»
“কোনো উটের গলায় সুতার মালা (ধনুকের ছিলা) বা কোনো প্রকার মালা রাখা যাবে না, অবশ্যই কেটে ফেলা হবে”।[7]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের গলার সুতা ও মালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাবিজ ঝুলানোর উপায় অবশিষ্ট না থাকে।
আবু ওয়াহহাব রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏« ﻭَﺍﺭْﺗَﺒِﻄُﻮﺍ ﺍﻟْﺨَﻴْﻞَ، ﻭَﺍﻣْﺴَﺤُﻮﺍ ﺑِﻨَﻮَﺍﺻِﻴﻬَﺎ ﻭَﺃَﻛْﻔَﺎﻟِﻬَﺎ،
ﻭَﻗَﻠِّﺪُﻭﻫَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻘَﻠِّﺪُﻭﻫَﺎ ﺍﻟْﺄَﻭْﺗَﺎﺭَ ‏»
“তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখ,
তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুল
াও এবং তাকে লাগাম পরাও,
তবে সুতা/ মালা পরিয়ো না।[8]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী জয়নব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বলেন, এটা কী?
আমি বললাম, এটা পড়া তাগা,
এতে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে।
তিনি তা কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮُّﻗَﻰ ﻭَﺍﻟﺘَّﻤَﺎﺋِﻢَ ﻭَﺍﻟﺘِّﻮَﻟَﺔَ ﺷِﺮْﻙٌ ‏»
“ঝাড়-ফুঁক, [9] তাবিজ ও
তিওয়ালাহ[10] নিঃসন্দেহে শিরক”।[11]
এসব দলিল বলে, রোগ-ব্যাধি দূর বা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ বা জীব-জন্তুর শরীরে, কিংবা ক্ষেত-খামারে তাবিজ,
তাগা, কড়ি ও সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করা শিরক। কারণ,
তামিমাহ ও তামিমাহ জাতীয় বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞার হাদিসগুলো ব্যাপক, তাই সবধরণের তাবিজ শিরক। কুরআন/
গায়রে কুরআন কোনো বিভেদ নেই।
দ্বিতীয়ত যেসব দলিলে তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাতে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুঁক বৈধ বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻋْﺮِﺿُﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭُﻗَﺎﻛُﻢْ ﻟَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺑِﺎﻟﺮُّﻗَﻰ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ
ﻓِﻴﻪِ ﺷِﺮْﻙٌ ‏»
“তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই, যদি তাতে
শিরক না থাকে”।[12]
এ হাদিসে যেরূপ কুরআনুল কারিমের তাবিজকে পৃথকভাবে বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুককে বৈধ বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের জীবনে
তাবিজের কোনো প্রমাণ নেই।
হাদিসের পাঠকমাত্র দেখবে,
দোয়া ও যিকর সংক্রান্ত সকল হাদিসের ভাষা হচ্ছে, ‘যে ইহা বলবে’, অথবা ‘যে ইহা পড়বে’
ইত্যাদি; একটি হাদিসেও নেই
‘যে ইহা লিখে রাখবে’, অথবা ‘যে ইহা ঝুলাবে’। ইবনে আরাবি বলেন: “কুরআন ঝুলানো সুন্নত নয়,
কুরআন পাঠ করা সুন্নত”।
ইব্রাহিম নখয়ি রহ. বলেন, “আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সাথীগণ কুরআন ও গায়রে কুরআন সর্বপ্রকার তাবিজ অপছন্দ করতেন,
যেমন আলকামা, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, মাসরুক ও রাবি বিন খায়সাম প্রমুখ তাবেয়িগণ”। [13]
শিরক ও পাপের পথ বন্ধ করার স্বার্থে সকল তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি। কুরআনের তাবিজ শিরকী তাবিজের পথ উন্মুক্ত করে। আদর্শ মনীষীগণ তাবিজ অপছন্দ করতেন, অথচ তাদের যুগ ছিল বিদআত ও শিরক মুক্ত, ওহী ও ঈমানের নিকটবর্তী। আমাদের যুগ মূর্খতা ও বিদআত সয়লাবের যুগ, এতে তাবিজ বৈধ বলার অর্থ উম্মতকে শিরকের দিকে ঢেলে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত তাবিজে ব্যবহৃত কুরআন নাপাক বস্তু বা স্থানের সম্মুখীন হয়, বিশেষত বাচ্চাদের গলার তাবিজ, যা থেকে কুরআনকে পবিত্র রাখা জরুরি।
তাবিজ ব্যবহারকারীরা সাধারণত কুরআন-হাদিসের
ঝাড়-ফুঁক করে না, তাবিজকেই
যথেষ্ট ভাবে। তাদের অন্তর
তাবিজের সাথে ঝুলন্ত থাকে,
যদিও তারা স্বীকার করে না,
তবে তাবিজ খুললে তার সত্যতা
প্রকাশ পায়! কারো চেহারা
বিবর্ণ হয়, কারো শরীরে
কাঁপুনি উঠে। যদি তাদের অন্তর
আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকত ও তাতে পূর্ণ বিশ্বাসী হত, কখনো
তারা মন এমন বস্তুর দিকে
ধাবিত হত না, যার সম্পর্ক কুরআন-
হাদিসের সাথে নেই। বস্তুত তাবিজ ব্যবহার করে তারা কুরআনের সাথে নয়, বরং কাগজ ও
জড় বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হয়।
তাবিজ একটি জড়-বস্তু, তার
সাথে রোগ-মুক্তির কোনো
সম্পর্ক নেই। তাবিজকে রোগ মুক্তির উপায় সাব্যস্ত করার জন্য
অবশ্যই দলিল প্রয়োজন, তার পক্ষে
কোনো শরীয় দলিল নেই।
কারো রোগ-ব্যাধি হলে শরয়ী ঝাড়-ফুঁক করা সুন্নত, যেমন
জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছেন, নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের
করেছেন। এটাই বৈধ ও শরীয়ত অনুমোদিত পন্থা।
বৈধ ঝাড়-ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ
করা বৈধ, যদি তার দ্বারা
আরোগ্য লাভ হয় এবং সুন্নত
মোতাবেক ঝাড়-ফুঁক করা হয়;
যেমন নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবীগণ বিনিময় গ্রহণ
করেছেন, কিন্তু আমাদের সমাজের একশ্রেণীর আলেম
তাবিজ দেন ও আরোগ্য লাভের পূর্বে বিনিময় গ্রহণ করেন।
তারাও দলিল হিসেবে বুখারি শরীফের হাদিসটি পেশ করেন,
অথচ সেখানে স্পষ্ট আছে
সাহাবিগণ তাবিজ দেননি,
বরং সূরা ফাতিহা পাঠ
করেছেন এবং আরোগ্য লাভ
করার পর বিনিময় গ্রহণ করেছেন,
আগে নয়। অতএব এ হাদিসকে
তাবিজ দেয়া ও তার বিনিময়
গ্রহণ করার দলিল হিসেবে পেশ
করা অপব্যাখ্যা ব্যতীত কিছু নয়।
========================

