Friday, February 26, 2021

ইসলামে মত বিরোধের কারণ- নোমান আলী খানের চমৎকার বক্তব্যের সার-সংক্ষেপ

 


আল্লাহ্ তাঁর কিছু বান্দাকে বিভিন্ন বিষয় বোঝার এবং উপলব্ধি করার এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তাদের ব্যাখ্যা শোনার পর আপনার মনে হবে যে, আমি কিছুই জানি না। তারা যদি কোন সাধারণ বিষয় নিয়েও আলাপ করে যেটা আপনার মতে আপনি ভালই জানেন কিš‘ আলাপ শেষে ‘সুবাহান্নাল্লাহ্’ আপনার মনে হবে এটা অসাধারণ ছিল। ইনশাআল্লাহ এই রকম কিছু বিষয় নিয়ে এখানে আলাপ করা হবে যেটা আমার কাছে তাৎপর্যকর বলে মনে হয়েছে। যেটা সবার জন্য কাজে লাগবে।

উপরের চিত্রে আমরা যা দেখতে পা”িছ তার মাধ্যমে এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। সেটা আজকের আলোচ্য বিষয়টি সবার সামনে সহজে উপ¯’াপন কারার জন্য। এখানে একদম ভিতরে একটা বৃত্ত। এর বাইরে আরও বড় আরও বড় আরও বড়, এই ছবিটা নিয়েই আজকে আমরা কথা বলব। মূলত আমাদের ধর্মের বৃহত্তম রূপটা আমরা এই ছবি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবো।

একদম কেন্দ্র আমাদের ধর্মের মূল যেটা রয়েছে, মূলত আমাদের ধর্ম ইসলামের মূল নীতিটা আমরা এই ছবির মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব। সেটাকে আমরা বলতে পারি আমাদের দীনে রসূল। আমাদের ধর্মের নির্যাস তথা মূলনীতি। অর্থাৎ আমাদের ধর্মের অত্যবশ্যকীয় নীতিমালা সমূহ। মোটের উপর আমাদের ধর্মটা হ”েছ একগু”ছ নীতিমালার সমাহার। বিষয়টিকে আমরা এইভাবে দেখতে পারি-এইসব নীতিমালা হলো সেটাই যেটা আল্লাহ্ একজন মানুষের কাছ থেকে চান। আল্লাহ্ একজন মানুষের কাছ থেকে কি চান? কি ধরণের গুনাবলী, কি ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী, আবেগ, চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস একজন মানুষের থাকা উচিৎ। আপনারা যদি জানতে চান এই অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কি কি, আল্লাহ্ কোরআনে খুবই সুন্দর ভাবে এইগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি এটা করেছেন “লা-আল্লাহ্ তাত্তাকুম” যেমন বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করার পর তিনি বলেন-“লা-আল্লাহ্ তাত্তাকুম, লা-আল্লাহ্কুম তাত্তাকুন, লা-আল্লাহকুম তাসকুরূন, লা-আল্লাহকুম তাযাক্বারূণ”। যাতে করে তোমরা মনে রাখো, যাতে করে তোমরা শোকরকারী হও, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন কর, যাতে করে তোমরা চিন্তা কর। এই সবগুলোই হল মৌলিক গুনাবলী যা একজন মানুষের থাকা উচিৎ। একজন মানুষের বিবেচনা মূলক দৃষ্টিভঙ্গী থাকা উচিৎ, তার চিন্তাশীল হওয়া উচিৎ, তার সর্বদা আল্লাহকে স্মরণে রাখা উচিৎ, তার মধ্যে আল্লাহ্ ভীতি থাকতে হবে, তার আল্লাহর প্রতি শোকর গোজার হওয়া উচিৎ। “লা-আল্লাহ কুম তাশকুরূণ” যাতে করে তোমরা শোকরকারী হতে পার। আল্লাহ যখনই ‘লা-আল্লাহকুম’ বলেন এবং এই ধরণের কাজগুলো উল্লেখ করেন এর মানে তিনি বোঝাতে চান এই গুলো হল সেইসব গুনাবলী যেগুলো আমাদের আয়ত্ব করতে হবে। আমি তখনই আল্লাহর একজন সফল বান্দা হতে পারবো যখন নিজের জীবনে এই সব গুনাবলীর প্রতিফলন ঘটাতে পারবো।

সবগুলো বিষয় এখানে উল্লেখ করবো না। কয়েকটা বিষয়ই বার বার আপনাদের সামনে বলার চেষ্টা করবো।

সুষ্ঠভাবে চিন্তা করতে পারা-‘লা-আল্লাকুম ত্বাকিলুন’, ‘লা-আল্লাকুম তাসকুরুন’-যাতে করে তোমরা শোকর কারী হও, লা-‘আল্লাকুম তাযাক্কারুন’-যাতে করে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর, ‘লা-আল্লাকুম তাত্তাকুম’- যাতে করে তোমরা নিজেকে রক্ষা করতে পারো বিপদ থেকে, সতর্ক থাকতে পারো এবং অবশ্যই ‘লা-আল্লাকুম তুফলিহুন’- যাতে করে তোমরা পরকালে সফল হতে পারো। আল্লাহ প্রায় কোরআনে লা-আল্লাকুম তুফলিহুন বলেছেন। এইগুলো হ”েছ মৌলিক কিছু গুনাবলী। এসব ছাড়াও অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের কাছে কি চান এই সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন এই শব্দগুলোর মাধ্যমে ‘ইন্নালাহা ইউহিব্বু’ অথবা ‘ওয়া আল্লাহু ইউহিব্বু’ আল্লাহ মুত্তাকীনদের ভালবাসেন, আল্লাহ মুফছিনিনদের ভালবাসেন। এইভাবে আল্লাহ বিভিন্ন গুনাবলীর মানুষদের ভালবাসার কথা উল্লেখ করেছেন। এইগুলো হ”েছ সেই সব গুণ যেগুলা আমাদের জীবনে নিয়ে আসতে হবে। এবং সব শেষে আল্লাহ বলেন-‘ইন্নালাহা মা’আ’-আল্লাহ সাথে আছেন। আল্লাহ প্রথমে বলছেন- ‘লা-আল্লাহকুম’ এরপর বলছেন- ‘ইন্নালাহা ইউহিব্বু’ এবং এরপর বলছেন- ‘ইন্নালাহা মা’আ। নিশ্চই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা পরহেজগার এবং সৎকর্ম করেন। এই গুলোই হ”েছ আমাদের দীনে রসুল। মূলতঃ এই গুলোই হ”েছ আমাদের ধর্মের নির্যাস। আমার মতে এইগুলোই হ”েছ আমাদের ধর্মের মূল নীতি বা মৌলিক নীতি। আল্লাহ কুরআনে সরাসরি এইসব বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। আশা করি বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।

এখন কথা হ”েছ এই যে মূল নীতি এটা কিš‘ দেখা যায় না। এটা হ”েছ একটা ধারণা। ‘শোকরকারী হওয়া’  এর মানে কি তাকওয়া অর্জন করতে হবে। তাকওয়া বিষয়ে আমরা অনেক আলোচলা শুনেছি। তাকওয়া বাড়াতে হবে তাকওয়া বাড়াতে হবে। তাকওয়া কি কিনতে পাওয়া যাবে বা আমি কি এমন কিছু খেতে পারি যেটা আমার তাকওয়াকে বাড়াবে? আমি কিভাবে বুঝবো আমার তাকওয়া কম বা বেশি? একই ভাবে আমার ঈমান বাড়াতে হবে, তাওয়াক্কুল বাড়াতে হবে। এই সবই হ”েছ বিমূর্ত ধারণা। আমরা কিভাবে এইসব জিনিসকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসবো? কিভাবে আমরা এই কাজ করবো? সেটাই হ”েছ পরবতী বৃত্তটি।


দ্বিতীয় বৃত্তঃ

 ২য় বৃত্তটি হ”েছ মৌলিক বাধ্যবাদকতা। মূল করনীয় এবং মূল বর্জনীয় কাজ সমূহ।

উদাহরণ স্বরূপ আমরা সকলেই জানি আমাদের ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভ আছে। সালাত এর মধ্যে একটি। সালাত হ”েছ মৌলিক করণীয় কিš‘ প্রকৃতপক্ষে এই বাধ্যবাদকতার মাধ্যমে ইসলামের আত্যবশ্যকীয় মূল নীতির একটি পূরণ করা যায়। এমন কি আল্লাহ আমাদের যে সব মৌলিক বাধ্যবাদকতা সেট করে দিয়েছেন সে সবের উদ্দেশ্য হ”েছ মূলনীতি গুলোকে সুদূঢ় করা। যেমন ধরুণ- আল্লাহ বলছেন-“আকিমুছ সলাতালি জিকরী” সালাত প্রতিটা কর যাতে করে তোমরা আমাকে স্মরণ করতে পারো। আল্লাহেকে স্মরণ করা কি একটি মৌলিক নীতি নয়? অবশ্যই। আল্লাহর স্মরণকে কিভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসবো এমন কি উপায় আমরা এটা করতে পারি যা আল্লাহকে সš‘ষ্ট করবে? এমনটি করার সবচেয়ে ভাল উপাই হ”েছ সালাত। সালাহ হ”েছ এমন একটি মাধ্যম যেটা আল্লাহর স্মরণ করার বিমূর্ত ধারণাটিকে বাস্তবিক স্বত্বে রূপান্তরিত করে। সিয়াম পালন করার বিষয়ে আল্লাহ বলেন-“কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন ক্ববলিকুম লা-আল্লাকুম তাত্তাকুম” তোমাদের সিয়াম পালন করতে বলা হয়েছে যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। বাস্তবে এমন কি করা যেতে পারে যেটা তাকওয়ার এই বিমূর্ত ধারণাকে আমাদের জীবনযাত্রায় প্রতিফলিত করবে? কি সেটা? সিয়াম পালন করা এই ধরণের একটি কাজ। এইভাবে আপনারা দেখবেন আল্লাহ প্রদত্ত প্রত্যেকটি মৌলিক বাধ্যবাদকতা এক একটি মৌলিকনীতিকে সুদৃঢ় করে। বাধ্যবাদকাতা গুলো দেওয়া হয়েছে যাতে করে মৌলিকনীতি গুলোকে আমাদের প্রাত্যহিত জীবনে নিয়ে আসতে পারে। দূর ভাগ্য জনক ভাবে আমরা যা করছি সেটা হ”েছ আমরা আল্লাহ প্রদত্ত এই বাধ্যবাদকতাকে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা থেকে আলাদা করে ফেলেছি। মানুষ ঠিকই সিয়াম ফালক করছে কিš‘ তাদের মধ্যে এই বোধটি নেই যে, সিয়াম পালনের মূল উদ্দেশ্য হ”েছ তাকওয়া বৃদ্ধি করা। মানুষ সালাত আদায় করছে কিš‘ রাতা এই বিষয়ে অবগত না যে, সালাত আদায় করার কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। এইগুলো হ”েছ মৌলিক বাধ্যবাদকতা। শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই আমরা এইসব কাজ পালন করি না। ইসলামের অত্যবশ্যকীয় নীতিগুলো পূরণ করে আমাদের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে আমরা এই সব কাজ করে থাকি।

সালাত হলো একটা গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাবার একটা রাস্তা। একই ভাবে সিয়াল পালক করাও লক্ষ্যে পৌঁছানো একটা উপায়। আজকাল আমরা এইসব উপায় বা রাস্তাকে আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে রূপন্তর করে ফেলেছি। যেটা খুবই ভয়াবহ সমস্যা। কোরআন কিš‘ আমাদের এমন করতে বলে না। কোরআনে যখনই কোন বাধ্যবাদকতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তখনই সে কাজের উদ্দেশ্য অর্থাৎ ঐ কাজ সম্পর্কিত মূল নীতিগুলোর কথা বলা হয়েছে। আমরাই এই দু’টি বিষয়কে কেঁটে আলাদা করে ফেলেছি। আর একটা কথা- বাধ্যবাদকতা বলতে শুধু করনীয় কাজগুলোকেই বোঝানো হয়নি। বর্জনীয় কাজ সমূহের কথাও বলা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ সালাত অন্যতম উদ্দেশ্য হ”েছ “সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে” অশ্লীলতা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল নীতি থেকে দূরে রাখে। আমাদের তাকওয়াবান, আল্লাহর শুকরকারী এবং আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হতে বাঁধা দেয়। সালাত আমাদের এই অশ্লীলতা থেকে হেফাযত করে। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের সেই সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন যেগুলো করলে ইসলামের মূলনীতিকে অমাণ্য করা হবে। প্রত্যেকটা নিষেধ এক একটা মূলনীতির সাথে জড়িত। দ্বীনে রসূলের সাথে সম্পৃক্ত। সংক্ষেপে এটাই হ”েছ আমাদের দ্বিতীয় বৃত্তটি। প্রধান প্রধান করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়সমূহ। এই পর্যন্ত, অর্থাৎ এই দুটি বৃত্তে যে সব বলা হয়েছে এই বিষয়ে মোটামুটি সব স্কলার সব মুসলিমরাই একমত। ইসলামের মূল নীতি গুলো কি কি এবং আমাদের মূল করনীয় ও বর্জনীয় কাজ কি কি? কোন মুসলিম এসে এরকম বলবে না আমি আসলে নিশ্চিত না শুকর কি আসলে হারাম কি না? এরকম কখনই হবে না। আর যদি কেউ এরকম বলে থাকে তার মানে হ”েছ সে পাগল।


তৃতীয় বৃত্তঃ

এই তৃতীয় বৃত্তটি হ”েছ প্রধান বাধ্যবাদকতার তুলনাই ছোট সুপারিশ সমূহ(জবপড়সসধহফধঃরড়হ)। যেমন ধরুন আমাদের মহানবী (সাঃ) এর সুন্নাহ সমূহ। অর্থাৎ সেই সব ভাল কাজ সমূহ যে সবের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। এমন কাজ যেগুলো আমাদের চারিত্রিীক উৎকর্ষ সাধন করে। উদাহরণ স্বরূপ নরম ভাবে কথা বলা, ন¤্রভাবে চলাফেরা করা। এইগুলো হ”েছ সেই সব কাজ যা আপনার চরিত্রকে উন্নত করবে। একই ভাবে ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা, যেটা একটা সুন্নাহ্। অথবা ধরুন ডান হাত দিয়ে খাওয়া। এই সব ছোট ছোট কাজগুলি আমাদের চরিত্রের বিকাশ ঘটায়। এখন ব্যাপারটা দাড়ালো এই যে, প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ মৌলিক নীতি গুলোর আত্য¯’ করার দিকে। সেটা সঠিক ভাবে করার জন্য তাকে নজর দিতে হবে প্রধান প্রধান বাধ্যবাদকতার দিকে। যদি সে এই প্রধান বাধ্যবাদকতাগুলো ঠিক ভাবে মেনে চলতে পারে তাহলে তার পরবর্তী চিন্তা হওয়া উচিৎ ছোট ছোট সুপারিশ গুলো পালনের মাধ্যমে আরও সুন্দর্য মন্ডিত করা।

উদাহরণ স্বরূপ- সালাত হ”েছ একটি প্রধান কাজ। সালাতের পরে জিকির করাটা কি? এটা হ”েছ উৎকর্ষ সাধন। একই ভাবে সালাতের পরে দোআ করাটা একটা উৎকর্ষ সাধন। অর্থাৎ আপনি ইতোমধ্যে প্রধান কাজটি করে ফেলেছেন। এই যে ছোট ছোট ভাল কাজ করার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করার যে ধারণা এটা নিয়ে কারও মধ্যে তেমন কোন ভেদাভেদ নেই। ‘কিয়ামুল লাইল’ একটা ভাল কাজ, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা একটা ভাল কাজ, সিয়ামের অতিরিক্ত সিয়াম পালন করা একটা ভাল কাজ, ভ্রমণ কিংবা ঘরে প্রবেশের সময় দোআ করা ইত্যাদি। দোআ না করে ঘরে প্রবেশ করা হারাম না। অর্থাৎ দোআ না পড়ে ভ্রমণ করাটাও হারাম না। কিš‘ এমন করাটা ভাল। এটা আপনার দ্বীনের উৎকর্ষ সাধন করে। এই সব জিনিস আপনার জীবনকে উন্নত করে। এইগুলি হল তৃতীয় বৃত্তটি। কিš‘ চার নম্বর বৃত্তে যাবার আগে তিন নম্বর বৃত্তটি সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। প্রথম দ্বিতীয় বৃত্তে আলোচ্য বিষয়গুলো হ”েছ সেই সব জিনিস যে গুলোর দিকে আমাদের নবীগণ দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ নবীগণ আমাদেরকে ইসলামের প্রধান নীতিমালা সমূহ, প্রধান করণীয় ও বর্জনীয় এই সবের দিকে ডেকেছেন। এইগুলোই ছিল বনীদের দাওয়াতের মৌলিক দিক। মানুষ যখন এইসব মৌলিক বিষয়কে মেনে নিয়ে, ভাল করে বুঝে আত্য¯’ করতে সক্ষম হল এর পরে গিয়ে নবীগন তাদেরকে এ সবের পাশাপাশি উৎকর্ষ সাধনের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ দিতেন। এখন দেখা যাক আমরা কি করি?

আমরা যেটা করি- সেটা হ”েছ মৌলিক নীতিমালা গুলো তো আমরা ভুলেই গেছি উপরš‘ আমরা প্রধান বাদ্যবাদকতাগুলো উৎকর্ষ সাধনের জন্য যেসব ছোট ছোট সুপারিশ রয়েছে সে সবের সাথে মিশিয়ে ফেলেছি। এই সম্পূর্ণ মিশ্রণই এখন প্রধান বাধ্যবাদকতা হয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ-আপনি যদি এমন কাউকে দেখেন যে জোহরের ফরজ সালাত আদায় করেছে, সুন্নাত সালাত আদায় করে নি, তখন আপনি তার পিছনে লাগেন। কি করেছেন আপনি!! আপনি সুন্নাত নামায পড়েন নি কেন? অর্থাৎ আমরা মানুষকে উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলো করার জন্য বল প্রয়োগ করছি। মানুষ যদি এ কাজগুলো না করে তাহলে আমরা তাদের পিছনে লাগছি, তাদের সালাত নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। তারা কি করছে কি করেনি এই সব নিয়ে কথা বলছি। যেমন ধরুন সহি উ”চারণ!

এটা কিš‘ দ্বিতীয় বৃত্তের মধ্যেও পড়ে না। এটা তৃতীয় বৃত্তের অন্তর্ভক্ত। অথচ আমরা কি করি-কারও তিলাওয়াত সহি না হলে কপালে হাত চাপড়ে বলি, ওহ! কুরআন তিলাওয়াত করে কখনই আপনি গুনাহের মধ্যে পড়ছেন না। আপনি অবম্যই সহি ভাবে তিলাওয়াত শেখার চেষ্টা করবেন। কিš‘ আপনি যদি বসে বসে মদ কলকলা একদম পুঃখানুপুঃখ ভাবে হিসাব করার চেষ্টা করেন তাহলে? সাহাবাগণ তো এইভাবে শেখেন নি। আপনি অবশ্যই আপনার তাসবিদের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিš‘ আপনাকে বুঝতে হবে এই সব জিনিস এগুলো হ”েছ উৎকর্ষ সাধনের জন্যে। এগুলো ঘর সাজানোর জিনিসের মত। আপনার বারার একটা দরজা থাকা দরকার আছে, একটা জানালার দরকার আছে আলো বাতাসের জন্য কিš‘ আপনা বসার জন্য স্পেশাল কার্পেক অত্যবশ্যক না। দেওয়ালে রং বে রঙের পেইন্টিং থাকতেই হবে এমনটি নয়। এটা ঠিক যে এগুলো থাকলে ভালই লাগে। একটা সোফা থাকলে ভালই হয়। কিš‘ কারও বাসার দেওয়ালে পেইন্টিং না থাকলে আপনি তাকে বলতে পারেন না যে, তোমার তো বাসায় নেই। পেইন্টিং না থাকলে কি আর বাসা হয় নাকি? আপনি এ রকম করতে পারেন না। কারণ অধিকাংশ মানুষই প্রধান বাধ্যবাদকতা এবং উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলোর মধ্যে পার্থক্য করেন না। যার ফলে আপনি যখন এরকম বলেন-সমালোচনা করেন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে তখন মানুষ গণহারে সব ক্ষেত্রেই এটাকে প্রযজ্য মনে করে। আমি আপনাদের এর একটা ভয়াবহ পরিণতির উদাহরন দি”িছঃ

আমাদের মধ্যে এক ধরণের মানুষ আছেন যাদের মধ্যে মোটামুটি সব কিছুই হারাম। কেউ ভিডিও গেম খেলছে তারা বলবে ভিডিও গেম কিš‘ হারাম। আপনি টিভি দেখছেন এটা হারাম, আপনি রেডিও শুনছেন এটা হারাম। হারাম! সব কিছুই হারাম। এখন ব্যাপারটা হ”েছ দ্বিতীয় বৃত্তে বর্ণিত কিছু প্রধান বর্জনীয় কাজ রয়েছে, যেমন-মদ, জিনা। এহুলো খুবই খারাপ এবং এগুলো দ্বিতীয় বৃত্তের আওতায় পড়ে। আল্লাহ যে সবকে হারাম বলেছেন। আর এখন আপনি বলছেন ভিডিও গেমস হারাম। এই রকম বলার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ যে সব কাজকে হারাম বলেছেন আর আপনি নিজে যে সব কাজকে অপছন্দ করেন এই উভয়কেই একই পাল্লায় মাপছেন। এর ফলে একজন যুবক ভাই বা বোন যে মুভি দেখে, হতে পারে সেটা অর্থহীন কোন মুভি বা যে কোন কিছু। যখন সে শুনবে মুভি দেখা হারাম সে বলবে এটা হারাম!! আমি তো সারাক্ষণই মুভি দেখি। এটা হারাম! তাহলে তো আমি বিপদে আছি? আর যেহেতু আমি প্রচুর মুভি দেখি, তাহলে তো আমি বিপদে আছি? আর বিপদে যখন আছিই অন্য হারাম গুলোও  তাহলে করি। দোযখে তো এমনিতেই যাওয়া লাগবে। তাহলে মোজ-মাস্তি, পার্টি এই সব করেই যাই। এখন দেখেন এই যে আপনি মদ, রেডিও, ভিডিও গেম এই সব কিছুকে এক কাতারে ফেলেছেন; একজন পাপির মনে মধ্যেও এই সব এখন একই পাল্লাই বিচার হ”েছ। সে ভাববে ভিডিও গেম কোন ব্যাপার না, মুভি দেখাও কোন ব্যাপার না, আর জিনাও কোন ঘটনা না, মদ, নেশা সবই সমান। তার মানে আমরা তখনই সমাজে সমস্যা তৈরি করা শুরু করি যখন আমরা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সৃনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার লিস্টকে ঠিক রাখছি না। মানুষ মনে করে আমরা যত বেশি জিনিসকে হারাম হিসেবে লিস্ট করবো এটা মানুষের জন্য ততই ভাল হবে, মানুষকে রক্ষা করবে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ নবীগণ মানুষকে আমাদের থেকে ভাল ভাবে রক্ষা করেছেন। তারা যা করেছেন এর চেয়ে উন্নত তর কিছু করার সামর্থ্য আমাদের নেই।  আমাদের সীমাবদ্ধতার ভিতরে থেকেই অবশ্যই বিচার করার চেষ্টা করবে যে, যে কোন কিছু কি আসলেই পরিষ্কারভাবে হারাম কি না? এমন স্পষ্ট হারাম জিনিস অবশ্যই আমাদের সামনে আসতে পারে যে, যেটার অস্তিত্ব আগে কখনই ছিল না। কিš‘ সেটা অবশ্যই বড় কোন পাপ কাজের সাথে সম্পর্কীত হবে। আপনারা কি এতোদূর পর্যন্ত বুঝতে পারলেন? এ সব হ”েছ উৎকর্ষ সাধন মূলক কাজ কর্ম। এসব কাজ কর্মের মধ্যে আছে অতিরিক্ত সুন্নাত নামায পড়া, সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করা, কবর জিয়ারত করা। এই যে এই সব কাজ এই সব নিয়ে কোন মতো ভেদ নেই। উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলো করুন। আপনি যদি মৌলিক বাধ্যবাদকতা গুলো পূরণ করার পরে আরও ভাল মুফতি হতে চান তো খুবই ভাল। প্রদিনি একটু একটু করে ভাল কিছু শিখুন, একটা ছোট দোআ শিখুন প্রতিদিন। এ ধরণের সব কিছুই করা উচিত। এখন এই বৃত্তের ঠিক বাইরে াার একটি বৃত্ত আছে। চার নম্বর বৃত্ত।


চার নম্বন বৃত্তঃ

চতুর্থ বৃত্তটি হ”েছ সেই সব বিষয় যে গুলো সম্পর্কে সাহাবীগণ একমত পোষণ করেছেন। আমরা এই বিষয়গুলো কুরআনে পাই না। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল সে সব কিš‘ সুন্নাতে স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান। তার বাইতে এই যে চার নম্বার বৃত্তটির কথা বলা হ”েছ এগুলো হ”েছ সে সব বিষয় যে গুলো নিয়ে সাহাবীগণ মতো ঐক্য  পৌঁচেছেন। কিš‘ বাস্তবে এমন বিষয় পাওয়া দুষ্কর যেটা নিয়ে সব সাহবীগণ একমত হয়েছেন। ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। তিন ধরণের মতোক্য রয়েছে। সাহাবীদের এক মতের ধরণের উপর নির্ভর করে মূলতঃ তিন ধরণের মতোক্য রয়েছে। প্রথমটি হ”েছ-সাহাবীগণ কোন একটা ঘটনা নিয়ে একমত। সেটা কেমন? যেমন ধরুন সব সাহাবীগণ বদরের যুদ্দে অংশ গ্রহণ করেন নি। অনেকেই বদরের যুদ্ধের পর মুসলিম হয়েছেন। কিš‘ যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা সকলেই একই ভাবে বলবেন যে, এই যুদ্দ অমুক দিনে শুরু হয়েছিল, এতো দিন ধরে চলেছে। সবাই এরকম কথা বলবেন কারণ তারা সবাই ওই যুদ্ধে উপ¯ি’ত ছিলেন। এ কারণেই তারা এ বিষয়ে একমত।

দ্বিতীয় ধরণের ঐক্যমত হ”েছ সাহাবীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন তাদের মধ্যে ঐক্যমত। কিছু ক্ষেত্রে তারা সবাই একে অপরের সাথে একমত পোষণ করতেন। যেমন ধরুন ইবনে আব্বাস রা. তিনি একজন জ্ঞানী সাহাবী ছিলেন। এমন অনেক সাহাবী ছিলেন যারা মূলত একটি সূরাও পারতেন না। তারা সদ্য মুসলিম ছিলেন। এখনকার সময় যারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হ”েছ তাদের মতো। কিš‘ তাদের ঐক্যমত এই দ্বিতীয় ধরনের ঐক্যমতের মধ্যে পড়ে না। এটা হ”েছ সেই ধরণের ঐক্যমত যেখানে কোন বিষয়ে কোন জ্ঞানী সাহাবীগণ একমত হয়েছেন। তৃতীয়টি হ”েছ সাহাবীদের মধ্যে যারা শাসক তাদের মধ্যকার ঐক্যমত। যেমন ধরুন ওমরা রা. এবং তার উপদেষ্টা মন্ডলি, তার ঐক্যমত সেটা হ”েছ এই তৃতীয় ধরণের ঐক্যমত। এই হ”েছ সাহাবীগণদের মধ্যে তিন ধরণের ঐক্যমত। অর্থাৎ ঘটনা ভিত্তিক, জ্ঞানী সাহাবী ভিত্তিক এবং শাসন কার্যে নিয়োজিত সাহাবীদের ঐক্যমত ভিত্তিক। যখন শাসন কার্যেক সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়তো ওমর রা. অবশ্যই হাজার হাজার সাহাবীদের সাথে আলোচনা করতেন না। তিনি তার উপদেষ্টা মন্ডলিদের সাথে বসে সবাই মিলে একমত হয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতেন। তার পর সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আইন প্রনয়ণ করা হতো। ব্যাপারটা বোঝা গেল?এখন বর্তমান সময়ে এসে যেটা ঝামেলা হয়েছে কেউ একজন যখন এইভাবে বলে সব সাহাবীগণ এই বিষয়ে একমত। সব সাহাবীগণ এই বিষয়ে একমত? দাঁড়ান দাঁড়ান সব সাহাবীগণ একমত?এটা আপনি কোথায় পেলেন? কেন এইভাবেই তো বর্ণনা আছে। কোথায় আছে? বই পুস্তকে আছে। কোন বই? যাও ভাল ভাবে পড়। আপনি কোন ভাবেই এটা বলতে পারেন না যে সব সাহাবীরাই একমত ছিলেন। আপনি এচা করতে পারেন না। আপনার কথা সুনির্দিষ্ট দলিল পত্রের ভিত্তিতে হতে হবে। এমনিতেই বলে ফেললে হবে না। সব চেয়ে হাস্যকর যে কথাটি এখন পর্যন্ত শুনেছি সব ইসলামি বিশারদ এই বিষয়ে একমত। বলেন কি? ঠিক আছে তাদের দশ জনের নাম বলেন? অ্যা.....অ্যা.............সবাই।

আপনি যদি তাফসীর পড়েন তাহলে আপনি একটি বিষয় পাবেন না যে বিষয়ে সব স্কলার একমত হয়েছেন। এটা হাস্যকর কথা। কুরতুবি, তাবারী, জালালাইন, তাফসীর ইবনে কাছির, ইবনে আশুর, একটা কথা যেটা প্রায়শই সব তাফসীরে লেখা থাকে স্কলারগণ এই বিষয়ে একমত। এবং এর ভিন্নমত একদমই বিরল। অন্য আর এক মুফা”িছর হয়তো এর উল্টোটা লিখেছেন যে, এই ভিন্ন মতের বিষয়েই বরং স্কলারগণ একমত, আর প্রথম মতের পক্ষেই যুক্তি বিরল। অর্থাৎ তাদের কাছেও এই একমত হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। এটা ঠিক ভাবে বোঝার জন্য অনেক পড়াশোনা এবং ঠিকভাবে বোঝার প্রয়োজন। এমনও হয়েছে যে, সাহাবীগণের মধ্যে যিনি সব থেকে জ্ঞানী তিনিও একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন, দ্বিমত পোষণ করেছেন। দ্বীনের কোথায় সর্বসম্মত ভাবে ঐক্যমত আছে? কোন বিষয়ে কোন প্রকার দ্বিমত নেই? প্রথম তিনটি বৃত্ত। যখন আমরা মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিই, নবী রাসূলদের পক্ষ থেকে আওহŸান জানাই তখন আমরা মূলত কোন বিষয়ে কথা বলি? বৃত্ত নাম্বার এক এবং বৃত্ত নাম্বার দুই। যখন সেই মানুষগুলো আমাদের দলে চলে আসে, আমাদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, আমাদের বন্ধু মহলের হয়ে যায়, প্রথম দুটি বৃত্তির বিষয়গুলো ইতিমধ্যেই মেনে নেই তখন আমরা তাদের তিন নাম্বার বৃত্তের দিকে আগ্রহী করার চেষ্টা করি। চার নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলো খুবই সুনির্দিষ্ট এগুলো মূলত গবেষণা ও উ”চ শিক্ষার জন্য। তাই আপনি চার নাম্বার বৃত্ত দিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করে এটা বলতে পারের না-এটা ইসলাম। আপনাকে শুরু করতে হবে মহানবী (সাঃ) যেখান থেকে শুরু করেছেন সেখান থেকে। আপনাদেরকে এক এবং দুই দিয়ে শুরু করতে হবে। এখন সকল সাহাবী কি এই সবগুলো বিষয়ে একমত হয়েছিলেন? না। তবে তারা সবাই এক থেকে তিন বিষয়গুলোতে সহমত পোষণ করেছেন। আপনারা যদি এটাকে ইজমা বলতে চান অর্থাৎ সকল সাহাবী যে সব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন সেগুলো হ”েছ এক, দুই এবং তিন নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলি। এখন এই চারটি বৃত্তের বাইরে আর একটি বৃত্ত আছে।


