Tuesday, December 7, 2021

কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা

 কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

কবর যিয়ারত করতে গিয়ে হাদীছে বর্ণিত সহিহ দু‘আ পাঠ করবে। অতঃপর কবরবাসীর জন্য দু‘আ করবে। কিন্তু সেখানে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ, সাতবার দরূদ পাঠ, সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব, নাস পাঠ ইত্যাদি যে প্রথা চালু আছে তা সম্পূর্ণ বিদ‘আতী প্রথা। সূরা ইয়াসীন পাঠ করা সম্পর্কে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা জাল।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ ( يس ) خُفِّفَ عَنْهُمْ يَوْمَئِذٍ وَكاَنَ لَهُ بِعَدَدٍ مَا فِيْهَا حَسَنَاتٌ.

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, সে দিন কবরবাসীর আযাব হালকা করা হবে। আর তার জন্য প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময়ে নেকী রয়েছে।[1] কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। এর সনদে আবু উবায়দাহ, আইয়ুব বিন মুদরিক ও আহমাদ রিইয়াহী নামে তিন জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[2]

[1]. তাফসীরে ছা‘লাবী; সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬।

 (১৮) কবর খনন করা ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা :

 (أ) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَفَرَ قَبْرًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَمَنْ غَسَلَ مَيْتًا خَرَجَ مِنَ الْخَطَايَا كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ وَمَنْ كَفَّنَ مَيْتًا كَسَاهُ اللهُ أَثْوَابًا مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ عَزَى حَزِيْنًا أَلْبَسَهُ اللهُ التَّقْوَى وَصَلَّى عَلَى رُوْحِهِ فِى الْأَرْوَاحِ وَمَنْ عَزَى مُصَابًا كَسَاهُ اللهُ حُلَّتَيْنِ مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ لاَ يَقُوْمُ لَهُمَا الدُّنْيَا وَمَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ حَتَّى يَقْضِىَ دَفْنَهَا كُتِبَ لَهُ ثَلاَثَةَ قَرَارِيْطَ الْقِيْرَاطُ مِنْهَا أَعْظَمُ مِنْ جَبَلِ أُحُدٍ وَمَنْ كَفَّلَ يَتِيْمًا أَوْ أَرْمَلَةً أَظَلَّهُ اللهُ فِىْ ظِلِّهِ وَأَدْخَلَهُ جَنَّتَهُ.

(ক) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবর খনন করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে গোসল করাবে সে পাপ থেকে অনুরূপ মুক্ত হবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে তাকে আল্লাহ জান্নাতের পোশাক পরাবেন। যে চিন্তিত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে তাক্বওয়ার লেবাস পরিধান করাবেন এবং তার রূহের উপর রহমত বর্ষণ করবেন। যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক সেটের মধ্য হতে দু’টি সেট দান করবেন। পুরো পৃথিবী ঐ দু’টি কাপড়ের সমকক্ষ হবে না। যে দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জানাযার সাথে থাকবে তার তিন ক্বীরাত নেকী হবে। এক ক্বীরাত্ব ওহোদ পাহাড়ের চেয়ে বড় হবে। যে ব্যক্তি ইয়াতীম বা বিধবার তত্ত্বাবধায়ক হবে আল্লাহ তাকে তাঁর ছায়ায় ছায়া দান করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[1]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী নিজেই যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।[2] কারণ এর সনদে খলীল বিন মুররা ও ইসমাঈল বিন ইবরাহীম নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[3]

উল্লেখ্য যে, নিম্নের হাদীছটি সহিহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল, অতঃপর তার গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তাকে ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’।[4]

 (ب) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَمَلَ جَوَانِبَ السَّرِيْرِ الْأَرْبَعِ كَفَّرَ اللهُ عَنْهُ أَرْبَعِيْنَ كَبِيْرَةً.

(খ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃতের চার পায়া খাটিয়ার পার্শ্ব বহন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ৪০ টি কাবীরা গোনাহ মাফ করে দিবেন।[5]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য। এর সনদে আলী বিন আবু সারাহ ও মুহাম্মাদ বিন উক্ববা সাদূসী নামে দুই জন যঈফ রাবী আছে।[6]

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<

মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বিদআত ও কুসংস্কার, এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন

 মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বিদআত ও কুসংস্কার, এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

 (১) মৃত্যুর আগে কিংবা পরে বিশাল খানার আয়োজন করা
 (২) মৃত ব্যক্তির নামে দেয়া ছাদাক্বা সবাই খাওয়া
 (৩) জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তার পিছনে পিছনে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দেয়া ও বিভিন্ন যিকির করা
 (৪) কবরে গোলাপ জল ছিটানো
 (৫) যে কাপড় দ্বারা খাটলি ঢেকে রাখা হয় সেই কাপড়ে ‘আয়াতুল কুরসী’, বিভিন্ন সূরা ও দু‘আ লেখা বিদআত ও কুসংস্কার
 (৬) খাটলি নিয়ে যাওয়ার সময় দুইবার রাখা
 (৭) শোক দিবস পালন করা
 (৮) চার কুল পড়ে কবরের চার কোণায় খেজুরের ডাল পোঁতা
 (৯) কবর যিয়ারত করতে গিয়ে সাতবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাছ, সাতবার দরূদ ইত্যাদি নিয়ম পালন করা

 (১০) নির্দিষ্ট করে ২৭ রামাযান তারিখে, দুই ঈদের দিন কিংবা জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করা
 (১১) মৃত ব্যক্তির নামে কুরআন পড়ার আয়োজন করা কিংবা মাইকে কুরআন তেলাওয়াত বাজানো
 (১২) কথিত শবেবরাত, শবে মি‘রাজের বিদ‘আতী রাতে কবরস্থানে যাওয়া। পীরের দরগায় সারা রাত জেগে ইবাদত করা। এটা শিরক।
 (১৩) লাশ দেখার জন্য মেয়েদের ভিড় করা
 (১৪) মৃত ব্যক্তির নামে আজমীর, খানকা, মাযার ও কবরের উদ্দেশ্যে মানত করা বা টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল ইত্যাদি পাঠানো।[1]

[1]. বিস্তারিত দ্রঃ স্বলাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ২৩৮-২৪১

 এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন :

মাইয়েতকে দ্রুত গোসল করানো ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা সুন্নাত।[7] গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ আদবের সাথে বরইপাতা দেওয়া পানি এবং সাবান দিয়ে গোসল করাবে।[8] সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন।[9] স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাবেন।[10] জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না।[11] উল্লেখ্য, পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে।[12]

প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাইয়েতের ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করবে।[13] ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় পানি ঢালা যাবে। গোসল শেষ করার পর সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হলে চুলের তিনটি বেণী করে পিছনে ছড়িয়ে দেবে।[14]

 কাফন :

সাদা পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মাইয়েতকে কাফন পরাবে।[15] তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে।[16] পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি লেফাফা বা বড় চাদর, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে যাবে। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা।[17] বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে।[18] শহীদকে তার পরিহিত পোশাকে কাফন দিবে। অনুরূপ মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কিন্তু সুগন্ধি লাগাবে না।[19] কাফনের কাপড়ের অভাব হলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে।[20]

 দাফন :

কবর গভীর ও প্রশস্ত করে ভালভাবে খনন করতে হবে।[21] ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবরই জায়েয। মাইয়েতকে পুরুষ লোকেরা কবরে নামাবে। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তী যারা ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন।[22] কবরের পায়ের দিক দিয়ে মোর্দাকে কবরে নামাবে।[23] মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে।[24] কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ দু‘আ পড়বে।[25] কবর বন্ধ করার পরে সকলে সাধারণ দু‘আ হিসাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে[26] তিন মুষ্ঠি মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দিবে।[27] কবরের মাটি সমান করে দিবে।[28] কবর সাধারণ মাটি থেকে বিঘত খানেক উঁচু করবে।[29] বেশী উঁচু করা বা সৌধ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ।[30]

[1]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব হা/৯২৯২।
[2]. আল-আওসাত হা/৯২৯২- لم يرو هذا الحديث عن الخليل بن مرة إلا موسى بن أعين ولا يروى عن جابر إلا بهذا الإسناد ولم ينسب لإسماعيل بن إبراهيم الذي روى هذا الحديث।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০০২; যঈফ আত-তারগীব হা/২০৫০।
[4]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৮৮২৭; ত্বাবারাণী, সহিহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ সহিহ।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব; তানক্বীহ, পৃঃ ৫০৫।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৯১।
[7]. বুখারী হা/১৩১৫, ১/১৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৩৬, ২/৩৯২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫১; মিশকাত হা/১৬৪৬, পৃঃ ১৪৪, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘জানাযার সাথে চলা ও তার স্বলাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[8]. বুখারী হা/১২৫৩, ১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/১৬৩৪, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ।
[9]. দারাকুৎনী হা/১৮৭৩, সনদ হাসান; মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৩৩৯; আহকামুল জানাইয, পৃঃ ৫০।
[10]. ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫; ইরওয়াউল গালীল হা/৭০০, ৩/১৬০ পৃঃ; হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১।
[11]. বুখারী হা/১৩৪৩, ১/১৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২, ২/৪০৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭২; বলূগুল মারাম হা/৫৩৭; তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩৩।
[12]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৭; নিসা ৪৩; মায়েদাহ ৬।
[13]. বুখারী হা/১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মুসলিম হা/২২১৮; মিশকাত হা/১৬৩৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ।
[14]. বুখারী হা/১২৫৩, ১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/১৬৩৪, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ; তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩০।
[15]. তিরমিযী হা/৯৯৪, ১/১৯৩ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৩৮৭৮; মিশকাত হা/১৬৩৮, পৃঃ ১৪৩; বলূগুল মারাম হা/৫৩৫; সহিহ মুসলিম হা/২২২৮।
[16]. সহিহ বুখারী হা/১৩৮৭, ১/১৮৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩০৪, ২/৪২৯ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৪।
[17]. সহিহ বুখারী হা/১২৭২, ১/১৬৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৯৭, ২/৩৭০ পৃঃ); সহিহ মুসলিম হা/২২২৫; মিশকাত হা/১৬৩৫, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৭, ৪/৪৯ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ; তিরমিযী হা/১১৩; মিশকাত হা/৪৪১।
[18]. বুখারী হা/১২৭৫, ১/১৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২০১, ২/৩৭২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১৬৪৪, পৃঃ ১৪৪।
[19]. মুসলিম হা/২৯৫১, (ইফাবা হা/২৭৫৮), ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪; বুখারী হা/১২৬৭।
[20]. বুখারী হা/১৩৪৩, ১/১৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২, ২/৪০৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭২; মিশকাত হা/১৬৬৫।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০, পৃঃ ১১২, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪১; তিরমিযী হা/১৭১৩; সনদ সহিহ, মিশকাত হা/১৭০৩, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬১১, ৪/৭৪ পৃঃ। উল্লেখ্য যে, কবর ৬ ফুট গভীর ও মাপমত প্রস্থ করতে হবে মর্মে একটি আছার বর্ণিত হয়েছে। -মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১৭৮৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/৫৪৫ পৃঃ।
[22]. আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানাইয, পৃঃ ৬১; ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫, সনদ হাসান; হাকেম হা/৪৭৬৯।
[23]. আবুদাঊদ হা/৩২১১, ২/৪৫৮ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৫৬১।
[24]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৬০৬১; ইবনু হাযম আন্দালুসী, আল-মুহাল্লা ৫/১৭৩ পৃঃ; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১৫১; আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া ১৩/১৯০ পৃঃ।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৫০, পৃঃ ১১১; আবুদাঊদ হা/৩২১২, ২/৪৫৮ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭০৭, পৃঃ ১৪৮।
[26]. মুসলিম হা/৮৫২; মিশকাত হা/৪৫৬; বুখারী হা/৫৬২৩; মুসলিম হা/৫৩৬৬; মিশকাত হা/৪২৯৪।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬৫, পৃঃ ১১২; সনদ সহিহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৭৫১, ৩/২০০ পৃঃ।
[28]. আহমাদ হা/২৩৯৭৯ ও ২৩৯৮১; সনদ সহিহ, আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২০৮।
[29]. সহিহ ইবনে হিববান হা/৬৬০১; বলূগুল মারাম হা/৫৬৭; সনদ সহিহ, ইরওয়াউল গালীল ৩/২০৬ পৃঃ।
[30]. মুসলিম হা/২২৮৯, (ইফাবা হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৬, ৪/৭৩ পৃঃ।

উপসংহার :

স্বলাত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম (আনকাবূত ৪৫)। কিন্তু এই স্বলাত বিশুদ্ধ না হলে কোন আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ ফরয স্বলাতসহ আমাদের প্রত্যেকটি স্বলাতই জাল-যঈফ ও বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনী দ্বারা ভরপুর, যা লেখনীতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তাই সকল মুছল্লী ভাই ও বোনদের প্রতি আকুল আবেদন থাকবে- তারা যেন যাবতীয় সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দেন এবং রাসূল (ﷺ)-এর পদ্ধতি নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করেন। মনে রাখা আবশ্যক যে, বিভিন্ন মাযহাব, মতবাদ ও ত্বরীক্বা সৃষ্টির বহু পূর্বেই ছাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী স্বর্ণযুগের মানুষগুলো রাসূল (ﷺ)-এর যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমেই সফলকাম হয়েছেন। এমনকি অনেকে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদও পেয়েছেন। অতএব আসুন! আমরা একমাত্র সেই রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ করি এবং তাঁরই দেখানো পদ্ধতিতে স্বলাত আদায় করি। তিনি ছাড়া কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আমাদেরকে উদ্ধার করার কেউ থাকবে না। আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (ﷺ)-এর অনুপম আদর্শের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করুন! আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করে নেয়ার তাওফীক্ব দান করুন! আমাদেরকে সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং জান্নাত লাভে ধন্য করুন! আমীন!!

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<

মোজার উপর মাসেহ করার শরঈ বিধান

 মোজার উপর মাসেহ করার শরঈ বিধান

আবদুল্লাহ শাহেদ
সূত্র :: www.waytojannah.com

بسم الله الرحمن الرحيم

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দরূদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর। মোজার উপর মাসেহ করার শরঈ

আমরা কখনও কখনও মোজার উপর মাসেহ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকি। তাই ইসলামী শরীয়ত ওযু করার সময়

 

মোজা পরিধানকারীকে পা ধৌত করার জন্য মোজা না খুলে তার উপর মাসেহ করার অনুমতি দিয়েছে। কারণ বার বার মোজা খুলতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে শীতের প্রচন্ডতার সময়।

মুসলিমদের জন্য উত্তম হলো প্রয়োজনের সময় আল্লাহ প্রদত্ত অনুমতি গ্রহণ করা এবং নিজের উপর কঠিন না করা। নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তায়া’লা কোন বিষয়ে অনুমতি দিলে মানুষ তা গ্রহণ করুক এটা পছন্দ করেন, যেমনভাবে তিনি তাঁর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করেন। (আহমাদ)

 কাপেড়র তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ কি? هل يجوز المسح على الخف المصنوع من القطن

বর্তমান সময়ে লোকেরা কাপড়ের তৈরী মোজাই পরিধান করে থাকে। সুতরাং হাদীছে যেহেতু বিনা পার্থক্যে মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ রাখা হয়েছে, তাই সকল প্রকার মোজার উপর মাসেহ করাই বৈধ। তা চামড়ার তৈরী হোক বা সুতার তৈরী হোক। পরিভাষায় যাকে মোজা বলা হয় তার উপরই মাসেহ করা বৈধ। ইসলাম মানুষের উপর সহজ করতে উ সাহ দিয়েছে এবং কঠোরতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং দলীল বিহীন কোন কঠিন মাসআলা মানুষের চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।

 মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত বা সময়সীমাঃ مدة المسح على الخفين للمقيم والمسافر

মোজার উপর মাসেহ করার জন্য মুক্বীমের সময় হল এক দিন একরাত। আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) মুক্বীমের জন্য এক দিন এক রাত আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত নির্ধারণ করেছেন। (মুসলিম) এই হিসাব শুরু হবে পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধানের পর অযু বিনষ্ট হওয়ার পর প্রথম মাসেহ থেকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজন লোক ফজরের স্বলাত আদায় করার জন্য অযু করে মোজা পরিধান করল। মাগরিবের নামযের পূর্ব পর্যন্ত অযু বর্তমান ছিল। তার পর অযু বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার পর মাগরিবের স্বলাতের জন্য অযু করল এবং মোজার উপর মাসেহ করল। এখান থেকে মুদ্দত শুরু হবে এবং পরের দিন মাগরিবের পূর্বে শেষ হবে।

মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত শেষে অযু করতে চাইলে মোজা খুলে পা ধৌত করা ওয়াজিব। এভাবে অযু করে আবার মোজা পরিধান করলে অযু ভঙ্গ হওয়ার পর প্রথম মাসেহ করার পর থেকে আবার নতুন মুদ্দত শুরু হবে।

 মোজার উপর মাসেহ করার শর্ত সমূহঃ شروط المسح على الخفين

মোজার উপর মাসেহ করার জন্য আলেমগণ কতিপয় শর্তারোপ করেছেন। মাসেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য এ সমস্ত শর্ত বর্তমান থাকা জরুরী। শর্তগুলো নিম্মরূপঃ

 ১ মোজা পবিত্র হওয়াঃ

সুতরাং কুকুর, শুকর বা অন্যান্য অপবিত্র জীব-জন্তুর চামড়া দিয়ে তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়। এমনিভাবে মোজাতে পেশাপ বা মল-মূত্র লেগে গেলে তার উপর মাসেহ করাও বৈধ নয়।

 ২ বৈধ মোজা হতে হবেঃ

সুতরাং চুরী করা বা ছিন্তাই করা মোজার উপর মাসেহ করা অথবা রেশমী কাপড়ের তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়। কেননা পুরুষের জন্য রেশমের তৈরী পোষাক পরিধান করা বৈধ নয়।

 ৩ পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করাঃ

মুগীরা বিন শু‘বা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর মোজা খুলতে চাইলে তিনি বলেন “তুমি মোজা দু’টিকে আপন অবস্থায় রেখে দাও। কারণ আমি এ দু’টিকে পবিত্র অবস্থায় পরিধান করেছি। (বুখারী ও মুসলিম)

 ৪ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসেহ করাঃ

আর তা হল মুক্বীম অর্থাৎ স্বদেশে বা আপন বাড়ীতে অবস্থানকারীর জন্য একদিন এক রাত। এবং মুসাফির তথা ভ্রমণরত ব্যক্তির জন্য তিন দিন তিন রাত।

 ৫ মাসেহ ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে হতে হবেঃ

যেমন প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু বের হওয়া, ঘুমানো ও অন্যান্য ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের সময় হতে হবে। বড় নাপাকি যেমন স্ত্রী সহবাস থেকে পবিত্রতা অর্জনের সময় মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়। কাজেই বড় নাপাকির গোসল করার সময় অবশ্যই মোজা খুলতে হবে।

 পট্রির উপর মাসেহ করাঃ المسح على الضماد

ক্ষতস্থানে পট্রির উপর মাসেহ করাও বৈধ আছে। তবে মোজার উপর মাসেহ করা এবং পট্রির উপর মাসেহ করার মাঝে পার্থক্য রয়েছে

 উভয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ الفرق بين المسح على الخفين والضماد

১) মোজার উপর মাসেহ করা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমা বদ্ধ। পট্রির ক্ষেত্রে এমন কোন সময় নির্দিষ্ট নেই।

২) শুধুমাত্র পায়ের মোজার উপর মাসেহ বৈধ। কিন্তু শরীরের যে কোন স্থানে পট্রির উপর মাসেহ করা যাবে।

৩) মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হল উহা পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় পরিধান করতে হবে। কিন্তু পট্রির ক্ষেত্রে এমন কোন শর্ত নেই।

৪) ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধু মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ। কিন্তু পট্রির উপর মাসেহ করা সকল প্রকার নাপাকীর ক্ষেত্রে বৈধ।

 মোজার উপর মাসেহ করার পদ্ধতিঃ كيفية المسح على الخفين

প্রথমে উভয় হাত পানি দ্বারা ভিজাবে। অতঃপর মোজার উপরের অংশের সামনের দিক দিয়ে ভিজা হাত টেনে নিয়ে গোড়ালীতে এনে শেষ করবে। মোজার নিচের দিকে মাসেহ করবেনা। এব্যাপারে আলী (রাঃ) এর উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। তিনি বলেন, দ্বীন ইসলাম যদি মানুষের রায়ের (ব্যক্তিগত মত) দ্বারা সাব্যস্ত হত, তাহলে মোজার উপরের দিকের চেয়ে নিচের দিকে মাসেহ করা অধিক যুক্তিসঙ্গত হত। আর আমি রাসূল (সাঃ) কে তাঁর মোজাদ্বয়ের উপরের দিকে মাসেহ করতে দেখেছি। (আবু দাউদঃ১৬২) উভয় হাত দিয়েই মাসেহ করবে। ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের মোজার উপর দিয়ে মাসেহ করবে। বাম হাত দিয়ে বাম পায়ের মোজার উপর মাসেহ করবে। এক হাত দিয়ে উভয় পায়ের উভয় মোজার উপর মাসেহ করাও যায়েজ আছে। ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল (রাঃ) বলেন, এক হাত দিয়ে বা দু’হাত দিয়ে যেভাবেই মাসেহ করনা কেন, কোন অসুবিধা’নেই।

 পাগড়ীর উপর মাসেহ করাঃ المسح على العمامة

মাথায় পাগড়ী থাকলে পাগড়ীর উপর মাসেহ করা বৈধ আছে। সম্পূর্ণ পাগড়ী উপর অথবা পাগড়ীর অধিকাংশ অংশের উপর দিয়ে মাসেহ করা যায়েজ। তবে কপালের দিক দিয়ে কিছু অংশ খালী থাকলে খালী অংশে মাসেহ করার পর পাগড়ীর উপর মাসেহ করতে হবে।

 এ সম্পর্কে কতিপয় মাসআলাঃ مسائل متفرقة تتعلق بما سبق

ক) পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করে মাসেহ করার পর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বা পরে মোজা খুলে ফেললে বিশুদ্ধ মতে ওযু ভঙ্গ হবে না। যেমন মাথায় ঘণ চুল বিশিষ্ট কোন লোক ওযু করার সময় মাথা মাসেহ করল। অতঃপর ওযু করার পর যদি মাথা কামিয়ে ফেলে, তবে ওযু ভঙ্গ হবে না।

খ) ওযু থাকা অবস্থায় যদি মাসেহ করার মুদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে ওযু ভঙ্গের নির্ধারিত কারণ পাওয়া না গেলে ওযু ভঙ্গ হবেনা। মাসেহের মুদ্দত শেষ হয়ে গেছে বলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার ধারণা ঠিক নয়। কোন ব্যক্তির যদি যোহরের স্বলাতের পর মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত শেষ হয়ে যায়, কিন্তু যদি ইশার স্বলাত পর্যন্ত ওযু বর্তমান থাকে, তাহলে সেই ওযু দিয়ে আসর, মাগরিব ও ইশা এই তিনটি স্বলাত পড়তে পারবে।

 মাসেহ ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহঃ نواقض المسح على الخفين

১) যে কারণে গোসল ফরজ হয়। যেমন স্ত্রী সহবাস করা, সপ্নদোষ হওয়া বা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হওয়া। সাফওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) বলেন, “আমরা ভ্রমণে থাকা অবস্থায় রাসূল তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত আমাদেরকে মোজার উপর মাসেহ করার আদেশ দিতেন এবং পেশাব, পায়খানা ও ঘুমের কারণে মোজা খুলতে নিষেধ করতেন। তবে অপবিত্র হয়ে গেল ভিন্ন কথা।

২) মোজার উপর মাসেহ করার পর তা খুলে ফেললে, উভয় পা ধৌত করা সহ নতুনভাবে অযু করা ব্যতীত দ্বিতীয়বার মোজা পরিধান করা এবং তার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়।

৩) মোজার উপর মাসেহ করার জন্য নির্ধারিত সময় সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাসেহ করতে থাকা বৈধ নয়।

পরিশেষে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা, আমাদেরকে যেন দ্বীনের সঠিক ইলম শিখে তদনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করেন। আমীন॥

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<

সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর গুরুত্ব

 শাহাদাত হুসাইন

তড়িত কৌশল ও ইলেকট্রনিক বিভাগ / রুয়েট, রাজশাহী।

সলাত পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। যেকোন অবস্থায় এটি ফারয। অসুস্থ হলেও এটি আদায় করতে হবে। এর কোন কাযা বা কাফফারা নেই। এর কাফফারা হলো যখন স্মরণ হবে তখনই পড়ে নিবে। বর্তমানে সলাত আদায়কারী যেমন কমে গেছে। তেমনি সলাত সঠিক ভাবে আদায় কারীও কমে গেছে। যেমন রুকু সাজদাহতে এখন আর পিঠ সোজা রাখা হচ্ছে না। অথছ হাদীসে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ,দারেমী, মিশকাত হা/৮১৮)।

আত-তাহরীকে শ্রদ্ধেয় মুজাফফর বিন মুহসীন জাল হাদীসের কবলে সলাত নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশ করছেন। কিন্ত আমি লক্ষ্যকরেছি যে, এমন কিছু নিয়ম আমাদের সমাজে মাজহাবের দোহাই দিয়ে রয়েছে যেগুলো কোন যইফ হাদীস কেন জাল হাদীসেও নেই। শুধুমাত্র অজ্ঞতা, অন্য মতের বিরোধিতা করেই এগুলো না করাই সুন্নাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এগুলোর বিপরীতে সহীহ হাদীস আছে যেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস অমান্য করা কুফরির শামিল।( হাদীস চর্চ্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ড: মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৬৭). যেমন সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানো। এ দুটি বিষয় নিয়েই আমি আজ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সলাতে কাতার সোজা করা

