Thursday, June 30, 2022

কখন “ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা শিরক আর কখন জায়েজ?

 প্রশ্ন: `ইয়া রাসুলুল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসূল) বলা জায়েজ কি?

উত্তর:
ইয়া রাসুলুল্লাহ অর্থ: হে আল্লাহর রাসূল! এটি উপস্থিত কাউকে উদ্দেশ্য করে সম্বোধন সূচক বাক্য।
যেমন: মানুষ জীবিত উপস্থিত কোনও ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে অথবা যাকে ডাকলে কথা শুনতে পায় এবং কথার উত্তর দেয় এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলা হয়-ইয়া ফুলান (হে অমুক।)।

◈ রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা জায়েজ হবে কি?

এ বাক্যটি কখনো কখনো বলা শিরক আর কখনো জায়েজ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:

◍ যখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা শিরক:

কেউ যদি এ বিশ্বাস থেকে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসুল) বলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করলে তিনি কবরে থেকেও তা শুনেন এবং বিপদাপদে সাহায্য করেন। তিনি সর্বত্র হাজির-নাজির, সর্ব শ্রোতা ও সর্ব দ্রষ্টা তাহলে তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এগুলো একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। আর আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনও বৈশিষ্ট্য তার মাখলুকের জন্য ব্যবহার করা হলে তাকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করার শামিল-যা শিরকে আকবর (বড় শিরক)।
বরং আমাদের বলা উচিৎ, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া গাফুর, ইয়া কুদ্দুস ইত্যাদি। কারণ একমাত্র আল্লাহই সাত আসমানের উপর থেকে প্রতিটি মাখলুকের ডাক শুনেন এবং তাদেরকে সাহায্য করেন। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর শান। কোনও মাখলুক সৃষ্টি জীবকে আল্লাহ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেন নি।

❑ ডাকতে হবে কেবল আল্লাহকে; কোনও নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ, জিন বা ফেরেশতাকে নয়:

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।” [সূরা আরাফ: ১৮০]

◈ তিনি আরও বলেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।” [সূরা গাফির/মুমিনুন: ৬০]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
“(এবং এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে), মসজিদসমূহ আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা জিন: ১৮]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
“আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভালো করবে না-মন্দও করবে না। বস্তুত: তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা ইউনুস: ১০৬]

◈ তিনি আরও বলেন,
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ ‎﴿١٣﴾‏ إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَة
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না।” [সূরা ফাতির: ১৩ ও ১৪)

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذَا سَأَلْت فَاسْأَلْ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْت فَاسْتَعِنْ بِاَللَّهِ
“যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” [তিরমিযী: ২৫১৬, হাদিসটি সহীহ (হাসান) বলেছেন।]

এ সকল আয়াও হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, বিপদাপদে সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে হবে। কোনও মৃত ব্যক্তি, নবী, ওলি, ফেরেশতা, জিন বা কোনও অদৃশ্য শক্তি ইত্যাদিকে ডাকা যাবে না। অন্যথায় তা বড় শিরকে পরিণত হবে। আর শিরক হল, আল্লাহর নিকট ক্ষমাহীন ইমান বিধ্বংসী সবচেয়ে বড় অপরাধ। কেউ জেনে বুঝে তাতে লিপ্ত হলে, তার জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং জান্নাত চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।)

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করার পর কোনও বিপদাপদে বা সমস্যা-সংকটে সাহাবি বা তাবেয়িগন কখনও “ইয়া রাসূলাল্লাহ” (হে আল্লাহর রাসূল) বা “ইয়া নাবিয়াল্লাহ”(হে আল্লাহর নবী) বলে সম্বোধন করে তার নিকট সাহায্যের আবেদন করেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি।

❑ কখন কখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা জায়েজ?

নিম্নোক্ত ক্ষেত্র সমূহে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলা দূষণীয় নয়। যেমন:

ক. হাদিসে বর্ণিত কোনও দুআর মধ্যে যদি এ বাক্যটি আসে তাহলে তা পাঠ করতে কোনও সমস্যা নাই। যেমন:
তাশাহুদের দুআয় আমরা বলি, “আসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু” (হে আল্লাহর নবী, আপনার উপর সালাম বর্ষিত হোক)।
হাদিসে যেহেতু এভাবেই বর্ণিত হয়েছে সেহেতু তাতে কোনও আপত্তি নাই।

খ. হাদিসের ইবারতে এ বাক্যটি থাকলে তা পাঠ করতে কোনও আপত্তি নাই। কারণ বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহাবিগণ ইয়া রাসূলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসূল) বলে সম্বোধন করতেন।

গ. মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের সন্নিকটে উপস্থিতি হয়ে তার উপর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করার সময়।

যেমন:
মদিনা জিয়ারাত কারীগণ, তাঁর কবরের সন্নিকটে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এবং তার পার্শ্বে শায়িত তার দুই সহচর প্রথম খলিফা আবু বকর রা. এবং ২য় খলিফা উমর রা. এর কবরের উদ্দেশ্য বলে থাকেন,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর রা.”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া উমার রা.।”

এটা অবশ্যই জায়েজ। কারণ এখনে তারা তাদের কবরের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সালাত ও সালাম পেশ করছেন।
মোটকথা, অন্তরের বিশ্বাস এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলার বিধান বর্তাবে। কখনো তা শিরক হবে আর কখনো জায়েজ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা

 প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পালন করলে ৫০ জন সাহাবির সমপরিমাণ সাওয়াব পাব?

উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন মানেই শেষ জামানা। তার মানে এর পরে কোন নবী রাসুল আসবে না বা কোন আসমানি গ্রন্থ নাজিল হবে না এবং এরপরে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সুতরাং অবশ্যই আমরা শেষ জমানায় রয়েছি।

কিন্তু কখন কিয়ামত সংগঠিত হবে আমরা কেউ জানি না। এর নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
{ يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ}
“তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন।” [Surah Al-A`râf: 187]

এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলও উল্লেখযোগ্য।

🟢 শেষ জামানায় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অপরিসীম মর্যাদা:

নিঃসন্দেহে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা তথা তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি, সুন্নত ও নফল ইবাদতগুলো যথাসম্ভব সম্পাদন করা এবং হারাম ও বিদাআতি আচার-বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা।‌ সেই সাথে তা প্রচার-প্রসার করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

▪️যেমন:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الإِسْلامَ بَدَا غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ قِيلَ : وَمَنِ الْغُرَبَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ
সাহল বিন সা’দ সায়েদী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অল্পসংখ্যক মানুষ সহকারে যেভাবে ইসলামের সূচনা হয়েছে ঠিক সেভাবে অচিরেই অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে তা ফিরে-যেমন শুরুতে হয়েছিল।

সুতরাং শুভ সংবাদ (দুনিয়ায় সফলতা ও আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ) ঐ অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য।’’
জিজ্ঞাসা করা হল, এই সুসংবাদ প্রাপ্ত অল্প সংখ্যক লোক কারা হে আল্লাহর রসূল?
তিনি বললেন, যারা সংস্কার ও সংশোধনী মূলক কাজ করে যখন মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে বা মানুষ খারাপ হয়ে যায়।”
[আহমাদ ১৬৬৯০, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৫৫৪, আওসাত্ব ৩০৫৬-সহিহ]

▪️এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস হল, আবু সা’লাবাহ খুশানী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ الصَّبْرُ فِيهِ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِمْ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ قَالَ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ
“তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মতো। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?
তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্য হতে।”
[আবু দাউদ ৪৩৪৩, তিরমিযী ৩০৫৮, ইবনে মাজাহ ৪০১৪, ত্বাবারানী ১৮০৩৩, সহীহুল জামে’ ২২৩৪]

🚫 “উম্মতের বিশৃংখলার সময় সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মর্যাদা ১০০ শহিদের সমান” সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়:
এ সংক্রান্ত হাদিসটি আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত। বক্তাদের মুখেও আমরা তা অহরহ শুনতে পাই। কিন্তু‌ সম্মানিত মুহাদ্দেসিনের দৃষ্টিতে সনদের বিচারে উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়।
নিম্নে উক্ত হাদিস এবং তৎপ্রসঙ্গে মুহাদ্দিসিনে কেরামের গবেষণালব্ধ সনদ বিশ্লেষণ পেশ করা হল:
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر مائة شهيد
“যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিশৃঙ্খলার সময় আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য রয়েছে একশ শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব।”
[হাদিসটি যঈফ (দুর্বল)। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যইফা, হা/৩২৭]