পাঁচ নাম্বার বৃত্তঃ

এই বৃত্তের অন্তর্ভক্ত হ”েছ সেই সব বিষয় যে গুলো নিয়ে বর্তমান মুসলিম উম্মা একমত পোষণ করেন। এটাকে আপনারা ইস্তিহাদ বলতে পারেন। একজন স্কলার নিজস্ব মতামত থাকে যেটাকে আমরা ফতোয়া বলি। স্কলাররা কিভাবে চিন্তা করেন? তারা জানেন যে, এক দুই বা তিন এগুলো হ”েছ নিখুত। চার নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অর্থাৎ কেন তারা এই বিষয়ে একমত হয়েছিলেন অথবা দ্বিমত পোষণ করেছিলেন এটা বোঝার জন্য অনেক পড়ালেখা এবং গবেষণার প্রয়োজন। এর পরে যখন পাঁচ নাম্বার বৃত্তটি আসে যেখানে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো সম্পর্কে কুরআনে সারাসরি কোন সমাধান দেওয়া হয়নি এবং হাদীসেও পরিষ্কার ভাবে কিছু বলা হয়নি। এখন সমাধার পাওয়ার জন্য আমাকে আমার নিজের গবেষণা করতে হবে। দলিল প্রমাণাদী যা কিছু পাওয়া যায় খুঁজে বের করতে হবে। এর পর আমার সামর্থের সর্বো”চ ব্যবহার করে এ সবের ভিত্তিতে একটা সমাধানে আসতে হবে। তার মানে আমি এই সমস্যা একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি এটা মেনে নিয়ে যে, আমার প্রাপ্ত উত্তরটি একেবারে নিখুত হবে না। কারণ একদম নিখুঁত সমাধান এক, দুই এবং তিন এই বৃত্ত গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই আমার প্রাপ্ত উত্তরটি হ”েছ আমার সীমাদ্ধতার মধ্য থেকে যতটুকু নিখুঁত হওয়া যায় ততটুকু। এটা এমন কোন সমাধান নয় যেটা আমি অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারি। কিš‘ আমি এমন করে বলতে পারবো না যে, এটাই ইসলাম এবং তোমরা যদি এটা অনুসরণ না কর তাহলে ইসলাম থেকে বাইরে চলে যাবে। আমি এমনটা বলতে পারি না। আমি বলতে পারবো না যে আমার দেওয়া ফতোয়া ইসলামের সাথে সু-নীবিড় ভাবে সম্পর্কীত। বড়ো জোর আমি এই ভাবে বলতে পারি যে, আমার জ্ঞান অনুসারে যতোদূর বুঝতে পেরেছি এইভাবে চিন্তা করতে পারি। এসব হ”েছ সেই সব বিষয় যেগুলোর বিষয়ে কোরআন, হাদীস বা সাহাবাগণের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট সমাধান পাওয়া যায় না। একটা উদাহরণ দি”িছ-খলিফা হারুনর রশিদ। তিনি তখন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। আমিরুল মুমেনীন। সেই সময় আমেরুল মুমেনীনগণ সালাতের ইমামতী করতেন বিশেষ করে হজ্বের সময়। এরকম এক সময় তিনি হজ্ব পালন করতে গেলেন। আমেরুল মুমেনীন হিসেবে তিনিই ইমামতি করবেন। যাই হোক তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন কারণ তিনি ইমামতি করবেন। আর তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী। ওনার হজ্বের যিনি মোয়াল্লেম ছিলেন (মোয়াল্লেম হ”েছ সেই ব্যক্তি যিনি অপনাকে হজ্বের বিভিন্ন নিয়ম কানুন শিখিয়ে দেবেন) স্বাভাবিক ভাবেই আমেরুল মুমেনীনের মোয়াল্লেম হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ছিলেক কাজী আবু ইউসুফ। হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানীফার সব কিছু তিনিই লিপিব্ধ করতেন। যাই হোক, পৃথিবীর বুকে হানাফী মাযহাবের বিজ্ঞ যে আলেম তিনি হ”েছ তার মোয়াল্লীম। তারা দুজনেই সামনের কাতারে আছেন। এবং আমেরুল মুমেনীন একটু পরেই সালাতের ইমামতি করবেন। কিš‘ খলীফা হারুনর রশিদ হিজামা করেছেন (হিজামা হ”েছ এমন একটা চিকিৎসা পদ্ধতি যেটা কাপিং এর মাধ্যমে করা হয় এবং এর ফলে শরীর থেকে রক্ত বের হয়)। এখন হানাফী মাযহাব আনুসারে শরীর থেকে রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হবে। খলিফা হারুনর রশিদ একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জানতেন যে, তিনি যদি ইমাম আবু ইউসুফকে এখন জিজ্ঞাসা করেন যে আমার ওযু কি নষ্ট হয়েছে তাহলে আবু ইউসুফ কি বলবে? হ্যা, আপনার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই ক্ষেত্রে তাকে প্রথম কাতার থেকে বের হয়ে সবগুলো কাতার পার হয়ে ওযু খানাই যেয়ে ওযু করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে যে সময় লাগবে তাতে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে মাগরীবের ওয়াক্ত চলে আসবে। কিš‘ তাকে তো তখনই সালাতের ইমামতি করতে হবে এবং তিনি যদি আবু ইউসুফকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে উনি বলবেন আপনার সালাত আদায় হবে না। কারন ওযু নেই। ঘটনা চক্রে ইমাম মালিক ও প্রথম কাতারে ছিলেন। এমতাব¯’ায় খলিফা উদ্দেশ্য প্রণিতভাবে উনার নিজের মোয়াল্লিমকে এ বিষয়ে না জিজ্ঞেস করে ইমাম মালিককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কারণ মালিকি মাযহাব অনুসারে রক্তপাত হলেও ওযু নষ্ট হয় না এবং খলিফা এটা জানতেন। তিনি ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করলেন-“আ”ছা আমি যে কাপিং করালাম আমার কি ওযু নষ্ট হয়েছে?”ইমাম মালিক বললেন-না না, আপনার ওযু ভঙ্গ হয় নি, আপনি ইমামতি করুন। ফলশ্রæতিতে খলিফা হারুনর রশিদ ইমামতি করলেন হজ্বের সময় সেই বিশাল জামাতের। কাজী আবু ইউসুফ, ইমাম মালেক দুজনেই সেই জামাতে উনার পেছনে ছিলেন। আর কাজী আবু ইউসুফ ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত স্কলারদের মধ্যে অন্যতম। তার সাথে অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন যারাও হজ্ব করতে এসেছিলেন। সেই শিক্ষার্থীরা কিš‘ পেছনে ছিলেন তারাও এই ঘটনা দেখতে পেলেন এবং নামায পড়ছিলেন। আর নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা দৌঁড়ে কাজী ইউসুফের কাছে গেলেন এবং বললেন আমরা কি আবার সালাত আদায় করব?আপনি কিভাবে উনাকে কাবার সামনে ইমামতি করতে দিলেন ওযু ছাড়া? তখন কাজী আবু ইউসুফ, যিনি কিনা হানাফী মাযহাবেন অনুসারী তার শিক্ষার্থীদের বললেন-‘যে পুনরাই সালাত আদায়ের দুঃসাহস দেখাবে সে খাওয়ারীজদের অন্তর্ভক্ত, সে বা তারা এ দ্বীনের অন্তর্ভক্ত নয়’। কেন তিনি এরকম বললেন? কারণ ফতোয়া নিয়ে তার চিন্তার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। উনার চিন্তার প্রকৃতি এই রকম ছিল যে, রক্ত পাতের সাথে ওযু নষ্ট হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। এটি এমন একটি বিষয় যেট নিয়ে গবেষণা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন আমাদের গবেষণা অনুসারে ওযু নষ্ট হবে আর ইমাম মালিকের গবেষণা অনুসারে ওযু নষ্ট হবে না। এটা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত গবেষণার ফলাফল। কোরআনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, রক্ত পাত হলে ওযু নষ্ট হবে। এমন কোন হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে রক্ত পাতের কারণে ওযু নষ্ট হবে। তাই আমরা কেউ এই নিয়ে বিতর্ক করতে পারি না যে, আমার প্রপ্ত ফলাফলই সঠিক। কারণ এটা একান্তই আমার সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত ব্যক্তিগত মতামত। যার ফলে আমি কিš‘ এটাও জানি না আমি সঠিক কি না আর উনি ভুল কি না। আর এটা নিয়ে তর্ক করতে যেয়ে আমি যে মূলনীতি জানি তা হ”েছ ঐক্য হ”েছ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। নিজের ফতোয়ার প্রতি অনড় থাকতে যেয়ে আমি এই মূল নীতিকে অমান্য করতে রাজি নয়। এরকম ছিল তাদের চিন্তা ভাবনা। এভাই উনারা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতেন। আপনি যদি ফিকাহ নিয়ে পড়াশোনা করেন, ফিকার কিতাব গুলো পড়লে দেখবেন কেউ যদি অন্য আর একজনের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন তখন শুরুতেই তিনি যার  সেঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তার জন্য দোআ করে একপৃষ্ঠা লেখেন। এরপরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি একমত নন। একই ভাবে অপর জন যখন এর উত্তর দিবেন তখন তিনিও এভাবে বলেন যে, আপনার দোআর জন্য ধন্যবাদ এবং আপনার জন্যও নিন্মোক্ত দোআ রইলো। যদিও তারা যে সব সময় একে আপরের সাথে এরূপ ব্যবহার করেন তেমন কিন্ত নয়। মাঝে মাঝে তাদের লেখার মধ্যে অনের প্রতি প্রকৃতির মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। যা হোক, বর্তমান সময়ে ইসলামের যে রূপ সেটা বোঝার জন্য এই বৃত্ত গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার থাকা দরকার। বৃত্ত গুলার কথা মাথায় রেখে যদি আমরা চিন্তা করি যে আমাদের কোন বিষয় টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, কোনটি সবার প্রথমে গণ্য হবে, মূলনীতি সমূহ, স্ব”ছতা, ন্যায়বিচার, আল্লাহ ভীতি, সত্যতা, সত্যবাদীতা এগলো হলো সবার আগে আসবে। এই মূলনীতি গুলো আমরা কিভাবে শিখি? অত্যাবশ্যকীয় বাধ্যবাদকতা পালন কারার মাধ্যমে এই মূলনীতি গুলো আমাদের মধ্যে দৃঢ় হয়। আর কোন জিনিসটা এই মূলনীতি গুলোকে পরিবর্তন করে, উন্নত করে? তৃতীয় বৃত্তটি। এখন যেটা দেখা যায় বর্তমান সময়ে ইসলাম মস্পর্কিত আমাদের বেশির ভাগ জিজ্ঞাসাই প্রথম তিনটি বৃত্ত থেকে দূরে। আমাদের জিজ্ঞাসা গুলো হলো পঞ্চম বৃত্তের মধ্যে চলে গেছে। মূলনীতি গুলোর ছিটে ফোটা যেখানে নেই। কোরআরে আল্লাহ যে সব মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন, যারা পবিত্র থাকতে ভারবাসেন। আমরা যখন হজ্বে যায়; হজ্ব হ”েছ একটি মৌলিক বাধ্যবাদকতা। হজ্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এইসব গুনাবলী সুদৃঢ় হওয়ার কথা। তাকওয়া, শোকর, আল্লাহ ভীতি, সততা, ন্যায়বিচার এই সব কিছুই। এখন ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় থেকে প্রচলিত রীতি নীতি অনুসারে আপনি যখন কাবার সামনে গিয়ে কালো পাথর টিকে ধরার চেষ্টা করেন তখন দেখবেন আশে পাশের মানুষ জন আপনার মুখে তাদের কনুইয়ের গুতা দি”েছ। আপনাকে ঠেলে সরিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এমনও দেখবেন যে, কেউ একজন তার সামনের পাঁচ ছয় জন মানুষের উপর দিয়ে এসে হাজ্বে আসওয়া ধরার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। যেন তার অনেক মূল্যবান কিছু চাওয়ার আছে, দোআ করতে হবে। কিš‘ এরকম উতলা হয়ে, যুদ্ধ করে হাজ্বে আসওয়ার কাছে আসার পরে একমাত্র যে দোআটি তাকে সর্বপ্রথম করা উচিত সেটা হ”েছ ‘আমি এই মাত্র যে সব গুনাহ করে এই পর্যন্ত আসলাম তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও’। অর্থাৎ দেখা যা”েছ যে,আমরা রীতি নীতি গুলো ঠিকই মেনে চলছি কিš‘ তার মাধে মূলনীতি গুলোর কোন উপ¯ি’তি নেই। মুজদালিফাই(মুজদালিফা হ”েছ খুবই পবিত্র ¯’ান) যখন আপনারা যাবেন; এটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনি সারা রাত আল্লাহর দোআ করে কাটানোর কথা, আল্লাহর স্মরণে রাত পার করার কথা। সকালে যখন আপনি সেখান থেকে রওনা দেবেন এমনকি আপনি দুই কদমও সেখান থেকে যেতে পারবেন না। আপনি চিন্তাই পড়ে যাবেন আপনি কি একটা পবিত্র জায়গায় আছেন? নাকি একটা আস্তাকুড়ের মাঝখানে দাঁদিয়ে আছেন? আপনি নিচে তাকিয়ে মাটি দেখতে পাবেন না। শুধু দেখবেন ডাইপার, পানির বোতল, কোকা-কোলার বোতল, টিস্যু পেপার। এমন কেন হয়? আপনার কি জানের মূলনীতির কোন ধার ধারিনা আমরা। এর ফলে অত্যাবশ্যকীয় মূলনীতি গুলোর প্রাধান্য দেওয়ার কারণে যে ধর্ম হওয়ার কথা ছিল সব চেয়ে সুন্দর সেটা এখন হয়ে গেছে কদাকার। এভাবেই আমরা একটা সুন্দর ধর্মকে কদাকার করে ফেলেছি। বনি ঈসরাইলরা যেভাবে করেছিল। তারা আল্লাহর দেওয়া মূল জিনিসগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রীতি নীতি গুলোকেই গ্রহণ করেছিল। সুবহান আল্লাহ! আমার কাছে তাই এই কাঠামোটি ভালভাবে বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান মনে হয়। তাহলে আমাদের সেই সেই সুযোগটা নেওয়া উচিত। বর্তমান উম্মার মতোভেদের কয়েকটি বড় বড় বিষয় হ”েছ তারাবির নামায কয় রাকাত?চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে কি সারা পৃথিবী একই দিনে ধরা হবে নাকি এলাকা ভিত্তিক ঠিক করা হবে? এসব হ”েছ বড় বড় তর্কের বিষয়। কিš‘ আপনারা যদি মূল ফিকাহর বই গুলো দেখেন তাহলে বুঝবেন এই সব বিষষ এমনকি তিন নম্বার বৃত্তের মধ্যেও নেই। চার বা তার পরের বিষয়। তাহলে কেন আমরা এই সব নিয়ে তর্ক করছি? যে সব বিষয় আমাদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করে, সেগুলো সে সব বিষয় যেগুলো আমাদের মধ্যে বিভক্তি ঘটাই তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কিš‘ আমরা যখন সে সব বিষয় থেকে আমাদের দৃষ্টিশক্তি সরিয়ে নিই তখন বিভক্তি সৃষ্টি করার বিষয় গুলিই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে।  এমনকি এখনকার দিনে একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমকে দেখে তখন মনে মনে চিন্তা করে সে কি সাফি? নাকি মালিকি? সে কি আমার মতো? আপনার তো এইসব নিয়ে চিন্তাই করা উচিত না। আপনার তো চিন্তা করা উচিত সেকি মুসলিম নাকি মুসলিম না? ব্যাস! এটুকুই যথেষ্ট।

এবার আসা যাক শেষে একটি উদাহরণে-আল্লাহ মোট কত জন নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন? এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারা? নবী রাসূলগল। এই বিষয় তো আমরা সবাই একমত? মানব জাতির জন্য সর্বত্তম শিক্ষক কারা ছিলেন? এই এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূলগণ হ”েছন সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত সর্বোত্তম শিক্ষক। তাদের নাম বলুন এই বার? তারা সব চেয়ে গুরুত্তপূর্ন ব্যক্তিবর্গ! আপনাদের তো তাদের নাম জানা উচিত ছিল? আল্লাহ তো তাদের সবার নাম বলেন নি। আল্লাগ শুধুমাত্র ২৫ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। তার মানে কি অল্প কয়েক জনের নাম বাদ পড়েছে? তারা ছিলেন ইসলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। অথচ আমরা তাদের নাম পর্যন্ত জানি না। আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে, আবু হানিফা কে ছিলেন? কে ছিলেন ইমাম শাফি? অযথা চিন্তা বন্ধ করুন। আল্লাহ্ তাঁর কিছু বান্দাকে বিভিন্ন বিষয় বোঝার এবং উপলব্ধি করার এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তাদের ব্যাখ্যা শোনার পর আপনার মনে হবে যে, আমি কিছুই জানি না। তারা যদি কোন সাধারণ বিষয় নিয়েও আলাপ করে যেটা আপনার মতে আপনি ভালই জানেন কিš‘ আলাপ শেষে ‘সুবাহান্নাল্লাহ্’ আপনার মনে হবে এটা অসাধারণ ছিল। ইনশাআল্লাহ এই রকম কিছু বিষয় নিয়ে এখানে আলাপ করা হবে যেটা আমার কাছে তাৎপর্যকর বলে মনে হয়েছে। যেটা সবার জন্য কাজে লাগবে।

উপরের চিত্রে আমরা যা দেখতে পা”িছ তার মাধ্যমে এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। সেটা আজকের আলোচ্য বিষয়টি সবার সামনে সহজে উপ¯’াপন কারার জন্য। এখানে একদম ভিতরে একটা বৃত্ত। এর বাইরে আরও বড় আরও বড় আরও বড়, এই ছবিটা নিয়েই আজকে আমরা কথা বলব। মূলত আমাদের ধর্মের বৃহত্তম রূপটা আমরা এই ছবি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবো।

একদম কেন্দ্র আমাদের ধর্মের মূল যেটা রয়েছে, মূলত আমাদের ধর্ম ইসলামের মূল নীতিটা আমরা এই ছবির মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব। সেটাকে আমরা বলতে পারি আমাদের দীনে রসূল। আমাদের ধর্মের নির্যাস তথা মূলনীতি। অর্থাৎ আমাদের ধর্মের অত্যবশ্যকীয় নীতিমালা সমূহ। মোটের উপর আমাদের ধর্মটা হ”েছ একগু”ছ নীতিমালার সমাহার। বিষয়টিকে আমরা এইভাবে দেখতে পারি-এইসব নীতিমালা হলো সেটাই যেটা আল্লাহ্ একজন মানুষের কাছ থেকে চান। আল্লাহ্ একজন মানুষের কাছ থেকে কি চান? কি ধরণের গুনাবলী, কি ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী, আবেগ, চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস একজন মানুষের থাকা উচিৎ। আপনারা যদি জানতে চান এই অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কি কি, আল্লাহ্ কোরআনে খুবই সুন্দর ভাবে এইগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি এটা করেছেন “লা-আল্লাহ্ তাত্তাকুম” যেমন বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করার পর তিনি বলেন-“লা-আল্লাহ্ তাত্তাকুম, লা-আল্লাহ্কুম তাত্তাকুন, লা-আল্লাহকুম তাসকুরূন, লা-আল্লাহকুম তাযাক্বারূণ”। যাতে করে তোমরা মনে রাখো, যাতে করে তোমরা শোকরকারী হও, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন কর, যাতে করে তোমরা চিন্তা কর। এই সবগুলোই হল মৌলিক গুনাবলী যা একজন মানুষের থাকা উচিৎ। একজন মানুষের বিবেচনা মূলক দৃষ্টিভঙ্গী থাকা উচিৎ, তার চিন্তাশীল হওয়া উচিৎ, তার সর্বদা আল্লাহকে স্মরণে রাখা উচিৎ, তার মধ্যে আল্লাহ্ ভীতি থাকতে হবে, তার আল্লাহর প্রতি শোকর গোজার হওয়া উচিৎ। “লা-আল্লাহ কুম তাশকুরূণ” যাতে করে তোমরা শোকরকারী হতে পার। আল্লাহ যখনই ‘লা-আল্লাহকুম’ বলেন এবং এই ধরণের কাজগুলো উল্লেখ করেন এর মানে তিনি বোঝাতে চান এই গুলো হল সেইসব গুনাবলী যেগুলো আমাদের আয়ত্ব করতে হবে। আমি তখনই আল্লাহর একজন সফল বান্দা হতে পারবো যখন নিজের জীবনে এই সব গুনাবলীর প্রতিফলন ঘটাতে পারবো।

সবগুলো বিষয় এখানে উল্লেখ করবো না। কয়েকটা বিষয়ই বার বার আপনাদের সামনে বলার চেষ্টা করবো।

সুষ্ঠভাবে চিন্তা করতে পারা-‘লা-আল্লাকুম ত্বাকিলুন’, ‘লা-আল্লাকুম তাসকুরুন’-যাতে করে তোমরা শোকর কারী হও, লা-‘আল্লাকুম তাযাক্কারুন’-যাতে করে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর, ‘লা-আল্লাকুম তাত্তাকুম’- যাতে করে তোমরা নিজেকে রক্ষা করতে পারো বিপদ থেকে, সতর্ক থাকতে পারো এবং অবশ্যই ‘লা-আল্লাকুম তুফলিহুন’- যাতে করে তোমরা পরকালে সফল হতে পারো। আল্লাহ প্রায় কোরআনে লা-আল্লাকুম তুফলিহুন বলেছেন। এইগুলো হ”েছ মৌলিক কিছু গুনাবলী। এসব ছাড়াও অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের কাছে কি চান এই সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন এই শব্দগুলোর মাধ্যমে ‘ইন্নালাহা ইউহিব্বু’ অথবা ‘ওয়া আল্লাহু ইউহিব্বু’ আল্লাহ মুত্তাকীনদের ভালবাসেন, আল্লাহ মুফছিনিনদের ভালবাসেন। এইভাবে আল্লাহ বিভিন্ন গুনাবলীর মানুষদের ভালবাসার কথা উল্লেখ করেছেন। এইগুলো হ”েছ সেই সব গুণ যেগুলা আমাদের জীবনে নিয়ে আসতে হবে। এবং সব শেষে আল্লাহ বলেন-‘ইন্নালাহা মা’আ’-আল্লাহ সাথে আছেন। আল্লাহ প্রথমে বলছেন- ‘লা-আল্লাহকুম’ এরপর বলছেন- ‘ইন্নালাহা ইউহিব্বু’ এবং এরপর বলছেন- ‘ইন্নালাহা মা’আ। নিশ্চই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা পরহেজগার এবং সৎকর্ম করেন। এই গুলোই হ”েছ আমাদের দীনে রসুল। মূলতঃ এই গুলোই হ”েছ আমাদের ধর্মের নির্যাস। আমার মতে এইগুলোই হ”েছ আমাদের ধর্মের মূল নীতি বা মৌলিক নীতি। আল্লাহ কুরআনে সরাসরি এইসব বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। আশা করি বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।

এখন কথা হ”েছ এই যে মূল নীতি এটা কিš‘ দেখা যায় না। এটা হ”েছ একটা ধারণা। ‘শোকরকারী হওয়া’  এর মানে কি তাকওয়া অর্জন করতে হবে। তাকওয়া বিষয়ে আমরা অনেক আলোচলা শুনেছি। তাকওয়া বাড়াতে হবে তাকওয়া বাড়াতে হবে। তাকওয়া কি কিনতে পাওয়া যাবে বা আমি কি এমন কিছু খেতে পারি যেটা আমার তাকওয়াকে বাড়াবে? আমি কিভাবে বুঝবো আমার তাকওয়া কম বা বেশি? একই ভাবে আমার ঈমান বাড়াতে হবে, তাওয়াক্কুল বাড়াতে হবে। এই সবই হ”েছ বিমূর্ত ধারণা। আমরা কিভাবে এইসব জিনিসকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসবো? কিভাবে আমরা এই কাজ করবো? সেটাই হ”েছ পরবতী বৃত্তটি।


দ্বিতীয় বৃত্তঃ

 ২য় বৃত্তটি হ”েছ মৌলিক বাধ্যবাদকতা। মূল করনীয় এবং মূল বর্জনীয় কাজ সমূহ।

উদাহরণ স্বরূপ আমরা সকলেই জানি আমাদের ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভ আছে। সালাত এর মধ্যে একটি। সালাত হ”েছ মৌলিক করণীয় কিš‘ প্রকৃতপক্ষে এই বাধ্যবাদকতার মাধ্যমে ইসলামের আত্যবশ্যকীয় মূল নীতির একটি পূরণ করা যায়। এমন কি আল্লাহ আমাদের যে সব মৌলিক বাধ্যবাদকতা সেট করে দিয়েছেন সে সবের উদ্দেশ্য হ”েছ মূলনীতি গুলোকে সুদূঢ় করা। যেমন ধরুণ- আল্লাহ বলছেন-“আকিমুছ সলাতালি জিকরী” সালাত প্রতিটা কর যাতে করে তোমরা আমাকে স্মরণ করতে পারো। আল্লাহেকে স্মরণ করা কি একটি মৌলিক নীতি নয়? অবশ্যই। আল্লাহর স্মরণকে কিভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসবো এমন কি উপায় আমরা এটা করতে পারি যা আল্লাহকে সš‘ষ্ট করবে? এমনটি করার সবচেয়ে ভাল উপাই হ”েছ সালাত। সালাহ হ”েছ এমন একটি মাধ্যম যেটা আল্লাহর স্মরণ করার বিমূর্ত ধারণাটিকে বাস্তবিক স্বত্বে রূপান্তরিত করে। সিয়াম পালন করার বিষয়ে আল্লাহ বলেন-“কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন ক্ববলিকুম লা-আল্লাকুম তাত্তাকুম” তোমাদের সিয়াম পালন করতে বলা হয়েছে যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। বাস্তবে এমন কি করা যেতে পারে যেটা তাকওয়ার এই বিমূর্ত ধারণাকে আমাদের জীবনযাত্রায় প্রতিফলিত করবে? কি সেটা? সিয়াম পালন করা এই ধরণের একটি কাজ। এইভাবে আপনারা দেখবেন আল্লাহ প্রদত্ত প্রত্যেকটি মৌলিক বাধ্যবাদকতা এক একটি মৌলিকনীতিকে সুদৃঢ় করে। বাধ্যবাদকাতা গুলো দেওয়া হয়েছে যাতে করে মৌলিকনীতি গুলোকে আমাদের প্রাত্যহিত জীবনে নিয়ে আসতে পারে। দূর ভাগ্য জনক ভাবে আমরা যা করছি সেটা হ”েছ আমরা আল্লাহ প্রদত্ত এই বাধ্যবাদকতাকে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা থেকে আলাদা করে ফেলেছি। মানুষ ঠিকই সিয়াম ফালক করছে কিš‘ তাদের মধ্যে এই বোধটি নেই যে, সিয়াম পালনের মূল উদ্দেশ্য হ”েছ তাকওয়া বৃদ্ধি করা। মানুষ সালাত আদায় করছে কিš‘ রাতা এই বিষয়ে অবগত না যে, সালাত আদায় করার কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। এইগুলো হ”েছ মৌলিক বাধ্যবাদকতা। শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই আমরা এইসব কাজ পালন করি না। ইসলামের অত্যবশ্যকীয় নীতিগুলো পূরণ করে আমাদের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে আমরা এই সব কাজ করে থাকি।

সালাত হলো একটা গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাবার একটা রাস্তা। একই ভাবে সিয়াল পালক করাও লক্ষ্যে পৌঁছানো একটা উপায়। আজকাল আমরা এইসব উপায় বা রাস্তাকে আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে রূপন্তর করে ফেলেছি। যেটা খুবই ভয়াবহ সমস্যা। কোরআন কিš‘ আমাদের এমন করতে বলে না। কোরআনে যখনই কোন বাধ্যবাদকতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তখনই সে কাজের উদ্দেশ্য অর্থাৎ ঐ কাজ সম্পর্কিত মূল নীতিগুলোর কথা বলা হয়েছে। আমরাই এই দু’টি বিষয়কে কেঁটে আলাদা করে ফেলেছি। আর একটা কথা- বাধ্যবাদকতা বলতে শুধু করনীয় কাজগুলোকেই বোঝানো হয়নি। বর্জনীয় কাজ সমূহের কথাও বলা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ সালাত অন্যতম উদ্দেশ্য হ”েছ “সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে” অশ্লীলতা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল নীতি থেকে দূরে রাখে। আমাদের তাকওয়াবান, আল্লাহর শুকরকারী এবং আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হতে বাঁধা দেয়। সালাত আমাদের এই অশ্লীলতা থেকে হেফাযত করে। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের সেই সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন যেগুলো করলে ইসলামের মূলনীতিকে অমাণ্য করা হবে। প্রত্যেকটা নিষেধ এক একটা মূলনীতির সাথে জড়িত। দ্বীনে রসূলের সাথে সম্পৃক্ত। সংক্ষেপে এটাই হ”েছ আমাদের দ্বিতীয় বৃত্তটি। প্রধান প্রধান করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়সমূহ। এই পর্যন্ত, অর্থাৎ এই দুটি বৃত্তে যে সব বলা হয়েছে এই বিষয়ে মোটামুটি সব স্কলার সব মুসলিমরাই একমত। ইসলামের মূল নীতি গুলো কি কি এবং আমাদের মূল করনীয় ও বর্জনীয় কাজ কি কি? কোন মুসলিম এসে এরকম বলবে না আমি আসলে নিশ্চিত না শুকর কি আসলে হারাম কি না? এরকম কখনই হবে না। আর যদি কেউ এরকম বলে থাকে তার মানে হ”েছ সে পাগল।


তৃতীয় বৃত্তঃ

এই তৃতীয় বৃত্তটি হ”েছ প্রধান বাধ্যবাদকতার তুলনাই ছোট সুপারিশ সমূহ(জবপড়সসধহফধঃরড়হ)। যেমন ধরুন আমাদের মহানবী (সাঃ) এর সুন্নাহ সমূহ। অর্থাৎ সেই সব ভাল কাজ সমূহ যে সবের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। এমন কাজ যেগুলো আমাদের চারিত্রিীক উৎকর্ষ সাধন করে। উদাহরণ স্বরূপ নরম ভাবে কথা বলা, ন¤্রভাবে চলাফেরা করা। এইগুলো হ”েছ সেই সব কাজ যা আপনার চরিত্রকে উন্নত করবে। একই ভাবে ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা, যেটা একটা সুন্নাহ্। অথবা ধরুন ডান হাত দিয়ে খাওয়া। এই সব ছোট ছোট কাজগুলি আমাদের চরিত্রের বিকাশ ঘটায়। এখন ব্যাপারটা দাড়ালো এই যে, প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ মৌলিক নীতি গুলোর আত্য¯’ করার দিকে। সেটা সঠিক ভাবে করার জন্য তাকে নজর দিতে হবে প্রধান প্রধান বাধ্যবাদকতার দিকে। যদি সে এই প্রধান বাধ্যবাদকতাগুলো ঠিক ভাবে মেনে চলতে পারে তাহলে তার পরবর্তী চিন্তা হওয়া উচিৎ ছোট ছোট সুপারিশ গুলো পালনের মাধ্যমে আরও সুন্দর্য মন্ডিত করা।

উদাহরণ স্বরূপ- সালাত হ”েছ একটি প্রধান কাজ। সালাতের পরে জিকির করাটা কি? এটা হ”েছ উৎকর্ষ সাধন। একই ভাবে সালাতের পরে দোআ করাটা একটা উৎকর্ষ সাধন। অর্থাৎ আপনি ইতোমধ্যে প্রধান কাজটি করে ফেলেছেন। এই যে ছোট ছোট ভাল কাজ করার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করার যে ধারণা এটা নিয়ে কারও মধ্যে তেমন কোন ভেদাভেদ নেই। ‘কিয়ামুল লাইল’ একটা ভাল কাজ, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা একটা ভাল কাজ, সিয়ামের অতিরিক্ত সিয়াম পালন করা একটা ভাল কাজ, ভ্রমণ কিংবা ঘরে প্রবেশের সময় দোআ করা ইত্যাদি। দোআ না করে ঘরে প্রবেশ করা হারাম না। অর্থাৎ দোআ না পড়ে ভ্রমণ করাটাও হারাম না। কিš‘ এমন করাটা ভাল। এটা আপনার দ্বীনের উৎকর্ষ সাধন করে। এই সব জিনিস আপনার জীবনকে উন্নত করে। এইগুলি হল তৃতীয় বৃত্তটি। কিš‘ চার নম্বর বৃত্তে যাবার আগে তিন নম্বর বৃত্তটি সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। প্রথম দ্বিতীয় বৃত্তে আলোচ্য বিষয়গুলো হ”েছ সেই সব জিনিস যে গুলোর দিকে আমাদের নবীগণ দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ নবীগণ আমাদেরকে ইসলামের প্রধান নীতিমালা সমূহ, প্রধান করণীয় ও বর্জনীয় এই সবের দিকে ডেকেছেন। এইগুলোই ছিল বনীদের দাওয়াতের মৌলিক দিক। মানুষ যখন এইসব মৌলিক বিষয়কে মেনে নিয়ে, ভাল করে বুঝে আত্য¯’ করতে সক্ষম হল এর পরে গিয়ে নবীগন তাদেরকে এ সবের পাশাপাশি উৎকর্ষ সাধনের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ দিতেন। এখন দেখা যাক আমরা কি করি?

আমরা যেটা করি- সেটা হ”েছ মৌলিক নীতিমালা গুলো তো আমরা ভুলেই গেছি উপরš‘ আমরা প্রধান বাদ্যবাদকতাগুলো উৎকর্ষ সাধনের জন্য যেসব ছোট ছোট সুপারিশ রয়েছে সে সবের সাথে মিশিয়ে ফেলেছি। এই সম্পূর্ণ মিশ্রণই এখন প্রধান বাধ্যবাদকতা হয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ-আপনি যদি এমন কাউকে দেখেন যে জোহরের ফরজ সালাত আদায় করেছে, সুন্নাত সালাত আদায় করে নি, তখন আপনি তার পিছনে লাগেন। কি করেছেন আপনি!! আপনি সুন্নাত নামায পড়েন নি কেন? অর্থাৎ আমরা মানুষকে উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলো করার জন্য বল প্রয়োগ করছি। মানুষ যদি এ কাজগুলো না করে তাহলে আমরা তাদের পিছনে লাগছি, তাদের সালাত নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। তারা কি করছে কি করেনি এই সব নিয়ে কথা বলছি। যেমন ধরুন সহি উ”চারণ!

এটা কিš‘ দ্বিতীয় বৃত্তের মধ্যেও পড়ে না। এটা তৃতীয় বৃত্তের অন্তর্ভক্ত। অথচ আমরা কি করি-কারও তিলাওয়াত সহি না হলে কপালে হাত চাপড়ে বলি, ওহ! কুরআন তিলাওয়াত করে কখনই আপনি গুনাহের মধ্যে পড়ছেন না। আপনি অবম্যই সহি ভাবে তিলাওয়াত শেখার চেষ্টা করবেন। কিš‘ আপনি যদি বসে বসে মদ কলকলা একদম পুঃখানুপুঃখ ভাবে হিসাব করার চেষ্টা করেন তাহলে? সাহাবাগণ তো এইভাবে শেখেন নি। আপনি অবশ্যই আপনার তাসবিদের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিš‘ আপনাকে বুঝতে হবে এই সব জিনিস এগুলো হ”েছ উৎকর্ষ সাধনের জন্যে। এগুলো ঘর সাজানোর জিনিসের মত। আপনার বারার একটা দরজা থাকা দরকার আছে, একটা জানালার দরকার আছে আলো বাতাসের জন্য কিš‘ আপনা বসার জন্য স্পেশাল কার্পেক অত্যবশ্যক না। দেওয়ালে রং বে রঙের পেইন্টিং থাকতেই হবে এমনটি নয়। এটা ঠিক যে এগুলো থাকলে ভালই লাগে। একটা সোফা থাকলে ভালই হয়। কিš‘ কারও বাসার দেওয়ালে পেইন্টিং না থাকলে আপনি তাকে বলতে পারেন না যে, তোমার তো বাসায় নেই। পেইন্টিং না থাকলে কি আর বাসা হয় নাকি? আপনি এ রকম করতে পারেন না। কারণ অধিকাংশ মানুষই প্রধান বাধ্যবাদকতা এবং উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলোর মধ্যে পার্থক্য করেন না। যার ফলে আপনি যখন এরকম বলেন-সমালোচনা করেন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে তখন মানুষ গণহারে সব ক্ষেত্রেই এটাকে প্রযজ্য মনে করে। আমি আপনাদের এর একটা ভয়াবহ পরিণতির উদাহরন দি”িছঃ

আমাদের মধ্যে এক ধরণের মানুষ আছেন যাদের মধ্যে মোটামুটি সব কিছুই হারাম। কেউ ভিডিও গেম খেলছে তারা বলবে ভিডিও গেম কিš‘ হারাম। আপনি টিভি দেখছেন এটা হারাম, আপনি রেডিও শুনছেন এটা হারাম। হারাম! সব কিছুই হারাম। এখন ব্যাপারটা হ”েছ দ্বিতীয় বৃত্তে বর্ণিত কিছু প্রধান বর্জনীয় কাজ রয়েছে, যেমন-মদ, জিনা। এহুলো খুবই খারাপ এবং এগুলো দ্বিতীয় বৃত্তের আওতায় পড়ে। আল্লাহ যে সবকে হারাম বলেছেন। আর এখন আপনি বলছেন ভিডিও গেমস হারাম। এই রকম বলার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ যে সব কাজকে হারাম বলেছেন আর আপনি নিজে যে সব কাজকে অপছন্দ করেন এই উভয়কেই একই পাল্লায় মাপছেন। এর ফলে একজন যুবক ভাই বা বোন যে মুভি দেখে, হতে পারে সেটা অর্থহীন কোন মুভি বা যে কোন কিছু। যখন সে শুনবে মুভি দেখা হারাম সে বলবে এটা হারাম!! আমি তো সারাক্ষণই মুভি দেখি। এটা হারাম! তাহলে তো আমি বিপদে আছি? আর যেহেতু আমি প্রচুর মুভি দেখি, তাহলে তো আমি বিপদে আছি? আর বিপদে যখন আছিই অন্য হারাম গুলোও  তাহলে করি। দোযখে তো এমনিতেই যাওয়া লাগবে। তাহলে মোজ-মাস্তি, পার্টি এই সব করেই যাই। এখন দেখেন এই যে আপনি মদ, রেডিও, ভিডিও গেম এই সব কিছুকে এক কাতারে ফেলেছেন; একজন পাপির মনে মধ্যেও এই সব এখন একই পাল্লাই বিচার হ”েছ। সে ভাববে ভিডিও গেম কোন ব্যাপার না, মুভি দেখাও কোন ব্যাপার না, আর জিনাও কোন ঘটনা না, মদ, নেশা সবই সমান। তার মানে আমরা তখনই সমাজে সমস্যা তৈরি করা শুরু করি যখন আমরা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সৃনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার লিস্টকে ঠিক রাখছি না। মানুষ মনে করে আমরা যত বেশি জিনিসকে হারাম হিসেবে লিস্ট করবো এটা মানুষের জন্য ততই ভাল হবে, মানুষকে রক্ষা করবে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ নবীগণ মানুষকে আমাদের থেকে ভাল ভাবে রক্ষা করেছেন। তারা যা করেছেন এর চেয়ে উন্নত তর কিছু করার সামর্থ্য আমাদের নেই।  আমাদের সীমাবদ্ধতার ভিতরে থেকেই অবশ্যই বিচার করার চেষ্টা করবে যে, যে কোন কিছু কি আসলেই পরিষ্কারভাবে হারাম কি না? এমন স্পষ্ট হারাম জিনিস অবশ্যই আমাদের সামনে আসতে পারে যে, যেটার অস্তিত্ব আগে কখনই ছিল না। কিš‘ সেটা অবশ্যই বড় কোন পাপ কাজের সাথে সম্পর্কীত হবে। আপনারা কি এতোদূর পর্যন্ত বুঝতে পারলেন? এ সব হ”েছ উৎকর্ষ সাধন মূলক কাজ কর্ম। এসব কাজ কর্মের মধ্যে আছে অতিরিক্ত সুন্নাত নামায পড়া, সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করা, কবর জিয়ারত করা। এই যে এই সব কাজ এই সব নিয়ে কোন মতো ভেদ নেই। উৎকর্ষ সাধনমূলক কাজগুলো করুন। আপনি যদি মৌলিক বাধ্যবাদকতা গুলো পূরণ করার পরে আরও ভাল মুফতি হতে চান তো খুবই ভাল। প্রদিনি একটু একটু করে ভাল কিছু শিখুন, একটা ছোট দোআ শিখুন প্রতিদিন। এ ধরণের সব কিছুই করা উচিত। এখন এই বৃত্তের ঠিক বাইরে াার একটি বৃত্ত আছে। চার নম্বর বৃত্ত।


চার নম্বন বৃত্তঃ

চতুর্থ বৃত্তটি হ”েছ সেই সব বিষয় যে গুলো সম্পর্কে সাহাবীগণ একমত পোষণ করেছেন। আমরা এই বিষয়গুলো কুরআনে পাই না। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল সে সব কিš‘ সুন্নাতে স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান। তার বাইতে এই যে চার নম্বার বৃত্তটির কথা বলা হ”েছ এগুলো হ”েছ সে সব বিষয় যে গুলো নিয়ে সাহাবীগণ মতো ঐক্য  পৌঁচেছেন। কিš‘ বাস্তবে এমন বিষয় পাওয়া দুষ্কর যেটা নিয়ে সব সাহবীগণ একমত হয়েছেন। ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। তিন ধরণের মতোক্য রয়েছে। সাহাবীদের এক মতের ধরণের উপর নির্ভর করে মূলতঃ তিন ধরণের মতোক্য রয়েছে। প্রথমটি হ”েছ-সাহাবীগণ কোন একটা ঘটনা নিয়ে একমত। সেটা কেমন? যেমন ধরুন সব সাহাবীগণ বদরের যুদ্দে অংশ গ্রহণ করেন নি। অনেকেই বদরের যুদ্ধের পর মুসলিম হয়েছেন। কিš‘ যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা সকলেই একই ভাবে বলবেন যে, এই যুদ্দ অমুক দিনে শুরু হয়েছিল, এতো দিন ধরে চলেছে। সবাই এরকম কথা বলবেন কারণ তারা সবাই ওই যুদ্ধে উপ¯ি’ত ছিলেন। এ কারণেই তারা এ বিষয়ে একমত।

দ্বিতীয় ধরণের ঐক্যমত হ”েছ সাহাবীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন তাদের মধ্যে ঐক্যমত। কিছু ক্ষেত্রে তারা সবাই একে অপরের সাথে একমত পোষণ করতেন। যেমন ধরুন ইবনে আব্বাস রা. তিনি একজন জ্ঞানী সাহাবী ছিলেন। এমন অনেক সাহাবী ছিলেন যারা মূলত একটি সূরাও পারতেন না। তারা সদ্য মুসলিম ছিলেন। এখনকার সময় যারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হ”েছ তাদের মতো। কিš‘ তাদের ঐক্যমত এই দ্বিতীয় ধরনের ঐক্যমতের মধ্যে পড়ে না। এটা হ”েছ সেই ধরণের ঐক্যমত যেখানে কোন বিষয়ে কোন জ্ঞানী সাহাবীগণ একমত হয়েছেন। তৃতীয়টি হ”েছ সাহাবীদের মধ্যে যারা শাসক তাদের মধ্যকার ঐক্যমত। যেমন ধরুন ওমরা রা. এবং তার উপদেষ্টা মন্ডলি, তার ঐক্যমত সেটা হ”েছ এই তৃতীয় ধরণের ঐক্যমত। এই হ”েছ সাহাবীগণদের মধ্যে তিন ধরণের ঐক্যমত। অর্থাৎ ঘটনা ভিত্তিক, জ্ঞানী সাহাবী ভিত্তিক এবং শাসন কার্যে নিয়োজিত সাহাবীদের ঐক্যমত ভিত্তিক। যখন শাসন কার্যেক সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়তো ওমর রা. অবশ্যই হাজার হাজার সাহাবীদের সাথে আলোচনা করতেন না। তিনি তার উপদেষ্টা মন্ডলিদের সাথে বসে সবাই মিলে একমত হয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতেন। তার পর সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আইন প্রনয়ণ করা হতো। ব্যাপারটা বোঝা গেল?এখন বর্তমান সময়ে এসে যেটা ঝামেলা হয়েছে কেউ একজন যখন এইভাবে বলে সব সাহাবীগণ এই বিষয়ে একমত। সব সাহাবীগণ এই বিষয়ে একমত? দাঁড়ান দাঁড়ান সব সাহাবীগণ একমত?এটা আপনি কোথায় পেলেন? কেন এইভাবেই তো বর্ণনা আছে। কোথায় আছে? বই পুস্তকে আছে। কোন বই? যাও ভাল ভাবে পড়। আপনি কোন ভাবেই এটা বলতে পারেন না যে সব সাহাবীরাই একমত ছিলেন। আপনি এচা করতে পারেন না। আপনার কথা সুনির্দিষ্ট দলিল পত্রের ভিত্তিতে হতে হবে। এমনিতেই বলে ফেললে হবে না। সব চেয়ে হাস্যকর যে কথাটি এখন পর্যন্ত শুনেছি সব ইসলামি বিশারদ এই বিষয়ে একমত। বলেন কি? ঠিক আছে তাদের দশ জনের নাম বলেন? অ্যা.....অ্যা.............সবাই।

আপনি যদি তাফসীর পড়েন তাহলে আপনি একটি বিষয় পাবেন না যে বিষয়ে সব স্কলার একমত হয়েছেন। এটা হাস্যকর কথা। কুরতুবি, তাবারী, জালালাইন, তাফসীর ইবনে কাছির, ইবনে আশুর, একটা কথা যেটা প্রায়শই সব তাফসীরে লেখা থাকে স্কলারগণ এই বিষয়ে একমত। এবং এর ভিন্নমত একদমই বিরল। অন্য আর এক মুফা”িছর হয়তো এর উল্টোটা লিখেছেন যে, এই ভিন্ন মতের বিষয়েই বরং স্কলারগণ একমত, আর প্রথম মতের পক্ষেই যুক্তি বিরল। অর্থাৎ তাদের কাছেও এই একমত হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। এটা ঠিক ভাবে বোঝার জন্য অনেক পড়াশোনা এবং ঠিকভাবে বোঝার প্রয়োজন। এমনও হয়েছে যে, সাহাবীগণের মধ্যে যিনি সব থেকে জ্ঞানী তিনিও একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন, দ্বিমত পোষণ করেছেন। দ্বীনের কোথায় সর্বসম্মত ভাবে ঐক্যমত আছে? কোন বিষয়ে কোন প্রকার দ্বিমত নেই? প্রথম তিনটি বৃত্ত। যখন আমরা মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিই, নবী রাসূলদের পক্ষ থেকে আওহŸান জানাই তখন আমরা মূলত কোন বিষয়ে কথা বলি? বৃত্ত নাম্বার এক এবং বৃত্ত নাম্বার দুই। যখন সেই মানুষগুলো আমাদের দলে চলে আসে, আমাদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, আমাদের বন্ধু মহলের হয়ে যায়, প্রথম দুটি বৃত্তির বিষয়গুলো ইতিমধ্যেই মেনে নেই তখন আমরা তাদের তিন নাম্বার বৃত্তের দিকে আগ্রহী করার চেষ্টা করি। চার নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলো খুবই সুনির্দিষ্ট এগুলো মূলত গবেষণা ও উ”চ শিক্ষার জন্য। তাই আপনি চার নাম্বার বৃত্ত দিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করে এটা বলতে পারের না-এটা ইসলাম। আপনাকে শুরু করতে হবে মহানবী (সাঃ) যেখান থেকে শুরু করেছেন সেখান থেকে। আপনাদেরকে এক এবং দুই দিয়ে শুরু করতে হবে। এখন সকল সাহাবী কি এই সবগুলো বিষয়ে একমত হয়েছিলেন? না। তবে তারা সবাই এক থেকে তিন বিষয়গুলোতে সহমত পোষণ করেছেন। আপনারা যদি এটাকে ইজমা বলতে চান অর্থাৎ সকল সাহাবী যে সব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন সেগুলো হ”েছ এক, দুই এবং তিন নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলি। এখন এই চারটি বৃত্তের বাইরে আর একটি বৃত্ত আছে।


পাঁচ নাম্বার বৃত্তঃ

এই বৃত্তের অন্তর্ভক্ত হ”েছ সেই সব বিষয় যে গুলো নিয়ে বর্তমান মুসলিম উম্মা একমত পোষণ করেন। এটাকে আপনারা ইস্তিহাদ বলতে পারেন। একজন স্কলার নিজস্ব মতামত থাকে যেটাকে আমরা ফতোয়া বলি। স্কলাররা কিভাবে চিন্তা করেন? তারা জানেন যে, এক দুই বা তিন এগুলো হ”েছ নিখুত। চার নাম্বার বৃত্তের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অর্থাৎ কেন তারা এই বিষয়ে একমত হয়েছিলেন অথবা দ্বিমত পোষণ করেছিলেন এটা বোঝার জন্য অনেক পড়ালেখা এবং গবেষণার প্রয়োজন। এর পরে যখন পাঁচ নাম্বার বৃত্তটি আসে যেখানে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো সম্পর্কে কুরআনে সারাসরি কোন সমাধান দেওয়া হয়নি এবং হাদীসেও পরিষ্কার ভাবে কিছু বলা হয়নি। এখন সমাধার পাওয়ার জন্য আমাকে আমার নিজের গবেষণা করতে হবে। দলিল প্রমাণাদী যা কিছু পাওয়া যায় খুঁজে বের করতে হবে। এর পর আমার সামর্থের সর্বো”চ ব্যবহার করে এ সবের ভিত্তিতে একটা সমাধানে আসতে হবে। তার মানে আমি এই সমস্যা একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি এটা মেনে নিয়ে যে, আমার প্রাপ্ত উত্তরটি একেবারে নিখুত হবে না। কারণ একদম নিখুঁত সমাধান এক, দুই এবং তিন এই বৃত্ত গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই আমার প্রাপ্ত উত্তরটি হ”েছ আমার সীমাদ্ধতার মধ্য থেকে যতটুকু নিখুঁত হওয়া যায় ততটুকু। এটা এমন কোন সমাধান নয় যেটা আমি অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারি। কিš‘ আমি এমন করে বলতে পারবো না যে, এটাই ইসলাম এবং তোমরা যদি এটা অনুসরণ না কর তাহলে ইসলাম থেকে বাইরে চলে যাবে। আমি এমনটা বলতে পারি না। আমি বলতে পারবো না যে আমার দেওয়া ফতোয়া ইসলামের সাথে সু-নীবিড় ভাবে সম্পর্কীত। বড়ো জোর আমি এই ভাবে বলতে পারি যে, আমার জ্ঞান অনুসারে যতোদূর বুঝতে পেরেছি এইভাবে চিন্তা করতে পারি। এসব হ”েছ সেই সব বিষয় যেগুলোর বিষয়ে কোরআন, হাদীস বা সাহাবাগণের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট সমাধান পাওয়া যায় না। একটা উদাহরণ দি”িছ-খলিফা হারুনর রশিদ। তিনি তখন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। আমিরুল মুমেনীন। সেই সময় আমেরুল মুমেনীনগণ সালাতের ইমামতী করতেন বিশেষ করে হজ্বের সময়। এরকম এক সময় তিনি হজ্ব পালন করতে গেলেন। আমেরুল মুমেনীন হিসেবে তিনিই ইমামতি করবেন। যাই হোক তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন কারণ তিনি ইমামতি করবেন। আর তিনি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী। ওনার হজ্বের যিনি মোয়াল্লেম ছিলেন (মোয়াল্লেম হ”েছ সেই ব্যক্তি যিনি অপনাকে হজ্বের বিভিন্ন নিয়ম কানুন শিখিয়ে দেবেন) স্বাভাবিক ভাবেই আমেরুল মুমেনীনের মোয়াল্লেম হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ছিলেক কাজী আবু ইউসুফ। হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানীফার সব কিছু তিনিই লিপিব্ধ করতেন। যাই হোক, পৃথিবীর বুকে হানাফী মাযহাবের বিজ্ঞ যে আলেম তিনি হ”েছ তার মোয়াল্লীম। তারা দুজনেই সামনের কাতারে আছেন। এবং আমেরুল মুমেনীন একটু পরেই সালাতের ইমামতি করবেন। কিš‘ খলীফা হারুনর রশিদ হিজামা করেছেন (হিজামা হ”েছ এমন একটা চিকিৎসা পদ্ধতি যেটা কাপিং এর মাধ্যমে করা হয় এবং এর ফলে শরীর থেকে রক্ত বের হয়)। এখন হানাফী মাযহাব আনুসারে শরীর থেকে রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হবে। খলিফা হারুনর রশিদ একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জানতেন যে, তিনি যদি ইমাম আবু ইউসুফকে এখন জিজ্ঞাসা করেন যে আমার ওযু কি নষ্ট হয়েছে তাহলে আবু ইউসুফ কি বলবে? হ্যা, আপনার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই ক্ষেত্রে তাকে প্রথম কাতার থেকে বের হয়ে সবগুলো কাতার পার হয়ে ওযু খানাই যেয়ে ওযু করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে যে সময় লাগবে তাতে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে মাগরীবের ওয়াক্ত চলে আসবে। কিš‘ তাকে তো তখনই সালাতের ইমামতি করতে হবে এবং তিনি যদি আবু ইউসুফকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে উনি বলবেন আপনার সালাত আদায় হবে না। কারন ওযু নেই। ঘটনা চক্রে ইমাম মালিক ও প্রথম কাতারে ছিলেন। এমতাব¯’ায় খলিফা উদ্দেশ্য প্রণিতভাবে উনার নিজের মোয়াল্লিমকে এ বিষয়ে না জিজ্ঞেস করে ইমাম মালিককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কারণ মালিকি মাযহাব অনুসারে রক্তপাত হলেও ওযু নষ্ট হয় না এবং খলিফা এটা জানতেন। তিনি ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করলেন-“আ”ছা আমি যে কাপিং করালাম আমার কি ওযু নষ্ট হয়েছে?”ইমাম মালিক বললেন-না না, আপনার ওযু ভঙ্গ হয় নি, আপনি ইমামতি করুন। ফলশ্রæতিতে খলিফা হারুনর রশিদ ইমামতি করলেন হজ্বের সময় সেই বিশাল জামাতের। কাজী আবু ইউসুফ, ইমাম মালেক দুজনেই সেই জামাতে উনার পেছনে ছিলেন। আর কাজী আবু ইউসুফ ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত স্কলারদের মধ্যে অন্যতম। তার সাথে অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন যারাও হজ্ব করতে এসেছিলেন। সেই শিক্ষার্থীরা কিš‘ পেছনে ছিলেন তারাও এই ঘটনা দেখতে পেলেন এবং নামায পড়ছিলেন। আর নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা দৌঁড়ে কাজী ইউসুফের কাছে গেলেন এবং বললেন আমরা কি আবার সালাত আদায় করব?আপনি কিভাবে উনাকে কাবার সামনে ইমামতি করতে দিলেন ওযু ছাড়া? তখন কাজী আবু ইউসুফ, যিনি কিনা হানাফী মাযহাবেন অনুসারী তার শিক্ষার্থীদের বললেন-‘যে পুনরাই সালাত আদায়ের দুঃসাহস দেখাবে সে খাওয়ারীজদের অন্তর্ভক্ত, সে বা তারা এ দ্বীনের অন্তর্ভক্ত নয়’। কেন তিনি এরকম বললেন? কারণ ফতোয়া নিয়ে তার চিন্তার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। উনার চিন্তার প্রকৃতি এই রকম ছিল যে, রক্ত পাতের সাথে ওযু নষ্ট হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। এটি এমন একটি বিষয় যেট নিয়ে গবেষণা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন আমাদের গবেষণা অনুসারে ওযু নষ্ট হবে আর ইমাম মালিকের গবেষণা অনুসারে ওযু নষ্ট হবে না। এটা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত গবেষণার ফলাফল। কোরআনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, রক্ত পাত হলে ওযু নষ্ট হবে। এমন কোন হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে রক্ত পাতের কারণে ওযু নষ্ট হবে। তাই আমরা কেউ এই নিয়ে বিতর্ক করতে পারি না যে, আমার প্রপ্ত ফলাফলই সঠিক। কারণ এটা একান্তই আমার সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত ব্যক্তিগত মতামত। যার ফলে আমি কিš‘ এটাও জানি না আমি সঠিক কি না আর উনি ভুল কি না। আর এটা নিয়ে তর্ক করতে যেয়ে আমি যে মূলনীতি জানি তা হ”েছ ঐক্য হ”েছ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। নিজের ফতোয়ার প্রতি অনড় থাকতে যেয়ে আমি এই মূল নীতিকে অমান্য করতে রাজি নয়। এরকম ছিল তাদের চিন্তা ভাবনা। এভাই উনারা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতেন। আপনি যদি ফিকাহ নিয়ে পড়াশোনা করেন, ফিকার কিতাব গুলো পড়লে দেখবেন কেউ যদি অন্য আর একজনের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন তখন শুরুতেই তিনি যার  সেঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তার জন্য দোআ করে একপৃষ্ঠা লেখেন। এরপরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি একমত নন। একই ভাবে অপর জন যখন এর উত্তর দিবেন তখন তিনিও এভাবে বলেন যে, আপনার দোআর জন্য ধন্যবাদ এবং আপনার জন্যও নিন্মোক্ত দোআ রইলো। যদিও তারা যে সব সময় একে আপরের সাথে এরূপ ব্যবহার করেন তেমন কিন্ত নয়। মাঝে মাঝে তাদের লেখার মধ্যে অনের প্রতি প্রকৃতির মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। যা হোক, বর্তমান সময়ে ইসলামের যে রূপ সেটা বোঝার জন্য এই বৃত্ত গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার থাকা দরকার। বৃত্ত গুলার কথা মাথায় রেখে যদি আমরা চিন্তা করি যে আমাদের কোন বিষয় টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, কোনটি সবার প্রথমে গণ্য হবে, মূলনীতি সমূহ, স্ব”ছতা, ন্যায়বিচার, আল্লাহ ভীতি, সত্যতা, সত্যবাদীতা এগলো হলো সবার আগে আসবে। এই মূলনীতি গুলো আমরা কিভাবে শিখি? অত্যাবশ্যকীয় বাধ্যবাদকতা পালন কারার মাধ্যমে এই মূলনীতি গুলো আমাদের মধ্যে দৃঢ় হয়। আর কোন জিনিসটা এই মূলনীতি গুলোকে পরিবর্তন করে, উন্নত করে? তৃতীয় বৃত্তটি। এখন যেটা দেখা যায় বর্তমান সময়ে ইসলাম মস্পর্কিত আমাদের বেশির ভাগ জিজ্ঞাসাই প্রথম তিনটি বৃত্ত থেকে দূরে। আমাদের জিজ্ঞাসা গুলো হলো পঞ্চম বৃত্তের মধ্যে চলে গেছে। মূলনীতি গুলোর ছিটে ফোটা যেখানে নেই। কোরআরে আল্লাহ যে সব মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন, যারা পবিত্র থাকতে ভারবাসেন। আমরা যখন হজ্বে যায়; হজ্ব হ”েছ একটি মৌলিক বাধ্যবাদকতা। হজ্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এইসব গুনাবলী সুদৃঢ় হওয়ার কথা। তাকওয়া, শোকর, আল্লাহ ভীতি, সততা, ন্যায়বিচার এই সব কিছুই। এখন ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় থেকে প্রচলিত রীতি নীতি অনুসারে আপনি যখন কাবার সামনে গিয়ে কালো পাথর টিকে ধরার চেষ্টা করেন তখন দেখবেন আশে পাশের মানুষ জন আপনার মুখে তাদের কনুইয়ের গুতা দি”েছ। আপনাকে ঠেলে সরিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এমনও দেখবেন যে, কেউ একজন তার সামনের পাঁচ ছয় জন মানুষের উপর দিয়ে এসে হাজ্বে আসওয়া ধরার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। যেন তার অনেক মূল্যবান কিছু চাওয়ার আছে, দোআ করতে হবে। কিš‘ এরকম উতলা হয়ে, যুদ্ধ করে হাজ্বে আসওয়ার কাছে আসার পরে একমাত্র যে দোআটি তাকে সর্বপ্রথম করা উচিত সেটা হ”েছ ‘আমি এই মাত্র যে সব গুনাহ করে এই পর্যন্ত আসলাম তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও’। অর্থাৎ দেখা যা”েছ যে,আমরা রীতি নীতি গুলো ঠিকই মেনে চলছি কিš‘ তার মাধে মূলনীতি গুলোর কোন উপ¯ি’তি নেই। মুজদালিফাই(মুজদালিফা হ”েছ খুবই পবিত্র ¯’ান) যখন আপনারা যাবেন; এটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনি সারা রাত আল্লাহর দোআ করে কাটানোর কথা, আল্লাহর স্মরণে রাত পার করার কথা। সকালে যখন আপনি সেখান থেকে রওনা দেবেন এমনকি আপনি দুই কদমও সেখান থেকে যেতে পারবেন না। আপনি চিন্তাই পড়ে যাবেন আপনি কি একটা পবিত্র জায়গায় আছেন? নাকি একটা আস্তাকুড়ের মাঝখানে দাঁদিয়ে আছেন? আপনি নিচে তাকিয়ে মাটি দেখতে পাবেন না। শুধু দেখবেন ডাইপার, পানির বোতল, কোকা-কোলার বোতল, টিস্যু পেপার। এমন কেন হয়? আপনার কি জানের মূলনীতির কোন ধার ধারিনা আমরা। এর ফলে অত্যাবশ্যকীয় মূলনীতি গুলোর প্রাধান্য দেওয়ার কারণে যে ধর্ম হওয়ার কথা ছিল সব চেয়ে সুন্দর সেটা এখন হয়ে গেছে কদাকার। এভাবেই আমরা একটা সুন্দর ধর্মকে কদাকার করে ফেলেছি। বনি ঈসরাইলরা যেভাবে করেছিল। তারা আল্লাহর দেওয়া মূল জিনিসগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রীতি নীতি গুলোকেই গ্রহণ করেছিল। সুবহান আল্লাহ! আমার কাছে তাই এই কাঠামোটি ভালভাবে বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান মনে হয়। তাহলে আমাদের সেই সেই সুযোগটা নেওয়া উচিত। বর্তমান উম্মার মতোভেদের কয়েকটি বড় বড় বিষয় হ”েছ তারাবির নামায কয় রাকাত?চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে কি সারা পৃথিবী একই দিনে ধরা হবে নাকি এলাকা ভিত্তিক ঠিক করা হবে? এসব হ”েছ বড় বড় তর্কের বিষয়। কিš‘ আপনারা যদি মূল ফিকাহর বই গুলো দেখেন তাহলে বুঝবেন এই সব বিষষ এমনকি তিন নম্বার বৃত্তের মধ্যেও নেই। চার বা তার পরের বিষয়। তাহলে কেন আমরা এই সব নিয়ে তর্ক করছি? যে সব বিষয় আমাদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করে, সেগুলো সে সব বিষয় যেগুলো আমাদের মধ্যে বিভক্তি ঘটাই তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কিš‘ আমরা যখন সে সব বিষয় থেকে আমাদের দৃষ্টিশক্তি সরিয়ে নিই তখন বিভক্তি সৃষ্টি করার বিষয় গুলিই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে।  এমনকি এখনকার দিনে একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমকে দেখে তখন মনে মনে চিন্তা করে সে কি সাফি? নাকি মালিকি? সে কি আমার মতো? আপনার তো এইসব নিয়ে চিন্তাই করা উচিত না। আপনার তো চিন্তা করা উচিত সেকি মুসলিম নাকি মুসলিম না? ব্যাস! এটুকুই যথেষ্ট।

এবার আসা যাক শেষে একটি উদাহরণে-আল্লাহ মোট কত জন নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন? এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারা? নবী রাসূলগল। এই বিষয় তো আমরা সবাই একমত? মানব জাতির জন্য সর্বত্তম শিক্ষক কারা ছিলেন? এই এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূলগণ হ”েছন সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত সর্বোত্তম শিক্ষক। তাদের নাম বলুন এই বার? তারা সব চেয়ে গুরুত্তপূর্ন ব্যক্তিবর্গ! আপনাদের তো তাদের নাম জানা উচিত ছিল? আল্লাহ তো তাদের সবার নাম বলেন নি। আল্লাগ শুধুমাত্র ২৫ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। তার মানে কি অল্প কয়েক জনের নাম বাদ পড়েছে? তারা ছিলেন ইসলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। অথচ আমরা তাদের নাম পর্যন্ত জানি না। আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে, আবু হানিফা কে ছিলেন? কে ছিলেন ইমাম শাফি? অযথা চিন্তা বন্ধ করুন। 



Translate