সলাত এমন একটি ইবাদাত যা দিনে পাঁচবার আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে, একে অন্যের কাছাকাছি আনে। খোঁজখবর জানা যায়। যেমন আমি আগে যে মাসজিদে সলাত আদায় করতাম, একজন নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম তিনদিন হলো তবুও তাঁকে পেলাম না মনটা খচখচ করছিলো। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি বাড়ী বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। তেমনি যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এবং আমি মেস ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলাম পরে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি এতদিন বাড়িতে ছিলাম নাকি? কেমন দিনকাল গেলো? সত্যি বলতে কি তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিলো। রাজশাহীতে এসে স্থানীয়দের মধ্যে যাদের সাথে আমার হৃদতা বা আন্তরিকত গড়ে উঠেছে তাদের সবার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়েছিলো মাসজিদে।

আমি মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র না। যখন ইসলাম শিক্ষা পড়তাম তখন একটি প্রশ্ন বারবারই আসতো সেটা হলো, স্বলাতের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা কর। এর উত্তর যা নোটে ও গাইডে পাওয়া যেত তাতে পয়েন্ট আকারে সামাজিক গুরুত্ব লেখা থাকতো । তাতে উল্লেখ থাকতো, সলাত সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে থাকে। সলাতের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এখানে কোন ধনী গরীবের ব্যবধান থাকে না। কিন্ত সলাত আদায় করতে গিয়ে দেখেছি যে, ধনী গরীব এর ব্যবধান না থাকলেও মতের ব্যবধান আছেই। সলাত আদায় করতে গিয়ে কাতার সোজা করা হয় না। পায়ের সাথে পা মিলালেই পা সটান করে সরিয়ে নেয়। এটা কিসের ইঙ্গিত! এটা কি হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার ইঙ্গিত দেয় না। এখানে ব্যবধান কি? না ধর্মের না ঐশ্বর্যতার না অন্য কিছুর। কিছুই না এখানে বিরোধিতা অন্য মতকে বিরোধিতার।

সহীহ হাদীসে কাতার সোজা করার ও পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা বলা আছে। কিন্ত তা আমল করা হচ্ছে না। এটার বিরোধিতা করা হচ্ছে। প্রধানত হানাফী মাযহাবের মাসজিদগুলোতে এটা বেশী করা হচ্ছে। এটার প্রভাব এমন পড়েছে যে আহলে হাদীসের মাসজিদগুলোতে এমনকি আহলে হাদীসের সন্তানগুলোও আজ পায়ের সাথে পা মিলানো ভুলতে বসেছে। এটা না করানোটাই তাদের কাছে সুন্নাহ হয়েগেছে নাউযুবিল্লাহ।

আমি হানাফী মাযহাবের মুখতাসারুল কুদরী, হিদায়া পড়েছি কোথাও পায়নি যে, সলাতের সময় পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। তবে এসব কিতাবে সলাত কাতার সোজা করার গুরুত্ব উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাতার সোজা কিভাবে হবে তা বলা নেই। এর অর্থ হলো যে, সলাতে কাতার সোজা তখনই হবে যখন পায়ের সাথে মিলানো হবে। আল্লাহর নাবী (ﷺ) বলেছেন, সলাতে কাতার সোজা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে করতে হবে বলেন নি, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কিভাবে কাতার সোজা করতে হবে তাও বলেছেন, তিনি বলেছেন কাঁধে কাঁধ পায়ের সাথে পা মিলানো’র কথা বলেছেন। অথচ এ হাদীসের উপর আমল নেই। মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পড়ানো মিশকাতের কাতার সোজা করার অধ্যায়-এ হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত ব্যাখ্যা করার সময় একবারও পায়ের সাথে পা মিলানোর ব্যাখ্যা করেননি। একটা হাদীসও নেই তা জাল,যইফ হোক যে পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। এটা কিভাবে আসলো ? এটা এসেছে আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করে। আহলে হাদীসরা পায়ের সাথে পা মিলায়। অতএব আমরা তো আহলে হাদীস না, আমরা হানাফী অতএব আমাদের জন্য পা ফাঁক করে দাড়ানো ও পা না মিলানোই সুন্নাত। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কি আমাদের আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে বলেছেন নাকি ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপনার হিন্দু ধর্মের জাতপাতের ব্যবধানকে নিয়ে আসছেন। যেখানে এক জাতের ব্যক্তির অন্য জাতকে স্পর্শ করাও পাপ। একটু ভাববেন কি, আমরা যারা সলাতে পা ফাঁক করে দাড়াই এবং কেউ পা মিলালে সটান করে পা টান দিই। তাদের এই আচরণের সাথে হিন্দুদের আচরণের কি মিল নেই ? নাউযুবিল্লাহ আমরা সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ করছি। ধিক্ধিক্।

পায়ের সাথে পা না মিলানোর যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে হাদীসে আছে দুপায়ের ব্যবধানে শুধুমাত্র চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখতে হবে। আমি জানতে চাই কোন হাদীসে আছে? এমন কথা যে দু পায়ের ব্যবধান চার আঙ্গুল রাখতে হবে। প্রকৃত পক্ষে কাতারে দাড়াতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। সুনানে আবু দাউদে উল্লেখ রয়েছে, কেউ সলাত জুতা জোড়া উভয় পায়ের মাঝখানে রাখার কথা রয়েছে। একজোড়া জুতা রাখলে কি চার আঙ্গুল ব্যবধান হবে কি? এই চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখার কথা বেশী বলে থাকে ইলিয়াসী তাবলীগীরা। এরাই আবার মজলিসে বসে বয়ান করলে আর হুয়াহু জিকর করলে বলে ফাকা হয়ে বসবেন না। মাঝে শয়তান প্রবেশ করবে। অথচ এই শয়তান প্রবেশ করার কথা তাদের সলাতের ক্ষেত্রে মনে থাকে না। অথচ হাদীসটি মজলিসের ক্ষেত্রে যতটা না উল্লেখ হয়েছে সলাতের ক্ষেত্রে অনেক বার উল্লেখিত হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে আমি এ সামান্য (?) ব্যাপার নিয়ে এত কথা লিখছি কেন। ব্যাপারটি সামান্য যে নয় নিম্নোক্ত হাদীসগুলো পড়লেই জানা যাবে। এখন আমি কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর হাদীসগুলো উল্লেখ করছি।

মিশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ থেকেই হাদীসগুলোর উদ্ধৃতি দিচ্ছি। মিশকাতুল মাসাবীহ’র “কাতার সোজা করা” নামক অধ্যায়ে যেসব হাদীস উল্লেখিত রয়েছে তা হলো-

হযরত নোমান ইবনে বশীর(রা:) হইতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সারিসমূহ সোজা করতেন এমনভাবে যে উহার সহিত তিনি তীর সোজা করতেছেন।তিনি এরূপ করতেন যতক্ষণ না তিনি বুঝতে পারতেন যে আমরা বিষয়টি তাহার নিকট হতে পুরাপুরি বুঝতে পেরেছি।একদা তিনি ঘর হতে বাহির এয় আসলেন এবং স্বলাতে দাড়ালেন, তাকবীরে তাহরীমা বলিলেন, এমন সময় দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি সারি হতে সামনে সিনা বাড়িয়ে দাড়িয়েছে।তখন রাসূল (ষঅ:) বলিলেন, আল্লাহর বান্দাগণ!হয় তোমার তোমাদের সারি সোজা করে দাড়াবে নতুবা আল্লাহ তোমার মুখমন্ডলসমূহে অর্থ্যাত অন্তরসমূহে পার্থক্য করে দিবেন।–মুসলিম (মিশকাত ২য় খন্ড-হাদীস নং-১০১৭,মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পাঠ্য,মিশকাত শরীফ ৩য় খন্ড-এমদাদিয়া লাইব্রেরী,হাদীস নং-১০১৭)।

নুমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃস্টি করে দিবেন। (বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হা/৬৬২, প্রথম খন্ড)।

দেখুন কতবড় হাদীস কি বড় কথা । মাঝে মাঝে এমন হাদীস এসে যায় যা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই।

আরো বর্ণিত আছে,

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,একদিন স্বলাতের ইকামত বলা হলো তখন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরষ্পর মিলিত হয়ে দাড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পিছনের দিকেও দেখতে পাই।–বুখারী (মিশকাত হা/১০১৮)।

বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,তোমরা তোমাদের ছফসমূহকেপূর্ণ কর।নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখতে পাই। (মিশকাত হা/১০১৮ শেষাংশ)

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা স্বলাতের সারিসমূহকে সোজা করিবে।কেননা সারি সোজা করা স্বলাত প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীভুত।–বুখারী ও মুসলিম।আর মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, ছফ সোজা করা বা কাতার সোজা করা স্বলাত পূর্ণ করারই অন্যতম কাজ।( মিশকাত হা/১০১৯)।

হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)স্বলাতে (দাড়ালে) আমাদের বাহুমূলসমূহে হাত স্পর্শ করে পরষ্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন তোমরা সোজা হয়ে দাড়াও, বিভিন্নরুপে দাড়িও না, তা হলে তোমাদের অন্তরসমূহও প্রভেদ হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা প্রবীণ ও বিজ্ঞ তারাই যেন আমার কাছাকাছি দাড়ায়।অত:পর যাহারা বয়স ও বিজ্ঞতায় তাদের কাছাকাছি তারা দাড়ায় অনুরুপভাবে বয়স ও জ্ঞান কম অনুসারে তার পরবর্তীগণ দাড়ায়। আবু মাসউদ (দু:খ করে) বলেন, আজ তোমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত বিভিন্নমুখী। (মুসলিম,মিশকাত হা/১০১৯)।

আমি কেন কথাগুলোর গুরুত্ব দিয়েছি তাদের জওয়াব এই হাদীসটি।

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পর মিশে দাড়াও।সারিগুলোকে কাছাকাছি রাখ এবং তোমাদের ঘাড়গুলিকে সমভাবে সোজা রাখ। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম, নিশ্চয় আমি কালো ভেড়ার বাচ্চার মত শয়তানকে দেখি,যে সারির ফাকে প্রবেশ করে।–আবু দাউদ।(মিশকাত হা/১০২৫)।

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা প্রথমে সম্মুখের সারি পূর্ণ করবে। অত:পর তার সংলগ্ন পিছনের সারিকে পূর্ণ করবে। যদি কম্তি-ঘাটতি কিছু থাকে, তা থাকবে সর্বশেষ সারিতে।

অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায় আগের সারি পূর্ণই হয় নি। অথচ পরের কাতার অর্ধেক হয়ে গেছে। কিভাবে আমরা সুন্নাতে বরখেলাপ করছি !

হযরত নোমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। যখন আমরা সলাতের উদ্দেশ্যে দাড়াতাম, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সারি সোজা করতেন। আর যখন আমরা সোজা হয়ে যেতাম তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত হা/১০২৯)।

এই হাদীসেরও বিরোধিতা আমাদের সমাজে প্রচলিত। আমাদের ইমাম সাহেবরা এটা বিরোধিতা করে থাকেন। তারা কাতার সোজা করতে বলেন না। অথচ এটা সুন্নাত। কেউ কেউ কাতার সোজা করতে বলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, স্বলাতে কি কাতার সোজা হবে আকাশ থেকে? নাকি পায়ের সাথে পা মিলাতে।

এজন্যই শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর “সিফাতু সলাতিন নাবী” বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সলাতে প্রচলিত ভুল গুলো উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সলাতের ইকামতের পর কাতার সোজা করার কথা না বলা একটি ভুল। কারণ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে এটার উপর আমল করার কথা রয়েছে। বুখারী শরীফে রয়েছে। সলাতের ইকামত বলার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন, কাতার সোজা কর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দাড়াও। ( রাসুলুল্লাহ এর স্বলাত, অনুবাদ-এ এন এম সিরাজুল ইসলাম,বিশ্ব প্রকাশনী, পৃষ্ঠা-১৬৫-১৬৭)।

অথচ আমাদের ইমাম সাহেবরা এই হাদীসের উপর কোন আমল করছেন না। তাই ইকামত শেষে কাতার সোজা করার কথা ইমামকে বলতেই হবে বলে শায়খ আলবানী বলেছেন।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে, হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি) হতে বর্ণিথ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের) প্রথম সারির উপরে সলাত প্রেরণ করেন অর্থ্যাত অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবারও বললেন,নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুন: জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূল বললেন, হ্যাঁ, দ্বিতীয় সারির উপরেও। অত:পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা তোমাদের সারি সোজা করবে, তোমাদের বাহুমূলসমূহকে পরষ্পর সমান রাখবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতে বাহুমূলকে নরম রাখবে। (অর্থ্যাত কেউ ধরে সোজা করতে চাইলে তাহার আনুগত্য করবে) এবং তোমাদের মধ্যকার ফাকঁসমূহকে ভরে ফেলবে। কেননা, শয়তান তোমাদের মধ্যে হাযফের মত ঢুকে পড়ে। হায্ফ হলো ছোট কাল ভেড়ার বাচ্চা। (মিশকাত হা/১০৩৩)।

আরও হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পরের সমান কর, সারির মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরে ফেল, তোমাদের ভাইদের হাত নরম থাকবে। এবং শয়তানের জন্য মাঝখানে ফাকা স্থান রাখবেন না। যেই ব্যক্তি সারিকে মিলান, আল্লাহ তাআলাও তাহাকে (অনুগ্রহের সাথে) মিলান। আর যেই ব্যক্তি সারিকে বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তাকে ( নিজ অনুগ্রহ হতে) বিচ্ছিন্ন করেন।–আবু দাউদ, নাসায়ীতেও অনুরূপ এসেছে। (মিশকাত হা/১০৩৪ )।

আবুল ক্বাসিম আল-জাদালী সুত্রে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনে বাশীর (রাযি) বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমবেত লোকদেরকে দিকে ঘুরে দাড়িয়ে তিনবার বলিলেন: তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর।আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা করে দাড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নুমান (রাযি) বলেন, অত:পর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাটুর সাতে নিজের হাটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে। (আবু দাউদ হা/৬৬২)।

দেখুন সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ এ ব্যাপারে কত সতর্ক ছিলেন। বুখারী শরীফে পায়ের সাথে পা, কাধেঁর সাথে কাঁধ এবং গিটের সাথে গিটের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

আবু দাউদে কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে তীরের মতো করে। ( আবু দাউদ হা/৬৬৩)

 কাতার সোজা সম্পর্কে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস:

আল-বারাআ ইবনে আযিব (রাযি) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন।, আর বলতেন: তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন। (আবু দাউদ হা/৬৬৫)

 এ রকম অনেক হাদীস রয়েছে যা উল্লেখ করলে কলেবরই বৃদ্ধি হবে। এসব হাদীস থেকে আমাদের শিক্ষা:

১. সলাতে ধনী গরীবের বা অন্য কোন মতের পার্থক্যে কোন বালাই নেই।

২. সলাতে কাতার সোজা করতে হবে কেননা কাতার সলাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।

৩. সলাতে কাধেঁ কাধঁ, পায়ের সাথে পা মিলাতে হবে।

৪. যারা মিলিয়ে দাড়ায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত প্রদর্শন করেন।

৫. যারা মিলায় না তাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ হতে বিচ্ছিন্ন করেন।

৬. ঈমাম হিসেবে সলাত আদায় করলে কাতার সোজা করতে বলা ইমামের কর্তব্য ও এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত।

৭. সলাতে ফাঁক হয়ে দাড়ালে শয়তান ফাক জায়গায় বসে।

৮. কেউ কাতার সোজা করতে চাইলে তাকে সহযোগীতা করা অবশ্যই কর্তব্য।

৯. কাতার সোজা করা সলাতের সৌন্দর্য।

আল্লাহ আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার তওফিক দিন।

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<

Translate