Thursday, March 24, 2022

দুআ কবুল হওয়ার উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন খতম করার আমল কি হাদিস সম্মত

 দুআ কবুল বা মনের ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসিন খতম করার বিধান এবং সূরা ইয়াসিনের ফজিলতে বর্ণিত হাদিসগুলোর অবস্থা

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: দুআ কবুল হওয়ার উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন খতম করার আমল কি হাদিস সম্মত?
আরও জানতে চাই, হাদিসের আলোকে সূরা ইয়াসিনের ফজিলত কতটুকু?
উত্তর:
প্রচলিত আছে যে, “সূরাটি ৪১ বার পাঠ করার পর দুআ করার পূর্বে ১১ বার দরুদে ইবরাহিম পাঠ করতে হয়। তারপর দুআ করলে আল্লাহ দুআ কবুল করেন।” কিন্তু এটা দলিল বহির্ভূত ও বানোয়াট কথা। এটি বিদআতিদের তৈরি করা ওজিফা।

প্রকৃতপক্ষে দুআ কবুল বা মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য সূরা ইয়াসিন খতম করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোনও হাদিস নেই। কোনও সাহাবি থেকেও তা প্রমাণিত হয় নি। তাই তো বিশ্ববিখ্যাত আলেমে দীন সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
أن قراءة سورة يس لقضاء الأعمال بدعة
“কার্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসিন পাঠ করা বিদআত।”

❑ বানোয়াট হাদিস দ্বারা দলিল পেশ!

ইচ্ছা পূরণ, জীবনের নানা সঙ্কট নিরসন বা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজ করণের ক্ষেত্রে সূরা ইয়াসিন খতম করার ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করা হয়:
يس لما قرئت له
“যে উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসিন পাঠ করা হবে তা পূরণ করা হয়।” বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যাচার। এটি আদতে কোনও হাদিস নয়।

✪ ইমাম সাখাবি বলেন, لا أصل له بهذا اللفظ “এই শব্দে বর্ণিত হাদিসটির কোনও ভিত্তি নেই।” [আল মাকাসিদুল হাসানা, হা/৭৪১]-
✪ কাজি যাকারিয়া বায়যাবির হাশিয়াতে বলেন, “এটি বানোয়াট।” [যেমনটি রয়েছে কাশফুল খাফা গ্রন্থে ২/২২১৫]
✪ মোল্লা আলি কারি হানাফি রহ বলেন, قيل لا أصل له أو بأصله موضوع “বলা হয়েছে, এর কোনও ভিত্তি নাই বা মূলত: এটি বানোয়াট।” [আল আসরুল মারফুআহ, ৩৭৭]
✪ শাইখ আলবানি বলেন, এটি বানোয়াট হাদিস। [যাইফুত তারগীব, ৮৮৫]

◯ ইবনে কাসির রাহ. বলেন, কতিপয় আহলে ইলম বলেছেন,
” أنَّ مِن خصائص هذه السورة أنها لا تُقرَأ عند أمر عسير إلا يسره الله تعالى
এই সূরা (সূরা ইয়াসিন) এর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে এটি পাঠ করা হবে আল্লাহ তা সহজ করে দিবেন।” [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩/৭৪২] কিন্তু এ কথার পক্ষেও কোনও হাদিস বা সাহাবিদের বক্তব্য কিংবা আমল নেই। এভাবে যদি দীনের বিষয়ে দলিল ছাড়া মানুষের মতামত, ফতোয়া, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি গ্রহণ করা হয় তাহলে ইসলামের প্রকৃত রূপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।)

❑ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলতে বর্ণিত কোনও হাদিসই সহিহ নয়:

প্রকৃতপক্ষে সূরা ইয়াসিনের ফজিলতে যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে সেগুলো একটিও সহিহ নয়।

এ বিষয়ে যে সকল হাদিস আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
১. إن لكل شيء قلبا ، وقلب القرآن يس
“প্রতিটি বস্তুর অন্তর আছে। আর কুরআনের অন্তর হল সূরা ইয়াসিন।”
২. من قرأها فكأنما قرأ القرآن عشر مرات
“যে সূরা ইয়াসিন একবার পাঠ করল সে যেন সমস্ত কুরআন দশবার পাঠ করল।”
৩. من قرأ سورة ( يس ) في ليلة أصبح مغفورا له
“যে ব্যক্তি রাতে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে সে ভোরে উঠবে ক্ষমা প্রাপ্ত অবস্থায়।”
৪. من داوم على قراءتها كل ليلة ثم مات مات شهيدا
“যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে অতপর মৃত্যু বরণ করবে যাবে সে শহিদ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে ।”
৫. من دخل المقابر فقرأ سورة ( يس ) ، خفف عنهم يومئذ ، وكان له بعدد من فيها حسنات
“যে ব্যক্তি গোরস্তানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে দিন কবর বাসীদের শাস্তি লাঘব করা হবে এবং পাঠকারীর জন্য কবরে যত লাশ আছে তাদের সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে।”
বিজ্ঞ হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে এ হাদিসগুলো একটিও সহিহ নয়।
[দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাওযী রচিত বিখ্যাত বানোয়াট হাদিস সংকলন আল মাউযুআত ২/৩১৩, শাওকানি রচিত আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ, হা/ ৯৭৯, ৯৪২]

মনে রাখতে হবে, যদি এ সূরা খতম করে দুআ করলে তা কবুলের নিশ্চয়তা থাকতো তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে এই মর্যাদা পূর্ণ এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আমলটি থেকে বঞ্চিত করতেন না।

সুতরাং আমাদেরকে এ সব বানোয়াট ও বিদআতি
আমল থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা তৌফিক দান করুন। আমিন।

❑ দুআ কবুলের জন্য বিশুদ্ধ হাদিস সম্মত আমল:

আপনি কুরআনের যেখান থেকে সুবিধা হয় পাঠ করে অথবা নফল নামাজ, রোজা, দান-সদকা ইত্যাদি নেক আমল করার পর এসকল নেক আমলের ওসিলা ধরে আল্লাহর কাছে দুআ করতে পারেন। নেক আমলের ওসিলায় দুআ করলে তা কবুলের সম্ভাবনা থাকে। যেমন: এভাবে বলা, হে আল্লাহ আমার কুরআন খতম, কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, রোজা ও দান-সদকার ওসিলায় আমার দুআ কবুল করো, আমার সমস্যা দূর করে দাও, আমাকে সুস্থতা দান করো, আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করো ইত্যাদি।

এছাড়াও দুআর শর্তাবলি ঠিক রেখে দুআ কবুলের অধিক সম্ভাবনাময় সময় ও ক্ষেত্রগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে দুআ করবেন। যেমন: ভোর রাতে, যে কোনও সালাতে সেজদা অবস্থায়, রোজা অবস্থায়, ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে, সফর অবস্থায়, আজান ও একামতের মাঝামাঝি সময়, জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিবের মাঝামাঝি সময় ইত্যাদি। অনুরূপভাবে পিতামাতা ও নেককার-পরহেজগার ব্যক্তিদের দুআ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহর রাব্বুল আলামিন দুআ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে যা কিছু করা জায়েয

 প্রশ্ন: রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রীর পাশে ঘুমানো কি স্বামীর জন্য জায়েয?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

হ্যাঁ; এটি জায়েয। বরঞ্চ স্বামীর জন্য সহবাস ব্যতীত বা বীর্যপাত ব্যতীত নিজের স্ত্রীকে উপভোগ করা জায়েয আছে।

ইমাম বুখারি (১৯২৭) ও মুসলিম (১১০৬) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রেখে স্ত্রীকে চুম্বন করতেন; স্ত্রীর সাথে মুবাশারা (আলিঙ্গন) করতেন। এবং তিনি ছিলেন তাঁর যৌনাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি।

সিন্দি বলেন:

তাঁর কথা: ইউবাশিরু (يباشر) বা মুবাশারা করতেন এ কথার অর্থ হচ্ছে- স্ত্রীর চামড়ার সাথে তার চামড়া ছোঁয়ানো। যেমন- গালের উপর গাল রাখা এবং এ জাতীয় কিছু।

উদ্দেশ্য হচ্ছে- চামড়ার সাথে চামড়া লাগানো। এখানে মুবাশারা দ্বারা- সহবাস উদ্দেশ্য নয়।

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

রোযাদার স্বামীর জন্য রোযাদার স্ত্রীর সাথে কি কি করা জায়েয?

উত্তরে তিনি বলেন:

ফরজ রোযা পালনকারী স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর সাথে এমন কিছু করা জায়েয হবে না; যাতে করে তার বীর্যপাত হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব মানুষ এক রকম নয়। কারো বীর্যপাত দ্রুত হয়ে যায়; আবার কারো ধীরে ধীরে হয় এবং সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রাখে। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি ছিলেন স্বীয় যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি।

আবার কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; তার বীর্যপাত দ্রুত হয়ে যায়। এমন ব্যক্তি ফরজ রোযা পালনকালে তার স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা ইত্যাদির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে তাকে সাবধান থাকতে হবে। আর যদি ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে জানে যে, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তাহলে তার জন্য স্ত্রীকে চুম্বন করা ও জড়িয়ে ধরা জায়েয আছে; এমনকি ফরয রোযার মধ্যেও। তবে, সাবধান! সহবাসের ব্যাপারে সাবধান! রমযান মাসে যার উপর রোযা রাখা ফরজ সে যদি সহবাসে লিপ্ত হয় তাহলে তার উপর পাঁচটি বিষয় অবধারিত হবে:

এক: গুনাহ।

দুই: রোযা ভেঙ্গে যাওয়া।

তিন: দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকা ফরজ। যে কোন ব্যক্তি কোন শরয়ি ওজর ছাড়া রমযানের রোযা ভঙ্গ করবে তার উপর বিরত থাকা ও সেদিনের রোযা কাযা করা ফরজ।

চার: সেদিনের রোযা কাযা করা ফরয। কারণ সে ব্যক্তি একটি ফরয ইবাদত নষ্ট করেছে; যার কারণ তার উপর এ ইবাদত কাযা করা ফরজ।

পাঁচ: কাফফারা দেয়া। এ কাফফারা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাফফারা: একজন কৃতদাস আযাদ করা। কৃতদাস না পেলে লাগাতর দুইমাস রোযা রাখা। সেটাও করতে না পারলে ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো।

আর যদি রোযাটি ফরজ রোযা হয় তবে রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে; যেমন যে ব্যক্তি রমযানের কাযা রোযা পালন করছে; এমন রোযা ভঙ্গ করলে দুইটি বিষয় অবধারিত হবে: গুনাহ ও রোযাটি কাযা করা। আর যদি রোযাটি নফল রোযা হয় তাহলে কোন কিছু আবশ্যক হবে না। সমাপ্ত

https://islamqa.info/bn/49614

যে সব কারণে সিয়াম বিনষ্ট হয় না (১২টি)

 নিম্নে যে সব কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয় না সেগুলো উল্লেখ করা হল:

◍ ১. ভুলক্রমে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে ফেললে সিয়াম ভঙ্গ হয় না। এরূপ কারো ঘটলে মনে পড়ার সাথে সাথে বিরত হবে এবং সিয়ামে বহাল থাকবে। তার জন্য কাযা ও কাফফারা কিছুই নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ

“যে ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় ভুলক্রমে কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।” [বুখারি হাদিস নং ১৯৩৩, মুসলিম, হাদিস নং ১১৫৫]

সূর্য অস্তমিত গেছে এই ধারণা করে ভুলক্রমে কেউ যদি ইফতার করে ফেলে, পরে বুঝতে পারে যে, সূর্য ডুবে নি, তাহলে সে তাৎক্ষণিক পানাহার থেকে বিরত হবে। অত:পর সূর্য অস্ত গেলে ইফতার করবে। তার রোযা বিশুদ্ধ হবে। কোন অসুবিধা হবে না। কেননা আল্লাহ বলেছেন,

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا

“হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুল করে ফেলি বা করতে ভুলে যাই, তবে আমাদের পাকড়াও করো না”। [সূরা বাকারা: ২৮৬]

◍ ২. যেসব ইনজেকশন দ্বারা খাদ্য ও পানীয়ের কাজ হয়না-যেমন: জ্বর, ব্যথা, কাটা-পোড়া, ক্ষুধার কারণে নয় এমন দুর্বলতা ইত্যাদি রোগের জন্য যেসব ইনজেকশন করা হয় (পেশী, চামড়া বা শিরার ইনজেকশন) তাতে সিয়ামের কোন ত্রুটি হবে না, কারণ তা খাদ্য ও পানীয় কাজ করে না।

অনুরূপভাবে ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন, দাঁতের চিকিৎসার জন্য অবশ করার ইনজেকশন প্রভৃতির কারণেও সিয়ামের ক্ষতি হবে না।

◍ ৩. মিলনের মাধ্যমে জুনবী হোক বা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে-উভয় অবস্থায় গোসল না করেই সিয়ামের নিয়ত ও সাহুর গ্রহণ করতে পারবে, এতে সিয়ামের কোন ত্রুটি হবেনা। তবে ফজরের সালাতের পূর্বে অবশ্যই গোসল করে নিবে। আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নদোষের মাধ্যমে নয়, স্ত্রী সঙ্গমের মাধ্যমে জানাবত (নাপাক) অবস্থায় ফজর করতেন। অতঃপর গোসল করতেন ও সিয়াম পূর্ণ করতেন। [বুখারি হাদিস নং ১৯২৬]

◍ ৪. রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে, রোগ, ভয়-ভীতি বা মানসিক দুর্বলতার কারণে (জাগ্রত অবস্থায় উত্তেজনা ব্যতীত) বীর্যপাত হলে সিয়ামের কোন অসুবিধা হবে না। কেননা এতে তার কোন হাত নেই।

◍ ৫. ইচ্ছাকৃত নয় রোগের কারণে বমি হলে সিয়ামের কোন ত্রুটি হবে না। [দলিল ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে]

◍ ৬. শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা শিঙ্গা লাগালে সিয়াম নষ্ট হবে না। সিয়াম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও অপারেশন করা যায়। উক্ত অবস্থায় অধিক দুর্বলতার কারণে সিয়াম ভাঙ্গার অনুমতি থাকার কথা ভিন্ন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ও সিয়াম রত অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। [বুখারি হাদিস নং ১৯৩৮ ও ১৯৩৯] কিন্তু একটি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় এবং যাকে লাগানো হয় উভয়েরই সিয়াম ভেঙ্গে যায়। উহা বুখারির উপরোক্ত হাদিস এবং দারাকুতনী, বায়হাকী ও ত্বাবরানীর বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে মনসুখ হয়ে গেছে। [দেখুন: মুহাল্লা ৬/২০৫ পৃঃ ইরয়াউল গালীল ৪/৭২-৭৫, আছসিয়াম ওয়া রমাযান ২২৪-২২৬ পৃঃ।]

অনুরূপভাবে জখমের কারণে রক্ত বের হওয়া, ব্লাড টেস্টের জন্য রক্ত দেয়া, দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া বা দাঁত উঠানোর সময় রক্ত বের হলে সিয়ামের ক্ষতি হবে না।

◍ ৭. স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া ও হাল্কা বিনোদন করার অনুমতি আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিনা স্বতন্ত্রতার সহিত এ সবের বৈধতা সাব্যস্ত হয়েছে। তবে ঐ লোকদের জন্য যারা কামপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। [বুখারি হাদিস নং ১৯২৭, ১৯২৮, ১৯২৯ ও আস সিয়াম ২২৮-২২৯ পৃঃ। শেষোক্ত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।]

◍ ৮. মলদ্বার, লিঙ্গের ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালে সিয়াম নষ্ট হবে না। এমনিভাবে পেটের ভিতর পাকস্থলীর বাইরে, মাথা ফেটে গেলে, মাথার ভিতর ওষুধ প্রবেশ করালে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। [আস সিয়াম ২৩১-২৩৪ পৃঃ।]

◍ ৯. চোখে কাজল ব্যবহার করলে, চোখে-কানে ওষুধের ফোটা দিলে, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের জন্য নাকে ভাপ নেয়া, ইনহেলার বা অক্সিজেন গ্রহণ করা, নারীদের মেকআপ ব্যবহার প্রভৃতিতে সিয়াম নষ্ট হবে না।

◍ ১০. পানি দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করাতে সিয়ামের ত্রুটি হয়না। তবে বেশী করে গড়গড়া করে কুলি করবে না। এসব করতে যেয়ে নাক বা গলা দিয়ে ভুলক্রমে কিছু প্রবেশ করলে সিয়াম নষ্ট বা মাকরূহ হবে না। বিভিন্ন সাহাবি ও তাবেঈ থেকে এরূপ সাব্যস্ত হয়েছে। [আস সিয়াম ২৩৪-২৩৬ পৃঃ]

◍ ১১. পানি দ্বারা বেশী বেশী গোসল করলে, বা গরমের কারণে মাথায় বেশী বেশী পানি ঢাললে, সাঁতার কাটলে, পানিতে ডুব দিলে কোন অসুবিধা নেই। আতর ও ফুলের সুগন্ধি নিলে বা মাখলে, তৈল, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করলে, সিঁথি করলে সিয়ামের কোন অসুবিধা হয় না।

গড়গড়া করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করলে, মিসওয়াক ও টুথপেস্ট ব্যবহার করলে, থুথু বা কফ গিলে ফেললে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।

◍ ১২. মহিলারা খানা পাকানোর সময় তরকারীর বিভিন্ন অবস্থা যাচায়ের জন্য প্রয়োজন থাকলে জিহ্বা দ্বারা পরীক্ষা করতে পারে। বিভিন্ন সাহাবি ও তাবেঈ থেকে এসবের বৈধতা সাব্যস্ত হয়েছে বিষয়গুলি [দলিলসহ দেখুন: আস সিয়াম ২৩৪- ২৩৭পৃঃ]
▬▬▬▬◐✪◑▬▬▬▬
উৎস:
রমজান ও সিয়াম কোর্স
মুহা আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
[দাঈ, দক্ষিণ জেদ্দা ইসলামী দাওয়া সেন্টার-সৌদি আরব]।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
[দাঈ, জুবাইল দাওয়অ এন্ড গাইডন্সে সেন্টার, সৌদি আরব]।

সবরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

 সবর বা ধৈর্য ধারণ করা আকিদার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনে বিপদ-মুসিবত নেমে এলে অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশা করতে হবে।

◈ ইমাম আহমদ রহ. বলেন, “আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নব্বই স্থানে সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।”

◈ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
الصبر ضياء
“সবর হল জ্যোতি।” (মুসনাদ আহমদ ও মুসলিম)

◈ উমর রা. বলেন, “সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি।” (সহিহ বুখারি)
◈ আলী রা. বলেন, “ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উদাহরণ হল দেহের মধ্যে মাথার মত।” এরপর আওয়াজ উঁচু করে বললেন, “যার ধৈর্য নাই তার ঈমান নাই।”
◈ আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَا أَعْطَى اللَّهُ أَحَدًا مِنْ عَطَاءٍ أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ

“আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেন নি।” (সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ: নিষ্কলুষ থাকা। সহিহ)

❑ সবরের প্রকারভেদ:

সবর তিন প্রকার। যথা:

✪ ১. আল্লাহর আদেশের উপর সবর করা।
✪ ২. আল্লাহর নিষেধের উপর সবর করা।
✪ ৩. বিপদাপদে সবর করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ

“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।” (সূরা তাগাবুন: ১১)

আলকামা বলেন, “আল্লাহ তায়ালা ‘যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন’ সে হল ঐ ব্যক্তি যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”

অন্য মুফাসসিরগণ উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, “যে ব্যক্তি বিপদে পড়লে বিশ্বাস রাখে যে এটা আল্লাহর ফায়সালা মোতাবেক এসেছে। ফলে সে সবর করার পাশাপাশি পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহর ফয়সালার নিকট আত্মসমর্পণ করে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর দুনিয়ার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার বিনিময়ে তিনি তার অন্তরে হেদায়েত এবং সত্যিকার মজবুত একিন দান করেন। যা নিয়েছেন তার বিনিময় দান করবেন।”

সাঈদ বিন জুবাইর রা. বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমান আনে আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়েত দেন।” এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, অর্থাৎ সে কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদের সম্মুখীন হলে বলে ‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্যই আর তাঁর নিকটই ফিরে যাব। (সূরা বাকারা: ১৫৬)

উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। আরও প্রমাণিত হয় যে, ধৈর্য ধরলে অন্তরের হেদায়াত অর্জিত হয়।

❑ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিটি পদক্ষেপে মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ, এ পথে নামলে নানা ধরণের কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ… وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ

“তোমার প্রভুর পথে আহবান কর হেকমত এবং ভাল কথার মাধ্যমে। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। তোমার প্রভু তো সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথে গেছে আর তিনিই সব চেয়ে বেশি জানেন কারা সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।…আর ধৈর্য ধর। ধৈর্য ধর কেবল আল্লাহর উপর।” (সূরা নাহল: ১২৫-১২৭)

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে গেলেও চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। কারণ, এ পথে মানুষের পক্ষ থেকে নান ধরণের যাতনার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা লোকমান সম্পর্কে বলেন, (তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন):
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

“হে বৎস, নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। বিপদে ধৈর্য ধরণ করা তো বিশাল সংকল্পের ব্যাপার।” (সূরা লোকমান: ১৭)

মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন জীবনের নানান বিপদ-মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতার সামনে। সে বিশ্বাস করে যত সংকটই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে তা হালকা ভাবে মেনে নেয়। বিপদে পড়েও খুশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তকদিরকে বিশ্বাস করে। তকদীরকে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি।

তকদিরের উপর ঈমান রাখলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হল, বিপদে ধৈর্য ধারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিপদে সবর না করলে তার অর্থ হল, তার কাছে ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটি অনুপস্থিত। অথবা থাকলেও তা খুব নড়বড়ে। ফলে সে বিপদ মুহূর্তে রাগে-ক্ষোভে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, এটা এমন এক কুফরি মূলক কাজ যা আকিদার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে।

❑ বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়:

আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত দেন এক মহান উদ্দেশ্যে। তা হল এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মোচন করে থাকেন। যেমন: আনাস রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

“আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দার অকল্যাণ চাইলে তিনি তার গুনাহের শাস্তি থেকে বিরত রেখে কিয়ামতের দিন তার যথার্থ প্রাপ্য দেন।” (সহিহ তিরমিযি-আলবানি, হা/২৩৯৬)

ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, “বিপদ-মুসিবত হল নেয়ামত। কারণ এতে গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে আরও বেশি রোনাজারি করতে হয়। তার নিকট আরও বেশি ধর্না দিতে হয়। আল্লাহর নিকট নিজের অভাব ও অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। সৃষ্টি জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়।…বিপদের মধ্যে এ রকম অনেক বড় বড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

বিপদে পড়লে যদি গুনাহ মোচন হয়, পাপরাশী ঝরে যায় তবে এটা তো বিশাল এক নেয়ামত। সাধারণভাবে বালা-মসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম। তবে কোন ব্যক্তি যদি এ বিপদের কারণে এর থেকে আগের থেকে আরও বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে তবে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে তার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, কিছু মানুষ আছে যারা দরিদ্রতায় পড়লে বা অসুস্থ হলে তাদের মধ্যে মুনাফেকি, ধৈর্য হীনতা, মনোরোগ, স্পষ্ট কুফুরী ইত্যাদি নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে কিছু ফরয কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকে বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তার বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপদ না হওয়াই কল্যাণকর। মুসীবতের কারণে নয় বরং মুসীবতে পড়ে তার মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি তার কারণে বিপদ না আসাই তার জন্য কল্যাণকর।
পক্ষান্তরে বিপদ-মুসীবত যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য ও আনুগত্য সৃষ্টি করে তবে এই মুসীবত তার জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশাল নেয়ামতে পরিণত হয়….।”

❑ বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেন:

বিপদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন কে ধৈর্যের পরিচয় দেয় এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে পক্ষান্তরে কে ধৈর্য হীনতার পরিচয় দেয় ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ

“বিপদ যত কঠিন হয় পুরস্কারও তত বড় হয়। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান আর যে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।” (সহিহ তিরমিযি-আলবানি, হা/২৩৯৬)

অত্র হাদিসে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। যেমন:

✪ ১. বান্দা যেমন আমল করবে তেমনই প্রতিদান পাবে। “যেমন কর্ম তেমন ফল।”
✪ ২. এখানে আল্লাহর একটি গুনের পরিচয় পাওয়া যায়। তা হল ‘সন্তুষ্ট হওয়া’। আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য গুনের মতই এটি একটি গুন। অন্য সব গুনের মতই এটিও আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে যেমনটি তার জন্য উপযুক্ত হয়।
✪ ৩. অত্র হাদিসে জানা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা এক বিশাল উদ্দেশ্যে বান্দা উপর বিপদ-মসিবত দিয়ে থাকেন। তা হল তিনি এর মাধ্যমে তার প্রিয়পাত্রদেরকে পরীক্ষা করেন।
✪ ৪. এখানে তকদীরের প্রমাণ পাওয়া যায়।
✪ ৫. মানব জীবনে যত বিপদাপদই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর তকদীর তথা পূর্ব নির্ধারিত ফয়সালা অনুযায়ী।
✪ ৬. এখান থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, বিপদ নেমে আসলে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মহুর্তে প্রতিটি বিপদের মুখে আল্লাহর নিকটই ধর্না দিতে হবে এবং তার উপরই ভরসা রেখে পথ চলতে হবে।

❑ ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়:

জীবনের সকল কষ্ট ও বিপদাপদে আল্লাহ তায়ালা নামায ও সবরের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, এতেই মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়। আল্লাহ তায়ালা খবর দিয়েছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন। অর্থাৎ তাদেরকে তিনি তাদের সাহায্য করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নামায ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য অনুসন্ধান কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবর কারীদের সাথে থাকেন।” (সূরা বাকরা: ১৫৩)

এখান থেকে ধৈর্য ধারণ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়। মুমিন ব্যক্তির জন্য জীবনের প্রতিটি পদে পদে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া দরকার। এই সবরের মাধ্যমে আকীদা ও বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
সবরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
মূল: ড. শাইখ সালিহ ফাউযান আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ)।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

 প্রশ্ন: আমি শুনেছি যে, বেশি হাসলে নাকি আন্তর কঠিন হয়ে যায়। এটা কি সহীহ?

উত্তর:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, উচ্চশব্দে বেশি পরিমাণে হাসলে মন মরে যায় এবং চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إيَّاك وكثرةَ الضَّحك؛ فإنَّه يميت القلبَ، ويذهب بنورِ الوجه
“উচ্চ আওয়াজে হাসা থেকে সাবধান থাকো। কেননা এতে অন্তর মরে যায় এবং মুখ মণ্ডলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমদ প্রমূখ। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)

এখানে উদ্দেশ্য হল, বেশি পরিমাণে অট্টহাসি দেয়া। এটি বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিকর। তবে মাঝে-মধ্যে উঁচু আওয়াজে হাসা দোষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কখনও উঁচু আওয়াজে হেসেছেন। কিন্তু তিনি অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন।

🌀 উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন: “যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে আওয়াজ করে হাসে তার ব্যক্তিত্ব বোধ কমে যায়।”

🌀 ইমাম মাওয়ারদী তার বিখ্যাত আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া গ্রন্থ বলেন:
“উঁচু আওয়াজে হাসার অভ্যাস মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে অমনোযোগী করে দেয়, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের মুহুর্তে মনকে বিক্ষিপ্ত ও ভীত-ত্রস্ত করে আর যে অধিক পরিমাণে উঁচু আওয়াজে হাসে তার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব বোধ থাকে না…।”

🌀 বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয়েছে, অট্টহাসি মানুষের হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম কারণ। কারণ মানুষ যখন হো হো করে অট্টহাসি হাসে তখন তার শীরা-উপশিরায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটি বেশি মাত্রায় হলে হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

তাই হাসির ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে মৃদ হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মনিষীগণ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য মুচকি হাসিকে অন্যতম উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি দেহ ও মন উভয়ের জন্যই ভালো। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মুচকি হাসিকে সদকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আবু যর রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تبسمك في وجه أخيك لك صدقة
“তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।” (সহীহ তিরমিযী, হা/১৯৫৬) এবং তিনি নিজেও অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন এবং হাসি-খুশি জীবন যাপন করতেন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🌐🔸🌐▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

রোযার কিছু সুন্নত

 প্রশ্ন: রোযার সুন্নতগুলো কি কি?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

রোযার অনেক সুন্নত রয়েছে, যেমন-

এক:

যদি কেউ রোযাদারকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া করতে আসে তাহলে রোযাদার তার দুর্ব্যবহারের জবাব ভাল ব্যবহার দিয়ে বলবে: ‘নিশ্চয় আমি রোযাদার’। যেহেতু সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ। অতএব, কেউ যেন মন্দ কথা না বলে, মূর্খ আচরণ না করে। যদি কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করে কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে উত্তম। (আল্লাহ্‌ বলেন) আমার কারণে সে পানাহার ও যৌনসুখ বর্জন করেছে। রোযা আমারই জন্য। আমিই রোযার প্রতিদান দিব। এক নেকীর প্রতিদানে দশ নেকী দিব।”[সহিহ বুখারী (১৮৯৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৫১)]

দুই:

রোযাদারের জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহেরী খাও; কারণ সেহেরীতে বরকত রয়েছে।”[সহিহ বুখারী (১৯২৩) ও সহিহ মুসলিম (১০৯৫)]

তিন:

বিলম্বে সেহেরী খাওয়া সুন্নত। দলিল হচ্ছে, সহিহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহেরী খেলাম। এরপর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন। আমি বললাম: আযান ও সেহেরী মাঝে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বলেন: পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সমান সময়।”[সহিহ বুখারী (১৯২১)]

চার:

অবিলম্বে ইফতার করা সুন্নত। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণে থাকবে, যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করে।”[সহিহ বুখারী (১৯৫৭) ও সহিহ মুসলিম (১০৯৮)] 49716 নং প্রশ্নোত্তরটিও পড়ুন।

পাঁচ:

কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি কাঁচা খেজুর না পাওয়া যায় তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকে তাহলে পানি দিয়ে। দলিল হচ্ছে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।”।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৬), সুনানে তিরমিযি (৬৯৬), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে ৪/৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে]

ছয়:

হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে সেটা বলে ইফতার করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে ইফতার করা। সঠিক মতানুযায়ী ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলা ওয়াজিব; যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আরও বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু, ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, আপনার জন্যই রোযা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করেছি। হে আল্লাহ্‌, আমার পক্ষ থেকে আপনি কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।)।[ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে (২/৫১) বলেছেন, হাদিসটি দুর্বল] আরও বর্ণিত হয়েছে, “যাহাবায যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু, ইনশাআল্লাহ্‌” (অর্থ- তৃষ্ণা দূরীভুত হল, শিরাগুলো সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্‌, সওয়াব সাব্যস্ত হল)।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৭), সুনানে বাইহাকী (৪/২৩৯), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৪/৩৯) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করা হয়েছে]

রোযাদারের দোয়ার ফযিলতের ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন:

১। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: “তিনজনের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না: পিতার দোয়া, মজলুমের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।” [সুনানে বাইহাকী (৩/৩৪৫), আলবানী তাঁর ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (১৭৯৭) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

২। আবু উমাম (রাঃ) থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, “প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ্‌ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে দেন” [মুসানদে আহমাদ (২১৬৯৮), আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

৩। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় প্রতিটি দিন ও রাতে আল্লাহ্‌ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করেন; অর্থাৎ রমযান মাসে। নিশ্চয় প্রতিটি দিন ও রাতে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি কবুলযোগ্য দোয়া রয়েছে।” [হাদিসটি ‘বায্‌যার’ বর্ণনা করেছেন; আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (১/৪৯১) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

আরও জানতে পড়ুন 37745 নং, 37720 নং, 13999 নং ও 14103 নং প্রশ্নোত্তর।

https://islamqa.info/bn/39462

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত

 প্রশ্ন: রোজাদারকে ইফতার করালে কী ধরণের সওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

যায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সম পরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।”[সুনানে তিরমিযি (৮০৭), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৭৪৬), ইবনে হিব্বান তাঁর সহিহ গ্রন্থ (৮/২১৬) এ এবং আলবানি তাঁর ‘সহিহ আল-জামে’ গ্রন্থ (৬৪১৫) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “রোজাদারকে ইফতার করানো দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- তাকে পেট ভরে তৃপ্ত করানো।”[আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা-১৯]

সলফে সালেহিন খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন এবং তাঁরা এটাকে মহান ইবাদত মনে করতেন।

জনৈক সলফে সালেহিন বলেছেন: “দশজন সাথীকে দাওয়াত দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার খাওয়ানো আমার কাছে দশজন গোলাম আজাদ করার চেয়ে প্রিয়।”

সলফে সালেহিনের অনেকে নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে উমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমাদ ইবনে হাম্বল। ইবনে উমর এতিম ও মিসকীনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না।

সলফে সালেহিনদের কেউ কেউ তাঁর নিজের ইফতার তার সঙ্গী সাথীদেরকে খাওয়াতেন এবং নিজে তাদের খেদমত করতেন। এদের মধ্যে অন্যতম- ইবনুল মুবারক।

আবু সাওয়ার আল-আদাওয়ি বলেন:

বনি আদি গোত্রের লোকেরা এই মসজিদে নামায পড়ত। তাদের কেউ কখনো একাকী ইফতার করেনি। যদি তার সাথে ইফতার করার জন্য কাউকে সাথে পেত তাহলে তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত তাহলে নিজের খাবার মসজিদে নিয়ে এসে মানুষের সাথে খেত এবং মানুষকেও খেতে দিত।

খাবার খাওয়ানোর ইবাদতের মাধ্যমে আরও অনেকগুলো ইবাদত পালিত হয়:

নিমন্ত্রিত ভাইদের সাথে হৃদ্যতা ও ভালবাসা। যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা ঈমান আনা ছাড়া জান্নাত যেতে পারবে না। আর পারস্পারিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ঈমান হবে না।”[সহিহ মুসলিম (৫৪)] দাওয়াত খাওয়ানোর মাধ্যমে নেক লোকদের সাহচর্য অর্জিত হয় এবং আপনার খাবার খেয়ে তারা নেককাজের শক্তি পায়, এতে আপনার সওয়াব হয়।

https://islamqa.info/bn/12598

রোজাদারের মিসওয়াক ব্যবহার করা ও মিসওয়াক করে থুথু গিলে ফেলা

 প্রশ্ন: রমজানের দিনের বেলায় মিসওয়াক ব্যবহার করার হুকুম কী? মিসওয়াকের থুথু গিলে ফেলা কি জায়েয আছে?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

রোজাকালে ও রোজা ছাড়া, দিবসের প্রথমভাগে অথবা শেষভাগে সবসময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। দলিল হচ্ছে-

১- ইমাম বুখারি (নং ৮৮৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।”

২- ইমাম নাসাঈ, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মিসওয়াক হচ্ছে- মুখ পবিত্রকারী ও রব্বকে সন্তুষ্টকারী”[নাসাঈ (৫), আলবানী সহিহ নাসাঈ গ্রন্থে (৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

এ হাদিসগুলোত সবসময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে দলিল পাওয়া যায়। এ বিধান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারকে বাদ দেননি। বরং হাদিসগুলো রোজাদার ও রোজাদার নয় এমন সকলকে শামিল করে।

মিসওয়াক করার পর থুথু গিলে ফেলা জায়েয। তবে যদি মিসওয়াকের কোন কিছু ছুটে মুখে থাকে তাহলে সেটা ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলবে। যেমন রোজাদারের জন্য ওজু করা জায়েয। ওজুর পানি মুখ থেকে ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলা জায়েয। কুলির পানি মুখ থেকে শুকিয়ে ফেলা আবশ্যকীয় নয়।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ (৬/৩২৭) কিতাবে বলেন:

মুতাওয়াল্লি ও অন্যান্যরা বলেন: “রোজাদার কুলি করার পর কুলির পানি ফেলে দেয়া অপরিহার্য। কোন কাপড় বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে মুখ শুকানো অপরিহার্য নয়- এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই।” সমাপ্ত

ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন:

রোজাদার কর্তৃক কাঁচা ও শুকনো মিসওয়াক ব্যবহার করা শীর্ষক অধ্যায়… আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক ওজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” বুখারি বলেন: “এ বিধান থেকে রোজাদারকে বাদ দেয়া হয়নি”। আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “মিসওয়াক হচ্ছে- মুখ পবিত্রকারী ও রব্বকে সন্তুষ্টকারী” আতা ও কাতাদা বলেন: “তার থুথু সে গিলে ফেলবে।”

ইবনে হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন:

“এ শিরোনামের মাধ্যমে তিনি যারা রোজাদারের জন্য কাঁচা মিসওয়াক করাকে মাকরুহ মনে করেন ইঙ্গিতে তাদের মতের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন।”

এক্ষেত্রে তিনি রোজাদারকে অন্য কারো থেকে আলাদা করেননি। যেমনিভাবে কাঁচা মিসওয়াক থেকে শুকনো মিসওয়াককে আলাদা করেননি। শিরোনামকে এভাবে গ্রহণ করলে এ শিরোনামের অধীনে যে কয়টি হাদিস উল্লেখ করেছেন সবগুলোর সাথে শিরোনামের সামঞ্জস্যতা ফুটে উঠে। আর এ সবগুলো বিধানকে অন্তর্ভুক্তকারী বাণীটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে- “তিনি তাদেরকে প্রত্যেক ওজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন।” এ কথাটির দাবী হচ্ছে- প্রত্যেক সময় ও প্রত্যেক অবস্থায় মিসওয়াক করা জায়েয।

আতা ও কাতাদা বলেন: “থুথু গিলে ফেলবে”

শিরোনামের সাথে এ উক্তিটির সামঞ্জস্য হলো- সর্বোচ্চ যে ভয়টি হতে পারে সেটা হচ্ছে- মিসওয়াকের কিছু মুখে মিশে যাওয়া। এ মিশে যাওয়া জিনিশটি কুলির পানির মত। যদি সেটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলে তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।[ইবনে হাজারের বক্তব্য সংক্ষেপে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

সঠিক মতানুযায়ী দিবসের প্রথমভাগে হোক বা শেষভাগে হোক রোজাদারের জন্য মিসওয়াক করা সুন্নত।[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৪৬৮]

মিসওয়াক কাঁচা হলেও দিনের যে কোন সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। যদি রোজাদার মিসওয়াক করে এবং মিসওয়াককালে ঝাঁঝ অনুভব করে বা এ জাতীয় কোন স্বাদ অনুভব করে এবং সেটা গিলে ফেলে অথবা থুথুসহ মুখ থেকে মিসওয়াক বের করে আবার মুখে দেয় এবং থুথু গিলে ফেলে এতে করে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।[আল-ফাতাওয়া আল-সাদিয়া, পৃষ্ঠা- ২৪৫]

মিসওয়াকের মধ্যে থুথুর সাথে মিশে যায় এমন কোন পদার্থ থাকলে এ জাতীয় মিসওয়াক পরিহার করবে; যেমন- “সবুজ মিসওয়াক”। অনুরূপভাবে মিসওয়াক তৈরীতে যদি লেবু বা পুদিনা পাতার ফ্লেবার ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটাও পরিহার করবে। আর মুখের ভেতরে মিসওয়াকের ছেঁড়া অংশ ঢুকে গেলে সেগুলো ফেলে দিবে। ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু গিলে ফেলা নাজায়েয। অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পেটে ঢুকে গেলে কোন ক্ষতি নেই”।[সাবউনা মাসয়ালা ফিস সিয়াম]

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/37745

অনতিবিলম্বে রোজার ইফতার করা সুন্নত

 প্রশ্ন: ইফতার করা কি ফরজ না অন্য কিছু? যদি কোন মুসলিম মাগরিবের নামাযের সময় মসজিদে হাজির হয়, যে সময়টি ইফতারেরও সময়; এমতাবস্থায় সে কি আগে ইফতার করে নামায ধরবে; নাকি নামায পড়ে তারপর ইফতার করবে?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

অনতিবিলম্বে ইফতার করা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে সে প্রমাণই পাওয়া যায়। সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।”[সহিহ বুখারি (১৮২১) ও সহিহ মুসলিম (১৮৩৮)]

সুতরাং যা করা উচিত সেটা হচ্ছে- কয়েক লোকমা মুখে দিয়ে নামাযে যাওয়া; যাতে করে ক্ষুধা দূর হয়। নামায থেকে ফিরে এসে নিজের চাহিদামত খেয়ে নেয়া যায়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই করতেন। আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।”[সুনানে তিরমিজি; রোজা/৬৩২, আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (৫৬০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

মুবারকপুরী হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন: এ হাদিস থেকে অনতিবিলম্বে ইফতার করা মুস্তাহাব- এর পক্ষে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

ইফতারের সময় রোজাদারের দু’আ

 প্রশ্ন: আমরা রোজা রেখে ইফতারের সময় কি দু’আ করতে পারি।

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইফতার করে বলতেন: “ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”

অর্থ- “তৃষ্ণা দূর হয়েছে; শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে; ইনশাআল্লাহ”।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৭), দারা কুতনী (২৫), ইবনে হাজার তাঁর ‘আত-তালখিসুল হাবির’ গ্রন্থে (২/২০২) বলেন: হাদিসটির সনদ ‘হাসান’]

পক্ষান্তরে اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وعلى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

অর্থ- “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিযিক দিয়ে ইফতার করছি।” এ দু’আটি আবু দাউদ (২৩৫৮) বর্ণনা করেছেন। এটি মুরসাল হাদিস ও যয়িফ (দুর্বল)। আলবানি প্রণীত ‘যয়িফ আবু দাউদ’ গ্রন্থ (৫১০)।

যে কোন ইবাদতের পর দু’আ করার পক্ষে শরিয়তের অনেক মজবুত দলিল রয়েছে। যেমন- নামাযের পর দু’আ করা। হজ্জ আদায় করার পর দু’আ করা। ইনশাআল্লাহ, রোজাও এ বিধানের বাইরে নয়। আল্লাহ তাআলা রোজার বিধান সংক্রান্ত আয়াতের মাঝখানে দু’আর আয়াত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬] এ মাসে দু’আর গুরুত্ব তুলে ধরতে আল্লাহ তাআলা এ স্থানে এ আয়াতটি উল্লেখ করেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

আল্লাহ তাআলা অবহিত করছেন যে, তিনি বান্দাদের নিকটবর্তী; তাকে ডাকলে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। এটি তাদেরকে প্রতিপালন করার, তাদের চাহিদা পূরণ করার ও ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে জ্ঞাপন। অতএব, তারা যদি তাঁকে ডাকে তাহলে তারা তাঁর রুবুবিয়্যত (প্রতিপালকত্ব) এর প্রতি ঈমান আনল। এরপর তিনি তাদেরকে দুইটি নির্দেশ দেন, তিনি বলেন: “কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

এক. তিনি তাদেরকে ইবাদত ও ইস্তিআনা (সাহায্য প্রার্থনা) এর যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটা তামিল করা।

দুই. তাঁর রুবুবিয়্যত (প্রতিপালকত্ব) ও উলুহিয়্যত (উপাসত্ব) এর প্রতি ঈমান আনা। অর্থাৎ তিনিই তাদের রব্ব (প্রতিপালক) ও ইলাহ (উপাস্য)। এজন্য বলা হয়: আকিদা ঠিক থাকলে ও পরিপূর্ণ আনুগত্য থাকলে দু’আ কবুল হয়। যেহেতু আল্লাহ দু’আর আয়াতের পরে বলেছেন: “কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য।”

[মাজমুউল ফাতাওয়া, ১৪/৩৩]

https://islamqa.info/bn/26879

রমজান মাসে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব

 প্রশ্ন: রমজান মাসে কুরআন খতম করা কি একজন মুসলমানের জন্য জরুরী? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আমি এ সংক্রান্ত হাদিস পেশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

দলিলসহ মাসয়ালার বিধান জানার আগ্রহের কারণে প্রশ্নকারী ভাইকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কোন সন্দেহ নেই এটাই হওয়া উচিত। প্রত্যেক মুসলমানের সে চেষ্টাই করা উচিত। যাতে করে তিনি কিতাব ও সুন্নাহর অনুসারী হতে পারেন।

ইরশাদুল ফুহুল গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৪৫০-৪৫১) শাওকানী (রহঃ) বলেন:

যখন এই সিদ্ধান্তে আসা গেল যে, একজন সাধারণ মানুষ আলেমকে জিজ্ঞেস করবে এবং একজন অপূর্ণ ব্যক্তি পরিপূর্ণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে, এরপর বলতে হয় সে ব্যক্তি  দ্বীনদার ও তাকওয়াবান হিসেবে পরিচিত আলেমকে জিজ্ঞেস করবে- কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞানবান আলেম কে? কোন সে ব্যক্তি যার কাছে কিতাব ও সুন্নাহ বুঝার মতো প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে? যাতে করে তারা তাকে উপযুক্ত ব্যক্তির সন্ধান দিতে পারেন। এরপর সে ব্যক্তি সন্ধানপ্রাপ্ত আলেমের কাছে গিয়ে তার মাসয়ালাটির কিতাব ও সুন্নাহ ভিত্তিক সমাধান চাইবে। এভাবে সে যথাযথ উৎস থেকে হক্ব বা সঠিক বিষয়টি গ্রহণ করবে। বিধানটি যিনি জানেন তার কাছ থেকে জানবে এবং যে আলেমের অভিমত শরিয়ত বিরোধি হওয়ার সম্ভাবনা আছে; সে মত থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিবে।” সমাপ্ত

আদাবুল মুফতি ওয়াল মুসতাফতি গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-১৭১) ইবনুস সালাহ বলেছেন:

সামআনি উল্লেখ করেছেন যে, মুফতির কাছে দলিল তলব করতে কোন বাধা নেই। যাতে করে ফতোয়াপ্রার্থী সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। মুফতি তাকে দলিল উল্লেখ করতে বাধ্য যদি ফতোয়াপ্রার্থী অকাট্যভাবে সেটা দাবী করে। আর যদি অকাট্যভাবে দাবী না করে তাহলে তিনি বাধ্য নন; কারণ হতে পারে সাধারণ মানুষের বোধ হয়তো সে পর্যায়ে পৌঁছবে না। আল্লাহই ভাল জানেন। সমাপ্ত।

দুই:

হ্যাঁ, রমজান মাসে অধিক পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াত করা এবং কুরআন খতম করতে সচেষ্ট থাকা মুস্তাহাব। তবে সেটা ফরজ নয়। অর্থাৎ খতম করতে না পারলে গুনাহ হবে না। তবে অনেক সওয়াব থেকে সে ব্যক্তি বঞ্ছিত হবেন।

এর দলিল হচ্ছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারি (৪৬১৪) বর্ণিত হাদিস: “জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রতিবছর একবার কুরআন পাঠ পেশ করতেন। আর যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার পেশ করেন।”

ইবনে কাছির (রহঃ) ‘আল-জামে ফি গারিবিল হাদিস’ গ্রন্থে (৪/৬৪) বলেন:

অর্থাৎ তিনি তাঁকে যতটুকু কুরআন নাযিল হয়েছে ততটুকু পাঠ করে শুনাতেন। সমাপ্ত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে সলফে সালেহিনের আদর্শ ছিল রমজান মাসে কুরআন খতম করা। ইব্রাহিম নাখায়ি বলেন: আসওয়াদ রমজানের প্রতি দুই রাত্রিতে একবার কুরআন খতম করতেন।[আস- সিয়ার, (৪/৫১)]

কাতাদা (রহঃ) সাতদিনে একবার কুরআন খতম করতেন। রমজান মাস এলে প্রতি তিনদিনে একবার কুরআন খতম করতেন। শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে প্রতি রাতে একবার কুরআন খতম করতেন।[আস সিয়ার, (৫/২৭৬)]

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রমজানের প্রতি রাত্রিতে কুরআন খতম করতেন।[নববির ‘আত তিবয়ান (পৃষ্ঠা-৭৪)] তিনি বলেন: উক্তিটির সনদ সহিহ।

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আলী আল-আযদি রমজানের প্রতি রাত্রিতে একবার কুরআন খতম করতেন।[তাহযিবুল কামাল (২/৯৮৩)]

রবী’ বিন সুলাইমান বলেন: শাফেয়ী রমজান মাসে ষাটবার কুরআন খতম করতেন।[আস সিয়ার (১০/৩৬)]

কাসেম বিন হাফেয ইবনে আসাকির বলেন: আমার পিতা নিয়মিত জামাতে নামায ও কুরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রতি শুক্রবারে কুরআন খতম করতেন। রমজান মাসে প্রতিদিন খতম করতেন।[আস সিয়ার (২০/৫৬২)]

ইমাম নববি কুরআন খতমের সংখ্যা বিষয়ক মাসয়ালার উপর টীকা লিখতে গিয়ে বলেন:

এ বিষয়ে নির্বাচিত অভিমত হচ্ছে- ব্যক্তি বিশেষের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে এ মাসয়ালার বিধানও ভিন্ন হবে। যে ব্যক্তি তার সূক্ষ্ম চিন্তা দিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় ঊদঘাটন করতে সক্ষম সে ব্যক্তি শুধু ততটুকু পড়বেন যতটুকু পড়ে তিনি এটি ভালভাবে বুঝে নিতে পারেন।  অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইলম বিতরণে অথবা দ্বীনের অন্য কোন বিশেষ দায়িত্বে অথবা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন তিনিও। সেক্ষেত্রে তিনি ততটুকু পড়বেন যতটুকু পড়তে তার দায়িত্ব অবহেলা না হয়। আর যদি ব্যক্তি এ শ্রেণীর কেউ না হন তাহলে তিনি যত বেশি পড়তে পারেন তত বেশি পড়বেন; তবে যেন বিরক্তি আসার পর্যায়ে না পৌঁছে। সমাপ্ত[আত তিবয়ান (পৃষ্ঠা-৭৬)]

কুরআন তেলাওয়াত ও কুরআন খতম করার এতো তাগিদ ও এত গুরুত্বের পরেও সেটা মুস্তাহাব পর্যায়ে। এটি জরুরী ফরজ পর্যায়ে নয়; যেটা না করলে কোন মুসলমান গুনাহগার হবেন।

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: রোজাদারের উপর কুরআন খতম করা কি ফরজ?

তিনি উত্তরে বলেন: রমজান মাসে রোজাদারের জন্য কুরআন খতম করা ফরজ নয়। তবে ব্যক্তির উচিত রমজানে বেশি বেশি কুরআন পড়া। এটাই ছিল রাসূলের আদর্শ।  গোটা রমজান মাসে জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কুরআন পাঠ করতেন। সমাপ্ত [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (২০/৫১৬)]

আরও জানতে দেখুন 66063 ও 26327 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/cat/295

রমজান মাসের প্রতি দিন বা রাতে পড়ার জন্য বিশেষ কোন দু’আ নেই

 প্রশ্ন: আমি শুনেছি আল্লাহ তাআলা রমজান মাসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। রমজানের প্রথম দশদিন- রহমত। দ্বিতীয় দশদিন- মাগফিরাত। তৃতীয় দশদিন- জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি। বলা হয় প্রত্যেক ভাগের জন্য আলাদা আলাদা দু’আ রয়েছে। প্রথমভাগে আমাদেরকে বলতে হবে, ‘আল্লাহুম্মারহামনি ইয়া আরহামার রাহিমীন’ (অর্থ- হে সর্বাধিক দয়াবান, আমাকে দয়া করুন)। দ্বিতীয়ভাগে বলতে হবে, ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যুনুবি, ইয়া রাব্বাল আলামীন’ (অর্থ- হে জগতসমূহের প্রতিপালক, আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন।” তৃতীয়ভাগে বলতে হবে, আল্লাহুম্মা আ’তিকনি মিনান নার; ওয়া আদখিলনিল জান্নাহ’ (অর্থ- হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রাখুন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান)। এ ধরনের বক্তব্য কি সঠিক? এর পক্ষে কি দলিল আছে? রমজান মাসে কোন দু’আগুলো বেশি বেশি পড়া উচিত? আমার জ্ঞানানুযায়ী শুধু ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন; তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’ এ দু’আটি রমজানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর সন্ধানকালে বেশি বেশি পড়া উচিত। কিন্তু রমজানের অন্য রাত্রিগুলোতে পড়ার জন্য বিশেষ কোন দু’আ আছে কিনা?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

ইবনে খুযাইমা তাঁর সহিহ গ্রন্থে সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষদিন আমাদের উদ্দেশ্য খোতবা দিলেন। তিনি বললেন: “হে লোক সকল! এক মহান মাস, এক মুবারকময় মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছে…”। [আল-হাদিস] সে হাদিসে রয়েছে “এ মাসের প্রথমভাগ হচ্ছে- রহমত। দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে- মাগফিরাত। আর তৃতীয় ভাগ হচ্ছে- জাহান্নাম থেকে নাজাত”

ইতিপূর্বে 21364 নং প্রশ্নোত্তরে এ হাদিসটির দুর্বলতা বর্ণনা করা হয়েছে।

গোটা রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রহমত। গোটা মাসেই মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত হয়। রমজান মাসের বিশেষ কোন অংশ এ মর্যাদাগুলোর কোন একটির জন্য খাস নয়। এটি আল্লাহর বিপুল রহমতের নিদর্শন।

ইমাম মুসলিম (১০৭৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “যখন রমজান মাস আসে তখন রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে শিকলাবদ্ধ করা হয়।”

তিরমিযি (৬৮২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “রমজানের প্রথম রাত্রিতে শয়তান ও অবাধ্য জ্বিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। জাহান্নামের কোন দরজা খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জান্নাতের কোন দরজা বন্ধ রাখা হয় না। একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণ অন্বেষী আগোয়ান হও। ওহে, মন্দ অন্বেষী তফাৎ যাও। আল্লাহ প্রতি রাত্রিতে কিছু মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেন।”[আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এর ভিত্তিতে বলা যায়: রমজানের প্রথম দশদিনে রহমতের দু’আ করা, মাঝের দশদিনে মাগফিরাতের দু’আ করা, শেষের দশদিনে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির জন্য দু’আ করা- বিদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের বিশেষ দু’আর কোন অবকাশ নেই; যেহেতু এক্ষেত্রে রমজানের সকল দিন সমান। বরং একজন মুসলিম গোটা রমজান মাসব্যাপী দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করে আল্লাহর দরবারে দু’আ করবে। এ প্রার্থনার মধ্যে রহমত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের দু’আও থাকবে।

দুই:

একজন মুসলিমের উচিত কল্যাণ ও বরকতের মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে এ মাসে কল্যাণ ও রহমতের দু’আ করা। আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমা প্রাপ্তির উদ্দেশ্য নিয়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

সিয়ামের হুকুম আহকাম বর্ণনার মাঝখানে দু’আ করার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী এ আয়াতে কারীমাটি উল্লেখ করার মধ্যে মাস পূর্ণ হওয়ার সময়; বরঞ্চ প্রতিদিন ইফতারের সময় অধিকহারে দু’আ করার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। [তাফসিরে ইবনে কাছির (১/৫০৯) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহর কাছে দু’আকারীর আবেদনটা সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। দু’আকারী হাদিসে বর্ণিত দু’আগুলো বেশি বেশি পড়বে। দু’আর ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে না। দু’আর শিষ্টাচারগুলো বজায় রাখবে। রমজান মাসে এবং রমজানের বাইরেও যে দু’আগুলো বেশি বেশি পড়া উত্তম সেগুলো হচ্ছে-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ .

(অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে বাঁচান।)[সূরা বাকারা, আয়াত: ২০১]

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا .
(অর্থ- আর যারা প্রার্থনা করে হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।)[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ৭৪]

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ . رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ .

(অর্থ- হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও আর আমার সন্তানদেরকেও, হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর। হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে আর মু’মিনদেরকে ক্ষমা করে দাও।)[সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৪০-৪১]

اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني .

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি

(অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও)।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ منه عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ ، وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا .

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহ; আ’জিলিহি ও আজিলিহি; মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ’লাম। ওয়া আউজুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি আ’জিলিহি ওয়া আজিলিহি; মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আলাম। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা আ’যা মিনহু আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন ওয়া আমাল। ওয়া আউজুবিকা মিনাল জান্নাহ ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন ওয়া আমাল। ওয়া আসআলুক আন তাজআলা কুল্লা কাযায়িন কাযাইতাহু লি খাইরা।

(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল কল্যাণ প্রার্থনা করছি সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক, সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। আর আমি সকল অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক। সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও আপনার নবী আপনার কাছে যেসব কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে যেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জান্নাতের নৈকট্য অর্জন করিয়ে দিবে এমন কথা ও কাজের প্রার্থনা করছি। আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামে নিয়ে যাবে এমন কথা ও আমল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরও প্রার্থনা করছি- আপনি আমার জন্য যে ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা যেন ভাল হয়।)

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي ، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي ، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي ، وَعَنْ شِمَالِي ، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي .

(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল- আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল-আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়াওয়া আহ্‌লী ওয়া মা-লীআল্লা-হুম্মাসতুরআওরা-তী ওয়া আ-মিন রাওআ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আঊযু বিআযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্‌তী)।

(অর্থ- “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযতে রাখুন আমার সম্মুখ দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের ওসিলায় আশ্রয় চাচ্ছি নীচ থেকে গুপ্ত আক্রমন থেকে”।)

অনুরূপভাবে বান্দা কুরআন ও সুন্নাহ বর্ণিত যে কোন দু’আ; কল্যাণকর যে কোন দু’আ করতে পারে। বান্দা গোপনে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। এ দু’আগুলোর কোনটিকে রমজানের সাথে খাস করে নিবে না।

অনুরূপভাবে ইফতারের শেষে এ দু’আটি পড়া মুস্তাহাব:

“ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”

অর্থ- “তৃষ্ণা দূর হয়েছে; শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে; ইনশাআল্লাহ”। আরও জানতে 14103 ও 26879 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

বিশেষতঃ প্রতিরাতের শেষ এক তৃতীয়াংশে দু’আ করা। আরও জানতে 140434 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

শেষ দশদিন এ দু’আটি বেশি বেশি পড়া:

اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني .

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি

(অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও)। আরও জানতে 36832 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

দু’আ করার আদবগুলো জানার জন্য 36902 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/220647

মাগরিবের নামায ও সুন্নত পড়ার পর খাবার গ্রহণ করা

 প্রশ্ন: রমজান মাসে মাগরিবের নামাযের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর খেতেন। এরপর জামাতের সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতেন। প্রশ্ন হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামায পড়ার পর আগে কি সুন্নত আদায় করতেন নাকি ইফতার খেতেন? আমার এ প্রশ্নটি এসেছে এ ক্ষেত্রেও রাসূলের সুন্নত আদায় করার তীব্র আগ্রহ থেকে।

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ হচ্ছে- সবচেয়ে পরিপূর্ণ আদর্শ। তিনি রোজা থাকলে কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না পেতেন তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। এরপর মাগরিবের ফরজ নামায আদায় করতেন। ঘরে এসে সুন্নত নামায আদায় করতেন।

আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না পেতেন কয়েকটি শুকনো খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। সেটাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।[সুনানে আবু দাউদ, (২৩৫৬)]

দারা কুতনি তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে (২/১৮৫) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন এবং আলবানি তাঁর ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৪/৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যোহরের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন। যোহরের পরে দুই রাকাত নামায পড়তেন। মাগরিবের পর তাঁর নিজ ঘরে দুই রাকাত নামায পড়তেন। এশার পর দুই রাকাত নামায পড়তেন। জুমার পর ঘরে আসার আগে কোন নামায পড়তেন না; ঘরে এসে দুই রাকাত নামায পড়তেন।[সহিহ বুখারি (৮৯৫) ও সহিহ মুসলিম (৭২৯)]

তবে প্রশ্নে বিশেষ যে সুন্নতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। আমরা মূলতঃই জানি না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের পর কিছু খেতেন কিনা? কেউ যদি ঘরে এসে দেখে যে, খাবার প্রস্তুত আছে এবং নামায পড়তে গেলে খাবারের দিকে তার মন পড়ে থাকবে তাহলে সে আগে খেয়ে নিতে পারে; এরপর নামায পড়ল। যতক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের ফরজ নামাযের ওয়াক্ত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের ফরজ নামাযের ওয়াক্তও থাকে।

আল্লাহই ভাল জানেন।

রমজান মাসের যে কোন দিন উমরা করা মুস্তাহাব

 প্রশ্ন: রমজানের শেষ দশদিনে কি উমরা করা মুস্তাহাব?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে উমরা পালন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইমাম বুখারি (১৭৮২) ও মুসলিম (১২৫৬) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “রমজান মাসে একটি উমরা পালন- হজ্জের সমতুল্য।”

এ হাদিসের বিধান গোটা রমজানকেই শামিল করে; শুধু শেষ দশদিনকে নয়।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/38221

Translate