Monday, December 6, 2021

আমি তো নিজের জন্য সাজি, কাউকে দেখানোর জন্য না

 ঘরে যাচ্ছে-তাই অবস্থায় থেকে বাইরে সেজেগুজে-পরিপাটি হয়ে যাওয়া অর্থ আমার কিছুতেই বোধগম্য হয় না…

কেউ যদি প্রশ্ন করে তবে উত্তর হয় এরকম – ‘আমি নিজের জন্য সাজি, কাউকে দেখানোর জন্য না!!’
অথচ এই বোন গুলো শুধুমাত্র বাইরে যাওয়ার সময়ই ভাল পোশাক টা বাছাই করেন,
পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে অর্নামেন্টস, লিপস্টিক, হান্ডব্যাগ বাছাই করেন!
সাজসজ্জা যদি নিজের জন্যই করেন তবে কেন শুধুমাত্র তা বাইরে যাওয়ার সময়ই হয়??
একটু থমকে দাঁড়াই…
একটু ভাবি…
একটু বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি…
আমি কার জন্য নিজেকে পরিপাটি করে নিয়ে রাস্তায় প্রদর্শন করছি?
আল্লাহ তো হুকুম করেছেন নিজেকে জাহিলী যুগের ন্যায় প্রদর্শন না করতে!
আল্লাহর হুকুমের বাইরে গিয়ে এই সাজসজ্জা প্রদর্শন করছি কাকে খুশি করার জন্য??
একটু অন্যভাবে ভাবা যাক…
ধরুন, আপনার বাসার জন্য একজন কাজের লোক দরকার…
আপনি খুঁজে খুঁজে পছন্দ মত একজন কাজের লোক নিয়ে আসলেন, মাস শেষে উচ্চ বেতন! তাকে অর্ডার করলেন কি কি কাজ প্রতিদিন করতে হবে, এবং করতেই হবে!
কিন্তু আপনার সেই কাজের লোক আপনার কথা থোরাই কেয়ার করে আপনার পাশের বাসার লোকদের সব কাজ খুশি মনে করে দিচ্ছে!
আপনি একে তো জানেন পাশের বাসার লোক গুলো ভাল না,
দ্বিতীয়ত, এত উচ্চ বেতন দিয়ে কাজের লোক রেখেছেন অথচ যে আপনার কোন কাজই না করে ঐ বাসার খারাপ লোক গুলোর কাজ বিনামূল্যে করে দিচ্ছে!
আপনি বারবার সর্তক করার পরও সে একই কাজ করছে! কেমন লাগবে আপনার?
.
আপনি যত শান্ত-শিষ্ট, ধৈর্যশীল ই হোন না কেন.. আপনি বকাঝকা করতে বাধ্য হবেন..
আপনি রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবেন!
বাঁচুক আর মরুক! আগে আপনার জিদ উসুল করে নিবেন আপনি!
একটু চিন্তা করে দেখুন আপনিও দুনিয়ায় একজন কাজের লোক! আপনার মালিক আপনার সৃষ্টিকর্তা- আল্লাহ!
আপনার মালিক আপনাকে হুকুম দিয়েছেন প্রতিদিন ৫ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায় করতেই হবে,
রমজানে রোজা রাখতেই হবে,
সামর্থ্য হলে হজ্জ এবং যাকাত দিতেই হবে,
মহিলাদের জন্য সর্বাঙ্গের এমন কি কন্ঠস্বরেরও পর্দা,
আর পুরুষের জন্য দৃষ্টির পর্দা করতেই হবে….
কিন্তু আপনি আপনার মালিকের হুকুম কে থোরাই কেয়ার করে আপনার খুব নিকটে বসবাসকারী ইবলিশের খেয়াল খুশি মত কাজ করছেন!
আপনি কতটা অকৃতজ্ঞ..
আপনি কতটা বোকা…
আপনি কতটা মাজনুন হলে ইচ্ছাকৃত আপনার রব কে রাগান্বিত করে তুলছেন প্রতি মুহূর্তে!!
আপনার রব যদি আপনার চেয়ে অকল্পনীয় গুণ বেশী ধৈর্যশীল এবং দয়াবান না হতেন তবে এত অবাধ্যতার জন্য আপনি এক মিলি সেকেন্ড সময় টিকে থাকতে পারতেন না এই দুনিয়ায়!
আপনি ধ্বংস হয়ে যেতেন..
আপনি ধ্বংস হয়ে যেতেন…
আপনি ধ্বংস হয়ে ধূলিকণার মত বাতাসে উড়ে যেতেন!
আপনি আল্লাহর হুকুম কে অগ্রাহ্য করে,
কেবল মাত্র রাস্তার কিছু মানুষের সামনে নিজের আধুনিকতা, সৌন্দর্য, রূপ লাবন্য, ফিগার কে ফুটিয়ে তোলার জন্য,
যতভাবে পারেন নিজেকে সজ্জিত করছেন!
কেবল মাত্র রাস্তার কিছু মানুষের সামনে নিজের আধুনিকতা, সৌন্দর্য, রূপ লাবন্য, ফিগার কে ফুটিয়ে তোলার জন্য,
যতভাবে পারেন নিজেকে সজ্জিত করছেন!
অথচ আপনার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধুমাত্র আপনার স্বামীর!
আপনি বিবাহিত হলে, সাজসজ্জা করবেন শুধুমাত্র আপনার স্বামীর জন্য…
আপনি অবিবাহিত হলে, ধৈর্যধারন করবেন আপনার স্বামী আসা পর্যন্ত…
অথচ, আপনি সাজসজ্জা করছেন শুধু বাইরে বের হলেই!!
কিভাবে পারছেন??
নিজের রুচিবোধ কি একবারও জাগ্রত হয়না?
বোরকা পড়ুয়া আপনি..
বোরকা পড়ছেন বলেই ধারনা করছেন পর্দা করছি…
অথবা, ড্রেসের সাথে কালারফুল, সুরুচিসম্পন্ন একটা হিজাব মাথায় পেঁচিয়ে নিয়েই ভাবছেন আপনি পর্দা করছেন…
হিজাব পড়েও আপনার সাজসজ্জার কোন কমতি নেই!
লিপস্টিক ও দিচ্ছেন ঠোঁট রাঙাতে!
কার জন্য?
হিজাব পড়েও আপনি কার জন্য বাইরে যাওয়ার সময় সাজুগুজু করছেন?
আপনি ভাবছেন আপনি শালিন ভাবে চলছেন!
আল্লাহ ওয়াস্তে আপনার এই পর্দার কোন মূল্যই নেই আপনার রবের কাছে!
…………বিশ্বাস না হলে একবার নামায শেষে জায়নামাযে বসে অন্তর থেকে
আল্লাহ কে প্রশ্ন করুন- ‘ইয়া রব, আমি তো এভাবে পর্দা করছি, আপনি কি আমার উপর খুশি?’
এবার অনুভব করুন আপনার হৃদয়ে কোন প্রশান্তি অনুভব করছেন নাকি একটা খচখচানি অনুভব করছেন!!
একবার না বুঝলে প্রতি নামাযের পর করুন.. করতেই থাকুন..
ইন শা আল্লাহ, রব আপনার প্রশ্নের জবাব আপনার মনের মধ্যেই দিয়ে দিবেন…
আমরা অযথা এই দুনিয়ায় আসিনি!
একটা সুনির্দিষ্ট কারন আছে…
আপনার/আমার রব আমাদের অযথায় সৃষ্টি করেননি…
আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের জন্য…
আর তামাম দুনিয়ার সব সৃষ্টি করেছেন আমাদের উপকারের জন্য….
আর আপনি/আমি কিনা আমার সৃষ্টির হেতু ভুলে গিয়ে দুনিয়ার কালচার/স্ট্যাটাসের পিছনে নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছি!
অথচ স্বল্প এই দুনিয়ার জীবনের কর্মফলের উপর নির্ভর করবে আমার ইল্লিন অথবা আমার সিজ্জিন,
অবশেষে আমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম!
ধ্যাত্তেরী… কতটা বোকা হলে দুনিয়ার বিনিময়ে নিজেকে জাহান্নামে বিক্রি করে দেয়া সম্ভব!!!!
.
 লিখেছেন →বোন, ( MarJaana IsRaat )

