Tuesday, April 6, 2021

মহিলাদের জন্য নসিহত

 মহিলাদের জন্য নসিহত সম্পর্কে আজকের আলোচনা। রাসূল (সা) মহিলাদের জন্য নসিহত পেশ করতে যা যা বলেছেন তা এখানে তুলে ধরব।

কোরআন হাদিসের আলোকে মহিলাদের জন্য নসিহত সম্পর্কে আজকের আলোচনা। মহানবী (সা) মহিলাদের জন্য নসিহত করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। নিচে মহিলাদের জন্য নসিহত সম্পর্কীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হল।

কথায় বলে সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। আল্লাহ তা’য়ালার যে সকল হুকুম আহকাম আছে তা সাধ্যনুযায়ী আদায় করতে সচেষ্টা থাকবেন। যদি কোন সময় (শরীয়ত ওজর বশতঃ) কোনো হুকুম আদায় করতে পারা না যায় তবে পরে তা কাজা করে নিতে হবে। এতে স্বামী বা অন্য কারো বাধা নিষেধ চলবে না। হাদীস শরীফে আছে “কোন বান্দার হুকুম মানতে যেয়ে আল্লাহর নাফরমানী করা যাবে না।”

মহিলাদের জন্য নসিহত

কারো সাথে মিথ্যা কথা বলবেন না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মিথ্যা কথা সকল পাপের মূল”। সুতরাং সর্বদা মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকবেন।

কোনো সময় অপরের নিন্দা ও কুৎসাবৃত্তি করবেন না। কারণ পবিত্র কোরআনে তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ করা হয়েছে।

সর্বদা পর্দার হুকুম মেনে চলবেন এবং আপন শরীর পর-পুরুষের দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন; কেননা পর্দা প্রথা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরজ বা অবশ্য করণীয়।

সহবাসে সক্ষমতা অর্জন করার বিভিন্ন পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন

স্বামীর মনে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলবেন না বরং সদা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখবেন। কখনো স্বামীকে নিজের উপর রাগ হতে দিবেন না; স্বামী যে ইশারায় চালাতে চান সেই ইশারায় চলতে থাকবেন। (যদি তা নাফরমানী কাজ না হয়।)

স্বামী যদি স্ত্রীকে কখনো কোন কাজের আদেশ করেন, তৎক্ষণাৎ তা খুশি মনে করতে সচেষ্ট থাকবেন।

স্বামীর কাছে থাকাকালীন তার অনুমতি ব্যতীত কোনো নফল এবাদত করবেন না। স্বামীর খেদমত করা অন্যান্য নফল এবাদত করা থেকেও উত্তম।

স্বামীর হুকুম ব্যতীত (স্বামীর মাল থেকে) অন্য কাউকে দান বা হাওলাতে দিবেন না। কেননা এটি শরীয়তে জায়েজ নেই।

স্বামীর কোন দোষের কথা কখনো অন্যের নিকট প্রকাশ করবেন না। সর্বদাই স্বামীর সুখে সুখী ও স্বামীর দুঃখে দুঃখী হবেন। স্বামী যদি ধনী হন তথাপিও তার অনিচ্ছা সত্বে নিজের জন্য কোন জিনিষ আনতে হুকুম করবেন না। বরং স্বামীর ইচ্ছার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।

যদি স্বামীর কোন কাজ নিজের মতের বিরুদ্ধে হয় তথাপিও স্বামীর সাথে কোনরূপ খারাপ ব্যবহার বা বিরুদ্ধাচরণ করবেন না।

স্বামীর বাড়ীতে খাওয়া-পরার কষ্ট থাকলেও অন্যের নিকট এর কুৎসাবৃত্তি করবেন না। বরং ধৈর্য্য ধারণ করবেন। আর স্বামী কোন কাপড়-চোপড় আনলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে সাদরে গ্রহণ করবেন। কখনো এ রকম কোন কথা স্বামীকে বলবেন না যে, তোমার বাড়ীতে এসে কোন শান্তি পাইনি। আমার পিতা না বুঝে এ অশান্তির ঘরে দিয়েছেন। এবং এ কঠিন বালার মধ্যে ফেলে রেখেছেন ইত্যাদি।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন “আমি দোযখের মধ্যে অধিকাংশ স্ত্রীলোকদেরকেই দেখেছি”। ছাহাবাগণ এর কারণ জিজ্ঞেস করলে হুজুর (সাঃ) উত্তরে বলেন “তারা অন্য লোকের লানত করে ও আপন স্বামীর না শুকরি বেশি করে থাকে।

সব সময় স্বামীর মেজাজ বুঝে চলাফেরা করবেন। খুশি অবস্থায় হাঁসি মুখে আর গম্ভীর অবস্থায় নিজে চুপ থেকে। স্বামী যদি কোন সময় স্ত্রীকে প্রহার করেন, তবে চুপ-চাপ মনের রাগে বসে থাকা উচিত নয়। বরং দোষ স্বীকার করে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবেন।

অতি সাবধানতার সাথে আপন স্বামীর সঙ্গে জিন্দেগী কাটাবেন। স্বামী বিদেশ থেকে বাড়ী আসলে তাড়া করে বসতে দিবেন; অবস্থা বুঝে খেদমত করবেন। অতঃপর হাঁসি মুখে আলাপের দ্বারা তাকে খুশি করবেন এবং কোন কথা থাকলে পরে জিজ্ঞেস করবেন।

“স্ত্রীলোকদের গম চূর্ণ করা, ধান ভানাই ইত্যাদি ধর্মযুদ্ধ স্বরূপ। যে স্ত্রীলোক তার স্বামীকে দেখলেই খুশি হয় এবং সম্মুখে গিয়ে মারহাবা বলে সন্তোষ প্রকাশ করে সে জেহাদের অর্ধেক ছওয়াব পাবে।” (আল্ হাদীস)

স্বামী যদি টাকা পয়সা উপার্জন করে তার পিতা-মাতার হাতে দিয়ে দেয় তবে স্ত্রীর এতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এটাও ভাল যে, স্ত্রীর হাতে দিতে চাইলে স্ত্রী নিজের থেকে তাদের হাতে দেয়ার কথা বলা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ী বেঁচে থাকা পর্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে তাদের খেদমত করবেন। কোন কাজে বা কথায় যেন তারা মনঃক্ষুন্ন না হয়। ঝাল ও ননদের সাথে যেন ঝগড়া না হয়। মুরুব্বির সঙ্গে আদবের সাথে এবং ছোটদের সঙ্গে আদর ও স্নেহের ব্যবহার করা স্ত্রী  জাতির জীবনে কর্তব্য মনে করবেন।

ঘরের কর্তব্য কাজ সাধ্যানুযায়ী করতে থাকবেন। কখনো অন্যের ভরসায় থাকবেন না। স্বামীর বাড়ী থাকা অবস্থায় খুব হুসিয়ারীর সাথে থাকা দরকার

স্বামীর মর্যাদা সম্পর্কে কতিপয় হাদীস

“নারী পুরুষের (স্বামী-স্ত্রীর) সম্পর্ক- জমজ সন্তানের মতো।”

“মানুষকে মানুষ সেজদা করা জায়েজ থাকলে- আমি প্রথমে মহিলাদের আদেশ করতাম, যেন তারা আপন স্বামীকে সিজদা করে।” (মেশকাত)

“তিন প্রকার লোকের নামাজ কবুল হয় না, এর মধ্যে সে স্ত্রী, যার উপর তাঁর স্বামী অসন্তুষ্ট।” (মেশকাত)

“যে মহিলার মৃত্যু হয় এবং তার উপর তার স্বামী অসন্তুষ থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (এহইয়াউল উলুম)

“যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছে। রমজানে রোজা রেখেছে, নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করেছে এবং স্বামীর খেদমত করেছে- নিশ্চয়ই সে বেহেস্তের আটটি দরজার যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে ঢুকতে পারবে।” (আল্-হাদীস)

“যখন স্বামী আপন বিবিকে ডাকবে তখনই এসে সামনে উপস্থিত হতে হবে”। (আল্-হাদীস)

“যে স্ত্রীলোক সন্তুষ্টচিত্তে ৭দিন তার স্বামীকে খেদমত করবে তার জন্যে বেহেস্তের ৭টি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।” (আল্-হাদীস)

“কোন স্ত্রীলোক এক বছর নফল এবাদত করে যে ছওয়াব না করবে, শুধু এক ঘন্টা স্বামীর সাথে বসে থাকলে এবং মিষ্টি আলাপ করলে এর চেয়ে বেশি ছওয়াব পাবে।” (জান্নাতুনন্নেছা কিতাব)

বাপের বাড়ীর কোন দোষের কথা শশুর বাড়ীতে প্রকাশ করবেন না। এ ব্যাপারে মা-বাপ ও শশুর-শ্বাশুড়ীগণ, ঝি-মা, বউ-মাকে পূর্বেই সাবধান করে দেয়া উচিত। যদি কোন সময় স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েই যায় তা কখনো অন্যের কাছে বলাবলি করবেন না হয়তো স্বামী শুনে আরো রাগান্বিত হতে পারেন। তখন অল্পতেই অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে।

স্বামীর নিকট থাকাকালীন কখনো তাঁর অনুমতি ব্যতীত (তাঁর) সঙ্গ ছাড়া থাকবেন না।

হাদীস শরীফে আছে “যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর অসন্তুষ্টি অবস্থায় এক রাত্রিও তার সঙ্গ ছাড়া থাকে তবে ঐ রাত্রি ফজর হওয়া পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেস্তা সেই স্ত্রীর উপর লা’নত করতে থাকে। যে ব্যক্তি এ কাজে বাধা দেয় তার উপরও লা’নত অবতীর্ণ হয়।” (আল্-হাদীস)

কোন সময় কোন বিষয়ে স্বামীকে পরাস্ত করার চিন্তা করবেন না। কেননা স্বামীকে পরাস্ত করা বড় কঠিন ও মারাত্মক কাজ। স্বামী যেভাবে চালাতে চায় সেভাবে চলবেন এবং স্বামী যেভাবে চলেন এতে সন্তুষ্ট থাকবেন। কোন কাজে বা কথায় তার মতের বিরোধিতা করবেন না। কেননা স্বামীর পাপের জন্য স্ত্রী দায়ী হবেন না। তবে উত্তম কথা হলো, স্বামীকে কোন পাপকার্য্যে লিপ্ত দেখলে মিষ্টি স্বরে বুঝিয়ে সৎপথে আনতে চেষ্টা করা।

স্বামী যদি স্ত্রীকে মোহরের টাকা মাফ করে দিতে বলেন, তবে স্ত্রী এ ব্যাপারে স্বাধীন; ইচ্ছা করলে মাফ করতেও পারেন, মাফ নাও করতে পারেন। তবে উদার চিত্তে মাফ করে দেয়াই উত্তম।

অনেক স্ত্রীলোক আছে যাঁরা অলংকারাদী স্বামীর বাড়িতে ব্যবহার না করে কোন বিবাহ অথবা বাপের বাড়ী যেতে হলে ব্যবহার করে। স্বামীও এজন্য এতে কোন প্রকারের বাঁধা প্রদান করছেন না। কারণ অধিকাংশ স্বামী ধর্মপরায়ণ নয় বা আলেম নয়। যে সকল স্ত্রীর স্বামী আলেম, তাঁরা বড়ই সৌভাগ্যশীলা। কেননা স্বামীর হুকুম ব্যতীত নিজের আত্মীয় বাড়ীতে তো যাওয়া দূরের কথা প্রতিবেশির বাড়ীতেও যাওয়া ঠিক নয়। কেননা ইসলামী শরীয়তে তা কবীরাগুনাহ্।

ছেলে মেয়েরা যখন বালেগ-বালেগা হয় তখন তাদের বিছানা পৃথক করে দেয়া দরকার, কেননা এ বয়সে ছেলে মেয়েদেরকে মা-বাবার বিছানায় রাখা জায়েজ নহে।

মানুষ যখন বার্ধক্যতায় পতিত হয়, তখন নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে অথবা স্বাভাবিকভাবে দুর্বল হতে থাকে। তাই আপন স্বামীকে বৃদ্ধাবস্থায় খেদমত করার জন্য সর্বদা শয্যাপার্শ্বে থাকা উচিত। তবেই আল্লাহর বেশি নৈকট্য লাভ করা যাবে।

বহু স্ত্রীলোক আছে যারা আপন স্বামীর খেদমত হতে দূরে থাকে যদিও জওয়ানী বয়সে (সখ্ করে) কিছু দিন খেদমত করে থাকে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে খেদমত হতে একেবারেই দূরে চলে যান। এটা মোটেই সমীচীন নহে এবং ইসলামও ইহা সাপোর্ট করে না।

খোদার নিবন্ধনে যার যেরূপ অদৃষ্টে ফলেছে তার উপরই শোকর আদায় করা একান্ত দরকার। যার স্বামী পাগল, বুদ্ধিহীন বা মুর্খ তার পক্ষে তাকেই আকাশের চাঁদ মনে করে তার পদতলে মাথা নীচু করতঃ জিন্দেগী পুরা করে নিলে পরকালে বেহেস্তের সুখ-শান্তি ভোগ করা যাবে। স্বামী ধনী হোক কিংবা গরীব হোক, বিদ্যান হোক কিংবা মুর্খ হোক, খঞ্জ হোক কি আতুর হোক, সর্বদাই সন্তুষ্টচিত্তে তার পদতলে জীবন লুটিয়ে দেয়া একান্ত দরকার।

নিজ দেবর ও ভাশুরের সাথেও সৎ ব্যবহার করতে হবে আর খুব গভীরভাবে মনে রাখা উচিত যে, দেবর-ভাশুরের স্ত্রীদ্বয়ের সাথে উত্তম ব্যবহার, মার্জি কথাবার্তা বলবেন যাতে সংসারে কোনো অশান্তি সৃষ্টি না হয়।

বহু স্ত্রীলোক বৃদ্ধ বয়সে ফরজ এবাদতের মধ্যে ইচ্ছাকৃভাবে অলসতা করে থাকে। এমনকি কোন কোন এবাদত ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না বা অনুতপ্তও হয় না। অন্য লোক প্রতিবাদ করলে সে নিজে মাজুর বলে থাকে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর নয়, ফলে এবাদত হারা হয়ে ঈমান হারা হওয়ারও আশংকা রয়েছে। তাই সকল মুসলমান স্ত্রীলোকের মৃত্যুর ভয় করে ঈমান আমল ঠিক রাখা উচিত।

Translate