Thursday, June 30, 2022

কখন “ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা শিরক আর কখন জায়েজ?

 প্রশ্ন: `ইয়া রাসুলুল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসূল) বলা জায়েজ কি?

উত্তর:
ইয়া রাসুলুল্লাহ অর্থ: হে আল্লাহর রাসূল! এটি উপস্থিত কাউকে উদ্দেশ্য করে সম্বোধন সূচক বাক্য।
যেমন: মানুষ জীবিত উপস্থিত কোনও ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে অথবা যাকে ডাকলে কথা শুনতে পায় এবং কথার উত্তর দেয় এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলা হয়-ইয়া ফুলান (হে অমুক।)।

◈ রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা জায়েজ হবে কি?

এ বাক্যটি কখনো কখনো বলা শিরক আর কখনো জায়েজ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:

◍ যখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা শিরক:

কেউ যদি এ বিশ্বাস থেকে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসুল) বলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করলে তিনি কবরে থেকেও তা শুনেন এবং বিপদাপদে সাহায্য করেন। তিনি সর্বত্র হাজির-নাজির, সর্ব শ্রোতা ও সর্ব দ্রষ্টা তাহলে তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এগুলো একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। আর আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনও বৈশিষ্ট্য তার মাখলুকের জন্য ব্যবহার করা হলে তাকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করার শামিল-যা শিরকে আকবর (বড় শিরক)।
বরং আমাদের বলা উচিৎ, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া গাফুর, ইয়া কুদ্দুস ইত্যাদি। কারণ একমাত্র আল্লাহই সাত আসমানের উপর থেকে প্রতিটি মাখলুকের ডাক শুনেন এবং তাদেরকে সাহায্য করেন। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর শান। কোনও মাখলুক সৃষ্টি জীবকে আল্লাহ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেন নি।

❑ ডাকতে হবে কেবল আল্লাহকে; কোনও নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ, জিন বা ফেরেশতাকে নয়:

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।” [সূরা আরাফ: ১৮০]

◈ তিনি আরও বলেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।” [সূরা গাফির/মুমিনুন: ৬০]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
“(এবং এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে), মসজিদসমূহ আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা জিন: ১৮]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
“আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভালো করবে না-মন্দও করবে না। বস্তুত: তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা ইউনুস: ১০৬]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ ‎﴿١٣﴾‏ إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَة
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না।” [সূরা ফাতির: ১৩ ও ১৪)

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذَا سَأَلْت فَاسْأَلْ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْت فَاسْتَعِنْ بِاَللَّهِ
“যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” [তিরমিযী: ২৫১৬, হাদিসটি সহীহ (হাসান) বলেছেন।]

এ সকল আয়াও হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, বিপদাপদে সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে হবে। কোনও মৃত ব্যক্তি, নবী, ওলি, ফেরেশতা, জিন বা কোনও অদৃশ্য শক্তি ইত্যাদিকে ডাকা যাবে না। অন্যথায় তা বড় শিরকে পরিণত হবে। আর শিরক হল, আল্লাহর নিকট ক্ষমাহীন ইমান বিধ্বংসী সবচেয়ে বড় অপরাধ। কেউ জেনে বুঝে তাতে লিপ্ত হলে, তার জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং জান্নাত চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।)

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করার পর কোনও বিপদাপদে বা সমস্যা-সংকটে সাহাবি বা তাবেয়িগন কখনও “ইয়া রাসূলাল্লাহ” (হে আল্লাহর রাসূল) বা “ইয়া নাবিয়াল্লাহ”(হে আল্লাহর নবী) বলে সম্বোধন করে তার নিকট সাহায্যের আবেদন করেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি।

❑ কখন কখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা জায়েজ?

নিম্নোক্ত ক্ষেত্র সমূহে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলা দূষণীয় নয়। যেমন:

ক. হাদিসে বর্ণিত কোনও দুআর মধ্যে যদি এ বাক্যটি আসে তাহলে তা পাঠ করতে কোনও সমস্যা নাই। যেমন:
তাশাহুদের দুআয় আমরা বলি, “আসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু” (হে আল্লাহর নবী, আপনার উপর সালাম বর্ষিত হোক)।
হাদিসে যেহেতু এভাবেই বর্ণিত হয়েছে সেহেতু তাতে কোনও আপত্তি নাই।

খ. হাদিসের ইবারতে এ বাক্যটি থাকলে তা পাঠ করতে কোনও আপত্তি নাই। কারণ বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহাবিগণ ইয়া রাসূলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসূল) বলে সম্বোধন করতেন।

গ. মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের সন্নিকটে উপস্থিতি হয়ে তার উপর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করার সময়।

যেমন:
মদিনা জিয়ারাত কারীগণ, তাঁর কবরের সন্নিকটে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এবং তার পার্শ্বে শায়িত তার দুই সহচর প্রথম খলিফা আবু বকর রা. এবং ২য় খলিফা উমর রা. এর কবরের উদ্দেশ্য বলে থাকেন,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর রা.”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া উমার রা.।”

এটা অবশ্যই জায়েজ। কারণ এখনে তারা তাদের কবরের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সালাত ও সালাম পেশ করছেন।
মোটকথা, অন্তরের বিশ্বাস এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলার বিধান বর্তাবে। কখনো তা শিরক হবে আর কখনো জায়েজ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা

 প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পালন করলে ৫০ জন সাহাবির সমপরিমাণ সাওয়াব পাব?

উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন মানেই শেষ জামানা। তার মানে এর পরে কোন নবী রাসুল আসবে না বা কোন আসমানি গ্রন্থ নাজিল হবে না এবং এরপরে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সুতরাং অবশ্যই আমরা শেষ জমানায় রয়েছি।

কিন্তু কখন কিয়ামত সংগঠিত হবে আমরা কেউ জানি না। এর নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
{ يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ}
“তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন।” [Surah Al-A`râf: 187]

এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলও উল্লেখযোগ্য।

🟢 শেষ জামানায় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অপরিসীম মর্যাদা:

নিঃসন্দেহে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা তথা তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি, সুন্নত ও নফল ইবাদতগুলো যথাসম্ভব সম্পাদন করা এবং হারাম ও বিদাআতি আচার-বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা।‌ সেই সাথে তা প্রচার-প্রসার করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

▪️যেমন:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الإِسْلامَ بَدَا غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ قِيلَ : وَمَنِ الْغُرَبَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ
সাহল বিন সা’দ সায়েদী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অল্পসংখ্যক মানুষ সহকারে যেভাবে ইসলামের সূচনা হয়েছে ঠিক সেভাবে অচিরেই অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে তা ফিরে-যেমন শুরুতে হয়েছিল।

সুতরাং শুভ সংবাদ (দুনিয়ায় সফলতা ও আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ) ঐ অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য।’’
জিজ্ঞাসা করা হল, এই সুসংবাদ প্রাপ্ত অল্প সংখ্যক লোক কারা হে আল্লাহর রসূল?
তিনি বললেন, যারা সংস্কার ও সংশোধনী মূলক কাজ করে যখন মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে বা মানুষ খারাপ হয়ে যায়।”
[আহমাদ ১৬৬৯০, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৫৫৪, আওসাত্ব ৩০৫৬-সহিহ]

