Sunday, December 12, 2021

স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?

স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো? (হুমায়ুন আজাদের সাথে কথোপকথন!)

ল্যাম্পপোষ্টের অস্পষ্ট আলোয় একজন বয়স্ক লোকের ছায়ামূর্তি আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো।গায়ে মোটা একটি শাল জড়ানো। পৌষের শীত। লোকটা হালকা কাঁপছেও।
আমরা খুলনা থেকে ফিরছিলাম। আমি আর সাজিদ।
ষ্টেশান মাষ্টারের রুমের পাশের একটি বেঞ্চিতে লোকটা আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে।
ষ্টেশানে এরকম কতো লোকই তো বসে থাকে।তাই সেদিকে আমার বিশেষ কোন কৌতুহল ছিলো না।কিন্তু

সাজিদকে দেখলাম সেদিকে এগিয়ে গেলো।

লোকটার কাছে গিয়েই সাজিদ ধপাস করে বসে পড়লো।আমি দূর থেকে খেয়াল করলাম, লোকটার সাথে সাজিদ হেসে হেসে কথাও বলছে।
আশ্চর্য! খুলনার ষ্টেশান।এখানে সাজিদের পরিচিত লোক কোথা থেকে এলো? তাছাড়া, লোকটিকে দেখে বিশেষ কেউ বলেও মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোন বাদাম বিক্রেতা।বাদাম বিক্রি শেষে প্রতিদিন ওই জায়গায় বসেই রাত কাটিয়ে দেয়।
আমাদের রাতের ট্রেন। এখন বাজে রাত দু’টো।এই সময়ে সাজিদের সাথে কারো দেখা করার কথা থাকলে তা তো আমি জানতামই। অদ্ভুত!
আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম। একটু অগ্রসর হতেই দেখলাম, ভদ্রলোকের হাতে একটি বইও আছে।দূর থেকে আমি বুঝতে পারি নি।
সাজিদ আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকলো। আমি গেলাম।
লোকটার চেহারাটা বেশ চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু সঠিক মনে করতে পারছি না।
সাজিদ বললো,- ‘এইখানে বোস।ইনি হচ্ছেন হুমায়ুন স্যার।’
হুমায়ুন স্যার? এই নামে কোন হুমায়ুন স্যারকে তো আমি চিনি না।সাজিদকে জিজ্ঞেস করতে যাবো যে কোন হুমায়ুন স্যার, অমনি সাজিদ আবার বললো,- ‘হুমায়ুন আজাদকে চিনিস না? ইনি আর কি।’
এরপর সে লোকটার দিকে ফিরে বললো,- ‘স্যার, এ হলো আমার বন্ধু, আরিফ।’
লোকটা আমার দিকে তাকালো না। সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি।
আমার তখনো ঘোর কাটছেই না।কি হচ্ছে এসব? আমিও ধপাস করে সাজিদের পাশে বসে গেলাম।
সাজিদ আর হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটার মধ্যে আলাপ হচ্ছে।এমনভাবে কথা বলছে, যেন তারা পরস্পর পরস্পরকে অনেক আগে থেকেই চিনে।
লোকটা সাজিদকে বলছে,- ‘তোকে কতো করে বলেছি, আমার লেখা ‘আমার অবিশ্বাস’ বইটা ভালোমতো পড়তে। পড়েছিলি?’
সাজিদ বললো,- ‘হ্যাঁ স্যার। পড়েছি তো।’
– ‘তাহলে আবার আস্তিক হয়ে গেলি কেনো? নিশ্চয় কোন ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস? কে সে? নাম বল? পেছনে যে আছে, কি জানি নাম?’
– ‘আরিফ……’
– ‘হ্যাঁ, এই ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস বুঝি? দাঁড়া, তাকে আমি মজা দেখাচ্ছি……..’
এই বলে লোকটা বসা থেকে উঠতে গেলো।
সাজিদ জোরে বলে উঠলো,- ‘না না স্যার। ও কিচ্ছু জানে না।’
– ‘তাহলে?’
– ‘আসলে স্যার, বলতে সংকোচ বোধ করলেও সত্য এটাই যে, নাস্তিকতার উপর আপনি যেসব লজিক দেখিয়েছেন, সেগুলো এতটাই দূর্বল যে, নাস্তিকতার উপর আমি বেশিদিন ঈমান রাখতে পারি নি।’
এইটুকু বলে সাজিদ মাথা নিঁচু করে ফেললো।
লোকটার চেহারাটা মূহুর্তেই রুক্ষ ভাব ধারন করলো। বললো,- ‘তার মানে বলতে চাইছিস, তুই এখন আমার চেয়েও বড় পন্ডিত হয়ে গেছিস? আমার চেয়েও বেশি পড়ে ফেলেছিস? বেশি বুঝে ফেলেছিস?’
সাজিদ তখনও মাথা নিঁচু করে আছে।
লোকটা বললো,- ‘যাক গে! একটা সিগারেট খাবো।ম্যাচ নেই। তোর কাছে আছে?’
– ‘জ্বি স্যার।’- এই বলে সাজিদ ব্যাগ খুলে একটি ম্যাচ বের করে লোকটার হাতে দিলো।সাজিদ সিগারেট খায় না।তবে, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তার ব্যাগে থাকে সবসময়।
লোকটা সিগারেট ধরালো।কয়েকটা জোরে জোরে টান দিয়ে ফুঁস করে একমুখ ধোঁয়া ছাড়লো।ধোঁয়াগুলো মূহুর্তেই কুন্ডুলি আকারে ষ্টেশান মাষ্টারের ঘরের রেলিং বেয়ে উঠে যেতে লাগলো উপরের দিকে।আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি।
লোকটার কাশি উঠে গেলো। কাশতে কাশতে লোকটা বসা থাকে উঠে পড়লো। এই মূহুর্তে উনার সিগারেট খাওয়ার আর সম্ভবত ইচ্ছে নেই।লোকটা সিগারেটের টুকরোটিকে নিচে ফেলে পা দিয়ে একটি ঘষা দিলো।অমনি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরোটি থেঁতলে গেলো।
সাজিদের দিকে ফিরে লোকটা বললো,- ‘তাহলে এখন বিশ্বাস করিস যে স্রষ্টা বলে কেউ আছে?’
সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
– ‘স্রষ্টা এই বিশ্বলোক, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্বাস করিস তো?’
আবারো সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
এবার লোকটা একটা অদ্ভুত ভয়ঙ্কররকম হাসি দিলো।এই হাসি এতটাই বিদঘুটে ছিলো যে আমার গা ছমছম করতে লাগলো।
লোকটি বললো,- ‘তাহলে বল দেখি, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?’
এই প্রশ্নটি করে লোকটি আবার সেই বিদঘুটে হাসিটা হাসলো। গা ছমছমে।
সাজিদ বললো,- ‘স্যার, বাই ডেফিনিশন, স্রষ্টার কোন সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না।যদি বলি X-ই সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি করেছে, তৎক্ষণাৎ আবার প্রশ্ন উঠবে, তাহলে X- এর সৃষ্টিকর্তা কে? যদি বলি Y, তাহলে আবার প্রশ্ন উঠবে, Y এর সৃষ্টিকর্তা কে? এভাবেই চলতে থাকবে। কোন সমাধানে যাওয়া যাবে না।’
লোকটি বললো,- ‘সমাধান আছে।’
– ‘কি সেটা?’
– ‘মেনে নেওয়া যে- স্রষ্টা নাই,ব্যস!’- এইটুকু বলে লোকটি আবার হাসি দিলো। হা হা হা হা।
সাজিদ আপত্তি জানালো। বললো,- ‘আপনি ভুল, স্যার।’
লোকটি চোখ কপালে তুলে বললো,- ‘কি? আমি? আমি ভুল?’
– ‘জ্বি স্যার।’
– ‘তাহলে বল দেখি, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো? উত্তর দে।দেখি কতো বড় জ্ঞানের জাহাজ হয়েছিস তুই।’
আমি বুঝতে পারলাম এই লোক সাজিদকে যুক্তির গ্যাড়াকলে ফেলার চেষ্টা করছে।
সাজিদ বললো,- ‘স্যার, গত শতাব্দীতেও বিজ্ঞানিরা ভাবতেন, এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে আছে।মানে, এটার কোন শুরু নেই।তারা আরো ভাবতো, এটার কোন শেষও নাই।তাই তারা বলতো- যেহেতু এটার শুরু-শেষ কিছুই নাই, সুতরাং, এটার জন্য একটা সৃষ্টিকর্তারও দরকার নাই।
কিন্তু থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সূত্রগুলো আবিষ্কার হওয়ার পর এই ধারনা তো পুরোপুরিভাবে ভ্যানিশ হয়ই,সাথে পদার্থবিজ্ঞানেও ঘটে যায় একটা বিপ্লব।থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির দ্বিতীয় সূত্র বলছে- ‘এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত ও নিরবচ্ছিন্ন উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে পর্যায়ক্রমে উত্তাপহীন অস্তিত্বের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই সূত্রটাকে উল্টোথেকে প্রয়োগ কখনোই সম্ভব নয়।অর্থাৎ, কম উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে এটাকে বেশি উত্তাপ অস্তিত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া আদৌ সম্ভব নয়।এই ধারনা থেকে প্রমান হয়, মহাবিশ্ব চিরন্তন নয়।এটা অনন্তকাল ধরে এভাবে নেই।এটার একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে।থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র আরো বলে, – এভাবে চলতে চলতে একসময় মহাবিশ্বের সকল শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে।আর মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে।’
লোকটি বললো,- ‘উফফফফ! আসছেন বৈজ্ঞানিক লম্পু। সহজ করে বল ব্যাটা।’
সাজিদ বললো,- ‘স্যার, একটা গরম কফির কাপ টেবিলে রাখা হলে, সেটা সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে তাপ হারাতে হারাতে ঠান্ডা হতেই থাকবে।কিন্তু সেটা টেবিলে রাখার পর যে পরিমাণ গরম ছিলো, সময়ের সাথে সাথে সেটা আরো বেশি গরম হয়ে উঠবে- এটা অসম্ভব।এটা কেবল ঠান্ডাই হতে থাকবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে, কফির কাপটা সমস্ত তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র।’
– ‘হুম,তো?’
– ‘এর থেকে প্রমান হয়, মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। মহাবিশ্বের যে একটা শুরু আছে- তারও প্রমান বিজ্ঞানিরা পেয়েছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি তত্বের উপর এ যাবৎ যতোগুলো থিওরি বিজ্ঞানিমহলে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, প্রমানের দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী থিওরি হলো- বিগ ব্যাং থিওরি।বিগ ব্যাং থিওরি বলছে- মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে একটি বিস্ফোরণের ফলে।তাহলে স্যার, এটা এখন নিশ্চিত যে, মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে।’
লোকটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
সাজিদ আবার বলতে শুরু করলো,- স্যার, আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখবো স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা, মানে স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা।
সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছে………… ধরি, এটা সমীকরণ ১।
মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি……….. এটা সমীকরণ ২।
এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাই-
সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে।মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি,তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে।
তাহলে, আমরা দেখলাম- উপরের দুটি শর্ত পরস্পর মিলে গেলো,এবং তাতে থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সূত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটে নি।
– ‘হু’
– ‘আমার তৃতীয় সমীকরণ হচ্ছে- ‘স্রষ্টা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’
তাহলে খেয়াল করুন, আমার প্রথম শর্তের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না।
আমার প্রথম শর্ত ছিলো- সকল সৃষ্টির শুরু আর শেষ আছে।কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে।তিনি সৃষ্টি নন, তিনি স্রষ্টা।তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না।সাথে, তাপ ও গতির সূত্রটিও এখানে আর খাটছে না।তার মানে, স্রষ্টার শুরুও নেই, শেষও নাই।অর্থাৎ, তাকে নতুন করে সৃষ্টিরও প্রয়োজন নাই।তার মানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। তিনি অনাদি, অনন্ত।’
এইটুকু বলে সাজিদ থামলো। হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটি কপালের ভাঁজ দীর্ঘ করে বললেন,- ‘কি ভংচং বুঝালি এগুলা? কিসব সমীকরণ টমীকরণ? এসব কি? সোজা সাপ্টা বল।আমাকে অঙ্ক শিখাচ্ছিস? Laws Of Causality সম্পর্কে ধারনা আছে? Laws Of Causality মতে, সবকিছুর পেছনে একটা Cause বা কারণ থাকে। সেই সূত্র মতে, স্রষ্টার পেছনেও একটা কারণ থাকতে হবে।’
সাজিদ বললো,- ‘স্যার, উত্তেজিত হবেন না প্লিজ।আমি আপনাকে অঙ্ক শিখাতে যাবো কোন সাহসে? আমি শুধু আমার মতো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছি।’
– ‘কচু করেছিস তুই।Laws Of Causality দিয়ে ব্যাখ্যা কর। ‘- লোকটা উচ্চস্বরে বললো।
– ‘স্যার, Laws Of Causality বলবৎ হয় তখনই, যখন থেকে Time, Space এবং Matter জন্ম লাভ করে, ঠিক না? কারন, আইনষ্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটিও স্বীকার করে যে- Time জিনিসটা নিজেই Space আর Matter এর সাথে কানেক্টেড।Cause এর ধারনা তখনই আসবে, যখন Time-Space-Matter এই ব্যাপারগুলা তৈরি হবে।তাহলে, যিনিই এই Time-Space-Matter এর স্রষ্টা, তাকে কি করে আমরা Time-Space-Matter এর বাটখারাতে বসিয়ে Laws Of Causality দিয়ে বিচার করবো,স্যার? এটা তো লজিক বিরুদ্ধ, বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’
লোকটা চুপ করে আছে। কিছু হয়তো বলতে যাচ্ছিলো। এরমধ্যেই আবার সাজিদ বললো,- ‘স্যার, আপনি Laws Of Causality’র যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা ভুল।’
লোকটা আবার রেগে গেলো। রেগেমেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো,- ‘এই ছোকরা! আমি ভুল বলেছি মানে কি? তুই কি বলতে চাস আমি বিজ্ঞান বুঝি না?’
সাজিদ বললো,- ‘না না স্যার, একদম তা বলিনি। আমার ভুল হয়েছে।আসলে, বলা উচিত ছিলো যে- Laws Of Causality’র সংজ্ঞা বলতে গিয়ে আপনি ছোট্ট একটা জিনিস মিস করেছেন।’
লোকটার চেহারা এবার একটু স্বাভাবিক হলো।বললো,- ‘কি মিস করেছি?’
– ‘আপনি বলেছেন, Laws Of Causality মতে, সবকিছুরই একটি Cause থাকে।আসলে এটা স্যার সেরকম নয়। Laws Of Causality হচ্ছে- Everything which has a beginning has a cause.. অর্থাৎ, এমন সবকিছু, যেগুলোর একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে- কেবল তাদেরই Cause থাকে।স্রষ্টার কোন শুরু নেই, তাই স্রষ্টাকে Laws Of Causality দিয়ে মাপাটা যুক্তি এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’
লোকটার মুখ কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলো।বললো,- ‘তুই কি ভেবেছিস, এরকম ভারি ভারি কিছু শব্দ ব্যবহার করে কথা বললেই আমি তোর যুক্তি মেনে নিবো? অসম্ভব।’
সাজিদ এবার মুচকি হাসলো। হেসে বললো,- ‘স্যার, আপনার হাতে একটি বই দেখছি। অইটা কি বই?’
– ‘ এটা আমার লেখা বই- ‘আমার অবিশ্বাস।’
– ‘স্যার, অইটা আমাকে দিবেন একটু?’
– ‘এই নে,ধর।’
সাজিদ বইটা হাতে নিয়ে উল্টালো। উল্টাতে উল্টাতে বললো,- ‘স্যার, এই বইয়ের কোন লাইনে আপনি আছেন?’
লোকটা ভুরু কুঁচকে বললো,- ‘মানে?’
– ‘বলছি, এই বইয়ের কোন অধ্যায়ের, কোন পৃষ্টায়, কোন লাইনে আপনি আছেন?’
– ‘তুই অদ্ভুত কথা বলছিস। আমি বইয়ে থাকবো কেনো?’
– ‘কেনো থাকবেন না? আপনি এর স্রষ্টা না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘এই বইটা কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি। আপনিও কি কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি স্যার?’
– ‘খুবই ষ্টুপিডিটি টাইপ প্রশ্ন। আমি এই বইয়ের স্রষ্টা। এই বই তৈরির সংজ্ঞা দিয়ে কি আমাকে ব্যাখ্যা করা যাবে?’
সাজিদ আবার হেসে দিলো।বললো,- ‘না স্যার।এই বই তৈরির যে সংজ্ঞা, সে সংজ্ঞা দিয়ে মোটেও আপনাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঠিক সেভাবে, এই মহাবিশ্ব যিনি তৈরি করেছেন, তাকেও তার সৃষ্টির Time-Space-Matter-Cause এসব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আপনি কালি,কলম বা কাগজের তৈরি নন, তার উর্ধ্বে।কিন্তু আপনি Time-Space-Matter-Cause এর উর্ধ্বে নন।আপনাকে এগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করাই যায়।কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন এমন একজন,যিনি নিজেই Time-Space-Matter-Cause এর সৃষ্টিকর্তা।তাই তাকে Time-Space-Matter-Cause দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।অর্থাৎ, তিনি এসবের উর্ধ্বে।অর্থাৎ, তার কোন Time-Space-Matter-Cause নাই।অর্থাৎ, তার কোন শুরু-শেষ নাই।অর্থাৎ, তার কোন সৃষ্টিকর্তা নাই।’
লোকটা উঠে দাঁড়ালো।উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো- ‘ভালো ব্রেইনওয়াশড! ভালো ব্রেইনওয়াশড! আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম? হায়! আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম?’
এটা বলতে বলতে লোকটা হাঁটা ধরলো। দেখতে দেখতেই উনি ষ্টেশানে মানুষের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন।
ঠিক সেই মূহুর্তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙার পর আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে ছিলাম।ঘড়িতে সময় দেখলাম।রাত দেড়টা বাজে।সাজিদের বিছানার দিকে তাকালাম।দেখলাম, সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।আমি উঠে তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে যে বইটা পড়ছে, সেটার নাম- ‘আমার অবিশ্বাস। বইয়ের লেখক- হুমায়ুন আজাদ।
সাজিদ বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো।তার ঠোঁটের কোণায় একটি অদ্ভুত হাসি।
আমি বিরাট একটা শক খেলাম। নাহ! এটা হতে পারে না। স্বপ্নের উপর কারো হাত নেই- আমি বিড় বিড় করে বলতে লাগলাম।
পোস্ট: আরিফ আজাদ
তারিখ: আগস্ট ৩০, ২০১৬
বিভাগ: ছোটগল্প/উপন্যাস
উৎসঃ i-onlinemedia

নাস্তিকতার ভয়ংকর ছোবলে বাংলাদেশের যুবসমাজ!!

 

নাস্তিকতার ভয়ংকর ছোবলে বাংলাদেশের যুবসমাজ!! -আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী’১৩ রাজধানী ঢাকায় জনৈক নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দারের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে নাস্তিকতার যে ভয়াল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা সমগ্র দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। নাস্তিকতা যে কত নিকৃষ্ট হতে পারে, ধর্মহীনতা যে মানুষকে পশুত্বের ও নৈতিক অবক্ষয়ের কোন অতলে নিক্ষেপ করতে পারে, তথাকথিত ‘মুক্তবুদ্ধি’র চর্চার আড়ালে ইসলাম-বিদ্বেষের যে কি জঘন্যতম কুৎসিত অবয়ব লুকিয়ে আছে, তার এক বাস্তব প্রতিমূর্তি অত্যন্ত প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে এই চিত্রে। লক্ষ্যণীয় যে,

ইন্টারনেটে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে নাস্তিকতার প্রচার ও প্রসার বেশ জোরালোভাবে শুরু হলেও কোন এক অজানা কারণে গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে কোন রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় নি। ফলে এ দেশে নাস্তিকতার এই ভয়ংকর রূপটি জনসমাজে এক প্রকার অজ্ঞাতই ছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক চক্রটি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য সুদূরপ্রসারী মিশন গ্রহণ করে। এ মিশন যে বেশ সাফল্যের সাথেই এগিয়ে চলেছে রাজীব হায়দার গংদের এই ঘৃণ্যতম দুঃসাহসিক অপতৎপরতা তারই প্রমাণ বহন করে। এদের মরণ ছোবলের শিকার হয়ে শহুরে শিক্ষিত তরুণ সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজের দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে বিপজ্জনকভাবে বীতশ্রদ্ধভাব ও সংশয় পোষণ করা শুরু করেছে । শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের জীবনাচারকে বিশুদ্ধ ঈমান-আক্বীদার প্রশ্নে কোনভাবেই সন্তোষজনক বলা না গেলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ধর্ম এখানকার জনজীবনে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। ধর্মপালনে শিথিলতা থাকলেও মানুষের মধ্যে ধর্মানুভূতি যথেষ্ট তীব্র। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ এ দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুকৌশলে ধর্মহীনতা প্রসারের ব্যাপক চেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও প্রকাশ্যভাবে ধর্মদ্রোহিতা বা নাস্তিকতার কোন স্থান কখনই হয়নি। তাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, জনগণকে পক্ষে টানার জন্য অন্ততঃ ভোটের সময় হলেও ধর্মের গুণগান করতে দেখা যায়। যে কারণে দাউদ হায়দার, আহমাদ শরীফ, তাসলীমা নাসরীন, হুমায়ুন আজাদের মত গুটিকয় ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক যারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল, বাংলাদেশের গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে তাদের তো কোন আশ্রয় হয়ই নি; বরং তাদের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত হয়েছে প্রবল ক্ষোভ ও ঘৃণাবোধ। এমনকি তাদের অনেককেই শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটায় জনসাধারণের নাগালের বাইরে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার জুড়ে যে এক শ্রেণীর নাস্তিক চক্র গড়ে উঠেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে সেখানে যে উদ্বেগজনক ও কুৎসিত অপপ্রচার শুরু করেছে, তা পূর্ববর্তী নাস্তিকদের সকল অপতৎরতাকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ কোন প্রতিরোধ গড়ে উঠেনি। এর কারণ হল এদের অবস্থান সমাজে নয় বরং ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে, বাংলাদেশে এত বিরাট সংখ্যক নাস্তিক ঘাপটি মেরে আছে। অনেককেই বলতে শুনেছি, ব্লগে না আসলে বাংলাদেশে যে এত নাস্তিক আছে, তা হয়ত জানতেই পারতাম না। অবশেষে ব্লগার রাজীব নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই নাস্তিক চক্রের ভয়াবহ অপতৎপরতা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ না পেলে, তারা হয়ত আরো অনেকদিন সাধারণ মানুষের অগোচরেই থেকে যেত। পাঠকদের অনেকেরই প্রশ্ন, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগিং আসলে কী এবং ব্লগারদের মধ্যে নাস্তিকতার এত প্রসার কেন? মূলতঃ ইংরেজী শব্দ ‘ব্লগ’ হল ওয়েবলগ-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যাকে তুলনা করা যায় ব্যক্তিগত ডায়েরীর সাথে। অন্যভাবে এগুলিকে উন্মুক্ত অনলাইন ম্যাগাজিনও বলা যায়। ইন্টারনেটে নিজস্ব ব্লগসাইট বানিয়ে দৈনন্দিন ডায়েরী লেখার মত অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। এরূপ ব্যক্তিগত লেখালেখিকে একক ওয়েবসাইটে সমন্বিত করে একটি ভার্চুয়াল কম্যুনিটি সৃষ্টি করা এবং সেখানে পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরী করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় কম্যুনিটি ব্লগ। যিনি ব্লগে লেখালেখি করেন বা বিবিধ কন্টেন্ট পোস্ট করেন তাকে ‘ব্লগার’ বলে। এ সকল ব্লগে একাউন্ট খুলে লেখালেখির মাধ্যমে ব্লগের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মতের আদান-প্রদান করা যায় খুব নির্বিঘ্নে। এ কারণে কম্যুনিটি ব্লগগুলো খুব দ্রুতই তরুণ সমাজের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এমনকি ২০১০ সালে দেশে ইন্টারনেটে সর্বাধিক ব্যবহৃত শীর্ষ ১০টি ওয়েবসাইটের তালিকায় ৭টিই ছিল এই সকল ব্লগসাইট। বাংলাভাষায় সামাজিক ব্লগ হিসাবে ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ‘সামহয়্যার ইন ব্লগ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইন্টারনেটের প্রসার লাভ করার