Wednesday, October 12, 2022

ঐতিহাসিক আরাফার খুতবার বাংলা অনুবাদ

 খতীব: সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য মান্যবর শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল মানী (হাফিজাহুল্লাহ)।

بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী, মহাপরাক্রমশালী শক্তিধর ও মহা প্রতাপশালী। যিনি যাবতীয় নিয়তির নির্ধারক এবং মন্দ থেকে ভালো কে প্রভেদ করেন। যিনি অবারিত কল্যাণ ও নেয়ামতে বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং বান্দাদেরকে কখনো কখনো বিপদে আপতিত করেন যাতে নিহিত রয়েছে অনেক তাৎপর্য ও সমূহ কল্যাণ।

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং যাবতীয় গোপন রহস্য সম্পর্কে অবগত। আর তিনি রাত ও দিনে সংঘটিত সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রনকারী।

আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও নির্বাচিত রাসূল। বিশ্ব প্রতিপালক তাঁর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন-
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ.
অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। (সূরা আত-তাওবাহ্‌, আয়াত: ১২৮)

তাঁর উপর আল্লাহ তাআলার সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক, এবং তার সাথী ও উত্তম অনুসারীদের উপর যারা কল্যাণ ও সত্য প্রচারে সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আর তারাই ছিলেন সবচেয়ে পুণ্যবান মানুষ।

অতঃপর, হে মুসলিম সকল!
আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি, যার উপদেশ দিয়েছেন সকল পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গণ। যেমনি ভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَإِن تَكْفُرُوا۟ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ وَكَانَ ٱللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًا
অর্থঃ আর আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদেরকে এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই ভয় করতে থাক আল্লাহকে। যদি তোমরা তা না মান, তবে জেনো, সে সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আর আল্লাহ হচ্ছেন অভাবহীন, প্রশংসিত। (সূরা আন নিসা, আয়াত: ১৩১)

আর আল্লাহ ভীতির কারণেই সকল কল্যাণ অবতীর্ণ হয় এবং সকল অকল্যাণ ও বিপদ-মুসিবত দূরীভূত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مِنْ أَمْرِهِۦ يُسْرًا
অর্থঃ যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪)

আর আল্লাহ ভীতি হচ্ছে আনুগত্যের পথে অগ্রগামী হওয়া এবং মন্দ ও পাপাচার হতে বিমুখ থাকা।

আল্লাহ ভীতির সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ এবং সকল ইবাদত শুধুমাত্র তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করা। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সালাত না পড়া, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দোয়া না করা, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করা এবং তিনি ছাড়া অন্য কারো জন্য যবেহ, মান্নত ইত্যাদি না করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعْبُدُوا۟ رَبَّكُمُ ٱلَّذِى خَلَقَكُمْ وَٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.
অর্থঃ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে। (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ২১)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
وَٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا۟ بِهِۦ شَيْـًٔا
অর্থঃ আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। (সূরা আন নিসা, আয়াত: ৩৬)

তিনি আরো বলেন-
ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ خَٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ فَٱعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ وَكِيلٌ
অর্থঃ তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। (সূরা আল আনআম, আয়াত: ১০২)

তিনি আরো বলেন-

قُلْ أَفَغَيْرَ ٱللَّهِ تَأْمُرُوٓنِّىٓ أَعْبُدُ أَيُّهَا ٱلْجَٰهِلُونَ.
وَلَقَدْ أُوحِىَ إِلَيْكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ.
بَلِ ٱللَّهَ فَٱعْبُدْ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ.
অর্থঃ বলুন, হে মুর্খরা, তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত করতে আদেশ করছ?
আর আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।
বরং আল্লাহরই এবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন। (সূরা আয্‌-যুমার, আয়াত: ৬৪-৬৬)

আর এটাই হচ্ছে কালিমায়ে তাওহীদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রকৃত দাবি। আর এ স্বাক্ষী দেওয়াও তাওহীদের দাবি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যেমন আল্লাহ তালা বলেন-
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۦنَ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًا
অর্থঃ মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সূরা আল আহ্‌যাব, আয়াত: ৪০)

যাতে করে তাঁর আদেশের আনুগত্য করা হয় এবং তাঁর বাণীকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং তাঁর পন্থায় ব্যতীত অন্য কোনো পন্থায় আল্লাহর ইবাদত না করা হয়।

আর আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, অতএব তাতে নতুন কোন কিছু সংযোজনের প্রয়োজন নেই। আল্লাহতালা এ জায়গায় এবং এ আরাফার দিনেই তাঁর নবীর উপর আয়াত অবতীর্ণ করে বলেন-
ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلْإِسْلَٰمَ دِينًا
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা আল মায়িদাহ, আয়াত: ৩)

আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করেছেন যে ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিতঃ এ সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা, নির্ধারিত প্রাপকের জন্য নিজের মাল থেকে যাকাত বের করা, রমযানের সওম পালন এবং সামর্থ্যবানদের জন্য বাইতুল্লাহর হাজ্জ পালন।
তেমনি ভাবে ঈমানের রুকনসমূহ উল্লেখ করে বলেন- ঈমান হচ্ছে বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি, আখেরাত দিবসের প্রতি এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ.
فَٱذْكُرُونِىٓ أَذْكُرْكُمْ وَٱشْكُرُوا۟ لِى وَلَا تَكْفُرُونِ.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ.
অর্থঃ যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।

সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।

হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
(সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৫১-১৫৩)

আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে নবুয়তের অনুগ্রহ দান করে তাকে আল্লাহর স্মরণ, তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধৈর্যের অসিয়ত করেছেন।

আর আল্লাহ ভীরুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেদনাদায়ক নিয়তির উপর ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَٱلصَّٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُتَّقُونَ
অর্থাৎ, আর অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৭৭

ও হে মানব সকল! নিশ্চয়ই দুনিয়ার জীবন দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্ত নয় আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ধৈর্যের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন-
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ ٱلْخَوْفِ وَٱلْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ.
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ.
أُو۟لَٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَٰتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُهْتَدُونَ

অর্থঃ আর অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।
যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।
তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।
(সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন-
وَلَنَجْزِيَنَّ ٱلَّذِينَ صَبَرُوٓا۟ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
অর্থঃ আর যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।
(সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ৯৬)

আর বান্দা কেনইবা ধৈর্য ধারণ করবে না; অথচ সে তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাসী, সে নিশ্চিত বিশ্বাস করে- যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত থাকতো না; কেননা দুনিয়ার সকলে একত্রিত হলেও আল্লাহর নির্ধারিত সিদ্ধান্ত থেকে তাকে ফেরাতে পারবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِىٓ أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِى كِتَٰبٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَآ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌ

অর্থঃ পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা আল-হাদীদ (الحديد), আয়াত: ২২)

আর এসব বিপদ মুসিবত বান্দাকে আল্লাহর নেয়ামত ও অবারিত কল্যাণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যা আল্লাহতালা মানুষকে দান করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَإِن تَعُدُّوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحْصُوهَآ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ১৮

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ২০

أَلَمْ تَرَوْا۟ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةً وَبَاطِنَةً.
অর্থঃ তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন?

আর এ সকল মুসিবত বান্দাকে তার রবের অপরিসীম ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; ফলশ্রুতিতে সে আল্লাহর দিকে বিনম্র, বিনয়ী ও প্রত্যাশী হয়ে ফিরে আসে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَبَلَوْنَٰهُم بِٱلْحَسَنَٰتِ وَٱلسَّيِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থঃ আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দের মাধ্যমে, যাতে তারা ফিরে আসে।
(সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ১৬৮)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلْعَذَابِ ٱلْأَدْنَىٰ دُونَ ٱلْعَذَابِ ٱلْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থঃ গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
(সূরা আস সেজদাহ্ (السّجدة), আয়াত: ২১)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰٓ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنَٰهُم بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
অর্থঃ আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি মিনতি করে। (সূরা আল আনআম (الانعام), আয়াত: ৪২)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ أَنتُمُ ٱلْفُقَرَآءُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلْغَنِىُّ ٱلْحَمِيدُ
অর্থঃ হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
(সূরা ফাতির (فاطر), আয়াত: ১৫)

আর এ সকল বিপদ মুসিবত মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাদেরকে জান্নাতের প্রস্তুতির জন্য উদ্বুদ্ধ করে, যেখানে কোন প্রকারের দুঃখ-দুর্দশা ও চিন্তা-ভাবনা নেই। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّآ أُخْفِىَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
অর্থঃ কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কী কী নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুকায়িত আছে।
(সূরা আস সেজদাহ্ (السّجدة), আয়াত: ১৭)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ ٱلْأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلْأَعْيُنُ وَأَنتُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থঃ আর তথায় রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে।
(সূরা আয্‌-যুখরুফ (الزّخرف), আয়াত: ৭১)

আর এ সকল বিপদ আপদের মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করা হয় এবং ধৈর্যশীল ও অধৈর্যশীলদের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩৫

وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
অর্থঃ আর আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

বিপদ আপদ যতই কঠিন হোক না কেন, তা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আল্লাহর রহমত অধিকতর প্রশস্ত এবং তার পক্ষ থেকে মুক্তি নিকটবর্তী। আর আল্লাহ তাআলা কষ্ট লাঘব ও সহজকরণের অঙ্গীকার করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
فَإِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا
إِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا
অর্থঃ নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
অতঃপর নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
(সূরা আল ইনশিরাহ (الشرح), আয়াত: ৫-৬)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
سَيَجْعَلُ ٱللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
অর্থঃ আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।
(সূরা আত-তালাক (الطّلاق), আয়াত: ৭)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلْعُسْرَ
অর্থঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।
(সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৮৫)

