Sunday, June 4, 2023

স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ

 প্রশ্ন: অনেক মহিলাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অপছন্দ করে। এতে কি তাদের ইমান নষ্ট হওয়ার বা মুনাফিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬ উত্তর: নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতিটি বিধান মানুষের কল্যাণের জন্য। তাঁর প্রতিটি বিধানেই রয়েছে সুনিপুণ হেকমত ও সুগভীর প্রজ্ঞা।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাকে ভালোবাসে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিটি বিধানের কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করা। এটি ঈমানের দাবি। ‌এর বিপরীতে আল্লাহর কোন একটি বিধানকে অপছন্দ করা বা ঘৃণা করা ঈমান ভঙ্গের অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَ ٰ⁠لِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُوا۟ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَـٰلَهُمۡ
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ: ৯] সুতরাং কেউ যদি মনে করে, ইসলাম পুরুষদেরকে একাধিক বিয়ের বিধান দিয়ে নারীদের প্রতি জুলুম করেছে, অথবা মনে করে, এই বিধানটি বর্তমান যুগে অনুপযোগী বা এটিকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ ও কাফের বলে গণ্য হবে। তবে কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান বজায় রাখে এবং এটিকে বৈধ মনে করে কিন্তু ব্যক্তিগত মানবিক দুর্বলতা ও অনিচ্ছার কারণে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করুক এটা না চায় বা তার দ্বিতীয় বিয়েকে অপছন্দ করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। এ কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে না বা মুনাফিক বলে গণ্য হবে না। উদাহরণ হিসেবে, মানুষ রোগাক্রান্ত হলে অস্ত্রপাচার, ইনজেকশন নেওয়া বা ওষুধ খাওয়াকে স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে কিন্তু সুস্থতার স্বার্থে তা মেনে নেয়। অনুরূপভাবে জিহাদ তথা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া স্বভাবগতভাবে মানুষের অপছন্দনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
كُتِبَ عَلَیۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تَكۡرَهُوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ خَیۡرࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تُحِبُّوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ شَرࣱّ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ یَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
“তোমাদের উপর কিতাল (যুদ্ধ) করাকে ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জান না।” [সূরা বাকারা: ২১৬]

অনুরূপভাবে, ঠাণ্ডার রাতে ঘুম থেকে উঠে অজু করে মসজিদে যাওয়া, সফরের কষ্ট, ক্লান্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি সত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, নিজের সম্পদ থেকে জাকাত বের করে গরিবদেরকে দান করা, রমজান মাসে সারাদিন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে রোজা রাখা ইত্যাদি মানুষের স্বভাবজাত অপছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু তারপরও কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জাহান্নামের আগুনের ভয়ে এ কাজগুলো করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব। ঠিক তদ্রুপ কোন নারী যদি স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতি অন্তরে কষ্ট অনুভব করার পরেও আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং স্বামীকে সন্তুষ্ট করার স্বার্থে তা মেনে নেয় তাহলে সে আল্লাহর কাছে সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এর বিপরীতে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে স্ত্রী যদি তার প্রতি কোন ধরনের জুলুম-নির্যাতন করে, খারাপ আচরণ ও গালাগালি করে, তার গোপনীয়তা প্রকাশ, গিবত‌ ও আমানতের খিয়ানত করে, তাকে অপমান-অপদস্থ করে বা অন্য কোন ভাবে তাকে কষ্ট দেয় তাহলে সে মারাত্মক গুনাগার হবে।‌ এই বিষয়গুলো সাধারণভাবেই কবিরা গুনাহ। কিন্তু স্বামীর সাথে করা হলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি। এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হবে, আল্লাহর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং স্বামীর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া। তা করা সম্ভব না হলে এক বুক কষ্ট নিয়ে সংসার করা আবশ্যক নয়। ইচ্ছা করলে সে খোলা তালাক নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে। আল্লাহু আলম। উল্লেখ্য যে, কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ে করে তাহলে তার সকল স্ত্রীর মাঝে (রাতযাপন এবং খরচ এর ক্ষেত্রে) সমতা রক্ষা করা ফরজ। কেউ যদি তা করতে পারবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

দান-সদকা করার ফজিলত ও কাকে দান করা যায় এবং দানের সর্বোচ্চ পরিমাণ

 প্রশ্ন: দান-সদকা করার ফজিলত কী? কাকে দান করা যায় এবং দানের সর্বোচ্চ পরিমাণ কত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

▪ দান-সদকা করার ফজিলত:

▫ক) দান-সদকা করলে সম্পদ কমে না: আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে,
مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
“সদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।” [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ]

▫ খ) দান সম্পদকে বৃদ্ধি করে: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” [সূরা বাকারা: ২৬১]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে।” [আহমদ, সনদ সহিহ]

▪ কাদেরকে দান করব?

সাধারণভাবে গরিব-অসহায় মানুষকে, জন কল্যাণকর কাজে এবং দ্বীনের প্রয়োজনে সাহায্য করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তবে নিজ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষের উদ্দেশ্যে দান করা অধিক উত্তম। এদেরকে দান করলে দু ধরণের সওয়াবের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَهِىَ عَلَى ذِى الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ

“দরিদ্রকে দান করলে কেবল সদকার সওয়াব মেলে। আর আত্মীয়কে দান করলে সদকার সওয়াব ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সওয়াব উভয়ই পাওয়া যায়’। (তিরমিযী, হা/৬৫৮ ও ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪, সনদ সহীহ) এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।

▪ কী পরিমাণ দান করা যায়?

আল্লাহ তাআলা যাকে অর্থ-সম্পদ দান করেছেন সে যত বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গরিব-অসহায় মানুষ, জনকল্যাণকর কাজ অথবা দ্বীনের সেবায় অর্থ দান করবেন আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি সওয়াব দান করবেন। কেউ সুস্থ-সবল ও স্বাভাবিক অবস্থায় চাইলে তার জীবন পরিচালনা এবং তার স্ত্রী-পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় খরচ ছাড়া তার সমূদয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেওয়ার অধিকার রাখে। এতটা দান উচিত নয় যে, সব কিছু দান করার পর সে নিঃস্ব হয়ে যায়। তবে যদি সে শারীরিকভাবে অর্থ-উপার্জনে সক্ষম হয় তাহলে ভিন্ন কথা।

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় যে, প্রশ্ন: এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করা উত্তম নাকি সম্পূর্ণ সম্পদ?
তিনি বলেন,
لا بدّ أن يُبقي له ما ينفعه ولا يتصدّق به كله، مثلما قال ﷺ لكعبٍ: أمسك عليك بعض مالك فهو خيرٌ لك، فيتصدّق بما تيسَّر، ويُبقي ما يُعينه على طاعة الله، ويُنفق على أهله.

“যা তার উপকারে আসবে তা তাকে অবশ্যই রাখবে; সব সম্পদ দান করবে না, যেমনটি তিনি কাব রা. কে বলেছিলেন,

أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ

“তুমি তোমার মালের কিছু অংশ রেখে দাও; তা তোমার জন্য উত্তম হবে।”
[সুনানে নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৩৫/ মানত ও কসম, পরিচ্ছেদ: ৩৬. মানত হিসেবে হাদিয়া দেওয়া]

অত:এব যথাটা সম্ভব দান করবে এবং এতটুকু রেখে দিবে যা দ্বারা সে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবে এবং তার পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারবে।”

তবে মৃত্যুর পূর্বক্ষণে মুমূর্ষু অবস্থায় দান (ওসিয়ত) করতে চাইলে ইসলাম একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আর তা হল, সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ। এর চেয়ে বেশি দান করা জায়েজ নাই। বরং এর চেয়ে কম হলেই ভালো। মুমূর্ষু অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার ধন-সম্পদ সব কিছু দানের ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার মধ্যে কেবল এক তৃতীয়াংশ কার্যকর হবে। বাকিটা তার ওয়ারিশদের মাঝে যথানিয়মে বণ্টিত হবে।

🔸 সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজের সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে আমি প্রচণ্ড রোগে আক্রান্ত হলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সেবা-শুশ্রূষা করতে এলে আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আমার অনেক সম্পত্তি। কিন্তু আমার ওয়ারিশ হওয়ার মত কেউ নাই একমাত্র মেয়ে ছাড়া। আমি আমার সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ ওসিয়ত করব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি। সাদ, তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়াবে এর চেয়ে তাদেরকে সম্পদশালী করে রেখে যাওয়াই উত্তম।” [বুখারী ও মুসলিম]

– এক তৃতীয়াংশের চেয়ে কম করা উত্তম। ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لَوْ غَضَّ النَّاسُ إِلَى الرُّبْعِ ، لأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – قَالَ « الثُّلُثُ ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ أَوْ كَبِيرٌ »
“মানুষ যদি (সম্পত্তি ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে) এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশে নেমে আসত তবে উত্তম হত। কেননা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি।” [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করার হুকুম এবং একসাথে অনেক লোক দুআয় হাত উঠালে তা আল্লাহর দরবারে তাড়াতাড়ি কবুল হয় এ কথার যথার্থতা কতটুকু

 প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সম্মিলিত মুনাজাত নাকি বিদআত। কিন্তু আমাদের বাসার কাছে মসজিদে জুম্মার নামাজের পরে সবসময়ই অনেক সময় নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত হয়। আমি ইমাম সাহেবকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, “অনেক মানুষ একসাথে হাত উঠালে সেই দুআ তাড়াতাড়ি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।” আমি কি এই মুনাজাতে অংশ নিব?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: সম্মিলিত দুয়া অর্থাৎ একজন ব্যক্তি দুআ বলবে আর বাকি লোকজন আমীন আমীন বলবে’ এভাবে দুআ করা বৃষ্টি প্রার্থনা, বৃষ্টি বন্ধ করা এবং দুআয়ে কুনুত বা কুনুতে নাজেলা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অন্য কোথাও প্রমাণিত নয়। তিনি তাঁর সারা জিন্দেগিতে কোন এক দিনের জন্যও সালাত শেষে সাহাবিদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুআ-মুনাজাত করেছেন বলে প্রমাণ নেই। সুতরাং তা বিদআত।
বরং তিনি সালাত শেষে অনেক জিকির, তাসবিহ ও দুআ পাঠ করেছেন। সেগুলো বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা সুপ্রমাণিত।
কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত: আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মসজিদে জামআতে সালাত শেষ করে মাসুনূন দুয়া ও জিকিরগুলো খুব কমই আমল করা হয় বরং বিভিন্ন অগ্রহযোগ্য দলিল ও যুক্তি দিয়ে সম্মিলিত দুআকে আজ পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে!! তাদের এ সব যুক্তির মধ্যে একটি হল, “একসাথে দুআতে অনেক মানুষ হাত উঠালে দুআ কবুল হয়!!”
কোন হাদিসের ভিত্তিতে তারা এ কথা বলেন? প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দলিল বর্হিভূত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য। যদি এ কথা সঠিক হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই নিজে তা আমল করতেন এবং তার উম্মতকে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন কোন হাদিস পাওয়া যায় না।
সুতরাং আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবদের কতর্ব্য, সুন্নাহ বর্হিভূত তথাকথিত ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ বর্জন করা এবং এ ব্যাপারে মুসল্লিদেরকে জ্ঞান দান করা। বিশেষ করে, সালাত পরবর্তী দুয়াগুলো নিজেরা পাঠ করা এবং মুসল্লীদেরকে পাঠ করতে বলার প্রতি উৎসাহিত করা। অবশ্য মাসনুন দুআগুলো পাঠ করার পর, যে যার মত ইচ্ছা মাফিক হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করে নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করতে পারে। এতে কোন আপত্তি নেই। প্রত্যেকেই নিজে নিজের সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরে আল্লাহর কাছে চুপিস্বরে দুআ-মুনাজাত করবে-এটাই প্রকৃত দুআর আদব। ফরজ সালাতের পর ইমাম ও মুক্তাদিগণ দু হাত উত্তোলন করবে এবং ইমাম দুআ করবে আর মুক্তাদিগণ আমিন আমিন বলবে-এ সম্পর্কে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে প্রশ্ন করা হলে তারা জবাবে বলেন,
” العبادات مبنية على التوقيف ، فلا يجوز أن يقال : هذه العبادات مشروعة من جهة أصلها أو عددها أو هيئتها ، أو مكانها إلا بدليل شرعي يدل على ذلك ، ولا نعلم سنةً في ذلك عن النبي صلى الله عليه وسلم ، لا من قوله ، ولا من فعله ، ولا من تقريره ” انتهى من “مجلة البحوث الإسلامية” (17/55) .
“ইবাদত হল, তাওকিফিয়া তথা কুরআন-সুন্নাহ-এর দলিল নির্ভর। সুতরাং শরঈ দলিল ছাড়া কোনও ইবাদত সম্পর্কে এ কথা বলা যাবে না যে, এ ইবাদতটি ভিত্তিগতভাবে বা সংখ্যা, পদ্ধতি, স্থান ইত্যাদি দিক থেকে শরিয়ত সিদ্ধ। আর এ বিষয়ে (ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত দুআ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনও সুন্নাহ আমাদের জানা নেই-না তার বক্তব্য থেকে, না তার কোনও কর্ম বা মৌন সম্মতি থেকে।” [মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়া, ১৭/৫৫] আল্লাহ আমাদের সমাজ থেকে সকল বিদআত বিদূরিত করে সুন্নাহর আলোকিত পথে ফিরে আসার তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত বিদআত এবং মুনাজাতপন্থীদের উত্থাপিত বিভিন্ন সংশয়ের জবাব

 ফরজ নামাজের পর মাঝেমধ্যে একক ভাবে হাত তুলে দুআ-মুনাজাত করা জায়েজ এবং হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন জিকির, তাসবিহ, আয়াতুল কুরসি, সূরাতুল ইখলাস, সূরাতুল ফালাক, সূরাতুন নাস ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যার কারণে বিজ্ঞ ইমামগণের অনেকেই এটিকে অপছন্দ করেছেন ও বিদআত বলেছেন।

নিম্নে এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি মুনাজাতপন্থীগণ তাদের পক্ষে যে সব সংশয় উপস্থাপন করে থাকে সেগুলো জবাব প্রদান করা হল:

❑ ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রসঙ্গে বিজ্ঞ আলেমদের কয়েকটি অভিমত:

◈ মুহাম্মদ বিন আহমাদ আল মালেকী বলেছেন,

قال القرافي: كره مالك وجماعة من العلماء لأئمة المساجد والجماعات الدعاء عقب الصلوات المكتوبة جهرًا. الدر الثمين: ١/٣٠٩
আল কারাফী বলেছেন, “ইমাম মালিক রাহ. এবং উলামাগণের একটি জামাত মসজিদের ইমাম ও জামাতের ইমামের জন্য ফরজ নামাজের পর উচ্চস্বরে দুআ করা অপছন্দ করেছেন।” [আদ্দুররুস সামীন: ১/৩০৯]

◈ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন,

اما دعاء الإمام والمأمومين جميعا عقيب الصلاة فهو بدعة لم يكن على عهد النبي صلى الله عليه وسلم بل إنما كان دعاؤه في صلب الصلاة فإن المصلى يناجي ربه فإذا دعا حال مناجاته له كان مناسبا. وأما الدعاء بعد انصرافه من مناجاته و خطابه فغير مناسب و إنما المسنون عقيب الصلاة هو الذكر الماثور عن النبي صلى الله عليه وسلم من التهليل والتحميد والتكبير. مجموع الفتاوى لابن تيمية: ٢٢/٥١٩

নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর দুআ ছিল নামাজের অভ্যন্তরে। কেননা একজন নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তার রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলে। সুতরাং রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলার সময় দুআ করা অধিক উপযুক্ত। নিভৃত কথপোকথন শেষ করার পরে দুআ করা উপযুক্ত নয়।
বরং নামাজ শেষ করার পর সুন্নত হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত জিকির-আজকার তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর ইত্যাদি পাঠ করা।” [মাজমুউল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়াহ, ২ ২/৫১৯]

◈ ইমাম ইবনুল কায়্যেম আল জাওযিয়্যাহ বলেছেন,

أما الدعاء بعد السلام من الصلاة مستقبل القبلة أو المأمومين فلم يكن ذلك من هديه صلى الله عليه وسلم. زاد المعاد,١/٢٤٩

“অতঃপর সালামের পর কিবলামুখী হয়ে দুআ করা অথবা মুক্তাদিগণের দুআ করা। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ ছিল না।” [যাদুল মাআদ: ১/২৪৯]

◈ আহমদ বিন গানিম আল মালেকী বলেছেন,

أن المطلوب بإثر الصلاة المفروضة الذكر وأما الاشتغال بالدعاء زيادة على ذلك فقال إنه بدعة لم يرد به عمل عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن السلف الصالح.الفواكه الدوانية: 1/214

“ফরজ নামাজের পর জিকির ও তাসবিহ করা কাঙ্খিত। আর দুআ করার দ্বারা ব্যস্ত থাকা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সালাফে সালেহ তথা পূর্বসূরীদের থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি।” [আলফাওকিহুদ দাওয়ানী: ১/২১৪]

◈ ইমাম আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,

أما دعاء الإمام والمأمومين جميعا عقيب الصلاة فهو بدعة ، لم يكن على عهد النبي صلى الله عليه وسلم ، بل إنما كان دعاؤه في صلب الصلاة ؛ فإن المصلي يناجي ربه ، فإذا دعا حال مناجاته له كان مناسبا . مجموع الفتاوى,٢٢/٥١٩.
“অতঃপর ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না বরং তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআ ছিল নামাজের মধ্যে। সুতরাং মুনাজাতের অবস্থায় দুআ করা তার জন্য উপযুক্ত হবে।” [মাজমুউল ফাতুয়া: ২২/৫১৯]

◈ শায়েখ সালিহ আলফাওযান বলেছেন,

أما الدعاء الجماعي بعد الصلاة فهو بدعة لأنه لم يرد عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن صحابته ولا عن القرون المفضلة أنهم كانوا يدعون دعاء جماعيا بأن يرفع الإمام يديه، ثم يرفعون أيديهم ويدعو، وهم يدعون معه، هذا من البدع. فتاوى صالح الفوزان: ٢/٦٨٠.

“নামাজের পর জামাতবদ্ধ দুআ করা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ হতে বর্ণিত হয়নি। এমনকি সোনালী যুগের কারো থেকে প্রমাণিত নাই যে, তাঁরা জামাতবদ্ধ দুআ করতেন এভাবে যে, ইমাম তার দুই হাতকে উত্তোলন করতেন, এরপর তারা (মুক্তাদিগণ) তাদের দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং দুআ করতেন ও তারা তার সাথে দুআ করতেন। এটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।” [ফাতাওয়া সালিহ আলফাওযান: ৬৮০]

◈ সাউদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড বলেছে,

ليس الدعاء بعد الفرائض بسنة إذا كان برفع الأيدي ، سواء كان من الإمام وحده أو المأموم وحده ، أو منهما جميعا ، بل ذلك بدعة ؛ لأنه لم ينقل عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن أصحابه رضي الله عنهم. ” انتهى . فتاوى اللجنة الدائمة” (7/103).
“ফরজ নামাজের পর দুআ করা সুন্নাত নয় যখন তা হবে হাত সমূহ উত্তোলনের দ্বারা- তা শুধু ইমামের পক্ষ থেকে হোক অথবা মুক্তাদির পক্ষ থেকে হোক অথবা উভয়ের পক্ষ থেকে হোক। বরং এটা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ রাযি আল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত হয়নি।” [ফাতাওয়া লাজনাতুদ দায়েমাহ: ৭/১০৩]

❑ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাতের পক্ষে যে সমস্ত দলিল পেশ করা হয় নিম্নে সেগুলো উল্লেখ পূর্বক অতিসংক্ষেপে সেগুলোর জবাব দেওয়া হল:

✪ ১) ইমাম তাবারী বলেছেন,
فإذا فَرغت من صلاتك، فانصب إلى ربك في الدعاء، وسله حاجاتك. تفسير الطبري
“অতঃপর যখন তুমি তোমার নামাজ থেকে অবসর হবে তুমি তোমার রবের দিকে দুআতে মনোযোগ দাও এবং তোমার প্রয়োজন চাও।” [তাফসীরু তাবারী, ২৪/৪৯৬]

◆ জবাব: এখানে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা কোথায় আছে? বরং এখানে ফরজ সালাতের পর মাসনুন দুআ (হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বর্ণিত দুআ) তাসবিহ পাঠ এবং তিলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে।

✪ ২) ইবনুল জাওযী বর্ণনা করেছেন,
إن النبي صلى الله عليه وسلم: كان إذا دعا رفع يديه . اعلام العالم: ٤٠٣
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুআ করতেন তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [ইলামুল আলিম: হাদিস নম্বর: ৪০৩]
◆ জবাব: এখানে কি বলা হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাজের পর হাত তুলেছেন? বরং এর ব্যাখ্যা অন্যান্য হাদিস যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে নাজেলা, বিতর নামাজ, বৃষ্টির জন্য দুআ করা, আরাফাহ ময়দানে দুআ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি দুই হাত উত্তোলন করেছেন।
সুতরাং যেখানে তিনি দুই হাত তুলেছেন সেখানে দুই হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর হাত উত্তোলন করেছেন মর্মে যেহেতু কোন সহিহ হাদিস নাই সেহেতু তা বিদআত।

✪ ৩) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اذا سألتم الله فاسالوه ببطون اكفكم . رواه الحاكم في المستدرك: ١٩٦٨.
“তোমরা যখন আল্লাহর নিকটে চাইবে তখন তোমরা তাঁর নিকটে হাতের তালুর পেটের দ্বারা চাইবে।” [আলমুসতাদরাকু: ১৯৬৮]
◆ জবাব: এটা দুর্বল হাদিস। যেমন: ইবনু হাজার বলেছেন,
قال أبو داؤود: روي من طرق كلها واهية. التلخيص الحبير: ١/٤٥١.
“আবু দাউদ বলেছেন, এটি অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সবগুলোই ভিত্তিহীন।” [আততালখীসুল হাবীরু: ১/৪৫১]
“এর সনদে সালিহ বিন হাসান আছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা কারী থেকে জাল হাদিস বর্ণনা করেন।” [আততালখীসুল হাবীরু: ১/৪৫১] তারপরও এর দ্বারা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা কীভাবে সাব্যস্ত হয়? বরং এখানে সাধারণ ভাবে দুআ করার আদব সাব্যস্ত হয়েছে।

✪ ৪) ইমাম ইবনু কাসীর বর্ণনা করেছেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم: رفع يده بعد ما سلم . تفسير ابن كثير: ٢/٣٤٥.
রসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পর তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [তাফসীরু ইবনে কাসীর: ২/৩৪৫]
◆ জবাব: এই হাদিসটির সনদে আলী বিন যায়েদ বিন জাদ্আন আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। [তুহফাতুল আহওযী: ২/১৭০]
ইজালী বলেন,, “তিনি শক্তিশালী নন। তিনি শিয়া মতবাদের দিকে ধাবিত ছিলেন।” [আসসিকাতু লিল আজালী: ২/১৫৪]

✪ ৫) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم: لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من من صلاته . رواه الطبراني: ١٤٠٩٧.
“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ থেকে অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন না।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ১৪৯০৭] এই হাদিসকে হাফিয হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য।

◆ জবাব: এর সনদে আল ফুযাইল বিন সুলায়মান আছেন। তার ব্যাপারে ইবনু শাহিন আল বাগদাদী বলেছেন, ইমাম আহমাদ বলেছেন,
الفضيل بن سليمان ليس بشيء.
“আল ফাজল বিন সুলায়মান কিছুই নন। (অর্থাৎ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।)” [তারীখ আসমাউ ওয়াল কাযযাবীন: ১/১৫৬]
ইমাম নাসায়ী বলেছেন, “তিনি শক্তিশালী নয়।” [আলজামে ফিলজারহে ওয়াত তাদীলে: ২/৩৬৫] সুতরাং হাদিসটি সহিহ নয়। অধিকাংশ আলেম এটিকে দুর্বল বলেছেন। [সিলসিলাতু আহাদিসিস যাঈফাহ: ৬/৫৬।]

✪ ৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يَجْتَمِعُ مَلأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلا أَجَابَهُمُ اللَّهُ. الطبراني: (3536). ورواه الحاكم في المستدراك: ٥٤٧٨

“কিছু মানুষ একত্রিত হবে অতঃপর তাদের কেউ দুআ করবে এবং তাদের সবাই আমীন বলবে তবে আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ৩৫৩৬। আলমুসতাদরাকু লিলহাকিম হাদিস নম্বর: ৫৪৭৮] হাফিজ হায়সামি বলেছেন, ইবনু লাহিয়াহ ব্যতীত এর বর্ণনাকারীগণ সহিহ বুখারীর বর্ণনা কারী। আর ইবনু লাহিয়াহ হাসানুল হাদিস।
◆ জবাব: এই হাদিসটিকে কেউ কেউ সহিহ বলেছেন। কিন্তু এই হাদিসে ইবনু লাহিয়াহ আছেন। তিনি দুর্বল যেমন: ইমাম তিরমিযী বলেছেন,
وابن لهيعة ضعيف عند أهل الحديث، ضعفه يحيى بن سعيد القطان وغيره . سنن الترمذي: ١/٦١.
“হাদিসের বিদ্বানগণের নিকটে ইবনু লাহিয়াহ দুর্বল। তাকে দুর্বল বলেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান।” [সুনানু তিরমিযী: ১/৬১]
সুতরাং এটা দুর্বল হাদিস। শাইখ আলবানি বলেছেন, এই সনদে ইবনু হুবায়রাহ নামক যে বর্ণনাকারী আছে তার নাম আব্দুল্লাহ আবু হুবায়রাহ। যদিও তিনি নির্ভরযোগ্য কিন্তু তিনি হাবিব বিন মাসলামাহকে পাননি। কেননা তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন ৪১ হিজরিতে আর হাবিব বিন মাসলামাহ তার এক বছর পর মৃত্যু বরণ করেছেন। সুতরাং এই সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। সম্ভবত এ কারণে ইমাম হাকিম এবং ইমাম যাহাবী এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। [সিলসিলাত আহাদিসেস জঈফাতে ওয়াল মওজুআতে: ১২/৯৪০।

✪ ৭) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ . والحديث حسنه الترمذي .سنن الترمذي: (3499).
“বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল, কোন সময়ের দুআ কবুলের অধিক নিকটবর্তী? তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যবর্তী সময়ে এবং ফরজ নামাজ সমূহের পর।” এই হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। [সুনানু তিরমিযী: ৩৪৯৯]

◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণের সম্মিলিত দুআ করার কথা নেই বরং এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর দুআ কবুলের সময়ের দিকে ইঙ্গিত আছে। যেমন: উবায়দুল্লাহ মুবারাকপুরী বলেছেন,
ودبر الصلوات المكتوبات من أوقات الإجابة. مرعاة المفاتيح: ٣/٣٢٦
“এবং ফরজ নামাজের পর (অথবা নামাজ ফরজ সালাতের শেষাংশ তথা সালাম ফেরানোর আগের সময়টা) দুআ কবুলের সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম।” [মিরআতুল মাফাতীহে: ৩/৩২৬]

✪ ৮) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,

«لَا يَؤُمُّ رَجُلٌ قَوْمًا فَيَخُصُّ نَفْسَهُ بِالدُّعَاءِ دُونَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ» رواه الترمذي (357). وقال حديث ثوبان حديث حسن .

“সেই ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করবে না যে দুআর ব্যাপারে নিজেকে খাস করে এবং অন্যদেরকে বাদ দেয়। আর যদি এটা করে তাহলে সে তাদের সাথে খেয়ানত করবে।” [সুনানুত তিরমিযী: ৩৫৭, তিনি বলেছেন, সাওবানের হাদিসটি হাসান]
◆ জবাব: এখানে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কোন কথা নাই। বরং বলা হয়েছে, ইমাম নামাজের মধ্যে যে দুআ করবেন তাতে মুক্তাদিদেরকেও শামিল করবে। যেমন: মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল আমীর আসসান্আনী বলেছেন,
إذا كان في الصلاة لا في الدعاء خارجها. التنوير شرح الجامع الصغير
“এ দুআ যখন নামাজের মধ্যে হবে; নামাজের বাইরের দুআয় নয়।” [আততানবীরু শরহুল জামে আসসগীরু: ৫/১৮৭]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন,
فالمراد به الدعاء الذي يؤمِّنُ عليه المأموم: كدعاء القنوت . مجموع الفتاوى: ٢٣ /١١٨
“অতঃপর এ দ্বারা উদ্দেশ্য সেই দুআ যাতে মুক্তাদিগণ আমীন বলবে। যেমন: কুনুতের দুআ।” [মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৩/১১৮]

✪ ৯) আমর বিন আওফ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন,
إن دوسا عصت فادع الله عليها فاستقبل القبلة ورفع يديه فقال اللهم اهد دوسا . صحيح البخاري: 2937.
“নিশ্চয়ই দাউস গোত্র অবাধ্য হয়েছে। সুতরাং আপনি তাদের উপর বদ দুআ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখি হয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাউস গোত্রকে হেদায়েত কর।” [সহীহুল বুখারী: ২৯৩৭]
◆ জবাব: এই হাদিসে দুআ করা ফরজ নামাজের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এই দুআ আম (ব্যাপক) ভাবে দুআ করার অন্তর্ভুক্ত। ফরজ নামাজের পর দুআ করা খাস বিষয়। তাছাড়া এখানে একাকী দুআর কথা এসেছে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদেরকে ডেকে সম্মিলিতভাবে দাউসের বিরুদ্ধে বদদুআ করেননি।

✪ ১০) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,

عن سلمان رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إن ربكم حيي كريم يستحيي من عبده إذا رفع يديه إليه أن يردهما صفرًا» رواه أبو داود والترمذي: (٣٥٥٦) وحسنه، وجود إسناده الحافظ.
“নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা চিরঞ্জীব এবং অতি আত্মসম্মানের অধিকারী। বান্দা তাঁর দিকে দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করলে তিনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।” [সহিহ ইবনে মাজাহ: ৩১৩১]
◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কোন ইংগিতও নাই।

✪ ১১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما من عبد بسط كفيه في دبر كل صلاة…. إلا كان حقا على الله عز وجل أن لا يرد يديه خائبتين . اليوم والليلة للنبوي: ١ /٣٨ .
“কোন বান্দা প্রত্যেক নামাজের পর দুই হাত প্রসারিত করলে আল্লাহ তাআলার উপর কর্তব্য, তিনি তাকে শুণ্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে নিরাশ করবেন না।” [১/৩৮]
◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। যেহেতু এর সনদে আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আল কুরাশী আছেন। তিনি দুর্বল এবং মাতরুক (পরিত্যাজ্য)। [তুহফাতুল আহ্ওযী: ৩/১৭১, নুযহাতুল আলবাবে: ২/৮৫৯]

✪ ১২) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,
عَن سلمَان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: ما رفع قوم أكفهم إلى اللهِ عزَّ وجلَّ يسألونه شيئا إلا كان حقا على الله أن يضع في أيديهم شيئا الذي سألوا . رواه الطبراني: ٦١٤٢.وقال الهيثمي في المجمع: رِجَاله رجال الصَّحِيح. مجمع الزوائد: ١٧٣٤١.
সালমান রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন কওম তাদের হাত তুলে আল্লাহর নিকটে দুআ করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহর উপর তাদের হক যে, তিনি তাদের হাতে কিছু রাখবেন যা তারা চেয়েছে।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ৬১৪২]
এই হাদিসটির ব্যাপারে হাফিজ হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগণ বুখারীর বর্ণনাকারী। [মাজমুউয যাওয়ায়েদ: ১০/১৬৯]
◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা কোথায় আছে? বরং বলা হয়েছে, কোন কওম দুআ করলে আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন। তাছাড়া এই হাদিসটির সনদে সাঈদ বিন ইয়াস আল জুরায়রী আছেন। তার ব্যাপারে আল্ আজালী বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। তবে শেষ জীবনে সংমিশন করে দিয়েছেন। [আলজামে ফিলজারহে ওয়াতাদীলে: ১/২৯০]
এ ছাড়া এর সনদে শাদ্দাদ বিন সাঈদ আররাসেবী আছেন। কোন কোন ইমাম তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তবে ইমাম বুখারী তাকে দুর্বল বলেছেন। [আততারীখুল কাবীরু: ৪/২২৭]
মোটকথা, এ হাদিস দ্বারা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রমাণিত হয় না।

✪ ১৩) ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন,

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا أمن القارئ فأمنوا، فإن الملائكة تؤمن، فمن وافق تأه تأمين الملائكة، غفر له ما تقدم من ذنبه». أخرجه البخاري (٦٤٠٢).

আবু হুরায়রাহ রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কুরান পাঠকারী (ইমাম) আমিন বলে, তখন তোমরাও আমিন বলো। যার আমিন বলা ফেরেশতাদের আমিন বলার সাথে হয়, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।” [সহীহুল বুখারী হাদিস নম্বর: ৬৪০২]

◆ জবাব: এটি সালাতের ভেতরের বিষয়। যেমন: ইমাম যখন গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম পড়ে তখন মুক্তাগিণ আমিন বললে এই মর্যাদা লাভ হয় যা অন্য হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে। সুতরাং এর দ্বারা ফরজ সালাতের পরে ইমাম-মুক্তাদির সমন্বয়ে দু হাত তুলে মুনাজাত সাব্যস্ত হয় না।

✪ ১৪) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন:

عن عمر بن الْخطاب رَضِي الله عَنهُ قَالَ: «كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم اذا رفع يَدَيْهِ فِي الدُّعَاء لم يحطهما حَتَّى يمسح بهما وَجهه». أخرجه الترمذي: ٣٣٨٦.

উমার বিন আলখাত্তাব রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুআতে তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন তখন তিনি উভয় হাতকে রাখতেন না যতক্ষণ না তিনি উভয় হাত দ্বারা তাঁর মুখমণ্ডলকে মাসেহ করতেন।” [সুনানু তিরমিযী হাদিস নম্বর: ৩৩৮৬]

◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। কেননা এর সনদে
حماد بن عيسى و هو لين الحديث. مسند البزار: ١/٢٤٣.
“হাম্মাদ বিন ঈসা আছেন। তিনি হাদিসে দুর্বল।” [মুসনাদুল বাযযার: ১/২৪৩]
ইবনুল জাওযী বলেছেন, “এই হাদিসটি সহিহ নয়।” [আল্ইলালুল মুতানাহিয়্যা। ফিল্আহাদিসেল ওয়াহিয়্যা।: ২/৩৫৬]
ইমাম নববী বলেছেন, শায়েখ আব্দুল হক তার কিতাব আল্ আহকামে বলেছেন, ইমাম তিরমিযী বলেন, “এই হাদিসটি সহিহ।” তিনি ভুল বলেছেন যে, ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি সহিহ হাদিস বরং তিনি বলেছেন, এটি গরিব হাদিস। [আল্ মাজমু শরহুল মুহাযযাব: ৩/৫০১]
ইমাম যাহাবী বলেছেন,
وما هو بالثابت لأنهم ضعفوا حمادا. تذكرة الحفاظ: ٣/٦٨.
“এটি প্রমাণিত হাদিস নয়। কেননা তারা (মুহাদ্দিসগণ) সবাই হাম্মাদকে দুর্বল বলেছেন।” [তাযকিরাতুল হুফফাজ: ৩/৬৮]

✪ ১৫) ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন,

عَن عَائِشَة رضي الله عنها قَالَت: «رَأَيْت النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رَافعا يَدَيْهِ حَتَّى بدأ ضبعيه يَدْعُو». رواه البخاري في جزء
رفع اليدين ص: ٥٩.
আয়েশা রাযি আল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দু হাতকে উঁচু করা অবস্থায় এমনভাবে দুআ করতে দেখেছি যে, হাত উঠানোর কারণে তাঁর বাহু প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে।” [জুয্উ রফ্উল ইয়াদাইন: ৫৯ পৃষ্ঠা]

◆ জবাব: এই হাদিস দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুই হাতকে উঁচু করে দুআ করা সাব্যস্ত হয়। কিন্তু ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা সাব্যস্ত হয় না।

✪ ১৬) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,

عن محمد بن أبي يحيى قال: رأيت عبد الله بن الزبير رضي الله عنه ورأى رجلًا رافعًا يديه يدعو قبل أن يفرغ من صلاته، فلما فرغ منها قال: «إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته». رواه الطبراني: (١٤٩٠٧) وقتل الألباني: قال الهيثمي في مجمع الزوائد: (١٧٣٤٥) رجاله ثقات

মুহাম্মাদ বিন আবু ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাযি আল্লাহু আনহুকে আর তিনি এক ব্যক্তিকে দুই হাত তুলে দুআ করতে দেখছেন তার নামাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পূর্বেই। অতঃপর তিনি যখন নামাজ শেষ করলেন তখন তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নামাজ থেকে ফারিগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন না।” [তাবারানী হাদিস: ১৪৯০৭]
আলবানি বলেছেন, হাফিজ হায়সামী মাজমাউয যাওয়েদ বলেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য। [সিলসিলাতুস আহাদিসেস জ্ঈফাতে: ১৪/৩১০]

◆ জবাব: এই হাদিসের সনদে ফুজাইল বিন সুলায়মান আছেন। তিনি দুর্বল। ইবনু শাহীন আল বাগদাদী বলেছেন,
الفضيل بن سليمان يعني النمري ليس بشيء . تاريخ أسماء الضعفاء والكذابين: ١٥٦ ص.
ফুযাইল বিন সুলায়মান (অর্থাৎ আননামরী)। কিছুই নয় (অর্থাৎ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।) [তারিখু আসমায়ে যুআফায়ে ওয়াল কাযযাবীন: ১৫৬ পৃষ্ঠা]

ইয়াহ্ইয়া বিন মুঈন বলেছেন,
الفضيل ليس بثقة. تاريخ ابن معين: ٤ /٢٢٦.
“ফুযাইল নির্ভরযোগ্য নন।” [তারিখে ইবনে মুইন: ৪/২২৬]

✪ ১৭) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,

عن الفضل بن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الصلاة مثنى مثنى، تشهد في كل ركعتين، وتخشع وتضرع وتمسكن، ثم تقنع يديك، يقول ترفعهما إلى ربك مستقبلًا ببطونهما وجهك، وتقول يا رب يا رب، ومن لم يفعل ذلك فهو كذا وكذا»، وفي رواية: «فهو خداج». رواه الترمذي وصححه. سنن الترمذي: ٣٨٥.

ফজলত বিন আব্বাস রাযি আল্লাহ আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ দুই রাক্আত দুই রাক্আত করে আদায় করতে হবে। তুমি প্রত্যেক দুই রাক্আতে তাশাহহুদ পাঠ করবে। নামাজে বিনয়, নম্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে। এরপর তুমি দুই হাতকে তোমার পালন কর্তার দিকে উত্তোলন করবে কিবলামুখি হয়ে উভয় হাতের পেটকে (তালু) তোমার মুখের দিকে করে বলবে: হে আমার রব, হে আমার পরোওয়ারদেগার! আর যে ব্যক্তি এটা করবে না তার দুআ এমন এমন। অপর বর্ণনায় এসেছে: অসম্পূর্ণ (অর্থাৎ যে এভাবে দুআ করবে না তার দুআ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে) ইমাম তিরমিযী উহাকে বর্ণনা করেছেন ও সহিহ বলেছেন। [সুনানু তিরমিযী, হাদিস নম্বর: ৩৮৫। আরও বর্ণনা করেছেন আহমদ ও তাবারানী এবং নাসায়ী সহ অন্যান্য ইমামগণ]

◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। এতে আব্দুল্লাহ বিন নাফে বিন আল্ উম্ইয়া আছেন। তার ব্যাপারে হাফিয ইবনে হাজার বলেছেন, ইবনুল মাদিনী বলেছেন, “সে অপরিচিত।”
ইমাম বুখারী বলেছেন, “তার হাদিস সহিহ নয়।” [তাহযীবুত তাহযীবুত: ৬/৫০]
ইমাম তিরমিযী বলেন,,
سمعت محمد بن اسماعيل البخاري يقول: روى شعبة هذا الحديث عن عبد ربه بن سعيد فأخطا في مواضع. سنن الترمذي: ٣٨٥.
আমি মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল অর্থাৎ ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, “এই হাদিসকে শুবাহ বর্ণনা করেছেন আব্দে রাব্বিহি বিন সাঈদ হতে। কিন্তু তিনি কয়েকটি স্থানে ভুল করেছেন।” [সুনানু তিরমিযী: ৩৮৫]

✪ ১৮) ইবনুল আরাবী বর্ণনা করেছেন,

عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: ما من عبد يبسط كفّيه في دبر كل صلاة ثم يقول: اللهم إلهي وإله إبراهيم وإسحاق ويعقوب، وإله جبريل وميكائيل وإسرافيل، أسألك أن تستجيب دعوتي فإني مضطر. معجم ابن العربي: ١٢٠٤

আনাস রাযি আল্লাহ আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলছেন, কোন বান্দা প্রত্যক নামাজের পর তার দুই হাতকে প্রসারিত করবে এরপর সে বলবে: “হে আল্লাহ, আপনি আমার ইলাহ। আপনি ইব্রাহিম, ইসহাক এবং জিবরাইল, মিকাইল ও ইস্রাফিলের মাবুদ। আমি আপনার নিকটে প্রার্থনা করছি, আপনি আমার দুআ কবুল করুন। কারণ আমি নিতান্ত অসহায়।” [মুজামু ইবনে আরাবী: ১২০৪]

◆ জবাব: এই হাদিসটিও দুর্বল। যেহেতু এর সনদে আছে, আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আলবালসী, তিনি খুসাইফ হতে।
ইমাম আহমাদ তাকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তার হাদিসকে পরিত্যাগ করেছেন।
ইমাম নাসায়ী বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। [আযযিয়াদাতু আলাল মওজু আতে: ২/৭৩০]

✪ ১৯) ইবনু আবী শায়বাহ বর্ণনা করেছেন,

عن جابر بن يزيد بن الأسود العامري، عن أبيه، قال: «صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه ودعا»
أخرجه ابن أبي شيبة في مصنفه (٣٠٩٣) وسنده جيد

জাবির বিন ইয়াযিদ বিন আল্আস্ওয়াদ হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন তার পিতা হতে। তিনি বলেন,, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম-এর পেছনে ফজর নামাজ আদায় করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরালেন তখন তিনি তাঁর দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করলেন।” [মুসান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নম্বর: ৩০৯৩]

◆ জবাব: এই সনদ সহিহ কিন্তু হাদিসের শেষের অংশ “তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করে দুআ করলেন” এটি মুসান্নাফে নাই এবং এর কোন সনদও নাই। এ কারণে শাইখ আলবানি বলেছেন,
وفيه كذب و خطأ مكشوفان. سلسلة الأحاديث الضعيفة و الموضوع: ١٢/٤٥٣.
“এতে উন্মুক্ত মিথ্যা এবং ভুল আছে।” [সিলসিলাতুল আহাদিসাহ: ১২/৪৫৩]
আল্লামা মুবারাকপুরী বলেছেন,

الحديث رواه ابن أبي شيبة في مصنفه، كذا ذكر بعض الأعلام هذا الحديث بغير سند، وعزاه إلى المصنف. ولم أقف على سنده. فالله تعالى أعلم كيف صحيح أو ضعيف؟. تحفة الاحوذي: ٢/١٧١

ইবনু আবী শায়বাহ তার মুসান্নাফে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ কিছু বিদ্বানগণ এই হাদিসকে সনদ বিহীন বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে মুসান্নাফের দিকে সম্পর্কিত করেছেন। আমি এর সনদ অবগত হতে পারিনি। সুতরাং আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত যে, কিভাবে উহা সহিহ অথবা দুর্বল? [তুহফাতুল আহ্ওয়াজি: ২/১৭১]
পরিশেষে উল্লেখিত হাদিস দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণের সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রমাণিত হয় না। বরং তা সাধারণ ভাবে দুআ করা সাব্যস্ত হয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিগণ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করেন নাই। সুতরাং উহা না করাই সুন্নাত।

▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
প্রস্তুত করণে: শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন মুসলিম শেখ আল মাদানী।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বাতাসকে গালি দেওয়া নিষেধ

 প্রশ্ন: হাদিসে বাতাসকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় বেশি বৃষ্টি বা তুষার ঝড় হলে আমরা বলে থাকি যে, আজ আবহাওয়া খারাপ, বাইরে/কাজে/ স্কুলে যাব না ..ইত্যাদি। যদি এটা এমনি কথার কথা হয়; কোন অভিযোগ স্বরূপ না হয় তাহলেও কি তা হাদিস অনুযায়ী গালি বা আকিদাগত ত্রুটি হিসেবে গণ্য হবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا تسبوا الريح، فإذا رايتم ما تكرهون فقولوا
‘‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তোমরা যদি বাতাসের মধ্যে তোমাদের অপছন্দনীয় কিছু প্রত্যক্ষ করো তখন তোমরা বলো,
أللهم إنا نسألك من خير هذه الريح وخير ما فيها وخير ما أمرت به، ونعوذبك من شر هذه الريح وشر ما فيها وشر ما أمرت به
‘‘হে আল্লাহ, এ বাতাসের যা কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে অদিষ্ট হয়েছে ততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি। আর এ বাতাসের যা অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুকায়িত আছে, এবং যতটুকু অনিষ্ট সাধনের ব্যাপারে সে আদিষ্ট হয়েছে তা [অমঙ্গল ও অনিষ্ঠতা] থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই। [তিরমিজি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]
এ হাদিস থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়:
১. বাতাসকে গালি দেওয়া নিষেধ।
২. মানুষ যখন কোন অপছন্দনীয় জিনিস দেখবে তখন কল্যাণকর কথার মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দান করবে।
৩. বাতাস আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট, একথার দিক নির্দেশনা।
৪. বাতাস কখনো কল্যাণ সাধনের জন্য আবার কখনো অকল্যাণ করার জন্য আদিষ্ট হয়।
[উৎস: মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব রচিত কিতাবুত তাওহীদ থেকে সংগৃহিত (সামান্য পরিবর্তিত) ইসলামহাউজ.কম]

◼ ঝড়বৃষ্টি হলে ‘আজকে আবহাওয়া খারাপ, বাইরে/কাজে/ স্কুলে যাব না..ইত্যাদি বলার দ্বারা আবহাওয়ার অবস্থা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য থাকে; গালি দেয়া উদ্দেশ্য থাকে না। সুতরাং এতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ঝড়-বৃষ্টিতে যে দুআ পাঠ করতে হয়

 ❒ ঝড় ও বায়ু প্রবাহের সময় দুআ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا تَسُبُّوا الرِّيحَ فَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهَا مَا تَكْرَهُونَ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ الرِّيحِ، وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ، وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
“তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। যখন এমন বাতাস দেখবে যা তোমরা অপছন্দ করো তখন বলবে:
উচ্চারণ:
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফীহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহী; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফীহা ওয়া মিন শাররি মা উরসিলাত বিহী।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট এই বায়ুর কল্যাণ, এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহীত আছে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এই বায়ুর অনিষ্ট, এর মধ্যে যে অনিষ্ট নিহীত রয়েছে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।”
[সুনান তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ, হা/২১৭৮, সহীহ-আলবানী রহ.]

❒ বৃষ্টির সময় দুআ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন,
اللّهُمَّ صَيِّـباً نافِـعاً
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিয়ান।
অর্থ: “আল্লাহ, (এই মেঘকে) তুমি কল্যাণময় বৃষ্টি বৃষ্টিতে পরিণত করো।”
[সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: বৃষ্টির সময় যা পাঠ করতে হয়] হে আল্লাহ, তুমি ধেয়ে আসা ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, টর্নেডো ইত্যাদির ভয়াবহ কবল থেকে আমাদেরকে হেফাজত করো। রক্ষা করো তোমার আজাব ও গজব থেকে। আমরা তোমার নিকট আমাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকটই প্রত্যাবর্তন করছি। আমিন।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

পরীক্ষা কেন্দ্রিক বিদআত এবং পরীক্ষার পূর্বে দু রাকআত সালাত আদায়ের বিধান

  প্রশ্ন-১: অনেকে পরীক্ষার পরে খাতায় বিভিন্ন দুআ পড়ে ফুঁ দেয়। তারা মনে করে যে, এটা করলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করা যাবে, পরীক্ষার খাতায় ভুল থাকলে তা ঠিক হয়ে যাবে, লেখায় কাটাকাটি থাকলে তা সংশোধিত হয়ে যাবে ইত্যাদি। হ্যাঁ, আমিও বিশ্বাস করি, সব কিছুতে দুআ-দরুদের প্রভাব আছে। কিন্তু এটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। এখন আমি যদি বিশ্বাস করি যে, এতে কোনও উপকার হবে না তাহলে কি আমি কা/ফি/র হয়ে যাবো? আর এক্ষেত্রে কেমন বিশ্বাস রাখা উচিৎ?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: পরীক্ষার খাতায় একজন পরীক্ষার্থী যেভাবে যা লিখবে তাই থাকবে। কোন দুআ-দরুদ পাঠের মাধ্যমে তা কখনো পরিবর্তিত হবে না। কুরআন ও হাদিসে এমন কোন দুআ নেই যা পড়ে পরীক্ষার খাতায় ফুঁ দিলে ভুলটা ঠিক হয়ে যাবে বা পরীক্ষার খাতায় কাটাকাটি থাকলে তা সংশোধন হয়ে যাবে কিংবা হাতের লেখা এলোমেলো বা খারাপ হলে তা সুন্দর হয়ে যাবে। এটা নিতান্তই ভিত্তিহীন চিন্তা ও উদ্ভট বিশ্বাস। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষেরাই এই ধরনের কথা ভাবতে পারে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, কৃতিত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি যাচায় ও পরিমাপ করা। সুতরাং শিক্ষার্থীর কর্তব্য, সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা এবং জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ জন্য তাকে পর্যাপ্ত কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর রহমতে সে পরীক্ষায় তাঁর প্রতিভা বিকাশ ও মেধার সাক্ষর রাখতে পারবে এবং অর্জিত জ্ঞানগত যোগ্যতার ও দক্ষতার পরিস্ফুটন ঘটিয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
মোটকথা, যে যেমন পড়াশোনা করবে ও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে পরীক্ষার খাতায় তেমন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগিতা, অনর্থক সময় অপচয় বা অলসতা করে‌ যারা বছর পার করে তারাই পরীক্ষা পাশের এমন উদ্ভট দোয়া ও তদবির খুঁজে বেড়ায়। কোথাও না পেলে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই আবিষ্কার করে ফেলে। আসলে এসব আবিষ্কার দ্বারা কোন উন্নতি হয় না। বরং ভালো পরীক্ষা না দেওয়ার ফলে একদিকে পরীক্ষায় দুর্বল ফলাফল লাভ করে অথবা অকৃতকার্য হয় অন্যদিকে মনগড়া পন্থায় পরীক্ষার খাতায় দুআ-দরুদ পড়ে ফুঁ দেওয়ার‌ মাধ্যমে বিদআত করে। এটি কুরআন ও হাদিসের দুআর অপব্যবহারের শামিল। এতে সে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

একজন পরীক্ষার্থীর উচিত, পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই সঠিক পদ্ধতিতে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দুআ করা যেন, আল্লাহ তাকে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখেন, তার মেধা ও স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করেন এবং পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে লেখার শক্তি দেন। পরীক্ষা শেষেও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে যে, আল্লাহ যেন পরীক্ষকের অন্তর নরম করে দেন যেন, তিনি তার উত্তরপত্র দেখে খুশি হন এবং তাকে আশানুরূপ নাম্বার দেন।

কিন্তু পরীক্ষার খাতায় ভুল লিখে ভুল ঠিক করার জন্য পরীক্ষার খাতায় দুআ-দরুদ পাঠ করে ফুঁ দেওয়া নিতান্ত মূর্খতা সুলভ কাজ এবং কুরআন-হাদিসের দুআর অপব্যবহারের শামিল। এটিকে দুআর মধ্যে ‘বাড়াবাড়ি’ও বলা যায়।

❑ প্রশ্ন-২: অনেককে দেখা যায়, পরীক্ষার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে যেতে। তাই অনেকে প্রশ্ন করে পরীক্ষার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে যাওয়া যাবে কি? এটা কি শরিয়ত সম্মত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামে বিশেষভাবে পরীক্ষার আগে দু রাকাত নামাজ পড়ার কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে কুরআনে ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার কথা এসেছে। যেমন: আল্লাহ বলেন,
اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ
“তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কারো।” [সূরা বাকারা: ৪৫] সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা উদ্দেশ্যে পরীক্ষার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করে এবং সেজদা রত অবস্থায় বা সালাম ফেরানোর পূর্বে আল্লাহর কাছে ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়ার তৌফিক কামনা করে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া করে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।
আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মনে মনে কুরআন তিলাওয়াত করলে কি পূর্ণ সাওয়াব পাওয়া যাবে

 প্রশ্ন: মনে মনে কুরআন তিলাওয়াত করলে কি পূর্ণ সাওয়াব পাওয়া যাবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পাঠ করবে তার জন্য একটি সওয়াব রয়েছে। আর একটি সওয়াব দশটি সওয়াবের অনুরূপ। আমি বলি না যে, “আলিফ-লাম-মীম” একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম আরেকটি হরফ। (অর্থাৎ তিনটি হরফে রয়েছে তিনটি সওয়াব যা ত্রিশটি সওয়াবের সমান)।” [সুনান তিরমিজি, হা/২৯১০, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়বে তার সাওয়াব কী হবে? অধ্যায়: ৪৮/ কুরআনের ফজিলত-সনদ সহিহ]
সুতরাং কেউ যদি কুরআন তিলাওয়াতের উক্ত সওয়াব লাভ করতে চায় তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। কারণ জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়ানো ছাড়া قراءة বা পাঠ হয় না।

মাওয়াহিবুল জালীল-এর গ্রন্থকার আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আত তরাবলুসি আল মালেকি [মৃত্যু: ৯৫৪ হিজরি] বলেন,
ولا يجوز إسرار من غير حركة لسان، لأنه إذا لم يحرك لسانه لم يقرأ وإنما فكر
“জিহ্বা নড়ানো ছাড়া নীরবে কুরআন পাঠ করা জায়েজ নয়। কারণ যদি কেউ জিহ্বা না নড়ায় তাহলে সে কুরআন পাঠ করল না বরং চিন্তা করল।” [মাওয়াহিবুল জালীল ফী মুখতাসারিল খালীল]। হ্যাঁ, জিহ্বা নড়ানো ছাড়া কুরআন পাঠ করলে এতে কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব অর্জিত না হলেও কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনার কারণে ইনশাআল্লাহ সওয়াবের অধিকারী হবে বলে আশা করা যায়। কারণ এটিও একটি ইবাদত। যেহেতু মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
“তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” [সূরা মুহাম্মদ: ২৪]
🔹মাসয়ালা: উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি সালাতে জিহ্বা ও ঠোঁট না নাড়িয়ে কুরআন পড়ে তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ সে মূলত: কুরআন পাঠ করেনি। আর সালাতে কমপক্ষে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত ছাড়া সালাত শুদ্ধ হবে না। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

জিলকদ মাসের বৈশিষ্ট্য সমূহ এবং এ মাসের সুন্নতি আমল

 হিজরি ক্যালেন্ডারের ১১ তম মাস হল, জিলকদ মাস। এর পরের মাসই জিলহজ মাস-যাতে ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে মুসলিম বিশ্বের সর্ব বৃহৎ গণ জমায়েত এবং ইসলামের ৫ম স্তম্ভ হজ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু হজের প্রস্তুতি শুরু হয় আরও বহু আগে থেকে।

যাহোক, এ মাসটি ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদায় সমুজ্জ্বল। নিম্নে এ বিষয়ে অতি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
وبالله التوفيق وهو المستعان

❑ জিলকদ মাসের তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য:
◈ ১. এ মাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, এটি হজের তিনটি মাসের মধ্যে অন্যতম। আশহুরুল হজ বা হজের মাস হল, তিনটি। যথা:
ক. শাওয়াল,
খ. জিলকদ
গ. ও জিলহজ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ
“হজ অনুষ্ঠিত হয়, সুপরিচিত কয়েকটি মাসে।” [সূরা বাকারা: ১৯৭]

ইবনে উমর রা. বলেন,
” أَشْهُرُ الحَجِّ: شَوَّالٌ، وَذُو القَعْدَةِ، وَعَشْرٌ مِنْ ذِي الحَجَّةِ”
“হজের মাস হল, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের দশ দিন।”

ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
” مِنَ السُّنَّةِ: أَنْ لاَ يُحْرِمَ بِالحَجِّ إِلَّا فِي أَشْهُرِ الحَجِّ”
” সুন্নত হল, হজের মাস ছাড়া অন্য মাসে হজের ইহরাম না বাধা।” [সহিহ বুখারি]

◈ ২. এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এটি চারটি হারাম (সম্মানিত ও নিষিদ্ধ মাস) মাসের মধ্যে একটি।
হারাম চারটি মাস হল:
ক. জিলকদ
খ. জিলহজ
গ. মুহাররম
ঘ. রজব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ
“নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি হল, হারাম (সম্মানিত ও নিষিদ্ধ)। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম (পাপাচার) করো না।” [সূরা তওবা: ৩৬]
প্রখ্যাত সাহাবি আবু বাকরা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
إن الزَّمَان قَدْ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو القَعْدَةِ وَذُو الحِجَّةِ وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ، الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ” (رواه البخاري ومسلم).
“আল্লাহ তাআলা আসমান সমূহ এবং জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার তার নিজস্ব আকৃতিতে ফিরে এসেছে। বারো মাসে এক বছর। তম্মধ্যে চারটি মাস হল, হারাম (অতি সম্মানিত ও নিষিদ্ধ)। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হল: জিলকদ, জিলহজ এবং মুহররম এবং আরেকটি হল মুযার সম্প্রদায়ের রজব মাস যা জুমাদাল ঊলা এবং শাবানের মধ্যখানে রয়েছে।” [বুখারি ও মুসলিম]

❑ এ মাসগুলো হারাম হওয়ার কারণ:

ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
اختص الله أربعة أشهر جعلهن حرمًا، وعظَّم حرماتهن، وجعل الذنب فيهن أعظم، وجعل العمل الصالح والأجر أعظم
“আল্লাহ তাআলা বারো মাসের মধ্যে বিশেষভাবে চার মাসকে হারাম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং সেগুলোর বিশাল মর্যাদা দিয়েছেন, এগুলোতে পাপাচার করাকে আরও বেশি ভয়ানক করেছেন এবং নেক আমলের বিশাল প্রতিদানও নির্ধারণ করেছেন।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

◈ ৩. এ মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পরে মোট চারটি ওমরা আদায় করেছেন। সেগুলোর মধ্যে হজের সাথে যে ওমরা করেছেন সেটি ছাড়া বাকি সবগুলোই আদায় করেছেন জিলকদ মাসে।

কাতাদা রা. হতে বর্ণিত, আনাস রা. তাকে এ তথ্য দিয়েছেন যে,

اعْتَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَرْبَعَ عُمَرٍ كُلُّهُنَّ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، إِلاَّ الَّتِي كَانَتْ مَعَ حَجَّتِهِ‏.‏ عُمْرَةً مِنَ الْحُدَيْبِيَةِ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مِنَ الْجِعْرَانَةِ حَيْثُ قَسَمَ غَنَائِمَ حُنَيْنٍ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مَعَ حَجَّتِهِ‏.‏
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ওমরা পালন করেছেন। তিনি হজের সাথে যে ওমরাটি পালন করেছিলেন সেটি ব্যতীত সবকটিই জিলকদ মাসে পালন করেছেন।
– হুদায়বিয়া নামক স্থানে যে ওমরাটি পালন করেছিলেন সেটি ছিল জিলকদ মাসে,
– তার পরের মাসে যে ওমরা পালন করেছেন সেটাও জিলকদ মাসে
– এবং হুনাইনের গনিমত (যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ) যে জিরানা নামক স্থানে বণ্টন করেছিলেন, সেখান থেকে যে ওমরাটি করা হয়েছিল তাও ছিল জিলকদ মাসে।
– আর তিনি হজের সাথে একটি ওমরা পালন করেন।”
[সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধ-অভিযান), পরিচ্ছেদ: ২১৯৯. হুদায়বিয়ার যুদ্ধ। মহান আল্লাহর বাণী: لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ “মুমিনগণ যখন গাছের নিচে আপনার নিকট বয়াত গ্রহণ করল তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন…।” [সূরা আল ফাতহ: ১৮]

◍ জিলকদ মাসে ওমরা করার কারণ কী?
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজের সাথে যে ওমরা আদায় করেছেন সেটা ছাড়া বাকি ৩টি ওমরা আদায় করেছেন জিলকদ মাসে। এর কারণ হিসেবে আলেমগণ বলেছেন, ইসলাম পূর্ব জাহেলি যুগে এ মাসে ওমরা করাকে খুবই গুনাহের কাজ মনে করা হত। তাই তিনি এ মাসে একাধিক ওমরা করার মাধ্যমে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছেন যে, জাহেলি যুগের ধারণা ভ্রান্ত-বাতিল এবং এ মাসে ওমরা করা জায়েজ।
وقال النووي :
قال العلماء : وإنما اعتمر النبي صلى الله عليه وسلم هذه العُمَر في ذي القعدة لفضيلة هذا الشهر ولمخالفة الجاهلية في ذلك فإنهم كانوا يرونه ( أي الإعتمار في ذي القعدة ) من أفجر الفجور كما سبق ففعله صلى الله عليه وسلم مرات في هذه الأشهر ليكون أبلغ في بيان جوازه فيها وأبلغ في إبطال ما كانت الجاهلية عليه ، والله أعلم .
” شرح مسلم ” ( 8 / 235 ) .

◍ জিলকদ মাসে ওমরা করা কি সুন্নত?
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক এ মাসে একাধিক ওমরা করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সে কারণে অনেক আলেম জিলকদ মাসে ওমরা করাকে সুন্নত বলেছেন। যদিও তা যে কোনও সময় করা জায়েজ।
– শাইখ বিন বায রাহ. বলেন, সবচেয়ে মর্যাদা পূর্ণ রোজা হল, রমজান মাসে রোজা করা। কেননা তা হজের সমান। এর পরেই জিলকদ মাসে ওমরা করা উত্তম।

فضل زمان تؤدي فيه العمرة شهر رمضان؛ لقول النبي صلى الله عليه وسلم “عمرة في رمضان تعدل حجة”. متفق على صحته، وفي رواية أخرى في البخاري “تقضي حجة معي”، وفي مسلم “تقضي حجة أو حجة معي” ــ هكذا بالشك ــ يعني معه عليه الصلاة والسلام، ثم بعد ذلك العمرة في ذي القعدة؛ لأن عمره كلها، صلى الله عليه وسلم، وقعت في ذي القعدة، وقد قال الله سبحانه (لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة). وبالله التوفيق
– আল্লামা উসাইমিন, হজের মাসগুলোতে ওমরা করাকে সুন্নত বলেছেন।
وتسن أيضاً في أشهر الحج، وهي شوال وذو القعدة وذو الحجة؛ لأن النبي صلّى الله عليه وسلّم خصها بالعمرة.
আল্লাহু আলাম।
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল –

Translate