Friday, August 13, 2021

বরকতের ১০টি চাবি:

বরকতের ১০টি চাবি:

১) ঈমান এবং তাক্বওয়া।

২) যেকোনো কাজের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' বলা।

৩) কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়ানো (বেশি বেশি পড়া, বুঝা,আমল করা)।

৪) সদাকা বা দান করা।

৫) আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা।

৬) সকাল বেলা না ঘুমিয়ে কাজ শুরু করা

৭) নিজে নামাজ পড়া এবং পরিবারের লোকদের নামাজের নির্দেশ দেওয়া।

৮) আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা।

৯) বেশি বেশি ইস্তেগফার করা।

১০) পরিপূর্ণ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।

- শাইখ Ahmadullah

Wednesday, August 11, 2021

মা-আদরের “মা”

 

১৮ জুলাই, ২০২১ ইং, ৩ শ্রাবণ, ১৪২৮, ৭ জিলহজ, ১৪৪২ রোজ রবিবার সকাল আনুমানিক ১১ টা ১৫ মিনিটে আমার জন্মদাত্রী মা এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন।

 ’মা’ বলে ডাকার মানুষটা চলে গিয়েছে। অভিমানের মানুষটা চলে গিয়েছে। যার কাছে সমস্ত আবদার করতাম সেই মানুষটা চলে গিয়েছে। আদর স্নেহ মমতা দিয়ে যে মা লালল-পালন করেছেন সেই মা আজ কবরবাসী। ব্যথা ভুলতে পারছি না। এ ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। কি দিয়ে তুলনা করবো? ‘মা’ তোমার তুলনা কি দিয়ে করবো? আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে যা কিছু সবই তো তোমার দেওয়া। আমার যে বেড়ে ওঠা, আমার যে রক্ত মাংস সবই তো তোমার শরীরের অংশ। আমার নিজের তো কিছুই নেই। ২০০৯ সালের কোন এক বৃহস্পতিবার সালে ঠিক তোমার মৃত্যূ যে সময়টাতে হয়েছে এমন সময় চির কালের মহা বীর, বিপদের কাণ্ডারী, অসীম সহ্য ক্ষমতা আল্লাহ যার ভিতরে দিয়েছিলেন সেই বাবাও চলে গিয়েছে। তোমরা শুধু চলেই যাও, তোমার ছেলে মেয়েরা কেমন করে থাকে সেটা তোমরা জানো না। তোমাদের চলে যাওয়া যে এতোটা ব্যথীত করবে কে জানতো!!! আল্লাহ সহ্য ক্ষমতা দিয়েছেন তাই হয়তো বেঁচে আছি। তাছাড়া তোমাদের হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ানোর থেকে মরে গিয়ে তোমাদের কাছে চলে আসতাম। কালো হোক, ধলা হোক তোমরা ছিলে আমার চোখে শ্রেষ্ঠ। বাবা মারা যাবার সময় ক্লাস 9 এ পড়ি। তখন থেকে মায়ের লোলের ভিতর থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিই। 

রাত জেগে পড়াশোনা করতাম, মা জেগে থাকতো। রাতে যখন মায়ের পাশে ঘুমাতাম মা প্রায়ই আমার শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেন। আমি তখন বুঝতাম না। কিন্তু একটু পরেই যখন দেখদাম মা হাত পাখাটা নাড়ছে তখন বুঝতাম আমার শরীর ঘেমে গিয়েছে তাই মা বাতাস করছে। এমন হাজারো স্মৃতি এখন আমার অন্তরে। বাবা মারা যাবার পর থেকে মাকে নিয়ে আলাদা একটা সংসার আমার। ভাইয়েদের টানা টানির সংসার। তার উপরে আমি মা আর দাদি তিনটা মানুষ। সব দিক বিবেচনা করে মাকে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে যায়। আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো যেন কেউ আমার মাকে খাবারের খোটা, কাপড়েরের খোঁটা দিতে না পারে। আমার সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে ভাবেই চলতো আমাদের মা ছেলের সংসার। এভাবেই মায়ের কোলে শুয়ে আমি আমার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করি। কতো স্মৃতি, কতো কথা, কতো আনন্দ সবই যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে আমি পড়াশোনা করার জন্য ঢোকাতে চলে আসি। তারপর থেকে মায়ের থেকে আমার দূরত্ব। আমি মাকে মোবাইল কিনে দিয়েছিলাম। মা আমার সাথে ফোনে কথা বলতো। কতো বার যে আমাকে কল করতো! মনি মনি মনি- মনি ছাড়া কোন কথা সে বলতো না। 

