Monday, April 21, 2025

নির্দিষ্ট করে কাউকে জান্নাতি বা জাহান্নামী বলা যাবে কি

 প্রশ্ন: নির্দিষ্ট করে কাউকে জান্নাতি বা জাহান্নামী বলা যাবে কি? এই বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা কি?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর নিদিষ্ট করে কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বক্তব্য বা মূলনীতি হলো, মহান আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যাদের সম্পর্কে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ঘোষণা করেছেন শুধু তাদেরকেই জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা যাবে, এর বাহিরে অন্য কাউকে নয়। কারন এগুলো আক্বীদার বিষয় যা কুরআন সুন্নাহর দলিল নির্ভর হতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো যুক্তি বা ইজতিহাদের অবকাশ নেই। তাছাড়া কেউ জান্নাতের কাজ করলেই তাকে জান্নাতী এবং জাহান্নামের কাজ করলেই তাকে জাহান্নামী মনে করা ঠিক নয়। হতে পারে সে মরণের পূর্বে অথবা আল্লাহর কাছে তার বিপরীত হতে পারে যার একাধিক প্রমাণ হাদিসে রয়েছে। সুতরাং ইসলামি শরীয়তের (কুরআন ও সুন্নাহ) দলিলের ভিত্তিতে যাদের জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা কেবল তাদের ক্ষেত্রেই সে রকম সিদ্ধান্ত দিতে পারি। এর বাইরে সাধারণ মানুষ সম্পর্কে নিশ্চিত করে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা আমাদের জন্য জায়েজ নয়। বরং যারা ঈমান ও সৎকর্মে জীবনযাপন করে তাদের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে জান্নাতের আশা রাখি ইন শাহ্ আল্লাহ। আর যারা পাপে নিমগ্ন তাদের ব্যাপারে আল্লাহর শাস্তির ভয় করি। কেননা সকল মানুষের শেষ পরিণতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।”(বিস্তারিত জানতে দেখুন: বিন বায: মাজমূঊ ফাতাওয়া: খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ১২১; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব,ফাতওয়া নং-৭৩১)।
.
শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে ঘোষণা করা দু-ধরনের হয়ে থাকে।

(১) সাধারণ গুণ বা কর্মের ভিত্তিতে সাধারণভাবে জান্নাতি কিংবা জাহান্নামী বলা: এ ধরনের বর্ণনায় নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য না করে সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে। যেমন “যে ব্যক্তি ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে,সে জান্নাতের অধিকারী হবে” অথবা “যে ব্যক্তি কুফরি বা শিরক করে, তার পরিণতি জাহান্নাম” অর্থাৎ যে ব্যক্তি বড় শিরকে জড়িয়ে পড়ে, সে নিঃসন্দেহে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে কাফের হিসেবে গণ্য হয়। ফলে তওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে কুরআন ও সুন্নাহের অকাট্য প্রমাণ অনুযায়ী তার গন্তব্যস্থল হবে জাহান্নাম। অনুরূপভাবে আমরা জানি যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমাদান মাসে রোযা রাখে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। আবার যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ্জ সম্পাদন করে তার জন্য প্রতিদান হলো জান্নাত। সুতরাং নির্দিষ্ট কিছু বিশ্বাস ও কর্মের উপর ভিত্তি করে কুরআন ও সুন্নাহয় এমন বহু প্রমাণ রয়েছে, যা জান্নাত ও জাহান্নামের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।

উদাহরণস্বরূপ: যদি কেউ প্রশ্ন করে এক ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারো নিকট দোয়া করে, সাহায্য চায়, তাহলে সে জান্নাতী নাকি জাহান্নামী? উত্তরে বলা হবে কেউ যদি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারো নিকট দোয়া করে বা সাহায্য প্রার্থনা করে তাহলে সে এক মহাপাপে লিপ্ত হয়েছে, যা তাওহীদের স্পষ্ট বিরোধিতা। যদি সে এই শিরক থেকে তাওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে কুফরীর অবস্থায় মারা যাবে এবং তার পরিণাম ভয়াবহ জাহান্নাম। কারণ, সে আল্লাহর একত্ববাদের পরিপন্থী এক গুরুতর গোনাহে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অটল ছিল। অন্যদিকে, যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ্ব পালন করে এবং হজের সময় নিজেকে অশ্লীলতা, গুনাহ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, অতঃপর সে মৃত্যু বরণ করে ইন শাহ্ আল্লাহ তাহলে আমরা আমভাবে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে জান্নাতের আশা করতে পারি এবং তাদের জন্য জান্নাত লাভের দোয়া করতে পারি। অথবা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” উচ্চারণ করে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়ে বিদায় নেয়, তার জন্যেও জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। এসব বক্তব্য ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, বরং তাদের কর্ম, আকীদা ও শেষ অবস্থার ভিত্তিতে সাধারণ নীতির আলোকে বলা হয়। কেবল আল্লাহই নির্ধারিত ভাবে জানেন কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী।
.

(২) নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা: এই ধরণের ঘোষণা কেবলমাত্র যাদের ব্যাপারে কুরআন বা সহীহ হাদীসে স্পষ্টভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা হয়েছে, শুধু তাদের ক্ষেত্রেই করা যায়। যেমন কুরআন সুন্নাহের বিভিন্ন বর্ননায় রাসূল (ﷺ) যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদেরকে “জান্নাতী” বলা যাবে। আবার যেসব কাফিরদের সম্পর্কে কুরআনে কিংবা সহীহ হাদিসে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাদেরকে “জাহান্নামী” বলা যাবে।
.
উদাহরণস্বরূপ: দুনিয়াতেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, তাঁদেরকে জান্নাতী বলে সম্বোধন করতে কোন সমস্যা নেই। রাসূল (ﷺ), একটি হাদীসে আবূ বকর, উমার, উসমান, আলী, ত্বালহা, যুবায়র ইবনুল আওয়াম, সা‘দ ইবনু মালিক, আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরা সকলেই জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন (আবূ দাঊদ, হা/৪৬৪৯; তিরমিযী, হা/৩৭৪৭, ৩৭৪৮, ৩৭৫৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩ সহীহুল জামি‘, হা/৫০, ৪০১০)। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে আরো বহু সাহাবীকে রাসূল ﷺ দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের মাঝে আছেন (১) উক্কাশাহ বিন মিহশান (রা.) (বু. মু. মিশকাত হা/৫২৯৬)। (২) ইয়াসির (৩) ‘আম্মার (৪) সুমাইয়া (হাকেম হা/৫৬৬৬) (৫) বেলাল বিন রাবাহ (তিরমিযী হা/৩৬৮৯) (৬) উসায়রিম ‘আমর বিন সাবেত (আহমাদ হা/২৩৬৮৪) (৭) সাবেত বিন ক্বায়েস (মুসলিম হা/১১৯) (৮) হারেসাহ বিন সুরাক্বাহ (বুখারী হা/২৮০৯) (৯) হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (মুসলিম হা/১৭৮৮) (১০) যায়েদ বিন হারেসাহ (১১) আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা (আহমাদ হা/২২৬০৪; ইবনু হিববান হা/৭০৪৮) (১২) সা‘দ বিন মু‘আয (মুসলিম হা/২৪৬৮) (১৩) সালমান ফারেসী (তিরমিযী হা/৩৭৯৭) (১৪) আব্দুল্লাহ বিন সালাম (বুখারী হা/৩৮১২) (১৫) জাবের (রা.)-এর পিতা আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (তিরমিযী হা/৩০১০) (১৬) আবুদ্দাহদাহ আনসারী (মুসলিম হা/৯৬৫) (১৭) রুমায়সা বিনতে মিলহান (বুখারী হা/৩৬৭৯) (১৮) উম্মে যুমার হাবাশীয়া (বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭৬) প্রমুখ।
.
পক্ষান্তরে যারা দুনিয়াতেই জাহান্নামের দুঃসংবাদ পেয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে যেমন: (১) ফিরআউন। মহান আল্লাহ তার সম্বন্ধে বলেছেন,يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ ۖ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন সে নিজ সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে, অতঃপর তাদেরকে উপনীত করবে দোযখে। আর তা অতি নিকৃষ্ট স্থান যাতে তারা উপনীত হবে। (সূরা হূদ ৯৮) (২) নূহ ও লূত (আলাইহিমাস সালাম)-এর স্ত্রী ও মহান আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেন, আর আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহ ও লুতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। তারা ছিল আমার দাসদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ দাসের অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে তারা (নূহ ও লূত) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হল, ‘জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ কর। (সূরা তাহরীম ১০) এখানে খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা বলতে দাম্পত্যের খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, কোনো নবীর স্ত্রী ব্যভিচারিণী ছিলেন না। (ফাতহুল কাদীর) খিয়ানত বলতে বুঝানো হয়েছে, এরা তাদের স্বামীদের উপর ঈমান আনেনি। তারা মুনাফিক্বী ও কপটতায় লিপ্ত ছিল এবং নিজেদের কাফের জাতির প্রতি তারা সমবেদনা পোষণ করত। যেমন, নূহ (আ.)-এর স্ত্রী নূহ (আ.)-এর ব্যাপারে লোকদেরকে বলে বেড়াত যে, এ একজন পাগল। আর লূত (আ.)-এর স্ত্রী তার গোত্রের লোকদেরকে নিজ বাড়ীতে আগত অতিথির সংবাদ পৌছে দিত। কেউ কেউ বলেন, এরা উভয়ই তাদের জাতির লোকদের মাঝে নিজ নিজ স্বামীর চুগলি করে বেড়াত। নূহ (আ.) এবং লূত (আ.) তাঁরা উভয়েই ছিলেন আল্লাহর পয়গম্বর, আর পয়গম্বররা আল্লাহর অতি নিকটতম বান্দাদের মধ্যে গণ্য হন, তা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারবেন না।

(৩) আবূ লাহাব ও তার স্ত্রী। মহান আল্লাহ বলেন, ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন উপকারে আসবে না। অচিরেই সে শিখা বিশিষ্ট (জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে এবং তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহন করে। তার গলদেশে থাকবে খেজুর আঁশের পাকানো রশি (সূরা আল-লাহাব ৩-৪)।

(৪) আমর বিন আমের আল-খুযায়ী। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ‘আম্‌র ইব্‌নু ‘আমির খুয‘আইকে তার বহির্গত নাড়ি-ভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেলা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সাইবা উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৩৫২১; মুসলিম ২৮৫৬ আর লুলু ওয়াল মারজান হা/১৮১৬)
(৫) আবূ ত্বালিব, আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত:‘আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রা.) বলেন, আমি একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আপনার চাচা আবূ ত্বালিবের কী উপকার করলেন অথচ তিনি আপনাকে দুশমনের সকল আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হতেন। তিনি বললেন, সে জাহান্নামে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত আগুনে আছে। যদি আমি না হতাম তাহলে সে জাহান্নামের একেবারে নিম্ন স্তরে থাকত। (সহীহ বুখারী পর্ব ৬৩ /৪০ হা. ৩৮৮৩, মুসলিম ১/৯০, হা. নং ২০৯ আল লু’লু ওয়াল মারজান,হা/ ১২৫) (৬) আম্মার (রা.)-এর ঘাতক ও তার ব্যাপারে মহানবী (ﷺ) বলেছেন,“সে জাহান্নামী।”(সহীহুল জামে’ ৪১৭০) কিন্তু যাদের ব্যাপারে ঘোষণা নেই, তাদেরকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা জায়েয নয় (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৫/১২১ পৃ. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৩১)। যেমন, সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ আস্ সা‘ইদী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমলের বিবেচনায় জান্নাতীদের ‘আমলের ন্যায় ‘আমল করবে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। আর কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমলের বিবেচনায় জাহান্নামীদের ‘আমলের ন্যায় ‘আমল করবে, অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত। (সহিহ মুসলিম হা/ ৬৬৩৪ ই.ফা হা/ ৬৫০০)।
.
অতএব কুরআন-সুন্নাহ সুস্পষ্ট দলিলের বাহিরে কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতী কিংবা জাহান্নামী বলে সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না, এমন কি কোনো মুসলিম ব্যাক্তি মারা গেলেও তার ক্ষেত্রে রহমতপ্রাপ্ত বেহেশতবাসী’ উদ্দেশ্য করে মরহুম শব্দ ব্যবহার করাও জায়েয নয়। এবার একজন মুসলিম সে যত সৎকর্মই করুক না কেন তাকে যেমন জান্নাতী বলে ঘোষণা দিতে পারি না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম যত মন্দ কাজই করুক না কেন তাকে জাহান্নামী বলেও ঘোষণা দিতে পারি না। কারণ কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী সাব্যস্ত করা একমাত্র আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন।আমরা যদি কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ করি তাহলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। যেমন:

(১) আম্মিজান ‘আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, একদা একজন আনসারীর বাচ্চার জানাযার সলাত আদায়ের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ডাকা হল। আমি (‘আয়েশা) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বাচ্চার কি সৌভাগ্য, সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে একটি চড়ুই। সে তো কোন গুনাহ করেনি বা গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে না হে ‘আয়েশা! আল্লাহ তা’আলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, যখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। এভাবে জাহান্নামের জন্যেও একদল লোক সৃষ্টি করে রেখেছেন অথচ তখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল।(সহীহ মুসলিম ২৬৬২, নাসায়ী ১৯৪৭,ইবনু মাজাহ ৮২,আহমাদ ২৫৭৪২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৩)। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যদি কেউ কাউকে কাফের বলে, আর সে যদি কাফের না হয়, তাহ’লে কথাটি তার উপরেই ফিরে আসবে।(সহীহ বুখারী হা/৬০৪৫; মিশকাত হা/৪৮১৬)। অপর আরেকটি বর্ননায় এসেছে খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,…উম্মুল ‘আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অতঃপর উসমান ইবনু মায‘উন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তাঁর সেবা শুশ্রাষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নবী (ﷺ) আমাদের এখানে আসলেন। ঐ সময় আমি ‘উসমান ইবনু মাযউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবূ সায়িব! তোমার উপর আল্লাহ রহম করুন। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয় তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী (ﷺ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি তো জানি না। তাহলে আপনি বলে দিন কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নবী (ﷺ) বললেন, আল্লাহর শপথ! ‘উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানি না আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না…(সহীহ বুখারী, হা/১২৪৩)।
.
কাউকে জাহান্নামী সাব্যস্ত করার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হ’তে পারে নিম্নোক্ত হাদীসটি তার বাস্তব উদাহরণ। আবূ হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’জন ব্যক্তি ছিল। তাদের একজন পাপ কাজ করত এবং অন্যজন সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত থাকত। যখনই ইবাদতরত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখত, তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলত। একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বলল, তুমি এমন কাজ থেকে বিরত থাক। পাপী ব্যক্তি বলল, আমাকে আমার রবের উপর ছেড়ে দাও! তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।অতঃপর দু’জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হ’ল। আল্লাহ ইবাদতগুযার ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবূ হুরায়রাহ (রা.) বলেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! সে (ইবাদতগুযার ব্যক্তি) এমন উক্তি করেছে, যার ফলে তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়েই বরবাদ হয়ে গেছে’ (আবূ দাঊদ হা/৪৯০১; সহীহুল জামে‘ হা/৪৪৫৫; সনদ সহীহ)। এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, কাউকে সরাসরি জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না। কেননা কে জান্নাতে যাবে, আর কে জাহান্নামে যাবে, আল্লাহ কাকে ক্ষমা করবেন এবং কাকে ক্ষমা করবেন না- সেটা কেবল আল্লাহই জানেন। কেননা তিনিই কেবল অদৃশ্যের খবর রাখেন। তিনিই ‘আলিমুল গায়েব। সুতরাং ইলমুল গায়েবের দাবী করা সীমালংঘন ও কুফরী। এজন্য আল্লাহ সেই ইবাদতগুযার বান্দাকে বলেছেন, তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবান ছিলে? আল্লাহ বলেন, ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলভাগে ও সমুদ্রভাগে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও সেটা তিনি জানেন। মাটিতে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যদানা নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা শুষ্ক ফল নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (সূরা আন‘আম ৬/৫৯)। আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল। তিনি অনেক বড় পাপীকেও ক্ষমা করে জান্নাত প্রদান করতে পারেন। আবার তিনি শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। ফলে ইবাদতগুযারকেও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করতে পারেন।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:كل إنسان يشهد له النبي صلى الله عليه وسلم بأنه في الجنة فهو في الجنة، وكل إنسان يشهد أنه في النار فهو في النار، وأما من لم يشهد له الرسول فنشهد له بالعموم، نقول: كل مؤمن في الجنة، وكل كافر في النار، ولا نشهد لشخص معين بأنه من أهل النار، أو من أهل الجنة، إلا بما شهد له الله ورسوله”যেসব ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতী বলেছেন, তারা জান্নাতী। আর যাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে তারা জাহান্নামী, তারা হবে জাহান্নামী। তবে যাদের সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট দলিল নেই, তাদের ব্যাপারে আমরা বলি—সকল ঈমানদার জান্নাতের অধিকারী এবং সকল কাফির জাহান্নামের অধিবাসী। কিন্তু কাউকে নির্দিষ্ট করে জান্নাতী বা জাহান্নামী‌ বলবো না, যতক্ষণ না আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের ব্যাপারে তা নির্ধারণ করে দেন।”(ইবনু উসাইমীন,তাফসীর সূরা আল-হুজরাত; পৃষ্ঠা: ১৮)।
.
অপর ফাতওয়ায় সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস, শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:মৃতদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দাবলির বিশুদ্ধতা কী? যেমন আমরা এরকম কথা শুনে থাকি যে, অমুক ‘মাগফূর লাহু’ অথবা ‘মরহুম’। এই পরিভাষাগুলো কি বিশুদ্ধ? আপনি এ ব্যাপারে মানুষকে কীভাবে দিকনির্দেশনা দিবেন?”

উত্তরে শাইখ বলেন:
الواجب في هذا أن يقال: غفر الله له، رحمه الله، ولا يجزم بالمغفور له والمرحوم، هذا هو الذي ذكره أهل العلم، وكان أهل السنة والجماعة يقولون: لا يجوز الشهادة لمعين بجنة أو نار، إلا من شهد له الرسول ﷺ، أو شهد الله له في كتابه وإلا فلا، فممن شهد الله له في الكتاب العزيز بالنار أبو لهب ، شهد الله له بالنار، وهكذا من شهد له الرسول ﷺ بالجنة كـأبي بكر الصديق وعمر وعثمان وعلي وبقية العشرة وغيرهم ممن شهد لهم الرسول ﷺ، أو بالنار، هذا يشهد له.أما من لم يشهد له الله ولا رسوله لا بجنة ولا بنار فإنا لا نشهد له بذلك لا هذا ولا هذا، ولكن أهل السنة يرجون للمحسن ويخافون على المسيء.
والذي يظهر أن قول القائل: المرحوم فلان، والمغفور له فلان في معنى الشهادة، في معنى الشهادة بالجنة والنار؛ لأن المرحوم والمغفور له معناه أنه في الجنة؛ لأن كل إنسان مرحوم ومغفور له فهو من أهل الجنة، هذا فيه جرأة وعدم تورع، فالذي ينبغي في مثل هذا أن يقول: رحمه الله، غفر الله له، هذا هو الذي ينبغي في هذا المقام. نعم.
“এই বিষয়ে যা করণীয় তা হলো ‘গাফারাল্লাহু লাহু (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন)’, ‘রাহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন)’ প্রভৃতি বলা জরুরি। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ‘মাগফূর লাহু (ক্ষমাপ্রাপ্ত)’, ‘মরহুম (রহমতপ্রাপ্ত)’ প্রভৃতি বলা যাবে না। ‘আলিমগণ এমনটিই বলেছেন।আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ বলে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে জান্নাতি বা জাহান্নামী হওয়ার সাক্ষ্য দেওয়া বৈধ নয়, শুধুমাত্র যাদের ব্যাপারে রাসূল ﷺ সাক্ষ্য দিয়েছেন, অথবা যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর কিতাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে করা যাবে। যেমন আল্লাহ যাকে কুরআনে জাহান্নামী বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের একজন হলো আবূ লাহাব। আল্লাহ তাকে জাহান্নামী বলেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। একইভাবে যাদের ব্যাপারে রাসূল ﷺ জান্নাতি বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যেমন আবূ বকর আস-সিদ্দীক, ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী এবং আশারায়ে মুবাশশারাহ-র অন্যান্য সাহাবীগণ, অথবা যাদেরকে রাসূল ﷺ জাহান্নামী বলেছেন তাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া যাবে। কিন্তু যাদের ব্যাপারে না আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন, না রাসূল ﷺ, তাদের ব্যাপারে আমরা জান্নাতি বা জাহান্নামী বলে কোনো সাক্ষ্য দেব না।কিন্তু আহলুস সুন্নাহ সৎকর্মশীল বান্দার জন্য কল্যাণের আশা করে, আর পাপী বান্দার ব্যাপারে অকল্যাণের আশঙ্কা করে।আর মানুষের বলা অমুক ‘মরহুম’, অমুক ‘মাগফূর লাহু’ এই কথাগুলো জান্নাত ও জাহান্নামের সার্টিফিকেট দেওয়ার নামান্তর। কেননা মরহুম (রহমতপ্রাপ্ত), মাগফূর লাহু (ক্ষমাপ্রাপ্ত) কথা দুটির অর্থ হলো, উক্ত ব্যক্তি জান্নাতে রয়েছে। কেননা প্রত্যেক মরহুম ও মাগফূর লাহু ব্যক্তি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। এই কথার মধ্যে রয়েছে স্পর্ধা ও তাক্বওয়া-শূন্যতা। তাই এসব ক্ষেত্রে ‘রাহিমাহুল্লাহ’, ‘গাফারাল্লাহু লাহু’ প্রভৃতি বলাই বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে এটাই বাঞ্ছনীয়। না‘আম।”(ইমাম ইবনু বাযের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর আর্টিকেল নং-৬৪৭১) তবে হা!কেউ যদি মরহুম বলার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য রহমতের দু‘আ উদ্দেশ্য করে, তাহলে মরহুম বলা জায়েজ। উল্লেখ্য যে, ‘রহমতপ্রাপ্ত’ হলো মরহুম শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ। কিন্তু মরহুম শব্দের আরেকটি প্রসিদ্ধ অর্থ আছে। আর তা হলো মৃত, প্রয়াত, লোকান্তরিত, পরলোকগত প্রভৃতি। যেমনটি বিভিন্ন আরবি অভিধানে এসেছে।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাই পরিষ্কার যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আকিদা হলো তারা কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে জান্নাতী বা জাহান্নামী ঘোষণা করে না, যতক্ষণ না তার সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কুরআন বা হাদীসে সুস্পষ্ট দলিল থাকে। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জান্নাতী বা জাহান্নামী ঘোষণা করেছেন, তারা তা-ই। তবে এ ছাড়া অন্যদের ব্যাপারে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেন না। তবে তারা নেককার ও আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের আশা পোষণ করে এবং গোনাহগার ও অবাধ্য ব্যক্তিদের জন্য জাহান্নামের আশঙ্কা করে। এভাবে তারা সাধারণভাবে বলে আল্লাহর আনুগত্যশীলরা জান্নাতের উপযুক্ত এবং তাঁর অবাধ্যরা জাহান্নামের উপযুক্ত, কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নাম ধরে নির্দিষ্ট করে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে না।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফিযাহুল্লাহ)
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

স্বামীর হক সম্পূর্ণ আদায় না করলে কি গুনাহ হবে

 প্রশ্ন: স্বামীর হক সম্পূর্ণ আদায় না করলে কি গুনাহ হবে? শরীয়ত সম্মত কারনে যদি স্বামীর প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকে তবুও জোরপূর্বক সেই সম্পর্কে থাকাটা কি স্বামীর প্রতি অন্যায় করা হবে? এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে নারীর ‘‘ক্বাওওয়াম’’ বলেছেন। ক্বাওওয়াম অর্থ হলো: অভিভাবক, তত্তাবধায়ক, ব্যবস্থাপক, পরিচালক ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজিদে বলেনالرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّـهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ . ‘‘পুরুষেরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব (কর্তৃত্ব) দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় (ভরণপোষণ) করে।’’ [সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪] তাছাড়া স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা পারিবারিক শান্তি ও সৌহার্দ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামে এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব, যা আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে না। বরং অনেক ‘উলামা বলেছেন, আনুগত্যের বিষয়ে স্বামীর অধিকার পিতামাতার অধিকার থেকেও অগ্রগণ্য। অর্থাৎ, যদি স্বামী ও পিতা উভয়ে তাকে কোনো নেক কাজের নির্দেশ দেন, তবে স্বামীর আদেশই অগ্রাধিকার পাবে। সুতরাং
ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলার কারণে যদি কেউ স্বামীর হক ক্ষুণ্ন করে তাহলে তা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে যদি শারঈ কোনো বৈধ কারণ যেমন শারীরিক অসুস্থতা বা মানসিক অসুবিধা থাকে, তাহলে সেই পরিস্থিতি ভিন্নভাবে বিবেচিত হবে।স্ত্রীর জন্য স্বামী আনুগত্য করা ওয়াজিব এর দলিল হচ্ছে,মহান আল্লাহ বলেছেন,
فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلۡغَیۡبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰهُ ؕ
“নেককার স্ত্রীগণ হয় (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে।”(সুরা নিসা: ৩৪) আয়াতে উদ্ধৃত ‘ক্বানিতাহ’ তথা ‘অনুগতা’ বিশেষণটি সে মহিলার জন্যই প্রযোজ্য হয়, যে তদীয় স্বামীর আনুগত্য করে। এ ব্যাখ্যা করেছেন ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ও একাধিক সালাফ। সুতরাং ‘অনুগতা’ মহিলা তিনিই, যিনি নিজের স্বামীর আনুগত্য করেন। সালাফদের থেকে এমন তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে।(তাফসীরে তাবারী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৯৪)। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিনী ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪] এ আয়াতের দাবি অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, সেটি তার সাথে সফর হোক, তার সাথে আনন্দ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয় হোক বা অন্য যে কোনো চাহিদা হোক। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও প্রমাণ করে।”(মাজমুউল ফাতওয়া; খণ্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৬০ ও ২৬১) সুতরাং স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, স্বামীর সাথে পারস্পরিক আচরণে সে হবে তার প্রতি আনুগত্যশীল, সন্তুষ্ট, বিনয়ী ও অবনমিত।
.
হাদিসেও এসেছে, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমাজানের সিয়াম রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাহলে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” ইবনু হিব্বান তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আল-আলবানি বলেছেন, এ হাদিসের সনদ: হাসান লি গাইরিহি।(ইবনু হিব্বান, হা/৪১৬৩; তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৯৮; সহিহ তারগীব, হা/২৪১১; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)। আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমাজানের সিয়াম রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।”(আহমাদ, হা/১৬৬১; সহিহ তারগীব, হা/১৯৩২; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)
এখানে দলিল হচ্ছে: হাদিসে উল্লিখিত বিধানগুলোর সংযোগ। বলা হয়েছে, ‘কোন মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে’, আর এ কাজ ফরজ। এরপর বলা হয়েছে, ‘রমাজানের সিয়াম রাখে’, এটাও ফরজ বিধান। তারপর বলা হয়েছে, ‘যৌনাঙ্গের হেফাজত করে’, এটাও ফরজ। সবশেষে বলা হয়েছে, ‘আর স্বামীর অনুগত্য করে’, এটাও ফরজ বিধান। এ বিধানগুলো পালন করলে তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো। উপরন্তু যে রমনী স্বামীর আনুগত্য করে না, তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “দু ব্যক্তির সালাত তাদের মাথা অতিক্রম করে না।” অর্থাৎ, মাথার ওপরে ওঠানো হয় না, সালাতের সওয়াব দেওয়া হয় না। হ্যাঁ, সালাত পড়ার মাধ্যমে সালাতের দায়িত্ব পালন হয় বটে। কিন্তু তাদের দুজনকে সালাতের সওয়াব দেওয়া হয় না। তারা কারা? নবিজি ﷺ বলেছেন, “একজন সেই গোলাম, যে তার মনিবের নিকট থেকে পলায়ন করেছে; যতক্ষণ না সে মনিবের কাছে ফিরে আসছে। অপরজন সেই মহিলা, যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়েছে; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” ত্বাবারানী ও হাকিম এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলবানী এ হাদিসকে সহিহ ও হাসান বলেছেন।(তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৬২৮; হাকিম, হা/৭৩৩০; সহিহুল জামি‘, হা/১৩৬; সিলসিলাহ সহিহাহ, হা/২৮৮; সহিহ তারগীব, হা/১৮৮৮ ও ১৯৪৮)।
.
দ্বিতীয়ত: স্বামীর অন্যায়ের কারণে যদি তার প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকে তবুও জোরপূর্বক সেই সম্পর্কে থাকাটা কি স্বামীর প্রতি অন্যায় করা হবে? এক্ষেত্রে করনীয় কি?
.
প্রশ্নকারী বোন, আপনি বলেছেন আপনার স্বামী যদি আপনার প্রাপ্য অধিকার যথাযথভাবে আদায় না করে, আপনার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা না করে, তিনি হারাম কাজে লিপ্ত থাকেন, এমনকি তিনি আপনার মা-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যার ফলে তার প্রতি আপনার মায়া-মমতা ও আবেগ অনুভূতি কমে গেছে। এতে আপনার কোনো গুনাহ হচ্ছে কি না? আর হলে এ অবস্থায় আপনার করণীয় কী?
.
সন্মানিত বোন! প্রথমেই আমাদের জানা উচিত যে, এই দুনিয়া জান্নাত নয়, এখানে পূর্ণতা নেই। দুনিয়ায় মানুষ কষ্ট পাবে, দুঃখ ভোগ করবে এটাই দুনিয়ার চিরন্তন সত্য নীতি। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ كَبَدٍ “নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে।” (সূরা বালাদ: ৪) অর্থাৎ দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন কষ্টের মধ্যে পতিত আছে, এমনকি দুনিয়ার প্রতিটি ঘরেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। কখনো তা সামান্য, কখনো জটিল। যে কেউ যদি নিজের সমস্যার সমাধান চান, তবে প্রথমেই তাকে সমস্যার প্রকৃত কারণ এবং সে অনুযায়ী সঠিক সমাধান তাকে খুজে বের করতে হবে। তাই বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রাথমিকভাবে আপনার জন্য করণীয় হলো:
.
স্ত্রী হিসেবে অবশ্যই আপনার স্বামীকে উত্তম পন্থায় উপদেশ দিন, স্বামীকে উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর উচিত ধৈর্য ভালোবাসা ও কোমলতা বজায় রাখা। তার ভুলগুলো স্মরণ করিয়ে দিন, তবে তা যেন কঠোর ভাষায় না হয়, বরং হৃদয়গ্রাহী ও মধুর বাক্যে হয়।গম্ভীর বা রূঢ় আচরণ নয়, বরং স্নেহময় ও সদাচরণ দিয়ে যেন হয়। যদি ভালোবাসা ও নম্রতার সাথে বোঝানোর পরও তিনি ভুল এবং হারাম কাজ থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে প্রজ্ঞার সাথে তার পরিবারের নিকটস্থ কোনো সৎ ও বিচক্ষণ ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে উপদেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।কিংবা যদি সম্ভব হয়,আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে আপনার স্বামীকে একজন বিশুদ্ধ সালাফি মানহাজের আমলধারী আলেমের শরণাপন্ন করান; যিনি আপনার স্বামীকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কিছু নসিহত করবেন। হতে পারে এর মাধ্যমে তিনি নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হবেন এবং সঠিক পথে ফিরে আসবেন। পাশাপাশি একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার প্রতি আপনার স্বামী কর্তৃক স্থাপিত মুসিবতের পেছনে আপনিও কিছুটা দায়ী কিনা? কেননা বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন, যে স্ত্রীর যবান চলে বেশি আর স্বামীর হাত চলে বেশি। যদি এমনটি হয় তাহলে যবান সংযত করার ব্যাপারে নিজে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হোন। স্বামীর রাগ ওঠে এমন কথা ও কাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। অনেক সময় পুরুষ তার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সুতরাং তিনি বিশেষ কাজে আহবান করলে আপনার সম্মতি যেন থাকে। প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে হলেও আপনি এবিষয়ে আগ্রহ বেশি দেখাবেন। দেখবেন, এটাও তার রাগ প্রশমনে খুব দ্রুত কাজ করবে। মনে রাখবেন আপনি হয়তো মুসিবতে আছেন। কিন্তু আপনার চাইতেও বেশি মুসিবতে আছে এ দুনিয়ায় এমন স্ত্রীও আছে। এমন নরপশুও তো আছে যে স্ত্রীকে কেবল মারধোর করে না; বরং যৌতুকের দাবি নিয়ে স্ত্রীর পরিবারের জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। মাতাল হয়ে এসে স্ত্রীর হাত পা ভেঙ্গে দেয়। এদের কথা ভাবুন আপনার দুঃখ কিছুটা হলেও হালকা হবে। আপনার স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন; নিশ্চয় তার মাঝে কিছু ভালো গুণও আছে। যেমন হয়ত তিনি সালাত আদায়কারী, আপনার সন্তানদের প্রতি সহনাভূতিশীল। । কিংবা অন্য কোন গুণও তার মাঝে থাকতে পারে। সেগুলো দেখুন, এতে তার প্রতি আপনার অনাসক্তি কিছুটা হলেও কমবে। কিছুটা হলেও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়া ভালোবাসা পুনরজ্জীবিত হবে। সর্বোপরি একজন স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো দোয়া। বিশেষত সিজদার মধ্যে ও শেষ রাতের একাকী মুহূর্তে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ ভাবে প্রার্থনা করুন যেন তিনি স্বামীকে হেদায়েত দান করেন, অন্তরকে প্রশান্ত করেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহর রহমত ও দয়া ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়, তাই ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া চালিয়ে যেতে হবে।
.
পাশাপাশি আপনার স্বামীর বুঝা উচিত যে, একটি আদর্শ দম্পতির মূল দায়িত্ব হলো একে অপরের প্রতি সদাচারী হওয়া, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, পবিত্র ও মধুর সম্পর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতা।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের চেয়ে উত্তম কিছু নেই।” (ইবনু মাজাহ, হা/১৮৪৭) তবে দুঃখজনকভাবে, সয়তানের চক্রান্তের কারনে আজ অনেক পরিবারে অশান্তি ও কলহ বিরাজ করছে। কেননা শয়তান মানুষের মাঝে শত্রুতা, বিচ্ছিন্নতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে। তার কাছে সবচেয়ে পছন্দের কাজ হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা।সাথে রয়েছে ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতা, অযৌক্তিক আবেগ, নিয়ন্ত্রণহীন রাগ এবং অতিরিক্ত চাহিদা। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সদাচরণ অপরিহার্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,”তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো। যদি তাদের কোনো বিষয়ে তোমাদের অপছন্দ হয়, তাহলে হতে পারে, তোমরা যা অপছন্দ করছো, তাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন” (সূরা আন-নিসা: ১৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, “তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে।” (সহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪) সুতরাং শান্তিপূর্ণ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ধৈর্য এবং ইসলামি আদর্শ মেনে চলা। একজন স্বামী যেমন তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীল, তেমনি একজন স্ত্রীও তার স্বামীর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হবে। এভাবেই দাম্পত্য জীবন হবে প্রশান্তির এক সুন্দরের নীড়।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:لا يجوز للزوج أن يعامل زوجته معاملة سيئة ؛ لأن الله تعالى يقول : ( وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ) النساء/19 ، ويقول صلى الله عليه وسلم : ( وإن لزوجك عليك حقًا ) – رواه البخاري من حديث عبد الله بن عمر بن العاص رضي الله عنهما – ، وإذا أساء عشرتها : فإنه ينبغي لها أن تقابل ذلك بالصبر ، وأن تؤدي ما له عليها من حق ؛ ليكون لها الأجر في ذلك ، ولعل الله أن يهديه ، قال الله تعالى : ( وَلا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ) فصّلت/34 “স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে”(সহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ. তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ কর’।(তিরমিযী, হা/৩৮৯৫) প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা বর্জন করে, একে অপরের অসদাচরণ, অসদ্ব্যবহার ও অন্যায়াচরণে যথাসাধ্য ধৈর্যধারণ করতে হবে। মন্দ আচরণকে ভালো ব্যবহার দ্বারা প্রতিহত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট, ফলে আপনার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত’। (সূরা আল-ফুসসিলাত: ৩৪; আল-মুনতাক্বা ইবনে ফাওযান: খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১১৭)।
.
কাতার ভিত্তিক ফাতওয়া বোর্ড ইসলাম ওয়েবের আলেমগনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: আমি সাত মাস আগে একজন দ্বীনদার তাকওয়াশীল যুবককে বিয়ে করেছি। তিনি আমাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন কিন্তু আমি তাকে একইভাবে ভালোবাসতে পারছি না, তার প্রতি কোনো অনুভূতি আসছে না কেননা বিয়ের আগে অন্য একজনকে পছন্দ করতাম, যা এখনো আমার মনে প্রভাব ফেলছে।আমি এখন তালাকের কথা ভাবছি, কিন্তু নিশ্চিত নই ধৈর্য ধরব নাকি সম্পর্ক থেকে সরে আসব। দয়া করে সঠিক পথের পরামর্শ দিন।

জবাবে তারা বলেন:

فإن كان هذا الشاب صاحب دين وخلق، فنوصيك بالصبر والبقاء في عصمته، فصاحب الدين والخلق إن أحب الزوجة أكرمها وإن أبغضها لم يظلمها، ومن هنا حث الشرع على قبوله زوجا، كما في الحديث الذي أشرت إليه. وعدم الشعور بالحب تجاهه لا يستلزم فراقه، إذ ليس على الحب وحده تبنى البيوت، كما قال عمر ـ رضي الله عنه ـ وأين تجد المرأة رجلا ترتضى جميع خصاله، أو أن يجد الرجل امرأة ترتضى من جميع الجوانب؟ ومن هنا قال النبي صلى الله عليه وسلم ـ كما في الحديث الذي رواه مسلم: لا يفرك مؤمن مؤمنة، إن كره منها خلقا رضي منها آخر.فمهما أمكنك الصبر على زوجك هذا فافعلي، ويمكنك تسلية نفسك بتذكيرها بأنك ربما لو فارقت هذا الشاب وتزوجت من آخر أن تجدي فيه من رقة الدين وسوء الخلق ما قد ينكد عليك حياتك.وعلى كل، فإن لم تصبري على البقاء في عصمة زوجك هذا، وخشيت أن يكون كرهك له سببا في تفريطك في حقه جاز لك أن تطلبي منه الخلع، ليفارقك مقابل عوض تدفعينه إليه، وإذا كان ما تجدينه تجاه زوجك سببه التفكير من ذلك الشخص الأول الذي تقدم لخطبتك، فإنك تدميرن حياتك وتخربين بيتك بيدك، وليس من خلق المؤمنة المصونة أن تكون في عصمة رجل ثم تفكر في غيره، فتفكيرها وتعلقها بذلك الغير يؤدي إلى فساد عظيم وشر مستطير.
“যদি এই যুবক ধর্মপরায়ণ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হন, তাহলে আমরা আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে এবং তার সংসারেই অবিচল থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা যে ব্যক্তি দ্বীন ও সচ্চরিত্রের অধিকারী সে যদি তার স্ত্রীকে ভালোবাসে তবে তাকে সম্মান করবেন, আর যদি তাকে অপছন্দ করেন তবুও তার প্রতি জুলুম করবেন না। এ কারণেই শরীয়ত এমন ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে, যেমন আপনি যে হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, তাতেও এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। স্বামীর প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি না থাকা তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ নয়। কেননা, কেবল ভালোবাসার ভিত্তিতেই ঘর-সংসার টিকে থাকে না। যেমন খলিফা উমর (রাঃ) বলেছেন: “নারী কোথায় এমন পুরুষ খুঁজে পাবে, যার সব গুণে সে সন্তুষ্ট হবে? অথবা একজন পুরুষ কোথায় এমন নারী পাবে, যে সব দিক থেকে তার মনঃপূত হবে?” এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যেমনটি মুসলিম তার সাহিহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন “কোন মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর (স্ত্রীর) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে। কারণ, যদি সে তার কোনো একটি স্বভাব অপছন্দ করে, তবে অন্য কোনো স্বভাব পছন্দ করবে।”(সহীহ মুসলিম হা/১৪৬৯) অতএব, যতটুকু সম্ভব তোমার স্বামীর সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করেন। আপনি নিজেকে এই চিন্তায় সান্ত্বনা দিতে পারেন যে, হয়তো যদি আপনি এই স্বামীকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তবে সেখানে আপনি দ্বীনের ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও খারাপ চরিত্রের এমন কিছু পাবেন যা আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। যাই হোক, যদি আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে ধৈর্য ধরে সংসার করতে না পারেন এবং আশঙ্কা করেন যে, আপনার বিরাগ আপনাকে তার হক নষ্ট করতে বাধ্য করবে, তাহলে তোমার জন্য স্বামীকে ‘খুলা’ (বিচ্ছেদের বিনিময়ে স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের মাধ্যমে তালাক) চাওয়ার অনুমতি রয়েছে। আর যদি আপনার স্বামীর প্রতি বিরাগের কারণ হয় সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে আপনার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, তাহলে আপনি নিজ হাতে নিজের জীবন ধ্বংস করছেন এবং নিজের সংসার ভেঙে দিচ্ছেন। একজন সচ্চরিত্রবান মুমিন নারীর জন্য এটা মোটেও শোভনীয় নয় যে, সে এক পুরুষের সংসারে থেকেও অন্যের কথা চিন্তা করবে। কেননা, এমন চিন্তা ও আসক্তি বড় ধরনের অনিষ্ট ও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”(ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-১৩৮৮৯২)।
.
অতঃপর স্ত্রী হিসেবে আপনার যথার্থ প্রচেষ্টার পরেও যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, স্বামী সঠিক পথে ফিরে না আসে এবং তার প্রতি আপনার মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও সহানুভূতি পুনরায় জাগ্রত না হয়, বরং তার সাথে সংসার করার কারণে আপনার ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রী হিসেবে আপনার জন্য খোলা তালাক চাওয়া বৈধ। স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রী কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হলো, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া। মোটকথা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।পাশাপাশি জেনে রাখা ভালো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক সুদৃঢ় ও মযবুত বন্ধন, যা সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়। এটা ছিন্ন হয় তালাকের মাধ্যমে। যথাযোগ্য শারঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া হারাম। এরূপ করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর নিকটে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম।’ (তিরমিযী হা/১১৮৬-৮৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৩৩) তবে হা শরীয়ত সম্মত কারণে খোলা চাওয়া বৈধ এই মর্মে সুন্নাহ্‌ থেকে এর-দলিল হচ্ছে, সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্‌মাস এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও”(সহিহ বুখারী হা/ ৫২৭৩) হাদিসের ব্যাখায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আবুল ফাদল আহমাদ বিন আলি ইবনু হাজার আল-আসকালানি,(রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭৭৩ হি: মৃত:৮৫২ হি:] বলেন:ولكني أكره الكفر في الإسلام”أي أكره أن أعمل الأعمال التي تنافي حكم الإسلام من بغض الزوج وعصيانه وعدم القيام بحقوقه .. ونحو ذلك
“কিন্তু আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হওয়া পছন্দ করি না” অর্থাৎ আমি সেই সব কাজ করতে পছন্দ করি না, যা ইসলামের বিধানের বিপরীত, যেমন স্বামীকে ঘৃণা করা, তার অবাধ্য হওয়া এবং তার অধিকার পূর্ণভাবে পালন না করা ইত্যাদি।(ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, খণ্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ৪০০) এই ঘটনা থেকে আলেমগণ গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সাথে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিবেন। এর পদ্ধতি হচ্ছে স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তালাক তারই অধিকার যার রয়েছে সহবাস করার অধিকার” অর্থাৎ স্বামীর।(সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২০৮১), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ হা/২০৪১) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: একজন মহিলা এমন এক স্বামীর অধীনে আছেন, যে কিছু বড় ধরনের পাপ ও অপরাধমূলক কাজ করে, যেমন মাদক সেবন ইত্যাদি। অথচ সে মহিলা একজন ধর্মপ্রাণ ও নেককার নারী (আমরা তাকে তেমনই মনে করি, আল্লাহই প্রকৃত বিচারক)। তিনি তার স্বামীকে বহুবার উপদেশ দিয়েছেন এবং চেষ্টা করেছেন যেন সে এসব অপরাধ পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় তার করণীয় কী? তিনি কি তার পরিবারের কাছে চলে যাবেন, নাকি ধৈর্য ধারণ করবেন, যাতে হয়তো আল্লাহ তার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন? তদ্ব্যতীত, স্বামী তার সন্তানদের নামাজ পড়তেও বাধা দেয়।”
.
শাইখ উত্তরে বলেন:
هذا الرجل الذي يفعل المحرمات هل يصلي أم لا يصلي
“এই ব্যক্তি কি সালাত আদায় করে, নাকি সে সালাতও ছেড়ে দিয়েছে?”

প্রশ্নকারী বললেন:يصلي بتهاون ، أحياناً في البيت ، وأحياناً في العمل ، وأحياناً يتأخر “সে অলসতার কারণে সালাতের ব্যাপারে গাফিলতি করে। কখনো বাসায় পড়ে, কখনো কর্মস্থলে পড়ে, আবার কখনো দেরি করে।”

শাইখ উত্তরে বলেন:

أرى أنها إذا نصحته ولم يستفد : فلها الحق في طلب الفسخ ، ويفسخ النكاح ، لكن على كل حال مثل هذه الأمور قد يكون هناك أشياء ما تتمكن معها من الفسخ ؛ لأنها معها أولاد ، يحصل مشاكل في الفسخ ، فإذا لم تصل معصيته إلى حد الكفر : فلا حرج عليها أن تبقى معه ؛ خوفاً من المفسدة ، أما إذا وصلت إلى حد الكفر مثل كونه لا يصلي : فهذا لا تبقى معه طرفة عين

“আমি মনে করি, যদি স্ত্রী তাকে উপদেশ দেওয়ার পরও কোনো উপকার না পায়, তাহলে তার জন্য বৈধ হবে যে, সে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করবে এবং এই বিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে এমন কিছু বিষয় থাকতে পারে, যা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিচ্ছেদ করতে বাধা দিতে পারে যেমন তার সন্তানদের বিষয়টি। কারণ বিচ্ছেদ করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি স্বামীর এই পাপ কাজগুলো এমন পর্যায়ে না পৌঁছে যে, তা কুফরির পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে স্ত্রী চাইলে তার সাথে থাকতে পারে, যদি সংসার চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। কিন্তু যদি স্বামীর অবস্থা এমন হয় যে, সে সালাত আদায় করে না, তাহলে স্ত্রী তার সাথে এক মুহূর্তও থাকা বৈধ নয়।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, পর্ব: ১৩; প্রশ্ন নং-১৮) মহান আল্লাহ আমাদের শয়তানের যাবতীয় কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহই মহা জ্ঞানী।
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া কি আশআরীরা দ্বীনের রক্ষক এমন কথা বলেছেন

 প্রশ্ন: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া কি আশ’আরীদেরকে ‘আনসারু উসূলিদ্দীন’ (أَنصَارُ أُصُولِ الدِّينِ) অর্থাৎ আশʿআরীরা দ্বীনের (মৌলিক বিষয়) এর রক্ষক।” এমন কথা বলেছেন?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর দুঃখজনক হলেও সত্যি, সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া বিভিন্ন ফোরাম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কথা প্রচারিত হয় যে, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] আশʿআরীদের সম্পর্কে বলেছেন:وَأَمَّا لَعْنُ الْعُلَمَاءِ لِأَئِمَّةِ الْأَشْعَرِيَّةِ فَمَنْ لَعَنَهُمْ عُزِّرَ . وَعَادَتْ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ فَمَنْ لَعَنَ مَنْ لَيْسَ أَهْلًا لِلَّعْنَةِ وَقَعَتْ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ وَالْعُلَمَاءُ أَنْصَارُ فُرُوعِ الدِّينِ وَالْأَشْعَرِيَّةُ أَنْصَارُ أُصُولِ الدِّينِ“আর যারা আশʿআরী ইমামদের অভিশাপ দেয়, তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। অভিশাপ যার প্রাপ্য নয় তাকে অভিশাপ দিলে তা অভিশাপ দাতার উপরই ফিরে আসে। আলেমরা দ্বীনের فروع (শাখা-প্রশাখা) এর রক্ষক, আর আশʿআরীরা দ্বীনের اصول (মৌলিক বিষয়) এর রক্ষক।”(মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৬) এটি ফাতওয়াটি প্রচার করে তারা দাবি করে যে শাইখ ইবনে তাইমিয়ার উক্তি!! কিন্তু এটি তাদের ভুল ধারণা কেননা এটি শাইখুল ইসলামের উক্তি নয় বরং এটি একজন আশআরী আলেমের উক্তি।

আমরা প্রতিটি পাঠককে অনুরোধ করছি, ইবনে তাইমিয়ার “মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া” (৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৬)-এ উদ্ধৃত অংশটি নিজে পর্যালোচনা করার জন্য। ওই বক্তব্যের ঠিক আগে “قال” (তিনি বলেছেন) শব্দটি লক্ষ্য করুন, যা স্পষ্ট করে দেয় যে এটি ইবনে তাইমিয়ার নিজের কথা নয়, বরং তিনি অন্য একজন (আবু মুহাম্মাদ নামক এক ফকীহ) এর বক্তব্য শাইখুল ইসলাম উদ্ধৃত করছেন। ১৫ নং পৃষ্ঠার শেষ লাইনের শুরুতে ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন: وكذلك رأيت في فتاوى الفقيه أبي محمد فتوى طويلة.. قال فيها:..” إلى أن يقول: [قال: وأما لعن العلماء الأئمة الأشعرية فمن لعنهم عزر وعادت اللعنة عليه… والعلماء أنصار فروع الدين والأشعرية أنصار أصول الدين.” قال: وأما دخولهم النار..]]الخ’“আমি ফকীহ আবু মুহাম্মাদের ফাতাওয়ায় একটি দীর্ঘ রায় দেখেছি… যেখানে তিনি বলেছেন: […] “আর যদি কোনো আলেম আশ‘আরী ইমামদের لعن (অভিশাপ) দেয়, তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কারণ, যারা অভিশাপের অযোগ্য তাদের অভিশাপ করলে তা অভিশাপকারীর উপরই ফিরে আসে। আলেমরা দ্বীনের فروع (শাখা-প্রশাখা)-এর রক্ষক, আর আশ‘আরীরা দ্বীনের اصول (মৌলিক বিষয়)-এর রক্ষক।” তিনি আরও বলেন: ‘আশ‘আরীদের জাহান্নামে যাওয়া সম্পর্কে…’ ইত্যাদি।”
.
কিন্তু পরবর্তীতে (পৃষ্ঠা: ১৫৮–১৫৯) ইবনে তাইমিয়া সরাসরি “আবু মুহাম্মাদ ও তার অনুসারীদের সমালোচনা” করে লিখেন:وأيضاً فيقال لهؤلاء الجهمية الكلابية كصاحب هذا الكلام أبي محمد وأمثاله كيف تدعون طريقة السلف وغاية ما عند السلف أن يكونوا متابعين لرسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟” إلى أن يقول: ”وأبو محمد وأمثاله قد سلكوا مسلك الملاحدة الذين يقولون إن الرسول صلى الله عليه وسلم لم يبين الحق في باب التوحيد’“এই জাহমী-কুল্লাবীদের জিজ্ঞাসা করা উচিত: তোমরা কিভাবে সালাফদের পথ দাবি করো? সালাফদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ। আর আবু মুহাম্মাদ ও তার মতো লোকেরা সেই মুলহিদদের (নাস্তিকদের) পথে চলেছে, যারা বলে, রাসূল (ﷺ) তাওহীদের বিষয়ে সত্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেননি।”(মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৫৮-১৫৯)
.
একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে—
(ক) আলোচিত উক্তিটি ইবনে তায়মিয়ার নয়, বরং একজন আশ’আরী তা বলেছেন, যিনি নিজের মতবাদকেই প্রশংসা করেছেন।

(খ) শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া এই ব্যক্তিকে এবং তার মতবাদকে জাহমি-কুল্লাবী মতাদর্শ ও নাস্তিকদের পথ অনুসরণকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন, এবং তাদের ‘সালাফদের পথের অনুসারী’ হওয়ার দাবিকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, যারা এই উক্তিকে ইবনে তায়মিয়ার প্রশংসা হিসেবে প্রচার করেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে প্রতারণামূলক উপায়ে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ) এর পক্ষ থেকে আশ’আরীদের ব্যাপারে কখনোই কোনো নিরঙ্কুশ প্রশংসা উচ্চারিত হয়নি। তার সবোর্চ্চ ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায় মাজমু‘উল ফাতাওয়ার ১২তম খণ্ডে, যেখানে তিনি বলেন, আশ’আরীরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা নিকটবর্তী, এবং তাদের মতবাদ ওহি ও দর্শনের সংমিশ্রণ। তিনি যেসব আশ’আরীদের প্রশংসা করেছেন, তারা মূলত হাদীসচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। আশ’আরী হওয়ার কারণে নয়, বরং সুন্নাহ্‌র অনুসরণে নিয়োজিত থাকার কারণে। তাও আবার, যেসব বিষয়ে তারা তাদের কালামি মতবাদের অনুসরণ করেছে, সেসব ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে এসব হালকা প্রশংসা তাদেরকে বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট ও ভুলপথের অনুসারী বলার জায়গাগুলোর তুলনায় অনেক কম। কেননা, তিনি বহু স্থানে স্পষ্ট ভাষায় আশ’আরীদের বিদআতী, বিভ্রান্তিকর এবং বিপথগামী মতবাদের অনুসারী বলেছেন। এমনকি এত বেশি জায়গায় যে তা গণনা করাও কঠিন।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি] পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন, একজন ব্যক্তি কখন আশআরীর অনুসারী হয়েও আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হতে পারেন। তিনি বলেন:أما من قال منهم بكتاب الإبانة الذي صنفه الأشعري في آخر عمره ولم يظهر مقالة تناقض ذلك؛ فهذا يعَدُّ من أهل السنة، لكن مجرد الانتساب إلى الأشعري ؛ لا سيما وأنه بذلك يوهم حسناً لكل من انتسب هذه النسبة، وينفتح بذلك أبواب شر’“যারা আশআরীর জীবনের শেষ দিকে রচিত ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের বক্তব্যকে গ্রহণ করে এবং এর পরিপন্থী কোনো মত প্রকাশ করেনি, তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ধরা যেতে পারে। তবে কেবলমাত্র আশআরীর প্রতি নিজেকে সম্পৃক্ত করা, বিশেষ করে যখন এতে মনে হয় যেন আশআরী নামে পরিচিত প্রত্যেকেই সঠিক পথের অনুসারী,এটি ভুল ধারণা তৈরি করে এবং এতে অনেক ফিতনার দরজা খুলে যায়।”(মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩৬০)অর্থাৎ, যারা বাস্তবে সালাফদের আক্বীদার ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের জন্যও আশআরী নামে নিজেদের পরিচয় দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি একটি বিদআতি পরিচয় এবং নিন্দনীয় একটি বিষয়ে সম্পৃক্ততা।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ নাসরুল্লাহ আল মাদানী হাফি.।

প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত এবং প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখার বিধান

 প্রশ্ন: প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত কি? সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা এবং দীর্ঘ সময় তা থেকে দূরে থাকার বিধান কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর কুরআন সুন্নার আলোকে যা প্রমানিত তা হল প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যধিক।কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করতো। আর যদি জানতো সালাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সালাতে অন্যের আগে পৌঁছাবার চেষ্টা করতো। যদি জানতো ‘ইশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে কি আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত হবার চেষ্টা করতো।”(সহীহ বুখারী হা/৬১৫; মুসলিম হা/৪৩৭; মিশকাত হা/৬২৮) রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, সালাতের প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মতো। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফযীলত জানতে তাহ’লে অবশ্যই দৌঁড়ে যেতে।(আবূদাঊদ হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬) তিনি (ﷺ) আরো বলেন, প্রথম কাতারের (মুসল্লীদের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’(ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)। তিনি আরো বলেন,পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার।”(সহীহ মুসলিম হা/৪৪০; মিশকাত হা/১০৯২) এমনকি মসজিদে যদি শুধুমাত্র একটি কাতার থাকে তাহলে সেটিই প্রথম কাতার হিসাবে গণ্য হবে এবং এর যাবতীয় ফযীলত অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা প্রথম কাতার বলতে ইমামের পিছনের কাতারকেই বুঝানো হয়েছে।”(ইবনু হাজার,ফাৎহুল বারী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২০৮)।
.
▪️সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা।
.
একজন ব্যক্তি যদি মসজিদে অবস্থান করেন, তবে তিনি কাতারে নির্দিষ্ট স্থানে নিজের জন্য একটি জায়নামাজ বা অনুরূপ কিছু রাখতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি মসজিদের পেছনে বিশ্রাম নিতে পারেন, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, কিংবা অযুর প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে মসজিদ থেকে বের হতে পারেন। তবে শর্ত হলো, তিনি ইকামতের পূর্বেই নিজের স্থানে ফিরে আসবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তার রাখা স্থানটির অধিক হকদার থাকবেন যদিও তা প্রথম কাতারে থাকে। কিন্তু যদি কেউ জায়নামাজ বিছিয়ে নির্দিষ্ট স্থান সংরক্ষণ করে রেখে বিনা প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য হলেও বাইরে চলে যান এবং ইকামত হওয়ার নিদিষ্ট সময় পূর্বে উপস্থিত না থাকেন, তবে সেই স্থানে তার আর কোনো অধিকার থাকবে না। সে ক্ষেত্রে তার রাখা জায়নামাজ সরিয়ে ফেলা হবে এবং সেখানে উপস্থিত অন্য কেউ দাঁড়াবে। কারণ যথাসময়ে ফিরে আসার বিষয়ে অবহেলা বা দেরি করা হলে সংরক্ষিত স্থানের অধিকার বাতিল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দলিল হলো: আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের কেউ তার বসার স্থান থেকে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে-ই উক্ত স্থানের অধিক হকদার।(সহীহ মুসলিম হা/ ২১৭৯; আবূ দাউদ ৪৮৫৩; মুসনাদে আহমাদ হা/ ৭৫১৪, ৭৭৫১, ৮৩০৪, ৮৮১০, ১০৪৪২, ১১৫৫৯)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,إٍذا جلس في مكان , ثم بدت له حاجة , أو احتاج إلى الوضوء , فله الخروج . . . . فإذا قام من مجلسه , ثم رجع إليه فهو أحق به , لقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( مَنْ قَامَ مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ ) “যদি কেউ মসজিদের কোনো স্থানে বসেন, এরপর তার কোনো প্রয়োজনে বা ওযু করতে বের হতে হয়, তাহলে সে বের হতে পারে। পরে যদি সে পুনরায় ফিরে এসে আগের স্থানে বসতে চায়, তবে তিনি সেই (যেখানে বসে ছিলেন) স্থানের অধিক হকদার। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:”যে ব্যক্তি তার আসন থেকে উঠে পুনরায় সেখানে ফিরে আসে, সে হল বেশি হকদার।(ইবনু কুদামা আল মুগনী: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০১) ।
.
তিনি (ইবনু কুদামা) মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা গ্রন্থে বলেছেন:والعائد قريبا من قيامه لعارضٍ لَحِقَه كتطهرٍ أحق بمكانه الذي كان سبق إليه من كل أحد . فلو جلس فيه أحد , فله إقامته . . .”যে ব্যক্তি কোনো কারণবশত সামান্য সময়ের জন্য উঠে গিয়েছিল, যেমন পবিত্রতা অর্জনের জন্য, সে তার আগের জায়গায় ফিরে এসে বসার বেশি হকদার, অন্য যে কারও তুলনায়। যদি তার অনুপস্থিতিতে কেউ সেই জায়গায় বসে যায়, তাহলে সে (প্রথম ব্যক্তি) তাকে উঠিয়ে সেখানে বসতে পারে…(মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা খন্ড:১; পৃষ্ঠা: ৭৮৬)।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

: ليس لأحد أن يفرش شيئا ويختص به مع غيبته، ويمنع به غيره، هذا غصب لتلك البعقة، ومنع للمسلمين مما أمر الله تعالى به من الصلاة، والسنة أن يتقدم الرجل بنفسه، وأما من يتقدم بسجادة فهو ظالم إن لم ينته عنه، ويجب رفع تلك السجاجيد، ويمكن الناس من مكانها، هذا مع أن أصل الفرش بدعة، لا سيما في مسجد النبي صلى الله عليه وسلم، ولما قدم عبد الرحمن بن مهدي من العراق وفرش في المسجد أمر مالك بن أنس بحبسه تعزيرا له حتى روجع في ذلك، فذكر أن فعل هذا في مثل هذا المسجد بدعة يؤدب صاحبها. وعلى الناس الإنكار على من يفعل ذلك والمنع منه، لا سيما ولاة الأمر الذين لهم ولاية على المسجد، فإنه يتعين عليهم رفع هذه السجاجيد، ولو عوقب أصحابه بالصدقة بها لكان هذا مما يسوغ في الاجتهاد

“কোনো ব্যক্তির এ অধিকার নেই যে, সে নিজের অনুপস্থিতিতে কোনো স্থান জায়নামাজ বা অন্যকিছু দিয়ে দখল করে রাখবে এবং অন্যদেরকে তা ব্যবহারে বাধা দেবে। এটি একধরণের ঐ স্থান দখল করে রাখা এবং মুসল্লিদেরকে আল্লাহর নির্দেশিত সালাত থেকে বিরত রাখার শামিল। সুন্নাহর নির্দেশ হলো, মানুষ স্বয়ং আগে এসে নিজের জায়গা দখল করবে। কিন্তু যে আগে থেকে জায়নামাজ বিছিয়ে রাখে, সে স্পষ্ট জালিম যদি সে এ কাজ থেকে বিরত না থাকে। এসব জায়নামাজ অপসারণ করা এবং সাধারণ মানুষকে স্বাধীনভাবে সে স্থান ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, মসজিদে জায়নামাজ বিছানোই মূলত বিদআত, বিশেষত মাসজিদে নববীতে। ইতিহাসে দেখা যায়, ইরাক থেকে আগত আবদুর রহমান ইবনে মাহদী যখন মাসজিদে জায়নামাজ বিছান, ইমাম মালিক ইবনে আনাস তাকে শাস্তিস্বরূপ আটকের নির্দেশ দেন, যতক্ষণ না তাকে বিষয়টি পুনরায় চিন্তা করার জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে আলোচনায় তিনি স্পষ্ট বলেন, “এমন পবিত্র মাসজিদে এ ধরনের কাজ বিদআত, এবং এরকম ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া উচিত।”এক্ষেত্রে সমাজের দায়িত্ব হলো, এমন অপকর্মের প্রতিবাদ করা এবং তা বন্ধ করার চেষ্টা করা। বিশেষত যারা মাসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।তাদের জন্য আবশ্যক হলো এসব জায়নামাজ সরিয়ে দেওয়া। যদি অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে এসব জায়নামাজ সদকা করে দেওয়া হয়, তবে এটি গ্রহণযোগ্য ইজতেহাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।(অর্থাৎ তা শরিয়তসম্মত সমাধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে)”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা:১৯৩)
..
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] মসজিদে একটি স্থান সংরক্ষিত করার পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন:والصحيح في هذه المسألة أن الحجز والخروج من المسجد لا يجوز ، وأن للإنسان أن يرفع المصلَّى المفروش ؛ لأن القاعدة : (ما كان وضعه بغير حق فرفعه حق) ، لكن لو خيفت المفسدة برفعه من عداوة أو بغضاء ، أو ما أشبه ذلك ، فلا يُرفع ، لأن درأ المفاسد أولى من جلب المصالح ، وإذا علم الله من نيتك أنه لولا هذا المصلى المفروش لكنت في مكانه ، فإن الله قد يثيبك ثواب المتقدمين ؛ لأنك إنما تركت هذا المكان المتقدم من أجل العذر “এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে সঠিক কথা হল: মসজিদের কোনো জায়গা দখল করা অত:পর মসজিদ ত্যাগ করা জায়েজ নয়। আর যে ব্যক্তি কোনো অধিকার ছাড়া স্থান সংরক্ষণ করে,তার সংরক্ষিত মুসল্লা স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া বৈধ; কারণ মূলনীতি হলো: “যা অন্যায়ভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তা অপসারণ করাই ন্যায্য”। তবে যদি এটি সরিয়ে নেওয়ার ফলে শত্রুতা, বিদ্বেষ বা অনুরূপ কোনো ক্ষতিকর পরিণতি বা ফিতনার আশঙ্কা থাকে,তাহলে তা সরানো উচিত নয়, কারণ মন্দ প্রতিরোধ করাই কল্যাণ অর্জনের চেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তোমার নিয়ত সম্পর্কে অবগত। যদি তোমার অন্তরে এই সংকল্প থাকে যে, যদি সুযোগ থাকত, তুমি সামনের কাতারেই থাকতে, তবে আল্লাহ তোমাকে সামনের কাতারে বসা ব্যক্তিদের মতোই পুরস্কৃত করবেন। কারণ, তুমি কেবল একটি বৈধ কারণেই সেই স্থানটি ছেড়েছো।..(ইবনু উসাইমীন; আশ-শারহুল মুমতি’,খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩৫ থেকে সংক্ষেপিত) ।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে, তাই সকল মুসলিমদের উচিত আগে ভাগে মসজিদের চলে আসা এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট থাকা। এখন প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষণ করে কোন ব্যক্তি যদি মসজিদের বারিন্দায় অবস্থান করে অথবা জরুরি প্রয়োজনে যেমন: প্রস্রাব-পায়খানা কিংবা ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয় অতঃপর ইকামাতের পূর্বে যথা সময়ে জামাআতে হাজির হয় তাহলে সংরক্ষিত ওই স্থানের জন্য এই ব্যক্তি অধিক হকদার সুতরাং তার সংরক্ষিত জায়গা থেকে তার মুসল্লা সরানো উচিত হবে না। কিন্তু একজন ব্যাক্তি যদি প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান দখল করে বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় অথবা নিজ বাড়িতে চলে যায় অতঃপর পরবর্তী ওয়াক্তের জামআত শুরু হওয়ার সময় পুনরায় আসে তাহলে এটি জায়েজ নয় এবং এক্ষেত্রে সে তার সংরক্ষিত জায়গার জন্য উপযুক্ত নয় বরং সেখানে উপস্থিত যারা রয়েছেন তারা তার মুসল্লা সরিয়ে উপস্থিত কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ নাসরুল্লাহ আল মাদানী (হাফি.)।

শাওয়াল মাসের সিয়াম পালনের হুকুম ও ফজিলত এবং শাওয়াল মাসের ৬টি সিয়াম সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আমাদের জানা উচিত

 প্রশ্ন: শাওয়াল মাসের সিয়াম পালনের হুকুম এবং ফজিলত কি? শাওয়াল মাসের ৬টি সিয়াম সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আমাদের জানা উচিত।

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তরের সারাংশ: রমাদান মাসের রোজগুলো সম্পন্ন করার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম রাখলে, পুরা এক বছর সিয়াম রাখার ফজিলত পাওয়া যাবে। বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

বিস্তারিত উত্তর: প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব। এটি ফরজ নয়, তাই কেউ না রাখলে গুনাহ হবে না, তবে যে ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে, তা থেকে বঞ্চিত হবে। শাওয়াল মাসের এই ছয়টি রোজার ফজিলত অসীম। এ সিয়ামগুলো পালনে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভ হয়, গুনাহ মোচন হয় এবং তাকওয়া অর্জনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরকালীন সঞ্চয় বৃদ্ধি করা। যে ব্যক্তি রমাদানের সবগুলো সিয়াম পালনের পর এই ৬ টি সিয়াম পালন করবে সে যেন গোটা বছর সিয়াম রাখল। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে; আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের সিয়াম রাখল, এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করল, সে যেন পুরো বছর সিয়াম রাখল।”(সহিহ মুসলিম হা/১১৬৪; সুনানে আবু দাউদ হা/২৪৩৩) এ হাদিসটিকে নবী (ﷺ) অন্য হাদিসের বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন সিয়াম রাখবে সে যেন গোটা বছর সিয়াম রাখল, যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশগুণ সওয়াব পাবে।” অন্য বর্ণনাতে আছে- “আল্লাহ এক নেকিকে দশগুণ করেন। সুতরাং এক মাসের সিয়াম দশ মাসের সিয়ামের সমান। বাকী ছয়দিন সিয়াম রাখলে এক বছর হয়ে গেল।”[সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ]হাদিসটি সহিহ আত-তারগীব ও তারহীব (১/৪২১) গ্রন্থেও রয়েছে। সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটি এসেছে এ ভাষায়- “রমজান মাসের সিয়াম হচ্ছে দশ মাসের সমান। আর ছয়দিনের সিয়াম হচ্ছে দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের সিয়াম হয়ে গেল।”
.
হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন সিয়াম রাখা একবছর ফরজ সিয়াম পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল সিয়ামের ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়। এ ছাড়া শাওয়ালের ছয়টি সিয়াম রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণে রমজানের সিয়ামের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া। কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন: আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন- অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার সালাত দেখো; সেকি সালাত পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি সালাতে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ সালাত লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখো আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা? যদি নফল সালাত থাকে তখন বলেন: নফল সালাত দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ করো। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ হা/৮৬৪, তিরমিযি হা/ ৪১৩)
.
▪️দ্বিতীয়ত: শাওয়ালের ছয়টি সিয়াম শাওয়াল মাসের শুরুতে কিংবা শেষে ধারাবাহিকভাবে যেমন রাখা যাবে তেমনি ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যাবে, শাওয়ালের সিয়াম গুলো সাপ্তাহিক সোমবার ও বৃহস্পতিবার কিংবা প্রতি মাসের তথা আইয়ামে বীজের তিনটি সিয়াম, একই নিয়তে রাখা জায়েজ, এভাবে সিয়াম রাখলে সিয়ামকারীর জন্য ছয় সিয়ামের সওয়াব এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবারে সিয়াম রাখার সওয়াব এবং আইয়ামে বীজের সিয়াম রাখার সওয়াবও লেখা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যাদের রমজানের সিয়ের কাযা রয়েছে কিংবা মানতের সিয়াম রয়েছে, তাদের জন্য একই নিয়তে উভয় সিয়াম রাখা জায়েজ নয়, কারন নফল সিয়ামের নিয়ত ও ফরয সিয়ামের নিয়ত একত্রে করা জায়েয নেই। তাছাড়া রমজানের সিয়ামের সাথে অন্য নফল সিয়ামের কোন সম্পর্ক নেই। ফরজ সিয়ামের জন্য স্বতন্ত্র বিশেষ নিয়তের প্রয়োজন রয়েছে, যেমনিভাবে শাওয়ালের ছয় সিয়ামের জন্যেও নিয়তের প্রয়োজন। এই মর্মে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কয়েকটি ফাতওয়া মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন।
.
(১).একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, ধরুন কারো কারো রমজানের বেশকিছু সিয়ামের কাযা রয়েছে কিন্তু তিনি শাওয়াল মাসের শুরুতে সেগুলো আদায় করেননি। অতঃপর মাসের শেষে যে কয়দিন বাকী আছে সেদিনগুলো যদি রমজানের কাযা সিয়াম ও শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখার জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে কি কাযা সিয়ামের আগে ছয় সিয়াম রাখা জায়েয হবে?

উত্তর: সঠিক মতানুযায়ী শাওয়ালের ছয়টি সিয়াম রমজানের সিয়াম পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ “যে ব্যক্তি রমজান মাসে সিয়াম রাখল অতঃপর এ সিয়ামের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম রাখল সে যেন গোটা বছর সিয়াম রাখল।”(সহিহ মুসলিম হা/১১৬৪) হাদিসে উল্লেখিত ثُمَّ শব্দটি حرف عطف যা الترتيب (বিন্যাস) ও التعقيب (ক্রমধারা) অর্থে ব্যবহৃত হয়। এদিক থেকে হাদিসটি প্রমাণ করছে যে, আগে রমজানের সিয়াম পূর্ণ করতে হবে। সেটা সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় হিসেবে হোক অথবা (শাওয়াল মাসে) কাযা পালন হিসেবে হোক। অর্থাৎ রমজানের সিয়াম পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখতে হবে। তাহলে হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাযা সিয়াম বাকী আছে সেতো পূর্ণ রমজান মাস সিয়াম রাখেনি। রমজান মাসের কিছু দিন সিয়াম রেখেছে। তবে কারো যদি এমন কোন ওজর থাকে যার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা সিয়াম রাখতে গিয়ে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখতে পারেননি। যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত (প্রসবোত্তর স্রাবগ্রস্ত) হন এবং গোটা শাওয়াল মাস তিনি রমজানের সিয়াম কাযা করেন তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখতে পারবেন। কারণ এ ব্যক্তির ওজর শরিয়তে গ্রহণযোগ্য। অন্য যাদের এমন কোন ওজর আছে তারা সকলে রমজানের সিয়াম কাযা করার পর শাওয়ালের ছয় সিয়াম জিলক্বদ মাসে কাযা পালন করতে পারবেন। কিন্তু কোন ওজর ছাড়া কেউ যদি ছয় সিয়াম না রাখে এবং শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি এই সওয়াব পাবেন না। শাইখ উসাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কোনো নারীর উপর যদি রমজানের সিয়ামের ঋণ থেকে যায় তাহলে তার জন্য কি রমজানের ঋণের আগে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা জায়েয হবে; নাকি শাওয়ালের ছয় সিয়ামের আগে রমজানের ঋণের সিয়াম রাখতে হবে? জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারীর উপর রমজানের কাযা সিয়াম থাকে তাহলে তিনি কাযা সিয়াম পালনের আগে ছয় সিয়াম রাখবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ “যে ব্যক্তি রমজান মাসে সিয়াম রাখল এবং এ সিয়ামের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম রাখল সে যেন গোটা বছর সিয়াম রাখল।”(সহিহ মুসলিম হা/১১৬৪)

যার উপর কাযা রয়ে গেছে সেতো রমজানের সিয়াম পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাযা আদায়ের আগে এই সিয়াম পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কাযা সিয়াম পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে(যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে একদিনও সিয়াম রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাযা সিয়াম রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাযা সিয়াম শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে ছয়টি সিয়াম রাখবেন। এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় সিয়াম রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে সিয়াম রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন।”(ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ২০) এর সাথে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ কোন ওজরের কারণে রমজানের সিয়াম ভেঙ্গেছে সেটা কাযা করা তার দায়িত্বে ফরজ। রমজানের সিয়াম ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালন প্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
.
(২).শাওয়ালের ছয় সিয়াম কি লাগাতরভাবে রাখা শর্ত? নাকি আমি আলাদা আলাদাভাবে রাখতে পারি?
.
শাওয়ালের সিয়ামগুলো লাগাতরভাবে রাখা শর্ত নয়। তাই এ সিয়ামগুলো কেউ আলাদা আলাদাভাবে রাখুক কিংবা লাগাতরভাবে রাখুক এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যায় তত ভাল। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা ভাল কাজে অগ্রণী হও।” আল্লাহ্‌ আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত ছুটে আসো।” মুসা আলাইহিস সালাম বলেন: “আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।”[সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৮৪] তাছাড়া দেরী করলে নানা বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। এটি শায়েফি মাযহাবের আলেমগণ ও হাম্বলি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত। কিন্তু, অবিলম্বে আদায় না করে মাসের মাঝখানে কিংবা শেষে আদায় করলেও কোন অসুবিধা নেই।

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,

“قَالَ أَصْحَابُنَا: يُسْتَحَبُّ صَوْمُ سِتَّةِ أَيَّامٍ مِنْ شَوَّالٍ، لِهَذَا الْحَدِيثِ قَالُوا: وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَصُومَهَا مُتَتَابِعَةً فِي أَوَّلِ شَوَّالٍ فَإِنْ فَرَّقَهَا أَوْ أَخَّرَهَا عَنْ شَوَّالٍ جَازَ. وَكَانَ فَاعِلا لأَصْلِ هَذِهِ السُّنَّةِ، لِعُمُومِ الْحَدِيثِ وَإِطْلاقِهِ. وَهَذَا لا خِلافَ فِيهِ عِنْدَنَا وَبِهِ قَالَ أَحْمَدُ وَدَاوُد.”

“আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এ হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে শাওয়াল মাসের ছয় সিয়াম রাখা মুস্তাহাব। শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে লাগাতরভাবে সিয়ামগুলো রাখা মুস্তাহাব। আর যদি আলাদাভাবে রাখে কিংবা শাওয়াল মাসের পরে রাখে তবুও জায়েয হবে এবং এ সুন্নত পালনকারী হিসেবে গণ্য হবে এ হাদিসের ব্যাপকতার কারণে। এ বিষয়ে আমাদের আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। ইমাম আহমাদ ও দাউদও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।”[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব; ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭৮৫৮)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি করা হয়েছিল; প্রশ্ন: ছয় সিয়াম কি রমযানের পর ঈদের দিনের অব্যবহিত পরেই শুরু করা আবশ্যক; নাকি ঈদের কয়েকদিন পর শাওয়াল মাসে লাগাতরভাবে রাখাও জায়েয; নাকি জায়েয নয়?

জবাবে তারা বলেন,

لا يلزمه أن يصومها بعد عيد الفطر مباشرة، بل يجوز أن يبدأ صومها بعد العيد بيوم أو أيام، وأن يصومها متتالية أو متفرقة في شهر شوال حسب ما يتيسر له، والأمر في ذلك واسع، وليست فريضة بل هي سنة.

“ঈদের দিনের অব্যবহিত পরেই ছয় সিয়াম রাখা আবশ্যকীয় নয়। বরং ঈদের একদিন পর কিংবা কয়েক দিন পর শুরু করাও জায়েয। লাগাতর ভাবে রাখা বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখা; যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে রাখা জায়েয। এ বিষয়টি প্রশস্ত। এটি ফরয রোযা নয়; বরং সুন্নত সিয়াম”।(ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়িমা খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৩৯১)।
.
(৩).শাওয়ালের ছয় সিয়াম কি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রাখা যেতে পারে?
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে শাওয়ালের ছয় সিয়াম কি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রাখা যেতে পারে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

إذا اتفق أن يكون صيام هذه الأيام الستة في يوم الاثنين أو الخميس فإنه يحصل على أجر الاثنين بنية أجر الأيام الستة، وبنية أجر يوم الاثنين أو الخميس ، لقوله صلى الله عليه وسلم: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى).”

“যদি এই ছয়দিনের সিয়াম সোমবারে বা বৃহস্পতিবারে পড়ে তাহলে তিনি দুটো সওয়াবই পেতে পারেন; যদি তিনি ছয় সিয়ামের নিয়ত করেন এবং সোমবার বা বৃহস্পতিবারে সিয়াম রাখারও নিয়ত করেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কর্মসমূহ নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যা নিয়ত করেন সেটাই তার প্রাপ্য”।(উসাইমীন ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫৪)
.
(৪).শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়ামের মধ্যে তিনটি সিয়াম কি শাওয়াল মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ এই তিনদিন আইয়ামে বীজের নিয়তে রাখা যাবে?
.
যে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয় সিয়ামের মধ্যে তিনটি সিয়াম আইয়ামে বীযের দিনগুলোর সিয়ামের সাথে একই নিয়তে রাখবে সে কি ফযিলত পাবে? এমন প্রশ্ন বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

بأنه يُرجى له ذلك لأنّه يصدق أنه صام الستّ من شوال كما يصدق أنه صام الأيام البيض وفضل الله واسع.

“আশা করি তিনি সে ফযিলত পাবেন। কেননা তার ক্ষেত্রে এ কথা বলা সত্য যে, তিনি ছয় সিয়াম রেখেছেন এবং এ কথা বলাও সত্য যে, তিনি বীযের দিনগুলোর সিয়াম রেখেছেন। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রশস্ত”।
.
একই মাসয়ালার জবাবে শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন আমাকে জবাব দিয়েছেন:

نعم ، إذا صام ست أيام من شوال سقطت عنه البيض، سواء صامها عند البيض أو قبل أو بعد لأنه يصدق عليه أنه صام ثلاثة أيام من الشهر ، وقالت عائشة رضي الله عنها: كان النبي صلى الله عليه وسلم يصوم ثلاثة أيام من كل شهر لا يبالي أصامها من أول الشهر أو وسطه أو آخره، و هي من جنس سقوط تحية المسجد بالراتبة فلو دخل المسجد وصلى السنة الراتبة سقطت عنه تحية المسجد …”

হ্যাঁ। যদি কেউ শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখে তার উপর বীযের সিয়ামগুলো বাদ হয়ে যাবে; হোক না তিনি বীযের দিনগুলোতে কিংবা আগে কিংবা পরে সিয়ামগুলো রাখুন না কেন। যেহেতু তার ক্ষেত্রে এ কথা বলা সত্য হয় যে, তিনি প্রত্যেক মাসের তিনদিন সিয়াম রেখেছেন। তিনি কি মাসের প্রথমে সিয়ামগুলো রাখলেন; নাকি মাঝে রাখলেন; নাকি শেষে রাখলেন সেটা ধর্তব্য নয়। সুন্নত সালাত আদায় করার মাধ্যমে যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত পড়া বাদ হয়ে যায় এটি সেই শ্রেণীর আমল। কেউ যদি মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নত সালাত পড়ে তাহলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করার বিধান বাদ হয়ে যায়…।আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।(ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-৪০১৫)
.,
(৫).শাওয়াল মাসের ৬ টি সিয়াম কি রমজানের কাযা সিয়াম আদায়ের সাথে একই নিয়তে রাখা যাবে?
.
রমজানের কাযা আদায় ও শাওয়ালের ছয় দিনের সিয়াম এক নিয়্যতে এক সাথে আদায় করা শুদ্ধ হবে কিনা এমন একটি প্রশ্ন আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

من صام يوم عرفة ، أو يوم عاشوراء وعليه قضاء من رمضان فصيامه صحيح ، لكن لو نوى أن يصوم هذا اليوم عن قضاء رمضان حصل له الأجران: أجر يوم عرفة ، وأجر يوم عاشوراء مع أجر القضاء ، هذا بالنسبة لصوم التطوع المطلق الذي لا يرتبط برمضان ، أما صيام ستة أيام من شوال فإنها مرتبطة برمضان ولا تكون إلا بعد قضائه، فلو صامها قبل القضاء لم يحصل على أجرها ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : (من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر) ومعلوم أن من عليه قضاء فإنه لا يعد صائماً رمضان حتى يكمل القضاء”

“যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে সিয়াম পালন করে এবং তার উপর রমজানের কাযা সিয়াম অনাদায় থাকে তবে তার সিয়াম রাখাটা সহিহ। তবে তিনি যদি এই সিয়ামের মাধ্যমে রমজানের কাযা সিয়াম পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তার দুটি সওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন সিয়াম পালনের সওয়াব ও কাযা সিয়াম আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের সিয়ামের সাথে যে নফল সিয়ামের কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে সিয়াম রমজানের কাযা সিয়াম আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন : من صام رمضان ثم সম্পূর্ণ করে।”(উসাইমীন; ফাতাওয়াস্ সিয়াম’ পৃষ্ঠ: ৪৩৮)
.
(৬).কসম এর কাফ্‌ফারার সিয়াম শাওয়াল মাসের ছয় সিয়াম হিসেবে গণ্য হবে কী?
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: শাওয়ালের ছয় সিয়াম, আশুরার সিয়াম ও আরাফার দিনের সিয়াম কি শপথ ভঙ্গের সিয়াম হিসেবে আদায় হবে? যদি ব্যক্তি শপথের সংখ্যা নির্ধারণ করতে অক্ষম হয়?

উত্তরে তারা বলেন:

كفارة الأيمان هي : عتق رقبة مؤمنة ، أو إطعام عشرة مساكين ، أو كسوتهم ، فإن لم تجد شيئاً من ذلك : فتصوم عن كل يمين ثلاثة أيام .وأما عجزك عن حصر الأيمان : فيجب عليك الاجتهاد في حصرها بالتقريب ، ثم التكفير فيما حنثت فيه منها ، ويكفيك ذلك إن شاء الله .ولا يجزئ صيام يوم عاشوراء ، وعرفة ، وستة من شوال ، عن كفارة اليمين ، إلا إذا نوى بصيامها أنه عن الكفارة لا التطوع .الشيخ عبد العزيز بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان

“শপথের কাফ্‌ফারা হচ্ছে, একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করা কিংবা দশজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো কিংবা তাদেরকে পোশাক দেয়া। যদি এগুলোর কোনটি কেউ করতে না পারে তাহলে সে প্রতিটি শপথ ভঙ্গের বদলে তিনদিন সিয়াম রাখবে। আপনি বলেছেন যে, আপনি শপথের সংখ্যা হিসাব করতে অক্ষম: আপনার কর্তব্য হচ্ছে, কাছাকাছি সংখ্যা হিসাব করার চেষ্টা করা। এরপর এ শপথগুলোর মধ্যে যেগুলো আপনি ভঙ্গ করেছেন সেগুলোর কাফ্‌ফারা আদায় করা। এভাবে করা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ্‌। আশুরার সিয়াম, আরাফার রোযা ও শাওয়ালের ছয় সিয়াম শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারার সিয়াম হিসেবে আদায় হবে না; তবে ব্যক্তি যদি নিয়ত করে যে, এটা কাফ্‌ফারার সিয়াম; নফল সিয়াম নয় তাহলে আদায় হবে।”(ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ দায়িমাহ; খণ্ড ২৩; পৃষ্ঠা: ৩৭,৩৮)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্নকারী বোন উল্লেখ করেছেন যে, তিনি শপথ করেছেন; এখন তিনি তিনদিন সিয়াম রেখে এ শপথের কাফ্‌ফারা আদায় করতে চাচ্ছেন। আমার জন্যে কি এ রোযাগুলো শাওয়ালের ছয় সিয়ামের সাথে রাখা জায়েয হবে? অর্থাৎ আমি ছয়দিন সিয়াম রাখব?

উত্তরে তিনি বলেন:

أولاً : لا يجوز للحالف إذا حنث في يمينه أن يصوم ، إلا إذا كان لا يجد إطعام عشرة مساكين ، أو كسوتهم ، أو تحرير رقبة ؛ لأن الله سبحانه وتعالى قال ( فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ) ، وقد اشتهر عند كثير من العامة : أن كفارة اليمين إذا حنث الحالف : صيام ثلاثة أيام لمن يجد الإطعام ، أو الكسوة ، أو العتق ، ومن لا يجد ، وهذا غلط ، بل لا يجوز الصيام إلا إذا كان الحالف الذي حنث لا يجد إطعام عشرة مساكين ، أو يجد لكن لا يجد مساكين ، فحينئذٍ يصوم ثلاثة أيام متتابعة .ثم إذا كان يندرج تحت صيام الأيام الثلاثة : فإنه لا يجزئ أن ينوي بها صيام ستة أيام من شوال ؛ لأنهما عبادتان مستقلتان ، فلا تغني إحداهما عن الأخرى ، بل يصوم ستة أيام من شوال ، ثم يصوم الأيام الثلاثة زائدة على صيام الأيام الستة

“শপথকারী শপথ ভঙ্গ করলে তার জন্য সিয়াম দিয়ে কাফ্‌ফারা আদায় করা জায়েয হবে না; যদি না তিনি দশজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো কিংবা তাদেরকে পোশাক দেয়া কিংবা একজন কৃতদাস মুক্ত করার সামর্থ্য না রাখেন। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “এর কাফ্‌ফারা হচ্ছে- দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরণের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাসমুক্তি। অতঃপর যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফ্‌ফারা।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯] সাধারণ মানুষের কাছে একটা বিষয় মশহুর হয়ে গেছে যে, শপথ ভঙ্গ করার কাফ্‌ফারা তিনদিন সিয়াম রাখা; চাই সে ব্যক্তি মিসকীনকে খাদ্য দেয়া কিংবা পোশাক দেয়া কিংবা দাস মুক্ত করার সামর্থ্য রাখুক কিংবা না-রাখুক এটি ভুল। বরং যে শপথভঙ্গকারী দশজন মিসকীনকে খাদ্য দেয়ার সামর্থ্য রাখে না, কিংবা সামর্থ্য রাখলেও মিসকীন খুঁজে পায় না; সে ব্যক্তি লাগাতর তিনদিন সিয়াম রাখবে।শপথভঙ্গকারী ব্যক্তি যদি তিনদিন সিয়াম রাখার শ্রেণীভুক্ত হয় সেক্ষেত্রে এ রোযাগুলোর মাধ্যমে শাওয়ালের ছয় সিয়ামের নিয়ত করা জায়েয হবে না। কেননা, এ দুইটি স্বতন্ত্র দুটি ইবাদত। একটি দিয়ে অপরটি আদায় হবে না। বরং সে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখবে। তারপর ছয়দিনের উপর আর তিনটি সিয়াম অতিরিক্ত রাখবে।(ইবনু উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃষ্ঠা: ৮৪, ৮৫)
.
(৭).যাদের মানতের সিয়াম বাকি আছে এমতাবস্থায় শাওয়াল মাসে তাদের জন্য কি শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা উত্তম; নাকী মানতের সিয়াম রাখা উত্তম?

প্রশ্ন: বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন: আমি একবার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মানত করেছিলাম যে, সুস্থ হলে আল্লাহর জন্য ১৫টি সিয়াম রাখব; আমি কোন সময় নির্ধারণ করিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সুস্থ হয়েছি এবং রজব মাস থেকে সিয়াম রাখা শুরু করেছি। পাঁচদিন সিয়াম রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর শাবান মাসে আরও পাঁচদিন সিয়াম রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর রমজান শুরু হলে রমজানের সিয়াম রেখেছি। এখন আমরা শাওয়াল মাসে আছি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কি শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা উত্তম; নাকি মানতের বাকী পাঁচদিনের সিয়াম পরিপূর্ণ করা উত্তম? দয়া করে জানাবেন, আল্লাহ আপনাকে মোবারকময় করুন।

জবাবে শাইখ বলেন,

عليك أولاً أن تصومي بقية النذر، ثم تصومي الستة من شوال إذا تمكنت من ذلك، وإن تركتيها فلا بأس، لأن الصوم للستة من شوال مستحب وليس بواجب. أما صوم النذر فهو واجب فريضة فالواجب عليك أن تبدئي بالفريضة قبل النافلة، وإذا كنت قد نويت التتابع ؛ أنك تصومين خمسة عشر يوماً متتابعة فلابد أن تصوميها متتابعة، ولا يجوز تفريقها بل عليك أن تصوميها متتابعة، والصوم السابق يلغى.أما إذا نويت صيامها غير متتابعة فقد وجب عليك الباقي وهي خمسة أيام تصومينهن إن شاء الله وانتهى الأمر.ولا ينبغي أن تنذري بعد ذلك، فالنذر لا ينبغي، يقول النبي صلى الله عليه وسلم: لَا تَنْذِرُوا، فَإِنَّ النَّذْرَ لَا يَرُدُّ شَيْئًا مِنْ الْقَدَرِ، وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنْ الْبَخِيلِ.فلا ينبغي النذر لا للمريض ولا غير المريض، ولكن متى نذر الإنسان طاعة لله وجب عليه الوفاء كالصوم والصلاة، لقول النبي صلى الله عليه وسلم: مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ رواه البخاري في الصحيح.فإذا نذر الإنسان صوم أيام معدودة، أو صلاة ركعتين، أو صدقة بكذا من المال لزمه أن يوفي بما نذر من الطاعات ؛ لأن الله مدح المؤمنين فقال: يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا الإنسان/7.ولأن الرسول صلى الله عليه وسلم أمر بالوفاء كما في الحديث السابق، فالنذر ليس هو سبباً للبرء، وليس سببا لحصول الحاجة المطلوبة، فلا حاجة إليه، ولكنه شيء يكلف الإنسان به نفسه، ويستخرج به من البخيل، ثم بعد ذلك يندم ويقع في الحرج ويود أنه لم ينذر، فالشريعة بحمد الله جاءت بما هو أرفق وأنفع للناس وهو النهي عن النذر”

“আগে মানতের অবশিষ্ট সিয়ামগুলো শেষ করা আপনার কর্তব্য। এরপর সম্ভব হলে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখবেন। যদি ছয় সিয়াম নাও রাখতে পারেন কোন অসুবিধা নেই। কারণ শাওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা মুস্তাহাব; ফরজ নয়। পক্ষান্তরে মানতের সিয়াম রাখা ফরজ। তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে- নফলের আগে ফরজ সিয়াম রাখা। আপনি যদি লাগাতরভাবে ১৫টি সিয়াম রাখার নিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনাকে লাগাতরভাবে ১৫টি সিয়াম রাখতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে রাখলে চলবে না; বরং লাগাতরভাবে রাখতে হবে। আর পূর্বের রোজাগুলো বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি আপনি লাগাতরভাবে রাখার নিয়ত না করে থাকেন তাহলে বাকী ৫টি সিয়াম রাখলে ইনশাআল্লাহ আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে।আর পরবর্তীতে কখনও মানত করবেন না; মানত করা সমীচীন নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা মানত করো না; কারণ মানত তাকদীর পরিবর্তন করে না। মানতের মাধ্যমে কৃপণের সম্পদ খরচ করানো হয়।”এ কারণে মানত করা ঠিক না। অসুস্থ ব্যক্তির জন্যেও না; অসুস্থ নয় এমন ব্যক্তির জন্যেও না। তবে কেউ যদি আল্লাহর কোন একটি আনুগত্য পালন করার মানত করে যেমন- সালাত, সিয়াম তাহলে সে মানত পূর্ণ করা ফরজ। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে তার উচিত সে আনুগত্য পূর্ণ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার মানত করেছে সে আল্লাহর অবাধ্য হবে না।”[সহিহ বুখারি] অতএব কোন ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কিছুদিন সিয়াম রাখার অথবা দুই রাকাত সালাত পড়ার অথবা বিশেষ সম্পদ সদকা করার মানত করে থাকে তার উচিত সে আনুগত্যের কাজ পালন করা। কেননা আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন: “তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে যেদিনের অনিষ্ট সম্প্রসারিত।”[সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৭] এবং কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বোক্ত হাদিসে মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং মানত রোগমুক্তির কারণ নয়; প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার কারণ নয়। তাই মানতের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষ নিজের উপর সেটা অনিবার্য করে নেয়। এর মাধ্যমে কৃপনের সম্পদ খরচ করানো হয়। পরবর্তীতে মানতকারী আফসোস করে, কষ্টে পড়ে এবং প্রত্যাশা করে সে যদি মানত না করত। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামি শরিয়ত এমন বিধান জারী করেছে যা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সহজতর। সেটা হচ্ছে- মানত করা থেকে নিষেধাজ্ঞা।”(শাইখ বিন বায; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ৩/১২৬১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফী।

রমাদান মাস থেকে আমরা কী শিক্ষা নিবো

 প্রশ্ন: মহিমান্বিত মাস রমাদান তো শেষ হয়ে গেলো। রমাদান মাস থেকে আমরা কী শিক্ষা নিবো?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর আরবী ১২টি মাসের মধ্যে রমাদান মহান আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। রমাদান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক মহান রহমত ও নেয়ামত। এ মাসে আমাদের আমল এবং ইবাদত বেশি হওয়ার কারণে আমরা অনেক সওয়াব লাভ করি। রমাদান চলে গেলেও আমাদের কর্তব্য শেষ হয়নি। মুমিনের জন্য প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তেই ইবাদত করার সুযোগ থাকে, কারণ আমাদের রব আল্লাহ তাআলা সব সময়ের প্রভু। রমাদান থেকে যে সকল ভালো আমল অভ্যাস করা হয়েছে, তা চালিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْن “মৃত্যু আসা অবধি তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাকো।” (সূরা হিজর: ১৫/৯৯)। হাদিসে এসেছে আয়িশাহ (রদিয়াল্লহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমল কী? তিনি বললেনঃ “যে ‘আমল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও বা তা পরিমাণে কম হয়।’’(সহীহ বুখারী হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম হা/৭৮৩)
.
রমাদানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো তাক্বওয়া অর্জন করা, যা হলো আল্লাহভীতি। সুতরাং কতটুকু তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি আমরা? কেননা তাক্বওয়াই তো মুমিন নারী- পুরুষের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। তাক্বওয়ার স্থান হলো, ক্বলব বা অন্তর। যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অর্জন করবে সে ব্যক্তি যেমন আল্লাহর ক্ষমা, রহমত ও জান্নাত পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকে; এবং মুমিন ব্যক্তি সব ধরনের অসত্‍ কাজ, যেমন মিথ্যা, প্রতারণা, দুর্নীতি, চুরি, মদ, গান-বাজনা, বেহায়াপনা, এবং যেকোনো প্রকার জাহেলিয়াত থেকে বেঁচে থাকে। শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”তাক্বওয়া’ হল, فِعْلُ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ وَتَرْكُ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ ‘আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা প্রতিপালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ করা”(মাজমূউল ফাতাওয়া; খন্ড:২৭/৩৯)। আবু বকর আল-জাযায়েরী বলেন,”তাক্বওয়া’ হল,فِعْلُ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ وَرَسُوْلُهُ وَتَرْكُ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ وَرَسُوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ”আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যা আদেশ করেছেন তা প্রতিপালন করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যা নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ করা”।(আইসারুত তাফাসীর লি-কালামিল উ‘লা আল-কাবীর (মদীনা মুনাওয়ারা: মাকতাবাতুল ‘উলূম ওয়াল হিকাম, ৫ম সংস্করণ, ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি.),পৃষ্ঠা: ৫৮৬) সুতরাং রমাদানে যেমন মুসলিমরা তাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে চেষ্টা করে, বিড়ি-সিগারেট, তামাক ও জর্দা খাওয়া ব্যক্তিরাও তাতে বিরত থাকার চেষ্টা করেছে, এবং এ মাসে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে আমল ও ইবাদত করার চেষ্টাও করেছে, তেমনই পরবর্তী মাসগুলোতেও সেই প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম যেন অব্যাহত থাকে। তার সব আমল এমন হওয়া উচিত যেন সে মনে করে, সে সেগুলো রমাদানেই করছে এবং তার কর্মে রমাদানের পবিত্রতার ছাপ যেন সর্বদা প্রতিফলিত হয়।
.
হে আমাদের পাঠক! রমাদানের পরও নেক আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কবুলিয়তের অন্যতম লক্ষণ। যদি রমাদানের পর আপনি আল্লাহর ইবাদতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনার রোযা ও তারাবীহ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি রমাদানের পর পুরোনো জীবনে ফিরে যান, তাহলে এটি ঠিক সেই নারীর মতো হয়ে যাবে, যাকে আল্লাহ কুরআনে উদাহরণ হিসেবে এনেছেন “তোমরা ওই নারীর মতো হয়ো না, যে সুতো পাকিয়ে শক্ত করার পর তা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে।” (সূরা আন-নাহল: ৯২) এই নারী কষ্ট করে সুতা পাকিয়ে টুপি, কাপড়, কম্বল ইত্যাদি বানাতো, কিন্তু পরে নিজেই সেটি ছিঁড়ে ফেলতো। তার এই কাজ দেখে লোকে তাকে পাগল ভাবতো।তেমনি রোযাদারদের অনেকের অবস্থাও এমনই এক মাস সিয়াম সাধনা করে, কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে, দোয়া-ইস্তিগফারে মশগুল থাকে; কিন্তু রমাযান শেষ হতেই পুরোনো গুনাহের জীবনে ফিরে যায়।এটি এমন, যেন কেউ পরীক্ষার হলে বসে তিন ঘণ্টা ধরে চমৎকার উত্তর লিখলো, কিন্তু খাতা জমা না দিয়ে নিজেই ছিঁড়ে ফেলে দিলো!
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,”রামাদান হোক বা অন্য যে কোনো সময়, আল্লাহর কাছে কোনো আমল কবুল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো একটি সৎকর্মের পর আরেকটি সৎকর্ম করা। যদি কোনো মুসলিম রামাদানের পরও নিজেকে নেক আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে, সৎকর্মে অগ্রসর হয় এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী থাকে, তবে এটি তার আমল কবুল হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। অন্যদিকে যদি কেউ এর বিপরীত আচরণ করে নেক আমলের পর গুনাহের পথে ফিরে যায়, রামাদান শেষে গাফিলতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরে যায়, তবে এটি তার আমল প্রত্যাখ্যাত হওয়ার লক্ষণ।”(মাজালিসু শাহরে রামাযান; পৃষ্ঠা: ১১৯)
.
রমদান পর মুসলিমের জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ও বর্জনীয় আমলসমূহ, নিম্নোক্ত তা আলোচনা করা হলো:

▪️ রমাদান পর মুসলিমের করনীয়:
____________________________________
(১).কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইবাদত চালিয়ে যাওয়া:

প্রিয় পাঠক! ইবাদতের পথ কখনো থামে না; এটি মৃত্যুর সীমানা পর্যন্ত চলমান। সুতরাং ইবাদত শুধু রমাদানের জন্য নয়, বরং মৃত্যু পর্যন্ত মুমিনের জীবনজুড়ে অব্যাহত থাকা উচিত। আল্লাহ বলেন,«وَ اعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتّٰی یَاۡتِیَكَ الۡیَقِیۡنُ”তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করো মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত।(সূরা হিজর, ১৫ আয়াত: ৯৯)
.
(২).রমাদানের শিক্ষা অব্যাহত রাখা: রমাদান আমাদের আত্মসংযম এবং ত্যাগের শিক্ষা দেয়। তাই রমাদানের পরও তার শিক্ষা অব্যাহত রাখা উচিত। যেমন নিয়মিত ফরজ নফল ইবাদত করা, অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত রাখা,সামর্থ্য অনুযায়ী দান সদকা করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো,আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমল কী? তিনি বললেনঃ যে ‘আমল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়।যদিও বা তা পরিমাণে কম হয়।’’(সহীহ বুখারী হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম হা/৭৮৩)
.
(৩). ফরজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: রমাদান শেষে আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদত চালিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে আমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের প্ররোচনায় গুনাহ সংঘটিত হতে বাধা দানকারী: আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত কার্যকর।’’(সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ৬) এমনকি এটি জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায়”(তিরমিযি হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪)
.
(৬).নিয়মিত কুর’আন তেলাওয়াত করা: “কুরআন তেলাওয়াত কখনোই পরিত্যাগ করা উচিত নয়। যারা শুধুমাত্র রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং বাকি সময় তা পরিত্যাগ করেন, তাদের প্রতি এমন আচরণ ঠিক নয়। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাসূল ﷺ বলেছেন, «أهل الْقُرْآنَ هُمْ أَهْلُ اللهِ،وَخَاصَّته.»কুরআন তেলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।'(মুসনাদ আহমদ হা/১২২৯২) আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, «یٰیَحۡیٰی خُذِ الۡكِتٰبَ بِقُوَّةٍ”হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটি দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো।”(সূরা মারিয়াম: ১২) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,إِنِّي لَأَسْتَحْيِي أَلَّا أَنْظُرَ كُلَّ يَوْمٍ فِي عَهْدِ رَبِّي مَرَّةً ‘প্রতিদিন একবার হ’লেও আমার রবের প্রতিশ্রুতি (কুরআনের) দিকে একবার নযর না বুলানোকে আমি খুই লজ্জাবোধ করি”।(তাফসীরে কুরতুবী; খণ্ড: ১;
পৃষ্ঠা: ২৮) ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:فَإِنَّ الَّذِي يُدَاوِمُ عَلَى ذَلِكَ (القُرْآنِ) يَذِلُّ لَهُ لِسَانُهُ وَيَسْهُلُ عَلَيْهِ قِرَاءَتُهُ، فَإِذَا هَجَرَهُ ثَقُلَتْ عَلَيْهِ القِرَاءَةُ وَشَقَّتْ عَلَيْهِ، ‘যে ব্যক্তি এই কুরআন নিয়মিত তেলাওয়াত করবে, এর জন্য তার জিব্বা নমনীয় হবে এবং তেলাওয়াত তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর যখন সে কুরআন পরিত্যাগ করবে তখন এর তেলাওয়াত তার কাছে ভারী ও কঠিন হয়ে যাবে”।(ফাৎহুল বারী; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৭৯)
.
(৪).বেশি বেশি দু’আ করা: মুমিন রমজানের পরও আল্লাহর কাছে সুন্দর এবং কল্যানকর জীবনযাপনের জন্য দু’আ করে, কারণ একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই যাবতীয় বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কুরআনে বলা হয়েছে:”হে আমাদের রব! হিদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরকে বিভ্রান্ত করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে করুণা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।”(আল ইমরান ৩:৮) মুমিনের জীবনের যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর করার শ্রেষ্ঠ উপায় দু’আ। রাসূল (ﷺ) বলেন:”আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিষয় হলো দু’আ।” (ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২৯; হাসান)
.
(৫).হালাল উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা: হালাল উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। এটি শুধু ব্যক্তিগত শান্তি ও সন্তুষ্টির কারণ নয়, বরং এটি সমাজের কল্যাণেও অবদান রাখে। তাছাড়া হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হারাম উপার্জন বা খাদ্য গ্রহণকারী ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:”এক ব্যক্তি দীর্ঘ ভ্রমণে ধুলিমলিন অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করে বলে, ‘হে প্রভু, হে প্রভু,’ অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় হারাম এবং তার আহার্য হারাম, ফলে কেমন করে তার দোয়া কবুল হতে পারে?”(সহীহ মুসলিম: ১০১৫)
.
(৬).বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা: নফল সিয়াম পালন করা একটি মহৎ ইবাদত, যা আত্মশুদ্ধি, তাক্বওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এই আমল শুধু পাপ মোচনই করে না, বরং আখিরাতের জন্য অফুরন্ত সওয়াবের ভান্ডারও তৈরি করে। তাই নিয়মিত নফল রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতে ছোট থেকে শুরু করুন, যেমন: প্রথমেই রমাদানের কাযা সিয়াম থাকলে আগে সেগুলো রাখুন, তারপর সপ্তাহে একদিন, তারপর ধীরে ধীরে বাড়ান। যেমন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তিনটি সিয়াম, আশুরার সিয়াম,শাওয়াল মাসের ৬ টি সিয়াম, আরাফার সিয়াম ইত্যাদি। রাসূল ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেন।”(সহীহ মুসলিম,হা/১১৫৩)
.
রমাদান শেষে মুসলিমদের জন্য কিছু কাজ বর্জনীয় যা তাদের ঈমান ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। রমাদান পর মুসলিমদের বর্জনীয় কিছু কাজ:
_______________________________________
(১).ফরজ আমল ত্যাগ করা এবং নিষিদ্ধ কাজে যুক্ত হওয়া:

কোনো অবস্থাতেই ফরজ আমল ত্যাগ করা এবং হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারণ,এ দুটোই মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার মূল ভিত্তি।” সুতরাং শরীয়ত বিরোধী কোন কাজে যুক্ত হওয়ার পূর্বে মাথায় রাখতে হবে আল্লাহ সবকিছু দেখছেন এবং তার নিয়জিত ফেরেশতারা লিখছেন। একদিন সবকিছুর হিসাবে দিতে হবে।(দেখুন সূরা আহকাফ: ১৮; তিরমিজি হা/২৪১৯ সিলসিলা সহিহাহ হা/ ৯৪৬)
.
(২).নফসের আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ করা:
.
রমাদান মাস আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি ও তাক্বওয়ার প্রশিক্ষণের এক মহান সুযোগ। এ মাসে মুসলিমরা নিজেদের নফসের খেয়াল-খুশি ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা গ্রহণ করে। কিন্তু রমাদানের পর যদি কেউ আবার নফসের দাসত্বে ফিরে যায়, তবে সে রমযানের মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রকৃত বিজয় সেই ব্যক্তি অর্জন করে, যে রমাদানের পরও নফসের আবেগ ও কুপ্রবৃত্তির কাছে আত্মসমর্পণ না করে, বরং তাক্বওয়ার ওপর অটল থাকে। আল্লাহ বলেন:قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَكّٰىهَا ۪ۙ”সফল সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো।” (সূরা আশ-শামস: ৯) রমাদানের প্রকৃত সার্থকতা তখনই, যখন তা আমাদের জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনে, আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং নফসের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে।
.
(৩). গান বাজনা নাটক সিনেমা দেখা:
.
মিউজিক বাজানো ও শোনা, অশ্লীল নাটক সিনেমা দেখা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিমদের মধ্যে কোনো মতদ্বৈধতা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ ‘আর মানুষের মধ্যে থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা ক্রয় করে। আর তারা এগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক আযাব”(লুক্বমান, ৩১/৬)।উক্ত আয়াতে লাহওয়াল হাদীস বলতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ঐ সত্তার কসম, যিনি ছাড়া প্রকৃত কোনো মা‘বূদ নেই! নিশ্চয়ই এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গান’। তিনি একথাটি তিনবার বলেন।(ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ, ইগাসাতুল লাহফান, ১/২৫৮-২৫৯) আবূ ‘আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ، وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ، وَالمَعَازِفَ “আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও মা‘আযিফকে (বাদ্যযন্ত্র) হালাল বলে বিশ্বাস করবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০] মা‘আযিফ হলো বাদ্যযন্ত্র, যা দিয়ে গান বাজানো হয়। যেমন: বীণা, বাঁশি, তবলা, তাম্বুরা, ক্লাইনেট, মন্দিরা প্রভৃতি।
.
(৪).অতি গর্ব ও অহংকার করা:
.
রমাদান ছিল আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস, যেখানে বিনয় ও নম্রতা অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু রমাদানের পর যদি কেউ গর্ব ও অহংকারে মত্ত হয়, তবে তা রমাদানের মূল শিক্ষা ও ইসলামের আদর্শের বিপরীত। প্রকৃত মুত্তাকি সেই ব্যক্তি, যিনি রমাদানের পরও বিনয় ধরে রাখেন এবং নিজের অর্জনকে আল্লাহর দান হিসেবে দেখেন, অহংকারের উপলক্ষ হিসেবে নয়। কেননা অহংকার হলো পতনের মূল। রাসূল ﷺ বলেছেন,”ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে।(মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮) শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,التَّكَبُّرُ شَرٌّ مِنَ الشِّرْكِ فَإِنَّ الْمُتَكَبِّرَ يَتَكَبَّرُ عَنْ عِبَادَةِ اللهِ تَعَالَى، وَالْمُشْرِكَ يَعْبُدُ اللهَ وَغَيْرَهُ.”অহংকার শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে। আর মুশরিক আল্লাহর ইবাদত করে এবং সাথে অন্যেরও করে”।(ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন; ২/৩১৬)
.
(৫).ধূমপান/মাদকে আসক্ত হওয়া:

রামাদান সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। এটি শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার সময় নয়; বরং আত্মগঠনের এক সুবর্ণ সুযোগ। যারা ধূমপান বা মাদকাসক্তি ত্যাগ করতে চান, তাদের জন্য রামাদান হতে পারে এক নতুন সূচনা।এই মাসে সারাদিন ধূমপান থেকে বিরত থাকাই প্রমাণ করে যে, আপনি চাইলেই ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাই রামাদানের সুযোগ নিয়ে ধাপে ধাপে ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে আনুন এবং ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একসময় সম্পূর্ণরূপে তা পরিত্যাগ করুন। রমাদান শেষে যেন আবার পুরোনো অভ্যাসে ফিরে না যান, সেজন্য খাবারের পর সিগারেট বা মাদকের প্রলোভনকে প্রশ্রয় দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার শরীর ও মন উভয়ের সুস্থতার জন্য এটি এক অনন্য সিদ্ধান্ত। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন, এবং এই পবিত্র মাসকে নিজের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যম বানান। মনে রাখবেন সাধারণ দলিলপ্রমাণের ভিত্তিতে ধূমপান হারাম। এটি শারিরীক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই ক্ষতিকর। আল্লাহ বলেন,«وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡكُمۡ اِلَی التَّهۡلُكَةِ”স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না”।(সূরা বাকারা২ আয়াত:১৯৫)
.
(৬).গুনাতে লিপ্ত হওয়া আর বলা ঈমান হচ্ছে অন্তরে:
.
এই কথাটি কিছু অশিক্ষিত ও ভ্রান্ত যুক্তিদাতা লোকেরা বেশি বলে থাকে। এই সত্য কথাটি বলে বাতিলকে উদ্দেশ্য করা হয়। কেননা এই কথা উদ্ধৃতকারী ব্যক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের পাপের পক্ষে সাফাই গাওয়া। কেননা সে দাবী করে যে, নেক আমল করা ও পাপ ত্যাগ করার পরিবর্তে অন্তরের ঈমানই যথেষ্ট। এটি সুস্পষ্ট ভ্রান্ত যুক্তি। কেননা ঈমান শুধু অন্তরে নয়। বরঞ্চ ঈমান যেমনটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আলেমগণ সংজ্ঞা দেন: মুখের কথা, অন্তরের বিশ্বাস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্ম। ইমাম হাসান আল-বসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: ঈমান বাহ্যিক বেশভুষা কিংবা অলীক চিন্তা নয়; বরং ঈমান হলো যা অন্তরে স্থির হয়েছে এবং কর্ম সেটাকে সত্যে পরিণত করেছে। পাপে লিপ্ত হওয়া ও নেক আমল বর্জন করা প্রমাণ করে যে, অন্তরে ঈমান নেই কিংবা রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ঈমান। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সুদ ভক্ষণ করো না।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩০] এবং তিনি বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় করো, তার নৈকট্যলাভের উপায় অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫] এবং তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে এবং সৎ কর্ম করেছে।”(সূরা মায়িদা,আয়াত: ৬৯)
.
(৭).গীবত, পরনিন্দা করা, দোষচর্চা করা:

গীবত করা শুধু একটি নৈতিক দোষ নয়,গীবত একটি ভয়াবহ পাপ। সমাজে যেসব পাপের প্রচলন সবচেয়ে বেশী তন্মধ্যে গীবত অন্যতম। এই পাপটি নীরব ঘাতকের মতো। বান্দার অজান্তেই এটা তার নেকীর ভান্ডার নিঃশেষ করে দেয় এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে ছাড়ে। এটি চুরি-ডাকাতি, সূদ-ঘুষ, যিনা-ব্যভিচার ও মরা মানুষের পঁচা গোশত খাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন,”তোমাদের কেউ কি চাইবে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করো!” (সূরা আল-হুজুরাত: ১২) রাসূল ﷺ বলেন:বান্দা কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক এমন কথা বলে ফেলে, যার গুরুত্ব সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না। অথচ এ কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে”।(সহীহ বুখারী হা/৬৪৭৮; মিশকাত হা/৪৮১৩)তাই আসুন, আমরা গীবত থেকে বিরত থাকি এবং আমাদের জিহ্বাকে কল্যাণমুখী করে তুলি।
.
পরিশেষে, হে আমার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনার উদাসীনতা ঝেড়ে ফেলুন, গাফিলতির ঘুম থেকে জেগে উঠুন। দুনিয়ার মোহ আপনাকে ভুলিয়ে রাখার আগেই পথের পাথেয় সংগ্রহ করুন। অনন্ত জীবনের সে দীর্ঘ সফরের জন্য প্রস্তুত হোন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে ফিরে আসুন, তাঁর করুণা ও ক্ষমার দ্বারস্থ হোন। হতে পারে, আপনি তাঁর ডাকে সাড়া পাবেন, তাঁর অশেষ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত লাভ করে, সেই-ই প্রকৃত সৌভাগ্যবান। ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রাহিমাহুল্লাহ), বলেন, রামাদানের বিদায়ে মুমিনের চোখ কীভাবে অশ্রুসিক্ত হয় না অথচ সে জানে না যে, তার জীবনে রামাদান আবার ফিরে আসবে কি না!’ (ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রাহিমাহুল্লাহ) লাতাইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ২১৭)।
.
ইবনু রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, ‘ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য নয় যে নতুন পোশাক পরিধান করে; বরং ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যে তার আনুগত্য বৃদ্ধি করে। ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য নয় যে নতুন পোশাকের সাজসজ্জা ও গাড়ি বহর প্রদর্শন করে; বরং ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যার পাপ মোচন করা হয়েছে।’ (ইবনে রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) লাত্বায়েফুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা: ২৭৭)। সুফিয়ান সাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) -এর কতিপয় সাথী বলেন, আমি ঈদের দিন (ঈদের) সর্বপ্রথম শুরু করব চোখ নিম্নগামী করার মাধ্যমে। (ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) আত্ব-তাবছিরা, পৃ. ১০৬) আল্লাহ আমাদের সকলকে তোওফিক দান করুন, আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Translate