Wednesday, December 15, 2021

গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারাম কাজ যা আমরা নিজের অজান্তেই করে ফেলি।

 গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারাম কাজ যা আমরা নিজের অজান্তেই করে

ফেলি।
 স্বামী ব্যাতিত অন্য কারোর জন্য
সাজা হারাম।
আল কোরআন (আহজাবঃ ৩৩)

গোসলখানায় প্রসাব করা যাবে না। যদি
বাতরুম
আলাদা থাকে
(ইবনে মাজাহঃ ৩০৪)
কেবলামুখি বা তার উল্টো হয়ে প্রসাব,
পায়খানা
করা যাবে না।
(সহিহ বুখারি ৩৯৫,
নাসায়ীঃ ২১, আত
তিরমিজিঃ ৮)
 গুলি বা তীরের নিশানা প্রশিহ্মণের
জন্য প্রাণী
ব্যাবহার করা যাবে না। (মুসলিমঃ ৫১৬৭,
সুনানে আবু দাউদঃ ২৮১৭, ইবনে মাজাহঃ
৩১৭০, আত
তিরমিজিঃ ১৪০৯)
ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান ও মুশরিক কাউকে
বিয়ে করা
যাবে না। আল কোরআন (সূরা আন নিসা/নুর)

মুর্তি কেনা, বেঁচা, পাহারা দেওয়া
হারাম। আল
কোরআন (মাইদাহঃ ৯০, ইবরাহীমঃ ৩৫)
 কারো মুখমণ্ডলে আঘাত করা যাবে না।
আল
হাদিস (মুসলিমঃ ৬৮২১, আবু দাউদঃ ৪৪৯৬,
আহমদঃ
৫৯৯১)
কাপড় পরিধাণ থাকা সত্তেও কারো
গোপন
অঙ্গের জায়গার দিকে দৃষ্টিপাত করা
যাবে না।
(মুসলিমঃ ৭৯৪, তিরমিজিঃ ২৭৯৩, ইবনে
মাজাহঃ ৬৬১,
আহমদঃ ১১৫০১)
 আল্লাহ ব্যাতিত কারো নামে কসম করা
যাবে
না। বাপ দাদার নাম, কারো হায়াত,
মসজিদ বা
কোরআন এর নামে কসম করা, মাথায় নিয়ে
সত্যতা
প্রকাশ করা যাবে না। (আবু দাউদঃ ৩২৫০,
নাসায়ীঃ
৩৭৭৮)
কোন প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা
যাবে না।
আল হাদিস (আবু দাউদঃ ২৬৭৭, আহমদঃ
১৬০৩৪)
 যারা এগুলো করে তারা জান্নাতের
গন্ধও পাবে
না। (আবু দাউদঃ ৩৬৬৮, ইবনে মাজাহঃ ২৫২)

দৈনন্দিন নিয়মিত করার জন্য খুব সহজ কিছু আমল

 السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

??আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ??

?দৈনন্দিন নিয়মিত করার জন্য খুব সহজ কিছু আমল?
???????????????????

?-প্রত্যেক ওযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুণ(আশহাদুআল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ)
এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

?(মুসলিম-২৩৪)

? প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করুণ এতে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে যেতে পারবেন।

?(সহিহ নাসাই, সিলসিলাহ সহিহাহ-৯৭২)

? প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং ১বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু,লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে আপনার অতীতের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে।

?(মুসলিম-১২২৮)

সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে।

?(মুসলিম, মিশকাত-১৮০৩)

?প্রতিরাতে সূরা মুলক পাঠ করুণ এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

?(সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম-৩৮৩৯, সিলসিলাহ সহিহাহ-১১৪০)

? রাসুল (সাঃ)-এর উপর সকালে ১০ বার ও সন্ধ্যায় ১০ বার দরুদ পড়ুন(আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়া’না মুহাম্মাদ) এতে আপনি নিশ্চিত রাসুল
(সাঃ)-এর সুপারিশ পাবেন।

?(তবরানি, সহিহ তারগিব-৬৫৬)

৬?সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পাঠ করুণ এতে আল্লাহ তা’লা আপনাকে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দান করবেন।

?(সহিহ আবু দাউদ-৫০৯১)

৭?সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করুণ এতে কিয়ামতের দিন আপনার চেয়ে বেশী সওয়াব নিয়ে আর কেও উপস্থিত হতে পারবে না।

?(মুসলিম-২৬৯২)

৮? সকালে ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু,
লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন
কাদীর) পাঠ করুণ এতে মক্কায় ১০০ টি উট কুরবানির চেয়ে বেশী সওয়াব, জিহাদে ১০০ টা ঘোড়া পাঠানোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ১০০ টি গোলাম আযাদ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ,এবং পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে বেশী সওয়াব হবে।

?(সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব-৬৫১)

৯? বাজারে প্রবেশ করে- (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়্যুহয়ী ওয়া য়্যুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা য়্যামূত, বিয়াদিহিল খাইরু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন
কাদীর)পাঠ করুণ এতে ১০ লক্ষ পুণ্য হবে, ১০ লক্ষ পাপ মোচন হবে, ১০ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং জান্নাতে আপনার জন্য ১ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে।

?(তিরমিজি-৩৪২৮,৩৪২৯ শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন)

১০? বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণ এতে আল্লাহ তাআ’লা নিজ জিম্মাদারীতে আপনাকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন।

?(ইবনু হিব্বান-৪৯৯, সহিহ তারগিব-৩১৬)

১১? জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সাথে ৪০ দিন
সালাত আদায় করুন এতে আপনি নিশ্চিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

?(তিরমিজি, সিলসিলাহ সহিহাহ-৭৪৭, সহিহ তারগিব-৪০৪)

১২? প্রতিমাসের আয়ের একটা অংশ এতিমখানা বা মসজিদ মাদ্রাসা বা গরিব-দু:খি, বিধবা ও দুস্থদের মাঝে দান করবেন হোক সেটা অতি অল্প এতে আপনি আল্লাহ তা’লার কাছে জিহাদকারীর সমতুল্য হবেন।

?(বুখারি-৬০০৭)

১৩? মহিলারা ৪টি কাজ করবেন, ১- ৫ ওয়াক্ত সলাত ২- রমজানের সিয়াম, ৩- লজ্জাস্থান এর হেফাজত, ৪- স্বামীর আনুগত্য করুণ এতে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

?(সহিহ ইবনু হিব্বান-৪১৬৩, মুসনাদে আহমাদ-১৬৬১, তবরানি কাবির-৯৯১)

১৪? মসজিদে ফজরের সলাত আদায় করে বসে দোয়া জিকির পাঠ করুণ এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত চাস্তের সলাত আদায় করুণ এতে আপনি প্রতিদিন নিশ্চিত কবুল ১ টি হজ্জ ও ১ টি উমরার সওয়াব পাবেন আর কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।

?(তিরমিজি, সহিহ তারগিব-৪৬১)

 {সৌজন্যেঃ তাইয়েবা আক্তার}

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক একজন পুরুষ মোট ১৪ জন নারীর সাথে স্বাভাবিকভাবে দেখা-সাক্ষাত করতে পারবে।

 ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক একজন পুরুষ মোট ১৪ জন নারীর সাথে স্বাভাবিকভাবে দেখা-সাক্ষাত করতে পারবে।

মায়ের মত ৫ জন:
১| নিজের মা ২| দুধ মা ৩| খালা ৪| ফুফু ৫| শাশুড়ী

বোনের মত ৫ জন
১| আপন বোন ২| দুধ বোন ৩| দাদী ৪| নানী ৫| নাতনী

মেয়ের মত ৪ জন
১| নিজের মেয়ে ২| ভাইয়ের মেয়ে ৩|বোনের মেয়ে ৪| পুত্রবধু

>> এমনিভাবে একজন মহিলার জন্যেও ১৪ জন পুরুষের সাথে দেখা দেওয়া বৈধ। বাবার মত ৫ জন
১| নিজের বাবা ২| দুধ বাবা ৩| চাচা ৪| মামা ৫| শশুর

ভাইয়ের মত ৫ জন
১| আপন ভাই ২| দুধ ভাই ৩| দাদা ভাই ৪| নানা ভাই ৫| নাতী

ছেলের মত ৪জন
১| নিজের ছেলে ২| ভাইয়ের ছেলে ৩|বোনের ছেলে ৪| মেয়ের জামাতা

এদের ছাড়া বাকিদের থেকে বেঁচে থাকুন। এদের বাহিরে সকলেই আপনার জন্য ফিতনা। কথা বলা হোক তা সরাসরি বা ফোনে, বার্তালাপ হোক তা মোবাইলে বা ফেসবুকে বা চিঠিতে। যা জ্বিনার পথ উন্মুক্ত করে। এবং চরম কবিরাগুনাহের অন্তর্ভূক্ত।
দ্বীনের ফরজ বিধান সমূহ অন্তত মেনে চলুন দেখবেন সমাজে কোন অশান্তি ও কুলসতা নেই। বাকি সুন্নাহ বা নফল নিয়ে না হয় কাল কথা বলব। পর্দা বা হিজাব প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ বিধানের অন্তর্গত। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।।

কবরস্থানে গিয়ে যা যা কাজ করলে কবরপুজা হয়?

 কবরস্থানে গিয়ে যা যা কাজ করলে কবরপুজা হয়?

মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমার রব চুড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না”। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩]
অনুরূপভাবে শাফাআতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুসীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত-নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দো‘আ করাও শির্ক। আল্লাহ তাআলা বলেন, “বল তো কে নিঃসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহ্বান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]

অনেকেই উঠতে, বসতে বিপদাপদে পীর মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেওয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোনো বিপদে বা কষ্টে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফাঈ। কেউ যদি ডাকে ‘আইদারূসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবন উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৪]
কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সাজদাহ করে, তার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযুর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন, “তাদের থেকে অধিকতর দিক ভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোনো খবর রাখে না।” [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত: ৫]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তাকে আহ্বান করে, আর ঐ অবস্থায় (ঐ কাজ থেকে তাওবা না করে) মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৭।]
কবর পূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মূণ্ডন করে। তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী আউলিয়া বা সাধু-সন্তানদের কবরকে বুঝে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন, “আর যদি আপনার রব্ব আপনাকে কোনো অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সেটার বিমোচনকারী নেই। আর যদি তিনি আপনার কোনো মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রূখবারও কেউ নেই”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭]
একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মান্নত করাও শির্ক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মান্নত করে অনেকেই এরূপ শির্কে জড়িয়ে পড়েন।  সৌজন্যে : ইসলামহাউজ।।

বিবাহের কতিপয় সুন্নত সমূহঃ

 যে সকল ভাইয়েরা/বোনেরা বিবাহ উপযুক্ত বা যাহারা বিবাহ নিয়ে ভাবছেন তাদের অথবা যারা অভিবাবক আছেন তারা জেনে নিন:

বিবাহের_কতিপয়_সুন্নত_সমূহঃ‬

(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২)

(২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০)

(৩) শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯)

(৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭)

(৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬)

(৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” (আবু দাউদ/২১৬০)

(৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে নিবেঃ
“বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪)
(উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী)

(৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭)

(৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)

(১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১)

(১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭)

(১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪)

আল্লাহ সবাইকে সুন্নত মোতাবেক বিবাহ করার তৌফিক দান করুন।
………….আমীন

আমাদের দেশে বর্তমানে শুধুমাত্র কিছু নির্দিস্ট ধরনের পোশাককেই ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলা হয়,এটা কি সাহিহ???

 আমাদের দেশে বর্তমানে শুধুমাত্র কিছু নির্দিস্ট ধরনের পোশাককেই ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলা হয়,এটা কি সাহিহ???

আমাদের দেশে বর্তমানে ‘সুন্নাতী লেবাস’ বলে এক ধরনের বিশেষ কাটিং ও বিশেষ পরিমাণের লম্বা কোর্তা পরিধান করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে যে, এই হচ্ছে সুন্নাতী পোষাক। আর এ সুন্নাতী পোষাক যে না পরবে সে ফাসিক বলে বিবেচিত হবে এবং এমন লোক যদি আলিম হয়, তাহলে তার পিছনে নামায পড়া জায়েয হবেনা। এ কারণে সমাজের এক বিশেষ শ্রেণীর লোক-আলিম ও পীরগণ এ ধরনের কোর্তা পরাকেই সুন্নাত মনে করেন, ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলেই তারা এর প্রচারও করেন। শুধু নিজেরাই তা পরিধান করেননা, তাঁদের ছাত্র ও মুরীদানকেও অনুরূপ কাটিং ও লম্বা মাপের কল্লিদার কোর্তা পরিধান করতে বাধ্য করে থাকেন।

কিন্তু প্রশ্ন এই যে, সুন্নাতী পোশাক বলতে কি বোঝায়, কোনো বিশেষ কাটিং বা বিশেষ লম্বা মাপের জামা পরা কি সত্যিই সুন্নাত? সে সুন্নাত কোন দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো? কুরআন থেকে? হাদীস থেকে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা বিষয়টিকে বুঝতে চেষ্টা করবো।

পোশাক কি রকম হতে হবে সে সম্পর্কে কুরআন মজীদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হলো এই।

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

– হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের জন্য এমন পোশাক (পরিধানের বিধান) নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে এবং যা হবে ভূষণ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা-ই কল্যাণময়। এ হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্যতম; এবং বলা হচ্ছে এই আশায় যে, তারা নসীহত কবুল করবে। (আল আরাফঃ ২৬)

এ আয়াত থেকে কয়েকটি মৌলিক কথা জানতে পারা যায়। প্রথম এই যে, পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ দান। অতএব পোশাক সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সে পোশাক কি রকমের হতে হবে; সে বিষয়ে এ আয়াত থেকে দু’টো কথা জানতে পারা যায়।

