Wednesday, March 27, 2024

রমজানে কবরের আজাব মাফ থাকে অথবা রমজানে মারা গেলে কবরের আজাব হয় না এ কথা কি সঠিক

 উত্তর: ‘রমজানে কবরের আজাব মাফ থাকে’ অথবা ‘রমজানে মারা গেলে কবরের আজাব হয় না’ ইত্যাদি কথাবার্তা হাদিস সম্মত নয়। বরং হাদিস সম্মত কথা হল, যদি কেউ দ্বীনদার ও সৎকর্ম শীল অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কবরে ফেরেশতাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সেখানে শান্তি ও নিরাপদে অবস্থান করবে। আর কেউ যদি দুষ্কৃতিকারী ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। চাই সে রমজানে মারা যাক অথবা অন্য কোন সময়।

আর “যে ব্যক্তির কবরে শাস্তি হচ্ছে রমজান মাস শুরু হলে তার শাস্তি স্থগিত হয়” এমন কোন কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)

তবে হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম একটি কারণ।
নিম্নে এ সংক্রান্ত দুটি হাদিস ও শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. এর দুটি ফতোয়া তুলে ধরা হল:

◈ কবরের আজাব সংক্রান্ত হাদিস:

আনাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الْعَبْدُ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُهُ حَتَّى إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ فَيَقُولاَنِ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ أَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوْ الْمُنَافِقُ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ ثُمَّ يُضْرَبُ بِمِطْرَقَةٍ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً بَيْنَ أُذُنَيْهِ فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ

“বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পেছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন।

অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন: এই ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে?
তখন সে বলবে: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসুল।

তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে।

আর কাফির বা মুনাফিক বলবে, আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম।
তখন তাকে বলা হবে: না, তুমি নিজে জেনেছ, না কুরআন পড়ে শিখেছ।

অতঃপর তার দু কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে আঘাত করা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে। তার আশেপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জিন ছাড়া।
[সহিহ বুখারী (তাওহীদ) ২৩/ জানাজা, হা/১৩৩৮-সহিহ মুসলিম ৫১/১৭, হা/২৮৭০, আধুনিক প্রকাশনী: ১২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১২৫৭]

উল্লেখ্য যে, এটি সংক্ষিপ্ত হাদিস। অন্যান্য বর্ণনায়, আরও দুটি প্রশ্ন করার কথা এসেছে। সে দুটি হল:
তোমার রব (প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তা) কে? তোমার দ্বীন (ধর্ম/জীবন ব্যবস্থা) কী?
যাহোক, উক্ত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, কবরের আজাব সত্য এবং তা রমজান কিংবা রমজান ছাড়া অন্য যে কোন সময়ের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ কবরের আজাব রমজানে বন্ধ থাকবে তা উক্ত হাদিসে বলা হয়নি। আর এ বিষয়ে অন্য কোন হাদিসও আসেনি।

◈ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর সে অবস্থায় মৃত্যু সংঘটিত হওয়া জান্নাতে প্রবেশের একটি কারণ:

“কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর তার অবস্থায় জীবনাবসান হলে সে জান্নাতে যাবে” এ কথা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।

যেমন: হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন,

مَنْ قَالَ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ، وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ، وَمَنْ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ

“লা ইলা হা ইল্লাল্লা হ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
– আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন সিয়াম রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
– আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু দান-সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সেও জান্নাত প্রবেশ করবে।”
[মুসনাদে আহমদ/২২৮১৩, সহীহ তারগীব/৯৮৫, আলাবানি রহ. তার আহকামুল জানাইয গ্রন্থে বলেন, “এর সনদ সহিহ”]

● রমজানে মারা গেলে কবরের আজাব মাফ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল্ আজিজ বিন বায রহ. বলেন,

وأما أنه إذا مات في رمضان أو مات في الجمعة، ينجو من العذاب، لا، بل هذا إلى الله ، إن مات على استقامة فله الجنة والكرامة، وإن مات على معاصي فهو على خطر، ويدعى له بالمغفرة و الرحمة

“‘আর যদি রমজান অথবা জুমার দিন মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরে আজাব থেকে মুক্তি পাবে’ এ ব্যাপারে কথা হল, না (এ কথা সঠিক নয়) বরং এটি আল্লাহর উপর সমর্পিত। যদি সে দীনদারীর উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত এবং সম্মান। আর যদি আল্লাহর অবাধ্যতার উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে বিপদের মুখে রয়েছে। তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাত ও রহমতের দুআ করতে হবে।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]

● তিনি ‘নূরুন আলাদ দারব’ শীর্ষক সৌদি আরবের এক রেডিও অনুষ্ঠানে আরও বলেন,
عذاب القبر ثابت لكل من يستحقه سواء مات في يوم الجمعة أو في رمضان أو في أي وقت أخر
“ঐ ব্যক্তির জন্য কবরের আজাব সাব্যস্ত যে তার উপযুক্ত চাই সে শুক্রবারে মারা যাক অথবা রমজান মাসে অথবা অন্য যেকোনো সময়।”

পরিশেষে অসীম দয়াময় ও করুণার আধার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করেন। বিশেষ করে যেন রমজান মাসে আমাদেরকে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন, তওবা-ইস্তিগফার সহ আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক সৎকর্ম বেশি করে সম্পাদন করার তাওফিক দান করেন এবং এগুলোর মাধ্যমে আমাদের গুনাহগুলো মোচন করেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল অফিসিয়াল (লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।

ইফতারের সুন্নতি পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত ১০টি নির্দেশনা

 সারাদিন রোজা থাকার পরে ইফতার করা মুমিনদের জন্য একটি বিরাট আনন্দের বিষয় তো বটেই বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও। কিন্তু অনেক মুসলিম ইফতারের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি না জানার কারণে বিভিন্ন ধরণের সুন্নত পরিপন্থী কার্যক্রম করে থাকে।

তাই নিম্নে ইফতারের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো:

◈ ১) সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করা। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব না করা।
কিছু মানুষ সূর্য ডোবার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরও অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য ৪/৫ মিনিট বিলম্ব করে। কিছু মানুষ আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। নি:সন্দেহে এগুলো সুন্নত পরিপন্থী ও দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি।

◈ ২) ইফতারের পূর্বে আল্লাহর কাছে দুআ করা। সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রোজা অবস্থায় দুআ কবুল হয়। তাছাড়াও সহিহ হাদিসে ইফতারের আগে দুআ কবুলে বিষয়টিও প্রমাণিত। সে সময় মানুষ এক দিকে রোজা অবস্থায় থাকে অন্য দিকে রোজার কারণে ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে। তাই এ অবস্থায় দুআ কবুলের অধিক আশা করা যায়। তবে প্রত্যেক রোজাদার নিজে নিজে দুআ করবে। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে দুআ করা বিদআত।

◈ ৩) আধা পাকা নরম খেজুর দ্বারা ইফতার করা। তা সম্ভব না হলে শুকনা খেজুর। তাও সম্ভব না হলে পানি দ্বারা ইফতার। এ তিনটির কোনটি না পেলে অন্য যে কোন হালাল খাদ্য-পানীয় দ্বারা ইফতার করা।

উল্লেখ্য যে, বাঙ্গালীর ইফতারে বুট-মুড়ি না থাকলেই নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকে মুড়ির সাথে কাঁচা পিয়াজ মেশান। কিন্তু হাদিসে কাঁচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধ সহকারে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই হয় কাঁচা পেয়াজ খাওয়া বাদ দিতে হবে অথবা আগুনে সিদ্ধ করে তার দুর্গন্ধ দূর করতে হবে অথবা সালাতে যাওয়ার পূর্বে ভালভাবে ব্রাশ করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

◈ ৪) ইফতারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) পাঠ করা (পরিপূর্ণ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ নয়)।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে ইফতারের জন্য বিশেষ একটি দুআ প্রচলিত রয়েছে। তাহলো, “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিযক্বিকা আফত্বারতু”।
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।) কিন্তু এ হাদিসটি সনদ গতভাবে জঈফ (দুর্বল)[দ্র: জঈফ আবু দাউদ, হা/২৩৫৮]। তাই তা না পড়াই ভালো। বরং অন্যান্য খাবার গ্রহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এখানেও তাই যথেষ্ট। তবে কেউ উক্ত দুআ পাঠ করলে তাকে বিদআত বলা ঠিক নয়।

◈ ৫) ইফতারের সময় সাধারণত মাগরিবের আজান হয়। তাই খাওয়া-দাওয়া চলাকালীন সময়েও আজানের জবাব দেওয়া ও আজানের পরের দরুদ ও দুআ পড়া।

◈ ৬) ইফতারের সময় বা ইফতার শেষে “যাহাবায যামাউ, ওয়াব তাল্লাতিল উরূক্বু ও ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ্‌।” (অর্থ: তৃষ্ণা দূর হয়ে গেল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্‌, সওয়াব সাব্যস্ত হল)” [শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান আখ্যায়িত করেছেন]। (আল্লামা উসাইয়মীন রহ. এ দুআটি ইফতারের পরে পড়ার কথা বলেছেন)

◈ ৭) পেট পুরে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত না খাওয়া। হাদিসে পেট ভরে খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং সেহেরি, ইফতার বা অন্য কখনোই পেট ভরে বা মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। এটাই আধুনিক স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যনীতি।

◈ ৮) পানাহারে অপচয় রোধ করা জরুরি। কিছু মানুষ ইফতারে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয়ের পসরা সাজায়। কিন্তু সামান্য কিছু খেয়ে বাকি খাবার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে। এটি নি:সন্দেহে নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ।

◈ ৯) অন্য রোজাদারকে ইফতারি করানো। এতে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। অর্থাৎ এক সাথে দুটি রোজার সওয়াব পেতে চাইলে আরেকজন রোজাদারকে ইফতার করান। এভাবে যত বেশি রোজদারকে ইফতার করানো হবে ততটি সওয়াব আপনার আমলনামায় লেখা হবে। কিন্তু যারা ইফতার করবে তাদের সওয়াব হ্রাস করা হবে না।

◈ ১০) প্রতিবেশি ও গরিব-অসহায় মানুষের বাড়িতে ইফতার পাঠানো।
প্রতিবেশির বাড়িতে ইফতার পাঠালে পারস্পারিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। আর গরীব-অসহায় মানুষের বাড়িতে ইফতার পাঠানোর মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটানো হয়। যা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুন্নাহ মোতাবেক রোজা পালনের তওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

রোজা ভঙ্গের ভয়াবহ শাস্তি এবং এর কাজা ও কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি

 বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ

▬▬▬▬◆◯◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গ করার শাস্তি ও বিধান কি? কেউ যদি কোন কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করে তাহলে তার করণীয় কী?
উত্তর: নিম্নে রোজা ভঙ্গের ভয়াবহ শাস্তি এবং এর কাজা ও কাফফারার পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
◍◍ ক. শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা না রাখার বা রোজা ভেঙ্গে ফেলার ভয়াবহ শাস্তি:

রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ, মুকিম (আবাসে অবস্থানকারী/সফরকারী নয়) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরজ। এটি ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৪র্থ। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া (যেমন: অসুস্থতা, সফর, ক্ষুধা-পিপাসায় প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির আশংকা ইত্যাদি) রোজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ ও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হাদিসে বিনা কারণে রোজা ভঙ্গের ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)
হাদিসে এসেছে: আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‎

بينَا أنَا نَائِمٌ إذْ أَتَاني رَجُلانِ فأخَذَا بضَبْعِي -أي: عَضُدِي- فَأَتَيَا بي جَبَلاً وَعْراً فَقَالَا لي: اصْعَدْ، فقلت: إني لا أُطِيقُه، فقَالَ: إنا سَنُسَهِّلُه لك،فَصَعَدتُ حتى إذا كُنتُ في سَواءِ الجَبَل إذا أنا بِأصْواتٍ شدِيدَةٍ،فَقُلْتُ: مَا هَذهِ الأَصْواتُ؟ قَالَوا: هَذا عِوى أَهْلِ النَّارِ، ثمَّ انْطُلِقَ بي فَإِذا أَنا بِقَومٍ مُعَلَّقِين بِعَرَاقِيبهِم، مُشَقَّقَةٍ أَشْدَاقُهُم تَسِيلُ أشْداقُهُم دَماً، قَالَ: قُلتُ: مَن هَؤُلاءِ؟ قَالَ: هؤُلاءِ الَّذين يُفطِرُون قَبلَ تَحِلَّة صَوْمِهِم

“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সহসা দু জন লোক এসে আমার বাহু ধরে আমাকেসহ তারা এক দুর্গম পাহাড়ে গমন করল।
তারা আমাকে বলল: পাহাড়ে উঠো।
আমি বললাম: এ পাহাড়ে উঠা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
তারা ‎বলল: আমরা তোমাকে সাহায্য করব।
যাহোক আমি ওপরে উঠতে শুরু করলাম। যখন পাহাড়ের চূড়ায় ‎‎পৌঁছলাম তখন বিকট আওয়াজের সম্মুখীন হলাম।
জিজ্ঞাসা করলাম: এগুলো কিসের আওয়াজ?
তারা ‎বলল: এগুলো জাহান্নামীদের আর্তনাদ।
অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে রওনা করার পর আমি এমন লোকদের সম্মুখীন হলাম, যাদেরকে হাঁটুতে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ‎‎ক্ষতবিক্ষত। সেখান থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এরা কারা?
তারা বলল: এরা ‎হল সেসব লোক যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ভেঙ্গে ফেলত।” [নাসাঈ ফিল কুবরা: ৩২৮৬, তাবরানি ফিল কাবির: ৭৬৬৭-শাইখ আলাবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা সহিহা, হা/৩৯৫১]
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন উক্ত হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন: “এই হল যারা রোজা ভঙ্গ করত তাদের শাস্তি। তাহলে যারা আদতেই রোজা রাখে না তাদের কী পরিণতি হতে পারে?! আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।” (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েল ১৯/৮৯)

সুতরাং কেউ শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা ভঙ্গ করে বা আদতেই রোজা না রাখে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, অনতিবিলম্বে লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আর কখনো জেনে-বুঝে এমনটি না করার অঙ্গীকার করা। অত:পর নিম্নে বর্ণিত শরিয়তের বিধান অনুযায়ী কাজা বা কাফফারা আদায় করা।

◍◍ খ. রোজা ভঙ্গের কাজা ও কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি:

রোজা ভঙ্গের কারণের উপর কাজা বা কাফফারার বিষয়টি নির্ভর করছে। যেমন:
(১) স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি উক্ত রোজাটি কাজা করাই যথেষ্ট (কাফফারা নেই):

কেউ যদি স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে (যেমন: ইচ্ছাকৃত পানাহার, হস্তমৈথুন, ইচ্ছাকৃত বমি ইত্যাদি) রোজা ভঙ্গ করে তাহলে খাঁটি অন্তরে তওবা করার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে সেটা কাজা করাই যথেষ্ট। এভাবে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ করবে সে কয়টা কাজা করতে হবে।
তবে এতে কাফফারা দিতে হবে কি না এ বিষয়ে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ মতে এর জন্য কাফফারা নেই। কেননা হাদিসে কেবল স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য কোন ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই। যে হাদিস দ্বারা কাফফারার দলিল পেশ করা হয় সেটার কোন ভিত্তি নাই।

সুতরাং এটিই অধিক বিশুদ্ধ অভিমত যে, এতে অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবার পাশাপাশি কাজা করাই যথেষ্ট।

এ পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, সাঈদ বিন জুবাইর, নাখঈ, ইবনে শিরীন রহ. প্রমুখ।
শাইখ বিন বায এ প্রসঙ্গে বলেন:
والصواب أن عليه التوبة ولا يلزمه إلا قضاء اليوم الذي أفطره فقط، هذا هو الصواب، وعليه التوبة
“সঠিক কথা হল, তার জন্য তওবা করা এবং যে দিনের রোজা ভেঙ্গেছে কেবল সে দিন রোজাটা কাজা করা আবশ্যক।” (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)

(২) সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করার পাশাপাশি কাফফারা আদায় করা আবশ্যক:

স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তাতে অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি অন্তরে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করা তারপর তার কাফফারা দেয়াও আবশ্যক। ।

হাদিসে একমাত্র এই কারণে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য ক্ষেত্রে আসে নি।
লক্ষণীয় হল, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে-বীর্যপাত হোক না হোক-তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

➧ কাফফারা:
কাফফারার বিষয়গুলোর ধারাক্রম নিম্নরূপ। (অর্থাৎ একটি আদায় করতে সক্ষম না হলে অপরটি করতে হবে।)
● ১. একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা। (বর্তমান যুগে যেহেতু দাস-দাসীর প্রথা নেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।)
● ২. একটানা (বিরতি হীনভাবে) ৬০টি রোজা রাখা।
● ৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিন তথা গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা তথা সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া।
– টাকা দেয়া ঠিক সুন্নাহ পরিপন্থী।
– একজন মিসকিনকে ৬০ বেলা খাবার‌ খাওয়ানো যেমন জায়েজ তেমনি ৬০ জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়ানোও জায়েজ।
[কাফফারা প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ লম্বা হাদিস সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। পোস্টের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় তা উল্লেখ করা হল না]
সারাংশ:
– শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা বা রোজা না রাখা কবিরা গুনাহ এবং ভয়ানক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
– কেউ শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা নষ্ট করে তাহলে তার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করা আবশ্যক।
– স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্যভাবে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে তা কাজা করাই যথেষ্ট। কিন্তু স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙেছে সেটি কাজা করতে হবে। সেই সাথে কাফফারা দেওয়াও ওয়াজিব।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◯◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

বিদ’আত পরিচয়

 BID'AH

মহাগ্রন্থ কোরআনের শেষের দিকে অবতীর্ন  নিচের আয়াতটিতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। – সূরা মায়িদাহ (৫:৩ আয়াতাংশ)

এই আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ(সা) ইসলামী শরীয়াকে পূর্ণরূপে আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের যে জ্ঞান দিয়ে গেছেন আমরা তা বিশ্লেষণ করতে পারব, নতুন নতুন সমস্যার সমাধানে প্রয়োগ করতে পারব, কিন্তু নতুন ধরণের কোন ইবাদত বা নতুন কোন শরীয়া (ইসলামী আইন) আমরা তৈরী করতে পারব না।

রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন যে, আমার আগে যত নবী এসেছে তাদের প্রত্যেকের জন্য ফরজ ছিল তাদের জাতিকে সকল রকম ভাল কাজের দিক নির্দেশ দেয়া এবং সকল রকম খারাপ কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা। (মুসলিম)

যেহেতু, রাসূলুল্লাহ(সা) সকল নবীর শ্রেষ্ঠ নবী, কোন সন্দেহ নাই আগের সব নবীর মতই তিনিও আমাদেরকে সব ভালো কাজ সম্বন্ধেই বলে গেছেন, আর সব খারাপ কাজ সম্বন্ধেই সতর্ক করে গেছেন, কোন কিছুই বাদ রাখেন নাই।

 বিশিষ্ট সাহাবা আবু দার আল গিফারী(রা) বলেছেনঃ নবী(সা) তাঁর মৃত্যুর আগে আমাদের সকল কিছুর ব্যাপারে বলে গেছেন। এমনকি আকাশে যে পাখিরা ওড়ে তাদের সম্বন্ধেও। (আহমাদ)

এত কিছুর পরেও মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, ইসলামের সঠিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়। এর কারণ হলো, অনেক মানুষই অর্থ ও ব্যাখা বুঝে কোরআন পড়ে না, বুখারী, মুসলিম সহ বিশ্বস্ত হাদিসের গ্রন্থগুলো পড়ে না, পড়ে মনগড়া হাদিস দিয়ে লেখা বই, যেখানে কোন্‌ কথাটি কোন্‌ উৎস থেকে নেয়া হয়েছে তা লেখক নিজেও জানে না। এভাবে করেই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে ধর্মপালনের বিভিন্ন মনগড়া প্রথা বা বিদা’আত।

বিদআত কি?

আসুন এবার খতিয়ে দেখা যাক, বিদ’আত কাকে বলে। ইসলামী শরীয়ায় বিদ’আত শব্দের অর্থ হল- ধর্মীয় কর্মকান্ডে এমন কিছু যুক্ত করা যেটা কোরআন মাজিদে বা হাদিসে নেই, এবং রাসূলুল্লাহ(সা) বা তাঁর অনুগত সাহাবারা যা পালন করেননি। বিদাআ’ত সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং নিকৃষ্ট কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মানুষের সকল কর্মকান্ডকে ২টি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়। ১) ধর্মীয় কর্মকান্ড, ২) স্বাভাবিক কর্মকান্ড। কোন্‌ কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে কোন্‌ কাজটাকে হালাল বলব , আর কোন্‌ কাজটাকে হারাম বলব তা ভালোভাবে বুঝার জন্য এই দুই কর্মকান্ডের ব্যাপারে প্রযোজ্য ২টি সূত্র বলছি।

১) স্বাভাবিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে – সকল কাজই হালাল যদি না কোরআন/হাদিসে কাজটিকে হারাম বলার জন্য কোন প্রমাণ থাকে। যেমনঃ রাসূলুল্লাহ(সা) কখনোই বিরিয়ানি খাননি। তাহলে, বিরিয়ানি খাওয়া কি হারাম? অবশ্যই না। কারণ, বিরিয়ানী খাওয়া একটি স্বাভাবিক কাজ এবং হাদিসে বা কোরআনে বলা নাই যে বিরিয়ানি বা এটা তৈরীর কোনও উপকরণ খাওয়া হারাম। কাজেই, রাসূলুল্লাহ(সা) বিরিয়ানী না খেলেও, বিরিয়ানী খাওয়া হারাম নয়, বিদ’আতও নয়। অন্যদিকে, মদ খাওয়া হারাম। কারণ, এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। লক্ষ্যনীয়, স্বাভাবিক কর্মকান্ড যদি হারামও হয়, তাকে বিদ’আত বলা যাবে না।  তাই, মদ খাওয়া হারাম, কিন্তু বিদ’আত নয়।

২) ধর্মীয় কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে – সকল কাজই হারাম যদি না কোরআন ও হাদিসে কাজটি করার জন্য স্পষ্ট দলীল থাকে। যেমনঃ কেউ যদি বলে আমি নেচে নেচে আল্লাহ্‌র ইবাদত করব, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, আল্লাহ্‌র ইবাদত করা একটি ধর্মীয় কাজ এবং কোরআন বা হাদিসে কোথাও বলা নাই যে নেচে নেচে আল্লাহ্‌র ইবাদত করা যাবে। হারাম ধর্মীয় কাজকে হালাল মনে করে করতে থাকলে সেটাকে বিদ’আত বলা হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোন্‌টা স্বাভাবিক কাজ আর কোন্‌টা ধর্মীয় কাজ তা পার্থক্য বুঝব কিভাবে? যেমন, রাসূলুল্লাহ(সা) খুতবা দিতে মাইক ব্যবহার করতে বলেননি, তিনি ফেইসবুকের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করতে বলেননি। কাজেই, আমরা যদি এই কাজগুলি করি তাহলে কি বিদ’আত হবে না?

এই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়া যাবে যখন আমরা স্বাভাবিক কর্মকান্ড আর ধর্মীয় কর্মকান্ডের সংজ্ঞা জানব (সূত্রঃ ইবনে তাইমিয়াহ)।

স্বাভাবিক কর্মকান্ডঃ যে কাজগুলো সকল ধর্মের মানুষ সাধারণভাবে করে থাকে বা করতে পারে তা-ই স্বাভাবিক কাজ। এই কাজগুলো করার জন্য কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যেমনঃ নিজেদের কথা প্রচার করার জন্য মাইক ব্যবহার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই আছে – তাই এটা স্বাভাবিক কাজ, তাই মাইক ব্যবহার ধর্মীয় কর্মকান্ডের মধ্যে পড়ে না। কাজেই এটা বিদ’আত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই। উপরন্তু, এটাকে হারাম প্রমাণ করতে হলে কোরআন বা হাদিসের স্পষ্ট প্রমাণ লাগবে। একই কারণে, ফেইসবুকের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারও বিদ’আত নয়।

ধর্মীয় কর্মকান্ডঃ যে কাজগুলো শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেরা এই কারণে করে যে তারা মনে করে এই কাজের মাধ্যমে তারা তাদের প্রভুর নৈকট্য লাভ করতে পারবে, সেটাই ধর্মীয় কাজ। উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, অনেক মুসলিম নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে ইমামের সাথে মুনাজাত করে, তারা মনে করে এটা করে তারা ইবাদত করছে, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করছে, কিন্তু হাদিসে বা কোরআনে কোথাও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে বলা নাই। কাজেই, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত। কারণ, এই ধর্মীয় কাজটি রাসূলুল্লাহ(সা) বা তাঁর অনুগত সাহাবারা পালন করেন নাই।

আমাদের সমাজে কয়েকটি প্রচলিত বিদ’আত হলঃ

১। ঈদ-ঈ-মিলাদুন্নবী

২। শব-ই-বরাত

৩। নামাজের আগে আরবীতে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া

৪। নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা

৫। চিল্লা দেয়া

৬। মনের কোন আশা পূরণের উদ্দেশ্যে বা আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মাজার জিয়ারত করা

৭। মৃত ব্যক্তির জন্য কুলখানী/চল্লিশা/চেহলাম করা

৮। মৃত ব্যক্তির জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার বার কালিমা পড়া

৯। মৃত ব্যক্তির জন্য একত্রিত হয়ে মাদ্রাসার ছেলেদের দিয়ে কোরআন খতম দেয়া

১০। সুন্নাত নামাজকে বাধ্যতামূলক মনে করা

১১। কোন বিশেষ রাতের নফল ও সুন্নাত নামাজের গুরুত্ব ফরজ নামাজের সমান বা বেশী মনে করা এবং আরও অনেক।

অনেকেই বলে থাকেন, ঈদ-ঈ-মিলাদুন্নবী, বা শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে তো কিছু ভাল কাজ করা হয়, তাহলে এই বিদ’আতগুলো পালন করলে ক্ষতি কি? এই প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর রয়েছে।

প্রথম উত্তর হলো, আপনি এই কথার মাধ্যমে বলতে চাচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ(সা) দ্বীন ইসলামকে পূর্নভাবে আমাদের কাছে পৌঁছে দেন নাই (আ’উযুবিল্লাহ), আর তাই আপনি দ্বীনে নতুন ইবাদত সংযোজন করছেন। এই কাজগুলো যদি ভালই হত তাহলে আবু বকর (রা), উমর ফারুক(রা), ইমাম বুখারী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল উনারা এই কাজগুলো কেন করেন নাই? আপনার ঈমান কি উনাদের চেয়ে বেশী? অবশ্যই না।

দ্বিতীয় উত্তর হলো, বেশী করে নামাজ পড়াও তো ভাল কাজ। তাহলে, আপনি মাগরিবের নামাজ ৩ রাকা’আত না পড়ে ৪ রাকা’আত পড়েন না কেন? পড়েন না, কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) আপনাকে এভাবে করে নামাজ পড়তে শিখিয়ে যাননি।

আয়েশা(রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেনঃ আমাদের ধর্মে আমরা (আমি ও আমার অনুগত সাহাবারা) যা বলি নাই, কেউ যদি তা শুরু করে তবে তা প্রত্যাখিত হবে। (বুখারী, মুসলিম)

 জাবের (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল(সা) তাঁর খুতবায় বলতেনঃ আম্মা বা’দ (আল্লাহর প্রশংসা ও সাক্ষ্যদানের পর) নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মদ (সা) এর রীতি। সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হল দ্বীনের ব্যাপারে নতুন কাজ উদ্ভাবন করা তথা বিদা’আত। আর প্রত্যেকটি বিদ’আতই ভ্রষ্টতা।  – (তাহকীক রিয়াযুস সালেহীন ১৭৪, মুসলিম, নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)

পরিশেষে সবাইকে আহবান করব, আসুন আমরা ফিরে যাই কোরআন ও সুন্নাহ্‌তে – ধর্মে নতুন কিছু আবিষ্কার হতে বিরত থাকি। কোনো মৌলভী কোনও বিশেষ আমল করতে বললে তাকে জিজ্ঞেস করি, কোরআনের কোন্‌ আয়াত বা কোন্‌ হাদিসের ভিত্তিতে তিনি এই আমলটি করতে বলছেন। ইসলামকে সেইভাবে পালন করি যেভাবে পালন করেছেন রাসূলুল্লাহ(সা) এবং তাঁর অনুগত সাহাবারা। রাসূলুল্লাহ(সা) আল্লাহ্‌র নির্দেশে আমাদেরকে পরিপূর্ন ইসলাম দিয়ে গেছেন, নতুন কিছু সংযোজন করলে তা ইসলামকে নষ্ট করবে, কঠিন করবে, বিকৃত করবে, পরিবারে ও সমাজে অশান্তির সৃষ্টি করবে,  আল্লাহ্‌ ও মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করবে, ইসলামকে সুন্দর করবে না।

সূত্রঃ

  1. Yasir Qadhi’s answer to the question: What can we do for our deceased ones? 

নামাজ সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলি আপনি জানতেন না

 prayer16

[এই লেখায় আমি চেষ্টা করেছি শেইখ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী(রহিমাহুল্লাহ) ও শেইখ বিন বাজ (রহিমাহুল্লাহ) এর গবেষণার আলোকে সাহীহ হাদিসের ভিত্তিতে নামাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফিকহ্‌ (Islamic Rulings) এক জায়গায় তুলে ধরতে। নামাজ পড়ার অনেকগুলো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির মধ্যে এটি একটি।  উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন মাজহাবে নামাজ পড়ার ভিন্নতা থাকতে পারে। এই ভিন্নতাগুলো কেন হয়, ভিন্নতাগুলো সম্পর্কে আমাদের করণীয় কি – জানতে আমার এই লেখাটি পড়ুন।]

মুসলিম মাত্রই আমরা জানি যে ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ হলো নামাজ পড়া ও কায়েম করা। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করলেও এই গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভটি সম্বন্ধে আমরা অনেক মুসলিমই আজ উদাসীন। এই উদাসীনতার অন্যতম কারণ হলো নামাজের গুরুত্ব অনুধাবনের ব্যর্থতা। যেমন, বেশীরভাগ মুসলিমেরই জানা নাই যে ইমাম আহমাদ(রহিমাহুল্লাহ) এর  মতামত হলো আপনি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ছেড়ে দিলে আর  মুসলমান থাকবেন না। (তবে বাকি তিন মাজহাব – তথা হানাফি, মালেকী ও শাফেঈ মাজহাব মতে আপনি নামাজ ছাড়লেও মুসলিম থাকবেন) [১৮]| নামাজ সম্বন্ধে ইসলামের এই কঠোর অবস্থান জানা থাকলে অনেক বেনামাজীই হয়ত সেদিন থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করে দিবে (বলে রাখা ভালো, আমি নিজে এক সময় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম না, যেদিন জেনেছি নামাজ ত্যাগকারী কাফের সেদিন থেকে আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করেছি। অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে কে জ্বলতে চায় বলুন?)

নামাজ সম্বন্ধে মুসলমানদের উদাসীনতার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো নামাজ নিয়ে প্রচলিত অসংখ্য ভুল ধারণা, যেগুলো নামাজের সহজ নিয়মগুলোকে কঠিন করে ফেলে। যেমন, আমি এরকম মানুষ দেখেছি যে কিনা ‘ইশার নামাজ পড়ছে না শুধু এই কারণে যে সে দু’আ কুনুত জানে না। অথচ, দু’আ কুনুত বিতর নামাজের অপরিহার্য অংশ নয়, এমনকি বিতর নামাজ ‘ইশার নামাজের অংশ নয়!

বাস্তব হলো, নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া খুব কঠিন কোনো কাজ না। কিন্তু, আমরা অনেকেই ছোটবেলায় হুজুরের কাছ থেকে যখন নামাজ পড়া শিখেছিলাম, তখন হয়তো অনেক কিছু ভুল শিখেছিলাম, আর এখনো সেই ভুল নিয়মগুলোকেই শুদ্ধ ধরে নিয়ে নামাজ পড়ে যাচ্ছি। অথচ, ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন, কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত ইসলাম সম্বন্ধে, বিশেষ করে নামাজ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং নামাজ কায়েম করা।

এটা খুবই খারাপ একটা ব্যাপার যে, বাংলাদেশের বইয়ের বাজারে বহুলভাবে প্রচারিত এবং বিক্রিত নামাজ ও অন্যান্য ফিক্‌হ সংক্রান্ত বইগুলি জাল হাদিস আর মনগড়া নিয়ম-কানুনে ভরপুর। আমরা নিজেরা সেই ভুল বইগুলি পড়ে নামাজ শিখি, আর আমাদের অনেক হুজুরেরাই সেই ভুল বইগুলি থেকেই আমাদের হয়ত ছোটবেলায় নামাজ পড়া শিখিয়েছিলেন। (উল্লেখ্য, এই সব বইয়ের লেখকদের এবং আমাদের সম্মানিত হুজুরদের যত না দোষ, তার চেয়ে বেশী দোষ আমাদের মত উচ্চশিক্ষিত(?)  মুসলিমদের, যারা ধর্মকে হুজুরদের ডিপার্টমেন্ট বলে নিজেরা এই বিষয়ে পড়াশুনায় ইস্তফা দিয়েছি)। এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ভাই-বোনদের মধ্যে নামাজ সংক্রান্ত বহুল প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা সংশোধন করে দেয়া, এবং এমন কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় জানানো যা কিনা অগণিত সাধারণ মুসলিমের অজানা।

১। নামাজ ত্যাগকারী মুসলিম কি না তা সন্দেহজনক: আমাদের দেশের সাধারণ মুসলিমদের বিশ্বাস হলো – যেহেতু আমি কালেমা পড়েছি, নামের আগে মুহাম্মাদ আছে, শুক্রবারে জুমু’আর নামাজ পড়ি, ঈদ পালন করি, মানুষের সাথে দেখা হলে সালাম দেই, মাঝে মধ্যেই ইন শা আল্লাহ্‌, মাশআল্লাহ্‌ বলি, কাজেই আমি অবশ্যই মুসলিম। এখন জীবনে ভাল-মন্দ যাই করি না কেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি আর না পড়ি, একদিন না একদিন তো বেহেশতে যাবই। কিন্তু, প্রকৃত সত্য হলো – শুধু কালেমা পড়লে বা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই মুসলিম হওয়া যায় না। মুসলিম হতে হলে লাগে ৭টি বিষয়ের উপর ঈমান আনা (অন্তর্গত অবস্থা) এবং ইসলামের ৫টি স্তম্ভের উপর আমল করা (বাহ্যিক কাজ) (সূত্র: সহীহ বুখারী ও মুসলিম এ বর্ণিত জিব্রাইল(আ) এর হাদিস) ।  মুসলিম হওয়া একটা বিশেষ status, যা কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়, ঠিক যেভাবে আপনি আপনার কলেজ/ ইউনিভার্সিটি থেকে নির্দিষ্ট condition গুলো পূরন করার পরে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে আপনার সার্টিফিকেট কষ্ট করে অর্জন করেছেন।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম মুহাম্মাদ ইবনে আল উসাইমিন(রহ) এর মতামত হলো – যে ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ নিয়মিত আদায় না করবে সে মুসলিম থাকবে না, কাফের হয়ে যাবে। এর স্বপক্ষে তিনি অনেকগুলি যুক্তি দিয়েছেন[১]। আমি শুধুমাত্র তিনটি যুক্তি উল্লেখ করছিঃ

i) আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মহাগ্রন্থ কোরআনের বলেন:

তাদের পর এল অপদার্থ উত্তরসূরীরা, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুগামী হল, তাই তারা অচিরেই মন্দ পরিণাম প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু, তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে – তাদের প্রতি সামান্য জুলুমও করা হবে না। (সূরা মারইয়াম ১৯:৫৯-৬০)

লক্ষ্য করুন, ৫৯ নং আয়াতে নামাজ ত্যাগকারীদের অপদার্থ বলা হয়েছে। আর তারা কিভাবে আবার সুপথগামী হতে পারবে তার বর্ণনা করতে যেয়ে ৬০ নং আয়াতে তাদেরকে তওবা করে আবার ঈমান আনতে বলা হয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে, নামাজ ত্যাগকারী অবস্থায় তাদের ঈমান চলে গিয়েছিল, অর্থাৎ তারা অমুসলিম হয়ে গিয়েছিল।

ii) নামাজ একমাত্র ইবাদত যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআন মাজিদে ‘ঈমান’ এর সমার্থকরূপে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ সূরা বাকারায় বলেন:

আর আল্লাহ এরূপ নন যে তিনি তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করবেন। (২:১৪৩ এর অংশবিশেষ)

আয়াতের ব্যাখা: প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সা) এর নবুয়তীর প্রথম দিকে সাহাবারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়তেন। যখন মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তন করে কা’বা শরীফের দিকে করা হলো তখন অনেক সাহাবা প্রশ্ন করতে লাগলেন যে তাদের আগের নামাজগুলির কি হবে? সেগুলির জন্য কি সওয়াব পাওয়া যাবে না? তখন আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেন যে, আল্লাহ তোমাদের ঈমান তথা নামাজকে ব্যর্থ করবেন না। এই আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, নামাজ না পড়লে ঈমান থাকে না। একজন মুসলমানকে ততক্ষণই মুসলমান বলা হয় যতক্ষন তার ঈমান থাকে, আর একজন মুসলমানের ঈমান তখনই থাকে যখন সে প্রত্যেকদিন নিয়মিতভাবে কমপক্ষে ফরজ নামাজগুলো আদায় করে।

iii) বোরাইদা বিন হোসাইফ (রা) থেকে বর্ণিত নিচের হাদিসটিও প্রমাণ করে যে নামাজ ত্যাগকারী অমুসলিম। অনুরূপ বক্তব্যের একটি হাদিস সহীহ মুসলিম শরীফের ঈমান অধ্যায়েও পাওয়া যায়।

রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: আমাদের ও তাদের (অর্থাৎ আমার উম্মতের পরবর্তীদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে নামাজের। অতএব, যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করল সে কুফরী করল। – (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

কাজেই, আপনাকে মুসলিম হতে হলে শুধু জুমু’আ বা ঈদের নামাজ নয়, বরং ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ নিয়মিত ভাবে আদায় করতে হবে। প্রখ্যাত চার ইমামের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হান্‌বল (রহিমাহুল্লাহ) এর অনুসারীরাও এই মতামত পোষণ করেন। যদিও ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ), ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম শাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) মনে করেন যে- বেনামাজী কাফের হবে না, ফাসিক (অবাধ্য) হবে। তবে, বিংশ শতাব্দীর আরেক অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ (রহিমাহুল্লাহ) এবং সৌদি ফতোয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির মতামত হল – ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়মিত নামাজ ত্যাগকারী শুধু কাফিরই নয়, তাকে সালাম পর্যন্ত দেয়া যাবে না, এমনকি সে সালাম দিলে তার উত্তর দেয়াও বৈধ নয় [১১]।

তবে, বাকী তিন মাজহাবের ইমামগণ – ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আবু হানিফার মতে – নামাজ না পড়লেও একজন মুসলিম থাকবে [১৮]। তাদের মতে – একজন ব্যক্তি কালিমা পড়লেই সে মুসলিম। 

২। নতুন নামাজীকে পুরানো নামাজের কাযা পড়তে হবে না: অনেকেই নামাজ পড়া শুরু করে না এই ভয়ে যে সারাজীবনে যা নামাজ miss হয়ে গেছে তার কাযা পড়তে হবে। হাদিস থেকে এরকম কোন বিধান পাওয়া যায় না। আপনি যদি আগে বেনামাজী হয়ে থাকেন আপনাকে আগের নামাজ কাযা পড়তে হবে না, কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে আন্তরিকতার সাথে তাওবাহ্‌ করতে হবে। তবে নিয়মিত নামাজী হওয়ার পর, অনিচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত ঘুমিয়ে কাটিয়ে বা ভুলে যেয়ে (এবং কোন কোন আলেমের মতে অলসতার কারণেও) নামাজ miss করে ফেলেন তখন সেটার কাযা পড়তে হবে[১৩]।

৩। দিনে মাত্র ১৭ রাক’আত নামাজ বাধ্যতামূলক: নামাজ ত্যাগ করা কুফরী কাজ -এটা জানার পর অনেকেই সংকল্প করে যে এখন থেকে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব। কিন্তু পরমুহুর্তেই চিন্তা করে যে – ওরে বাবা! ফজর-আসর ৪ রাক’আত করে, যোহরের নামাজ ১০ রাক’আত, মাগরিব ৫ রাক’আত, ‘ইশার নামাজ ৯ রাক’আত, সারা দিনে মোট ৩২ রাক’আত! এত্ত নামাজ পড়ব কিভাবে? কিন্তু সঠিক তথ্য হলো যে, সারাদিনে মাত্র ১৭ রাক’আত নামাজ পড়া ফরজ – ফজরের ২ রাক’আত, যোহরের ৪ রাক’আত, ‘আসরের ৪ রাক’আত, মাগরিব এর ৩ রাক’আত এবং ‘ইশা এর ৪ রাক’আত। এই ১৭ রাক’আত নামাজ যদি আপনি ওয়াক্তমত পড়তে না পারেন তো গুনাহগার হবেন। বাকী যে সুন্নাত বা নফল নামাজগুলো আছে সেগুলো পড়লে আপনি সওয়াব পাবেন, কিন্তু না পড়লে গুনাহগার হবেন না [২,৩,৪]।

তবে, একথা অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে আমরা আমাদের নিজের মঙ্গলের জন্যই আমরা ফরজ নামাজ পড়ার পর যত বেশী সম্ভব সুন্নাত/নফল নামাজ পড়ব। এক্ষেত্রে নিচের হাদিসটা উল্লেখ না করে পারছি না।

রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাক’আত (ফরজ বাদে অতিরিক্ত) নামাজ পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরী করা হবে। এই ১২ রাক’আত হলো: যোহর নামাজের আগে ৪, পরে ২ রাক’আত, মাগরিবের নামাজের পরে ২ রাক’আত, ইশা এর নামাজের পরে ২ রাক’আত এবং ফজরের নামাজের আগে ২ রাক’আত। – (তিরমিযী ৩৮০, সহীহ আল জামি’ ৬৩৬২, হাদিসটি সহীহ)

৪। বিতর নামাজ ১ রাকাতও পড়া যায়: বিতর নামাজ ‘ইশা এর নামাজের অংশ নয়, বরং এটা কিয়ামুল-লাইল বা তাহাজ্জুদ এর অংশ।  বিতর শব্দের অর্থ বিজোড়, আর তাই বিতর নামাজ ১,৩,৫,৭ ইত্যাদি বিভিন্নভাবে পড়ার বিধান রয়েছে। কাজেই, বিতর নামাজ ১ রাক’আত পড়লেও তা আদায় হয়ে যাবে, তবে অবশ্যই এটা ৩ রাক’আত বা তার বেশী পড়ে নেয়া উত্তম। বেশীরভাগ স্কলারের মতে বিতর নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (highly recommended সুন্নাত, কিন্তু না পড়লে কোন গুনাহ হবে না)।

আবার অনেক আলেমই recommend করেন – ‘ইশার নামাজের পর কমপক্ষে ১ রাক’আত বিতর নামাজ পড়ে নিতে [৫,৬]।

৫। দু’আ কুনুত বিতর নামাজের অপরিহার্য অংশ নয়: কুনুত শব্দের অর্থ দু’আ। শাফেই’ এবং হানবালী মাজহাব মতে দু’আ কুনুত বিতর নামাজের অংশ নয়, মুস্তাহাব (পড়লে ভালো, না পড়লে গুনাহ নাই)  –  এবং ইন শা আল্লাহ এইটাই সঠিক মতামত। এখানে বলে রাখা ভালো, যেহেতু কুনুত বলতে দু’আ বুঝায়, কাজেই আপনি শুধু দু’আ কুনুত নয়, বরং কোরআনে বর্ণিত যে কোন দু’আই দু’আ কুনুতের স্থলে পড়তে পারেন।[১৪]

৬। পুরুষ-নারী নামাজে কোন পার্থক্য নাই: পুরুষ ও নারীর নামাজ আদায়ের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নাই (যদিও নামাজের সময় নারী-পুরুষের শরীর ঢাকার বিধান আলাদা) ।

রাসূলুল্লাহ(সা) নারী পুরুষ সবার জন্যই  বলেছেনঃ তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় করো, যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখ (সহীহ্‌ বুখারী)।

এখানে উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বহুলভাবে প্রচলিত নিয়ম হলো যে, নামাজে দাঁড়িয়ে নারীরা বুকে এবং পুরুষেরা নাভীর উপর  হাত বাঁধে। সহীহ্‌ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে নারী-পুরুষ উভয়েই যখন নামাজে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধবে, তখন ডান হাতের তালুকে বাম হাতের কব্জির উপর বা বাহুকে ধারণ করে হাত দুইটি বুকের উপর রাখতে হবে। [৭,৮,১৫]

৭। আরবীতে নামাজের নিয়ত পড়ার দরকার নেই: আরবীতের নামাজের নিয়ত পড়ার বা মৌখিক ভাবে নিয়ত উচ্চারণ করার কোন বাধ্য বাধকতা নাই, বরং এটা বিদ’আত (বিদ’আত: ধর্মে নতুন সংযোজন যা রাসূলুল্লাহ(সা) বা তাঁর অনুগত সাহাবাদের দ্বারা প্রমাণিত নয়)। নিয়ত করা একটি অন্তর্গত ব্যাপার। আপনি মনে মনে নিজের ভাষায় নামাজের উদ্দেশ্য পোষণ করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। [৬]

৮। নামাজে চার বার হাত তোলা: নামাজে উভয় হাত কানের লতি বা কাঁধ পর্যন্ত তোলাকে রাফ’উল ইয়াদাইন বলে। প্রচলিত ভাবে আমরা শুধু মাত্র ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজের শুরুতে হাত বাঁধার সময় কাঁধ পর্যন্ত দুই হাত তুলি। এটা ঠিক আছে, কিন্তু ইমাম বুখারীর সহীহ হাদিস অনুসারে রাসূলুল্লাহ(সা) আরও তিন সময় হাত তুলতেনঃ

i)      “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যাওয়ার সময়

ii)    “সামি’আল্লাহ হুলিমান হামিদাহ্‌” বলে রুকু থেকে উঠার সময়

iii)   দ্বিতীয় রাক’আতের আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পরে তৃতীয় রাক’আতের শুরুতে “আল্লাহু আকবার” বলে উঠে দাড়ানোর সময়।

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত এই হাত তোলা মুস্তাহাব, কেউ না তুললেও তার নামাজ হবে, কিন্তু যে তুলবে সে অনেক সওয়াব পাবে। [৭,৮,৯]

৯। সিজদায় দু’আ করা: আমাদের অনেকেরই জানা নাই যে সিজদারত অবস্থায় নিজের ভাষায় দু’আ করা যায়। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন যে, বান্দা আল্লাহ্‌র সবচেয়ে কাছে থাকে সিজদারত অবস্থায়, তাই তিনি সিজদায় থাকাকালে বেশী করে দু’আ করতে বলেছেন (সহীহ্‌ মুসলিম)। [৭,৮]

১০। তাশাহ্‌হুদের সময় তর্জনী তোলা: নামাজের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ রাক’আতে বসে বসে তাশাহ্‌হুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় আমরা কেউ ডান হাতের তর্জনী তুলি, কেউ তুলি না, আবার কেউ শুধু ‘আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী তুলি – এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশীরভাগ মুসলিমই confused থাকে। সঠিক পদ্ধতি হলো যে, এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ(সা) এর সুন্নাত দুইরকমঃ

i)      সমস্ত তাশাহহুদের সময় ডান হাতের মুঠি প্রায় বন্ধ করে তর্জনী কিবলার দিকে করে স্থির রাখা

ii)     সমস্ত তাশাহহুদের সময় ডান হাতের মুঠি প্রায় বন্ধ করে তর্জনী কিবলার দিকে করে স্থির না রেখে অল্প একটু উপরে নিচে করে নাড়তে থাকা।

উল্লেখ্য যে, তর্জনী নাড়ানোর এই পদ্ধতিটিও মুস্তাহাব। অর্থাৎ, কেউ একেবারেই তর্জনী না উঠালে গুনাহগার হবে না, কিন্তু কেউ এটা করলে সাওয়াব পাবে ইন শা আল্লাহ্‌। [৭]

১১। জুমু’আর খুতবার সময় নামাজ পড়া: মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে প্রথমে ২ রাক’আত তাহ-ইয়াতুল মসজিদ পড়া সুন্নাত, এমনকি যদি ইমাম খুতবাও দিতে থাকে (সহীহ বুখারী: জুমু’আর নামাজের কিতাব, ভলিউম ২, হাদিস নং ৫২)।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে জুমু’আর ২ রাক’আত ফরজ নামাজের আগে যে ৪ রাক’আত কাবলাল জুমু’আ নামাজের প্রচলন আছে তা শুদ্ধ নয়। তাহ-ইয়াতুল মসজিদ ছাড়া জুমু’আর নামাজের আগে আর কোন নামাজ নাই। আর, জুমু’আর নামাজের পরে রাসূলুল্লাহ(সা) অনেক সময় অতিরিক্ত নামাজ পড়েছেন যা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (highly recommended)। এই অতিরিক্ত নামাজ তিনি বাসায় পড়লে ২ রাক’আত আর মসজিদে পড়লে ২ রাক’আত ২ রাক’আত করে মোট ৪ রাক’আত পড়েছেন[১২]।

১২। ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া: নামাজের যে সব রাক’আতে ইমাম মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়েন, যেমন, যোহর ও ‘আসরের নামাজে এবং মাগরিবের নামাজের তৃতীয় রাক’আতে, মুক্তাদি তথা ইমামের পিছনে যিনি নামাজ পড়ছেন তাকেও অবশ্যই মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।  কিন্তু, যে সব রাক’আতে ইমাম সশব্দে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন সেই সব রাক’আতে নিজে সূরা ফাতিহা না পড়ে মনোযোগ দিয়ে ইমামের কিরাআত শুনলেও চলবে। এটা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) এর মতামত এবং ইন শা আল্লাহ এটাই শুদ্ধ মতামত। [১৬,৫]

১৩। ইমামের পিছনে সশব্দে ‘আ-মিন’ বলা: ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে জাহরী নামাজে (যেমন: মাগরিব, ‘ইশা ও ফজর) মুক্তাদিকে  ইমামের সাথে সশব্দে টেনে ‘আ-মীন’ বলতে হবে। সিররি নামাজে (যেমন: যোহর এবং ‘আসর) ইমাম ও মুক্তাদিকে মনে মনে টেনে ‘আ-মীন’ বলতে হবে। [৫,৭]

১৪। মুনাজাত নামাজের অংশ নয়: মুনাজাতকে নামাজের অংশ মনে করা এবং নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত[১০,১৭]। নামাজ শেষে মুনাজাত না করে বরং সহীহ্‌ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নিচের আমলটি করুন:

i)      ৩৩ বার সুবহান আল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ মহাপবিত্র) পড়ুন

ii)     ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র) পড়ুন

iii)   ৩৩ বার আল্লাহু আকবার (আল্লাহ্‌ সবচাইতে বড়) পড়ুন,

iv)     ১ বার পড়ুন  – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদির (আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো মা’বুদ নাই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নাই। সকল বাদশাহী এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী) [৮]

আশা করি, এই লেখাটি যারা পড়ছেন তাঁরা সবাই এবং আমি নিজে নামাজের প্রতি এখন থেকে আরও মনোযোগী হবো। আমরা যে-যেভাবেই এতদিন নামাজ পড়ে থাকি না কেন, আমাদের সবারই উচিত হবে নিজেকে সংশোধন করে নিয়ে সহীহ্‌ হাদিসের ভিত্তিতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি শিখে নেয়া। নিচে এই লেখার রেফারেন্সগুলি দেয়া হলো যেগুলোতে আমার জানামতে কোনো জাল-হাদিসভিত্তিক তথ্য বা মনগড়া ফিক্‌হ উল্লেখ করা হয় নাই। এই বইগুলি পড়ে ও ভিডিওগুলি দেখে আমি নিজে অনেক উপকৃত হয়েছি। আমি সব পাঠককে বিশেষভাবে অনুরোধ করব ৭ নং লিংকের ভিডিওটি দেখতে এবং ৮ নং লিংকের বইটি ডাউনলোড করে বার বার পড়তে।

সূত্রসমূহঃ

১। নামাজ ত্যাগকারীর বিধান – মুহাম্মাদ ইবনে আল উসাইমিন (রহ)

৩। তালিমুস সালাত – ড: আব্দুল্লাহ বিন আয-যাইদ।

৪। How many rakats do we need to pray?

৫। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিক্‌হ – মুহাম্মাদ ইবনে আত-তুআইজিরি

৬। নবী (সা) এর সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি – মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রহ)

৮। নবী যেভাবে নামাজ পড়তেন – শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ (রহ)

৯। জুযউ রফইল ঈয়াদাইন – ইমাম বুখারী (রহ)।

১১। Abandoning or neglecting Salaat -Shaikh Saleh Al Munajjid

১৭। বিদ’আত পরিচয় – আদনান ফায়সাল

Translate