Saturday, February 10, 2024

মেয়েদের পায়ে নূপুর পরা জায়েজ কি

 উত্তর: ইসলামে নারীদের সাজসজ্জা এবং অলংকার পরার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে ইসলাম নির্ধারিত শর্তাবলী মেনে তা করতে হবে। যেমন: পর পুরুষের সামনে সাজসজ্জা, অলংকারাদি, শরীর বা পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না এবং এতে শরিয়া বিরোধী বা হারাম এর মিশ্রণ থাকা চলবে না। সুতরাং একজন মুসলিম নারী পায়ের নূপুর পরিধান করতে পারে‌। তবে শর্ত হল, তাতে বাজনা থাকা যাবে না এবং তা পর পুরুষদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

ولا يَضْرِبْنَ بأرجُلِهِنّ لِيُعْلَمَ ما يُخْفِين من زِينَتِهِنّ
“আর তাদের পা দিয়ে যেন তারা আঘাত না করে যাতে তাদের অলংকারের যা লুকিয়ে আছে তা জানানো যায়।” [সূরা নূর এর ৩১ নং আয়াত] তবে স্বামী, মাহরাম পুরুষ অথবা মহিলা অঙ্গনে; পরলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

◍ বাজনাদার নূপুর পড়া বৈধ নয়:

🔰 একদিন মা আয়েশা রা. এর নিকট কোনও এক বালিকা বাজনাদার নূপুর পরে আসলে তিনি তাকে বললেন, “খবরদার! তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না।” অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” [সুনানে আবু দাউদ হাদিস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদিস : ৫২৩৭]

🔰 সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল,‌ শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।” [সহীহ মুসলিম হাদিস : ২১১৪] আল্লাহু আলাম
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফরজ গোসলের বিধান

 প্রশ্ন: রাতে স্বপ্নদোষ হলে এই শীতের সকালে গোসল সম্ভব নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে চাইলে কী করা উচিত?

উত্তর: স্বপ্নদোষ হওয়া বড় নাপাকির অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। সুতরাং এমনটি ঘটলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় পানি গরম করে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যে, সেখানে পানি গরমের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের কারণে অসুস্থ হওয়ার কিংবা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে এক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ। কিন্তু পানি গরমের ব্যবস্থা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না।

◆ আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم

“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা তাগাবুন: ১৬]

◆ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ

“আমি যদি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে তা পালন করবে।” [সহিহ বুখারি]

◆ হাদিসে আরও এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

احتَلمتُ في ليلةٍ باردةٍ في غزوةِ ذاتِ السُّلاسلِ فأشفَقتُ إنِ اغتَسَلتُ أن أَهْلِكَ فتيمَّمتُ، ثمَّ صلَّيتُ بأصحابي الصُّبحَ فذَكَروا ذلِكَ للنَّبيِّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فقالَ: يا عَمرو صلَّيتَ بأصحابِكَ وأنتَ جنُبٌ ؟ فأخبرتُهُ بالَّذي مَنعَني منَ الاغتِسالِ وقُلتُ إنِّي سَمِعْتُ اللَّهَ يقولُ:( وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) فضحِكَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ولم يَقُلْ شيئًا

“যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় এক প্রচণ্ড শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হল, আমি যদি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকজনকে নিয়ে সালাত আদায় করলাম। পরে তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেন, “হে আমর, তুমি নাকি জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছো?”
তখন আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণী শুনেছি, (আল্লাহ বলেছেন,)

وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا

“আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’’ (সূরা নিসা: ২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।” [আবু দাউদ-সহিহ]

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মতির মাধ্যমে এমন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

إذا كان في محل لا يستطيع فيه تدفئة الماء وليس هناك كن يستكن به للغسل بالماء الدافي وخاف على نفسه فإنه يصلي بالتيمم
ولا حرج عليه

“যদি সে এমন জায়গায় থাকে যেখানে সে পানি গরম করতে পারে না এবং গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্য সেখানে এমন কোনো ঘর না থাকে যেখানে (ঠাণ্ডা থেকে) আত্মরক্ষা করবে এবং (ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের কারণে) শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করবে। এতে কোনও আপত্তি নেই।” [binbaz]

