Sunday, November 28, 2021

আমাদের যুবসমাজ ও ইন্টারনেট

 আমাদের যুবসমাজ ও ইন্টারনেট

একাডেমিক শাখা, দারুল ওয়াতান
অনুবাদ : ড. ইমাম হুসাইন
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলার নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আর দুরূদ ও সালাম সে নবীর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই।
আরবী প্রবাদ বাক্য রয়েছে : ‘‘কোন বস্ত্তর ভালবাসা তাকে অন্ধ ও বধির করে দেয়।’’ অর্থাৎ মানুষ যখন কোন বস্ত্তকে ভালবাসে এবং তার ভালবাসা সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন সে তার দোষ-ত্রুটি ও ক্ষতিকর দিক ভূলে যায়। ফলে সে তাতে কোন দোষ-ত্রুটি দেখেনা, তাতে কোন বিপদ বা অকল্যাণ খুঁজে পায় না, যদিও তাতে অনেক দোষ-ত্রুটি, অনেক বিপদ ও অকল্যাণ থাকে।
যেমন বলা হয়ঃ ‘‘আমি তার ভালবাসার কারণে কাল জিনিসকেও ভালবাসি, এমনকি তার ভালবাসার কালো কুকুরকেও ভালবাসি।’’ আধুনিক যুগে যুবক ও যুবতীদের মাঝে ইন্টারনেট প্রীতি, গভীর মনোনিবেশ সহকারে এর যথেচ্ছ ব্যবহার, কোন প্রকার ক্লান্তি অথবা বিরক্তবোধ ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেটের সামনে বসে থাকা এমনি একটি বিষয় যা সামাজিক ও চারিত্রিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখানে আমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত যুবক যুবতীদের ব্যাপারে কথা বলছিনা, যারা ইন্টারনেটকে বৈধ প্রয়োজনে ব্যবহার করে, অথবা জাতির কল্যাণে ব্যবহার করে অথবা বিভিন্ন কল্যাণকর অঙ্গনে ব্যবহার করে। যেমন সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, ইসলামের দিকে দাওয়াত, ইসলামের শত্রুদের জবাব দান, উত্তম চরিত্র ও উপকারী জ্ঞান বিজ্ঞনের প্রসার। আর তারা মাকড়সার জালের ন্যায় পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা এ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল উপকারী ও কল্যাণকর বিষয় সমূহ থেকে যথা সম্ভব উপকৃত হয়ে থাকে।
বরং আমরা কথা বলছি ঐ সকল হাজার হাজার যুবক ও সমূহ বিপদগ্রস্থদের ব্যাপারে, যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিপর্যস্ত হয়েছে, এতে কঠিনভাবে আসক্ত হয়েছে, এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ থেকে বিমুখ হয়েছে। ফলতঃ ইন্টারনেট এদেরকে সন্ত্রাস ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্ম কান্ডের দিকে ধাবিত করেছে। তাদেরকে ইন্টারনেট কি কল্যাণ উপহার দিয়েছে? আল্লাহর দিকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন উপকারিতা কি তারা পেয়েছে? তারা কি ইসলামের শত্রুদের পদক্ষেপ সমূহ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে? ইসলাম ও মুসলিমদের নিধন করার ব্যাপারে শত্রুদের ঘৃণা ও ষড়যন্ত্র সমূহ তারা কি চিহ্নিত করতে পেরেছে? তারা কি ইসলামী ওয়েবসাইটসমূহের মাধ্যমে উপকারী শরয়ী জ্ঞানসমূহ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে? তারা কি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান লাভ এবং এর মাধ্যমে উন্নতি ও অগ্রগতির কারণ সমূহ জানতে সক্ষম হয়েছে? তারা কি পরিসংখ্যান বিদ্যা ও বিশিষ্ট বিষয়সমূহের উপর নির্ভরশীল সামগ্রীক গবেষণা কর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছে? তারা কি জাতির মর্যাদা পুনরুদ্ধার এবং অতীতের গৌরব গাঁথার ইতিহাস প্রসারে সক্ষম হয়েছে? ইসলাম সম্পর্কে যে সকল অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছে, তার জবাব দিতে সক্ষম হয়েছে? আসলে ইন্টারনেটের উপকারীতা বহুবিধ। অধিকাংশ যুবক এ সকল উপকারী বিষয় সমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করেনা।
তারা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে উলঙ্গ ছবি দেখার ক্ষেত্রে, অশস্নীল দৃশ্যসমূহ উপভোগ করার জন্য এবং এমন অবৈধ ওয়েবসাইট সমূহ খোঁজার ক্ষেত্রে, যা একজন যুবককে পাশবিক শক্তিতে বন্দি করে ফেলে আর পাশবিক কুপ্রবৃত্তির সামনে দূর্বল করে ফেলে। ফলে তাকে ফলদায়ক উপকারী যে কোন কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাকে সংকীর্ণ গন্ডীতে বন্দি করে রাখে। এ চক্রটি কুপ্রবৃত্তি এবং পাশবিক শক্তির বৃত্ত, যা তাকে পূর্ণভাবে গ্রাস করে নেয়।
অথচ এ ইন্টারনেট বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনাবলীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যায়, এক কথায় যাকে ‘বিশ্বকে এক কক্ষে নিয়ে আসার মাধ্যম’ বলা যায়।
এর মাধ্যমে উলঙ্গ ছবি দেখা অথবা পথভ্রষ্ট যুবক যুবতীদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে এত বেশী সময় নষ্ট করা হয়, যে সময় তার জীবন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যেতো। ড. সুলাইমান আল-খুদারী বলেন, এ অশ্লীল ছবি সমূহ যুবক যুবতীদের মানসিক ও স্বাহ্যগত দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকর, কেননা এ ছবি সমূহ তার মনে ও ব্রেইনে সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে, ফলে তা দেখা তার বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ছবি সমূহ দেখা হয়, তখন সে যে কোন উপায়ে সে পরিতৃপ্ত হতে চায়। আর তখনই এর ক্ষতিকর দিক প্রতিফলিত হয়, ফলে সে ভ্রান্ত অভিজ্ঞতায় অথবা সাময়িক আনন্দের অভিজ্ঞতায় পা দেয়, যার ফলশ্রুতিতে সে শারিরীক ও মানসিক বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং ভ্রান্ত জীবনের বর্ণিল চরকিতে ঘুরপাক খেতে থাকে।
পরিসংখ্যানবিদ ও বিশ্লেষকদের মতেঃ-
১. ইন্টারনেটের আড্ডায় নিমজ্জিত ৮০% যুবক পরবর্তীতে বিয়ে করে না।
২. এদের ৭০% নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত করে এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।
৩. এদের ৫৫% তাদের পরিবারের কোন খোঁজখবর নেয়না।
৪. এদের অধিকাংশই খারাপ ওয়েবসাইট সমূহের ঠিকানা বিনিময় করে, এমনকি তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহেও। ফলে এটি শিক্ষা কার্যক্রকে বড়ই বাধাগ্রস্ত করে।
৫. ইন্টারনেটে আসক্ত অধিকাংশ যুবকের শিক্ষা জীবনের উপর এর কুপ্রভাব পড়ে। তাদের কেউ কেউ লেখাপড়ায় অগ্রগামী থেকেও পরে পর্যায়ক্রমে পশ্চাদগামী হয়ে পড়ে।
৬. ইন্টারনেটে আসক্ততা নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠার পরিবর্তে অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ-সংঘাতের ঘটনা ঘটায়। ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক নতুন মুল্যবোধ গড়ে উঠে।