▪️এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস হল, আবু সা’লাবাহ খুশানী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ الصَّبْرُ فِيهِ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِمْ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ قَالَ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ
“তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মতো। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?
তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্য হতে।”
[আবু দাউদ ৪৩৪৩, তিরমিযী ৩০৫৮, ইবনে মাজাহ ৪০১৪, ত্বাবারানী ১৮০৩৩, সহীহুল জামে’ ২২৩৪]

🚫 “উম্মতের বিশৃংখলার সময় সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মর্যাদা ১০০ শহিদের সমান” সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়:
এ সংক্রান্ত হাদিসটি আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত। বক্তাদের মুখেও আমরা তা অহরহ শুনতে পাই। কিন্তু‌ সম্মানিত মুহাদ্দেসিনের দৃষ্টিতে সনদের বিচারে উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়।
নিম্নে উক্ত হাদিস এবং তৎপ্রসঙ্গে মুহাদ্দিসিনে কেরামের গবেষণালব্ধ সনদ বিশ্লেষণ পেশ করা হল:
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر مائة شهيد
“যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিশৃঙ্খলার সময় আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য রয়েছে একশ শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব।”
[হাদিসটি যঈফ (দুর্বল)। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যইফা, হা/৩২৭]

সনদ বিশ্লেষণ:

عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر مائة شهيد )
أخرجه ابن عدي في “الكامل” (2/327) وسنده ضعيف جدا ، فيه الحسن بن قتيبة : متروك الحديث ، انظر ترجمته في “لسان الميزان” (2/246) ، وضعفه الألباني في “السلسلة الضعيفة” (326)

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( المتمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر شهيد )
أخرجه الطبراني في “الأوسط” (2/31) وعنه أبو نعيم في “حلية الأولياء” (8/200)
وفي سنده علتان :
1- تفرد عبد المجيد بن عبد العزيز بن أبي رواد ، ومثله لا يحتمل تفرده .
2- جهالة محمد بن صالح العذري : قال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (1/172) : لم أر من ترجمه .
ولذلك ضعفه الشيخ الألباني رحمه الله في “السلسلة الضعيفة” (327) .
পরিশেষে আমাদের কর্তব্য, চতুর্মুখী ফিতনা-ফাসাদের সয়লাবের মধ্যেও আল্লাহর দ্বীনকে শক্তভাবে ধারণ করা, চারদিকে অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে সত্যের পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং বিদআতের জয়জয়কারের মাঝেও রাসুলের সুন্নাহকে জীবনের ব্রত বানিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি এই পথে চলতে গিয়ে সকল ঝড়ঝঞ্জা, অগ্নিপরীক্ষা, বিপদ-আপদ এবং অপবাদ ও অপপ্রচারের সামনে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় পরম ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তবেই মিলবে প্রতিশ্রুত সফলতা এবং জান্নাতের সুসংবাদ‌। সেই সাথে মিলবে সাহাবিদের ৫০ জন ব্যক্তির সমতুল্য সওয়াব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।‌ আমিন।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

একটি মাছির কারণে জাহান্নাম মর্মে ব্যাপক প্রচলিত হাদিস বিষয়ে জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণী ও ভ্রান্তি নিরসন

 মাছির হাদিসটি আমাদের সমাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে প্রচলিত। অনেক বক্তাও শিরকের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে যথাযথ তাহকীক না করে এ ঘটনাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে পেশ করে থাকেন। কিন্তু তা ঠিক নয় বরং সঠিক হল, এটি সালমান ফারেসী রা. এর উক্তি মাত্র।

ঘটনাটি নিম্নরূপ:
روى الإمام أحمد في “الزهد” (84) قال: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ قَالَ: ( دَخَلَ رَجُلٌ الْجَنَّةَ فِي ذُبَابٍ، وَدَخَلَ النَّارَ رَجُلٌ فِي ذُبَابٍ.

قَالُوا: وَكَيْفَ ذَلِكَ؟

قَالَ: مَرَّ رَجُلَانِ عَلَى قَوْمٍ لَهُمْ صَنَمٌ لَا يَجُوزُهُ أَحَدٌ حَتَّى يُقَرِّبَ لَهُ شَيْئًا، فَقَالُوا لِأَحَدِهِمَا: قَرِّبْ! قَالَ: لَيْسَ عِنْدِي شَيْءٌ، فَقَالُوا لَهُ: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا! فَقَرَّبَ ذُبَابًا، فَخَلَّوْا سَبِيلَهُ.

قَالَ: فَدَخَلَ النَّارَ. وَقَالُوا لِلْآخَرِ: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا! قَالَ: مَا كُنْتُ لِأُقَرِّبَ لِأَحَدٍ شَيْئًا دُونَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، قَالَ: فَضَرَبُوا عُنُقَهُ، قَالَ: فَدَخَلَ الْجَنَّةَ ) .
তারিক বিন শিহাব সালমান রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘‘এক ব্যক্তি একটি মাছিকে কেন্দ্র করে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছিকে কেন্দ্র করে জাহান্নামে গিয়েছে।
শ্রোতাগণ প্রশ্ন করলেন, তা কীভাবে?

তিনি বললেন, (পূর্বযুগে) দু জন লোক এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল যাদের একটা মূর্তি ছিল। কোনও ব্যক্তিকে সে স্থান ত্যাগ করার সুযোগ দেয়া হত না যতক্ষণ না সে উক্ত মূর্তির উদ্দেশ্যে কিছু নজরানা পেশ করে।

যাহোক, তারা দু জনের একজনকে বলল, নজরানা পেশ কর।
সে বলল, আমার কাছে কিছুই নেই।
তারা বলল, একটা মাছি হলেও পেশ করো।

অতঃপর সে একটা মাছি নজরানা দিলে তারা তার পথ ছেড়ে দিলো।

তিনি বললেন, এর ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।

অপর ব্যক্তিকে তারা বলল, ‘‘মূর্তির উদ্দেশ্যে একটা মাছি হলেও নজরানা পেশ করো।
সে বলল, আমি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে নজরানা দেই না।
এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিলো।

তিনি বলেন, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল।
[মুসনাদে আহমদ, অধ্যায়: যুহুদ/৮৪]

এ হাদিসে দেখা গেল, মুসনাদে আহমদে এটি সাহাবি সালমান ফারেসী রা. বক্তব্য হিসেবেই উল্লেখিত হয়েছে এবং শাইখ আলবানী সহ অন্যান্য মুহাক্কিক মুহাদ্দিসগণ এটিকে موقوف (মাওকুফ) তথা সালমান ফারেসী রা. এর বক্তব্য হিসেবে সহিহ বলেছেন; مرفوع (মারফু) তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নিঃসৃত হাদিস হিসেবে নয়। [দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যাইফাহ ১২/ ৭২২]

সুতরাং তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে প্রচার করা জায়েজ নাই। অন্যথায় তা তাঁর নামে মিথ্যাচার বলে গণ্য হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)।

❑ আর এ ঘটনার বিধান কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়:

◍ এক. আলেমগণ বলেন, সালমান ফারেসী রা. হয়ত খৃষ্টান থাকা অবস্থায় খৃষ্টান পাদ্রীদের থেকে তা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এটি ইসরাইলি বর্ণনা। যেমন: শাইখ আলবানী বলেন,
” إلا أنه يظهر لي أنه من الإسرائيليات التي كان تلقاها عن أسياده حينما كان نصرانيا ” انتهى، من “سلسلة الأحاديث الضعيفة” (12 / 722)
“তবে আমার মনে হয়, এটি ইসরাইলি বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত যা তিনি খৃষ্টান থাকা অবস্থায় খৃষ্টান পাদ্রীদের থেকে গ্রহণ করেছেন। [দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যাইফাহ ১২/ ৭২২]

সুতরাং ঘটনাটি সত্য-মিথ্যা কোনটাই বলার সুযোগ নাই। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تُصَدِّقُوا أَهْلَ الكِتَابِ وَلا تُكَذِّبُوهُمْ ، وَقُولُوا: ( آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا ) الآيَةَ
“তোমরা আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খৃষ্টানদেরকে সত্য বা মিথ্যা কোনটাই বল না। বরং বল, “আমরা আল্লাহ এবং আমাদের উপর যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছি।’’ (সূরা বাকারা: ১৩৬)
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৯৭/ তাওহীদ, পরিচ্ছেদ: ৬৫/২/১১. মহান আল্লাহর বাণী: তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি।]

◍ দুই. তাছাড়া এ বক্তব্যটি কুরআনের আয়াত ও অন্যান্য সহিহ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক-যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, শত্রুর কবলে জীবন বিপন্ন হওয়া বা বড় ধরণের ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট রেখে আত্ম রক্ষার্থে বাহ্যিক ভাবে শিরকি বা কুফরি কাজ করলে বা কথা উচ্চারণ করলেও তাতে ঈমান নষ্ট হয় না। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَن كَفَرَ بِاللَّـهِ مِن بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَـٰكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللَّـهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরির জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।” [সূরা আন নহল: ১০৬]
-প্রখ্যাত তাফসীর বিদ আবু বকর আল জাসসাস বলেন,
هذا أصل في جواز إظهار كلمة الكفر في حال الإكراه
“বাধ্যতামূলকভাবে কুফরি বাক্য উচ্চারণ জায়েজ হওয়ার পক্ষে এই আয়াতটি মূল দলিল।“ [আহকামুল কুরআন ৩/১৯২]
– বিশিষ্ট মুফাসসির ইমাম বাগভি রহ. তার তাফসীর গ্রন্থে বলেন,
وأجمع العلماء على: أن من أكره على كلمة الكفر، يجوز له أن يقول بلسانه
“এটি আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত যে, কাউকে যদি কুফরি কথা বলার জন্য জবরদস্তী করা হয় তার জন্য তা মুখে উচ্চারণ করা জায়েজ।“ [তাফসীরে বাগভী- মাআলিমুত তানযিল ৫/৪৬]

আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عُفِيَ لأمَّتي عن الخطأِ والنِّسيانِ وما استُكرِهوا عليهِ
“আমার উম্মতের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভুল, স্মরণ না থাকার কারণে ঘটে যাওয়া গুনাহ এবং জোরজবরদস্তি মূলক কৃত অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” [ইবনে হাযম রা. রচিত আল মুহাল্লা, তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন]

◍ তিন. অথবা বলা যেতে পারে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্ব যুগের শরিয়তের বিধান ছিল কিন্তু এই উম্মতের জন্য তা রহিত করা হয়েছে-উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে।

❑ একটি হাদিসের ব্যাখ্যা:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تُشركْ باللهِ شيئًا وإنْ قُطِّعتَ أو حُرِّقتَ
“আল্লাহর সাথে কোনও কিছুকে শরিক করবে না যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা
আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়” [সহীহুত তারগীব, হাসান লি গাইরিহ]

মুহাদ্দিসগণ এ হাদিসের দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হল:

❂ ১. তোমাকে হত্যা বা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলেও আন্তরিকভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। অর্থাৎ মন থেকে শিরককে মেনে নিবে না।

❂ ২. কেউ যদি নিহত বা ভস্মীভূত হওয়ার পরও শিরক না করে তাহলে তা উত্তম। এতে সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে এবং আল্লাহ তাকে আখিরাতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কিন্তু কারও ঈমান যদি এতটা মজবুত না হয় বা সহ্য ক্ষমতা না থাকে তাহলে তার জন্য জায়েজ আছে যে, সে বাহ্যিক ভাবে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে শিরক বা কুফরি করবে কিন্তু অন্তরের দিক দিয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান সুদৃঢ় রাখবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

কাজা সালাতে আজান ও ইকামতের বিধান

 প্রশ্ন: “কাজা সালাতে ইকামতের প্রয়োজন নেই” একথা কি হাদিস সম্মত? দলিল সহ জানতে চাই।

উত্তর:
“কাজা সালাতে ইকামত এর প্রয়োজন নেই” এ কথা হাদিস সম্মত নয়। বরং একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কাজা সালাতেও ইকামত দেওয়া সুন্নত।
কোন সালাত যথাসময়ে পড়তে না পারলে অনতিবিলম্বে তা কাজা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, ইকামত দেওয়ার পর ফরজ সালাতগুলো যথা নিয়মে আদায় করা। (পাশাপাশি যেসকল সালাতের আগে ও পরে সুন্নত সালাত রয়েছে সেগুলোও আদায় করা।)

এই মর্মে দুটি হাদিস এবং একটি ফতোয়া পেশ করা হল: وبالله التوفيق

🟢 হাদিসে এসেছে:
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ إِنَّ الْمُشْرِكِينَ شَغَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَتَّى ذَهَبَ مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللَّهُ فَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَذَّنَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْمَغْرِبَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعِشَاءَ ‏”.
আবূ উবাইদা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. বলেছেন, খন্দক যুদ্ধে মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চার ওয়াক্ত সালাত হতে ব্যতিব্যস্ত করে দেয়।
পরিশেষে আল্লাহর ইচ্ছায় যখন রাতের কিয়দংশ অতিবাহিত হয়ে গেল তখন তিনি বিলাল রা. কে আজান দেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আজান দিলেন অতঃপর ইকামত বললেন৷
প্রথমে জোহরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি আসরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি ইশার সালাত আদায় করালেন।
[আল ইরওয়া-(১/২৫৭), অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: যার একাধারে কয়েক ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেছে সে কোন ওয়াক্ত থেকে শুরু করবে? হাদিস নং ১৭৯- হাসান]

🟢 অন্য একটি হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ فَسَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَنَا الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلاَلٍ ‏”‏ اكْلأْ لَنَا اللَّيْلَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَغَلَبَتْ بِلاَلاً عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ بِلاَلٌ وَلاَ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ يَا بِلاَلُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ أَخَذَ بِنَفْسِي الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاقْتَادُوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ لَهُمُ الصَّلاَةَ وَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ قَالَ ‏”‏ مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ ‏{‏ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِّكْرَى ‏}‏ ‏” ‏
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল রা. কে বলেন, “তুমি জেগে থাকবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে।”
কিন্তু বিলাল রা.ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিলাল এবং তাঁর সহাবিদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের উত্তাপ তাদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন। অতঃপর অস্থির হয়ে বললেন, “কী হলো বিলাল!”
তিনি বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন।”

অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওজু করলেন এবং বিলাল রা. কে নির্দেশ দিলে তিনি ইকমত দিলেন।
অতঃপর তিনি সকলকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় শেষে বললেন, “কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত সালাত আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার স্মরণার্থে সলাত প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরা ত্বা-হা: ১৪)
[মুসলিম, আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়: অনুচ্ছেদ-১১
কেউ সালাতের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা সালাতের কথা ভুলে গেলে, হাদিস নং ৪৩৫-সহিহ]
সুনানে বায়হাকী বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ঘটনায়
فَصَلَّى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى صَلَاةَ الْغَدَاةِ”
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দু রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেছেন, তারপর ফরজ আদায় করেছেন।”

🔶 শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وَلَيْسَ الْأَذَانُ بِوَاجِبٍ لِلصَّلَاةِ الْفَائِتَةِ، وَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ أَدَاءً أَوْ قَضَاءً وَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَإِنْ اكْتَفَى بِالْإِقَامَةِ أَجْزَأَهُ، وَإِنْ كَانَ يَقْضِي صَلَوَاتٍ فَأَذَّنَ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَأَقَامَ لِبَقِيَّةِ الصَّلَوَاتِ كَانَ حَسَنًا أَيْضًا.
“ছুটে যাওয়া কাজা সালাতের ক্ষেত্রে আজান ওয়াজিব নয়। যদি কেউ একাকী যথাসময়ে অথবা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাযা হিসেবে সালাত আদায় করে তাহলে (প্রথমে) আজান দিবে, অতঃপর ইকামত দিবে। এটা ভালো। আর যদি কেবল আজান দেয় (ইকামত না দেয়) তবেও যথেষ্ট হবে। আর যদি একাধিক ওয়াক্তের কাজা সালাত পড়ে তাহলে প্রথমবার আজান দেবে, অতঃপর বাকি সালাতের ক্ষেত্রে ইকামত দিবে। এটাও উত্তম।” [আল ফাতাওয়া আল-কুবরা]
والله أعلم
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সালাতের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার এবং প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাত যথাসময়ে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

==========
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব

 প্রশ্ন: ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর :
১) প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য ইবাদতের মৌসুমগুলোতে খাঁটি ভাবে তওবা করা এবং পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকা। কারণ, পাপাচার মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে শুধু বঞ্চিতই রাখে না বরং আল্লাহ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়।

২) আরও কর্তব্য হল, আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে এমন কাজগুলোকে গনিমত মনে করে সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। যে আল্লাহর কথাকে বিশ্বাস করবে আল্লাহ তার ব্যাপারে তাঁর ওয়াদাকে বাস্তবায়ন করবেন। তিনি ওয়াদা করেছেন:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

“যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা ও সাধনা করবে আমি অবশ্যই তাকে আমার রাস্তাগুলো দেখাবো।”
(সূরা আনকাবূত: ৬৯)

যিলহজ্জের প্রথম দশকে যেসব আমল করা মুস্তাহাব:

১. সালাত: ফরয সালাতগুলো যথাসময়ে সম্পাদন করার পাশাপাশি প্রচুর নফল সালাত আদায় করা। কারণ, সালাতই হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ সেজদা কর (নফল সালাত আদায় কর), কারণ যখনই তুমি সেজদা কর বিনিময় আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং গুনাহ মোচন করেন।” (মুসলিম) এটি কেবল যিলহজ মাস নয় বরং অন্য সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।

২.সিয়াম: রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই ফযিলতের। হুনাইদা বিন খালেদ তার স্ত্রী থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী) ইমাম নববী যিলহজ্জ মাসের শেষ দশ দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব।

৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ করা: ইবনে ওমর রা. এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে, তোমরা বেশি বেশি তাকবীর (আল্লা-হু আকবার), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ), ও তাহমীদ (আল হামদু লিল্লা-হ) পড়া। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইবনে ওমর রা. এবং আবু হুরায়রা রা. এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারে বের হতেন, আর মানুষরাও তাদের দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবনে উমর রা, মিনায় তাঁর তাঁবুতে তাকবীর বলতেন, তা শুনে মসজিদের লোকেরা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।

ইবনে উমর রা. মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে, তাঁবুতে, বিছানায়, বসার স্থানে, চলার পথে সর্বত্র তাকবীর পাঠ করতেন।

এ তাকবীরগুলো উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা মুস্তাহাব। কারণ, সাহাবী উমর রা., তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., আবু হুরায়রা রা. তা উচ্চ আওয়াজে পাঠ করতেন।

মুসলমানদের উচিত এ সুন্নতটি পুনর্জীবিত করা, যা বর্তমান যুগে প্রায় হারিয়ে গেছে এবং দু:খ জনক হলেও সত্য, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নেককার লোকেরাও এটি প্রায় ভুলতে বসেছে। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

তাকবীর বলার নিয়ম: নিন্মোক্ত যে কোন পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা যায়:

✔ক) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবীরা।
✔খ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
✔গ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

৪. আরাফার দিন রোজা: আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।” (মুসলিম) তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজীদের জন্য রোযা রাখা মুস্তাহাব নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজা বিহীন অবস্থায়।

৫. কুরবানির দিন (দশম যিলহজ্জ) এর মর্যাদা: এই মহান দিনটির মর্যাদার ব্যাপারে অনেক মুসলমানই অসচেতন। কতিপয় বিদ্বান এ মত ব্যক্ত করেছেন যে, সাধারণভাবে সারা বছরের মধ্যে-এমনকি আরাফার দিনের চেয়েও নহর তথা কুরবানির দিন উত্তম।

ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন নহরের দিন। এটিই হল, হজ্জে আকবর (বড় হজ্জ) এর দিন। যেমন সুনানে আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মহিমান্বিত দিন হল নহর তথা কুরবানির দিন। অতঃপর কুরবানির পরের দিন (অর্থাৎ যিলহজ্জের এগারতম দিন যে দিন হাজীগণ কুরবানি করার পর মিনায় অবস্থান করেন)।

অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, নহরের দিনের চেয়ে আরাফার দিন উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোন দিন করেন না। আরও এ জন্যও যে, আল্লাহ তায়ালা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক। কারণ, হাদিস তারই প্রমাণ বহন করে। এর বিরোধী কিছু নেই।

যাহোক, সর্বোত্তম দিন চাই কুরবানির দিন হোক অথবা আরাফার দিন হোক যারা হজ্জে গমন করেছেন বা যারা করেন নি সবার জন্য উচিৎ হল, সে দিনের ফযিলত অর্জনের চেষ্টা করা এবং এই সুযোগকে কাজে লাগানো।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক: শায়খ আব্দুল মালিক আল-কাসেম
সম্পাদনায়: শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল জিবরীল
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার।

Thursday, June 16, 2022

সালাতের মাকরূহ বা অপছন্দীয় কাজ সমূহ

 প্রশ্ন: সালাতের মাকরূহ কাজগুলো কী কী? এতে কি সালাত ভঙ্গ হয়ে যায়?

উত্তর:
মাকরূহ শব্দের অর্থ: অ পছন্দনীয়। এতে সালাত ভঙ্গ হয় না বা তাতে কোনও গুনাহ নেই কিন্তু না করা ভালো। সালাতের বিনয়-নম্রতা এবং সৌন্দর্য রক্ষায় এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
নিম্নে সর্বাধিক প্রচলিত দশটি মাকরূহ বিষয় উল্লেখ করা হল:
১. সালাত রত অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে আড় চোখে উপরের দিকে বা ডানে-বামে তাকানো।
২. বিনা প্রয়োজনে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা। তবে নামাজির সামনে যদি এমন কিছু থাকে যার কারণে সে দিকে বারবার দৃষ্টি চলে যায় তাহলে চোখ বন্ধ করায় কোনও দোষ নেই।
৩. তাশাহুদের বৈঠকে ইকা (إيقاع) করা। এর একাধিক পদ্ধতি আছে। যেমন:
ক. দু পায়ের পিঠ মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে দুই গোড়ালির উপর বসা।
খ. পায়ের আঙ্গুলগুলো মাটিতে রেখে গোড়ালি দ্বয় খাড়া রেখে এতদুভয়ের মাঝে নিতম্ব রেখে বসা।
গ. দুই পায়ের পাতা খাড়া রেখে দু পায়ের গোড়ালির উপর বসা। (এটি দুই সেজদার মাঝে কখনো কখনো করা সুন্নত। কিন্তু তাশাহুদের বৈঠকে করা মাকরূহ।)
৪. পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে সালাত আদায় করা।
৫. পেটে ক্ষুধা নিয়ে খাবারের উপস্থিতিতে সালাত আদায় করা।
৬. মাটিতে দু বাহু বিছিয়ে সেজদা দেওয়া।
৭. সালাতে আঙ্গুল ফুটানো বা আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করানো।
৮. কোমরে হাত বেঁধে দাঁড়ানো।
৯. এক পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা।
১০. অনর্থক কাজ। যেমন: বিনা প্রয়োজনে দাড়ি, হাত, পা, কাপড় ইত্যাদি নড়াচড়া করা, শরীর মুচড়া-মুচড়ি করা এবং বিনা প্রয়োজনে সেজদার স্থান বা কপাল থেকে ধুলাবালি ঝাড়া ইত্যাদি।
কেউ বেখেয়ালে এসব করলে তার উচিৎ, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে সতর্ক হওয়া এবং তা অব্যাহত না রাখা। অন্যথায় এতে সালাত ভঙ্গ না হলেও তা মাকরূহ বা অ পছন্দনীয় কাজ হিসেবে গণ্য হয়। এতে সালাতের সওয়াব কমে যাবে। কারণ মুমিন ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতা, বিনয় ও ভয়-ভীতি সহকারে সালাত আদায় করতে নির্দেশিত।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

খিটখিটে মেজাজ সমাধানে কিছু পরামর্শ

 প্রশ্ন: আমার মেজাজ সব সময় অনেক খিটখিটে হয়ে থাকে। সব সময় কেমন জানি রাগ উঠেই থাকে। আমি অনেক চেষ্টা করি তবুও কন্ট্রোল করতে পারি না। মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে সব সময়। আমি কী করলে আমার খিটখিটে মেজাজ ভালো হবে? প্লিজ দয়া করে উত্তর টা দিবেন।

উত্তর:
আমাদের জানা দরকার যে, বিভিন্ন কারণে মানুষের মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যেমন: রোগ-ব্যাধি, ঘুম কম হওয়া, পারিবারিক সমস্যা, কর্মস্থলে বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত কোনও ঘটনা, মানসিক চাপ, অস্থিরতা, অশান্তি, দুঃখ-কষ্ট, টেনশন, মহিলাদের পিরিয়ড কালীন সময় ইত্যাদি। সুতরাং কী কারণে আপনার এমনটি ঘটছে তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

যদি শারীরিক রোগ-ব্যাধির কারণে এমনটি ঘটে তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর যদি কোন কারণে অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করেন বা মানসিক অশান্তিতে থাকেন তাহলে তা চিহ্নিত করে তা থেকে মুক্তি লাভের উপায় খুঁজতে হবে। বিশেষ কোনও সমস্যা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং মানসিক প্রশান্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

❑ খিটখিটে মেজাজ মুহূর্তেই ভালো করবে চার খাবার:

দৈনিক কালের কণ্ঠ (অনলাইন) লিখেছে,
টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে এমন কিছু খাবারের কথা, যা আপনার মেজাজ ভালো করে, তরতাজা ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেয়া যাক সে খাবারগুলো সম্পর্কে-

◍ চকলেট:

চকলেটে ফিনাইলিথ্যালাইমিনের বেশ কয়েকটি কার্যকর মিশ্রণ রয়েছে যা এন্ডোরফিন এবং আনন্ডামাইডকে বাড়ায়। চকলেট সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা দেখায় যে, এটি মেজাজ এবং জ্ঞানকে উন্নত করতে পারে, পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস।

◍ বাদাম:

আখরোট, চিনা বাদাম, পেস্তা, কিসমিসের আশ্চর্যজনক পুষ্টিমান রয়েছে। এগুলো অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করা উচিত। এগুলো ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পূর্ণ সুপার হেলথ খাবার।কাজু বাদাম এবং অন্যান্য বাদাম অল্প করে খান যাতে আপনার কার্ব এবং ক্যালোরি স্তর ঠিক থাকে। সকাল ১১টার দিকে একমুঠো মিশ্র বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা। বাদামে আপনার মেজাজ, ত্বক এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।

◍ ডিম:

আমরা সবাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা ডিম খেতে পছন্দ করি। সুসংবাদ হল; ডিম খেলে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি ১২ বেশি থাকে এবং কোলিনযুক্ত থাকে, এটি এমন একটি পুষ্টি যা স্নায়ুতন্ত্রকে সমর্থন করে। যা আপনার মেজাজ ভালো রাখতে কাজ করে। এছাড়াও ডিম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এটি খাওয়ার অনেক পদ্ধতি রয়েছে।

◍ অ্যাভোকাডো এবং বেল পেপার (ক্যাপসিকাম):

অ্যাভোকাডোর পুষ্টিকর ফ্যাট এবং সুপার ক্রিম যুক্ত টেক্সচার মেজাজ ভালো রাখার খাবার হিসেবে বিবেচিত। এতে ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ৫, ফাইবার, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই খাবার ভিটামিন এবং পুষ্টি নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষ করতে সাহায্য করে। রঙিন বেল পেপার (ক্যাপসিকাম) রাখুন খাবারের তালিকায়। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি বেশি রয়েছে যা মেজাজ উন্নত করতে ও সঙ্কট হ্রাস করতে সাহায্য করে।
আল্লাহ আপনার মানসিক অবস্থা ঠিক করে দিন এবং সমস্যা থেকে মুক্তি দান করুন- আমরা সে জন্য দোয়া করি। এছাড়াও নিম্নোক্ত লেখাগুলো পড়ার অনুরোধ করছি।।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?

 প্রশ্ন: সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?

উত্তর:
স্ত্রী সহবাসের সময় আজান শুনলে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করবে। তবে এ সময় মুখে উচ্চারণ করে আজানের জবাব দেয়া সমীচীন নয়।
ইমাম নওবি রহ. বলেন,
ويكره للقاعد على قضاء الحاجة أن يذكر الله تعالى بشيء من الاذكار فلا يسبح ولا يهلل ولا يرد السلام ولا يشمت العاطس ولا يحمد الله تعالى اذا عطس ولا يقول مثل ما يقول المؤذن. قالوا وكذلك لا يأتي بشيء من هذه الأذكار في حال الجماع، وإذا عطس في هذه الاحوال يحمد الله تعالى في نفسه ولا يحرك به لسانه. وهذا الذي ذكرناه من كراهة الذكر في حال البول والجماع هو كراهة تنزيه لا تحريم فلا إثم على فاعله. انتهى.
“প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বসা অবস্থায় সময় কোনও প্রকার আল্লাহর জিকর-আজকার করা মাকরুহ (অ পছন্দনীয়)। সুতরাং এ সময় মুখে উচ্চারণ করে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (ইত্যাদি জিকির-আজকার) পাঠ করা, সালামের জবাব দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া, হাঁচি দিলে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করা এবং মুয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেয়া যাবে না। এ অবস্থায় হাঁচি দিলে মনে মনে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। জিহ্বা নাড়িয়ে উচ্চারণ করবে না।
উল্লেখিত বিষয়গুলো পেশাব-পায়খানা এবং স্ত্রী সহবাস রত অবস্থায় করা মাকরুহ তানযিহি; তাহরিমি নয়। সুতরাং কেউ তা করলেও গুনাহ হবে না।” (শরহে মুসলিম)
তবে রমজান মাসে ফজরের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করার পর ফজরের আজান শুনার সাথে সাথে সহবাস থেকে বিরত হওয়া আবশ্যক। এর পরে সহবাস অব্যাহত রাখা জায়েজ নেই। অন্যথায় উক্ত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং এ কারণে তওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি কাফফারাও দিতে হবে।
তবে নফল রোজার ক্ষেত্রে স্ত্রী সহবাস বন্ধ করা আবশ্যক নয়। এ ক্ষেত্রে তা অব্যাহত রাখলে উক্ত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে সম্ভব হলে তা পরবর্তীতে কাজা করে নেয়া উত্তম। এতে কোনও কাফফারা নেই।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দু হাত উত্তোলন করে দুআ করার বিধান

 প্রশ্ন: কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কি দু হাত উত্তোলন করে দুআ করার বিধান কি?

উত্তর:
হ্যাঁ, কবর জিয়ারতে গিয়ে একাকী হাত তুলে দুআ করা জায়েজ আছে। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ
“তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে (মদিনার বাকি গোরস্থানে) দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিনি তিনবার হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ১২। জানাজা, পরিচ্ছেদ: ৩৫. কবরে প্রবেশের সময় কী বলবে এবং কবর বাসীর জন্য দুআ প্রসঙ্গে]

◈ ইমাম নওবী রাহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
فيه : استحباب إطالة الدعاء وتكريره ، ورفع اليدين فيه . وفيه : أن دعاء القائم أكمل من دعاء الجالس في القبور
“এ হাদিস যে সব বিষয় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে:
● ১. দুআ লম্বা করা, তা বারবার করা এবং তাতে দু হাত উত্তোলন করা মুস্তাহাব।
● ২. আরও রয়েছে, কবরে বসে থাকা ব্যক্তির দুআর চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দুআ অধিক উত্তম। [শরহে মুসলিম]

◈ শাইখ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, মৃতের কবরে হাত তুলে দুআ করার বিধান কী?
তিনি উত্তরে বলেন,

إن رفع يديه فلا بأس؛ لما ثبت عن النبي ﷺ في حديث عائشة رضي الله عنها: أنه ﷺ زار القبور ورفع يديه ودعا لأهلها رواه مسلم

“যদি হাত উত্তোলন করে তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দু হাত উত্তোলন করে দুআ করেছেন।” (সহিহ মুসলিম)।
তবে কবর জিয়ারত করতে গিয়ে অথবা দাফন করার পরপর মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সম্মিলিত দুআ করা শরিয়ত সম্মত নয়। বরং প্রত্যেকে নিজে নিজে দুআ করবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন,
الدعاء الجماعي عند القبر ليس له أصل

“কবরের নিকট সম্মিলিত দুআ করার কোনও ভিত্তি নাই।” মৃতকে কবরের দাফন করার পরপর দুআ করার ক্ষেত্রেও তিনি বলেন, “প্রত্যেকেই নিজে নিজে দুআ করবে। প্রত্যেকই বলবে, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া করো, তাকে (কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের) সঠিক উত্তর দেওয়ার শক্তি দাও এবং তাতে সুদৃঢ় রাখো ইত্যাদি।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]

◈ শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিজাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দুআ করার সময় দু হাত উত্তোলন করা করা কি জায়েজ?
তিনি উত্তরে বলেন,
نعم , لا بأس. الأصل فى الدعاء أن ترفع فيه الأيدي إلا ما ورد أن الرسول دعا ولم يرفع يديه
“হ্যাঁ, এতে কোনও সমস্যা নেই। কেননা দুআর ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, এতে হাত উঠানো উচিত। তবে যে সব ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন কিন্তু হাত উঠাননি সেসব ক্ষেত্রে ব্যতিরেকে।” [ইউটিউব চ্যানেল: ডক্টর আল্লামা সালেহ আল ফাউযান]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।

পরিবারে থাকলে যদি ঈমানে সমস্যা মনে হয় তাহলে কি করব?

 প্রশ্ন: গত ২ মাস ধরে অনেক ধরনের প্রশ্ন মাথায় এসেছে। সবচেয়ে বড় কিছু প্রশ্ন হল মেয়েদের পড়াশুনা নিয়ে, খাবার দাবার, ওষুধপত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে শিরক নিয়ে আর পাক পবিত্রতা নিয়ে। আর হালাল হারাম খাদ্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমার পরিবারের সদস্যদের ইসলামের জ্ঞান কম। পাক নাপাকি বিষয়ে সচেতন না আবার অজান্তে কুফরিও করে।তাদের সাথে থাকতে গেলে ইমানে সমস্যা মনে হতে থাকে। তাদেরকে যে বুঝাবো সে কথা তারা মানবে কিনা তাও জানি না। এমতাবস্থায় নামাজও পড়তে পারছি না। তাদের কাছে হয়ত মনে হয় আমি বাড়াবাড়ি করি। একজন বলে যে

এই ১৪ বছর বয়সেই পাক নাপাকির মাসায়ালা জানার দরকার নেই।কিন্তু আমি অনেক নিশ্চিত যে নাপাক আছে আমাদের ঘরে। কিন্তু আমি স্টুডেন্ট হওয়ায় তারা আমাকে কাজও করতে দেয় না। দুনিয়ার সাফল্যের জন্য শুধু পড়াশুনাটাই কি প্রধান কাজ?

আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে:
পরিবারে থাকলে যদি ঈমানে সমস্যা মনে হয় তাহলে কি করব? কথা কম বলতাম মাঝখানে, তারা আমাকে এসে বুঝায় যে তাদের সাথে কথা বললে মন ভাল হবে, বান্ধবীদের সাথে মিশতে। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলতে গেলেই মনে হয় কুফর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চুপচাপ থাকার কারনে তারা আমার কথাও শুনবে কিনা জানিনা।
এখন মনে হয় সব জায়গাতেই নাপাকি লেগে আছে, আগে অজ্ঞতাবশত, এখন জানা থাকার পরেও অপারগতার বা অলসতার দরুন। কাজের বুয়াকে দিয়ে কাপড় ধুয়ানো হয়। সে একজনের বাসা থেকে কাজ করে আসে, আমার জানামতে সেই বাসার মহিলা একজন পাক নাপাকি নিয়ে সচেতন না। আল্লাহ জানে।

এই অবস্থায় কি করব একটা পরামর্শ চাচ্ছি। আর কম কথা বলি তাদের সাথে, তাই ইসলাম বিষয়ক কোন কথা শুনতে চাবে কিনা জানিনা। এখন কি করব? তাদের কে ধীরে সুস্থে বুঝাতে গেলে তো কুফরের সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার না বুঝালে যে সবসময়েই সমস্যা? এখন কি বাসা ছেড়ে দিব আমি? কিন্তু আমি যে মেয়ে।

উত্তর: আসসালামু আলাইকুম।

১) এগুলো সবই হচ্ছে আপনার কুধারণা। আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। আমাদের জানামতে অনেকের মধ্যেই এ ধরনের খুঁত খুঁত ভাব থাকে। এমনি এমনি পাক-নাপাক নিয়ে ধারণা করতে থাকে। এমনি মনে করে এই বুঝি নাপাকী লেগে গেল, নাপাক হয়ে গেল। না, নাপাকী যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট না দেখবেন ততক্ষণ পর্যন্ত নাপাক হয় না। সুধু যেকোনো জিনিসকে নাপাক বলে দেওয়া তারপর কথা বলতে এইগুলো কুফর। এগুলো সব ওয়াসওয়াসা। কথা বলতে কুফর হবে কেন? শুধু যে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে অথবা কাজের বুয়াকে দিয়ে কাপড় ধুয়ালে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে এগুলো আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। এই ওয়াসওয়াসাকে দূর করতে হবে। স্পষ্ট যদি নাপাকী না লাগে তাহলে যে ব্যক্তিই কাপড় ধোয় না কেন নাপাকী লাগার সম্ভাবনা নাই ইন শাহ্ আল্লাহ।

২) ধীরে সুস্থে বোঝাতে গেলে কুফর হবে কেন। এটাও আপনার একটা কুধারণা। আপনার ভিতরে ওয়াসওয়াসা কাজ করতেছে, কুমন্ত্রণা কাজ করতেছে, সন্দেহ কাজ করতেছে। মনের মধ্যে থেকে সন্দেহ দূর করতে হবে, কুমন্ত্রণা দূর করতে হবে, ওয়াসওয়াসা দূর করতে হবে। কথা বললেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়, মিশতে গেলেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়। কম কথা বলেন ঠিক আছে। কিন্তু মানুষকে সত্য কথা বলতে হবে, ভালো কথা বলতে হবে। কিন্তু কারো সাথে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে। এটা আপনার ওয়াসওয়াসা। সুতরাং মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে, তাদেরকে বুঝাতে হবে। আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুন এবং মানুষকে বোঝানোর তৌফিক দান করুন। আমীন।

৩) বাসা ছাড়বেন কেন? এই ভুল আপনি করবেন না। আপনি বাসা ছেড়ে যাবেন কোথায়? বাসাতেই থাকতে হবে। বাসার মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনি সালাত আদায় করবেন, মানুষকে বুঝাবেন। আপনি ইবাদত করবেন, তাদেরকেও বুঝাবেন। কিন্তু বাসা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করবেন না।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর দিয়েছেন:

শাইখ সাইফুল ইসলাম মাদানী।

কেউ যদি নারী পুরুষ সমতায় বিশ্বাস করে, এমন মহিলার সাথে স্কুল,কোচিং এ যাওয়া কি সেই মহিলার কুফরি কাজে সাহায্য হবে?

 ১) আমি যখন বাইরে প্রাইভেট পড়তে যাই, তখন মেয়েরা পড়াশুনা নিয়ে হেল্প চায়, বলে এটা কিভাবে করসিস, আবার আমাকে দেখে বলে তুই অনেক পড়িশ, হয়তবা কেউ কেউ আমাকে দেখে জিদ নিয়ে পড়ে পরীক্ষায় ভাল নাম্বারের জন্য। তারা অজ্ঞতাবশত ফেমিনিজম এ বিশ্বাসী হতে পারে।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমার কি তাদেরকে সাহায্য করা উচিত? আর আমাকে দেখে কোন ফেমিনিস্ট আরো উদ্যম নিয়ে পড়লে ( যা আমি জানি না), তাদের এভাবে পরোক্ষভাবে সাহায্য করলে কেমন গুনাহ হবে?

২) কেউ যদি নারী পুরুষ সমতায় বিশ্বাস করে, এমন মহিলার সাথে স্কুল,কোচিং এ যাওয়া কি সেই মহিলার কুফরি কাজে সাহায্য হবে?

উত্তর:

১) পড়ালেখার ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে পারবেন। তবে মেয়ে মেয়েদেরকে সহযোগিতা করবেন এবং ছেলে ছেলেদেরকে সহযোগিতা করবেন। বিপরীত লিঙ্গকে সহযোগিতা করতে গিয়ে যেন ফিতনায় না পড়ে যায় সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আর ফেমিনিস্ট এর ব্যাপারে যেহেতু আপনার জানা নাই সেই ক্ষেত্রে চুপ থাকাটাই ভাল। যেই বিষয়ে জানা নাই সেই বিষয়ে চুপ থাকাটাই উত্তম। তবে পড়ালেখার ব্যাপারে কেউ সাহায্য চাইলে তাদেরকে সাহায্য করতে কোন দোষ নাই ইন শাহ্ আল্লাহ।

২) না এমন মহিলার সাথে স্কুল, কোচিং এ যাওয়া তাকে কুফরি কাজে সাহায্য কলার পর্যায়ে পড়বে না। তার কুফরি কথা অনুযায়ী যদি কাউকে বলেন অথবা তা সমর্থন করেন তাহলে তার কুফরি কাজে সাহায্য করা হবে। তবে এধরনের ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই ধরনের ব্যক্তিদের থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর দিয়েছেন:

শাইখ সাইফুল ইসলাম মাদানী।

লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করা

 প্রশ্ন: লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করাটা কি ইনসাফ এর মধ্যে পড়ে? আর লেখকের নাম প্রকাশে কি রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে?

উত্তর:
অন্যের লেখা নিজের নামে প্রচার করা অথবা লেখকের নাম কেটে তা প্রচার করা নি:সন্দেহে মূল লেখকের প্রতি বেইনসাফি, ইলমি আমানতের খেয়ানত এবং অকৃতজ্ঞতা। আইনের দৃষ্টিতেও এ কাজটি মেধাস্বত্ব চুরির অন্তর্ভুক্ত-যা বৈধ নয়।

ইমাম সুয়ূতী বলেন,

من بركة العلم وشكره عزْوُه إلى قائله

‘ইলমের বরকত এবং শুকরিয়া তখন হবে, যখন এটা কোথা থেকে সংকলন করা হয়েছে, তার উৎস পেশ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, “আব্বাস বিন মুহাম্মাদ আ‌দ দূরী বলেন, “আমি আবু উবাইদকে একথা বলতে শুনেছি, ইলমের শুকরিয়া করা উচিত। তুমি যখন কারো নিকট থেকে উপকৃত হবে, তখন বলবে, আমি এটা জানতাম না, এটা আমার জ্ঞানে ছিল না। এ বিষয়ে উমুক ব্যক্তি বা উমুক কিতাব থেকে এই এই ফায়েদা লাভ করেছি.. এটা হচ্ছে ইলমের শুকরিয়া।” [আল মুযাহহার ২/২৭৩, মাকতাবা শামেলা]

এ ধরণের নিন্দনীয় কাজের ক্ষেত্রে ইমাম আলবানি রহ. নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করে থাকেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الْمُتَشَبِّعُ بِمَا لَمْ يُعْطَ كَلَابِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ

“মানুষ যে বস্তুর মালিক নয়, তা নিজের বলে প্রকাশ করা, দুটি মিথ্যার চাদর পরিধানকারীর ন্যায়।” (বুখারী ও মুসলিম) [আল কালেমুত তাইয়্যেব- ইবনে তায়মিয়া, তাহকীক আলবানী ভূমিকা, পৃ: ১১]

উলামাগণ অন্য লেখকদের বক্তব্য নকল করাকে নিন্দা করেননি, নকল করার সময় বক্তব্যটি লেখকের দিকে নেসবত না করাটাকে তিনি নিন্দা করেছেন।
বিশেষভাবে আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. বক্তব্য উদ্ধৃত করে তা লেখকের দিকে নেসবত না করার বিষয়টিকে কঠিনভাবে সমালোচনা করেছেন। [তাহকীক আল কালেমুত তাইয়্যেব, ইবনে তাইমিয়া বইয়ের তাহকীকের ভূমিকা]

তিনি বলেন, “ইলমের আমনত হচ্ছে, প্রত্যেকটি বক্তব্যকে মূল লেখকের দিকে নেসবত করা।” [সহীহ আবু দাউদ, ১/২২১]
(শাইখ আবদুল্লাহ আল কাফী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত প্রবন্ধ থেকে নেওয়া)

সুতরাং লেখক এর নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে দেওয়া কিংবা মূল লেখকের নাম সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে লেখা প্রকাশ করার এমন হীন মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসা আবশ্যক।

🔶 ইসলামি লেখার সাথে লেখকের নাম উল্লেখ করা কি রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা)?

রিয়া বিষয়টি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কেউ যদি প্রসিদ্ধি অর্জন, প্রশংসা লাভ বা বাহবা কুড়ানোর নিয়তে এ কাজ করে তাহলে তা রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা) বলে গন্য হবে-যা হারাম বরং ছোট শিরক।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمُ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً

“তোমাদের উপর সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়ের আমি আশংকা করছি তা হল শির্ক আসগার (ছোট শির্ক)।’’ তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কী হে আল্লাহর রাসূল?

তিনি বললেন, রিয়া। সম্মানিত আল্লাহ যখন মানুষকে তাদের কর্মফল দান করবেন তখন বলবেন, দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করতে তাদের কাছে যাও। দেখ, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না?’’

[জাইয়েদ (উত্তম) সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ। আরও বর্ণনা করেন, ইমাম বায়হাকি ও ইবনু আবিদ দুনিয়া]

কিন্তু যদি নিজের হক সংরক্ষণ, লেখার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ, আমানতদারিতা, মানুষের কাছে লেখার গ্রহণযোগ্যতার উদ্দেশ্যে লেখক নিজের নাম-পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশ করে তাহলে তা রিয়ার মধ্যে গণ্য হবে না। বরং অজ্ঞাত ও নাম পরিচয় হীন লেখকের লেখা না পড়াই নিরাপদ। কারণ অনেক বিদআতি ও ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী লেখক সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাষায় বিদআত, বাতিল আকিদা ও বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা প্রচার করে থাকে যা সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারে না। তাই লেখক পরিচিতি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ-বিশেষ করে দীনী বিষয়ে।

মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (বিখ্যাত তাবিঈ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إن هذا العلم دين، فانظروا عمن تأخذون دينكم

“নিশ্চয়ই এ ইলম হল, দীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দীন গ্রহণ করছে তা যাচাই করে নাও।”

ইবনু সীরীন রহ. হতে আরও বর্ণিত। তিনি বলেন, “এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো না। কিন্তু পরে যখন ফিতনা দেখা দিল তখন লোকেরা হাদিস বর্ণনাকারীদেরকে বলতো,

سَمُّوا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلاَ يُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ

“তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদিস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল। তারা এ কথা এ কারণে জানতে চাইত, যাতে দেখা যায় তারা আহলে সুন্নাত কিনা? যদি তারা এর অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি দেখা যায় তারা বিদআতি তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণ করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম এর আল মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা)]

এ মর্মে আরও অনেক সতর্কতামূলক বক্তব্য রয়েছে। যদিও এগুলো হাদিস গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে কিন্তু তা মূলত দীনের সামগ্রিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে।

তাছাড়া অনেক সময় লেখকের নাম পরিচয় জানা থাকলে লেখা বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সহজ হয় এবং কোন সংশোধনী বা সংযোজন থাকলে তাকে জানানো যায়। এতে লেখা আর সমৃদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত হয়-যা সকলের জন্য উপকারী।

🔶 অন্যের লেখা কপি করা করার বিধান:

প্রশ্ন: যদি কোনও বইয়ে লেখকের পক্ষ থেকে কপি করার কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা লেখা না থাকে অথবা ‘স্বত্ব সংরক্ষিত’ এ ধরণের কোনও লেখা না থাকে,-যা লেখক চাইলে যুক্ত করতে পারতো-তাহলে কি তা কপি করা যাবে?

উত্তর:
কোন বই, আর্টিকেল ইত্যাদিতে ‘স্বত্ব সংরক্ষিত’ বা ‘কপি রাইট’ লেখা না থাকলে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অংশ কপি করা জায়েজ আছে। তবে শর্ত হল, কপি কৃত লেখাটুকু কোটেশন চিহ্ন ( ” – “) এর মধ্যে রেখে লেখকের নাম/পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। অথবা কপিকৃত অংশটুকু বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোনভাবেই তা নিজের লেখা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। অন্যথায় তা মেধাস্বত্ব চুরি, আমানতের খেয়ানত এবং লেখকের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ হিসেবে গণ্য হবে। চাই তা অনলাইন থেকে হোক অথবা অফলাইন থেকে হোক।

🔶 বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ২০২১ (খসড়া):

“কপিরাইট আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অপরাধী উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।” [BBC Bangla এর ওয়েবসাইট]
الله أعلم
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

Translate