🔸উল্লেখ্য যে, এই বিধান স্বপ্নদোষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলন কিংবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের মাধ্যমে জুনুবি (নাপাক) হওয়ার ক্ষেত্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ও প্রসূতি নারীর পবিত্রতার জন্য গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

তায়াম্মুমের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি

 শরিয়তের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সহজে পালনীয়। মানুষের কষ্ট লাঘবের বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এর একটি উদাহরণ হল, তায়াম্মুমের বিধান। অর্থাৎ পানি সমস্যার কারণে পবিত্র মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা।

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন,

وَإنْ كُنْتُمْ مَرْضىَ أوْ عَلىَ سَفَرٍ أوْ جَاءَ أحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتيمموْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ أيْدِيَكُمْ مِنْهُ مَا جَعَلَ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنَّ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
“যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। (অর্থাৎ মুখ মণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মাসেহ কর।) আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান- যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” [সূরা মায়েদা: ৬]

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
جُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَ طَهُوْرًا، فَأَيُّمَا رَجُلٍ أدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ
“জমিন আমার জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ এবং সেজদা করার স্থান বানানো হয়েছে। অতএব করো নামাযের সময় হলে সে যেন তা আদায় করে নেয়। (অর্থাৎ সে যে স্থানেই থাকুক না কেন সেখানেই যথাসময়ে সালাত আদায় করে করবে এবং পানি না পেলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করবে।”” [বুখারি ও মুসলিম]

🔸কখন তায়াম্মুম বৈধ?

নিম্নলিখিত অবস্থায় তায়াম্মুম বৈধ:

▪️ ১. যদি মোটেও পানি না পাওয়া যায় অথবা যদি এত অল্প পরিমাণ পানি থাকে যে, তা দ্বারা ওযু বা গোসল করলে পান করার জন্য পানি সঙ্কট দেখা দিবে।
▪️ ২. পানি বিদ্যমান থাকার পরও যদি অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে তা ব্যবহারের অনুপুক্ত হয় (আর ঠাণ্ডা পানি গরম করারও ব্যবস্থা না থাকে)
▪️ ৩. পানি ব্যবহার করার কারণে যদি রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থতায় বিলম্ব হওয়ার বা শারীরে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
অথবা দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে যাওয়ার কারণে যদি সফর সঙ্গী, স্ত্রী-সন্তান বা অর্থ-সম্পদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে অথবা রাস্তায় শত্রুর ভয় থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা বৈধ।
– তায়াম্মুম করে সালাত আদায়ের পর যদি পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় বা পানি পাওয়া যায় তাহলে উক্ত সালাত পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নাই।
– তায়াম্মুমের এই বিধান ছোট-বড় যে কোন নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ ওজু বা ফরজ গোসল উভয়ের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।

🔸তায়াম্মুমের পদ্ধতি:

প্রথমে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করার পর বিসমিল্লাহ্‌ বলে উভয় হাতের তালু দ্বারা পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুত (ধুলা-বালি ইত্যাদি) এর উপর মারতে হবে। অতঃপর দু হাত ঝেড়ে বা তাতে ফুঁ দিয়ে মুখমণ্ডল এবং বাম হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত ও ডান তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মার ইবনে ইয়াসের রা. কে তায়াম্মুমের পদ্ধতি শিখাতে গিয়ে বলেন,
إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ أَنْ تَقُولَ هَكَذَا : وَضَرَبَ بِيَدَيْهِ إِلَى الأَرْضِ فَنَفَضَ يَدَيْهِ فَمَسَحَ وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ
“তোমার জন্য এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তার উভয় হাত মাটিতে মারলেন। অতঃপর তা ঝেড়ে মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের কব্জি মাসেহ করলেন।” [সহীহ মুসলিম: ৭০৬ ]

আরেকটি বর্ণনায় হাত ঝাড়ার পরিবর্তে দু হাতে ফুঁ দেয়ার কথা এসেছে:
ثُمَّ تَنْفُخَ ثُمَّ تَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَكَ وَكَفَّيْكَ
[সহীহ মুসলিম: ৭০৭ ]

উল্লেখ্য যে, তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে দু বার মাটিতে হাত মারা এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা সম্পর্কে সুনানে দারাকুত্বনীতে যে হাদিস রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। তাই তা আমলযোগ্য নয়।

🔸তায়াম্মুমের শর্তাবলী:
▪ ১. নিয়ত করা।
▪ ২. পানি অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে অথবা ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় তা ব্যবহার করতে অক্ষম হওয়া।
▪ ৩.তায়াম্মুমের মাটি পবিত্র হওয়া।
▪ ৪. বৈধ মাটি থেকে তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ অবৈধভাবে দখলকৃত জমিনের মাটি দ্বারা তায়াম্মুম বিশুদ্ধ নয়।

🔸যে সকল কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়:

▪ ১. পানি ব্যবহারে সক্ষম হলে অথবা পানি ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা দূর হলেই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে যদিও তায়াম্মুমকারী ব্যক্তি নামাজের মধ্যে থাকে অর্থাৎ নামাজরত অবস্থায় যদি পানি সমস্যা দূর হয়ে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ নামাজ ভঙ্গ করে ওজু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করবে তারপর পুনরায় তা আদায় করবে। তবে নামাজ শেষ করার পর যদি পানি সমস্যা দুর হলে পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নাই।

উল্লেখ্য যে, উক্ত নামাজ পূণরায় পড়া জরুরি না হলেও উক্ত তায়াম্মুম দ্বারা অন্য কোন নামাজ পড়া বা যে সকল কাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক সেগুলো করা যাবে না বরং পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। কারণ যে সমস্যার কারণে তায়াম্মুমের বৈধতা দেয়া হয়েছিলো তা ইতোমধ্যে তা দূর হয়েছে।
▪২. অনুরূপভাবে যে সব কারণে ওযু নষ্ট হয় (যেমন: পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গত, ঘুম ইত্যাদি) বা যে সব কারণে গোসল ফরজ হয় সেগুলোর কোন একটি সংঘটিত হলে (স্ত্রী মিলন, বীর্যপাত, হায়েজ-নেফাস ইত্যাদি) তায়াম্মুম বিনষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
সংকলনে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

 রজব মাস সম্পর্কে আমাদের সমাজে লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই -পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহিহ নয় আর কিছু হাদিস এমন রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এ ধরণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলো:

🚫 ক. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস:

● ১) “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

ইবনে হাজার রহ. বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনু শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

এ হাদীসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তাই এ হাদীসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

● ২) “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।”

“হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯)

হাদীসটি দুর্বল।

এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন: মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন: মুনকারুল হাদীস। কুনা গ্রন্থে বলেন: “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

● ৩) “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: উক্ত হাদীসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে খুব দূর্বল। (তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা)

🚫 খ. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস:

● ১) রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।”

এটি জাল হাদীস।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদীস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন: এই হাদীসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

● ২) কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

হাদীসটি বানোয়াট।

ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদীসটি সনদের রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদীস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

● ৩) রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একমাস রোযা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”

হাদীসটি জাল।

এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

● ৪) “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামায আদায় করত: বিশ রাকায়াত নামায পড়বে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকায়াত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকায়াত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”

এটি একটি বানোয়াট হাদীস।

(দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৪)।)

● ৫) “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোযা রাখবে এবং চার রাকায়াত নামায পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
مأخوذ من كتاب البدع الحولية
‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা দুআর হাদিসটি জয়ীফ

 প্রশ্ন: “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।” দুআর এ হাদিসটি কি জয়ীফ? এ দুআটি কি পাঠ করা যাবে?

উত্তর:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।”
অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” [মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া]

হাদিসটি জয়ীফ বা দুর্বল।

● এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন, মুনকারুল হাদিস।

● ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?”
– আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।”
– কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”

● ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।”
[দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, পৃষ্ঠা: ১২, আয যুয়াফাউল কাবীর ২/৮১, তাহযীবুত তাহযীব ৩/৩০]

➧ জয়ীফ সনদে বর্ণিত এ দুআটি কি পাঠ করা যাবে?

দুআর ক্ষেত্রে জঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায় যদি তার অর্থের মধ্যে কোন সমস্যা না থাকে। যাহোক, উক্ত দুআর ব্যাপারে কথা হল, আমরা রমজান পর্যন্ত পৌছার জন্য দুআ করতে পারি। এতে সমস্যা নাই। সালাফ বা পূর্বসুরীগণ এই দুআ করতেন।

মুআল্লা ইবনুল ফযল বলেন,

كانوا يدعون الله تعالى ستة أشهر أن يبلغهم رمضان ، ويدعونه ستة أشهر أن يتقبل منهم

“তারা (সালাফগণ) আল্লাহর কাছে ছয় মাস দুয়া করতেন, তিনি যেন তাদেরকে রমজান পর্যন্ত উপনীত করেন এবং বাকি ছয় মাস দুআ করতেন যেন, (রমজানের ইবাদত-বন্দেগি) কবুল করেন।”

আর বারো মাসের মধ্যে কেবল রজব ও শাবান মাস নয় বরং সারা বছরই আমাদের বরকত প্রয়োজন।

সুতরাং কেবল এই দু মাস নির্দিষ্ট না করে সারা বছরের প্রতিটি দিন বরকত মণ্ডিত হওয়ার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দুআ করতে পারি।

❑ শাইখ আব্দুল করিম আল খুযাইয়ের (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়:

“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।” এ হাদিসটি কি সহিহ?

তিনি বলেন,

” هذا حديث لا يثبت ، لكن إن دعا المسلم بأن يبلغه الله عز وجل رمضان، وأن يوفقه لصيامه وقيامه، وأن يوفقه لإدراك ليلة القدر ، أي بأن يدعو أدعية مطلقة فهذا إن شاء الله لا بأس به

“এটি সহিহ হিসেবে সাব্যস্ত নয়। কিন্তু কোনও মুসলিম যদি এই দুআ করে যে, আল্লাহ যেন তাকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন এবং সে মাসে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা ও তারাবিহ সালাত) এর তাওফিক দান করেন, লাইলাতুল কদর পাওয়ার তাওফিক দেন অর্থাৎ সাধারণভাবে দুআ করে তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোনও সমস্যা নেই।” আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ওজু বিনষ্টের কারণ সমূহ

 নিম্নে ওজু বিনষ্টের কারণ সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

১. যে কোন অবস্থায় পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হয়ে যাওয়া। যেমন: পেশাব, মজি (পাতলা তরল পদার্থ বা কামরস), ওদি (পেশাবের পর নির্গত অপেক্ষাকৃত গাঢ় তরল পদার্থ) ইত্যাদি। মজি বলা হয়, পাতলা আঠালো জাতীয় পানিকে যা স্ত্রী শৃঙ্গারে বা সঙ্গমের কথা স্মরণ করলে বা ইচ্ছা করলে লিঙ্গ থেকে নির্গত হয়।

আলি রা. বলেন, আমার খুব বেশি মজি (পাতলা তরল পদার্থ বা কামরস) নির্গত হত। তখন আমি মিকদাদ রা. কে অনুরোধ করলাম, এ সম্পর্কিত বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করতে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, «فيه الوضوء» “এতে ওজু করা আবশ্যক।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবু দাউদের বর্ণনায় বলা হয়েছে: তিনি বলেছেন, فليَغسلْ ذكَرَه وأُنثييه “সে যেন স্বীয় লিঙ্গ এবং অণ্ডকোষ ধৌত করে নেয়।”
– ওদী বলা হয়, পেশাবের পর নির্গত গাঢ় সাদা পানিকে। এটা নাপাক।

আয়েশা রা. বলেন, “ওদী হচ্ছে যা পেশাবের পর নির্গত হয়। এজন্য লিঙ্গ এবং অণ্ডকোষ ধৌত করবে এবং ওজু করবে; গোসল করবে না।” [ইবনুল মুনযির]
২. ঘুমে অচেতন হলে অথবা অন্য কোন কারণে বেহুশ হলে। [আহমদ, নাসাঈ, তিরমিযী। তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।]
বসা অবস্থার নিদ্রা ওজু ভঙ্গ করে না। [মুসলিম]
৩. কোন পর্দা ব্যতীত গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করা। শিশুর গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করলেও ওজু নষ্ট হয়। [আহমদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

8. উটের মাংস ভক্ষণ করা। [মুসলিম]
(দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ মতে এসব কারণে অজু ভেঙ্গে যায়)।

প্রকাশ থাকে যে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, মুখ ভরে বমি করা, শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া, স্ত্রীকে চুম্বন করা ইত্যাদি কারণে ওজু বিনষ্ট হয় না। (যদিও কিছু আলেম এগুলোকেও ওজু ভঙ্গের কারণ বলেছেন)। কেননা এ সকল ক্ষেত্রে ওজু বিনষ্ট হওয়ার পক্ষে বিশুদ্ধ কোন হাদিস নেই। আল্লাহু আলাম।
উৎস: ফিকহ, লেভেল-১
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী রাহ.
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

আল্লাহর নামের জিকির করার সঠিক পদ্ধতি

 শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ শব্দে অথবা ‘ইয়া রাহমান, ইয়া রাহিম, ইয়া গাফূরু ইত্যাদি বলে জিকির করা বিদআত: আল্লাহর নামের জিকির করার সঠিক পদ্ধতি

প্রশ্ন: আল্লাহর বিশেষ কোন নাম ধরে কি তাঁর জিকির করা জায়েজ আছে? যেমন: মানুষ বলে, ‘আল্লাহ আল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া গাফূরু, ইয়া গাফূরু’ ইত্যাদি বলে জিকির করা।
আমি জানি, ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলা বিদআত। কিন্তু ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলার হুকুম কী?

উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। ‘আল্লাহ’ শব্দ দ্বারা জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে এই ইবাদতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হেদায়েত কি ছিল তা আমাদের জানা দরকার। যেমনটি অন্যান্য ইবাদতের নিয়মও জানা দরকার। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতে জিকির ও দুয়ার ক্ষেত্রে শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারের কোন প্রমাণ নেই। চাই আল্লাহ শব্দের ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে হোক বা জযম দিয়ে হোক-কোন প্রমাণ নেই।

অনুরূপভাবে শুধু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে তাঁকে ডাকারও কোন দলিল নেই। যেমন: মানুষ বলে থাকে, ইয়া লাতীফু ইয়া লাতীফু, অথবা ইয়া গারফূরু ইয়া গাফূরু.. ইত্যাদি।
তাছাড়া এ ধরণের জিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বা কথা বলা হয় না। আর এতে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশ পায় না।
এটা একক শব্দ যাতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে ডেকে যদি কোন আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না করা হয়, তবে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যায়।

শাইখ সালেহ ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, এটা বিদআত।

নামাজের পর বা বিশেষ কোন সময়ে আল্লাহর নাম সমূহ জিকির করা এবং তার অভ্যাস গড়ে তোলা বিদআত। যেমন: ইয়া লাতীফু,ইয়া লাতীফু বা এরকম কোন নাম বিশেষ সংখ্যা ও বিশেষ পদ্ধতিতে জিকির করা। এগুলো ইসলামে সবই নতুন সৃষ্টি তথা বিদআত।
উত্তম হেদায়েত হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হেদায়েত। আর নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে এই দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে ভ্রষ্টতা। [আল মুনতাকা মিন ফাতাওয়া ফাওযান, ২/৮]
তাই যখন বলবে:
– ‘ইয়া আল্লাহ ইরহামনী’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে দয়া কর।
– ‘ইয়া গাফূরু ইগফির লী’ অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা কর।
– ‘ইয়া রাযযাকু উরযুকনী’ হে রিজিক দাতা, আমাকে রিজিক দান কর। তখন তা হবে অর্থবোধক বাক্য এবং সেটা বৈধ জিকির।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী মাদানি রাহ.
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

আবুল আলা নামের ব্যাপারে সংশয় নিরসন

 কিছু মানুষ ‘আবুল আলা’ নামটির ব্যাপারে আপত্তি করে থাকে। তারা বলে থাকে, “আলা আল্লাহর নাম। সুতরাং ‘আবুল আলা’ অর্থ হয়, আল্লাহর পিতা। (নাউযুবিল্লাহ)। সুতরাং ‘আবুল আলা’ না বলে ‘আব্দুল আলা’ (আল্লাহর বান্দা) বলতে হবে।”

নিম্নে এই সংশয় নিরসন এবং এ বিষয়ে সঠিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল:

‘আবুল আলা’ নামটি ভারত উপমহাদেশে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি নাম। কিন্তু আরবি ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকার কারণে কিছু মানুষ উপরোক্ত বিভ্রান্তি মূলক ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করে থাকে। ফলে মানুষ এ নাম নিয়ে মহা বিড়ম্বনায় পড়ে যায় এবং নাম পরিবর্তনের জন্য অস্থির হয়ে যায়। অথচ এ নামটিতে শরিয়ত বিরোধী বা আপত্তিকর কিছু নেই। কারণ ‘আবুল আলা’ শব্দটির সঠিক আরবি উচ্চারণ হবে: أبو العلاء (আবুল আলা)। এর অর্থ: সুউচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, সম্মানের অধিকারী। যেমন আমাদের দেশে আলাউদ্দিন (علاء الدين) নামে বহু মানুষের নাম রয়েছে। এখানেও ‘আলা’ শব্দের অর্থ: উচ্চ মার্যাদা বা সম্মান। অর্থাৎ উভয় নামের মধ্যে ‘আলা’ শব্দটি একই অর্থ বোধক।

◆ একজন বিখ্যাত আরবি কবি, সাহিত্যক ও নাহবি (ব্যকরণ বিদ)-এর নাম: আবুল আলা আল মাআররি (أبو العلاء المعري)। [পুরো নাম: আহমদ বিন আব্দুল্লাহ আল মায়াররি-সিরিয়া]

সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘আবুল আলা’ নামে কোন আপত্তি নেই।

◆ তবে কারও নাম হিসেবে আরবি أبو الأعلى (আবুল আ’লা) লেখা বা উচ্চারণ করা জায়েজ নাই। কেননা “আল আ’লা” হলো, মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
“আপনি আপনার সর্বোচ্চ পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।” [সূরা আ’লা: ১]

আমরা সেজদার তাসবিহ হিসেবে পাঠ করে থাকি: سبحان ربي الأعلى (সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা) অর্থ: “আমি আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।”
◆ সুতরাং কেউ যদি এ নামটি আরবিতে أبو الأعلى “আবুল আ’লা” লিখে বা উচ্চারণ করে তাহলে তা জায়েজ হবে না। যেমন: পাকিস্তানের একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উর্দু বা আরবিতে أبو الأعلى লেখা হয়। যা নিঃসন্দেহে ভুল। বরং এ ক্ষেত্রে عبد الأعلى ‘আব্দুল আ’লা’ (সুউচ্চ আল্লাহর বান্দা) লেখা আবশ্যক।
আসলে বাংলা ভাষী মানুষেরা ‘আবুল আ’লা’ উচ্চারণ করে না বরং সাধারণভাবে ‘আবুল আলা’ উচ্চারণ করে থাকে। তাই ‘আবুল আলা’ (أبو العلاء)-ই ধরতে হবে; “আবুল ‘আ’লা” (أبو الأعلى) নয়। তাহলে এ নামে আর আপত্তি থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
মোটকথা, শব্দের বানান ও উচ্চারণ ভেদে অর্থের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ

 ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের, সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন হারাম ও কবিরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো:

✪ ১. ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লানত (অভিসম্পাত) করেছেন। তিনি বলেছেন, “ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।” ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং উমর রা. অমুককে বের করে দিয়েছেন।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬]

➤ হাদিসের ব্যাখ্যা:

এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।

✪ ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

ثَلاَثٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : الْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ وَالدَّيُّوثُ

“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না। তারা হল:
ক. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান,
খ. পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী
গ. এবং দাইয়ুস। [মুসনাদ আহমদ: ৬১৮]

✪ ৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবু দাউদ : ৪০৯৮]

✪ ৪. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ

“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ]

✪ ৫. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَعَنَ الْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ وَالْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন যেসব নারী পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” [আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ,অনুচ্ছেদ: নারীদের পোশাক। সহীহ]

পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোশাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে।

◯ ইসলাম প্রদত্ত পোশাকের মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ:

● পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
● বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
● খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না যাতে লজ্জা স্থানগুলো ফুটে উঠে বা দেখা যায়।
● বিধর্মীদের ধর্মীয় পোশাকের মত হবে না (যেমন: বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোশাক),
● সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন ও কালারে পোশাক পরিধান যাবে না যাকে হাদিসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে ইত্যাদি।
আল্লাহ আমাদেরকে এসকল ভয়াবহ গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা ও লেনদেন এবং খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান

 ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান এবং হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি:

❑ এক. ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান: আমাদের জানা আবশ্যক যে, একজন হিজড়া এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই বিয়ে-যৌনতা ইত্যাদি কিছু বিধি-বিধান ছাড়া। তারাও আল্লাহর প্রতি ঈমান-কুফরি, আল্লাহর আনুগত্য-নাফরমানি, ইবাদত-বন্দেগি, ইসলামের বিধিবিধান পালন এবং সামাজিক সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই। তারাও ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া-পরহেজগারিতা, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত।
তারা যদি নেকির কাজ করে তাহলে আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে এবং যদি কোন অন্যায় করে আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কারণ তারাও মানুষ। আর প্রতিটি সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ প্রযোজ্য।

◆ আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মানুষের উদ্দেশ্য বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‎

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারবে।” [সূরা বাকারা: ২১]

◆ তিনি‌ আরও বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” [সূরা নিসা: ১]

◆ আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬]

এভাবে কুরআনে আল্লাহ মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য সুস্থ মস্তিষ্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মানুষই এর অন্তর্ভুক্ত। চাই সে সুস্থ হোক, অসুস্থ হোক, স্বাভাবিক হোক বা প্রতিবন্ধী হোক, সাধারণ নারী-পুরুষ হোক বা হিজড়া হোক। কেউই এ নির্দেশনার বাইরে নয়। তবে তারা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী। এটি আল্লাহ তাআলার কর্ম কুশলতা এবং সৃষ্টি বৈচিত্রের নিদর্শন।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে হিজড়াদেরকে ভিন্ন চোখে দেখা হয় এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে তারাও জীবন-জীবিকার তাগিদে এমন কিছু কাজ করে যা অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়-জুলুমের পর্যায়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূর করতে হবে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধীদের মত লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিজড়ারা আমাদের সভ্য সমাজেরই অংশ। তারা আমাদেরই কারও সন্তান। অতএব তাদেরকে নপুংসক বলে তিরস্কার করা যাবে না, তাদেরকে হেয় বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না, অন্যায়ভাবে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করা যাবে না, তাদেরকে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, হালাল পন্থায় চিত্তবিনোদন এবং সামাজিক নিরাপত্তা, বিচার পাওয়া ইত্যাদি কোনও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মোটকথা, যারা সৃষ্টিগতভাবে প্রকৃতই হিজড়া ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের সাথে সাধারণভাবে মেলামেশা, উঠবস, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কোন আপত্তি নেই। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাও জরুরি যে, বর্তমানে হিজড়া হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ প্রকৃত হিজড়া নয় বরং তারা কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া বেশ ধারণ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে আবার কিছু মানুষকে দুষ্কৃতিকারীরা বাধ্য করে হিজড়া বানিয়ে রেখেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

❑ দুই. হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি:

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিকাহবিদ এবং সৌদি আরবের সাবেক মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,

الخنثى فيه تفصيل؛ فالخنثى قبل البلوغ يشتبه هل هو ذكر أو أنثى؛ لأن له آلتين آلة امرأة وآلة رجل، لكن بعد البلوغ يتبين في الغالب ذكورته أو أنوثته. فإذا ظهر منه ما يدل على أنه امرأة مثل أن يتفلك ثدياه، أو ظهر عليه ما يميزه عن الرجال بحيض أو بول من آلة الأنثى، فهذا يحكم بأنه أنثى وتزال منه آلة الذكورة بالعلاج الطبي المأمون. وإذا ظهر منه ما يدل على أنه ذكر كنبات اللحية والبول من آلة الذكر وغيرها مما يعرفه الأطباء فإنه يحكم بأنه ذكر ويعامل معاملة الرجال، وقبل ذلك يكون موقوفًا حتى يتبين الأمر، فلا يزوج حتى يتبين الأمر هل هو ذكر أو أنثى، وهو بعد البلوغ كما قال العلماء بتبين أمره

“হিজড়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা রয়েছে। বয়ঃসন্ধির আগে একজন হিজড়া সে পুরুষ না মহিলা তা অনিশ্চিত। কারণ তার দুটি যন্ত্র আছে, একটি নারীর অপরটি পুরুষের। কিন্তু বয়ঃসন্ধির পর তার পুরুষত্ব বা নারীত্ব প্রায়শই স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি লক্ষণ দেখায় যে, সে একজন নারী, যেমন: তার স্তন শিথিল হয়ে যাওয়া, অথবা এমন কিছু যা তাকে পুরুষদের থেকে আলাদা করে। যেমন: ঋতুস্রাব বা যৌনাঙ্গ থেকে প্রস্রাব তাহলে তাকে নারী বলে গণ্য করা হবে এবং নিরাপদ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গটি রিমুভ করে ফেলতে হবে। আর যদি তার মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যায় যা ইঙ্গিত করে যে সে একজন পুরুষ, যেমন: দাড়ি বৃদ্ধি, লিঙ্গ থেকে প্রস্রাব ইত্যাদি যে সব বিষয় ডাক্তারগণ জানেন, তাহলে তাকে পুরুষ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার সাথে পুরুষের মতই আচরণ করা হবে।
তবে যদি কোন একটি দিক পরিষ্কার না হয় তাহলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। তাই যতদিন না বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে তিনি একজন পুরুষ নাকি নারী (যা বিশেষজ্ঞদের মতে বয়ঃসন্ধির মাধ্যম প্রকাশিত হয়) তার বিয়ে দেওয়া যাবে না।” [binbaz org]
আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামাজ রোজা উমরা ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে

 প্রশ্ন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামাজ, রোজা, উমরা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে?

উত্তর: রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভূক্ত।

যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোজা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোজা রাখতেন। তিনি রমজান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতেন রমজান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতেন না। [বুখারী, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম]

রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফজিলতে সব চেয়ে বেশি যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দু্আটি:
اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, ১/২৫৯]
এ হাদিসটি দুর্বল।

এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন, মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব ৩/৩০]

ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন, “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোজার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।” [ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা]

– ইবনে রজব বলেন, রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবিদের থেকে কোন কিছুই সহীহ ভাবে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশি বেশি রোজা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন, আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।
কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদিস প্রমাণিত হয়নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।

– আবু শামা রহ. বলেন, কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ নয় শরিয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।

ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফজিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন: আরাফাহর দিনে রোজা রাখা, আশুরার দিনে রোজা রাখা, গভীর রাতে নফল নামাজ পড়া, রমজান মাসে উমরা আদায় করা।

অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফজিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজমাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ।
মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। [আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮]
[আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]

সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামাজ, নফল রোজা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যহত রাখতে পারে। মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে আলাদা কোন ধরণের ইবাদত করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।

Translate