৭. যেমনি ভাবে ইন্টারনেট পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল করে দেয়, তেমনি এর মাধ্যমে স্বাভাবিক বিবাহের মাধ্যমে গঠিত পরিবারতন্ত্র ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। ফলে পরিবারের পরিবর্তে অবৈধ পন্থার অবাধ জীবন যাপনে এরা অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এরা মনে করে যৌনতাই বিবাহের মূল উদ্দেশ্য, আর সে উদ্দেশ্য যদি বিবাহ ছাড়াই পূরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে বিাবহের আর প্রয়োজন কি? অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ বন্ধনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
৮. কম্পিউটার সামগ্রীর মূল্য এবং ইন্টারনেট সংযোগ সস্তা হওয়ার ফলে অধিক সংখ্যক যুবক ইন্টারনেট জগতের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ পায়। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৪ লক্ষ ওয়েবসাইটের সাথে তার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। অনেক রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানদের শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে নৈতিকতা দূর্বল হয়ে পড়ে।
অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা, বোনেরা!
একজন মুসলিম কি সব কিছুর সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে অথবা তা রাখা উচিত?
একজন বুদ্ধিমান যুবক যে তার নিজের, তার দ্বীনের,তার জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে, অথচ সে কি চরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল দৃশ্য, উলঙ্গ ছবি দেখার মাধ্যমে তার মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিবে? অথচ যেখানে অমুসলিম যুবকেরা এ সংযোগের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক গবেষণা, বিশ্বজগৎ নিয়ে গবেষণা এবং নতুন নতুন আস্কিারের মাধ্যমে উন্নতি ও অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছে।
হে যুবকেরা! হে যুবতীরা! তোমাদের কি হলো যে, আল্লাহ তা‘আলা যে কারণে এ জীবন দান করেছেন সে উদ্দেশ্যই তোমরা ভূলে গেলে? আর তোমরা বিভিন্ন ধ্যান ধারণা নিয়ে আনন্দে মেতে আছ, যার কোন বাস্তবতা নেই, কোন উপকারিতা নেই। একজন মুসলিম যুবকের কি উচিত, আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত সমূহকে তাঁর নাফরমানী ও বিরুদ্ধাচারনের কাজে ব্যবহার করবে? আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে তোমার চিন্তা কি?
﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦]
‘‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, (অযথা) তার পেছনে পড়ো না ; কেননা (কেয়ামতের দিন) কান, চোখ ও অন্তর, এ সব কয়টির (ব্যবহার ) সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।’’ [সূরা-বনী ইসরাঈল : ৩৬ ]
আল্লাহ তায়ালার এ বাণী কি তুমি ভূলে গিয়েছ?
﴿ قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ ﴾ [النور : ٣٠، ٣١]
‘‘হে নবী, তুমি মোমেন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী ও) সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাযত করে; এটাই হচেছ তাদের জন্য উত্তম পন্থা; (কেননা) তারা (নিজেদের চোখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে) যা করে, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত রয়েছেন। আর মোমেন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী ও) সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাযত করে; আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।’’ [সূরা আন-নূর : ৩০-৩১]
স্মরণ কর, আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী :
﴿ هَٰذَا كِتَٰبُنَا يَنطِقُ عَلَيۡكُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّا كُنَّا نَسۡتَنسِخُ مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٢٩ ﴾ [الجاثية : ٢٩]
‘‘এ হচেছ আমার (সংরক্ষিত) নথিপত্র, যা তোমাদের (কর্মকান্ডের) উপর ঠিক ঠিক বর্ণনা পেশ করবে; নিশ্চয়ই তোমরা যখন যা করতে আমি তা (এখানে সেভাবেই ) লিখে রেখেছি।’’ [সূরা আল-জাছিয়া : ২৯]
তুমি কি তোমার প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তাকে লজ্জা করো না, যিনি তোমার ঘাড়ের চেয়েও নিকটবর্তী?
তুমি কি জাননা, কিয়ামতের দিন অতি নিকটেই? যে দিন তোমার সব লজ্জাজনক ও অশ্লীল কাজ সমূহের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে।
﴿ وَبَدَا لَهُمۡ سَيِّ‍َٔاتُ مَا عَمِلُواْ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُواْ بِهِۦ يَسۡتَهۡزِءُونَ ٣٣ ﴾ [الجاثية : ٣٣]
‘‘ সে দিন তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের কাছে স্পষ্ট প্রকাশ হয়ে পড়বে, এবং সে বিষয়টিই তাদের পরিবেষ্টন করে নেবে যে ব্যাপারে তারা হাসি ঠাট্টা করে বেড়াত। [সূরা আল-জাছিয়া : ৩৩] তুমি কি জাননা, আল্লাহ তোমাকে দেখেন? তুমি যে অবস্থায়ই থাকনা কেন, তোমার সব কিছুই তাঁর সামনে প্রকাশিত।
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [ال عمران: ٥]
“অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার কাছে আকাশমালা ও ভূখন্ডের কোন তথ্যই গোপন নেই।” [ সূরা আলে ‘ইমরান : ৫]
সুতরাং প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোন! আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। তোমার প্রতিপালকের নাফরমানি থেকে বিরত থাক। তোমার যৌবন ও সুস্থতা যেন তোমার ক্ষতি না করে এবং তোমাকে ধোকায় না ফেলে। তুমি তোমার নিজের চিকিৎসক হয়ে যাও। তোমার রবের ইবাদাত বন্দেগী, জিকির ও শুকর-গুজারী, তার কিতাবের তেলাওয়াতের মাধ্যমে তোমার অন্তরের রোগ সমুহ দুর কর। সাময়িক প্রবৃত্তির তাড়নায় জান্নাতকে বিক্রি করে দিওনা, যে জান্নাতের প্রস্থ আসমান ও যমীনের সমান। বিভিন্ন ফেতনা থেকে নিজেকে দূরে রাখ। ফিতনা থেকে পালাও, যেমনটি বাঘের ভয়ে তোমরা পালিয়ে থাক । কারণ, শান্তি এমন জিনিস, যার সমকক্ষ কিছুই নেই। সৌভাগ্যশালী সে ব্যক্তি যে অন্যের উপদেশ গ্রহণ করে। অতপর তাকওয়া ও সঠিক পথে চলার জন্য তোমার রবের সাহায্য ও তওফীক কামনা কর। কারণ, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র তওফীক দাতা, তিনিই উত্তম অবিভাবক, তিনিই উত্তম সাহায্যকারী। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবারবর্গ এবং তার সাহাবীগণের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।

দাড়ি কি রাখতেই হবে?

 দাড়ি কি রাখতেই হবে?

————————————————————————————
মুসলিম মানে আসলে কি? আল্লাহ্‌কে একমাত্র সত্য ‘ইলাহ্‌’ হিসেবে স্বীকার করে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ যে করে সেই মুসলিম। ইসলামকে একটা জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে বেছে নিতে হয়। বেছে নেবার পর ইসলামের বিধিবিধানগুলো জানতে হয় ও দ্বিধাহীনভাবে মেনে নিতে হয়। এসব নিয়ম-কানুন আমাদের জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। আমি কোন কাতে ঘুমাবো, কোন হাতে খাবো, কোন পা দিয়ে টয়লেটে ঢুকবো – এসব আপাত অতি তুচ্ছ ব্যাপারে যেমন ইসলামের দিক নির্দেশনা আছে; তেমন আমি কোন চাকরি করবো, কিভাবে ব্যবসা করবো, কিভাবে শাসন করবো, কোন আইনে বিচার করবো সেসব সামাজিক ব্যাপারেও আছে। এমনকি আমি কাকে বিয়ে করবো, নিকটজনের কাকে কতটা সম্পত্তি দেব – এসব অতি ব্যক্তিগত ব্যাপারেও ইসলামের কিছু না কিছু বলার আছে। মোটকথা একটা মানুষ ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমুতে যাওয়া অবধি যা কিছু করে সব কিছুর জন্যেই ইসলাম কিছু মূলনীতি দিয়েছে।
স্বাধীনচেতা কারো কাছে মনে হতে পারে – ইসলাম মানুষকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। মানুষের জীবনের প্রতি পদে যেটা মানুষের জন্য মঙ্গল সেটাই তাকে করতে আল্লাহ্‌ আদেশ দিয়েছেন। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন মানেই শৃংখল নয়, তা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে পরিমিতি দেয়ার একটা উপায়। এটা ব্যক্তির জন্য মঙ্গলকর তো বটেই, সমাজের অন্য মানুষদের জন্য কল্যাণকর। এক অপ্সরী রমণী সেজেগুজে সবার চোখ ধাঁধিয়ে নারীস্বাধীনতা চর্চা করলো। সে রূপের ছটা যাদের চোখে গেঁথে গেল তারা এখন বিয়ের কনে দেখবার কালে কালো তো কালো, শ্যামলা বরণ দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। “মনের সৌন্দর্য -আসল সৌন্দর্য”, এসব তত্ত্ব কথা হিসেবে চর্চিত হতে থাকলো, আসল জীবনে বাজলো রঙ-ফর্সা ক্রিমের জয়গান।
একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় তার পোষাক-আশাকে। মুসলিম পুরুষদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করতে, তাদের মধ্যে একতাবদ্ধতা তৈরী করতে আল্লাহ তাদের একটা ইউনিফর্ম দিলেন। সেটা হল – ঢিলেঢালা, অস্বচ্ছ, পুরুষালী পোশাক যা পায়ের গোড়ালির উপর থাকবে। মুখে প্রাকৃতিক দাড়ি থাকবে, গোঁফটাকে কেটে ছোট রাখতে হবে। এমন একটা বেশভূষা যেটা যে কোন ভৌগলিক অঞ্চলের মানুষরা পড়তে পারবে। বাংলাদেশের মুসলিম বোতসোয়ানা, স্পেন কী কানাডায় গিয়ে এমন পোশাক পরা মানুষকে দেখেই একগাল হাসি হেসে বলতে পারবে – আস-সালামু আলাইকুম। ভাষা আর জাত-পাতের ভেদাভেদ ভেঙে ভ্রাতৃত্বের কি এক অপূর্ব বন্ধন!
ইসলামি ইউনিফর্মের যে অংশটাকে সাধারণ মুসলিমরা তো বটেই, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পর্যন্ত থোড়াই কেয়ার করছে সেটা হল – দাড়ি। শায়খ মুহাম্মদ আল জিবালি দেখিয়েছেন দাড়ি কেটে একজন মানুষ কত ভাবে ইসলাম লঙ্ঘন করে –
১. আল্লাহ সুবহানাহু এর অবাধ্যতাঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি (সাঃ) তখন উত্তর দেন, আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি।১
আল্লাহর অবাধ্যতাতে মগ্ন হবার সময় আমাদের মনে রাখা উচিত, আল্লাহর একটি মাত্র আদেশের অবাধ্যতা করে শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।

২. রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অবাধ্যতাঃ
ইবন উমার (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের আদেশ করেছেন, “গোঁফ ছোট করে কেটে রাখ, আর দাড়িকে ছেড়ে দাও”২
উল্লেখ্য যে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ যে মানছে সে মূলত আল্লাহর আদেশই মানছে।৩ আর যে রসুলের (সাঃ) এর আদেশ মানলোনা সে আল্লাহর আদেশেরই অবাধ্য হল।৪
যারা ভাবছেন আল্লাহ ও তার রসুলের(সাঃ) এর কিছু আদেশ না মানলেও চলে, তাদের জন্য আল্লাহ কঠোর সতর্কতাবাণী দিয়েছেন –
“… আর যে আল্লাহ ও তার রসুলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।”৫
৩. রসুলদের (সাঃ) এর সুন্নাত থেকে বিচ্যুতিঃ
আল্লাহর প্রেরিত সব রসুলদের বর্ণনায় দাড়ির কথা পাওয়া যায়। সুরা ত্বহা-তে হারুন (আঃ) এর দাড়ির বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রতিটি মুসলিমের জন্য উস্‌ওয়াতুন হাসানা – সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ, কর্মে বা গড়নে।৬ জাবির বিন সামুরাহ(রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দাড়ি ছিল অনেক বড়। এখন একজন ক্লিনশেভড মুসলিম আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখুক কাফির সম্রাট সারকোজির সাথে তার চেহারা বেশী মেলে না রসুল(সাঃ) এর সাথে। একজন দাড়ি সাইজ করে রাখা মুসলিম আয়নায় দাঁড়িয়ে ভাবুক রসুল(সাঃ) এর ছেড়ে দেয়া দাড়ির চেয়ে সে কেন বেছে নিল রসুল(সাঃ) কে অপমানকারী লেখক সালমান রুশদির সাহিত্যিক দাড়িকে।

৪. সাহাবাদের সুন্নাত থেকে বিচ্যুতিঃ
রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাহাবাদের দৈহিক বর্ণনার মধ্যে দাড়ির দৈর্ঘ্যের কথাও এসেছে। আবু বকর(রাঃ) এর দাড়ি ঘন ছিল, উমার ও উসমান (রাঃ) এর দাড়ি ছিল দীর্ঘ। আলি(রাঃ) এর দাড়ির দৈর্ঘ্য ছিল দু’কাঁধের দুরত্বের সমান।৭
খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে রসুল(সাঃ) দাঁত দিয়ে হলেও আকড়ে থাকতে বলেছিলেন। দাড়ি ছোট করতে করতে পাতলা ঘাসের স্তর বানিয়ে কার সুন্নাতের দিকে যাচ্ছি আমরা?
৫. কাফিরদের অনুকরণঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসুল (সাঃ) আদেশ করেন – “গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, মাজুসিদের(পারস্যের অগ্নি উপাসক) চেয়ে অন্য রকম হও।”
আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, রসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন – “গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, কিতাবধারীদের (ইহুদি-খ্রীষ্টান) বিরোধীতা কর।”
ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রসুল (সাঃ) বলেছেন – “মুশরিকদের চেয়ে আলাদা হও – গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর”৮
রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের বার বার সাবধান করে বলেছেন – যে যাকে অনুকরণ করবে সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।৯ আমরা কাতর আহবান জানাই প্রতি ওয়াক্ত সলাতে, সুরা ফাতিহাতে – গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালা দওঅল্লিন। কাদের থেকে আলাদা হতে চাই? তাদের থেকে যারা সত্য জানার প্রতি বিমুখ ছিল, তাদের থেকে যারা সত্য জেনেও মানেনি। তবে কি আমরা রসুল(সাঃ) এবং তার সাহাবাদের (রাঃ) পরিবর্তে অনুসরণ করছি মুশরিক-ইহুদি-খ্রীষ্টান-অগ্নিউপাসকদের, যাদের অন্তিম পরিণাম জাহান্নামের আগুন?
৬. আল্লাহর সৃষ্টিতে তার অনুমতি ব্যতিরেকেই পরিবর্তনঃ
আল্লাহর কাছে অন্যতম ঘৃণিত ব্যাপার হলো তার সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনা, যার অনুমোদন তিনি দেননি। একজন পুরুষ বয়োপ্রাপ্ত হলে তার বহিপ্রকাশ হবে তার চেহারায় – এটাই আল্লাহর সৃষ্টি। যে দাড়ি কাটছে সে আল্লাহর সৃষ্টি বদলে দিচ্ছে, মেনে নিচ্ছে শয়তানের আদেশ। আল্লাহ পাক আমাদের সুরা নিসায় সাবধানবাণী জানিয়েছেন এভাবে –

আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিশম্পাত করেছেন। আর সে বলেছিল: আমি অবশ্যই তোমার বান্দাহদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নিবো … তাদেরকে নিশ্চয়ই নির্দেশ দেবো আর তারাই আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। আর আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবক বানিয়ে নিলে সে নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য ক্ষতিতে আক্রান্ত হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেছেন, আল্লাহ তা’লা অভিশম্পাত করেছেন ঐসব নারীর ওপর, যারা শরীরে উল্কি আঁকে ও আঁকায়; যারা ভ্রু তুলে কপাল প্রশস্ত করে এবং সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও দু’দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী (এভাবে) আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিকে বিকৃত করে।১০
এখন সৌন্দর্য বাড়াতে যদি কোন মেয়ে কপালের লোম তুলে আল্লাহর অভিশাপের যোগ্য হয় তবে একজন পুরুষ – যার বৈশিষ্ট্যই মুখে দাড়ি থাকা – তার অবস্থা কি হবে?

৭. নারীদের অনুকরণঃ
ইবনু আব্বাস বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) সেসব পুরুষদের অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের অনুকরণ করে, আর সেসব নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন যারা পুরুষের অনুকরণ করে।১১
যে মুসলিম পুরুষ আল্লাহর দেয়া দাড়ি নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে, সেটাকে কেটে সাফ করে মেয়েদের মত মুখায়বকে স্মার্টনেস ভাবে তারা আসলে নিজের পুরুষত্ব নিয়েই অতৃপ্ত থাকে। মেয়েদের আল্লাহ একভাবে বানিয়েছেন, পুরুষদের আরেকভাবে। এখন রাত যদি দিনের মত হয়ে যায়, আর দিন, রাতের মত তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াবে? নারী-পুরুষের পরষ্পরের অনুকরণের কুফল আমরা দেখতে পাচ্ছি সমকামিতার প্লেগ আর বিবাহ-বিচ্ছেদের বন্যায়। আল্লাহর অভিশাপ মাথায় নিয়ে পরকালে কেন, ইহকালেও ভাল থাকা যায়না, যাবেনা।
৮. বিশুদ্ধ ফিতরাতের বিরোধীতাঃ
প্রতিটি শিশুই বিশুদ্ধ প্রকৃতির উপর জন্মায় যাকে বলে ফিতরাত। পরে পরিবেশের প্রভাবে, শয়তানের ধোঁকায় কিংবা আত্মপ্রবঞ্চণায় সে তা থেকে সরে যায়। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন –
দশটি আচরণ ফিতরাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত – গোঁফ কাটা, দাড়ি ছেড়ে দেয়া, দাঁত মাজা, নাক ও মুখের ভিতর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙুলের মাঝে ধোয়া, বগলের লোম পরিষ্কার করা, লজ্জাস্থানের চুল পরিষ্কার করা, লজ্জাস্থান পানি দিয়ে ধোয়া ও মুসলমানি করা।১২
এই ফিতরাতের আচরণগুলো সকল যুগের সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।
৯. ইসলামকে উপহাসঃ
দাড়ি না রাখতে রাখতে সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে যদি কোন মুসলিম দাড়ি রাখে তাহলে তাকে জেএমবি বলে কটাক্ষ করা হয়। অথচ জংলী বাউল গোঁফ-দাড়ির জঙ্গল বানিয়ে ফেললে তা রক্ষা করতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। চারুকলার দাড়ি স্পর্ধিত বিপ্লবী গুয়েভারার আর মুসলিম যুবকের দাড়ি লজ্জার, পশ্চাৎপদতার!
মুসলিম দাড়ি দেখে অমুসলিমদের গাত্রদাহ হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু একজন মুসলিম যদি শ্মশ্রুমন্ডিত কোন মানুষকে উপহাস করে বলে, “মনের দাড়িই আসল দাড়ি” বা “আমার দাড়ি নেই তো কি হয়েছে আমার ঈমান পাকা” – তাহলে তার জেনে রাখা উচিত ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে উপহাস করার ফলাফল ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যাওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন –
…বল, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে উপহাস করছিলে? কোন অজুহাত পেশ করো না! তোমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছ১৩ …
পরিশেষে, আমাদের মধ্যে একটা বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা হল যে দাড়ি রাখা সুন্নাত, সুতরাং এটা রাখলেও চলে না রাখলেও চলে। রসুলের যেসব সুন্নাত সব মানুষের অনুকরণের জন্য তাকে বলে সুন্নাতে ইবাদাত। রসুল (সাঃ) যা মানুষ হিসেবে করেছেন এবং সাধারণের স্বাধীনতা উন্মুক্ত রেখেছেন সেটাকে বলে সুন্নাতে আদাত। যেমন রসুল (সাঃ) কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলও রাখতেন আবার ছোট করে কেটেও রাখতেন। এটা সুন্নাতে আদাত। কিন্তু তিনি দাঁড়ি কখনো কাটেননি, কাটার অনুমতি দেননি, বরং তা ছেড়ে দিতে বলেছেন। তাই দাড়ি রাখা সুন্নাতে ইবাদাত হিসেবে ওয়াজিব, যা লঙ্ঘনের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ ও তার রসুলের(সাঃ) অভিশাপের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়। ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফী, আহমদ বিন হাম্বল, ইবনে তাইমিয়া, ইবন হাজাম, বিন বায, নাসিরুদ্দিন আলবানি সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সকল আলিম দাড়ি কাটাকে হারাম বলেছেন।১৪
আমাদের উচিত নিজেদের প্রশ্ন করা কোন রব্‌কে খুশি করার জন্য দাড়ি কাটছি – স্ত্রী? বান্ধবী? অফিসের বস? সমাজের মানুষ? আত্মপ্রবৃত্তি? যিনি আল্লাহকে সত্যিই রব্‌ হিসেবে মেনে নিয়েছেন তার মনে রাখা উচিত মুমিনদের কথা হল – “সামিঈনা ওয়া আতাইনা”- আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। দাড়িকে আমরা যতটা তুচ্ছ ভাবছি, আল্লাহর অভিশাপ কিন্তু ঠিক ততটা তুচ্ছ নয়।
আল্লাহ আমাদের সত্যই ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করার তৌফিক দিন। আমিন।
—————————————————————-
১ ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি এক হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা।
২ সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য।
৩ সুরা নিসা, আয়াত ৮০
৪ সহিহ বুখারি ২৯৫৭,৭১৩৭। সহিহ মুসলিম ১৮৩৫
৫ সুরা আল জ্বিন, আয়াত ২৩
৬ সুরা আল আহযাব, আয়াত ২১
৭ কুত-উল-কুলুব, আল ইসাবাহ, আত তাবারাত।
৮ সহিহ মুসলিম
৯ আবু দাউদ
১০ সহীহ বুখারী ৪৫১৮
১১ সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য
১২ সহিহ মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, ইবনু আবি শায়বা থেকে সমন্বয়কৃত
১৩ সূরা আত তাওবাহ, আয়াত ৬৫-৬৬
১৪ আল লিহইয়াতুল বাইনাস সালাফ ওয়াল খালাফ – মুহাম্মদ আল জিবালি

দাড়ি-টুপিওয়ালা

 প্রসঙ্গঃ দাড়ি-টুপিওয়ালা

আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে (নামে মুসলিম) যারা দাড়ি-টুপিওয়ালাদের কোন প্রসঙ্গ পেলে বংশ উদ্ধার করে ছাড়ে। মানুষ কতোটা মূর্খ-জাহেল হলে এরকম কাজ করতে পারে সে বিষয়ে এবার আসা যাক। এই শ্রেণীর লোকেরা হয়তো শুধু শুক্রবারে মসজিদে যায় অথবা বছরে দু’বার ঈদের নামাযে যায়।

এরা যেহেতু নিজেদের মুসলিম দাবী করে তাই মুসলিম হিসেবে নিজেকে দাবী করার জন্য ন্যূনতম শর্তটা উল্লেখ করা জরুরী। যারা মনে করে যে মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায় এরা পৈত্রিক সূত্রে নিজেদের মুসলিম দাবী করতে পারে। তবে ইসলামে তাদের অবস্থান কোথায় সেটা এই হাদিস দ্বারাই পরিষ্কার বুঝা যাবে-

আবু সুফিয়ান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির (রা) কে বলতে শুনেছি, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মাঝখানে নামায ছেড়ে দেয়াই হচ্ছে ব্যবধান। [সহীহ মুসলিম, প্রথম অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং- ১৫৪]

কাজেই নিজেকে মুসলমান দাবী করতে হলে অবশ্যই ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হবে। অন্যথায়, যে লোক ইচ্ছা করে নামায পড়ে না এবং এমন অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয় তবে সে কি অবস্থায় মারা গেল সেটা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল সবার প্রতি।

দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকদের মধ্যে ভাল-মন্দ কিংবা ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, কারন কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কোন লোক যদি আল্লাহর দ্বীনের খাতিরে দাড়ি রাখে, টুপি পড়ে তাহলে অবশ্যই সেই লোকটি দ্বীনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী তাদের থেকে যাদের দাড়ি-টুপি নেই। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। [আল-আনফালঃ ২০]

দাড়ি রাখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ –

ইবনে ওমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে । (বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, হাদিস নং – ৫৪৭২ ইফা)

আল্লাহ্‌ তা’আলা পুরুষ ও নারীকে আলাদা গঠনে তৈরি করেছেন বলে পুরুষের গালে দাড়ি উঠে আর নারীদের দাড়ি নেই। দাড়ি শেভ করা মানে আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার সামিল। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন,

“আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই । ” [আর-রুমঃ ৩০]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আল আহজাবঃ ৩৬]

নিজের অল্প কয়েকটি কথা এবং কুরআন ও হাদিসের দ্বারা নিজেকে ও অন্যদের বুঝানোর এই প্রচেষ্টাটুকু আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।।

***Courtesy:- Brother Md Nazmul Haque***

নারী ও পুরুষদের মাহরাম

 নারী ও পুরুষদের মাহরাম

লেখকঃ এ.কিউ.এম মাসূম মজুমদার

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য। আর দরুদ ও সালাম নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তার বংশধর ও সাহাবীগণের উপর।
নারী ও পুরুষদের মাহরাম [যাদের একে অপরের সহিত বিবাহ বন্ধন হারাম এবং তাদের পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ জায়েয] এই মাহরামগণ ব্যতীত অন্যদের সহিত দেখা-সাক্ষাৎ, আড্ডা বা বাইরে-ভ্রমনে বের হওয়া হারাম। তবে, খুবই ‘যরুরত’ (প্রয়োজন) হলে কোন বিকল্প উপায় না থাকলে তাদের সাথে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলতে হবে।

‘মাহরাম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ: যারা হারাম, এটা হালাল এর বিপরীত। আর শরী‘আতের পরিভাষায় ‘মাহরাম’ বলা হয় নিম্নেবর্ণিত তিন শ্রেণিকে:
ক) الْمُحَرَّمَاتُ بِسَبَبِ النَّسَبِ (বংশগত/ঔরসজাত সম্পর্কের কারণে মাহরাম)
খ) الْمُحَرَّمَاتُ بِسَبَبِ الْمُصَاهَرَةُ (বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম)
গ) الْمُحَرَّمَاتُ بِسَبَبِ الرَّضَاعُ (দুধ-পানের কারণে হারাম)
দ্র: ফিক্‌হী বিশ্বকোষ, কুয়েত (৩৬/২১৪) ও লিসানুল আরব ৩খ, পৃ: ১৩৯, ফতোয়ায়ে শামী, ২খ, পৃ: ১৪৫)। এরা ছাড়া বাকী সবাই “গায়রে মাহরাম” (মাহরাম নহে)। এর অর্থ হল, ‘গায়রে মাহরামে’র সাথে বৈবাহিক বন্ধন হতে পারে। তাই, বৈবাহিক বন্ধনের আগে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হারাম, তবে, বিবাহ করার জন্য কনে দেখা জায়েয আছে।
বংশগত ও ঔরসজাত সম্পর্কের কারণে যে সব নারীদের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম তা দু’ প্রকারের:
১ম প্রকার: যে সব নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরদিনের জন্য হারাম।
২য় প্রকার: যে সব নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সাময়িকভাবে হারাম (চিরদিনের জন্য নয়)।
১ম প্রকারের মাহরাম: যে সব নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরদিনের জন্য হারাম:
তিন ধরনের সম্পর্ককে ইসলামি শরী‘আত মাহরাম হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছে:
(ক) বংশগত/ঔরসজাত সম্পর্কের কারণে
(খ) বৈবাহিক সম্পর্কজনিত কারণে এবং
(গ) দুধপানজনিত হারাম
ক) বংশগত/ঔরসজাত সম্পর্কের কারণে যে সব মাহরাম নারীদেরকে বিবাহ করা পুরুষদের জন্য চিরস্থায়ীভাবে হারাম তারা হচ্ছেন:
১- নানী, দাদী, দাদীর মা এবং তাঁর পরবর্তী উর্ধ্বতন মহিলা বংশধররা। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
২- মেয়ে, ছেলের মেয়ে, এবং মেয়ের মেয়ে, ছেলের মেয়ের মেয়ে এবং তদনিম্ন ঔরসজাত পরবর্তী মেয়ে সন্তানরা। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
৩- বোন, আপন সহোদর বোন অথবা বৈমাত্রেয়, বা বৈপিত্রেয় বোন। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
৪- আপন সহোদর বোনের মেয়ে। অথবা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে অথবা বোনের ছেলের মেয়ে এবং তদনিম্ন মেয়ে সন্তানরা। আর বোনের মেয়ের মেয়ে এবং তদনিম্ন মেয়েদের ঔরসজাত পরবর্তী মেয়ে সন্তানরা। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
৫- আপন সহোদর ভাইয়ের মেয়ে, অথবা বৈমাত্রেয়, বা বৈপিত্রেয় ভাইয়ের মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে, ভাইয়ের ছেলের মেয়ে, ভাইয়ের ছেলের মেয়ের মেয়ে এবং তদনিম্ন মেয়েদের ঔরসজাত পরবর্তী মেয়ে সন্তানরা। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
৬- ফুফু, যিনি আপনার আব্বার সহোদর বোন অথবা বৈমাত্রেয়, বা বৈপিত্রেয় বোন, এবং বাবার ফুফু অথবা মায়ের ফুফু। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
৭- খালা, যিনি আপনার আম্মার সহোদর বোন অথবা বৈমাত্রেয়, বা বৈপিত্রেয় বোন এবং আপনার আব্বার খালা, অথবা শুধু আম্মার দিক হতে খালা। প্রমাণ : [সূরা আন-নিসার ২৩ নং আয়াত]।
খ) বৈবাহিক সম্পর্কজনিত মাহরাম:
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যে সব মাহরাম নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরস্থায়ীভাবে হারাম। এরা হচ্ছেন:
১- আপনার শাশুড়ী, নানী শাশুড়ী, দাদী শাশুড়ী এবং তদূর্ধ্ব উর্ধ্বতন মহিলাগণ। [সূরা আন-নিসা: ২৩]
২- আপনার স্ত্রীর অন্য ঘরের (অর্থাৎ, ঔরসজাত) মেয়ে, (যদি এই স্ত্রীর সাথে সহবাস করা হয়, তাহলে এই মেয়েকে বিবাহ করা হারাম)। [সূরা আন-নিসা: ২৩]
৩- সৎ মা (আব্বার আরেক স্ত্রী), দাদার আরেক স্ত্রী এবং তদূর্ধ্ব উর্ধ্বতন মহিলারা। [সূরা আন-নিসা:২২]
৪- ছেলের বউ। [সূরা আন-নিসা: ২৩]
৫- লে‘আনকারীনী (লে‘আনের (অভিশাপের) মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদকারীনী স্ত্রী) তার লে‘আনকারী স্বামীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম। (সূনানে আবু দাউদ, নং ২২৫০)। (হাদীসটি সাহীহ- আলবানী)
হানাফী মাযহাব মতে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে যেনা বা হারাম যৌনমিলন করে অথবা তার তাকে কুমতলবে স্পর্শ করে অথবা অন্য এমন কিছু করে যা যেনার মতো হারাম কাজ, তাহলে এই যেনাকারীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম হলো এই নারীর মা অথবা বোনকে বিবাহ করা। তবে, শুধু হারাম যৌনমিলন করলে হাম্বলী মাযহাবেরও এটাই অভিমত। আর যদি স্পর্শ বা অন্য কোন প্রকার হারাম কাজ করে, কিন্তু যৌনমিলন না করে, তবে হারাম হবে না। (দ্র: কুয়েত হতে প্রকাশিত ফিক্‌হী বিশ্বকোষ: ৩৬/২১৪)
গ) দুধপানজনিত হারাম:
দুধপানজনিত মাহরাম ও বংশগত/ঔরসজাত মাহরামের ন্যায় ৭ প্রকার হতে পারে, যার বিবরণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, বর্ণিত সকল আত্মীয়ই দুধপানজনিত কারণে হারাম হবে এবং নারী হলে পুরুষ আত্মীয়গণ তার ‘মাহরাম’ হিসেবে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “বংশগত কারণে যারা হারাম দুগ্ধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)। অর্থাৎ বংশগত কারণে যারা হারাম দুধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হবে।
সুতরাং জন্মদাতা হিসেবে পিতা যেমন হারাম, তেমনি কোনো নারী কাউকে নিজের স্তন্যপান করালে তার স্বামী ঐ দুধপানকারী মেয়ের জন্য দুধপিতা হিসেবে হারাম। মাহরাম হওয়ার কারণে এদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, মুখোমুখি কাথা-বার্তা এবং একসাথে নিয়ে সফরে বের হওয়া সম্পূর্ণই জায়েয।
আর চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, খালাতো বোন, মামাতো বোন এই চার প্রকারের আত্মীয়কে বিবাহ করা জায়েয আছে।
২য় প্রকারের মাহরাম: যে সব নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সাময়িকভাবে হারাম (চিরকালের জন্য নয়) এরা হচ্ছেন:
১- দু বোনকে অথবা কোনো মেয়েকে এবং মেয়ের ফুফুকে বা খালাকেও বিবাহ করা হারাম। তবে, যদি মেয়েটি (স্ত্রী) মারা যায় অথবা স্বামী তালাক (বিচ্ছেদ) দিয়ে দেয়, তাহলে ঐ মেয়ের বোনকে অথবা তার ফুফু বা খালাকে (যে কোন একজনকে) বিবাহ করতে পারবে।
২- যে নারী শরীয়ত নির্দেশিত ‘ইদ্দত পালনরত আছে তাকে বিবাহ করা হারাম; তবে তার ‘ইদ্দত পালন শেষ হলে বিবাহ করতে পারবেন।
৩- তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী তার স্বামীর জন্য হারাম। তবে সে নারী যদি আবার বিয়ে করে এবং ২য় স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলেই সে আগের স্বামীর ঘরে ফিরে আসতে পারবে।
৪- হজ ও উমরাহর ইহরাম পরা নারী। হজ বা উমরাহর কাজ আদায় করার পর বিবাহ করতে পারবে, এর আগে নয়।
৫- অন্যের স্ত্রী আপনার জন্য হারাম।
৬- যেনাকারী নারী তার সাথে যেনাকারী পুরুষটির জন্য হারাম। তবে তারা পরস্পর বিবাহ করতে চাইলে:
(ক) খাঁটি অন্তরে, খালেছভাবে আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে তওবা করতে হবে, আর তাদের আচার–আচরণে তা প্রকাশ পেতে হবে, তাহলেই বুঝা যাবে যে, তারা খাটি ও খালেছভাবে তওবা করেছে। এরপরই কেবল তাদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয আাছে, না হয় জায়েয নেই ।
(খ) আর তা হতে হবে এক হায়েযের পর, মহিলাটির রেহেম পবিত্র হওয়ার পরে। আর যদি যিনার কারণে গর্ভবতী হয়ে যায় তবে, মেয়েটি সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যেনা বা (নারী-পুরুষের হারাম যৌনমিলন) কবিরা গুনাহ, আর মিথ্যা প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে সাধুবেশে দুঃশ্চরিত্রবান ও নষ্ট ছেলে কোনো কোনো অবলা মেয়েদের সহিত হারাম অবৈধ মিলন করে কেটে পড়ে, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে মেয়েটির যার সাথে বিবাহ হবে তার হক নষ্ট করা হয়। ইসলামী শরীয়ত যেনাকারী ও যেনাকারীনীর আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে সে শাস্তির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের একটি চুল্লিতে ব্যভিচারী নর-নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় একত্রিত করবেন। সেখানে জাহান্নামের আগুন দ্বারা তাদেরকে পোড়ানো হবে। তাদের সেখানে বিকট শব্দ শুনা যাবে।” (সাহীহ আল-বুখারী, নং ১৩৮৬, ২/১০০)
নারীদের মাহরামদের নিকট তাদের পর্দা কেমন হবে?
উপরে বর্ণিত নারীদের মাহরাম যেমন: আব্বা, ভাই ও ভাইয়ের ছেলে, তাদের সামনে নারীরা পুরো শরীর ঢেকে রাখবে, তবে যা এমনিতেই প্রকাশ পায় যেমন: চেহারা, মাথা, কনুইসহ দু‘হাত, দু পায়ের পাতা এগুলো ব্যতীত। শায়খ ইবন বায বলেন: “বর্তমান যুগের অবস্থায় মানুষের দ্বীন-ঈমান দুর্বল, আল্লাহর ভয় কম, হারাম কাজের প্রসার বেশি, তাই নারীরা তাদের মাহরামের সামনে মাথা ঢেকে রাখা বেশি নিরাপদ ও উত্তম এবং এর দ্বারা ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর পাশাপাশি নারীরা যেন তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করে লাজ-লজ্জা বজায় রেখে চলাফেরা করবেন।” আর তারা তাদের পায়ের নালা ও হাতের বাহু ঢেকে রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ﴾ [النور: ٣١]
“আর যা সাধারণত: প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা-চলাফেরা না করে”। [সূরা আন-নূর: ৩১]
মহান আল্লাহর উত্তম নামসমূহ এবং সর্বোচ্চ গুণাবলীর ওসীলায় দো‘আ করি, তিনি যেন এ ‘আমল তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য একান্তভাবে কবুল করে নেন। আর যে ব্যক্তি এই লিফলেটটি পড়বে, ছাপাবে অথবা এর প্রচারের কারণ হবে তাকেও যেন তিনি উপকৃত করেন। নিশ্চয় পবিত্র মহান সত্তা রাব্বুল ‘ইজ্জত এ কাজের অধিকারী এবং পূর্ণ ক্ষমতাবান।
আল্লাহ তা‘আলা দরুদ পেশ করেন আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তার বংশধর, তাঁর সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা উত্তমভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের উপরও।

নারী পুরুষের নির্জনবাস ও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তানের উপস্থিতি

 বেগানা নারী পুরুষের কোন নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যেও লোকচক্ষুর আড়ালে অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়াতে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতরণিকায় সহায়ক হয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণশয়তান উভয়ের কুটনী হয়”। (তিরমিযি, মিশকাতুল মসাবীহ ৩১৮৮)

এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলপক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-দুলাভাই এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ প্রচলিত প্রবাদ ‘পর চোরকে পার আছেঘর চোরকে পার নাই’। তাইতো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন। (দ্র বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১০২)

 

অতএব, দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরুপ দুলাভাই এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা কিংবা কোন বিলাস বিহারে যাওয়া আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।

একইভাবে, তাদের সাথে কোন কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির কাজের লোক বা মহিলার সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলেমেয়ের সাথে নিভৃতবাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু বান্ধবীর একত্রে নির্জনবাস, লিফটে কোন বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জনবাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরিদের একান্তে বাইয়াতের নামে অবস্থান , তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনী সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোন পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।(ইলা রাব্বাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৩৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ১৬৭-১৬৮পৃ)

বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের বড় মন্দপ্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তাছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দবোধ করে থাকে।

অনুরুপ কোন বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে সালাত পড়াও বৈধ নয়। (জামিউ আহকামিন নিসা, মুস্তাফা আল আদাবী ১/৩৬০)

তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোন কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশংকা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়াহ ২৮/২৭০)

বৃদ্ধবৃদ্ধার আপোসে বা তাদের সাথে যুবকযুবতীর নির্জনবাস, কোন হিজরে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপোষে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোন একটি যুবক কিংবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোন সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জনবাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম পাওয়া না গেলে কোন মহিলার জামায়াতে একজন পুরুষ থেকে সফর আদি করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়াহ ২৮/২৪৫-২৭০)

প্রকাশ যেমহিলার সাথে কোন নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যেই ইসলামে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে, বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে জামায়াত অবৈধ। (ইলা রাব্বাতিল খুদুর ৪১-৪২পৃ)

মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতিগঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্যে যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও বা তা ঘরে বসেই হয়।

তাছাড়া, পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাংগনে মুসলিম নারীর শিক্ষায় জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে। সে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই কিন্তু সুখ নেই।
নিজের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বাধা বিপত্তি ও বাধাকে লংঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেমে ভালোবাসা ও আনুগত্যে।

পরিত্যক্তা কিংবা নিপীড়িত হলে এবং দেখভালের কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চির সুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন? (রাকানি ৩১পৃ, খামসুনা যুহরা বিন হাক্বলিন নুসহ, আবদুল আযীয আল মুকবিল ১৬পৃ)

ব্যভিচারের প্রতি নিকটবর্তী হওয়ার আরেক পদক্ষেপ মহিলাদের একাকিনী কোথাও বাইরে যাওয়া আসা। তাই, ‘সুন্দরী চলেছে একা পথে, সংগী হলে দোষ কি তাতে?’ বলে বহু লম্পট তাদের পাল্লায় পড়ে থাকে, ধর্ষণের হাত থেকে অনেকেই রক্ষা পায় না, পারে না নিজেকে অযাচিত ‘রিমার্ক’ কিংবা ‘টিজ’ এর হাত থেকে বাঁচাতে। এর জন্যই তো সমাজ বিজ্ঞানীদের শেষ্ঠ সমাজ বিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মহিলা যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে রমণী গুপ্ত জিনিসসুতরাং সে যখন (বাড়ি হতেবের হয়তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমনীয় করে দেখায় (সহীহ তিরমিযি ৯৩৬)

ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আরেক পদক্ষেপ কোন এমন মহিলার নিকট কোন গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে সাধারণত যৌনক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেযগার হোক তবুও না। এ বিষয়ে নীতি বিজ্ঞানীদের শেষ্ঠ নীতি বিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো নাযাদের স্বামী বিদেশে আছে। কারণশয়তান তোমাদের রক্তশিরায় প্রবাহিত হয় (সহীহ তিরমিযি ৯৩৫, ইবন মাজাহ)

আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যেআমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি (সহীহ তিরমিযি ২২৩০)

অনুরূপ কোন প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড ক্রিম অথবা পাউডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া ব্যভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকদের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলাদের নিকট হতে সুগন্ধ পেলে তার যৌন চেতনা উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যেই সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর রমনী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষেরমজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা (সহীহ তিরমিযি, আলবানী ২২৩৭)

এমন কি এই অবস্থায় সালাতের জন্য গমনও নিষিদ্ধ। (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, আলবানী ২৭০২)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যায়সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন সালাত কবুল হবে না (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, ২৭০৩)

কোন গম্য পুরুষের সাথে মহিলার প্রগলভতার সাথে কিংবা মোহনীয় কন্ঠে আলাপ সংলাপ ও কথোপকথন করাই ব্যভিচারের নিকটবর্তীকারী পথসমূহের অন্যতম ছিদ্রপথ। এ বিপজ্জনক বিষয়ে সাবধান করে আল্লাহ্‌ তায়ালা মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো নাযাতে ব্যধিগ্রস্ত মানুষের অন্তর প্রলুব্ধ হয় (সূরা আহযাব ৩২)

সুবহানাল্লাহ !
দেখুন এই জন্যেই ইমাম সালাতে ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদিরা তসবীহ বলে স্মরণ করিয়ে দেবে, আর মহিলারা হাততালির শব্দে, তসবীহ বলেও নয় ! যাতে নারীর কন্ঠস্বরে কতক পুরুষের মনে যৌনানুভূতি জাগ্রত না হয়ে উঠে। সুতরাং নারী কন্ঠের গান তথা অশ্লীল গান যে কি, তা সুস্থ রুচিশীল মানুষদের নিকট সহজেই অনুমেয়।

এমন বহু হতভাগী মহিলা আছে যারা স্বামীর সাথে কর্কশ স্বরে কথা বলে কিন্তু কোন উপহাসের পাত্রের সাথে মোহন সুরে সংলাপ ও উপহাস হাসি তামাশা করে। এরা নিশ্চয়ই পরকালেও হতভাগী।

তদ্রুপ, বেগানা নারীর সাথে মুসাহাফা বা হাত মেলানো বৈধ নয়। হাতে মোজা, দস্তানা কিংবা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কামভাব সহকারে হলে তা হাতের ব্যভিচার। (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, ৪২১৬)

