Monday, June 19, 2023

কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির মাংস দেওয়া জায়েজ নেই

 প্রশ্ন: আমরা ৬ ভাগে কুরবানি দিয়েছি। কিন্তু ভাগ করার সময়ে ৭ ভাগ করা হয়েছে। এখানকার নিয়ম নাকি ১ ভাগ কসাইদের দেওয়া। কিন্তু এমনটা করা জায়েজ নাই-বলার পরেও তারা শুনেনি। এখন আমাদের কুরবানি কি সঠিক হয়েছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত, চামড়া, মাথা, পা ইত্যাদি কোন কিছু দেওয়া জায়েজ নয়। কেননা হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।‌ যেমন:
আলি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لاَ أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا قَالَ ‏ “‏ نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (বিদায় হজের সময়) তার কুরবানির উটগুলোর দেখাশোনা করার নির্দেশ দিলেন এবং এগুলোর মাংস, চামড়া ও (উটের পিঠে ব্যবহৃত) ঝুল বা জিনপোশ দান করে দিতে বললেন। সেই সাথে তিনি এগুলো দ্বারা কসাইয়ের মজুরি দিতে নিষেধ করলেন।
আর বললেন, আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরি পরিশোধ করে দেব‌।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১৬। হজ, পরিচ্ছেদ: ৬১. কুরবানির গোশত, চামড়া ও উটের পিঠে ব্যবহৃত ঝুল দান করা এবং এসব দিয়ে কসাইয়ের পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা]
অর্থাৎ কুরবানির পশু জবেহ করা বা তা প্রস্তুত করার বিনিময়ে কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির মাংস, চামড়া, মাথা, পা ইত্যাদি কোন কিছু দেওয়া জায়েজ নাই। বরং আলাদা অর্থ দ্বারা তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দিতে হবে।
ইবনে কুদামা এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
لأن دفع جزء منها عوضاً عن الجزارة كبيعه، ولا يجوز بيع شيء منها. اهـ
“কারণ কুরবানির কিছু অংশ দ্বারা কসাইকে পারিশ্রমিক দেওয়া তা বিক্রয় করার নামান্তর। অথচ কুরবানির কোন কিছুই বিক্রি করা জায়েজ নেই।” [আল মুগনি] তবে আলাদা অর্থ দ্বারা পারিশ্রমিক দেওয়ার পর সাধারণ দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কুরবানির মাংস, চামড়া ইত্যাদি দিলে তাতে কোন সমস্যা নাই।
অত:এব উল্লেখিত প্রশ্ন অনুযায়ী কুরবানির গরুকে ৭ ভাগ করে একভাগ দ্বারা কসাইয়ের পারিশ্রমিক প্রদান করা শরিয়ত সম্মত হয়নি। সে কারণে যারা এমনটি করেছে তারা গুনাহগাহ হয়েছে কিন্তু এতে কুরবানি বাতিল হয়ে যায়নি।

এখন করণীয় হল, অজ্ঞতা পূর্ণ এ কাজের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং ভবিষ্যতে এমনটি আর না করা। নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন

 নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন? এ ব্যাপারে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

নিম্নে আমরা এ বিষয়টি কুরআন-সুন্নাহ ও বিশ্বখ্যাত আলেমদের অভিমতের আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। وبالله التوفيق

❑ জীবনের পরে আরেক জীবন:

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জীবন সমাপান্তে নতুন এক জীবনের কথা বলেছেন। সেটা হল, আখিরাতের জীবন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
“আখিরাতের গৃহই প্রকৃত জীবন যদি তারা জানত।” [সূরা আনকাবুত: ৬৪]

এ জীবনের সূচনা হয় মৃত্যুর পর থেকেই। কবর হলো আখিরাতের প্রথম স্টেজ। এটিকে বলা হয়, বারজাখি জীবন। বারজাখ (البَرْزَخ) শব্দের অর্থ প্রাচীর বা আড়। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রকৃত অবস্থা জীবিত মানুষদের চোখ থেকে আড় করে রাখা হয়েছে। আখিরাতের জীবন এবং দুনিয়ার জীবনের মাঝখানে একটা প্রাচীর তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই জীবন এক বাস্তব মহাসত্য। সে জীবন অনন্তকালের জন্য-যার কোন সমাপ্তি নেই। মৃত্যু বরণের মাধ্যমে নবি-রসূল, শহিদ, আল্লাহর প্রিয়ভাজন অলি-আউলিয়া, সাধারণ মুমিন-মুসলিমগণ, পাপিষ্ঠ ও ফাসেক মুসলিমগণ, এমনকি মোনাফেক, মুশরিক, কা/ফে/র, নাস্তিক ইত্যাদি সকল মানুষ সে নতুন জীবনে পদার্পণ করে।
এর প্রমাণ হল, অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত্যুর পরে ফেরেশতা মণ্ডলী মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসান এবং তিনটি প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারলে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা সুখময় জীবনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারা সেখানে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের সুঘ্রাণ পায় এবং জান্নাতি বিছানায় আরামে ঘুমায়‌। সেখানে নবি-রসুল, শহিদ এবং আল্লাহর প্রিয়ভাজন ব্যক্তিগণ আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত দ্বারা সম্মানিত হন। বিশেষভাবে আল্লাহর পথের শহিদগণ রিজিক প্রাপ্ত হন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا- بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তারা (সেখানে) রিজিক প্রাপ্ত হয়।” [সূরা আলে ইমরান: ১৬৯]
পক্ষান্তরে কা/ফে/র, মুশরিক, মুনাফিক, নাস্তিকদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ আজাব। এই আজাবে তারা কেয়ামত পর্যন্ত নিপতিত থাকে। পাপিষ্ঠ ইমানদারেরাও তাদের পাপাচারিতা অনুযায়ী কম বেশি শাস্তির সম্মুখীন হয়।

✪ কবরে মুনকার-নাকির ফেরেশতা দ্বয় কর্তৃক মৃতদেরকে প্রশ্ন করা সংক্রান্ত নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রসিদ্ধ:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণি, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“‏ إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ – أَوْ قَالَ أَحَدُكُمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالآخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ مَا كَانَ يَقُولُ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“মৃত মানুষকে অথবা তিনি বলেছেন, তোমাদের কাউকে যখন কব রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রসঙ্গে কী বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সত্য কোন মাবুদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রসূল…। (লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষ)। [সুনান আত তিরমিজী (তাহকীক কৃত), অধ্যায়: ৮/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ৭০. কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে-হাসান]
এ ছাড়াও সহিহ বুখারি-মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে কবরের মৃত ব্যক্তির সাথে কী করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। কোনও কোনও হাদিসে এসেছে, দাফন করার পর মৃত ব্যক্তিগণ দাফন কারীদের স্যান্ডেলের আওয়াজ শুনতে পায় ইত্যাদি।

❑ সকল নবি-রাসূল মৃত্যু বরণ করেছেন (ঈসা আ. ছাড়া):

মৃত্যু এক অবধারিত সত্যের নাম। এর থেকে কেউ পালাতে পারবে না। দুনিয়ার জীবনের নির্দিষ্ট সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর সকল মানুষকে আখিরাতের অনন্ত জীবনের দিকে পাড়ি জমাতে হবে। সেই অলঙ্ঘনীয় সিস্টেমের আলোকে প্রথম মানুষ আদম আ. থেকে শুরু কর সকল নবি-রসূল সহ যুগযুগান্তরের অসংখ্য বনি আদম দুনিয়া ছেড়ে সেই অনন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছে। এখনো যারা জীবিত আছে তাদেরকেও সেই পথেরই পথিক হতে হবে। এর মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
“প্রতিটি আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আনকাবুত: ৭৯]

◈ সকল নবী-রসূল মৃত্যু বরণ করেছেন (একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালাম ছাড়া): আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ
“আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৪৪]
তবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের হত্যা ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অলৌকিকভাবে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। [দেখুন: সূরা নিসা-এর ১৫৭ ও ১৫৮ নাম্বার আয়াতের তাফসির] সেখানে তিনি জীবিত অবস্থায় আছেন। কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদির শাসনামলে পুনরায় দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হবেন এবং স্বাভাবিক জীবন ধারণ করে অবশেষে তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন।

◈ আল্লাহ তাআলা নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর কথা বলেছেন,
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
“(হে নবি) নিশ্চয় আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।” [সূরা যুমার: ৩০]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তিরোধান সংক্রান্ত লম্বা হাদিসে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সাহাবি আবু বকর রা. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর খরব পেয়ে বাহির থেকে এসে আয়েশা রা. এর ঘরে প্রবেশ করে তাঁর পবিত্র মুখের উপর থেকে কাপড় উত্তোলন করলেন। অতপর তাঁর কপালে ভালবাসার চুম্বন এঁকে দিয়ে বললেন,
.‏ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي طِبْتَ حَيًّا وَمَيِّتًا
“(হে আল্লাহর রসুল,) আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আপনি জীবিত অবস্থায় যেমন পূত-পবিত্র তেমনি মৃত অবস্থায়ও পূত-পবিত্র।” অত:পর তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যু শোকে হতবিহ্ববল উমর রা.-এর সামনে সে ঐতিহাসিক বক্তব্যটি দেন যেটা শুনে তিনি শান্ত হয়ে যান। সে বক্তব্যের মধ্যে তিনি বলেছেন,
أَلاَ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ
“যে মুহাম্মদের ইবাদত করতো (সে জেনে রাখুক যে,) মুহাম্মদ মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদত করতো (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ চিরঞ্জীব-তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫০/ আম্বিয়া কিরাম, পরিচ্ছেদ: ২০৮৪]

এছাড়াও বহু বিশুদ্ধ হাদিসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর ঘটনা বিবৃত হয়েছে।

❑ নবি-রাসুলগণ কবরে জীবতি আছেন-এর ব্যাখ্যা কী?

বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় বরং সকল নবি-রসুলগণ কবরে জীবিত অবস্থায় আছেন এবং তারা সেখানে কখনো সালাত আদায় করেন। এসব হাদিসের ব্যাখ্যা জানার জন্য প্রথমে এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস উল্লেখ করে নবি-রসুলদের কবরের জীবিত থাকা প্রসঙ্গে মতামত ও ফতোয়া উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।

এ মর্মে কতিপয় সহিহ হাদিস নিম্নরূপ:

✪ ১. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
إنَّ الأنبياءَ أحياءٌ في قُبورِهم يُصَلُّونَ
“নবীগণ কবরে জীবিত অবস্থায় সালাত আদায় করছেন।” [মুসনাদে বাযযার, সিলসিলা সহিহা ২/১৮৭]
✪ ২. আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসা আ. কে তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। যেমন: আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏ مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ ‏‏
“আমি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি তার কবরে সালাত আদায় করছিলেন।” আলি রহ. এর শায়খ ঈসা রহ. এর হাদিসে অতিরিক্ত শব্দ রয়েছে, “আমাকে যে রাতে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে আমি (তার কবরের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করছিলাম-অর্থাৎ এটি মিরাজের রাতের ঘটনা।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৫/ ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ৩৮. মুসা আলাইহিস সালাম এর ফজিলত।”]
✪ ৩. এ বিষয়টি অন্য হাদিসে এসেছে,
مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمَرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে গেলাম। তখন তিনি লাল বালুকা স্তূপের কাছে তাঁর কবরের মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৫/ ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ৩৮. মুসা রা.-এর ফজিলত]
✪ ৪. আবু হুরায়রা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের ঘটনার বিবরণ প্রসঙ্গে বলেন,
وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ – يَعْنِي نَفْسَهُ – فَحَانَتِ الصَّلاَةُ فَأَمَمْتُهُمْ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنَ الصَّلاَةِ قَالَ قَائِلٌ يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ ‏.‏ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَبَدَأَنِي بِالسَّلاَمِ

“এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। মুসা আ. কে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানুয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় মধ্যম আকৃতি। তার চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা আ. কেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীর মতোই দেখতে অর্থাৎ মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। সালাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক। তাকে সালাম করুন। আমি তার দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৭৫. মরিয়ম পুত্র ঈসা আ. ও মাসিহুদ দজ্জাল-এর বর্ণনা]

✪ ৫. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের নিকটে যখন কেউ সালাম দেয় তখন তার রূহ ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি সালামের জবাব দেন। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ
“যে কোনও ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” [আবু দাউদ-বিশুদ্ধ সহিহ]
এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবী-রসুলগণ কবরে জীবিত।

❑ নবি-রসূলগণ কবরে জীবিত থাকা বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত:

◈ ১. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ. [২৪১ হিজরি] এর অন্যতম একটি আকিদা হল,
إنَّ الأنبياءَ أحياءٌ في قُبورِهم يُصَلُّونَ
“নবীগণ কবরে জীবিত অবস্থায় সালাত আদায় করেন।” [আবু বকর আল খাল্লাল বর্ণিত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রচিত আল আকিদা]

◈ ২. ইবনে তায়মিয়া রাহ. [মৃত্যু: ৭২৮ হিজরি] বলেন,
(الأنبياءُ أحياءٌ في قُبورِهم، وقد يُصَلُّون كما رأى مُحَمَّدٌ موسى -صَلَواتُ اللهِ وسلامُه عليهما وعلى سائِرِ الأنبياءِ- في قَبْرِه ليلةَ الإسراءِ)
“নবীগণ তাদের কবরে জীবিত এবং তারা কখনো সালাত আদায় করেন- যেমনটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে মুসা আলাইহিস সালাম এবং অন্যান্য সকল নবি-রসুলকে তাদের কবরে সালাত আদায় করতে দেখেছেন।” [আল মুসতাদরাক আল মাজমুউল ফাতাওয়া ১/১০১]

◈ ৩. ইবনে আব্দুল হাদি [মৃত্যু: ৭৪৪ হি.] বলেন,

“رد الروح على الميت في البرزخ ، ورد السلام على من يسلم عليه لا يستلزم الحياة التي يظنها بعض الغالطين ، وإن كان نوع حياة برزخية وقول من زعم أها نظير الحياة المعهودة مخالف للمنقول والمعقول ”

“বারজাখে (কবরে) মৃত্যুকে রূহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং যে তাকে সালাম দিবে তার সালামের জবাব দেওয়া দ্বারা সেই জীবন আবশ্যক হয় না যেটা কিছু ভুল কারীরা ধারণা করে থাকে। যদিও তা এক প্রকার বারজাখি জীবন। যে বলে যে, তা দুনিয়ার পরিচিত জীবনের অনুরূপ তার কথা দলিল ও যুক্তি বিরুদ্ধ কথা।” [আস সারিম আল মুনকি]

◈ ৪. ইমাম সাখাবি [মৃত্যু: ৯০২ হিজরি] বলেন,

نحن نؤمِنُ ونُصَدِّقُ بأنَّه صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ يُرزَقُ في قبرِه، وأنَّ جَسَدَه الشَّريفَ لا تأكُلُه الأرضُ، والإجماعُ على هذا

“আমরা ইমান রাখি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরে জীবিত অবস্থায় রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন এবং তার দেহ শরিফকে মাটি খেতে পারবে না। এ বিষয়ে ইজমা রয়েছে।” [আল কাউলুল বাদি, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৭]

◈ ৫. সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড:

” حياة الأنبياء والشهداء وسائر الأولياء : حياة برزخية لا يعلم حقيقتها إلا الله ، وليست كالحياة التي كانت لهم في الدنيا
“নবী, শহিদ এবং অপরাপর ওলি-আওলিয়াদের জীবন হল, বরজাখি জীবন-যার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। তা তাদের দুনিয়ার জীবনের অনুরূপ নয়।” [ফাতাওয়া লাজদাহ দায়েমা, ১ম গ্রুপ, ১/১৭৩ ও ১৭৪]

◈ ৬. শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. [১৩৩০ হি./১৯১২ খৃ.] বলেন,

قد صرَّح الكثيرون من أهلِ السُّنَّةِ بأنَّ النَّبِيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ في قبرِه حياةً برزخيَّةً لا يَعْلَمُ كُنْهَها وكيفيَّتَها إلَّا اللهُ سُبحانَه، وليست من جنسِ حياةِ أهلِ الدُّنيا، بل هي نوعٌ آخَرُ يَحصُلُ بها له صلَّى اللهُ عليه وسلَّم الإحساسُ بالنعيمِ، ويَسمَعُ بها سلامَ المُسلِّمِ عليه عندما يرُدُّ اللهُ عليه رُوحَه ذلك الوَقتَ

“অনেক আহলুস সুন্নাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবরে জীবিত আছেন। কিন্তু সেটা হল, বারজাখি জীবন। যার ধরণ ও প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তা দুনিয়ার জীবনের মত নয়। বরং তা এক ভিন্ন ধরণের জীবন-যার মাধ্যমে সে সুখ অনুভব করে, কোন ব্যক্তি সালাম দিলে তার সালাম শুনতে পায় যখন সে সময় আল্লাহর তার রূহকে ফিরিয়ে দেন।”

◈ ৭. আল্লামা আলবানি রাহ. [১৯৯৯ খৃ.] বলেন,

” اعلم أن الحياة التي أثبتها هذا الحديث للأنبياء عليهم الصلاة والسلام ، إنما هي حياة برزخية ، ليست من حياة الدنيا في شيء ، ولذلك وجب الإيمان بها ، دون ضرب الأمثال لها ومحاولة تكييفها وتشبيهها بما هو المعروف عندنا في حياة الدنيا
“জেনে রাখুন যে, এই হাদিসটি নবি-রসুলদের যে জীবন সাব্যস্ত করেছে তা হল, বারজাখি জীবন। দুনিয়ার জীবনের সাথে এর কোনও মিল নই। এই জন্য এর প্রতি বিশ্বাস রাখা ওয়াজিব। কিন্তু এটিকে দুনিয়ার জীবনে আমাদের জানাশোনা কোনও কিছুর সাদৃশ্য বা উপমা পেশ করা যাবে না।” এ ব্যাপারে আরও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের জগত বিখ্যাত আলেমদের মতামত রয়েছে-আল হামদুলিল্লাহ।

❑ কবর ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়?

কুরআনের আয়াত ও বহু হাদিস দ্বারা কবরে ও আখিরাতের জীবন প্রমাণিত। আলেমগণও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে মুসলিমদের জন্য যে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য তা হলো, দুনিয়ার জীবনের সাথে আখিরাতের জীবনের কোন সাদৃশ্য নেই। কবরের জীবনের ধরন ও প্রকৃতি কি তা মানুষের অজানা। তার ধরন ও প্রকৃতি কেমন হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। অর্থাৎ এটি ইলমে গায়েব দৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ কথা বলা যাবে না যে, তারা কবরের জীবনে দুনিয়ার জীবনের মতই খাওয়া-দাওয়া করে, বাজার-ঘাট করে, ঘুমায়, বিয়ে-শাদি করে ইত্যাদি। এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর জন্য আমরা নির্দেশিত নই। আমাদের করণীয় হল, যেভাবে হাদিসে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস ঈমানের ছয়টি রোকন এর মধ্যে অন্যতম।

❑ কিয়ামত পরবর্তী জীবন:

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে কবরের জীবনের সমাপ্ত হবে এবং এ পরে আখিরাতের জীবনের দ্বিতীয় স্টেজ শুরু হবে এবং মানুষের ব্যাপারে জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার পরে তার পরিধি চলবে অনন্তকাল ধরে। তবে তাওহিদপন্থী জাহান্নামিগণ এক পর্যায়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া এবং সুপারিশ কারীদের সুপারিশের মাধ্যমে।
তারপরে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ এবং বিচারের মাধ্যমে যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি তাদেরকে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় আর যারা বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পাবে তাদেরকে হয়তো ক্ষমা করে দেওয়া হয় অথবা জাহান্নামে গুনাহ মোচন সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়ার পরে অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।

মোটকথা, নবি-রসূল, শহিদ, অলি-আউলিয়া সহ পৃথিবীর সকল মানুষ মৃত্যু যবনিকার ওপারে আখিরাতের অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়। তবে নবি-রসূল শহিদ এবং অন্যান্য আল্লাহর প্রিয় ভাজন ব্যক্তিগণ আলমে বারজাখে বিশেষভাবে নেয়ামত প্রাপ্ত হয়। আরও বিশ্বাস রাখতে হবে যে, বারজাখি জীবন দুনিয়ার জীবনের অনুরূপ নয়। এটি গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যা কেবল বিশ্বাস করতে হবে। এর প্রকৃত অবস্থা ও প্রকৃতি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এটি হচ্ছে এ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত-এর আকিদার সারাংশ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

হজ বা উমরা সফরে মহিলাদের জন্য হোটেলে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদে হারামে সালাত আদায় করার থেকে

 প্রশ্ন: আমার মা এবার হজের যাবেন ইনশাআল্লাহ। হজের গাইড বইয়ে লেখা দেখলাম, “মহিলাদের মসজিদের জামাতের চাইতে হোটেলে সালাত পড়াই অধিক উত্তম।” কথাটা কতটুকু সত্য জানতে চাই।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: মহান আল্লাহ আপনার মাকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে ভালোভাবে হজ আদায়ের তওফিক দান করুন। আমিন। অতঃপর উক্ত কথাটি সঠিক। কেননা একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য তাদের নিজ গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। গৃহের মধ্যে সবচেয়ে নির্জন কক্ষে সালাত আদায় করা আরো অধিক উত্তম-মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার থেকেও। এই মর্মে হাদিস হলো,
عَنْ أُمِّ حُمَيْدٍ امْرَأَةِ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّهَا جَاءَتِ إلى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ، قَالَ: ” قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي “، قَالَ: فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ، فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ (رواه أحمد وابن خزيمة وابن حبان في صحيحيهما)
উম্মে হুমায়েদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন আবু হুমায়েদ রা. এর স্ত্রী। তিনি একবার নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করতে ভালবাসি।
রাসুলুল্লাহ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ’’আমি জানি, তুমি আমার সাথে সালাত আদায় করতে ভালবাস। কিন্তু তোমার জন্যে ক্ষুদ্র কুঠরীতে সালাত পড়া বাড়িতে (প্রশস্ত ঘরের মধ্যে) সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর বাড়িতে সালাত পড়া, বাড়ির উঠানে সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। নিজ বাড়ির উঠানে সালাত পড়া মহল্লার মসজিদে সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে সালাত পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম।’’ তারপর উম্মে হুমাইদ রা. আদেশে তার জন্যে তার নিজ ঘরের ভিতরে অন্ধকার স্থানে একটি সালাতের জায়গা বানিয়ে দেওয়া হল। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ক্ষুদ্র অন্ধকার কুঠরীতে সালাত আদায় করেছেন। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমাদ ৬/৩৭১, ইবনে খুযায়মা ৩/৯৫, ইবনে হিব্বান ৪/২২]। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিসে বর্ণনাকারী মহিলা সাহাবিকে মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করার চেয়েও তার নিজ গৃহে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম বলেছেন।
সুতরাং মহিলাদের জন্য মসজিদে সালাত আদায় করা জায়েজ হলেও সর্বাবস্থায় বাড়িতে সালাত আদায় করা এবং হজ ও ওমরা সফরে মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে হোটেলে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম। অর্থাৎ উক্ত হাদিস অনুযায়ী সে হোটেলে সালাত আদায় করলেও মক্কার মসজিদুল হারামে (এক লক্ষ গুণ), এবং মদিনার মসজিদে নববীতে (১০০০ গুন) সালাত আদায়ের থেকে বেশি সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছে করলে হারামে গিয়েও সালাত আদায় করতে পারে। কেননা হাদিসে এসেছে, ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদ সমূহে যেতে বাধা দিও না।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: জুমার সালাত, অনুচ্ছেদ: মহিলাদেরকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে, হা/ ৯০০ এবং সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: নারীদের মসজিদে গমন করা-নাফি‘ সূত্রে]

এ মর্মে আরো একাধিক হাদিস রয়েছে।

– এই ক্ষেত্রে যাতায়াতের পথে পূর্ণ পর্দা করবে (মুখমণ্ডল এবং দুই হাতের কব্জি ঢাকা সহকারে),
– আতর-সুগন্ধি ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে,
– মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সালাত আদায় করবে,
– পর পুরুষের শরীরের স্পর্শ যেন না লাগে সেজন্য ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ থেকে সতর্ক থাকবে।
– সর্বোপরি সব ধরনের ফিতনা থেকে দূরে থাকবে।

🔹আল্লামা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানিকে‌ প্রশ্ন করা হয় যে, হাদিসে আছে যে, “একজন মহিলার জন্য বাড়িতে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদ থেকে।” কিন্তু কোন মহিলা যদি মক্কায় থাকে তার জন্যও কি হারামে সালাত পড়ার থেকে হোটেলে সালাত পড়া অধিক উত্তম হবে?

উত্তরে তিনি বলেন,

إي واضح بالإيجاب ، ألا وهو أن صلاة المرأة حيث كانت ، في أيِّ بلد حلَّت ، حتى ولو كانت في مكة ، أو في المدينة ، أو في بيت المقدس ؛ فصلاتها في بيتها أفضل لها من صلاتها في المسجد ، كذلك هو الشأن بالنسبة للرجل فيما يتعلَّق بالنوافل من الصلوات ، فالأفضل له أن يصلي هذه النوافل في بيته وليس في المسجد ، حتى ولو كان المسجد الحرام ؛ ذلك لدليلين اثنين :
“হ্যাঁ, উত্তর স্পষ্ট। আর তা হল, একজন মহিলার সালাত-সে যেখানেই থাকুক না কেন, ‌যে শহরেই যাক না কেন-যদিও তা মক্কা, মদিনা বা বাইতুল মাকদিস হয় তার জন্য তার বাড়িতে সালাত করা অধিক উত্তম মসজিদ থেকে। যেমন বিষয়টি পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য বাড়িতে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। তার জন্য বাড়িতে নফল সালাত আদায় করা অধিক উত্তম; মসজিদে নয়। এমনকি মসজিদে হারাম থেকেও। তা দুইটি দলিলের কারণে। (এরপরে তিনি এ প্রসঙ্গে দুইটি হাদিসের দলিল উল্লেখ করেন)।‌” [সোর্স: al-albaby]
আল্লাহু আলম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-

স্বামীর পিতা চিরকালের জন্য মাহরাম এমনকি তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও

 প্রশ্ন: কোনও মহিলার তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও কি তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) তার জন্য মাহরাম থাকবে নাকি তিনি নন মাহরাম বলে গণ্য হবেন?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: স্বামীর পিতা (শ্বশুর) চিরকালের জন্য মাহরাম পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত যদিও তার স্বামীর সাথে তালাক সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে অথবা স্বামী মৃত্যু বরণ করে থাকেন। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,
وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ
“(এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত সন্তানদের স্ত্রীগণকে।” [সূরা নিসা: ২৩]

◍ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

: لا حرج عليك في الكشف لوالد زوجك السابق؛ لأنه محرم لك ولو طلقك ابنه، وزيارته في الأوقات المناسبة مع زوجك أو محرمك مناسبة، إذا كان من أهل الصلاح والخير، وهكذا لو زرته لوحدك إذا كان منزله قريبًا لا يحتاج إلى سفر ولا كلفة، بشرط أن يرضى زوجك بذلك
وفق الله الجميع لما يرضي
“আপনার প্রাক্তন স্বামীর পিতার সামনে মুখমণ্ডল খোলা বা বেপর্দা হওয়ায় কোনও অসুবিধা নেই। কারণ তিনি আপনার মাহরাম (তার সাথে চিরকালের জন্য বিয়ে হারাম) যদিও তার ছেলে আপনাকে তালাক দিয়েছে। অত:এব আপনার জন্য আপনার (নতুন) স্বামীর সাথে বা কোনও মাহরামের সাথে গিয়ে উপযুক্ত সময়ে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা বৈধ-যদি সে নেককার ও সৎ হয়। একাকীও তার বাড়িতে দেখা-সাক্ষাত করতে পারেন-যদি তার বাড়ি কাছাকাছি হয় এবং সেখানে যেতে সফর বা কষ্ট করতে না হয়। তবে শর্ত হল, এতে আপনার স্বামীর সম্মতি থাকতে হবে। আল্লাহ সকলকে ঐ কাজ করার তওফিক দান করুন যাতে তিনি সন্তুষ্ট হোন।” [মাজমু ফাতাওয়া ও মাকালাত শাইখ বিন বায (শাইখ বিন বায রাহ.-এর ফতোয়া ও প্রবন্ধ সমগ্র) ২১/২২। ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩/২/১৪১৮ হিজরি]

উল্লেখ্য যে,
◆ স্বামীর সাথে কেবল আকদ সংঘটিত হলেই তার পিতা (মহিলার শ্বশুর) চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে-চাই দাম্পত্য জীবন শুরু হোক অথবা না হোক। অর্থাৎ যদি কোনও কারণে বিয়ের ইজাব-কবুল হওয়ার পরপরই এবং দাম্পত্য জীবন শুরু করার পূর্বে তাদের মাঝে তালাক সংঘটিত হয়ে যায় তারপরও উক্ত মহিলার জন্য তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) চিরতরে হারাম বলে গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বিয়ে বন্ধন হারাম।

◆ অনুরূপভাবে স্ত্রীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে হয়ে গেলে বা স্ত্রী মৃত্যু বরণ করলেও তার মা (শাশুড়ি) এবং তার দাদি-নানিগণ (দাদি শাশুড়ি ও নানি শাশুড়িগণ) উক্ত পুরুষ ব্যক্তির জন্য মাহরাম বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং তাদের সামনে কোনও পর্দা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলাদেরকে পুরুষদের জন্য বিয়ে করা হারাম করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল, স্ত্রীর মা এবং দাদি-নানিগণ। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ
“(আরও হারাম করা হয়েছে), তোমাদের স্ত্রীদের মাগণ (তথা জন্মদাত্রী মা এবং দাদি-নানিগণ) কে।” [সূরা নিসা: ২৩]
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

দাঁড়িয়ে পানাহার করা কি হারাম বা মাকরূহ

 প্রশ্ন: আমি জানতে চাই, দাঁড়িয়ে বা হেঁটে খানা খাওয়া এবং পান করার ব্যাপার ইসলামের বিধান কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা জায়েজ তবে বসে করা উত্তম। অনেকে মনে করে, দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা হারাম (নিষেধ) অথবা মকরুহ (অপছন্দনীয়)। এ ধারণা ঠিক নয়।

নিন্মে এ বিষয়ে কতিপয় হাদীস, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এবং আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

❖ দাঁড়িয়ে পানাহার করা জায়েজ। এটিকে মাকরূহ বলা ঠিক নয়:
দলিল নিন্মোক্ত হাদিসগুলো:

❐ ১. আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি দাঁড়িয়ে পান করলেন। অত:পর বললেন,

إِنَّ نَاسًا يَكْرَهُ أَحَدُهُمْ أَنْ يَشْرَبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ

“কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে পান করাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঠিক এইভাবে পান করতে দেখেছি, যেভাবে তোমরা আমাকে পান করতে দেখলে।” [সহিহুল বুখারি: ৫৬১৫]

❐ ২. মুসনাদে আহমদে আলি রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন:

فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّاسُ كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوهُ فَقَالَ : مَا تَنْظُرُونَ ! إِنْ أَشْرَبْ قَائِمًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَائِمًا ، وَإِنْ أَشْرَبْ قَاعِدًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَاعِدًا

“তখন কিছু মানুষ তাঁর দিকে এমনভাবে তাকাল যে, বুঝা গেল, তারা যেন এটাকে গর্হিত কাজ মনে করে। তখন তিনি বললেন, তোমরা কী দেখছ? আমি যদি দাঁড়িয়ে পান করি তাহলে (জেনে রাখো যে,) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখেছি আর আমি যদি বসে পান করি তাহলেও (জেনে রাখ) যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বসে পান করতে দেখেছি।” [মুসনাদ আহমদ, হা/৭৯৭, আহমদ শাকের তাহকীক মুসনাদ আহমদে বলেন, এর সনদ সহীহ]

❐ ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشِي ، وَنَشْرَبُ وَنَحْنُ قِيَامٌ

“রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা চলতে চলতে আহার করতাম এবং দাঁড়িয়ে পান করতাম।” [সুনান তিরমিযী, হাদিস নাম্বার ১৮৮১, সহীহ-আলবানি]। এ সব হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে ও হাঁটা অবস্থায় পানাহার করতেন। সুতরাং এটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ রইল না।

❖ দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা:

কিছু হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করা ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম ২০২৪, তিরমিযী ১৮৭৯, আবু দাউদ ৩৭১৭, ইবনে মাজাহ ৩৪২৩, আহমদ ১১৭৭৫]

এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। এ মর্মে আরও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

❖ দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা এবং বৈধতার হাদিসের মাঝে সমন্বয়:
এই হাদিসগুলোর সমন্বয় সাধান করতে গিয়ে ইমাম নববী রহ. বলেন, “বসে পানাহার করা উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ কিন্তু দাঁড়িয়ে পানাহার করা জায়েজ। দাঁড়িয়ে খাওয়া পান করাকে মাকরূহ বলা ঠিক নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এবং তাঁর সম্মানিত সাহাবিগণ দাঁড়িয়ে ও চলা অবস্থায় পানাহার করেছেন। সুতরাং তারা যে কাজ করেছেন সেটাকে মাকরূহ বা অ পছন্দনীয় বলা মোটেই ঠিক হবে না।”

❑ দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত হাদিসটি রহিত:

সৌদি আবরের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,
الشرب قاعدًا أفضل، والشرب قائمًا لا بأس به، والحديث الذي فيه الاستقاء منسوخ؛ لأن الأحاديث الصحيحة دلت على أنه ﷺ كان يشرب قائمًا وقاعدًا، من حديث ابن عباس، ومن حديث علي رضي الله عنه فلا بأس أن يشرب قاعدًا وقائمًا، والقعود أفضل، أما: فليستقيء
“বসে পান করা উত্তম। দাঁড়িয়ে পান করায় কোনও অসুবিধা নেই। আর যে হাদিসে বমি করার কথা এসেছে তা মানসুখ (রহিত)। কারণ ইবনে আব্বাস রা. ও আলি রা থেকে একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ও বসে পানি পান করেছেন। সুতরাং দাঁড়িয়ে ও বসে পান করতে কোনও অসুবিধা নেই। বসা উত্তম। আর যে হাদিসে বলা হয়েছে যে, فليستقيء (যেন বমি করে দেয়)তা রহিত।” [binbaz]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ফতোয়া কী এবং ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না

 ফতোয়া কী? ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না (ফতোয়া প্রদানের শর্তাবলী)

প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি আলেম নন কিন্তু তার আকিদা সহিহ। তিনি সব বিষয়ে মানুষকে ফতোয়া দেন। তার থেকে ফতোয়া নেওয়া যাবে কি? আর ব্রাদার্সদের থেকে কি ফতোয়া গ্রহণ করা যাবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিম্নে ফতোয়ার পরিচয়, ফতোয়া প্রদানের শর্তাবলী, আমাদের দেশের মুফতিদের অবস্থা, ইলম বিহীন ফতোয়া প্রদানের ভয়াবহতা এবং সালাফদের ফতোয়া ভীতি ইত্যাদি সর্ম্পকে অতি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল। وبالله التوفيق

❑ ফতোয়া শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:

ফতোয়া (الفتوي) শব্দের অর্থ: মতামত, রায়, মত ও সিদ্ধান্ত ইত্যাদি। [আরবি-বাংলা অভিধান। ড. ফজলুর রহমান]
– ব্যাখ্যা দেওয়া। যেমন: আল্লাহর তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي رُؤْيَايَ إِن كُنتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُونَ
“হে পরিষদবর্গ! তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাক।” [সূরা ইউসুফ: ৪৩]
– পরামর্শ দেওয়া। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَتْ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي أَمْرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمْرًا حَتَّىٰ تَشْهَدُونِ
“বিলকিস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।” [সূরা নামল: ৩২]

আর পরিভাষায় ফতোয়া বলা হয়,
ذِكْرُ الحُكْم المسؤول عنه للسَّائل
“প্রশ্নকারীর নিকট তার প্রশ্ন কৃত বিষয়ের বিধান উল্লেখ করা।” [ফায়জুল কাদির-মুনাবি ১/১৫৮, আল মিসবাহুল মুনির পৃষ্ঠা: ২৩৯]

কোনও কোনও আলেম বলেন,
الإخبار بحكم الشرع، لا على وجه الإلزام
“শরিয়তের হুকুম জানানো-বাধ্য করার ভিত্তিতে নয়।” [ফাতায়া লিল ইমাম শাতেবি, পৃষ্ঠা: ৬৮] (বাধ্য করার অধিকার রাখে কেবল কাজি বা বিচারক; মুফতি নয়)

❑ ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা, আমাদের দেশের মুফতিগণের অবস্থা এবং ফতোয়ার শর্তাবলি:

ফতোয়া ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জীবন চলার পথে মানুষ নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ নানা ধরণের সংশয় ও জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হয়। দেশ, সমাজ, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সমস্যায় ভিন্নতা থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে সে সব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে আলেমদের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞ আলেমরা কুরআন-সুন্নাহর নির্যাস থেকে আমাদেরকে সমস্যার সমাধান এবং সে ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন। ফলে আমরা জটিলতা থেকে মুক্তি পাই এবং সহজে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি।

অতএব, জীবনের নানা সমস্যার সঠিক ইসলামিক সমাধান পেতে হলে আমাদের কর্তব্য, নির্ভরযোগ্য ও কুরআন-সুন্নাহর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন আলেমদেরকে নিকট থেকে ফতোয়া গ্রহণ করা। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‎
“অতএব তোমরা (কিতাব-সন্নাহর জ্ঞানে সুসজ্জিত) জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।” [সূরা নাহল: ৪৩ ও সূর আম্বিয়া: ৭] আল্লাহ তাআলা এখানে বিজ্ঞ আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা ইসলামের আলোকে মানুষের নানা সমস্যার সমাধান ও দিক নির্দেশনা দিবেন তাদের জন্য আবশ্যক হল, পূর্বসূরিদের বুঝ ও ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন-হাদিসের নির্যাস থেকে ফতোয়া প্রদান করা। ভাসাভাসা, অস্পষ্ট ও‌ দুর্বল জ্ঞান দ্বারা ফতোয়া প্রদান করা বৈধ নয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলেও বাস্তব কথা হলো, আমাদের দেশে যাদেরকে আমরা ‘আলেম’ বলে চিনি তাদের অধিকাংশের মধ্যেই ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা নেই‌ ব্রাদার্স, সাধারণ তালেবুল ইলম কিংবা সাধারণ দ্বীন চর্চা কারী ব্যক্তি তো দূরের কথা।