[1] অহেনা অর্থ এক প্রকার হাড়,
যার অংশ বিশেষ তাবিজে
ব্যবহার করা হয়।
[2] মুসনাদে আহমদ: (১৯৫৪৯), নাসায়ী: (৯/৩৪৯), ইবনে মাজাহ: (৩৫৩১), ইবনে হিব্বান: (৬২২২),
হাদিসটি সহিহ্।
[3] তামিমার সংজ্ঞা: রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ অথবা বদ-নজর প্রতিরোধ অথবা সম্ভাব্য কোনো অনিষ্ট দূর করার জন্য শরীরে ঝুলানো বস্তুকে তামিমাহ বলা হয়, হোক সেটা কড়ি, অথবা লাকড়ি, অথবা তাগা, অথবা কাগজ কিংবা কোনো বস্তু। ইসলাম পূর্বযুগে বদ-নজর থেকে সুরক্ষা এবং গৃহ-পালিত পশু-পাখী ও দুষ্ট প্রাণীকে বশ করার জন্য, কখনো আত্মরক্ষার জন্য মুশরিকরা তামিমাহ গলায় বা শরীরের কোনো অংশে ঝুলাত। তাদের বিশ্বাস ছিল, তাকদির প্রতিরোধ ও অনাগত অনিষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে তামিমাহ।
তারা কখনো তামিমাহ দ্বারা গায়রুল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করত, যা ছিল সরাসরি শিরক ও তাওহীদ পরিপন্থী। ইসলাম তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
[4] আহমদ: (১৬৯৫১), হাকেম: (৪/২১২), মুসনাদে আবি ইয়ালা আল-মুসিলি: (১৭৫৯)
[5] সহি মুসনাদে আহমদ: (১৬৯৬৯), সহি হাদিস সমগ্র : (৪৯২), হাকেম।
[6] ইউসুফ: (১০৬) তাফসিরে ইবনে কাসির।
[7] বুখারি: (৩০০৫), মুসলিম: (২১১৮)
[8] সুনানে নাসায়ী সুগরা: (৩৫৬৫), মুসনাদে আহমদ: (১৮৫৫২)
[9] রুকা অর্থ নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক,
আউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)
[10] আসমায়ি বলেন:
তিওয়ালাহ: একপ্রকার যাদু, স্বামীর নিকট স্ত্রীকে প্রিয় করার জন্য যার ব্যবহার করা হয়। মোল্লা আলি কারি বলেন:
‘তিওয়ালাহ’ একপ্রকার যাদু, অথবা যাদুর মন্ত্র পাঠ করা তাগা, অথবা কাগজ, তাতে মহব্বত সৃষ্টির মন্ত্র পাঠ করা হয়। আউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)
[11] আবু দাউদ: (৩৮৮৩), আহমদ: (৩৬০৪),
ইবনে হিব্বান: (৬০৯০), ইবনে
মাজাহ: (৩৫৩০), সহি হাদিস সমগ্র: (১৩১)
[12] মুসলিম : (২২০২), ইবনে হিব্বান: (৬০৯৪)
[13] ফতহুল মজিদ।

শেষ দিবসের নিদর্শনগুলি – রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মু’জিজা

 ইবনে মাসূদ বলেন, “আমি একদিন নাবী (সাঃ)- কে বললাম”

শেষ সময় চেনার কোনও জ্ঞান আছে কি?
তিনি (সাঃ) বললেন “হ্যা ইবনে মাসূদ!”
এসম্পর্কিত বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের মধ্যে একটি হল
১. বাচ্চারা ভীষণ বদমেজাজি হবে
২. বৃষ্টি হবে আম্লিক, অল্মবৃষ্টি
৩. তুমি দেখবে, খারাপ লোকেরা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে!
“ও ইবনে মাসূদ ঐ লক্ষণগুলোর আরও একটি হলো যে
৪. লোকেরা বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাস করবে এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের বিশ্বাসঘাতক মনে করবে।
৫. সত্যবাদীদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হবে এবং মিথ্যাবাদীদের বলা হবে সত্যবাদী।
৬. থালাসমুহ ক্রমাগত যোগাযোগ করতে থাকবে যা স্যাটেলাইট যোগাযোগ বোঝাতে ব্যাবহার করা হয়। এবং মানুষেরা তখন পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করবে ।
৭. ও ইবনে মাসূদ, তুমি আরো দেখবে মুনাফিকরা শাসন করবে এবং
৮. সর্বাপেক্ষা মন্দ লোকেরা বাজার নিয়ন্ত্রন করছে
৯. মসজিদসমুহ অলংকৃত করা হবে, কিন্তু হৃদয়সমূহ হবে কুৎসিত!
১০. বিশ্বাসীদের কুৎসিত ছাগলের চেয়েও বেশি অপদস্থ করা হবে! যেন তাঁরা কিছুই না!
১১. তুমি দেখবে পুরুষ ও স্ত্রী সমকামীতা প্রসার হবে
১২. এবং অল্পবয়স্ক লোকেরা প্রচুর সম্পদশালী হবে
১৩. নারীদের নীতিভ্রষ্ট করতে আন্দোলন করা হবে
১৪. তুমি দেখবে সভ্যতার ধ্বংস এবং পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক সভ্যতা
১৫. তখন বাদ্যযন্ত্র ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পরবে।
১৬. বাদ্যযন্ত্রগুলো তাদের মাথায় চড়ানো থাকবে
তিনি (সাঃ) বলেছিলেন,
১৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনেক দেখতে পাবে
১৮. এবং লোকেরা ঠাট্টা-তামাশা ও বিদ্রুপ করবে
১৯. তোমরা দেখবে বহু শিশু বিবাহ বন্ধন ছাড়াই জন্ম নিবে
নাবী সাঃ বলেছিলেন,
২০. সেসময় ফিতনাগুলো মাদুরের আকৃতিতে প্রদর্শিত করা হবে এর দুটি সীমারেখা থাকবে (টেলিভিশন সেটএর কথা বলছে)
২১. ফিতনাগুলো তাদের সামনে মাদুর আকৃতিতে দেখানো হবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন,
২২. জাহান্নামে দুই ধরনের লোক আছে যাদের আমি এখনও দেখিনি।
তুমি গরুর লেজের মত চাবুক হাতে কিছু লোকদের দেখবে তাঁরা এর দ্বারা অন্যদের প্রহার করবে।
সে সময় নারীরা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে, তাঁরা কোমর দুলিয়ে হাঁটবে এবং অন্যদেরকে তাদের দিকে আকর্ষণ করবে
তিনি (সাঃ) বলেছিলেন,
২৩. ঐ মেয়েদের চুল হবে “বখতের” লোমশ উটের মত। এই লোকগুলো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
২৪. আমার উম্মাহর কিছু অংশ মদপান করবে এবং মদকে অন্য নামে ডাকবে।
আউজুবিল্লাহি মিনাশশাইতনির রাযীম।
হে আল্লাহ্‌, আমি বার্তা পৌছে দিয়েছি।
আল মুয়াযযাম আল কিবার আত-তাবারানি হাদিস নং ১০৪১০

Translate