করতল চেপে ধরা এবং সুরসুরি দেওয়াও হল তার ইংগিত ! কোণ গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে ট্রেনে, হাটে বাজারে, স্কুলে কলেজে, প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে বসা বা চলা, নারী পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা ইত্যাদি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। সমাজ সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুঁচ দ্বারা খোঁচা খাওয়াও ভালোতবুও যে নারী তার জন্যে অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয় (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী ২২৬)

বাইরে বের হয়ে রমণীর রমনীয়, মোহনীয় ও সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল মধুর চলনও ব্যভিচার ও যৌন উত্তেজনার সহায়ক কর্ম। এরা সেই নারী যাদের প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তারা পুরুষকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হয়তারা জাহান্নামী (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৪)

অনুরূপ খট খট শব্দ বিশিষ্ট উঁচু হিলের জুতা নিয়ে চটপটে চলন, দেহের অলংকার যেমন চুড়ি, খুঁটকাটি, নুপূর, তোরা প্রভৃতির বাজনা বাজিয়ে লাস্যময় চলনও যুবকের মনে যৌন আন্দোলন আনে। সুতরাং এ কর্ম যে হারাম তা বলাই বাহুল্য।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশে সজোরে পদক্ষেপ না করে (সূরা নূর ৩১)

সম্পূর্ণ আয়াতটি এই, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”।

যেমন পথে চলার সময় পথের মাঝখান দিয়ে চলা নারীর জন্যে বৈধ নয়।(আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৮৫৬)
মহিলাদের জন্য স্বগৃহে গোসলখানা (বাথরুম) করা ওয়াজেব (সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়) এবং ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়, সমুদ্রতীরে বা সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা তাদের জন্য হারাম। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে নারী স্বগৃহস্বামীগৃহ বা মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলেআল্লাহ্‌ তার পর্দা  লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেন (অথবা সে নিজে করে দেয়) (সহীহ আল জামিউস সাগীর অযিয়াতুহ ২৭০ ৮)

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌  পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসলখানায় যেতে না দেয় (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি, হাকেম)

স্বগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী বা বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে রাত্রিবাস ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে মহিলা নিজের স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড় খোলে সে আল্লাহ্‌ আযযা অজাল্লা  তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে (সহীহ আল জামিউস সাগীর অযিয়াতুহ ২৭১০)

একই কারণে অপরের লজ্জাস্থান(নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত) দেখা এবং একই কাপড়ে পুরুষে পুরুষে কিংবা মহিলা-মহিলায় শয়ন নিষিদ্ধ। (সহীহ তিরমিযি ২২৪৩)

পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর লজ্জাস্থান, বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অংগ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি থেকে শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরো থেকেই সূত্রপাত হয় সর্বগ্রাসী বড় এক অগ্নিকাণ্ডের।

চোরা দৃষ্টির কথায় কবি বলেন,

আঁখি  তো আঁখি নহেবাঁকা ছুরি গো
কে জানে সে কার মন করে চুরি গো!

প্রেম জগতে চক্ষু কথা ব’লে এমন বিষয় বুঝিয়ে থাকে যা জিহবা প্রকাশে অক্ষম।
চোখের কোণেই আছে যাদুর রেখা !

নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়!

‘নজরবান’ মেরে অনেকে অনেককে ঘায়েল করে থাকে।
চোরা চাহনিতে অনেকেই বুঝিয়ে থাকে গোপন প্রেমের প্রণয়ের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।

গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনিছল করে দেখা অনুখন,
চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাঁকন চুড়ির কনকন

সুতরাং  দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক বিপত্তি।
যার জন্যেই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। …” (সূরা নূর ৩০-৩১)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতিবারবার দৃষ্টিপাত করো না। বরং সত্বর নজর ফিরিয়ে নিও (সহীহ তিরমিযি ২২২৮ , ২২২৯ নং)
যেহেতু, চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার হল (কামদৃষ্টি । (বুখারী, মুসলিম)

সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয় বাজবে না। আর এই বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অংগ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয় সেজন্য তো নারীর জরুরী তার চেহারাকেও গোপন করা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যেন কোন নারী দেহের বর্ণণা এমনভাবে দেয়া না হয় যাতে একজন পুরুষের মনে তার ছবি কিংবা দৈহিক গড়নের কাঠামো ভেসে উঠে। অত্যন্ত সখীত্বের খাতিরে হলেও বিনা পর্দায় সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিংগন ও একে অপরকে নিজ নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন বৈধ নয়। কারণ এতে সাধারণত প্রত্যেক সখী তার সখীর দেহ-সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট বর্ণণা করলে স্বামী মনের পর্দায় তার স্ত্রীর ঐ সখীর বিলক্ষণ রূপ দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি লাভ করে। (সহীহ তিরমিযিতে এ সংক্রান্ত হাদীস দেখুন, হাদীস নং ২২৪৩)

হয়ত বা মনের অলক্ষেই এই পুরুষ তার হৃদয়ের কোন এক কোণে ঐ মহিলার জন্য আসন পেতে দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে দেখার ও কাছে পাবার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।

নোংরা পত্র পত্রিকা পাঠ, অশ্লীল ছায়াছবি ও থিয়েটার যাত্রা দর্শনও একই পর্যায়ের; যাতে ধ্বংস হয় তরূণ-তরুণীর চরিত্র, নোংরা হয়ে উঠে পরিবেশ।

স্বামী স্ত্রীর মিলন রহস্য প্রভৃতি জানার জন্য সঠিক সময় হল বিবাহের পর অথবা বিবাহের দিন পাকা হবার পর। নচেৎ এর পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ করে বিবাহে দেরী হলে মিলনতৃষ্ণা যে পর্যায়ে পৌঁছাবে তাতে যে কোন সময় বিপত্তি ঘটতে পারে।

কারো রূপ দ্বীনদারী প্রভৃতির প্রশংসা শুনে তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলা দূষণীয় কিছু নয়। তাকে পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ করা এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের সংসার গড়া উত্তম। কিন্তু অবৈধভাবে তাকে দেখা, পাওয়া তার কথা শোনা ও সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করা অবশ্যই সীমালংঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও প্রণয়ে পড়ে টেলিফোন সংলাপ ও সাক্ষাত ইত্যাদি ইসলামে হারাম।

যুবক যুবতীর ঐ গুপ্ত ভালোবাসা তো কেবল দৈহিক সুখ লুটার জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে অশ্রু ঝরে এবং শেষেও। তবে শুরুতে ঝরে আনন্দাশ্রু, আর শেষে উপেক্ষা আর লাঞ্ছনা ও অপমানের। কারণ, ‘কপট প্রেম লুকোচুরি, মুখে মধু, হৃদে ছুরি’ , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই হয়।

এতো বোকা তরুণী বুঝতে পারে না যে, প্রেমিক তার নিকট থেকে যৌনতৃপ্তি লাভ করে তাকে বিনষ্ট করে চুইংগামের মত মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে আঠাল পদার্থটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।

বন্ধু গো যেও ভুলে
প্রভাত যে হবে বাসিসন্ধ্যায় রেখো না সে ফুল তুলে
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ প্রভাতেই তুমি জাগি,
জানিতার কাছে যাও শুধু তার গন্ধসুষমা লাগি

সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত মুসলিম তরুণীকে এবং তার অভিভাবককেও।
কারণ, বালির বাঁধশঠের প্রীতি দুয়ের একই রীতি

বইঃ কুর’আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য
লেখকঃ আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী।।

Translate