একটি হলো, পোশাক এমন হতে হবে যা অবশ্যই মানুষের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে রাখবে। যে পোশাক মানুষের লজ্জাস্থানকে আবৃত করেনা, তা মানুষের পোশাক হতে পারেনা। আর দ্বিতীয় কথা হলো, সে পোশাককে ‘ভূষণ’ হতে হবে। رِيش শব্দের মানে হলো উজ্জ্বল্য, চাকচিক্য, শোভাবর্ধক। আভিধানিকদের মতে رِيش শব্দের আসল অর্থ হলো পাখির পালক যা চাকচিক্যময় ও শোভাবর্ধক হয়ে থাকে। আর মানুষের পোশাকও যেহেতু পাখির পক্ষ ও পালকের মতোই, এ কারণে মানুষের পোশাক বাহ্যত কেমন হবে তা বোঝাতে رِيش শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।) পোশাক পরলে যেন দেখতে মানুষকে ভালো দেখায়, বদসুরত যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল করতে হবে। বস্তুত পোশাকই মানুষের সৌন্দর্য্ বৃদ্ধি করে, পোশাকের মাধ্যমে মানুষের সৌন্দর্য্ বোধ, ভদ্রতা, শালীনতা ও রুচি-সুস্থতা প্রমাণিত হয়। আর পোশাক যদি সে রকম না হয়, তা হলে আল্লাহর দেয়া এক সুন্দর ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করা হবে, হবে আল্লাহর নাশোকরী। (নতুন পোশাক পরে যে দো‘আটি পড়তে রাসূলে করীম(স) বলেছেন তা হলোঃ ‘প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাকে এমন পোশাক পরিয়েছেন, যা দ্বারা আমি লজ্জাস্থান আবৃত করি এবং আমার জীবনে শোভা ও সৌন্দর্য্ লাভ করি।’ এ দো‘আতে ও সেই ছতার ঢাকা এবং প্রশংসা লাভের লক্ষ্যের কথাই বলা হয়েছে, পোশাক পড়ার মূলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই। এ ঠিক কুরআনের আয়াতেরই ব্যাখ্যা যেন।)

এর সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, ভূষণ ও শোভার ব্যাপারে মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল এবং স্থান, কাল ও মানসিক অবস্থার দৃষ্টিতে রুচির ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য ও পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। অতএব কুরআনের মতে পোশাকের ধরণ ও কাটিং পরিবর্তনশীল। কোনো ধরাবাঁধা কাটিং এর পোশাক ইসলামী পোশাক বলে অভিহিত হতে পারেনা।

এ আয়াতের তৃতীয় কথা হলোঃ তাকওয়ার লেবাস। তাকওয়ার লেবাস কাকে বলে এ বিষয়ে বিভিন্ন মত দেখা যায়। কাতাদাহ বলেছেন, ‘লেবাসুত-তাকওয়া’ বলে এখানে ঈমান বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুটি পরিচয়সহ পোশাক পরতে হবে, কিন্তু এ ব্যাপারে সর্বাধিক কল্যাণময় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঈমানকে তাজা রাখা, সঠিকরূপে বহাল রাখা। হাসান বসরী এর মানে বলেছেনঃ লজ্জা, লজ্জাশীলতা, শালীনতা। কেননা, এই লজ্জাশীলতা ও শালীনতাই মানুষকে তাকওয়া অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে। ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেন- তা হলো, নেক আমল। ওসমান ইবনে আফফান(রা) বলেছেন, তা হলো নৈতিক পবিত্রতা।
আর আয়াতের মানে হলোঃ তাকওয়ার পোশাক ভালো-কল্যাণময়, যদি তা গ্রহণ করা হয় আল্লাহর সৃষ্ট পোশাক ও সৌন্দর্য্ ব্যবস্থা থেকে।

মোটকথা, পোশাককে প্রথমে লজ্জাস্থান আবরণকারী হতে হবে। এজন্যে নারী ও পুরুষের পোশাকে মৌলিকভাবে পার্থক্য হতে বাধ্য এ কারণে যে, পুরুষের লজ্জাস্থান এবং নারীদেহের লজ্জাস্থানের পরিধির দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তা অবশ্যই ভূষণ বা শোভাবর্ধক ও সৌন্দর্য্ প্রকাশক হতে হবে। যে পোশাক মানুষের আকার-আকৃতিকে কিম্ভূতকিমাকার বা বীভৎস করে দেয়, চেহারা বিকৃত করে দেয়, সে পোশাক কুরআন সমর্থিত পোশাক নয়, কোনো মুসলমানের পক্ষেই তা ব্যবহারযোগ্য হতে পারেনা।
এই পর্যায়ে কুরআন মজীদ থেকে দ্বিতীয় যে আয়াতটি উদ্ধৃত করা যায় তা হলো এইঃ

قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ

– বলো হে নবী! আল্লাহর সৌন্দর্য্- যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য বের করেছেন- তা কে হারাম করে দিলো? (আল আরাফঃ৩২)

‘আল্লাহর সৌন্দর্য্’ মানে মানুষের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি করে দেয়া সৌন্দর্যের সামগ্রী, আর তা হলো্ পোশাক ও অন্যান্য সৌন্দর্যের উপাদান, সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী জিনিসপত্র। অর্থাৎ পোশাক ও সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী দ্রব্যাদি তো আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তিনি তা সৃষ্টি করেছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। তিনি তা ভোগ ব্যবহার করার জন্যই বানিয়েছেন, মূলগতভাবেই তা সকলের জন্য জায়েয। এ জায়েয জিনিসকে কে হারাম করে দিতে পারে? আল্লাহর সৃষ্টি জিনিসকে হারাম করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। আর তিনিই একে হালাল করে দিয়েছেন-শুধু একে হালাল-ই করে দেননি, তা গ্রহণ ও ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি এই বলেঃ

– তোমাদের সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী জিনিস- পোশাক- তোমরা তা গ্রহণ করো প্রতি নামাযের সময়।
এ আয়াতেও সেই পোশাক গ্রহণের কথাই বলা হয়েছে যা হবে জিনাত, শোভামন্ডিত, সৌন্দর্য্ বৃদ্ধিকারী। অতএব পোশাক গ্রহণের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী মূলগতভাবে তিনটি জিনিসের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবেঃ প্রথমত লজ্জাস্থান আবরণকারী, দ্বিতীয় ভূষণ, শোভাবর্ধনকারী এবং তৃতীয় সে পোশাক শালীনতাপূর্ণ হতে হবে, লজ্জাশীলতার অনুভূতির প্রতীক হতে হবে, নির্লজ্জতাব্যঞ্জক হবে না তা।
কুরআন মজীদে পোশাক সম্পর্কে যে হেদায়াত পাওয়া যায়, তা এই। এছাড়া কুরআন থেকে পোশাক পর্যায়ে আর কিছু জানা যায়না। কুরআন থেকে যা জানা গেল, তাতে কিন্তু পোশাকের কাটিং, ধরন, আকার ও পরিমাণ দৈর্ঘ্য প্রস্থ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।

অতঃপর দেখতে হবে, এ বিষয়ে হাদীস থেকে কি জানা যায়। সর্বপ্রথম বুখারী শরীফের ‘কিতাবুল লিবাস’ এ উদ্ধৃত হাদীস লক্ষ্যণীয়। নবী করীম (স) বলেছেনঃ

