Saturday, September 16, 2023

আবু বকর রা. অতঃপর উমর রা. কর্তৃক এক বুড়ির সেবা করা সংক্রান্ত কিচ্ছাটি বানোয়াট

 সম্মানিত সাহাবি আবু বকর রা. অতঃপর উমর রা. কর্তৃক এক বুড়ির সেবা করা সংক্রান্ত কিচ্ছাটি বানোয়াট:

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিম্নোক্ত লেখাটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত:

“তুমি আমার জন্য খেজুর এনেছো কিন্তু এগুলোর বীচি ফেলোনি ! ”
এটা একটি বিখ্যাত আরবি প্রবাদ।‌ কিন্তু এই প্রবাদটির উৎপত্তি কীভাবে হয়? আর কীভাবেই বা এটি বিখ্যাত হয়ে উঠে?
▪️এর পেছনে যে ঘটনাটা রয়েছে তা হল, নিম্নরূপ:
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে কেউ একজন জানালো যে, আবু বকর রা. ফজরের সালাত শেষ করে মদিনার সীমানার দিকে যান, একটা ছোটো বাড়িতে বেশ কিছু সময় কাটান, তারপর নিজের ঘরে ফিরে আসেন।

আবু বকর রা. কী করতেন না করতেন তার সব খবরই উমর রা. রাখতেন; শুধুমাত্র এই বাড়িতে কী হতো তা তাঁর অগোচরে ছিলো।

দিন যায় কিন্তু খলিফা আবু বকর রা. এর ঐ বাড়িতে গমন বন্ধ হয় না। উমর. সিদ্ধান্ত নিলেন, ফজরের পর আবু বকর রা. ঐ বাড়িতে গিয়ে কী করেন, তা তিনি নিজের চোখে একবার দেখে আসবেন।
উমর রা. ঐ ঘরে গিয়ে দেখতে পেলেন, ওখানে একজন বৃদ্ধা বাস করেন। বৃদ্ধার কেউ নেই। তার উপর বৃদ্ধা অন্ধ।

উমর রা. অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হলেন। বৃদ্ধার সাথে আবু বকরের কী সম্পর্ক তা জানার জন্য তিনি আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
উমর রা. বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“এই লোক আপনার বাড়িতে প্রতিদিন কী জন্য আসে?”
বৃদ্ধা জবাব দিলেন,
“আল্লাহর কসম, আমার জানা নেই। সে প্রতিদিন আসে, তারপর আমার ঘর ঝাড়ু দেয়, সব কিছু পরিষ্কার করে, তারপর আমার জন্য খাবার তৈরি করে, তারপর কোনো কথা না বলেই চলে যায়। ”
আবু বকর রা. এর মৃত্যুর পর আমিরুল মুমিনিন উমর রা.ও একইভাবে বৃদ্ধার সেবা করতে আরম্ভ করলেন।
বৃদ্ধা কিছু একটা টের পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার বন্ধু কি মারা গেছেন?”
উমর রা. অন্ধ বৃদ্ধার প্রশ্ন শুনে প্রচণ্ড অবাক হলেন। তিনি রা. বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কীভাবে বুঝলেন?”
বৃদ্ধা জবাব দিলেন,‌ “তুমি আমার জন্য খেজুর এনেছো, কিন্তু খেজুরগুলোর বীচি ফেলোনি।” (অথচ এই সামান্য বিষয়টাও তোমার বন্ধুর নজর এড়াতো না)
উমর রা. হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লেন। তাঁর চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। আর এই অবস্থায় উমর রা. তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি বললেন,
“হে আবু বকর, আপনি পরবর্তী খলিফাদের কাজ অত্যন্ত কঠিন করে গেছেন। ”
(আল্লাহ্‌ তাঁদের উপর রহম করুন)
[সংগৃহীত]

🔎 ঘটনার সত্যতা বিশ্লেষণ:

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত। ইসলামিক মোটিভেশনাল লেখকরাও তাদের বইয়ে এ গল্পটি তুলে ধরেছেন। যেমন:
ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আরিফী তার বিখ্যাত “জীবনকে উপভোগ করুন (আরবি নাম: استمتع بحياتك)” বইয়ে এই গল্পটি আকর্ষণীয় ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু এই বইয়ের উপরে মন্তব্য করতে গিয়ে গবেষক ডক্টর আতাবি সহ অন্যান্য গবেষকগণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, উক্ত গল্পের বিস্তারিত বিবরণ বানোয়াট।
তাছাড়াও আবু বকর রা. বা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর জীবনী সংক্রান্ত কোনো গ্রন্থ, খলিফাদের জীবনী শীর্ষক বই বা নির্ভরযোগ্য কোন হাদিসের কিতাবে তা স্থান পায়নি।
তবে তারিখে ইবনে আসাকির শীর্ষক ইতিহাস গ্রন্থে এই ঘটনার সাথে কিছুটা সাদৃশ্য আছে (কিন্তু বিবরণগতভাবে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান) এমন একটি গল্প উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেটিও সনদগতভাবে অত্যাধিক দুর্বল। কারণ এর সনদ একাধিক মাজহুল (অজ্ঞাত পরিচয়ধারী) ও মাতরুক (পরিত্যাজ্য)‌ বর্ণনাকারী এবং সনদের মধ্যে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা), ইরসাল ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত।
সুতরাং তাও গ্রহণযোগ্য নয়।

▪️তাছাড়া নিম্মোক্ত বিষয়টিও ঘটনাটির মিথ্যাচারিতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তা হল:

এ ব্যাপারে ফকিহগণ কোন দ্বিমত করেননি যে, কোন পুরুষের জন্য নির্জনে কোন নন‌ মাহরাম মহিলার ঘরে প্রবেশ করা জায়েজ নেই যদিও সে বয়স্কা বা বৃদ্ধা হয় না কেন। কেননা কুরআন-হাদিসে এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ পুরুষ বা মহিলার জন্য আলাদাভাবে ছাড় দেওয়া হয়নি। বরং হাদিসে আম ভাবে বলা হয়েছে,

لا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ
“কোন পুরুষ পরনারীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন করবে না এবং
মাহরাম (বিবাহ নিষিদ্ধ পুরুষ) সঙ্গী ব্যতিরেকে পর নারীর সাথে সফর করবে না।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]

ইমাম নওয়াবি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
وَأَمَّا إِذَا خَلَا الْأَجْنَبِيّ بِالْأَجْنَبِيَّةِ مِنْ غَيْر ثَالِث مَعَهُمَا، فَهُوَ حَرَام بِاتِّفَاقِ الْعُلَمَاء
“তৃতীয় ব্যক্তি ছাড়া পরপুরুষ পরনারীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন করা আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”

– ফিকাহ বিশ্বকোষ (২৯/২৯৫) এ এসেছে,
ولفظ الرجل في الحديث يتناول الشيخ والشاب, كما أن لفظ المرأة يتناول الشابة والمتجالة (العجوز) ” انتهى.
“হাদিসে ‘পুরুষ’ শব্দটি যুবক এবং বৃদ্ধ এবং ‘নারী’ শব্দটি যুবতী এবং বৃদ্ধা উভয়ই শামিল করে।”

🔸সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি এবং বিশ্ব বরেণ্য আলেম আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. বলেন,
لا يخلو رجل بامرأة فإن الشيطان ثالثهما
ولا فرق بين العجوز والشابة ، لكن الشابة أشد خطراً، والنبي صلى الله عليه وسلم عمم، ولم يقل إلا أن تكون عجوزاً .. والشيطان يخشى منه على الرجل مع المرأة العجوز ومع غيرها…” انتهى من فتاوى “نور على الدرب
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,) “কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন করলে সেখানে তৃতীয় জন হবে শয়তান।” যুবতী বা বৃদ্ধের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে যুবতী বেশি বিপদজনক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম ভাবে বলেছেন। এ কথা বলেননি যে, “বৃদ্ধ মহিলা ব্যতিরেকে।” (অর্থাৎ তিনি একথা বলেননি যে, বৃদ্ধ মহিলার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়‌)
একজন পুরুষের জন্য শয়তানকে ভয় করা কর্তব্য, বৃদ্ধা অথবা অন্য যেকোনো মহিলার ক্ষেত্রে।” [ফাতাওয়া নুরুন আলাদ্দারব (সৌদি আরবের ইসলামি প্রশ্ন-উত্তর বিষয়ক রেডিও প্রোগ্রাম)]

সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘনিষ্ঠতম এবং এই উম্মতের সবচেয়ে মর্যাদাবান এই দুই সম্মানিত সাহাবি একজন নন মাহরাম বৃদ্ধ মহিলার নির্জন ঘরে গিয়ে সেবা করবেন-এমন হারাম কাজ করতে পারেন না। এটি তাদের মর্যাদা এবং শরিয়তের জ্ঞানের ব্যাপারে অপবাদের শামিল। কোন অসহায় বৃদ্ধ নারীর বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন থাকলে তারা অবশ্যই অন্য কোন মহিলা বা দাসী পাঠিয়ে তাদের সেবা করার ব্যবস্থা করতেন।
মোটকথা, ইসলামে মানবিকতা, মানবসেবা ও সৎকাজে প্রতিযোগিতা ইত্যাদির জন্য সাহাবিদের নামে কোন মিথ্যা ও বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনীর অবতারণার প্রয়োজন নেই। বরং এসব ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের যেসব মহান দিক নির্দেশনাবলী রয়েছে সেগুলোই যথেষ্ট।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের রং মাখানো মিথ্যা ও বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কাউকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ বলা জায়েজ নাই

 আল্লাহ এবং তাঁর রসুল যাদেরকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাদেরকে ছাড়া আর কোন মানুষকে নির্দিষ্ট করে শহিদ বলা জায়েজ নাই। সে যেই হোক না কেন। এমনকি জিহাদে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে মারা গেলেও তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ বলা বৈধ নয় যে, উমুক, উমুক শহিদ। কারণ আমি-আপনি জানি না সে কী নিয়তে জিহাদ করেছে। আল্লাহর দ্বীনের জন্য নাকি মানুষ তাকে বীর যোদ্ধা বা সহাসী মুজাহিদ বলবে সে জন্য। তবে কোনও ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থার প্রতি সুধারণা রেখে তা জন্য দুআ করা যাবে যে, আল্লাহ তাকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন। অথবা আশা করা যায়, যে সে আখিরাতে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। অথবা আমভাবে বলা যাবে যে, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে তারা শহিদ. যারা এই এই করবে তারা শহিদ। কিন্তু নাম ধরে নির্দিষ্টভাবে নয়।

ইমাম বুখারি এভাবে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন যে,
باب لا يقال: فلان شهيد
”একথা বলা যাবে না যে, অমুক ব্যক্তি শহিদ।”

ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. বলেন,

: أي على سبيل القطع بذلك إلا إن كان بالوحي، وكأنه أشار إلى حديث عمر أنه خطب فقال: تقولون في مغازيكم فلان شهيد ومات فلان شهيداً ولعله قد يكون قد أوقر راحلته. ألا لا تقولوا ذلكم ولكن قولوا كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من مات في سبيل الله أو قتل فهو شهيد. وهو حديث حسن أخرجه أحمد وسعيد بن منصور وغيرهما من طريق محمد بن سيرين … وعلى هذا فالمراد النهي عن تعيين وصف واحد بعينه بأنه شهيد، بل يجوز أن يقال ذلك على طريق الإجمال. انتهى

অর্থাৎ ওহির মাধ্যমে অবগত হওয়া ব্যতীত অকাট্য ভাবে কারও জন্য শহিদ হওয়ার ফায়সালা দেওয়া যাবে না। তিনি (ইমাম বুখারি রাহ.) সম্ভবত উমর রা. এর একটি ভাষণের দিকে ইংগিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বলে থাক, অমুক ব্যক্তি শহিদ, অমুক ব্যক্তি শহিদ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। কিন্তু হতে পারে সে তার বাহনে আরোহন করেছে, ব্যবসার উদ্দেশ্যে।

খবরদার! এভাবে বলো না বরং তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো বল যে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু বরণ করল অথবা জীবন দিল সে শহিদ।” [মুসনাদ আহমদ-হাসান]
এ কথার ভিত্তিতে ইমাম বুখারির অনুচ্ছেদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কাউকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ উপাধিতে ভূষিত করা নিষিদ্ধ। তবে অনির্দিষ্টভাবে তা বলা জায়েজ।” [ফাতহুল বারি ৬/৯০]

✪ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. বলেন,

أن تقيد الشهادة بشخص معين مثل أن تقول لشخص بعينه: “إنه شهيد”، فهذا لا يجوز إلا لمن شهد له النبي صلى الله عليه وسلم أو اتفقت الأمة على الشهادة له بذلك، وقد ترجم البخاري -رحمه الله- لهذا بقوله: “باب لا يقال: فلان شهيد”

“কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষভাবে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করা-যেমন: এ কথা বলা যে, উমুক ব্যক্তি শহিদ-এটা নাজায়েজ। তবে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার শহিদ হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন অথবা সমগ্র উম্মত যার শহিদ হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে তার বিষয়টি ভিন্ন। আর তাই তো ইমাম বুখারি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন বলেছেন: باب لا يقال: فلان شهيد “অনুচ্ছেদ: এ কথা বলা যাবে না যে, উমুক ব্যক্তি শহিদ।”

✪ তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেছেন,

ولأننا لو شهدنا لأحد بعينه أنه شهيد لزم من تلك الشهادة أن نشهد له بالجنة، وهذا خلاف ما كان عليه أهل السنة، فإنهم لا يشهدون بالجنة إلا لمن شهد له النبي صلى الله عليه وسلم بالوصف أو بالشخص

“কারণ আমরা যদি কাউকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ বলে সাক্ষ্য দেই যে, তাহলে এই সাক্ষ্য দ্বারা তাকে জান্নাতি বলে সাক্ষ্য দেওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। অথচ তা সালাফদের নীতি বিরুদ্ধ। কারণ সালাফগণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকে নির্দিষ্টভাবে অথবা বৈশিষ্টগতভাবে জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন তাকে ছাড়া তারা কাউকে জান্নাতের সাক্ষ্য দিতেন না।” আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কোন অমুসলিমকে দান করলে কি নেকি পাওয়া যাবে

 উত্তর: ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলাম মানুষের কল্যাণে অবদান রাখতে উৎসাহিত করে। সুতরাং কিছু শর্ত সাপেক্ষে গরিব-অসহায় অমুসলিমকে তার চিকিৎসা, আর্থিক অনটন বা তার অন্যান্য প্রয়োজনে দান করলেও সাওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

মুসলিম, অমুসলিম, বনের পশু,পাখি সহ সকল জীবের প্রতি দয়া করা আমাদের কর্তব্য। এতে ইনশাআল্লাহ আমরা অগণিত সওয়াব অর্জন করতে সক্ষম হবো। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فِى كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ
“প্রত্যেক তাজা কলিজার বিনিময়ে নেকি রয়েছে।” [বুখারী হা/৩৩২১; মুসলিম হা/২২৪৪]
– হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক বেশ্যা নারী এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাআলা তার জীবনের সকল গুনাহ মোচন করে তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন।

তাছাড়া আপনার এই উদারতা, সহানুভূতি ও আর্থিক সাহায্য পেয়ে হয়ত সেই অমুসলিম ব্যক্তিটি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং হেদায়েতের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। তখন এটি আপনার জন্য আরও বেশি কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” [সহিহ বুখারী]

◈ তবে কোনও হারবি কাফের বা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কোন কাফেরকে দান করা বা কোনও ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীন-ইসলামের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করে নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ কারীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা মুমতাহিনা: ৮]

◈ অনুরূপভাবে কোনও অমুসলিমকে তাদের ধর্মীয় কাজ বা হারাম কাজের উদ্দেশ্য দান করা হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

যাদের গর্ভের বাচ্চা ২/৩ মাসে মিসক্যারেজ হয়

 প্রশ্ন: যাদের গর্ভের বাচ্চা ২/৩ মাসে মিসক্যারেজ হয়। এই বাচ্চাদের কি জান্নাত দেওয়া হবে এবং তারা তাদের পিতা-মাতার জন্য শুপারিশ করবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: মাতৃগর্ভে ১২০ দিন‌ তথা চার মাস অতিক্রম করে পঞ্চম মাসে ভ্রূণে আত্মার সঞ্চার ঘটে। যেমনটি সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (যিনি ছিলেন পরম সত্যবাদী এবং সত্যায়নকৃত):

إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا ، يُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ ، وَيُقَالُ لَهُ : اكْتُبْ عَمَلَهُ ، وَرِزْقَهُ ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ ، ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوحُ … ) رواه البخاري (3208) ، ومسلم (2643)

“নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে। অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, রিজিক, আয়ু এবং সে কি সৌভাগ্যবান হবে নাকি হতভাগ্য হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]

চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগে তা প্রাণহীন একটি মাংসপিণ্ড মাত্র। এটি মানব সৃষ্টির সূচনা। তাই তার উপর পূর্ণ মানুষের বিধান প্রযোজ্য হবে না‌। এ কারণে যদি মাতৃগর্ভে ভ্রূণের মধ্যে আত্মার সঞ্চার ঘটার পূর্বে মিসক্যারেজ (অকাল গর্ভপাত) হয়ে যায় তাহলে তার ওপর মৃত মানুষের বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তাকে গোসল, জানাজা, কাফন, দাফন ইত্যাদি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

অনুরূপভাবে সে পরকালে জান্নাতবাসী হবে না, কিয়ামতের দিন তার মায়ের জন্য শাফায়াত করবে না বা নাড়ির সাথে টেনে জান্নাতে নেবে না। কারণ প্রাণের সঞ্চার ঘটার পূর্বেই তা নষ্ট হয়ে গেছে।

তবে আত্মার সঞ্চার ঘটার পরে এমনটি হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর-এর আলেমদের মাঝে কোনও দ্বিমত নেই। অনুরূপভাবে আশা করা যায়, কিয়ামতের দিন সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফায়াত করবে।