আর এ সকল বিপদ আপদ আল্লাহ আনুগত্যের দ্বার সমূহ উম্মুক্ত করে, যা বিপদে পতিত হওয়ার পূর্বে তা থেকে রক্ষা পেতে এবং পতিত হওয়ার পর তা থেকে মুক্তির উপায় উপকরণ গ্রহণ করে আল্লাহ সমীপে দ্বারস্থ হওয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর শাশ্বত ইসলামী জীবন বিধান এজাতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোকপাত করেছে। উদাহরণ স্বরূপঃ বিপাদাপদে করণীয়, এবং আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে ইলাহী দিকনির্দেশনা। যেমন ইসলামী শরীয়ত উপার্জন, উৎপাদন ও কর্মে আত্মনিয়োগ ও ব্যবসার প্রতি উৎসাহিত করছে। আর ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে হালাল ও জায়েজ এবং সুদ ও প্রতারণা হচ্ছে নিষিদ্ধ ও হারাম।
ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় মালের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ করেছে এবং পারস্পরিক অঙ্গীকার ও শর্ত পালনের আদেশ করেছে। তেমনি ভাবে ব্যবসায়িক লেনদেন ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিধিমালা নির্ধারণ করেছে। পারস্পরিক ঋণ পরিশোধ ও অধিকার সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে এবং অপচয় করার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আর অসহায় ও গরিবকে যাকাত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর বিপদ-আপদ ও সংকটময় দিনে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَوْفُوا۟ بِٱلْعُقُودِ
অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُوا۟ لَمْ يُسْرِفُوا۟ وَلَمْ يَقْتُرُوا۟ وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا
অর্থঃ এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।
(সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৬৭)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلْبَيْعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟
অর্থঃ আর আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।
(সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২৭৫)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوٓا۟ أَمْوَٰلَكُم بَيْنَكُم بِٱلْبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।
(সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ২৯)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وأشهدوا إذا تبايعتم
আর তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখো।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وأوفوا الكيل والميزان
আর তোমরা ওজন ও মাপ পূর্ণ করো।

আকাশ আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে বলেন-
“এটি (জান্নাত) তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে।”

ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইসলামের শরিয়া গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাবলী দিয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, সন্তানদের লালন-পালন, সামাজিক সুসম্পর্ক, পারস্পরিক সহানুভূতি ও সাহায্যের প্রতি উৎসাহিত করেছে। স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার, সাধারণ মানুষের অধিকার, নারী ও পুরুষের অধিকার সুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার এমনকি অন্যের মনস্তাত্ত্বিক অধিকারের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়া নির্দেশনা দিয়েছে। বিপদাপদে পরস্পরেরর পাশে দাঁড়ানো, পারস্পরিক সদাচরণ, সদালাপ, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَٰنًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ ٱلْكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا.
وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا.
অর্থঃ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।

আর তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।
(সূরা বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ২৩-২৪)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَقُل لِّعِبَادِى يَقُولُوا۟ ٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ إِنَّ ٱلشَّيْطَٰنَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ ٱلشَّيْطَٰنَ كَانَ لِلْإِنسَٰنِ عَدُوًّا مُّبِينًا
অর্থঃ আর আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে।
সূরা বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ৫৩

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكْرَهُوا۟ شَيْـًٔا وَيَجْعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

অর্থঃ আর নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।
(সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ১৯)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَٰنِ وَإِيتَآئِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ وَٱلْبَغْىِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
অর্থঃ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
وَءَاتِ ذَا ٱلْقُرْبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلْمِسْكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
অর্থঃ আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না।
(সূরা বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ২৬)

উসামা বিন শারিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিদায় হজ্বে উপস্থিত ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিলেন এবং বললেনঃ সর্বপ্রথম তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা, অতঃপর তোমার বোন, অতঃপর তোমার ভাই, অতঃপর নিকটজন, অতঃপর তোমার নিকটজন।