– তোমরা খাও, পান করো, পোশাক পরো এবং দান-খয়রাত করো। (আর এসব কাজ করবে দুটো শর্তে) না বেহুদা খরচ করবে, না অহংকারের দরুণ করবে।

খাওয়া, পান করা, পোশাক পর এবং দান খয়রাত করা সম্পর্কে রাসূলে করীমের এ নির্দেশ। এ কাজ অবাধ ও উন্মুক্ত-কেবলমাত্র দুটো শর্তের অধীন। একটি হলো, এর কোনোটিই বেহুদা বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘনকারী হবেনা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে অহংকারের বশবর্তী হয়ে একাজগুলো করবেনা। বাঞ্চনীয় নয় এমন এমন পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যয় করাই হলো ‘ইসরাফ’। আর অহংকার করা, খুব বেশী দামী পোশাক এবং বাহদুরী ও বড়মানুষী প্রকাশ হয় যে পোশাকে তা নিষিদ্ধ। আর পোশাক পর্যায়ে আমাদের জন্য হেদায়াত এই যে, প্রথম বেহুদা খরচ হয় যে পোশাকে, যে ধরনের যে পরিমাপের পোশাক, তা পরিধান করা সুন্নাতের খেলাফ।

পোশাককে অবশ্যই এ থেকে মুক্ত হতে হবে। আর দ্বিতীয়ত গৌরব অহংকারবশত কোনো পোশাক পরা এবং যে ধরনের, যে আকারের ও যে পরিমাপের পোশাক পরলে গৌরব-অহংকার, বড় মানুষী ও বাহাদুরী প্রকাশ পায়, যা মানুষকে সাধারণ মানুষ থেকে স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট করে দেয়, তা পরা যাবেনা। তা পরলে হবে সুন্নাতের বিপরীত কাজ। অতএব ব্যয় বাহুল্য ও অহংকার বিবর্জিত যে কোনো আকারের, প্রকারের ধরনের, কাটিং এর এবং পরিমাপের পোশাকই সুন্নাত অনুমোদিত পোশাক। সুন্নাতী লেবাস তাই, যা হবে এরূপ। হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেনঃ

– তুমি খাও, যা-ই চাও, তুমি পরো যাই তোমার ইচ্ছা, যতক্ষণ পর্য্ন্ত দুটো জিনিস থেকে তুমি ভুলে থাকবেঃ ব্যয় বাহুল্য বেহুদা খরচ ও গর্ব অহংকার প্রকাশক বস্ত্র।

অর্থাৎ এ দুটো বিকার থেকে মুক্ত যে কোনো পোশাকই হাদীস মোতাবিক পোশাক এবং তা পরা সম্পূর্ণ জায়েয। আকার, ধরন, কাটিং ও লম্বা খাটোর ব্যাপারে হাদীস কোনো বিশেষ নির্দেশ দেয়নি, আরোপ করেনি কোনো বাধ্যবাধকতা।

বুখারী শরীফেই এরপর যে হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে, তা হলো এইঃ

-নবী করীম(স) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোনো ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেননা, সে আল্লাহর রহমত থেকে হবে বঞ্চিত।

মনে রাখতে হবে, এ হাদীস থেকে জামা কাপড়ের আকার, কাটিং বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে কোনো হেদায়াত পাওয়া যাচ্ছেনা। শুধু মানসিক ব্যাপারেই নির্দেশ করা হয়েছে। কাপড় পরার বাহ্যিক ধরণ কি হবে, কি না হবে তা-ই বলা হয়েছে। আর অহংকারের ভাব নিয়ে যাই করা হবে, যেভাবেই অহংকার প্রকাশ পাবে, তা-ই নিষিদ্ধ হবে।

অতঃপর বুখারী শরীফের সব কয়টি হাদীসই আপনি পড়ে যান, কোনো একটি হাদীসেও পোশাক সম্পর্কে বিশেষ কোনো কাটিং বা পরিমাপ গ্রহণের নির্দেশ পাবেননা। তবে হাদীস থেকে এ কথা জানা যায় যে, নবী করীমের কোর্তার আস্তিন বা হাত ছিল খুবই সংকীর্ণ। তা থেকে এখানকার চুরিদার আস্তিনের জামা পরা জায়েয প্রমাণিত হয়। নবী করীম(স) যে কামীস পরতেন তা কতখানি লম্বা ছিল? একটি হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, তা খুব লম্বা ছিলনা। হাদীসটির ভাষা এইঃ

-নবী করীমের কামীস সাধারণত সূতীর কাপড় দিয়ে তৈরী হতো এবং তার ঝুল খুব কম হতো ও আস্তিন চুরিদার হতো।

এ থেকে অকাট্যভাবে জানা গেল যে, যারা বলে বেড়ায় যে, নবী করীম (স) অর্ধেক নলা পর্য্ন্ত ঝুল কোর্তা পরেছেন, তারা বানানো মিথ্যা কথা বলেছেন। সত্য কথা হলো তিনি লুংগী পরলে খাটো কোর্তা পরিধান করতেন।

তিরমিযী শরীফে পোশাক পর্যায়ে যে হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে, তার মধ্যে ও প্রথম হাদীস হলো এইঃ

-নবী করীম(স)বলেছেনঃ আমার উম্মতের পুরুষ লোকদের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, আর মেয়েদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
অর্থাৎ পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক হারাম।

এছাড়া মুসনাদে আহমদ এর একটি হাদীস থেকে পরিধেয় বস্ত্রের ঝুল কতখানি হওয়া উচিত সে বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ধারণা মেলে। হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেনঃ

-ঈমানদার লোকদের ইজার পায়ের দুই নলার মাঝ বরাবর ঝুলতে পারে। এর নীচে যেতে পারে পায়ের গিরা ওপর পর্য্ন্ত। এর নীচে গেলে তা হবে জাহান্নামে যাওয়ার কাজ।

হাদীসে ইজার শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে পরিধেয় বস্ত্র, যা কোমরের নীচের দিক ঢাকার জন্য ব্যবহৃত হয়। তা লুঙ্গি হতে পারে, পাজামা হতে পারে, হতে পারে আজকালকার পোশাক প্যান্ট বা অন্য কিছু। এগুলো ঝুল হাঁটু হতে গিরা পর্য্ন্তকার মাঝ বরাবর ‘নিসফে সাক’ পর্য্ন্ত হতে পারে। ‘নিসফে সাক’ এর নীচে পায়ের গীরা পর্য্ন্ত ও ঝুলতে পারে; কিন্তু এর নীচে গেলে তা জায়েয হতে পারেনা।

নবী করীম(স) এর এ পর্যায়ের হাদীসসমূহকে ভিত্তি করে হযরত ইবনে উমর(রা) বলেনঃ

-রাসূলে করীম(স) ইজারকে পায়ের গীরার নীচে ঝুলবার ব্যাপারে যে আযাবের কথা বলেছেন, তা-ই তিনি বলেছেন কামীস এর ব্যাপারেও।

‘কামীস’ হলো গাত্রাবরণ, শরীরের ঊর্ধ্বভাগ ঢাকার জন্য যাই পরিধান করা হয়, তাই কামীস তার কাটিং বা ধরন যাই হোকনা কেন। তা এখনকার পাঞ্জাবী, শার্ট, কোর্ট বা কল্লিদার জামা-যে কোনোটাই হতে পারে। তার কাটিং কি হবে, সে বিষয়ে হাদীস কিছুই বলছেনা। বলছে শুধু এ কথা যে, তা যেনো এতদূর লম্বা না হয় যে, তদ্দারা পায়ের গিরাও ঢেকে যায়। হযরত ইবনে উমরের কথা থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, পায়ের গিরার নিচে ইজার বা কামীস যাই ঝুলবে, তাই হারাম হবে। মনে রাখতে হবে যে, তদানীন্তন আরব সমাজে সাধারণত একখানা কাপড় দিয়ে শরীরের ওপরভাগ হতে হাটুর নীচের ভাগ পর্য্ন্ত ঢেকে ফেলত। এমনকি বর্তমানেও আরবদের পোশাক এরকমই। নীচে ছোটো-খাটো একটা পরে, আর তার ওপর দিয়ে পায়ের গিরা পর্য্ন্ত লম্বা একটা জামা পরে-এই হলো এখনকার আরবদের সাধারণ পোশাক। এর কোনোটিকেই যে নীচের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে পায়ের গিরা ঢেকে ফেলা যাবেনা তাই বলা হচ্ছে এইসব হাদীসে। বস্তুত ‘নিসফে সাক’ বলতে কোনো কিছুর উল্লেখ বা থাকলে তা হলো এই।

কিন্তু একটা লুঙ্গি বা পাজামা পরা সত্ত্বেও ‘নিসফে সাক’-নলার মাঝ বরাবর পর্য্ন্ত একটি কোর্তাও ওপর থেকে ঝুলে পড়তে হবে এবং এরূপ কোর্তা পরা সুন্নাত হবে-একথা কোথ্থেকে জানা গেল? কুরআন থেকে নয়, হাদীস থেকেও নয়। আর কুরআনও হাদীস থেকে যা প্রমাণিত নয়, তা ফিকাহর কিতাব থেকেও প্রমাণিত হতে পারেনা। বর্তমান আরবদের রেওয়াজ থেকেও তা প্রমাণিত নয়। অতএব বর্তমানে এক শ্রেণীর আলিম ও পীর সাহেবানদের ‘সুন্নাতি লেবাস’ বলে চালিয়ে দেয়া ‘নলার অর্ধেক পর্য্ন্ত’ লম্বা কল্লিদার কোর্তা শরীয়তের মূল দলীল থেকে প্রমাণিত জিনিস নয়। এ হলো সম্পূর্ণ মনগড়া এক জিনিস। আর শরীয়তের সুন্নাত রূপে প্রমাণিত নয়- এমন একটি পোশাককে ‘সুন্নাতি লেবাস’ বলে চালিয়ে দেয়া এক অতি বড় বিদয়াত (এ দেশের এক শ্রেণীর আলিম ও পীর সাহেবান যে পাজামা বা লুঙ্গির ওপর কল্লিদার নিসফে সাফ কোর্তা পরেন, তাকে ‘সুন্নাতী লেবাস’ বলা একটা মনগড়া কথা। এ পোশাককে বড়জোর এতদ্দেশীয় পরহেযগার আলিম ও পীর সাহেবানদের পছন্দনীয় পোশাক-লিবালুস ওলামা-বলা যেতে পারে মাত্র)। তা বিদয়াত এজন্যেও যে, তাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ হয়। আর বেহুদা খরচ থেকে দূরে থাকা পোশাকের ব্যাপারে প্রথম শর্ত। বর্তমানে এই বিদয়াত চালু হয়ে রয়েছে সমাজের একশ্রেণীর জনগণের মাঝে। তারা মনে করছে ‘সুন্নাতী পোশাক পরছি আমরা; রাসূলের পায়বরী করছি আমরা, সে কথা এই লোকদের খেয়ালেই আসেনা। বস্তুত এ চরম অন্ধত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমার এ দলীলভিত্তিক আলোচনায় এ পোশাকের প্রতি কোনো বিদ্বেষ প্রচার করা হয়নি, তা পরতে নিষেধও করা হয়নি। আমার বক্তব্য শুধু এতটুকু যে, শুধুমাত্র এ ধরনের পোশাককেই ‘সুন্নাতী পোশাক’ বলাটাই বিদয়াত। এ পোশাক শুধু পরাকে আমি বিদয়াত বলিনি- বিদয়াত বলতেও চাইনা।

[মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.) এর “সুন্নাত ও বিদয়াত” বই থেকে।]

দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন

 দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ-

আমাদের দেশে দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা হল ”দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলেতেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি।” জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।

দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। ইসলামে শরীয়তের বিধানের প্রধান সুত্র হচ্ছে কুরআন ও রাসুল (সাঃ) এর সহীহ সুন্নাহ অর্থাৎ সহীহ হাদিস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক যেসকল বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন ও নিষেধ করেছেন তা পালন করা আমাদের জন্য ফরয। আশা করি বিষয়টি সকলের কাছেই পরিষ্কার অর্থাৎ বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়।

এবার আসুন, দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব সেটা জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।

আল্লাহ্‌পাক পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমাদের বলেছেন। তাঁর মানে হল, রাসুল (সাঃ) যে সকল বিষয়ে আমাদের আদেশ ও নিষেধ করেছেন তা মেনে চলাও আমাদের জন্য ফরয/ওয়াজিব । কুরআনের আয়াতগুলো এখানে দেয়া হল –

রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। [আন-নুরঃ ৬৩]

আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। [আল-ইমরানঃ ১৩২]

যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে [মুহাম্মদ সঃ] অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন [আল ইমরানঃ ৩১]

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। [আল-আনফালঃ ২০]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আল আহজাবঃ ৩৬]

বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া। [আন-নুরঃ ৫৪]

রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [আল-হাশরঃ ৭]

দাড়ি রাখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ –

ইবনে ওমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে । (বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, হাদিস নং – ৫৪৭২ ইফা)

তাহলে বুঝা গেল যে, শরীয়তের বিধানের দ্বিতীয় সুত্র যেহেতু সহীহ হাদিস কাজেই সেই অর্থে দাড়ি রাখা সুন্নত। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক রাসুল (সাঃ) এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন কাজেই সেই অর্থে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলা আমাদের জন্য ফরয। আরও একটি বিষয় সরন রাখা প্রয়োজন যে, রাসুল (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত আল্লাহ্‌পাকের নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বা কাজের নির্দেশ বা নিষেধ করতেন না। আল্লাহ্‌পাক ভাল জানেন।

দাড়ি রাখা সম্পর্কে উলামাগনের কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ফরজ। কারন রাসূল (সা) আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বলতেন না আর তাই দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (সা) এর নির্দেশ মানে আল্লাহ্‌ তা’আলারই নির্দেশ। আবার কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব আবার কেউ বলেছেন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহ্‌ তা’আলা ভাল জানেন।

আশা করি, এবার সকলের দাড়ি রাখার বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকবে না। আল্লাহ্‌পাক আমাদের সকলকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে জীবন চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।

কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে ।পবিত্র কুরআনে দাড়ি সম্পর্কে একটি আয়াত আছে- মুসা (আঃ) তাঁর কওমের নিকট ফিরে এসে যখন দেখলেন তাঁর কওম গোমরা হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন (আঃ) কে প্রশ্ন করলেন এবং হারুন (আঃ) জবাবে বলেনঃ

“হে আমার মায়ের ছেলে! আমার দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনো না” [ত্বোয়া-হা, আয়াত ৯৪]

এখানে বুঝা যাচ্ছে হারুন (আঃ) এর দাড়ি ছিল আর মুসা (আঃ) তার দাড়ি ধরেছিলেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, দাড়ির বিধানটি শরীয়তের একটি মৌলিক ও সাধারণ বিধান। একে নিছক আরবীয় রীতি বা বিশেষ স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি।
সব কিছু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন –

আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। [আয-যারিয়াতঃ ৪৯]

পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। [ইয়াসিনঃ ৩৬]

আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি [আন্-নাবাঃ আয়াত ৮]

উপরের আয়াতত্রয় অনুযায়ী দাড়ির মাধ্যমে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
যথাঃ ১) দাড়িযুক্ত মানুষ (পুরুষ) ও ২) দাড়িবিহীন মানুষ (মহিলা)।

কোন পুরুষকে যদি বলা হয় আপনি কি মহিলা হতে চান ? কোন বিবেকবান লোকই তা চাবে না । তাহলে আমরা কেন আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশের বিপরীত কাজ করি । অর্থাৎ দাড়ি ক্লিন করে মহিলাদের আকার ধারন করি!!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই । ” [আর-রুমঃ ৩০]

এ প্রসঙ্গে শয়তানের একটা উদ্ধত ঘোষণাও আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন । আল্লাহ তা’আলা বলেন,

শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। [আন-নিসাঃ ১১৮-১১৯]

”এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।” আয়াতের এ অংশের আলোচনায় শাববীর আহমদ উসমানী রাহ. বলেছেন, ‘দাড়ি মুন্ডানোও এ আকৃতি পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে ।’ (দেখুন : তাফসীরে উসমানী (মূল) পৃ. ১২৫; (অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১/৪৪৬)

আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার প্রসঙ্গে তাফসীরে বয়ানুল কুরআন বলেছেন, এটা ফাসেকী কাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত । যেমন দাড়ি মুন্ডানো, শরীরে উল্কি আঁকা ইত্যাদি ।-তাফসীরে বয়ানুল কুরআন ১/২/১৫৭

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩)

পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি (সাঃ) তখন উত্তর দেন, আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি। (ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি এক হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা)

* দাড়ি রাখা যাই হোক না কেন প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক । আমাদের দাড়িতে মানাক বা না মানাক আমরা আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে ভালবেসে দাড়ি রাখব ।

এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।

আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)

কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।

এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কি করবেন। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মানবেন নাকি সমাজের মানুষের কাছে লজ্জার ভয়ে কিংবা কাফির-মুশরিকদের অন্ধ অনুসরণ করবেন?

ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে

 ❀ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে❀

আন্তধর্ম বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম :

একজন মুসলিম কখনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে করতে পারে না। মুসলিম হয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَلَا تَنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤۡمِنَّۚ وَلَأَمَةٞ مُّؤۡمِنَةٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكَةٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَتۡكُمۡۗ وَلَا تُنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤۡمِنُواْۚ وَلَعَبۡدٞ مُّؤۡمِنٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكُمۡۗ أُوْلَٰٓئِكَ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِۖ وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ وَٱلۡمَغۡفِرَةِ بِإِذۡنِهِۦۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٢٢١ ﴾ [البقرة: ٢٢١]
‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২১}
আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারছিদ নামক এক সাহাবীকে মক্কায় প্রেরণ করেন গোপনে গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়া লোকদের আনতে। তিনি সেখানে পৌঁছলে ‘ইনাক নামক এক মুশরিক নারী তাঁর কথা শুনতে পায়। সে ছিল তাঁর জাহেলী যুগের বান্ধবী। সে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ মারছিদ তুমি কি আমায় সান্নিধ্য দেবে না? তিনি বললেন, ধ্বংস হও তুমি হে ‘ইনাক, ইসলাম এখন আমাদের মাঝে ওই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। সে বলল, তবে কি তুমি আমায় বিয়ে করতে পার? তিনি বললেন, হ্যা, কিন্তু আমাকে আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছে আমি (তোমাকে) বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করব। সে বলল, তুমি আমাকে উপেক্ষা করছ? অতপর মেয়েটি তাঁর বিরুদ্ধে (নিজ গোত্রীয়) লোকদের সাহায্য চাইল। তারা তাঁকে বেদম প্রহার করল। তারপর তাঁর পথ ছেড়ে দিল। মক্কায় নিজের কাজ সেরে তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন, তাঁকে তিনি নিজের অবস্থা, ‘ইনাকের বিষয় এবং এ জন্য প্রহৃত হবার ঘটনা জানালেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য কি তাকে (মুশরিক নারীকে) বিয়ে করা হালাল হবে? তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন।[1]
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম ইবনু জারীর আত-তবারী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
اخْتَلَفَ أَهْلُ التَّأْوِيلِ فِي هَذِهِ الآيَةِ : هَلْ نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا كُلُّ مُشْرِكَةٍ ، أَمْ مُرَادًا بِحُكْمِهَا بَعْضَ الْمُشْرِكَاتِ دُونَ بَعْضٍ ؟ وَهَلْ نُسِخَ مِنْهَا بَعْدَ وُجُوبِ الْحُكْمِ بِهَا شَيْءٌ أَمْ لاَ ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ : نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا تَحْرِيمُ نِكَاحِ كُلِّ مُشْرِكَةٍ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ مِنْ أَيِّ أَجْنَاسِ الشِّرْكِ كَانَتْ عَابِدَةَ وَثَنٍ أَوْ كَانَتْ يَهُودِيَّةً أَوْ نَصْرَانِيَّةً أَوْ مَجُوسِيَّةً أَوْ مِنْ غَيْرِهِمْ مِنْ أَصْنَافِ الشِّرْكِ ، ثُمَّ نُسِخَ تَحْرِيمُ نِكَاحِ أَهْلِ الْكِتَابِ بِقَوْلِهِ : {يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ} إِلَى {وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ} ..ذِكْرُ مَنْ قَالَ ذَلِكَ :
‘আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন যে এতে সকল মুশরিকের কথা বলা হয়েছে নাকি কতিপয় মুশরিকের কথা। আর আয়াতটি নাযিল করার পর এর কিছুকে মানসূখ বা রহিত করা হয়েছে কি-না। তাঁদের কেউ বলেছেন, আয়াতে সকল মুসলিমের জন্য সব মুশরিক নারীর বিবাহকে হারাম বুঝানো হয়েছে। চাই সে যে কোনো ধরনের শিরকেই লিপ্ত থাকুক না কেন। হোক সে মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজারী বা অন্য কোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত কেউ।
অতপর আহলে কিতাবদের বিয়ে হারামের বিয়ষটি রহিত ঘোষণা করা হয় নিচের আয়াতের মাধ্যমে।
আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,
﴿ ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥ ﴾ [المائ‍دة: ٥]
‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।[2]
একই শাস্ত্রের আরেক ইমাম ইবন কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।[3]
উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে পারে।
এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস করে না; তাহলে চলবে না।
দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী হলে চলবে না।
তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের ইহুদীরা।
চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে কিতাব বিয়ে করা যাবে না।[4]

আন্তধর্ম বিয়ের ভয়াবহ পরিণতি :
বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন। নিজের খেয়াল-খুশি মতো এ বন্ধনের নিয়মে ব্যত্যয় ঘটাবার সুযোগ নেই। ইসলাম মানবজীবনের সব পর্যায়ের যাবতীয় উপলক্ষ ও অনুসর্গকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে, দিয়েছে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা। এই জীবনদিশা আল্লাহ প্রদত্ত বিধায় এর মধ্যে কোনো গলদ নেই। সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা মানেই নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে আনা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই। যারা নিজের স্বাধীনতা দিয়ে অন্যের ধর্ম, সম্মান, রীতি-নীতি ও স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তারা মানবতার শত্রু।
আন্তধর্ম বিয়ের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বাংলাদেশে আগে দেখা যেত, কেউ নিজের ধর্ম ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করতে হতো বিধায় সহজে কেউ ওপথে হাঁটতো না। এখন বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। ধর্ম ত্যাগ না করেই যুবক-যুবতীরা তাদের রঙ্গলীলা সাঙ্গ করতে নেমে পড়বে। কোনো ধর্মের স্বকীয়তা আর থাকবে না। যার ফল দাঁড়াবে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যেনা-ব্যভিচার ডাল-ভাতে পরিণত হবে। জন্ম নেবে জারজ সন্তান। একদিন জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। আর এই ব্যভিচার নামক গর্হিত কাজটি আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সমগ্র উম্মাহর ঐক্যমত্যে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’। {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৩২}
ব্যভিচার তো দূরের কথা ইসলামে যে কোনো ধরনের অশ্লীলতাকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣ ﴾ [الاعراف: ٣٣]
‘বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৩৩}
অপর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ ۞قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ١٥١ ﴾ [الانعام: ١٥١]
‘বল, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি। তা এই যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}
যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَنْتَهِبُ مُنْتَهِبٌ النُّهْبَةَ يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ».
‘যেনাকারী মুমিন থাকে না যখন সে যেনা করে, আর মদ্যপ মুমিন থাকে না যখন মদ পান করে, চোর মুমিন থাকে না যখন সে চুরি করে, ছিনতাইকারী মুমিন থাকে না যখন সে কোনোরূপ ছিনতাই করে আর লোকেরা তার দিকে (বিস্ময় বিস্ফোরিত নেত্রে) চেয়ে থাকে।’[5]
আবদুর রহমান ইবন সাখার রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« إِذَا زَنَى الْعَبْدُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيمَانُ فَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ كَالظُّلَّةِ فَإِذَا خَرَجَ مِنْ ذَلِكَ الْعَمَلِ عَادَ إِلَيْهِ الْإِيمَانُ ».
‘বান্দা যখন যেনা করে তখন তার কাছ থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা ছায়ার মতো (শূন্যে) দুলতে থাকে। অতপর যখন সে ওই কাজ থেকে নিবৃত হয়, তখন তার কাছে ঈমান ফিরে আসে।’[6]
বিশেষ বিবাহ আইনটি বাংলাদেশে কার্যকর হলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দু’ধর্ম পালনকারী দম্পতির সন্তানরা। মানসিকভাবে তারা বিকারগ্রস্ত হবে। মুসলিম বাবা বলবেন, আল্লাহ এক আর মা বলবেন ঈশ্বর তিনজন অথবা আমাদের অসংখ্য খোদা রয়েছেন। মুসলিম বাবা যেটাকে বলবেন সত্য সেটাকেই অমুসলিম মা বলবেন অসত্য। মা-বাবার এই বিপরীত অবস্থান থেকে সন্তানের মনে ঘৃণার জন্ম নেবে। জীবনের ঊষাকাল থেকে মধ্যগগন অবধি সে হাবুডুবু খাবে সিদ্ধান্তহীনতার চোরাবালিতে। এছাড়া উত্তরাধিকারী হয়ে মা বাবার সম্পত্তি ভোগ করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে সন্তানকে। প্রচলিত আইনে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার পেতেও তাদের ঝামেলা পোহাতে হবে। মোটকথা নৈরাজ্য ছাড়া উপায় নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক দৈনিক নয়াদিগন্তকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মুসলিম স্ত্রীর কথা তুলে ধরে বলেন, ওই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটি কোন ধর্ম গ্রহণ করবে, সেটি নির্ধারণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে সমস্যা এখন মনোমালিন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দেশের একজন খ্যাতিমান প্রবাসী কথাশিল্পীর স্বামী মুসলিম। তিনি হিন্দু। তার সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে জানাযা দেয়া হবে নাকি দাহ করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এ ধরনের বিয়ে সমাজে কোনো রকমের ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এটা একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। (১ মে সংখ্যা)
তাই পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের অনুসারীকে বিয়ে করাটা ভালোভাবে নেয় না। এটি একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। ব্যতিক্রম শুধু ইহুদী ধর্ম। তাদের ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে! ইহুদীরা তাদের মেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে দেয়, কিন্ত কখনোই ছেলেদের এই অনুমতি দেয় না। কারণ তাদের বিশ্বাস, সন্তানেরা তাদের মায়েদের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ কারণে বিল ক্লিন্টনের মেয়েকে এক ইহুদী ছেলে বিয়ে করায় জুইস কাউন্সিল এর তীব্র সমালোচনা করেছিল। অতএব নিজেদের জাতকে বিশুদ্ধ রেখে অন্য সকল ধর্মের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং বা জগাখিচুড়িকে উত্সাহিত করা ইহুদীদের কৌশল। বাংলা রম্য রচনার বরপুত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্নেল গল্পে এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে।
ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ মতে শিশুকে তার বাবা মায়ের ধর্মের অনুসারী ধরা হলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়। শিশুকে যে কোনো নীতি বা আদর্শের দীক্ষা দেওয়াই তার স্বাধীনতার পরিপন্থী! তাই হয়তো বড় হয়ে বিবেক-বুদ্ধি অনুসারে যে কোনো ধর্মের অনুকরণ করা না করা তার এখতিয়ারে রাখা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, দেশাত্ববোধের বিষয়টিও কি তার ইচ্ছাধীন? বড় হয়ে তার কি দেশের সংবিধান ও আদর্শে বিশ্বাসী না হবারও অধিকার রয়েছে? কোনো উদারতম ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও কিন্তু এ অধিকার দেবে না।
আসলে মানুষ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তার স্বাধীনতা সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। আর একজন মুসলিমের স্বাধীনতার প্রথম শর্তই হলো তা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। {সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫}
কেউ সুন্দরী বিধর্মী নারীতে মজে আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করবেন আর নিজেকে খুব ভালো মুসলিম ভেবে আবার তৃপ্তও হবেন তা কিন্তু হয় না। তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কিছু মানা আর কিছু না মানার কোনো সুযোগ ইসলামে রাখা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥ ﴾ [البقرة : ٨٥]
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}
নিজের মন মতো নয় আমাদের সব কাজ হতে হবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]
‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬৫}

বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে আইন :
নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিয়ে করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে গত ১৮ এপ্রিল ২০১২ ইং আইনমন্ত্রীর এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন এই বিয়ে পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাহ্ম প্রচারক নিবাস। এখানে প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে যে কোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অথবা যে কোনো একজন নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে। (১ মে, ২০১২ দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ)

আইন সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা :
আইনটি পাসের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে দেশের আলেম সমাজ একে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। সকল দল-মতের ইসলামী ভাবাপন্ন নেতৃবৃন্দ এবং সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছে, প্রস্তাবিত আইনে ইসলামবিরোধী কিছু নেই।
১৫ মে (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশেষ বিবাহ আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছে। এ আইন এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয় নি। আইনটি অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৮৭২ সালের এ আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। তারা ১৮ বছর বয়সের পর যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে।’ (আমার দেশ : ১৬/০৫/২০১২)

আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অসারতা :
বক্তব্যটি আসলে একটি স্পষ্ট মিথ্যাচারের নমুনা। কেননা, ১৮৭২ সালের আইনেও মুসলমান কর্তৃক বিধর্মীদের বিয়ে জায়িয বলা হয় নি। ১৮৭২ সালের বিশেষ বিয়ে আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু, মুসলিম, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন কোনো ধর্মই পালন করে না, তারা এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে পারে। এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে ঘোষণা করতে হবে, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা না করলে বিয়েটি অবৈধ, বরং বাতিল হবে। তবে বিয়েটি যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের মধ্যে সম্পাদন করা হয় তাহলে তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করতে পারবে।

নিচে ১৮৭২ সালে প্রণীত স্পেশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট বা বিশেষ বিবাহ আইনটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
THE SPECIAL MARRIAGE ACT, 1872
(ACT NO. III OF 1872). [18th July, 1872]
Local extent 1. This Act extends to the whole of [Bangladesh].
An Act to provide a form of Marriage in certain cases.
Preamble WHEREAS it is expedient to provide a form of marriage for persons who do not profess the Christian, Jewish, Hindu, Muslim, Parsi, Buddhist, Sikh or Jaina religion, and for persons who profess the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion and to legalize certain marriages the validity of which is doubtful; It is hereby enacted as follows:–
Conditions upon which marriages under Act may be celebrated :

2. Marriages may be celebrated under this Act between persons neither of whom professes the Christian or the Jewish, or the Hindu or the Muslim or the Parsi or the Buddhist, or the Sikh or the Jaina religion, or between persons each of whom professes one or other of the following religions, that is to say, the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion upon the following conditions:–

(1) neither party must, at the time of the marriage, have a husband or wife living:
(2) the man must have completed his age of eighteen years, and the woman her age of fourteen years, according to the Gregorian calendar:
(3) each party must, if he or she has not completed the age of twenty-one years, have obtained the consent of his or her father or guardian to the marriage:
(4) the parties must not be related to each other in any degree of consanguinity or affinity which would, according to any law to which either of them is subject, render a marriage between them illegal.
1st Proviso- No such law or custom, other than one relating to consanguinity or affinity, shall prevent them from marrying.
2nd Proviso- No law or custom as to consanguinity shall prevent them from marrying, unless a relationship can be traced between the parties through some common ancestor, who stands to each of them in a nearer relationship than that of great-great-grand-father or great-great-grand-mother, or unless one of the parties is the lineal ancestor, or the brother or sister of some lineal ancestor, of the other.

আইনের ধারাগুলো পড়লেই বুঝা যায় বর্তমানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃটিশ প্রণীত এই আইনটিকে বলা হয়েছে ‘বিশেষ বিবাহ আইন’। পক্ষান্তরে সরকার যে আইনটি করতে যাচ্ছে তা মূলত তো ‘আন্তধর্ম বিয়ে আইন’। বিশেষ আর আন্তধর্ম বিয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ বিবাহ আইন হলো, স্বধর্মত্যাগীদের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে আন্তধর্ম বিয়ে হলো, এক ধর্মের লোকের সঙ্গে আরেক ধর্মাবলম্বীর বিয়ে।
সুতরাং বৃটিশ আমলে খ্রিস্টান সরকারও কিন্তু সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধাতে যায় নি। অতএব কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটে নির্বাচিত মুসলিম সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। যারা এমন বিয়ের বাঁধনে জড়াতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, সমাজ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই যদি বিয়ে করতে হয় তবে এ সম্পর্কে জড়ানোর কী দরকার? যারা সরাসরি আল্লাহর বাণীকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছে যেনা-ব্যভিচার তো কোনো ব্যাপারই না। এ দিয়েই তো তাদের কাজ চলার কথা। সামাজিক ও আইনগত দায়বদ্ধতায় আনতেই কি তবে তাদের বিয়ের বৈধতা প্রয়োজন? উত্তর হ্যা হলে প্রশ্ন, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা করে না তাদের সামাজিক বৈধতা দিতে রাষ্ট্রের এত দায় কেন?
এটি আসলে প্রবঞ্চনামূলক জবাব। তা না হলে হঠাৎ করে দু’জন কাজী নিয়োগ দিয়ে কেন বলা হবে, সারাদেশেও প্রয়োজন হলে এ ধরনের কাজী নিয়োগ হবে। যেখানে বছরে দু-চারজন নিজ ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে-শাদি করছে সেখানে কয়জন কাজী লাগে? তাছাড়া ১৮৭২ সনের বৃটিশ আইনই আমাদের রাখার দরকার কী? প্রতিনিয়ত সব কিছু উল্টাতে পারলে ওই আইন নিয়ে কেন মাথা ব্যথা?
অতএব সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর মুসলিম ভাই-বোনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা না জেনে না বুঝে পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তা-ই হবে আমাদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহই একমাত্র আমাদের ভরসাস্থল; কেবল তিনিই যাবতীয় প্রতিকূলতা থেকে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন। আমীন।

[1]. তাফসীর তাবারী : ৪/৩৬৪।
[2]. তাফসীরে তাবারী : ৪/৩৬৩; আল-ওয়াসিত : ৩২০-৩২১।
[3]. তাফসীরে ইবন কাছীর : ১/৪৭৪।
[4]. তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৬৭-৬৯।
[5]. বুখারী : ২৪৭৫; মুসলিম : ৫৫৩।
[6]. আল-মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন : ৫৫; বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান : ৪৯৬৪।
_________________________________________________________________________________

লেখক : আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব।।

Translate