Sunday, December 19, 2021

কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ

 ১) অর্ধ শাবানের রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। অথচ তা অবতীর্ণ হয়েছে রামাযান মাসের কদরের রাতে। (সূরা বাকারা: ১৮৫ ও সূরা কদর)

২) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কুরআন (সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস ইত্যাদি সূরা) পাঠ করা। এটি দলীল বহির্ভূত কাজ হওয়ার কারণে বিদয়াত।
৩) মৃত শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করা। এটি বিদআত। অথচ সুন্নত হচ্ছে, মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র তালকীন দেয়া বা তাকে শুনিয়ে কালিমা পাঠ করা।
৪) কুরআন খতম (শবিনা খতম) করে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশীয়ে দেয়া। এটিও দলীল বহির্ভূত হওয়ার কারণে বিদআত।
৫) অসর্তকতা বশত: হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে তার ওজন বরাবর চাল সদকা করা। এটি শরীয়তের কোন বিধান নয়। বরং এজন্য জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা প্রয়োজন।
৬) না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব হবে না বলে ধারণা করা। এ ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক কুরআন পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে ১টি করে (যা ১০টি নেকীর সমান) সওয়াব অর্জিত হবে। তবে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
৭) কুরআন তেলাওয়াতের শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আজীম’ (আল্লাহ সত্য বলেছেন) বলাকে সুন্নত মনে করা ঠিক নয়। কারণ, এর কোন শরয়ী ভিত্তি নাই। সুতরাং এটিকে নিয়ম করে পাঠ করা ঠিক নয়।
৮) কুরআন হাতে নিয়েই তাতে চুমু খাওয়া। এটিকে নিয়ম করে নেয়া  ঠিক নয়। তবে হঠাৎ আবেগে চুমু খেলে তাতে সমস্যা নাই।
৯) এ বিশ্বাস করা যে, হাদীস মানার প্রয়োজন নাই। কেবল কুরআন মানাই যথেষ্ট। এটি মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাদীস ব্যতিরেকে কুরআন বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।
১০) সিডি, ক্যাসেট, মোবাইল ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু করে গল্প-গুজবে ব্যস্ত থাকা বা তার প্রতি অমনোযোগিতা প্রকাশ করা। এটি কুরআনের প্রতি অবহেলার শামিল। আল্লাহ তায়ালা কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনার নির্দেশ নিয়েছেন। (সূরা আরাফ: ২০৪)
১১) মোবাইলে রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত রাখা উচিৎ নয়। কারণ, তা টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে বেজে উঠতে পারে। তাছাড়া রিং বাজলে আল্লাহর কথাকে কেটে দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু হয়। আল্লাহর বাণীর সাথে এরূপ আচরণ শোভনীয় নয়। অনুরূপভাবে মোবাইলের ওয়াল পেপার হিসেবে কুরআনের আয়াত সম্বলিত ছবি সেট করা উচিৎ নয়। কারণ, নাপাক স্থানে তা প্রকাশিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
১২) কুরআনের আয়াতকে ঘরের শোভা বর্ধন, বরকত নাজিল বা জিন-ভুত, যাদু, অসুখ-বিসুখ বা কোন কিছুর ক্ষতির আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লটকায়ে রাখা নাজায়েজ। তবে শিক্ষা বা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলে তা জায়েজ আছে।
১৩) কুরআনের আয়াত দ্বারা ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বানানো উচিৎ নয়। কারণ, তা মানুষের ভুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ তা ঘরের শোভা বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।
১৪) কুরআন আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদিও এটি মতো বিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিক হল তা জায়েজ নয়। কারণ, এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মৌখিক, কর্মগত বা সম্মতি জ্ঞাপক কোন অনুমোদন পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘কুরআনের নকশা’ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম। অবশ্য, অসুখ-বিসুখ, জিনের আক্রমন, যাদু-টোনা ইত্যাদির প্রভাব কাটাতে কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়-ফুঁক দেয়া শুধু শরীয়ত সম্মতই না বরং তা সবোর্ত্তম চিকিৎসা।
– গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স, মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

তাগুত কী?

 আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

:
আল্লাহ বলেন:— “আমরা (আল্লাহ) প্রত্যেক জাতিতে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।” [সূরা নাহল : আয়াত ৩৬]
:
আল্লাহ কুরআনে এভাবে বহুস্থানে “তাগুত” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তো এখন প্রশ্ন হলো তাগুতটা কী? আসুন তাগুত সম্পর্কে জেনে নিই।
:
তাগুত শব্দটি দিয়ে অনেক অর্থ বুঝায়। এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারো ইবাদত করা বুঝায়। হতে পারে তা শয়তান, দেবদেবী, মূর্তি, সূর্য, নক্ষত্র, ফেরেশতা, মানুষ……ইত্যাদি ইত্যাদি যাদের ইবাদত করা হয় যা বাতিল, যা হলো তাগুত। একইভাবে সূফী, মাজার, শাসক, নেতা……ইত্যাদি যাদেরকে ভ্রান্তভাবে অনুসরণ করা হয়। তাগুত মানে মিথ্যা বিচারকও বুঝায় যে মিথ্যার সাথে বিচারকার্য করে থাকে।
এই পর্যন্ত দেয়া হলো তাকিউদ্দীন হিলালী ও মুহসিন খান (রহিমাহুমুল্লা-হ)-এর “The Noble Quran” থেকে।
:
এছাড়া সালাফী মানহাজের নির্ভরযোগ্য ইংলিশ ওয়েবসাইট থেকে তাগুত সম্পর্কে সালাফদের ও আহলুল ‘ইলমদের উক্তিসমূহ থেকে নিম্নে অল্পকিছু অনুবাদ করা হলো (সাথে কিঞ্চিত পরিমার্জিত),
:
——)()()()()(——
:
==> অনেক ‘আহলুল ‘ইলমদের লিখনিতে পাওয়া যায় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেই অনুযায়ী যে বিচারকার্য করে না, সে তাগুত। এছাড়া সত্য কথা হলো যে, তাগুত কাফেরদের দ্বারাও বোঝাতে পারে এবং মুসলিমদের মধ্যে যারা পথভ্রষ্টদের নেতা… তাদেরকেও বোঝাতে পারে।
:
==> ইমাম জাওহারী (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “ভবিষ্যতবাণী করে এমন লোক বা গণক, শয়তান এবং পথভ্রষ্টদের নেতা—এরাই তাগুত।” [মুখতারুস সিহাহ]
:
==> ইবনু মান্ধুর (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “আল্লাহর ছাড়া যারই ইবাদত করা হয় তারা এবং পথভ্রষ্টদের নেতারাই হলো তাগুত।” [লিসানুল আরব]
:
==> ইবনু মান্ধুর (রহিমাহুল্লা-হ) আরো বলেন — আবু ইসহাক্ব (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:—আল্লাহর ছাড়া যারই ইবাদত করা হয় তারাই তাগুত। আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়: জাদুকর, গণক এবং শয়তান। [লিসানুল আরব]
:
==> আশ শা’বী’, ‘আতা এবং মুজাহিদ (রহিমাহুমুল্লা-হ) বলেছেন:— জাদুকর, গণক, শয়তান, এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টদের নেতা। [লিসানুল আরব]
:
==> ইমাম মালেক (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:—“আল্লাহ ছাড়া যারই ইবাদত করা হয়।” [ইবনু আবি হাতিম: সনদ সহীহ]
:
==> ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “তাগুত শব্দটি তুগিয়ান থেকে নেয়া হয়েছে এবং এটা হলো যে কোনো লিমিট ক্রস করা।” [জাদুল মাসীর]
:
==> “আমরা (আল্লাহ) প্রত্যেক জাতিতে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো”—এই আয়াতে তাগুতের ব্যখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবি (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন— “অর্থাৎ সবকিছুই বর্জন করো আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়, যেমন শয়তান, গণক, দেবদেবী, এবং সবকিছু যা ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে।”
:
==> ইমাম শাওকানি (রহিমাহুল্লা-হ) ইমাম কুরতুবির মতো একই কথা বলেন যা আছে তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীরে।
:
==> ইবনু হিশাম (রহিমাহুল্লা-হ) (রসূল (সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিখ্যাত জীবনীর লেখক) বলেন:— “তাগুত— প্রত্যেকটি জিনিস যা সত্য থেকে পথভ্রষ্ট করে।” [আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ]
:
==> শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লা-হ) তাগুত সম্পর্কে বলেন:— “এটি একটি আম টাইটেল যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত— শয়তান, দেবদেবী, গণক, দিরহাম, দিনার (মুদ্রার রূপ), এবং এগুলো ছাড়া আরো যা যা আছে।” [মাজমু’-উল-ফাতাওয়া]
:
==> শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ বিন উসায়মীন (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন:— “এই বিষয়ে (তাগুত) যা যা বলা হয়েছে ইবনুল ক্বাইয়্যিম সেগুলোকে একত্রিত করেন— বান্দার দ্বারা যার সীমা অতিক্রম করা হয়— ফলো করার ক্ষেত্রে হোক অথবা ইবাদত করার ক্ষেত্রে হোক অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রে হোক।” [আল-ক্বওলুল মুফীদ]
:
==> শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন:— তাগুত রয়েছে অনেক। এদের মধ্যে প্রধান হলো ৫টি:— ১) ইবলিস শয়তান; ২) যার ইবাদত করা হয় এবং যে এতে সন্তুষ্ট থাকে; ৩) যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবি করে; ৪) এমন কেউ যে মানুষকে তার ইবাদত করতে আহবান করে; ৫) আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেগুলো ছাড়া অন্যকিছু দিয়ে যে বিচারকার্য চালায়।
এবং এগুলোর প্রমাণ হলো তাঁর কথা, যিনি মহান (আল্লাহ):— “দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ২৫৬]
আর এটিই হলো “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” — এর অর্থ। [আদ-দুরারুস সান্নিয়্যাহ]
:
==> তাগুত শব্দ দিয়ে যে শুধু বড় কুফরিই বুঝাবে সেটা জরুরী নয়, যা শাইখুল ইসলাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ)-এর উক্তি থেকে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি আরো বলেন—তাগুত হলো অনেক এবং আমাদের কাছে একেবারে পরিষ্কার হলো পাঁচটি—১) প্রথমটি হলো শয়তান; ২) অত্যাচারী শাসক; ৩) যে ঘুষ খায়; ৪) যার ইবাদত করা হয় এবং যে এতে সন্তুষ্ট থাকে; ৫) যে ‘ইলম ছাড়া আমল করে। [আদ-দুরারুস সান্নিয়্যাহ]
:
==> কাজেই, ইমাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ) পরিষ্কারভাবে তাগুতের প্রধানের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছেন—অত্যাচারী শাসক, যে ঘুষ খায়, এবং যে ‘ইলম অনুযায়ী আমল করে না— আর এগুলো হলো ছোট কুফরি। বস্তুত, আহলুল ‘ইলমদের ‘ইজমা অনুযায়ী যে ঘুষ খায় সে ইসলাম থেকে বহির্ভূত হয়ে যাওয়া কাফের নয়, যতক্ষণ না সে সেটাকে হালাল মনে করে। কাজেই, এথেকে বুঝা যায় যে, ইমাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং তার পূর্বের অন্যান্য ‘উলামারা “তাগুত” শব্দটিকে শুধুমাত্র কুফরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং এটি দিয়ে গোনাহগার মুসলিমদেরও বুঝায় অথবা অত্যাচারী শাসকদেরও বুঝায় অথবা তাকেও বুঝায় যে ‘ইলম অনুযায়ী আমল করে না অথবা ভ্রষ্টকারীকেও বুঝায় যে অন্যদের পথভ্রষ্ট করে, যেমন খাওয়ারিজ বা খারেজি মতবাদের প্রধানরা।
:
==> কাজেই, উপরিউক্ত সবগুলো বক্তব্য থেকে আমরা এই মর্মে উপনীত হতে পারি যে, তাগুত শব্দটির অন্তর্ভূক্ত হলো কাফেররা, পথভ্রষ্ট ও বিদআতের নেতা-প্রধানরা………এবং উপরে শুরু থেকে যা যা বলা হলো সবকয়টিই।
:
আল্লাহই সবচেয়ে উত্তম জানেন।
:
জাযা-কুমুল্লাহু খইরন।
Courtesy Brother Abu Tawha

দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য

 ১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে উঠে না।
(ক) পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে আসে।
(খ) সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।
(গ)সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার অধীনরা অসন্তুষ্ট।”
২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।”
৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ, এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা বলা নিরেট কুফরি।”
৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা না রাখা।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার, আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে বড়।
৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত করে।”
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ না করা :
আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট করে দেবেন।”
১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে ঢুকতে না দেয়া।
বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।” নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব।
স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”
বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে। আর এসব বিষয়ের প্রতি খুব নজর রাখবে।
১- অল্পতে তুষ্টি থাকবে।
২– তার তার অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩– তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
৪– তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয় গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫– তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
৬– মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে বিসন্নতার সৃষ্টি হয়।
৭– তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে।
৮– মনে রাখবে, সব কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার, সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
নারীর জান্নাত যে পথে—–বইটি থেকে সংগৃহীত ।
লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব

সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের উপায়

 দেশে দেশে পরাশক্তিগুলোর অব্যাহত জুলুম ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানবতা যখন ইসলামের শান্তিময় আদর্শের দিকে ছুটে আসছে তখন ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসাবে প্রমাণ করার জন্য তারা তাদেরই লালিত একদল বুদ্ধিজীবীর মাধ্যমে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা করে চরমপন্থী দর্শন প্রচার করছে। অন্যদিকে নতজানু মুসলিম সরকারগুলোকে দিয়ে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। অতঃপর জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে একদল তরুণকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতায় লাগানো হচ্ছে। আর তাকেই জঙ্গিবাদ হিসাবে প্রচার চালিয়ে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদী ধর্ম বলে বদনাম করা হচ্ছে। অতঃপর সন্ত্রাস দমনের নামে বিশ্বব্যাপী নিরীহ মুসলমানদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে । এই প্রেক্ষিতে আমাদের পরামর্শগুলো নিম্নরূপ :

এক- এটি হতে পারে সংশ্লিষ্টদের চরমপন্থী আক্বীদা সংশোধনের মাধ্যমে।
দুই- দেশে সুশাসন কায়েমের মাধ্যমে।
তিন- গুম, খুন, অপহরণ, গ্রেফতার বাণিজ্য ও নারী নির্যাতনসহ ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক সকল কার্যক্রম বন্ধের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে।
নইলে সমাজের ধূমায়িত ক্ষোভ থেকে সন্ত্রাসবাদ জনগণের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করবে। শেষের দু’টি সরকারের দায়িত্ব। প্রথমটি সমাজ সচেতন আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনসমূহের দায়িত্ব। নিম্নে জিহাদ ও ক্বিতাল বিষয়ে চরমপন্থীদের বই-পত্রিকা ও ইন্টারনেট ভাষণ সমূহের জবাব দানের মাধ্যমে আমরা জনগণকে সতর্ক করতে চাই। যাতে তাদের মিথ্যা প্রচারে মানুষ পদস্খলিত না হয়। আমরা সকলের হেদায়াত কামনা করি। নিঃসন্দেহে হেদায়াতের মালিক আল্লাহ। মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে শৈথিল্যবাদী ও চরমপন্থী দু’টি দল রয়েছে যার কোনটাই ইসলামে কাম্য নয়। এদের বিপরীতে ইসলামের সঠিক আক্বীদা হ’ল মধ্যপন্থা যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং প্রকৃত মুসলমানগণই যা লালন করে থাকেন। চরমপন্থীরা পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীছকে তাদের পক্ষে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। যেসবের মাধ্যমে তারা কবীরা গোনাহগার মুসলমানকে ‘কাফের’ বলে এবং তাদের রক্ত হালাল গণ্য করে। যেমন,
(১) সূরা মায়েদাহ ৪৪ : যেখানে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ্র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার বা শাসন করেনা, তারা কাফের’ (মায়েদাহ ৫/৪৪)। এর পরে ৪৫ আয়াতে রয়েছে ‘তারা যালেম’ এবং ৪৭ আয়াতে রয়েছে, ‘তারা ফাসেক’। একই অপরাধের তিন রকম পরিণতি : কাফের, যালেম ও ফাসেক। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করল সে কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি তা স্বীকার করল, কিন্তু সে অনুযায়ী বিচার করল না সে যালেম ও ফাসেক। সে ইসলামের গন্ডী থেকে বহির্ভূত নয়’ (তাফসীর ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। বিগত যুগে এই আয়াতের অপব্যাখ্যা করে চরমপন্থী ভ্রান্ত ফের্কা খারেজীরা চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ)-কে ‘কাফের’ আখ্যায়িত করে তাঁকে হত্যা করেছিল। আজও ঐ ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারীরা বিভিন্ন দেশের মুসলিম সরকার ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাসূল (সাঃ) খারেজীদেরকে ‘জাহান্নামের কুকুর’ বলেছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৭৩)। মানাবী বলেন, এর কারণ হ’ল, তারা ইবাদতে অগ্রগামী। কিন্তু অন্তরসমূহ বক্রতায় পূর্ণ। এরা মুসলমানদের কোন কবীরা গোনাহ করতে দেখলে তাকে ‘কাফের’ বলে ও তার রক্তপাত হালাল জ্ঞান করে। যেহেতু এরা আল্লাহ্র বান্দাদের প্রতি কুকুরের মত আগ্রাসী হয়, তাই তাদের কৃতকর্মের দরুণ জাহান্নামে প্রবেশকালে তারা কুকুরের মত আকৃতি লাভ করবে’ (ফায়যুল ক্বাদীর)।
(২) তওবা ৫ : ‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিক্রান্ত হ’লে তোমরা মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা কর, পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং ওদের সন্ধানে প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, ছালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তাহ’লে ওদের রাস্তা ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবা ৯/৫)। আয়াতটি বিদায় হজ্জের আগের বছর নাযিল হয় এবং মুশরিকদের সাথে পূর্বেকার সকল চুক্তি বাতিল করা হয়, এর ফলে মুশরিকদের জন্য হজ্জ চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয় এবং পরের বছর যাতে মুশরিকমুক্ত পরিবেশে রাসূল (সাঃ) হজ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়। এটি বিশেষ অবস্থায় একটি বিশেষ নির্দেশ মাত্র। কিন্তু তারা এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘যেখানেই পাও’ এটি সাধারণ নির্দেশ। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের যেখানেই পাও না কেন তাদেরকে বধ কর, পাকড়াও কর হারাম শরীফ ব্যতীত’ (যুগে যুগে শয়তানের হামলা ৯২ পৃ.)।
(৩) তওবা ২৯ : ‘তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবদের মধ্যকার ঐসব লোকের বিরুদ্ধে, যারা আল্লাহ ও বিচার দিবসের উপর ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না ও সত্য দ্বীন (ইসলাম) কবুল করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিনীত হয়ে করজোড়ে জিযিয়া প্রদান করে’ (তওবা ৯/২৯)। আয়াতটি ৯ম হিজরীতে রোমকদের বিরুদ্ধে তাবূক যুদ্ধে গমনের প্রাক্কালে নাযিল হয়। এটিও বিশেষ প্রেক্ষিতের নির্দেশনা। কিন্তু তারা এর ব্যাখ্যা করেছে, মদীনায় হিজরতের পরে আল্লাহ জিহাদের অনুমতি প্রদান করেন। পরে জিহাদ ও ক্বিতাল ফরয করে দেন। নবী ও ছাহাবীগণ আল্লাহ্র উক্ত ফরজ আদায়ের লক্ষ্যে আমরণ জিহাদে লিপ্ত ছিলেন। এই জিহাদের মাধ্যমেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়’ (ঐ, ৯৪ পৃ.)। উক্ত আয়াতের পরেই তারা
(৪) একটি হাদীছ এনেছেন যে, রাসূলুলাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আমি লোকদের সাথে লড়াই করতে আদিষ্ট হয়েছি, যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। আর তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে। যখন তারা এগুলি করবে, তখন আমার পক্ষ হ’তে তাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে ইসলামের হক ব্যতীত এবং তাদের (অন্তর সম্পর্কে) বিচারের ভার আল্লাহ্র উপর রইল’ (বু:মু: মিশকাত হা/১২)। এ হাদীছের ব্যাখ্যায় তারা বলেছেন, আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘উক্বাতিলান্নাস’ অর্থাৎ ‘মানব সমাজের সাথে যুদ্ধ করার জন্য’। রাসূল (ছাঃ) যেহেতু শেষনবী, তাঁর পরে আর কোন নবী নেই, অতএব এই নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে’ (ঐ, ৯৪ পৃ.)। অথচ উক্ত হাদীছে ‘আন উক্বাতিলা’ (যেন পরস্পরে লড়াই করি) বলা হয়েছে, ‘আন আক্বতুলা’ (যেন আমি হত্যা করি) বলা হয়নি। ‘যুদ্ধ’ দু’পক্ষে হয়। কিন্তু ‘হত্যা’ এক পক্ষ থেকে হয়। যেটা চোরাগুপ্তা হামলার মাধ্যমে ক্বিতালপন্থীরা করে থাকে। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে যে, কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করতে এলে তোমরাও যুদ্ধ করবে। কিংবা তাদের মধ্যকার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে। কিন্তু নিরস্ত্র, নিরপরাধ বা দুর্বলদের বিরুদ্ধে নয়। কাফির পেলেই তাকে হত্যা করবে সেটাও নয়। তাছাড়া উক্ত হাদীছে ‘যারা কালেমার স্বীকৃতি দিবে, তাদের জান-মাল নিরাপদ থাকবে বলা হয়েছে, ইসলামের হক ব্যতীত এবং তাদের বিচারের ভার আল্লাহ্র উপর রইল’ বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, আমাদের দায়িত্ব মানুষের বাহ্যিক আমল দেখা। কারু অন্তর ফেড়ে দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। অতএব সরকার যদি বাহ্যিকভাবে মুসলিম হয় এবং ইসলামী দাওয়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়, তাহ’লে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের সুযোগ কোথায়?
(৫) এরপর তারা ইমাম মাহদীর আগমন ও ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জাল নিধন সম্পর্কিত হাদীছ এনেছেন এবং বলতে চেয়েছেন যে, কেবল জিহাদ ও ক্বিতালের মাধ্যমেই ইসলামের অগ্রযাত্রা সম্ভব। তাওহীদী দাওয়াতের মাধ্যমে নয়’ (ঐ, ৯৫ পৃ.)। অতঃপর আরেকটি হাদীছ এনেছেন,
(৬) ‘নিশ্চয়ই এই দ্বীন সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং মুসলমানদের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত এর জন্য লড়াই করবে’ (মুসলিম হা/১৯২২)। তারা এর অনুবাদ করেছেন, ‘মুসলমানদের একদল কিয়ামত পর্যন্ত এ দ্বীনের জন্য যুদ্ধে রত থাকবে’ (ঐ, ৯৯ পৃ.)। প্রশ্ন হ’ল, ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জাল নিধনের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মুসলমানরা কার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত থাকবে? তারা কি তাহ’লে সকল কবীরা গোনাহগার মুসলমানকে হত্যা করবে? মাথাব্যথা হ’লে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে? নাকি মাথাব্যথার ঔষধ দিতে হবে? অথচ উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা এসেছে একই অনুচ্ছেদের অন্য হাদীছে। যেখানে রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’ (মুসলিম হা/১৯২০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যারা তাদের শত্রুতা করবে, তারা তাদের উপরে বিজয়ী থাকবে’ (মুসলিম হা/১০৩৭)। যার ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী বলেন, তারা হ’ল শরী‘আত অভিজ্ঞ আলেমগণ। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, তারা যদি আহলুল হাদীছ না হয়, তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা? (শরহ নববী)। এখানে লড়াই অর্থ আদর্শিক লড়াই ও ক্ষেত্র বিশেষে সশস্ত্র লড়াই দুইই হ’তে পারে। কেবলমাত্র সশস্ত্র যুদ্ধ নয়। রাসূল (সাঃ) তাই বলেন, ‘খারেজীদের থেকেই দাজ্জাল বের হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/১৭৪)।
(৭) নিসা ৬৫ : ‘তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে…’ (নিসা ৪/৬৫)। খারেজী আক্বীদার মুফাসসিরগণ অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন ‘তাগূতের অনুসারী ঐসব লোকেরা ‘ঈমানের গ-ী থেকে বেরিয়ে যাবে। মুখে তারা যতই দাবী করুক না কেন’ (সাইয়িদ কুতুব, তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন ২/৮৯৫)। অথচ এখানে ‘তারা মুমিন হ’তে পারবে না’-এর প্রকৃত অর্থ হ’ল, ‘তারা পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে না’। কারণ উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছিল দু’জন মুহাজির ও আনছার ছাহাবীর পরস্পরের জমিতে পানি সেচ নিয়ে ঝগড়া মিটানোর উদ্দেশ্যে (বুখারী হা/২৩৫৯)। দু’জনই ছিলেন বদরী ছাহাবী এবং দু’জনই ছিলেন স্ব-স্ব জীবদ্দশায় ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। অতএব তাদের কাউকে মুনাফিক বা কাফির বলার উপায় নেই। কিন্তু খারেজী ও শী‘আপন্থী মুফাসসিরগণ তাদের ‘কাফের’ বলায় প্রশান্তি বোধ করে থাকেন। তারা আয়াতের প্রকাশ্য অর্থ নিয়েছেন ও সকল কবীরা গোনাহগার মুসলমানকে ‘কাফের’ সাব্যস্ত করেছেন। ফলে তাদের ধারণায় কোন মুসলিম সরকার ‘মুরতাদ’ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার রাষ্ট্রে কিছু কুফরী কাজের প্রকাশ ঘটালো’ (যুগে যুগে শয়তানের হামলা ১৪৫ পৃ.)। অথচ তারা আরবীয় বাকরীতি এবং হাদীছের প্রতি লক্ষ্য করেননি। যেমন রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্র কসম! ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় (৩ বার), যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টকারিতা হ’তে নিরাপদ নয়’ (বু:মু: মিশকাত হা/৪৯৬২)। এখানে ‘মুমিন নয়’ অর্থ পূর্ণ মুমিন নয়। তারা বলেছেন, মক্কার মুশরিকরা আলাহকে বিশ্বাস করার পরেও মূর্তিপূজার অপরাধে তাদের জান-মালকে হালাল করা হয়েছিল। তদ্রƒপ বাংলার শাসকবর্গ ঈমান আনয়নের পর মূর্তি ও দেবতা পূজায় লিপ্ত হওয়ার জন্য মুশরিকে পরিণত হয়ে ‘মুরতাদ’ হয়েছে। তাদের জান ও মাল মুসলিমের জন্য হালাল’ (ঐ, ১৫১ পৃ.)। অথচ মক্কার মুশরিকরা ইসলাম কবুল করেনি।
(৮) শূরা ১৩ : আল্লাহ বলেন, ‘…তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর ও তার মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। তুমি মুশরিকদের যে বিষয়ের দিকে আহ্বান কর, তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়…’ (শূরা ৪২/১৩)। অত্র আয়াতে বর্ণিত ‘আক্বীমুদ্দীন’ অর্থ ‘তোমরা তাওহীদ কায়েম কর’। নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলকে আল্লাহ একই নির্দেশ দিয়েছিলেন। সকল মুফাসসির এই অর্থই করেছেন। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো এবং ত্বাগূতকে বর্জন করো’ (নাহল ১৬/৩৬)। এর দ্বারা সার্বিক জীবনে আল্লাহ্র দাসত্ব তথা ‘তাওহীদে ইবাদত’ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কিছু লেখক ‘তোমরা দ্বীন কায়েম কর’-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ‘তোমরা হুকূমত কায়েম করো’ (আবুল আ‘লা মওদূদী, খুত্ববাত ৩২০ পৃ.)। এর পক্ষে তারা একটি হাদীছেরও অপব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বনু ইস্রাঈলকে পরিচালনা করতেন নবীগণ। যখন একজন নবী মারা যেতেন, তখন তার স্থলে আরেকজন নবী আসতেন’ (বুখারী হা/৩৪৫৫)। এখানে এর অর্থ তারা করেছেন ‘নবীগণ বনু ইস্রাঈলদের মধ্যে রাজনীতি করতেন’। আর এটাই হ’ল ‘সব ফরযের বড় ফরয’। আসল ফরযটি কায়েম না থাকায় নামায-রোযা সমাজে ফরযের মর্যাদায় নেই, ‘মুবাহ’ অবস্থায় আছে- যার ইচ্ছা নামায-রোযা করে’ (অধ্যাপক গোলাম আযম, রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা কী দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন? সূরা হাদীদ ২৫ আয়াতের ব্যাখ্যা)। অর্থাৎ নবীগণ সবাই ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করেছেন। বস্তুত, এটি নবীগণের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়।
(৯) মায়েদাহ ৩ : ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম…। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। বিদায় হজ্জের দিন সন্ধ্যায় অত্র আয়াত নাযিল হয়। অতএব ইসলাম যেহেতু সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণতা পেয়েছে, সেহেতু আমাদেরকে সর্বদা সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে’। অথচ রাসূল (সাঃ)-এর পূর্ণ জীবনই মুসলমানের জন্য অনুসরণীয়, কেবলমাত্র শেষ আমলটুকু নয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)। বস্তুতঃ রাসূল (সাঃ) মাক্কী ও মাদানী উভয় জীবনে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার-এর নীতিতে মানুষকে আল্লাহ্র পথে দাওয়াত দিয়েছেন। শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসাবে আমাদেরও সেটাই কর্তব্য (আলে ইমরান ৩/১১০)।
(১০) আত্মঘাতী হামলা : রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যে মুসলমান …তার দ্বীন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ..’ (তিরমিযী হা/১৪২১)। এজন্য তারা আত্মঘাতী হামলা জায়েয মনে করেন। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (নিসা ৪/২৯)। আত্মহত্যা করা মহাপাপ। জিহাদের ময়দানে আহত হয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতর জনৈক সৈনিক আত্মহত্যা করলে রাসূল (সাঃ) তাকে ‘জাহান্নামী’ বলে আখ্যায়িত করেন। কেননা তার শেষ আমলটি ছিল জাহান্নামীদের আমল। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই ফাসেক-ফাজেরদের মাধ্যমে এই দ্বীনকে সাহায্য করে থাকেন’ (বুখারী হা/৩০৬২, ৪২০২)।
পরিশেষে বলব, বিদেশী আধিপত্যবাদীদের চক্রান্তে ও তাদের অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে এবং তাদেরই এজেন্টদের মাধ্যমে এটি সর্বত্র লালিত হচ্ছে। অতএব সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও আল্লাহভীরু সৎসাহসী প্রশাসনের পক্ষেই কেবল এই অপতৎপরতা হতে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব। সেই সাথে আবশ্যক আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি করে তরুণ বংশধরগণকে আল্লাহ্র পথে ফিরিয়ে আনা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন- আমীন।
লেখক : আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ এবং শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব, ১৮/৭/১৬ উপসম্পাদকীয়।

Share This Post

স্ত্রীকে মুহাব্বত করার সুন্নাত তরীকা‬।

 ১। রসূল(সাঃ)বিবিগণকে খুব

মুহাব্বত করতেন।
২। তাদেরকে চুমু দিতেন
এবং কখনো কখনো তাদের
উরুতে মাথা রেখে শুয়ে থাকতেন।
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) পাত্রের মুখের
যে জায়গায় মুখ দিয়ে পানি পান
করতেন, রসুল(সাঃ)সে জায়গায়ই মুখ
দিয়ে পান করতেন।
৪। রসূল(সাঃ) হাঁড়ের
যে জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু
করতেন হযরত আশয়া (রাঃ)ও হাড়ের ঐ
জায়গা থেকে গোস্ত খাওয়া শুরু করতেন।
৫। মাঝে মাঝে বিবিদের
সাথে বসে বিভিন্ন ঘটনা, কাহিনী ও
আন্যান্য আলোচনা করতেন। এক এক
বিবি নতুন নতুন কিসসা শুনাতেন, তখন
রসূল(সাঃ)আনন্দে উৎফুল্ল
হয়ে নিজেও কিসসা শুনাতেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন,
রসূল(সাঃ)আমাদের
মধ্যে এমনভাবে হাসতেন, কথা বলতেন ও
বসে থাকতেন, আমাদের মনেই
হতো না যে তিনি একজন মহান পয়গাম্বর।
(উসওয়ানে রাসূলে আকরাম)
৬।তিনি মাঝে মাঝে আনসারী ছোট বালিকাদের
খেলাধূলা করার জন্য হযরত
আয়েশা (রাঃ) এর কাছে ডেকে আনতেন
এবং তিনি তাদের সাথে খেলাধূলায়
যোগ দিতেন।
৭। একবার রসূল(সাঃ)হযরত
আয়েশা (রা) সাথে দৌড়
প্রতিযোগিতা দিয়ে ইচ্ছা করে হেরে যান।
কিছুদিন পর পুনরায় দৌড় হলে হযরত
আয়েশা (রাঃ) হেরে যান। অতঃপর
রসূল(সাঃ) বললেন,
হে আয়েশা! আজ
আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি,
তুমি আমার সঙ্গে পার নি। এটা প্রথম
প্রতিযোগিতায় তুমি জিতে যাওয়ার
বদলা। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-২২১৪)
৮। তিনি বিবিদের ভৎসনা, তিরস্কার
করতেন না এবং তাদের সাথে রুক্ষ্ম
ভাষায় কথা বলতেন না।
বরং মায়া জড়ানো, মন
জুড়ানো আকর্ষণীয় কথা ও
ভাবভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন।
তাদের কোন কথা মনের বিপরীত
হলে তাদের সে কথা থেকে মনোযোগ
ফিরিয়ে অন্য চিন্তা করতেন ।
৯। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
রসূল(সাঃ)অত্যন্ত
খুশি মনে মুচকি হাসতে হাসতে গৃহে প্রবেশ
করতেন এবং হৃদয়পূর্ণ সালাম দিতেন।
(উসওয়ায়ে হাসানাহ)
১০। রসূল(সাঃ)কখনো বিছানার
ব্যাপারে দোষ ধরতেন না, যা পেতেন
তার উপরই শুয়ে থাকতেন। (আদাবু নবী)
১১। রসূল(সাঃ)বলতেন,
তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে তার
স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে।
আমি আমার স্ত্রীদের সাথে সবার
চাইতে ভাল ব্যবহার করি।
(তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১০৮২)
(সুন্নাতি জিন্দেগী)

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে ও সমস্তু মুসলমানকে সুন্নাতে রাসুল মজবুতভাবে ধারন করার ও তার প্রতি অটল থাকার এবং সুন্নাতের পরিপন্থী বিষয় থেকে বেচেঁ থাকার তাওফীক দান করেন, তিনিই তো পরম দাতা দয়ালু. আল্লাহ তার বান্দা ও রাসুল আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা:) এবং তার বংশধর ও সমস্তু সাহাবীগণ এর প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষন করেন।
.
আল্লাহুম্মা আমিন,সুম্মা আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।

কন্যা সন্তান জেনে ভ্রুন হত্যা করা বা কন্যা সন্তানকে অবহেলা করা মারাত্মক কবীরা গুনাহ

 মুগীরা (রাঃ)-র সচিব ওয়াররাদ (র) বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রাঃ)-কে লিখে পাঠান,

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যে হাদীস তুমি শুনেছো তা আমাকে লিখে পাঠাও।

মুগীরা (রাঃ) লিখেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গুজব ছড়াতে, সম্পদ ধ্বংস করতে, অধিক যাঞ্চা করতে, অপরের প্রাপ্য অধিকার বাধাগ্রস্ত করতে, মাতাদের অবাধ্যাচারী হতে এবং #কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করতে নিষেধ করেছেন

(বুখারী, মুসলিম, দারিমী)।

বইঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ৪৩/ ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা, হাদিস নম্বরঃ ২৪০৮

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, #কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।

(((৮৪৪, মুসলিম ৫/৩০, হাঃ ৫৯৩)  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২২৪৮)))

#আমাদের অনেক ভাইদের দেখা যায় মেয়ে সন্তান হলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে স্ত্রীর দোষ দেয় এবং স্ত্রীক নির্যাতনও করে যা মোটেই উচিৎ নয় এটা একটি নিকৃষ্ট কাজ।

মেয়ে হোক না ছেলে সেটা বড় কথা নয় কথা হলো তাদের লালন পালন করে শিক্ষিত বানানো যাতে তারা আমাদের কল্যানে আসতে পারে।

#আর মেয়ে সন্তান যে বিশেষ রহমত তার দলিল নিম্নে দেওয়া হলো।
—————————
#রাসুল_(সাঃ)_এর_মনিমুক্তা

#রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তিকে এই কন্যা সন্তান প্রদান করার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে,

সে যদি তাঁদের প্রতি সুন্দর আচরন করে,তাঁদেরকে সঠিকভাবে লালন-পালন করে, তবে তাঁরা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য পর্দাস্বরূপ হয়ে যাবে”।

((((( (বুখারি, মুসলিম))))))
————————–

#রাসুল_(সাঃ)_এর_মনিমুক্তা

#রসূল(সাঃ) ইরশাদ করেন, “কারো যদি তিনজন কন্যা সন্তান থাকে বা তিনজন বোন থাকে,

অথবা দুজন কন্যা বা দুজন বোন থাকে এবং সে তাদের ব্যপারে আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতি করুনা ওসদ্ব্যবহার করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

((((আহমাদ হা/২২৮৬৬)))))
—————————
#রাসুল_(সাঃ)_এর_মনিমুক্তা

#রসুলুল্লাহ(সাঃ)বলেছেন, “সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদে পরিপূর্ণ,

এরমধ্যে কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ হল চরিত্রবান নেককার স্ত্রী”।

(((( (সহীহ মুসলিম))))))

“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীদের নিকট উত্তম”

((( (সহীহ মুসলিম))))

————————–

“মুসলিম রমণী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রামাজানের সিয়াম পালন করে,

নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্যকরে, তবে তাকে বলা হবে,

জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি ভেতরে প্রবেশ কর”।

(((((মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৭৩))))

এক ব্যক্তি নবী(সাঃ) কে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! মানুষেরমধ্যে কে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকার রাখে?

তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন তোমার মা। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন তোমার পিতা।
_________
কন্যা, বোন, স্ত্রী বা মা যাই হোকনা কেন, ইসলামে নারীর মর্যাদা যে কতখানি উপরের হাদিস গুলো দ্বারা নিশ্চয়ই তা স্পষ্ট।

কোন বোন কি আছেন যে দ্বিমত পোষণ করেন?

ইসলাম নারীকে যেমন উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তেমনি কিছু দায়িত্বও দিয়েছে।

অন্যতম একটি প্রধান দায়িত্ব হল যথাযথ পর্দার মাধ্যমে নিজের আব্রু রক্ষা করা।
—————————
★হে আল্লাহ তোমি আমাদের ইমানি শক্তি বৃদ্ধি করে দাও।

মেয়ে সন্তান বোযা নয় রহমত স্বরুপ

শিরক কি? শিরক কত প্রকার? শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত ?

 ★ শিরক কি ?

রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা৷ এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
★ শিরকের প্রকারভেদ ?

#শিরক দুই প্রকার:

১. শিরকে আকবার (বড় শিরক)

যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃতু্যবরণ করে, এবং তা থেকে তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে দোজখে অবস্থান করবে৷
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জি্বন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা৷ আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের প্রচুর চর্চা হচ্ছে৷ এদিকে ইশারা করে আল্লাহ বলেন:
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ ﴿18﴾ سورة يونس
‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’

২.শিরকে আসগার (ছোট শিরক)

শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে৷ এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ৷ এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
~ প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক

এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ.
‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল’
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ”আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছ” ماشاء الله وشئت কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ”আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি বললে তিনি বললেন, ”তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন৷”
আর একথাও বলা যে, ”যদি আল্লাহ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত” ৷ لولا الله و فلان উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা – ”আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে” ماشاء الله ثم فلان ”যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত” لولا الله ثم فلان । কেননা আরবীতে ثم (যার অর্থ: তারপর বা অতঃপর) অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ তাই”এবং ” শব্দের বদলে “তারপর” কিংবা “অতঃপর শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿29﴾ سورة التكوير
‘তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে পারনা৷’
পক্ষান্তরে আরবী واو যার অর্থ : এবং অব্যয়টি দুটো সত্ত্ব বা বস্তুকে একত্রীকরণ ও উভয়ের অংশীদারিত্ব অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ এদ্বারা পর্যায়ক্রমিক অর্থ কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে সংঘটিত অর্থ বুঝা যায়না৷ যেমন একথা বলা যে, ” আমার জন্য তো কেবল তুমি এবং আল্লাহ আছ” ও ” এতো আল্লাহ এবং তোমার বরকতে হয়েছে”৷

#আর কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:

যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো৷ এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগার৷ কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি৷ পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা- মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শিরক আকবর৷ কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট৷

#দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক

এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে৷ যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ অথর্াত্ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা৷ যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির- আযকার পড়া ও সুকন্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে৷ যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন৷ আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿110﴾ سورة الكهف
‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا يارسول الله وما الشرك الأصغر قال: الرياء
‘তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বিশী করছি তা হল শিরকে আসগরধ৷ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)
পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করাও এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত৷ যেমন কোন ব্যক্তি শুধু মাল- সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ্জ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে৷
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
تعس عبد الدينار و تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميصة، تعس عبدالخميلة إن أعطي رضي إن لم يعط سخط.
‘ দীনার , দিরহাম এবং খামিসা- খামিলা (তথা উত্তম পোশক-পরিচ্ছদ- এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস৷ তাকে দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়৷ ‘

#উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা যাচ্ছে যে,শিরকে আকবার ও শিরকে আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে৷ সেগুলো হল:

১. কোন ব্যক্তি শিরকে আকবারে লিপ্ত হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয় না৷

২. শিরকে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা৷

৩. শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব আমল নষ্ট করেনা৷ বরং রিয়া ও দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু তত্সংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে৷

৪. শিরকে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল মুসলমানদের জন্য হালাল৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল নয়

★ #শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত ?

১. এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়৷ কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো৷ আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’
জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা৷ সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে৷ আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়৷

২. আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্ল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ﴿48﴾ سورة النساء
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন৷ ‘

৩. আল্লাহ এও বলেনওয, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ তিনি বলেন
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿72﴾ سورة المائدة
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম৷ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই৷’

৪. শিরক সকল আমরকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿88﴾ سورة الأنعام
‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত৷’
আল্লাহ আরো বলেন:
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿65﴾ سورة الزمر
‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন৷’

৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়া উভয়ই হালাল৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿5﴾ سورة التوبة
‘অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর৷ আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত্ পেতে বসে থাক৷’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أمِرْتُ أنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَاإلَهَ إلَّا الله، فإذَا قَالُوْاهَا عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءهُم وَأمْوَالَهُم إلَّا بِحَقِّهَا
‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে৷ অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল৷ অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে৷’

৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ৷
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’
শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম’

জুমার দিনে নফল রোযা রাখা যাবে কি?

 উত্তর:-

খাস করে জুমআর দিন রোযা রাখা যাবেনা,
প্রথম দলিল-

بَاب صَوْمِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَإِذَا أَصْبَحَ صَائِمًا يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَعَلَيْهِ أَنْ يُفْطِرَ يَعْنِي إِذَا لَمْ يَصُمْ قَبْلَهُ وَلاَ يُرِيدُ أَنْ يَصُومَ بَعْدَهُ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ حَدَّثَنَا أَبُو صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلاَّ يَوْمًا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুম‘আর দিনে সওম পালন না করে কিন্তু তার পূর্বে একদিন অথবা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে সওম পালন করা যায়)।
{বুখারী ১৯৮৫}

দ্বিতীয় দলিল-

بَاب صَوْمِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَإِذَا أَصْبَحَ صَائِمًا يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَعَلَيْهِ أَنْ يُفْطِرَ يَعْنِي إِذَا لَمْ يَصُمْ قَبْلَهُ وَلاَ يُرِيدُ أَنْ يَصُومَ بَعْدَهُ حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ شُعْبَةَ ح وحَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي أَيُّوبَ عَنْ جُوَيْرِيَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَهِيَ صَائِمَةٌ فَقَالَ أَصُمْتِ أَمْسِ قَالَتْ لاَ قَالَ تُرِيدِينَ أَنْ تَصُومِي غَدًا قَالَتْ لاَ قَالَ فَأَفْطِرِي وَقَالَ حَمَّادُ بْنُ الْجَعْدِ سَمِعَ قَتَادَةَ حَدَّثَنِي أَبُو أَيُّوبَ أَنَّ جُوَيْرِيَةَ حَدَّثَتْهُ فَأَمَرَهَا فَأَفْطَرَتْ

জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুয়াইরিয়া) সওম পালনরত ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি গতকাল সওম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি আগামীকাল সওম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে সওম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ (রহ.) স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সওম ভঙ্গ করেন।
{বুখারী ১৯৮৬}

যে (মহা বোকামী পূর্ণ) ভুল ধারণাটি গুনাহ করতে অসংখ্য মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তার অকাট্য আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক জবাব

 আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ

 আমরা প্রায় সব মুসলিমরাই একথা জানি যে, আল্লাহ তাআলা নিঃসন্দেহে পরম দয়ালু, অতি ক্ষমাশীল, তাওবা কবুলকারী, করুণাময় এছাড়াও যাবতীয় অনন্য গুণের অধিকারী ।  ?

? কিন্তু অনেকের মধ্যেই এই ভুল ধারণাটি কাজ করে যে, আমি এই দুনিয়ার বিভিন্ন সুখের ভোগ-সামগ্রী গুলো উপভোগ করে নেই (ন্যায়-অন্যায়কে উপেক্ষা করে যদিও অন্যায়টি মহা কাবীরাহ গুনাহ হয়ে থাকে) আর এক সময় আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব যেহেতু তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, তাওবা কবুলকারী সুতরাং … চালিয়ে যাই । এমন কথা বা মনোভাব কারো কারো মুখে বলতে শুনা যায় আর সাধারণত অনেকেরই আচরণে, দৈনন্দিন কার্যাবলীতে, চিন্তা-ধারায় তথা জীবনের লক্ষ্যে বহিঃপ্রকাশ ঘঠে । 

 এটা যে মহা ভুল ধারণা এটাই নিম্নোক্ত লিখনীতে আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে প্রমাণ করা হয়েছে । ? ? ?

 এটি মাত্র ১৩০ কেবি (এডোব রিডার) ফাইল । নিচে যথাক্রমে নাম, পিডিএফ ও সূচীর জেপিজি ডাউনলোড লিংক দেয়া হল-?

? যে (মহা বোকামী পূর্ণ) ভুল ধারণাটি গুনাহ করতে অসংখ্য মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তার অকাট্য আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক জবাব 

ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ?

https://docs.google.com/uc?id=0B0_J-Dyjaa1gTURYZklDdWtDWVk&export=download

অথবা

অনলাইনে পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ?

https://drive.google.com/file/d/0B0_J-Dyjaa1gTURYZklDdWtDWVk/view?usp=drivesdk

যে (মহা বোকামী পূর্ণ) ভুল ধারণাটি গুনাহ করতে অসংখ্য মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তার অকাট্য আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক জবাব

শয়তানের প্ররোচনা, জীনের আসর এবং জাদুর কুপ্রভাব থেকে বাঁচার অতি সহজ দশটি আমাল

 আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

? অনেকেই শয়তানের প্ররোচনা, জীনের আসর এবং জাদুর কুপ্রভাব থেকে বেঁচে থাকতে শিরকী, বিদআতী পন্থা ও আমাল করে থাকেন । অনেকে আবার, প্রতারকদের ধোঁকায় পড়ে মূর্খতাঃবশত প্রতারণার আচ্ছন্নতায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে আল্লাহ -কে ভুলে, আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসের দিক-নির্দেশনা না জানার কারণে বিভিন্ন অপব্যাখ্যার ফাঁদে পড়ে মন্ত্র পড়া, নকশা আঁকা তাবিজ ও তৎসংশ্লিষ্ট শিরকী পন্থার আশ্রয় নিয়ে থাকেন । 

? ? ? নিচে এমন কিছু রত্নতূল্য সহীহ আমাল আপনাদের উপহার দিলাম যেগুলোর উপর নিয়মিত আমাল ইনশা আল্লাহ, উল্লেখিত -সহ তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা গুলো থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন । ?

 পুরো লিখনী পড়ার পাশাপাশি প্রথম তিন পৃষ্ঠা (ও *** এর সব লিখা) অতি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য গুরুত্বের সাথে অনুরোধ করছি । 

 এটি মাত্র ১৫০ কেবি পিডিএফ ফাইল । নিচে যথাক্রমে নাম ও ডাউনলোড লিংক দেয়া হল- ?

 শয়তানের প্ররোচনা, জীনের আসর এবং জাদুর কুপ্রভাব থেকে বাঁচার অতি সহজ দশটি আমাল 

ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ?

https://docs.google.com/uc?id=0B0_J-Dyjaa1gbWtTdUhITFI4SEE&export=download

অথবা

অনলাইনে পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ?

সালাতে যেই ৭টি স্থানে দো’আ করা যায়

 السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

Assalamu Alaikum Owarahmatullahi Owabarakatuh
?????????????????
______________________________

???আমরা অনেকেই জানি, সালাতের সিজদাতে ও সালাম ফিরানোর আগে দো‘আ করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সালাতে মোট কতগুলো জায়গায় দো‘আ করা যায়? সেইগুলো কি কি????

??নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে মোট ৭টি স্থানে দো’আ করতেন। সালাতে যেই ৭টি স্থানে দো’আ করা যায়ঃ??

?. সানাঃ তাকবীর তাহরীমার আল্লাহু আকবার বলে বুকে হাত বাঁধার পরে, সালাত শুরুর দিকে সানা হিসেবে দো‘আ পড়া যায়। এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দো‘আ করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দো’আগুলো করেছেন শুধু সেই দো’আগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দো’আটি আরবীতেই করতে হবে।
প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে সানা বলি, সহীহ হাদীসে এখানে অন্য আরো সানা আছে, যেই সানাতে দো‘আ আছে। সানা হিসেবে আমরা যেটা পড়ি এর পরিবর্তে ঐ দো’আর সানা পড়া যাবে। বরং অনেক আলেম সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত সানার ঐ দো’আটাকে বেশি ভালো বলে মত দিয়েছেন। আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সানা হিসেবে দুয়াটার অর্থের দিকে লক্ষ্য করুন, তাহলে বুঝবেন কত সুন্দর দুয়া এটা। অলসতা করে মুখস্থ না করার কারণে আপনি মহামূল্যবান এই দুয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিন্তা করুন এতো সুন্দর ভাষায় আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে সালাত শুরু করলে আল্লাহ তা’আলা সেই সালাতকে কত বেশি পছন্দ করবেন! তাই প্রিয় বন্ধুরা! অলসতা বাদ দিয়ে কষ্ট করে এই দুয়াটা মুখস্থ করে মাঝে মাঝে পড়ার চেষ্ট করবেন। যখন সময় কম থাকে বা অলসতা লাগে তখন ছোট যেটা সুবহা’নাকা আল্লাহুম্মা…এটা পড়লেন আর যখন সময়, ইচ্ছা, শক্তি-সামর্থ্য আছে বা এমনিতেই একবার তোওবা করার ইচ্ছা সানা হিসেবে এই দুয়াটা পড়লেন।

দো‘আটি হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَدِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বাইয়ি’দ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্‌সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।”

?বুখারীঃ ৭৪৪, মুসলিমঃ ৫৯৮।

?. দুয়া কুনুতঃ কিরাত শেষ করে রুকুতে যাবার আগে দুয়া কুনুত পড়া সুন্নত। বিতির সালাতে ও সাময়িকভাবে ফজরের ফরয সালাতেও (মুসলিমদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য, অত্যাচারী কাফেরদের বদদুয়া করার জন্য অথবা উম্মাহর বিশেষ প্রয়োজন এমন সময়ে) দুয়া কুনুত পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। সবচাইতে সহীহ ও অর্থের দিক থেকে বেশি সুন্দর যে দুয়া কুনুত সেটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ؛ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، [وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ]، تَبارَكْتَ رَبَّنا وَتَعَالَيْتَ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়াবা-রিক লী ফীমা আ‘ত্বাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা ফাইন্নাকা তাক্ব‌্দ্বী ওয়ালা ইউক্ব্‌দ্বা ‘আলাইকা। ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাও ওয়া-লাইতা, [ওয়ালা ইয়া‘ইয্যু মান ‘আ-দাইতা।] তাবা-রক্‌তা রব্বানা ওয়া তা‘আ-লাইতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন, আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কারণ আপনিই চূড়ান্ত ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয় না। আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন সে অবশ্যই অপমানিত হয় না [এবং আপনি যার সাথে শত্রুতা করেছেন সে সম্মানিত হয় না।] আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের রব্ব! আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান।”
সুনান গ্রন্থকারগণ, আহমাদ, দারামী ও বাইহাকী এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। আবু দাউদঃ ১৪২৫, তিরমিযীঃ ৪৬৪, নাসাঈঃ ১৭৪৪, ইবন মাজাহঃ ১১৭৮, আহমাদঃ ১৭১৮, দারামীঃ ১৫৯২, হাকিমঃ ৩/১৭২, বাইহাকীঃ ২/২০৯। আর দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকীর। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহঃ ইরওয়াউল গালীলঃ ২/১৭২।
দেখা যাচ্ছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুয়াটি অনেকগুলো হাদীস গ্রন্থেই উল্লেখ করা হয়েছে। এথেকে এর মর্যাদা বোঝা যাচ্ছে। দুয়া কুনুতের দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে।

?. রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েঃ রুকু থেকে দাঁড়িয়ে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন দুয়া করতেন।
(আল্লামাহ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম এখানে তার বইয়ে যেই দুয়াটা উল্লেখ করেছেন সেটা আমি খুঁজে পাইনি বলে দিতে পারলাম না, দুঃখিত)।

?. রুকুতে দুয়া করা যায়ঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুর মাঝেও দুয়া করতেন। তবে রুকুতে নিজে থেকে কোন দুয়া করা নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুতে যেই দুয়া করেছেন সেই দুয়া করা যাবে। রুকুতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়া করেছেন তাহলঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলেন যেঃ সুরা নাসর নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো এই দুয়া পড়া ছাড়া সালাত পড়তে দেখিনি।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহা’মদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রব্ব। তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি, তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
সুবহা’নাকা – পবিত্রতা ঘোষণা করছি, রাব্বানা – হে আমাদের রব্ব, ওয়া = এবং, বিহা’মদিকা = প্রশংসা সহকারে, আল্লা-হুম্মা = হে আল্লাহ! আল্লা-হুম্মা + মাগফিরলী = আল্লা-হুম্মাগফিরলী, আল্লা-হুম্মা = হে আল্লাহ! মাগফিরলি = তুমি আমাকে ক্ষমা করো
এই দুয়া রুকু এবং সিজদা দুই জায়গাতেই পড়া যায়, ১/৩ করে। এই দুয়া পড়ার আগে তাসবীহগুলো পড়ে নিতে হবে।
দুয়াটার রেফারেন্স হলোঃ সহীহ মুসলিম ৯৬৯।

?. সিজদাতে দুয়া করাঃ

?. দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দো‘আ করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দো‘আ আরবীতেই করতে হবে।

?ছোট্ট এই দো’আ কি মুখস্থ করা যায়না?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দো’আটি করতেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।

অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর।

?আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দো’আটা সহীহ।

এই ছোট্ট দো‘আ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দো’আ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তাওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা করা)।

এছাড়া আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي

?উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।

হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন।

? আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।

?. দুয়া মাসুরাঃ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) ও দুরুদের পরে, সালাম ফিরানোর আগে দুয়া মাসুরা (হাদীসে বর্ণিত দুয়াগুলো) ও নিজের পছন্দমতো দুয়া করা যায়। ফরয সালাতের শেষ বৈঠকের দো‘আ আল্লাহ বেশি কবুল করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন দো‘আ সর্বাধিক শোনা (কবুল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামায সমূহের শেষাংশে”।

?তিরমিযী ৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় দো‘আ মাসুরা হচ্ছে ৪টি বিষয় থেকে আশ্রয় চাওয়ার দো‘আ ।
কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব, দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর সময়ের ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য দুয়া মাসুরাঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যেকোনো সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দো’আ পড়তে বলেছেন।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আ’যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া ওয়াল্ মামাতি, ওয়ামিন সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহি’দ্-দাজ্জাল।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো।

?বুখারী ২১০২, মুসলিম ১/৪১২, হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা – ৯০।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো‘আ মাসুরা হিসেবে এই দুয়াটা পড়তে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। এছাড়া আরো অনেক দুয়া মাসুরা আছে অথবা আরবীতে অন্য দুয়াগুলো এইখানে পড়তে পারবেন ইন শা আল্লাহ। এছাড়া কুরআন অথবা হাদীসে বর্ণিত অন্য দো’আগুলো, রাব্বানা আতিনা…রাব্বির হামহুমা কামা…আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতে…এইরকম নিজের জন্য, মাতাপিতার জন্য, যেকোনো মুসলিমের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোন হালাল ও কল্যানকর কিছু চাওয়া যাবে।

??নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে এই ৭টি স্থানে নিজে দো‘আ করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও দো‘আ করতে বলেছেন।??

মূলঃ আল্লামাহ আল-হাফিজ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়া রাহিমাহুল্লাহ।
?বইয়ের নামঃ “আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামায পড়তেন”

Translate