আর রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যাপারে ইসলামী শরিয়া এমনসব ব্যবস্থাপনা রেখেছে যার দ্বারা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। ইসলামী শরিয়া মানুষের অধিকার এবং সম্পদ ও প্রাণের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দিয়েছে। আর অপরের প্রতি সীমালংঘন ও কষ্টদান কে নিষিদ্ধ ও হারাম করেছে। তেমনি ভাবে পারস্পরিক সংঘাতে ইন্দন দান, সন্ত্রাস লালন এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি নিষেধ করেছে। ফেতনা সৃষ্টির যাবতীয় কারণসমূহ থেকে বিরত থাকতে এবং শত্রুর প্ররোচনায় পতিত না হতে নির্দেশনা দিয়েছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং দায়িত্বশীলদের ন্যায় সঙ্গত অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে। সর্বোপরি সমাজে ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা এবং অনিষ্টতা ও অকল্যাণ বিদূরিত করতে নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا۟
অর্থঃ আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
(সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১০৩)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَمْ يَلْبِسُوٓا۟ إِيمَٰنَهُم بِظُلْمٍ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
অর্থঃ যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।
(সূরা আল আনআম (الانعام), আয়াত: ৮২)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا۟ ٱلْأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ ٱلنَّاسِ أَن تَحْكُمُوا۟ بِٱلْعَدْلِ إِنَّ ٱللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِۦٓ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ سَمِيعًۢا بَصِيرًا.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَٰزَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا.
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।
(সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৫৮-৫৯

আল্লাহতালা আরো বলেন-
وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَٰحِهَا ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
অর্থঃ আর তোমরা মানুষকে তাদের দ্রব্যদি কম দিয়ো না এবং ভুপৃষ্টের সংস্কার সাধন করার পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। এটাই হলো তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
(সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ৮৫)

আল্লাহ তাআলার আরো বলেন-
وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱقْتَتَلُوا۟ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَا
অর্থঃ যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে।
(সূরা আল হুজুরাত (الحجرات), আয়াত: ৯)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
সূরা আল হুজুরাত (الحجرات), আয়াত: ১০
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।

আর বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে। তোমরা আমার পরে কুফরীতে ফিরে যাবে না যাতে একে অপরকে হত্যা করবে। অতঃপর তিনি তাদেরকে শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিলেন। এবং বললেন- হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করছেন, অতঃপর বললেন তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, রমজানের রোজা রাখো, দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করো এবং জান্নাত তোমার প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করো।

আর চিকিৎসাসংক্রান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী শরিয়া স্বাস্থ্য ও শারীরিক সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি নির্দেশ প্রদান এবং স্বচ্ছ ও নির্মল পরিবেশ সংরক্ষণে নির্দেশ প্রদান। ইসলাম পবিত্র খাদ্যসমূহ বৈধ করেছে এবং ক্ষতিকর ও অনিষ্ট খাদ্য নিষেধ করেছে। মহামারী ও অন্যান্য রোগ ব্যাধি থেকে সমাজকে সুরক্ষা রাখতে দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغْسِلُوا۟ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى ٱلْمَرَافِقِ وَٱمْسَحُوا۟ بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى ٱلْكَعْبَيْنِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَٱطَّهَّرُوا۟

অর্থঃ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।
(সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৬)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
আর তুমি তোমার পোশাককে পবিত্র করো।

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
আর যখন তুমি অসুস্থ হও তখন তিনি তোমাকে সুস্থ করে তোলেন।

আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করো। কেননা প্রত্যেক রোগেরই চিকিৎসা রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন- কুষ্ঠরোগী হতে পলায়ন করো, যেমন তুমি বাঘ হতে পালিয়ে থাকো।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন- কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে না রাখে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আরও বলেন- যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করো সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।

এ হাদীসে নববীর আলোকে মহামারি ও দ্রুত বিস্তারকারী ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজকীয় সৌদি সরকার এ বছর দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অংশগ্রহণে সীমিত সংখ্যক হাজী নিয়ে হজ্ব সম্পাদনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যাতে করে স্বাস্থ্যবিধির পূর্ণ অনুসরণ ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণ গ্রহণের মাধ্যমে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করা যায়। আর এর মাধ্যমে জনসাধারণের নিরাপত্তা, মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া এবং সর্বোপরি ইসলামী শরিয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্বের মুসলমানদের কল্যাণের নিমিত্তে গৃহীত এ প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত মহামারী বিস্তার রোধে ও পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনার সুরক্ষায় থাকবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে ইনশাআল্লাহ।
অতএব আল্লাহতালা খাদেমুল হারামাইন শারিফাইন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলাজিজ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কর্ণধার ব্যক্তিবর্গকে হারামাইন শরীফাইনের খেদমত ও তার সুরক্ষায় অবদানের জন্য উত্তম বিনিময় দান করুন, তাদের নেক কাজের সাওয়াবগুলো বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিন এবং তাদেরকে অনিষ্ট কারীদের কবল থেকে রক্ষা করুন।
আর মুমিন ব্যক্তি অন্যদের জন্য দোয়া করার উসিলায় নিজের জন্য, তাঁর পরিবার-পরিজন, দেশবাসী ও সমগ্র মুসলমানের জন্য দোয়া করার সুযোগ লাভ করে। যে ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতা নিয়োগ করেন যে তার সাথে আমিন বলেন এবং বলেন তোমার জন্যও অনুরূপ নির্ধারিত হোক।
আর বিশেষ করে এই পবিত্র জায়গা এবং আজকের এই পবিত্র আরাফার দিন দোয়া কবুলের অন্যতম সুযোগ। আর এ কারণেই এদিনে হাজী সাহেবদের জন্য রোযা না রাখা উত্তম বা মুস্তাহাব, যাতে করে তারা বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করার সুযোগ লাভ করেন; যেমনটি রাসুল (সাঃ) করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় খুতবা প্রদান করেন এবং বিলাল (রা:) কে আযানের নির্দেশ দেন অতঃপর বিলাল আযান দেন এবং ইকামত দেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত যোহরের নামায কসর করেন, অতঃপর পুনরায় ইকামতের মাধ্যমে দুই রাকাত আসরের কসর করেন, এরপর তিনি সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করেন এবং আল্লাহর যিকির ও তার নিকট দোয়া অব্যাহত রাখেন, অতঃপর মোযদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করেন এবং সেখানে মাগরিবের তিন রাকাত এবং এশার দুই রাকাত একত্রিত ও কসর করেন। অতঃপর মোযদালিফায় রাত্রি যাপন এবং সেখানে ফজর পড়েন, চারদিকে আলো উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। তারপর মিনার দিকে গমন করেন এবং বড় জামারায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেন এবং তার হাদী (দমে শোকর) যবেহ করেন এবং মাথা মুন্ডন করেন, এরপর বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন। অতঃপর আইয়ামে তাশরীকে মিনায় অবস্থান করেন এবং সেখানে তিন দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন, প্রত্যেহ আল্লাহ জিকির ও জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর যখন হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করেন এবং সফরের ইচ্ছে পোষণ করেন তখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন।

এবছর আমরা সকল হাজী ও সহযোগী ব্যাক্তিদের প্রতিরক্ষা মূলক ব্যাবস্থা গ্রহনে নিশ্চিত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। হে মুসলিমগন! নিশ্চই কল্যাণ ও নেয়ামত প্রাপ্তি এবং বিপদাপদ ও শাস্তির হতে রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম সম্বল হল আল্লাহর নিকট দোয়া করা, আর আল্লাহ্ তায়ালা তার নিকট প্রার্থনা কারীদের প্রার্থনা কবুল করার অঙ্গীকার করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
“তোমরা আমাকে তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।”
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
“আর আমার বান্দা যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার নিকট এই থাকি আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহ্বান করে।”

অতঃপর হে মুসলমান! তোমরা বিনয় ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, আর দোয়া কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যাশী হও এবং অন্যের দোয়ার সাথে বলো- আমিন!
হে আল্লাহ আপনি আমাদের থাকে এ মহামারী দূর করে দিন, অসুস্থদের সুস্থ করে দিন এবং অসুস্থদের চিকিৎসার সাথে জড়িতদের সক্ষমতা দান করুন এবং সঠিক রোগের নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উদ্ভাবনের তাওফীক দান করুন।

হে আল্লাহ্ তোমার নেয়ামত দিয়ে তাদের ভরপুর করে দাও এবং তোমার অনুগ্রহে তাদেরকে ধন্য করো, হে আল্লাহ্! তাদের অন্তরের মধ্যে ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে দাও, এবং তাদেরকে আল্লাহভীতি ও সৎকাজে সহযোগী বানাও; পাপাচার এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে নয়। আল্লাহ্ তুমি তোমার অনুগ্রহ ও করুণায় আমাদেরকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দান করো।
سبحان ربك رب العزة عما يصفون، وسلام على المرسلين، والحمد لله رب العلمين، وصلى الله وسلم على رسوله الآمين.
(নেট থেকে সংগৃহিত)

অভ্যাসগত সুন্নত এবং ইবাদতগত সুন্নত

 প্রশ্ন: যে সব সুন্নাহ পালন করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আদেশ করেন নি কিন্তু তিনি নিজে করেছেন। এসব সুন্নাহকে কী বলে? এসব সুন্নাহ পালন করলে আমরা কী রকম নেকি পাবো?

উত্তর: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল কাজ করতেন সেগুলো দু ভাগে বিভক্ত। যথা:

◈ ১) সুন্নতে আদাহ বা অভ্যাসগত সুন্নত
◈ ২) সুন্নতে ইবাদাহ বা ইবাদতগত সুন্নত।

◍ সুন্নতে আদাহ বা অভ্যাসগত সুন্নত:

কিছু কাজ তিনি প্রচলিত নিয়ম পালন, সামাজিকতা বা ব্যক্তিগত অভ্যাস হিসেবে করতেন। সেগুলো করার জন্য তিনি কাউকে নির্দেশ বা উৎসাহ দিতেন না বা এগুলোর কোন ফযিলতও বর্ণনা করেন নি। এগুলোকে সুন্নতে আদাহ বা অভ্যাসগত সুন্নত বলা হয়। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কদু পছন্দ করা, মিষ্টি পছন্দ করা, পাগড়ি/লুঙ্গি পরিধান করা, মাথার চুল লম্বা করা, হাতে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করা, উটে চড়া ইত্যাদি।

এ সকল অভ্যাসগত আমল উম্মত আমল করতে নির্দেশিত নয়। তবে কেউ যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা ও তাঁকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করার নিয়তে সেগুলো আমল করে তাহলে নিয়তের কারণে সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।

◍ সুন্নতে ইবাদাহ বা ইবাদতগত সুন্নত:

আরেক প্রকার কাজ যেগুলো ইবাদত ও দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত। এগুলোকে বলাকে সুন্নতে ইবাদত বা ইবাদতগত সুন্নত বলা হয়। এ সকল ইবাদত করতে তিনি উৎসাহিত করেছেন বা এগুলোর ফযিলত বয়ান করেছেন। আমরা মূলত: সেগুলো পালন করতে নির্দেশিত। যেমন, নিয়মিত সুন্নত নামায, তারাবীহর সালাত, মিসওয়াক করা, সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও জিকির ইত্যাদি। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬❖▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। KSA.

নারীকে পুরুষের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি বিষয়ে হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা এবং সংশয় নিরসন

 প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা কি সব মহিলাকে পুরুষের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন? এ বিষয়ে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আমরা প্রথমে নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করব। তারপর সেগুলো ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে উপরোক্ত বিষয়টি সম্পর্কে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পেশ এবং এ সম্পর্কে মানুষের মনের ভ্রান্তি ও সংশয় নিরসন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

❑ স্ত্রীকে বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি সংক্রান্ত হাদিস:
◆ আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا, فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ, وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ, فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمَهُ كَسَرْتَهُ, وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا»مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ, وَاللَّفْظُ لِلْبُخَارِيِّ
وَلِمُسْلِمٍ: «فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ وَبِهَا عِوَجٌ, وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا, وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا

“আর তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো যে, তোমরা তামাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে দিবে আর যদি তা যেভাবে আছে সেভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। অতএব, তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করো।”

◆ উপরোক্ত শব্দ বিন্যাস সহিহ বুখারির আর সহিহ মুসলিমে এসেছে এভাবে:

فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ وَبِهَا عِوَجٌ, وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا, وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا

“আর যদি তোমরা তাদের থেকে উপকৃত হতে চাও তাহলে বাঁকা থাকা অবস্থায়ই তাদের থেকে উপকৃত হও আর যদি সোজা করতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর ভেঙ্গে ফেলার অর্থ তালাক দেয়া। [ বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৫, ৬০১৮, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮]

◆ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ الْمَرْأَةُ كَالضِّلَعِ، إِنْ أَقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفِيهَا عِوَجٌ

“নারী হল, পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি তোমরা তাকে সোজা করতে যাও তাহলে তাকে ভেঙ্গে ফেলবে। সুতরাং যদি তাদের থেকে লাভবান হতে চাও তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভবান হবে।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৪/ বিয়ে-শাদি, পরিচ্ছেদ: ২৫০৪. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার, আর এই সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নারীরা পাঁজরের হাড়ের মত”]

❑ নারীদেরকে পুরুষের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে-সংক্রান্ত হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা:

এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে দু ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত পাওয়া যায়। যেমন:

◈◈ ১ম অভিমত:

প্রথম ও আদি পুরুষ আদম আলাইহিস সালাম-এর জীবন সঙ্গিনী মা হাওয়া আ. কে কেবল আদম আ.-এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন:

◆ ইবনে হাজার রহ. বলেন,
“كأن فيه إشارةً إلى ما أخرجه ابن إسحاق في المبتدأ عن ابن عباس أن حواء خُلقت من ضلع آدم الأقصر الأيسر”
“এখানে যেন ইবনে ইসহাক তার আল ‘মুবতাদা’ কিতাবে ইবনে আব্বাস রা. থেকে যে বর্ণনা এনেছেন সে দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, (ইবনে আব্বাস রা. বলেন)
إن حواء خلقت من ضلع آدم عليه الصلاة والسلام الأقصر الأيسر وهو نائم
“ঘুমন্ত অবস্থায় আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম-এর বাম পাঁজরের সবচেয়ে ছোট হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”

◆ দাউদি (আহমদ বিন নসর আদ দাউদি-আল জাযায়েরি (আলজেরিয়া) যাকে সহিহ বুখারির ১ম এবং মুয়াত্তা মালিকের ২য় ভাষ্যকার বলে গণ্য করা হয়, মৃত্যু: ৪০২] বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إنما المرأة كالضلع “মহিলা হল, বাম পাঁজরের হাড়ের মত।” এ কথার বলার কারণ হল, لأنها خلقت من ضلع آدم “কারণ তাকে (হাওয়া আ. কে) আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” [উমদাতুল কারি-বদরুদ্দিন হানাফি রাহ.]

◆ ইমাম নওবী বলেন,

فيه دليل لما يقوله الفقهاء أو بعضهم أن حواء خلقت من ضلع آدم

“এ হাদিসে ফকিহদের এ কথার পক্ষে দলিল রয়েছে যে, হাওয়া আ. কে আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” [শরহে সহিহ মুসলিম,৫/২৮১]

এই সৃষ্টির ধরণ কেমন ছিল তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু কতিপয় আলেম বিষয়টি বুঝার স্বার্থে এর উদাহরণ দিয়েছেন যে, “খেজুরের আঁটি থেকে যেভাবে খেজুরের চারা গাছ বের হয়।” [আল মুফহিম-আবুল আব্বাস আল কুরতুবি-মৃত্যু: ৬৫৬]
আদম ও হাওয়া আ. ছাড়া তাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি ও বংশধর সকলেই স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর মানব সৃষ্টির সাধারণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে-যা আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার প্রথম আয়াতে স্পষ্ট করে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” [সূরা নিসা: ১] এ ছাড়াও বিষয়টি নিম্নোক্ত আয়াত সমূহে আলোচিত হয়েছে। যথা: সূরা আরাফ-এর ১৮৯ নম্বর, সূরা যুমার-এর ৬ নম্বর এবং সূরা আনআম: ৯৮ নম্বর আয়াত।

◈ ২য় অভিমত:

অন্য একদল আলেম বলনে, বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টির ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপক অর্থ ও উপমা অর্থে বলেছেন। অর্থাৎ নারীদের আচার-আচরণ ও স্বভাব চরিত্রে কিছুটা বক্রতা রয়েছে বিধায় তার উদাহরণ হিসেবে এমনটি বলা হয়েছে।
শাইখ আলবানি বলেন, মিশকাত গ্রন্থের ভাষ্যকার মোল্লা আলি কারি [শরহে মিশকাত ৩/৪৬০] বলেছেন, “অর্থাৎ মহিলাদেরকে এমন স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সহকারে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, তাতে বক্রতা রয়েছে-যেন তাদেরকে বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর বাম পাঁজরের হাড় হল, বক্র। সুতরাং বক্রতার আকৃতি বা অর্থ বুঝাতে এমন বা استعارة (ইস্তিয়ারাহ) বা রূপকতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এর উদাহরণ রয়েছে, কুরআনের এই আয়াতে (আল্লাহ তাআলা বলেন),
خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ
“মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়া প্রবণতা থেকে।” [সূরা আম্বিয়া: ৩৭] (অর্থাৎ মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি হল, তাড়াহুড়া করা। এটা তার সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট)

আমি বলি (শাইখ আলবানি রাহ. বলেন,) এ মতটাই আমার নিকট অধিক অগ্রাধিকার যোগ্য। কারণ এটি উপমা এবং রূপক অর্থ; প্রকৃত অর্থ উদ্দেশ্য নয় দুটি কারণে। যথা:

● ১ম: কোনও হাদিস প্রমাণিত হয়নি যে, হাওয়াকে আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
● ২য়ত: উপমার বিষয়টি অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে. إن المرأة كالضِّلع
“নিশ্চয় মহিলা হল, পাঁজরের হাড়ের মত।” (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ প্রমুখ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান এটিকে সহিহ বলেছেন। এ ছাড়াও ইমাম আহমদ প্রমুখ আবু যর এবং আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসকে সহিহ বলেছেন] [সিলসিলা যাইফাহ, ১৩/১১৩৯ ও ১১৪০]

◈ তাহলে হাওয়া আ. কে কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?

