Sunday, June 4, 2023

সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করার হুকুম এবং একসাথে অনেক লোক দুআয় হাত উঠালে তা আল্লাহর দরবারে তাড়াতাড়ি কবুল হয় এ কথার যথার্থতা কতটুকু

 প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সম্মিলিত মুনাজাত নাকি বিদআত। কিন্তু আমাদের বাসার কাছে মসজিদে জুম্মার নামাজের পরে সবসময়ই অনেক সময় নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত হয়। আমি ইমাম সাহেবকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, “অনেক মানুষ একসাথে হাত উঠালে সেই দুআ তাড়াতাড়ি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।” আমি কি এই মুনাজাতে অংশ নিব?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: সম্মিলিত দুয়া অর্থাৎ একজন ব্যক্তি দুআ বলবে আর বাকি লোকজন আমীন আমীন বলবে’ এভাবে দুআ করা বৃষ্টি প্রার্থনা, বৃষ্টি বন্ধ করা এবং দুআয়ে কুনুত বা কুনুতে নাজেলা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অন্য কোথাও প্রমাণিত নয়। তিনি তাঁর সারা জিন্দেগিতে কোন এক দিনের জন্যও সালাত শেষে সাহাবিদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুআ-মুনাজাত করেছেন বলে প্রমাণ নেই। সুতরাং তা বিদআত।
বরং তিনি সালাত শেষে অনেক জিকির, তাসবিহ ও দুআ পাঠ করেছেন। সেগুলো বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা সুপ্রমাণিত।
কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত: আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মসজিদে জামআতে সালাত শেষ করে মাসুনূন দুয়া ও জিকিরগুলো খুব কমই আমল করা হয় বরং বিভিন্ন অগ্রহযোগ্য দলিল ও যুক্তি দিয়ে সম্মিলিত দুআকে আজ পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে!! তাদের এ সব যুক্তির মধ্যে একটি হল, “একসাথে দুআতে অনেক মানুষ হাত উঠালে দুআ কবুল হয়!!”
কোন হাদিসের ভিত্তিতে তারা এ কথা বলেন? প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দলিল বর্হিভূত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য। যদি এ কথা সঠিক হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই নিজে তা আমল করতেন এবং তার উম্মতকে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন কোন হাদিস পাওয়া যায় না।
সুতরাং আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবদের কতর্ব্য, সুন্নাহ বর্হিভূত তথাকথিত ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ বর্জন করা এবং এ ব্যাপারে মুসল্লিদেরকে জ্ঞান দান করা। বিশেষ করে, সালাত পরবর্তী দুয়াগুলো নিজেরা পাঠ করা এবং মুসল্লীদেরকে পাঠ করতে বলার প্রতি উৎসাহিত করা। অবশ্য মাসনুন দুআগুলো পাঠ করার পর, যে যার মত ইচ্ছা মাফিক হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করে নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করতে পারে। এতে কোন আপত্তি নেই। প্রত্যেকেই নিজে নিজের সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরে আল্লাহর কাছে চুপিস্বরে দুআ-মুনাজাত করবে-এটাই প্রকৃত দুআর আদব। ফরজ সালাতের পর ইমাম ও মুক্তাদিগণ দু হাত উত্তোলন করবে এবং ইমাম দুআ করবে আর মুক্তাদিগণ আমিন আমিন বলবে-এ সম্পর্কে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে প্রশ্ন করা হলে তারা জবাবে বলেন,
” العبادات مبنية على التوقيف ، فلا يجوز أن يقال : هذه العبادات مشروعة من جهة أصلها أو عددها أو هيئتها ، أو مكانها إلا بدليل شرعي يدل على ذلك ، ولا نعلم سنةً في ذلك عن النبي صلى الله عليه وسلم ، لا من قوله ، ولا من فعله ، ولا من تقريره ” انتهى من “مجلة البحوث الإسلامية” (17/55) .
“ইবাদত হল, তাওকিফিয়া তথা কুরআন-সুন্নাহ-এর দলিল নির্ভর। সুতরাং শরঈ দলিল ছাড়া কোনও ইবাদত সম্পর্কে এ কথা বলা যাবে না যে, এ ইবাদতটি ভিত্তিগতভাবে বা সংখ্যা, পদ্ধতি, স্থান ইত্যাদি দিক থেকে শরিয়ত সিদ্ধ। আর এ বিষয়ে (ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত দুআ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনও সুন্নাহ আমাদের জানা নেই-না তার বক্তব্য থেকে, না তার কোনও কর্ম বা মৌন সম্মতি থেকে।” [মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়া, ১৭/৫৫] আল্লাহ আমাদের সমাজ থেকে সকল বিদআত বিদূরিত করে সুন্নাহর আলোকিত পথে ফিরে আসার তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate