Friday, April 22, 2022

পহেলা বৈশাখ পালনের বিধান এবং এ উপলক্ষে সরকারী নির্দেশে আমাদের করণীয়

 প্রশ্ন: ‘পহেলা বৈশাখ’ উপলক্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়া যাবে কি? বর্তমান সরকার এ উৎসব উপলক্ষে ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষকদেরকে স্কুল-কলেজে উপস্থিত থাকা ও তা পালন করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর:
ইসলামে মুসলিমদের জন্য দুটি জাতীয় উৎসবের দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি হল, ঈদুল আজহা অপরটি হল, ঈদুল ফিতর। এ দুটি ছাড়া মুসলিমদের জন্য ৩য় কোন আনন্দ-উৎসব জাতীয়ভাবে উদযাপন করার সুযোগ নেই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনা বাসী খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কী?

তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলি যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন,
إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
“আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একটি হল, ঈদুল আজহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” [সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানি]
উপরোক্ত হাদিস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামি শরিয়তে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে জাতীয়ভাবে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালনের সুযোগ নেই। অথচ দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ-উৎসব জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন: ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসের সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day) ইত্যাদি অগণিত উৎসব আমদের মুসলিমগণ অবলীলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংস্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলে গেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আবু দাউদ হাদিস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী]
সুতরাং আমাদের সমাজে ইদানীং পহেলা বৈশাখ পালনের যে মহা আয়োজন দেখা যাচ্ছে এর সাথে মুসলিমদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং এ সব অনুষ্ঠান উপলক্ষে যা কিছু দেখা যাচ্ছে সেগুলো অধিকাংশ হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ।

তাই এ উপলক্ষে কোন ধরণের অনুষ্ঠান করা, শুভেচ্ছা বিনিময় করা, কথিত প্রভাত ফেরী ও মঙ্গল শোভা যাত্রায় অংশ গ্রহণ করা, পণ্যটা-ইলিশ খাওয়া এ সব জাহেলিয়াত পূর্ণ কাজ। এগুলোতে কোন মুসলিম সন্তানের অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়।

সরকার যদি অন্যায় ভাবে মুসলিমদের উপর কোন অনৈসলামিক অনুষ্ঠান চাপিয়ে দেয় তাহলে তা মান্য করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।” [মুসনাদ আহমদ-সহীহ] বরং আইন সঙ্গত পন্থায় তার প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু যদি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা না থাকে বা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ না করলে জান-মালের ক্ষতির আশংকা থাকে তাহলে ঘৃণা সহকারে তাতে অংশ গ্রহণ করা যাবে। এটুকু হল ঈমানের সর্ব নিম্ন আলামত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদিসে বলেছেন,
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»
“তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তা তার হাত দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি হাত দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়, আর এটি হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” [সহিহ মুসলিম, হা/৪৯]
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিজাতীয় সংস্কৃতি ও অন্ধ অনুকরণ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?

 প্রশ্ন: সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?

উত্তর:
স্ত্রী সহবাসের সময় আজান শুনলে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করবে। তবে এ সময় মুখে উচ্চারণ করে আজানের জবাব দেয়া সমীচীন নয়।
ইমাম নওবি রহ. বলেন,
ويكره للقاعد على قضاء الحاجة أن يذكر الله تعالى بشيء من الاذكار فلا يسبح ولا يهلل ولا يرد السلام ولا يشمت العاطس ولا يحمد الله تعالى اذا عطس ولا يقول مثل ما يقول المؤذن. قالوا وكذلك لا يأتي بشيء من هذه الأذكار في حال الجماع، وإذا عطس في هذه الاحوال يحمد الله تعالى في نفسه ولا يحرك به لسانه. وهذا الذي ذكرناه من كراهة الذكر في حال البول والجماع هو كراهة تنزيه لا تحريم فلا إثم على فاعله. انتهى.
“প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বসা অবস্থায় সময় কোনও প্রকার আল্লাহর জিকর-আজকার করা মাকরুহ (অ পছন্দনীয়)। সুতরাং এ সময় মুখে উচ্চারণ করে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (ইত্যাদি জিকির-আজকার) পাঠ করা, সালামের জবাব দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া, হাঁচি দিলে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করা এবং মুয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেয়া যাবে না। এ অবস্থায় হাঁচি দিলে মনে মনে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। জিহ্বা নাড়িয়ে উচ্চারণ করবে না।
উল্লেখিত বিষয়গুলো পেশাব-পায়খানা এবং স্ত্রী সহবাস রত অবস্থায় করা মাকরুহ তানযিহি; তাহরিমি নয়। সুতরাং কেউ তা করলেও গুনাহ হবে না।” (শরহে মুসলিম)
তবে রমজান মাসে ফজরের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করার পর ফজরের আজান শুনার সাথে সাথে সহবাস থেকে বিরত হওয়া আবশ্যক। এর পরে সহবাস অব্যাহত রাখা জায়েজ নেই। অন্যথায় উক্ত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং এ কারণে তওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি কাফফারাও দিতে হবে।
তবে নফল রোজার ক্ষেত্রে স্ত্রী সহবাস বন্ধ করা আবশ্যক নয়। এ ক্ষেত্রে তা অব্যাহত রাখলে উক্ত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে সম্ভব হলে তা পরবর্তীতে কাজা করে নেয়া উত্তম। এতে কোনও কাফফারা নেই।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

অমুসলিমদেরকে ইফতার বা সাধারণ খাবার খাওয়ানো যাবে কি

 প্রশ্ন : অমুসলিমদেরকে ইফতার বা সাধারণ খাবার খাওয়ানো যাবে কি?

উত্তর :
অমুসলিমদের সামনে ইসলামের উদারতা, সৌন্দর্য এবং মহানুভবতা প্রকাশ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের অন্তরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার অন্যতম উপায়। সুতরাং ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন অমুসলিমকে মুসলিমদের ইফতার খাওয়ার জন্য ডাকা জায়েজ রয়েছে। হতে পারে, এটি তার হেদায়েতের ওসিলা হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে যে কোন অভাবী বা নি:স্বকে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসে বহু বক্তব্য এসেছে। তাই কোন গরিব-অসহায় কাফিরকে যদি ইফতারের খাবার দেওয়া হয় তাতেও সওয়াব রয়েছে ইনশাআল্লাহ যদি সে মুহারিব তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত না হয়। তবে শর্ত হল তার সাথে আন্তরিক ভালবাসা পূর্ণ সম্পর্ক রাখা চলবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করে নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনাহ: ৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّـهِ رَبِّكُمْ
“হে মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ।” (সূরা মুমতাহিনাহ: ১)

মোটকথা, ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কাফিরদেরকে ইফতার খাওয়ানো জায়েজ।
অনুরূপভাবে যে কোন অভাবী, গরিব-অসহায় মানুষকে-চাই সে মুসলিম হোক বা কাফির হোক- খাদ্যদানে সওয়াব রয়েছে।
তবে যদি কোন কাফির মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয় বা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে বা অভাবী না হয় তাহলে তাদেরকে ইফতার খাওয়ার জন্য ডাকা ঠিক নয়। বরং সে ক্ষেত্রে মুসলিম, দ্বীনদার ও নিকটাত্মীয়রা এই খাদ্য খাওয়ার বেশি হকদার। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।।

Translate