Saturday, October 8, 2022

সালাতুল ইস্তিস্ক্বা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের বিধান

 প্রশ্ন: সালাতুল ইস্তিস্ক্বা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের বিধান কি? উক্ত সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
ইস্তিস্‌ক্বা অর্থ: পান করার জন্য বৃষ্টি বা পানি প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায় ব্যাপক খরা ও অনাবৃষ্টির সময় বিশেষ পদ্ধতিতে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করাকে ‘ছালাতুল ইস্তিস্ক্বা’ বলা হয়। স্বালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামায অনাবৃষ্টির সময় মহান প্রতিপালকের নিকট বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পড়া সুন্নত ৬ষ্ঠ হিজরীর রামাযান মাসে সর্বপ্রথম মদ্বীনায় ইস্তিসক্বার সালাতের প্রবর্তন হয়।(মির‘আত ৫/১৭০)
.
◾জমিনে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কারণ কি?
_______________________________
পৃথিবীতে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলে
মানুষের পাপ ও বিশেষ করে যাকাত বন্ধ করে দেওয়া। মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে (উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে)। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে। যে জাতিই তার মালের যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্যই আকাশ হতে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না।যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সে জাতির উপরেই তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করা হবে; যারা তাদের মালিকানা-ভুক্ত বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে।আর যে জাতির শাসকগোষ্ঠী যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর কিতাব (বিধান) অনুযায়ী দেশ শাসন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে গৃহদ্বন্দ্ব অবস্থায়ী রাখবেন।” (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ্‌ ৪০১৯ নং, সহীহ তারগীব ৭৫৯)।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “ পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি কি কি?’ তিনি বললেন, “যে জাতিই (আল্লাহর) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সেই জাতির উপরেই তাদের শত্রুকে ক্ষমতাসীন করা হবে। যে জাতিই আল্লাহর অবতীর্ণকৃত সংবিধান ছাড়া অন্য দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে সেই জাতির মাঝেই দরিদ্রতা ব্যাপক হবে। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ পাবে সে জাতির মাঝেই মৃত্যু ব্যাপক হবে। যে জাতিই যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সেই জাতির জন্যই বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে জাতি দাঁড়ি-মারা শুরু করবে সে জাতি ফসল থেকে বঞ্চিত হবে এবং দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৭৬০)

◾কখন কি প্রেক্ষিতে এ সালাত পড়তে হয়?
____________________________________
অনাবৃষ্টি, খরা ও দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে তখন এ সালাত আদায় করা সুন্নাত (মুগনী- ৩/৩৩৪)। আর খরা, অনাবৃষ্টি ও দূর্ভিক্ষের কারণ হলো পাপ কাজ বেড়ে যাওয়া। (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)।

◾কিভাবে সালাতুল ইস্তিস্ক্বা আদায় করতে হয়:
_______________________________________
মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে একান্ত বিনয়ের সাথে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঈদগাহ ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবে। সাথে ইমামের জন্য মিম্বর নিতে পারবে। অতঃপর নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বনে আযান ইকামত ছাড়া দুই রাকআত ইস্তিসক্বার সালাত আদায় করবে। (নিচে ৪ টি পদ্ধতি উল্লেখ করা আছে) এই সালাত ঈদের নামাযের মতই প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা পর অতিরিক্ত সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে ওঠে দাঁড়ানোর পর অতিরিক্ত আরো পাঁচ তাকবীর দেওয়ার বিধানও রয়েছে তবে এই অতিরিক্ত তাকবীর গুলো মুস্তাহাব কম বেশি হলে বা কেউ অতিরিক্ত তাকবীর না দিয়ে সাধারণভাবে দুই রাকাআত সালাত আদায় করলেও কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। প্রত্যেক রাকআতে সশব্দে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়,তবে প্রথম রাকআতে সূরা ‘আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়া পড়া উত্তম। নামাযের আগে অথবা পরে খুতবা দেওয়া যায়। যদি সালাত শেষে খুতবা দেওয়া হয় তাহলে ইমাম মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা মিম্বর ছাড়াই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লা-হু আকবর,
আলহামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আলামীন ওয়াছস সালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ শেষে মুছল্লীদের প্রতি ইস্তিস্ক্বার গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমান বর্ধক উপদেশসহ সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। (আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ইবনু আববাস (রাঃ) হতে; বুখারী হা/১০২২ ‘দাঁড়িয়ে ইস্তিস্কার দো‘আ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৫; মির‘আত ৫/১৮৯) খুতবায় ইমাম সাহেব বেশী বেশী ইস্তিগফার ও দুআ করবেন। মুক্তাদীগণ সে দুআয় ‘আমীন’ বলবে। এই দুআয় বিশেষ করে ইমাম (এবং সকলে) খুব বেশী হাত তুলবেন। মাথা বরাবর হাত তুলে দুআ করবেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৬৮, ইবনে হিব্বান, সহীহ, মিশকাত ১৫০৪) এমন কি চাদর গায়ে থাকলে তাতে বগলের সাদা অংশ দেখা যাবে। (সহীহ বুখারী ১০৩১, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫)

বৃষ্টি প্রার্থনার সময় উল্টা হাতে দুআ করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, সাধারণ প্রার্থনার করার সময় হাতের তেলো বা ভিতর দিকটা হবে আকাশের দিকে এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সময় হবে মাটির দিকে; আর হাতের বাহির দিকটা হবে আকাশের দিকে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘একদা নবী (ﷺ) বৃষ্টি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁর হাতের পিঠের দিকটা আকাশের দিকে তুলে ইঙ্গিত করলেন।’ (সহীহ মুসলিম, সহীহ ৮৯৫-৮৯৬) ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ প্রমুখ উলামাগণ বলেন, কোন কিছু চাওয়া হয় হাতের ভিতরের অংশ দিয়েই, বাইরের অংশ দিয়ে নয়। আসলে আল্লাহর নবী (ﷺ) হাত দুটিকে মাথার উপরে খুব বেশী উত্তোলন করলে দেখে মনে হয়েছিল যে, তিনি হাতের বাইরের অংশ আকাশের দিকে করেছিলেন। (আল-ইনসাফ ২/৪৫৮, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৮৩)

অতঃপর কিবলামুখ হয়ে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে চাদর উল্টাবেন; অর্থাৎ, চাদরের ডান দিকটাকে বাম দিকে, বাম দিকটাকে ডান দিকে করে নেবেন এবং উপর দিকটা নিচের দিকে ও নিচের দিকটা উপর দিকে করবেন। এরপর সকলে পুনরায় (একাকী) দুআ করে বাড়ি ফিরবে। চাদর উল্টানো এবং দুআর সময় উল্টাহাত করা আসলে এক প্রকার কর্মগত দুআ। অর্থাৎ, হে মওলা! তুমি আমাদের এই চাদর ওহাত উল্টানোর মত আমাদের বর্তমান দুরবস্থাও পাল্টে দাও। আমাদের অনাবৃষ্টির অবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দাও। (নামাযে নববী, সাইয়েদ শাফীকুর রহ্‌মান, লাহোর ছাপা ২৩৪পৃ:) প্রকাশ থাকে যে, ইস্তিসকার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। যে কোন একটি দিন ঠিক করে সেই দিনে নামায পড়া যায়। রোযা রাখা, পশু নেওয়া ইত্যাদির কথাও হাদীসে নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৭১-২৭২)

▪️বৃষ্টি প্রার্থনার দ্বিতীয় পদ্ধতি: জুমআর খুতবায় ইমাম সাহেব হাত তুলে দুআ করবেন এবং মুক্তাদীরাও হাত তুলে ‘আমীন-আমীন’ বলবে। একদা মহানবী (ﷺ) জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মরুবাসী (বেদুঈন) উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মাল-ধন ধ্বংস হয়ে গেল আর পরিবার পরিজন (খাদ্যের অভাবে) ক্ষুধার্ত থেকে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন।’ তখন নবী (ﷺ) নিজের দুইহাত তুলে দুআ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে দুআর জন্য হাত তুলল। ফলে এমন বৃষ্টি শুরু হল যে পরবর্তী জুমআতে উক্ত (বা অন্য এক) ব্যক্তি পুনরায় খাড়া হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ঘর-বাড়ি ভেঙে গেল এবং মাল-ধন ডুবে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দুআ করুন!’ মহানবী (ﷺ) তখন নিজেরহাত তুলে পুনরায় বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দুআ করলেন এবং বৃষ্টিও থেমে গেল। (বুখারী ৯৩২, ৯৩৩, ১০১৩, ১০২৯, মুসলিম, সহীহ ৮৯৭নং, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ৩/২৫৬, ২৭১)

▪️বৃষ্টি প্রার্থনার তৃতীয় পদ্ধতি :শুরাহ্‌বীল বিন সিমত একদা কা’ব বিন মুর্রাহ্‌কে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর হাদীস বর্ণনা করতে বললে তিনি বললেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, ‘আপনি মুযার (গোত্রের) জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন, “তুমি তো বেশ দুঃসাহ্‌সিক! (কেবল) মুযারের জন্য (বৃষ্টি)?” লোকটি বলল, ‘আপনি আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে দুআ করেছেন, তিনি তা কবুল করেছেন।’ এ কথা শোনার পর মহানবী (ﷺ) দুইহাত তুলে বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ করলেন এবং এত বৃষ্টি হল যে, তা বন্ধ করার জন্য পুনরায় তিনি দুআ করলেন। (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১২৬৯ বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা)

▪️বৃষ্টি প্রার্থনার চতুর্থ পদ্ধতি: ইমাম শা’বী কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমার (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বের হয়ে কেবল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে ফিরে এলেন। লোকেরা বলল, ‘আমরা তো আপনাকে বৃষ্টি চাইতে দেখলাম না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি সেই নক্ষত্রের মাঝে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি, যাতে বৃষ্টি হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,(اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً، يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً)অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত করবেন। (কুরআন মাজীদ ৭১/১০-১১) (اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِيْنَ)
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর; তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (কুরআন মাজীদ ১১/৫২) (সুনানু সাঈদ বিন মানসূর, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা ৮৩৪৩)

বৃষ্টি-প্রার্থনার কতিপয় দুআ:
(1) اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ، مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ- اَللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ عَلَيْنَا قُوَّةً وَّ بَلاَغًا إِلَى حِيْنٍ-

(১) উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, আররহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ইয়াফ‘আলু মা ইউরীদু। আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতাল গানিইয়ু ওয়া নাহ্নুল ফুক্বারা-উ। আনঝিল ‘আলায়নাল গায়ছা ওয়াজ‘আল মা আনঝালতা ‘আলায়না কুউওয়াতাঁও ওয়া বালা-গান ইলা হীন।

অনুবাদ: সকল প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যিনি করুণাময় ও কৃপানিধান। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন। হে প্রভু! আপনি আল্লাহ। আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আপনি মুখাপেক্ষীহীন ও আমরা সবাই মুখাপেক্ষী। আমাদের উপরে আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন! যে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তা যেন আমাদের জন্য শক্তির কারণ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৮ সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসকা’ অনুচ্ছেদ-৫২)

(2) اَللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَاحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ-

(২) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাস্ক্বে ‘ইবা-দাকা ওয়া বাহা-এমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়াহ্ইয়ে বালাদাকাল মাইয়েতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পান করান আপনার বান্দাদেরকে ও জীবজন্তু সমূহকে এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন ও আপনার মৃত জনপদকে পুনর্জীবিত করুন’।(মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসক্বা’ অনুচ্ছেদ-৫২।)

(3) اَللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ-

(৩) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাসক্বেনা গায়ছাম মুগীছাম মারীআম মারী‘আ, না-ফে‘আন গায়রা যা-র্রিন ‘আ-জেলান গায়রা আ-জেলিন।অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দান করুন, যা চাহিদা পূরণকারী, পিপাসা নিবারণকারী ও শস্য উৎপাদনকারী। যা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং যা দেরীতে নয় বরং দ্রুত আগমনকারী’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৭।)

এই সময় বৃষ্টি দেখলে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (সহীহ বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।) বৃষ্টিতে চাদর ভিজিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত মনে করে আগ্রহের সাথে তা বরণ করে নিতে হবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১৫০১)

◾সালাতুল ইস্তিস্ক্বা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভাল:
_________________________________
(১) সালাতুল ইস্তিস্কার নামাজ দু রাকাত। আযান ইকামতবিহীন জোরে কিরাআতে উক্ত সালাত আদায় করতে হয়।

(২) এ সালাতের কোন নির্ধারিত সময় বা দিন নেই, নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোন সময় বৃষ্টির সালাত আদায় করা যায়। তবে উত্তম হলো ঈদের সালাতের মতো সকালে সূর্যোদয়ের একটু পরপরই পড়া।

(৩) শিশু ও নারীদেরকেও এ সালাতে নিয়ে যাওয়া, তবে বৃদ্ধদের উপস্থিতি আরো উত্তম।

(৪) জীবিত কোন মুত্তাক্বী পরহেযগার ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে। রাসূল (ﷺ) এর মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ) এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯)

(৫) কোন মৃত ব্যক্তির দোহাই বা অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবেনা। কারণ এটি হ’ল সবচেয়ে বড় শিরক।

(৬) দু’আর সময় ইমাম সাহেব মুসল্লীদের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করবে, দু’আর সময় হাত যতখানী সম্ভব উপরে উঠিয়ে দুআ করবে, রাসূল (স) যখন হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন তখন তার দুই বোগল পর্যন্ত নজরে আসত। দু’হাতের পিঠ উপরে এবং তালু নিচের দিকে দিয়ে দু’আ করবে, সে সময় গায়ের চাদর বা রুমান উল্টিয়ে পড়বে।

(৭) ঈদের সালাতের মতো প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা পর অতিরিক্ত সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে ওঠে দাঁড়ানোর পর অতিরিক্ত আরো পাঁচ তাকবীর দেওয়ার বিধানও রয়েছে। (শরহেস্ সুন্নাহ লিলবাগাউয়ী- ৪/৪০২) তবে অতিরিক্ত তাকবির না দিলে বা কম বেশি হলে সমস্যা নেই ইনসাআল্লাহ।

(৮) ইস্তিস্ক্বার খুৎবা সাধারণ খুৎবার মত নয়। এটির সবটুকুই কেবল আকুতি ভরা দো‘আ আর তাকবীর মাত্র। (আবুদাঊদ হা/১১৬৫)

(৯) অতিবৃষ্টি হ’লে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা সাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।)আর তাতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করে বলবে, اَللهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اَللّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহাওয়া-লাইনা অলা আলাইনা, আল্লা-হুম্মা আলাল আ-কামি অযযিরা-বি অবুতূনিল আউদিয়াতি অমানা-বিতিশ শাজার।অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বর্ষাও, আমাদের উপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়, টিলা, উপত্যকা এবং বৃক্ষাদির উদগত হওয়ার স্থানে বর্ষাও। (বুখারী,হা/৯৩৩, ১০২১; সহীহ মুসলিম,৮৯৭ আবুদাঊদ হা/১১৭৪)

(১০)বযেনে রাখা ভাল যে, বৃষ্টি-প্রার্থনার জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া, গোবর-কাদা বা রং ছিটাছিটি করে খেল খেলা, কারো চুলো ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি প্রথা শিরকী তথা বিজাতীয় প্রথা। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

যে দু’টো নিয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধোঁকায় আছে এই হাদীসের ব্যাখ্যা

 প্রশ্ন: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দু’টোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর। উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’’ (সহীহুল বুখারী ৬৪১২, তিরমিযী ২৩০৪, ইবনু মাজাহ ৪১৭০, আহমাদ ২৩৩৬, রিয়াদুস সলেহিন ৯৮)।

হাদীসটির ব্যাখ্যা: মানুষের ওপর আল্লাহর নি‘আমতসমূহ হতে এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটির মূল্য সে জানে না এবং সে এ দু’টির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর সে দুটি হলো দৈহিক সুস্থতা ও অন্তরের অবসরতা।” কারণ, একজন মানুষ ইবাদাতের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত অবসর হতে পারে না যতক্ষণ না সে সুস্থ হবে। কারণ, কখনো সে অভাবহীন হবে, কিন্তু সুস্থ থাকবে না। আবার কখনো সে সুস্থ থাকবে কিন্তু অভাবহীন থাকবে না। ফলে সে কামাই রুজির জন্য ব্যস্ত থাকার কারণে ইলম ও আমলের জন্য অবসর হয় না। সুতরাং যার জন্য দুটি জিনিস হাসিল হবে এবং ইবাদতে অলসতা করবে সে অবশ্যই ক্ষতি গ্রস্থ হবে। অর্থাৎ, ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ।
.
উক্ত হাদীসে বর্নিত দুটি শব্দের মধ্যে একটি হল সুস্থতা। সুস্থতা মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার এক অপার মহিমা বিশাল নেয়ামত। সুস্থ অবস্থায় মানুষ আল্লাহর ইবাদত করার যে সামর্থ রাখে অসুস্থ হলে তার আর সামর্থ থাকেনা। কারণ মানুষের শরীর একটা স্বয়ংক্রীয় যন্ত্র বিশেষ। তাই এ যন্ত্রের একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে নানা ধরণের বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তার নাম অসুস্থতা। সুস্থতা আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। মানুষ সুস্থ থাকলে সবকিছু করতে পারে কিন্তু অসুস্থ হয়ে গেলে আর কোন কাজ করতে পারে না। তাই যখন সে সুস্থ থাকে তখন তাকে নেয়ামত মনে করে ইবাদতে মশগুল হওয়া প্রয়োজন। কেননা সে জানে না যে, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে পরবর্তীতে অবস্থা আরো অবনতি হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) অন্য হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দিনটি পারিবারিক নিরাপত্তাবোধ ও সুস্থতার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারলো এবং নিজের দিনটিকে কাজে লাগাতে পারলো সে যেন সমগ্র দুনিয়া অধিকার করলো।” (সুনানে তিরমিযি ২৩৪৬, ইবনে মাজাহ ৪১৪১)।
.
হাদীসের দ্বিতীয় শব্দটি হল অবসর। শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে সময়ের মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম অলস সময় কাটানোকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে ব্যস্ততা ও অবসর দু’টোই বান্দাহর জন্য নেয়ামত। ব্যস্ততা এজন্য নেয়ামত যে, ব্যস্ততা মানুষের অনেক অন্যায় ও বেহুদা কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবসর এই অর্থে নিয়ামত যে, সে এই অবসরে অনেক ভালো কাজ সম্পন্ন করে নেকী লাভ করতে পারেন। ব্যস্ততা মানব জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। কার কখন ব্যস্ততা এসে যাবে এটা কেউ বলতে পারেনা। আর অত্যাধিক ব্যস্ততা মানুষকে অনেক প্রয়োজনীয় কাজ থেকে অপারগ বানিয়ে ফেলে। এটাকে মনে রেখেই মানুষকে কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। মানব জীবনের একটি দূর্বলতা বা প্রবণতা আছে কোন কাজ তার সামনে এলে মনে করে একটু পরে কাজটি করে ফেলব। কিন্তু দেখা যায় একটু পরেই তার সামনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ উপস্থিত হয়ে গেল। সেটা শেষ করতে না করতেই আরো একটা উপস্থিত হলো। এভাবে প্রথম যে কাজটি অনায়াসে করা যেতো, সেটা করার কোন সুযোগই পাওয়া যায় না। তাই যখন সুযোগ পাওয়া যায় তখনই কাজটি সম্পন্ন করে ফেলা উচিত। অনুরূপভাবে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারেও যদি কেউ মনে করে এখন না, একটু পরে ইবাদতটা করব, তার পরিণতিও অনুরূপ। সে ইবাদতটি করার সুযোগ আর নাও পেতে পারে। এভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের যে সময় অতীত হয়ে যাচ্ছে সে সময় আর কখনও ভবিষ্যতে ফিরে আসবে না। তাই বর্তমানে যে সময়টা অবসর আছে এটাকে নেয়ামত মনে করে অপেক্ষাকৃত বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক লাভজনক কাজ গুলো সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’ (সহীহুল বুখারী ৬৪১২, তিরমিযী ২৩০৪, ইবনু মাজাহ ৪১৭০, আহমাদ ২৩৩৬, ৩১৯৭, দারেমী ২৭০৭, রিয়াদুস সলেহিন হাদিস নং ৯৮)। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

মুসলিমদের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসব ও পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণ হারাম হওয়ার দশ কারণ

 প্রশ্ন: কোনো মুসলিমের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা মণ্ডপে যাওয়া কি জায়েজ? কেউ যদি সেখানে যায় তাহলে কি সে কাফের হয়ে যাবে বা বেঈমান হয়ে মারা যাবে? এবং এতে কি তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কোন মুসলিমের জন্য কেবল আনন্দ-উপভোগের উদ্দেশ্যে বিধর্মীদের দেব-দেবতা, মূর্তি ইত্যাদি দেখতে যাওয়া বা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা অথবা তাদেরকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নেই। তা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মের হোক না কেন।

নিম্নে এর দশটি কারণ উল্লেখ করা হল:

◈ ১. বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বা তাদের দেবদেবী ও মূর্তি দর্শনের উদ্দেশ্যে তাদের উপাসনালয়ে যাওয়া তাদের সাথে ‘সাদৃশ্য অবলম্বন’ এর শামিল যা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা এগুলো অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য; মুসলিমদের নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভুক্ত।“ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪০৩১, সহীহুল জামে-আলবানী হা/২৮৩১]

◈ ২. এর মাধ্যমে দৃশ্যত: কাফির-মুশরিকদের দল ভারী করা হয় যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

◈ ৩. যে উৎসবে শিরকের মত আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত এবং ক্রোধ উদ্রেক কারী কার্যক্রম সংঘটিত হয় সেখানে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাজিল হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলতেন,
اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ ـ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى ـ فِي عِيدِهِمْ يَوْمَ جَمْعِهِمْ؛ فَإِنَّ السَّخَطَ يَنْزِلُ عَلَيْهِمْ فَأَخْشَى أَنْ يُصِيبَكُمْ
“তোমরা আল্লাহর দুশমন ইহুদি-খৃষ্টানদের উৎসবসমূহে তাদের থেকে দূরে থাক। কারণ তাদের উপর আল্লাহর অসন্তোষ অবতীর্ণ হয়। ফলে এ আশঙ্কা আছে যে, তোমরাও তাতে আক্রান্ত হবে।” [বায়হাকী-আস-সুনান আল-কুবরা, ৯/২৩৪; দেখুন: কানযুল ‘উম্মাল, হাদীস নং- ১৭৩২]

সুতরাং আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাজিলের স্থানে কোন মুসলিমের বেড়াতে যাওয়া বা আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠা মোটেও সমীচীন নয়। কেননা এতে তারা আল্লাহর অসন্তোষ, শাস্তি ও ক্রোধের রোষানলে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

◈ ৪. এ সকল কপোল কল্পিত দেব-দেবতা বা কথিত উপাস্যদের মূর্তি ও প্রতিকৃতি তৈরি এবং সেগুলোর উপাসনা করা তাদের নিজদের বানোয়াট, মনগড়া ও অর্থহীন কাজ ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِندَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ ۖ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

“তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিজিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আনকাবুত: ১৭]

সুতরাং এই সকল বানোয়াট ও অসার জিনিস দেখতে যাওয়া কোন তাওহিদপন্থী মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا
“আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং অসার কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে আপন মর্যাদা রক্ষার্থে তা পরিহার করে চলে ।” [সূরা আল ফুরকান: ৭২]
কতিপয় মুফাসসিরের মতে, এ আয়াতে ‘মিথ্যা’ বলতে মুশরিকদের উৎসব বুঝানো হয়েছে।

◈ ৬. হিন্দুদের পূজামণ্ডপ, বৌদ্ধদের প্যাগোডা বা খৃষ্টানদের গির্জায় গিয়ে তাদের দেব-দেবতা ও শিরকী কার্যক্রম দেখে আনন্দ উপভোগ করলে অন্তর থেকে শিরক ও আল্লাহর নাফরমানি মূলক কার্যক্রমের প্রতি ঘৃণা বোধ চলে যাওয়ার এবং এসব হারাম কর্মের প্রতিবাদের মানসিকতা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

◈ ৭. এর ফলে কাফেরদের ধর্মীয় রীতি-নীতি দ্বারা অন্তর প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার পরিণতি খুব ভয়াবহ। বিশেষ করে দুর্বল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তির অন্তরে তাদের ধর্মের প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণ বোধ তৈরি হতে পারে। এমনকি এ কারণে তার ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

◈ ৮. বিধর্মীদের উৎসব, পর্ব এবং উপাসনালয়গুলোতে শিরকের মতো ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণত: গান-বাদ্য, বেপর্দা নারীদের অবস্থান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, মদ পান, গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ ও পশু বলি ইত্যাদি নানা ধরণের হারাম কর্ম সংঘটিত হয়। সুতরাং এমন পাপ পূর্ণ ও‌ নোংরা পরিবেশে কোন আত্ম মর্যাদাসম্পন্ন মুমিনের যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে অন্তরে আল্লাহ, রাসূল ও দীন ইসলামের প্রতি মজবুত ঈমান থাকলে এবং নিজেকে এ সকল ফেতনা থেকে নিরাপদ মনে করলে আল্লাহর সাথে শিরকের ভয়াবহ রূপ স্বচক্ষে দর্শন করে শিক্ষালাভ করত: মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে অথবা এই অন্যায়ের প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে কিংবা অমুসলমিদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে যদি কোন ইমানদার ব্যক্তি সেখানে যায় তাহলে তা না জায়েজ নয়।

অনুরূপভাবে কোন ইমানদার ব্যক্তি যদি দীনহীন বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় পড়ে বা কু প্রবৃত্তির টানে সেখানে যায় তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, অনতিবিলম্বে সেখান থেকে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নিকট লজ্জিত অন্তরে তওবা করা। কিন্তু এ কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না এবং তাদের দাম্পত্য জীবনেও তার কোন প্রভাব পড়বে না ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহর প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে।

৯. আরেকটি বিষয় হল, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলিমদের ভিড় করার ফলে তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তারা নিরাপত্তা হীনতায় ভোগে। কারণ কিছু দুর্বৃত্ত এই সুযোগে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করে এবং স্বার্থান্বেষীরা পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে থাকে যা বহু ঘটনা থেকে প্রমাণিত। সুতরাং অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের দিন তারা যেন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে তাদের ধর্মাচার্য পালন করতে পারে সে জন্য সেদিন মুসলিমদের সেখানে ভিড় করা মোটেও উচিৎ নয়।

◈ ১০. অনুরূপভাবে বিধর্মীদেরকে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনে সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নয়। কারণ তা মূলত: আল্লাহ দ্রোহিতা ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতার শামিল যা আল্লাহ তাআলা নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“আর সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।” [সূরা মায়িদা: ২]

মোটকথা, মুসলিমদের জন্য বিধর্মীদের দেব-দেবী দেখে শুধু আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে তাদের উপাসনালয়ে গমন করা বা তাদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা, এ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা এবং এসব কাজে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। অথচ আমাদের দেশের একশ্রেণীর তথাকথিত প্রগতিবাদী নামধারী মুসলিম ও বক ধার্মিক ব্যক্তিরা “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই যুক্তিহীন ও ভ্রান্ত স্লোগানের আড়ালে মুসলিমদেরকে এমন হারাম ও শিরকী কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করে। এর চেয়েও বড় ভয়াবহ বিষয় যে, এরা নিজেরাও অনেক সময় দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূজায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। সত্যি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণী বর্তমানে বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেছেন,
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ
‘‘আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা।” [বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল মানাকিব]

➤ উল্লেখ্য যে, কোনও মুসলিম যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও ধর্মকে অধিক উত্তম, সমপর্যায়ের অথবা সঠিক বলে বিশ্বাস করে তাহলে সে ইসলামের গণ্ডী থেকে বের হয়ে যাবে (মুরতাদ হয়ে যাবে)। কারণ দীন-ইসলাম হচ্ছে বিশ্ব মানবতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট একমাত্র মনোনীত ও গ্রহণীয় জীবন ব্যবস্থার নাম। ইসলাম ছাড়া যত ধর্ম এবং মতাদর্শ রয়েছে সবই বাতিল-মিথ্যা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّـهِ الْإِسْلَامُ
“আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) ইসলাম।” [সূরা আলে ইমরান: ১৯]
তিনি আরও বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু (ধর্ম/মতাদর্শ) অনুসন্ধান করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।” [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]

পরিশেষে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের নির্বোধদের কারণে আমাদেরকে তার শাস্তির হাত থেকে হেফাজত করুন, অজ্ঞদেরকে কে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও সুবুদ্ধি দান করুন এবং আমাদেরকে হেদায়েতের উপর অটল রাখুন মৃত্যু অবধি। আমীন। আল্লাহু আলাম। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত

 প্রশ্ন: প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬

▪️মীলাদুন্নবীর পরিচয়: জন্মের সময়কাল’কে আরবীতে ‘মীলাদ’ বা ‘মাওলিদ’ বলা হয়। আরবী ميلاد (মীলাদ) বা مولد (মাওলিদ) অর্থ হলো وقت الولادة তথা জন্মের সময় বা জন্মকাল। (ড. ইবরাহীম আনীস ও তার সাথীগণ, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (বৈরূত: দারুল ফিক্র, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৫৬; আবুল ফযল মাওলানা আব্দুল হাফিয বালয়াবী, মিছবাহুল লুগাত (ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী, তাবি), পৃ. ৯৬৬; আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, নওল কিশোর ছাপা, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৫)। মাওলিদ শব্দের অর্থ হল জন্মদিন, জন্মস্থান বা জন্মোৎসব। সুতরাং ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় ‘নবীর জন্ম মুহূর্ত’ বা ‘নবীর জন্ম দিনের আনন্দোৎসব’। বর্তমানে ১২ রবীউল আউয়ালকে শেষনবীর জন্মদিন ধরে কিছু সুবিধাবাদী আলেমের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ায-নসিহত, যিকর-আযকার ও ক্বিয়াম করে পরিশেষে মিষ্টি মুখ করে অনুষ্ঠান ত্যাগ করা হয়। এটাই মীলাদুন্নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
.
▪️মিলাদের উৎপত্তি হুকুম: প্রত্যেকের জানা উচিত যে, মুসলিম বিদ্বেষী অভিশপ্ত শী‘আদের মাধ্যমে চতুর্থ শতাব্দী হিজরীর মাঝামাঝিতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’র নিকৃষ্ট বিদ‘আত চালু হয়। (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃ. ৩২৪)। অতঃপর ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষে বা ৭ম হিজরী শতকের শুরুর দিকে ইরাকের ‘ইরবল’ শহরে গভর্ণর মুযাফফারুদ্দীন আবু সাঈদ কূকুবূরী (৫৪৯-৬৩০ হি.) আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়। এই শী‘আ গভর্ণর নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য পেটপূজারী আলেমদের কাজে লাগায়। সর্বপ্রথম আবুল খাত্ত্বাব ওমর ইবনু হাসান ইবনু দেহিয়াহ আল-কালবী (৫৪৪-৬৩৩ হি.) কারো মতে ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান রাসূলের মৃত্যুর ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। এই দিন তারা মীলাদুন্নবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হতেন। গভর্ণর নিজে তাতে অংশ নিতেন।(আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (দারুল ফিকর, ১৯৮৬,পৃঃ ১৩/১৩৭)। আর এই অনুষ্ঠানের সমর্থনে তৎকালীন আলেম সমাজের মধ্যে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন আবুল খাত্ত্বাব ওমর বিন দেহিইয়াহ (৫৪৪-৬৩৩ হিঃ)। তিনি মীলাদের সমর্থনে বহু জাল ও বানাওয়াট হাদীস জমা করেন। নামের কথিত আলেম বহু জাল হাদীসের সমন্বয়ে মীলাদের পক্ষে ‘আত-তানভীর ফী মাওলিদিস সিরাজিল মুনীর’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করে। ৬২৫ হিজরীতে গভর্ণর কূকুবূরীর নিকট উপস্থাপন করলে সে খুশি হয়ে আবুল খাত্ত্বাবকে নগদ এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে। তখন থেকেই বিশাল বিশাল প্যান্ডেল করে, আলোকসজ্জা করে, তবলা বাজিয়ে, নাচ-গান করে এটা উদযাপন করা শুরু হয়। যদিও বিদ‘আতীরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছে। এভাবেই একশ্রেণীর স্বার্থপর রাজনৈতিক নেতা এবং দরবারী আলেমদের সহযোগিতায় মীলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
.
আরবী রবীউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে কথিত জন্মদিবস উদযাপন করা হয়। রাসূল (ﷺ) ১২ তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছেন মর্মে ছূফী মাযারপূজারীরা অতি ভালোবাসা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উক্ত দিবস পালন করে থাকে। তারা এর নামকরণ করেছে, ‘সাইয়িদুল আ‘ইয়াদ’ বা সব ঈদের সর্দার বা বড় ঈদ। তাদের শ্লোগান হল, সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদুন্নবী (নাঊযুবিল্লাহ)। ইসলামে বিশেষ আনন্দের দিন হল দু’টি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা (আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪, সনদ সহীহ)। অন্য হাদীসে জুমু‘আর দিনকেও মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/২১৩; মিশকাত, হা/১৩৯৮, সনদ সহীহ)। আর এই বিদ‘আতী কবর পূজারীরা উদ্ভট মিথ্যা অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছে ‘সেরা ঈদ’। ইসলামের বিধানকে খাট করে এ ধরনের শব্দ বাক্য উচ্চারণ করা হারাম। মীলাদ অনুষ্ঠানে রাসূল (ﷺ) আগমন করেন এমন কল্পনা করে তারা জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। উদ্ভট দরূদ পাঠ, ক্বিয়াম তথা সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া,সীরাতের উপর মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করা, খানার আয়োজন করা, জিলাপী বিতরণ, গান-বাজনা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, র‌্যালি, জশনে জুলূস ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। বিশেষ মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ দিন মনে করে সরকারীভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ রাখা হয়। অথচ এ সমস্ত জঘন্য বিদ‘আতের সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। যাঁরা রাসূল (ﷺ) এর সবচেয়ে বেশি সম্মান-শ্রদ্ধা করতেন, সেই সাহাবী-তাবেঈ, তাবে‘ তাবেঈ, মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমামগণের কেউ এ ধরনের জন্ম বা মৃত্যু দিবস একদিনের জন্যও পালন করেননি। তাই এর দ্বারা যেমন ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি দেশের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ শিরক-বিদ‘আতের অন্ধজালে নিমজ্জিত হচ্ছে।সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০) তিনি আরো বলেন,وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী। (আবুদাঊদ হা/৪৬০৭)। জাবের (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ ‘এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৬৫; নাসাঈ হা/১৫৭৯ ‘ঈদায়েন-এর খুৎবা’ অধ্যায়)।

ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফেঈকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন।’ (আল-ইনছাফ, পৃঃ ৩২)।
.
▪️ক্বিয়াম প্রথা: সপ্তম শতাব্দী হিজরীতে মীলাদ প্রথা চালু হওয়ার প্রায় এক শতাব্দীকাল পরে আল্লামা তাক্বিউদ্দীন সুবকী (৬৮৩-৭৫৬ হি.) কর্তৃক ক্বিয়াম প্রথার প্রচলন ঘটে বলে কথিত আছে। (আবু ছাঈদ মোহাম্মাদ, মিলাদ মাহফিল (ঢাকা ১৯৬৬), ১৭ পৃ.)। তবে এর সঠিক তারিখ ও আবিষ্কর্তার নাম জানা যায় না। (তাজুদ্দীন সুবকী, তাবাক্বাতু শাফেঈয়াহ কুবরা [বৈরূত: দারুল মা‘রিফাহ, তাবি, ১৩২২ হি. (ছাপা হ’তে ফটোকৃত) ৬/১৭৪]।
.
এদেশে দু’ধরনের মীলাদ চালু আছে। একটি ক্বিয়ামী, অন্যটি বে-ক্বিয়ামী। ক্বিয়ামীদের যুক্তি হলো, তারা রাসূল (ﷺ) এর ‘সম্মানে’ উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর দ্বারা তাদের ধারণা যদি এই হয় যে, মীলাদের মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তবে এই ধারণা সর্বসম্মতভাবে কুফরী। হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযাযিয়া’তে বলা হয়েছে, مَنْ ظَنَّ أنَّ أرواحَ الأمواتِ حاضرةٌ نَعْلَمُ يَكْفُرُ، ‘যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, জেনে রাখ, সে ব্যক্তি কুফরী করল।’[(মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, (মউ, ইউ পি ১৯৬৭) মীলাদে মুহাম্মাদী ২৫, ২৯ পৃ.]। অনুরূপভাবে ‘তুহফাতুল কুযাত’ কিতাবে বলা হয়েছে, যারা ধারণা করে যে, মীলাদের মজলিসগুলিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তাদের এই ধারণা স্পষ্ট শিরক।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ধম্কি প্রদান করেছেন। (তিরমিযী হা/২৭৫৫; আবুদাঊদ হা/৫২২৯; মিশকাত হা/৪৬৯৯ ‘আদাব’ অধ্যায়)। অথচ মৃত্যুর পর তাঁরই কাল্পনিক রূহের সম্মানে দাঁড়ানোর উদ্ভট যুক্তি ধোপে টেকে কি? আর একই সাথে লাখো মীলাদের মজলিসে হাযির হওয়া কারু পক্ষে সম্ভব কি?

▪️মীলাদ বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবের উপমহাদেশের ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত:
______________________________________
আল-ক্বাওলুল মু‘তামাদ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চার মাযহাবের সেরা বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাঁরা বলেন, ইরবলের গভর্ণর কুকুবুরী এই বিদ‘আতের হোতা। তিনি তার আমলের আলেমদেরকে মীলাদের পক্ষে মিথ্যা হাদীস তৈরী করার ও ভিত্তিহীন ক্বিয়াস করার হুকুম জারী করেছিলেন। [মীলাদুন্নবী ৩৫ পৃ.; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম (১ম সংস্করণ: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খৃ.) ৫১ পৃ.] উপমহাদেশের আলেম, মুজাদ্দিদে আলফে ছানী শায়খ আহমাদ সারহিন্দী, আল্লামা হায়াত সিন্ধী, রশীদ আহমাদ গাংগোহী, আশরাফ আলী থানভী, মাহমূদুল হাসান দেউবন্দী, আহমাদ আলী সাহারানপুরী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও আহলে হাদীস বিদ্বানগণ সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।(মীলাদুন্নবী ৩২-৩৩ পৃ.)। আর উক্ত বিদআতি আমলের মাধ্যমে কোটি কোটি মুসলিম যে শী‘আদের প্রতারণার শিকার হয়ে শিরক-বিদআতের লিপ্ত হচ্ছে তা স্পষ্ট। যেমন:

▪️প্রথমতঃ ইসলামে দিবসপূজা বা রাতপূজার কোন সুযোগ নেই। এটা অনেক ক্ষেত্রে বিদ‘আত, আবার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিরক। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল আলেমের ঐকমত্যে ঈদে মীলাদুন্নবী একটি ঘৃণিত বিদ‘আতী প্রথা। (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৭-৩৮; আল-বিদাঊল হাওয়ালিয়াহ, পৃ. ১৯৫-২০৬)। সে জন্য যারা একে বিদ‘আতে হাসানাহ বলে প্রচার করে, তারা একেবারেই নিরেট মূর্খ।

▪️দ্বিতীয়তঃ রাসূল (ﷺ) এর জন্ম ও মৃত্যু সোমবারে হয়েছে এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (সহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; ইবনু হিব্বান, হা/৬৫৮১, সনদ সহীহ)। আর প্রাধান্যযোগ্য বক্তব্য হলো, রাসূল (ﷺ) এর জন্ম ৯ রবীউল আওয়াল সোমবার (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৫৪)। আর সর্বসম্মত মতানুযায়ী ১২ই রবীউল আওয়াল সোমবার হল রাসূল (ﷺ) এর মৃত্যুর দিন। (শারহুন নববী, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ১০০)। তাই ১২ই রবীউল আওয়াল রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিন এই দাবী ঠিক নয়।

▪️তৃতীয়তঃ মীলাদের প্রধান আকর্ষণ হল ক্বিয়াম তথা রাসূল (ﷺ) মীলাদের মজলিসে উপস্থিত হন মনে করে তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এটা কুফুরী আক্বীদা এবং দরূদের এই পদ্ধতি ইসলামের পরিপন্থী। তাছাড়া এই ক্বিয়ামের সাথে হিন্দুদের অনুষ্ঠানের সাদৃশ্য রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মের পুরোহিতরাও হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায়। বিধর্মীদের সাদৃশ্য মুসলিমরা গ্রহণ করতে পারে না।
.
অতএব ‘মীলাদুন্নবী’ নামের উক্ত ঈমান বিধ্বংসী অপসংস্কৃতিকে বর্জন করা একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে সম্মান করা হয় না, বরং অসম্মান করা হয়। আর বিদ‘আতীদের অভ্যাস হলো, সুন্নাহকে ব্যঙ্গ করা, উপহাস করা এবং সুন্নাতের অনুসারীকে ভর্ৎসনা ও তাচ্ছিল্য করা। ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক বিদ‘আতী আহলে হাদীসদেরকে গালি দেয়। আর যখন কোন লোক বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীসের মহব্বত ছিনিয়ে নেয়া হয়।’ (মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীস, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪)। তাই এই অনুষ্ঠানে যেকোন ধরনের সহযোগিতা করা হারাম। কারণ যারা বিদ‘আত করে এবং বিদ‘আতীকে সাহায্য-সম্মান করে, তাদের তওবা কবুল হয় না, তাদের ফরয-নফল কোন ইবাদতই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। (সহীহ বুখারী, হা/১৮৭০ সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬)। যারা নবী করীম (ﷺ) কে মহব্বত করে এবং তাঁর শাফা‘আতে জান্নাতে যেতে চায়, তারা সর্বদা সহীহ হাদীসকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে এবং বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে আমল করে। তারা কখনোই কোন বিদ‘আতকে আশ্রয় দেয় না। বরং তারা শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে থাকে।
.
পরিশেষে, ভারত উপমহাদেশের কিছু স্বার্থবাদী আলেমের প্রতারণার মরণ ফাঁদে আটকা পড়ে সরলমনা মুসলিমরা আজ মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান নিয়ে মহা ব্যস্ত। অথচ ইসলামের মূলনীতিতে মীলাদ ও মীলাদুন্নবী উদযাপন করা বিদ‘আত। এরপরেও এ পাপের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। বেশী সংখ্যক স্বার্থান্বেষী আলেমের স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা, পূর্ব পুরুষের অন্ধ অনুকরণ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণেই মূলত এ বিদ‘আতী অনুষ্ঠানটি সমাজের বুকে আজও বিদ্যমান। হে মুসলিম সমাজ! আর কতদিন থাকবে তাক্বলীদের অন্ধকূপে আবদ্ধ? মাযহাবী গোঁড়ামির কি অবসান ঘটবে না? আর কতদিন জাহেলী সমাজের মত পূর্ব পুরুষের দোহাই দিবে? আর কতকাল পরে বিদ‘আতকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে প্রফুল্লচিত্তে সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে? বিদ‘আতের শেষ পরিণাম জাহান্নামের বীভৎস চিত্র তোমার কর্ণকুহরে এখনো কি পৌঁছেনি? তবে কেন এত দেরী করছ সত্যকে স্বাগত জানিয়ে আলিঙ্গন করতে? কোন সময় হঠাৎ মালাকুল মওত তোমার আত্মা নিয়ে ঊর্ধ্বগগনে প্রস্থান করবে তা কি তুমি ভেবে দেখেছ? হায় আফসোস! কবে কাটবে তোমার তন্দ্রা ঘোর? তোমার এ তাক্বলীদী গোঁড়ামির শেষ কোথায়? মহান আল্লাহ আমাদেরকে মীলাদুন্নবী পালনের নোংরা বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________

উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Translate