▪️ইমাম নাওয়াবি রাহ. বলেন,

أجمع من يعتد به من علماء المسلمين على أن من مات من أطفال المسلمين فهو من أهل الجنة ؛ لأنه ليس مكلفا . أ.هـ ” شرح مسلم ” (16 / 207)

”মুসলিমদের নিকট যে সকল আলেম নির্ভরযোগ্য হিসেবে পরিগণিত হয় তাদের সর্বসম্মত অভিমত হল, মুসলিমদের যেসব শিশু মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতবাসী হবে। কারণ তার উপর শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য ছিল না।” [শারহে মুসলিম, ১৬/২০৭]

এ বিষয়ে হাদিস হলো:

عن أنس قال مات ابن لعثمان بن مظعون ، فحزن عليه حزنا شديدا ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : ” يا عثمان ، أما ترضى بأن للجنة ثمانية أبواب ، وللنار سبعة ، وأنت لا تنتهي إلى باب من أبواب الجنة إلا وجدت ابنك قائما عنده ، آخذا بحجزتك ، يشفع لك عند ربك ؟ قال : بلى ، قال المسلمون : يا رسول الله ، ولنا في فرطنا مثل ما لعثمان ؟ قال : نعم لمن صبر واحتسب
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওসমান ইবনে মাজুউন রা.-এর ছেলে মৃত্যুবরণ করলে তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে বললেন, “হে ওসমান, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতের আটটি দরজা এবং জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তুমি জান্নাতের যে দরজায় যাও না কেন সেখানেই দেখবে, তোমার সেই সন্তান তোমার কামরা ধরে দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহর‌ নিকট সুপারিশ করছে?

তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।

একথা শুনে অন্যান্য মুসলিমগণ বললেন, হে আল্লাহর রসুল, ওসমানের মৃত শিশুর মত আমাদের মৃত শিশুর ক্ষেত্রেও কি একই কথা?
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করবে এবং সওয়াবের আশা করবে।”
[তারিখে হাকেম, মাজমাউল বুহুসিল ইসলামায়া]

▪️ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
” قبل أربعة أشهر : لا يسمى ولداً، إنما يسمى ولد بعد الأربعة ، بعد نفخ الروح فيه ، يغسل ويصلى عليه ، ويعتبر طفلاً ترجى شفاعته لوالديه
“চার মাসের পূর্বে “সন্তান” বলা হবে না। সন্তান বলা হবে, চার মাস পরে যখন তার মধ্যে আত্মার সঞ্চার ঘটবে। (এরপরে অকাল গর্ভপাত হলে) তার গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। এটিকে “শিশু” হিসেবে গণ্য হবে। আশা করা যায়, সে তার পিতা-মাতার জন্য কিয়ামত দিন সুপারিশ করবে।’

তবে অকাল গর্ভপাত যখনই হোক না কেন তা একজন মায়ের জন্য অনেক দুঃখ ও কষ্টের কারণ। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তাকে সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ

“মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৭৫/ রুগী, পরিচ্ছেদ: ৭৫/১. রোগের কাফফারা ও ক্ষতিপূরণ এবং সহিহ মুসলিম ৪৫/১৪, হা/২৫৭৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৬)]। আল্লাহু আলম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আখেরি চাহার শোম্বা

 

আখেরি চাহার শোম্বা

প্রশ্ন: আখেরি চাহার শোম্বা কী? এ দিন কি বিশেষ কোনও ইবাদত-বন্দেগি বা বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ একটি আরবি ও ফার্সি শব্দ-যুগল। এর আরবি অংশ আখেরি। যার অর্থ, শেষ এবং ফার্সি অংশ চাহার শোম্বা। যার অর্থ, বুধবার। হিজরি সালের সফর মাসের শেষ বুধবারকে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ হিসেবে পালিত হয়।
এর কারণ কী:
প্রসিদ্ধি আছে যে, ১১ হিজরির শুরুতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। ২৮ সফর বুধবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিন কিছুটা সুস্থ বোধ করায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসল করেন এবং শেষবারের মত নামাজে ইমামতি করেন। মদিনাবাসী এই খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলে এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে (রবিউল আউয়াল মাসে) ইন্তেকাল করেন। এজন্য মুসলমানেরা এই দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন। এটাকেই ‘আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবার’ বলা হয়। দিবসটি মূলত: ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসাবে পালিত হয়; যাতে সাধারণত: গোসল করে দু রাকাত শোকরানা-নফল নামাজ আদায় শেষে রোগ থেকে মুক্তির দোয়া ও দান-খয়রাত করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, দরবার, খানকায় ওয়াজ-নসিহত, জিকির-আজকার, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এই দিনটি পালন উপলক্ষে। এদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে বন্ধ রাখার পাশাপাশি অফিস-আদালতে ঐচ্ছিকভাবে ছুটির দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। [সূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে]। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক ও আলেমে দ্বীন ডক্টর শাইখ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. বলেন, “আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোন সহীহ বা জয়ীফ হাদিসে এই ঘটনার কোনো প্রকার উল্লেখ পাইনি। হাদিস তো দুরের কথা কোন ইতিহাস বা জীবনী গ্রন্থেও আমি এ ঘটনার কোন উল্লেখ পাইনি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোন মুসলিম সমাজে ‘সফর মাসে শেষ বুধবার’ পালনের রেওয়াজ বা এই কাহিনী প্রচলিত আছে বলে আমার জানা নেই।” [সূত্র: হাদিসের নামে জালিয়াতি]।

মোটকথা, আখেরি চাহার শোম্বা বা সফর মাসের শেষ বুধবারকে ঘটা করে পালন করার ব্যাপারে হাদিসে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। এ দিন বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, দান-সদকা, গোসল ইত্যাদি করার ব্যাপারে কোন সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং বিভিন্ন বানোয়াট কথার উপরে ভিত্তি করে আমাদের সমাজে এ সকল বিদআত প্রচলিত হয়েছে। আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি। আর প্রতিটি গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

পিতামাতা যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেয় তাহলে তা কি মান্য করা আবশ্যক

 

পিতামাতা যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেয় তাহলে তা কি মান্য করা আবশ্যক

উত্তর: কুরআন-হাদিসে পিতামাতার সীমাহীন মর্যাদার কথা এসেছে। তাদের সাথে সদাচরণ করা এবং শরিয়ত সম্মত ভাবে তাদেরকে খুশি রাখার চেষ্টা করা সন্তানের জন্য ফরজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

“আর আপনার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।”

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

رَضَىَ الرَّبِّ فِىْ رِضَى الْوَالِدِ وَسُخْطُ الرَّبِّ فِىْ سُخْطِ الْوَالِدِ

“প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে।” [তিরমিযি-সহিহ]

✪ শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া তাদের অবাধ্যতা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। যেমন হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সব চেয়ে বড় পাপ কোন টি তা কি তোমাদেরকে বলব না? তা হল:

الإشْرَاكُ باللَّهِ، وعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وقَتْلُ النَّفْسِ، وشَهَادَةُ الزُّورِ

“আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।” [সহিহ মুসলিম]

❑ কিন্তু পিতামাতা যদি তাদের ছেলেকে এ নির্দেশ দেয় যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও তাহলে কি তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক?

উত্তর: পিতা-মাতা যদি শরিয়ত সম্মত ও বাস্তব সম্মত যৌক্তিক কারণে এ নির্দেশ দেয় তাহলে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক। কিন্তু যদি শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া এ নির্দেশ দেয় কিংবা নির্দেশ পালক করতে গিয়ে নিজের ও স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির ক্ষতি হয় তাহলে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক নয়। কারণ হাদিসে এসেছে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لا طَاعَةَ في مَعْصِيَةٍ، إنَّما الطَّاعَةُ في المَعروفِ

“আল্লাহর নাফরমানিতে কোন আনুগত্য নেই।‌ আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে।” [সহীহুল বুখারি]

◈ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. বলেন,

يلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية، وإن كانا فاسقين ‏وهذا فيما فيه منفعة لهما ، ولا ضرر عليه

“যে ক্ষেত্রে আল্লাহর নাফরমানি নেই সে ক্ষেত্রে পিতামাতার আনুগত্য করা সন্তানের জন্য আবশ্যক যদিও তারা নিজেরা ফাসেক হয়। এটা ঐ ক্ষেত্রে যেখানে তাদের উপকার আছে কিন্তু সন্তানের কোনও ক্ষতি নেই।” [আল এখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা: ১৪]

◈ ইমাম আহমদ রাহ. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার পিতা নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেই। (আমি কি তালাক দিব?)

ইমাম আহমদ রাহ. বললেন,

لا تطلقها ، قال : أليس النبي صلى الله عليه وسلم قد أمر ابن عمر أن يطلق زوجته حين أمره عمر بذلك ؟ قال : وهل أبوك مثل عمر؟

“তালাক দিও না।”

প্রশ্ন কারী বললেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ইবনে উমর রা.কে তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেননি যখন তাকে তার পিতা উমর রা. তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন?
তিনি তখন বললেন, “তোমার পিতা কি উমর রা.-এর মত?”
[মুহাম্মদ বিন মুফলিহ রচিত-আল আদাবুশ শারঈয়্যাহ, অনুচ্ছেদ: স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে পিতামাতার আনুগত্য করা আবশ্যক নয়।]

✪✪ এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি নিম্নরূপ:

ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَالَ كَانَتْ تَحْتِي امْرَأَةٌ أُحِبُّهَا وَكَانَ أَبِي يَكْرَهُهَا فَأَمَرَنِي أَبِي أَنْ أُطَلِّقَهَا فَأَبَيْتُ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ “‏ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ طَلِّقِ امْرَأَتَكَ

“আমার এক স্ত্রী ছিল। তাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা (উমর রা.) তাকে অপছন্দ করতেন। তাই তিনি আমাকে আমার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আমি তা করতে অস্বীকার করি। পরে আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনে উমর, তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও।” [সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১৩/ তালাক ও লি’আন, পরিচ্ছেদ: পিতা যদি কাউকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে]

ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.- এর মতো ন্যায় পরায়ণ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত কোনও পিতা যদি তার ছেলেকে বলে, তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও তাহলে বুঝতে হবে, এর পেছনে অবশ্যই উপযুক্ত ও শরিয়ত সম্মত কারণ রয়েছে। এমন পিতার আনুগত্য করতে কোন বাধা নেই। তিনি তো এমন প্রজ্ঞাবান মানুষ ছিলেন যে, তার মতামত ও প্রস্তাবের আলোকে মহান আল্লাহ তাআলা সাত আসমান থেকে কয়েকটি কুরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

কিন্তু বর্তমান যুগে অধিকাংশ পিতা-মাতার অবস্থা কী? অধিকাংশ পিতামাতার ইসলামের জ্ঞান তো নেই বরং তারা তাদের স্বার্থ ঠিক রাখতে অন্যায় আচরণ করতেও দ্বিধা করে না। এমন অনেক পিতা-মাতা আছে, যারা ছেলের স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে, আবার কেউবা একান্তই নির্বুদ্ধিতার কারণে এমন নির্দেশ দিতে পারে।
সুতরাং এসব ক্ষেত্রে পিতা-মাতার আনুগত্য করা আবশ্যক নয়। অন্যথায় সমাজে অসংখ্য নারী জুলুমের শিকার হবে।

◈ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়,

رجل متزوج وله أولاد ، ووالدته تكره زوجته ، وتشير عليه بطلاقها، هل يجوز له طلاقها؟

এক বিবাহিত ব্যক্তি। তার কয়েক জন সন্তান আছে। কিন্তু তার মা তার স্ত্রীকে অপছন্দ করে এবং তালাক দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করে। তাকে কি তার তালাক দেওয়া জায়েজ আছে?

তিনি বলেন,

لا يحل له أن يطلقها لقول أمه، بل عليه أن يبر أمه، وليس تطليق امرأته من بر أمه

“মায়ের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া জায়েজ নয়। বরং সে তার মার সাথে সদাচরণ করবে। কিন্তু স্ত্রীকে তালাক দেওয়া মায়ের প্রতি সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [মাজমু ফাতাওয়া-শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া ৩৩/১১২]

◈ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের নিকট প্রশ্ন করা হয় যে, মা তার ছেলেকে নির্দেশ দিয়েছে যে, সে যেন তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। অথচ এর কোনও কারণ নেই। তার দ্বীন বা চরিত্রে কোনও সমস্যা নেই। শুধু ব্যক্তিগত অনিচ্ছায় এ নির্দেশ দিয়েছে।
এর উত্তরে তারা বলেন,

” إذا كان الواقع كما ذكر السائل من أن أحوال زوجته مستقيمة وأنه يحبها ، وغالية عنده ، وأنها لم تسئ إلى أمه وإنما كرهتها لحاجة شخصية ، وأمسك زوجته وأبقى على الحياة الزوجية معها ، فلا يلزمه طلاقها طاعة لأمه ، لما ثبت عن النبي عليه الصلاة والسلام أنه قال : ” إنما الطاعة في المعروف ” وعليه أن يبر أمه ويصلها بزيارتها والتلطف معها والإنفاق عليها ومواساتها بما تحتاجه وينشرح به صدرها ويرضيها بما يقوى عليه سوى طلاق زوجته ” . فتاوى اللجنة الدائمة 20/29

“প্রশ্নকারী যেমনটি উল্লেখ করেছে বাস্তবতা যদি তেমনটি হয় অর্থাৎ তার স্ত্রী দ্বীনদার হয়, সে তাকে ভালবাসে, সে তার কাছে মূল্যবান হয় এবং সে তার মার সাথে খারাপ ব্যবহারও করেনি বরং তার মা তাকে অপছন্দ করে ব্যক্তিগত কারণে আর সে স্ত্রীকে ধরে রাখে, তার সাথে দাম্পত্য জীবন অটুট রাখে তাহলে এ ক্ষেত্রে মায়ের আনুগত্য করা তার জন্য আবশ্যক নয়। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে, তিনি বলেছেন, “আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে।”
তবে তার জন্য আবশ্যক হল, মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা তথা তাকে দেখতে যাওয়া, তার প্রতি সদয় হওয়া, তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করা, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া এবং তার অন্তরকে প্রফুল্ল রাখা। এর মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ছাড়াও তার মাকে খুশি রাখতে সামর্থ হবে।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ২৯/২০]

মোটকথা, পিতামাতা অবশ্যই আমাদের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আনুগত্য পাওয়ার হকদার। তাদের কথার অবাধ্যতা করা বৈধ নয়। কিন্তু তারা যদি এমন নির্দেশ দেয় তা শরিয়ত অনুমোদিত নয় বা এতে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক নয়।
সুতরাং পিতামাতা যদি ন্যায়সঙ্গত ভাবে ও শরিয়ত সম্মত কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে তাহলে তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু তারা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কিংবা শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়াই তালাক দিতে নির্দেশ দেয় তাহলে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

স্বামী-স্ত্রী কি একে অপরকে গান শোনাতে পারে

 

স্বামী-স্ত্রী কি একে অপরকে গান শোনাতে পারে

উত্তর: আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য পরিপূর্ণভাবে হালাল করেছেন। তারা হালাল পন্থায় যেভাবে ইচ্ছে একে অপরের মাধ্যমে আনন্দ-বিনোদন ও সুখ উপভোগ করবে। সুতরাং ইসলামে যা নিষিদ্ধ সেটা ছাড়া তারা যে কোনোভাবেই আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে সুরেলা কণ্ঠে গান, কবিতা, ছড়া, সংগীত, নাশিদ, গজল ইত্যাদি যা ইচ্ছা শোনাতে পারে। এতে একে অপরের রূপের বর্ণনা, আনন্দদায়ক বাক্য ব্যবহার, এমনকি যৌন আবেদন বা প্রেম নিবেদন মূলক কথাবার্তা বা গান বললেও তাতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।

তবে এজন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। যথা:

১. বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার থেকে দূরে থাকা।
২. যে ধরনের শব্দগুলো উচ্চারণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন: গানের মাধ্যমে অন্যের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা, ইসলামি আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক কথাবার্তা ইত্যাদি।
৩. তাদের এই সব আনন্দ-বিনোদনমূলক গান, কবিতা ইত্যাদি যেন অন্য মানুষের কানে না যায়। এমনকি একটু বুঝমান ছোট বাচ্চাদেরকেও শোনানো যাবে না।
৪. গানের মাধ্যমে অন্য নারী বা পুরুষের সৌন্দর্যের বর্ণনা মুক্ত হওয়া।
শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ.-কে এ প্রশ্নটি করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন:
“যদি গান দিয়ে একে অপরের কণ্ঠ শুনে বিনোদনের উদ্দেশ্য হয়, তবে তা কয়েকটি শর্তে জায়েজ। শর্তগুলো হলো, গানের কথাগুলো জায়েজ হতে হবে। কথাগুলো যদি শরিয়তে নিষিদ্ধ হয় তবে তা কোনও অবস্থাতে কারো কাছে গাওয়া যাবে না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الشِّعر كلام ، حسنُه حسنٌ ، وقبيحه قبيح
“কবিতার ভালো কথাগুলো ভালো, আর খারাপ কথাগুলো খারাপ।”
যদি কোনও মানুষ গান বা কবিতায় খারাপ কথা বলে, তবে তাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।
গান করার দ্বারা উদ্দেশ্য যদি হয়, একে অপরের কণ্ঠ শুনে পুলকিত হবে, আনন্দ পাবে তবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সামনে গান করলে কোনও দোষ নেই, তবে গানের উদ্দেশ্য যদি পাপাচারী শিল্পীদের মতো গানের অনুশীলন বা অনুকরণ হয় তবে তা জায়েজ নয়।
[ফতোয়া নাম্বার ১০, ক্যাসেট নাম্বার ৪২, আল-হুদা ওয়ান নূর সিরিজ। সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ইসলাম এন্ড ওয়েবসাইট]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate