Wednesday, September 18, 2019

আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন ও অপছন্দ করেন ( কুরআনের আলোকে)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন
১. রাসূলুল্লাহ সা.-এর অনুসারীদের:
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে-ইমরান, ৩:৩১) অর্থ্যাৎ যারা রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে।
২. আল্লাহর উপর ভরসাকারীদের:
فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
অতঃপর তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদের ভালবাসেন। ( সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৫৯)
৩. যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ
যারা আল্লাহর পথে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। ( সূরা সাফ, ৬১:৪)
৪.সৎকর্মশীলদের:
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং (ব্যয় না করে) নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা বাকারা, ২:১৯৫) আরো দেখুন- সূরা মায়িদা, ৫:১৩
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৩৪)
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ “আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।” (দ্রষ্টব্য: সূরা আলে-ইমরান,৩:১৪৮, সূরা মায়িদা, ৫:৯৩)
৫. ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারকারীদের:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। ( সূরা মায়িদা, ৫:৪২) আরো দেখুন- সূরা হুজুরাত, ৪৯:৯, সূরা মুমতাহিনা, ৬০:৮
৬. তাওবাকারীদের:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থিগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। ( সূরা বাকারা, ২:২২২)
৭. ধৈর্যশীলদের:
وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন। ( সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৪৬)
৮. আল্লাহভীরু/মুত্তাকী/ সংযমীদের:
بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
অবশ্যই যে তার অঙ্গীকার পালন করে এবং সংযত হয়ে চলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সংযমীদেরকে ভালবাসেন। ( সূরা আলে ইমরান, ৩: ৭৬) আরো দেখুন- সূরা তাওবা, ৯: ৪, ৭ পুনশ্চ: যারা আল্লাহর ভয়ে তার নির্দিষ্ট বিষয়াবলী থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে।
৯. পবিত্রদের:
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবাহ, ৯:১০৮)
পুনশ্চ: যারা দৈহিক ও চরিত্রগতভাবে (পাপাচার থেকে) পবিত্র।
আল্লাহ যাদের অপছন্দ করেন
১. কাফির/অবিশ্বাসীদের:
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
বলো, ‘তোমরা আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হও।’ কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে ভালবাসেন না। ( সূরা আলে-ইমরান, ৩:৩২)
২. জালেমদর:
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না। (দ্রষ্টব্য: সূরা আলে ইমরান, ৩: ৫৭, ১৪০) আরো দেখুন, সূরা শূরা, ৪২:৪০
৩. সীমালঙ্ঘনকারীদের:
إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বাড়াবাড়িকারীদেরকে পছন্দ করেন না’। ( সূরা বাকারা, ২: ১৯০)
“হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু বৈধ করেছেন, সে সকলকে তোমরা অবৈধ করো না এবং সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।” ( সূরা মায়িদা, ৫:৮৭)
৪. অকৃতজ্ঞ পাপীদের:
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি দেন। আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না। ( সূরা বাকারা, ২:২৭৬)
৫. বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠদের:
وَلَا تُجَادِلْ عَنِ الَّذِينَ يَخْتَانُونَ أَنْفُسَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ خَوَّانًا أَثِيمًا আর তুমি তাদের পক্ষে কথা বলো না, যারা নিজেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠকে ভালবাসেন না। ( সূরা নিসা, ৪:১০৭)
وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ
যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের বিশ্বাসঘাতকতার আশংকা কর, তাহলে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদেরকে পছন্দ করেন না। ( সূরা আনফাল, ৮:৫৮) আরো দেখুন- সূরা হাজ্জ, ২২:৩৮
৬. অশান্তি/বিপর্যয় ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের:
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ
আর আল্লাহ অশান্তি/ বিপর্যয় পছন্দ করেন না। (সূরা বাকারা, ২:২০৫)
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ( সূরা মায়িদা, ৫:৬৪) আরো দেখুন- সূরা কাসাস, ২৮:৭৬
৭. দাম্ভিক/অহঙ্কারীদের:
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
গর্বিত ও অহংকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। ( সূরা হাদীদ, ৫৭:২৩)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না (অবজ্ঞা করো না) এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না। ( সূরা লুকমান, ৩১:১৮)
আরো দেখুন- সূরা নিসা, ৪:৩৬
لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ
এটা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে; তিনি অহংকারীকে অবশ্যই পছন্দ করেন না। ( সূরা নাহল, ১৬:২৩)
إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। ( সূরা কাসাস, ২৮:৭৬
৮. মন্দকথা প্রকাশ করাকে:
لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
মন্দ কথা প্রকাশ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন না; তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে তার কথা স্বতন্ত্র। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা, ৪:১৪৮

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা 
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) রাসুল্লাহ সা.-এর প্রখ্যাত সাহাবী। তিনি বলেন: মদীনায় আমার কাছে বাস করত এক ইয়াহুদী। আমি তার কাছ থেকে ফলের মৌসুমে খেজুর দেয়ার শর্তে অগ্রীম কিছু অর্থ নিই ( বাইয়ে সালাম )। সেই বৎসর ভাল ফলন না হওয়াতে তিনি ইয়াহুদীর কাছে আগামী এক বৎসরের অবকাশ (সময় ) চাইলেন। ইয়াহুদী তা করতে অস্বীকৃতি জানাল। জাবের রা. এই বিষয়ে রাসুল (সা.)কে বললে ; তিনি কিছু সাহাবী নিয়ে জাবেরের ওখানে গিয়ে ইয়াহুদীর কাছে জাবেরের পক্ষে অবকাশ চাইলেন। সে পূর্বের মত অস্বীকার করল। রাসূল (সা) জাবেরের (রা) বাগান ঘুরে এসে আবারো ইয়াহুদীর কাছে এক বছরের সময় চাইলেন। ইয়াহুদী আবারো সময় দিতে অস্বীকার করল।
জাবের রা. এসময় কিছু তাজা-পাকা খেজুর এনে রাসূল (সা)-এর কাছে এনে রাখলেন। রাসূল সা. তা থেকে খেলেন এবং বললেনঃ হে জাবের. তোমার ঘরটি কোথায়?
জাবের (রা) ঘর দেখিয়ে দিলে তিনি তাকে বিছানা পাততে বললেন। তিনি বিছানা করে দিলে রাসূল (সা.) তাতে শুইয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
ঘুম থেকে উঠে রাসূল (সা) আবার ইয়াহুদীর কাছে গিয়ে সময়ের অবকাশ চাইলেন। সে তা করতে অস্বীকৃতি জানাল। রাসূল সা জাবের রা)-এর খেজুরের বাগানটি চক্কর দিয়ে জাবের রা.-কে বললেন, তিনি যে তার বাগানের অপর্যাপ্ত কাচা-পাকা খেজুর পেরে এখানে জমা করেন। জাবের রা. তাই করলেন। রাসূল সা. খেজুর স্তুপের উপর বসে জাবের (রা)কে নির্দেশ দিলেন তা থেকে  মেপে মেপে ইয়াহুদীর পাওনা মিটিয়ে দিতে। জাবের (রা.) তাই করলেন। তিনি বলেন: আমি ইয়াহুদীর পাওনা মিটিয়ে দিয়ে দেখি এখনো আমার কাছে ঐ পরিমাণ আছে যা আমি প্রথমে স্তুপ করেছি বা তারচে বেশি যা আমার প্রয়োজন পূরণের জণ্য যথেষ্ট।

হাবশী ক্রীতদাসী


আরবের এক উপকন্ঠে এক গোত্রের বাস। এ গোত্রে এক হাবশী ক্রীতদাসী ছিল। তার মালিক তাকে মুক্তি দিলেও সে তাদের সাথে থাকত। একদিন ওই গোত্রের এক বালিকা বাইরে বের হয়ে তার পড়নের অলঙ্কার হারিয়ে ফেলে বা কোথাও রেখে ভুলে যায়। এক চিল খাবার ভেবে তা নিয়ে যায়। গোত্রের লোকেরা ঐ ক্রীতদাসীকে সন্দেহ করে।
এক পর্যায়ে তারা মেয়েটিকে তল্লাশী করে, এমনকি তারা ওর লজ্জাস্থান পর্যন্ত অনুসন্ধান করে। হঠাৎ ওই চিলটি এসে ওদের সামনে হারানো অলঙ্কারটি ফেলে দেয়। তা দেখে ক্রীতদাসী বলল, তোমরা যেই হারের কারণে আমাকে অপদস্ত করলে এই দেখো ……তোমাদের কাছে আমি ভাল কিছু আশা করতে পারি না।
হাবশী ক্রীতদাসী পরবর্তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তার ক্ষোভের কথা বলল। সে ইসলাম গ্রহণ করলে থাকার জন্য তাকে মসজিদের পাশে তাবু করে দেয়া হয়।
আইশা রা. বলেন: এই মহিলার সাথে যখনই দেখা হত সে সুরে সুরে বলত, ওই হারানো অলঙ্কারে এরা আমাকে অপমান করেছে; মহান প্রভু এটা দ্বারা আমাকে পথ দেখিয়েছেন।

Translate