– ফতোয়ার শর্তাবলী:

আলেমগণ ফতোয়া দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো, ইলমুল কুরআন (নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, আম-খাস, মুতলাক-মুকাইয়াদ, শানে নুজুল ইত্যাদি), তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস (হাদিসের সহিহ-জয়ীফ মান নির্ণয়, রিজাল শাস্ত্র ইত্যাদি), আরবি ভাষা সাহিত্য (ইলমুল বালাগাহ বা অলঙ্কার শাস্ত্র, কবিতা ও গভীর ভাষাজ্ঞান) ও ব্যাকরণ (নাহু-সরফ), ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সালাফদের ফতোয়া, মতামত, মতবিরোধ ও ইজমা এবং বিশুদ্ধ আকিদা-এর পাশাপাশি ফিকহুল ওয়াকে (পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট) ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা। পাশাপাশি একজন মুফতি হবেন, তাকওয়াবান বা পরহেজগার-আল্লাহ ভীরু, আমানতদার বা বিশ্বস্ত, ব্যক্তিত্ববান, সুস্থ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন এবং বিচক্ষণ ইত্যাদি। আলেমগণ এ বিষয়গুলো বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম শাফেয়ী রাহ. খতিব বাগদাদি থেকে সংক্ষেপে মুফতির শর্তাবলী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
”لا يحل لأحد يفتي في دين الله إلا رجلا عارفا بكتاب الله : بناسخه ومنسوخه ، وبمحكمه ومتشابهه ، وتأويله وتنزيله ، ومكيه ومدنيه ، وما أريد به ، وفيما أنزل ، ثم يكون بعد ذلك بصيرا بحديث رسول الله – صلى الله عليه وسلم – ، وبالناسخ والمنسوخ ، ويعرف من الحديث مثل ما عرف من القرآن ، ويكون بصيرا باللغة ، بصيرا بالشعر ، وما يحتاج إليه للعلم والقرآن ، ويستعمل مع هذا الإنصاف ، وقلة الكلام ، ويكون بعد هذا مشرفا على اختلاف أهل الأمصار ، ويكون له قريحة بعد هذا ، فإذا كان هذا هكذا فله أن يتكلم ويفتي في الحلال والحرام ، وإذا لم يكن هكذا فله أن يتكلم في العلم ولا يفتي

“আল্লাহর দ্বীনের বিষয়ে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারও ফতোয়া দেওয়া বৈধ নয় যে, আল্লাহর কিতাবের নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, ব্যাখ্যা, শানে নুজুল, মক্কি-মাদানি, এর উদ্দেশ্য কী, কোন বিষয়ে নাজিল হয়েছে ইত্যাদি বিষয় জানে। পাশাপাশি আল্লাহর রসুলের হাদিসের নাসেখ-মনসুখ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান রাখে, হাদিস বিষয়ে তেমন জ্ঞান রাখে যেমন জ্ঞান রাখে কুরআনের বিষয়ে, আরবি ভাষা, আরবি কবিতা এবং কুরআন ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখে। এর সাথে সে ন্যায়-ইনসাফকে ব্যবহার করবে, কম কথা বলবে, তৎসঙ্গে বিভিন্ন দেশে আলেমদের মতবিরোধ বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে। তাহলে তার মধ্যে ফতোয়া প্রদানের পরিপক্বতা ও যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। এমন হলে তার জন্য হালাল-হারাম বিষয়ে কথা বলা ও ফতোয়া দেওয়া অনুমতি রয়েছে। অন্যথায় সে ইলমি কথাবার্তা বলতে পারে কিন্তু ফতোয়া দিবে না।” [আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ-খতিব বাগদাদি ২/২৩৪]

তাই সাধারণ মানুষের উচিত, দেখেশুনে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ইলমের জগতে সুপরিচিত বিদগ্ধ ও বড় আলেমদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যার তার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা দ্বীনের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।

❑ ইলম বিহীন ফতোয়া প্রদানের ভয়াবহতা এবং সালাফদের ফতোয়া ভীতি:

যারা ইচ্ছেমত ফতোয়া দেয় তাদের উচিত, আল্লাহকে ভয় করা। কেননা এটা অনেক বড় আমানত।‌ ইলম বিহীন ফতোয়া দেওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)

◆ ইমাম নওবি রাহ. বলেন,
اعلم أن الإفتاءَ عظيمُ الخطر، كبيرُ الموقع، كثيرُ الفضل؛ لأن المفتيَ وارثُ الأنبياء صلواتُ الله وسلامه عليهم، وقائمٌ بفرض الكفاية، لكنه مُعَرَّضٌ للخطأ؛ ولهذا قالوا: المفتي مُوَقِّعٌ عن الله تعالى

“জেনে রাখুন, ফতোয়া দেওয়ার বিষয়টি বড় বিপদ জনক এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী। কিন্তু বিশাল মর্যাদারও বিষয়। কারণ মুফতি (ফতোয়া প্রদানকারী) নবি-রসুলদের উত্তরাধিকারী এবং ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব পালনকারী কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত প্রদানের আশঙ্কাজনক অবস্থার সম্মুখীন। এ কারণে আলেমগণ বলেন যে, মুফতি হল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষর দান কারী।” [আদাবুল ফতোয়া, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৩]

এ জন্য সালাফগণ ফতোয়া প্রদানের ব্যাপারে খুবই ভীত থাকতেন এবং যথাসম্ভব এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন।

◆ আব্দুর রাহমান ইবনে আবি লায়লা বলেন,
أدركتُ عشرين ومئةً من الأنصارِ مِن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يُسأل أحدُهم عن المسألةِ، فيردُّها هذا إلى هذا، وهذا إلى هذا، حتى ترجعَ إلى الأوَّلِ
“আমি একশ বিশ জন আল্লাহর রসুলের আনসারি সাহাবিকে পেয়েছি যাদের কাছে, কোনও মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলে একজন অন্য জনের নিকট পাঠাতেন, তিনি আরেক জনের কাছে পাঠাতেন…এভাবে বিষয়টি আবার প্রথম জনের কাছে ফিরে আসতো।” [তারিখে বাগদাদ-খতিব আল বাগদাদি ১৩/৪১২, আল মারিফাতু ওয়াত তারিখ ৩/১১৫]

◆ আবু হুসাইন উসমান ইবনে আসিম বলেন,
إنّ أحدَهم ليُفْتي في المسألةِ، ولو وَرَدَتْ على عمرَ بن الخطَّاب رضي الله عنه لجَمَع لها أهلَ بدرٍ!
“তোমাদের কেউ কেউ এমন মাসআলায় ফতোয়া দিয়ে দাও যে, সেটা যদি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর কাছে পেশ করা হত তাহলে তিনি (এ মাসআলার সঠিক জবাব পাওয়ার জন্য) বদরি সাহাবিদেরকে জমা করে ফেলতেন।” [আল মাদখাল ইলাস সুনান লিল বায়হাকি, পৃষ্ঠা নাম্বার: ৮০৩]

তবে সাধারণ আলেম, বক্তা, ওয়ায়েজ, মসজিদের ইমামগণ-খতিব ও ব্রাদার্স প্রমুখগণ যদি বিজ্ঞ আলেমদের দলিল সমৃদ্ধ ফতোয়াগুলো মানুষের কাছে নকল করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেকেই ফতোয়া নকল করার ক্ষেত্রেও আমানতদারিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয় অথবা আদেতেই আলেমদের ফতোয়াকে সঠিকভাবে বুঝা একং তা সঠিক জায়গায় উপস্থাপন করার মত যোগ্যতাটুকুও তার নিকট নেই। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন। যাহোক, এই জাতীয় ফতোয়াগুলো সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে বাধা নেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হলে তা প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ নির্ভর যোগ্য আলেমদের নিকট থেকে ইসলামের নানা সমস্যায় ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার এবং মুফতিদেরকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক দিক ফতোয়া প্রদানের তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Tuesday, June 13, 2023

কুরআনের কয়েকটি বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফজীলত

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

বাজারে প্রচলিত বিদ’আত ও ভুলে ভরা বই এ আমরা কুরআনের প্রত্যেকটি সূরার কোন না কোন ফজীলতের কথা পড়েছি। অথচ এগুলো অনেকাংশেই দুর্বল ও জাল হাদিসের উপর ভিত্তি করে লেখা। এখানে কুরআনের যেসব সূরা ও আয়াতের কথা সহীহ হাদিসে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে, সে হাদিসগুলো একত্রে উপস্থাপন করা হল।
সূরা ফাতিহা

১) আবু সাইদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন,

একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনি যে আমাকে বললেন তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ফাতেহা)। এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানি (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত ) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে”। (সহীহুল বুখারি ৪৪৭৪)

সূরা ইখলাস
২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রান আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।
৩) অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারি ৫০১৫)
৪) উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।(সহীহুল বুখারি ৫০১৫)
৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (মুসলিম ৮১২)
৬) আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। (সহীহুল বুখারি ৭৭৪)

সূরা ফালাক ও সূরা নাস
৭) উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। (মুসলিম ৮১৪)
৮) আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। (তিরমিজী ২০৫৮)
সূরা মূলক
৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। (আবূ দাউদ ১৪০০)
সূরা বাক্বারা
১০) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, একদা জিবরাইল (আঃ) নবী(সাঃ)-এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরাইল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয় নাই। ওদিক দিয়ে একজন ফেরেশতা আবতির্ন হল। এই ফেরেশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে,ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি। সুতরাং তিনি এসে নবী (সাঃ)-কে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘‘আপনি দুটি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হই নাই। (সে দুটি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্কারার শেষ আয়াতসমূহ । ওর মধ্যে হতে যে বর্নটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে।’’ (মুসলিম ৮০৬)
১১) আবূ মাসাঊদ বদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সেই দু’টি যথেষ্ট হবে’।(সহীহুল বুখারি ৪০০৮)
বলা হয়েছে যে, সে রাতে অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। অথবা তাহাজ্জুদের নামায থেকে যথেষ্ট হবে।
১২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নিজিদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না। কেননা, যে বাড়িতে সূরা বাক্কারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’। (মুসলিম ৭৮০)
(অর্থাৎ সুন্নত ও নফল নামায তথা পবিত্র কুরআন পড়া ত্যাগ ক’রে ঘরকে কবর বানিয়ে দিয়ো না। যেহেতু কবরে এ সব বৈধ নয়)।
আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত
১৩) উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান,মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী’। সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপর মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। (মুসলিম ৮১০)
(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।)
১৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন (একবার) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমযানের জাকাত(ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ ( আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব’; সে আবেদন করল,আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব’; কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম); রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম’; তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব’; সে বলল, ‘আমি অভাবী,পরিবারের দায়ত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না’;সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেরে দিলাম।
সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘‘আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম’; তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।
সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে)আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম ‘‘এবারে তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর দরবারে হাযির করবই’; এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার । ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস’’; সে বলল ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন’; আমি বললাম ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানাই যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ ক’রে (ঘুমাবে); তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’।
সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম); তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার বন্দী কী আচারন করেছে?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, ‘‘ আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন’’; বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’; তিনি বললেন ‘‘সে শব্দগুলি কী?’’ আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, ‘‘যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে’’;সে আমাকে আর বলল, “তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’’।
(এ কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী না’; তিনি বললেন, ‘‘সে ছিল শয়তান’’। (সহীহুল বুখারী ২৩১১)
সূরা কাহফ
১৫) আবূ দার্দা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের(ফিৎনা) থেকে পরিএাণ পাবে।’’ অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। (মুসলিম ৮০৯)

বিপদে ধৈর্যধারণ : দশটি উপদেশ

 বিপদে ধৈর্যধারণ : দশটি উপদেশ কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করেনি; ভর দুপুরেও গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ হয়ে যায়নি; ভরা যৌবন সত্ত্বেও সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি; অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য ক্রন্দন ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও মর্মন্তুদ কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির দিনের জন্য; আর কোন দিন ফিরে আসবে না; কোন দিন তার সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ করিনি;