শাইখ আলবানি আরও বলেন যে, কেউ যদি প্রশ্ন তোলে যে, হাওয়াকে যদি আদম থেকে সৃষ্টি না করা হয়ে থাকে তাহলে তাকে কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? আমরা এর উত্তরে বলব যে, আমরা এ কথা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি না যে, হাওয়াকে আদমের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কারণ এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট কোনও হাদিস সাব্যস্ত হয়নি। মুফাসসিরগণ এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণনা করেছেন সেগুলো ইসরাইলি বর্ণনা-যা আমরা সত্য-মিথ্যা কোনটাই বলবো না এবং কেউ এ মত ব্যক্ত করলে আমরা তার বিরোধিতাও করবো না। যেহেতু তা শুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এটি অধিকাংশ মুফাসসিরের অভিমত। কিন্তু আল্লাহ কিভাবে হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করেছেন তা আমরা দৃঢ়তার সাথে বলবো না এবং আমরা এর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে কষ্টও করতে যাবো না বরং বলব, আল্লাহু আলাম।অর্থাৎ আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন। আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আমরা বলব যেমনটি আল্লাহ বলেছেন,
وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ
“প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর এক জ্ঞানী।” [সূরা ইউসুফ: ৭৬]
وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
“আর তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।” [সূরা ইসরা: ৮৫]
[দেখুন: তাফসিরে মানার: ৯/৪৩১-৪৩২] ও সিলসিলা যাইফাহ, ১৩/১১৩৯]

◈ মহিলাদেরকে পাঁজরের বাঁকা হাড়ের সাথে উপমা দেওয়ার উদ্দেশ্য কী?

মহিলাদেরকে এভাবে পাঁজরের বাঁকা হাড়ের উপমা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, তাদের আচরণে বক্রতা থাকলেও স্বামীরা যেন তার প্রতি ভদ্রতা ও সদয় আচরণ করে, সব সময় তার দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করে এবং তাকে সব দিক থেকে পরিপূর্ণ গুণের অধিকারী হিসেবে পেতে না চায়। অন্যথায় সংসার ভাঙ্গা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। বরং তার উচিত, ধৈর্য, সহনশীলতা এবং সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাকে নিয়ে ঘর সংসার অব্যাহত রাখা।

❂ সৌদি আরবের স্থায়ী জ্ঞান-গবেষণা ও ফতোয়া বোর্ডকে প্রশ্ন করা হয়, “নারীকে বাঁকা পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে” রসূলের এ হাদিসটির ব্যাখ্যা কী এবং বক্রতা বলতে কী বোঝায়? তারা এর জবাবে বলেন,
أن المرأة لا تخلو من اعوجاج في أخلاقها كالضلع، فمن أراد كمالها لم يستطع ذلك إلا بطلاقها، فالمشروع له: الصبر والتغاضي عن بعض الاعوجاج، مع الاستمرار في النصيحة والتوجيه
“এর অর্থ হল: একজন মহিলা আচার-আচরণে বক্রতা মুক্ত নয়-যেমনটা থাকে পাঁজরের হাড়। তাই যে ব্যক্তি তার মধ্যে পরিপূর্ণতা (দোষত্রুটি মুক্ত এবং সব দিক থেকে পরিপূর্ণ) পেতে চায় সে তা পাবে না তালাক ছাড়া। সুতরাং তার জন্য এটাই বিধেয় যে, সে ধৈর্য ধারণ করবে এবং তার কিছু বাঁকা আচরণ উপেক্ষা করার পাশাপাশি, পরামর্শ এবং নির্দেশনা অব্যাহত রাখবে।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৪র্থ খণ্ড, ১০৫ পৃষ্ঠা]

❂ নাস্তিকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন:

অনেক নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী এক্টিভিস্ট এ সংক্রান্ত হাদিস সমূহের অপব্যাখ্যা করে বলতে চায় যে, হাদিসে বলা হয়েছে, সব নারীকেই তাদের স্বামীর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ কথা বলে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বহুবিবাহ, পাঁজরের হাড় সংখ্যা এবং তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন আজেবাজে কথা বলে। আবার কেউ কেউ অবিবাহিত নারী, তালাক প্রাপ্ত নারী, একাধিক পুরুষের সাথে বিয়ে হওয়া নারীর উদাহরণ দেখিয়ে হাদিসকে ভুল প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু তাদের এ সব অভিযোগের মূলেই আছে, এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর ভুল বুঝ এবং অপব্যাখ্যা।

❑ সারাংশ:
নারীদেরকে পুরুষের বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টির ব্যাপারে হক্কানি বিজ্ঞ আলেমদের থেকে দুটি অভিমত পাওয়া যায়। যথা:
ক. শুধু হাওয়া আ. কে আদম আ. এর বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে; আর কোনও নারীকে নয়।
খ. হাওয়া আ. কে আদম আ. বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং হাদিসে মহিলাদের আচার-আচরণ ও স্বভাবে বক্রতা থাকার বিষয়টিকে উপমা ও রূপক অর্থে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য হল, নারীদের সাথে নম্রতা, ভদ্রতা ও সদাচরণ করা।

সব নারীকে পুরুষের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করার বিষয়টি কোনও নির্ভরযোগ্য আলেম বলেননি। বরং একশ্রেণীর নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীর পক্ষ থেকে ইসলামের প্রতি মিথ্যা অপবাদ।
আল্লাহ আমাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সকল বিভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate