Saturday, September 3, 2022

আমানতের অর্থ-সম্পদ মালিকের অনুমতি ছাড়া খরচ করার বিধান

 প্রশ্ন: যদি আমার কাছে কারও টাকা আমানত হিসেবে জমা থাকে। আর আমি যদি বিশেষ দরকারে সেখান থেকে ঋণ হিসেবে টাকা নিয়ে প্রয়োজনে খরচ করি তাহলে কি তা হারাম হবে? দলিলের ভিত্তিতে জানতে চাই।

———————————————————
উত্তর: কেউ যদি কারও কাছে টাকা-পয়সা বা অন্য কোনও অর্থ-সম্পদ আমানত হিসেবে জমা রাখে তাহলে তার অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। কারণ হতে পারে, সে মৃত্যু বরণ করবে অথবা সে দেউলিয়া হয়ে যাবে। তখন উক্ত আমানত বিনষ্ট হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

“من استُودِع مالاً، أو بُعث به معه، فلا أرى أن يَتَّجر به، ولا أن يسلفه أحدًا، ولا يحرِّكه عن حاله؛ لأني أخاف أن يُفلس، أو يموت؛ فيتلف المال، وتضيع أمانته”. اهـ.
“কারও কাছে যদি অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখা হয় বা তার মাধ্যমে কোথাও কোথাও পাঠানো হয় তাহলে তা দ্বারা তার ব্যবসা করা বা অন্য কাউকে তা ধার দেওয়া বা তা তার নিজ অবস্থা থেকে সরানোকে আমি বৈধ মনে করি না। কারণ আশঙ্কা আছে যে, সে দেউলিয়া হয়ে যাবে বা মৃত্যু বরণ করবে। ফলে সম্পদ নষ্ট হবে এবং আমানত ভঙ্গ হবে।” [আল মুদাওয়ানা]।

হ্যাঁ তার উক্ত আমানত গ্রহণকারীর যদি টাকার বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে মূল মালিকের কাছে তার গচ্ছিত অর্থ ব্যবহারের অনুমতি নিবে। যদি অনুমতি দেয় তাহলে ভালো। অন্যথায় তার সম্পদ যেমন ছিল তেমন থাকবে। তাতে কোনও ধরণের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। সে যদি অনুমতি ছাড়া উক্ত গচ্ছিত সম্পদ নিজের দরকারে ব্যবহার করে ফেলে তাহলে সে আমানতকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলো না। আর ব্যবহার করতে গিয়ে যদি উক্ত আমানত হারিয়ে ফেলে বা তাতে কোনও ক্ষয়-ক্ষতি করে ফেলে তাহলে সে তার ক্ষতিপূরণ দিবে। ইমাম ইবনে আবু যায়েদ আল মালিকি রহ. বলেন,
“ومن تَعدَّى على وَديعة، ضَمِنها”
“যে ব্যক্তি আমানত লঙ্ঘন করবে সে তার জিম্মাদার হবে।” [আর রিসালাহ]

➤ অবশ্য কতিপয় আলেম বলেন, যদি গচ্ছিত সম্পদ হয় টাকা-পয়সা আর তার অন্যান্য সম্পদ থেকে পরিশোধের ব্যবস্থা থাকে তাহলে বিশেষ দরকারে মালিকের অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করতে পারে। তবে শর্ত হল, সে বিষয়ে সাক্ষ্য রাখতে হবে। ইমাম মালিক রাহ-কে এ ব্যাপারে পুনরায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
“إن كان له مالٌ فيه وفاءٌ، وأَشهَدَ، فأرجو أن لا بأس به”
“যদি তার কাছে এমন অর্থ থাকে যা দ্বারা গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা যাবে তাহলে আশা করি তাতে কোনও সমস্যা নেই।”

الباجيّ: “وهذا في الدنانير والدراهم. ووَجهُ الجواز، إذا قلنا: إن الدنانير والدراهم لا تَتعيَّن، كأنه لا مَضرَّة على المُودِع
في انتفاع المُودَع بها إذا ردَّ مِثلها،

তবে এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, সতর্কতার স্বার্থে আমানত দাতা যেভাবে আমানত জমা রেখেছিলো তা হুবহু সেভাবেই রেখে দেওয়া এবং তাতে কোনও ধরণের হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকাই অধিক উত্তম। কারণ আমানত দাতা আমানত জমা রেখেছিলো নিরাপত্তার স্বার্থে; আমানত গ্রহীতা ইচ্ছামত তা ব্যবহার করবে বা তার দ্বারা ফায়দা উঠাবে এ জন্য নয়।

❑ ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত রক্ষা করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

কুরআন-হাদিসে আমানত রক্ষার ব্যাপারে অনেক বক্তব্য এসেছে। যেমন:

◍ কুরআনে এটিকে ইমানদারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ

“এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকারের প্রতি যত্নবান হয়।” [সূরা মুমিনূন: ৮]।

◍ আল্লাহ তাআলা আমানতকে তার প্রাপকদের বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

إِنَّ اللَّـهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও।” [সূরা নিসা: ৫৮]।

◍ হাদিসে আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফিকের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ [متفقٌ [عَلَيْهِ
زَادَ في رِوَايةٍ لمسلم: وإنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أنَّهُ مُسْلِمٌ

‘‘মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি। যথা: কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম] সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘…যদিও সে রোজা রাখে এবং নামাজ পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।’’ মহান আল্লাহ আমাদেরকে আমানত রক্ষার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

যে পুরুষের স্ত্রী নাই সে হল মিসকিন হাদিসটি সহিহ নয়

 প্রশ্ন: “যে পুরুষের স্ত্রী নাই সে হল, মিসকিন আর যে নারীর স্বামী নাই সে হল, মিসকিনা”এ হাদিসটি কি সহিহ?

উত্তর: এ হাদিসটি বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে সহিহ নয়। নিম্নে এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হল:

এ প্রসঙ্গে ইমাম বায়হাকি তার শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে (৪/৩৮২ ও ৫৪৮৩) এবং ইমাম তাবারানি তার মুজামুল আওসাত গ্রন্থে (৬/৩৪৮ ও ৬৫৮৯) একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। তা হল,
مِسكينٌ مسكينٌ رجلٌ لا امرأةَ له ، مسكينةٌ مسكينةٌ امرأةٌ لا زوجَ لها
“যে পুরুষের স্ত্রী নাই সে হল, মিসকিন, মিসকিন আর যে নারীর স্বামী নাই সে হল, মিসকিনা মিসকিনা।”

কিন্তু এ হাদিসটির মান কি বা তা কতটুক গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে তদন্ত না করেই এক শ্রেণির বক্তা এবং ফেসবুক ব্যবহারকারী (বিশেষ করে অবিবাহিত যুবক-যুবতিরা) ফেসবুুকে এ বিষয়ে পোস্টের সয়লাব বইয়ে দিচ্ছে! তাই এ হাদিসটির সঠিক তাহকিক (বিশ্লেষণ) জানা প্রয়োজন। নিম্নে সংক্ষেপে তা পেশ করা হল:

ইবনে আবিদ দুনিয়া তার আল ইয়াল গ্রন্থে নিম্নোক্ত সনদে এ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন:
حدثنا عبدالله بن معاوية الجمحي حدثنا محمد بن ثابت العبدي حدثنا هارون بن رئاب عن أبي نجيح قال قال رسول مسكين مسكين مسكين رجل ليست له امرأة قالوا يا رسول الله وإن كان كثير المال قال : وإن كان كثير المال مسكينة مسكينة مسكينة امرأة ليس لها زوج – قالوا يا رسول الله وإن كانت غنية مكثرة قال وإن كانت غنية مكثرة

◈ ১. হাফেজ হায়সামি তার মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে (৪/২৫২) হাদিসটির সনদ প্রসঙ্গে বলেন, رجاله ثقات إلا أن أبا نجيح لا صحبة له “এর বর্ণনাকারীগণ সকলেই সিকাহ (বিশ্বস্ত) তবে আবু নুজাইহ [মৃত্যু: ১৩১ হিজরি] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংশ্রব পান নি।” অর্থাৎ তিনি সাহাবি নন অথচ তিনি কোন সাহাবির নিকট এ হাদিসটি শুনেছেন তা উল্লেখ না করে সরাসরি “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন” বলে বর্ণনা করেছেন।
অত:এব মুস্তালাহুল হাদিসের মূলনীতি অনুযায়ী, এ হাদিসটি মুরসাল। আর মুরসাল হাদিস জইফ (দুর্বল) হাদিসের অন্যতম একটি প্রকার।

◈ ২. এ ব্যাপারে শাইখু ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. বলেন, ليس هذا من كلام النبي – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم “এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা (হাদিস) নয়।” তিনি তার এ মন্তব্য أحاديث القصاص বা ‘গল্পবাজ বক্তাদের হাদিস’ নামক কিতাবের ৩০-৩১ পৃষ্ঠায় এবং তাঁর ফতোয়া সমগ্র ‘মাজমুউল ফাতাওয়া” গ্রন্থের’ ১৪তম খণ্ডের ১২৫ ও ৩৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।

◈ ৩. শাইখ আলবানি বলেন, এ হাদিসটি জইফ। [জইফুত তারাগিব, ১২০৪]
الدُّنيا متاعٌ ، ومن خيرِ متاعِها امرأةٌ تُعينُ زوجَها على الآخرةِ ، مِسكينٌ مسكينٌ رجلٌ لا امرأةَ له ، مسكينةٌ مسكينةٌ امرأةٌ لا زوجَ لها .
الراوي : عبدالله بن عمرو | المحدث : الألباني | المصدر : ضعيف الترغيب
الصفحة أو الرقم : 1204 | أحاديث مشابهة | خلاصة حكم المحدث : ضعيف

◈ ৪. শাইখ আলবানি রাহ. -এর অন্যতম প্রসিদ্ধ ছাত্র, শাইখ মাশহুর হাসান সালামান এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা শেষে বলেন,

فلا يجوز لواعظ ولا لأحد أن ينسب هذا الحديث إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم البتة، فهو ليس بحديث ولا يوجد له إسناد عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، والله أعلم

“অত:এব, কোনও ওয়াজাকারী (বক্তা) বা অন্য কারও জন্য এটিকে কোনভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে সম্বন্ধ করা জায়েজ নাই। কারণ এটি কোনো হাদিস নয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত এর কোনো সনদ (বর্ণনাসূত্র)ও পাওয়া যায় না। আল্লাহু আলাম।”[ islamway]।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান এবং স্বামী যদি সালাত আদায় না করে তাহলে কি তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে

 প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়তে সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান কি? স্বামী যদি সালাত আদায় না করে তাহলে কি তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে একজন মুসলিম বেনামাজি তিন প্রকার হতে পারে। যেমন:

▪️১) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা অস্বীকার করে। এই ব্যাক্তি সরাসরি কাফের এতে কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই সবাই একমত।

▪️২) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা স্বীকার করে কিন্তু কখনো আদায় করেনা বা বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে দুই এক ওয়াক্ত আদায় করে অথবা শুধু জুমার সালাত আদায় করে, এই ব্যাক্তি ও কাফের এটি জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মত।

▪️৩) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা স্বীকার করে এবং নিয়মিত আদায় করে তবে মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা কাযা আদায় করে,এই ব্যাক্তি সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে কারো মতে এটিও কুফরি।তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে এই ব্যক্তি কবিরা গুনাহগার ফাসেক মুসলিম।

◾এবার আমরা উপরোক্ত তিন প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
➤প্রথম প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহর বক্তব্য হল শরীয়তের দৃষ্টিতে কালেমা পাঠকারী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান থাকা পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয। এখন কেউ যদি উক্ত সালাতের ফারযিয়্যাতকে অস্বীকার করে এবং তা পরিত্যাগ করে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে সে ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত ত্যাগকারী ‘মুরতাদ’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সে ব্যাক্তি কাফির, জাহান্নামী হবে। এতে কোন মতানৈক্য নেই। সে যদি বিবাহিত হয় তার বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তিনদিনের মধ্যে তওবা করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তাকে ‘মুরতাদ’ হওয়ার অপরাধে হত্যা করা হবে। তার জানাযা নামায পড়া হবে না। মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না। সে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবেনা। যতক্ষণ না তওবা করে পুনরায় কালেমা পড়ে ঈমান আনয়ন করে। নামায ত্যাগকারীদের সংখ্যা বেশি হোক কিংবা কম হোক; সংখ্যার কম-বেশি হওয়ার কারণে হুকুমের কোন তারতম্য হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবায় বলেন: অতএব তারা যদি তাওবা করে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ আয়াত: ১১, islam qa]।
.
অপর আয়াতে বলেন, তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার অর্থাৎ “গাইয়ার”সম্মুখীন হবে। [সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৯]।

আপনি কি জানেন “গাইয়া” কী? গাইয়া হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে রয়েছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। গাইয়ার উক্ত তাফসীর আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমন ইবনুল কাইয়্যেম রহ. কিতাবুস সালাতে উল্লেখ করেছেন। [তাফসীর ইবন কাসীর সূরা মরিয়ম: ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যা]।
.
বেনামাযী জাহান্নামে যাবে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,তোমাদেরকে কিসে সাকার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪২-৪৩]।
.
সালাত বর্জনের ব্যাপারে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ বান্দা এবং শিরক-কুফরের পার্থক্য সালাত পরিত্যাগ করা। [সহিহ মুসলিম; ১৪৯ ই.ফা. ১৫০; ই.সে. ১৫৫]।

উক্ত হাদীসে আল-কুফর (الكفر) শব্দটি আলিফ লাম (ال) যোগে ব্যবহার করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে কুফরের অর্থ হচ্ছে প্রকৃত অর্থাৎ বড় কুফুরী এটি ব্যাক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কিন্তু আলিফ লাম (ال) ছাড়া কুফর (كفر) শব্দটি যখন নাকেরা (অনির্দিষ্ট) হিসেবে ব্যবহৃত হয় অথবা কাফারা (كَفَرَ ) শব্দটি ফেল (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন তা প্রমাণ করে যে এটা কূফরীর অন্তর্ভুক্ত অথবা সে এই কাজের ক্ষেত্রে কুফুরী করেছে; আর সেই সাধারণ ছোট কুফুরী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে খারিজ (বের) করে দেয় না।
.
বুরাইদা ইবন হোসাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আমাদের ও তাদের মাঝে অঙ্গীকার বা চুক্তি হলো সালাতের। সুতরাং যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে কুফুরী করল।”[মুসনাদে আহমেদ: ২২৯৬৭, তিরমিজি: ২৬২১, মিশকাত: ৫৭৪ হাদীসটি সহীহ]।
.
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না। [তিরমিযী হা/২৬২২ মিশকাত হা৫৭৯; আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন
ইবনে উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২৪/৫২ পৃ. শায়খ আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাহ, পৃঃ ৬]।
.
➤দ্বিতীয় বেনামাজি ব্যাক্তি সম্পর্কে অধিকাংশ ওলামাদের বিশুদ্ধ মত হল সেও কাফির। কেননা ঈমান শুধু মুখে স্বীকৃতি দেয়ার নাম নয়,বরং ঈমান হল অন্তরে বিশ্বাস,মুখের স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে।[ইবনু মান্দাহ, কিতাবুল ঈমান ১/৩৩১] সুতরাং কেউ মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু কাজে বাস্তবায়ন করেনা সে কখনো ঈমানদার হতে পারেনা। অতএব,কেউ সালাত ইসলামের রুকন এটি বিশ্বাস করে,কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া জীবনে কোন দিন সালাত পড়েনা এই ব্যক্তিও কাফের এটিই শক্তিশালী মত।তাই ইতিপূর্বে সালাত অস্বীকার কারীর বিধান সম্পর্কে প্রথম অভিমতে বিস্তারিতভাবে যেসব হুকুম-আহকাম উল্লেখ করা হয়েছে সেসব হুকুম এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে প্রযোজ্য।এই ব্যক্তি যদি বিবাহিত হয় আর বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী পরিপূর্ণ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত পরিত্যাগ করা শুরু করে তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কতক বিদ্বান বলেছেন, বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে তবে নতুন চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে।উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে বেনামাযী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে তওবা করে সালাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের,মোটকথা সালাত বর্জনকারী এমন কাফির হিসেবে গণ্য হবে যা তাকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেয়, যেমনটি পরিষ্কারভাবে কুরআন-সুন্নাহতে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” [সূরা মুমতাহিনাঃ ১০ বিস্তারিত দেখুন ফতোয়ায় আরকানুল ইসলাম ইবনে উছায়মীন, রহঃ]।
.
ইবন আবি হাতিম কর্তৃক তাঁর সুনান বর্ণিত হাদীসের মধ্যে তিনি ‘উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই বলে উপদেশ দিয়েছেন: তোমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করবে সে ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।”[ইবনে মাজা: ৪০৩৪, মিশকাত: ৫৮০]।
.
➤তৃতীয় প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে যদিও মতানৈক্য রয়েছে, তবে কুরআন সুন্নাহর বক্তব্য অনুসারে ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরজ তা যদি কোন মানুষ বা কারো স্বামী স্বীকার করে এবং উক্ত সালাত নিয়মিত পড়ে অলসতা প্রবৃত্তির তাড়নায় মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা কাযা করে আদায় করে তাহলে সে কবিরা গুনাহগার ফাসেক মুসলিম। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় অধিকাংশ বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব্’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে পরিপূর্ণ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং সালাত আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৭৩ পৃঃ ; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো: ১৩৯৮/১৯৭৮), ২/১৩ পৃঃ]।
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে ছালাতের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি ছালাত আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে কতল করা ওয়াজিব। [নায়লুল আওত্বার ২/১৫; মিরক্বাত ২/১১৩-১৪ পৃঃ]।

অবশ্য এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী মুসলিম সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাযা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযূর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। [নায়ল ৫/৪৭-৪৮, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘মুত্যুদন্ডে নিহত ব্যক্তির জানাযা’ অনুচ্ছেদ; এতদ্ব্যতীত আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০১১; যা-দুল মা‘আদ ৩/৯৮ পৃঃ; আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানায়েয পৃঃ ৪৪; মুসলিম হা/২২৬২]।
.
তাছাড়া এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায় মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তির আসর সালাত ছুটে গেল, তার যেন পরিবার ও ধন সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল।”[সহীহ বুখারী: ৫৫২, মুসলিম:৬২৬, আবু দাউদ: ৪১৪, মিশকাত: ৫৯৪]।
.
বেনামাযীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। যেমন: সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক স্বপ্নের বর্ণনায় রয়েছে: “তিনি চিৎ অবস্থায় শায়িত এক ব্যক্তির নিকট আসলেন, এমতাবস্থায় একটি পাথর হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্য একজন, অতঃপর সে উক্ত পাথর দিয়ে তার (শায়িত ব্যক্তির) মাথায় আঘাত করছে, যার ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, পাথরটি ছিটকে দূরে চলে যাচ্ছে, পুনরায় সে দৌড়ে গিয়ে পাথরটি নিয়ে ফিরা মাত্র উক্ত ব্যক্তির মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ঐ ব্যক্তি আপন স্থানে ফিরে তাকে ঐ ভাবেই (শাস্তি) দিচ্ছে যেভাবে প্রথমবার দিয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন তখন দুই ফিরিশতা তাঁকে অবহিত করেন যে, এতো ঐ ব্যক্তি যে কুরআন পড়ত, কিন্তু তার প্রতি আমল করত না এবং ফরয সালাত ছেড়ে ঘুমাত। [সহীহ বুখারী,৭০৪৭ সহীহ মুসলিম,২২৭৪ আল লুলু ওয়াল মারজান,১৪৬৭]।

আমার প্রিয় পাঠক! দেখুন কত বড় শাস্তি, শুধু এই জন্য যে বেনামাযী ফরয সালাতকে মাথায় বড় বোঝা মনে করত, শুধু ফজরের সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকত, তাই মাথায় পাথর মেরে মেরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে এরূপ অন্যায় করেছে তার উচিত অতিসত্বর আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করা। এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায়ের পাশাপাশি বেশি করে নেক কাজ চালিয়ে যাওয়া। বেশী বেশী তওবা ইস্তেগফার ও অধিকহারে ভাল কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা কুফরী করেছে তারা যদি তা হতে বিরত থাকে তাহলে তাদের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ [আল-আনফাল, ৮/৩৮]।
.
আল্লাহ্‌ বলেন,“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা যুমারঃ ৫৩]
.
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তওবা পূর্বের যা কিছু আছে তা মিটিয়ে দেয় আর ইসলাম তার পূর্বের যা কিছু আছে তা মিটিয়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১২১; মিশকাত, হা/২৮]।
.
যারা তওবা করতে চায় আল্লাহ্‌ তাদের জন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন। সুতরাং বান্দা যে পাপই করুক না কেন তা যদি শির্কও হয় এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহই সরল সঠিক পথে হেদায়াতদানকারী। [বেনামাজি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত যানতে বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহঃ)ভএর সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান বইটি পড়তে পারেন]।
.
অতএব, অভিভাবকের কর্তব্য হল, বিয়ের পূর্বে পাত্র বা পাত্রীর ধন সম্পদ দেখার আগে তারা সালাত আদায় করে কি-না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। যেন কোনো সালাত আদায়কারীর সাথে সালাত পরিত্যাগকারীর বিয়ে না হয়। কেননা বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। এক্ষেত্রে তারা যেন নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কোন আপোষ না করেন। কিন্তু যদি এমনটা অর্থাৎ বেনামাজির সাথে বিবাহ ঘটে গিয়ে থাকে, তাহলে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে অপরজনকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয়, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীর সংসার ত্যাগ করাই উচিত।আল্লাহ সবাইকে নেককার জীবনসঙ্গী দান করুক আমীন। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি

 প্রশ্ন: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি থাকলেও সেগুলো কি কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য।যেখানে যেখানে পার্থক্য রয়েছে রাসূল (ﷺ) সেটা বলে গেছেন।সালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আত পুরুষ ও মহিলার মাঝে মৌলিক অর্থাৎ মূল কাঠামোগত ভাবে কোন পার্থক্য করেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে সালাত আদায় করেননি।এবং সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই দফায় রাসূল (সাঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে। আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য দেখা যাবে না।এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না।” (সূরা-আহযাব: আয়াত-৬২) বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ বলেন, পুরুষেরা সালাতে যা করে নারীরাও তাই করবে। (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ সনদ সহীহ) অথচ কোন কোন মুসলিম ভাই বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা নারী-পুরুষের সালাতের মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য নিরূপণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন,কিন্তু সফল হতে পারেননি। তারা ১৮টি পার্থক্য তুলে ধরে থাকেন।বঙ্গানুবাদ ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট বড় হবে তাই উল্লেখ করলাম না (দেখুন মোকাম্মাল মোদাল্লাল বেহেশতী জেওর, (ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০০৪ইং, পৃঃ ১১৬-১৭) তারা মারফূ‘, মাওকূফ এবং মাক্বতূ‘ এই তিন প্রকার বর্ণনা উপস্থাপন করে নারী-পুরুষের সালাতের পার্থক্যের ব্যাপারে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করেছেন তার একটি বর্ননাও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমানিত নয়।
.
প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষ-নারী, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল উম্মতকে সম্বোধন করে বলেছেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা ঠিক সেভাবেই সালাত কর, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এই নির্দেশ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। যদি কেউ নারীকে পুরুষ থেকে পৃথক করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই সহীহ সূত্র দ্বারা প্রমাণিত দলীল পেশ করতে হবে।(ইবনু বায (রহ.) মাজমূঊ ফাতাওয়া,১১তম খণ্ড, পৃ. ৭৯-৪১)।
.
তাই যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ মহিলাদের জন্যও এবং যে সকল সাধারণ আদেশ মহিলাদেরকে করেছে তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয়, যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে। যেমন: “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া। (সূরা নূর,২৪/৪)।পরন্তু যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়,তবে তার জন্যও ঐ একই শাস্তি প্রযোজ্য।
.
সুতরাং মহিলারাও তাদের নামাযে পুরুষদের মতই হাত তুলবে, দাঁড়ানোর পদ্ধতি, বুকে হাত বাঁধা, রুকু, সিজদা ও বৈঠক এসবই পুরুষ ও মহিলারা একই কায়দায় আমল করবে।তাশাহ্‌হুদেও সেইরুপ বসবে, যেরুপ পুরুষরা বসে। উম্মে দারদা (রাঃ) তাঁর নামাযে পুরুষের মতই বসতেন। আর তিনি একজন ফকীহ্‌ ছিলেন। (আত্‌-তারীখুস স্বাগীর, বুখারী ৯৫ পৃ:, বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৫৫)।আর মহিলাদের জড়সড় হয়ে সিজদাহ করার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নেই। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ২৬৫২)। মসজিদে নববীতে নারী পুরুষ সকলে রাসূল (ﷺ) এর (ইমামতি) পিছনে একই নিয়মে সালাত ও জুম’আ আদায় করেছেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯)। এ জন্যই ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন,‘নামাযে মহিলা ঐরুপই করবে,যেরুপ পুরুষ করে থাকে।’ (ইবনে আবী শাইবা, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী (রহ.) ১৮৯পৃ:) এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, সালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করতে হবে। (মির’আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯)। মহিলারা পুরুষদের মত একই নিয়মে সালাত আদায় করবে। (ইবনে আবি শাইবা ১/৭৫/২, সিফাতু সালাতুন্নবী ১৮৯ পৃঃ)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,‘মহিলারা ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করবে, যেভাবে পুরুষরা করে থাকে। ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদাহ, বৈঠক সবকিছুই পুরুষের মত হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَصَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখছ, ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করবে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্বোধন করেছেন। (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩০৩-৩০৪)।শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,‘কিছু আলিম নারী-পুরুষের সালাত আদায়ের পদ্ধতি পৃথক বলে মন্তব্য করেছেন এবং তারা এর পক্ষে কিছু হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস গুলো সবই যঈফ। আর যঈফ হাদীছ দ্বারা দলীল পেশ করা সঠিক নয়।’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৮১৬২)।
.
বিগত শতাব্দীর আরেক শ্রেষ্ঠ ইমাম ফাদ্বীলাতুশ শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের যে বিবরণী ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হল, এতে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান। যে সকল পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, এগুলো নারীদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান। অথচ এর পক্ষে কোন সহীহ দলীল নেই। বরং নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীর মধ্যে তারাও অন্তর্ভুক্ত, ‘তোমরা সেভাবেই সালাত আদায় কর, যেরূপ আমাকে আদায় করতে দেখছ।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। অন্যত্র আলবানী বলেন, إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‘নারীরা তো পুরুষদেরই অংশ।’ (আবূ দাঊদ, হা/২৩৬; তিরমিযী, হা/১১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬১৯৫; সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৬৩; সহীহুল জামে‘, হা/২৩৩৩)। এ সম্পর্কে বিখ্যাত তাবিঈ ইবরাহীম নাখঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, تفعل المرأة في الصلاة كما يفعل الرجل ‘সালাতে নারী তা-ই করবে,যা পুরুষ করে।’ (সিফাতু সালাতিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পৃ. ১৮৯)।

◾পক্ষান্তরে দলীলের ভিত্তিতেই নারী-পুরুষের সালাতে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন:
_________________________________________
১. মেয়েরা শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও দুই হাত ছাড়া বাকি আপাদমস্তক ঢেকে দাঁড়াবে। পায়ের গোড়ালির নিচ পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে পা ঢেকে রাখবে।কারন মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর (আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)।

➤(১) সালাতে মহিলা ইমাম মহিলাদের প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আওনুল মা‘বূদ ২/২১২ পৃঃ; আবুদাঊদ ইরওয়া হা/৪৯৩)।

➤(২) মহিলারা পুরুষ ইমামের পিছনে সালাত আদায় করলে সবার পিছনে দাড়াবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১০৮-১১০৯)। কারন মহানবী (ﷺ) বলেন,“পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” (সহীহ মুসলিম,৪৪০ মিশকাত ১০৯২ সনদ সহীহ)।

➤(৩) বেগানা অর্থাৎ ননমাহারম পুরুষ আশে-পাশে থাকলে (জেহরী নামাযে) মহিলারা সশব্দে কুরআন পড়বে না বরং নিচু স্বরে আস্তে আস্তে পড়বে। (আলমুমতে, শারহে ফিক্‌হ ইবনে উসাইমীন ৩/৩০৪)।

➤(৪) ইমাম কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীরা পুরুষের মত ‘সুবহা-নাল্লাহ্‌’ না বলে হাতে হাত মেরে আওয়ায করবে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন, সালাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুব্হানাল্লা-হ’ পড়ে নেয়। আর হাতে হাত মারা কেবল মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট’ (সহীহ বুখারী হা/৬৮৩ ও ১২০৩, সালাতের মধ্য অন্যান্য কর্ম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭৮২; মিশকাত হা/৯৮৮, পৃঃ ৯১)।

➤(৫) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে তাদের সালাত হবে না।(আবুদাঊদ হা/৬৪১, ১/৯৪ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩৭৭; মিশকাত হা/৭৬২-৬৩, পৃঃ, ৭৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০৬, ২/২৪০ পৃঃ)।

➤(৬) পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে। (আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৩৩১, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়)

➤(৭) মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন। এটি উত্তম (তিরমিযী হা/১৭৩১; আবুদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫, পৃঃ ৩৭৪) তবে রুকূ-সিজদার সময় পায়ের পাতা প্রকাশ পেলে সালাত বিনষ্ট হবেনা। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১; (দ্র. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/১১৪-১২০)।

➤(৮) মসজিদে যেতে চাইলে মহিলারা সুগন্ধি মেখে মসজিদে আসবেন না। এবং তারা পুরুষের ইমামতি করবেন না। (দ্রঃ সালাতুর রাসূল (ﷺ) ৪র্থ সংস্কর, ১৪৩-৪৪ পৃঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে’। (সহীহ মুসলিম হা/৪৪৩)।

➤(৯) মহিলারা কখনো মসজিদ গিয়ে সালাত আদায় করলে সালাত শেষে মসজিদ থেকে পুরুষের আগে বের হবেন আর মহিলাদের বের হওয়া শেষ হ’লে পুরুষরা বের হবেন। হিন্দ বিনত হারিছ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, নারীরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সময় ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন’। (সহীহ বুখারী: ৮৬৬)।

➤(১০) জাম‘আতে সালাত আদায় কালীন পুরুষদের মাথা উঠানোর পর মহিলারা মাথা উঠাবে। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,”হে নারী সমাজ। পুরুষরা তাদের মাথা উত্তোলন না করা পর্যন্ত তোমরা সাজদা হতে তোমাদের মাথা উত্তোলন করবে না।” (সহীহ মুসলিম ১/১৮২পৃঃ হা/৬৬৫)।

➤(১১) মহিলারা সালাতের আযান দিবে না। আযান দেওয়া শুধুমাত্র পুরুষদের কাজ। তবে অধিকাংশ ফকীহদের মতে মেয়েদের জামায়াতে নারীরা ইকামত দিতে পারবে। (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৩৩৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১তামামুল মিন্নাহ, পৃ. ১৫৩ হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখন সালাত আদায় করতেন, তখন ইক্বামত দিতেন’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৩৩৯)।

➤(১২) অনেক মহিলা আছে,যারা মসজিদে বা বাড়িতে পুরুষদের নামায পড়া না হলে নামায পড়ে না। এটা ভুল। আযান হলে বা নামাযের সময় হলে আওয়াল ওয়াক্তে নামায পড়া মহিলারও কর্তব্য। (মুত্বাসা ১৮৮-১৮৯পৃ:)

উপরোক্ত পার্থক্যগুলো পদ্ধতিগত পার্থক্য নয়।এ জন্য শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন, وَلاَ أَعْلَمُ حَدِيْثاً صَحِيْحاً فِى التَّفْرِيْقِ بَيْنَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَصَلاَةِ الْمَرْأَةِ وَإِنَّمَا هُوَ الرَّأْىُ وَالْاِجْتِهَادُ ‘পুরুষ ও মহিলার সালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি কোন সহীহ হাদীস জানতে পারিনি। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০ এর আলোচনা দ্রঃ)।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, নারী-পুরুষের সালাতের প্রচলিত পার্থক্য সমূহ সঠিক নয়। বিশেষ করে নারীদের জড়সড় হয়ে সিজদা দেওয়ার নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। মূলতঃ সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও তাসবীহ তাহলীলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে নারীরা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম একই কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, সালাতে ত্রুটি হলে মুক্তাদী নারী হাতের উপর হাত মেরে সতর্ক করবে। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ আমাদের সহীহ হাদীস অনুযায়ী সালাত আদায়ের তাওফীক দান করুন আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলী

 প্রশ্ন: সালাতে ইমাম হওয়ার সর্বাধিক বেশী যোগ্য কে? অর্থাৎ একজন ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলী গুলো কি কি?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সর্বাঙ্গ সুন্দর ইসলামের সুষ্ঠ এক বিধান হল জামাআত তথা তার পরিচালক একক ইমাম বা নেতার বিধান।
ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়,কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য।’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৯)। ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদী তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে।(মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৭)। ইমাম অর্থ নেতা। সালাত আদায়ে তিনি নেতৃত্ব দেন। সকল শ্রেণীর মুসল্লী তার নেতৃত্বে সালাতে রুকু-সিজদা দেন, উঠেন ও বসেন। তার তাকবীর ধ্বনি শুনে সকলে তার অনুকরণ ও অনুসরণ করেন,কেউই তা লঙ্ঘন করে না। ইমামের এরূপ অনুসরণই হলো ইকতিদা। এজন্য ইমাম সাহেব হবেন সর্বপ্রথম সুন্দর চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী। মানুষকে সদুপদেশ যা দেবেন তা সর্বাগ্রে আমল করবেন তিনি। তার কথা ও কাজ হবে এক রকম। তিনি হবেন সকলের মান্যবর, পরামর্শদাতা, কল্যাণকামী ও শুধানুধ্যায়ী। নিজের আখলাক তিনি এমনভাবে বণ্টন করবেন, যাতে তিনি হতে পারেন সকলের শ্রদ্ধাভাজন। যা তিনি বয়ান করবেন আগে তার সত্যতা ও বিশুদ্ধতা যাচাই করে কথা বলবেন। তিনি হবেন সকলের দৃষ্টান্ত।

সালাতে ইমামতির সবচেয়ে বেশী যোগ্য তিনি, যিনি কুরআনের হাফেয; যিনি (তাজবীদ সহ্‌) ভালো কুরআন পড়তে পারেন। তাজবীদ ছাড়া হাফেয ইমামতির যোগ্য নয়। পূর্ণ হাফেয না হলেও যাঁর পড়া ভালো এবং বেশী কুরআন মুখস্থ আছে তিনিই ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য।মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিন ব্যক্তি হলে ওদের মধ্যে একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির বেশী হ্‌কদার সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে।” (সহীহ মুসলিম:৬৭৬, মিশকাত: ১১১৮)

তিনি আরো বলেন,“লোকেদের ইমাম সেই ব্যক্তি হবে যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে। পড়াতে সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যে বেশী সুন্নাহ্‌ জানে, সুন্নাহর জ্ঞান সকলের সমান থাকলে ওদের মধ্যে যে সবার আগে হিজরত করেছে, হিজরতেও সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমাম হবে। আর কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং না কেউ কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে বসে।” (মুসলিম ৬৭৩, আবূ দাঊদ ৫৮২, তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, ইবনু মাজাহ্ ৯৮০ সহীহ আল জামি‘ ৩১০৪, মিশকাত ১১১৭)।

উল্লেখ্য যে, সাধারণ নামাযীর মত ইমামতির জন্যও সুন্নতী লেবাস উত্তম। তবে মাথায় পাগড়ী,রুমাল বা টুপী হওয়া কিংবা মাথা ঢাকা ইমামতির জন্য শর্ত, ফরয বা জরুরী নয়।(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৮৬, ৩৮৯)। সুতরাং যার মাথা ঢাকা আছে তার থেকে যার মাথা ঢাকা নেই,সে ভালো কুরআন পড়তে পারলে সেই ইমামতির হ্‌কদার।

◈ যে ইমামতি করতে চায় তার মধ্যে যে সকল আবশ্যকীয় যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সেগুলো হল:
● ১. ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকা।
● ২. বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত।
● ৩. কমপক্ষে সালাতের মৌলিক। বিধিবিধানগুলো জানা,যেন সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে।

◈ তার মধ্যে আরও যে সকল গুণাবলী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: (১০টি)

১. বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা ও মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার।
২. অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও মিষ্টভাষী হওয়া।
৩. ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক ও বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকা।
৪. কথা ও কাজের মিল থাকা।
৫. পাপাচার থাকা দূরে থাকা।
৬. সময়ানুবর্তীতা। কারণ সালাত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত।
৭. আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ তার থেকে এমন কোন নীচ ও হীন আচরণ প্রকাশিত না হওয়া,যা এই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়।
৮. মানুষের প্রতি কল্যাণকামী মনোভাব এবং মুসল্লিদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি সচেতন থাকা।
৯. ধৈর্য ও সহনশীলতা।
১০. মানুষের সম্পদের প্রতি লোভ সংবরণ করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, এ সকল গুণাবলী প্রত্যেক মুসলিমের মধ্যেই থাকা উচিৎ। তবে বিশেষভাবে ইমাম, দাঈ, আলেম প্রমুখ ব্যক্তিগণ-যাদের নিকট মানুষ দ্বীন ও চরিত্র শিখবে-তাদের মধ্যে থাকাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।(শেষের অংশ নোট শাইখ আব্দুল হাদী (হাফিঃ) থেকে)। [আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী]।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

সালাতের সুতরা সম্পর্কে বিস্তারিত

 প্রশ্ন: সুতরা কাকে বলে? সুতরার বিধান কি?সুতরাহ্‌ কিসের হবে? মুসল্লির সামনে দিয়ে পারাপারের বিধান কি? মুসল্লীর সামনে সুতরা রেখে চলে যাওয়া যাবে কি? সুতরা বিহীন অবস্থায় একজন মুসুল্লীর কতটুকু সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে বিনা সুতরায় নামায কখন বাতিল হবে?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সুতরাহ (আরবি: سترة‎‎): সুতরাহ শব্দের অর্থ আড়াল করার বস্তু। অর্থাৎ এটা হলো নামাজের সময় ব্যবহৃত একটি বস্তু,যা তার সামনে দিয়ে চলমান সবকিছু থেকে নামাজ অবস্থাকালীন তাকে আলাদা করে রাখে কমপক্ষে তিন হাত বা এর কম দুরত্বে সুতরা রেখে নামাজ পড়া হয়। এর উচ্চতা হয় কমপক্ষে এক হাত। প্রস্থে যেকোনো পরিমাণ হতে পারে।

➤সালাতে সুতরার রাখার বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
সালাত আদায়ের সময় নামাযীর সামনে বেয়ে কেউ পার হবে না, এমন ধারণা থাকলেও সামনে সুতরাহ্‌ রেখে নামায পড়া কারো মতে ওয়াজিব আবার কারো মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।[সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ৮২পৃ: ইবনে উসাইমিন ফতোয়ায় আরকানুল ইসলাম]।

যেমন সফরে, বাড়িতে, মসজিদে, হারামের মসজিদদ্বয়ে সর্বস্থানে একাকী ও ইমামের জন্য সুতরাহ্‌ ব্যবহার করা জরুরী। মহানবী (ﷺ) বলেন,“সুতরাহ্‌ ছাড়া নামায পড়ো না।” [সহীহ ইবনে খুযাইমাহ্‌, ৮০০]।

➤সুতরাহ্‌ কিসের হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কর্তৃক বিভিন্ন প্রকার সুতরাহ্‌ প্রমাণিত। যেমন: কখনো তিনি মসজিদের থামকে সামনে করে নামায পড়তেন।[সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ৮২পৃ:]।

ফাঁকা ময়দানে নামায পড়লে এবং আড়াল করার জন্য কিছু না পেলে সামনে বর্শা গেড়ে নিতেন। আর লোকেরা তাঁর পিছনে বিনা সুতরায় নামায পড়ত। [বুখারী ৪৯৪, ৪৯৮] কখনো বা নিজের সওয়ারী উটকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে তাকে সুতরাহ্‌ বানিয়ে নামায পড়তেন। [বুখারী ৫০৭]। কখনো জিনপোশ (উটের পিঠে বসবার আসন) কে সামনে রেখে তার কাষ্ঠাংশের সোজাসুজি নামায পড়তেন।[বুখারী ৫০৭]।

তিনি বলতেন,“তোমাদের কেউ যখন তার সামনে জিনপোশের শেষে সংযুক্ত কাষ্ঠখন্ডের মত কিছু রেখে নেয় তখন তার উচিৎ (তার পশ্চাতে) নামায পড়া এবং এরপর তার সম্মুখ বেয়ে কেউ পার হয়ে গেলে কোন পরোয়া না করা।” [সহীহ মুসলিম ৪৯৯]।

একদা তিনি একটি গাছকে সুতরাহ্‌ বানিয়ে নামায পড়েছেন। (নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ)। কখনো তিনি আয়েশা (রাঃ) এর খাটকে সামনে করে নামায পড়েছেন। আর ঐ সময় আয়েশা (রাঃ) তার উপর চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতেন। [বুখারী ৫১১]।

সুফয়্যান বিন উয়াইনাহ্‌ বলেন, তিনি শারীককে কোন ফরয নামায পড়ার সময় তাঁর টুপীকে সামনে রেখে সুতরাহ্‌ বানাতে দেখেছেন। [আবূদাঊদ, সুনান ৬৯১]।

প্রকাশ যে, কিছু না পেলে দাগ টেনে নেওয়ার হাদীস সহীহ নয়। (যইফ আবূদাঊদ, সুনান ১৩৪, যইফ ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১৯৬, ৯৪৩, যইফ জামে ৫৬৯নং)।

সুতরাহ্‌ হবে উটের পিঠে স্থাপিত জিনপোশের পেছনে সংযুক্ত কাষ্ঠখন্ডের মত (কম-বেশী একহাত, আধ মিটার বা ৪৭ সেমি. উঁচু) কোন বস্তু । কোন দাগ সুতরাহ্‌ বলে গণ্য হবে না। তবে যে বস্তু মাটি বা মুসাল্লা থেকে একটুও উঁচু হয়ে থাকে তাকেই সুতরাহ্‌ বলে ধরে নেওয়া যাবে।[আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৮৪) প্রকাশ যে, মুসাল্লা, চাটাই বা কার্পেটের শেষ প্রান্তকে সুতরাহ্‌ বলে গণ্য করা যাবে না। [ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১৭ সালাতে মুবাশ্বির]।

➤মুসল্লীর সামনে দিয়ে পারাপারের বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে তার কত বড় পাপ রয়েছে, তাহলে তার জন্য সেখানে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হতো অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চাইতে। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৭ সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ-৯]।

ইমাম ও সুতরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীসে ‘শয়তান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭]। এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যেকোন বস্ত্ত দ্বারা মুসল্লীর সম্মুখে সুতরা বা আড়াল করতে হয়। [সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৩,৭৭৯,৭৭৭ ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ-৯]।

তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৮০]।

সিজদার স্থান থেকে সুতরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মত ফাঁকা রাখা আবশ্যক। [বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/১১৩৪; ছিফাত, পৃঃ ৬২]।অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুসল্লীর সিজদার স্থান হতে একটি বকরী যাওয়ার মত দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম।

➤মুসল্লীর সামনে সুতরা রেখে চলে যাওয়া:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে বিশেষ করে শহরের মসজিদ গুলোতে মুসল্লীর সামনে সুতরা রেখে চলে যাওয়ার প্রবণতা বেশী দেখা যায়।অথচ শরীআতে এর কোন অনুমোদন নেই বা প্রমান নেই। কারণ রাসূল (ﷺ)-এর যুগে এ ধরনের কৌশলের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ বছর যাবৎ বসে থাকা উত্তম বলা হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে যাওয়া বৈধ হলে রাসূল (ﷺ) তা বলে যেতেন। সুতরাং মুসল্লীর সামনে সুতরা দিয়ে অতিক্রম করা আর এমনি চলে যাওয়া একই সমান। এই অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। তবে যদি মুসল্লীর অবস্থান দূরে থাকে, সেক্ষেত্রে সুতরা না থাকলেও মুসল্লীর সিজদার স্থান থেকে একটি বকরী যাবার দূরত্ব রেখে অথবা তিন হাত দূর থেকে অতিক্রম করলে দোষ নে। [সহীহ বুখারী, আহমাদ, মুসলিম, ছিফাত পৃঃ ৬২]। তবে অপেক্ষা করাই উত্তম।

➤সুতরা বিহীন সালাতরত অবস্থায় একজন মুসল্লীর কতটুকু সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

উক্ত অবস্থায় যরূরী প্রয়োজনে মুসল্লীর সিজদার স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। [সহীহ বুখারী হা/৫০৯, মুসলিম হা/৫০৫)। উক্ত হাদীছে بين يدي المصلي দ্বারা মুসল্লীর সিজদার স্থান পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে। [ইবনু হাজার, ফৎহুলবারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ; ফাতাওয়া ওছায়মীন, মাসআলা নং ৬২৪]।

মসজিদ ছাড়া অন্যত্র একাকী সালাত আদায়কারী মুসল্লী সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করবেন। [আবুদাঊদ হা/৬৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪১]। যদি সুতরা না রেখে সালাত আদায় করেন, তবে তার সিজদার স্থান পর্যন্ত জায়গার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না।[সহীহ বুখারী হা/৫১০; মুসলিম হা/৫০৭; মিশকাত হা/৭৭৬]।

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোন বস্ত্তকে সম্মুখে রেখে সালাত আদায় করবে যা তাকে লোকদের থেকে সুৎরা বা পর্দা স্বরূপ হবে, এমন অবস্থায় তার সম্মুখ থেকে যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়,তাহলে সে যেন তাকে বাধা দেয়।’[সহীহবুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭ সালাত’ অধ্যায় ‘সুতরা’ অনুচ্ছেদ। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য; মির‘আতুল মাফাতীহ হা/৭৮৬-এর ব্যাখ্যা; উছায়মীন, আরকানুল ইসলাম ২/৪৯৩ পৃঃ, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ২৬৭]। নোট আত তাহরীক]।

➤বিনা সুতরায় কখন সালাত বাতিল হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
সুতরা রেখে নামায পড়লে এবং তার পশ্চাৎ বেয়ে কেউ পার হয়ে গেলে নামাযীর নামাযে কোন ক্ষতি হয় না। [সহীহ বুখারী ৪৯৯, সহীহ মুসলিম ২২৫]।

সুতরার ভিতর দিয়েও কোন পুরুষ, শিশু বা পশু পার হয়ে গেলে নামাযীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে ঠিকই, তবে নামায একেবারে নষ্ট হয়ে যায় না।পরন্তু বিনা সুতরায় নামায পড়লে এবং সামনে দিয়ে সাবালিকা মেয়ে, গাধা বা মিশমিশে কালো কুকুর পার হয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যায়।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “(সুতরাহ্‌ না হলে) সাবালিকা মেয়ে, গাধা ও কালো কুকুর নামায নষ্ট করে ফেলে।” আবূ যার বললেন,‘হে আল্লাহর রসূল! হ্‌লুদ ও লাল না হয়ে কালো কুকুরেই নামায নষ্ট করে তার কারণ কি?’বললেন, “কারণ, কালো কুকুর শয়তান।” [সহীহ মুসলিম ৫১০, তিরমিজি ৩৩৮, আবু দাউদ৭০২]।

ইমাম তিরমিজি রহঃ বলেন, আবু যার-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। কিছু সংখ্যক বিদ্বান এ হাদিসের ভিত্তিতে বলেছেন, গাধা, স্ত্রীলোক ও কালো কুকুর নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। ইমাম আহমাদ বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই যে, কালো কুকুর নামায নষ্ট করে দেয়; কিন্তু গাধা এবং স্ত্রীলোকের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। ইমাম ইসহাক বলেন, কালো কুকুর নামায নষ্ট করে দেয়। এছাড়া আর কোন কিছু নামায নষ্ট করতে পারে না। [টিকা জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৮]।

তবে নাবালিকা মেয়ে অতিক্রম করলে নামায নষ্ট হয় না। একদা বানী আব্দুল মুত্তালিবের দু’টি ছোট মেয়ে মারামারি করতে করতে তাঁর সামনে এসে তাঁর হাঁটু ধরে ফেলল। তিনি উভয়কে দু’দিকে সরিয়ে দিলেন। আর এতে তিনি নামায ভাঙ্গলেন না। [আবূদাঊদ, সুনান ৭১৬, ৭১৭, নাসাঈ, সুনান ৭২৭]।

যেমন নিজের স্ত্রী বা কোন মহিলা নামাযীর সামনে ঢাকা নিয়ে অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়তেন, আর আয়েশা (রাঃ) তাঁর সামনে জানাযার লাশের মত শুয়ে ঘুমাতেন। [বুখারী ৫০৮, মুসলিম, সহীহ ৫১২, মিশকাত ৭৭৯]।

যেমন তিনি কখনো কখনো চাদরের ভিতর থেকে পায়ের দিকে চুপে চুপে নিজের প্রয়োজনে বের হয়ে যেতেন। এতেও তাঁর নামাযের কোন ক্ষতি হ্‌তো না। (ঐ) এক বর্ণনায় আছে, ‘তখন ঘরে বাতি ছিল না।’ [সহীহ বুখারী ৫১৩, সহীহ মুসলিম,৫১২]।

প্রকাশ যে, কোন মহিলা-নামাযীর সামনে বেয়ে (বিনা সুতরায়) কোন (সাবালিকা) মেয়ে পার হলেও নামায নষ্ট হয় না। [আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ২৩৫৬ মুহাল্লা ৪/১২, ২০,(নোট সালাতে মুবাশ্বির)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

পুরুষের মাথার চুল রাখার সুন্নাতী তরীকা

 প্রশ্ন: পুরুষের মাথার চুল রাখার সুন্নাতী তরীকা কি কি? চুলে সিঁথি করা এবং চুল লম্বা হলে রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করা যাবে কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পুরুষের মাথার চুল লম্বা ও খাটো উভয়টিই রাখা জায়েয। তবে চুলের নিদিষ্ট পরিমাপ আছে, সবচেয়ে বড় চুল হল কাঁধ বরাবর। এর চেয়ে বড় এবং বিভিন্ন স্টাইলে চুল রাখা রাসূল (ﷺ) এর তরীকার খিলাপ। যেমন: মাথার এক অংশ কামিয়ে ফেলা, অপর অংশে চুল রাখা। কোন বিধর্মীদের অনুকরণে চুল রাখা।কোন ফাসিক ব্যক্তির চুলের হেয়ার ষ্টাইল নকল করে চুল রাখা নাজায়েজ। চুল বড় বা ছোট করে রাখা ‘সুনানুয যাওয়ায়েদ’ বা ব্যবহারগত অতিরিক্ত সুন্নাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার উপর আমল করা উত্তম। তবে ছেড়ে দেওয়া অপছন্দনীয় নয়।’ (শরীফ জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত, বৈরূত ছাপা ১৪০৮/১৯৮৮ ‘সুন্নাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ, পৃঃ ১২২)।

বড় চুল তিন পদ্ধতিতে রাখা যায়,এটি মানুষের ব্যবহারগত অতিরিক্ত সুন্নাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাথায় তিন ধরনের চুল থাকত। যেমনঃ

▪️[১] ওয়াফরা, যা কানের লতি পর্যন্ত [আবুদাঊদ হা/৪২০৬]।
▪️[২] লিম্মা, যা কাঁধের কাছাকাছি ঘাড়ের মধ্যস্থল পর্যন্ত ঝুলে পড়ত। [সহীহ মুসলিম হা/২৩৩৭]
▪️[৩] জুম্মা, সবচেয়ে বড় যা ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত। [সুনানে নাসাঈ হা/ ৫০৬২, ৫০৬৬]।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চুল সাধারণত জুম্মার চেয়ে ছোট এবং ওয়াফরার চেয়ে বড় থাকত। [ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩৫]।

আয়েশা [রাঃ] থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি হায়েয [ঋতুবতী] অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাথার কেশ পরিপাটি করতাম। [মুসহীহ বুখারী, হা/২৯৫; নাসাঈ, হা/২৭৭সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১৩৫৯ মিশকাত, হা/৪৪১৯]। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)চুল আঁচড়াবার সময় ডান দিক থেকে শুরু করতেন। [আবূ দাঊদ হা/৪১৬০]। তিনি তাঁর মাথার মাঝখানে সিঁথি করতেন। [আবূ দাঊদ হা/৪১৮৯, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৬৩৩]।
.
আবু ইসহাক বলেন, আবু আব্দুল্লাহ [ইমাম আহমাদ] কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল,যার মাথায় লম্বা চুল ছিল। তিনি বলেন, এটি উত্তম সুন্নাত। যদি আমরা সক্ষম হই,তাহলে আমরাও অনুরূপ লম্বা চুল রাখব। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জুম্মা চুল ছিল। তিনি আরো বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ৯ জন সাহাবীর লিম্মা চুল ছিল। ১০ জন সাহাবীর জুম্মা চুল ছিল। ইমাম আহমাদ নিজে মধ্যম সাইজের চুল রাখতেন। [ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৭৩-৭৪ পৃঃ চুল ছাঁটা ও মুন্ডনের হুকুম অনুচ্ছেদ]।

সাহাবী ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) একদিন লম্বা চুল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলেন। তখন রাসূল (ﷺ) মাছি বসবে, মাছি বসবে বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। ফলে তিনি ফিরে গিয়ে পরে চুল কেটে খাট করে এলেন। তখন রাসূল (ﷺ)বললেন, এটি সুন্দর (هذا أحسن)।[আবুদাঊদ হা/৪১৯০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৭৩-৭৪ পৃঃ]।

পূর্বে আমি উল্লেখ করেছি যে, পুরুষেরা মাথার মাঝখানে সিঁথি করতে পারে এটি মুস্তাহাব। এবং সিঁথি না করে ছেড়ে রাখা মকরূহ। যেহেতু তাতে আহলে কিতাবের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। অবশ্য চুল ছোট হলে সিঁথি না করে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে রাখায় দোষ নেই। (শা’রুর রা’স ৫০ পৃঃ)।
.
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার কেশ নিম্নদেশে ঝুলিয়ে রাখতেন (অর্থাৎ প্রথমদিকে তিনি সিথি করতেন না)। আর মুশরিকরা তাদের মাথায় সিঁথি করত। পক্ষান্তরে আহলে কিতাব তাদের মাথার চুল ঝুলিয়ে রাখত। প্রথমদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে ব্যাপারে প্রত্যাদেশ না পেতেন, সেসব ব্যাপারে আহলে কিতাবদের অনুসরণ পছন্দ করতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার কেশকে সিঁথি করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫৮, নাসাঈ, হা/৫২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৫ শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫ ইবনু মাজাহ ৩৬৩২, মুসনাদে আহমাদ ২৩৬৪, মিশকাত হা/৪৪২৫) ।অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চুল বাবরী ছিল,তাতে সিঁথি হলে তিনি তা সিঁথি করতেন, না হলে ছেড়ে দিতেন। অতএব বিশুদ্ধ মত হলো,সিঁথি মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯১৭)।
.
পুরুষের চুলে ব্যান্ড, রাবার ব্যান্ড জুটি ইত্যাদি ব্যবহার করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এগুলো নারীদের সদৃশ হয়ে যায়। তাছাড়া যেহেতু পুরুষের চুল সোজা রাখার জন্য অন্য পদ্ধতিও রয়েছে। (টুপি পরিধান, নিয়মিত তৈল বা অন্য কিছু লাগিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি)। সুতরাং ঘরে অথবা বাইরে কোথাও পুরুষের জন্য মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ বৈধ নয়। তাই মাথার লম্বা চুল বেঁধে রাখা মহিলাদের সাদৃশ্যগ্রহণ হওয়ায় তা করা পুরুষের জন্য জায়েজ হবে না। কেননা হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত করেছেন নারীরূপী পুরুষ ও পুরুষরূপী নারীদের উপর এবং বলেছেন, তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের ঘর হতে এবং তিনি অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, মুসলিম ১৭০৩, ১৭০৪, তিরমিযী ১৪৩৩, ১৪৪০, আবু দাউদ ৪৪৬৯, ৪৪৭০, ইবনু মাজাহ ২৫৬৫, আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৬৯, মালেক ১৫৬৪,বুলুগুল মারাম,১২১৮) উক্ত হাদীসের ব্যাখায় মুবারকপুরী (রহ,) তুহফাতুল আহওয়াহি গ্রন্থে বলেন, সুন্দর্য্যতা, পোশাক-আশাক, খেযাব, আওয়াজ, আকৃতি, কথাবার্তা, সহ সমস্ত নড়াচড়া ও উঠাবসায় পুরুষের জন্য মহিলার সাদৃশ্য গ্রহণ হারাম ও নাজায়েয। এবং হাদীসে সাদৃশ্য দ্বারা এই সর্বপ্রকার সাদৃশ্যই ধর্তব্য।(ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৮০৫৯)।
.
এমনকি সালাতে ও পুরুষ তাদের চুল বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। সাঈদ ইবনু আবু সাঈদ আল-মাক্ববুরী থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তদাস আবু রাফি‘কে হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) এর পাশ দিয়ে যেতে দেখলেন। তখন তিনি [হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)] গর্দানের পেছনে চুলের ঝুটি বেঁধে সলাত আদায় করছিলেন। আবূ রাফি’ (রাঃ) বাঁধন খুলে দিলে হাসান (রাঃ) তার প্রতি রাগের দৃষ্টিতে তাকালেন। আবূ রাফি বলেন, আগে সালাত আদায় শেষ করুন, রাগ করবেন না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ এটা (চুলের ঝুটি) হচ্ছে শয়তানের ঘাঁটি বিশেষ, অর্থাৎ শয়তানের আড্ডাখানা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৬৪৬)।
.
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ ‘এবং আমরা যেন সিজদাকালে আমাদের কাপড় ও চুল গুটিয়ে না নেই।’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা৮৮৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৮২৭ ‘সিজদা ও তার মাহাত্ম্য’ অনুচ্ছেদ; নায়লুল আওত্বার ৩/২২ পৃঃ)। উক্ত বিষয়টি পুরুষের জন্য খাছ,মহিলাদের জন্য নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এই নিষেধাজ্ঞা না জানার কারণে অনেক পুরুষ মুসল্লী সালাতের সময়ে তাদের মাথার চুল বেঁধে নিতেন। একদা ইবনু আব্বাস (রাঃ) জনৈক বদরী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ (রাঃ) এর চুল খুলে দেন। (ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৫ সহীহ ইবনু মাজাহ হা/৮৬১ সহীহ আবুদাঊদ হা/৬৪৬)। ইমাম শাওকানী উপরোক্ত হাদীস দু’টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,والحديثان يدلان علي كراهية صلاة الرجل وهو معقوص الشعر ‘হাদীস দু’টি পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় সালাত আদায় করা মাকরূহ সাব্যস্ত করে। হাফেয ইরাকী বলেন, এটি পুরুষের জন্য খাছ, মেয়েদের জন্য নয়। কেননা তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা সালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে, চুল বড়-ছোট উভয় পদ্ধতিতেই রাখা জায়েজ। তবে সুন্দরভাবে রাখতে হবে এবং নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করতে হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,‘যে ব্যক্তির চুল আছে, সে যেন তার যত্ন করে রাখে।’ (আবুদাউদ হা/৪১৬৩; মিশকাত হা/৪৪৫০; সহীহাহ হা/৫০০)।কোন অবস্থাতেই বেহায়াপনা করা যাবে না এবং অন্যদের অনুসরণ করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যারা অন্যদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে,তারা তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