সনদ বিশ্লেষণ:

عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر مائة شهيد )
أخرجه ابن عدي في “الكامل” (2/327) وسنده ضعيف جدا ، فيه الحسن بن قتيبة : متروك الحديث ، انظر ترجمته في “لسان الميزان” (2/246) ، وضعفه الألباني في “السلسلة الضعيفة” (326)

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( المتمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر شهيد )
أخرجه الطبراني في “الأوسط” (2/31) وعنه أبو نعيم في “حلية الأولياء” (8/200)
وفي سنده علتان :
1- تفرد عبد المجيد بن عبد العزيز بن أبي رواد ، ومثله لا يحتمل تفرده .
2- جهالة محمد بن صالح العذري : قال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (1/172) : لم أر من ترجمه .
ولذلك ضعفه الشيخ الألباني رحمه الله في “السلسلة الضعيفة” (327) .
পরিশেষে আমাদের কর্তব্য, চতুর্মুখী ফিতনা-ফাসাদের সয়লাবের মধ্যেও আল্লাহর দ্বীনকে শক্তভাবে ধারণ করা, চারদিকে অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে সত্যের পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং বিদআতের জয়জয়কারের মাঝেও রাসুলের সুন্নাহকে জীবনের ব্রত বানিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি এই পথে চলতে গিয়ে সকল ঝড়ঝঞ্জা, অগ্নিপরীক্ষা, বিপদ-আপদ এবং অপবাদ ও অপপ্রচারের সামনে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় পরম ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তবেই মিলবে প্রতিশ্রুত সফলতা এবং জান্নাতের সুসংবাদ‌। সেই সাথে মিলবে সাহাবিদের ৫০ জন ব্যক্তির সমতুল্য সওয়াব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।‌ আমিন।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

একটি মাছির কারণে জাহান্নাম মর্মে ব্যাপক প্রচলিত হাদিস বিষয়ে জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণী ও ভ্রান্তি নিরসন

 মাছির হাদিসটি আমাদের সমাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে প্রচলিত। অনেক বক্তাও শিরকের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে যথাযথ তাহকীক না করে এ ঘটনাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে পেশ করে থাকেন। কিন্তু তা ঠিক নয় বরং সঠিক হল, এটি সালমান ফারেসী রা. এর উক্তি মাত্র।

ঘটনাটি নিম্নরূপ:
روى الإمام أحمد في “الزهد” (84) قال: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ قَالَ: ( دَخَلَ رَجُلٌ الْجَنَّةَ فِي ذُبَابٍ، وَدَخَلَ النَّارَ رَجُلٌ فِي ذُبَابٍ.

قَالُوا: وَكَيْفَ ذَلِكَ؟

قَالَ: مَرَّ رَجُلَانِ عَلَى قَوْمٍ لَهُمْ صَنَمٌ لَا يَجُوزُهُ أَحَدٌ حَتَّى يُقَرِّبَ لَهُ شَيْئًا، فَقَالُوا لِأَحَدِهِمَا: قَرِّبْ! قَالَ: لَيْسَ عِنْدِي شَيْءٌ، فَقَالُوا لَهُ: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا! فَقَرَّبَ ذُبَابًا، فَخَلَّوْا سَبِيلَهُ.

قَالَ: فَدَخَلَ النَّارَ. وَقَالُوا لِلْآخَرِ: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا! قَالَ: مَا كُنْتُ لِأُقَرِّبَ لِأَحَدٍ شَيْئًا دُونَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، قَالَ: فَضَرَبُوا عُنُقَهُ، قَالَ: فَدَخَلَ الْجَنَّةَ ) .
তারিক বিন শিহাব সালমান রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘‘এক ব্যক্তি একটি মাছিকে কেন্দ্র করে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছিকে কেন্দ্র করে জাহান্নামে গিয়েছে।
শ্রোতাগণ প্রশ্ন করলেন, তা কীভাবে?

তিনি বললেন, (পূর্বযুগে) দু জন লোক এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল যাদের একটা মূর্তি ছিল। কোনও ব্যক্তিকে সে স্থান ত্যাগ করার সুযোগ দেয়া হত না যতক্ষণ না সে উক্ত মূর্তির উদ্দেশ্যে কিছু নজরানা পেশ করে।

যাহোক, তারা দু জনের একজনকে বলল, নজরানা পেশ কর।
সে বলল, আমার কাছে কিছুই নেই।
তারা বলল, একটা মাছি হলেও পেশ করো।

অতঃপর সে একটা মাছি নজরানা দিলে তারা তার পথ ছেড়ে দিলো।

তিনি বললেন, এর ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।

অপর ব্যক্তিকে তারা বলল, ‘‘মূর্তির উদ্দেশ্যে একটা মাছি হলেও নজরানা পেশ করো।
সে বলল, আমি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে নজরানা দেই না।
এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিলো।

তিনি বলেন, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল।
[মুসনাদে আহমদ, অধ্যায়: যুহুদ/৮৪]

এ হাদিসে দেখা গেল, মুসনাদে আহমদে এটি সাহাবি সালমান ফারেসী রা. বক্তব্য হিসেবেই উল্লেখিত হয়েছে এবং শাইখ আলবানী সহ অন্যান্য মুহাক্কিক মুহাদ্দিসগণ এটিকে موقوف (মাওকুফ) তথা সালমান ফারেসী রা. এর বক্তব্য হিসেবে সহিহ বলেছেন; مرفوع (মারফু) তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নিঃসৃত হাদিস হিসেবে নয়। [দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যাইফাহ ১২/ ৭২২]

সুতরাং তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে প্রচার করা জায়েজ নাই। অন্যথায় তা তাঁর নামে মিথ্যাচার বলে গণ্য হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)।

❑ আর এ ঘটনার বিধান কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়:

◍ এক. আলেমগণ বলেন, সালমান ফারেসী রা. হয়ত খৃষ্টান থাকা অবস্থায় খৃষ্টান পাদ্রীদের থেকে তা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এটি ইসরাইলি বর্ণনা। যেমন: শাইখ আলবানী বলেন,
” إلا أنه يظهر لي أنه من الإسرائيليات التي كان تلقاها عن أسياده حينما كان نصرانيا ” انتهى، من “سلسلة الأحاديث الضعيفة” (12 / 722)
“তবে আমার মনে হয়, এটি ইসরাইলি বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত যা তিনি খৃষ্টান থাকা অবস্থায় খৃষ্টান পাদ্রীদের থেকে গ্রহণ করেছেন। [দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যাইফাহ ১২/ ৭২২]

সুতরাং ঘটনাটি সত্য-মিথ্যা কোনটাই বলার সুযোগ নাই। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تُصَدِّقُوا أَهْلَ الكِتَابِ وَلا تُكَذِّبُوهُمْ ، وَقُولُوا: ( آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا ) الآيَةَ
“তোমরা আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খৃষ্টানদেরকে সত্য বা মিথ্যা কোনটাই বল না। বরং বল, “আমরা আল্লাহ এবং আমাদের উপর যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছি।’’ (সূরা বাকারা: ১৩৬)
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৯৭/ তাওহীদ, পরিচ্ছেদ: ৬৫/২/১১. মহান আল্লাহর বাণী: তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি।]

◍ দুই. তাছাড়া এ বক্তব্যটি কুরআনের আয়াত ও অন্যান্য সহিহ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক-যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, শত্রুর কবলে জীবন বিপন্ন হওয়া বা বড় ধরণের ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট রেখে আত্ম রক্ষার্থে বাহ্যিক ভাবে শিরকি বা কুফরি কাজ করলে বা কথা উচ্চারণ করলেও তাতে ঈমান নষ্ট হয় না। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَن كَفَرَ بِاللَّـهِ مِن بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَـٰكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللَّـهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরির জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।” [সূরা আন নহল: ১০৬]
-প্রখ্যাত তাফসীর বিদ আবু বকর আল জাসসাস বলেন,
هذا أصل في جواز إظهار كلمة الكفر في حال الإكراه
“বাধ্যতামূলকভাবে কুফরি বাক্য উচ্চারণ জায়েজ হওয়ার পক্ষে এই আয়াতটি মূল দলিল।“ [আহকামুল কুরআন ৩/১৯২]
– বিশিষ্ট মুফাসসির ইমাম বাগভি রহ. তার তাফসীর গ্রন্থে বলেন,
وأجمع العلماء على: أن من أكره على كلمة الكفر، يجوز له أن يقول بلسانه
“এটি আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত যে, কাউকে যদি কুফরি কথা বলার জন্য জবরদস্তী করা হয় তার জন্য তা মুখে উচ্চারণ করা জায়েজ।“ [তাফসীরে বাগভী- মাআলিমুত তানযিল ৫/৪৬]

আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عُفِيَ لأمَّتي عن الخطأِ والنِّسيانِ وما استُكرِهوا عليهِ
“আমার উম্মতের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভুল, স্মরণ না থাকার কারণে ঘটে যাওয়া গুনাহ এবং জোরজবরদস্তি মূলক কৃত অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” [ইবনে হাযম রা. রচিত আল মুহাল্লা, তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন]

◍ তিন. অথবা বলা যেতে পারে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্ব যুগের শরিয়তের বিধান ছিল কিন্তু এই উম্মতের জন্য তা রহিত করা হয়েছে-উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে।

❑ একটি হাদিসের ব্যাখ্যা:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تُشركْ باللهِ شيئًا وإنْ قُطِّعتَ أو حُرِّقتَ
“আল্লাহর সাথে কোনও কিছুকে শরিক করবে না যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা
আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়” [সহীহুত তারগীব, হাসান লি গাইরিহ]

মুহাদ্দিসগণ এ হাদিসের দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হল:

❂ ১. তোমাকে হত্যা বা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলেও আন্তরিকভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। অর্থাৎ মন থেকে শিরককে মেনে নিবে না।

❂ ২. কেউ যদি নিহত বা ভস্মীভূত হওয়ার পরও শিরক না করে তাহলে তা উত্তম। এতে সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে এবং আল্লাহ তাকে আখিরাতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কিন্তু কারও ঈমান যদি এতটা মজবুত না হয় বা সহ্য ক্ষমতা না থাকে তাহলে তার জন্য জায়েজ আছে যে, সে বাহ্যিক ভাবে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে শিরক বা কুফরি করবে কিন্তু অন্তরের দিক দিয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান সুদৃঢ় রাখবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

কাজা সালাতে আজান ও ইকামতের বিধান

 প্রশ্ন: “কাজা সালাতে ইকামতের প্রয়োজন নেই” একথা কি হাদিস সম্মত? দলিল সহ জানতে চাই।

উত্তর:
“কাজা সালাতে ইকামত এর প্রয়োজন নেই” এ কথা হাদিস সম্মত নয়। বরং একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কাজা সালাতেও ইকামত দেওয়া সুন্নত।
কোন সালাত যথাসময়ে পড়তে না পারলে অনতিবিলম্বে তা কাজা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, ইকামত দেওয়ার পর ফরজ সালাতগুলো যথা নিয়মে আদায় করা। (পাশাপাশি যেসকল সালাতের আগে ও পরে সুন্নত সালাত রয়েছে সেগুলোও আদায় করা।)

এই মর্মে দুটি হাদিস এবং একটি ফতোয়া পেশ করা হল: وبالله التوفيق

🟢 হাদিসে এসেছে:
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ إِنَّ الْمُشْرِكِينَ شَغَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَتَّى ذَهَبَ مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللَّهُ فَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَذَّنَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْمَغْرِبَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعِشَاءَ ‏”.
আবূ উবাইদা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. বলেছেন, খন্দক যুদ্ধে মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চার ওয়াক্ত সালাত হতে ব্যতিব্যস্ত করে দেয়।
পরিশেষে আল্লাহর ইচ্ছায় যখন রাতের কিয়দংশ অতিবাহিত হয়ে গেল তখন তিনি বিলাল রা. কে আজান দেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আজান দিলেন অতঃপর ইকামত বললেন৷
প্রথমে জোহরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি আসরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি ইশার সালাত আদায় করালেন।
[আল ইরওয়া-(১/২৫৭), অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: যার একাধারে কয়েক ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেছে সে কোন ওয়াক্ত থেকে শুরু করবে? হাদিস নং ১৭৯- হাসান]

🟢 অন্য একটি হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ فَسَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَنَا الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلاَلٍ ‏”‏ اكْلأْ لَنَا اللَّيْلَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَغَلَبَتْ بِلاَلاً عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ بِلاَلٌ وَلاَ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ يَا بِلاَلُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ أَخَذَ بِنَفْسِي الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاقْتَادُوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ لَهُمُ الصَّلاَةَ وَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ قَالَ ‏”‏ مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ ‏{‏ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِّكْرَى ‏}‏ ‏” ‏
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল রা. কে বলেন, “তুমি জেগে থাকবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে।”
কিন্তু বিলাল রা.ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিলাল এবং তাঁর সহাবিদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের উত্তাপ তাদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন। অতঃপর অস্থির হয়ে বললেন, “কী হলো বিলাল!”
তিনি বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন।”

অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওজু করলেন এবং বিলাল রা. কে নির্দেশ দিলে তিনি ইকমত দিলেন।
অতঃপর তিনি সকলকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় শেষে বললেন, “কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত সালাত আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার স্মরণার্থে সলাত প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরা ত্বা-হা: ১৪)
[মুসলিম, আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়: অনুচ্ছেদ-১১
কেউ সালাতের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা সালাতের কথা ভুলে গেলে, হাদিস নং ৪৩৫-সহিহ]
সুনানে বায়হাকী বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ঘটনায়
فَصَلَّى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى صَلَاةَ الْغَدَاةِ”
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দু রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেছেন, তারপর ফরজ আদায় করেছেন।”

🔶 শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وَلَيْسَ الْأَذَانُ بِوَاجِبٍ لِلصَّلَاةِ الْفَائِتَةِ، وَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ أَدَاءً أَوْ قَضَاءً وَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَإِنْ اكْتَفَى بِالْإِقَامَةِ أَجْزَأَهُ، وَإِنْ كَانَ يَقْضِي صَلَوَاتٍ فَأَذَّنَ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَأَقَامَ لِبَقِيَّةِ الصَّلَوَاتِ كَانَ حَسَنًا أَيْضًا.
“ছুটে যাওয়া কাজা সালাতের ক্ষেত্রে আজান ওয়াজিব নয়। যদি কেউ একাকী যথাসময়ে অথবা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাযা হিসেবে সালাত আদায় করে তাহলে (প্রথমে) আজান দিবে, অতঃপর ইকামত দিবে। এটা ভালো। আর যদি কেবল আজান দেয় (ইকামত না দেয়) তবেও যথেষ্ট হবে। আর যদি একাধিক ওয়াক্তের কাজা সালাত পড়ে তাহলে প্রথমবার আজান দেবে, অতঃপর বাকি সালাতের ক্ষেত্রে ইকামত দিবে। এটাও উত্তম।” [আল ফাতাওয়া আল-কুবরা]
والله أعلم
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সালাতের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার এবং প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাত যথাসময়ে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

==========
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব

 প্রশ্ন: ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর :
১) প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য ইবাদতের মৌসুমগুলোতে খাঁটি ভাবে তওবা করা এবং পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকা। কারণ, পাপাচার মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে শুধু বঞ্চিতই রাখে না বরং আল্লাহ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়।

২) আরও কর্তব্য হল, আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে এমন কাজগুলোকে গনিমত মনে করে সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। যে আল্লাহর কথাকে বিশ্বাস করবে আল্লাহ তার ব্যাপারে তাঁর ওয়াদাকে বাস্তবায়ন করবেন। তিনি ওয়াদা করেছেন:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

“যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা ও সাধনা করবে আমি অবশ্যই তাকে আমার রাস্তাগুলো দেখাবো।”
(সূরা আনকাবূত: ৬৯)

যিলহজ্জের প্রথম দশকে যেসব আমল করা মুস্তাহাব:

১. সালাত: ফরয সালাতগুলো যথাসময়ে সম্পাদন করার পাশাপাশি প্রচুর নফল সালাত আদায় করা। কারণ, সালাতই হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ সেজদা কর (নফল সালাত আদায় কর), কারণ যখনই তুমি সেজদা কর বিনিময় আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং গুনাহ মোচন করেন।” (মুসলিম) এটি কেবল যিলহজ মাস নয় বরং অন্য সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।

২.সিয়াম: রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই ফযিলতের। হুনাইদা বিন খালেদ তার স্ত্রী থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী) ইমাম নববী যিলহজ্জ মাসের শেষ দশ দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব।

৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ করা: ইবনে ওমর রা. এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে, তোমরা বেশি বেশি তাকবীর (আল্লা-হু আকবার), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ), ও তাহমীদ (আল হামদু লিল্লা-হ) পড়া। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইবনে ওমর রা. এবং আবু হুরায়রা রা. এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারে বের হতেন, আর মানুষরাও তাদের দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবনে উমর রা, মিনায় তাঁর তাঁবুতে তাকবীর বলতেন, তা শুনে মসজিদের লোকেরা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।

ইবনে উমর রা. মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে, তাঁবুতে, বিছানায়, বসার স্থানে, চলার পথে সর্বত্র তাকবীর পাঠ করতেন।

এ তাকবীরগুলো উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা মুস্তাহাব। কারণ, সাহাবী উমর রা., তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., আবু হুরায়রা রা. তা উচ্চ আওয়াজে পাঠ করতেন।

মুসলমানদের উচিত এ সুন্নতটি পুনর্জীবিত করা, যা বর্তমান যুগে প্রায় হারিয়ে গেছে এবং দু:খ জনক হলেও সত্য, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নেককার লোকেরাও এটি প্রায় ভুলতে বসেছে। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

তাকবীর বলার নিয়ম: নিন্মোক্ত যে কোন পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা যায়:

✔ক) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবীরা।
✔খ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
✔গ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

৪. আরাফার দিন রোজা: আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।” (মুসলিম) তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজীদের জন্য রোযা রাখা মুস্তাহাব নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজা বিহীন অবস্থায়।

৫. কুরবানির দিন (দশম যিলহজ্জ) এর মর্যাদা: এই মহান দিনটির মর্যাদার ব্যাপারে অনেক মুসলমানই অসচেতন। কতিপয় বিদ্বান এ মত ব্যক্ত করেছেন যে, সাধারণভাবে সারা বছরের মধ্যে-এমনকি আরাফার দিনের চেয়েও নহর তথা কুরবানির দিন উত্তম।

ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন নহরের দিন। এটিই হল, হজ্জে আকবর (বড় হজ্জ) এর দিন। যেমন সুনানে আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মহিমান্বিত দিন হল নহর তথা কুরবানির দিন। অতঃপর কুরবানির পরের দিন (অর্থাৎ যিলহজ্জের এগারতম দিন যে দিন হাজীগণ কুরবানি করার পর মিনায় অবস্থান করেন)।

অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, নহরের দিনের চেয়ে আরাফার দিন উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোন দিন করেন না। আরও এ জন্যও যে, আল্লাহ তায়ালা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক। কারণ, হাদিস তারই প্রমাণ বহন করে। এর বিরোধী কিছু নেই।

যাহোক, সর্বোত্তম দিন চাই কুরবানির দিন হোক অথবা আরাফার দিন হোক যারা হজ্জে গমন করেছেন বা যারা করেন নি সবার জন্য উচিৎ হল, সে দিনের ফযিলত অর্জনের চেষ্টা করা এবং এই সুযোগকে কাজে লাগানো।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক: শায়খ আব্দুল মালিক আল-কাসেম
সম্পাদনায়: শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল জিবরীল
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার।

Translate