Tuesday, September 26, 2023

উপহাস বা বিদ্রূপ অর্থ "কারো দোষ এমন ভাবে বর্ণনা করা, যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা বা হেয় করার সূযোগ পায়, যা শুনলে ঐ ব্যক্তির অন্তরে কষ্ট পায়।

 উপহাস বা বিদ্রূপ অর্থ "কারো দোষ এমন ভাবে বর্ণনা করা, যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা বা হেয় করার সূযোগ পায়, যা শুনলে ঐ ব্যক্তির অন্তরে কষ্ট পায়।

অর্থাৎ কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে- কারো শরীর, বা অঙ্গ নিয়ে বা কারো অভ্যেস নিয়ে তামশা করা। যেমন এ ভাবে বলা যে, অমুকের চোখ বড়, নাক চেপ্টা, পেঁচা নাকা, পাছা বড়, হাঁটে কেমন! ইত্যাদি মন্তব্য করা। সর্বসম্মতিক্রমে এ ধরনের মন্তব্যে যদি ঐ লোক শুনলে মনে কষ্ট পায় তা নি: সন্দেহে হারাম।
রসিকতা ও উপহাস এক নহে। রসিকতা শর্ত সাপেক্ষে বৈধ।
শর্ত হলো, এতে যেন অসত্যের মিশ্রণ না হয় এবং কারো মনে কষ্টের কারণ না হয়ে থাকে। অার উপহাস হলো অহংকারের বহি:প্রকাশ, অর্থাৎ নিজকে সুপার ভাবা এবং অপরকে তুচ্ছ মনে করা। তাই কুরান ও হাদিসের বর্ননা মতে উপহাস হারাম ।

কাউকে অবজ্ঞা কিংবা উপহাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘোরতর অন্যায়। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে এ ধরনের অপকর্মের পরিণাম সম্পর্কে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে— ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের একদল অন্য দলকে যেন উপহাস না করে, কেননা হতে পারে (আল্লাহর কাছে) উপহাসকৃত দল উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। অনুরূপ কোনো মহিলা যেন অপর মহিলাকে উপহাস না করে, কেননা হতে পারে উপহাসকৃত মহিলা উপহাসকারিনীর চেয়ে উত্তম। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘‘মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছভাবে। (তিরমিজি ১৯৯৯) হযরত ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সা:) বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’ (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)’ তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’ ( মুসলিম ৯১, ইবনে মাজাহ ৫৯)। হযরত অায়েশা (রা:) বলেন, একদা অামি কারো ব্যপারে অংগ ভংগির মাধ্যমে দেখাচ্ছিলেম তখন হযরত (সা:) ফরমান, এর বিনিময়ে অামাকে বিরাট কিছু দিলেও অামি গ্রহন করবনা। ( তিরমিজি)। অন্য বর্ননা মতে, কাউকে কোন ব্যপারে হেয়, ঘৃনে বা উপহাস করলে যতক্ষণ পর্যস্ত সে ঐ দোষে ভুক্তভোগী না হবে কতক্ষণ তার মৃত্যু হবেনা। মুহাদ্দিসরা বলেন, সে বা তার বংশের যে কেউ ঐ দোষে অভ্যস্ত হবেই হবে। ইবনে অাব্বাস (রা:) বলেন, এ হাদিছ শুনার পর অামি কোন কুকুর নিয়েও ঠাট্টা করতাম না, এ ভয়ে যদি অামি কুকুরের স্বভাবের হয়ে যাই! "নিশ্চয় অাল্লাহ তোমাদের চেহেরা বা সম্পদের দিকে দেখেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে। ( মুসলিম শরীফ, হা: ২৫৬৪)। মনে রাখবেন, ফরহেজগার ব্যক্তিই অাল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা বান। সুতরাং আসুন আমরা ভাই ভাই হয়ে যাই, আর ভাইয়ের প্রতি হৃদ্যতার হাত বাড়িয়ে দিই, সহানুভূতিশীল আর সহনশীল হই। কারো ব্যাপারে সমালোচনা না করি, কাউকে উপহাস না করি। অাল্লাহ বলেন,
"মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। (সূরা হুজুরাত: ১০)

No comments:

Post a Comment

Translate