Saturday, October 8, 2022

প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত

 প্রশ্ন: প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬

▪️মীলাদুন্নবীর পরিচয়: জন্মের সময়কাল’কে আরবীতে ‘মীলাদ’ বা ‘মাওলিদ’ বলা হয়। আরবী ميلاد (মীলাদ) বা مولد (মাওলিদ) অর্থ হলো وقت الولادة তথা জন্মের সময় বা জন্মকাল। (ড. ইবরাহীম আনীস ও তার সাথীগণ, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (বৈরূত: দারুল ফিক্র, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৫৬; আবুল ফযল মাওলানা আব্দুল হাফিয বালয়াবী, মিছবাহুল লুগাত (ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী, তাবি), পৃ. ৯৬৬; আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, নওল কিশোর ছাপা, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৫)। মাওলিদ শব্দের অর্থ হল জন্মদিন, জন্মস্থান বা জন্মোৎসব। সুতরাং ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় ‘নবীর জন্ম মুহূর্ত’ বা ‘নবীর জন্ম দিনের আনন্দোৎসব’। বর্তমানে ১২ রবীউল আউয়ালকে শেষনবীর জন্মদিন ধরে কিছু সুবিধাবাদী আলেমের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ায-নসিহত, যিকর-আযকার ও ক্বিয়াম করে পরিশেষে মিষ্টি মুখ করে অনুষ্ঠান ত্যাগ করা হয়। এটাই মীলাদুন্নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
.
▪️মিলাদের উৎপত্তি হুকুম: প্রত্যেকের জানা উচিত যে, মুসলিম বিদ্বেষী অভিশপ্ত শী‘আদের মাধ্যমে চতুর্থ শতাব্দী হিজরীর মাঝামাঝিতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’র নিকৃষ্ট বিদ‘আত চালু হয়। (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃ. ৩২৪)। অতঃপর ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষে বা ৭ম হিজরী শতকের শুরুর দিকে ইরাকের ‘ইরবল’ শহরে গভর্ণর মুযাফফারুদ্দীন আবু সাঈদ কূকুবূরী (৫৪৯-৬৩০ হি.) আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়। এই শী‘আ গভর্ণর নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য পেটপূজারী আলেমদের কাজে লাগায়। সর্বপ্রথম আবুল খাত্ত্বাব ওমর ইবনু হাসান ইবনু দেহিয়াহ আল-কালবী (৫৪৪-৬৩৩ হি.) কারো মতে ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান রাসূলের মৃত্যুর ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। এই দিন তারা মীলাদুন্নবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হতেন। গভর্ণর নিজে তাতে অংশ নিতেন।(আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (দারুল ফিকর, ১৯৮৬,পৃঃ ১৩/১৩৭)। আর এই অনুষ্ঠানের সমর্থনে তৎকালীন আলেম সমাজের মধ্যে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন আবুল খাত্ত্বাব ওমর বিন দেহিইয়াহ (৫৪৪-৬৩৩ হিঃ)। তিনি মীলাদের সমর্থনে বহু জাল ও বানাওয়াট হাদীস জমা করেন। নামের কথিত আলেম বহু জাল হাদীসের সমন্বয়ে মীলাদের পক্ষে ‘আত-তানভীর ফী মাওলিদিস সিরাজিল মুনীর’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করে। ৬২৫ হিজরীতে গভর্ণর কূকুবূরীর নিকট উপস্থাপন করলে সে খুশি হয়ে আবুল খাত্ত্বাবকে নগদ এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে। তখন থেকেই বিশাল বিশাল প্যান্ডেল করে, আলোকসজ্জা করে, তবলা বাজিয়ে, নাচ-গান করে এটা উদযাপন করা শুরু হয়। যদিও বিদ‘আতীরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছে। এভাবেই একশ্রেণীর স্বার্থপর রাজনৈতিক নেতা এবং দরবারী আলেমদের সহযোগিতায় মীলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
.
আরবী রবীউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে কথিত জন্মদিবস উদযাপন করা হয়। রাসূল (ﷺ) ১২ তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছেন মর্মে ছূফী মাযারপূজারীরা অতি ভালোবাসা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উক্ত দিবস পালন করে থাকে। তারা এর নামকরণ করেছে, ‘সাইয়িদুল আ‘ইয়াদ’ বা সব ঈদের সর্দার বা বড় ঈদ। তাদের শ্লোগান হল, সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদুন্নবী (নাঊযুবিল্লাহ)। ইসলামে বিশেষ আনন্দের দিন হল দু’টি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা (আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪, সনদ সহীহ)। অন্য হাদীসে জুমু‘আর দিনকেও মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/২১৩; মিশকাত, হা/১৩৯৮, সনদ সহীহ)। আর এই বিদ‘আতী কবর পূজারীরা উদ্ভট মিথ্যা অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছে ‘সেরা ঈদ’। ইসলামের বিধানকে খাট করে এ ধরনের শব্দ বাক্য উচ্চারণ করা হারাম। মীলাদ অনুষ্ঠানে রাসূল (ﷺ) আগমন করেন এমন কল্পনা করে তারা জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। উদ্ভট দরূদ পাঠ, ক্বিয়াম তথা সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া,সীরাতের উপর মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করা, খানার আয়োজন করা, জিলাপী বিতরণ, গান-বাজনা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, র‌্যালি, জশনে জুলূস ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। বিশেষ মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ দিন মনে করে সরকারীভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ রাখা হয়। অথচ এ সমস্ত জঘন্য বিদ‘আতের সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। যাঁরা রাসূল (ﷺ) এর সবচেয়ে বেশি সম্মান-শ্রদ্ধা করতেন, সেই সাহাবী-তাবেঈ, তাবে‘ তাবেঈ, মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমামগণের কেউ এ ধরনের জন্ম বা মৃত্যু দিবস একদিনের জন্যও পালন করেননি। তাই এর দ্বারা যেমন ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি দেশের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ শিরক-বিদ‘আতের অন্ধজালে নিমজ্জিত হচ্ছে।সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০) তিনি আরো বলেন,وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী। (আবুদাঊদ হা/৪৬০৭)। জাবের (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ ‘এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৬৫; নাসাঈ হা/১৫৭৯ ‘ঈদায়েন-এর খুৎবা’ অধ্যায়)।

ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফেঈকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন।’ (আল-ইনছাফ, পৃঃ ৩২)।
.
▪️ক্বিয়াম প্রথা: সপ্তম শতাব্দী হিজরীতে মীলাদ প্রথা চালু হওয়ার প্রায় এক শতাব্দীকাল পরে আল্লামা তাক্বিউদ্দীন সুবকী (৬৮৩-৭৫৬ হি.) কর্তৃক ক্বিয়াম প্রথার প্রচলন ঘটে বলে কথিত আছে। (আবু ছাঈদ মোহাম্মাদ, মিলাদ মাহফিল (ঢাকা ১৯৬৬), ১৭ পৃ.)। তবে এর সঠিক তারিখ ও আবিষ্কর্তার নাম জানা যায় না। (তাজুদ্দীন সুবকী, তাবাক্বাতু শাফেঈয়াহ কুবরা [বৈরূত: দারুল মা‘রিফাহ, তাবি, ১৩২২ হি. (ছাপা হ’তে ফটোকৃত) ৬/১৭৪]।
.
এদেশে দু’ধরনের মীলাদ চালু আছে। একটি ক্বিয়ামী, অন্যটি বে-ক্বিয়ামী। ক্বিয়ামীদের যুক্তি হলো, তারা রাসূল (ﷺ) এর ‘সম্মানে’ উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর দ্বারা তাদের ধারণা যদি এই হয় যে, মীলাদের মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তবে এই ধারণা সর্বসম্মতভাবে কুফরী। হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযাযিয়া’তে বলা হয়েছে, مَنْ ظَنَّ أنَّ أرواحَ الأمواتِ حاضرةٌ نَعْلَمُ يَكْفُرُ، ‘যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, জেনে রাখ, সে ব্যক্তি কুফরী করল।’[(মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, (মউ, ইউ পি ১৯৬৭) মীলাদে মুহাম্মাদী ২৫, ২৯ পৃ.]। অনুরূপভাবে ‘তুহফাতুল কুযাত’ কিতাবে বলা হয়েছে, যারা ধারণা করে যে, মীলাদের মজলিসগুলিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তাদের এই ধারণা স্পষ্ট শিরক।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ধম্কি প্রদান করেছেন। (তিরমিযী হা/২৭৫৫; আবুদাঊদ হা/৫২২৯; মিশকাত হা/৪৬৯৯ ‘আদাব’ অধ্যায়)। অথচ মৃত্যুর পর তাঁরই কাল্পনিক রূহের সম্মানে দাঁড়ানোর উদ্ভট যুক্তি ধোপে টেকে কি? আর একই সাথে লাখো মীলাদের মজলিসে হাযির হওয়া কারু পক্ষে সম্ভব কি?

▪️মীলাদ বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবের উপমহাদেশের ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত:
______________________________________
আল-ক্বাওলুল মু‘তামাদ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চার মাযহাবের সেরা বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাঁরা বলেন, ইরবলের গভর্ণর কুকুবুরী এই বিদ‘আতের হোতা। তিনি তার আমলের আলেমদেরকে মীলাদের পক্ষে মিথ্যা হাদীস তৈরী করার ও ভিত্তিহীন ক্বিয়াস করার হুকুম জারী করেছিলেন। [মীলাদুন্নবী ৩৫ পৃ.; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম (১ম সংস্করণ: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খৃ.) ৫১ পৃ.] উপমহাদেশের আলেম, মুজাদ্দিদে আলফে ছানী শায়খ আহমাদ সারহিন্দী, আল্লামা হায়াত সিন্ধী, রশীদ আহমাদ গাংগোহী, আশরাফ আলী থানভী, মাহমূদুল হাসান দেউবন্দী, আহমাদ আলী সাহারানপুরী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও আহলে হাদীস বিদ্বানগণ সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।(মীলাদুন্নবী ৩২-৩৩ পৃ.)। আর উক্ত বিদআতি আমলের মাধ্যমে কোটি কোটি মুসলিম যে শী‘আদের প্রতারণার শিকার হয়ে শিরক-বিদআতের লিপ্ত হচ্ছে তা স্পষ্ট। যেমন:

▪️প্রথমতঃ ইসলামে দিবসপূজা বা রাতপূজার কোন সুযোগ নেই। এটা অনেক ক্ষেত্রে বিদ‘আত, আবার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিরক। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল আলেমের ঐকমত্যে ঈদে মীলাদুন্নবী একটি ঘৃণিত বিদ‘আতী প্রথা। (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৭-৩৮; আল-বিদাঊল হাওয়ালিয়াহ, পৃ. ১৯৫-২০৬)। সে জন্য যারা একে বিদ‘আতে হাসানাহ বলে প্রচার করে, তারা একেবারেই নিরেট মূর্খ।

▪️দ্বিতীয়তঃ রাসূল (ﷺ) এর জন্ম ও মৃত্যু সোমবারে হয়েছে এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (সহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; ইবনু হিব্বান, হা/৬৫৮১, সনদ সহীহ)। আর প্রাধান্যযোগ্য বক্তব্য হলো, রাসূল (ﷺ) এর জন্ম ৯ রবীউল আওয়াল সোমবার (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৫৪)। আর সর্বসম্মত মতানুযায়ী ১২ই রবীউল আওয়াল সোমবার হল রাসূল (ﷺ) এর মৃত্যুর দিন। (শারহুন নববী, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ১০০)। তাই ১২ই রবীউল আওয়াল রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিন এই দাবী ঠিক নয়।

▪️তৃতীয়তঃ মীলাদের প্রধান আকর্ষণ হল ক্বিয়াম তথা রাসূল (ﷺ) মীলাদের মজলিসে উপস্থিত হন মনে করে তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এটা কুফুরী আক্বীদা এবং দরূদের এই পদ্ধতি ইসলামের পরিপন্থী। তাছাড়া এই ক্বিয়ামের সাথে হিন্দুদের অনুষ্ঠানের সাদৃশ্য রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মের পুরোহিতরাও হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায়। বিধর্মীদের সাদৃশ্য মুসলিমরা গ্রহণ করতে পারে না।
.
অতএব ‘মীলাদুন্নবী’ নামের উক্ত ঈমান বিধ্বংসী অপসংস্কৃতিকে বর্জন করা একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে সম্মান করা হয় না, বরং অসম্মান করা হয়। আর বিদ‘আতীদের অভ্যাস হলো, সুন্নাহকে ব্যঙ্গ করা, উপহাস করা এবং সুন্নাতের অনুসারীকে ভর্ৎসনা ও তাচ্ছিল্য করা। ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক বিদ‘আতী আহলে হাদীসদেরকে গালি দেয়। আর যখন কোন লোক বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীসের মহব্বত ছিনিয়ে নেয়া হয়।’ (মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীস, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪)। তাই এই অনুষ্ঠানে যেকোন ধরনের সহযোগিতা করা হারাম। কারণ যারা বিদ‘আত করে এবং বিদ‘আতীকে সাহায্য-সম্মান করে, তাদের তওবা কবুল হয় না, তাদের ফরয-নফল কোন ইবাদতই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। (সহীহ বুখারী, হা/১৮৭০ সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬)। যারা নবী করীম (ﷺ) কে মহব্বত করে এবং তাঁর শাফা‘আতে জান্নাতে যেতে চায়, তারা সর্বদা সহীহ হাদীসকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে এবং বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে আমল করে। তারা কখনোই কোন বিদ‘আতকে আশ্রয় দেয় না। বরং তারা শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে থাকে।
.
পরিশেষে, ভারত উপমহাদেশের কিছু স্বার্থবাদী আলেমের প্রতারণার মরণ ফাঁদে আটকা পড়ে সরলমনা মুসলিমরা আজ মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান নিয়ে মহা ব্যস্ত। অথচ ইসলামের মূলনীতিতে মীলাদ ও মীলাদুন্নবী উদযাপন করা বিদ‘আত। এরপরেও এ পাপের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। বেশী সংখ্যক স্বার্থান্বেষী আলেমের স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা, পূর্ব পুরুষের অন্ধ অনুকরণ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণেই মূলত এ বিদ‘আতী অনুষ্ঠানটি সমাজের বুকে আজও বিদ্যমান। হে মুসলিম সমাজ! আর কতদিন থাকবে তাক্বলীদের অন্ধকূপে আবদ্ধ? মাযহাবী গোঁড়ামির কি অবসান ঘটবে না? আর কতদিন জাহেলী সমাজের মত পূর্ব পুরুষের দোহাই দিবে? আর কতকাল পরে বিদ‘আতকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে প্রফুল্লচিত্তে সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে? বিদ‘আতের শেষ পরিণাম জাহান্নামের বীভৎস চিত্র তোমার কর্ণকুহরে এখনো কি পৌঁছেনি? তবে কেন এত দেরী করছ সত্যকে স্বাগত জানিয়ে আলিঙ্গন করতে? কোন সময় হঠাৎ মালাকুল মওত তোমার আত্মা নিয়ে ঊর্ধ্বগগনে প্রস্থান করবে তা কি তুমি ভেবে দেখেছ? হায় আফসোস! কবে কাটবে তোমার তন্দ্রা ঘোর? তোমার এ তাক্বলীদী গোঁড়ামির শেষ কোথায়? মহান আল্লাহ আমাদেরকে মীলাদুন্নবী পালনের নোংরা বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________

উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate