Monday, October 23, 2023

সর্বোত্তম স্ত্রী কে

 যে নারী তার স্বামীকে দ্বীন পালনে এবং আখিরাতের কাজে সাহায্য করে সেই সর্বোত্তম স্ত্রী। এ বিষয়ে কতিপয় হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

◈ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

رَحِمَ اللَّهُ رَجُلاً قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ فَإِنْ أَبَتْ رَشَّ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ رَحِمَ اللَّهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلَّى فَإِنْ أَبَى رَشَّتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ

“আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়। তারপর সেও সালাত পড়ে। আর যদি সে (স্ত্রী) ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ সেই মহিলার প্রতি দয়া করুন যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়। আর সেও সালাত পড়ে। আর সে ঘুম থেকে জাগতে অস্বীকার করলে সে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়।” [কুতুবুত সিত্তাহ, হাসান সহীহ। তাহকিক মিশকাত, হা/ ১২৩০, সহীহ আবু দাউদ, হা/১১৮১-হাসান।]
এ হাদিসের আলোকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, সেই স্বামী উত্তম যে, তার স্ত্রীকে দ্বীন পালনে সাহায্য করে।

◈ সাওবান রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআনের এ আয়াতটি নাজিল হলো: (আল্লাহ তাআলা বলেন,)

وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ

‘‘আর যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে।” [সূরা তওবা:৩৪] তখন আমরা কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় জনৈক সাহাবি বললেন, “এ কথা সোনা-রূপা সম্পর্কে নাজিল হলো। যদি আমরা জানতাম কোন সম্পদ উত্তম তাহলে তবে জমা করে রাখতাম।
তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
أفضلُهُ لسانٌ ذاكرٌ وقلبٌ شاكرٌ وزوجةٌ مؤمنةٌ تعينُهُ على إيمانِه
❝তোমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো, আল্লাহর জিকির কারী জিহ্বা, কৃতজ্ঞতা স্বীকার কারী অন্তর ও ইমানদার স্ত্রী যে তার (স্বামীর) ঈমানের ব্যাপারে সহযোগিতা করে।❞ [আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ-সহীহ লিগয়রিহী]

◈ অন্য সূত্রে সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সোনা-রূপার ব্যাপারে যা নাজিল হওয়া হলো। তখন সাহাবিগণ বলেন, “তাহলে আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করবো?” তখন উমর রা. বলেন, আমি এ বিষয়ে জেনে তোমাদের জানাবো। অতঃপর তিনি তার উট দ্রুত হাঁকিয়ে গিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত পেয়ে গেলেন। আমিও (সাওবান রা.) তার পেছনে পেছনে গেলাম। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করবো?
তিনি বললেন,

لِيَتَّخِذْ أَحَدُكُمْ قَلْبًا شَاكِرًا وَلِسَانًا ذَاكِرًا وَزَوْجَةً مُؤْمِنَةً تُعِينُ أَحَدَكُمْ عَلَى أَمْرِ الْآخِرَةِ

❝তোমাদের প্রত্যেকেই যেন গ্রহণ করে, কৃতজ্ঞ অন্তর, জিকির কারী জিহ্বা এবং এমন ইমানদার স্ত্রী যে আখিরাতের কাজে তাকে সহায়তা করবে।❞ [সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ৯/ বিয়ে, পরিচ্ছেদ: ৯/৫. সর্বোত্তম নারী-সহিহুল জামে-আলাবানি, হা/৫৩৫৫]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

যুবকদের প্রতি ৭৫টি নসিহত

 সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি বলেন,

وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُواْ اللّهَ
“তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে আমি নসিহত করেছি এবং তোমাদেরকেও নসিহত করছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।” [সূরা নিসা: ১৩১]

দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর ও রসূল মুহাম্মদের উপর। যিনি বলেন,

أُوصيكم بتقوى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ والسمعِ والطاعةِ

“আমি তোমাদেরকে নসিহত করছি আল্লাহ ভীতির জন্য (মুসলিম শাসকদের) কথা শোনা ও তাঁর আনুগত্য করার জন্য।” [আবু দাউদ, তিরমিজি-সহিহ]

তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি হল, তাঁর আদেশ মেনে চলা এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকা। তাকওয়াই হল দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।

নিম্নে কতিপয় মূল্যবান ইসলামি নসিহত সন্নিবেশিত করা হল। নসিহতগুলো দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন: ইবাদত-বন্দেগি, লেনদেন, আদব-শিষ্টাচার, চরিত্র ও আচার-ব্যবহার ইত্যাদি। যে মুসলিম যুবক প্রয়োজনীয় ও উপকারী বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, আমরা সে যুবকের প্রতি তার স্মরণের উদ্দেশ্যে এ নসিহতগুলো পেশ করছি। আর স্মরণ মুমিনদের উপকারে আসবে। আমরা আল্লাহর দরবারে আশা রাখি, যে ব্যক্তি এগুলো শুনবে বা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে উপকৃত করুন। যে ব্যক্তি এগুলো লিখবে বা প্রচার করবে বা আমল করবে তাকে সুমহান প্রতিদান ও পুরস্কারে ভূষিত করুন। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্ম সম্পাদনকারী।

নসিহতগুলো নিম্নরূপ:

১. আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করবে। কথায় ও কাজে মানুষের প্রশংসা পাওয়া কিংবা দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা) পরিত্যাগ করবে।
২. যাবতীয় কথা, কাজ ও আচার-আচরণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করবে।
৩. আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে‌ এবং তার যাবতীয় নির্দেশ পালন এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে।
৪. আল্লাহর নিকট খাঁটি ভাবে তওবা করবে এবং অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করবে।
৫. তোমার কথা ও কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথা স্মরণ রাখবে। জেনে রাখবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখেন এবং তোমার হৃদয়ের গোপন খবরও তিনি জানেন।
৬. আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, নবী-রসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবস ও তকদির বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করবে।
৭. প্রমাণ ছাড়া কারও অন্ধ অনুকরণ করবে না। হীন চাটুকার বা তোষামোদ কারী হবে না।
৮. ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করবে।
৯. রিয়াযুস সালেহীন কিতাবটি সংগ্রহ করবে। নিজে পড়বে পরিবারের অন্যদেরকেও পড়ে শোনাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়েমের যাদুল মাআদ গ্রন্থটিও সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। (কিতাব দুটি বাংলায় পাওয়া যায়।)
১০. প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল নাপাকি থেকে সর্বদা পবিত্র থাকবে।
১১. জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করতে সচেষ্ট থাকবে। বিশেষ করে ইশা ও ফজর সালাত। (মহিলারা বাড়িতে প্রথম রক্তে সালাত আদায় করবে)
১২. দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য পরিত্যাগ করবে। যেমন: কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসূন ইত্যাদি এবং ধূমপানের মাধ্যমে নিজেকে এবং মুসলিমদেরকে কষ্ট দিবে না।
১৩. জামাতের বিশেষ ফজিলত হাসিলের লক্ষ্যে সর্বদা জামাতে সালাত আদায় করবে।
১৪. ফরজ জাকাত আদায় করবে। জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে হকদারদের ব্যাপারে কৃপণতা করবে না।
১৫. আগে ভাগে জুমার নামাজে যাওয়ার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয় আজানের পর মসজিদে আসার অভ্যাস পরিত্যাগ করবে।
১৬. ঈমানের সাথে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশায় রমজানের রোজা পালন করবে। এর মাধ্যমে তোমার পূর্বাপর যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
১৭. শরিয়ত সম্মত কোন ওজর ব্যতীত রমজান মাসের কোন একটি রোজাও পরিত্যাগ করবে না। অন্যথায় গুনাহগার হয়ে যাবে।
১৮. রমজানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে বিশেষ করে লায়লাতুল কদরে ঈমানের সাথে ও প্রতিদানের আশায় কিয়াম (রাত জেগে সালাত আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ইবাদত-বন্দেগি) করবে। যাতে করে তোমার পূর্বকৃত পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
১৯. যদি সামর্থ্য বান হয়ে থাক তবে দ্রুত হজ-ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর দিকে সফর কর। দেরি করার ব্যাপারে সতর্ক হও।
২০. পবিত্র কুরআন অর্থসহ পড়ার চেষ্টা করবে। কুরআনের আদেশ পালন করবে এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকবে। যাতে করে প্রভুর দরবারে কুরআন তোমার পক্ষে দলিল হয় এবং কিয়ামতের ময়দানে তোমার জন্য সুপারিশ করে।
২১. সর্বদা আল্লাহ তাআলার জিকিরে মশগুল থাকবে-প্রকাশ্যে-গোপনে, দাঁড়ানো, বসা ও শোয়াবস্থায়-সর্বদাই। আল্লাহর জিকির থেকে কখনো গাফেল হবে না।
২২. জিকিরের মজলিসে (ইলমি অনুষ্ঠানে) বসবে। কেননা এ ধরণের মজলিস জান্নাতের বাগান।
২৩. হারাম এবং গোপন বিষয় দেখা থেকে তোমার দৃষ্টিকে নত রাখবে। সেদিকে দৃষ্টিপাত থেকে সর্বদা সাবধান থাকবে। কেননা নিষিদ্ধ দৃষ্টি হল, শয়তানের পক্ষ থেকে একটি বিষাক্ত তীর।
২৪. টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে না এবং চলাফেরায় কখনো অহংকারী ভাব প্রকাশ করবে না।
২৫. রেশমের কাপড় বা স্বর্ণের কোন কিছু পরিধান করবে না। এগুলো পুরুষদের জন্য হারাম।
২৬. মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না। আর তোমার পরিবারের কোন মহিলাকেও পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে দেবে না।
২৭. দাড়ি ছেড়ে দাও। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমার গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছেড়ে দাও।” [বুখারী ও মুসলিম]
২৮. হালাল ছাড়া অন্য কিছু ভক্ষণ করবে না এবং হালাল ব্যতীত অন্য কিছু পান করবে না। তাহলে তোমার দুআ কবুল হবে।
২৯. পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ্ (আল্লাহর নামে শুরু) বলবে। শেষ করলে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলবে।
৩০. ডান হাতে পানাহার করবে। লেনদেনের ক্ষেত্রে ডান হাতে গ্রহণ করবে এবং ডান হাতেই প্রদান করবে।
৩১. কারো প্রতি জুলুম করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে জুলুম অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে।
৩২. মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে সাথী হিসেবে গ্রহণ করবে না। আর তোমার খাবার যেন ভালো মানুষ ব্যতীত অন্য কেউ না খায়।
৩৩. সাবধান! ঘুষ খাবে না। নিবেও না দিবেও না এবং এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাও করবে না। কেননা এরূপ যে করে সে অভিশপ্ত।
৩৪. আল্লাহকে নাখোশ করে মানুষের সন্তুষ্টি চেও না। কেননা আল্লাহ তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।
৩৫. শরিয়ত সম্মত প্রতিটি বিষয়ে ওলিউল আমর তথা মুসলিম শাসকের আনুগত্য করবে এবং তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে।
৩৬. সাবধান! কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না। আর সত্য সাক্ষ্যও গোপন করবে না। “যে ব্যক্তি তা গোপন করবে তার অন্তর পাপী। আর তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পরিজ্ঞাত।” [সূরা বাকারা: ২৮৩]
৩৭. “সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর এক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করবে।” [সূরা লোকমান: ১৭]
আল্লাহ এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন তাই সৎকাজ এবং তাঁরা যা নিষেধ করেছেন তাই অসৎকাজ।
৩৮. ছোট-বড় সব ধরণের হারাম কাজ পরিত্যাগ কর। কখনো আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করবে না। এক্ষেত্রে কাউকে সহযোগিতাও করবে না।
৩৯. কোন ভাল কাজকেই ছোট মনে করবে না। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোন বস্তু পরিত্যাগ করাটাও একটা ঈমানি কাজ। লজ্জাবোধ ঈমানের অংশ।
৪০. ব্যভিচারের নিকটবর্তী হবে না। আল্লাহ বলেন, ”তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা তা অশ্লীলতা এবং খুবই নিকৃষ্ট কাজ।” [সুরা বানী ইসরাইল: ৩২]
৪১. পিতামাতার সাথে সদাচার করবে। সাবধান! তাদের কথা অমান্য করবে না যদি না তারা ইসলাম বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তারা যদি ইসলাম বিরোধী কাজের নির্দেশ দেয় তবে সে অবস্থায়ও ভদ্রতা বজায় রেখে তাদের সে নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকবে।
৪২. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারে সাবধান হবে।
৪৩. প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাকে কষ্ট দিবে না। সে কষ্ট দিলেও তাতে ধৈর্য ধারণ করবে।
৪৪. সৎ ব্যক্তি এবং ঈমানি ভাইদের সাথে ঘন ঘন সাক্ষাৎ করবে।
৪৫. শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসবে। আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করবে। কেননা এটা হল, ঈমানের সর্বাধিক মজবুত হাতল।
৪৬. সৎ ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করবে। অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করবে।
৪৭. কোন মুসলিমকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দেখলে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাবে এবং তাদেরকে আনন্দিত রাখার চেষ্টা করবে।
৪৮. নম্রতা, ধীর স্থিরতা এবং ধৈর্যাবলম্বন করবে। তাড়াহুড়া পরিত্যাগ করবে।
৪৯. অন্যের কথার মাঝে বাধা সৃষ্টি করবে না। সুন্দরভাবে তা শোনার চেষ্টা করবে।
৫০. জানা-অজানা সকল মুসলিম ভাইকে সালাম দিবে।
৫১. সুন্নতি সালাম দিবে। বলবে, “আসসালামু ওয়া আলাইকুম।” হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করাকেই যথেষ্ট মনে করবে না।
৫২. কাউকে গালিগালাজ করবে না। খারাপ ভাবে কারো বর্ণনা দিবে না।
৫৩. কাউকে অভিশাপ দেবে না। এমনকি তা যদি চতুষ্পদ জন্তু বা কোন জড় বস্তুও হয়।
৫৪. কোন মানুষের ইজ্জতে কোন প্রকার অপবাদ দিবে না বা তার কুৎসা রটনা করবে না। কেননা এরূপ করা কবিরা গুনাহ।
৫৫. চুগলখোরি করবে না। অর্থাৎ ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনকে বলবে না।
৫৬. গিবত করবে না। (গিবত হল, তোমার মুসলিম ভাইয়ের দোষের কথা তার অসাক্ষাতে অন্যের কাছে বলা)।
৫৭. কোন মুসলিমকে ভয় দেখাবে না এবং তাকে কোন প্রকার কষ্ট দিবে না।
৫৮. মানুষের মাঝে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। কেননা এটা হল, একটি উত্তম আমল।
৫৯. কথা নিয়ন্ত্রণ করবে করবে। ভাল কথা বা কাজের কথা বলবে, অন্যথায় চুপ থাকবে।
৬০. সত্যবাদী হও মিথ্যা পরিত্যাগ কর। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের রাস্তা দেখায় আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়।
৬১. দুমুখো হয়ো না। একই বিষয়ে এদের কাছে এক কথা অন্যদের কাছে আর এক কথা বলবে না।
৬২. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করবে না। আর সত্য বিষয় হলেও বেশি বেশি কসম করার অভ্যাস করবে না।
৬৩. কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। কেননা তাকওয়ার মানদণ্ড ছাড়া কারো উপর কারো প্রাধান্য নেই।
৬৪. কোন জ্যোতির্বিদ, গণক বা জাদুকরের কাছে যাবে না। তাদের কোন কথা বিশ্বাস করবে না। এতে ঈমানের ক্ষতি হয়।
৬৫. কোন মানুষ বা প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে চিত্রকরদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।
৬৬. তোমার বাড়িতে কোন প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা এতে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
৬৭. কেউ হাঁচি দেওয়ার পর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বললে তার জবাবে ইয়ারহামু কাল্লাহ (আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন) বলবে।
৬৮. কোন ক্রমেই তাবিজ-কবজ, তাগা ইত্যাদি ব্যবহার করবে না। এগুলো ব্যবহার করা শিরক।
৬৯. প্রতিটি পাপকাজের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করবে। খারাপ কাজ হয়ে গেলেই ভাল কাজ করবে, যাতে উক্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। এরূপ বলবে না যে, অচিরেই তওবা করব।
৭০. আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও করুণার আশাবাদী হও। আল্লাহর প্রতি সু ধারণা রাখ।
৭১. আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত থাক। তার শাস্তির ব্যাপারে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না।
৭২. বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারী হও এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
৭৩. অধিক পরিমাণে সৎকাজ করবে। যাতে করে মৃত্যুর পরেও তার সওয়াব অব্যহত থাকে। যেমন: মসজিদ তৈরি করা, ইসলামি জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার করা।
৭৪. আল্লাহর কাছে জান্নাত পাওয়ার প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করবে।
৭৫. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করবে।
وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم
কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবিদের প্রতি অবিরাম ধারায় রহমত ও শান্তি নাজিল করুন। আমিন।
75 وصيّة للشباب
إعداد: دار القاسم

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬ অনুবাদ: মুহা. আবদুল্লাহ্ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল রাহ.
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বারসিসার ঘটনা এবং শিক্ষা

 নারী ফিতনায় পড়ে বনি ইসরাইলের এক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি যেভাবে নানা পাপাচারে ডুবে শেষ পর্যন্ত মুশরিকে পরিণত হয়েছিল

❑ বারসিসার ঘটনা:

বনি ইসরাইলের সময় এক ছোট্ট গ্রামে বারসিসা নামে এক খৃষ্টান পাদ্রি বসবাস করতো। সে ছিল খুব ধর্মপরায়ণ ও সৎ মানুষ। সে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করত এবং বিশ্বাস করত যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর একজন রসুল। সেই গ্রামে তিন ভাই ও এক বোন থাকতো। সেই ভাইদের জিহাদের জন্য ডাকা হল। কিন্তু তারা বোনকে একা রেখে যেতে চাইল না। কার কাছে রাখবে চিন্তা করতে লাগলো। গ্রামবাসী বারসিসার কথা বলল। কারণ গ্রামের সবাই বারসিসাকে উত্তম চরিত্রবান হিসাবে জানতো। তো তারা বারসিসার কাছে গেল, যখন তার কাছে তাদের বোনকে রাখতে চাইলে সে রাজি হল না এবং বলল ‘আমি অভিশপ্ত শয়তানের কাছ থেকে পানাহ চাই।’ কারণ সে ভয় করছিল যে সে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। তখন শয়তান বারসিসার মনে কুমন্ত্রণা (ওয়াসওয়াসা) দিতে আসল। চালাক শয়তান জানতো যে বারসিসার মন খুবই নরম। সে কানে কানে বারসিসাকে বলল, “তারা যদি ভাল কাউকে তাদের বোনের জন্য খুঁজে না পায় এবং খারাপ কারো কাছে মেয়েটিকে রেখে যায় তখন কী হবে! এই পরিণতি কি তোমার ভুলের জন্য নয়?” বারসিসা বুঝতে পারেনি যে, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা। মানুষের প্রতি দরদের কারণে মেয়েটিকে সে সাহায্য করতে রাজি হল।
সে মেয়েটিকে গির্জার বিপরীতে একটি ঘরে থাকতে দিল। গির্জার সামনে মেয়েটির জন্য খাবার রেখে আসত, মেয়েটি নিজে এসে খাবার নিয়ে যেত। বারসিসার সাথে তার দেখা হত না।
শয়তান বারসিসার কাছে আবার আসল এবং বলল, “তুমি কেন মেয়েটির খাবার তার ঘরের সামনে রেখে আসো না? এর ফলে মেয়েটাকে ঘর থেকে কেউ এতটা পথ একা একা হেঁটে বের হতে বা ফিরে যেতে দেখবে না!” বারসিসা রাজি হল এবং মেয়েটির ঘরের সামনে খাবার রেখে আসতে শুরু করল। শয়তান এতেও খুশি হল না, সে আবার আসলো এবং কানে কানে বলল, কেন তুমি তার ঘরে ভিতরে খাবার দিয়ে আসো না? ফলে মানুষ তাকে ঘর থেকে একা একা বের হতে আর ঢুকতে দেখত না! এবার বারসিসা তার ঘরের মধ্যে খাবার দিয়ে আসতে শুরু করল। শয়তান আবার আসলো এবং বলল, মেয়েটার সাথে তোমার কথা বলা উচিত, এভাবে একা থাকলে তো সে পাগল হয়ে যাবে। বারসিসা মেয়েটির কথা চিন্তা করে তার সাথে রুমের আড়ালে কথা বলতে শুরু করল।
শয়তানের কুমন্ত্রণায় এক সময় তারা একই রুমে কথা বলতে লাগল।

এভাবে শয়তান তার কাজের কঠিন অংশ বাস্তবায়ন করল। এই পর্যায়ে বারসিসা এবং মেয়েটা একে অপরের প্রতি দুর্বল হল এবং এক সময় ব্যভিচারে লিপ্ত হল। মেয়েটি গর্ভবতী হল , একটি বাচ্চা জন্ম দিল। বাচ্চা জন্মের সময় শয়তান বারসিসার কাছে আবার আসল এবং বলল, “এটা তুমি কী করলে? তোমার পাপের প্রমাণ সরিয়ে ফেল, না হলে মেয়েটির ভাইরা ফিরে আসলে তোমাকে খুন করবে!”
বারসিসা বাচ্চাটিকে খুন করল এবং ঐ ঘরের মেঝেতে পুতে ফেলল। শয়তান এবার বলল, “তুমি এক নারীর সন্তান হত্যা করেছ এবং আশা করছ যে সে এটা কাউকে বলবে না?”
তখন বারসিসা মেয়েটিকেও খুন করল এবং তাকেও ঐ ঘরের মেঝেতে পুতে রাখল। মেয়েটির ভাইরা ফিরে আসলে তাদেরকে একটা মিথ্যা কবর দেখিয়ে বলল “তোমাদের বোন অসুখে মারা গিয়েছে এবং ঐ কবরে দাফন করা হয়েছে”। তারা বারসিসার কথা বিশ্বাস করল।
সেই রাতে শয়তান তিন ভাইকে একই স্বপ্ন দেখাল যে “বারসিসা তোমাদের বোনকে হত্যা করেছে, প্রমাণ হিসাবে তোমাদের বোন যে ঘরে থাকত তার মেঝে খুঁড়ে দেখতে পারো”। ঘুম ভাঙ্গলে তারা একে অপরকে স্বপ্নের কথা বলল এবং বুঝতে পারল তারা তিনজন একই স্বপ্ন দেখেছে। যাচাই করার জন্য তারা বারসিসার এলাকায় যেয়ে প্রথমে বারসিসার দেখানো কবর খুঁড়ল, দেখল কিছু নেই, এর পর যে ঘরে তাদের বোন থাকত তারা ঐ ঘরের মেঝে খুঁড়ে তাদের বোনের এবং বাচ্চার লাশ পেল। তারা বারসিসাকে ধরল এবং বলতে বাধ্য করলো আসলে কি হয়েছিল। তারপর তারা তাকে রাজার কাছে নিয়ে গেলে রাজা তাকে শিরশ্ছেদ করতে আদেশ দিল। যখন বারসিসাকে শিরশ্ছেদ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন শয়তান কাছে আবার আসল। এবার ওয়াসওয়াসা না, মানুষের রূপ নিয়ে সে আসল। এসে বলল, “শুনো বারসিসা, আমি হলাম শয়তান, তোমার এই অবস্থা তোমার নিজের চিন্তায় হয়নি, আমিই করেছি আর একমাত্র আমিই তোমাকে বাঁচাতে পারি যদি তুমি আমার কথা মেনে চল।” বারসিসা বলল, “আমাকে কী করতে হবে?”

শয়তান বলল” আমাকে সেজদা কর আমি তোমাকে রক্ষা করবো” তো বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে বারসিসা শয়তানকে সিজদা করল এবং কাফের হয়ে গেল। সিজদা করার সাথে সাথে শয়তান তাকে বলল, ‘আমি এখন তোমার থেকে মুক্ত। আমি আল্লাহকে ভয় করি যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক’। এই বলে শয়তান সেখান থেকে পালাল এবং বারসিসার শিরশ্ছেদ করা হল। কেয়ামতের দিন বারসিসাকে যখন জীবিত করা হবে তখন সে শয়তানকে সিজদা করতে করতে উঠে দাঁড়াবে!

দেখুন, শয়তান কীভাবে বারসিসাকে ফাঁদে ফেলেছিল। সে এসেছিল বন্ধুর বেশে, ভালো ভালো কথা বলতে আর আপাত:দৃষ্টিতে ভালো কাজে উৎসাহ দিতে। কিন্তু আসলে সে ছিল সবচেয়ে বড় শত্রু! আল্লাহ বলেন, তাদের দৃষ্টান্ত শয়তান যে মানুষকে বলে কুফরি করো। অতঃপর যখন সে কুফরি করে তখন শয়তান বলে: “আমি তোমার থেকে মুক্ত। আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।” [সুরা হাশর ৫৯:১৬]।
রেফারেন্স বই: নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা
(তালবিসুল ইবলিস)
লেখক: ইমাম ইবনুল জাওযী রাহ.

❑ ঘটনার সত্যতা কতটুকু?

বারসিসার এই ঘটনাটি কতিপয় তাফসির গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন: তাফসিরে কুরতুবি, তাফসিরে বাগাবি। তারা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উত্তর ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

‏ كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ

“তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি। [সূরা হাশর: ১৬]।

কিন্তু হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে উক্ত ঘটনাটি কোনও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়নি। এটি মূলত: বনি ইসরাইল তথা ই হুদি-খ্রি স্টানদের থেকে নেওয়া। সুতরাং তা সত্য-মিথ্যা উভয়টি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

তবে ইসরাইলি ঘটনবালীর মধ্যে কোনও ঘটনা উপকারী ও শিক্ষণীয় হলে এবং তাতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু না থাকলে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্য তা বর্ণনা করতে কোনও দোষ নেই। কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ “‏ بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‏”‏ ‏

“আমার নিকট থেকে একটি আয়াত হলেও তা প্রচার করে দাও আর বনি ইসরাইলদের ঘটনাবলীও বর্ণনা করো। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি আমার উপর স্বেচ্ছায় মিথ্যারোপ করবে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়।” [সহিহ বুখারি] আউনুল মাবুদের গ্রন্থকার আল্লামা শামসুল হক আজিমাবাদি বলেন,

وقال مالك: المراد جواز التحدث عنهم بما كان من أمر حسن، أما ما علم كذبه فلا، قاله في الفتح

“আর মালেক বলেছেন যে, এ হাদিসের উদ্দেশ্য হল, তাদের ভালো বিষয়গুলো বর্ণনা করা বৈধ। কিন্তু যে বিষয় মিথ্যা বলে জানা যাবে তা বর্ণনা করা যাবে না। এমনটি রয়েছে ফাতহুল বারি গ্রন্থে।”

❑ ঘটনা থেকে কতিপয় শিক্ষণীয় দিক:
এ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হল:

◆ ১. পুরুষের জন্য নারী ফিতনা অনেক ভয়াবহ বিষয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্মে সতর্ক করে বলেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِي النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ

“আমি আমার পর লোকদের মাঝে পুরুষদের জন্য মেয়েদের চেয়েও ক্ষতিকর আর কোন ফিতনা রেখে যাইনি।” [বুখারি ও মুসলিম]।

◆ ২. নারীর ফিতনায় পড়ে একজন আল্লাহ ওয়ালা, বুজুর্গ ও ধর্মপরায়ণ মানুষও ধ্বংসের গহীন খাদে নিপতিত হতে পারে। নবি ইসরাইলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিতনা ছিল নারী কেন্দ্রিক। অত:এব এ বিষয়ে সাবধানতা অপরিহার্য।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ

“অতএব তোমরা দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিতনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানি ইসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।” [সহিহ মুসলিম]।

◆ ৩. নারী-পুরুষ নির্জন কক্ষে অবস্থান করার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ

“কোন পুরুষ পরনারীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন করবে না এবং মাহরাম (বিবাহ নিষিদ্ধ পুরুষ) সঙ্গী ব্যতিরেকে পর নারীর সাথে সফর করবে না।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]
ইমাম নওয়াবি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

وَأَمَّا إِذَا خَلَا الْأَجْنَبِيّ بِالْأَجْنَبِيَّةِ مِنْ غَيْر ثَالِث مَعَهُمَا، فَهُوَ حَرَام بِاتِّفَاقِ الْعُلَمَاء

“তৃতীয় ব্যক্তি ছাড়া পরপুরুষ পরনারীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন করা আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”

◆ ৪. শয়তান মানুষকে ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পাপের দিকে ধাবিত করে। এটা শয়তানের এক কুটকৌশল। আর তাই তো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ

“হে ইমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে।”
[সূরা নূর: ২১]।

◆ ৫. ধর্মপরায়ণ ও সৎ মানুষও শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ নয়। সে বিভিন্ন কৌশলে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। এমনকি চারিত্রিক স্খলন ঘটিয়ে তাকে অবশেষে ঈমান থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। এটি ছিল শয়তানের প্রথম চ্যালেঞ্জ মানব জাতির প্রতি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,

قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
” সে (ইবলিশ) বলল, “(হে আল্লাহ) আপনার ক্ষমতা-সম্মানের কসম, অবশ্যই আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ব্যতীত।” [সূরা সোয়াদ: ৮২-৮৩]।

এজন্যই সর্বদা শয়তানের কুমন্ত্রণার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ اِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

“আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা কখনো তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।” [সূরা ফুসসিলাত: ৩৬]।

◆ ৬. “মদ অনিষ্টের চাবি।”-এ হাদিসের সত্যতা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ

“মদ পান পান কর না। নিশ্চয়ই তা সকল অনিষ্টর চাবি।” [সহিহ ইবনে মাজাহ হা/৩২৭৫]
মদপানের প্রভাবে মানুষ দুনিয়ার সব ধরণের অন্যায়-অপকর্ম করার সম্ভব। তাই ইসলামে মদপানকে শুধু হারাম বলেই এবং তাকে ফৌজদারী আইন অনুযায়ী দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