নিজের চাচী-মামী বা দূর সম্পর্কের চাচী-মামী (আন্টি) কে বিয়ে করা যাবে কি

 প্রশ্ন: নিজের চাচী-মামী বা দূর সম্পর্কের চাচী-মামী (আন্টি) কে বিয়ে করা যাবে কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: আপন চাচার স্ত্রী (চাচী) এবং মামার স্ত্রী (মামী) আপনার জন্য মাহরাম নয়। অর্থাৎ চাচা/মামা যদি মারা যায় বা তাদেরকে তালাক দেয় তাহলে উক্ত চাচী/মামীকে বিয়ে করা জায়েজ। সুতরাং সর্বাবস্থায় চাচী ও মামী সাথে পর্দা রক্ষা করা ফরজ। আর দূর সম্পর্কের চাচী/মামী তো প্রশ্নাতীত ভাবেই মাহরাম নয়। কারণ এরা কেউই সুরা নিসা এর ২৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত যে সকল মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং তাদেরকে শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে বিয়ে করতে কোন বাধা নেই।

সুতরাং আপনার আপন চাচী, মামী বা দূর সম্পর্কীয় আন্টিকে যদি তার স্বামী তালাক দেয় অথবা তার স্বামী মারা যায় তাহলে আপনি চাইলে তাকে ইদ্দত পালনের পর ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে পারেন। আল্লাহু আলম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

বিবাহ করা সুন্নাত না ফরয এবং কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে

 প্রশ্ন: বিবাহ করা সুন্নাত না ফরয? কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ব্যক্তির অবস্থার আলোক বিয়ে করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই কথা। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে যার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজেকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষমতা আছে, স্বাভাবিক ভাবে তার জন্য বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে যুব সম্প্রদায়!তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করতে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ এটা তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে,লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না তার উপর সিয়াম পালন করা কর্তব্য। কারণ এটা তার জন্য ঢালস্বরূপ। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮০)। তবে একাকী জীবন-যাপনের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম। কেননা ইসলামে সন্ন্যাসব্রত বা বৈরাগ্য নেই। (তিরমিজি ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৩০)। সুতরাং বিবাহ করা সুন্নাহ হলেও ক্ষেত্রবিশেষে কখনো বিবাহ করা ফরয আবার কখনো হারামও হতে পারে।যার অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে এবং যার শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এবং যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও পদস্খলনের আশংকা করে,তার জন্য বিবাহ করা ফরজ। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৮/ ৬)আল্লাহ বলেন, وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحاً حَتَّى يُغْنِيَهُمْ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই,আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।’ (সূরা নূর ২৪/৩৩)। কেননা আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে মুক্ত থাকা ওয়াজিব, যা বিবাহ ব্যতীত সম্ভব নয়।’ (সূরা নূর ৩৩)। আবার যার দৈহিক মিলনের সক্ষমতা ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই তার জন্য বিবাহ করা হারাম। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৩১)। অনুরূপভাবে যিনি যুদ্ধের ময়দানে বা কাফির-মুশরিক দেশে যুদ্ধরত থাকেন তার জন্য বিবাহ হারাম। কেননা সেখানে তার পরিবারের নিরাপত্তা থাকে না। তদ্রূপ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকলে এবং অন্য স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ করতে না পারার আশংকা করলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হারাম। যেমন আল্লাহ বলেন, فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘আর যদি আশংকা কর যে,সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে।’ (নিসা ৪/৩)। [ইবনে উসাইমিন রহঃ শরহুল মুমতে,১২/৯]।

◾কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে?
___________________________________
কোন নারী-পুরুষের জন্য সারাজীবন বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা বিবাহ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিবাহ করা সমস্ত নবীদের সুন্নাহ এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার উম্মতকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,তোমার পূর্বে আমরা অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম।’ (সূরা রা‘দ ১৩/৩৮)। রাসূল ( ﷺ)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১; মিশকাত হা/১৪৫)। তাছাড়া বিবাহ না করে চিরকুমার ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি ইসলামে নেই। সা‘আদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) উসমান ইবনু মাযঊনকে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম।’ (বুখারী হা/৫০৭৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮১)। আয়েশা (রাঃ) বলেন,‘নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকে নিষেধ করেছেন।’ (সহীহ বুখারী হা/৫০৭৩; নাসাঈ হা/৩২১৩; মিশকাত হা/৩০৮১)।তাই কোন নারী-পুরুষ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবহেলার কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ বা তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কবিরা গুনাহগার হবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সামর্থ্যবানদেরকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৩০৮০)।
.
কিন্তু কোন নারী-পুরুষের যদি বিবাহ করার ইচ্ছা থাকা এবং সাধ্য অনুযায়ী সর্বদিক থেকে প্রচেষ্টা করা সত্বেও কোন কারণে বিয়ে করতে ব্যর্থ হয় বা বিশেষ কোন ওজর বা শারীরিক সমস্যার কারণে বিবাহ করতে না পারে তাহলে এতে তাদের কোন গুনাহ হবেনা ইনশাআল্লাহ।কারন, বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। আর আল্লাহ অন্তরের খবর জানেন। সে চেষ্টা করেছে তার চেষ্টা করার পরেও সম্ভব হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন-আল্লাহ কারো উপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা,২৮৬)। তিনি আরো বলেন, তুমি তোমার সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।(সূরা তাগাবুন: ১৬)।
.
পরিশেষে, মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে আদম (আঃ) এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। অবশেষে শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) জাহেলী যুগের সকল কুসংস্কার দূর করে নারীদেরকে বিবাহের মাধ্যমে মর্যাদা দান করেছেন। বিবাহ মানব বংশ রক্ষার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি চিরন্তন ব্যবস্থা। বিবাহ নবীগণের সুন্নাত। বিবাহ করার জন্য পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা নিসা: ৩, সূরা নূর: ৩২)। তাই ইসলামের বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ের চেষ্টা অব্যহত রাখা কতর্ব্য। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুক। আমীন। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Translate