Tuesday, September 26, 2023

জিনের জগৎ

 ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) অনুবাদঃ ইউসুফইয়াসীন Printজিনের জগৎকিছু লোক জিন এর বাস্তবতা অস্বীকার করারচেষ্টা করেছে। জিনের সম্বন্ধে কোরআনেএকটি সম্পুর্ণ সূরা,সূরা আল্-জিন (৭২নং সূরা)অবর্তীর্ণহয়েছে।ক্রিয়াপদ জান্না,ইয়াজুন্নুঃ – যে গুলির অর্থ অন্তরালেরাখা,আত্মগোপন করা অথবা ছদ্মবেশে পরানোইত্যাদি হতে প্রাপ্ত জিন শব্দের আক্ষরিক অর্থেরউপর নির্ভর করে তারা দাবি করে যে জিন হচ্ছেআসলে “চতুর বিদেশী”। অন্যেরা এমনও দাবীকরে যে,যাদের মগজে কোন মন নেই এবংস্বভাবে অগ্নি প্রকৃতির তারাই জিন। প্রকৃতপক্ষে জিনআল্লাহর অপর একটি সৃষ্টি যারা এই পৃথিবীতেমানুষের সঙ্গে সহ-অবস্থান করে। আল্লাহ মানবজাতিসৃষ্টির পূর্বে জিন সৃষ্টি করেন এবং তিনি মানুষ সৃষ্টিরউপাদান হতে ভিন্নতর উপদানের সমষ্টি দিয়ে জিনসৃষ্টি করেছেন।আল্লাহ বলেনঃ

“আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি ছাঁচে-ঢালা শুষ্কঠনঠনে মৃত্তিকা হইতে। এবং ইহার পূর্বে সৃষ্টিকরিয়াছি জিন অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ হইতে।” [সূরা আল্-হিজর ১৫:২৬,২৭]তাদের জিন নামকরণ করা হয়েছে কারণ তারা মানবজাতির চোখের অন্তরালে রয়েছে। ইবলিশ(শয়তান) জিন জগতের,যদিও আল্লাহ যখন আদমকেসিজদা করার হুকুম দিয়েছিলেন তখন সেফেরেশতাদের মধ্যে অবস্থান করছিল। যখন সেসিজদাহ করতে অসম্মত হল এবং তাকে তার অবাধ্যতারকারণ জিজ্ঞেস করা হল। যে সম্পর্কে আল্লাহবলেনঃ”সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকেআগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টিকরেছেন মাটির দ্বারা।” [সূরা সাদ ৩৮:৭৬]আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা দেন যে রাসূল (সঃ) বলেছেন,“ফেরেশতাদের আলো হতে সৃষ্টি করা হয়েছিলএবং জিনদের ধুম্রবিহীনঅগ্নি হতে।” [মুসলিমকর্তৃক সংগৃহীত Sahih Muslim, enlgish trans, vol.4 p.1540 , no. 7134]আল্লাহ আরও বলেনঃ“এবং স্মরণ কর,আমি যখন ফেরেশতাগণকেবলিয়াছিলাম আদমের প্রতি সিজদা কর,তখন সকলেইসিজদা করিল ইবলীস ব্যতীত,সে জিনদিগেরএকজন।” [সূরা আল্-কাহ্ফ ১৮:৫০]সুতরাং তাকে প্রত্যাখ্যাত ফেরেশতা অথবাফেরেশতাদের একজন মনে করা ভুল হবে।জিনদের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণতঃতাদেরকেতিন শ্রেণীর ভাগ করা যেতে পারে ।রাসুল (সঃ) বলেন,“তিন রকম জিন আছেঃ এক রকম যারা সারাক্ষণ আকাশেউড়ে,অন্য আর এক রকম যারা সাপ এবং কুকুর হিসাবে বিদ্যমানএবং পৃথিবীর উপর বসবাসকারীআর এক রকম যারা একস্থানে বাস করে অথবাউদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।” [আত্ তাবারীএবং আল্-হাকিম কর্তৃক সংগৃহিত]বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জিনদের আবারদুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়ঃমুসলিম (বিশ্বাসীগণ) এবং কাফির (অবিশ্বাসীগণ)।আল্লাহ সূরা আল-জিন এ বিশ্বাসী জিনদের সম্বন্ধেবলেনঃ“বল,আমার প্রতি প্রেরিত হইয়াছে যে,জিনদিগেরএকটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিয়াছে এবংবলিয়াছে,আমারাতো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবনকরিয়াছি। যাহা সঠিক পথ -নির্দেশ করে;ফলে আমরাইহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি। আমরা কখনওআমাদিগের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করিবনা এবং নিশ্চয়ই সমুচ্চ আমাদিগের প্রতিপালকের মর্যাদা,তিনি গ্রহণ করেন নাই কোন পত্মী এবং না কোনসন্তান। এবং যে আমাদিগের মধ্যকার নির্বোধরাআল্লাহর সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করিত।” [সুরাআল্-জিন ৭২:১-৪]“আমাদিগের কতক আত্মসমর্পণকারী এবং কতকসীমালংঘনকারী;যাহারা আত্মসমর্পণ করে তাহারাসুচিন্তিতভাবে সত্য পথ বাছিয়ে লয়।অপরপক্ষে,সীমালংঘনকারী তো জাহান্নামেরইইন্ধন।” [সুরা আল্-জিন ৭২:১৪-১৫]জিনদের মধ্যে অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন নামেউল্লেখ করা হয়ঃইফরিত্, শয়তান, ক্বারিন, অপদেবতা, অশুভ আত্মা,আত্মা, ভুতপ্রেত ইত্যাদি। তারা বিভিন্নভাবে মানুষকেভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করে। যারাই তাদেরকথা শুনে এবং তাদের জন্য কাজ করে তাদেরকেইমানব শয়তান বলে উল্লেখ করা হয়।আল্লাহ বলেছেনঃ“এইরূপে মানব ও জিনের মধ্যে শয়তানদিগকেপ্রত্যেক নবীর শত্রু করিয়াছি।” [সুরা-আল্-আন্’আম৬:১১২]প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে স্বতন্ত্র একজন করেজিন রয়েছে যাকে ক্বারিন (সঙ্গী) বলা হয়। এটামানুষের এই জীবনের পরীক্ষার অংশ বিশেষ।জিনটি তাকে সর্বদা অবমাননাকর কামনা-বাসনায় উৎসাহিতকরে এবং সার্বক্ষণিকভাবে তাকে ন্যায়-নিষ্ঠা হতেঅন্য দিকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করে।রাসুল (সঃ) এই সম্পর্ককে এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন,“তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতেএকজন সঙ্গী দেয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসাকরলেন,“এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল(সঃ)? তিনি বলেনঃ এখন সে আমাকে শুধু ভাল করতেবলে।” [মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত Sahih MusliM,enlgishtrans, vol. 4 p.1540 , no. 7134]“সুলায়মানের সম্মুখে সমবেত করা হইল তাহারবাহিনীকে-জিন,মানুষ ও বিহংগকুলকে এবং উহাদিগকেবিন্যস্ত করা হইল বিভিন্ন ব্যূহে।” [সুরা আন-নামল২৭:১৭]কিন্তু অন্য কাউকে এই ক্ষমতা প্রদান করা হয় নাই।অন্য কাউকে জিন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়নিএবং কেউ পারেও না। রাসুল (সঃ) বলেছেন,“যথার্থই গত রাতে জিনদের মধ্যে হতে একজনইফরিত (একটি বলিষ্ঠ অথবা খারাপ জিন)” আমার সালাতভেঙ্গে দেবার জন্য থু থু নিক্ষেপ করেছিল।যাহোক আল্লাহ তাকে পরাভূত করতে আমাকেসাহায্য করেন এবং যাতে তোমরা সকালে তাকেদেখতে পারো সে জন্য তাকে আমি মসজিদেরএকটি স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে রাখতেচেয়েছিলাম। অতঃপর আমার ভ্রাতা সোলাইমানেরদোয়া মনে পড়লঃ “হে আমার রব, আমাকে ক্ষমাকর এবং আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যাহারঅধিকারী আমি ছাড়া কেহ না হয়।” [সুরা সাদ ৩৮:৩৫]মানুষ জিনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম নয় কারণএই বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা শুধু পয়গম্বরসোলায়মানকে দেয়া হয়েছিল।প্রকৃতপক্ষে,আছর অথবা ঘটনাক্রম ছাড়া জিনদের সাথেযোগাযোগ হওয়া বেশীর ভাগ সময়ই নিষিদ্ধ বাধর্মদ্রোহী কাজের মাধ্যমেই হয়। [আবু আমিনাহবিলাল ফিলিপস্ এর Ibn taymeeyah`s Essay on theJinn:: রিয়াদ তৌহিদ প্রকাশনী,১৯৮৯,পৃ.২১]এভাবে তলব করে আনা দুষ্ট জিন তাদেরসঙ্গীদের গুনাহ করতে এবং স্রষ্টাকে অবিশ্বাসকরতে সাহায্য করতে পারে। তাদের লক্ষ্য হলস্রষ্টা ছাড়া অথবা স্রষ্টার পাশাপাশি অন্যকে উপাসনাকরার মত গুরুতর গুনাহ করতে যত বেশী জনকেপারা যায় তত জনকে আকৃষ্ট করে। একবারগণকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং চুক্তি হয়েগেলে, জিন ভবিষ্যতের সামান্য কিছ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাজানাতে পারে।রাসুল (সাঃ) বর্ণনা দিয়েছেন জিনরা কিভাবে ভবিষ্যতসম্বন্ধে সংবাদ সংগ্রহ করে। তিনি বর্ণনা দেন যে,জিনরা প্রথম আসমানের উপর অংশ পর্যন্ত ভ্রমণকরত এবং ভবিষ্যতের উপর কিছু তথ্যাদি যা ফিরিশতারানিজেদের মধ্যে বলাবলি করত তা শুনতে সক্ষমহত। তারপর তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে তাদেরপরিচিত মানুষের কাছে ঐ তথ্যগুলি পরিবেশন করত।আল্-বুখারী এবং মুসলিম কতৃর্ ক সংগৃহীত। [ SahihMuslim, Englishtrans, vol.4, p.1210, no, 5538]মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত এইধরণের বহু ঘটনা সংঘটিত হত। এবং গণকরা তাদের তথ্যপ্রদানে নির্ভূল ছিল। তারা রাজকীয় আদালতে আসনলাভ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং প্রচুর জনপ্রিয়তাঅর্জন করেছিল।এমনকি পৃথিবীর কিছু অঞ্চলেতাদের পুজাও করা হত।রাসুল (সাঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচার শুরু করার পর হতেঅবস্থার পরিবর্তন হয়। আল্লাহ ফিরিশতাদের দিয়েআসমানের নীচের এলাকা সতর্কতার সঙ্গে পাহাড়াদেবার ব্যবস্থা করলেন। তারপর হতে বেশীরভাগজিনদের উল্কা এবং ধাবমান নক্ষত্ররাজি দিয়ে তাড়িয়েদেয়া হত। আল্লাহ এই বিস্ময়কর ঘটনা কোরআনেরভাষায় বর্ণনা করেছ্নেঃ“এবং আমরা চাহিয়াছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করিতেকিন্তু আমরা দেখিতে পাইলাম কঠোর প্রহরী ওউল্কা পিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ ;আর পূর্বে আমরাআকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে সংবাদ শুনিবার জন্য বসিতামকিন্ত এখন কেহ সংবাদ শুনিতে চাহিলে সে তাহারউপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।” [সূরা আল-জ্বিন ৭২:৮-৯]আল্লাহ আরও বলেনঃ“প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হইতে আমি উহাকেরক্ষা করিয়া থাকি; আর কেহ চুরি করিয়া সংবাদ শুনিতেচাহিলে উহার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।” [সূরাআল হিজর ১৫:১৭-১৮]ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,“যখন রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর একদল সাহাবা উকাধ বাজারেরদিকে রওয়ানা হলেন, তখন শয়তানদের ঐশীখবরাখবর শোনায় বাধা প্রদান করা হল। উল্কাপিন্ডতাদের উপর ছেড়ে দেয়া হল। ফলে তারা তাদেরলোকদের কাছে ফিরে এল। যখন তাদেরলোকরা জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছিল, তারা তাদেরজানালো। কেউ কেউ পরামর্শ দিল যে নিশ্চয়ই কিছুঘটেছে, কাজেই তারা কারণ খুজে বের করার জন্যপৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাদেরকয়েকজন রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণের সালাত রতঅবস্থা দেখতে পেল এবং তারা তাদের কোরআনপড়া শুনলো। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলযে নিশ্চয় এটাই তাদের শোনায় বাধা প্রদানকরেছিল। যখন তারা তাদের লোকদের মধ্যেফিরে গেল তখন তারা বলল, “আমরা তো একবিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করিয়াছি। যাহা সঠিক পথনির্দেশ করে, ফলে আমরা ইহাতে বিশ্বাস স্থাপনকরিয়াছি। আমরা কখনও আমাদিগের প্রতিপালকেরকোন শরীক স্থির করিব না।” [সুরা আল জিন ৭২:১-২][ আল্-বুখারী, মুসলিম, আত্ তিরমিজী এবং আহমদকর্তৃক সংগৃহীত।Sahih Al-Bukhari, Arabic-English,vol.6, pp.415-6.no.443 and Sahih Muslim, Englishtrans, vol.1, pp.243-44, no, 908]এইভাবে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচারের পূর্বেজিনরা যেভাবে সহজে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খবরাখবরসংগ্রহ করত তা আর আর পারেনি। ঐ কারণে তারা এখনতাদের খবরাখবরের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশ্রিতকরে।রাসুল (সাঃ) বলেন,“জাদুকর অথবা গনকের মুখে না পৌছান পর্যন্ত তারা(জিনরা) খবরাখবর নীচে ফেরত পাঠাতে থাকবে।কখনও কখনও তারা খবর চালান করার আগেই একটিউল্কা পিন্ড তাদের আঘাত প্রাপ্ত করার পূর্বেপাঠাতে পারলে এর সঙ্গে তারা একশটা মিথ্যা যোগকরবে। [আল্-বুখারী, মুসলিম এবং আত্ তিরমিজীকর্তৃক সংগৃহীত। Sahih Al-Bukhari, Arabic-English,vol.8, p.150 , no.232]আয়শা (রাঃ) তখন উল্লেখ করলেন যে গণকরাকখনও কখনও যা বলে সত্য হয়।রাসুল (সঃ) বলেন,‘‘ওতে সত্যতার কিছু অংশ যা জিনরা চুরি করে এবং তারবন্ধুর কাছে বলে কিন্তু সে এর সাথে একশটি মিথ্যাযোগ করে। ”আয়েশা বর্ণনা দেন যে তিনিআল্লাহর রাসূলের (সঃ) কাছে গণকদের সম্বন্ধেজিজ্ঞসা করলে তিনি উত্তর দেন যে ওরা কিছু না।[আল্-বুখারী এবং মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত। Sahih Al-Bukhari, Arabic-English, vol.1, p.439.no.657 andSahih Muslim, English trans, vol.4, p.1209, no,5535]একদিন উমর ইবনে আল খাত্তাব যখন বসে ছিলেনতখন একটি সুদর্শণ লোক তার পাশ দিয়ে চলেগেলে তিনি বললেন, আমার যদি ভূল না হয় লোকটিএখনও প্রাক ইসলামি ধর্ম অনুসরণ করছে অথবাবোধ হয় সে তাদের একজন গণক। তিনি লোকটিকে তার সামনে আনতে নির্দেশ দিলেন এবং তিনিতার অনুমান সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন। লোকটিউত্তর দিল, আমি আজকের মত আর কোন দিনদেখিনি যেদিন মুসলিম এই ধরণের অভিযোগেরসম্মূখীন হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন,অবশ্যইআমাকে তামার অবহিত করা উচিত। লোকটি তখন বলল,অজ্ঞতার যুগে আমি তাদের গণক ছিলাম। ঐ কথাশুনে উমর জিজ্ঞাসা করলেন,তোমার মহিলা জিনতোমাকে সব চেয়ে বিস্ময়কর কি বলেছে।লোকটি তখন বলল,একদিন আমি যখন বাজারেছিলাম,সে (মহিলা জিন) উদ্বিগ্ন হয়ে আমার কাছেএসেছিল এবং বলেছিল মর্যাদাহানি হবার পর তুমি কিজিনদের হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় দেখনি? তুমি কি দেখনিতাদেরকে (জিনদেরকে) মাদী উট ও তাতেআরোহণকারীদের অনুসরণ করতে? উমর বাধাদানপূর্বক বললেন,এটা সত্য।[আল্-বুখারী কর্তৃক সংগৃহীত। Sahih Al-Bukhari,Arabic-English, vol.5, p.131-2. no.206]জিনরা তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারীমানুষকে আপতঃ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অবহিত করতেসক্ষম।উদাহরণস্বরূপ,যখন কেউ একজন গণকের কাছেআসে সে আসার আগে কি কি পরিকল্পনা গ্রহণকরেছিল তা গণকের জিন আগত লোকটিরক্বারিনের (প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে নিয়োজিতজিন) কাছ থেকে জিন জেনে নেয়। সুতরাং গণকলোকটিকে বলতে সক্ষম হয় যে সে এটাকরবে অথবা অমুক অমুক জায়গায় যাবে। এইপ্রক্রিয়ায় একজন সতিকার গণক অপরিচিত লোকেরঅতীত পরির্পূণ ভাবে জানতে সক্ষম হয়। সেএকজন অচেনা ব্যক্তির পিতামার নাম, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তার ছেলে বেলার আচারণইত্যাদি সম্বন্ধে বলেতে সক্ষম হয়। অতীতসম্বন্ধে পরিপূর্ণ বর্ণনা দেবার ক্ষমতা জিন এরসঙ্গে মুহুর্তের মধ্যে বহু দুরত্ব অতিক্রমকরতে এবং গোপন বিষয় হারানো জিনিস, অদেখাঘটনা বলি সম্বন্ধে বহু তথ্যাদি সংগ্রহ করতেওসক্ষম।কোরআনে বর্ণিত পয়গম্বর সুলায়মান এবং সিবাররাণী বিলকিসের গল্পে মধ্যে এই ক্ষমতার সত্যতাপাওয়া যায়।যখন রাণী বিলকিসের গল্পে এলেন,তিনি একটিজিনকে রাণীর দেশ থেকে তার সিংহাসন নিয়েআসতে বললেন। “এক শক্তিশালী জিন বলল,আপনিআপনার স্থান হইতে উঠিবার পূর্বে আমি উহা আনিয়া দিবএবং এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান বিশ্বস্ত।[সূরা আন নামল, ২৭:৩৯]

অসম্ভব ভালোবাসেন তাকে, অনেক গভীর সেটা। তাকে ঘিরে একটা আলাদা পৃথিবী আপনার, যেখানে তাকে নিয়ে কষ্ট আর আনন্দ মাখা গল্পগুলো খুব যত্নে সাজিয়ে রাখেন পরম যত্ন আর ভালোবাসায়।

 অসম্ভব ভালোবাসেন তাকে, অনেক গভীর সেটা। তাকে ঘিরে একটা আলাদা পৃথিবী আপনার, যেখানে তাকে নিয়ে কষ্ট আর আনন্দ মাখা গল্পগুলো খুব যত্নে সাজিয়ে রাখেন পরম যত্ন আর ভালোবাসায়। সে পৃথিবীতে অন্য কাউকে আপনি এক মূহুর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারেন না। জায়গাটা যেন শুধুই তার জন্য। যতই রাগ-অভিমান হোক আপনি সেটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেন না..এক কথায় পাগলের মত ভালোবাসেন..!!


অন্যদিকে একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর আযাবকেও ভয় করেন আপনি...প্রচন্ড! এর আগে একবার না বারবার...বারবার বের হয়ে আসতে চেয়েছেন এই অ্যাফেয়ার থেকে...কারণ একটা হাদিস সবসময়ই আপনার অন্তর কাপিয়ে দেয় - রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে বলেছেন বিয়ের আগে বা পরে ইসলাম সম্মত নয় এমন কারো সাথে অ্যফেয়ার থাকলে সেখানে তৃতীয় একজনও এসে যোগ দেয়, সেই পাপাচারী শাইত্বন। যার জন্যই আল্লাহ্ সরাসরি এক কথায় এধরনের সম্পর্কগুলোকে হারাম বলে দিয়েছেন!

কিন্তু শয়তান আপনাকে আরেক ধোঁকায় ফেললো! সে বোঝালো - 'তোমার নিয়্যত তো হালাল, বিয়েতো তাকে করবেই! ফোনে চ্যাটিংয়ে খারাপ কথা না বললেইতো হল..দেখা কম করলেই হয়.. কারো ফ্ল্যাটে না গেলেই হয়! তাহলে আর সমস্যা কোথায়? খারাপ কোন কিছু না করলে বা না বললেই তো হলো! চালিয়ে যাও.."ভালোবাসা দিবস" এ আর এমন কি! একটা দিনই তো! একসাথে ঘুরলেই না হয় রাইডে চড়ে, কীইবা এমন হবে? বিয়ের পর এগুলো সবই মাফ করে দেয়া হবে!!' ব্যস্ আবারো আপনি কন্টিনিউ করা শুরু করলেন..রাতের পর রাত জেগে কতকিছুই না প্ল্যান করলেন! সবে গুছিয়ে এনেছেন সবকিছু। আর ঠিক সে মূহুর্তেই আপনার রাব্ব আপনাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "ও আমার বান্দা, তুমি শয়তানের পথকে অনুসরণ করো না। যে শয়তানের পথ অনুসরণ করবে, শয়তান তাকে খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজেরই আদেশ করবে।" - সূরা আন নূর, আয়াত:২১ যেই আপনি এবার পুরোপুরি ঠিক করলেন এই হারাম সম্পর্কটা বাদই দেবেন ঠিক তখনই শয়তান এবার আসলো নতুন ফন্দি নিয়ে! সে আপনাকে বোঝালো- " তুমি ওকে এখন থেকে ভালো উপদেশ দাও, সালাত পড়তে বলো- ফযরে ডেকে দাও ফোন করে, টেক্সট করে মনে করিয়ে দাও..পর্দা করতে বলো/বয়ফ্রেন্ডকে দাঁড়ি রাখতে বলো-টাখনুর উপর কাপড় পরতে বলো...সব ভালো উপদেশ দাও। তাহলে আর তোমার গুনাহ্ হবে না, বরং সাওয়াব হবে!" ইত্যাদি আরও কত কি..! এরকম আরো হাজারটা কথাই শয়তানের পাতানো ফাঁদ আপনার জন্য.. আর এ ফাঁদে পা দিয়ে যখন আর নিজেকে বাঁচাতে পারবেন না তখন সেই শয়তানই পিঠ ঘুরিয়ে সরে আসবে..বলবে "তোর গুনাহ্ অনেক!! তোর আবার মাফ কিসের"!! তারপরও আল্লাহ্ অপেক্ষায় থাকেন আপনার ফিরে আসার..তিনি বলেন তুমি সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ..বিশাল পাহাড় পরিমাণ গুনাহ্ নিয়ে আসলেও যদি একমাত্র আমাকেই রব হিসেবে মেনে খাঁটি তাওবা কর আমি নিজে তোমার সব গুনাহ্গুলোকে মাফ করে দেব..সব! সুবহানাল্লাহ্... ভাইয়া/আপু, জানি খুব কষ্ট হবে, খু-উ-ব। কিন্তু আপনি এভাবে শয়তানের ধোকায় পড়ে থাকলে আল্লাহ্ আরো বেশি কষ্ট পান! কারো সাথে হারাম সম্পর্ক থাকলে এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করে সেটা হালাল করার নিয়াত থাকলেও তা কন্টিনিউ করা কোনদিনও হালাল হবে না, বরং এটা ভুল ধারণা। হয় এই মূহুর্তে বিয়ে করতে হবে নাহয় হারাম সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যেতে হবে। পরে বিয়ের বাহানা দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া শয়তানের একটি বড় ধোঁকা । আপনি দেখা না করলেও প্রতিটা টেক্সট -ফোন কল কাল হাশরের ময়দানে কোটি কোটি মানুষের সামনে প্রদর্শন করা হবে। বিয়ে করে সম্পর্কটা হালাল হলেও তার আগের হারাম সম্পর্কের প্রতিটি মূহুর্তের হিসেব তো অবশ্যই দিতে হবে কাল হাশরের ময়দানে। তাই যাদের এই ধরণের সম্পর্ক আছে আল্লাহকে ভয় করে সরে আসুন, প্রয়োজনে ফেইসবুকে ব্লক বা মোবাইল নাম্বার চেইঞ্জ করে ফেলুন। কোন ধরণের কমিনিউকেশনের রাস্তা যেন না থাকে সেটার ব্যবস্থা করুন। যদি তাকে বিয়ের উপযুক্ত মনে করেন অভিভাবকদের জানান এবং যদি ফ্যামিলিও সমর্থন দেয় তবে বিয়ের সময় হলেই যোগাযোগ করে অগ্রসর হোন। প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হবে। কষ্টের তীব্রতায় হয়ত কাতরাতে থাকবেন! প্রিয়মানুষটার স্মৃতি-অনুভূতিগুলো ভেবে ভেবে হয়ত হাহাকার করবেন, ডুকঁরে কান্না আসবে বারবার! তখনই নিজেকে শান্ত করুন, অযু করুন, দরজাটা লাগিয়ে নামাজে দাড়িয়ে পড়ুন/ রাতে হলে তাহাজ্জুদে দাঁড়ান। সিজদায় গিয়ে এবার মনের যত দুঃখ-যন্ত্রনা-কষ্ট আছে আল্লাহকে বলতে শুরু করুন, মনের যত কথা, যত চাওয়া কেঁদে কেঁদে সব বলতে থাকুন এক এক করে আল্লাহ্‌র কাছে।দেখবেন অনেক হালকা লাগছে নিজেকে, মনে অদ্ভূত এক প্রশান্তি কাজ করবে। মনে রাখবেন যে কষ্ট আপনি পাচ্ছেন সেটা সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা পরিচিতদের কাছে শেয়ার করে বিন্দুমাত্র লাভ নেই, সমাধান কিংবা স্বস্তি কোনটাই পাবেন না বরং কষ্টটাই বাড়বে। তাই এই মনের নিয়ন্ত্রকের সাথে অটুট সম্পর্ক তৈরি করুন যার কাছেই আছে সব সমস্যার সমাধান।
আসলে প্রতিটা কষ্টই আমাদের জন্য স্বস্তি। কারণ, কষ্টের ঐ মুহুর্তগুলিতে যদি ধৈর্য্য ধরতে পারি, তাহলে সেই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন।আর আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভালো পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোই কিন্তু আমরা শিখি কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তাই কষ্টগুলো সাথে নিয়েই আগাতে হবে। আল্লাহ্, তার রাসূলকে(সা.) মন উজাড় করে ভালোবাসুন। প্রতিদিন যত কাজই থাকুক পাঁচ ওয়াক্ত নামায সঠিক সময়ে পড়ার চেষ্টা করুন, ইস্তিগফার করুন সবসময়, নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করুন /শুনুন, রাসূলের(সা.) প্রতিটা সুন্নাহকে নিজের লাইফস্টাইল হিসেবে সেট করার চেষ্টা করুন, ইসলামিক নাশিদ/ বিজ্ঞ স্কলারদের লেকচারগুলো কালেক্ট করে শুনুন, দ্বীনি ভাই/বোনদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত মা-বাবার সেবা করুন, ভুলেও তাদের সাথে উচু গলায় কোন কথা বলবেন না, তাদের যে কোন সিদ্ধান্তকে ইবাদাত মনে করে সেটা মেনে নিন, তাদের সময় দিন, তাদের জন্য কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তাদের মাগফিরাতের দুআ করুন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র ওপর পুরো আস্থা রেখে চলুন। দেখবেন একটা সময় নিজেকে এমন জায়গায় আবিষ্কার করবেন সেটা হোক দুনিয়ায় কিংবা আখিরাতে যেটা ক

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেছেন:
এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল,
“ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আল্লাহ্-র কসম! আমি নিশ্চয়ই আপনাকে ভালোবাসি।”
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“তুমি কী বলছো তা চিন্তা-ভাবনা করে দেখ।”
সে বলল,
“আল্লাহ্-র কসম!নিশ্চয়ই আমার ভালোবাসা আপনার জন্য। এরূপ সে তিনবার বলল। এরপর তিনি বললেন,
“তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেই থাকো তাহলে দারিদ্রের জন্যে মোটা পোশাক তৈরী করে নাও।কারণ বন্যার পানি যে গতিতে তার শেষ গন্তব্যের দিকে পৌঁছে যায়,আমাকে যে ভালোবাসে দারিদ্র ও নিঃস্বতা তারচেয়েও দ্রুত গতিতে তার দিকে ধাবিত হয়।”
[তিরমিযী]
রিয়াদুস সলিহীন[৪৮৫]

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমাদের কেউ যেন কষ্টে পতিত হওয়ার কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে।যদি সে একান্ত বাধ্য-ই হয় তাহলে যেন এভাবে বলে, “হে আল্লাহ! আমাকে ওই সময় পর্যন্ত জীবিত রাখুন,যতক্ষণ পর্যন্ত জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয়।আর আমাকে মৃত্যু দান করুন,যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়” (বুখারী ও মুসলিম)
#রিয়াদুস সলিহীন:৫৮৭

ভালো মানুষেরা কষ্টে থাকে, আর পাপী লোকেরা আনন্দে দিন কাটায়?

 ভালো মানুষেরা কষ্টে থাকে, আর পাপী লোকেরা আনন্দে দিন কাটায়?

______________________
প্রশ্নঃ অনেক ভালো লোক আছে, যাদের একটার পর একটা বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। কিন্তু অমুক লোকটা এতো খারাপ কাজ করে, তারপরেও সুস্থ সামর্থ্য, দিব্যি আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে! আল্লাহ যদি পাপীদের শাস্তি দিয়ে থাকেন তাহলে, এটা কেমন করে হতে পারে?
উত্তরঃ আলহা’মদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ’লার জন্য। এটা একটা প্রশ্ন যা অনেক ভাই ও বোনেরাই করে থাকেন। যাই হোক এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা উল্লেখ করছি।
.
প্রথমেই বলে নেই, আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ “ভালো থাকা” বলতে যা বুঝে থাকেনঃ
.
(১) প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক, স্ত্রী-সন্তানের সাথে তথাকথিত ‘হাই স্ট্যাটাস’ নিয়ে সমাজে আনন্দে জীবন কাটাচ্ছে।
.
(২) ছাত্র জীবনে সফল, ক্লাসে সর্বোচ নম্বর পেয়ে বড় বড় ডিগ্রী ধারী, ২-৩ টা প্রেম করে, অবৈধভাবে নারীদের ভোগ করে যাচ্ছে, মদ জুয়া নিয়ে ইচ্ছেমত ক্ষণিকের এই দুনিয়াতে ‘এনজয়’ করছে, তারপরেও ভালো ডিগ্রী নিয়ে পাস করে ক্যারিয়ার এস্টাব্লিশ করছে।
.
(৩) হালাল-হারাম মন যা চায় ব্যবসা করে, সুদ-ঘুষের সাথে জড়িয়ে খুব দ্রুত বিশাল টাকার মালিক হয়ে বাড়ি-গাড়ি করতে পারলে।

.
‘ইসলাম’ অনেক কিছুর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দেয়। হতে পারে দুনিয়ার পাপাচারে লিপ্ত থাকার পরেও কারো ভোগ-বিলাসের সুযোগ পাওয়া, এটা আসলে তার জন্য একপ্রকার শাস্তি! আবার কারো জন্য এমনও হতে পারে, বিপদ-আপদে পতিত মানুষটা এর প্রতিদানের কারণে তিনিই হচ্ছেন চূড়ান্ত ভাগ্যবান।
.
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। আর পার্থিব জীবন প্রতারণাপূর্ণ সাময়িক ভোগের সম্পদ ছাড়া আর কিছুইনা। অবশ্যই তোমাদেরক ধন-সম্পদে এবং তোমাদের জীবন দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৮৫-১৮৬।
.
অনেক ভালোমানুষ বা বড় রকমের পাপী না হয়েও আল্লাহর হিকমত অনুযায়ী বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে বিপদের মুখে পতিত করেন। অর্থাৎ বিপদ দিয়ে তাকে পরীক্ষা করেন।” সহীহ বুখারীঃ ৫২৩৬।
.
.
যদিও আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন তবুও তাকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেন, এর হিকমত হচ্ছেঃ

(১) বিপদের দ্বারা তার দুনিয়ার জীবনের পাপ ও ভুল-ভ্রান্তির প্রায়শ্চিত্ত হয়ে পাপ মোচন হবে।