আমাদের সমাজে দাম্পত্য সম্পর্কগুলো কত সহজে ভেঙ্গে যাচ্ছে

 মেয়েদের দোষ দেবার আগে আমি আমাদের পুরষ সমাজদের জন্য কিছু বলার ইচ্ছা হয়।

স্বভাবগতভাবেই মেয়েরা খুবেই অল্প না পাওয়াতে হতাশ হয়ে যায়। এছাড়া অল্পতেই সামান্য বিষয়কে জটিল্ভাবে কল্পনা করে। দেখা যায় দাম্পত্য জীবনে ফেসবুকে কিংবা পরিচিত দম্পতিদের মাঝে সুখ দেখে তাদের সাথে নিজের দাম্পত্য জীবন তুলনা করে ভেতরে ভেতরে স্বামীর প্রতি নিরাশক্ত হওয়া শুরু করে। এর মধ্যে কিছু কিছু ভাইরা আছে তাদের স্ত্রীদের এইসব অনুভূতি বুঝার চেয়ে স্ত্রী কিছু বলতে চাইলে তেতে উঠেন, কথা বন্ধ করে দেন, রেগে যান। উনাদের ধ্যানধারনা এমন যে, উনারা এমন করে টাইট দিলে স্ত্রী উনাদের কথার বাধ্য হয়ে যাবেন। বাস্তবে হয় এর উলটো, তখন স্ত্রীরা আরো জটিল করে সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করেন আর এর এইভাবে চলতে চলতে একটা সময় সেটার অবসান হয় ডিভোর্সে!!

স্ত্রীর সাথে আন্তরিকতা রক্ষা করা, সুন্দর করে কথা বলাও যে স্ত্রীর হক এটা আমাদের অনেক পুরুষ ভাবতেও চান না। অথচ আবার তারাই স্ত্রী থেকে ভাল ব্যবহার আশা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কেননা তাদেরকে পাঁজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড্ডিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হল উপরেরটি। সুতরাং তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে। তাই স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।’-সহীহ বুখারী ও মুসলিম

সাইফুরস এ যখন কোচিং করতাম তখন, আমাদের ক্লাস নিতেন হাসান স্যার নামে একজন। মজার একজন স্যার ছিলেন উনি। উনি ক্লাসে একদিন সুন্দর করে বলেছিলেন যে, উনি যখন বাসা থেকে বের হয়ে ক্লাসে আসেন তখন উনার ওয়াইফ কে একবার ফোন দেন পোছার খবর দিয়ে, আবার ক্লাসের মাঝে ম্যাসেজ দেন তরকারী কি রান্না করেছে এটা জানার জন্য। এইগুলো করেন যাতে তার স্ত্রী বুঝতে পারে উনাকে স্যার ভুলেন না কখনো। এছাড়া উনাদের মধ্যে ভালোবাসাও বাড়ে এই খুনসুটির কারনে।

এখন তো হোয়াটসএপস, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জারের যুগ। এইধরনের যোগাযোগ খুবেই সহজ। আমি নিজেও পার্সোনালী স্যারের এই রুলস ফলো করার চেষ্টা করি। দেখা গেসে, ফেসবুকে কিছু পড়েছি ইন্টারেস্টিং কিংবা মজাদার সাথে সাথে ওয়াইফ কে লিংক কপি করে দেই। আমার তো সময় নষ্ট হচ্ছে না এই সামান্য কাজে। অদ্ভুত লাগে এই সামান্য যোগাযোগের ব্যাপারে অনেক ভাই স্ত্রীদের ব্যস্ততার অযুহাত দেন অথচ দেখা যায় ফেসবুকে কিংবা ম্যাসেঞ্জারে উনি ঠিকেই একটিভ!!!

পারিবারিক সমস্যা প্রকাশের সূত্রে দেখা যায়- পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা, স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং সাংসারিক দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা। তখন প্রতিকার হবে- উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে স্ত্রীর ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া। বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও পরকালের কথা মনে করিয়ে দেওয়া।

কিন্তু এটা না করে কোনো কোনো স্বামী বিশ্বাস করে বসেন যে, কথা বন্ধ করলে, তালাকের হুমকি দেওয়া, তালাক দেওয়া কিংবা বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটানোই হলো- দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার সঠিক সমাধান। ভুল, মনে রাখবেন এটা একমাত্র সমাধান নয়। যখন বিরোধ, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন কথা বন্ধ করা, তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয় বরং তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দেয়।

তাই স্বামী স্ত্রীর উচিৎ তাদের পরস্পরের উপর হকগুলো যথাযথভাবে জানা এবং তা আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কোনো ক্ষেত্রে দোষ-ত্রুটি হয়ে গেলে তা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং অতি দ্রুত সেটাকে শুধরে নেওয়া। এভাবে সবকিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এরকম শুধরে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে না তুললে সামান্য মনোমালিন্যেও অন্তরে প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করবে। বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা হয় তা অটুট থাকা এবং আজীবন স্থায়ীত্ব লাভ করা ইসলামে কাম্য। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের পরিবারগুলো হিফাজত করুন, বারাকাহ দান করুন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ আমানা ম্যাট্রিমনি

লাল বাতি জ্বালালে নামাজ পড়া নিষেধ এরকম লেখা কি ইসলাম অনুমোদন করে?

 ?প্রশ্নঃ অনেক মসজিদে লেখা থাকে ‘লাল বাতি জ্বালালে নামাজ পড়া নিষেধ’ এরকম লেখা কি ইসলাম অনুমোদন করে?

?উত্তরঃ’লাল বাতি জ্বলাকালে সুন্নতের নিয়ত করবেন না’, ‘লাল বাতি জ্বললে নামাজ পড়া নিষেধ’_ এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞামূলক লেখা কিছু মসজিদে ঠিক লাল বাতির নিচে দেখা যায়। প্রশ্ন হলো, লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত পড়তে, নামাজ আদায় করতে নিষেধ করার ওই লেখা কি ধর্ম ও শরিয়তসম্মত বা কোরআন-হাদিস সমর্থিত? নাকি ধর্ম ও শরিয়ত-অসম্মত, কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক? আগে ফজরের পর নিষিদ্ধ সময়ে কেউ নামাজ পড়তে চাইলে সচেতন নামাজিরা একে অন্যকে নিষেধ করতেন। বর্তমানে মসজিদের ভেতরে আগের মতো নিষিদ্ধ সময়ের নিষেধাজ্ঞা হিসেবে নয়, প্রতি ওয়াক্তেই (তবে ফজরের ওয়াক্ত ছাড়া) ফরজ নামাজের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজ না পড়ার নিষেধাজ্ঞা হিসেবে লাল বাতি জ্বালানো হয়। ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা যেমন ধর্মীয় দায়িত্ব, আবার নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকাও ধর্মীয় দায়িত্ব। আসলে ধর্ম হচ্ছে দুটি বিষয়ের সমষ্টি_ একটি হচ্ছে পালন করা, অন্যটি হলো বর্জন করা। শুধু পালন করা যেমন ধর্ম নয়, কেবল বর্জন করাও ধর্ম নয়। ইমানদারের জীবনে এ দুটিই থাকতে হবে। জেনে বা না জেনে নিষিদ্ধ সময়ে কেউ নামাজের নিয়ত করলে তাকে বারণ করাও ধর্মীয় দায়িত্ব। তাই বলে ফরজ নামাজের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করাও কি ধর্মীয় দায়িত্ব?

সূরা বাকারার ১১৪ নম্বর আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদগুলোতে আল্লাহর নাম নিতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে?’ আল্লাহর নাম নিতে বাধা দেওয়া মানে কী? এর মানে হচ্ছে সব ধরনের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ আদায়ে নিষেধ করা, বাধা দেওয়া, মসজিদে গমন করতে বাধা দেওয়া, মসজিদে হট্টগোল করা অথবা মসজিদের আশপাশে আওয়াজ, গান-বাজনা করে মুসলি্লদের নামাজ ও তেলাওয়াতে বাধা দেওয়ার যত পন্থা হতে পারে_ সবই হারাম। একইভাবে মসজিদে নামাজির সংখ্যা যাতে হ্রাস পায় সেই লক্ষ্যে পরিচালিত সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজকর্ম এবং পদক্ষেপও হারাম। নেক সুরতে হলেও বর্তমানে যেসব মসজিদে লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়, এ নিষেধ কি নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়ার আওতাভুক্ত নয়? ফরজ নামাজের জামাতের আগে লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করার পদ্ধতি যে বা যারা চালু করেছেন বা এখনও করছেন তারা কি বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখেছেন?

এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা জরুরি, কোরআন ও হাদিসে নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়াও কোন কোন সময়ে (উদাহরণ_ জুমার খুতবা চলাকালে, ফরজ নামাজের ইকামত দেওয়া হলে) সুন্নত বা নফল নামাজের নিয়ত করতে নিষেধ করা হয়েছে_ এ রকম সুস্পষ্ট নিষেধের উল্লেখ ছাড়া মনগড়া যেনতেন কারণে নামাজের নিয়ত করতে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার কি কারও আছে? ফরজ নামাজের জামাতের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজের নিয়ত করা যাবে না, এ মর্মে কি কোনো বর্ণনা বা সমর্থন কোথাও আছে? কোরআন-হাদিসের কোথাও কি এ জাতীয় নিষেধের তথ্য পাওয়া যাবে? কোরআনের বর্ণনার সঙ্গে বিষয়টি কি সাংঘর্ষিক নয়? বুখারি শরিফে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়।’ (সালাত অধ্যায়, হাদিস নম্বর-৪৩১)। হাদিসের আলোকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় (অসুস্থ-অপারগ বা শ্রান্ত-ক্লান্ত হলে ভিন্ন কথা) কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে আগে নামাজ পড়া এবং নামাজের শেষে বসাই ধর্মের নিয়ম বা নির্দেশ। লাল বাতি যখন জ্বলে অথচ ফরজ নামাজের ইকামতও হচ্ছে না তখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে নামাজ না পড়ে বসতে বাধ্য হওয়া কি হাদিসের বর্ণনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক নয়? দুই মিনিট সময়ই তো হাদিসের ওপর আমল করার জন্য যথেষ্ট।

লাল বাতি জ্বলাকালে জামাত শুরু হওয়ার আগে ২-৩ মিনিট সময় থাকতে কেউ নামাজের নিয়ত করলে অতি উৎসাহী হয়ে ‘লাল বাতি জ্বলে, দেখেন না’ বা ‘লাল বাতি জ্বলে, তারপরও তিনি নিয়ত করছেন’_ এ জাতীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকা দরকার। শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, মুফতি-ফকিহ, খতিব, ইমাম, পীর-মাশায়েখ, মসজিদ কমিটির প্রধানসহ সর্বস্তর ও সব পর্যায়ের ধর্মীয় খেদমতের সঙ্গে জড়িত এবং যারা ধর্ম যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ_ ধর্মের কথা ধর্মীয় মূলনীতি বজায় রেখে বলুন এবং ধর্মীয় মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা পালন করুন। অত্যুক্তি নয় যে, কোরআন ও হাদিস থেকে জানতে চেষ্টা না করে আমরা এমন অনেক নেক আমল করছি, যাতে সওয়াব না হয়ে গোনাহ হচ্ছে।

আমি একটি দলীল দিলাম দেখুন কিভাবে সহীহ হাদীসকে লাল বাতি জ্বালিয়ে দুরে ঠেলে দেয়া হয়েছে :

হাদীস:১- আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে ,তখন সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায় করা ব্যতীত না বসে ।
( বুখারী হা/৪৪৪ , ১১৬৭ ; মুসলিম হা/ ৭১৪ ; তিরমিযী হা/ ৩১৬ ; নাসাঈ হা/ ৭৩০ ; আবু দাউদ হা/ ৪৬৭ ; ইবনু মাজাহ হা/ ১১২৩ ; আহমাদ হা/ ২২০১৭ , ২২০৭২ , ২২০৮৮ , ২২১৪৬ ;দারেমী হা/ ১৩৯৩ ; রিয়াদুস সালেহীন হা/ ১১৫১)

হাদীস:২: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা দানকালে সেখানে এক ব্যক্তি আগমন করেন । তিনি তাকে বলেন , হে অমুক ! তুমি কি ( তাহিয়াতুল মাসজিদ ) সালাত পড়েছ ? ঐ ব্যক্তি বলেন , না । নবী ( সাঃ ) বলেন , তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাআত ( তাহিয়াতুল মাসজিদ ) সালাত আদায় কর ।
( বুখারী হা/৮৮৩ , ৮৮৪ ; মুসলিম হা/১৮৯৫ , ১৮৯৬ , ১৮৯৭ , ১৮৯৮ , ১৮৯৯ , ১৯০০ ; তিরমিযী ; ইবনে মাজাহ ; নাসাঈ হা/১৪০৩ ; আবু দাউদ হা/১১১৫ , ১১১৬ , ১১১৭)

প্রথম হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহিয়াতুল মাসজিদ সালাতের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন এবং এই সালাত না আদায় করে বসতে নিষেধ করেছেন ।

দ্বিতীয় হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে খুৎবা চলাকালীন অবস্থায় আগত ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মাসজিদ সালাত আদায় করিয়ে এই সালাতের গুরুত্বের প্রমাণ দিয়েছেন ।

আর আমাদের মসজিদ গুলিতে লাল বাতি জ্বালিয়ে নিষেধ করা হয় যে লাল বাতি জ্বলা কালীন কোন নামায পড়া নিষেধ। কারণ আপনাদের মাযহাবে তাহিয়াতুল মসজিদ নফল । আার খুৎবা ওয়াজিব । যে ওয়াজিব খুৎবা থামিয়ে তাহিয়াতুল মসজিদ নামায পড়ানো হল সেটা নফল হয় কি করে ?

একটু ভেবে দেখুন অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা সহীহ হাদীসের সাথে যে আচরণ করছি তার পরে নবী (সাঃ) এর সামনে দাঁড়াতে পারবো তো ?

কৃতজ্ঞতাঃ শাহেদ কাজী

রাগ বা অভিমান করে চিকিৎসা না করার কারণে মৃত্যু বরণ করা আত্মহত্যার শামিল

 প্রশ্ন: কোনো রোগী যদি রাগ করে বা অভিমান বশত: ডাক্তার না দেখান এবং সেই রোগের কারণে যদি তার মৃত্যু হয় তবে কি তিনি গুনাহগার হবেন?

উত্তর: আল্লাহ তাআলা যেমন রোগ দিয়েছেন রোগের চিকিৎসাও দিয়েছেন। কেউ তা জানে আর কেউ জানে না।
রাসূল সা. নিজেও বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন এবং সাহাবীগণ চিকিৎসা করেছেন।
সুতরাং চিকিৎসা গ্রহণ করা সুন্নাত। (অনেকে আলেমের মতে ওয়াজিব)।

আলেমগণ বলেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বা শরীরে অঙ্গহানী হয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। আর মৃত্যু বা অঙ্গহানী পর্যন্ত না গড়ালে গুনাহগার হবে না।

সুতরাং আমরা বলব, রাগ বা অভিমান করে চিকিৎসা গ্রহণ না করার কারণে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তা আত্মহত্যার শামিল হবে যা কবীরা গুনাহ।
আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন।
_____
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ এর গুণাবলী এবং তা অর্জনের উপায়

 গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

—————————–

❑ ‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ কাকে বলে?

‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ একটি ইসলামী পরিভাষা। এর অর্থ প্রশান্ত আত্মা বা স্থির চিত্ত।
মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস পোষণকারী সত্যের অনুগামী স্থির চিত্তের নামই নফসে মুতমাইন্নাহ। যা সুখ-দুখ,আনন্দ-বেদনা,বিপদ-মুসিবত ও জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা পোষণ করে এবং এর উপর অবিচল থাকে। সামান্য সমস্যা ও দুর্বিপাকে অস্থির হয় না, হাহুতাশ করে না, আশাহত হয় না এবং আল্লাহর প্রতি কু ধারণা পোষণ করে না। বরং সকল অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে। এ ধরণের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী যে হৃদয়ে মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাকে সেটাই ইসলামের পরিভাষায় নফসে মুতমাইন্নাহ।

❑ ‘নফসে মুতমইন্নাহ’ (প্রশান্ত আত্মা) এর মর্যাদা:

আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي – وَادْخُلِي جَنَّتِي
“হে প্রশান্ত আত্মা,তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা আল ফজর:২৭-৩০)

মহান রবের পক্ষ থেকে প্রশান্ত আত্মাকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলা হবে জান কবজের সময় আবার কিয়ামত দিবসে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর) অর্থাৎ এ গুণ-বৈশিষ্টের অধিকারী আত্মার জন্য এটি সরাসরি জান্নাতের ঘোষণা। সুতরাং এখান থেকেই বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

❑ নফসে মুতমাইন্না (প্রশান্ত আত্মা) এবং আবু বকর রা.:

ইবনে আবী হাতিম ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, উক্ত আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময় আবু বকর রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বসা ছিলেন। আয়াতটি শুনে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, কত চমৎকার এই কথাটি!
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, أما إنه سيقال لك هذا
“একথাটি (মৃত্যুর সময়) তোমাকে বলা হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
——————————

❑ আমরা কিভাবে নফসে মুতমাইন্নাহ বা প্রশান্ত মনের অধিকারী হতে পারব?

নিম্নোক্ত গুণাবলীগুলো অর্জন করলে আমরাও এধরণের নফসের অধিকারী হতে পারব ইনশাআল্লাহ। যথা:

❖ ১) ইখলাস বা একনিষ্ঠতা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّـهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
“তাদেরকে একমাত্র এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে।” (সূরা বাইয়েনাহ: ৫)
ইখলাসের আলামত:
● ক) জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য অনুভব করা। আল্লাহর সাহায্যের কারণে একজন ব্যক্তির ইবাদত-বন্দেগী ও কার্যক্রম ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পদস্খলন থেকে রক্ষা পায়। ইবনুল জাউযী বলেন:
إنما يتعثر من لم يخلص
“যার মধ্যে ইখলাস নেই তারই পদস্খলন ঘটে।” (সায়দুল খাতের, ১:১১৯)
● খ) ইবাদতে পর্যাপ্ত সময় ও শ্রম ব্যয় করা।
● গ) গোপনে ইবাদত করার আগ্রহ থাকা। তবে যে সব ইবাদত জনসম্মুখে করতে হয় সেগুলোর কথা ভিন্ন। যেমন জামাআতে সালাত, আল্লাহর পথে দাওয়াত, জিহাদ ইত্যাদি।
● ঘ) অতি যত্ন সহকারে সুন্দরভাবে ইবাদত করা এবং এ ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনে আন্তরিক হওয়া।
● ঙ) আল্লাহর দরবারে ইবাদত গৃহীত না হওয়ার ভয় থাকা।

❖ ২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা:

নফসে মুতমাইন্নার অধিকারী হতে হলে ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, চরিত্র, পারিবারিক, সামাজিক তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ ও আদর্শের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। নিজের জানমাল,সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা ও সকল প্রিয়জন থেকে তার ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই কেবল পূর্ণ মুমিন হওয়ার সম্ভব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
“তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা পুত্র এবং অন্য সকল লোক হতে অধিক প্রিয় না হই।” (বুখারী ও মুসলিম, আনাস রা. হতে বর্ণিত)

আর এতে কোন সন্দেহ নাই যে, যে হৃদয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভালবাসা সকল ভালবাসার উপরে স্থান পাবে সে হৃদয় হবে সবচেয়ে প্রশান্ত ও স্থির এবং তার জন্যই অপেক্ষা করছে উপরোক্ত সুসংবাদ।

❑ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণের আলামত:

● ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং গ্রহণে উদগ্রীব থাকা
● খ) সীরাত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন-চরিত সম্পর্কিত বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা।
● গ) বিদআত থেকে সাবধান থাকা।
● ঘ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণে অগ্রণী থাকা।

❖ ৩) আল্লাহ তাআলাকে গভীরভাবে ভালবাসা:

আল্লাহ তাআলাকে ভালবেসে যখন কেউ আল্লাহর রঙ্গে জীবন রাঙ্গিয়ে দিতে পারে তখন সকল বিপদ-মুসিবতে সবর করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। সর্বাবস্থায় সে তাঁর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। শত কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে। বিপদে ধৈর্যের পরিচয় দেয় আর সুখ ও আনন্দের সংবাদে কৃতজ্ঞতা আদায় করে।এসব কারণে তার মন থেকে অস্থিরতা, হাহাকার, না পাওয়ার বেদনা দূরভিত হয় যায়। মন ভরে উঠে পরম প্রশান্তিতে।

❑ আল্লাহকে ভালবাসার কতিপয় আলামত:

● ক) নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত করতে ভালো লাগা।
● খ) আল্লাহর বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ করতে আনন্দ পাওয়া।
● গ) নামায, রোযা, দান-সদকা ইত্যাদি ইবাদতে তৃপ্তি অনুভব করা।
● ঘ) তাসবীহ, তাহলীল, যিকির, দুআ, ইস্তিগফার ইত্যাদির মাধ্যমে জিহ্বাকে সিক্ত রাখা।
● ঙ) আল্লাহর পছন্দ ও অ পছন্দনীয় বিষয়ে মানসিকভাবে পূর্ণ সম্মতি থাকা।
● চ) কোন ইবাদত ও নেকির কাছে ছুটে গেলে মনে কষ্ট অনুভূত হওয়া এবং আফসোস করা।
● ছ) আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘিত হতে দেখলে মনে প্রচণ্ড রাগ সৃষ্টি হওয়া।

❖ ৪) আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا”
“ওই ব্যক্তিই ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক,ইসলামকে দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিল।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, আনাস রা. হতে বর্ণিত)

যে আল্লাহ তাআলাকে প্রতিপালক হিসেবে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে স্বাভাবিকভাবে তার অন্তরে অস্থিরতা ও দু:শ্চিন্তা স্থান পাবে না। কারণ সে জানে মহান আল্লাহ অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান ও কুশলী আর তার প্রতিটি সিদ্ধান্তই প্রজ্ঞাপূর্ণ। তাই তার ভাল-মন্দ সকল সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি থাকার মাধ্যমেই হৃদয়ে জাগ্রত হয় অনাবিল প্রশান্তি।

❖ ৫) সত্যবাদিতা:

সত্যবাদিতার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত প্রশান্তি । পক্ষান্তরে মিথ্যায় রয়েছে মানসিক অশান্তি, সন্দেহ, সংশয় ও অস্থিরতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ ، وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ
“সত্য হল প্রশান্তি আর মিথ্যা হল সংশয়।” (মুসনাদ আহমদ, মুস্তাদরাক হাকিম, মিশকাত, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

সত্যবাদিতার তিনটি ক্ষেত্রে রয়েছে। যথা:

● ক) আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতা:
প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী মুমিন হবে-
– কথায় সত্যবাদী। সুতরাং তার মুখ থেকে কখনও অসত্য কথা বের হবে না।
– আচরণে সত্যবাদী। সুতরাং সে হঠাৎ করেই রঙ বদলাবে না বা ধোঁকাবাজি ও মুনাফেকি করবে না।
– কর্মে সত্যবাদী। সুতরাং সে আমল করবে ইখলাসের সাথে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতির আলোকে।
● খ) বান্দাদের সাথে সত্যবাদিতা: আল্লাহ ও তার মাঝে যে চেহারা থাকে মানুষের সাথে উঠবস ও লেনদেনের সময় তার চেয়ে ভিন্ন চেহারা নিয়ে হাজির হবে না।
● গ) নিজের সাথে সত্যবাদিতা: যা সে বিশ্বাস করে তা সে কর্মে বাস্তবায়ন করে। নিজেকে সংশোধন করে, আত্ম সমালোচনা করে এবং প্রবৃত্তির টানে ছুটে বেড়ায় না আর একান্ত একাকীত্বেও আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রেখে হারাম থেকে দূরে থাকে।

❖ ৬) তাকওয়া অবলম্বন:

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে সে আল্লাহর ইবাদত করে; অবাধ্যতা করে না। কৃতজ্ঞতা আদায় করে; অকৃতজ্ঞ হয় না। আল্লাহকে স্মরণ করে; তাকে ভুলে থাকে না আর বেঁচে থাকে বড়-ছোট সকল প্রকার পাপাচার থেকে।
স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রাখে তখন সে যেমন আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘন করে না ঠিক তেমনি বান্দার হকও নষ্ট করে না। এতে হৃদয়ে বিরাজ করে এক অভূতপূর্ব তৃপ্তি ও অবর্ণনী প্রশান্তি। পক্ষান্তরে আল্লাহর দাসত্ব থেকে বের হয়ে গেলে এবং বান্দার অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে অপরাধীর হৃদয়ে অশান্তির দাবানল জ্বলতে থাকে আর অস্থিরতা ও দু:শ্চিন্তা তাকে গ্রাস করে।

❖ ৭) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ: মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করা, আল্লাহ তাআলা যে কাজে রাগ করেন সে কাজ থেকে সতর্ক করা এবং এ পথে ধৈর্য ধারণ করা।

❖ ৮) মানুষের কল্যাণে কাজ করা, গরীব, অসহায়, বিধবা ও এতিমদের সাহায্য করা ইত্যাদি।

❖ ৯) সুন্দর চরিত্র: হাসিমুখে থাকা,দেখা হলে সালাম দেয়া, মানুষের সুখে সুখী হওয়া, দু:খে দুখী হওয়া, প্রতিবেশী ও মেহমানকে সম্মান করা ইত্যাদি।

উপসংহার, শাইখ সালিহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) এর একটি মূল্যবান বক্তব্য দ্বারা উপসংহার টানতে চাই। তিনি বলেন:
“মনকে নফসে মুতমাইন্নাহ এর পর্যায়ে উন্নীত করার উপায় হল, মনকে আল্লাহর আনুগত্যে বাধ্য করা আর কু প্রবৃত্তি ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা।”

দুআ করি, আল্লাহ যেন আমাদের মনকে মহান আল্লাহর আনুগত্যে বশীভূত করার পাশাপাশি কু প্রবৃত্তির আহ্বান এবং পাপাচার থেকে দুরে থাকার মাধ্যমে সেই প্রশান্ত আত্মার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করেন যাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশের জন্য নিজেই আহ্বান করেছেন। নিশ্চয় তিনি দুআ কবুল কারী। আমীন।
—————–
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।

বন্ধু ও বন্ধুত্ব

 আল্ হামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ:

মানবকুল সামাজিক, তাই তারা সমাজের সদস্যদের সাথে বসবাস করে, উঠা-বসা করে, লেন-দেন করে এবং বন্ধুত্ব করে। এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বভাবগতভাবেই সংঘটিত হয়। তবে বন্ধু নির্বাচন ও বন্ধুত্ব করনের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই পয়েন্ট থেকে অনেকের জীবন ভাল কিংবা মন্দের দিকে মোড় নেয়। কেউ সত্যিই বলেছেনঃ ‘সৎ সঙ্গ তোমাকে সৎ বানায় আর অসৎ সঙ্গ তোমাকে অসৎ করে তোলে। পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার ইসলামে, এ বিষয়ও রয়েছে কিছু উপদেশ কিছু গাইড লাইন। আমরা এই স্থানে তারই কিছুটা বর্ণনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

বন্ধু নির্বাচনঃ বন্ধুত্বর প্রথম ধাপ হচ্ছে বন্ধু চয়ন। কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের তার সম্পর্কে জানা উচিৎ, যে আমরা কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চলেছি। যদি কেউ এই স্টেপেই ভুল করে দেয় , তাহলে তার পরিণাম ভয়ংকর হতে পারে। কারণ আমরা লক্ষ্য করি, সাধারণত: জুয়াড়ির বন্ধু জুয়াড়ী হয়, চোরের বন্ধু চোর হয়, আর নামাযীর বন্ধু হয় নামাযী । তাই বন্ধু নির্বচনের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
” الرجل على دين خليله فلينظر أحدكم من يخالل” رواه الترمذي في أبواب الزهد
অর্থঃ “মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিৎ যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” ( তিরমিযী, যুহুদ অধ্যায়, নং ২৪৮৪)

একদা এক বেদুইন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেঃ কিয়ামত কবে হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বলেনঃ তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছো? লোকটি বলেঃ (নফল) নামায, রোযা, সাদাকা হিসাবে বেশী কিছু আমার নেই কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তাহলে তুমি তার সাথে হবে যাকে তুমি ভালবাসো। (মুসলিম, নং ২৬৩৯)

আলকামাহ (রহঃ) বলেনঃ “বন্ধুত্ব কর তার সাথে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাব গ্রস্থ হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোন মঙ্গল দেখে, তো গুণে গুণে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, যদি তার কাছে চাও তো সে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে সান্তনা দেয়, আর তাদের নিম্ম স্তরের সে, যে তোমার কোন অন্যায় করে না।”
আউযায়ী (রাহঃ) বলেনঃ ‘ বন্ধু বন্ধুর জন্য তালির (কাপড়ের টুকরার) ন্যায়, যদি আসল কাপড়ের মত না হয়, তো অশোভনীয় করে দেয়’।
কতিপয় আরবী সাহিত্যিক বলেনঃ ‘ শুধু তার সাথেই বন্ধুত্ব করো, যে তোমার দোষ গোপন রাখে, দুঃখের সময় সাথে থাকে, প্রয়োজনীয় বিষয়ে তোমাকে অগ্রাধিকার দেয়, তোমার ভাল কাজের প্রচার করে এবং মন্দ কাজ গোপনে রাখে। আর যদি এইরকম গুণাগুণের কাউকে না পাও, তবে নিজেকেই নিজের সাথী মনে কর’।
কতিপয় আলেম বলেনঃ বন্ধুত্ব কর কেবল নিম্নোক্ত দু শ্রেণীর মানুষের সাথে। এক: তার সাথে যে তোমাকে দ্বীনের শিক্ষা দেয়, যার দ্বারা তুমি উপকৃত হও। দুই: তার সাথে যাকে তুমি দ্বীনের শিক্ষা দাও আর সে তা গ্রহণ করে। উক্ত প্রকার ছাড়া তৃতীয় প্রকার হতে দূরে থাক।”

সৎ সঙ্গ এবং অসৎ সঙ্গের উপমাঃ

বন্ধু ও বন্ধুত্বের বিষয়ে আমরা একটি সুন্দর উপমা জানবো , যেটি প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেশ করেছেন, যেন আমরা জানতে পারি যে আমাদের কী ধরণের বন্ধু চয়ন করা প্রয়োজন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
( مَثلُ الجليسِ الصالح والجليس السوء كمثل صاحبِ المِسكِ و كيرِ الحدّادِ: لا يعدمك من صاحب المسك إمّا تشتريه أو تجدُ ريحَه، و كيرُ الحداد يُحرك بيتَك أو ثوبك أو تجدُ منه ريحا خبيثة ) رواه البخاري في كتاب البيوع
অর্থঃ ‘‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রয়কারী এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতর ওয়ালা তোমাকে নীরাশ করবে না; হয় তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে কিংবা তার নিকট সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে আর নাহলে দুর্গন্ধ পাবে।” )বুখারী, অধ্যায়, ক্রয়-বিক্রয়, নং২১০১(

এমন বন্ধুত্ব, যার বিনিময় জান্নাতঃ

বন্ধুত্ব অনেক কারণে অনেক উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে; কিন্তু কেবল এক প্রকার বন্ধুত্ব রয়েছে যা মানুষের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর। সেটা এতই মহৎ বন্ধুত্ব যার বিনিময় জান্নাত। সেই বন্ধুত্ব হচ্ছে, আল্লাহর কারণে বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব। অর্থাৎ কোন মুসলিম অন্য মুসলিম ভাইর সাথে এই কারণে বন্ধুত্ব স্থাপন করে যে, সে আল্লাহকে ভালবাসে, আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। তার মাল-সম্পদ, মান-সম্মান, সৌন্দর্যতা ইত্যাদির কারণে নয়। এই প্রকার বন্ধুত্বের অফুরন্ত ফযীলত ও সুফল সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস নিম্মে দেখা যেতে পারেঃ

১- কিয়ামত দিবসে আরশের ছায়া তলে স্থানঃ
عن أبي هريرة ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: ” إن الله يقول يومَ القيامة: أين المتحابّون بجلالي ، اليوم أظلهم قي ظلّي ، يوم لا ظل إلا ظلي “. رواه مسلم
অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ আমার মর্যদার (আনুগত্বের) কারণে পরস্পরে বন্ধুত্বকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার ছায়াতলে ছায়া দিব, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই।” (মুসলিম, অধ্যায়, বির ওয়াস্ সিলা, নং ২৫৬৬)

২- আল্লাহর ভালবাসা অর্জনঃ
আবূ হুরাইরা (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ
‘‘এক ব্যক্তি নিজ গ্রামের বাইরে অন্য গ্রামে তার ভাইর সাথে সাক্ষাৎ করে, ফলে তার রাস্তায় আল্লাহ তায়ালা এক ফেরেশতাকে পাহারাদার হিসাবে নির্ধারণ করেন, অতঃপর যখন সে তার নিকটে পৌঁছে, তখন ফেরেশতাগণ বলেঃ কোথায় যাচ্ছ? সে উত্তরে বলেঃ এই গ্রামে এক ভায়ের কাছে যাচ্ছি। ফেরেশতা বলেঃ ওর প্রতি তোমার কোন অনুগ্রহ আছে কি, যা তুমি সম্পাদন করতে যাচ্ছ? সে বলেঃ না, কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি। ফেরেশতা বলেঃ আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত, আল্লাহ তোমাকে ভাল বেসেছেন, যেমন তুমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভাল বেসেছো।” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ বির ওয়াস্ সিলাহ্, নং২৫৬৭)

৩- ফেরেশতাগণের এবং দুনিয়াবাসীর ভালবাসা লাভঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘ আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসে, তখন জিব্রীল (আঃ) কে ডেকে বলেনঃ আমি অমুককে ভালবাসি তাই তুমিও তাকে ভালবাসো। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন তাকে জিব্রীল (আঃ) ভালবাসেন অতঃপর আকাশে ডাক দিয়ে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা অমুককে ভালবাসেন তাই তোমরাও তাকে ভালবাসো। অতঃপর আকাশবাসী তাকে ভালবাসে। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারপর পৃথিবীতে তার গ্রহনযোগ্যতা দিয়ে দেয়া হয়। (ফলে লোকেরা তাকে ভালবাসে, পছন্দ করে)। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন, তখন জিব্রীলকে ডাক দিয়ে বলেনঃ আমি অমুককে ঘৃণা করি, তাই তুমি তাকে ঘৃণা করো, তখন জিব্রীল (আঃ) তাকে ঘৃণা করে এবং আকাশবাসীকে সংবাদ দিয়ে বলেঃ আল্লাহ তায়ালা অমুককে অপছন্দ করে, তাই তোমরাও তাকে অপছন্দ করো। বর্ণনাকারী বলেনঃ তাই তারা সকলে তাকে অপছন্দ করে এবং যমীনেও সে অপছন্দনীয় হয়।” (মুসলিম, অধ্যায়, বির ওয়াস্ সিলাহ, নং ২৬৩৭)

৪- পূর্ণ ঈমানের পরিচয়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।” ( আবূ দাউদ, সূত্র হাসান)

কেউ কাউকে ভালবাসলে তাকে তা জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোন ভাইকে ভালবাসে, তাহলে সে যেন তাকে জানিয়ে দেয়।” (তিরমিযী, অধ্যায়, যুহুদ, নং২৫০২, আহমদ, আবু দাউদ)
তিরমিযীর ভাষ্যকার মুবারকপূরী বলেনঃ “এটা এ কারণে যে, যখন সে তাকে এ বিষয়ে জানাবে, তখন তার অন্তর নরম হবে এবং তার ভালবাসা অর্জন হবে, ফলস্বরূপ সে তাকে ভালবাসবে এবং মুমিনদের মাঝে মৈত্রী বন্ধন স্থাপিত হবে ও মতভেদ দূর হবে।” (তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৭/৬০)
পরিশেষে, মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি তিনি যেন আমাদের সৎ হওয়ার এবং সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই বন্ধুত্ব করার তাউফীক দেন। আমীন।

লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব (মাদানী);
লিসান্স: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
দাওয়াহ সেন্টার, খাফজী, সউদী আরব।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন!!!

শক্তিশালী মুমিন এর ১৪টি অনন্য গুণ

 লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

? শক্তিশালী মুমিন এর মর্যাদা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجَزْ ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا ، وَلَكِنْ قُلْ : قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ ”

“শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। আর সবকিছুতেই কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং যাতে তোমার কল্যাণ রয়েছে তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। তবে যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।” বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।” কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।

উক্ত হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, ঈমানদারগণ ঈমানের দিক দিয়ে সমান নয়। তাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তবে শক্তিশালী মুমিনগণ অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। কিন্তু দুর্বল মুমিনরাও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত নয়।

তাহলে আমাদের জানা দরকার শক্তিশালী মুমিন কারা? কী তাদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য? এগুলো জেনে আমরাও যেন সে সকল গুণাবলী অর্জন করে আল্লাহর প্রিয়ভাজন মুমিনদের দলভুক্ত হতে পারি। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমীন।

*শক্তিশালী মুমিন এর গুণাবলী:* নিম্নে একজন শক্তিশালী মুমিনের ১৪টি অনন্য গুণাবলী সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

১) সুদৃঢ় ঈমান
২) দ্বীনের ইলম অর্জন করা
৩) সবর বা ধৈর্য ধারণ
৪) রাগ নিয়ন্ত্রন
৫) উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা
৬) উদ্যমী হওয়া
৭) নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের প্রচেষ্টা থাকা
৮) মানুষের উপকার করা
৯) সুস্বাস্থ্য
১০) মজবুত চিন্তাভাবনা ও সুনিপুণ পরিকল্পনা
১১) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক
১২) আত্মমর্যাদা ওপরিচ্ছন্ন অন্তর
১৩) শক্তিশালী মুমিনের হৃদয় হয় ভালবাসা, দয়া ও মায়া-মমতায় পূর্ণ।
১৪) ভুল স্বীকার
—————
১) সুদৃঢ় ঈমান:

শক্তিশালী মুমিন মানেই অটুট আকীদা ও বিশ্বাসের অধিকারী। সে রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, দ্বীন হিসেবে ইসলামের প্রতি এবং নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সন্তুষ্ট। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিষয়ে এমন সুদৃঢ় ঈমান পোষণ করে যে, কোন সংশয় ও ভ্রান্তির সামনে দুর্বল হয় না। সে তার মূল্যবোধ ও মূলনীতিতে আস্থাশীল- যার কারণে সংশয় ও সন্দেহের ঝড় তাকে টলাতে পারে না বা কু প্রবৃত্তি ও লালসার স্রোত তরঙ্গ তাকে ভাসিয়ে নিতে পারে না।

২) দ্বীনের ইলম অর্জন করা:

শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম গুণ হল, সে দ্বীনের জ্ঞানার্জনে উদগ্রীব থাকে। কেননা, ইলম ছাড়া যথার্থ শক্তিশালী মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ

“বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার: ৯)

উত্তর হল, কখনও নয়। বরং আল্লাহ তাআলা যাকে ঈমানের পাশাপাশি ইলম দান করেছেন সে নি:সন্দেহে মর্যাদার দিক দিয়ে উন্নত। যেমন আল্লাহ তালা বলেন,

يَرْفَعِ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে আল্লাহ্‌ তাদের স্তরে স্তরে মর্যাদায় উন্নীত করবেন।” (সূরা মুজাদিলা: ১১)

তিনি আরও বলেন,

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّـهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে।” (সূরা ফাতির: ২৮)

নবীগণ যেহেতু মুমিনদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী মুমিন ছিলেন সুতরাং তাদের রেখে যাওয়া ইলমের উত্তরাধিকারী রব্বানী আলেমগণও অন্যদের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী মুমিন। কারণ তারা আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করেছে, অন্যরা তা পারে নি। আর এ কারণেই কেবল আলেমগণই আল্লাহ তাআলাকে সর্বাধিক ভয় করে।

 ৩) সবর বা ধৈর্য ধারণ:

শক্তিশালী মুমিনদের অন্যতম গুণ হল, তারা হন প্রচণ্ড ধৈর্যশীল। প্রকৃতপক্ষে দৃঢ় সংকল্প আর মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরাই কেবল এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

“বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের বিষয়।” (সূরা লোকমান: ১৭)

পক্ষান্তরে দুর্বলরা হয় ধৈর্যহীন ও অস্থির। তারা বিপদে পড়লে খেই হারিয়ে ফেলে।

শক্তিশালী মুমিন সামাজিকভাবে মানুষের সাথে চলাফেরা করে আর মানুষ তাকে আচরণে কষ্ট দিলে ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এ অবস্থায় ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তার সাথে চলাফেরা-উঠবস অব্যাহত রাখা একমাত্র শক্তিশালী মুমিন দ্বারাই সম্ভব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

المؤمنُ الَّذي يخالطُ النَّاسَ ويصبرُ على أذاهم أعظمُ أجرًا منَ المؤمنِ الَّذي لاَ يخالطُ النَّاسَ ولاَ يصبرُ على أذاهم

“যে মুমিন মানুষের সাথে উঠবস করে এবং তারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করে সে অধিক প্রতিদানের অধিকারী হবে এমন মুমিন হতে যে মানুষের সাথে উঠবস করে না এবং তারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করে না।” (ইবনে মাজাহ, সহীহ-আলবানী, হা/৩২৭৩)

*সবর বা ধৈর্যের তিনটি ক্ষেত্রে রয়েছে।* যথা:

ক) ইবাদত বা আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ।
খ) আল্লাহর অবাধ্যতা বা পাপাচার থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ।
গ) জীবনের বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা, বিপর্যয় ও দুর্বিপাকে ধৈর্য ধারণ।

 ৪) রাগ নিয়ন্ত্রন:

শক্তিশালী মুমিন তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। সে কখনও ব্যক্তি স্বার্থে রাগ করে না। কেউ তার প্রতি অবিচার করলে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকার পরও সে ক্ষমা করে দেয়।

রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘প্রকৃত বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।যেমন তিনি বলেন,

ليسَ الشَّديدُ بالصُّرَعةِ ، إنَّما الشَّديدُ الَّذي يملِكُ نفسَهُ عندَ الغضبِ

“প্রকৃত বীর সে ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (বুখারী ও মুসলিম)

তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে বা অন্যায়-অপকর্ম দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া অবশ্যই প্রশংসনীয় গুণ। অন্যায়, দুর্নীতি ও পাপাচারের পথ রোধ করতে এ রাগ অত্যন্ত জরুরি। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

 ৫) উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা:

শক্তিশালী মুমিন হৃদয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে। তার স্বপ্ন হয় অনেক উঁচু। তার অভীষ্ট লক্ষ হয় বহু দূর। সে আখিরাতের প্রতিযোগিতায় বিজয় মুকুট পরিধান করতে চায়। তাই সে দুর্দান্ত বেগে ছুটে যায় আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের আহ্বানে। আল্লাহ বলেন,

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন। যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)

শক্তিশালী ঈমান ছাড়া এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভব নয়। এ জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়। অনেক পরিশ্রম আর কষ্ট করতে হয়। যেমন শীতের রাতেও ওযু করে ফজর সালাতে যাওয়া, রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সালাত, নফল রোযা, নিজের অভাব থাকা সত্যেও অসহায় মানুষের সাহায্য, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে দ্বীনের পথে টিকে থাকা, প্রয়োজনে আল্লাহর পথে জিহাদে নিজের জান-মাল সর্বস্ব অকাতরে বিলিয়ে দেয়া ইত্যাদি।

উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি উদাহরণ হল,আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উঁচু জান্নাতের জন্য দুআ করা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন:

إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ ، فَإِنَّهَا أَوْسَطُ الْجَنَّةِ ، وَأَعْلَى الْجَنَّةِ ، وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ ، وَمِنْهُ يُفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ

“তোমরা যখন আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদউস কামনা করবে। কারণ, তা হল, উৎকৃষ্ট ও উন্নততর জান্নাত। এ জান্নাতের উপর রয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর আরশ। তা হতে জান্নাতের নহর সমূহ প্রবাহিত হয়”। (সহীহুল বুখারী ২৭৯০,৭৪২৩)

 ৬) উদ্যমী হওয়া:

শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম সেরা গুণ হল, তার অন্তরে প্রচণ্ড উদ্যম ও স্প্রিহা কাজ করে। সে কখনও অলসতাকে সুযোগ দেয় না। কেননা অলসতাকে আশ্রয় দেয়া মানে, শয়তানের নিকট নিজেকে সঁপে দেয়া। যে নিজেকে শয়তানের কাছে সঁপে দেয় তার ধ্বংস অনিবার্য।

সামগ্রিকভাবে অকর্মণ্যতা,অলসতা, ভীরুতা ইত্যাদি দোষগুলো মানুষের উন্নতির পথে অন্তরায়। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সব দোষ-ত্রুটি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন এবং আশ্রয় চাওয়ার জন্য তার উম্মতকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন।

আনাস রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআ করতেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.

“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (এর শিকার হওয়া) থেকে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬৯)

 ৭) নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের প্রচেষ্টা থাকা:

শক্তিশালী মুমিন কেবল নিজের সংশোধনকেই যথেষ্ট মনে করে না। বরং আল্লাহ তাকে যে শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে অন্যকেও সংশোধনের কাজে ব্রতী হয়।

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি :

مَنْ رَأَى مِنْكُم مُنْكراً فَلْيغيِّرْهُ بِيَدهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطعْ فبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبقَلبهِ وَذَلَكَ أَضْعَفُ الإِيمانِ

“তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখবে তখন সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি সে এ সামর্থ্য না রাখে তাহলে যেন মুখ দিয়ে পরিবর্তন করে (মুখে প্রতিবাদ করে)। যদি এ সামর্থ্যও না থাকে তাহলে অন্তরে (ঘৃণা করে এবং পরিবর্তনের পরিকল্পনা আঁটতে থাকে)। আর এটি হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতর স্তর।” (সহীহ মুসলিম)

এ হাদীসে অন্যায় প্রতিহত করার তিনটি স্তর বলা হয়েছে। এ তিনটি মধ্যে ১ম স্তরটি অর্থাৎ হাত দ্বারা বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তন করা এর পরের দুটি স্তর থেকে নি:সন্দেহ অধিক উত্তম। তবে তা শক্তি ও সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যদি কারও অন্যায় প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি ও সামর্থ্য থাকে তাহলে তা ব্যবহার করে অন্যায় পরিবর্তন করবে। আর এটি হল শক্তিশালী মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

 ৮) মানুষের উপকার করা:

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ

“সে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপকার করে।” (সিলসিলা সহীহাহ, হাসান)

শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, সে শুধু নিজের স্বার্থ নিয়েই ভাবে না বরং মানুষের কল্যাণে অবদান রাখে। সে আর দশজন মানুষের মত নয়। সে বিপদে মানুষকে সাহায্য করে, অন্ধকারে আলো জ্বালায়, জ্ঞানহীনকে জ্ঞানদান করে, রোগীর সেবা করে, কেউ পরামর্শ চাইলে সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে, মাজলুমকে রক্ষা করে, দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেয়, হতাশার অন্ধকারে আশার আলো জ্বালায়.. এভাবে যেখানে যতটুকু সম্ভব সেখানে ততটুকু মানুষের কল্যাণে নিজের মেধা, যোগ্যতা, অর্থ ও শ্রম দ্বারা উপকার করতে ছুটে যায়। এটি হল শক্তিশালী মুমিনের পরিচয়।

আবু বকর (রা.): আমাদের প্রেরণা:

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ- مسلم

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযা রেখেছে?

আবু বকর (রা.): আমি।

রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে জানাযায় হাজির হয়েছে?

আবু বকর (রা.): আমি।

রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে অসহায়কে খাবার দিয়েছে?

আবু বকর (রা.): আমি।

রাসূল (সা.) : তোমাদের মধ্যে আজ কে রোগীর সেবা-যত্ন করেছে?

আবু বকর (রা.): আমি।

রাসূল (সা.): ‘‘যার মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো একত্রিত হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (সহীহ মুসলিম/১০২৮)

 ৯) সুস্বাস্থ্য:

একজন সুস্থ, সবল ও মজবুত মানুষ দ্বারা যেভাবে দ্বীন ও দুনিয়ার কাজ করা সম্ভব দুর্বল ও অসুস্থ মানুষ দ্বারা কখনো তা সম্ভব নয়। তাই তো দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মুমিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সুস্থ থাকার জন্য দুআ করতেন,রোগ হলে চিকিৎসা করতেন এবং লোকদেরকে চিকিৎসা করতে উৎসাহিত করতেন। শুধু তাই নয় রবং নিজেও রোগ-ব্যাধির প্রেসক্রিপশন দিতেন।

সুস্থতার ব্যাপার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ

“দুটি নেয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অসর্তক ও প্রতারিত। সে দুটি হল, সুস্থতা এবং অবসর সময়।”(সহীহুল বুখারী ৫/২৩৫৭)

শারীরিক শক্তি আল্লাহ তায়ালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর পূর্বে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন,

اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ

“পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন কর:

(১) জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।
(২) সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে।
(৩) অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে।
(৪) যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং
(৫) সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম খণ্ড, ৮ম অধ্যায় ১২৭ পৃষ্ঠা। আল্লামা আলবানী রহ., হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দ্রঃ সহীহুল জামে, হাদীস নং ১০৭৭)

শক্তিশালী মুমিন ব্যক্তি তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, ঘুম, বিশ্রাম ইত্যাদির প্রতি যত্নশীল হয়। সে মনে করে, শারীরিক সুস্থতা ও দৈহিক বল তাকে ইবাদত-বন্দেগী, দ্বীনের কাজ, পাশাপাশি হালাল অর্থ উপার্জন এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখতে সাহায্য করবে।

মোটকথা দৈহিক শক্তি এবং সুস্থতাকে সে দ্বীন ও দুনিয়ার ভালো কাজে অবদান রাখার মাধ্যম মনে করে।

 ১০) মজবুত চিন্তাভাবনা ও সুনিপুণ পরিকল্পনা:

মজবুত ঈমানদারের একটি গুণ হল, তার চিন্তা-চেতনা, কথা-বার্তা, বক্তব্য, সিদ্ধান্ত, যুক্তি, বিচার-বিবেচনা ইত্যাদি সব কিছু হয় মজবুত এবং সূক্ষ্ম। সে ইবাদত-বন্দেগী, কাজে-কর্ম সকল ক্ষেত্রেই সুদৃঢ়,সুনিপুণ এবং যত্মশীল।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

“যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ভরসাকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আল ইমরান: ১৫৯)

মজবুত কাজকে আল্লাহ তাআলাও পছন্দ করেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إنَّ اللهَ تعالى يُحِبُّ إذا عمِلَ أحدُكمْ عملًا أنْ يُتقِنَهُ

“নিশ্চয় আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, তোমাদের কেউ কোন কাজ করলে তা যেন মজবুতভাবে করে।” (সহীহুল জামে, হা/১৮৮০, হাসান)

 ১১) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক:

মুমিন ব্যক্তি সত্য, ন্যায়-নীতি, সততার পক্ষে থাকে নির্ভীক। এ ক্ষেত্রে সে সমালোচনাকারী সমালোচনাকে পরোয়া করে না। বাতিলের বিরুদ্ধে থাকে স্পাত কঠিন। সে সৎ ও কল্যাণকামী। তোষামোদি ও ছলচাতুরীকে প্রশ্রয় দেয় না। যে দিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরে না বরং সৎসাহস বুকে নিয়ে নির্ভিকভাবে ঝড়ের বিপরীতে পথ চলে।

এই সাহসী ব্যক্তিরাই সমাজের অন্যায়, অপকর্ম ও বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম আ.। যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার জানবাজ সাহসী সাহাবীগণ।

 ১২) আত্মমর্যাদা ওপরিচ্ছন্ন অন্তর:

শক্তিশালী মুমিন হয় আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী। সে অহঙ্কার করে না বরং বিনয় ও নম্রতা তার চরিত্রের ভূষণ। সে অর্থলিপ্সু বা লোভাতুর হয় না। সে হীন চরিত্রের অধিকারী নয়। অর্থের প্রয়োজন হলেও তার আত্মমর্যাদা তাকে অর্থলিপ্সু বানায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

“যাদেরকে মনের লিপ্সা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।” (সূরা আল হাশর: ৯)

 ১৩) শক্তিশালী মুমিনের হৃদয় হয় ভালবাসা, দয়া ও মায়া-মমতায় পূর্ণ। সে কৃতজ্ঞ চিত্তের অধিকারী। সে কারও প্রতি ব্যক্তিগত কারণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে না বরং সে কাউকে ভালবাসলে বা ঘৃণা করলে তা হয় একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে কেন্দ্র করে।

 ১৪) ভুল স্বীকার: শক্তিশালী ঈমানদারের একটি গুণ হল, ভুল হলে সে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। ভুল সংশোধন করে। সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে না। এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের গুণ।

? *সুদৃঢ় ঈমানের আলামত:*

১) আল্লাহ এবং রাসূল যা ভালবাসেন তা নিজের চাহিদা, রুচি এবং ভালবাসার উপর অগ্রাধিকার দেয়া।
২) আল্লাহর জন্য নিজের জান- মাল, সহায়-সম্পত্তি উৎসর্গ করা।
৩) আল্লাহ এবং তার রাসূল যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসা আর তারা যাকে ঘৃণা করেন তাকে ঘৃণা করা।
৪) তকদীর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং যতই বিপদ আসুক না কেন মনঃক্ষুণ্ণ ও হতাশ না হওয়া।
৫) স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা।
৬) আল্লাহর যিকিরের সময় মনে তৃপ্তি ও প্রফুল্লতা অনুভব করা। আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّـهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّـهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” (সূরা রা’দ: ২৮)

তিনি আরও বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّـهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে । আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।” (সূরা আনফাল: ২)

৭) নেকির কাজে আনন্দ এবং গুনাহর কাজে অস্থিরতা অনুভব করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من سرَّتْهُ حسنتُهُ وساءتْهُ سيئتُه فهو مؤمنٌ

“মুমিন তো সেই ব্যক্তি যার অন্তর নেক কাজে খুশি হয় আর পাপকাজে কষ্ট অনুভব করে।”

(সহীহুল জামে, হা/৬২৯৪, সহীহ)

 পরিশেষে, মহান রবের নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে সে ঈমান অর্জনের তাওফিক দান করেন যার উপর তিনি সন্তুষ্ট। তিনি যেন আমাদের দুর্বলতাগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেন, অভাবগুলো মোচন করেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু, দাতা ও ক্ষমাশীল।
————————————————-
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদ আরব।।

Translate