Wednesday, March 17, 2021

উমর ইবনুল খাত্তাব

 

প্রথম জীবন

উমর মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।[১৩] তার বাবার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম। তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন। যৌবনে তিনি মক্কার নিকটে তার বাবার উট চরাতেন। তার বাবা বুদ্ধিমত্তার কারণে গোত্রে সম্মান লাভ করেছিলেন।[১৪] উমর বলেছেন : "আমার বাবা খাত্তাব ছিলেন একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তিনি আমাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন। যদি আমি কাজ না করতাম তবে তিনি আমাকে মারধর করতেন এবং ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত কাজ করাতেন।"[১৫]

ইসলাম পূর্ব আরবে লেখাপড়ার রীতি বেশি প্রচলিত ছিল না। এরপরও তরুণ বয়সে উমর লিখতে ও পড়তে শেখেন। নিজে কবি না হলেও কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল।[১৬] কুরাইশ ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি তার কৈশোরে সমরবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগির হিসেবে তার খ্যাতি ছিল।[১৬][১৭] এছাড়াও তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। তার বাবার পরে তিনি তার গোত্রের একজন বিরোধ মীমাংসাকারী হন।[১৮]

উমর একজন বণিক হিসেবে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। এখানে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং এসব সমাজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত হন।

মুহাম্মদ এর যুগ[সম্পাদনা]

ইসলামের প্রতি সহিংসতা[সম্পাদনা]

৬১০ সালে [[আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ(সা:) ইসলাম প্রচার শুরু করেন। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো উমর প্রথম পর্যায়ে ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তার হাতে মুসলিমরা নির্যাতিত হয়।[১৯] বিরোধিতার এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মদ কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।[২০] তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন।[১৯]

ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]

উমর ৬১৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। ওমরের ইসলাম গ্রহণের দুটি বর্ননা রয়েছে[২১], একটি হল, ইবনে সাদ, ইবনে হিশাম, দারকুতনী ও ইবনে আসীরের বর্ননায়,[২১] উমর ইসলামী নবী মুহাম্মদ কে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে তার বন্ধু নাইম বিন আবদুল্লাহর সাথে দেখা হয়। নাইম গোপনে মুসলিম হয়েছিলেন তবে উমর তা জানতেন না। উমর তাকে বলেন যে তিনি মুহাম্মদ কে হত্যার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। এসময় উমর তার বোন ও ভগ্নিপতির ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে জানতে পারেন।[২২]

এ সংবাদে রাগান্বিত হয়ে উমর তার বোনের বাড়ির দিকে যাত্রা করেন। বাইরে থেকে তিনি কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পান। এসময় খাব্বাব ইবনুল আরাত তাদের সুরা তাহা বিষয়ে পাঠ দিচ্ছিলেন। [২২] উমর ঘরে প্রবেশ করলে তারা পাণ্ডুলিপিটি লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু উমর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে একপর্যায়ে তাদের উপর হাত তোলেন। এরপর বোনের বক্তব্যে তার মনে পরিবর্তন আসলে তিনি স্নেহপূর্ণভাবে পাণ্ডুলিপিটি দেখতে চান। কিন্তু তার বোন তাকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করতে বলেন এবং বলেন যে এরপরই তিনি তা দেখতে পারবেন।[২২] উমর গোসল করে পবিত্র হয়ে সুরা তাহার আয়াতগুলো পাঠ করেন। এতে তার মন ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। এরপর তিনি মুহাম্মদ এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর।[২৩]

ইসলাম গ্রহণের পর উমর এসময় মুসলিমদের সবচেয়ে কঠোর প্রতিপক্ষ আবু জাহলকে তা জানান। উমরের ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা বাধার সম্মুখীন হয় নি। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে তিনি মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। তিনি ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন।[২২] সেদিন মুহাম্মদ তাকে "ফারুক" উপাধি দেন।[২২]

তবে আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইবনে হিশামের বর্ননায় ওমরের ইসলাম গ্রহণের আরেকটি ঘটনা এসেছে যে[২১], এক রাতে ওমর ইসলামী নবী মুহাম্মদ কে কাবার প্রাঙ্গণে নামাজরত অবস্থায় অনুসরণ করছিলেন, তখন তার মুখে কুরআনের বাণী শুনে তার মনে হলো, এটি মানব রচিত নয়, ঈশ্বর রচিত বাণী। তখন তিনি মুহাম্মাদ কে জানালেন যে ইসলাম তার অন্তরে প্রবেশ করেছে।[২১]

বুখারীর বর্ননায় আরও রয়েছে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওমর ইবনে খাত্তাব তার বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদকে ইসলাম গ্রহণের কারণে দড়ি দিয়ে বেধে মারধর করতেন। তবে ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ভীত অবস্থায় লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। স্থানীয় জণগণ তার ধর্মান্তরিত হওয়া জানতে পেরে তাকে মারতে আসলে আল-আস ইবনে ওয়াইল তাকে রক্ষা করেন।[২১]

তবে সকল বর্ননাকারী এ ব্যাপারে একমত, ওমরের ইসলাম গ্রহণে মুসলমানদের মনোবল যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। সহীহ বুখারীর বর্ননামতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ প্রসঙ্গে বলেন,[২১]

যখন উমর মুসলিম হন তখন থেকে আমরা সমানভাবে শক্তিশালী হয়েছিলাম এবং মান সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পেরেছিলাম।[২২]

মদিনায় হিজরত[সম্পাদনা]

মক্কায় নির্যাতনের কারণে এবং মদিনা (তৎকালীন ইয়াসরিব) থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসায় মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করতে থাকে। অধিকাংশ ব্যক্তিই ধরা পড়ার ভয়ে রাতে হিজরত করতেন। কিন্তু উমর দিনের বেলায় (বিশজন সাহাবীসহ) প্রকাশ্যে হিজরত করেন। তখন তিনি কাফেরদের লক্ষ্য করে বলেন,‘কে আছো নিজ স্ত্রীকে বিধবা করবে? কে আছো নিজ সন্তানকে এতীম করবে? আসো আমার সঙ্গে মোকাবেলা করো!' [২৪][২৫] এসময় তার সাথে সাঈদ ইবনে যায়িদ ছিলেন।[২৩]

মদিনার জীবন[সম্পাদনা]

খলিফা ওমরের তরবারি।

মুহাম্মদ মদিনায় হিজরত করার পর মুহাম্মাদ (সাঃ) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দেন। উমরের সাথে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে উমর খলিফা হলে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা হিসাবরক্ষণের প্রধান পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পান।

৬২৪ সালে উমর বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৬২৫ সালে তিনি উহুদের যুদ্ধেও অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি বনু নাদির গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানেও অংশ নিয়েছেন।

৬২৫ সালে মুহাম্মদ এর সাথে উমরের মেয়ে হাফসা বিনতে উমরের বিয়ে হয়।[২৬]

৬২৭ সালে তিনি খন্দকের যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী বনু কুরাইজা গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিয়েছেন।[২৭] ৬২৮ সালে তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে অংশ নেন এবং সাক্ষ্য হিসেবে এতে স্বাক্ষর করেন।

৬২৮ সালে উমর খায়বারের যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।

৬৩০ সালে মক্কা বিজয়ের সময় উমর এতে অংশ নেন। পরে হুনায়নের যুদ্ধ এবং তাইফ অবরোধে তিনি অংশ নিয়েছেন। তাবুকের যুদ্ধে সাহায্য হিসেবে তিনি তার সম্পদের অর্ধেক দান করে দিয়েছিলেন।বিদায় হজ্জেও তিনি অংশ নিয়েছেন।[২৮]

মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ বা বিদায়[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর উমর প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চান নি।[২৯] বিদায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং বলেন যে মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেননি বরং মুসা (আ.) যেমন চল্লিশ দিন পর ফিরে এসেছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)ও তদ্রূপ ফিরে আসবেন এবং যে বলবে নবী মারা গেছেন আমি তার হাত ও পা কাটব।[৩০]

এসময় আবু বকর এসে ঘোষণা করেন,

তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর পূজা করতো তারা জেনে রাখুক যে মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতো, অবশ্যই আল্লাহ সর্বদাই জীবিত থাকবেন কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।[৩১]

আবু বকর কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন :

মুহাম্মদ একজন রাসুল ছাড়া আর কিছু নন। তার পূর্বে সকল রাসুল গত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পিঠ ফিরিয়ে পিছু হটবে ? আর যে পিঠ ফিরিয়ে সরে পড়ে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন।" (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪৪)

এরপর উমর সত্য অনুভব করেন এবং শান্ত হন। সুন্নিদের দৃষ্টিতে মৃত্যু সংবাদ অস্বীকার করা মূলত মুহাম্মদ (সাঃ)এর প্রতি তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।[২৯]

খিলাফতের প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ এর মৃত্যুর পর খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় উমর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।[৩২] মুহাম্মদ এর দাফনের প্রস্তুতি চলার সময় কিছু মুসলিম শহরের উপকণ্ঠে সাকিফা নামক স্থানে তার উত্তরসূরির বিষয়ে আলোচনায় বসে। এরপর আবু বকর(রা), উমর(রা) এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ(রা) এখানে উপস্থিত হন। এসময় আনসারদের মধ্য থেকে দাবি উঠে যে উত্তরসূরি আনসারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করতে হবে।[৩২] উমর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে উত্তরাধিকার মুহাজিরদের মধ্য থেকে হতে হবে।[৩৩] কিছু গোত্র ইসলামপূর্ব গোত্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল যাতে প্রত্যেক গোত্রের নেতা গোত্রকে নেতৃত্ব দিত। শেষপর্যন্ত আবু বকরকে খলিফা হিসেবে অধিক যোগ্য বলে দাবি করে তার প্রতি উমর আনুগত্য প্রকাশ করেন। এই সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত সবাই মেনে নেয়।

ইসলামী খিলাফতের প্রতিষ্ঠা উমরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ধরা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

খলিফা আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যুগ[সম্পাদনা]

আবু বকরের শাসনামলে উমর তার একজন প্রধান সচিব ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। রিদ্দার যুদ্ধের সময় প্রথমে তিনি আবু বকরের কিছু মতের সাথে একমত না হলেও পরে তা মেনে নেন এবং তাকে সহায়তা করেন। শেষপর্যন্ত বিদ্রোহীদের দমন করে আরব উপদ্বীপকে একতাবদ্ধ করা হয়।

ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফিজ শহিদ হলে উমর কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলনের জন্য আবু বকরের কাছে আবেদন জানান। আবু বকর প্রথমে তাতে রাজি না থাকলেও পরে সম্মত হন। এর ফলে কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়।বু বকর মৃত্যুর পূর্বে উমরকে তার উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে যান।[৩৪]

খলিফার দায়িত্বগ্রহণ[সম্পাদনা]

উমর কঠোর প্রকৃতির শাসক ছিলেন। তাই অনেকে তার শাসন সমর্থন করতে চান নি। তবে এরপরও আবু বকর তাকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করে যান।

উমর তার ইচ্ছাশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, রাজনৈতিক সচেতনতা, নিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার এবং দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সদয় আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন।[৩৫]

উল্লেখ করা হয় যে আবু বকর তার উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টাদের বলেছিলেন :

আমার কোমলতার জন্য তার (উমর) কঠোরতা ছিল। যখন খিলাফতের ভার তার কাঁধে আসবে তখন সে আর কঠোর থাকবে না। যদি আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে কাকে আমি আমার উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়েছি, তবে আমি তাকে বলব যে আপনার লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছি।[৩৬]

উত্তরসূরি হিসেবে উমরের ক্ষমতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে আবু বকর অবগত ছিলেন। উমর সম্পূর্ণ বিবাদহীনভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন।

মৃত্যূর পূর্বে আবু বকর উমরকে ডেকে তার অসিয়ত লিখতে বলেন যাতে তিনি উমরকে নিজের উত্তরসূরি ঘোষণা করে যান। অসিয়তনামায় উমরকে ইরাক ও সিরিয়া জয়ের অভিযান চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আবু বকরের সিদ্ধান্ত ইসলামী খিলাফতকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিল।

__খলিফা হিসেবে শাসন__ ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। একই দিনে উমর খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ[সম্পাদনা]

ক্ষমতাপ্রাপ্তি পর সকল মুসলিম তাকে বায়াত প্রদান করেন। তার ব্যক্তিত্বের কারণে জনতা তাকে সমীহ করত। মুহাম্মদ হুসাইন হায়কলের মতে উমরের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তার প্রজা ও মজলিশ আল শুরার সদস্যদের মন জয় করা।[৩৭]

উমর বাগ্মী ব্যক্তি ছিলেন। জনগণের মনে স্থান করে নেয়ার জন্য তার এই দক্ষতা সাহায্য করেছে।[৩৮]

শাসক হিসেবে উমর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।[৩৯] ফিদাকের জমির ব্যাপারে তিনি আবু বকরের নীতির অনুসরণ করেছেন এবং একে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের নীতি চালু রাখেন।

রিদ্দার যুদ্ধে কয়েক হাজার বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীকে দাস হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল। উমর এসকল বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেন।[৪০] এই ঘোষণা বেদুইন গোত্রগুলোর কাছে উমরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল।

খিলাফত ও বেসামরিক প্রশাসন[সম্পাদনা]

উমরের রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সরকার এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। এতে খলিফা ছিলেন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। পুরো সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। পাশাপাশি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এসব অঞ্চলের কিছু স্বায়ত্তশাসিত এলাকা খিলাফতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়। প্রদেশগুলো প্রাদেশিক গভর্নর বা ওয়ালি কর্তৃক শাসিত হত। উমর ব্যক্তিগতভাবে ওয়ালিদের নিযুক্ত করতেন। প্রদেশগুলোকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করা হত। পুরো সাম্রাজ্যে প্রায় ১০০ এর মতো জেলা ছিল। প্রতিটি জেলা বা প্রধান শহর একজন অধস্তন গভর্নর বা আমিলের দায়িত্বে থাকত। আমিলরা সাধারণত উমর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন তবে প্রাদেশিক গভর্নররাও তাদের নিয়োগ দিতে পারতেন। প্রাদেশিক স্তরে অন্যান্য অফিসাররা ছিলেন :

  1. কাতিব, প্রধান সচিব
  2. কাতিব উদ দিওয়ান, সামরিক সচিব
  3. সাহিব উল খারাজ, রাজস্ব আদায়কারী
  4. সাহিব উল আহদাস, পুলিশ প্রধান
  5. সাহিব বাইতুল মাল, কোষাগার কর্মকর্তা
  6. কাজি, প্রধান বিচারক

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওয়ালি প্রদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্মরত থাকলেও কিছু প্রদেশে পৃথক সামরিক অফিসার থাকত। প্রতিটি নিয়োগ লিখিত আকারে দেওয়া হত। নিয়োগের সময় গভর্নরদের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হত। দায়িত্বগ্রহণের পর গভর্নররা জনতাকে প্রধান মসজিদে জড়ো করে তাদের সামনে নির্দেশনা পড়ে শোনাতেন।[৪১]

কর্মকর্তাদের প্রতি উমরের সাধারণ নির্দেশনা ছিল :

স্মরণ রেখ, আমি তোমাকে জনগণের উপর নির্দেশদাতা ও স্বেচ্ছাচার হিসেবে নিয়োগ দিই নি। আমি তোমাকে একজন নেতা হিসেবে পাঠিয়েছি যাতে জনগণ তোমার উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে। মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার প্রদান কর যাতে তারা অন্যায়ে পতিত না হয়। তাদের মুখের উপর নিজেদের দরজা বন্ধ কর না যাতে ক্ষমতাশালীরা দুর্বলদের ধ্বংস করতে না পারে। এবং নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চ মনে হয় এমন কোনো আচরণ কর না যা তাদের প্রতি স্বৈরাচারী শাসকরা করে থাকে।

এছাড়াও আরো কিছু বিধিনিষেধ গভর্নর ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উপর জারি করা হয়। প্রধান কর্মকর্তাদেরকে হজ্জের সময় মক্কায় আসতে হত এবং এসময় জনগণ তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ তুলতে পারত। দুর্নীতি রোধ করার জন্য উমর তার কর্মকর্তাদের উচ্চ বেতন দিতেন। নিজ অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ প্রধান থাকাবস্থায় গণিমতের সম্পদ ছাড়াও গভর্নররা বার্ষিক পাঁচ থেকে সাতহাজার দিরহাম করে পেতেন।

উমরের অধীনে সাম্রাজ্যকে নিম্নোক্ত প্রদেশে বিভক্ত করা হয় :

  1. আরবকে মক্কা ও মদিনা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
  2. ইরাককে বসরা ও কুফা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
  3. টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর উচ্চ অংশে আল-জাজিরা প্রদেশ ছিল।;
  4. সিরিয়া ছিল একটি প্রদেশ;
  5. ফিলিস্তিনকে ইলিয়া ও রামলাহ প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
  6. মিশরকে উচ্চ মিশর ও নিম্ন মিশর প্রদেশে বিভক্ত করা হয়;
  7. পারস্যকে খোরাসান, আজারবাইজান ও ফারস প্রদেশে বিভক্ত করা হয়।

রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য উমর সর্বপ্রথম বিশেষ বিভাগ গঠন করেন। এই বিভাগ প্রশাসনিক আদালত হিসেবে কাজ করত এবং এর আইনি কর্মকাণ্ড উমর ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতেন।[৪২] এই বিভাগ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার দায়িত্বে দেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে তিনি ঘটনাস্থল, অভিযোগ তদন্ত ও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে উমরের সহায়তা করতেন। কিছু ক্ষেত্রে অনুসদ্ধান কমিটির সাথে তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করা হত। ক্ষেত্রবিশেষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে মদিনায় তলব করে আদালতের সম্মুখীন করা হত। উমর তার গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনেন।[৪৩]

কিছু ক্ষেত্রে উমর পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন :

  1. উমর সর্বপ্রথম পাবলিক মিনিস্ট্রি প্রথা চালু করেন যেখানে সরকারি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা থাকত। গভর্নর ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠির অনুলিপিও রেকর্ড হিসেবে রক্ষিত থাকত।
  2. আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রথম পুলিশ বাহিনী নিয়োগ দেন।
  3. জনতা বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তিনি প্রথম তাদের শৃঙ্খলায় আনেন।[৪৪]

খাল[সম্পাদনা]

উমরের শাসনামলে বসরা শহর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পানীয় জল ও সেচের জন্য তিনি খাল খননের ব্যবস্থা করেন। আল তাবারির বিবরণ অনুযায়ী শহর পরিকল্পনাধীন অবস্থায় উতবা ইবনে গাজওয়ান প্রথম টাইগ্রিস নদী থেকে বসরা পর্যন্ত খাল খনন করেন। শহর তৈরির পর আবু মুসা আশআরিকে এর প্রথম গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়। আবু মুসা আশআরি বসরা ও টাইগ্রিস নদীকে সংযোগকারী দুইটি গুরুত্বপূর্ণ খাল খনন করান। এগুলো হল আল-উবুলা নদী ও মাকিল নদী। সমগ্র বসরা অঞ্চলে কৃষির উন্নয়ন এবং পানীয় জলের সরবরাহের জন্য এই খালদ্বয় মূল ভূমিকা পালন করেছে। উমর পতিত জমির চাষাবাদের জন্য নীতি গ্রহণ করেন। যারা এসকল জমি আবাদ করত তাদেরকে এসব জমি প্রদান করা হয়। এই নীতি উমাইয়া আমলেও চালু ছিল। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাল খননের ফলে ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে কৃষিক্ষেত গড়ে উঠে[৪৫]

সংস্কার[সম্পাদনা]

উমরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তাই বিশাল সাম্রাজ্যকে ধরে রাখার জন্য তিনি রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে শুরু করেন। তিনি বেশ কিছু প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করেন। নতুন বিজিত অঞ্চলে তিনি প্রশাসন গঠন করেন যাতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও আমলাতন্ত্র ছিল। তার শাসনামলে বসরা ও কুফা শহরদ্বয় নির্মিত ও সম্প্রসারিত হয়। ৬৩৮ সালে তিনি মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী বর্ধিত ও সংস্কার করেন।[৪৬]

নাজরান ও খায়বারের খ্রিষ্টান ও ইহুদিদেরকে সিরিয়া ও ইরাকে চলে যাওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তিনি ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে পুনরায় বসতি করার সুযোগ দেন। পূর্বে এই সুযোগ ছিল না।[৪৭] তিনি আদেশ জারি করেন যাতে বলা হয় যে এই খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদের নতুন বসতিতে সমপরিমাণ জমি প্রদান করা হয়। উমর অমুসলিমদের জন্য হেজাজে তিন দিনের বেশি অবস্থান করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।[৪৮] উমর সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয় বিভাগ হিসেবে গঠন করেন।

ফিকহের ক্ষেতে উমরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুন্নিরা তাকে একজন শ্রেষ্ঠ ফকিহ হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে।