(২) বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরার কারণে সে পরকালে বেহিসাব নেয়ামত পাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনম “দুনিয়ায় যারা বিপদ-আপদে নিপতিত হয়েছে তাদেরকে যখন কিয়ামতের দিন বিনিময় প্রদান করা হবেম তখন বিপদ-আপদ মুক্ত ব্যক্তিরা আশা করবে, দুনিয়ায় যদি তাদের চাঁমড়া কাচি দিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলা হত।” সহিহ আৎ-তিরমিজি, সংসারের প্রতি অনাসক্তি অধ্যায়, হাদিসঃ ২৪০২, হাদীসটি হাসান সহীহ।
.
পক্ষান্তরে অনেকে দিন-রাত পাপ কাজে ডুবে থাকে, তবুও আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনে সাময়িক ভোগ-বিলাসের জন্য অবসর দেন। এ প্রসংগে আল্লামাহ মুহা’ম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যদি কাউকে দেখ সে প্রকাশ্য কবীরা গুনাহতে লিপ্ত আর আল্লাহ তাকে তার বিরোধীতাকারীদের থেকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাকে দুনিয়ার জীবনে উন্নতি দান করছেন, তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখ যে, আল্লাহ তার খারাপ চান। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়াতে তার জন্য তাড়াতাড়ি বিপদ-আপদ নাযিল করে দেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন তখন তাকে গোনাহের মধ্যে ছেড়ে দেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পাকড়াও করবেন।” [ তিরমিযী, রিয়াদুস স্বালিহিন ]
.
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, “যার বিপদ-আপদ যত বড়, তার প্রতিদানও তত বড় হয়। আল্লাহ তাআ’লা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন, তখন তাদেরকে তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকবে তার জন্য হবে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি, আর তাতে যে অসন্তুষ্ট হবে তার জন্য হবে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি।” সহীহ আত-তিরমিজি, সংসারের প্রতি অনাসক্তি অধ্যায়, হাদিস ২৩৯৫, হাদীসটি সহীহ।
.
পাপাচারী লোকদের ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন, “আর যারা কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা যেন তোমাদেরকে চিন্তিত করে না তোলে। তারা আল্লাহ তাআ’লার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (আল্লাহ তাদেরকে ছাড় দিয়েছেন কারণ) আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আখেরাতে তাদেরকে কোন কল্যাণ দান না করা। প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফুরীকে ক্রয় করে নিয়েছে, তারা আল্লাহ তাআ’লার কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। কাফেররা যেন মনে না করে যে, আমি তাদেরকে যে অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমিতো তাদেরকে অবকাশ দেই একারণে যে, যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৭৬-১৭৮।

"মু'মিনের অবস্থা ভারী অদ্ভুত। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু'মিন ছাড়া অন্য কেউ এই কল্যাণ লাভ করতে পারেনা। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকরিয়া আদায় করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। আবার যদি তার সাথে খারাপ কিছু ঘটে, সে ধৈর্যধারণ করে,সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম ৭:৭২২৯ ইফা)

মুমিন ব্যক্তির যে কোন দুঃখ
কষ্টে সাওয়াবের সুসংবাদ........
‘মুমিন ব্যক্তি যে সকল বিপদ
আপদে পতিত হয়,
এমনকি একটি কাটা ফুটলেও...
এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার
জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেন,
অথবা এর জন্য তার আমলনামা থেকে
একটি গুণাহ লোপ করে দেন।

[বর্ণনায়- ঈমাম মুসলিম (র.) হাদীস-৬৩৮২]
.
দুনিয়ার সম্পদ, ভোগ-বিলাস আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে দেন, যাকে ভালোবাসেন না, তাকেও দেন। কারণ, দুনিয়া দিয়ে আল্লাহ বান্দাকে রহমত করেন না, বরং পরীক্ষা করেন। কিন্তু দ্বীন আল্লাহ শুধুমাত্র তাকেই দান করেন যাকে তিনি ভালোবাসেন। বিশ্বাস হয়না

আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ❝প্রতিদিন সূর্য উদয়ের সময় তার দুই পার্শ্বে দুই ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের রবের দিকে অগ্রসর হও। পরিতৃপ্তকারী অল্প সম্পদ, উদাসীন ব্যক্তির অধিক সম্পদ হ’তে উত্তম। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়। অনুরূপ সূর্যাস্তের সময় তার পার্শ্বে দুই ফেরেশতা প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও এবং যারা দান করে না তাদের সম্পদকে ধ্বংস করে দাও। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়।❞ .[সূত্রঃ- আল-মুসনাদ ৫/১৯৭; আল-ইহসান ফি তাকরিব সহীহ ইবনে হিববান হা/৩৩২৯, ৮/১২১-১২২; আল-মুসতাদরাক আলাছ সহীহায়ন ২/৪৪৫, হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ সিলসিলা সহীহাহ হা/৪৪৪; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৪৫৬]

অনেকেই বলে থাকেন বর্তমান সমাজে ভাল নেক্কার স্বামী/স্ত্রী পাওয়া নামি মুসকিল। তাহলে পোষ্টটা পড়ুন

 অনেকেই বলে থাকেন বর্তমান সমাজে ভাল নেক্কার স্বামী/স্ত্রী পাওয়া নামি মুসকিল।

তাহলে পোষ্টটা পড়ুন
হযরত ইব্নু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এইরূপ মন্দ কথা মন্দ লোকদের জন্যেই শোভা পায়। ভাল কথা ভাল লোকদের জন্যেই শোভনীয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মুনাফিকরা হযরত আয়িশাহ সিদ্দীকা (রাঃ…আনহা) এর উপর যে অপবাদ আরোপ করেছে এবং তাঁর সম্পর্কে যে জঘন্য কথা উচ্চারণ করেছে তার যোগ্য তারাই। কেননা, তারাই অশ্লীল। হযরত আয়েশাহ (রাঃ…আনহা) সতী-সাধ্বী বলে তিনি পবিত্র কথারই যোগ্য। এ আয়াতটিও হযরত আয়েশাহ (রাঃ…আনহা) এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আয়াতটির পরিস্কার অর্থ এই যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ), যিনি সব দিক দিয়েই পবিত্র, তাঁর বিবাহে যে আল্লাহ তা’আলা অসতী নারী প্রদান করবেন এটা অসম্ভব। কলুষিতা নারী কলুষিতা পুরুষের জন্যে শোভনীয়। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেন, লোকে যা বলে তারা তা হতে পবিত্র। এই দুষ্টু লোকদের মন্দ ও ঘৃণ্য কোথায় তারা যে দুঃখ ও কষ্ট পেয়েছে এটাও ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা লাভের কারণ। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর স্ত্রী বলে জান্নাতে আদ্নে তাঁর সাথেই থাকবে।
একদা হযরত উসায়েদ ইব্নু জাবির (রাঃ) হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট এসে বলেন,
“আজ আমি ওয়ালীদ ইব্নু উকবা (রাঃ) এর এক অতি মূল্যবান ও উত্তম কথা শুনেছি”। তখন হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে বলেন, “ঠিকই বটে। মু’মিনের অন্তরে একটি কথা আসে। তারপরে ওটা তার বক্ষের উপর চলে আসে এবং এরপর সে ওটা মুখ দ্বারা প্রকাশ করে। কথাটি ভাল বলে ভাল কথা শ্রবণকারী ওটাকে নিজের অন্তরে বসিয়ে নেয়। অনুরূপভাবে মন্দ কথা মন্দ লোকদের অন্তর হতে বক্ষের উপর এবং বক্ষ হতে জিহ্বা পর্যন্ত চলে আসে। মন্দ লোক ওটাকে শোনা মাত্রই নিজের অন্তরে বসিয়ে নেয়”। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) “আল্খাবীছা-তু লিল্খাবীছীনা ওয়াল খাবীছূনা লিল্খাবীছা-তি……এই আয়াতটি পাঠ করেন। [ইব্নু আবি হাতিম (রহঃ)] রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বহু কিছু কথা শোনার পর ওগুলোর মধ্যে যে কথা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওটাই বর্ণনা করে তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তি যে কোন বকরীর মালিকের কাছে একটি বকরী চাইলো। তখন বকরীর মালিক তাকে বললো, “তুমি বকরীর যুথ বা খোঁয়াড়ে গিয়ে তোমরা ইচ্ছামত একটি বকরী নিয়ে যাও”। তার কথামত সে যুথে গিয়ে বকরীর (প্রহরী) কুকুরের কান ধরে নিয়ে আসলো”। [ইমাম আহমদ (রহঃ)] সূত্রঃ তাফসীর ইবনে কাসীর লেখকঃ হাফেজ আল্লামা ইমাদুদ্দিন ইবনু কাসীর (রহঃ) নিজে ভাল না হয়ে ভাল জীবনসঙ্গী খুজছেন? আগে নিজে ভাল হন। আসুন তওবা করি আল্লাহর ও রাসূলের দেখানো পথে চলার চেষ্টা করি। আল্লাহ যেন আমাদের তওবা কবুল করুন,নেক্কার জীবনসঙ্গী দান করেন।

দ্বীনদার ছেলেকে কেন বিবাহ করবেন?

 


দ্বীনদার ছেলেকে কেন বিবাহ করবেন?

.
•• সে তার দৃষ্টি নত রাখবে। রাস্তাঘাটে বা এখানে সেখানে মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে না।
.
•• অফিসে বা বাহিরে থাকা অবস্থায় কি করছে তা নিয়ে আপনাকে দুশ্চিন্তায় থাকবে হবে না। অফিসের কলিগ বা অন্য মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করছে কিনা সেই ভয়ে থাকতে হবে না আপনাকে।
.
•• আপনার সাথে অশালীন আচরণ করবে না। কখনো অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করবে না। আজেবাজে ভাষার ব্যবহার বা গালাগালি করবে না।
.
•• কখনো আপনার বা সন্তানের গায়ে হাত তুলবে না।
.
•• বিয়েতে মোটা অংকের যৌতুক বা উপহার দাবি করবে না। ইন্ডিরেক্টলি সেটার জন্যে ফোর্স করবে না।
.
•• ড্রাগস বা খারাপ সঙ্গের ভয় থাকবে না আপনার। নেশাজাতীয় কোন কিছুর সাথে সম্পৃক্ততা থাকবে না। যাদের সাথে মিশতেছে ওরা কেমন। কবে না ঘরে মাতাল হয়ে ফিরে এই ভয় থাকবে না আপনার।
.
•• আপনাকে এবং আপনার পরিবারের লোকজনকে সে সম্মান করবে। ভালো ব্যবহার করবে।
.
•• দ্বীন ও দুনিয়ার কাজে সহযোগী হবে। আশা করা যায় ঘরের কাজে সহযোগীতা পাবেন। চাকরাণী নয় রাণীর মতো ট্রিট করবে আপনাকে।
.
•• দ্বীন পালনের জন্যে পরিপূর্ণ পর্দা করার জন্যে আপনি একটি সুন্দর পরিবেশ পাবেন। দ্বীন পালনে বা পর্দা করতে কোন বাধার মুখোমুখী হতে হবে না।
.
•• একসাথে দ্বীন পালনের মাধ্যমে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যেতে সহজ হবে। আপনি একজন মাধ্যম পাবেন যার সহযোগিতায় আলেমদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল জানতে পারবেন। ভালো একজন গাইড পাবেন যে দ্বীন পালনে আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে। নিজে না পারলেও আলেমদের কাছ থেকে জেনে জানাতে পারবে।
____
____
কেন আপনি দ্বীনদার কোন মেয়েকে বিয়ে করবেন ??
.
•• যেহেতু সে পরিপূর্ণ পর্দানশিন হবে তাই দাইয়্যুস হওয়ার মতো বড় একটি আজাব থেকে বেঁচে যাবেন আপনি। হাশরের ময়দানে অনেক জবাবদিহিতার হাত থেকে আপনি বেঁচে যাবেন।
.
•• সে উত্তম চরিত্রের পবিত্র মানুষ হবে। দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে সে তার স্বকীয়তা হারাবে না। মৃত্যুর ভয়েও সে তার সম্মান ও সম্ভ্রমকে হারাবে না।
.
•• অফিসে বসে দুশ্চিন্তা করতে হবে না; সে অনৈতিক কোন কার্যকলাপে জাড়াচ্ছে কি না। আপনার সাথে প্রতারণা করছে কি না। আল্লাহর ভয়েই সে নিজের চরিত্রের হেফাজত করবে।
.
•• আপনার সন্তান ভালো একজন শিক্ষিক পাবে। দক্ষ হাতে মানুষ হবে। অবহেলায় অনাদরে বড় হবে না। মানুষের মতো মানুষ হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
•• মোটা অংকের দেনমোহর দিতে হবে না। ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, বিশাল রিসেপশান ও কয়েক লাখ টাকার শপিংয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবেন।
.
•• এই বার্ষিকী, সেই বার্ষিকী, অমুক দিবস, তমুকের বার্থডে পার্টির গিফটের ঝামেলা থেকে মুক্ত আপনি। এই দিবস সেই দিবসের ডেট মনে রাখতে হবে না কষ্ট করে। অমুক মাসের অমুক তারিখে গিফট কিনে দেননি কেন তা নিয়ে ঝগড়া করবে না সপ্তাহ জুড়ে।
.
•• আপনার হালাল ইনকাম অল্প হলে তাতেই তুষ্ট থাকবে। হারাম থেকে বেঁচে থাকতে সহজ হবে আপনার জন্যে। কুমিরের মতো আচরণ করবে না। এটা চাই ওটা চাই বলে আপনাকে ফোর্স করবে না। হারামের দিকে ঠেলে দিবে না।
.
•• আনুগত্য করবে আপনার। কথায় কথায় তর্ক করবে না। বেয়াদবি করবে না।
.
•• হিন্দি সিরিয়াল বা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের আজাব থেকে মুক্ত থাকবেন ইনশাআল্লাহ্। অমুক ভাবী এই করেছে তমুক ভাবী সেই করেছে এই ধরনের ক্যাচাল থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
.
•• দ্বীনের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে আপনাকে। ঈমান ও আমল বুষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহর রাস্তায় বের হতে সাহায্য করবে আপনাকে। বের হওয়ার সময় হলে ব্যাগ গুছিয়ে দিবে আপনার। আচল দিয়ে বেঁধে রাখবে না ইনশাআল্লাহ্।
______
______
লেখাটা পড়ার পর অনেকেরই মনে হবে ইশশশ আমার স্বামী (ছেলেদের বেলায় স্ত্রী) যদি এমন হতো। অথচ আমাদের চিন্তা করা উচিৎ ছিল আমি যদি এমন স্বামী/স্ত্রী হতে পারতাম। নিজের দায়িত্বটা আগে ঠিক মতো পালন করি তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করি এবং তেমন কারো জন্যে দোয়া করতে থাকি। আল্লাহর কাছে নিজের পছন্দ মতো চাওয়ার পাশাপাশি যেন এটাও চাই, আমি যেন তার যোগ্য হতে পারি।

রাসূল(সা:) বলেছেন;
“যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের) বিবাহ দাও। যদি তা না কর (শুধুমাত্র দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিবাহ না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও কেবলমাত্র বংশ, রূপ বা ধন সম্পত্তির লোভে বিবাহ দাও), তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।”
(তিরমিযী ১০৮৫ নং,
ইবনে মাজাহ ১৯৬৭ নং)।
"যদি এমন কেউ (ছেলে) তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে, পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’
[তিরমিযী: ১০৮৪]

♥রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, সাধারণতঃ মেয়েদের চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা হয়- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তোমরা ধার্মিক মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। অন্যথায় তোমাদের উভয় হস্ত অবশ্যই ধূলায় ধূসরিত হবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
♥"তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা দেখে বিবাহ কর"।
(ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮;
সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭)।
♥রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে বিবাহ দাও’।
(তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০)।
‘আমি নারীকে বিবাহ করি(এটি আমার সুন্নত)অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’
(বুখারী : ৫০৫৬;মুসলিম : ৩৪৬৯)
♥"তোমরা কুমারীদের বিবাহ কর।কেননা,
তাদের মুখ বেশি মিষ্টি,তারা অধিক গর্ভধারিণী এবং অল্পে তুষ্ট'।
(সিলসিলা হা/৬২৩,১৯৫৭)
♥রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন;
"যে বিয়ে করল সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল"।
(মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩০৯৬)।
♥ধর্মপরায়ন স্ত্রী লাভে বিজয়ী হও,
তোমার হাত কল্যাণে ভরে যাবে।”
[রিয়াদুস সালেহীন – ৩৬৫]...
তবে বিয়ে করতে সাবধান
♥মহান আল্লাহ বলেন,
"তোমরা মুশরিক মেয়েদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিশ্চয়ই একজন ঈমানদার মেয়ে মুশরিক মেয়ের চেয়ে উত্তম। যদিও সে তোমাদেরকে মোহিত করে। তোমরা মুশরিক পুরুষদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিশ্চয়ই একজন ঈমানদার পুরুষ মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করে। আর আল্লাহ জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন"।
(সূরা : বাক্বারাহ : ২২১)।

♥নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে বিয়ে করতে পারে তার বিয়ে করে নেয়া উচিত। কারণ এটি হচ্ছে চোখকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাবার এবং মানুষের সততা ও চারিত্রিক পবিত্ৰতা রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়। আর যার বিয়ে করার ক্ষমতা নেই তার সাওম পালন করা উচিত। কারণ সাওম মানুষের দেহের উত্তাপ ঠাণ্ডা করে দেয়।”
[বুখারীঃ ১৯০৫, মুসলিমঃ ১০১৮]।

বিয়ে করতে ভয় রোজগার কম এসব ভাবেন পোষ্টটা পড়েন

 বিয়ে করতে ভয় রোজগার কম এসব ভাবেন

পোষ্টটা পড়েন
♥রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন;
তিনব্যক্তিকে সাহায্যে করা আল্লাহর দায়িত্ব; তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে সেই বিবাহকারী যে বিবাহের মাধ্যমে (অবৈধ্য
যৌনাচার হতে)নিজেদের চরিত্রের পবিত্রতা কামনা করে।
(আহমদ,তীরমিযী, নাসাঈ, বাইহাক্বি,হাকেম,
সহীহুল জামে ৩০৫০ নং)।
♥"শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে
"[বাকারা:২৬৮]।
♥আল্লাহ্ বলেন, “অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন।আল্লাহ্ তো প্রাচুর্যময়,সর্বজ্ঞ”।
(সূরা নূর: ৩২)।
♥আর,আল্লাহ আমাদের রিজিকের নিশ্চয়তা দেন।
(নূর: ৩২)।
(সাঃ)বলেন;
♥"দুজনের পারস্পারিক ভালোবাসার জন্য বিবাহের মত ভাল কিছু নেই।"
[ইবন মাজাহ : ১৮৪৭]।
♥আল্লাহ বলেন;
"বিয়ে করলে আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন"।
[সুরাহ নুর: ৩২]
♥আল্লাহ বলেন,
স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক স্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোষাক স্বরূপ’
(সূরা : বাক্বারাহ ২/১৮৭)।
♥যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করল,
তখন সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল,বাকী অর্ধেক সে যেন আল্লাহকে ভয় করে"!!..
(ছহীহুল জামে :৪৩০, ৬১৪৮)।
♥"যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই,আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম(সিয়াম) অবলম্বন করে’।
(নূর : ২৪/৩৩)।

একটি সুখি দাম্পত্য জীবন

 একটি সুখি দাম্পত্য জীবন


ছোট্ট এই জীবন। অথচ চাহিদা অসীম।
সুখের সংসার গড়ে তোলার জন্য চেষ্টার অন্ত নেই
আমাদের। টাকা ছাড়া নাকি সুখি হওয়া যায়না, আর
টাকা উপার্জনের জন্য হারাম পন্থা অবলম্বন করাতেও
যেন কোন মাথা ব্যথা নেই।
কারন কিভাবে যেন আমাদের মাথায় ঢুকে গেছে,
'ঘরে যখন খাবার না থাকে, ভালবাসা তখন জানালা
দিয়ে পালায়!'
:
সত্যিই কি তাই?
একটু দেখি কেমন ছিল আল্লাহর রাসূল (সা.) ও আয়িশাহ
(রা.) এর সংসার, কতটা বিত্তের মাঝে কাটিয়েছিলেন
সমগ্র জীবন।
একটু দেখি অভাব অনটনের চূড়ান্ত পর্যাযেও তাঁদের
সংসার থেকে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়েছিল
কিনা!
:
আয়িশাহ (রা.) এর ঘরটি ছিল খুবই ছোট। উচ্চতায় মাত্র
৬/৭ হাত। ছাদ ছিল খেজুর পাতার, বৃষ্টির পানি থেকে
রক্ষার জন্য উপরে কম্বল দেয়া ছিল। দরজা ছিল কাঠের।

♥আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেন,
'আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) যখন নামাযের
সিজদা দিতেন তখন তাঁর হাতের সাথে আমার পা লেগে
যেত, আমি তখন পা গুটিয়ে নিতাম। পা গুটিয়ে নেয়ার
পরই কেবল তিনি সিজদা করতে পারতেন।
. বুখারী, আদব আল মুফরাদ, ১:২৭২

♥ঘরে আসবাবপত্রের মধ্যে ছিল একটি খাট, একটি চাটাই,
একটি বিছানা, একটি বালিশ, খোরমা খেজুর রাখার
দুটি মটকা, পানির একটি পাত্র এবং পানি করার একটি
পেয়ালা। ছোট ঘরটিতে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা
ছিলনা।
আয়িশাহ (রা.) বলেন, আমরা একাধারে চল্লিশ রাত
কোন আলো বা বাতি ছাড়াই পার করে দিতাম।
. বুখারী, সালাত, ২১(৩৭৫)
♥বেশীর ভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হত। মাসের পর মাস
আগুন জ্বলত না, কোন খাবার রান্না হত না।
মাঝে মাঝে তিনটি পূর্ণ চাঁদ উঠে যেত তবু খেজুর আর
পানি খেয়েইই কাটিয়ে দিতে হত।
তায়ালিসি, মুসনাদ,২০৭(১৪৭২)

♥রাসূল যেদিন তাঁর সুউচ্চ মহান বন্ধুর সাথে মিলিত হন,
সেদিন এক বাটি যব ছাড়া ঘরে কিছুই ছিল না, এটুকুও এক
ইহুদীর কাছে থেকে রাসূলের তরবারী বন্ধক রেখে ক্রয়
করা হয়েছিল।
. বুখারী, রিকাক, ১৭(৬০৯৪)

♥রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায় আয়িশাহ (রা.) এর জীবন
যেমন কঠিন ছিল, বিধবা হিসেবে পরবর্তী ৫০বছর এর
কোন ব্যতিক্রম ছিল না। যা পেতেন সবই দান করে
দিতেন। আর নিজে খেজুর আর পানির উপর সন্তুষ্ট
থাকতেন।
তিনি বলেছেন,
রাসূল (সা.) এর ইন্তিকালের পরেও আমি কখনো পেট
ভরে খাবার খাইনি।
বুখারী, জিহাদ, ৮৮(২৭৫৯)

♥রাসূল (সা.) এবং আয়িশাহ (রা.) এর ভালবাসা এত প্রগাঢ়
ছিল যে সাহাবিরা আয়িশাহ (রা.) কে 'রাসূলের
প্রিয়তমা' বলে ডাকা শুরু করেছিলেন।
যেদিন আয়িশাহ (রা.) ঘরে থাকার পালা আসত, সেদিন
সাহাবিরা হাদিয়া-তোহফা পাঠাতে পছন্দ করতেন,
কারন ঐদিন রাসূল (রা.) এর হাসিতে অন্যরকম আনন্দ
অনুভব হত।
ইবনে জাওযি, সিফাতুস সফওয়া, ২:৩১

♥আমর ইবনে আস (রা.) একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস
করলেন,
'আপনি কাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন?'
আল্লাহর রাসূল দ্বিধা ছাড়াই বললেন,
'আয়েশা।' (সংক্ষিপ্ত)
বুখারী, হিবা, ৬,৭(২৪৩৫-২৪৪১)

♥আল্লাহর রাসূল যখন কোন যুদ্ধে যেতেন, স্ত্রীদের থেকে
এক মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতেন, ফিরে এসে তিনি
আয়িশাহ (রা.) এর ঘরে আগে যেতেন।
বুখারী, ফাযায়েলুস সাহাবা,৫(৩৪৬২)

♥প্রিয়তমা স্ত্রী কে আনন্দ দিতে একদা আল্লাহর রাসূল
(সা.) বললেন, এসো আমরা দৌঁড়াই, দেখি কে আগে
যেতে পারে।
আয়িশাহ (রা.) হালকা পাতলা গড়নের ছিলেন, তাই
স্বাভাবিক ভাবেই তিনি জিতে গেলেন।
কয়েকবছর পর আবারো একই প্রস্তাব দিলেন। ততদিনে
আয়িশাহ (রা.) এর ওজন বেড়ে গিয়েছিল,এবং দৌঁড়ের
গতিও কমে গিয়েছিল। এবার আল্লাহর রাসূল জিতে
গেলেন এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে হেসে বললেন, এ
হচ্ছে ঐদিনের বদলা।
. বুখারী, নিকাহ, ৮৩(৪৮৯৫)
♥মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে আয়িশাহ (রা.) সংসার জীবন
ছিল,পরম ভালবাসা ও মমতায় পরিপূর্ণ। এমন কোন ছোট
থেকেও ছোট সমস্যা হয়নি যা তাঁদের সম্পর্কে ফাটল
ধরাতে পারে। প্রতিদিনই এ ভালবাসা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেত
এবং প্রতিটি ঘটনাই তাঁদের কে আরও নিকটবর্তী করত।
অভাব অনটনের চূড়ান্ত পর্যায়েও এতটুকু অসন্তুষ্ট হননি,
উল্টো কেউ কোন খাবার পাঠালে সন্তুষ্ট চিত্তে তা
দান করে দিয়েছেন অন্যের কষ্টের কথা চিন্তা করে।
আত্মত্যাগের উপর ভিত্তি করে গভীর ভালবাসার বন্ধন
গড়ে উঠেছিল,
এ বন্ধন বর্তমান ও ভবিষ্যতের উপর নির্ভরশীল ছিল না,
বরং তা আখিরাতের অনন্ত পথের দিকেই নিবন্ধ ছিল।
:
জানি হয়ত এ যুগে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা এতটা
দারিদ্রের মাঝে সংসার করতে,
হয়ত সম্ভব হবেনা সামান্য কিছু শুকনো রুটি,খেজুর,পানির
তে সন্তুষ্ট থাকতে, হয়ত সম্ভব হবেনা মহিয়সী উম্মুল
মোমিনীনগণ এবং সাহাবিয়া (রা.) দের পুরোপুরি
অনুসরন করতে।
কিন্তু চেষ্টা তো করা যায়.... অন্তত সেই অনুসরনে
বর্তমান অবস্থার উপর সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করা

আল্লাহর ভালবাসা

 আল্লাহর ভালবাসা

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী ﷺ বলেন,
‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ
করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক
ফিরিশ্তাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে
থাকলেন। যখন সে তাঁর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাকে
বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘এ লোকালয়ে
আমার এক ভাই আছে, আমি তার কাছে যাচ্ছি।’ ফিরিশ্তা
জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রতি কি তার কোন অনুগ্রহ
রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য তুমি যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘না,
আমি তার নিকট কেবলমাত্র এই জন্য যাচ্ছি যে, আমি তাকে
আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ ফিরিশ্তা বললেন, ‘(তাহলে
শোনো) আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত হিসাবে (এ কথা
জানাবার জন্য) এসেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে
ভালবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’
রিয়াদুস স্বালেহীন ২/৩৬৫। মুসলিম ২৫৬৭

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরীল (আ.)-কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসী, তুমিও তাকে ভালোবাসো। রাবী বলেন, অতঃপর জিবরীল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসতে থাকেন এবং আকাশে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশমণ্ডলীর অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। অতঃপর সে বান্দার জন্য জমিনেও স্বীকৃতি স্থাপন করা হয়। আর যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন জিবরীল (আ.)-কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক বান্দাকে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা করো। রাবী বলেন, অতঃপর জিবরীল (আ.)-ও তাকে ঘৃণা করেন এবং আকাশে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, তোমরাও তাকে ঘৃণা করো এবং আকাশবাসীরাও তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। অতঃপর তার জন্য জমিনেও ঘৃণা স্থাপন করা হয়। (মুসলিম-১৫৭)

হাদিসে এসেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অন্ধকার রাতে শক্ত পাথর খন্ডের উপর হেঁটে যাওয়া একটা ক্ষুদ্র পিঁপড়ার ব্যাপারে আল্লাহ খবর রাখেন। চিন্তা করুন সামান্য একটি পিঁপড়া যেটি দেখতে অতি ক্ষুদ্র রাতের অন্ধকারে এটির চলাফেলার ব্যাপারে ও আল্লাহ ওয়াকিবহাল। আল্লাহ আযযা ওয়া যাল এ ক্ষুদ্র প্রানীর চলাফেরার শব্দ ও শুনতে পান! এটি কি করছে তাও দেখতে পান। আল্লাহু আকবর!আসলেই আল্লাহর ব্যাপারে আমাদের সজাগ হত হবে। আসলে কি আল্লাহকে যতটুকু ভয় করা দরকার ততটুকু ভয় করি আমরা? আল্লাহকে যতটুকু চেনার দরকার ততটুকু চিনি বা চিনতে চেষ্টা করি?

নাফসের প্ররোচনায়,যৌবনের উন্মাদনায় আমাদের যুবকেরা সুযোগ পেলেই একাকী নির্জন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের খায়েশাত পূরণ করে।তারা কেন দরজা বন্ধ করে? কারন পিতা-মাতা,ভাই-বোন বা কোন আত্মীয়স্বজনের কাছে ধরা পাওয়ার ভয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে। যুবক-যুবতীরা রুমের দরজার বন্ধ করে এমন সব বেহায়াপনা দৃশ্য দেখার জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে যার জন্য আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়! এমন সব নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ দেখে যা বেসিক্যালি বিয়ের পরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যের একান্তই পার্সোনাল হয়ার কথা ছিল! এবং প্রতি মূহুর্তে এরা আল্লাহর অবাধ্যতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং আল্লাহর ক্রোধ এদের উপর বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাপ করার সময় আমরা ভয় পাই মানুষ জন দেখে ফেলল কিনা অথচ আল্লাহ আমাকে আপনাকে প্রতি সেকেন্ড,ন্যানো সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। আমাদের রব আমাদের দেখছেন। দরজা বন্ধ করে আপনি আপনার পাপ দুনিয়ার লোকজন থেকে লুকাতে পারবেন কিন্তু আল্লাহর ব্যাপারে কি হলো আপনার? তিনি আপনাকে দেখছেন না? নাকি আপনি আল্লাহর চাইতে ও দুনিয়ায় মানুষের ব্যাপারে বেশি ভয় করেন? অথচ আল্লাহর পাকড়াও বড়ই কঠিন। চিন্তা করুন যখন নির্জনে, একাকী কক্ষে আপনার ল্যাপটপে অশ্লীল ভিডিও চলে, যখন আপনার মোবাইলের স্ক্রীন নীল হয় তখন যদি আল্লাহ অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেন? একজন মানুষ অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকতে পারেনা। তখন যদি আপনি মৃত্যুবরণ করেন? যখন আপনি হারাম জিনিস দেখছেন আল্লাহ তখন ও অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন কেন জানেন? কারন তিনি চান না আপনি পর্ণ দেখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন! তিনি চান আপনি সিজদায় মৃত্যুবরণ করেন!আল্লাহ চান আপনি কুরান তিলায়াত করতে, কুরান মুখাস্ত করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চান আপনি হজ্ব করা অবস্থায়,সিয়াম রত থেকে মৃত্যুবরণ করেন। তাই আল্লাহর চরম নাফরমানি করা অবস্থায় ও নিঃশ্বাসটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি আপনাকে নিয়ামত দিয়ে যাচ্ছেন। সুবহানআল্লাহ কত বড় দয়াময় আল্লাহ। কত করুণাময় তিনি। অথচ মানুষ গুলো কত অবুঝ, কত মূর্খ। মোবাইলে, ল্যাপটপ এ পাস ওয়ার্ড দিয়ে রাখে যাতে মানুষ না দেখতে পারে অথচ একবারের জন্যে ও ভাবেনা আল্লাহ আমাকে নির্জন একাকী কক্ষে ও দেখছে। দুনিয়ার লোকজনের ব্যাপার আমরা ভীত থাকি। তার মানে কি দাঁড়াল? আল্লাহ দেখল দেখুক বাট মানুষ জন যেনো না দেখে। দুনিয়ার লোকজন আপনার কাছে আল্লাহর চাইতে বড়? তাহলে শুনে রাখুন এদের সম্পর্কে আল্লাহ কুরানে কি বলেছেনঃ "তারা মানুষের কাছে লজ্জিত হয় এবং আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয় না। তিনি তাদের সাথে রয়েছেন, যখন তারা রাত্রে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে, যাতে আল্লাহ সম্মত নন। তারা যাকিছু করে, সবই আল্লাহর আয়ত্তাধীণ।"- {কুরান-৪ঃ১০৮}
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। -[কোরআন ৬ঃ৫৯]

Translate