Saturday, February 19, 2022

ইসলামে যৌবনকালের গুরুত্ব এবং তার মেয়াদকাল

 প্রশ্ন: ইসলামে যৌবনকালের গুরুত্ব কি এবং যৌবনকালের মেয়াদ কত দিন? (যৌবন কত বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং কত বছরে শেষ হয়)

উত্তর:
আমাদের অজানা নয় যে, মানব জীবনে একাধিক ধাপ রয়েছে। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য। এগুলোর মধ্যে যৌবনকাল হল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কালটাকে বলা হয়, Golden age of life বা জীবনের সোনালী অধ্যায়। এটি মানুষের ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিয়ার গঠন, জ্ঞানার্জন, অর্থ উপার্জন, বিয়ে-দাম্পত্য, পরিবার, নেতৃত্ব, যুদ্ধ-সংগ্রাম ও ইবাদতের প্রকৃত সময়। এ সময়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগালে একজন মানুষ যেমন সফল ও আলোকিত মানুষে পরিণত হয় ঠিক তেমনটি সামান্য অবহেলা ও অযত্নে যৌবনের উন্মাদনায় হারিয়ে যেতে পারে পাপ-পঙ্কিলতার অতল তলে, নিক্ষিপ্ত হতে পারে ধ্বংস ও অন্ধকারের অতল গহ্বরে। যৌবন হল এক অমিত শক্তির নাম, যাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জীবন-সংসার সৃষ্টি-সৌন্দর্যে মহনীয় হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে যৌবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে তার তাণ্ডবলীলায় জীবন ও জগত নরকে পরিণত হয়।

সে কারণে হাদিসে যৌবনকালকে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তাকিদ এসেছে এবং যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদতের বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।

জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَاء وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ
“আল্লাহ তিনি দুর্বল (শিশু) অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দুর্বলতার পর (যৌবনে) শক্তি দান করেছেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ [সূরা রূম: ৫৪]

ইসলামে‌ যৌবনকালের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি জিনিসকে গনিমতের সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তম্মধ্যে অন্যতম হল, যৌবন কাল। তিনিও আরও সতর্ক করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাঠগড়ায় আদমের সন্তানদেরকে এক পাও এগুতে দেয়া হবে না যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। তম্মধ্যে একটি হল, যৌবন কাল। যে যুবক যৌবন কালকে আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে সক্ষম হয় তাকে কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এভাবে ইসলামে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টির প্রতি যত্নবান হতে যথেষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

হাফসা বিনতে সিরিন রাহ. (বিশিষ্ট মহিলা ফকিহ ও তাবেয়ী) বলতেন,
يا معشر الشباب! خذوا من أنفسكم وانتم شباب، فإنى رأيت العمل في الشباب
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমরা যৌবন কালেই যথাসাধ্য কাজ করো। কেননা, আমি মনে করি, কাজের প্রকৃত সময় হল, যৌবনকাল।” [সাফওয়াতুস সাফওয়া-ইবনুল জাওযী]

❑ যৌবনের সূচনা ও সমাপ্তি কখন?

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরে কিছু বিশেষ চিহ্ন প্রকাশ পাওয়াকে যৌবনের সূচনা কাল হিসেবে ধরা হয়। (যে চিহ্নগুলো সুপরিচিত)। তবে কোন কারণে যৌবনের চিহ্ন প্রস্ফুটিত হতে বিলম্ব হলে হাদিসে ১৫ বছর বয়সের ব্যক্তিকে ‘প্রাপ্ত বয়স্ক’ (adult) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু যৌবনের সর্বশেষ কোন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় নি। সে কারণে ইসলামি স্কলারগণ এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও সময়-সীমার উপর একমত হন নি।

তবে অনেকে চল্লিশ বছরকে যৌবনের চূড়ান্ত মেয়াদ হিসেবে গণ্য করেছেন। তাইতো আমাদের পূর্বসূরিগণ চল্লিশ বছর বয়স অতিবাহিত হলে, আরও অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগীর দিকে ঝুঁকে পড়তেন।

আর বাস্তবতা হল, চল্লিশ বছর বয়সে জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়ায়-উৎরায় পার হয়ে অসংখ্য অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের জ্ঞান-গরিমার পূর্ণতা পায়। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবুওয়তের গুরু দায়িত্ব প্রদান করা হয় যখন তার বয়স চল্লিশ। বরং সকল নবী-রাসূল যৌবন বয়সে নবুওয়ত লাভ করেছিলেন। যেমন:

ইবনে আব্বাস রা. এর বলেন,
ما بعث اللهُ نبيًّا إلَّا وهو شابٌّ ، ولا أُوتيَ العلمَ عالمٌ إلَّا وهو شابٌّ
‘আল্লাহ তায়ালা সব নবীকে যৌবনকালে নবুয়ত দান করেছেন, যৌবনকালেই আলেমদের ইলম প্রদান করা হয়।’ [তাবারানি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, বায়হাকি। সূয়ুতী বলেন, إسناده جيد “এর সনদ ভালো।” দ্রষ্টব্য: আন নুকাত আলাল মাউযুআত, পৃষ্ঠা ৪৫]

এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ৪০ বছর বয়সের কথা উল্লেখ করার বিষয়টি হয়ত কোনও তাৎপর্য বহন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا ۚ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي ۖ إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্ট সহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যে বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্ম পরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।” [সূরা আহকাফ: ১৫]

তবে শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা , সুস্থতা, শৌর্য-বীর্য, ইত্যাদি ভেদে চল্লিশ বছরের পরেও অনেক মানুষ পূর্ণ যৌবন দীপ্ত জীবন উপভোগ করে।
সুতরাং যৌবনকালকে নির্দিষ্ট বয়স সীমায় সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং যত দিন একজন মানুষ তার শরীরে যৌবনের উত্তাপ এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তি অনুভব করবে ততদিনই সে যুবক। তা চল্লিশের পরও হতে পারে। তাই তো প্রখ্যাত হাদিস ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী কারী রাহ. বলেন,
شَبَابَكَ أَيْ: زَمَانَ قُوَّتِكَ عَلَى الْعِبَادَةِ
“তোমার যৌবন কাল।” অর্থাৎ যতদিন তুমি ইবাদতে শক্তি পাও।” [মিরকাতুল মাফাতীহ, কিতাবুর রিকাক। পাঁটটি জিনিসকে গনিমতের সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যা]

মহান আল্লাহ আমাদের জীবনকে আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গিন করুন, আমাদের যুব সমাজকে সকল পাপাচার ও অকল্যাণের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং পরকালে আমাদেরকে প্রবেশ করান মুক্তি ও শান্তির ঠিকানা জান্নাতুল ফিরদাউসে। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়

 প্রশ্ন: নিচের হাদিসটি কতটুকু সহিহ?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।” [মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খণ্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃঃ হাদিস ৩৪২১,৩৪৭১]
উত্তর:
জুমার দিন জাহান্নাম অবধারিত এমন বহু সংখ্যক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত ঘোষণা সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়।

নিম্নে উক্ত হাদিস এবং তার গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মতামত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল:

◈ হাদিসটি হল,
ليلةُ الجمعةِ ويومُ الجمعةِ أربعُ وعشرونَ ساعةً ، للهِ تعالى في كلِّ ساعَةٍ منها ستُّ مئةِ ألفِ عتيقٍ مِنَ النارِ ، كلُّهم قدِ استوجبوا النارَ
“জুমার দিনের রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা। প্রতি ঘণ্টায় আল্লাহ তাআলা ৬ লক্ষ জাহান্নামিকে জাহান্নাম মুক্তি দেয়া হয়-যাদের উপর জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে।” [মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খণ্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃষ্ঠা, হাদিস-৩৪২১, ৩৪৭১]

◈ এ হাদিস বিষয়ে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের অভিমত:

● ইবনে হিব্বান বলেন, باطل لا أصل له “এটি ভিত্তিহীন বাতিল হাদিস” [কিতাবুল মাজরূহীন, ১/২০১]
● ইবনুল জাওযী এটিকে তার বিখ্যাত বানোয়াট হাদিস সংকলন গ্রন্থ ‘আল মাউযুআত’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন। [কিতবুল মাওযুআত, ২/৫৫২]
● শাইখ আলবানি বলেন, এটি মুনকার। [সিলসিলা যইফা, হা/৬১৪]।
অন্যত্র বলেন, ضعيف جداً “অত্যধিক দুর্বল। [সিলসিলা যইফা, হা/৩২৯৭]
এ ছাড়াও অনেক মুহাদ্দিস এটিকে দুর্বল, ভিত্তিহীন/বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন।
আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

মাগরিব সালাতের শুরু এবং শেষ সময়

 প্রশ্ন: মাগরিব সালাতের শুরু এবং শেষ সময়

উত্তর:
সূর্য পরিপূর্ণভাবে অস্ত গেলে মাগরিব সালাতের সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম দিগন্তে রক্তিম আভা (الشفق) ডুবে যাওয়া পর্যন্ত তা অবশিষ্ট থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَالَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ
“এবং মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত থাকে যতক্ষণ না শাফাক অন্তর্হিত হয়।” [সহীহ মুসলিম, হা/ ১৪১৯]

শাফাক এর আভিধানিক অর্থ:
الشَّفَقُ: حُمْرَةٌ تَظْهَرُ في الأفُقِ حيث تغْرب الشمسُ، وتستمرُّ من الغروب إلى قبيل العشاء تقريبًا
“শাফাক হল, সূর্যাস্তের পর (পশ্চিম) দিগন্তে যে লাল আভা প্রস্ফুটিত হয় এবং প্রায় ইশার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।” [আল মাআনি-অনলাইন আরবি অভিধান]

আর ঘড়ির সময়ের হিসেবে সূর্যাস্তের পর থেকে প্রায় ৮৫ বা ৯০ মিনিট পর্যন্ত মাগরিবের সময় অবশিষ্ট থাকে। তারপর ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়।

❐ এ বিষয়ে শাইখ বিন বাজ রাহ .এর ফতোয়া প্রদান করা হল:

প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ, আজানের পর সময়ের হিসেবে মাগরিবের সময় কতক্ষণ থাকে?
উত্তর:
“বেশিরভাগ এ সময়টা প্রায় দেড় ঘণ্টা। সূর্যাস্ত এবং শাফাক তথা পশ্চিম দিগন্তের রক্তিম আভা অস্তমিত হওয়ার মাঝে সময় থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বা পাঁচ মিনিট কম দেড় ঘণ্টা। তবে মানুষ সতর্কতার জন্য ‘দেড় ঘণ্টা’ সময় গ্রহণ করেছে। এসময়ের মধ্যে রক্তিম আভা সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং ইশার সালাতের সময় প্রবেশ করে।
মরুভূমিতে (বা উন্মুক্ত মাঠে দাঁড়িয়ে) এই রক্তিম আভা অদৃশ্য হওয়ার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া প্রয়োজন। যে তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং ভালো করে খেয়াল করবে সে মিনিটের হিসেবে এসময়-সীমাটা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে। তবে এখন যা গ্রহণ করা হয়েছে তা হল, সর্তকতার স্বার্থে দেড় ঘণ্টা। সূর্যাস্ত থেকে পশ্চিম দিগন্তে লাল আভা ডুবে যাওয়ার সময় দেড় ঘণ্টা।” [ফাতাওয়া বিন বাজ, নূরুন আলাদ দারব (ফতোয়া বিষয়ক জনপ্রিয় সৌদি রেডিও প্রোগ্রাম) ৭/২৭-২৮]

এখান থেকে বুঝা গেল, মাগরিব সালাতের সময় যথেষ্ট দীর্ঘ। কিন্তু আমাদের সমাজে এ সময়টাকে খুব সংকীর্ণ ভাবা হয়। যার কারণে অধিকাংশ মসজিদে মাগরিবের আজান শেষ হতে না হতেই নামাজ শুরু করে দেয়া হয়। অথচ আরব বিশ্বের মসজিদগুলোতে সাধারণত: আজানের কমপক্ষে ১০ মিনিট পরে সালাত দাঁড়ায়। এ সময় মানুষ কর্মব্যস্ততা ছেড়ে ওজু করে মসজিদে এসে সুন্দরভাবে দু রাকাআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ে। তারপর কিছুক্ষণ বসে কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার করে। তারপর সালাত শুরু হয়।
▬▬▬❂❖❂▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।

নিজের নামের সাথে পিতার পরিবর্তে স্বামীর নাম যুক্ত করা এবং স্বামীর নামে পরিচয় দেয়া হারাম

 প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে কোনও বিবাহিত নারীর সাথে স্বামীর নাম যুক্ত করা এবং স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার বিধান কি? ইসলামের সঠি জ্ঞানের অভাব বা অন্য কোনও কারণে যদি কোনো নারীর নামের সাথে তার স্বামীর নাম যুক্ত হয়ে যায় এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সহ সকল সরকারী-বেসরকারি কাগজপত্রে সেই নাম উল্লেখ থাকে-যা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। তাহলে সে ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ত‌ওবা করার পাশাপাশি সেই নারীর করণীয় কী? তিনি জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আর কী করতে পারেন? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

উত্তর:
খুব দুর্ভাগ্য বশত: আমাদের সমাজে মুসলিম নারীদের অনেকেই বিয়ের পরে নিজের নামের সাথে স্বামীর নামকে যুক্ত করে তা নিজের নামের অংশ বানিয়ে ফেলে। এটি একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটাকে স্বামীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করেন। প্রকৃত পক্ষে এটি আমাদের সমাজে পশ্চিমা ইহুদি-নাসারাদের কৃষ্টি-কালচারের ব্যাপক প্রচলন এবং ইসলামি সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল।
ইসলামি স্কলারদের মতে, ইসলামে জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে পরিচয় সম্বন্ধ করা নিষিদ্ধ। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম প্রথা।
যদি স্বামীর নামের সাথে স্ত্রীর নাম যুক্ত করা মর্যাদার বিষয় হত তাহলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামের সাথে তাঁর প্রিয় সহধর্মিণীগণ নাম যুক্ত করাকে বিশাল মর্যাদার বিষয় মনে করতেন। কিন্তু তারা তা করেন নি। সাহাবি, তাবেয়ী বা তৎপরবর্তী কোনও কালেই মুসলিমদের মাঝে এমন প্রচলন ছিল না। কিন্তু অধুনা যুগে মুসলিমরা দীনের সঠিক পথ থেকে দূরে সরে কাফেরদের সাংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে একান্ত তাদের বিষয়গুলোকে নিজেরা গিলতে শুরু করেছে-যা খুবই দুঃখজনক। অথচ ইসলামি শিষ্টাচার হল, নিজের নামের সাথে নিজের পিতার নাম যুক্ত করা। যেমন: ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ অথবা ফাতিমা মুহাম্মদ (বিনতে দেয়া বা না দেয়া উভয়টি সঠিক)।
[এটি পুরুষ-মহিলা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।]

✪ মহান আল্লাহ মানুষকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।” [সূরা আহযাব: ৫]
এ আয়াতে ইসলামে একমাত্র পিতার সঙ্গেই পরিচয় নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

যাহোক, যারা এমনটি করেন তাদের সচেতন হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত হাদিসগুলো যথেষ্ট হতে পারে:

✪ আবু যার রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيْهِمْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ
“যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবী করল যে বংশের সঙ্গে তার কোন বংশ সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) অধ্যায়: ৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, পরিচ্ছেদ: ৬১/৫.মুসলিম ১/২৭]

✪ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“‏مَنِ انْتَسَبَ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ….فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ‏”‏
“যে ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সাথে জন্মসূত্র স্থাপন করে… তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সকল মানুষের অভিসম্পাত।”
[সুনান ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ১৪/ হদ (দণ্ড) পরিচ্ছেদ: ১৪/৩৬. কোন ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দিলে এবং নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বলে পরিচয় দিলে।]

এসব কঠোর হুমকি ঐ সকল ব্যক্তির জন্যও প্রযোজ্য যারা নিজের জন্মদাতা পিতার স্থানে অন্য কোনও ব্যক্তি বা বংশের নাম স্থাপন করে এবং সেই নামেই নিজের পরিচয় দেয়।

◯ এটি কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ:

ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:

❖ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।

❖ সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»
‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি শাণ্ডা (মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।”
সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন?
তিনি বললেন: তবে আর কারা?
[বুখারী, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারীর বর্ণনায় حذو القذة بالقذة – এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।]

➤ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
لا يحل للمسلمين أن يتشبهوا بالكفار في شيء مما يختص بأعيادهم لا من طعام ولا لباس ولا اغتسال… ولا البيع بما يستعان به على ذلك لأجل ذلك.
“মুসলিমদের জন্য কাফেরদের উৎসবের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য, পোশাক, গোসল..ইত্যাদি কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের কাজে লাগানো হয় এমন জিনিসও এ উদ্দেশ্যে বিক্রয় করাও বৈধ নয়।”

আমাদের অজানা নয় যে, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যে বা অন্য কোনও কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে পারে, তারপর অন্যত্র বিয়ের মাধ্যমে স্বামী পরিবর্তন হতে পারে। তখন আগের স্বামীর এ নামের কোনও মূল্য থাকবে না। কিন্তু বাবা-মেয়ের রক্ত সম্পর্ক চিরকালীন। এটা কোনও অবস্থায় পরিবর্তন হবে না। তাছাড়া এটি নিজের পিতার প্রতি অকৃতজ্ঞতা, অসদাচরণ ও সম্মানহানীও বটে। অথচ ইসলামে প্রতিটি সন্তান তার পিতামাতার সাথে সদাচরণ, সুসম্পর্ক ও তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নির্দেশিত। এটি একজন নারীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বোধ ও আত্মমর্যাদা বির্সজনেরও শামিল।

সুতরাং এসব যৌক্তিক কারণেও আমাদের কর্তব্য, নিজের নামের সাথে পিতার নাম যুক্ত করার পাশাপাশি বিয়ের পর মেয়েদের স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার এবং স্বামীর নামকে নিজের নামের অংশ বানিয়ে নেয়ার বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে সরে আসা।

যাহোক, অজ্ঞতা বা অসতর্কতা বশত: জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদি সরকারী-বেসরকারি কাগজ-পত্রে এভাবে নাম যুক্ত হয়ে থাকলে তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা উচিৎ। কিন্তু এতে খুব বেশি সমস্যা বা ঝামেলা হলে বা চেষ্টা করার পরও অসম্ভব হলে ওভাবে থাকলেও গুনাহ নেই। কারণ আল্লাহ বান্দার উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোনও দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। তবে এমন অজ্ঞতা সুলভ কাজের জন্য লজ্জিত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য, যেন পরবর্তীতে নিজের সন্তান-সন্ততিদের ক্ষেত্রে এমনটি না ঘটে। নিশ্চয় আল্লাহ বান্দার নিয়ত সম্পর্কে অবহিত এবং ক্ষমাশীল। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❂❖❂▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।।

নিজের জন্মদাতা বাবা/মা ছাড়া অন্য কাউকে বাবা/মা বলা জায়েজ আছে কি

 প্রশ্ন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” [সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩]

এখন আমরা যারা শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বলি তাদের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য হবে?
উত্তর:
শ্বশুরকে ‘বাবা’ আর শাশুড়িকে ‘মা’ বলা আমাদের সমাজের একটি বহুল প্রচলিত রীতি। আবার অনেক সময় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আলেম, মুরব্বী, বয়স্ক ব্যক্তি, শিক্ষক, সম্মানিত নেতা ইত্যাদি ব্যক্তিকে ‘পিতা’ বা ’বাবা’ বলা হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি নাজায়েজ নয়। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই তা বলা হয়।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদেরকে আমাদের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যদিও তারা আমাদের জন্মদাত্রী মা নয় এবং ইবরাহীম আ. কে আমাদের পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও তিনি আমাদের জন্মদাতা পিতা নয়।
অনুরূপভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ‘ছেলে’ বা বৎস বলাও প্রচলিত রয়েছে। এটিও দূষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস রা. কে বলেন,
يا بُنيِّ إذا دخلت على أهلك فسلم
“হে আমার বৎস, তুমি বাড়িতে প্রবেশ করলে বাড়ির লোকদেরকে সালাম দিবে।” [সহীহ মুসলিম]

❑ প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসটির ব্যাখ্যা:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। “। [সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩]
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: “যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ১২৩]

উক্ত হাদিস দ্বয়ের অর্থ হল, যে ব্যক্তি নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে মেনে নেয় বা অন্য কারও সাথে জন্মগত সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম। যেমন অন্য হাদিসের ভাষায়:
مَنِ ادَّعى إِلى غَيْرِ أَبيهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبيهِ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرامٌ
“যে ব্যক্তি জেনে-শুনে নিজের পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম।” [বুখারি ও মুসলিম] অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে কুফরি করবে। কেননা, তখন এতে নানা ধরণের বিধি-বিধান জড়িয়ে যাবে। যেমন, বৈবাহিক সম্পর্কিত হালাল-হারাম, পর্দা, উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ বণ্টন, ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
[লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ]
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।।

বয়স্ক পুরুষদের সামনে নারীদের বেপর্দা হওয়ার হুকুম কি

 প্রশ্ন: বয়স্ক পুরুষদের সামনে নারীদের বেপর্দা হওয়ার হুকুম কি?

উত্তর:
নারীদের জন্য মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সামনে বেপর্দা হওয়া জায়েজ নয় যদিও তারা বয়স্ক হয়। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ
“(নারীরা যেন) যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” [সূরা নূর: ৩১] এই সাধারণ নিষেধাজ্ঞা এসকল ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্য সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ফতোয়া প্রদানে: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল রহমান আল-জিবরিন

উল্লেখ্য যে, “যৌনকামনামুক্ত পুরুষ” দ্বারা উদ্দেশ্য,
১. এমন পাগল যে নারীদের বিষয়াদি সম্পর্কে কোনও জ্ঞান রাখে না।
২. এমন খোজা বা নপুংসক পুরুষ যার মধ্যে কাম প্রবৃত্তি অবশিষ্ট নেই।
৩. পুরুষত্বহীন খাসি কৃত পুরুষ- যার অণ্ডকোষে অস্ত্রোপচার করে অথবা মেডিসিন বা কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে তার যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
৪. এমন হিজড়া যার মধ্যে যৌন কামনা নেই। তবে কোনও হিজড়ার মধ্যে যদি নারীদের প্রতি আকর্ষণ থাকে বা যৌন বিষয়ে পুরুষালী আচরণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার সামনেও পর্দা করা জরুরি। [তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে বিন সাদি ইত্যাদি-অনুবাদক]
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

পুত্র সন্তান লাভের জন্য কি বিশেষ কোনও দুআ আছে

 প্রশ্ন: পুত্র সন্তান লাভের জন্য কুরআন-সুন্নায় কি নির্দিষ্ট কোনও দুআ বর্ণিত হয়েছে? কোনও কোনও হুজুর পুত্র সন্তান লাভের জন্য সূরা সফফাতের ১০০ নাম্বার আয়াত পাঠের বিশেষ আমল দিয়ে থাকেন। এটি কি সঠিক?

উত্তর:
নি:সন্দেহে নেক সন্তান প্রাপ্ত হওয়া বান্দার প্রতি মহান রবের বিরাট বড় অনুগ্রহ।
কুরআন-হাদিসে শুধু পুত্র সন্তান বা কন্যা সন্তান চাওয়ার জন্য বিশেষ কোনও দুআ বর্ণিত হয় নি। তবে কুরআনে সুসন্তান চাওয়ার জন্য দুআ রয়েছে। আর তা হল, সূরা সাফফাত এর ১০০ নং আয়াত। আল্লাহ বলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
“হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে সুসন্তান দান করো।”

ইবনে কাসির ‘সু সন্তান’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, أولادا مطيعين “আল্লাহর আনুগত্য শীল সন্তান-সন্ততি।” এটি আল্লাহর নবী ইবরাহিম আ. কর্তৃক একটি দুআ। এই দুআর ফলে মহান আল্লাহ তাঁকে ইসমাইল আ. কে দান করেন।

এটি কুরআনের অত্যন্ত মূল্যবান একটি দুআ। সুতরাং আল্লাহর নিকট সুসন্তান লাভের জন্য এ দুআটি পাঠ করায় কোনও আপত্তি নাই। আর সুসন্তান ছেলেও হতে পারে, মেয়েও হতে পারে। এমন নয় যে, এটা কেবল পুত্র সন্তান চাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বা এ দুআ পাঠ করলে পুত্র সন্তান হবে।
আল্লাহর নিকট দুআ করলে তিনি যদি দুআ কবুল করেন তাহলে তিনি নেককার পুত্র অথবা কন্যা সন্তান যা কিছু দান করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার।

যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,
لِّلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ ‎-أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
“নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তাআলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।” [সূরা শুআরা: ৪৯ ও ৫০]

তবে আপনি পুত্র অথবা কন্যা সন্তান যে কোনটার উদ্দেশ্যেই এই দুআ পাঠ করতে পারেন। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই আপনার দুআ কবুল করবেন।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নিকট দুআ কবুলের জন্য কিছু শর্ত ও আদব রয়েছে। সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। দুআ কবুলের শর্তাবলী ও আদব সমূহের প্রতি লক্ষ রেখে উপরোক্ত দুআর পাশাপাশি আপনার মনের প্রত্যাশা তুলে ধরে নিজ ভাষায় মহান রবের নিকট দুআ করবেন। এ ক্ষেত্রে দুআ কবুলের অধিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ও অবস্থাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। যেমন: সেজদা অবস্থায়, ভোর রাতে, আজান ও একামতের মাঝামাঝি সময়, রোজা অবস্থায়, সফর অবস্থায়, যে কোনও ইবাদত করে তার ওসিলায় আল্লাহর নিকট দুআ করা। তৎসঙ্গে পিতামাতার নিকট দুআ নিবেন।

✪ জরুরি জ্ঞাতব্য যে, সুসন্তান লাভের উদ্দেশ্যে কুরআনের উক্ত আয়াত অথবা অন্য কোনও সূরা বা দুআ লিখে বা এগুলোর নকশা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে শরীরে ঝুলিয়ে রাখা বা তা পানিতে ডুবিয়ে পান করা অথবা সেগুলোর প্রতি নির্দিষ্ট কোনও সময় ও বিশেষ পদ্ধতিতে আমল করা (যেমন: স্ত্রী সহবাসের পূর্বে, রাতে ঘুমানোর পূর্বে বা ফজরের সময় পূর্ব দিকে মুখ করে এত বার পাঠ করা…) বিদআত। আর সন্তান চাওয়ার জন্য কবর ও ওলি-আওলিয়াদের মাজরে ধর্না দেওয়া শিরক।
আল্লাহ আমাদেরকে নেক সন্তান দান করুন যারা মৃত্যুর পর আমাদের জন্য রাব্বুল আলামিনের নিকট দুআ করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম দয়ালু ও দাতা।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◯❖◯▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

বেগানা নারী-পুরুষ একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসার বিধান

 প্রশ্ন: আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বেগানা নারী-পুরুষ পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে কি? বা একজন বেগানা নারী কোনও বেগানা পুরুষকে বলতে পারে কি যে, “আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি?”

উত্তর:
কোনও আলেম বা দীনদার ব্যক্তিকে তার ইলম, দাওয়াত, দীনের খেদমত, তাকওয়া, উত্তম চরিত্র ইত্যাদি কারণে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসা জায়েজ। বরং তা নিম্নোক্ত হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে ইনশাআল্লাহ। আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ وَطَعْمَهُ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ فِى اللَّهِ وَأَنْ يُبْغِضَ فِى اللَّهِ وَأَنْ تُوقَدَ نَارٌ عَظِيمَةٌ فَيَقَعُ فِيهَا أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يُشْرِكَ بِاللَّهِ شَيْئًا

‘‘তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে সে এগুলো দ্বারা ঈমানের মিষ্টত্ব ও স্বাদ লাভ করবে:
১. মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সকলের চেয়ে তার নিকট প্রিয়তর হবে,
২. সে আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা বা অপছন্দ করবে এবং
৩. বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করা হলে সে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়াকে সে আল্লাহর সাথে শিরক করা অপেক্ষা অধিক পছন্দ করবে।’’ [সহিহ মুসলিম, ১/৪৮, অধ্যায়: ঈমান, অনুচ্ছেদ, যে সব বৈশিষ্ট্যের কারণে ঈমানের সাধ লাভ করা যায়]

অন্য হাদিসে প্রখ্যাত সাহাবি আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدْ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ

‘‘যে আল্লাহর জন্য ভালবাসবে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্যই প্রদান থেকে বিরত থাকে তার ঈমান পূর্ণতা লাভ করবে।’’ [আবু দাউদ, (শামিলা) ৪/৩৫৪, অধ্যায়: সুন্নাহ, অনুচ্ছেদ: ঈমান বৃদ্ধি। হাদিসটি সহীহ]

এ সকল হাদিসের নির্দেশনা খুবই সুস্পষ্ট। মুমিন ব্যক্তি ঈমান ও ঈমানদারদেরকে ভালবাসবেন এবং কুফর ও কুফরে লিপ্ত মানুষদেরকে ঘৃণা করবে বা অপছন্দ করবে।

তবে নন মাহরাম নারী বা পুরুষ বিপরীত লিঙ্গের কারও নিকট এই ভালবাসার কথা প্রকাশ করা জায়েজ নয় যদি ফেতনার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে যুবক-যুবতিদের জন্য তা নিষিদ্ধ। কেননা, এতে সম্ভাবনা আছে, তারা একে অপরের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করবে-যা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ফেতনার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। তবে যদি ফেতনার আশঙ্কা না থাকে তাহলে সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ। যেমন: কোনও বয়োবৃদ্ধ বিখ্যাত আলেমের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ বা এমন ব্যক্তি যাকে ভালোবাসার কথা বললেও ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারি শিশু-কিশোর ও মহিলাদের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ভালবাসার কথা বলেছেন। আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم النِّسَاءَ وَالصِّبْيَانَ مُقْبِلِيْنَ قَالَ حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ مِنْ عُرُسٍ فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُمْثِلًا فَقَالَ اللَّهُمَّ أَنْتُمْ مِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَيَّ قَالَهَا ثَلَاثَ مِرَارٍ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম (মদিনার আনসারদের) কতিপয় বালক-বালিকা ও নারীকে আগমন করতে দেখে তাদের উদ্দেশে স্থির দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, “আল্লাহ সাক্ষী, তোমরা আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের অন্তর্ভুক্ত।” কথাটি তিনি তিন বার বললেন।
(বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বিয়ের ওলিমা অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছেন)
[সহীহুল বুখারি, অনুচ্ছেদ: ৬৩ ; আনসার সাহাবিদের মর্যাদা, অধ্যায় ৫, মুসলিম, অনুচ্ছেদ: ৪৪ : সাহাবিদের মর্যাদা, অধ্যায়, ৪৩]

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি স্বনামধন্য আলেমে দীন শাইখ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহ. কে রেডিও/টেলিভিশনের বিভিন্ন ইসলামি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ফোন করে বলতেন, “শাইখ, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি।” শাইখ জবাবে বলতেন, “আল্লাহও আপনাকে ভালবাসুন যার উদ্দেশ্যে আপনি আমাকে ভালবাসেন।” তিনি মহিলাদেরকে তা বলতে নিষেধ করতেন না। এমনটি অন্যান্য বড় আলেমদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

উল্লেখ্য যে, যে হাদিসে বলা হয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি কাওকে ভালবাসলে সে যেন তার নিকট তা প্রকাশ করে” সে হাদিসের উদ্দেশ্যে হল, এক মুসলিম পুরুষ অন্য মুসলিম পুরুষকে বলবে বা এক মুসলিম নারী অন্য নারীকে বলবে অথবা স্বামী/স্ত্রী পরস্পরকে বা মাহরাম ব্যক্তিকে বলবে।
قال المنَّاوي – رحمه الله – :
” ( إذا أحب أحدكم عبداً ) أي : إنساناً … فالمراد : شخص من المسلمين قريب أو غيره ، ذكراً أو أنثى ، لكن يظهر تقييده فيها بما إذا كانت حليلته أو محرَمه ” .
انتهى من ” فيض القدير ” ( 1 / 319 ) .
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈♡◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।।

জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পাঠে ৮০ বছরের গুনাহ মোচন সম্পর্কিত হাদিসগুলো বানোয়াট এবং অত্যধিক দুর্বল

 ‘জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পাঠে ৮০ বছরের গুনাহ মোচন’ সম্পর্কিত হাদিসগুলো বানোয়াট এবং অত্যধিক দুর্বল (সনদ বিশ্লেষণ সহ)

▬▬▬◍❂◍▬▬▬
জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পাঠে ৮০ বছরের গুনাহ মোচন সম্পর্কিত হাদিসগুলো কোনটি সহিহ নয়। তবে সাধারণভাবে এ দিনে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ অত্যন্ত ফযিলত পূর্ণ আমল।

নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল: وبالله التوفيق

এ প্রসঙ্গে প্রায় সমার্থবোধক তিনটি হাদিস পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে দুটি হল, موضوع বা বানোয়াট এবং অপরটি ضعيف جداً বা অত্যধিক দুর্বল।

এ তিনটি হাদিস সম্পর্কে বিজ্ঞ মুহাদ্দিস ও রিজাল শাস্ত্রবিদগণের মতামত ও সনদ বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:

▮ ১ম হাদিস: (জাল বা বানোয়াট)

আনাস রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে দণ্ডায়মান ছিলাম। তখন তিনি বললেন,
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثَمَانِينَ مَرَّةً غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَ ثَمَانِينَ عَامًا
فَقِيلَ لَهُ : كَيْفَ الصَّلاةُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟
قَالَ : تَقُولُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ ونبيك ورسولك النبي الأمي، وتعقد واحدا .
“যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার আশি বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার প্রতি কীভাবে দরুদ পাঠ করবো হে আল্লাহর রাসুল?
তিনি বললেন, বলবে: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাবিয়্যিকা ওয়া রাসূলিকান নাবিয়্যিল উম্মী।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি সালাত পেশ করো (রহমত নাজিল করো) তোমার বান্দা, তোমার নবী, এবং তোমার রাসুল উম্মী নবী (নিরক্ষর নবী) এর প্রতি” এবং একবার গিরা দিবে।

➤ হাদিসের মান: হাদিসটি জাল-বানোয়াট।

হাদিসের সনদ বিশ্লেষণে মুহাদ্দিসগণের মতামত নিম্নরূপ:

ক. এটি খাতীব বাগদাদী তারিখে বাগদাদ [১৩/৪৬৪] এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদে ওয়াহাব ইবনে দাউদ ইবনে সুলায়মান আয-যারীয নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। যাহাবী বলেন, খাতিব বাগদাদী তার ব্যাপারে বলেছেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন না।” অত:পর, তার বানানো একটি হাদিস পেশ করেছেন। [তথ্য সূত্র: আল মুগনী ফিয যুয়াফা ২/৭২৭]

গ. ইবনুল জাওযী হাদিসটিকে তার বিখ্যাত বানোয়াট হাদিস সংকলন ‘আল-আহাদীসুল ওয়াহিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন [হাদিস নং ৭৯৬]।

ঘ. আলবানী বলেন, এটি তিনি (ইবনুল জাওযী) তার আরেকটি বানোয়াট হাদিস সংকলন ‘আহাদীসুল মাওযুআত’ গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন। এটিই অধিক উপযোগী। কারণ এর মধ্যে জাল হাওয়ার চিহ্ন সুস্পষ্ট। আর সহীহ হাদিসে দরূদ পাঠের যে সব ফযিলত এসেছে তাতে এ জাতীয় (জাল-জইফ) হাদিসের প্রয়োজন নাই। যেমন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, من صلى علي مرة واحدة صلى الله عليه بها عشراً
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত নাজিল করবেন।” [সহিহ মুসলিম ইত্যাদি]

▮ ২য় হাদিস: (অত্যধিক দুর্বল)

এ জাতীয় আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসটিকে পূর্বোক্ত হাদিসের শাহেদ (সাক্ষ্য হাদিস বলা যায়)। কিন্তু তাও অধিক বিশুদ্ধ মতে সনদগতভাবে অত্যধিক দুর্বল। (যদিও কোনও কোনও মুহাদ্দিস এটিকে হাসান বলেছেন)। তা হল:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الصَّلَاةُ عَلَيَّ نُورٌ عَلَى الصِّرَاطِ ، فَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثَمَانِينَ مَرَّةً ، غُفِرَتْ لَهُ ذُنُوبُ ثَمَانِينَ عَامًا
“সালাত হল, পুল সিরাতের আলো। সুতরাং যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপরে আশি বার সালাত (দরুদ) পেশ তার আশি বছরের গুনাহ মোচন করা হবে।”

➤ হাদিসটির মান: এটি ضعيف جداً বা অত্যধিক দুর্বল।

মুহাদ্দিসগণের মতামত:

এর হাদিসের সনদে তিনজন দুর্বল রাবী (বর্ণনাকারী) রয়েছে। যথা:

● ১. আলি বিন যায়েদ বিন জুদআন আল বাসরী:
ক. এই বর্ণনাকারীর ব্যাপারে হাম্মাদ বিন যায়েদ বলেন, كَانَ يقلب الْأَحَادِيث “তিনি হাদিস উল্টিয়ে দিতেন (হাদিসের সনদে না মতনে শব্দের মধ্যে পরিবর্তন বা আগে-পিছে করতেন)।”
খ. শুবা বলেন, أَنه اخْتَلَط “তার হাদিসের মধ্যে ওলট-পালট বা সংমিশ্রণ ঘটে গিয়েছিলো।”
গ. আহমদ বলেন, لَيْسَ بِشَيْء “এ ব্যক্তি কিছুই নয়।” অর্থাৎ মোটেও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নয়। মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় এমন ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণিত হাদিস ‘মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল’ অথবা ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ঘ. আবু যুরয়া বলেন, لَيْسَ بِقَوي يهم ويخطئ “তিনি শক্তিশালী নন। তিনি অনুমান ভিত্তিক হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে ভুল করতেন।”
ঙ. আবু হাতিম বলেন, “ لَا يحْتَج بِهِ “তার বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলিল গ্রহণ করা যাবে না।”
চ. দারাকুতনী বলেন, আমার নিকট, তার মধ্যে অদ্য বধী দুর্বলতা আছে। [সূত্র: ইমাম যাহাবী রচিত আল মুগনী ফিয যুয়াফা ২/৪৪৭]

● ২. হাজ্জাজ বিন সিনান:

তার ব্যাপারে আযদী বলেন, متروك “পরিত্যাজ্য।” (এমন বর্ণনাকারীকে متروك মাতরূক বা পরিত্যাজ্য বলা হয় যে, যে মিথ্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত অথবা যে ব্যক্তি মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মতিক্রমে দুর্বল।)

[সূত্র: লিসানুল মিযান-ইবনে হাজার। ২/৫৬৩]

● ৩. আউন বিন উমরা আল কায়সী:
ক. আবু যুরয়া বলেন, منكر الحديث (হাদিস বর্ণনায় উদ্ভট হাদিস বর্ণনার কারণে প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি)
খ. হাকিম বলেন, أدركته ولم أكتب عنه ، وكان منكر الحديث ضعيف الحديث “আমি তার সাক্ষাত পেয়েছি। কিন্তু তার হাদিস লেখিনি। তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে মুনকার এবং দুর্বল ছিলেন।”
গ. আবু দাউদ বলেন, ضعيف (দুর্বল)।

[সূত্র: তাহযীবুত তাহযীব, ৮/১৭৩]

এ হাদিসটিকে ইমাম দারাকুতনী, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী, সাখাবী, মুনাবী, শাইখ আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ জইফ (দুর্বল) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

[উপরোক্ত আলোচনাটির মূল প্রতিবাদ্য Islam QA থেকে অনুবাদ ও সংক্ষেপায়ন করা হয়েছে।]

▮ ৩য় হাদিস: (বানোয়াট)

কিছু বৃদ্ধি সহ প্রায় সমার্থবোধক আরেকটি হাদিস হল:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে। তা হল: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।” [এহিয়া উলুমিদ্দীন-গাজালাী]

➤ হাদিসটির মান: এটিও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে ভিত্তিহীন, বানোয়াট:

সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডকে উক্ত হাদিস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে (প্রশ্নকারী বলেন, এ হাদিসটি পাকিস্তানের এক টেলিভিশনে সারা রমজান মাস ব্যাপী ব্যবসায়িক এড হিসেবে প্রচারিত হয়েছে)। তারা উত্তরে বলেন,
هذا الحديث المذكور لا أصل له، فلا يجوز العمل به
اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاء(24/162- 163)
“উল্লেখিত হাদিসের কোনও ভিত্তি নাই। সুতরাং তার উপর আমল করাও বৈধ নয়…।”
[সংক্ষেপিত। উৎস: ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/১৬২-১৬৩]

❑ জুমার দিনে দরূদ পাঠের মর্যাদা:

জুমার দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ কা অত্যন্ত ফযিলত পূর্ণ আমল। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

প্রখ্যাত সাহাবি আউস বিন আউস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ عَلَيْهِ السَّلَام ، وَفِيهِ قُبِضَ ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ
“তোমাদের দিন সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে, এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং মহা বিপর্যয় (কিয়ামত)ও ঘটবে এই দিনেই। তাই এই দিনে তোমরা বেশি বেশি আমার উপর দরুদ পাঠ কর। কেননা জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার নিকট পেশ হয়…।” [সহিহ আবু দাউদ, হা/৯২৫]

সহিহ সনদে বর্ণিত এ হাদিসের আলোকে আমদের কর্তব্য, জুমার দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অধিক পরিমাণে সালাত (দরুদ) পাঠ করা।এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আমল। আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, সর্বশ্রেষ্ঠ দরুদ তো তাই যা আমরা প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের শেষ বৈঠকে পাঠ করে থাকি (যাকে বলা হয়, দরুদে ইবরাহিম)। এমনকি আলোচ্য দরুদটিও পাঠ করা জায়েজ আছে। কারণ তার অর্থের মধ্যে কোনও সমস্যা নাই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ৮০ বার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা বা ৮০ বছরের গুনাহ মোচনের ফজিলতের উপর বিশ্বাস করা অথবা আসর সালাতের পর যথাস্থানে বসে পাঠ করা সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসগুলো বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত না হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোর কোনোটি জাল ও বানোয়াট আর কোনও টি মারাত্মক পর্যায়ের জইফ-যেমনটি মুহাদ্দিসের পর্যালোচনা ও মতামতের আলোকে প্রমাণিত হয়েছে। (দু-একজন মুহাদ্দিস এ সংক্রান্ত হাদিসকে ‘হাসান’ বললেও তা মূলত: রাজেহ বা অগ্রাধিকার যোগ্য মত নয়)

আমাদের দেশে জুমার দিন বিশেষ করে আসর সালাতের পর অনেক মানুষকে জুমার দিন আসর সালাতের পরে মসজিদে বসে এই ভিত্তিহীন আমল করতে দেখা যায় অথচ সুন্নত ছিল, আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অধিক পরিমাণে আল্লাহর কাছে দুআ করা। কারণ হাদিস মোতাবেক জুমার দিন যে সময়টায় দুআ করলে আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার অধিক আশা করা যায় তা হল, আসর থেকে মাগরিবের মাঝের সময়।

কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এ সব জাল-জইফ আমল দ্বারা মানুষকে সুন্নত থেকে ব্যস্ত করে রাখা হয়েছে। আর মানুষকে এভাবে বিদআতে লিপ্ত করার পেছনে অবদান রাখছেন আমাদের দেশের অনেক মুফতি ও মাওলানা এবং আমাদের সমাজে প্রচলিত ফাজায়েল ও অজিফা জাতীয় কিছু বই। (আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন। আমিন)

পরিশেষ বলব, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে যেমন আমাদের কর্তব্য, নকল ও ভেজাল খাবার বর্জন করে নির্ভেজাল ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে বানোয়াট, জাল-জইফ ও সন্দেহ পূর্ণ আমল থেকে দূরে থেকে আমাদের আমলনামাকে কলুষমুক্ত রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করা। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানি)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ঘুম ও পানাহারের আদব এবং কাপড় ধোয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা

 প্রশ্ন: আমার এক নানু বললেন যে, কোল বালিশ নিয়ে ঘুমানো নাকি ঠিক না; গুনাহ। বোতল দিয়ে পানি পান করা গুনাহ। কাপড় তিন বার ধোয়া, বিসমিল্লাহ বলা নাকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত। এ কথাগুলো কি সঠিক কথা?

উত্তর:
কাপড় ধোয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত-এটা ছাড়া আপনার নানুর অন্যান্য কথাগুলো কেবলই অনুমান নির্ভর। ইসলামী শরীয়তে এ সব কথার নূন্যতম কোন ভিত্তি নাই। যাহোক সঠিক কথা হল, কোল বালিশ নিয়ে ঘুমানো এবং বোতলে পানি খাওয়ায় কোন আপত্তি নাই। তবে ঘুম ও পানি পানের ইসলামী আদব রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

❐ ঘুমের আদব সমূহ:

✪ ১) ঘুমের পূর্বে ওযু করা।
✪ ২) বিছানায় শোয়ার পূর্বে লুঙ্গি বা পরিধেয় বস্ত্রের নিম্নাংশ অথবা অন্য কোন কাপড় দ্বারা বিছানা ঝেড়ে নেয়া।
✪ ৩) ঘুমের পূর্বে যে সকল আমল, জিকির ও তাসবিহ রয়েছে সেগুলো পড়া। তারপর ঘুমের দুআ পড়ে ঘুমানো।
✪ ৪) ডান দিকে কাঁথ হয়ে শোয়া সুন্নত। পেটের উপর ভর করে উপুড় হয়ে বা বাম দিকে কাঁথ হয়ে ঘুমানো ঠিক নয়। তবে উপুড় হয়ে শয়ন করা বেশি খারাপ বাম দিকে কাঁথ হয়ে শয়ন করার চেয়ে। কারণ, হাদিসে উপুড় হয়ে শয়ন করাকে জাহান্নামীদের শয়ন পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। তবে ইচ্ছে করলে কখনও কখনো চিৎ হয়ে শয়ন করা জায়েজ আছে।

❐ পানাহারের আদব সমূহ:

❂ ১. পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা
❂ ২. পানাহার করার প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে মাঝখানে যখনই স্মরণ হবে তখনই বলবে, “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” অথবা “বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী।”
❂ ৩. পানাহার করার পর আল হামদুলিল্লাহ অথবা খাওয়া শেষের দুআ পাঠ করা বলা সুন্নত।
❂ ৪. ডান হাতে পানাহার করা সুন্নত। বাম হাতে পানাহার করা হারাম এবং শয়তানের কাজ।
❂ ৫. পান করার জন্য গ্লাস বা বোতল যাই হোক না তিন ঢোকে পান করা ভালো। তবে প্রয়োজনবোধে এক ঢোক বা দু ঢোকে পান করাও জায়েজ।
❂ ৬. পানি পান করার সময় গ্লাস বা পানপাত্রে নি:শ্বাস ফেলা ঠিক নয়।
❂ ৭. হেলান দিয়ে পানাহার করা ঠিক নয়।
❂ ৮. বসে পানাহার করা উত্তম। কিন্তু প্রয়োজনবোধে দাঁড়িয়ে বা পথ চলতে চলতে পানাহার করায় কোন আপত্তি নেই। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ইতোপূর্বে করা হয়েছে)
❂ ৯. খাবার নিচে পড়ে গেলে সম্ভব হলে তা পরিষ্কার করে খাওয়া।
❂ ১০. খাবার প্লেট ও আঙ্গুল পরিষ্কার করে খাওয়া।
❂ ১১. খাদ্য-পানীয় অপচয় না করা।
❂ ১২. এক প্লেটে কয়েকজন একসাথে বসে খাওয়া তৃপ্তি অর্জন ও বরকতের কারণ।
❂ ১৩. একসাথে খেতে বসলে নিজের দিক থেকে নিয়ে খাওয়া। হাত বাড়িয়ে অন্যের দিক থেকে তার অনুমতি ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
❂ ১৪. বেশি গরম অবস্থায় খাওয়া বরকত চলে যাওয়ার কারণ।
❂ ১৫. স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পান করা ঠিক নয়।
❂ ১৬. একসাথে একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে বড় ও সম্মানিত ব্যক্তির আগে খাওয়া শুরু না করা।
❂ ১৭. মেহমান হিসেবে খেতে গেলে খাওয়ার পর মেহমানের জন্য হাদিসে বর্ণিত দুআ পাঠ করা এবং খাওয়া শেষে যথাসম্ভব সেখানে দেরি না করা। অবশ্য মেজবানের পক্ষ থেকে থাকার সম্মতি থাকলে তাতে সমস্যা নেই ইত্যাদি।

❐ কাপড় ধোয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা:

🔸 কাপড় ধেয়ার পূর্বে তিনবার নয় এক বার বিসমিল্লাহ বলাই যথেষ্ট। কেবল কাপড় ধোয়া নয় বরং যে কোন কাজের শুরুতে একবার বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। এতে বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত ও বরকত নেমে আসে এবং তিনি তাকে সাহায্য করেন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বাথরুমে স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা কি গুনাহর কাজ

 প্রশ্ন: বাথরুমে স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা কি গুনাহর কাজ?

▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর:
বাস্তবতা হল, যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জিজ্ঞাসারাও পরিবর্তন হচ্ছে। বাথরুমে স্ত্রীসহবাস করার বিষয়টিও তেমনই একটি প্রশ্ন। বর্তমানে অনেক মানুষই এ ব্যাপারে জানতে চায়। এটি খুবই স্বাভাবিক।

যাহোক, আমাদের অজানা নয় যে, পূর্ব যুগের পায়খানা/টয়লেট এবং আধুনিক যুগের বাথরুমগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিক যুগে শহরের উন্নত বাড়িগুলোতে সাধারণত: বাথরুমগুলো মোজাইক, টাইলস, সিমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে অত্যন্ত পরিপাটি করে তৈরি করা হয় এবং তা খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা হয়।

এ জাতীয় বাথরুমগুলোতে টয়লেটের পাশাপাশি গোসলের জন্য ঝর্ণা থাকে, কোথাও কোথাও বাথটব থাকে, হাতমুখ ধোয়ার বেসিন থাকে। বেসিনের সামনে আয়না রাখা হয় এবং বিভিন্ন কিছু দ্বারা সজ্জিত রাখা হয়। সেখানে পেশাব-পায়খানা বা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ থাকে না বললেই চলে। মোটকথা, এগুলো দুর্গন্ধ ও জীবাণু মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখা হয়।
সুতরাং এমন পরিবেশে কেউ যদি বাথরুমে স্ত্রী মিলন করতে চায় তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোনও সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এ ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয় নি। তবে নোংরা ও দুর্গন্ধময় টয়লেটে স্বামী-স্ত্রীর মিলন করা অনুচিত এবং একজন মুসলিম ব্যক্তির আত্মমর্যাদার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
যাহোক, আধুনিক বাথরুমগুলোতে স্ত্রী মিলনের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন:

✪ ১. বাথরুমে সহবাস করা নাজায়েজ না হলে তা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা ভালো। কারণ, তা সহবাসের উপযুক্ত স্থান নয়।

✪ ২. কেউ তা কোনও কারণে করতে চাইলে সহবাসের দুআ মুখে উচ্চারণ করে পড়বে না বরং মনে মনে বলবে। কারণ টয়লেটে দুআ, জিকির, তসবিহ, কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম ইত্যাদি সম্মান জনক বিষয়গুলো মুখে উচ্চারণ করা মাকরূহ। প্রখ্যাত তাবেঈ ইকরিমা রহ. বলেন, “টয়লেটে থাকা অবস্থায় মুখে উচ্চারণ করে যিকির করবে না তবে মনে মনে করতে পারে।” [আল আওসাত. ১/৩৪১]

✪ ৩. টয়লেটে প্রবেশের দুআগুলো (বিসমিল্লাহ..আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইস) পাঠ করবে। কেননা সেখানে শয়তান হাজির থাকে। দুআ পাঠ করে প্রবেশ করলে শয়তান বনি আদমের লজ্জা স্থান দেখতে পায় না। আর দুআ না পড়ে প্রবেশ না করলে সেখানে সহবাস পরিহার করা কর্তব্য। কারণ শয়তান তাদের ক্ষতি করতে পারে।

▪ আলী ইবনে আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمْ الْخَلَاءَ أَنْ يَقُولَ بِسْمِ اللَّهِ
“যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন জিন শয়তানের চোখ ও বানী আদমের লজ্জা স্থানের মধ্যে পর্দা হল: বিসমিল্লাহ “আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি” বলা। [সহীহ : তিরমিযী ৬০৬, সহীহুল জামি‘ ৩৫১১]
অর্থাৎ টয়লেটে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করলে জিন-শয়তানদের দৃষ্টির সামনে পর্দা ফেলে দেয়া হয়। ফলে তারা আর মানুষের লজ্জা স্থান দেখতে পায় না।

▪ অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ هذِهِ الْحُشُوْشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
যায়দ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এসব টয়লেটে জিন-শয়তানরা উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যারা টয়লেটে যাবে তারা যেন এ দুআ পড়ে :
أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
“আ’উযু বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
“আমি আল্লাহর নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।”
[সহীহ : আবু দাউদ ৬, ইবনে মাজাহ্ ২৯৬, সহীহুল জামি‘ ২২৬৩।]

▪ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি বলেছে,
من آداب الإسلام أن يذكر الإنسان ربه حينما يريد أن يدخل بيت الخلاء أو الحمَّام ، بأن يقول قبل الدخول : ” اللهم إني أعوذ بك من الخبث والخبائث ” ، ولا يذكر الله بعد دخوله ، بل يسكت عن ذكره بمجرد الدخول .
“ইসলামের শিষ্টাচার হল, মানুষ যখন টয়লেট বা গোসলখানায় প্রবেশ করবে তখন তাদের প্রতিপালককে স্মরণ করবে এভাবে যে, প্রবেশের পূর্বে বলবে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
“আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস”
অর্থ: “হে আল্লাহ, তোমার নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।” [বুখারি ও মুসলিম] আর প্রবেশ করার পর মুখে যিকির পাঠ করবে না বরং প্রবেশ করার সাথে সাথে যিকির পাঠ করা করা বাদ দিয়ে নীরবতা অবলম্বন করবে।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৯৩]
✪ ৪. কোনোভাবেই যেন তাদের লজ্জা স্থান বা মিলনের দৃশ্য অন্য মানুষ দেখতে না পায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

মারহাবা কি ইসলামিক পরিভাষা

 মারহাবা ♡ স্বাগতম ♡ ওয়েলকাম ♡

▬▬▬▬◆♡◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: মারহাবা কি ইসলামিক পরিভাষা? এটা কি বলা যাবে? ইসলামে মানুষকে স্বাগত জানানোর বিধান কি?
উত্তর:
মারহাবা শব্দের অর্থ: স্বাগতম, খোশ আমদেদ, ওয়েলকাম।
এটি সাধারণত: আরবি ভাষীগণ কারও আগমন উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু আরবি ভাষী ছিলেন সেহেতু তিনি বিভিন্ন সময় স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

ইমাম বুখারি রাহ. এ বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন-যার শিরোনাম হল:

“পরিচ্ছেদ: ২৫৩০. কাউকে মারহাবা বলা। আয়েশা রা. বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতেমা রা. কে বলেছেন, “আমার মেয়েকে মারহাবা (স্বাগতম)। উম্মে হানী রা. কে বলেন, আমি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলে তিনি বললেন, “উম্মে হানীকে মারহাবা (স্বাগতম)।”

অত:পর তিনি রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম কর্তৃক কায়েস প্রতিনিধি দলের লোকজনকে স্বাগত জানানোর নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন:

◈ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল কায়েসের প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলে তিনি বললেন, مَرْحَبًا بِالْوَفْدِ “প্রতিনিধি দলকে মারহাবা (স্বাগতম)। [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: আদব বা শিষ্টাচার]

◈ তিনি তার প্রিয় কন্যা ফাতিমা রা. কে ‘মারহাবা’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। যেমন:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اجْتَمَعَ نِسَاءُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُغَادِرْ مِنْهُنَّ امْرَأَةً فَجَاءَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي كَأَنَّ مِشْيَتَهَا مِشْيَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ مَرْحَبًا بِابْنَتِي ‏”‏ ‏.‏ فَأَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল স্ত্রী তাঁর নিকটেই ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা রা.পায়ে হেঁটে সেখানে উপস্থিত হলেন। বলা বাহুল্য, ফাতিমা রা. এর হাঁটার ভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুরূপ ছিল। ফাতিমা রা. দেখে তিনি বললেন, “মারহাবা (স্বাগতম), হে স্নেহের কন্যা।” অতঃপর তাকে তাঁর ডানদিকে কিংবা তাঁর বামদিকে বসালেন…।
[ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন]

◈ এ ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার চাচাতো বোন আবু তালিবের কন্যা উম্মে হানী বিনতে আবি তালিব রা. কে মারহাবা বলে স্বাগত জানিয়েছেন:

যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। তখন তাঁকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন এবং তাঁর মেয়ে ফাতিমা রা. তাঁকে পর্দা করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি জানতে চাইলেন, কে ইনি? আমি বললাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব। তিনি বললেন,
مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ
“মারহাবা (স্বাগতম) হে উম্মে হানী!” অতঃপর যখন তিনি গোসল শেষ করে, একখানি কাপড়ে শরীর ঢেকে দাঁড়িয়ে আট রাকআত সালাত আদায় করলেন।….উম্মে হানী রা. বলেন, তখন ছিল চাশত/যুহা (পূর্বাহ্ণ) এর সময়। [সহীহ বুখারি ৫৮/ জিযিয়া বা কর ও সন্ধি স্থাপন, পরিচ্ছেদ: ৫৮/৯. নারীগণ কর্তৃক নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান।]

◈ আধুনিক বিশ্বেও আরবি ভাষীগণ যে সকল বাক্য দ্বারা মানুষকে স্বাগত জানায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, আহলান ওয়া সাহলান, মারহাবা [উভয়টি সমার্থ বোধক]

❑ আগন্তুককে সৌজন্যতার খাতিরে স্বাগত জানানো সুন্নত/মুস্তাহাব:

উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে বুঝা গেল, আগন্তুককে স্বাগত জানানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. বলেন,
وفيه دليل على استحباب تأنيس القادم وقد تكرر ذلك من النبي صلى الله عليه وسلم، ففي حديث أم هانئ مرحبا بأم هانئ، وفي قصة عكرمة بن أبي جهل مرحبا بالراكب المهاجر، وفي قصة فاطمة مرحبا بابنتي، وكلها صحيحة، وأخرج النسائي من حديث عاصم بن بشير الحارثي عن أبيه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له لما دخل فسلم عليه: مرحبا وعليك السلام
“এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আগন্তুকের প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করা মুস্তাহাব। এটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক বার ঘটেছে।
– তিনি উম্মে হানী রা. কে মারহাবা বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
– আবু জাহেলের ছেলে ইকরিমা রা. এর ঘটনায় তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, “মুহাজির আরোহীকে মারহাবা (স্বাগতম)।”
– ফাতিমা রা. এর ঘটনায় তাকে মারহবা বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সবগুলোই সহিহ।
– সুনানে নাসায়ীতে আসিম বিন বাশীর আল হারেসি এর হাদিস। তার পিতা (বাশীর আল হারেসি) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট সালাম দিয়ে প্রবেশ করেন তখন তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, “মারহাবা (স্বাগতম) ওয়ালাইকুমুস সালাম।” [ফাতহুর বারী]

উল্লেখ্য যে, আগন্তুক ব্যক্তি সালাম দিলে সালামের উত্তর বলে স্বাগত জানানো অথবা আগে স্বাগত জানিয়ে পরে সালামের উত্তর দেওয়া‌‌-উভয়টি জায়েজ। এতে কানও আপত্তি নাই।

তবে সব মুসলিমদেরকে এই আরবি শব্দ ‘মারহাবা’ ব্যবহার করেই স্বাগত জানাতে হবে-এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এতে বিশেষ কোনও সওয়াবও নেই। বরং প্রত্যেক ভাষাভাষী লোকেরা তাদের দেশে/সমাজে প্রচলিত বাক্য বা ভাষা দ্বারা স্বাগত জানাবে-এটাই সঠিক পদ্ধতি। তবে যাদের উদ্দেশ্যে মারহাবা বলে স্বাগত জানানো হবে তারা যদি এর অর্থ বুঝে এবং আনন্দিত হয় তাহলে তা ব্যবহারে কোনও আপত্তি নেই। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◯◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

কবরের ফিতনা দ্বারা কী উদ্দেশ্য? কবরের আজাব এবং কবরের ফিতনা কি ভিন্ন

 প্রশ্ন: কবরের ফিতনা দ্বারা কী উদ্দেশ্য? কবরের আজাব এবং কবরের ফিতনা কি ভিন্ন? কারা এই ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে?

উত্তর:
ফিতনা (فتنة) শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। যেমন: পরীক্ষা, দাঙ্গা, গোলযোগ, বিপদ, কষ্ট, পরীক্ষা, সম্মোহন ও আকর্ষণ ইত্যাদি। [ডা. ফজলুর রাহমান রচিত আরবী-বাংলা অভিধান]
তবে কুরআন-হাদিসে পরীক্ষা অর্থে ‘ফিতনা’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে ‘ফিতনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যেমন:

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ
“আর জেনে রেখো যে, নিঃসন্দেহে তোমাদের ধনদৌলত ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।” [সূরা আনফাল: ২৮]

ইবনে কাসির রাহ. ফিতনা শব্দের অর্থ করতে গিয়ে বলেন, أي : اختبار وامتحان منه لكم অর্থাৎ পরীক্ষা করা, যাচায় বা পরখ করা। মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এগুলো দিয়েছেন যেন তিনি জানতে পারেন যে, তোমরা এসব পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর ও তার আনুগত্য কর না কি এগুলোতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার থেকে দূরে সরে পড়।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً
“আর আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দিয়ে পরীক্ষা করি।” [সূরা আন্বিয়া: ৩৫]
এ সব ক্ষেত্রে ফিতনা অর্থ: পরীক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এসব জিনিস দ্বারা বান্দাকে পরীক্ষা করতে চান। তারপর দেখতে চান, কারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আর কারা ব্যর্থ হয়।
(যদিও কুরআনে অন্য অর্থেও এর ব্যাবহার রয়েছে)

ঠিক তদ্রূপ ‘কবরের ফিতনা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কবরের পরীক্ষা। শাইখ বিন বায রহ. বলেন,
الفتنة في القبور معناها الابتلاء والامتحان
“কবরের ফেতনা অর্থ: কবরের পরীক্ষা।”

অর্থাৎ আল্লাহর দু জন ফেরেশতা বিশেষ কিছু ব্যক্তি ছাড়া (যেমন: শহিদ, মুসলিম দেশের সীমান্ত প্রহরী মুজাহিদ প্রমুখ) কবরে সকল মানুষের পরীক্ষা নিবেন। এ কারণে হাদিসে এ দুজন ফেরেশতাকে فتان (ফাত্তান) বা পরীক্ষক ফেরেশতা নামে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে তারা কবর বাসীদেরকে তিনটি প্রশ্ন করবেন। (যেগুলো নিম্নোক্ত হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে) যারা সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে হবে তারা সফলকাম এবং সৌভাগ্যবান। আর যারা পারবে না তারা ব্যর্থ ও হতভাগ্য।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। আর তা হল, তাদের কবরের সাথে জান্নাতের সংযোগ স্থাপন করা হবে। তারা সেখানে জান্নাতের নিয়ামতরাজি উপভোগ করবেন কিয়ামত পর্যন্ত। আর অকৃতকার্যরা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। ফেরেশতাগণ তাদের উপর কঠিন আজাব (শাস্তি) প্রয়োগ শুরু করবেন। জাহান্নামের সাথে তাদের কবরের সংযোগ স্থাপন করা হবে। সেখানে তারা কিয়ামত পর্যন্ত কঠিন আজাবের মধ্যে কালাতিপাত করবে। এ ব্যাপারে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।

সুতরাং বুঝা গেল, ‘কবরের ফিতনা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কবরের পরীক্ষা তথা দু জন ফেরেশতা কর্তৃক কবর বাসীদেরকে প্রশ্ন করা আর কবরের আজাব হল, সেখানকার শাস্তি। যারা এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে তারা কবরের আজাবের সম্মুখীন হবে আর যারা সফল হবে তা হতে রক্ষা পাবে। (আল্লাহর নিকট কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই)

❑ কবরে প্রশ্ন সংক্রান্ত হাদিস:

নিম্নে কবর নামক পরীক্ষার হলের প্রশ্ন সম্পর্কিত দুটি হাদিস পেশ করা হল: (যা আগেই ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে)

◈ প্রথম হাদিস:

আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ
“বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু জন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং প্রশ্ন করেন,
এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে?
তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে তাকাও। আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে।
কাতাদাহ রাহ. বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (কাতাদাহ) পুনরায় আনাস রা.-এর হাদিসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [(আনাস) (রাঃ)] বলেন, “আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে, তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কী বলতে?”
সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বললাম।

তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে যে, এতে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু জাতি (মানুষ ও জিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।” [সহীহ বুখারি, অধ্যায়: ২৩/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ২৩/৮৬. কবরের আজাব সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে]

এ হাদিসে কেবল একটি প্রশ্নের কথা এসেছে। তবে অন্য হাদিসে তিনটি প্রশ্নের কথা বর্ণিত হয়েছে।

◈ ২য় হাদিস: (একটি লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষ)

«فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاء:ِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَافْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ
“অতঃপর তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর তার নিকট দু জন ফেরেশতা আগমন করে তাকে উঠিয়ে বসাবে। অতঃপর বলবে:
তোমার রব কে?
সে বলবে: আল্লাহ।
অতঃপর তারা প্রশ্ন করবে: তোমার দ্বীন কি?
সে উত্তর দিবে: আমার দ্বীন ইসলাম।
অতঃপর প্রশ্ন করবে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে (নবী হিসেবে) প্রেরিত হয়েছিল?
সে বলবে: তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

অতঃপর তারা বলবে: কীভাবে জানলে?
সে বলবে: আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি।

অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবে: আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে।” [আহমদ ১৮৫৩৪, ইবনে আবি শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৭৬০সহীহ]

❑ আল্লাহর পথের যুদ্ধরত অবস্থায় শাহাদত বরণকারী এবং মুসলিম দেশের সীমান্ত প্রহরী মুজাহিদগণ কবরের প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না:

এ সংক্রান্ত তিনটি হাদিসে পেশ করা হল:

✪ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন,
عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا بَالُ الْمُؤْمِنِينَ يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ إِلاَّ الشَّهِيدَ قَالَ ‏ “‏ كَفَى بِبَارِقَةِ السُّيُوفِ عَلَى رَأْسِهِ فِتْنَةً ‏”‏
হে আল্লাহর রাসূল! শহীদ ব্যতীত অন্যান্য মুমিনগণ কবরের ফিতনার সম্মুখীন হবে এর কারণ কি? তিনি বললেন, তার মাথার উপর উজ্জ্বল তরবারি তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখবে।

[সুনান আন-নাসায়ী, অধ্যায়: ২১/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ১১২/ শহীদ সহীহ। আল-আহকাম ৩৬, আত-তা’লীকুর রাগীব ২/১৯৭]

✪ সালমান ফারেসী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
«رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ»
“আল্লাহর পথে একদিন বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, একমাসের সওম পালন ও সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের এ পুণ্য ‘আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি পাবে। [সহিহ মুসলিম]

✪ অন্য হাদিসে এসেছে, ফাদালাহ ইবনে উবাইদ রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كُلُّ الْمَيِّتِ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلَّا الْمُرَابِطَ، فَإِنَّهُ يَنْمُو لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَيُؤَمَّنُ مِنْ فَتَّانِ الْقَبْرِ
“প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল শেষ হয়ে যায় কিন্তু সীমান্ত প্রহরায় সাওয়াব বন্ধ হয় না। কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলের সাওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।”
[সুনান আবু দাউদ (তাহকিক কৃত), অধ্যায়: ৯/ জিহাদ, পরিচ্ছদ: ১৬. সীমান্ত পাহারা দেয়ার ফযিলত-সহিহ]

কতিপয় আলেম বলেন, নবী-রাসূলগণকেও কবরে এই তিনটি প্রশ্ন করা হবে না। কেননা, তাদের উম্মতদেরকে তাদের সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে।

মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে বেঁচে থাকা অবস্থায় কবরের প্রশ্ন সমূহের উত্তর দেওয়ার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করেন এবং কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে রক্ষা করেন। আমিন।
▬▬▬❂❂❂▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

Translate