আমার তেমন বাড়ি যাওয়া হতো না। কোন উৎসব বা বিশেষ ছুটি পেলে বাড়ি যেতাম। মা আমাকে সব জিনিস রান্না করে করে খাওয়াতো। আমার মনে যেটা খেতে চাইতো মা আমাতে সেটাই বানিয়ে খাওয়াতো। রোদ  বৃষ্টি ঝড় তুফান তাকে যেন কেউ দমিয়ে রাখতে পারতো না। আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। 

আমি কঁচু শাস পছন্দ করতাম, মা আমাকে কঁচু শাক খাওয়াতো। মারা যাবার আগে সবাইকে বলে রেখেছে ‘এখন থেকে কেউ কঁচুর পাতা তুলবা না, আমার মনি বাড়ি আসবে আমি আমার মনিকে শাক রান্না করে খাওয়াবো।’ 😥

আমি পিঠা খেতে পছন্দ করতাম, মা এক হাড়ি চাউল রেখেছে আমি আসলে গুড়া কুটে আমাকে পিঠা খাওয়াবে😥কে

আমি কাঁচা কাঁঠাল রান্না পছন্দ করতাম, মা গ্রামে খুঁজে খুঁজে আমার জন্য একটা কাঁঠাল দেখে রেখেছে, আমি বাড়ি গেলে রান্না করে খাওয়াবে।😥

আহা😥 মাছের ডিম!!! মাকে প্রায়ই বলতাম ঢাকাতে মাছের ডিমের অনেক দাম । মা বাজার থেকে ৩ কেজি ডিম ওয়ালা মাছ কিনেছে। একটা ডিম ও মাছ সে খাইনি। পরের বাড়ি ফ্রিজে রেখে এসেছে। আমি প্রায়ই বলতাম তুমি খেয়ে ফেলো। মা বলতো আমি খাবো না, তুমি আসবা তারপর রান্না করে খাওয়াবো।😥 

এ স্মৃতি কেমন করে ভুলবো। মা। তোমার সাথে আমাকেউ নিয়ে গেলে না কেন? জীবতি মাকে আর দেখতে পারলাম না। মায়ের মরদেহ কবরে নামাতে হলো আমার😥 মায়ের জন্য যা করেছি তা তো কিছুই না। একটা সময় অনেক কষ্ট ছিলো সংসারে। মা-বাবার পরিশ্রমের ফল আজকের আমরা তিনটা ভাই একটা বোন। অভাবের সংসারে তাদের অবদান কি করে ভুলে যাবো। যাদের মাধ্যম দিয়ে দুনিয়ার আলো বাতাস দেখলাম, হাটি হাটি পা পা করে বড় হলাম তাদেরকে কবরে রেখে কেমন করে থাকবো?😥

মৃত্যু অবধারীত এটা সত্য। তারপরও প্রিয় মানুষের হারানোর বেদনা সহ্য করা কঠিন। মাকে হারিয়ে আমি যেন অস্তিত্ব শূণ্য হয়ে পড়েছি। কোন ভাবেই মায়ের কথা ভুলতে পারছি না। কিছুই তো করতে পারলাম না মায়ের জন্য। আমার টাকা পয়সা কোন কাজে আসবে যদি আমার মা-বাবার কল্যাণে খরচ করতে না পারি😥

আল্লাহ আমাকে সহ্য ক্ষমতা দিক। 

মা, বাবা, তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসি, অনেক, অনেক।


Translate