৬৪১ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার হিসেবে বাইতুল মাল গঠন করেন। মুসলিমদেরকে বার্ষিক ভিত্তিতে ভাতা প্রদান করা হত।

নেতা হিসেবে উমর সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার সমসাময়িক অন্যান্য শাসকদের ব্যতিক্রম হিসেবে তিনি দরিদ্র মুসলিমদের মত জীবনযাপন করতেন। তার শাসনামলে হিজরি বর্ষপঞ্জি প্রণীত হয়।

জেরুজালেম সফর[সম্পাদনা]

উমরের জেরুজালেম সফর বেশ কিছু সূত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত একটি জুডিও-আরবি বিবরণে নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে :[৪৭]

"উমর অইহুদি এবং কিছু ইহুদিদেরকে হারাম আল শরিফ এলাকা পরিচ্ছন্ন করার আদেশ দেন। উমর এই কাজ পরিদর্শন করেছেন। আগত ইহুদিরা বাকি ফিলিস্তিনের ইহুদিদের চিঠি লিখে, এবং জানায় যে উমর ইহুদিদের জেরুজালেমে পুনরায় বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন। আলোচনার পর উমর সত্তরটি ইহুদি পরিবারকে ফেরার অনুমতি দেন। তারা শহরের দক্ষিণ অংশ অর্থাৎ ইহুদি বাজারে ফিরে আসে (সিলোয়ামের পানি, হারাম আল শরিফ ও এর ফটকের নিকটে থাকা তাদের লক্ষ্য ছিল)। এরপর অধিনায়ক উমর তাদের অনুরোধ মঞ্জুর করেন। টাইবেরিয়াস ও এর আশপাশের অঞ্চল থেকে সত্তরটি পরিবার তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ফিরে আসে।"

আলেক্সান্দ্রিয়ান বিশপ ইউটিকিয়াসের নামের একটি বিবরণে উল্লেখ আছে যে উমর হারাম আল শরিফে পড়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করিয়েছিলেন।

সামরিক সম্প্রসারণ[সম্পাদনা]

মুসলিমদের সিরিয়া জয়ের পর ৬৩৮ সালে উমর খালিদ বিন ওয়ালিদকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেন। ইতিপূর্বে খালিদ সিরিয়ায় মুসলিম বাহিনীর প্রধান ছিলেন। মানুষ খালিদকে বিজয়ের মূল চাবিকাঠি মনে করতে থাকায় উমর তাকে পদচ্যুত করেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে বিজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং কোনো মানুষ তা আনতে পারে না। আরবে দুর্ভিক্ষ এবং লেভান্টে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে ৬৩৮ থেকে ৬৩৯ সালের মধ্যে এক বছর সময় সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে মুলতবি ছিল। উমরের শাসনামলে লেভান্ট, মিশর, সিরেনাইকা, ত্রিপলিতানিয়া, ফেজান, পূর্ব আনাতোলিয়া এবং ব্যাক্ট্রিয়া, পারস্য, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, ককেসাস ও মাকরানসহ প্রায় সমগ্র সাসানীয় সাম্রাজ্য খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। মিশর ও নতুন বিজিত সাসানীয় সাম্রাজ্যে শাসনব্যবস্থা স্থিতিশীল করে তোলার জন্য উমর মৃত্যুর পূর্বে সামরিক অভিযান স্থগিত করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তার শাসন পশ্চিমে বর্তমান লিবিয়া থেকে পূর্বে সিন্ধু নদ এবং উত্তরে আমু দরিয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

দুর্ভিক্ষ[সম্পাদনা]

৬৩৮ সালে আরবে খরার ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ক্ষুধা ও মহামারীর কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মদিনায় সঞ্চিত খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর উমর সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও ইরাকের প্রাদেশিক গভর্নরদেরকে সাহায্যের জন্য চিঠি লেখেন। গভর্নরদের সময়মত পাঠানো সাহায্য হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল। সিরিয়ার গভর্নর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সর্বপ্রথম আবেদনে সাড়া দেন।

পরে আবু উবাইদা ব্যক্তিগতভাবে মদিনা সফর করেন এবং সেখানে দুর্যোগ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য উমরকে সহায়তা করেন।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] মদিনায় সাহায্য পৌঁছানোর পর উমর ইরাক, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার পথে মরুভূমির বসতির দিকে তার লোকদের পাঠান যাতে সেখানে অবস্থানরতদের সাহায্য পৌঁছানো যায়। ফলে লক্ষাধিক লোক প্রাণে বেঁচে যায়। ৬৩৯ সাল নাগাদ অবস্থার উন্নতি হয়। আরবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় দুর্ভিক্ষ শেষ হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ উমর ব্যক্তিগতভাবে তদারক করেছিলেন।

প্লেগ মহামারী[সম্পাদনা]

আরবে দুর্ভিক্ষ শেষ হওয়ার পর সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের অনেক জেলায় প্লেগ দেখা দেয়। সিরিয়া সফরের সময় পথিমথ্যে সিরিয়ার গভর্নর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সাথে সাক্ষাৎ হয় এবং তিনি উমরকে প্লেগ সম্পর্কে সতর্ক করে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। উমর আবু উবাইদাকে তার সাথে আসতে বললে আবু উবাইদা নিজ বাহিনীকে কঠিন অবস্থায় ফেলে মদিনা যাওয়াতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। ৬৩৯ সালে আবু উবাইদা প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এসময় সিরিয়ায় প্রায় ২৫,০০০ মুসলিম প্লেগে মৃত্যুবরণ করে। সে বছরে পরবর্তীতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব কমে এলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনের জন্য উমর সিরিয়া সফর করেন।[৪৯]

কল্যাণ রাষ্ট্র[সম্পাদনা]

দরিদ্রদের কাছাকাছি থাকার জন্য উমর নিজে সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার বাড়ি ছিল মাটির তৈরি এবং তিনি প্রতি সন্ধ্যায় জনগণের অবস্থা পরিদর্শনের জন্য রাস্তায় বের হতেন। উমর বাইতুল মাল নামক রাষ্ট্রীয় কোষাগার স্থাপন করেন।[৫০][৫১][৫২] বাইতুল মাল থেকে মুসলিম ও অমুসলিম দরিদ্র, অসহায়, বৃদ্ধ, এতিম, বিধবা ও অক্ষমদেরকে সহায়তা প্রদান করা হত। বাইতুল মাল পরবর্তী উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের সময়েও প্রচলিত ছিল। এছাড়াও উমর শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন।[৫৩][৫৪][৫৫] দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ মহামারীর জন্য ৬৩৮-৬৩৯ সময়ে সামরিক অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল।

মুক্ত বাণিজ্য[সম্পাদনা]

ইতিপূর্বে ইহুদি ও স্থানীয় খ্রিষ্টানদের উপর বাইজেন্টাইন-সাসানীয় যুদ্ধের ব্যয়ভার মেটানোর জন্য অধিক হারে করারোপ করা হয়েছিল। মুসলিমদের অভিযানের সময় তারা বাইজেন্টাইন ও পারস্যের বিপক্ষে মুসলিমদের সহায়তা করে। ফলে বিজয় তরান্বিত হয়েছিল।[৫৬][৫৭] ইসলামী রাষ্ট্রে নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এসব অঞ্চলের জনগোষ্ঠী মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা ভোগ করে। এর ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বাণিজ্য সহজতর হয়। বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার জন্য ইসলামী বাণিজ্যের পরিবর্তে সম্পদের উপর কর ধার্য করা হয়।[৫৮] মুসলিমরা দরিদ্রদের যাকাত দিতে বাধ্য থাকে। মুহাম্মদ কর্তৃক মদিনা সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে তাদের নিজেদের আইনে চলতে পারত এবং নিজস্ব বিচারকের কাছে বিচার চাইতে পারত।[৫৯][৬০][৬১] একারণে তারা শুধু নিরাপত্তার জন্য কর প্রদান করত। সাম্রাজ্যের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ার জন্য বাইজেন্টাইন ও পারস্যের বিজিত অঞ্চলগুলোতে কর আদায় প্রক্রিয়া পূর্বের মতো রাখা হয়। কর ব্যবস্থার আওতায় লোকেরা পূর্বের বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সময়ের চেয়ে কম হারে কর প্রদান করত।

হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]


মসজিদে নববীতে উমরের কবরের বহির্ভাগ। এখানে মুহাম্মদ , আবু বকর ও উমর তিনজনের কবর পাশাপাশি অবস্থিত।

৬৪৪ সালে উমর একজন পার্সি‌য়ানের হাতে নিহত হন।[৬২] হত্যাকাণ্ডটি কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

পিরুজ নাহাওয়ান্দি (আবু লুলু বলেও পরিচিত) নামক এক পার্সি‌য়ান দাস উমরের কাছে তার মনিব মুগিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। তার অভিযোগ ছিল যে তার মনিব মুগিরা তার উপর বেশি কর ধার্য করেছে। উমর এরপর মুগিরার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। মুগিরার উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় উমর রায় দেন যে পিরুজের উপর ধার্য করা কর ন্যায্য। পিরুজ বায়ুকল (উইন্ডমিল) তৈরি করতে জানত। উমর তাকে বলেন যে সে যাতে তাকে একটি বায়ুকল তৈরি করে দেয়। পিরুজ এর উত্তরে বলে যে যে এমন এক বায়ুকল তৈরি করবে যা পুরো পৃথিবী মনে রাখবে।[৬৩]

পিরুজ উমরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ফজরের নামাজের পূর্বে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে। এখানে নামাজের ইমামতি করার সময় উমরকে সে আক্রমণ করে। তাকে ছয়বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় সে আরো কয়েকজনকে আঘাত করে যাদের কয়েকজন পরে মারা যায়। এরপর পিরুজ নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করে।

তিনদিন পর উমর আঘাতের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।[৬৪][৬৫]

তার ইচ্ছানুযায়ী আয়িশার অনুমতিক্রমে তাকে মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ (সাঃ) ও আবু বকরের পাশে দাফন করা হয়।

পরবর্তী অবস্থা[সম্পাদনা]

মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় উমর তার উত্তরসূরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে যান। তিনি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এর সদস্যরা হলেন আবদুর রহমান ইবনে আউফসাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসতালহা ইবনে উবাইদিল্লাহউসমান ইবনে আফফানআলি ইবনে আবি তালিব ও জুবায়ের ইবনুল আওয়াম[৬৬]

এই কমিটিকে নিজেদের মধ্য থেকে একজন খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা সবাই আশারায়ে মুবাশশারার সদস্য ছিলেন।[৬৭] এসময় জীবিত থাকা সত্ত্বেও আরেক আশারায়ে মুবাশশারা সাঈদ ইবনে যায়িদ বাদ পড়েন। উমরের সাথে রক্তসম্পর্ক ছিল বিধায় তাকে এর বাইরে রাখা হয়। উমর তার আত্মীয়দেরকে এধরনের কাজে নিয়োগ দিতেন না।[৬৮]

পঞ্চাশ জন সৈনিকের একটি দলকে কমিটির বৈঠক চলার সময় ভবনের বাইরে প্রহরায় রাখার জন্য উমর নিযুক্ত করেন। বৈঠক চলাকালীন সময়ে আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর ও আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তারা উমরকে হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরিটি দেখেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজকে হামলার এক রাত আগে সন্দেহজনকভাবে কিছু আলোচনা করতে দেখেন। তাকে দেখে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং একটি ছুরি মাটিতে পড়ে যায় যা উমরের উপর হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরির অবিকল অনুরূপ। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর নিশ্চিত করেন যে হামলার কয়েকদিন আগে তিনি এই ছুরিটি তিনি একবার হরমুজানের কাছে দেখেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে মদিনায় বসবাসরত পারসিয়ানরা এই হামলার জন্য দায়ী। এতে উমরের সন্তান উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর উত্তেজিত হয়ে মদিনার পারসিয়ানদের হত্যা করতে উদ্যত হন। তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজের মেয়েকে হত্যা করেন। মদিনার লোকেরা তাকে আরও হত্যাকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করে। উমর এ সংবাদ জানতে পেরে উবাইদুল্লাহকে বন্দী করার আদেশ দেন এবং বলেন যে পরবর্তী খলিফা উবাইদুল্লাহর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।[৬৪]

উমর ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। ৭ নভেম্বর উসমান ইবনে আফফান তৃতীয় খলিফা হিসেবে তার উত্তরসূরি হন। দীর্ঘ আলোচনার পর বিচারে সিদ্ধান্ত হয় যে উবাইদুল্লাহ ইবনে উমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে তাকে রক্তমূল্য পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উমরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কায় উবাইদুল্লাহর শাস্তি হ্রাস পেয়েছিল।

রাজনৈতিক অবদান[সম্পাদনা]

উমর একজন রাজনৈতিক কৃতি ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য হন। ইসলামী সাম্রাজ্যের স্থপতি হিসেবে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুহাম্মদ এর যুগে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর পর আবু বকরের খলিফা হিসেবে নির্বাচন উমরের দক্ষতার কারণে সহজ হয়। আবু বকরের শাসনামলে তিনি তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। আবু বকরের উত্তরসূরি হিসেবে খলিফা হওয়ার পর উমর বেদুইন গোত্রগুলোর আরো কাছাকাছি আসেন। দুর্ভিক্ষের সময় তার দক্ষ পরিচালনার ফলে লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। তিনি একটি কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন যা বিশালাকার ইসলামী সাম্রাজ্যকে পরিচালনায় সহায়ক হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য তিনি সফল গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন।[৬৯] তার বিচারবিভাগীয় সংস্কার সমসাময়িকের চেয়ে বেশি আধুনিক ছিল। বিজিত বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় শাসনাধীন অঞ্চলে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পূর্বের চেয়ে অনেক কম করারোপ করায় এসব স্থানের জনগণের কাছেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। এসব স্থানের স্থানীয় প্রশাসন আগের মতোই রেখে দেওয়া হয় এবং অনেক বাইজেন্টাইন ও পারসিয়ান কর্মকর্তাকে মুসলিম গভর্নরদের অধীনে দায়িত্বে বহাল রাখা হয়।

উমর তার গভর্নরদেরকে দুই বছরের বেশি মেয়াদে নিয়োগ দিতেন না। গভর্নররা যাতে নিজ নিজ অঞ্চলে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে না পারে তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দক্ষ সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও জনপ্রিয়তা অতি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদকে পদচ্যুত করেন। তার আশঙ্কা ছিল যে মুসলিমরা আল্লাহর চেয়ে খালিদের উপর বেশি নির্ভর করছে। সাম্রাজ্যের আকার ব্যাপক বৃদ্ধির পর তিনি আরো অভিযানের পরিবর্তে বিজিত অঞ্চলে শাসনব্যবস্থা সংহত করায় মনোযোগী হন। রাতের বেলা তিনি মদিনার জনসাধারণের অবস্থা যাচাইয়ের জন্য ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হতেন। এই প্রথা পরবর্তী কালের কিছু শাসকের মধ্যেও দেখা যায়। তিনি বলেছেন,

যদি ইউফ্রেটিসের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা যায় তবে উমর সে জন্য দায়ী থাকবে।

— (উমর)

দ্য ডিক্লাইন এন্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার গ্রন্থে এডওয়ার্ড গিবন উমরের সম্পর্কে বলেছেন:

"Yet the abstinence and humility of Umar were not inferior to the virtues of Abu Bakr: his food consisted of barley bread or dates; his drink was water; he preached in a gown that was torn or tattered in twelve places; and a Persian satrap, who paid his homage as to the conqueror, found him asleep among the beggars on the steps of the mosque of Muslims."

গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলন ধর্মীয় ক্ষেত্রে তার অন্যতম বৃহৎ অবদান।[৭০] এ ব্যাপারে প্রথম খলিফা আবু বকরকে উমর রাজি করিয়েছিলেন। মুহাম্মদ এর সময়ে কুরআন সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ থাকলেও তা গ্রন্থাকারে ছিল না। ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ শহিদ হওয়ার পর উমর কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার পরামর্শক্রমে আবু বকর কুরআন সংকলনে রাজি হন এবং জায়েদ ইবনে সাবিতকে একাজের দায়িত্ব দেন।

সামরিক অবদান[সম্পাদনা]

কাদিসিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসশাহনামার পাণ্ডুলিপির চিত্রায়ন।

উমর একজন দক্ষ কুস্তিগির ছিলেন। রণকৌশল প্রণয়নেও তিনি মেধাবী ছিলেন। রিদ্দার যুদ্ধের সময় খালিদের পাশাপাশি তিনিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।[৭১]

পারসিয়ান-রোমান মৈত্রী ভেঙে দেওয়া তার অন্যতম বৃহৎ সাফল্য। বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস এবং সাসানীয় সম্রাট তৃতীয় ইয়াজদিগার্দ উমরের বিপক্ষে মিত্রতায় আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ইয়াজদিগার্দ হেরাক্লিয়াসের সাথে পরিকল্পনামাফিক সমন্বয় করতে পারেন নি। উমর এই ব্যর্থতার সুযোগ নেন এবং সফলভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হন। ইয়ারমুকের যুদ্ধের সময় তিনি সাহায্য হিসেবে পাঠানো সৈনিকদের বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একের পর এক উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে বাইজেন্টাইন বাহিনীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। অন্যদিকে ইয়াজদগির্দ আলোচনায় বসায় উমর সিরিয়া থেকে ইরাকের দিকে সৈন্য পরিচালনার সময় পান। এই সেনারা কাদিসিয়ার যুদ্ধে ফলাফল নির্ধারণের ভূমিকা রাখে। এই দুই যুদ্ধ ভাগ্যনির্ধারণী রূপ নেয় এবং ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়।

তার কৌশলগত দক্ষতার কারণে মুসলিমরা ৬৩৮ সালে এমেসার দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হয়। এসময় বাইজেন্টাইনপন্থী জাজিরার খ্রিষ্টান আরবরা বাইজেন্টাইনদের সাহায্য করেছিল।

পারস্য বিজয় উমরের সবচেয়ে বড় সামরিক অর্জন। এসময় পুরো পারস্য সাম্রাজ্য জয় করে নেওয়া হয়। সম্রাট তৃতীয় ইয়াজদগির্দ মধ্য এশিয়ায় পালিয়ে যান। উমর প্রায় ৩৬,০০০ শহর বা দুর্গ জয় করেন এবং বিজিত অঞ্চলে ১,৪০০ মসজিদ নির্মাণ করা হয়।[৭২]

ধর্মীয় অবদান[সম্পাদনা]

সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

সুন্নিরা উমরকে খুবই শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। তাকে খুলাফায়ে রাশেদিনের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশশারা সম্মানপ্রাপ্ত সাহাবীদের মধ্য অন্যতম। ন্যায়পরায়ণতার জন্য তাকে "ফারুক" বা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী উপাধি দেওয়া হয়েছে। উমরের ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার মুসলিমদের জন্য প্রকাশ্যে নামাজ পড়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়।

শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

দ্বাদশবাদী শিয়ারা উমরকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। তবে জায়েদি শিয়ারা উমরের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা রাখে।

পরিবার[সম্পাদনা]

উমর সর্বমোট নয়বার বিয়ে করেন। তার ১৪ সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন ছেলে ও ৪ জন মেয়ে।

ছেলে : আবদুল্লাহ ইবনে উমর
ছেলে : আবদুর রহমান ইবনে উমর (জ্যেষ্ঠ জন)
ছেলে : আবদুর রহমান ইবনে উমর
মেয়ে : হাফসা বিনতে উমর
  • স্ত্রী : উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা (তালাকপ্রাপ্ত)[৭৯]
ছেলে : উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর
ছেলে : জায়েদ ইবনে উমর[৭৯]
  • স্ত্রী : কুতাইবা বিনতে আবি উমাইয়া আল মাখজুমি (তালাকপ্রাপ্ত)
  • স্ত্রী : উম্মে হাকিম বিনতে আল হারিস ইবনে হিশাম[৮০]
মেয়ে : ফাতিমা বিনতে উমর
  • স্ত্রী : জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)[৭৯][৮১][৮২]
ছেলে : আসিম ইবনে উমর
  • স্ত্রী : আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল[৮১][৮৩]
ছেলে : ইয়াদ ইবনে উমর
ছেলে : জায়েদ ইবনে উমর ("ইবনুল খালিফাতাইন" বা "দুই খলিফার (আলি ও উমর) সন্তান" বলে পরিচিত)
মেয়ে: রুকাইয়া বিনতে উমর
  • স্ত্রী : লুহাইহা
ছেলে: আবদুর রহমান ইবনে উমর (কনিষ্ঠ জন)
  • স্ত্রী : ফুকাইহা
মেয়ে: জয়নব বিনতে উমর


জুবায়ের ইবনে বাক্কার (আবু শাহমাহ বলে পরিচিত) নামে তার আরেক সন্তান ছিল তবে তার মা কে তা জানা যায় না।[৭৯]

Translate