কেন তার সাথে রাগ করেছি; কেন তার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। আরো কত ভয়াবহ স্মৃতির তাড়না তাড়িয়ে বেড়ায়, শোকাতুর করে, কাঁদায়। কত ভর্ৎসনা থেমে থেমে হৃদয়ে অস্বস্তির জন্ম দেয়, কম্পনের সূচনা করে অন্তরাত্মায়। পুনঃপুন একই অভিব্যক্তি আন্দোলিত হয়- মুখের ভাষা যা ব্যক্ত করতে অক্ষম। হাতের কলম যা লিখতে অপারগ।
হ্যাঁ, এ কঠিনতম মুহূর্ত, হতাশাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শক্তি, সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল উপহার দেয়ার মানসে আমাদের এ প্রয়াস। আমরা মুসলমান। আমাদের মনোনীত রব আল্লাহ। আমাদের পছন্দনীয় ধর্ম ইসলাম। আমাদের একমাত্র আদর্শ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারাই আত্মতৃপ্তি লাভের যোগ্যপাত্র। পক্ষান্তরে কাফেরদের জীবন সংকীর্ণ, তারা হতাশাগ্রস্ত, তারা এ তৃপ্তি লাভের অনুপোযুক্ত। কারণ, আল্লাহ মোমিনদের অভিভাবক, কাফেরদের কোনো অভিভাবক নেই।বিশ্ব নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মোমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন :مثل المؤمن كمثل الزرع لا تزال الريح تميله، ولا يزال المؤمن يصيبه البلاء، ومثل المنافق كمثل شجرة الأرز لاتهتز حتى تستحصد. (صحيح مسلم:৫০২৪)“একজন মোমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রূপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মোমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফেকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যাবৎ-না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।”[১]আবু হুরায়রা রা.-র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :مثل المؤمن كمثل خامة الزرع يفيء ورقه من حيث أتتها الريح تكفؤها، فإذا سكنت اعتدلت، وكذلك المؤمن يكفآ بالبلاء، ومثل الكافر كمثل الأرزة صمعاء معتدلة حتى يقصمها الله إذا شاء. (صحيح البخاري : ৬৯১২)“ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার ন্যায়, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সেও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন।”[২] শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুঁড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে পারে না। তদ্রুপ মুসিবত যদিও মোমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে।এ পার্থিব জগৎ দুঃখ-বেদনা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, সংহার ও জীবন নাশকতায় পরিপূর্ণ। এক সময় প্রিয়জনকে পাওয়ার আনন্দ হয়, আরেক সময় তাকে হারানোর দুঃখ। এক সময় সুস্থ, সচ্ছল, নিরাপদ জীবন, আরেক সময় অসুস্থ, অভাবী ও অনিরাপদ জীবন। মুহূর্তে জীবনের পট পালটে যায়, ভবিষ্যৎ কল্পনার প্রাসাদ দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে মিশে যায়। অথবা এমন সংকট ও কর্মশূন্যতা দেখা দেয়, যার সামনে সমস্ত বাসনা নিঃশেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সব উৎসাহ-উদ্দীপনা।কারণ এ দুনিয়ায় নেয়ামত-মুসিবত, হর্ষ-বিষাদ, হতাশা-প্রত্যাশা সব কিছুর অবস্থান পাশাপাশি। ফলে কোন এক অবস্থার স্থিরতা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতার অনুচর পঙ্কিলতা, সুখের সঙ্গী দুঃখ। হর্ষ-উৎফুল্ল ব্যক্তির ক্রন্দন করা, সচ্ছল ব্যক্তির অভাবগ্রস্ত হওয়া এবং সুখী ব্যক্তির দুঃখিত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।এ হলো দুনিয়া ও তার অবস্থা। প্রকৃত মোমিনের এতে ধৈর্যধারণ বৈ উপায় নেই। বরং এতেই রয়েছে দুনিয়ার উত্থান-পতনের নিরাময় তথা উত্তম প্রতিষেধক। হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :جربنا وجرب المجربون فلم نر شيئا أنفع من الصبر، به تداوى الأمور، وهو لا يداوى بغيره.“আমাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানীদেরও অভিজ্ঞতা, ধৈর্যের চেয়ে মূল্যবান বস্তু আর পায়নি। ধৈর্যের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা যায়, তবে তার সমাধান সে নিজেই।” অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন, আবার ধৈর্যের জন্যও ধৈর্য প্রয়োজন। হাদিসে এসেছে :وما أعطي أحدا عطاء خيرا وأوسع من الصبر. ( البخاري :১৩৭৬، و مسلم : ১৭৪৫)“ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি।”[৩]অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :إن أصابته سراء شكر فكان خيراله، وإن أصابته ضراء صبر فكان خيرا له. (مسلم : ৫৩১৮)“মোমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।”[৪]আল্লাহ তাআলা আমাদের ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একে তার সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের উপায় ঘোষণা করেছেন। এরশাদ হচ্ছে :يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿البقرة:১৫৩﴾“হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”[৫]আরো বিষেশভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষাগার, আমি তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র, ধন-সম্পদ, জনবল ও ফল-মূলের সল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। হে রাসূল! আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন। এরশাদ হচ্ছে :وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ. الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ. أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿البقرة:১৫৫-১৫৭﴾“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।”[৬]বস্তত নিজ দায়িত্বে আত্মোনিয়োগ, মনোবল অক্ষুণ্ন ও কর্ম চঞ্চলতার জন্য ধৈর্য অপরিহার্য। কেউ সাফল্য বিচ্যুত হলে, বুঝতে হবে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে তার মধ্যে। কারণ ধৈর্য্যের মতো শক্তিশালী চাবির মাধ্যমে সাফল্যের সমস্ত বদ্ধ কপাট উম্মুক্ত হয়। পাহাড়সম বাধার সম্মুখেও কর্মমুখরতা চলমান থাকে।মানব জাতির জীবন প্রবাহের পদে পদে ধৈর্যের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য বিধায় এ নিবন্ধের সূচনা। কেন ধৈর্যধারণ করব? কী তার ফল? কীভাবে ধৈর্যধারণ করব? কী তার পদ্ধতি? ইত্যাদি বিষয়ের উপর দশটি উপদেশ উল্লেখ করব। যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর বিশেষ উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মুসিবত আর প্রতিকূলতায় নিত্যদিনের মত স্বাভাবিক জীবন উপহার দিবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে সাফল্যমণ্ডিত জীবন লাভে।
 ১. যে কোন পরিস্থিতি মেনে নেয়ার মানসিকতা লালন করা:
প্রত্যেকের প্রয়োজন মুসিবত আসার পূর্বেই নিজকে মুসিবত সহনীয় করে তোলা, অনুশীলন করা ও নিজেকে শোধরে নেয়া। কারণ ধৈর্য কষ্টসাধ্য জিনিস, যার জন্য পরিশ্রম অপরিহার্য।স্মর্তব্য যে, দুনিয়া অনিত্য, ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী। এতে কোনো প্রাণীর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। আছে শুধু ক্ষয়িষ্ণু এক মেয়াদ, সিমীত সামর্থ। এ ছাড়া আর কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের উদাহরণে বলেন :كراكب سار في يوم صائف، فاستظل تحت شجرة ساعة من نهار، ثم راح وتركها. (مسند الإمام أحمد، من حديث عبد الله بن عباس، رقم : ২৭৪৪)“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তময় কিছু সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল, ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করল।”[৭]হে মুসলিম! দুনিয়ার সচ্ছলতার দ্বারা ধোঁকা খেওনা, মনে করো না, দুনিয়া স্বীয় অবস্থায় আবহমানকাল বিদ্যমান থাকবে কিংবা পট পরিবর্তন বা উত্থান-পতন থেকে নিরাপদ রবে। অবশ্য যে দুনিয়াকে চিনেছে, এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে, তার নিকট দুনিয়ার সচ্ছলতা মূল্যহীন।জনৈক বিদ্বান ব্যক্তি বলেন, “যে দুনিয়া থেকে সতর্ক থেকেছে ভবিষ্যত জীবনে সে অস্থির হয়নি। যে অনুশীলন করেছে পরবর্তীতে তার পদস্খলন ঘটেনি। যে অবর্তমানে অপেক্ষমাণ ছিল বর্তমানে সে দুঃখিত হয়নি।” মুদ্দা কথা, যে পার্থিব জগতে দীর্ঘজীবি হতে চায়, তার প্রয়োজন মুসিবতের জন্য ধৈর্য্যশীল এক হৃদয়। 

২. তাকদিরের উপর ঈমান:
যে ব্যক্তি মনে করবে তাকদির অপরিহার্য বাস্তবতা এবং তা অপরিবর্তনীয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া সংকটময় ও পরিবর্তনশীল, তার আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে। দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ স্বাভাবিক ও নগন্য মনে হবে তার কাছে। আমরা দেখতে পাই, তাকদিরে বিশ্বাসী মুমিনগণ পার্থিব মুসিবতে সবচে’ কম প্রতিক্রিয়াশীল, কম অস্থির ও কম হতাশাগ্রস্ত হন। বলা যায় তাকদিরের প্রতি ঈমান শান্তি ও নিরাপত্তার ঠিকানা। তাকদির-ই আল্লাহর কুদরতে মোমিনদের হৃদয়-আত্মা নৈরাশ্য ও হতাশা মুক্ত রাখে। তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই :واعلم أن الأمة لواجتمعت على أن ينفعوك بشيء لم ينفعوك بشيء إلا قد كتبه الله لك، ولو اجتمعت على أن يضروك بشيء لم يضروك بشيء إلا قد كتبه الله عليك، رفعت الأقلام، وجفت الصحف. (سنن الترمذي : ২৪৪০)“জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ জড়ো হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, কোনও উপকার করতে পারবে না, তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আবার তারা সকলে মিলে যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, কোনও ক্ষতি করতে পারবে না, তবে যততুটু আল্লাহ তোমার কপালে লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কিতাব শুকিয়ে গেছে।”[৮] আমাদের আরো বিশ্বাস, মানুষের হায়াত, রিযিক তার মায়ের উদর থেকেই নির্দিষ্ট। আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :وكل الله بالرحم ملكا، فيقول: أي رب نطفة؟ أي رب علقة؟ أي رب مضغة؟ فإذا أراد الله أن يقضي خلقها، قال : أي رب أذكر أم أنثى؟ أشقي أم سعيد؟ فما الرزق؟ فما الأجل؟ فيكتب كذلك في بطن أمه. (البخاري : ৬১০৬، ومسلم : ৪৭৮৫)“আল্লাহ তাআলা গর্ভাশয়ে একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন, পর্যায়ক্রমে সে বলতে থাকে, হে প্রভু জমাট রক্ত, হে প্রভু মাংস পিণ্ড। যখন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভু পুঃলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ? ভাগ্যবান না হতভাগা? রিযিক কতটুকু? হায়াত কতটুকু? উত্তর অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়।”[৯]একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা রাদিআল্লাহু আনহা মুনাজাতে বলেন, “হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল, আমার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :قد سألت الله لآجال مضروبة، وأيام معدودة، وأرزاق مقسومة، لن يعجل الله قبل حله، أو يؤخر شيئا عن حله، ولو كنت سألت الله أن يعيذك من عذاب في النار، أو عذاب في القبر، كان خيرا وأفضل. (مسلم : ৪৮১৪)“তুমি নির্ধারিত হায়াত, নির্দিষ্ট কিছু দিন ও বণ্টনকৃত রিযিকের প্রাথর্না করেছ। যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ কিংবা কম-বেশী করবেন না। এরচে’ বরং তুমি যদি জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে নাজাত প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত।”[১০]ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হাদীসের বক্তব্যে সুষ্পষ্ট, মানুষের হায়াত, রিযিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত, তার অবিনশ্বর জ্ঞান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ এবং হ্রাস-বৃদ্ধিহীন ও অপরিবর্তনীয়।”[১১]ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আসেন এবং বলেন, আমার অন্তরে তাকদির সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বর্ণনা করে শোনান। হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দিবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান এবং জমিনবাসীদের শাস্তি দিলে, জালেম হিসেবে গণ্য হবেন না। আর তিনি তাদের সকলের উপর রহম করলে, তার রহম-ই তাদের আমলের তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান স্বর্ণ দান করলেও কবুল হবে না। স্মরণ রেখ, যা তোমার হস্তগত হওয়ার তা কোনভাবেই হস্তচ্যুত হওয়ার সাধ্য রাখে না। এতদ্ভিন্ন অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নাম অবধারিত। তিনি বলেন, অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর কাছে আসি। তিনিও তদ্রূপ শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর কাছে আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন। যায়েদ বিন ছাবেত এর কাছে আসি, তিনিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করে শোনালেন।”[১২] 

৩. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন চরিত পর্যালোচনা:
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু গোটা মুসলিম জাতির আদর্শ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাআলা বলেন :لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ﴿الأحزاب:২১﴾“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।”[১৩]রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত চিন্তাশীল, গবেষকদের উপজীব্য ও শান্তনার বস্তু। তার পূর্ণ জীবনটাই ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত উপমা। লক্ষ্য করুন, সল্প সময়ে মধ্যে চাচা আবু তালিব, যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কাফেরদের অত্যাচার প্রতিহত করতেন; একমাত্র বিশ্বস্ত সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন ঔরসজাত মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম ইন্তেকাল করেন। চক্ষুযুগল অশ্রসিক্ত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা নিশ্চল নির্বাক। এর পরেও প্রভুর ভক্তিমাখা উক্তি :إن العين تدمع، والقلب يحزن، ولانقول إلا ما يرضى ربنا، وإنا بفراقك يا إبراهيم لمحزونون. ( البخاري : ১৩০৩)“চোখ অশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও তা-ই মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু সন্তুষ্ট, হে ইব্রাহিম! তোমার বিরহে আমরা গভীর মর্মাহত।”[১৪] আরো অনেক আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে কেরাম মারা যান, যাদের তিনি ভালবাতেন, যারা তার জন্য উৎসর্গ ছিলেন। এত সব দুঃখ-বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-অভিপ্রায়গুলো ম্লান করতে পারেনি।তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের জীবন চরিত পর্যালোচনা করবে, তাদের কর্মকুশলতায় অবগাহন করবে, সে সহসাই অবলোকন করবে, তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র ধৈর্য্যের সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ. ﴿الممتحنة:৬﴾“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে[১৫] উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।”[১৬]উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা, আল্লাহ তাআলা তাকে এক জায়গাতে, এক সাথে দুটি মুসিবত দিয়েছেন। পা কাটা এবং সন্তানের মৃত্যু। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার সাতটি ছেলে ছিল, একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট রেখেছেন। চারটি অঙ্গ ছিল একটি নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ রেখেছেন। মুসিবত দিয়েছেন, নেয়ামতও প্রদান করেছেন। দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও আপনি।”[১৭]উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি তার দাফন সেরে কবরের পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে, তিনি বলেন, “হে বৎস! তোমার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। অবশ্যই তুমি তোমার পিতার অনুগত ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন, আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম। তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে এখানে অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত স্থান কবরে দাফন করে আগেরচে’ বেশি আনন্দিত। আল্লাহর কাছে তোমার বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের আশাবাদী। 

৪. আল্লাহর রহমতের প্রসস্ততা ও করুণার ব্যাপকতার স্মরণ:
সত্যিকার মুমিন আপন প্রভুর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন :أنأ عند ظن عبدي بي. (البخاري : ৬৭৫৬، ومسلم : ৪৮২২)“আমার ব্যাপারে আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী, আমি ব্যবহার করি।”[১৮]মুসিবত দৃশ্যত অসহ্য-কষ্টদায়ক হলেও পশ্চাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর সুপ্রসস্ত রহমতের উপর আস্থাবান থাকা।এরশাদ হচ্ছে :وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿البقرة:২১৬﴾“এবং হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।”[১৯]রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :عجبا للمؤمن، لايقضي الله له شيئا إلا كان خيرا له. (المسند من حديث أنس بن مالك : ২০২৮৩)“মোমিনের বিষয়টি চমৎকার, আল্লাহ তাআলা যা ফয়সালা করেন, তা-ই তার জন্য কল্যাণকর।”[২০]আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে যে সমস্ত নেয়ামত ও অনুদান দ্বারা আবৃত করেছেন, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা, যাতে এ অনুভূতির উদয় হয় যে, বর্তমান মুসিবত বিদ্যমান নেয়ামতের তুলনায় বিন্দুমাত্র। আল্লাহ তাআলা চাইলে মুসিবত আরো বীভৎস-কঠোর হতে পারত। তদুপরি আল্লাহ তাআলা আরো যে সমস্ত বালা মুসিবত থেকে নিরাপদ রেখেছেন, যে সকল দুর্ঘটনা থেকে নাজাত দিয়েছেন, তা অনেক বড়, অনেক বেশী।খিজির ও মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনায় উল্লেখিত বালকটিকে, খিজির হত্যা করেন, প্রথমে মূসা আলাইহিস সালাম আপত্তি জানান, খিজিরের অবহিত করণের দ্বারা জানতে পারেন, তার হত্যায় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَنْ يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا. فَأَرَدْنَا أَنْ يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا ﴿الكهف:৮০-৮১﴾“আর বালকটির বিষয় হল, তার পিতা-মাতা ছিল মুমিন। অতঃপর আমি আশংকা[২১] করলাম যে, সে সীমালংঘন ও কুফরী দ্বারা তাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলবে। তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।”[২২] এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :إن الغلام الذي قتله الخضر طبع كافرا، ولو عاش لأرهق أبويه طغيانا وكفرا. (مسلم : ৪৮১১)“খিজির আলাইহিস সালাম যে ছেলেটিকে হত্যা করেছেন, তার জন্মই ছিল কাফের অবস্থায়, যদি সে বেঁচে থাকত সীমালঙ্ঘন ও অকৃতজ্ঞতা দ্বারা নিজ পিতা-মাতাকে হত্যা করত।”[২৩] কাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন : তার জন্ম লাভে পিতা-মাতা উভয়ে যেমন আনন্দিত হয়েছে, তার মৃত্যুতে উভয়ে তেমন ব্যথিত হয়েছে। অথচ সে বেঁচে থাকলে, উভয়ের ধ্বংসের কারণ হত। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকা। 

৫. অধিকতর বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেখা:
অন্যান্য বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেখা, তাদের মুসিবতে স্মরণ করা। বরং অধিকতর বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দিকে নজর দেয়া। এতে সান্ত্বনা লাভ হয়, দুঃখ দূর হয়, মুসিবত হয় সহনীয়। হ্রাস পায় অস্থিরতা ও নৈরাশ্যতা। জেনে রাখা ভাল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :من يتصبر يصبره الله. (البخاري : ১৩৭৬)“ধৈর্য অসম্ভব বা অসাধ্য কিছু নয়, যে র্ধৈয্যধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্য্যধারণের ক্ষমতা দান করেন।”[২৪]বিকলাঙ্গ বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি, তার চেয়ে কঠিন বিপদগ্রস্তকে দেখবে। একজনের বিরহ বেদানায় ব্যথিত ব্যক্তি, দুই বা ততোধিক বিরহে ব্যথিত ব্যক্তিকে দেখবে। এক সস্তানহারা ব্যক্তি, অধিক সন্তানহারা ব্যক্তিকে দেখবে। সব সন্তানহারা ব্যক্তি, পরিবারহারা ব্যক্তিকে দেখবে।এক ছেলের মৃত্যু শোকে শোকাহত দম্পত্তি স্মরণ করবে নিরুদ্দেশ সন্তান শোকে কাতর দম্পত্তিকে- যারা স্বীয় সন্তান সর্ম্পকে কিছুই জানে না যে, জীবিত না মৃত। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ইউসুফ আ.-কে হারিয়ে অনেক বছর যাবৎ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে রাখেন। বৃদ্ধ ও দুর্বল হওয়ার পর আবার দ্বিতীয় সন্তান হারান। প্রথম সন্তান হারিয়ে বলেছিলেন :فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ ﴿يوسف:১৮﴾“সুতরাং (আমার করণীয় হচ্ছে) সুন্দর ধৈর্য। আর তোমরা যা বর্ণনা করছ সে বিষয়ে আল্লাহই সাহায্যস্থল।”[২৫]দ্বিতীয় সন্তান হারিয়ে বলেন :فَصَبْرٌ جَمِيلٌ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ ﴿يوسف:৮৩﴾“সে বলল, ‘বরং তোমাদের নাফ্‌স তোমাদের জন্য একটি গল্প সাজিয়েছে, সুতরাং (আমার করণীয় হচ্ছে) সুন্দর ধৈর্য। আশা করি, আল্লাহ তাদের সকলকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবেন, নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”[২৬]ওলিদ ইবনে আব্দুল মালেক এর নিকট চোখ ঝলসানো, বিকৃত চেহারার একজন লোক এসে উপস্থিত হয়। তিনি তার অবস্থা আপাদ-মস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন। কিন্তু তার ভেতর অস্থিরতার কোনও আলামত পেলেন না। অতঃপর তার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সে বলল : “আমি অনেক সম্পদ, সন্তানের মালিক ছিলাম, একদা আমরা একটি ময়দানে রাত যাপন করি। অকস্মাৎ বিশাল এক মরুঝড় আমাদের আক্রমণ করে বসে। একটা উট, একজন সন্তান ছাড়া সব নিয়ে যায় সে। অবশেষে উটটিও পালিয়ে যেতে লাগল। সন্তানটি আমার কাছে, আমি সন্তান রেখে উট ধরতে গেলাম। সন্তানের কাছে ফিরে এসে দেখি, নেকড়ে বাঘ তার পেটে মাথা ঠুকে আছে, বাকি অংশ সাবাড়। তাকে রেখে উটের পিছু নেই, সে প্রচন্ড এক লাথি মারে, যদ্দরুণ আমার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়, সাথে সাথে দৃষ্টিও চলে যায় চোখের। অবশেষে আমি সম্পদ, সন্তান এবং দৃষ্টি শক্তিহীন এ দুনিয়াতে নিঃসঙ্গ বেঁচে রইলাম। ওলিদ বললেন, তাকে উরওয়ার কাছে নিয়ে যাও; সে যাতে বুঝে, তার চে’ অধিক বিপদগ্রস্ত লোকও এ পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে। 

৬. মুসিবত পুণ্যবাণ হওয়ার আলামত:
মুসিবত পুণ্যবাণ হওয়ার আলামত, মহত্বের প্রমাণ। এটাই বাস্তবতা। একদা সাহাবী সাদ বিন ওয়াক্কাস রা. রসূল সা.কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসূল, দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত কে? উত্তরে তিনি বলেন :الأنبياء ثم الأمثل، فالأمثل، فيبتلى الرجل على حسب دينه، فإن كان دينه صلبا اشتد بلاؤه، وإن كان في دينه رقة ابتلي على حسب دينه، فما يبرح البلاء بالعبد حتى يتركه يمشي على الأرض ما عليه خطيئة. (الترمذي : ২৩২২)“নবীগণ, অতঃপর যারা তাদের সাথে কাজ-কর্ম-বিশ্বাসে সামঞ্জস্যতা রাখে, অতঃপর যারা তাদের অনুসারীদের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। দ্বীনি অবস্থান পাকাপোক্ত হলে পরীক্ষা কঠিন হয়। দ্বীনি অবস্থান দুর্বল হলে পরীক্ষাও শিথিল হয়। মুসিবত মুমিন ব্যক্তিকে পাপশূন্য করে দেয়, এক সময়ে দুনিয়াতে সে নিষ্পাপ বিচরণ করতে থাকে।”[২৭] রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :من يرد الله به خيرا يصب منه. (البخاري : ৫২১৩، ومسلم : ৭৭৮)“আল্লাহ যার সাথে কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তার থেকে বাহ্যিক সুখ ছিনিয়ে নেন।”[২৮]তিনি আরো বলেন :وإن الله إذا أحب قوما ابتلاهم. ( الترمذي : ২৩২০، ابن ماجه : ৪০২১)“আল্লাহ তাআলা যখন কোন সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন, তখন তাদেরকে বিপদ দেন ও পরীক্ষা করেন।”[২৯] 