সাথে সাথে ব্লগিং-এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে একে একে সৃষ্টি হয় নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সোনারবাংলা ব্লগের মত জনপ্রিয় ব্লগগুলো। কখনো লেখালেখির অভ্যাস ছিল না, এমন বহু তরুণের লেখার হাতেখড়ি হয়েছে ব্লগের মাধ্যমে। যদিও ইদানিং ফেসবুক-টুইটারের দাপটে ব্লগসাইটের জনপ্রিয়তা বেশ কমে এসেছে। ব্লগগুলোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল, ব্লগ মডারেটরদের বেঁধে দেয়া সাধারণ কিছু নীতি মেনে স্বাধীনভাবে যে কোন বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করা এবং অন্যের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছে দেয়ার অনন্য সুযোগ পাওয়া। নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্লগের এই অভূতপূর্ব স্বাধীনতার কোন জুড়ি নেই। ফলে সরকারী বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে অবাধ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের এই উন্মুক্ত অঙ্গনটি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকদের জন্য মহা সুযোগ হয়ে উঠে। যেহেতু এ দেশে সামাজিকভাবে ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের কোন ঠাঁই নেই, তাই এই নিরাপদ (!) স্থানে এসে তারা কখনও স্বনামে কিংবা বেশীরভাগই বেনামে মনের সুখে নাস্তিকতার প্রচার ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর মওকা পেয়ে যায়। অন্যদিকে ‘উদারমনা’ নাস্তিক্যবাদী বিভিন্ন ব্লগ মডারেটররাও ‘মুক্তচিন্তা’ প্রকাশের নামে এদেরকে সাদরে ঠাঁই দিতে থাকে। এভাবেই ব্লগ হয়ে উঠে নাস্তিকদের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ অভয়ারণ্য। স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগ ‘মুক্তমনা’র মডারেটর তা স্বীকার করে বলেছে, ‘গত কয়েক বছরে স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা সম্পন্ন মুক্তমনা যুক্তিবাদীদের বিশাল উত্থান ঘটেছে বিভিন্ন ফোরামে এবং আলোচনাচক্রে, যা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমে সম্ভব ছিল না মোটেই’। উল্লেখ্য যে, ব্লগিং মানেই কিন্তু নাস্তিকতা নয়। কেননা ব্লগীয় পরিমন্ডলে স্বল্পসংখ্যক নাস্তিক গোষ্ঠীর বিপরীতে সুস্থ ও মননশীল চিন্তাধারার প্রচুর সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লেখকও রয়েছেন। বরং তাদের বিপরীতে নাস্তিকদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলা যায়। যারা নিজেদের মূল্যবান সময় ও মেধা ব্যয় করে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যেমন তৎপর রয়েছেন, তেমনি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল লড়াইয়ে তথা তাদের যুক্তি-কুযুক্তির শিকড় উপড়ে ফেলার যুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলেছেন। ব্লগে বিচরণশীল নাস্তিকরা মূলতঃ ৩ ভাগে বিভক্ত। (১) যারা ঘটনাক্রমে কিংবা পরিবেশগত কারণে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে এবং ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে থাকে। তবে সাধারণতঃ কিছুটা সংযত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সুশীলতা প্রমাণে সচেষ্ট থাকে। এই শ্রেণীর ভদ্রবেশী নাস্তিকের সংখ্যা অবশ্য ব্লগে খুব নগণ্যই। (২) যারা প্রবল ধর্মবিদ্বেষী। এরা এমনই উগ্র যে, যে কোন সুযোগে অত্যন্ত অশ্লীল ও ক্লেদাক্ত ভাষায় ধর্মকে আক্রমণ করে। কুরআনের আয়াতসমূহ, রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যক্তিজীবন ও ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে মিথ্যা ও কুরূচিপূর্ণ অপবাদ আরোপ করা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করাই তাদের প্রধান কাজ। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল জঘন্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা। তাদের চিন্তাধারা ও গালাগালির রূপ- প্রকৃতি এতটাই নিম্নরূচির যে তাদেরকে সাধারণভাবে মনুষ্যশ্রেণীভুক্ত ভাবতেই কষ্ট হয়। ব্লগে এই প্রকার ইতর শ্রেণীর নাস্তিকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী। (৩) যারা সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে না, নিজেদের নাস্তিকও বলে না। তবে ধর্মবিরোধী আলোচনায় নাস্তিকদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। তারা সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, সুশীল, উদারমনা ইত্যাদির ছদ্মাবরণে প্রকারান্তরে নাস্তিক্যবাদের সেবাদাস হিসাবেই কাজ করে। ব্লগে এই শ্রেণীর নাস্তিকের সংখ্যাও প্রচুর। তবে মজার ব্যাপার এই যে, নীতিগতভাবে সর্বধর্মবিরোধী হলেও কার্যক্ষেত্রে এসব নাস্তিকদের একমাত্র টার্গেট হল ইসলাম। ইসলামই তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্ত্ত। শোনা যায়, নাস্তিক ব্লগারদের অনেকেই না কি মূলতঃ হিন্দু। যারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুসলিম নাম ব্যবহার করে এবং ইসলামকে হেয় করার চেষ্টা করে। মুক্ত সামাজিক ব্লগগুলিতে তাদের নীতি হল, প্রথমে রাজাকার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাইনবোর্ড নিয়ে সাধারণ ব্লগারদের সহানুভূতি আদায় করা। অতঃপর সুযোগ মত ধর্মবিদ্বেষের ছোবল মারা। এদের নিজস্ব কিছু ব্লগও রয়েছে। যেমন মুক্তমনা, আমার ব্লগ, ধর্মকারী, নবযুগ প্রভৃতি। যেখান থেকে তারা উগ্র ধর্মবিদ্বেষের এমনই বিষবাষ্প ছড়ায়, নোংরামী আর ঘৃণ্য মনোবৃত্তির এমন দুর্গন্ধময় প্রদর্শনী করে, যা কোন সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। বরং চাক্ষুষ না দেখলে তা বিশ্বাসই করা যায় না। অথচ ‘সোনারবাংলা’, ‘সদালাপ’, ‘বিডিটুডে’র মত কতিপয় ইসলামপন্থী ব্লগ ছাড়া বাকি সমস্ত ব্লগই নীতিমালায় ‘ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানো নিষিদ্ধ’ লিখে রাখার পরও কম-বেশী এই শ্রেণীর নাস্তিকদের প্রোমোট করে আসছে। নিম্নে নাস্তিক চক্রের পরিচালিত প্রসিদ্ধ ব্লগ ‘ধর্মকারী’ থেকে তাদের উগ্র ইসলামবিদ্বেষের দু’একটি নমুনা দেয়া হল। ‘ধর্মকারী’র হোম পেইজের চলমান স্লোগানে দেখা যায়, ‘‘আল্লাহ সর্বব্যাপী তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন। আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন’’। হোম পেজের ডানদিকে ব্লগের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘‘ধর্মকারী যুক্তিমনস্কদের নির্মল বিনোদনের ব্লগ। বিতর্ক বা বাকবিতন্ডার স্থান নেই এখানে। এই ব্লগে ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে, ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে, অপদস্থ করা হবে, ব্যঙ্গ করা হবে। যেমন করা হয়ে থাকে সাহিত্য, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে।’’ এই শ্লোগান ঝুলিয়ে রেখে ব্লগটির সর্বত্র অবর্ণনীয় নোংরামী সহকারে যাচ্ছেতাই ভাবে ইসলামকে অবমাননা করা হয়েছে। যেমন সম্প্রতি পোস্ট করা হয়েছে এমন কয়েকটি লেখার শিরোনাম ছিল এমন- ‘ইসলামী ইতরামি’, ‘নিঃসীম নূরানী অন্ধকারে’, ‘ধর্মাতুল কৌতুকিম’, ‘ইসলামে বর্বরতা’। শুধু তাই নয়, পবিত্র কুরআনের ভাষা অবিকল নকল করে ব্যঙ্গ প্যারোডি রচনা করা, হাদীছকে ‘হা-হা-হাদীছ’ বলে টিটকারীর মাধ্যমে যে জঘন্যতম বমন উদ্রেককারী বিকৃতরূচির লেখা তারা সেখানে স্থান দিয়েছে, তা জনস্বার্থে প্রকাশ করতে চাইলেও কোন মতেই বিবেকে সায় দিচ্ছে না। সেখানে সাইডট্যাবে বিজ্ঞাপন আকারে সংযুক্ত করা হয়েছে ৭টি সচিত্র কমিক ই-বুক। ব্যঙ্গ করে যেসব বইকে বলা হয়েছে ‘ধর্মকারী কিতাব’। এর মধ্যে সবচেয়ে বীভৎস কমিক বইটি রচিত হয়েছে ‘হজরত মহাউন্মাদ ও কোরান-হাদিস রঙ্গ’ শিরোনাম দিয়ে। জনৈক আব্দুল্লাহ আজীজ রচিত ২৬ পৃষ্ঠার বইটিতে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনচরিত নিয়ে এত অশ্লীল কার্টুনচিত্র আর জঘন্য কোলাজ রচনা করা হয়েছে, যা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে স্বচক্ষে দেখা সম্ভব নয়। নরকের কীট, সাক্ষাৎ শয়তান এই কুলাংগার কিভাবে এ দেশের মাটিতে বসে এমন একটি বই রচনার দুঃসাহস পেল, তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। এই ব্লগে নিহত ব্লগার রাজীবও ‘থাবা বাবা’ ছদ্মনামে লিখত। ‘নূরানী চাপা শরীফ’ শিরোনামে সে এখানে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-সহ মুসলমানদের ঈদ উৎসব নিয়ে জঘন্যতম কটূক্তি ও কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখেছে। যা ইতিমধ্যে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারনেটে তথাকথিত প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী নাস্তিকদের এই নোংরা ও কদর্য অপপ্রচার যে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তারা চায় এ দেশকে পুরোপুরি ধর্মহীন সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করতে। আর এই ধর্মহীনতার মধ্যেই তারা খুঁজতে চায় বাঙালীর নবজাগরণ (?)। বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখির সুতিকাগার খ্যাত ‘মুক্তমনা’র পরিচিতিতে লেখা হয়েছে-‘‘মুক্তমনা’র মাধ্যমে আমরা একদল উদ্যমী স্বাপ্নিক দীর্ঘদিনের একটি অসমাপ্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে পরিচালনা করছি, যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছে ‘চেতনামুক্তির’ লড়াই। যার মাধ্যমে জনচেতনাকে পার্থিব সমাজমুখী (অর্থাৎ ধর্মহীন) করে তোলা সম্ভব….আজ ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বাস (ধর্ম) এবং যুক্তির সরাসরি সংঘাতের ভিত্তিতে যে সামাজিক আন্দোলন বিভিন্ন ফোরামগুলোতে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে, মুক্তমনারা মনে করে তা প্রাচীনকালের ব্রাক্ষ্মণ-চার্বাকদের লড়াইয়ের মত বিশ্বাস ও যুক্তির দ্বন্দ্বেরই একটি বর্ধিত, অগ্রসর ও প্রায়োগিক রূপ। এ এক অভিনব সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যেন বাঙালীর এক নবজাগরণ ’’। এই ব্লগের প্রধান কর্ণধার স্বঘোষিত নাস্তিক অভিজিৎ রায় হল আমেরিকা প্রবাসী পিএইচডি ডিগ্রিধারী বর্ণবাদী হিন্দু। এই উগ্র ইসলামবিদ্বেষী বর্তমানে বাংলাদেশের নাস্তিকদের আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তার রচনায় ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’, ‘ধর্ম ও নিধর্ম সংশয়’, ‘স্বতন্ত্র রচনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’, ‘আলো হাতে চলিয়াছে অাঁধারের যাত্রী’ ইত্যাদি উগ্র নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার বইসমূহ। এতো গেল কেবল বাংলা ব্লগস্ফিয়ার। বর্তমানে ব্লগের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী, অবাধ ও স্বাধীন মুক্তমঞ্চ হিসাবে গড়ে উঠেছে ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসমূহ। যেখানে প্রতিদিন বহু ইসলামীবিদ্বেষী বাংলা পেজ খোলা হচ্ছে। সেসব পেজে সমানে ছড়ানো হচ্ছে হিংসা ও ঘৃণার বিষাক্ত মন্ত্র। পবিত্র কুরআনের আয়াতের অনুকরণে ব্যাঙ্গাত্মক প্যারোডি রচনা, রাসূল (ছাঃ)- কে গালিগালাজের সে সব দৃশ্য যাদের মধ্যে সামান্যতম ঈমানও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ না ঘটিয়ে পারবে না। শাহবাগ আন্দোলনে এই নাস্তিক ব্লগার গোষ্ঠীই প্রথম রাস্তায় নেমেছিল। ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ ছিল তাদের সাইনবোর্ড। কিন্তু অন্তরালে লুক্কায়িত ছিল ব্লগের ক্ষুদ্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এসে সমাজের বৃহত্তর অঙ্গনে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরী করার চেষ্টা এবং পরম কাংখিত সেই নাস্তিক্যবাদী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ বপন করা। যার মাধ্যমে এ দেশের গণমানুষের মন ও মনন থেকে ধর্ম নামক অনুষঙ্গটির শেষ শিকড়টিও তারা উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল। ‘একাত্তরের চেতনা’র মুলো ঝুলিয়ে এবং ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তারা মীমাংসা করে ফেলতে চেয়েছিল এ দেশের জাতীয় চেতনা ও সংস্কৃতিতে ইসলাম নামক এই ‘আরবীয় ধর্মে’র (?) আর কোন স্থান থাকবে কি না সেই প্রশ্নটিরও। এ কথা সত্য যে, এতকিছুর পরও বাংলাদেশে উঠতি নাস্তিকদের এই সীমাহীন দৌরাত্ম মূলতঃ ইন্টারনেট অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে সমাজে প্রকাশ্যে নাস্তিকতার চর্চা করার মত মেরুদন্ড যে এদের নেই, তা শাহবাগ আন্দোলনের ব্যর্থতায় পরিষ্কার। কিন্তু তাতে কি? শিক্ষিত উঠতি তরুণ সমাজের হাতে ইন্টারনেট এখন অনেক সহজলভ্য। ফলে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে তারাই সর্বপ্রথম এই নাস্তিকদের অপপ্রচার ও মগজধোলাইয়ের শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে তরুণদের মস্তিষ্ক বিকৃত করার জন্য আরজ আলী মাতুববর, আহমাদ শরীফ, হুমায়ূন আজাদদের অনুসারীদের সংখ্যা এ দেশে নিতান্তই কম ছিল না। তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবতাবাদী কবি- সাহিত্যিকরা এবং সেক্যুলার মিডিয়াগুলো এতদিন আড়ালে- আবডালে সংগোপনে সুকৌশলে নাস্তিকতা প্রচার করে আসছিল অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা ও মানবাধিকার প্রভৃতি সুরক্ষার জন্য কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ করে। কিন্তু বর্তমানের এই জঙ্গী সাইবার নাস্তিকরা তাদের চেয়ে বহু গুণে ভয়ংকর। যে দেশে দাউদ হায়দার, তাসলীমা নাসরীনদের ঠাঁই হয় না, সেই দেশে তাদের চেয়ে হাজার গুণ বর্বর এই উগ্র নাস্তিক গোষ্ঠী কীভাবে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে কি এর পিছনে কোন মহলের বিশেষ মিশন কাজ করছে? ২০১১ সালে আমেরিকার ‘সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস’ আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়া কিভাবে ছড়ানো হচ্ছে তার উপর ৬ মাস ব্যাপী তদন্ত চালায়। অতঃপর Fear, Inc. The Roots of the Islamophobia Network in America শিরোনামে ১৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি গবেষণা রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্ট মতে, আমেরিকার ৭টি সংস্থা গত ১০ বছরে ৪২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে। যার একটি বড় অংশ ব্যয় করা হয় ইন্টারনেটে ইসলামবিদ্বেষী ম্যাটেরিয়াল সমৃদ্ধ করা এবং বিভিন্ন ফোরাম ও ব্লগের মাধ্যমে হিংসা ছড়ানোর কাজে। সুতরাং এ দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য এই নাস্তিক চক্রকে বিশেষ কোন মহল পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কি না, তা অনতিবিলম্বে খতিয়ে দেখা যরূরী। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সরকার ‘সাইবার ক্রাইম’ বিষয়ক আইন করলেও সেখানে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট আইন আছে কি না, বা থাকলেও তা কতটুকু কার্যকর, তা বোঝার উপায় নেই। গত বছরের ২৫শে জানুয়ারী সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে একটি বিশেষ টিম গঠন করে বিটিআরসি। একই বছরের ২২শে এপ্রিল থেকে contact@csirt.gov.bd ঠিকানায় সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণ করা শুরু হয়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারও কোন কার্যকারিতা নেই। বর্তমানে রাজীব হত্যার পর বিটিআরসির আবারও কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দেশ ও জাতির সুরক্ষায় সরকার যদি এই চিহ্নিত নাস্তিক গোষ্টীর অপপ্রচার দমনে আন্তরিকভাবেই উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে, তবে তা হবে খুবই আশাব্যঞ্জক। একই সাথে ইন্টারনেট থেকে যুবসমাজের চরিত্র বিধ্বংসী যাবতীয় কন্টেন্ট ব্লক করে দেয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। পরিশেষে তরুণ সমাজকে বলব, ইসলামবিদ্বেষী মহল দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে ধর্মহীন করার জন্য সুকৌশলে দিবা- রাত্রি পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এতদিন তারা আমাদেরকে সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়েছে। আজ তারা আর রাখ-ঢাক না করে সরাসরি মুসলিম জাতির মূল চেতনাকেন্দ্র পবিত্র কুরআন ও রাসূল (ছাঃ)- কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্ত্ত বানিয়েছে। সুতরাং আর অপেক্ষার সময় নেই। এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য যেমন গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, ঠিক তেমনি এদের হাত থেকে সমাজকে বাঁচানোর জন্য এবং নিজেদের আমল-আক্বীদা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই। ব্লগ ও ফেসবুকে অপপ্রচারের খপ্পরে পড়ে অথবা কৌতুহলবশত আরজ আলী মাতুববর কিংবা হাল আমলের নাস্তিককুল শিরোমণি ক্রিস্টোফার হিচেন্স, রিচার্ড ডকিন্সদের বই-পত্র নাড়া-চাড়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থী তরুণরা যেন বিভ্রান্তির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে নাস্তিক্যবাদী ও মুখোশধারী কবি-সাহিত্যিকদের নষ্ট সাহিত্য অধ্যয়ন থেকে বিরত থাকতে হবে। আর অভিভাবকদেরও দায়িত্ব হবে কোনরূপ শিথিলতা না দেখিয়ে তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই ইসলামী চেতনায় সমুন্নত করা। যেন জীবনের উষালগ্নে তারা কোনরূপ বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত না হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এই নাস্তিকদের ষড়যন্ত্রকে রুখে দেওয়ার তাওফীক দান করুন এবং এদের কুটচাল থেকে এ দেশের মুসলিম সমাজকে হেফাযত করুন। আমীন!

অসুমলিমদের ব্যাপারে.............................

 

অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যায় কি?

অমুসলিমদের প্রথমে সালাম দেওয়া হারাম, বৈধ নয়। যেহেতু ‘সালাম’ কেবল ইসলাম ওয়ালাদের অভিবাদন। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ইয়াহুদি ও নাসাদেরকে প্রথমে সালাম দিও না। ওদের সাথে পথে দেখা হলে সংকীর্ণতার প্রতি বাধ্য কর।” কিন্তু ওরা যদি তোমাদেরকে প্রথমে সালাম দেয়, তাহলে তাঁর উত্তর দেওয়া আমাদের জন্য ওয়াজেব হবে।  যেহেতু সাধারণভাবেই আল্লাহ বলেন,

“আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা ওরই অনুরূপ উত্তর দেবে।”  (সূরা নিশা)
ইয়াহুদিরা মহানবী (সঃ) কে সালাম দিত, বলত, ‘আসসা-মু আলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ!’ (তোমার উপর মৃত্যু বর্ষণ হোক, হে মুহাম্মদ!)” ‘আসসা-মু  এর অর্থ মৃত্যু। তারা রাসুল (সঃ) কে মৃত্যুর বদদুয়া দিতেন। তাই নবী (সঃ) বললেন, “ইয়াহুদিরা বলে, ‘আসসা-মু আলাইকুম।’ সুতরাং ওরা যখন তোমাদেরকে সালাম দেবে, তখন তোমরা তাঁর উত্তরে বল, ‘আ আলাইকুম।”
অতএব যখন কোন অমুসলিম কোন মুসলিমকে সালাম দিয়ে বলে, ‘আসসা-মু আলাইকুম,’ তখন আমরা তাঁর উত্তরে বলব, ‘আ আলাইকুম’। উপরোক্ত তাঁর উক্তি ‘আ আলাইকুম’ এই কথার দলিল যে, যদি ওরা ‘তোমাদের উপর সালাম’ বলে, তাহলে তাদের উপরেও সালাম। সুতরাং ওরা যেমন বলবে, আমরাও ওদেরকে তেমনই বলব। এই জন্য কতক উলামা বলেছেন যে, ইয়াহুদি, খ্রিস্টান বা অন্য কোন অমুসলিম যখন স্পষ্ট শব্দে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলবে, তখন তোমাদের জন্য ‘ও আলাইকুম সালাম’ বলে উত্তর দেওয়া বৈধ।
অনুরূপ ভাবে অমুসলিমদেরকে প্রথমে স্বাগত জানানো, যেমন ‘আহলান অসাহালান  (স্বাগতম, খোশ আমদেদ, ওয়েলকাম প্রভৃতি) বলা বৈধ নয়। যেহেতু এতে তাদের সন্মান ও তা’যীম অভিব্যক্ত হয়। কিন্তু ওরা যখন প্রথমে তোমাদেরকে ঐ বলে স্বাগত জানাবে, তখন আমরাও তাদের অনুরূপ বলে উত্তর দেব। যেহেতু ইসলাম ন্যায়পরায়ণতা এনেছে এবং প্রত্যেক অধিকারীকে তাঁর  অধিকার দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর এ কথা বিদিত যে, আল্লাহ আযযা অ জাল্লার নিকটে মুসলমানরাই সন্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে সবচাইতে বড়। তাই প্রথমে অমুসলিমদেরকে সালাম দিয়ে নিজেদেরকে অপদস্থ করা উচিৎ নয়। অতএব উত্তরের সারমর্মে বলি যে, অমুসলিমদেরকে প্রথমে সালাম দেওয়া বৈধ নয়। যেহেতু নবী (সঃ) এ থেকে নিষেধ করেছেন এবং যেহেতু এতে মুসলমানদের জন্য লাঞ্ছনা আছে। কারণ সে এতে অমুসলিমকে তা’জিম ও সন্মান প্রদর্শন করে। অথচ আল্লাহর নিকট মুসলিমই সন্মানের দিক থেকে অধিক উঁচু। তাই এতে নিজেকে অপমানিত করা উচিৎ নয়। পক্ষান্তরে যখন ওরা আমাদেরকে সালাম দেবে, তখন আমরা তাদের অনুরূপ সালামের উত্তর দেব। তদনুরূপ প্রথমে স্বগত জানানোও বৈধ নয়। যেমন, ‘আহলান অসাহলান, মারহাবা’ ইত্যাদি। কেননা এতে ওদেরকে তা’জিম প্রদর্শন করা হয়। যা ওদেরকে প্রথমে সালাম দেওয়ারই অনুরূপ। (ইবনে উসাইমিন)

অমুসলিমের ঘরে পানাহার বৈধ কি ?

যদি পানাহারের জিনিস ইসলামে ‘হারাম’ না হয় এবং তা বৈধ পাত্রে পেশ করা হয়, তাহলে বৈধ। ইসলামের দিকে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে অমুসলিমের খাওয়া এবং খাওয়ানো দোষের  নয়। অবশ্য তাদের কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে ক্রয়ক্রীত বা প্রস্তুতকৃত কোন খাবার — তা মুলতঃ ‘হালাল’ হলেও খাওয়া বৈধ নয়।

Translate