Wednesday, December 8, 2021

কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর যা যা হবেঃ

 


কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর যা যা হবেঃ

(১) জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে,
(২) জান্নাতীরা আল্লাহ তাআ’লাকে দেখতে পারবে,
(৩) জান্নাতীরা পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে,
(৪) নবী-রাসুল ও নেককার জান্নাতী ব্যক্তিরা ঈমানদার, কিন্তু পাপের কারনে জাহান্নামে গেছে, এমন লোকদের জন্য সুপারিশ করবেন,
(৫) অন্তরে অণু পরিমান ঈমান আছে, তাদেরকেও শাস্তি দেওয়ার পরে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে,
(৬) আল্লাহ্‌ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে কিছু লোকদেরকে হাতের অঞ্জলি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন. . .
এরপরেও যারা জাহান্নামে বাকি থাকবে, তাদের মধ্য থেকে আর কেউ কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। তারা হচ্ছে যারা কাফের, বেঈমান, মুশরেক ও মুনাফেক অবস্থায় মৃত্যবরণ করেছিলো এমন লোকেরা। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচান, আমিন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমঃ (৩৫১)-এ বর্ণিত পুরো ঘটনাটা বর্ণনা করা হলো।
.
আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে কয়েকজন সাহাবী তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা। তিনি আরো বললেন, দুপুরবেলা মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবীদের সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! না, তা কষ্ট হয় না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঠিক তেমনি কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে তোমাদের জন্যে কোনই বাঁধা থাকবে না। সেদিন এক ঘোষনাকারী ঘোষণা দিবে, “তোমরা যে যার উপাসনা করতে, সে আজ তার মাবূদের অনুসরণ করুক।” তখন আল্লাহ ব্যতীত যারা অন্য দেব-দেবী ও বেদীর উপাসনা করত, তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না; সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। নেককার লোক কিংবা পাপী, যারা আল্লাহ তাআ’লার ইবাদত করত, তারাই কেবল বাকী থাকবে এবং আহলে কিতাবীদের মধ্যে যারা দেব-দেবী ও বেদীর উপাসক ছিল না, তারাও বাকি থাকবে। এরপর ইয়াহুদীদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হবে! তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়ের-এর উপাসনা করতাম। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। (কারণ), আল্লাহ কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের খুবই পানির পিপাসা পেয়েছে। আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করুন। তাদের এই দুয়া শুনে তাদেরকে ইঙ্গিত করে মরীচিকাময় জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। সেই জাহান্নামের (আগুনের) এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলতে থাকবে। ইয়াহুদীরা সেই (মরীচিকাময় জাহান্নামের মাঝে পানির আশায়) ঝাঁপিয়ে পড়বে। এরপর খৃষ্টানদেরকে ডাকা হবে আর বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র (ঈসা) মসীহ-এর উপাসনা করতাম। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। (কারণ), আল্লাহ কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেন নি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হরে, এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের দারুন তৃষ্ণা পেয়েছে, আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করুন। তখন তাদেরকেও পানির ঘাটে যাবার ইঙ্গিত করে জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। তাদের কাছে একে মরীচিকার মত (পানির নদী বা ঝর্ণার মতো) মনে হবে। সেই জাহান্নামের (আগুনের) এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলতে থাকবে। খ্রীস্টানরা তখন জাহান্নামে ঝাপিয়ে পড়তে থাকবে। শেষে ঈমানদার হোক কিংবা গুনাহগার, এক আল্লাহর উপাসনাকারী ব্যতীত আর কেউ (হাশরের ময়দানে) অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। বলবেন, সবাই তাদের নিজ নিজ উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে, আর তোমরা কার জন্যে অপেক্ষা করছ? তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেখানে আমরা বেশি মুখাপেক্ষী ছিলাম, সেই দুনিয়াতে আমরা অপরাপর মানুষ থেকে আলাদা থেকেছি এবং তাদের সঙ্গী হইনি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রভু। মুমিনরা (আল্লাহকে চিনতে না পেরে) বলবে, “আমরা তোমরা কাছ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আল্লাহর সঙ্গে আমরা কোন কিছুকে শরীক করি না।” মুমিনরা এই কথা দুই বা তিনবার বলবে। এমন কি কেউ কেউ অবাধ্যতা প্রদর্শনেও অবতীর্ণ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ তারা আল্লাহকে মোটেই চিনতে পারবেনা)। তখন আল্লাহ মুমিনদেরকে বলবেন, আচ্ছা, তোমাদের কাছে এমন কোন নিদর্শন আছে যার দ্বারা তোমরা আল্লাহকে চিনতে পার? তারা বলবে, অবশ্যই আছে। এরপর আল্লাহ তাঁর “পায়ের গোছা” প্রদর্শন করবেন, তখন পৃথিবীতে যারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদা করত (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশী করার জন্যে সালাত আদায় করতো), তাদেরকে আল্লাহ তাআ’লা সিজদা করার অনুমতি দিবেন। আর যারা লোক দেখানো বা মানুষের ভয়ে আল্লাহকে সিজদা করত (অর্থাৎ যারা ছিলো মুনাফিক কিংবা রিয়ার উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করতো), সে মুহূর্তে তাদের মেরুদন্ড শক্ত ও অনমনীয় করে দেওয়া হবে। যখনই তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে, তখনই তারা চিৎ হয়ে পড়ে যাবে। তারপর তারা মাথা তুলবে। ইতিমধ্যে তারা আল্লাহকে প্রথমে যে সুরতে দেখেছিল, তা পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তিনি তাঁর সুরতে আবির্তূত হবেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, আমিই তোমাদের রব! ঈমানদারেরা বলবে হ্যা, আপনিই আমাদের প্রতিপালক। তারপর জাহান্নামের উপর ‘জিসর’ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। জিসর বা পুলসিরাত হচ্ছে চুল অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম ও তরবারি অপেক্ষা অধিক ধারালো। অতঃপর শাফায়া’তেরও অমুমতি দেওয়া হবে। মানুষ বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল জিসর (পুলসিরাত) কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (পুলসিরাত) হচ্ছে এমন একটি স্থান, যেখানে মানুষের পা পিছলে যাবে। সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাঁটা, দেখতে নজদের ‘নাদান’ নামক কাঁটাদার বৃক্ষের মত। মুমিনগণের কেউ এই পথ চোখের পলকের গতিতে, কেউবা বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ ঘোড়ার গতিতে দ্রুত, কেউ উটের গতিতে আস্তে আস্তে অতিক্রম করবে। পুলসিরাত থেকে কেউ অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পাবে, আবার কেউবা ক্ষতবিক্ষত হয়ে মুক্তি পাবে। আর পুলসিরাতে অনেক ইমানদারেরা (তাদের পাপের কারনে) কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না। তারা বলবে, হে রব! এরাতো আমাদের সাথেই সালাত আদায় করত, সাওম পালন করতো, হজ্জ করতো। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, যাও তোমরা তোমাদের পরিচিত লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও তাদের চেহারা বা মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।) মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ আগুনে পুড়ে কয়লার মতো হয়ে যাবে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে আমাদের রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আবার যাও, যার অন্তরে ‘এক দীনার’ (তৎকালীন যুগে প্রচলিত এক স্বর্ণমুদ্রার) সমান ঈমান অবশিষ্ট পাবে, তোমরা তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তখন তারা আরও একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে আমাদের রব! অনুমতি প্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে, তোমরা তাকেও বের করে নিয়ে আস। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে যাররা (অণু বা অত্যন্ত ক্ষুদ্র) পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও তোমরা জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে আমাদের রব! যাদের কথা বলেছিলেন, তাদের কাউকেই রেখে আসিনি। সাহাবী আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, তোমরা যদি এই হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী বলে মনে না কর, তাহলে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটিও তিলাওয়াত করতে পারঃ “আল্লাহ কারো প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করেন না এবং, অণু পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুন করে করে দেন এবং তাঁর কাছ থেকে মহা-পুরস্কার দান করেন।” [সুরা নিসা; ৪০] এরপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন, ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল “আরহামুর রাহিমীন” পরম দয়াময় আল্লাহই বাকী রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে একু অঞ্জলি লোকদেরকে তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে, যারা কখনো কোন নেক আমল করেনি, এবং আগুনে জ্বলে সম্পূর্ণ অঙ্গার হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ মুখের ‘নাহরুল হায়াতে’ (জীবন নদীতে) ফেলা হবে। এর ফলে তারা এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অস্কুর স্রোতবাহিত পানির দ্বারা সজীব হয়ে ওঠে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়ালে কোন শস্য দানা অস্কুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থাকে সেগুলো হলদে ও সবুজ রুপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়ামুক্ত স্হানে থাকে, সেগুলো সাদা হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে পশু চড়িয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এরপর তারা নহর থেকে মুক্তার মত ঝকঝকে অবস্হায় উঠে আসবে এবং তাদের ঘাড়ে মোহরাঙ্কিত থাকবে, যা দেখে জান্নাতীরা তাদেরকে চিনতে পারবেন। এরা হলো ‘উতাকাউল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত লোকেরা। আল্লাহ তাআ’লা নেক আমল ছাড়াই তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এরপর আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ করে বলবেন, যাও, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখছ সবকিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এতই দিয়েছেন যা সৃষ্ট-জগতের কাউকে দেননি। আল্লাহ বলবেন, তোমাদের জন্য আমার কাছে এর চেয়েও উত্তম বস্তু আছে। তারা বলবে, কি সে উত্তম বস্তু? আল্লাহ বলবেনঃ সে হল ‘আমার সন্তুষ্টি’। আজকের পর থেকে আমি আর কখনো তোমাদের উপর অন্তুষ্ট হবো না।
[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমঃ ৩৫১]

>>>Courtesy Page:- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও<<<

Share This Post

বিয়ের আগে প্রেম করা আর বিয়ের পর সংসার করা-দুটো ভিন্ন জিনিস

 বিয়ের আগে প্রেম করা আর বিয়ের পর সংসার করা-দুটো ভিন্ন জিনিস।

**************************************************************************

বিবাহপূর্ব প্রেম একটা ফ্যান্টাসি। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই নিজেকে সর্বোচ্চ উৎকৃষ্টরূপে উপস্থাপন করতে চায়। কদিন পরপর দেখা বা সপ্তাহে একদিন ডেটিং- ছেলেটি নিজের সামর্থ্যের সেরা উপস্থাপনটিই নিয়ে আসতে চায়, মেয়েটিও চায় তার প্রেমিক তাকে পরম সুন্দরী হিসেবেই দেখুক। তাই প্রেমের দিনগুলোতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নেতিবাচক ব্যাপারগুলো পরস্পরের কাছে প্রকাশ পায়না, দুজনেই তা যথাসম্ভব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

সংসার জীবন আলাদা ব্যাপার। এখানে নিত্যদিনের অভ্যাস প্রকাশ পাবে, কৃত্রিম ভালোমানুষির পর্দা উন্মোচিত হবে। চব্বিশঘণ্টা একটা মানুষের সাথে থাকলে তাকে বোঝা যায়, চেনা যায়, সত্যিকারভাবেই চেনা যায়। প্রেমের সময়ের মত ক্ষণিকের দেখা আর ভাববিনিময়ের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত আকর্ষণের চাপল্যভরা মোহনীয় সময়টা তাই সংসারজীবনে থাকেনা। সংসারজীবনে আবেগের চেয়ে বাস্তবতার ভূমিকা বেশি। ভার্সিটির গেট থেকে বেরোলে যে মুখটি দেখার জন্য আকুলতা থাকত, জীবনযুদ্ধের সংগ্রামরত দিনরাতের সংস্পর্শ সেই আকর্ষণটা আর রাখেনা। নির্জনে বসে প্রেয়সীর হাত ধরে যে রোমান্টিসজমে বুঁদ হওয়া সহজ, বিবাহিতজীবনে সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে কানের কাছে বাচ্চা ছেলের ঘ্যানঘ্যান আর বউয়ের অভিযোগের ফিরিস্তি শোনার মুহূর্তে সেই রোমান্টিসিজম থাকেনা। মনে ঘোরে একই কথা-“তোমাকে তো বিয়ের আগে এমন মনে হয়নি!”

প্রেমের সম্পর্কগুলো ক্ষণিকের ভালোলাগা থেকে গড়ে ওঠা। ওটা আর একটা মানুষের সাথে জীবন কাটিয়ে দেওয়া এক ব্যাপার না। এজন্য যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ধৈর্য আর ত্যাগের দরকার সেটা তথাকথিত প্রেমের সম্পর্কে কখনোই গড়ে ওঠা সম্ভব না। দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো একে অন্যের সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে সমাধান হয়ে যায়না। মনোমালিন্যের সময়টাতে পার্কে বসে ফুল বিনিময়ের স্মৃতিচারণে খেদ দূর হয়না, আরো বাড়ে।

সেক্যুলাররা প্রায়ই অ্যারেনজড ম্যারেজের দুর্নাম করতে গিয়ে বলে-‘ছোটবেলা থেকে আমরা শিখি অচেনা মানুষের দেওয়া খাবার না খেতে, অথচ অ্যারেনজড ম্যারেজের মাধ্যমে একজন অচেনা মানুষের সাথে বিছানায় শুতে বাধ্য করা হয়!’ অচেনা মানুষই বটে। যেমন জাফর ইকবাল বলেছিল বিয়ের আগে অন্তত তিনবছর প্রেম করে পরস্পরকে ‘চিনে’ নেওয়া দরকার। মারহাবা। এই ‘চিনে নেওয়া’ কতটা সম্ভব সেটা প্রেম করে বিয়ে করা দম্পতিদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সাময়িক ভালোলাগা আর মা-বাবার পকেট ফাঁকা করা ফূর্তির দিনের উপলক্ষই যদি ‘চিনে নেওয়া’ হত তাহলে আর বিয়ের পর প্রিয় মানুষটির ‘অন্যরূপ’ দেখে কেউ হতাশ হত না।

বস্তুত বিয়ের আগের প্রেমের সময়টাতে শয়তান একে অন্যকে বিউটিফাই করে, ফলে হারাম সম্পর্কের মোহ যেমন বাড়ে তেমনি পরস্পরের আসল রূপ ঢাকা পড়ে থাকে। বিয়ের পর শয়তান সরে যাওয়ায় তা সামনে এসে পড়ে। তখন এতদিন ধরে ‘চেনা’ মানুষটিকেই ‘অচেনা’ লাগে।

আল্লাহ্‌র ইচ্ছার ওপরে যে আপনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়, সে আপনাকে সুখী করতে পারবেনা, কোনদিন না। আর আল্লাহ্‌র ওপর ভরসা রেখে, তাঁরই নির্দেশিত পন্থা মোতাবেক জীবনসঙ্গীনীর দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিয়ে যে ছেলে একটা ‘অচেনা’ মেয়ের হাত ধরতে পারে, আল্লাহ্‌ তার জীবনে একটা ম্যাজিক দিয়ে দেন। সেই ম্যাজিকের বলে নিতান্ত সাধারণ চেহারার মেয়েটি তার চোখে রাজকন্যার চেয়ে লাবণ্যময়ী হয়ে ওঠে, সন্তানেরা চক্ষুর শীতলতা হয়ে ওঠে। দ্বীনের পথে চলা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে বিলাস থাকেনা, বাহুল্য থাকেনা, কৃত্রিমতা থাকেনা; যেটা থাকে তার নাম শান্তি।

শান্তি সবাই খোঁজে। বেশিরভাগই খোঁজে শান্তির যিনি মালিক, তাঁকে অসন্তুষ্ট করে। আফসোসের বিষয়ই বটে।

— জুবায়ের হোসেন

বিবাহের পর স্ত্রী পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু স্বামী তাতে রাযী নয়। এক্ষণে উক্ত স্ত্রীর জন্য করণীয় কি?

 উত্তর : বিবাহের পর স্বামীই তার স্ত্রীর মূল অভিভাবক। অতএব স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করা জায়েয হবে না। তিনি অন্যায়ভাবে এরূপ করে থাকলে স্ত্রী নিজে বা অন্য কারু মাধ্যমে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু কোনক্রমেই তার অবাধ্য হবে না। রাসূল (ছাঃ) জনৈকা মহিলাকে বলেন, স্বামী তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম (আহমাদ হা/১৯০২৫, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২)। অন্য হাদীছে এসেছে, স্বামীর অবাধ্যতার কারণে মহিলারা বেশী বেশী জাহান্নামে যাবে (বুখারী হা/১০৫২; মিশকাত হা/১৪৮২)। তবে স্ত্রী দ্বীনী ইলম শিখতে চাইলে স্বামীর উচিত তাতে সহযোগিতা করা। এর দ্বারা স্বামী নিজেও নেকী পাবেন।

নিজের জীবনে ইসলাম বনাম অন্যের জীবনে ইসলাম

 নিজের জীবনে ইসলাম বনাম অন্যের জীবনে ইসলাম

_________________________________
ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উগ্রতার পিছনে অন্যতম যে বিষয়টি দেখা যায় তা হলো, নিজের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেযে অন্যের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা। এটি আবেগপ্রসূত বিভ্রান্তিগুলির অন্যতম।

দ্বীন প্রতিষ্ঠার দুটি পর্যায় রয়েছে:

(১) নিজের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা করা এবং
(২) অন্যের জীবনে তা প্রতিষ্ঠা করা। মুমিনের মূল দায়িত্ব নিজের জীবনে ও নিজের দায়িত্বাধীনদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামে নিজের জীবনে পালনীয় ইবাদতগুলিকে আরকানে ইসলাম, ফরয আইন বা সুন্নাত আইন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পক্ষান্তরে দাওয়াত, আদেশ, নিষেধ, জিহাদ ইত্যাদি ‘‘অন্যের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার’’ দায়িত্ব বিষয়ক ইবাদতগুলিকে মূলত ‘ফরয কিফায়া’ বা সামষ্টিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং সুযোগ ও সাধ্যের আলোকে কম বেশি পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সর্বোপরি এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির দায়িত্ব দাওয়াত দেওয়া। কেউ বা সকলে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে বা অন্যায় পরিত্যাগ না করলে মুমিনের কোনোরূপ দায়বদ্ধতা থাকে না। কিন্তু উগ্রতায় লিপ্ত মানুষদেরকে আমরা এর উল্টো পথে চলতে দেখি। তারা মূলত ‘‘অন্যের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠাকে’’ ফরয আইন ও বড় ফরয এবং নিজের জীবনে দীন পালনকে ‘‘ছোট ফরয’’ বা গুরুত্বহীন বলে মনে করেন। তারা অন্যের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তিগতভাবে হারাম-মাকরূহ কর্মে লিপ্ত হচ্ছেন এবং এরূপ হারাম-মাকরূহ কর্মে লিপ্ত হওয়াকে নানাভাবে বৈধ, বরং জরুরী বা ফরয বলে দাবি করছেন।

তাদের মনের একই চিন্তা, সমাজে বা দুনিয়ায় অমুক অন্যায় হচ্ছে, আল্লাহর আইনের বিরোধিতা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করা হচ্ছে, কিভাবে নীরব থাকবে মুমিন। কাজেই যেভাবে পার ঝাপিয়ে পড়ে সব অন্যায় মিটিয়ে দিয়ে বিশ্বের সর্বত্র সকলের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কর। বস্ত্তত এরূপ চিন্তা ভাল চিন্তার সাথে খারাপ চিন্তার সমন্বয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ মুমিনের মনে অবশ্যই থাকবে এবং মুমিন সাধ্যমত ইসলাম নির্দেশিত পথে তা প্রতিকারের চেষ্টা করবে বা দাওয়াত দিবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ মুমিনকে তাঁর নিজের ও নিজের দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাস করবেন, দুনিয়ার অন্য মানুষদের পাচাচার সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না। সাধ্যমত দাওয়াতের পরেও যদি মানুষ তা গ্রহণ না করে সে জন্য মুমিনের কোনোরূপ অপরাধ থাকে না।

মহান আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ
‘‘হে মুমিনগণ, তোমাদের উপরে শুধু তোমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।’’[1]

বস্ত্তত সমাজ, রাষ্ট্রে ও বিশ্বে অন্যায়, পাপ ও অপরাধ থাকবেই, কখনো বেশি এবং কখনো কম। মুমিনের দায়িত্ব দাওয়াত দেওয়া, মুমিনের দায়িত্ব হিদায়াত করে ফেলা বা ভাল করে ফেলা নয়।

মহান আল্লাহ তার মহান রাসূল (সাঃ)-কে বলেন:

إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ
‘‘তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন।’’[2]

আল্লাহ আরো বলেন:

وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
‘‘আর তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাসী হবার নয়।’’[3]

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:

وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
‘‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনত; তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে?’’[4]

অনেক সময় আবেগী মুমিন সমাজের পাপাচারে বেদনাগ্রস্ত হয়ে দ্রুত সবকিছু ঠিক করে ফেলতে আগ্রহী হন। তিনি কুরআনসুন্নাহর নির্দেশ ও মানবজাতির পরিচালনায় আল্লাহর সুন্নাতের কথা ভুলে যান। দ্রুত ফলাফল লাভের জন্য ব্যস্ত হয়ে যান। তিনি ভাবেন: ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে বা ইসলামের বিজয় আনতে হবে। অমুক বা তমুক পদ্ধতিতে তা আসবে না, বরং আমাদের এ পদ্ধতিতেই এ বিজয় দ্রুত হাতের মুঠোয় এসে যাবে। অমুক পদ্ধতিতে শত বৎসর বা হাজার বৎসর কাজ করলেও ইসলামের বিজয় আসবে না, কিন্তু আমাদের পদ্ধতিতে কাজ করলে অল্প সময়েই তা এসে যাবে। মনে হয় কে কত তাড়াতাড়ি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারল এর উপরেই আল্লাহ নবী-রাসূল ও মুসলমানদের হিসাব নিবেন!!

ফলাফল লাভের উন্মাদনা আবেগী মুমিনকে বিপথগামী করে। মুমিন চায় যে, সমাজ থেকে ইসলাম বিরোধী ও মানবতা বিরোধী সকল অন্যায় ও পাপ দূরীভুত হোক। কোনো মুমিনের মনে হতে পারে যে, এত ওয়ায, বক্তৃতা, বইপত্র, আদেশ নিষেধ ইত্যাদিতে কিছুই হলো না, কাজেই মেরেধরে জোরকরে সব অন্যায় দূর করে ফেলতে হবে। তখন তিনি দাওয়াতের শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি ও শরীয়ত নিষিদ্ধ পদ্ধতির মধ্যে বাছবিচার না করে ফলাফলের উন্মাদনায় শরীয়ত নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করতে চেষ্টা করেন।

এ জাতীয় চিন্তভাবনা সবই কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার সাথে সাংঘষিক। মুমিনের দায়িত্ব নিজের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা ও দীনের দাওয়াত। দাওয়াতের দ্রুত ফলাফলের চিন্তা তো দূরের কথা, কোনো ফলাফলের চিন্তাই মুমিনের দায়িত্ব নয়। অগণিত নবী-রাসূল আজীবন দাওয়াত দিয়েছেন, কিন্তু অতি অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ তাদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। এতে তাঁদের ‘‘দীন প্রতিষ্ঠার’’ বা ‘‘দাওয়াতের’’ দায়িত্ব পালনের কোনো ঘাটতি হয় নি।

পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব যে, ‘‘দ্রুত সকল অন্যায় মিটিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার’’ জন্য উদগ্রীব মানুষেরা কখনই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি, বরং সুন্নাত পদ্ধতিতে ন্যায়ের আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ বা দাওয়াত ও দীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সমাজ সংস্কারের কর্ম সম্পাদিত হয়েছে। কাজেই মুমিনের দায়িত্ব হলো নিজের জীবন দীন পালনের পাশাপাশি কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় দীনের দাওয়াত দেওয়া।

দাওয়াতের দায়িত্ব দুভাবে আঞ্জাম দেওয়া হয়:
(১) অরাষ্ট্রীয়, অর্থাৎ ব্যক্তিগত, দলগত বা গোষ্ঠীগতভাবে এবং
(২) রাষ্ট্রীয়ভাবে। অরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার একটিমাত্রই মাধ্যম, তা হলো ‘দাওয়াত’ বা সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দাওয়াতের পাশাপাশি আরো দুটি মাধ্যম রয়েছে:
(ক) আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও
(খ) প্রয়োজনে শত্রুরাষ্ট্রের কবল থেকে দীন, রাষ্ট্র, জনগণ, দুর্বল মুসলিম বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিহাদ বা কিতাল অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ করা। সকল পর্যায়ে ও ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশ হলো সহিংসতা ও সীমালঙ্ঘন বর্জন করা। শুধু সহিংসতা বর্জনই নয়, দাওয়াত, প্রচার, সৎকাজে আদেশ, অন্যায় থেকে নিষেধ ইত্যাদি ‘দ্বীন প্রতিষ্ঠার’ সকল কর্মে ‘অহিংসতা’ দ্বারা ‘সহিংসতা’-র প্রতিরোধ করতে এবং সহিংসতার প্রতিবাদে ‘উত্তম’ আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেন:

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
‘‘কথায় কে উত্তম ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা, যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি
আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ভাল এবং মন্দ সমান হতে পারে না। (মন্দ) প্রতিহত কর উৎকৃষ্টতর (আচরণ) দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।’’[5]

অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে:

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
‘‘মন্দের মুকাবিলা করুন যা উৎকৃষ্টতর তা দিয়ে, তারা যা বলে আমি সে সম্পর্কে বিশেষ অবহিত।’’[6]

বর্তমান বিশ্বে ইসলামী দা‘ওয়াত বা ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠা অনেক সময় ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতিরোধ, অত্যাচার বা সহিংস আচরণের সম্মুখীন হয়। এতে দা‘ওয়াতে লিপ্ত মুসলিমের মধ্যে প্রতিক্রিয়ামূলক ‘সহিংসতা’র আবেগ তৈরি হয়। এর সাথে ‘দ্রুত ফললাভে’ চিন্তা ‘দাওয়াত’ বা ‘দ্বীন প্রতিষ্ঠা’র কর্মে রত ব্যক্তিকে ইসলাম নির্দেশিত এ ‘অহিংস’ পদ্ধতি পরিত্যাগ করে আবেগ নির্দেশিত ‘সহিংস’ পথে যাওয়ার প্ররোচনা দেয়। তিনি ভাবতে থাকেন ‘সহিংসতা’ বা কল্পিত ‘জিহাদ’ই দ্রুত ফললাভের বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ, যদিও প্রকৃত সত্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলামের ইতিহাসে ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর সহিংসতা, তথাকথিত ‘জিহাদ’ ও ‘শাহাদতের’ অনেক ঘটনা আছে। তারা সকলেই ‘দ্রুত ফললাভের’ আবেগ নিয়ে বৈধ বা কল্পিত ‘জিহাদে’ ঝাপিয়ে পড়ে ‘শহীদ’ হয়েছেন, কিন্তু কেউই দ্রুত বিজয় তো দূরের কথা কোনো স্থায়ী বিজয়ই অর্জন করতে পারেন নি। বস্ত্তত ইসলামের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ‘অহিংস’ ও ‘মন্দের মুকাবিলায় উৎকৃষ্টতর’ আচরণই ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের বিজয়ের একমাত্র পথ। এ পদ্ধতিতেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরবের কঠোর হৃদয় যাযাবরদের হৃদয় জয় করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। পরবর্তী সকল যুগে এ পদ্ধতির অনুসরণকারী আলিম ও ‘দাঈ’গণই ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন।

[1] সূরা ৬: মায়িদা, আয়াত ১০৫। [2] সূরা ২৮: কাসাস: ৫৬ আয়াত। [3] সূরা ১২: ইউসূস: ১০৩ আয়াত। [4] সূরা ১০: ইউনুস: ৯৯ আয়াত। [5] সূরা হা মীম সাজদা (ফুসসিলাত): ৩৩-৩৫ আয়াত। [6] সূরা মুমিনূন, ৯৬ আয়াত।

সুত্রঃ
গ্রন্থের নামঃ ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ
বিভাগের নামঃ ৩. বিভ্রান্তির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা
লেখক/সঙ্কলক/অনুবাদকের নামঃ- ডঃ_আব্দুল্লাহ_জাহাঙ্গীর

নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী

 ***নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী***

************************************
একটা হিসাব করতে বসেছিলাম কিছুদিন আগে।
এই দেশে মোট জেনুইন (আসল প্রোফাইল ওয়ালা) নাস্তিকের সংখ্যা কতো?
এই হিসাবটা করতে গিয়ে দেখলাম, এই সংখ্যাটাকে আমি টেনেটুনেও ৫০ পার করাতে পারিনি।
সত্যি বলতে, অনলাইনে আমরা যেসকল নাস্তিক (মূলত ইসলাম বিদ্বেষী) দেখি, যারা দিব্যি লেখালেখি করে, এদের সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা।
আমি অনেক খুঁজেও ৫০ টি আসল প্রোফাইলের নাস্তিক বের করতে পারিনি।
আমি এখানে নাস্তিক বলতে যাদের বুঝাচ্ছি, তারা এমন – যারা নাস্তিকতা চর্চা বলতে কেবল ইসলাম বিদ্বেষীতাকেই বুঝে।
এরা আসলে নাস্তিক না। এরা মূলত ইসলাম বিদ্বেষী।। এরা যদি নাস্তিকই হত তাহলে এরা সব ধর্মের বিরুদ্ধেই লিখত।। শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে লিখত না। কারণ নাস্তিকরা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। তারা স্রস্টায় বিশ্বাস করে না। এরা কেন হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে না । কেন শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে। কারণ এদের ইসলামের বিরুদ্ধে চুলকানি আছে। এরা মূলত ইসলাম বিদ্বেষী।
এখানে তাদেরকেই বুঝাচ্ছি, যাদের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয় এসব ছাঁইপাশ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। যারা এসব করে পেট চালায়, সংসার চালায়। কেউ কেউ ইউরোপ আমেরিকার স্যাটেল হবার সৌভাগ্য অর্জন করে।
এরকম কিছু প্রোফাইল খুঁজছিলাম। শাহবাগের কিছুদের পেয়েছি এই তালিকায়। এদের কয়েকজন জার্মান, কানাডা, ইউ এস এ তে আছে এখন।
যাহোক, যা বলছিলাম, এরা সংখ্যায় একেবারে নগন্য। কিন্তু, এদের একেকজনের রয়েছে ডজন ডজন ফেইক প্রোফাইল।
তাছাড়া, সংখ্যায় অতি নগন্য এই শ্রেণীটাকে সাপোর্ট করার জন্য তো বিশেষ ধর্মের (এখানে নির্দিষ্ট কোন ধর্মকে বোঝানো হচ্ছে না) কিছু মানুষ নিবেদিত আছেনই। তাই আমাদের মনে হয় এরা আসলেই সংখ্যায় অনেক। কিন্তু বাস্তবে তা নয়।

তাহলে এরা এতো প্রচার পায় কীভাবে?
জ্বি, প্রচারটা করি আসলে আমরাই।
ওরা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিয়ে কিছু একটা লিখলেই আমাদের ভাইয়েরা সেখানে গিয়ে হামলে পড়েন। ইচ্ছেমতো গালি দেন, হুমকি ধমকি দেন।
আর ওরা কী করে জানেন? ওরা আড়ালে বসে মিটিমিটি হাসে আর মজা নেয়।
কারণ ওরা এটাই চায়। ওরা চায় আপনারা সেখানে যান। ইচ্ছেমতো ওদের গালিগালাজ করুন। কমেন্ট করুন। এতে কিন্তু আখেরে লাভটা ওদের।
আপনি বুঝতেই পারছেন না তার আইডিতে কমেন্ট করে (হোক গালি গালাজ, হুমকি, ধমকি কিংবা নসীহত) আপনি আসলে তাকে পপুলার বানিয়ে দিচ্ছেন। আপনি তার আইডিতে একটা কমেন্ট করা মাত্র সেটা আপনার মিউচুয়ালদের ওয়ালে শো করবে। যদি ২০ জন সেটা দেখে, তাদের মধ্যে এটলিস্ট ১০ জন তার আইডি ভিজিট করবে। তার ছাঁইপাশ লেখাগুলো পড়বে। মাথার টেম্পেরেচার লস হবে। ফলে সেও দু চারটা গালি বা হুমকি ধমকি দিয়ে কমেন্ট করবে। ব্যস, ওইদিকে তরতর করে অই নাস্তিকের প্রোফাইলের রেটিং, ভিউয়ার বেড়ে যাবে। লাভটা কার এসব করে? বুঝেন একটু।
ওদের কিন্তু মাথায় আপনারাই তুলেন। এইজন্য ওরা আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়।
কিছু নাস্তিকের ওয়ালে গিয়ে দেখলাম, ওদের প্রতিটা লেখায় সব মুসলিমদের গালাগালি, হুমকি, ধমকি ইত্যাদি।
এতে করে ওরা কী থেমে যাচ্ছে? নাহ। ওরা আরো উৎসাহ পাচ্ছে। ওরা কিন্তু আপনার এই রিএ্যাকশানটাই চায়। এই শ্রেণীর সব- সবাই এটাই চায়।
ওদের লেখা পড়ুন। রিএ্যাকশান দেখান। Angry ইমো দিন। গালাগাল করে কমেন্ট করুন আর ওদের ভিডিও দেখে তাতে ‘ভিউ’ বাড়ান। আর কিছুনা।
সম্প্রতি আরেক নাস্তিক ও সমকামী গজে উঠলো দেখলাম। খুব সচেতনভাবেই সমকামী বলছি কারণ সে নিজেকে সমকামী দাবী করেছে।
পেইজ খুলে প্রথমে কিছু বিতর্কিত কার্টুন এঁকে সেগুলো টাকা দিয়ে ফেইসবুককে দিয়ে স্পন্সর করিয়েছে।
এরপর তার আর কিছুই করা লাগে নি। আমাদের ভাইয়েরা গিয়ে তার বাকি কার্টুনগুলোতে গালিগালাজ, হুমকি,ধামকি দিয়ে, তার কার্টুন গালি দিয়ে শেয়ার করে তাকে আরো ফেমাস বানিয়ে দিলো। সে এখন এসব আরো বাড়িয়ে দিলো। নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে ইচ্ছেমতো সে কার্টুন বানাচ্ছে। তাহলে তাকে পপুলার করে দিলো কে?
কিছু মুসলিমরাই। যারা নেকীর জন্য গালি দিয়ে ধর্মরক্ষা করতে গিয়ে আরো বারোটা বাজাচ্ছেন।
ভাই আমার, একটু বুঝুন। এসব ফেইম সীকার গুলোকে আজকেই আনফলো, আনলাইক করুন। ইগনোর করুন। দেখবেন, আগামীকালকেই এরা চুপসে গেছে।

যারা যারা ইতোমধ্যে এই ধরনের পেইজে লাইক দিয়েছেন, দয়া করে আনলাইক করুন।
যারা কমেন্ট, শেয়ার করছেন, সেগুলো বন্ধ করুন।

 

>>>>>আসাদ রনি<<<<<

আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনা

 শয়তান জানে যে, আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনা। তাই এই দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর জন্য ওরা কোটি কোটি ডলারের বিশাল মুভি, মিউজিক, পর্ণ বাণিজ্য সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। সকালে ঘুমের থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমরা যেন প্রতিক্ষণে ফাহশা’র (যে কোনো লজ্জাহীন, অশ্লীল এবং অনৈতিক কাজ) কোনো না কোনো হাতছানি দেখতে পাই, সেজন্য ওরা খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, রাস্তায় বিলবোর্ড —সব দখল করে রেখেছে। বিংশ শতাব্দীতে যোগাযোগের যত আধুনিক প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, তার বেশিরভাগই আজকাল ওরা ব্যবহার করছে ফাহশা’র মধ্যে আমাদের বুঁদ করে রাখার জন্য।

আল্লাহ আমাদেরকে একটা চমৎকার ফর্মুলা শিখিয়ে দিয়েছেন: কীভাবে শয়তানকে প্রতিহত করতে হবে। যখনি অনুভব করা শুরু করবেন যে, আপনি যেই কাজটা করছেন, তা করা ঠিক হচ্ছে না, সাথে সাথে আল্লাহর কথা মনে করুন। মনে মনে বুঝে বলুন, “আউ’যু বিল্লাহি মিনাশ শাইতা’নির রাজিম” – “আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে”। দ্রুত কোনো কু’রআনের আয়াত মনে করার চেষ্টা করুন, যেটা আপনার পরিস্থিতির সাথে মিলে যায়। যেমন: আপনি কারও প্রতি দুর্বলতা অনুভব করছেন, এমন দিকে তাকাচ্ছেন যেদিকে আপনার তাকানোর কথা না, সাথে সাথে নিজেকে মনে করিয়ে দিন—

“বিশ্বাসী পুরুষদেরকে বলো যেন, তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গকে সাবধানে রক্ষা করে, এটা তাদের জন্যই বেশি কল্যাণকর। আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন তোমরা কী করো। বিশ্বাসী নারীদেরকে বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গকে সাবধানে রক্ষা করে …” [সূরা নুরঃ ৩০]

তবে দরকারের সময় জরুরি কোনো আয়াত মনে করাটা খুব কঠিন, যদি না আমরা নিয়মিত কিছু জরুরি আয়াত ঝালিয়ে না নেই। এজন্য নিয়মিত কু’রআন পড়াটা জরুরি। আর সবচেয়ে বেশি দরকার কু’রআন বুঝে পড়া। বুঝে কুর’আন না পড়লে আমরা কোনোদিন জানবো না: আল্লাহ আমাদেরকে কত কথা বলেছেন, কত পদ্ধতি শিখিয়েছেন, কত ব্যাপারে সাবধান করেছেন

– কুরআনের কথা

ভেবে দেখুন তো, এমনটা হয় কিনা

 ভেবে দেখুন তো, এমনটা হয় কিনা। বাসায় পরিচিত কোন দম্পতি বেড়াতে এসেছে, সাথে তাদের ৩/৪ বছরের সন্তান। কিছু পরে আপনারা হয়তো গল্প করছেন। সেই বাচ্চাও পাশের রুমেই হয়তো আছে তার মায়ের সাথে। হঠাৎ আকাশ বাতাশ কাঁপিয়ে সেই মাসুম বাচ্চা চিৎকার করে তার মাকে বলে উঠলো- “ওই কুত্তার বাচ্চা”। সাথে সাথে ঠাস করে শব্দ। নির্ঘাত মায়ের হাতের চড়- বেয়াদব, বান্দর বলে মারও গালাগালি। শুরু হলো কান্নার রোল। এদিকে ড্রইং রুমে চা খেতে খেতে আপনারাও ভদ্রলোকেরা সব শুনেও না শোনার ভান করে আছেন। ভাবখানা এমন, ছোট বাচ্চা তো, একটা গালি তো দিয়েছে, এমন কি আর!! খুব জোর সন্তানের বাবা জোর করে মুখে হাসি টেনে বলবেন- এই, কি হলো আবার তোমাদের?

.
মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, গালিটা এই ছোট্ট সন্তান শিখলো কিভাবে? এই বয়সে?

আসলে উত্তরটা আমরা জানি। বান্দর বলে গালিটা মাও তো দিয়েছে সাথে সাথে। স্কুলে ভর্তি না হয়ে থাকলে চান্স মোটামুটি ৯৯%, এই গালি সে শিখেছে নিজের পরিবার থেকেই। হয়তো বাবা-মার কোন একদিনের তুমুল ঝগড়া থেকেই। বা হয়তো বাচ্চাকে এভাবেই শাসন করে তারা। কে জানে!!
.
আবার বাবা-মার বাধ্য একদম বাধ্য শিশু সন্তান, এমন উলটো চিত্রও কিন্তু চোখে পড়ে। যেমনটা একজন বাবা-মা আশা করে, তাদের সন্তানটাও এমনই হোক। সুবহান’আল্লাহ!! বাবা-মায়ের কথা ছাড়া তাদের এক পাও নড়ে না। কিছু করতে গেলেই বাবা-মায়ের অনুমতি লাগবেই। তার মিষ্টি মুখের ভাষা, আচার-ব্যবহার, সবই বলে দেয়, এই সন্তানকে ছোট থেকেই গড়ে তোলা হয়েছে আসলে এইভাবেই। মূল কাজটা করেছে এখানেও তার পরিবার, সন্দেহ নেই।
.
এই বিষয়ে শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের কথাগুলো আমার খুবই অসাধারন লাগে, মাশা’আল্লাহ!! লাইনগুলো মাথায় খুব ভাল করে গেঁথে নেওয়া উচিত, সকল বাবা-মাদের বিশেষ করে-
.
“Children listen with their eyes. They don’t care what you say until they see what you do. Whatever you do is under the lights, will be noticed, learnt and emulated.”
.
অর্থাৎ, বাচ্চারা কিন্তু কানে নয়, চোখ দিয়ে শোনে। আমরা যাই করি তাদের সামনে, যাই বলি, ফটোকপির মতো সেটা তাদের মাথায় গেঁথে যায় আসলে, সেটাই তারা মনে রাখে, আস্তে আস্তে শিখে ফেলে। কাজেই নিজেরাই যদি আদর্শ মুসলিম বাবা-মা না হতে পারি, কমপক্ষে চেষ্টাটুকু না করি, কিভাবে আশা করি যে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্র, আদব কায়দা জানা বাধ্য সন্তানটার মতো আমাদের সন্তানও সেরকমই হবে? যে ছোট থাকতেই আস্তে আস্তে সলাত আদায় করবে, সিয়াম আদায় করবে, পর্দা করা শিখবে? যে ক্বুরআন শিখবে, সুন্নাহ বুঝবে, দ্বীন ইসলামের উপরে থাকবে। যে বেয়াড়া হবে না, উগ্র হবে না বরং বিনয়ী হবে?
.
আপনারাও তো মুসলিম। ঘরে সন্তান নামক অমূল্য আমানত দুনিয়ায় উপহার দিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনাকেও। মুমিন বান্দা-বান্দীর গুণগুলো আপনার মাঝে আপনার বাচ্চারা দেখে তো, ২৪ টা ঘন্টা? ভাবুন। শুধরানোর সময় এখনই!

 

>>>Courtesy:- Golam Muktadir<<<

তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।

 অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। (At-Taghaabun 64: 16)

আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবানঃ

শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না। (Muhammad 47: 38)

মানুষ সাধারণত কৃপণঃ

বলুনঃ যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভান্ডার তোমাদের হাতে থাকত, তবে ব্যয়িত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অবশ্যই তা ধরে রাখতে। মানুষ তো অতিশয় কৃপণ। (Al-Israa 17: 100)

হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (At-Tawba 9: 34)

মুমিনরাই ব্যয় করেঃ

যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে, নামায কায়েম করে; পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে, (Ash-Shura 42: 38)

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না। (Faatir 35: 29)

তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। (As-Sajda 32: 16)

যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। (Al-Hajj 22: 35)

আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না। (An-Nahl 16: 75)

সে সমস্ত লোক যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (Al-Anfaal 8: 3)

যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (Aali Imraan 3: 134)

তারা ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (Aali Imraan 3: 17)

যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে (Al-Baqara 2: 3)

ব্যয়ের পরিমাণঃ

বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন। (At-Talaaq : 7)

এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। (Al-Furqaan 25: 67)

তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। (Al-Israa 17: 29)

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (Al-Baqara 2: 219)

ব্যয়ের ধরণঃ

কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (Aali Imraan 3: 92)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত। (Al-Baqara 2: 267)

ব্যয়ের উত্তম সময়ঃ

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (Al-Munaafiqoon 63: 10)

আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা নামায কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ঐদিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচা কেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই। (Ibrahim 14: 31)

হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। (Al-Baqara 2: 254)

মুসলিমদের জন্য ব্যয়ঃ

আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (Al-Baqara 2: 195)

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (Al-Baqara 2: 177)

আরও যাদের জন্য ব্যয়ঃ

তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে। (Al-Baqara 2: 215)

আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। (Al-Israa 17: 26)

খয়রাত ঐ সকল গরীব লোকের জন্যে যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়। অজ্ঞ লোকেরা যাঞ্চা না করার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা যে অর্থ ব্যয় করবে, তা আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই পরিজ্ঞাত। (Al-Baqara 2: 273)

নারীদের ব্যাপারে…

পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (An-Nisaa 4: 34)

আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের উপর কর্তব্য। (Al-Baqara 2: 241)

আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে। অতঃপর যদি সে স্ত্রীরা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন। (Al-Baqara 2: 240)

স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। (Al-Baqara 2: 236)

এতীম সংক্রান্ত হুকুম…

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই । বস্তুতঃ অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের উপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞ। (Al-Baqara 2: 220)

যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। (An-Nisaa 4: 10)

আর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। এতীমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যারা স্বচ্ছল তারা অবশ্যই এতীমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যে অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ খেতে পারে। যখন তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যার্পণ কর, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য আল্লাহই হিসাব নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট। (An-Nisaa 4: 6)

যুদ্ধের প্রস্তুতিকালে ব্যয়ঃ

আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। (Al-Anfaal 8: 60)

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় মুনাফিকদের নিকট অপছন্দনীয়ঃ

তারাই বলেঃ আল্লাহর রাসূলের সাহচর্যে যারা আছে তাদের জন্যে ব্যয় করো না। পরিণামে তারা আপনা-আপনি সরে যাবে। ভূ ও নভোমন্ডলের ধন-ভান্ডার আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বোঝে না। (Al-Munaafiqoon 63: 7)

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ। (Yaseen 36: 47)

অপব্যয় হারামঃ

নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (Al-Israa 17: 27)

… … … এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। (Al-Israa 17: 26)

হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (Al-A’raaf 7: 31)

তিনিই উদ্যান সমূহ সৃষ্টি করেছে-তাও, যা মাচার উপর তুলে দেয়া হয়, এবং যা মাচার উপর তোলা হয় না এবং খর্জুর বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র যেসবের স্বাদবিশিষ্ট এবং যয়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছেন-একে অন্যের সাদৃশ্যশীল এবং সাদৃশ্যহীন। এগুলোর ফল খাও, যখন ফলন্ত হয় এবং হক দান কর কর্তনের সময়ে এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (Al-An’aam 6: 141)

দুনিয়ার জন্য ব্যয়ঃ

এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করা হয়, তার তুলনা হলো ঝড়ো হাওয়ার মতো, যাতে রয়েছে তুষারের শৈত্য, যা সে জাতির শস্যক্ষেত্রে গিয়ে লেগেছে যারা নিজের জন্য মন্দ করেছে। অতঃপর সেগুলোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল। (Aali Imraan 3: 117)

ব্যয় এর পূর্বে ঈমান শর্তঃ

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার। (Al-Hadid 57: 7)

আপনি বলুন, তোমরা ইচ্ছায় অর্থ ব্যয় কর বা অনিচ্ছায়, তোমাদের থেকে তা কখনো কবুল হবে না, তোমরা নাফরমানের দল। (At-Tawba 9: 53)

তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাসী, তারা নামাযে আসে অলসতার সাথে ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে। (At-Tawba 9: 54)

আর সে সমস্ত লোক যারা ব্যয় করে স্বীয় ধন-সম্পদ লোক-দেখানোর উদ্দেশে এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না, ঈমান আনে না কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং শয়তান যার সাথী হয় সে হল নিকৃষ্টতর সাথী। (An-Nisaa 4:38)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (Al-Baqara 2: 264)

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (Al-Baqara 2: 177)

যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে (Al-Baqara 2: 3)

ব্যয়ের প্রতিদানঃ

বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিযিক দাতা। (Saba 34: 39)

এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্টা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ। (Ar-Ra’d 13: 22)

আর তারা অল্প-বিস্তর যা কিছু ব্যয় করে, যত প্রান্তর তারা অতিক্রম করে, তা সবই তাদের নামে লেখা হয়, যেন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মসমূহের উত্তম বিনিময় প্রদান করেন। (At-Tawba 9: 121)

… … … বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। (Al-Anfaal 8: 60)

যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না। (Al-Baqara 2: 274)

তাদেরকে সৎপথে আনার দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা যে, অর্থ ব্যয় করবে, তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। (Al-Baqara 2: 272)

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন। (Al-Baqara 2: 265)

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (Al-Baqara 2: 261)

যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (Al-Baqara 2: 262)

ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেইঃ (At-Tawba 9: 91-92-93)

দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের কোন পথ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু।

আর না আছে তাদের উপর যারা এসেছে তোমার নিকট যেন তুমি তাদের বাহন দান কর এবং তুমি বলেছ, আমার কাছে এমন কোন বস্তু নেই যে, তার উপর তোমাদের সওয়ার করাব তখন তারা ফিরে গেছে অথচ তখন তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু বইতেছিল এ দুঃখে যে, তারা এমন কোন বস্তু পাচ্ছে না যা ব্যয় করবে।

অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুতঃ তারা জানতেও পারেনি।

ব্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহর জন্য পারস্পরিক প্রীতি সঞ্চার করা যায় নাঃ

আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু যমীনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী। (Al-Anfaal 8: 63)

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। (At-Taghaabun 64: 16)

তোমরা যে খয়রাত বা সদ্ব্যয় কর কিংবা কোন মানত কর, আল্লাহ নিশ্চয়ই সেসব কিছুই জানেন। অন্যায়কারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (Al-Baqara 2: 270)

 

>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<

যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত। (Al-Israa 17: 72) … বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। (Al-Hajj 22: 46)

 Posted 

যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত। (Al-Israa 17: 72) … বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। (Al-Hajj 22: 46) বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। (Al-Hajj 22: 46)

আপনি অন্ধদেরও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথ দেখাতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরই শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। কারন তারা মুসলমান। (Ar-Room 30: 53) আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ। (An-Naml 27: 81) যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান। (Az-Zumar 39:18)

বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। (An-Naml 27: 63)

এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (An-Nisaa 4: 82) বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, অতঃপর তোমরা একে অমান্য কর, তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? (Fussilat 41: 52)

বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং তোমরা একে অমান্য কর এবং বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী এর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করে; আর তোমরা অহংকার কর, তবে তোমাদের চেয়ে অবিবেচক আর কে হবে? নিশ্চয় আল্লাহ অবিবেচকদেরকে পথ দেখান না। (Al-Ahqaf 46: 10)

তারা কি লক্ষ্য করে না, তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পক্ষীকুলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী? রহমান আল্লাহ-ই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব-বিষয় দেখেন। (Al-Mulk 67: 19)

আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? (Al-Jaathiya 45: 23)

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। (An-Najm 53: 19)

বলুন, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তাদের বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? দেখাও আমাকে তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে? অথবা নভোমন্ডল সৃজনে তাদের কি কোন অংশ আছে? এর পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরস্পরাগত কোন জ্ঞান আমার কাছে উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (Al-Ahqaf 46: 4)

বলুন, তোমরা কি তোমাদের সে শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ, যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা ডাক? তারা পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও। না আসমান সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশ আছে, না আমি তাদেরকে কোন কিতাব দিয়েছি যে, তারা তার দলীলের উপর কায়েম রয়েছে, বরং জালেমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক ওয়াদা দিয়ে থাকে। (Faatir 35: 40)

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? (Al-Qasas 28: 71)

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ? (Al-Qasas 28: 72)

যারা অনুসন্ধানপ্রিয় অথবা যারা কৃতজ্ঞতাপ্রিয় তাদের জন্যে তিনি রাত্রি ও দিবস সৃষ্টি করেছেন পরিবর্তনশীলরূপে। (Al-Furqaan 25: 62) তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (Az-Zumar 39: 5)

তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতে অবিশ্বাসী। (Ar-Room 30: 8)

তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?  (Al-Waaqia 56: 68)

বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা? (Al-Mulk 67: 30)

তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে। তোমরা তাকে সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (Al-Waaqia 56: 58)

তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী ? আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটা করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট। (Al-Waaqia 56: 63)

তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা কি দেখে না? (As-Sajda 32: 27)

তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি ? (Al-Waaqia 56: 71)

আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (Al-Mujaadila 58: 7)

আপনি কি ভেবে দেখেননি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল অতঃপর তারা নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচার, সীমালংঘন এবং রসূলের অবাধ্যতার বিষয়েই কানাঘুষা করে। তারা যখন আপনার কাছে আসে, তখন আপনাকে এমন ভাষায় সালাম করে, যদ্দ্বারা আল্লাহ আপনাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলেঃ আমরা যা বলি, তজ্জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট। তারা তাতে প্রবেশ করবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই জায়গা। (Al-Mujaadila 58: 8)

হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। (Al-Hajj 22: 5)

(Ash-Shu’araa 26: 69 -88)::

আর তাদেরকে ইব্রাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন। যখন তাঁর পিতাকে এবং তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের এবাদত কর? তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সারাদিন এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি।

ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, তোমরা যখন আহবান কর, তখন তারা শোনে কি? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে?

তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করত।

ইব্রাহীম বললেন, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ। তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা ? বিশ্বপালনকর্তা ব্যতীত তারা সবাই আমার শত্রু। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন, যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন, যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন।

আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিনে আমার ক্রটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন। হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর। এবং আমাকে নেয়ামত উদ্যানের অধিকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। এবং আমার পিতাকে ক্ষমা কর। সে তো পথভ্রষ্টদের অন্যতম। এবং পূনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না, যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না; (Ash-Shu’araa 26: 69 -88)

রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে; এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছথেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ; বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা। এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। এবং যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না। এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দোয়া ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা করা হবে। তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কত উত্তম। বলুন, আমার পালনকর্তা পরওয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলেছ। অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি। (Al-Furqaan 25: 63-77)

তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই। (Al-An’aam 6: 104) যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। আপনার উপর নয় তাদের দায়-দায়িত্ব। (Ash-Shura 42: 6)

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না। (Al-Baqara 2: 171)

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (Al-Baqara 2: 257)

Abu Muaz Suhail Bin Sultan

 

>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<

Translate