৭. মুসিবতের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদানের কথা স্মরণ:
মোমিনের কর্তব্য বিপদের মুহূর্তে প্রতিদানের কথা স্মরণ করা। এতে মুসিবত সহনীয় হয়। কারণ কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী সওয়াব অর্জিত হয়। সুখের বিনিময়ে সুখ অর্জন করা যায় না- সাধনার ব্রিজ পার হতে হয়। প্রত্যেককেই পরবর্তী ফলের জন্য নগদ শ্রম দিতে হয়। ইহকালের কষ্টের সিঁড়ি পার হয়ে পরকালের স্বাদ আস্বাদান করতে হয়। এরশাদ হচ্ছে :إن عظم الجزاء مع عظم البلاء. (الترمذي : ২৩২০)“কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী প্রতিদান প্রদান করা হয়।”[৩০]একদা হজরত আবু বকর রা. ভীত-ত্রস্ত হালতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কীভাবে অন্তরে স্বস্তি আসে?لَيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ وَلَا يَجِدْ لَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ﴿النساء:১২৩﴾“না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।”[৩১]রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :غفرالله لك يا أبا بكر! ألست تمرض؟ ألست تنصب؟ ألست تحزن؟ ألست تصيبك اللأواء؟“হে আবু বকর, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, তুমি কি অসুস্থ হও না? তুমি কি বিষণ্ন্ন হও না? মুসিবত তোমাকে কি পিষ্ট করে না? উত্তর দিলেন, অবশ্যই। বললেন :فهو ما تجزون به. (المسند : من حديث أبي بكر : ৬৮)“এগুলোই তোমাদের অপরাধের কাফফারা-প্রায়শ্চিত্ত।”[৩২]আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীল বিপদগ্রস্তদের জন্য উত্তম প্রতিদান তৈরী করেছেন, বালা-মুসিবতগুলো গুনাহের কাফফারা ও উচ্চ মর্যাদার সোপান বানিয়েছেন। আরো রেখেছেন যথার্থ বিনিময় ও সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ।জান্নাতের চেয়ে বড় প্রতিদান আর কি হতে পারে! এ জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছে ধৈর্য্যশীলদের জন্য। যেমন মৃগী রোগী মহিলার জন্য জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে- ধৈর্য্যধারণের শর্তে। আতা বিন আবি রাবাহ বর্ণনা করেন, একদা ইবনে আব্বাস রা. আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতি মহিলা দেখাবো? আমি বললাম অবশ্যই। তিনি বললেন, এই কালো মহিলাটি জান্নাতি। ঘটনাটি এরূপ- একবার সে রসূল সা.-এর নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রসূল আমি মৃগী রোগী, রোগের দরুন ভূপাতিত হয়ে যাই, বিবস্ত্র হয়ে পরি। আমার জন্য দোয়া করুন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :إن شئت صبرت ولك الجنة، وإن شئت دعوت الله أن يعافيك. (البخاري : ৫২২০، ومسلم : ৪৬৭৩)“ইচ্ছে করলে ধৈর্যধারণ করতে পার, বিনিময়ে জান্নাত পাবে, আর বললে সুস্থ্যতার জন্য দোয়া করে দেই।” সে বলল, আমি ধৈর্যধারণ করব। তবে আমি বিবস্ত্র হয়ে যাই, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যাতে বিবস্ত্র না হই। অতঃপর তিনি তার জন্য দোয়া করে দেন।”[৩৩]অনুরূপ জান্নাতের নিশ্চয়তা আছে দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :إن الله قال : إذا ابتليت عبدي بحبيبتيه فصبر عوضته منهما الجنة. (البخاري : ৫২২১)“আল্লাহ তাআলা বলেছেন : আমি যখন আমার বান্দাকে দুটি প্রিয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করি, আর সে ধৈর্যধারণ করে, বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি।”[৩৪]আরো জান্নাতের ওয়াদা আছে, প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যুতে ধৈর্য্যধারণকারীর জন্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :ما لعبدي المؤمن عندي جزاء إذا قبضت صفيه من أهل الدنيا ثم احتسبه إلا الجنة. (البخاري : ৫৯৪৪)“আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার অকৃত্রিম ভালোবাসার পাত্রকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেই। এবং তাতে সে ধৈর্য্যধারণ করে, ছওয়াবের আশা রাখে, আমার কাছে তার বিনিময় জান্নাত বৈ কি হতে পারে?”[৩৫] অর্থাৎ নিশ্চিত জান্নাত।সন্তান হারাদেরও আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। কারণ তিনি বান্দার প্রতি দয়ালু, তার শোক-দুঃখ জানেন। যেমন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তিন সন্তান দাফনকারী মহিলাকে। তিনি তাকে বলেন- “তুমি জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধকারী মজবুত ঢাল বেষ্টিত হয়ে গেছ।” ঘটনাটি নিম্নরূপ : সে একটি অসুস্থ বাচ্চা সাথে করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে, এবং বলে হে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করুন। ইতিপূর্বে আমি তিন জন সন্তান দাফন করেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে নির্বাক : دفنت ثلاثة؟! “তিন জন দাফন করেছ!” সে বলল- হ্যাঁ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :لقد احتظرت بحظار شديد من النار. (مسلم : ৪৭৭০)“তুমি জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধকারী মজবুত প্রাচীর ঘেরা সংরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করেছ।”[৩৬]অন্য হাদীসে আছে :أيما مسلمين مضى لهما ثلاثة من أولادهما، لم يبلغوا حنثا كانوا لهما حصنا حصينا من النار.“সাবালকত্ব পাওয়ার আগে মৃত তিন সন্তান- তাদের মুসলিম পিতা-মাতার জন্য জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধকারী মজবুত ঢালে পরিনত হবে।”আবুযর রা. বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দু’জন মারা গেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :واثنان، “দুজন মারা গেলেও।” উস্তাদুল কুররা আবুল মুনজির উবাই রা. বলেন : হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার একজন মারা গেছে, তিনি বললেন :وواحد، وذلك في الصدمة الأولى. (المسند من حديث عبد الله مسعود : ৪৩১৪)“একজন মারা গেলেও। তবে মুসিবতের শুরুতেই ধৈর্য্যধারণ করতে হবে।”[৩৭] মাহমুদ বিন লাবিদ জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন : আমি রসূল সা.-কে বলতে শুনেছি :من مات له ثلاثة من الولد فاحتسبهم دخل الجنة،“সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, যার তিনজন সন্তান মারা যায় এবং সে তাদের পূণ্য জ্ঞান করে।” তিনি বলেন : আমরা জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার দু’জন মারা যায়? বললেন :واثنان. (المسند من حديث جابر بن عبد الله : ১৪২৮৫)“দু’জন মারা গেলেও।” মাহমুদ বলেন : আমি জাবের রা.- কে বললাম, আমার মনে হয় আপনারা যদি একজনের কথা বলতেন, তাহলে তিনি একজনের ব্যাপারেও হাঁ বলতেন। তিনি সায় দিয়ে বলেন : আমিও তাই মনে করি।”[৩৮]শোক সন্তপ্ত পিতা-মাতার জন্য আরেকটি হাদিস। আশা করি এর দ্বারা সান্ত্বনা লাভ হবে, দুঃখ ঘুচে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :إذا مات ولد العبد قال الله لملائكته: قبضتم ولد عبدي؟ فيقولون: نعم، فيقول: قبضتم ثمرة فؤاده؟ فيقولون : نعم، فيقول : ماذا قال عبدي؟ فيقولون : حمدك واسترجع، فيقول الله : ابنوا لعبدي بيتا في الجنة، وسموه بيت الحمد. (الترمذي : ৯৪২)“যখন বান্দার কোন সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের বলেন : তোমরা আমার বান্দার সন্তান কেড়ে নিয়ে এসেছো? তারা বলে হ্যাঁ। তোমরা আমার বান্দার কলিজার টুকরো ছিনিয়ে এনেছো? তারা বলে হ্যাঁ। অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, আপনার প্রসংশা করেছে এবং বলেছে আমরা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করব। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম দাও বায়তুল হামদ্‌ বা প্রশংসার ঘর বলে।”[৩৯]উপরন্তু ওই অসম্পূর্ণ বাচ্চা, যা সৃষ্টির পূর্ণতা পাওয়ার আগেই মায়ের পেট থেকে ঝড়ে যায়, সেও তার মায়ের জান্নাতে যাওয়ার উসিলা হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :والذي نفسي بيده إن السقط ليجر أمه بسرره إلى الجنة، إذا احتسبته. (ابن ماجه :১৫৯৮)“ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, অসম্পূর্ণ বাচ্চাও তার মাকে আচঁল ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যদি সে তাকে পূণ্য জ্ঞান করে থাকে।”[৪০]বিশুদ্ধ হাদীসে এ ধরনের বিপদাপদকে গুনাহের কাফফার বলা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :ما من مسلم يصيبه أذى، شوكة فما فوقها إلا كفر الله بها سيئاته، كما تحط الشجرة ورقها. (البخاري : ৫২১৫،ومسلم : ৪৬৬৩)“যে কোন মুসলমান কাঁটা বা তারচে’ সামান্য বস্তুর দ্বারা কষ্ট পায়, আল্লাহ তার বিনিময়ে প্রচুর গুনাহ ঝড়ান- যেমন বৃক্ষ বিশেষ মৌসুমে স্বীয় পত্র-পল্লব ঝড়িয়ে থাকে।”[৪১]আরেকটি বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে :ما يصيب المسلم من نصب، ولا وصب، ولا هم، ولاحزن، ولا أذى، ولاغم, حتى الشوكة يشاكها إلا كفر الله بها من خطاياه. (البخاري : ৫২১০)“মুসলমানদের কষ্ট-ক্লেশ, চিন্তা-হতাশা আর দুঃখ-বিষাদ দ্বারা আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন। এমনকি শরীরে যে কাঁটা বিঁধে তার বিনিময়েও আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন।”[৪২]আরো এরশাদ হচ্ছে :ما يزال البلاء بالمؤمن والمؤمنة في نفسه وولده وماله، حتى يلقى الله وما عليه خطيئة. (الترمذي : ২৩২৩)“মুমিন নর-নারীরা নিজের, সন্তানের বা সম্পদের মাধ্যমে সর্বদা বিপদগ্রস্ত থাকে। যতক্ষণ না সে আল্লাহর সাথে নিষ্পাপ সাক্ষাৎ করে।”[৪৩] মুসিবত মর্যাদার সোপান। কারণ ধৈর্য্যের মাধ্যমে অতটুকু সফলতা অর্জন করা যায়। যা আমল বা কাজের দ্বারা করা যায় না। মুসনাদে ইমাম আমহদে বর্ণিত আছে :إذا سبقت للعبد من الله منزلة لم يبلغها بعمله ابتلاه الله في جسده أو في ماله أو في ولده، ثم صبره، حتى يبلغه المنزلة التي سبقت له منه. (مسند : ২২৩৩৮)“আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দার মর্যাদার স্থান পূর্বে নির্ধারণ করে দেন, আর সে আমল দ্বারা ওই স্থান লাভে ব্যর্থ হয়, তখন আল্লাহ তার শরীর, সম্পদ বা সন্তানের ওপর মুসিবত দেন এবং ধৈর্যের তওফিক দেন। এর দ্বারা সে নির্ধারিত মর্যাদার উপযুক্ত হয়ে।”[৪৪]একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন :ما تعدون الرقوب فيكم؟“তোমরা কাকে নিঃসন্তান মনে কর? তারা বলল : যার কোন সন্তান হয় না। তিনি বললেন :ليس ذاك بالرقوب، ولكنه الرجل الذي لم يقدم من ولده شيئا. (مسلم : ৪৭২২)“সে নয়। বরং সে, যার মৃত্যুর পূর্বে তার কোন সন্তানের মৃত্যু হল না।”[৪৫] অর্থাৎ পার্থিব জগতে সন্তানাদি আমাদের বার্ধক্যের সম্বল। যার সন্তান নেই সে যেন নিঃসন্তান। তদ্রুপ পর জগতের সম্বল মৃত সন্তান। যার সন্তান মারা যায়নি সে প্রকৃত- পরজগতের- নিঃসন্তান। এতে আমরা সন্তানহারা পিতা-মাতার প্রতিদান অনুমান করতে পারি। সন্তান বিয়োগের মুসিবত কল্যাণকর, এর বিনিময়ে অর্জিত হয় জান্নাত।মুসিবতের পশ্চাতে আছে কল্যাণ, উত্তম বিনিময়। যার কোন প্রিয় বস্তু হারায়, সে এর পরিবর্তে অধিক প্রিয় বস্তু প্রাপ্ত হয়। অনেক সময় এক সন্তান মারা গেলে, তারচে’ ভাল দ্বিতীয় সন্তান প্রদান করা হয়। দুঃখের আড়ালে সুখ বিদ্যমান। উম্মে ছালামা বর্ণনা করেন, আমি রসূল সা.কে বলতে শুনেছি :ما من مسلم تصيبه مصيبة فيقول ما أمره الله : إنا لله وإنا إليه راجعون، اللهم أجرني في مصيبتي، وأخلف لي خيرا منها، إلا أخلف الله له خيرا منها. (مسلم : ১৫২৫)“যে কোন মুসলমান মুসিবত আক্রান্ত হয় এবং বলে- আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, তুমি আমার এ মুসিবতের প্রতিদান দাও এবং এর চে’ উত্তম জিনিস দান কর। আল্লাহ তাকে উত্তম জিনিস দান করেন।” তিনি বলেন : যখন আবু ছালামা মারা যায়, আমি ভাবলাম মুসলমানের ভেতর কে আছে যে, আবু ছালামা থেকে উত্তম? সর্বপ্রথম তার পরিবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজরত করে আসে। তবুও বলার জন্য বললাম, আল্লাহ তাআলা আমাকে আবু সালামার পরিবর্তে রসূল সা.-কে প্রদান করেন। যিনি আবু সালামা থেকে উত্তম।[৪৬] কতক সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার নানাবিধ কল্যাণ নিহিত থাকে। হতে পারে তাকদির অনুযায়ী এ ছেলেটি বেঁচে থাকলে পিতা-মাতার কষ্টের কারণ হত। যেমন খিজির আলাইহিস সালাম এর ঘটনায় বর্ণিত বাচ্চার অবস্থা। অনেক সময় পিতা-মাতার ধৈর্যধারণ, মৃত সন্তানকে পূণ্য জ্ঞান করণ উত্তম প্রতিদানের কারণ হয়। যেমন উম্মে ছালামার ঘটনা। কখনো আগন্তুক শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া লাভ হয়। যেমন তারা বলেন, “হে আল্লাহ! তুমি তাদের উত্তম বিনিময় দান কর। তাদের ক্ষতস্থান পূর্ণ কর। তার পরিবর্তে উত্তম বস্তু দান কর।” যার ফলে তার জীবিত অন্যান্য ভাইরা সংশোধন ও অধিক তওফিক প্রাপ্ত হয়। পিতা-মাতা অধিক আনুগত্যশীল সুসন্তান প্রাপ্ত হয়।

৮. বালা-মুসিবতের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকা:
যার ওপর দিয়ে কোন মুসিবত বয়ে যায়, তার উচিত এর স্মৃতিচারণ বা পুনরাবৃত্তি না করা। যখন মনে বা স্মৃতি পটে চলে আসে, সাধ্যমত এড়িয়ে যাওয়া। পুনঃপুন বৃদ্ধি বা লালন না করা। কারণ এর ভেতর বিন্দু পরিমাণ লাভ নেই। উপরন্তু ধৈর্য্য ছাড়া কোন উপায়ও নেই। বরং এ নিয়ে কল্পনা-জল্পনা করা দৈন্যদের কাজ, তাদের মূলপুঁজি। দ্বিতীয়ত যে চলে গেছে, সে কখনো ফিরে আসবে না। যে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তা পাল্টাবে না।হজরত উমর রা. এর একটি উপদেশ :لا تستفزوا الدموع بالتذكر.“তোমরা স্মৃতিচারণ করে চোখের পানি উছলে তুলো না।”অধিকাংশ প্রিয়জনহারা শোকাতুর লোক মৃত ব্যক্তির স্মৃতি সংরক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে প্রতি মুহূর্ত মৃত ব্যক্তির স্মরণে সে ব্যস্ত থাকে। শোক-দুঃখ মোচনের পথে যা বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

৯. একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা বর্জন:
শোকাতুর ব্যক্তির একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা পরিহার করা উচিত। কেননা সংশয় প্রবঞ্চনা নিঃসঙ্গ-অবসর ব্যক্তির পিছু নেয়। নিঃসঙ্গদের ওপর শয়তান অধিক কূটকৌশল ও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।কল্যাণকর ও অর্থবহ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। অটল থাকতে হবে পূর্ব নির্ধারিত স্বীয় সিদ্ধান্তে। নিয়মিত তেলাওয়াত, দু’আ-দরুদ, নামায ইত্যাদিতে মশগুল থাকতে হবে। এসবকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু ও নিত্যসঙ্গি বানিয়ে নিতে হবে। কারণ আল্লাহর যিকিরের মালেঝই নিহিত রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি। 

১০. আপত্তি অভিযোগ ও অস্থিরতা ত্যাগ করা:
যে কোন বিপদাপদের সময় অসহিষ্ণুতা ও আপত্তি-অভিযোগ পরিহার করা। এটাই সান্ত্বনার শ্রেয়পথ। শান্তির উপায়-উপলক্ষ। যে এর থেকে বিরত থাকবে না, তার কষ্ট ও অশান্তি দ্বিগুন হবে। বরং সে নিজেই স্বীয় শান্তি বিনাশকারী-নিঃশেষকারী। কোন অর্থেই তার জন্য ধৈর্য্য প্রযোজ্য হবে না, মুসিবত থেকে নাজাতও পাবে না। কারণ ধৈর্য যদি হয় বিপদাপদ মূলোৎপাটনকারী, অধৈর্য্যতা তার পৃষ্ঠপোষকতা-দানকারী। যার বিশ্বাস আছে, নির্ধারিত বস্তু নিশ্চিত হস্তগত হবে, নির্দিষ্ট বস্তু নিশ্চিত অর্জিত হবে, তার ধৈর্য্য পরিহার করা নিরেট বিড়ম্বনা- আরেকটি মুসিবত। আল্লাহ তাআলা বলেন :مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ. لِكَيْ لَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آَتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ ﴿الحديد:২২-২৩﴾“যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।”[৪৭]বর্ণিত আছে, জনৈক যাযাবর শহরে প্রবেশ করে একটি বাড়িতে চিৎকারের আওয়াজ শোনে জিজ্ঞাসা করল, এটা কিসে আওয়াজ? তাকে বলা হল, তাদের একজন লোক মারা গেছে। সে বলল, আমার মনে হচ্ছে : তারা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে, তার সিদ্ধান্তে বিরক্তি প্রকাশ করছে এবং সওয়াব বিনষ্ট করছে।মনে রাখা প্রয়োজন! অস্থিরতা হারানো বস্তু ফিরিয়ে আনতে পারে না, বরং তা হিতকামনাকারীকে দুঃখিত ও অশুভ কামনাকারীকে আনন্দিত করে। সাবধান! মুসিবতের দুঃখের সাথে হতাশার নৈরাশ্য সংযোজন করো না। কারণ উভয়ের সঙ্গে ধৈর্যের সহাবস্থান হয় না। এমন বিপরীতধর্মী জিনিস অন্তরও গ্রহণ করে না। এ জন্য বলা হয়, “ধৈর্য্যের মুসিবত, সবচে’ বড় মুসিবত।” কথিত আছে, জনৈক দম্পতির খুব আদরের এক সন্তান মারা যায়, স্বামী স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, আল্লাহকে ভয় কর, ছওয়াবের আশা রাখ, ধৈর্য্যধারণ কর। সে উত্তরে বলে, আমি যদি ধৈর্য্যকে হতাশার মাধ্যমে নষ্ট করে দেই। তাহলে এটাই হবে সবচে’ বড় মুসিবত।জনৈক বিদ্বান বলেছেন : “জ্ঞানী ব্যক্তি মুসিবতের সময় সে কাজ করে, যা আহমক একমাস পরে করে। অবশেষে যখন ধৈর্য ধরতেই হয় আর এতে মানুষ ভালও জানে না। তাহলে শুরুতেই তো ধৈর্য্যধারণ করা কত ভাল- যা নির্বোধেরা একমাস পর করে থাকে।”[৪৮]সম্ভব ও সাধ্যের নাগালের জিনিস গ্রহণ করেই ধৈর্য্যধারণকারীদের মর্যাদা লাভ করা যায়। যেমন হাতাশা না করা, কাপড় না ছিড়া, গাল না চাপড়ানো, অভিযোগ না করা, মুসিবত প্রকাশ না করা, খাওয়া-দাওয়া ও পরিধানের অভ্যাস স্বাভাবিক রাখা, আল্লাহ তাআলার ফায়সালাতে সন্তুষ্ট থাকা- এ বিশ্বাস করে, যা ফেরত নেয়া হয়েছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত ছিল। এবং সে পদ্ধতি গ্রহণ করা, যা হজরত উম্মে সুলাইম রা. গ্রহণ করেছিলেন।বর্ণিত আছে : তাদের একটি ছেলে মারা গেলে, আপন স্বামী আবু তালহাকে তিনি এ বলে সান্ত্ব্তনা দেন যে, কোন সম্প্রদায় যদি কোন দম্পতির নিকট একটি আমানত রাখে, অতঃপর তারা তাদের আমানত ফেরৎ নিয়ে নেয়, তাহলে আপনি সেটা কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? তাদের নিষেধ করার কোন অধিকার আছে কি? উত্তর দিলেন, না। বললেন, আপনার ছেলেকে সে আমানত গণ্য করুন। তাকে হারানো পূণ্য জ্ঞান করুন।এ ঘটনা অবহিত হয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :بارك الله لكما في غابر ليلتكما. ( مسلم : ৪৪৯৬)“আল্লাহ তাআলা তোমাদের গত রাতে বরকত দান করুন।”[৪৯]সর্বশেষ বলি, ধৈর্য্য ধৈর্য্যধারণকারীকে প্রশান্তি এনে দেয়, মুসিবতের পরিবর্তে পূণ্য এনে দেয়। অতএব স্বেচ্ছায় ধৈর্যধারণ করাই ভাল। অন্যথায় অযথা পেরেশান হয়ে, ধৈর্যধারণ করতে বাধ্য হবে। তাই বলা হয় “যে জ্ঞানীর মত ধৈর্যধারণ না করে, সে চতুষ্পদ জন্তুর মত যন্ত্রণা সহ্য করে।” হজরত আলী রা. বলেন :إنك إن صبرت جرى عليك القلم وأنت مأجور، وإن جزعت جرى عليك القلم وأنت مأزور.“যদি তুমি ধৈর্যধারণ করো, তাহলে তোমার ওপর তকদির বর্তাবে, তবে তুমি নেকি লাভ করবে। পক্ষান্তরে যদি ধৈর্যহারা হও, তাহলেও তোমার উপর তকদির বর্তাবে, তবে তুমি গুনাহ্‌গার হবে।”[৫০]হজরত ওমর রা. বলেন :إنا وجدنا خير عيشنا الصبر.“আমরা উত্তম জীবনের বাহন হিসেবে ধৈর্যকেই পেয়েছি।”হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত:اعلموا أن الصبر من الإيمان بمنزلة الرأس من الجسد. ألا إنه لا إيمان لمن لا صبر له.“স্মরণ রেখ মাথা যেমন শরীরের অংশ, তদ্রূপ ধৈর্যও ইমানের অংশ। আরো স্মরণ রাখ, যার ধৈর্য নেই, তার ইমানও নেই।”হজরত হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:ما تجرع عبد جرعة أعظم من جرعة حلم عند الغضب، وجرعة صبر عند المصيبة.“ক্রোধের সময় সহনশীলতার ঢোক এবং মুসিবতের সময় ধৈর্যের ঢোকের চেয়ে বড় ঢোক কেহ গলধকরণ করেনি।”উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :ما أنعم الله على عبد نعمة فانتزعها منه، فعاضه مكانها الصبر إلا كان ما عوضه خيرا مما انتزعه.“আল্লাহ তাআলা যদি কাউকে নেয়ামত দিয়ে পুনরায় নিয়ে নেন এবং বিনিময়ে ধৈর্য দান করেন, তাহলে বলতে হবে, দানকৃত বস্তুই উত্তম, নিয়ে নেয়া বস্তু থেকে।”আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রকৃত ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাদের জন্য তিনিই যথেষ্ট, তিনিই আমাদের অভিভাবক। সমাপ্ত 

[১] মুসলিম : ৫০২৪[২] বুখারী : ৬৯১২[৩] বুখারী : ১৭৪৫[৪] মুসলিম : ৫৩১৮[৫] আল-বাকারা : ১৫৩। পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে আল্লাহ নেককারদের সাথে আছেন, ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন ইত্যাদি বলা হয়েছে। তিনি আরশের উপর থেকেও বান্দাকে সাহায্য সহযোগিতা করার মাধ্যমে তার সাথে রয়েছেন বলে বুঝে নিতে হবে।[৬] আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭[৭] মুসনাদে ইমাম আহমাদ : ২৭৪৪[৮] তিরমিযী : ২৪৪০[৯] বোখারি : ৬১০৬ মুসলিম : ৪৭৮৫[১০] মুসলিম শরীফ : ৪৮১৪[১১] মুসলিম : নববীর ব্যাখ্যা সহ[১২] আবু দাউদ : ৪০৭৭ আহমাদ : ২০৬০৭[১৩] আহযাব : ২১[১৪] বুখারী : ১৩০৩[১৫] ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে[১৬] মুমতাহানা : ৬[১৭] সিয়ারু আলা মিনন নুবালা : ৪ / ৪৩০[১৮] বুখারী : ৬৭৫৬ মুসলিম : ৪৮২২[১৯] বাকারা : ২১৬[২০] মুসনাদ : ২০২৮৩[২১]. তাঁর আশংকা নিছক ধারণা ভিত্তিক ছিল না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি নিশ্চিত জানতে পেরেছিলেন।[২২] কাহাফ : ৮০-৮১[২৩] মুসলিম : ৪৮১১[২৪] বুখারী : ১৩৭৬[২৫] ইউসুফ : ১৮[২৬] ইউসুফ : ৮৩[২৭] তিরমিজি : ২৩২২[২৮] বোখারি : ৫২১৩ মুসলিম : ৭৭৮[২৯] তিরমিযী : ২৩২০ ইবনে মাজাহ : ৪০২১[৩০] তিরমিযী : ২৩২০[৩১] নিসা : ১২৩[৩২] আল মুসনাদ মিন হাদীসে আবি বকর : ৬৮[৩৩] বুখারী : ৫২২০ মুসলিম : ৪৬৭৩[৩৪] বুখারী : ৫২২১[৩৫] বুখারী : ৫৯৪৪[৩৬] মুসলিম : ৪৭৭০[৩৭] মুসনাদ : ৪৩১৪[৩৮] মুসনাদে আহমদ : ১৪২৮৫[৩৯] তিরমিযী : ৯৪২[৪০] ইবনে মাজাহ : ১৫৯৮[৪১] বুখারী : ৫২১৫ মুসলিম : ৪৬৬৩[৪২] বুখারী : ৫২১০[৪৩] তিরমিযী : ২৩২৩[৪৪] মুসনাদ : ২২৩৩৮[৪৫] মুসলিম : ৪৭২২[৪৬] মুসলিম : ১৫২৫[৪৭] হাদীদ : ২২-২৩[৪৮] উত্তাতুচ্ছাবিরীন পৃ : ৭৪[৪৯] মুসলিম : ৪৪৯৬[৫০] আদাবুদ দুনিয়া ওদ্দিন পৃ : ৪০৭_________________________________________________________________________________ লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদثناء الله نذير أحمدসম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়বمراجعة : علي حسن طيبসূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

Translate