এমন আরও বহু মূল্যবান শিক্ষা নিহীত রয়েছে উপরোক্ত ঘটনায়।

মোটকথা, বারসিসার ঘটনাটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বযুগে ঘটে যাওয়া একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। যা একটি ইসরাইলি বর্ণনা তথা ইহুদি-খৃষ্টানদের থেকে নেওয়া। কোনও হাদিসের কিতাবে এর বিবরণ পাওয়া যায় না। কিন্তু তা শিক্ষণীয় হওয়ায় তা অনেক আলেম তা তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। আর সত্যি এর মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক বড় শিক্ষা। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং সব ধরণের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে, বিশেষ করে নারী ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কয়েকটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদিস

 উম্মতে মোহাম্মদির একটি সেজদা জিবরাঈল আ. এর তিরিশ হাজার বছরের সেজদার থেকে উত্তম, আরশের গায়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা থাকা এবং এই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য মুসা আ. এর কান্না বা আশা-আকাঙ্ক্ষা সংক্রান্ত হাদিসগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট:

▪️প্রশ্ন: নিম্নোক্ত ঘটনাটি ফেসবুকে প্রায় চোখে পড়ে। এর কি কোন ভিত্তি আছে?
ঘটনাটি নিম্নরূপ:
জিবরাঈল আ. কে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করলেন। অতঃপর জিবরাঈল আ. আল্লাহ তাআলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ, আপনি কীসে খুশি হন? আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হই, আমার বান্দা যখন আমাকে সেজদা করে। অত:পর জিবরাঈল আ. আল্লাহ তাআলাকে সেজদা করলেন তিরিশ হাজার বছর ধরে।
জিবরাঈল আ. মনে মনে খেয়াল করলেন, আমার থেকে এত বড় দামি, এত বড় লম্বা সেজদা আর কেউ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় আমার প্রতি খুশি হবেন।

জিবরাঈল আ. আল্লাহ তাআলার দিকে মুতাহজ্জির হয়ে রইলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কোন খুশির বাণী জানান হল না। জিবরাঈল আ. আল্লাহ তাআলা কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ, আমি যে এত লম্বা সেজদা করলাম কিন্তু আপনি কি আমার সেজদার প্রতি খুশি হননি?

আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন: জিবরাঈল, তোমার জবাব আমি দেব। তার আগে তুমি একটু আরশে আজিমের দিকে তাকাও। জিবরাঈল আ. তাকিয়ে দেখলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরশে আল্লাহর কুদরতি নূর দ্বারা লিখা রয়েছে, ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।” জিবরাইল আ. জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ, আমার সেজদার সংগে এই কালিমার কী সম্পর্ক?

আল্লাহ তাআলা বললেন, ও জিবরাইল, শোন, আমি আল্লাহ এ দুনিয়া তৈরি করব। ওই দুনিয়ার মানব জাতি ও জিন জাতির হেদায়াতের জন্য লক্ষাধিক নবি-রাসূলকে পাঠাব। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাঠাব। এই নবির উম্মতের উপরে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করব। আর প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সতেরটা করে রাকাত আমার জন্য ফরজ করব। প্রত্যেকটা রাকাতের মধ্যে দুটি করে সেজদা হবে। আর প্রত্যেকটা সেজদার মধ্যে ওই নবির উম্মত তিনবার করে “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” পাঠ করবে।

জিবরাইল, তুমি জেনে রাখ, আমার ওই মাহবুব নবির উম্মত যখন সেজদায় গিয়ে “সুবহা-না রাব্বিয়াল আলা” বলে আমাকে ডাক দিবে। জিবরাইল তুমি ৩০ হাজার বছর সেজদা করে যে নেকি পেয়েছ, আমি আল্লাহ আমার বান্দার আমলনামায় এর থেকেও ৪০ হাজার গুণ বেশি নেকি লিখে দিব। সুবহানাল্লাহ!

এই জন্য মুসা আ. কেঁদেছেন, আল্লাহ, আমাকে ওই নবির উম্মত বানাইয়া দাও, যে নবির উম্মত এক সেজদায় জিবরাঈল আ. এর সারা জীবনের ৩০ হাজার বছরের সেজদার নেকি নিয়ে গেল। আমরা সেই নবির উম্মত আমাদের কী করা উচিত আর আমরা কী করছি!
আল্লাহ আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দিন। আমিন।

▪️উত্তর: এই ঘটনা এবং তার মধ্যে যেসব কথা বলা হয়েছে সবকিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এগুলো হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার। বিদআতি ওয়াজ ব্যবসায়ী বক্তারা এইসব ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী ওয়াজ মাহফিলগুলোতে মূর্খ শ্রোতাদের সামনে খুব সুর দিয়ে বয়ান করে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর কোনও ভিত্তি নেই।

– আল্লাহর আরশের গায়ে, পায়ে বা জান্নাতের দরজায় কিংবা জান্নাতের গাছের পাতায় পাতায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” লেখা থাকার ব্যাপারে যত হাদিস বলা হয়, সেগুলোর কোনটাই সঠিক নয়। সবগুলোই জাল-জয়ীফ।

– অনুরূপভাবে মূসা আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য ক্রন্দন করা বা প্রত্যাশা করা বা দুআ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসগুলো একটিও সহীহ নয়। (ইমাম জাহাবি, ইবনে হাজার আসকালানি, আলবানি প্রমুখ মুহাদ্দিসীনদের আলোচনা থেকে নেওয়া) অতএব এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও অপ্রমাণিত হাদিস প্রচার করা মারাত্মক গুনাহের।
রাসূল সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ” رواه البخاري
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিলো।” [সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: আম্বিয়াদের হাদিস, হা/ ৩২৭৪] আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

সময়কে গালমন্দ করা আল্লাহকে গালমন্দ করা ও তাঁকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর

 আল্লাহর এক অমোঘ নিয়মে রাতের পরে দিন ও দিনের পরে রাতের আবির্ভাব ঘটে। এভাবে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী অবিরত ধারায় বয়ে চলেছে। এ সময় আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তার নিজস্ব কোনও ইচ্ছা ও ক্ষমতা নেই। সময় তার নিজস্ব ইচ্ছা বলে কোনও কিছু করতে সক্ষম নয়। সে মানুষের জীবনে কল্যাণ বা অকল্যাণ কোনও কিছুই করতে পারে না। সময়ের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তিত না হলেও সময়ের সাথে মানুষের প্রকৃতি, আচার-আচরণ ও রীতি-নীতি ইত্যাদি পাল্টে যায়। তাই মানুষ খারাপ হতে পারে; সময় নয়। সুতরাং সময় খারাপ, যুগ খারাপ, দিনটা খারাপ, রাতটা খারাপ ইত্যাদি বাক্য বলা কিংবা সময়কে লানত বা অভিশাপ দেওয়াও জায়েজ নয়।

আর যেহেতু সময় আল্লাহর নির্দেশক্রমে আবর্তিত হয় তাই সময়কে গালি দেওয়া আল্লাহকে গালি দেওয়ার নামান্তর। আর আল্লাহকে গালি দেওয়া মানে তাকে কষ্ট দেওয়া। সুতরাং তা হারাম।

❑ বহু হাদিসে সময়কে গালমন্দ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন:

◆ ১. আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَسُبُّوا الدَّهْرَ فَإِنَّ اللهَ هُوَ الدَّهْرُ

“তোমরা সময়কে গালমন্দ করো না। কারণ আল্লাহই সময়।” [সহিহ মুসলিম, হা/৬০০৩]

◆ ২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,

قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَسُبُّ ابْنُ آدَمَ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِيَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ

“আল্লাহ তাআলা বলেন (হাদিসে কুদসি), আদম সন্তান সময়কে গালমন্দ করে। অথচ আমি তো সময়। আমার হাতেই রাত ও দিন (এর বিবর্তন সাধিত হয়)।” [মুসলিম, হা/৬০০৩]

◆ ৩. হাদিসে কুদসিতে আরও বর্ণিত হয়েছে,

قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

“আল্লাহ বলেছেন, আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। সে সময়কে গালি দেয় অথচ আমিই তো সময়। আমি রাত-দিন আমিই আবর্তিত করে থাকি।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪২/ শব্দচয়ন ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার, পরিচ্ছেদ: ১. সময় ও কালকে গালমন্দ করা নিষিদ্ধ]

◆ এর দিন-রাতের পরিবর্তন প্রসঙ্গে একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়। মহাগ্রন্থ কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

يُقَلِّبُ اللَّهُ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِى الْأَبْصٰرِ

“আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান। নিশ্চয় এতে শিক্ষা রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য।” [সূরা নূর: ৪৪]

তাফসিরে বিন সাদিতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) ঠাণ্ডা থেকে গরম, আবার গরম থেকে ঠাণ্ডা, দিন থেকে রাত আবার রাত থেকে দিন তিনিই পরিবর্তন করেন। অনুরূপভাবে তিনিই বান্দাদের মধ্যে দিনগুলো ঘুরিয়ে আনেন। যারা সত্যিকার বান্দা, বুদ্ধি ও বিবেকবান, তারা এগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এগুলো কেন সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা সহজেই বুঝতে পারে। কিন্তু তারা ব্যতিক্রম, যারা পশুদের মত এগুলোর দিকে তাকায়।” [তাফসিরে সাদী]

আর তাফসিরে আহসানুল বয়ানে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তাআলা কখনো দিন বড়, রাত ছোট, আবার কখনো এর বিপরীত করে থাকেন। অথবা কখনো দিনের উজ্জ্বলতাকে কালো মেঘের (ছায়ায়) অন্ধকার দিয়ে এবং রাতের অন্ধকারকে চাদের জ্যোৎস্না দিয়ে বদলে দেন।”

◍ জাহেলি যুগের আরব মুশরিকরা সময় সম্পর্কে বিরূপ কথা বলত এবং সময়কে গালমন্দ করত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, শুধু সময়ই তাদেরকে মৃত্যু দেয়:

◆ মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন,

وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ ۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ

“তারা (কা ফের-মুশ রিকরা) বলে, শুধু পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন। আমরা এখানেই মরি ও বাঁচি। সময় ছাড়া অন্যকিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করতে পারে না। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে।” [সূরা জাসিয়া: ২৪]

অর্থাৎ তাদের বিশ্বাস ছিল, রাত-দিনের বিবর্তনে মানুষের বয়স শেষ হয়ে গেলে মানুষ এক সময় মরে যায়। অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর পেছনে একমাত্র অনুঘটক হল, সময়। আল্লাহ মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে না, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা আখিরাত বলেও কিছু নেই। কিন্তু তা তাদের ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে সময়ের নিজস্ব কোনও শক্তি নেই। সে কারও উপকার করতে পারে না, কোনও ক্ষতি করতে পারে না। বরং এ বিশ্ব চরাচরের নিয়ন্ত্রণ, সময়ের এ গতিধারার নিয়ন্ত্রণ, মানুষে জীবন, মৃত্যু সব কিছু আল্লাহর হাতে ন্যস্ত। জীবনের উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটে সবই আল্লাহর আওতাধীন।

❑ সময়ের অবস্থা বর্ণনা করা জায়েজ; গালমন্দ করা জায়েজ নয়:

আনাস ইবনে মালিক রা. এর নিকট হাজ্জাজ কর্তৃক মানুষ যে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করা হলে তিনি বললেন,

اصْبِرُوا؛ فإنَّه لا يَأْتي علَيْكُم زَمَانٌ إلَّا الذي بَعْدَهُ شَرٌّ منه، حتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ. سَمِعْتُهُ مِن نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ

“ধৈর্য ধর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবার পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতীত হবে না, যার পরের যুগ তার চেয়েও বেশি খারাপ নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নবী থেকে শুনেছি।” [সহিহুল বুখারি]

আল্লাহ তাআলা বলেন,
هَٰذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ ‎
“আজ অত্যন্ত কঠিন দিন।” [সূরা হুদ: ৭৭]

তিনি আরও আরও বলেন,

إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا فِي يَوْمِ نَحْسٍ مُّسْتَمِرٍّ

“নিঃসন্দেহে আমরা তাদের উপরে এক চরম দুর্ভাগ্যের দিনে পাঠিয়েছিলাম এক প্রচণ্ড ঝড়-তুফান।” [সূরা কামার: ১৯]

❑ আল্লামা বিন বায রাহ. বলেন,

فلا يجوز للمسلم أن يسبَّ الدهر، ولكن يُجاهد نفسه في طاعة الله ورسوله، وترك ما نهى الله عنه ورسوله، فما أصابه من الأذى هو بأسباب أعماله السيئة، لا بأسباب الدهر، الدهر ما له تصرُّفٌ، لكن وصفه بالشدة لا يضرُّ، يقول: هذا زمان شديد، أو هذا زمان حارٌّ أو بارد، ما يضرُّ هذا.

“অত:এব কোনও মুসলিমের জন্য সময়কে গালি দেওয়া জায়েজ নাই। বরং তার কর্তব্য, আল্লাহর ও রসুলের আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রচুর চেষ্টা-সাধনা করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। সে যে সব কষ্ট-শ্লেষের সম্মুখীন হয় তা তার অপকর্মের কারণে; সময়ের কারণে নয়। সময়ের নিজস্ব কোনও কর্মক্ষমতা নেই। তবে সময়কে কঠিন বলায় সমস্যা নেই। যেমন: মানুষ বলে, সময়টা কঠিন বা সময়টা গরম বা ঠাণ্ডা। এতে কোনও ক্ষতি নেই।”

মোটকথা, সময় এবং কাল-মহাকাল মহান অধিপতি এক আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তার নিজস্ব কোনও শক্তি বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই। সময়ের প্রভাবে কারও কোনও উপকার বা ক্ষতি হয় না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। তাই সময়কে গালমন্দ করা মানে আল্লাহকে গালমন্দ করা ও তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই তাওহিদপন্থী মুসলিমের জন্য আবশ্যক হল, কথাবার্তায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করা, জীবনে কোনও বিপদাপদ নেমে এলে সে জন্য সময়কে দোষারোপ না করা বরং এ ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, জীবনে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটুক সবই আল্লাহ নির্ধারিত তকদিরের আলোকেই ঘটে থাকে। এ বিশ্বাস ইমানের ৬টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ আমাদেরকে তাওহিদ বিরোধী বিশ্বাস ও কথা ও কর্ম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রথম রোজার সংবাদ দিলে জাহান্নামের আগুন হারাম মর্মে বর্ণিত হাদিসটি বানোয়াট ও জাল

 প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি প্রথম রোজার সংবাদ দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে” বর্তমানে ফেসবুকে এই কথাটা বেশ প্রচার হচ্ছে। কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে আপনার একটি পোস্ট চাই। যাতে করে সবাই সঠিকটা জানতে পারে।

উত্তর: এ কথা সত্য যে, রমজান ঘনিয়ে এলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাতীয় হাদিসটি প্রচারের হিড়িক পড়ে যায়। প্রচার করা হয় যে, এ বছর অমুক তারিখ থেকে রমজান মাসের রোজা শুরু হবে। অথচ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। অর্থাৎ এটি হাদিসের নামে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া রমজান মাসের সূচনা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল-যা জানার জন্য সরকার নির্ধারিত চাঁদ দেখা কমিটি বা আদালতের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । সুতরাং তা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির হিসেবে অগ্রিম সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং কেউ যদি অনেক আগে থেকে এই ঘোষণা প্রচার করে তাহলে তা হবে আরেকটি মিথ্যাচার।

◆ এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত ফতোয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট Islamqa-এ বলা হয়েছে,

لم يذكره من صنف في فضل رمضان من العلماء، ولو من باب التنبيه على عدم صحته، كما لم يذكره من صنف في الأحاديث الضعيفة والموضوعة؛ لذلك يبدو أنه وُضع حديثًا.

“যে সকল আলেমগণ রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বই লিখেছেন তাদের কেউ এই হাদিসটি উল্লেখ করেননি। এটি যে বিশুদ্ধ নয় সে ব্যাপারে সতর্ক করার জন্যও কেউ উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস সংকলনকারীগণ ও তা (এ সংক্রান্ত কোনও গ্রন্থেই উল্লেখ করেননি।) এতেই প্রমাণিত হয় যে, এটি সাম্প্রতিক কালের বানানো হাদিস।”
এরপর আরও লেখা হয়েছে, “সুতরাং এর উপরে ভিত্তি করে বলবো, এই হাদিস প্রচার বা শেয়ার করা জায়েজ নেই মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক করার উদ্দেশ্য ছাড়া।”

◆ কারা এসব বানোয়াট হাদিস প্রচার করে? অজ্ঞতা বশত: কেউ তা করে থাকলে তার জন্য করণীয়:

প্রকৃতপক্ষে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন গ্রুপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করে শর্টকাট পদ্ধতিতে জান্নাতে যেতে চায় এটি তাদের বানানো হাদিস। আর ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতি মানুষের এক ধরণের দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সস্তা লাইক-কমেন্ট কামানোর ধান্ধায় এসব কথা হাদিস বলে প্রচার করে এক শ্রেণির লোক। এভাবেই শয়তান দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত মানুষের সাথে ধর্মের নামে ধোঁকাবাজি করে চলেছে।

যাহোক কেউ যদি অজ্ঞতাবশত এই জাতীয় হাদিস ইতোপূর্বে প্রচার করে থাকে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো, অনতিবিলম্বে তা ডিলিট করা এবং এটি যে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা।

✪ আল্লাহর রসুলের নামে মিথ্যাচারে ভয়াবহতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস প্রচারের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য:

মনে রাখা কর্তব্য যে, মানুষের সাথে সাধারণ মিথ্যা কথা এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা কথা এক নয়। সাধারণ মিথ্যা কথা হারাম, কবিরা গুনাহ এবং মুনাফেকির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হাদিসের নামে মিথ্যাচার করার পরিণতি এর থেকেও ভয়াবহ। কেউ জেনে বুঝে তা করলে তার পরিণতি জাহান্নাম।

إنَّ كَذِبًا عَلَيَّ ليسَ كَكَذِبٍ علَى أَحَدٍ، مَن كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

“আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা), পরিচ্ছেদ: ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ গুরুতর অপরাধ]

কেননা এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা সমাজের ছড়িয়ে পড়ে এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামে বিকৃতি সাধিত হয়।
তাই বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলাম বিষয়ে কোন কিছু প্রচারের আগে তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা এবং তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া হওয়া অপরিহার্য। অন্যথায় ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রচার ও ইসলাম বিকৃতির অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পাশাপাশি তা প্রচারকারীর আমলনামায় গুনাহের জারিয়া বা প্রবহমান গুনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। যত মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং ইসলাম সম্পর্কে সব ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর পরিবারের সেবার বিধান

 ইসলামের দৃষ্টিতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর পরিবারের সেবার বিধান এবং সকল পরিবারের প্রতি বিশেষ বার্তা

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর জন্য কি শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা বাধ্যতামূলক?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী তার স্বামীর মা, বাবা, ভাই-বোন ইত্যাদির কারও সেবা করতে বাধ্য নয়। তবে শ্বশুর-শাশুড়ি এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সেবা করা একদিকে যেমন স্বামীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ অন্যদিকে নেকির কাজ তাতে কোন সন্দেহ নাই। কোন স্ত্রী যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ি বা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খেদমত করে তবে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরষ্কার প্রদান করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে যে যত বেশি মানুষের উপকার করবে সে তত বেশি উত্তম। বিশেষ করে যখন রোগ-ব্যাধি, শারীরিক অক্ষমতা, বয়োঃবৃদ্ধ হওয়া ইত্যাদি কারণে শশুর-শাশুড়ির প্রতি যত্ন নেওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন কারণে মানুষ একে অন্যের সেবা বা সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হয়।

এক্ষেত্রে স্বামীদেরও উচিত,‌ আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তার শ্বশুর-শাশুড়িদের প্রতি যথাসম্ভব সুদৃষ্টি রাখা এবং প্রয়োজন দেখা দিলে যথাসম্ভব তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এতে তিনিও আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ وَأَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى سُرُورٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ أَوْ تَكَشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِي عَنْهُ دَيْنًا أَوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوعًا, وَلأَنْ أَمْشِيَ مَعَ أَخِ فِي حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِي هٰذَا الْمَسْجِدِ – يَعْنِي مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ – شَهْرًا وَمَنَ كَفَّ غَضَبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُمْضِيَهُ أَمْضَاهُ مَلأَ اللهُ قَلْبَهُ رَجَاءً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَشَى مَعَ أَخِيهِ فِي حَاجَةٍ حَتّٰـى يُثْبِتَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ قَدَمَهُ يَوْمَ تَزُولُ الأَقْدَامِ وَإِنَّ سُوَّء الْخُلُقِ لَيُفْسِدُ الْعَمَلَ كَمَا يُفْسِدُ الْخَلّ الْعَسَل

“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হল সে ব্যক্তি যে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার করে। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল, একজন মুসলিমের অন্তরে আনন্দ প্রবেশ করানো অথবা তার দুখ-কষ্ট লাঘব করা, অথবা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ পরিশোধ করা ও তার ক্ষুধা নিবারণ করা। আর আমার এই মসজিদে (মদিনার মসজিদে নববীতে) একমাস ব্যাপী ইতিকাফ করার থেকে আমার একজন ভাইয়ের কোনও প্রয়োজন মেটানোর জন্য তার সাথে গমন করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন। যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করবে অথচ সে ইচ্ছা করলে তা প্রয়োগ করতে পারত, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার অন্তরকে সন্তুষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য তার সাথে গমন করবে এবং তা পূরণ করে দেবে, আল্লাহ সেদিন তার পদযুগলকে সুদৃঢ় রাখবেন, যে দিন মানুষের পাগুলো পিছলে যাবে। আর মন্দ চরিত্র আমলকে নষ্ট করে যেমন সিরকা (ভিনেগার) মধুকে নষ্ট করে দেয়।” [সহিহ তারগিব, হা/২০৯০, সিলসিলা সহীহা, হা/৯০৬, সহীহুল জামে, হা/১৭৬]
◆ আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করাকে একজন নারীর প্রশংসনীয় দিক বিবেচনা করা হয়। তাই সামাজিক এই সুন্দর রীতিটি বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।

◆ তাছাড়া এটাও মনে রাখা দরকার যে, একজন মহিলার জীবনেও একদিন এমন সময় আসতে পারে যখন তার পুত্রবধূর সেবার প্রয়োজন দেখা দিবে। তাই সে যদি এখন সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে তবে সে যখন শাশুড়ি হবে তখন আশা করা যায়, তার পুত্রবধূরা তার সেবা করবে।

❑ সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ডকে শাশুড়িকে সহায়তা করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন,

ليس في الشرع ما يدل على إلزام الزوجة أن تساعد أم الزوج ، إلا في حدود المعروف ، وقدر الطاقة ؛ إحساناً لعشرة زوجها ، وبرّاً بما يجب عليه بره

“শরিয়তে এমন কিছু নেই যা নির্দেশ করে যে, স্ত্রী স্বামীর মাকে সাহায্য করতে বাধ্য। তবে স্বামীর প্রতি ইহসান এবং তার প্রতি অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্যপরায়ণতার স্বার্থে যতটুকু সামাজিকতার সীমার মধ্যে পড়ে সেটা ভিন্ন কথা।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ, ১৯/২৬৪ ও ২৬৫]

❑ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, স্ত্রীর উপর কি স্বামীর মা’র কোনও হক আছে?

তিনি উত্তরে বলেন,

لا ، أم الزوج ليس لها حق واجب على الزوجة بالنسبة للخدمة ؛ لكن لها حق مِن المعروف ، والإحسان ، وهذا مما يجلب مودة الزوج لزوجته ، أن تراعي أمه في مصالحها ، وتخدمها في الأمر اليسير ، وأن تزورها من حين لآخر ، وأن تستشيرها في بعض الأمور ، وأما وجوب الخدمة : فلا تجب ؛ لأن المعاشرة بالمعروف تكون بين الزوج والزوجة .

“না, খেদমতের ব্যাপারে স্ত্রীর ওপর স্বামীর মায়ের কোনও হক নেই সামাজিকতা ও ইহসানের হক ছাড়া। এ জিনিসটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি যে, সে তার মায়ের প্রতি যত্ন নেয়, সাধারণ ছোটখাটো বিষয়ে সেবা করে, সময়ে সময়ে তার সাথে দেখা করে এবং তার বিভিন্ন বিষয়ে তার নিকট পরামর্শ নেয়। কিন্তু খেদমত আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে কথা হল, তা আবশ্যক নয়। কারণ সততা ও কল্যাণের সাথে দাম্পত্য জীবন হবে কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।” [লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ, পৃষ্ঠা নং ৬৮, প্রশ্ন নং ১৪]

❂❂ আমাদের সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে পরিবারগুলোর প্রতি বিশেষ বার্তা:

যদি পুত্রবধূ তার শ্বশুর-শাশুড়ির এতটুকু সেবা করে বা কোনোভাবে তার উপকার করে তাহলে তাদের কর্তব্য, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং তার কাজের মূল্যায়ন করা। স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর এ কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা আদায়ের পাশাপাশি তার প্রশংসা করা এবং তার প্রতি আরও বেশি আন্তরিকতা, যত্ন, সম্মান ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করা। মাঝে মধ্যে এ জন্য তাকে আলাদা উপহার দেওয়াও ভালো। এতে সে খুশি হবে এবং আরও বেশি সেবা দিতে উৎসাহ বোধ হবে। স্বামীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ لَم يَشْكُرِ اَلناسَ لَمْ يَشْكُرِ اللهِ

“যে ব্যক্তি (উপকারী) মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করল না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করল না।” [আহমদ, হ/১১২৮০, তিরমিযী ১৯৫৫-সহিহ]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَهَادُوا تَحَابُّوا

“তোমরা উপহার বিনিময় কর তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’’ [বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/ ৫৯৪, সহীহুল জামে’, হা/ ৩০০৪]

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ি সহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি পুত্রবধূর পক্ষ থেকে সেবা পাওয়াকে ‘অধিকার’ মনে করা হয়। যার কারণে তার এহেন ত্যাগ ও সেবাকে যথার্থ মূল্যায়ন তো করা হয়ই না বরং তার কাজে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তার সাথে নানা অপমান সুলভ আচরণ করা হয়, তার প্রতি নানাভাবে জুলুম-অত্যাচার করা হয় ও কষ্ট দেওয়া হয়। যা সামাজিক ভাবে যেমন অমানবিক আচরণ তেমনি শরিয়তের দৃষ্টিতেও হারাম।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَهُنَا» . وَيُشِير إِلَى صَدره ثَلَاث مرار بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ ومالهُ وَعرضه

“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কোনও মুসলিম অপর মুসলিমের ওপর অবিচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না। আল্লাহ ভীতি এখানে! এ কথা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের বুকের দিকে তিনবার ইঙ্গিত করে বললেন, একজন মানুষের জন্য এতটুকু অন্যায়ই যথেষ্ট যে, সে নিজের মুসলিম ভাইকে হেয় জ্ঞান করবে। এক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের রক্ত, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান হারাম।” [সহিহ মুসলিম]

❖ শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি অহংকার করা বা তাদের প্রতি কষ্ট দায়ক আচরণ করা হারাম:

এর বিপরীতেও আমাদের সমাজে আরেকটি কষ্ট দায়ক চিত্র দেখা যায়। তাহলো, কতিপয় মহিলা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-যোগ্যতা, সৌন্দর্য বা বাবার বাড়ির অর্থ-সম্পদ বা বংশগত গৌরবের কারণে তার শ্বশুর-শাশুড়ি বা স্বামীর পরিবারকে অবজ্ঞা করে, তাদেরকে নানাভাবে অপমান সুলভ কথা বলে ও কষ্ট দেয়। এটিও হারাম।
অনুরূপভাবে অনেক স্বামীও তার শশুর-শাশুড়ির সাথে অসদাচরণ করে বা তাদেরকে অপমান-অপদস্থ করে। এটিও হারাম।

সর্বাবস্থায় শ্বশুর-শাশুড়ি সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়া হকদার। কেননা তারা বয়সে বড়। আর বয়োঃবৃদ্ধ, মুরুব্বি বা বড়দেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা ইসলামি শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺮْﺣَﻢْ ﺻَﻐِﻴﺮَﻧَﺎ ﻭَﻳُﻮَﻗِّﺮْ ﻛَﺒِﻴﺮَﻧَﺎ

“যে ছোটদেরকে দয়া এবং বড়দেরকে শ্রদ্ধা করেনা সে আমাদের দলভুক্ত নয়।“ [তিরমিযী, সহিহুল জামে, হা/৫৪৪৫]

সুতরাং প্রতিটি মহিলার জন্য তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও তার স্বামীর পরিবারের বড়দের প্রতি যথার্থ সম্মান-শ্রদ্ধা করা এবং ছোটদের প্রতি দয়া ও স্নেহশীল আচরণ করা আবশ্যক। কোন অবস্থায় কাউকে হেয় বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অহংকার প্রদর্শন, অসম্মান জনক আচরণ করা বা কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। নারী-পুরুষ সকলের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।

▪️প্রশ্ন: পুত্র সন্তানকে জীবিকা অর্জনের জন্য বাইরে থাকতে হয়। কন্যা সন্তানও বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। এ অবস্থায় পুত্রবধূও যদি শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশুনা না করে তাহলে বৃদ্ধ মানুষগুলোকে কে দেখাশুনা করবে?
উত্তর:
আল্লাহ তাআলা পিতামাতার সেবা করাকে তার সন্তানদের জন্য অপরিহার্য করেছেন; পুত্রবধূর জন্য নয়। সুতরাং স্বামী পিতামাতার সেবা এবং তার জীবন-জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে যদি তিনি তার এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তাহলে এ ক্ষেত্রে একজন ভালো মনের দ্বীনদার স্ত্রী তার স্বামীর অবস্থা বিবেচনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং স্বামীকে সহায়তার স্বার্থে তার শ্বশুর-শাশুড়ির যথাসাধ্য সেবা দিবে। এতে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন এবং তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনার তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate