Sunday, April 21, 2024

ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার

 প্রশ্ন: ইতিকাফ-এর সময় মোবাইল ফোনে কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ ইত্যাদি কি শোনা যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, যাবে। তবে এ সময় যথাসম্ভব নেট মোবাইল ব্যবহার থেকে দূরে থাকাই ভালো।‌ কারণ এটা খুবই আকর্ষণীয় জিনিস। এতে বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসে। তখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকে সময় অপচয় হওয়ার ও বিভিন্ন অনর্থক কাজে সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি হারাম জিনিস দেখা বা‌ শোনার দিকেও মন ধাবিত হতে পারে। ইউটিউবে ওয়াজ বা কুরআন তিলাওয়াতের সময় অপ্রত্যাশিত হারাম অ্যাড প্রদর্শিত হতে পারে-যা ইতিকাফ-এর ভাব গাম্ভীর্যতা নষ্ট করবে এবং মসজিদের আদব ক্ষুণ্ণ করবে।
তবে এ বিকল্প হিসেবে নেট বিহীন মোবাইল ফোন থেকে ম্যামরিতে সংরক্ষিত কুরআনের অডিও-ভিজ্যুয়াল তিলাওয়াত বা বিজ্ঞ আলেমদের ওয়াজ বা ইসলামি আলোচনা শ্রবণ করা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে যে, ইতিকাফ-এর উদ্দেশ্য হল, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের সাথে যোগাযোগ (একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া), দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা, পাপাচার, অনর্থক কথা ও কাজ ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর আনুগত্যে নিবিষ্ট চিত্তে কিছু সময় অতিবাহিত করা‌। এটি মহান স্রষ্টার সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করা এবং নিজেকে পরিবর্তন করা অপূর্ব সুযোগ। এটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
তাই এ সময় জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, সিয়াম পালন ইত্যাদি ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি যথাসাধ্য নফল সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, ইসতিগফার, দরুদ পাঠ, হাদিস পাঠ, ইসলামি বই-পুস্তক থেকে জ্ঞানার্জন ইত্যাদির মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করতে হবে।

ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে মোবাইল-ফোন সঙ্গে রাখা এবং এর মাধ্যমে পরিবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় খোঁজ-খবর রাখা জায়েজ আছে। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা, গেমস খেলা, ক্রিকেট-ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি দেখা কিংবা নাটক, সিনেমা বা মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি দেখা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।
মোটকথা, আমাদের ইতিকাফ যেন হয় সব অনর্থ কাজ ও পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত সেদিকে অবশ্যই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ অবস্থায় এমন কিছু করা উচিৎ নয় যা এই মহৎ উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

জুমাতুল বিদা কী এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এটি পালনের কি কোন ভিত্তি আছে

 জুমাতুল বিদা বলতে বুঝায়, রমজানের শেষ জুমা সালাতের মাধ্যমে রমজানকে বিদায় জানানো।

আমাদের দেশে দেখা যায়, রমজানের শেষ শুক্রবারকে খুব গুরুত্বের সাথে ‘জুমাতুল বিদা’ হিসেবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে জুমার নামাজে পরিলক্ষিত হয় প্রচুর ভিড়। এ দিনে কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে, কেউ কেউ এ দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছু নামাজ পড়ে, মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ দুআ-মুনাজত, ইফতার পার্টি ইত্যাদি। পরে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে নিউজ আসে “যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে সারা দেশে ‘জুমাতুল বিদা’ পালিত হয়েছে”!

অথচ রমজানের শেষ জুমার আলাদা কোনো ফজিলত আছে বা এ দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করতে হবে কুরআন-সুন্নায় এ ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
আমাদের কর্তব্য, প্রত্যেক জুমার দিনকে গুরুত্ব দেওয়া। সকল জুমার দিন ফজিলতপূর্ণ। রমজানের প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রমজানের শেষ জুমার বিশেষ কোন ফজিলত আছে বলে কুরআন-সুন্নায় কোন প্রমাণ নাই।

সুতরাং এ দিনটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ‘জুমাতুল বিদা’ পালন করা বিদআত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রকার বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬ উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

তারাবিহ এর সালাত একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতের সাথে আদায় করা অধিক উত্তম

 তারাবিহ-এর সালাত একাকী আদায় করা যেমন শরিয়ত সম্মত তেমনি জামাতে আদায় করাও শরিয়ত সম্মত। তবে একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতের সাথে আদায় করা অধিক উত্তম। কারণ:

◈ ১- একাকী বা বিচ্ছিন্নভাবে তারাবিহ এর সালাত পড়ার চেয়ে মসজিদে জামাতে পড়া উত্তম না হলে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মানুষকে মসজিদে এক ইমামের পেছনে জামাত পূণপ্রতিষ্ঠিত করতেন না এবং এরপর এটিকে “চমৎকার আবিষ্কার نعمة البدعة هذا” বলে অবিহিত করতেন না।

◈ ২- সালাত আদায় শেষ হওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকা সারারাত নফল সালাত আদায়ের সমপরিমাণ মর্যাদার কথা বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: হাদিসে এসেছে,

مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ

“যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সালাতে দাঁড়ায় এবং ইমামের শেষ করা পর্যন্ত তাঁর সাথে অবস্থান করে তাহলে তার জন্য সারারাত (নফল) সালাত আদায়ের সওয়াব লেখা হয়।” [সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৮/ সওম (রোজা) পরিচ্ছেদ: রমজান মাসের কিয়াম]
কিন্তু একাকী আদায় কারী জন্য এই মর্যাদা নেই।

◈ ৩- জামাতে তারাবিহর সালাত আদায় করা মূলত: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি সুন্নতকে পূর্ণজীবিত করার নামান্তর। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দিন তা পড়েছিলেন। কিন্তু ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় তা পরিত্যাগ করেছিলেন।

সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিদেরকে নিয়ে কয়েক রাতে নামাজ পড়েছেন। তৃতীয় রাতে কিংবা চতুর্থ রাতে তিনি আর বের হননি। ভোরবেলায় তিনি বলেন,
لم يمنَعْني من الخروجِ إليكم إلَّا أنِّي خَشِيتُ أن تُفرَضَ عليكم، وذلك في رَمَضانَ
“অন্য কোন কারণ আমাকে বের হতে বাধা দেয়নি; তবে আমি তোমাদের উপর ফরজ করে দেওয়ার আশংকা করছি।”[সহিহ বুখারী, হা/১১২৯]

সহিহ মুসলিমের (৭৬১) ভাষ্যে এসেছে “কিন্তু আমি আশংকা করেছি তোমাদের উপর কিয়ামুল লাইল ফরজ করে দেওয়ার। এমনটি হলে পরে তোমরা তা আদায় করতে পারবে না।”

◈ ৪- উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর পর থেকে বাকি তিন খলিফা সবাই নিয়মিত জামাতের সাথেই তারাবহির সালাত আদায় করেছেন। [ফিকহ বিশ্বকোষ ২৭/১৩৮]

وجاء في الموسوعة الفقهية (27/138) “:
” وَقَدْ وَاظَبَ الْخُلَفَاءُ الرَّاشِدُونَ وَالْمُسْلِمُونَ مِنْ زَمَنِ عُمَرَ رضي الله تعالى عنه عَلَى صَلاةِ التَّرَاوِيحِ جَمَاعَةً , وَكَانَ عُمَرُ رضي الله تعالى عنه هُوَ الَّذِي جَمَعَ النَّاسَ فِيهَا عَلَى إمَامٍ وَاحِدٍ

-শাইখ আলবানি বলেন,

” وتشرع الجماعة في قيام رمضان ، بل هي أفضل من الانفراد ، لإقامة النبي صلى الله عليه وسلم لها بنفسه ، وبيانه لفضلها بقوله

“রমজান মাসে জামাতের সাথে কেয়াম করা শরিয়ত সম্মত। বরং তা একাকী পড়ার থেকে উত্তম। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা করেছেন এবং তার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন…। এ ছাড়াও বহু আলেম এই মত ব্যক্ত করেছেন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

টাকা বনাম খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে ৮ টি পয়েন্টে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

 এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত এই আটটি পয়েন্ট হয়তো আপনাকে নতুন করে ভাবতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।

নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উপস্থাপন করা হলো:

✅ ১. প্রতিবছর রমজানের শেষে বহু মানুষ আলেম-উলামা ও মসজিদের ইমামদেরকে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করতে থাকে, “হুজুর, এবারের ফিতরা কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে? শাইখ, এবারের ফিতরা কত টাকা? মাওলানা সাহেব, এখনো কি ঠিক হয়েছে এ বছর কত টাকা ফিতরা দিতে হবে? ইত্যাদি। মানুষ এ বিষয়ে অনেক পেরেশান থাকে। তারা বিভিন্নভাবে তা জানার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে, আসলেই ইসলাম আগে থেকে এর কোন সমাধান দেয়নি। তাই সাধারণ মানুষ প্রতিবছর ইসলামি ফাউন্ডেশন, অমুক সংগঠন কিংবা অমুক মাদরাসার ফতোয়া বোর্ড কী সিদ্ধান্ত দেয় সেটা জানার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে! অথচ ইসলাম মানুষকে এই অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়েছে ১৪০০ বছর পূর্বেই। অর্থাৎ ফিতরার পরিমাণ আগে থেকেই নির্ধারিত। তা হলো, এক সা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য। (যা বর্তমানে আড়াই বা তিন কেজি দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য। (যেমন: আমাদের দেশে, চাল)। যা কখনো পরিবর্তনযোগ্য নয়।
সাধারণ মানুষকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এই অস্থিরতার মধ্যে ফেলে রাখার পেছনে দায়ী কারা? মূলত আমাদের সমাজের এক শ্রেণির আলেম-ওলামা এবং মসজিদের ইমামগণই এ জন্য দায়ী। কারণ তারা সর্বসাধারণের মাঝে এই খাদ্যদ্রব্য দানের বিষয়টি প্রচার করলে মানুষ এমন অস্থিরতা, দ্বিধা-সংশয়‌ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খেত না।

✅ দুই. বর্তমানে একদল মানুষকে এই যুক্তি দিতে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুলের যুগে খাদ্যদ্রব্যকে কারেন্সি বা নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যার দলিল হিসেবে তারা, হিজামা কারীকে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা পারিশ্রমিক দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে থাকেন। হ্যাঁ, এ বিষয়টি আমরা অস্বীকার করি না। তৎকালীন সময়ে দিনার-দিরহাম, দানেক, কিরাত নামক বিভিন্ন ক্যাটাগরির মুদ্রার প্রচলন থাকলেও কখনো কখনো খাদ্যদ্রব্য দ্বারাও পারিশ্রমিক দেওয়া হতো।‌ কিন্তু ফিতরার আদায়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত এক সা পরিমাণ যেসব খাদ্যদ্রব্যের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো কোনভাবেই নগদ মূল্যের বিকল্প নয়। কেননা লক্ষ্য করুন, হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্য গুলোর মূল্যমান এক সমান নয়। এক সা যব অথবা গম কি কখনো এক সা কিসমিস অথবা পনিরের সমান হতে পারে? খেজুর আর গম বা জবের বাজার মূল্য কি সমান? কখনোই নয়। আগেও ছিল না। এখনও নেই। এখান থেকে প্রতিমান হয় যে, খেজুর যব, গম, পনির, কিসমিস ইত্যাদি সমমূল্যের না হওয়ার পরেও সবকিছুই ‘এক সা’ পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি নিছক একটি ইবাদত‌। অতএব ভুয়া যুক্তি খাটিয়ে এগুলোকে কারেন্সি বানানোর পাঁয়তারা একদমই অগ্রহণযোগ্য।

✅ তিন. বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক এবারের (২০২৩) ঘোষিত ফিতরার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ নিতান্তই অযৌক্তিক এবং ইসলামি শরিয়তের একটি বিধানকে নিজেদের মতো অপব্যাখ্যা করার শামিল। একই বিধানের ক্ষেত্রে কেউ দিবে মাত্র ১১৫ টাকা আর কেউ দিবে ২৬৪০ টাকা-এমন অদ্ভুত নীতি ইসলাম সম্মত হতে পারে না। বরং সঠিক হল, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফিতরার পরিমাণ এক ও অভিন্ন হওয়া। যেমনটি মানত ভঙ্গের কাফফারা, কসম ভঙ্গের কাফফারা, দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসের কাফফারা, রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির ফিদিয়া, হজের ক্ষেত্রে ফিদিয়া ও দম, রক্তপন
ইত্যাদি ক্ষেত্রে সকলের জন্য ইসলামের বিধান এক ও অভিন্ন। এক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মাঝে কোনো তারতম্য নেই। সুতরাং রোজার ফিতরার ক্ষেত্রেও সর্ব শ্রেণির মুসলিমের বিধান এক হবে-এটাই যৌক্তিক‌। আর বাস্তবে ইসলামে তাই বলা হয়েছে।

✅ চার. সুন্নাহ অনুসরণের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষের জন্যই কল্যাণকর।কীভাবে? আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর জনপ্রতি আড়াই বা তিন কেজি পরিমাণ চাল দেওয়ার বিধান বাস্তবায়িত হলে বাজারে এত বিশাল পরিমাণ চালের যোগান দেওয়ার জন্য দেশে কী পরিমাণ চাষাবাদ করার প্রয়োজন হতো? কী পরিমাণ আবাদি জমির ব্যবহার হতো? কী পরিমাণ শ্রমিক কাজ পেতো? কত মানুষকে এর পেছনে শ্রম ব্যয় করতে‌ হতো? একটু হিসাব করে দেখুন। এর মাধ্যমে মূলত আমাদের কৃষক, শ্রমিক এবং চাষাবাদ, উৎপাদন, পরিবহন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সর্বশ্রেণির ব্যবসায়ী উপকৃত হতো। সমৃদ্ধ হতো দেশের অর্থনীতি এবং আরো বেশি সচল হতো অর্থনীতির চাকা। পক্ষান্তরে টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়ার ফলে কেবলমাত্র জন থেকে জনে অর্থ হাত বদল হয়। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি উৎপাদনমুখী বিরাট সুফল থেকে বঞ্চিত হয়।

✅ পাঁচ. টাকা দ্বারা ফিতরা আদায়ের ফলে ফিতরা গ্রহণকারী ব্যক্তি টাকা হাতে পেয়ে বিড়ি, সিগারেট,‌ মদ-গাজা বা হারাম বস্তু ক্রয়ের সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি নিজে গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের অন্য সদস্যগণ এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পক্ষান্তরে খাদ্যদ্রব্যে এই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সাধারণত খাদ্যদ্রব্য দ্বারা পরিবারের সকলেই উপকৃত হয়। অবশ্যই আল্লাহর প্রত্যেকটি বিধানের মধ্যেই হেকমত রয়েছে এবং সেগুলোতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে যদি তারা তা বুঝতো।

✅ ছয়. ফিতরার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, গরিব-অসহায় মানুষের খাদ্য সংস্থান-যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ গরিব-অসহায় মানুষ যেন ঈদের দিন অভ্যুক্ত না থেকে যায়। মুসলিমদের জাতীয় উৎসবের দিনে তার বাড়িতে যেন কমপক্ষে কিছু খাবার মজুদ থাকে। সেই খাবার খেয়ে হলেও যেন ঈদের মাঠে যেতে পারে। ‌আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন খেজুর খেয়ে তারপরে ঈদের মাঠে গেছেন। অতএব ওই গরিব মানুষটিও যেন ফিতরার মাধ্যমে প্রাপ্ত খাবার খেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর এই সুন্নাহটি পালনের সুযোগ পায়। এটি খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরার অন্যতম একটি উপকারিতা।

✅ সাত. ইসলামের বিধি-বিধানগুলো বৈচিত্র্যময়। এই ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যময়তার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা এবং স্বাদ রয়েছে। তাই‌ দেখা যায়, ইসলাম সম্পদের জাকাতের জন্য অর্থ দেওয়াকে আবশ্যক করেছে। অর্থ ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া জায়েজ নেই। যেন মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী তা খরচ করতে পারে। পক্ষান্তরে রমজান শেষে মানুষের গুনাহ মোচন এবং গরিব-অসহায় মানুষের খাবার হিসেবে খাদ্যদ্রব্য নির্ধারণ করেছে। এটি ইবাদত গত বৈচিত্রের একটি উদাহরণ। সুতরাং জাকাতের ক্ষেত্রে যেমন খাদ্যদ্রব্য বা অন্য কিছু ক্রয় করে দেওয়া জায়েজ নেই তেমনি ফিতরার ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া জায়েজ নেই (বিশেষ প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা)।

✅ আট. এক দুঃখজনক নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম-ওলামাগণ টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়ার ফতোয়া প্রচারের ফলে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা যে ফিতরা দেওয়া সুন্নত (যে বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই) সাধারণ মানুষ সেটাই ভুলতে বসেছে। যার কারণে বহু মানুষ আদৌ জানে না যে, খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া যায়। এবং যারা ফিতরা গ্রহণ করে তারাও অধিকাংশই টাকা ছাড়া অন্য কিছু নিতে নারাজ। এভাবেই আমাদের সমাজে জায়েজের ফতোয়া দিয়ে সুন্নতকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এইসব বিবেক প্রসূত ফতোয়ার মাধ্যমে-যা খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

পরিশেষে বলবো, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রত্যেকটি বিধানে‌ রয়েছে গভীর হেকমত ও প্রজ্ঞা যে সম্পর্কে মানুষ খুব সামান্যই জ্ঞান রাখে।
অতএব মানুষের তৈরি করা নানা যুক্তি মতবাদের পিছনে না ছুটে আমরা আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করি। এতেই ইনশাআল্লাহ আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে অবারিত কল্যাণের অধিকারী হবো।
আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

সুন্নত পালনার্থে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিন টাকা দিয়ে নয়

 প্রশ্ন: যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে টাকা দেওয়া সুন্নত না কি খাদ্যদ্রব্য?

উত্তর: হাদিসে ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের কথাই বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তারা কখনো খাদ্যদ্রব্য ছাড়া দিনার-দিরহাম বা অন্য কিছু দ্বারা ফিতরা প্রদান করেছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

কী কী জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত?

এর উত্তর সহীহ হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যার, ফল কথা হল: খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর কিংবা প্রধান খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া সুন্নত, মূল্য দ্বারা নয়। আর এক জন ব্যক্তিকে এক সা’ ফিতরা দিতে হবে, যার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চার পূর্ণ অঞ্জলি সমান। [ফাতাওয়া মাসায়েল, মাওলানা আব্দুল্লাহেল কাফী, পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩] কেজির ওজনে তা আড়াই কিলোর কম নয়।

▪ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِن تَمْرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ علَى العَبْدِ والحُرِّ، والذَّكَرِ والأُنْثَى، والصَّغِيرِ والكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وأَمَرَ بهَا أنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إلى الصَّلَاةِ

‘‘আল্লাহর রাসুল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক সা কিংবা এক সা যব ফরজ করেছেন মুসলিম দাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার উপর। আর তা লোকদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদিস নম্বর ১৫০৩/ মুসলিম নম্বর ২২৭৫]

উক্ত হাদিসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যেগুলো দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব।
এবার নিম্নে আর একটি হাদিস পাঠ করুন:
আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন,

كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، أوْ صَاعًا مِن تَمْرٍ، أوْ صَاعًا مِن أقِطٍ، أوْ صَاعًا مِن زَبِيبٍ

‘‘আমরা-নবীজীর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ।’’ [বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]

এই হাদিসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য।

উল্লেখ থাকে যে, নবীজীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া রা.এর খেলাফত কালে অনেকে গম দ্বারা ফিতরা দিতেন। [বুখারী হাদিস নম্বর ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১] তাই আমরা যদি সুন্নত অনুসরণ করতে চাই তাহলে আমাদের সমাজের প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্রব্য তথা চাল দ্বারা ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। ফিতরার মুল্য দ্বারা অথবা সে টাকা দিয়ে পোশাক, গোশত, চিনি, তেল, ডাল, মসলা, শেমাই ইত্যাদি কিনে দেওয়া সুন্নত পরিপন্থী।

তবে একান্ত জরুরি অবস্থায় টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়া যেতে পারে বলে, অনেক আলেম মন্তব্য করেছেন। যেমন: রোগীর চিকিৎসার জন্য জন্য এই মুর্হতে টাকা প্রয়োজন। চাল দিলে সেটা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করতে গেলে রোগীর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে…বা এ জাতীয় পরিস্থিতে ফিতরার মূল্য দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কারণ এখানে বিশেষ পরিস্থিতে মুল্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করা হয়েছে। এটা ব্যতিক্রমি পরিস্থিতি।

সুতরাং আমাদের কতর্ব্য, খাদ্যদ্রব্য দেওয়া। কেউ যদি তা নিতে না চায় তাহলে এমন ব্যক্তিকে দেওয়া উচিৎ যে তা গ্রহণ করবে।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের হানাফি সামাজ থেকে খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার সুন্নতটি প্রায় উঠে যাওয়ার কারণে তারা প্রতি বছর টাকা নির্ধারণ করে থাকেন আর গরিবরাও টাকা ছাড়া অন্য কিছু নিতে চায় না। তবে আল হামদুলিল্লাহ অধিকাংশ আহলে হাদিস সমাজে খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার সুন্নতটি এখনো প্রচলিত রয়েছে।

সৌদি আবরেও এখনো ফিতরা হিসেবে চাল দেওয়ার সুন্নতটি চালু আছে। এখানে চ্যারিটেবল সোসাইটিগুলোতে চাল ও টাকা উভয়টি নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে টাকা দ্বারা চাল কিনে গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ পালনের তৌফিক দান করুন‌ আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।

প্রবাসীরা কি তাদের ফিতরা দেশে দিতে পারবে এবং দিতে পারলে কীভাবে দিবে

 উত্তর: প্রবাসীরা যদি প্রবাসে দুস্থ ও অসহায় মানুষ পায় তাহলে সেখানে ফিতরা দিবে। এটাই উত্তম। একজন মানুষ যেখানে বসবাস করে এবং আয়-উপার্জন করে সেখানকার গরিব-অসহায় মানুষরা ফিতরা পাওয়ার বেশি হকদার। কিন্তু যদি মনে হয়, সে দেশের চেয়ে নিজ দেশে বা অন্য কোথাও সঙ্কট ও অভাব-অনটন বেশি তাহলে সেখানে ফিতরা প্রেরণ করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রবাসে যে পরিমাণ ফিতরা দিতে হতো অন্যত্র দিলে সে পরিমাণটা ঠিক রাখা উত্তম। (তবে তা যেন আড়াই বা তিন কেজির কম না হয়)।

◆ উদাহরণ: যে সব বাংলাদেশী মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করে তারা সে দেশে সাধারণত: যে মানের চাল খেয়ে থাকে সে মানের আড়াই বা তিন কেজি পরিমাণ চালের মূল্য বাংলাদেশে প্রেরণ করে সেখানে তার পরিবার অথবা অন্য বিশ্বস্ত কাউকে দায়িত্ব দিবে যেন, উক্ত অর্থ সমপরিমাণ চাল ক্রয় করে এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে বণ্টন করে দেয়। এ ক্ষেত্রে বিদেশের তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম তুলনা মূলক কম হওয়ায় চালের পরিমাণে হয়ত কিছু বেশি হবে। এতে গরিবরা একটু বেশি উপকৃত হবে আশা করা যায়। যদিও দেশের হিসেবে তিন কেজি দিলেও আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য যে, হাদিসে যেহেতু খাদ্য দ্রব্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাই সুন্নত অনুসরণ করতে চাইলে খাদ্য দ্রব্য (নিজ এলাকার প্রধান খাদ্যদ্রব্য যেমন: চাল) দিতে হবে। একান্ত অপরিহার্য পরিস্থিতি না হলে মূল্য বা টাকা দ্বারা ফিতরা দেয়া সুন্নত পরিপন্থী।

✪ সৌদি আরবের স্থায়ীয় ফতোয়া বোর্ড বলেছে:

“مقدار زكاة الفطر صاع من تمر أو شعير أو زبيب أو أقط أو طعام..، وتعطى فقراء المسلمين في بلد مخرجها، ويجوز نقلها إلى فقراء بلد أخرى أهلها أشد حاجة…، ‌وليس ‌قدرها ‌تابعا ‌للتضخم ‌المالي، بل حدها
الشرع بصاع” فتاوى اللجنة الدائمة/ م1″ (9/ 369).

“জাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হল, এক সা খেজুর, যব, কিশমিশ, পনির অথবা খাদ্য। ফিতরা দাতার দেশের দরিদ্রদেরকে তা দিতে হবে। তবে যে দেশে অভাব আরও বেশি প্রকট সে দেশের অভাবী মানুষের উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তরিত করা জায়েজ আছে।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা (সৌদি ফতোয়া বোর্ড) ৯/৩৬৯]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আমাদের করণীয়

 প্রশ্ন: আমাদের সমাজে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মাকে অনেক নিয়ম পালন করতে বলা হয় এবং অনেক কিছুতে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় গর্ভস্থ সন্তানের নাকি ক্ষতি হয়। এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে কতটুকু সঠিক? এবং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কালে আমাদের কী করা উচিত?

উত্তর: নি:সন্দেহে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগত ও মহাবিশ্বের মধ্যে দুটি বিশাল প্রাকৃতিক পরিবর্তন-যা মহান আল্লাহর অসীম শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে। বিজ্ঞান বলে, চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar eclipse) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse) বা খুসুফ।

🌀 সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়:

এ সময় সকল মুসলিমদের জন্য করণীয় হল, সালাতুল কুসুফ/খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণ/সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করা, আল্লাহর কাছে নিজেদের পাপাচারের জন্য ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাকবির পাঠ করা, আল্লাহর নিকট দুআ করা, দান-সদকা করা এবং এত বড় নিদর্শন দেখে মহান আল্লাহর প্রতি মনে ভয়-ভীতি জাগ্রত করা। এগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য-এমনকি একজন গর্ভবতী নারীর জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী মা জননী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا، وَادْعُوا اللهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا،
”সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অত:এব যখন তোমরা সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর বলো, আল্লাহর নিকট দু’আ করো, সালাত আদায় করো এবং দান-সদকা করো।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: [1964], অধ্যায়: ১১/ সালাতুল কুসূফ (كتاب الكسوف) ইসলামিক ফাউন্ডেশন]

🌀 সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার:

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে (বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের বিষয়ে) অনেক কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমন:
– এ সময় কোন কিছু খেতে নেই। বলা হয়, সূর্যগ্রহণের ১২ ঘণ্টা এবং চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে থেকে খাবার গ্রহণ করা বারণ!
– এ সময় তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হবে!
– এ সময় যৌন সংসর্গ করা যাবে না!
– গর্ভবতী মায়েরা এ সময় যা করে, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে!
– সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের কাত হয়ে শুতে বারণ নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়!
– সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গপ্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে!
– প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের বিকলঙ্গ হবে!
– চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় যদি গর্ভবতী নারী কিছু কাটাকাটি করেন, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয় এ গুলো সবই কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস।
– এ সময় কোনো নারীকে ঘুম বা পানাহার থেকে বারণ করাও অন্যায়।
এছাড়া গর্ভবতী নারীর করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে সমাজে বহু কিছু প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সব কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণা।আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন। ইসলামী শরিয়াহ ও বাস্তবতার সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। জাহেলি যুগেও এ ধরণের কিছু ধারণা প্রচলিত ছিল। সেকালে মানুষ ধারণা করত যে, চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ হলে অচিরেই দুর্যোগ বা দুর্ভিক্ষ হবে। চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীতে কোনো মহাপুরুষের জন্ম বা মৃত্যুর বার্তাও বহন করে বলে তারা মনে করত। বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু, মহান সংস্কারক, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলোকে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মুগিরা ইবনে শুবা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হলে আমরা বলাবলি করছিলাম যে, নবী পুত্রের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। এসব কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনের দুটি। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।” [সহিহ বুখারি: ১০৪৩] সুতরাং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের মাঝে যে সকল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে উম্মতকে যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সেগুলো পালনে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
والله أعلم بالصواب
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

যাকাত বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর

 ◆ ১. প্রশ্ন: আমার যদি ১০ ভরি স্বর্ণ থাকে তাহলে আমি কি ৭.৫ ভরি (নিসাব) বাদ দিয়ে বাকি ২.৫ ভরির জাকাত দিবো নাকি পুরো ১০ ভরির জাকাত দিবো?

উত্তর: পুরো ১০ ভরি স্বর্ণের জাকাত দিবেন। কেননা কারও কাছে জাকাতের নিসাব পরিমাণ অর্থ এক বছর জমা থাকলে পুরো নিসাব থেকে শত করা আড়াই (২.৫%) টাকা হারে জাকাত দিতে হয়।

◆ ২. প্রশ্ন: আমি একজন আমেরিকা প্রবাসী মহিলা। আমার ৩টি বাসা-বাড়ি আছে। একটি ইসলামি ব্যাংক থেকে লোন করে কেনা। লোনের টাকা পরিশোধ করার পর যে টাকা থাকে সেটা আমি নিজের খরচ চালাই। সেটা থেকে কোন টাকা সেভ হয় না। বাকি দুটো বাসার কোন লোন নেই। আমি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছি। পুরো টাকা পরিশোধ করা। আমি কোন চাকরি করি না। ফিতনা সম্ভাবনার কারণে ভবিষ্যতে চাকরিও করার কোন সম্ভাবনা নাই। এই বাসা ভাড়া আয় আমার আয়। বাসা একটি সম্পদ। এর বর্তমান মূল্য ধরে কি আমার জাকাত দিতে হবে? এবং ভাড়া থেকে খরচ করে যে টাকা এক বছর আমার কাছে থাকবে সে টাকার কি জাকাত দিতে হবে?
উত্তর: বসত বাড়ি বা ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কৃত বাড়িতে জাকাত নেই। তবে বাড়ি ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ যদি জাকাতের নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে তাতে জাকাত দিতে হবে।

◆ ৩. প্রশ্ন: ছয় লাখ টাকায় জাকাত কত আসবে?
উত্তর: 6,00000%2.5=15,000 TK

◆ ৪. প্রশ্ন: ৭ ভরি স্বর্ণের জাকাত কতটুকু দিতে হবে?
উত্তর: কারো নিকট সর্বনিম্ন ৭.৫০ (সাড়ে সাত) ভরি বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ এক বছর জমা থাকলে বছরান্তে তাতে ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০%) জাকাত দিতে হবে। এর কম থাকলে তাতে জাকাত ফরজ নয়। সুতরাং ৭ ভরি স্বর্ণে জাকাত ফরজ নয়। তবে যদি অন্যান্য জমা কৃত নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য ইত্যাদি সব মিলিয়ে ৭.৫০ স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে তাতে জাকাত আবশ্যক হবে।

◆ ৫. প্রশ্ন: আমার কোন টাকা নেই কিন্তু সাড়ে চার ভরি সোনার গয়না আছে। আমাকে কি জাকাত দিতে হবে?
উত্তর: নিসাব তথা ৭.৫ (৮৫ গ্রাম)-এর কম স্বর্ণ থাকলে তাতে জাকাত ফরজ নয়। সুতরাং ৪.৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কারে‌ জাকাত নেই‌।
উল্লেখ্য যে, ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত স্বর্ণালঙ্কারে জাকাত ফরজ কি না সে বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও সতর্কতার স্বার্থে জাকাত দেওয়া অধিক নিরাপদ।

◆ ৬. প্রশ্ন: কারো কাছে কেবল ৫ ভরি স্বর্ণ থাকলে কি তাতে জাকাত দিতে হবে?
উত্তর: স্বর্ণ ৭.৫ ভরির কম থাকলে তাতে জাকাত ফরজ হয় না। সুতরাং কেবল ৫ ভরি স্বর্ণে জাকাত নেই।

◆ ৭. প্রশ্ন: বেতনের উপর জাকাতের হিসাবটা যদি একটু বলতেন তাহলে খুব উপকৃত হতাম।
উত্তর: বছর শেষে হিসাব করবেন যে, জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়েছে কিনা। (বেতন থেকে প্রাপ্ত অর্থ হোক অথবা অন্য কোন উৎস থেকে প্রাপ্ত হোক) যদি এক বছর অতিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে জাকাত দিতে হবে। বেতনের যে টাকাটার ওপরে এক বছর অতিবাহিত হয়নি তার উপরে জাকাত আবশ্যক নয়। তবে ইচ্ছে করলে যেই সম্পদের উপরে এক বছর অতিবাহিত হয়েছে তার সাথে যে সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়নি সেটাকে যুক্ত করে জাকাত দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে যেটার উপরে এক বছর অতিবাহিত হয়নি সেটার অগ্রিম জাকাত হিসেবে গণ্য হবে।

◆ ৮. প্রশ্ন: আমার হাতে অল্প কিছু জাকাতের টাকা আছে। তা একজন আত্মীয়কে দিতে চাচ্ছি। কিন্তু জাকাতের টাকা বলে দিলে তাদের মন খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে না বলে দেওয়া যাবে কি?
উত্তর: যাকে দিবেন সে যদি জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে থাকে তাহলে তাকে বলে দেওয়া জরুরি নয়। কিন্তু যদি তার অভ্যাস বা মানসিকতা থেকে জানা যায় যে, সে জাকাত গ্রহণ করে না তাহলে বলে দেওয়া উত্তম।

◆ ৯. প্রশ্ন: স্বামী যদি ফসলের জাকাত না দিতে চায় সে সে ক্ষেত্রে কি স্ত্রী স্বামীকে না জানায়ে ফসলের জাকাত দিতে পারবে?
উত্তর: যেহেতু ফসলের মালিক হচ্ছে স্বামী সেহেতু জাকাত দেওয়ার দায়িত্ব তার উপরে। অতএব স্ত্রী জন্য স্বামীর অজান্তে তার ফসলের জাকাত বের করা ঠিক হবে না। কিন্তু যদি স্বামীর কথাবার্তা ও আচরণ থেকে অনুভব করা যায় যে, সে আসলে অলসতা বশত: জাকাত বের করে না এবং স্ত্রী যদি তার পক্ষ থেকে জাকাত বের করে দেয় তাহলে সে মন খারাপ করবে না তাহলে স্ত্রী তা করতে পারে।

◆ ১০. প্রশ্ন: এক প্রতিবেশী আগে গরিব ছিল। জাকাতের টাকা খেতো। এখন তার দুই ছেলে ইনকাম করে। আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। তাকে কিছু দিয়ে সাহায্য করলে সেটা কি দান বা সদকার অন্তর্ভুক্ত হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তাকে জাকাত না দিয়ে সাধারণভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সদকা করবেন।‌ এতে সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদের রাতের ফজিলত এবং এই রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার বিধান

 প্রশ্ন: ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে ইসলামে কী দিকনির্দেশনা রয়েছে বা এ রাতের ফজিলত কী?

উত্তর: ঈদ মানেই প্রাণে প্রাণে আনন্দের হিল্লোল। ঈদ মানেই ঘরে ঘরে খুশির আমেজ। ঈদের আগমনে মুমিন হৃদয়গুলো আনন্দে উদ্বেলিত হয়। ঈমানদারগণ আল্লাহর প্রতি প্রফুল্ল চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাকবির ধ্বনির মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে ঈদের রাত থেকেই শুরু হয় আগামীকাল একটি সুন্দর সকালে ঈদকে বরণ করার প্রস্তুতি। কিন্তু ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে কোন হাদিস বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং এই রাতে বিশেষভাবে কিয়ামুল লাইল করা সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসকে অনেক আলেম বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলেছেন। অনুরূপভাবে দুই ঈদের রাতে দুআ কবুল হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদিসটিও বানোয়াট।

তাই এ রাতে তাকবির পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।

শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, “দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”

◍ ঈদের রাতের ফজিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:

ঈদের রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে যেসব হাদিস পেশ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করবে তার হৃদয় মারা যাবে না যেদিন সব হৃদয় মারা যাবে।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮২]

এ হাদিসটি সহিহ নয়।

● নওবী রহ. এ হাদিসটিকে মারফু ও মাওকুফ উভয় সূত্রে জইফ বলেছেন।

● হাফেজ ইরাকি, ইবনে হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিসগণও এটিকে জইফ বলেছেন।
وقال الحافظ ابن حجر : هذا حديث غريب مضطرب الإِسناد . انظر : “الفتوحات الربانية” (4/235) .
● আলবানি এটিকে মাউযু (বানোয়াট) হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। [জইফ ইবনে মাজাহ]

◈ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেন,
” الأَحَادِيثُ الَّتِي تُذْكَرُ فِي لَيْلَةِ الْعِيدَيْنِ كَذِبٌ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم” انتهى .
“দু ঈদের রাতের ব্যাপারে যে সব হাদিস পেশ করা সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার।”
মোটকথা, দু ঈদে সারা রাত জেগে বিশেষ কোনও সালাত, জিকির-আজকার, মিলাদ, করব জিয়ারত ইত্যাদি করার ব্যাপার শরিয়তে বিশুদ্ধ সূত্রে কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে অন্যান্য সময় যেমন ইবাদত-বন্দেগি, দুআ-জিকির, কবর জিয়ারত, কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় ইত্যাদি করা জায়েজ তেমনি এ দু রাতেও সেগুলো জায়েজ। কিন্তু তা এ রাতের বিশেষ ফজিলত মনে করে করা শরিয়ত সম্মত নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদুল ফিতরের রাতের ফজিলত এবং এ রাতে করণীয়

 প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরের রাতে করণীয় এবং এ রাত জেগে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করার ফজিলত কি?

উত্তর: ঈদের চাঁদ (শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ) উদিত হলে রমজানের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ রাত থেকে আর তারাববির সালাত নেই। সুতরাং যথারীতি রমজানের আগে যে সব সালাত ছিল সেগুলো আদায় করতে হবে। ইশার সালাত আদায় করা হবে সুন্নত ও বিতর সহ। এটাই হল, ঈদের রাত। পরের দিন প্রত্যুষে মুসলিমগণ (যদি ইতোপূর্বে ফিতরা বণ্টন না করা হয়ে থাকে তাহলে) গরিব-দুখীদের মাঝে ফিতরা বণ্টন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে গোসল করে এবং আতর-সুগন্ধি মেখে ঈদের মাঠে যাবে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে।

◍ ঈদের রাতে করণীয়: তাকবীর পাঠ

আল্লাহ তাআলা রমজানের বিধিবিধান বর্ণনা করার পর বলেন,
لِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“যাতে তোমরা (রমজান মাসের) সংখ্যা পূরণ কর এবং তোমাদেরকে সুপথ দেখানোর দরুন তাকবীর পাঠ (আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা) করো এবং কৃতজ্ঞতা আদায় কর।” [সূরা বাকারা: ১২৫] সুতরাং এ রাতের করণীয় হল, তাকবির পাঠ করা। পুরুষরা সন্ধ্যার পর থেকে বাড়িতে, মসজিদে, রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, বাজারে যে যেখানে থাকবে সেখানে উঁচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করবে। আর মহিলারা নিচু স্বরে তাকবির পাঠ করবে।

◍ তাকবীর হল: “আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লালা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার ওয়ালিল্লা-হিল হামদ।” (প্রথমে আল্লাহু আকবার তিন বার বলাও হাদিস সম্মত) শেষ রমজানের সূর্য ডোবার পর তথা ঈদের রাত থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামাজ শুরু করা পর্যন্ত এ তাকবির পাঠ অব্যাহত থাকবে।

◍ ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা:

এ রাতে তাকবির পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। এ ব্যাপারে কোনও সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয় নি। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।

শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, “দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”

◍ ঈদের রাতের ফজিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:

ঈদের রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে যেসব হাদিস পেশ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করবে তার হৃদয় মারা যাবে না যেদিন সব হৃদয় মারা যাবে।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮২]

এ হাদিসটি সহিহ নয়।

● এ হাদিসটিকে নওবী এ হাদিসটিকে মারফু ও মাওকুফ উভয় সূত্রে জইফ বলেছেন।
● হাফেজ ইরাকি, ইবনে হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিসগণও এটিকে জইফ বলেছেন।
وقال الحافظ ابن حجر : هذا حديث غريب مضطرب الإِسناد . انظر : “الفتوحات الربانية” (4/235) .
● আলবানি এটিকে মাউযু (বানোয়াট) হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। [জইফ ইবনে মাজাহ]

◈ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহঃ বলেন,
” الأَحَادِيثُ الَّتِي تُذْكَرُ فِي لَيْلَةِ الْعِيدَيْنِ كَذِبٌ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم” انتهى .
“দু ঈদের রাতের ব্যাপারে যে সব হাদিস পেশ করা সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার।”

মোটকথা, দু ঈদে সারা রাত জেগে বিশেষ কোনও সালাত, জিকির-আজকার, মিলাদ, কবর জিয়ারত ইত্যাদি করার ব্যাপার শরিয়তে বিশুদ্ধ সূত্রে কোনও নির্দেশনা আসে নি। তবে অন্যান্য সময় যেমন ইবাদত-বন্দেগি, দুআ-জিকির, কবর জিয়ারত, কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় ইত্যাদি করা জায়েজ তেমনি এ দু রাতেও সেগুলো জায়েজ। কিন্তু তা এ রাতের বিশেষ ফজিলত মনে করে করা শরিয়ত সম্মত নয়।
মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে তাকবীর তথা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের বছরের অন্যতম জাতীয় ঈদ উৎসব পালনের তওফিক দান করুন এবং ক্ষেত্রে সব ধরণের বিদআত, পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদের সালাত কোথায় আদায় করা সুন্নত মসজিদে নাকি ঈদগাহে এবং ঈদের পূর্বে দু রাকআত সালাত প্রসঙ্গ

 প্রশ্ন: ঈদের সালাত কোথায় পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত? মসজিদে না কি ঈদগাহে? আর হাদিসে এসেছে, ঈদের সালাতের আগে ও পরে আর কোন সালাত নেই। কিন্তু যদি মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হয় তাহলে কি বসার আগে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া যাবে?

উত্তর: ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ মরুভূমির খোলা প্রান্তরে ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন বলে একাধিক হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন:
◈ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করতেন। (সহিহ বুখারি)
◈ অন্য হাদিসে এসেছে, (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْدُو إِلَى الْمُصَلَّى وَالْعَنَزَةُ بَيْنَ يَدَيْهِ تُحْمَلُ وَتُنْصَبُ بِالْمُصَلَّى بَيْنَ يَدَيْهِ فَيصَلي إِلَيْهَا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঈদগাহে চলে যেতেন। যাবার সময় তাঁর সাথে একটি বর্শা নিয়ে যাওয়া হতো। এ বর্শা সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন।” (সহিহ বুখারি) এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নত। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী ছেড়ে বাইরে খোলা প্রান্তরে ঈদের সালাত পড়েছেন-যদিও এ মসজিদে সালাত আদায় করা কাবা শরিফ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাজারগুণ সওয়াব বেশি।
এখান থেকে ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়ার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।

◈ খুলাফায়ে রাশেদিন তথা আবু বকর রা., উমর রা., উসমান রা, এবং আলী রা. প্রমুখগণও এমনটি করতেন।
◈ শুধু তাই নয়, যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে অদ্যাবধি এই রীতি চালু আছে। সর্বযুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত আল হামদুলিল্লাহ। ইবনে কুদামা বলেন,
أنَّه إجماعُ الناس؛ يخرجون إلى المصلَّى مع شرفِ مسجدِه
“মসজিদ মর্যাদাপূর্ণ স্থান হওয়ার পরও ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত পড়ার ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা রয়েছে।” (আল মুগনি ২/২৭৬)

❑ ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়ার উপকারিতা কি?

◍ ১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ এবং খুলফায়ের রাশেদার নীতির অনুসরণ।
◍ ২. ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে ইসলামের একটি বড় নিদর্শন, সৌন্দর্য এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রকাশিত হয়। কারণ মুসলিমগণ সুন্দর জামা-কাপড় পরে, আতর-সুগন্ধি মেখে তাকবীর ধ্বনি দিতে দিতে ঈদের মাঠে গমন করে-যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক দৃশ্য-যা দেখেও অমুসলিমরা ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়।
◍ ৩. তাছাড়া ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়লে সাধারণত কয়েক মসজিদ বা কয়েক গ্রাম ও এলাকার মুসল্লিগণ এক জায়গায় জমায়েত হওয়ার সুযোগ পায়। এতে একটি আনন্দ মুখর ঈমানি পরিবেশে বিভিন্ন এলাকার মুসলিমদের আন্তরিক দেখা-সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় হয়। এর ফলে তাদের মাঝে সম্প্রতি ও ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বোধ ও একতাবদ্ধ থাকার মনোভাব জাগ্রত হয় -যা মুসলিমদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।

◍ ৪. হাদিসে মহিলাদেরকেও ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-এমনকি ঋতুমতী মহিলাদেরকেও। অবশ্য ঋতুমতী মহিলাদের সালাত না থাকার কারণে তারা মূল সালাতের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করলেও তারা মুসলিমদের দুআ ও কল্যাণকর কাজে শরিক হওয়ার সুযোগ পাবে। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

প্রখ্যাত সাহাবি উম্মে আতিয়া (নুসাইবা বিনতে কা’ব রা.) বলেন,
أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ، الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيدَيْنِ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ، فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ، وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلاَّهُنَّ‏.‏ قَالَتِ امْرَأَةٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ‏.‏ قَالَ ‏ “‏ لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا ‏”‏‏.
ঈদের দিনে ঋতুমতী এবং পর্দানশীন মহিলাদের বের করে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারাও মুসলিমদের জামাআত ও দুআয় শরিক হতে পারে। অবশ্য ঋতুমতী মহিলারা সালাত এর স্থান থেকে দূরে থাকবে। এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের যদি কারও ওড়না না থাকে (তাহলে সে কী করবে?) তিনি বললেন, তাঁর সাথীর উচিত তাকে ওড়না পরার ব্যবস্থা করে দেয়া (অর্থাৎ অতিরিক্ত ওড়না থাকলে তাকে ধার দিয়ে হলেও ওড়না পারানোর ব্যবস্থা করবে।) [সহীহ বুখারি, অধ্যায় ৮/ সালাত]

এ সুন্নত আরব বিশ্ব সহ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় অনুসরণ করা হলেও দুর্ভাগ্য জনক যে, অধিকাংশ এলাকায় মহিলাগণ মুসলিমদের এ জাতীয় উৎসব এবং ইসলামের এ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কারণ আমাদের সমাজে মসজিদগুলোতে মহিলাদের সালাতের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই। আর যদি থাকেও সেখানে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ঋতুমতী মহিলারা দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে না।
সুতরাং ঈদের মাঠে সালাত আদায় করা হলে সর্বস্তরে মহিলাদেরকে তাতে অংশ গ্রহণ সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

❑ ঈদের সালাতের পূর্বে কোনও সালাত নেই:

ঈদের সালাতে পূর্বে কোন সালাত পড়ার বৈধতা হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয় যখন তা ঈদের মাঠে পড়া হবে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করতেন এবং সর্বপ্রথম যে জিনিসটি দ্বারা শুরু করতেন তা হল, (ঈদের) সালাত।” (সহিহ বুখারি) এখান থেকে বুঝা গেল, ঈদের মাঠে সর্বপ্রথম করণীয় হল, ঈদের সালাত আদায়। এর আগে কোনও সালাতের কথা হাদিসে আসে নি।

❑ মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হলে দু রাকআত দুখুলুল মসিজদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ার বৈধতা:

ঈদগাহ না থাকলে বা বাইরে ঈদের সালাত পড়ার পরিবেশ না থাকলে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে ঈদের সালাত পড়া জায়েজ আছে। আর যেহেতু একাধিক হাদিসে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে দু রাকআত সালাত (তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ) আদায় ব্যতিরেকে বসতে নিষেধ করা হয়েছে তাই ঈদের সালাত মসজিদে পড়লে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া শরিয়ত সম্মত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
“ যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু রাকআত সালাত আদায়ের পূর্বে বসবে না।” [সহীহ বুখারি] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।

ঈদের শুভেচ্ছায় ব্যবহৃত বাক্য এবং ঈদ মোবারক বলার বিধান ও সংশয় নিরসন

 উত্তর: মুসলিমদের জাতীয় জীবনে অনাবিল আনন্দের বার্তাবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল ঈদ। ঈদ আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যম। মানব জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন ভাবে পথ চলার অনুপ্রেরণা। দূরকে কাছে করার এবং সম্পর্কগুলোতে নতুনত্ব দেয়ারে এক চমৎকার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ছোট একটি শুভেচ্ছা বার্তা, একটি বাক্য বা মেসেজই বিরাট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ জন্য কোন বাক্যটি ব্যবহার করা উচিৎ আর কোনটি উচিৎ নয়-এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মাঝে একটা দ্বিধা বা সংশয় কাজ করে। তাই বিষয়টি পরিষ্কার উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি তুলে ধরা হল:

❒ ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং শরিয়তে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঈদ উৎসব উপলক্ষে মুসলিমদের একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে নির্দেশনাা মূলক কোন (মারফু) হাদিস আসে নি। বরং সাহাবি ও তাবেঈ প্রমুখ সালাফ (পূর্বসূরীদের) থেকে সহিহ সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঈদের দিন একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলে তারা বলতেন: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (সৎকর্মগুলো) কবুল করুন। যেমন:
حديث محمد بن زياد ، قال : كنت مع أبي أمامة الباهلي وغيره من أصحاب النبي صلى الله عليه وآله وسلم ، فكانوا إذا رجعوا يقول بعضهم لبعض : ( تقبل الله منا ومنكم ) .
মুহাম্মদ বিন যিয়াদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু উমামা আল বাহেলী রা. এবং অন্যান্য সাহাবিদের সাথে ছিলাম। তারা ঈদ থেকে ফিরে এসে একে অপরকে বলতেন, “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।” [ইবনুত তুরকুমানী হাদিসটি ‘আল জাওহারাতুন নাকী হাশিয়াতুল বায়হাকী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমদ বলেন, : إسناده جيد এর সনদ ভালো।

আরও বর্ণিত হয়েছে:
أخرج الأصبهاني في الترغيب والترهيب ( 1/251) عن صفوان بن عمرو السكسكي قال : سمعت عبد الله بن بُسر وعبد الرحمن بن عائذ وجبير بن نفير وخالد بن معدان ، يقال لهم في أيام الأعياد : ( تقبل الله منا ومنكم ) ، ويقولون ذلك لغيرهم . وهذا سند لابأس به .
ইসমাইল বিন মুহাম্মদ ইস্পাহানী (মৃত্যু: ৫৩৫) তার বিখ্যাত ‘তারগিব ওয়াত তারহিব’ গ্রন্থে (১/২৫১) সাফওয়ান বিন আমর আস সিকসিকী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর, আব্দুর রাহমান বিন আয়িয, জুবাইর বিন নুফাইর এবং খালিদ বিন মা’দানকে বলতে শুনেছি, তাদেরকে ঈদের দিন বলা হত: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”। আর তারাও অন্যদেরকে তা বলতেন।” এ সনদেও কোন সমস্যা নেই।

সুতরাং ঈদের দিন একে অপরকে এভাবে দুআ ও শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে তা শরিয়তের আবশ্য পালনীয় ও ইবাদতের কোন বিষয় নয়। এটি সওয়াব ও ইবাদতের বিষয় হলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যেতেন। তখন তা পালন করা উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াত এবং হাদিসে ব্যবহৃত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দ ব্যবহারে আপত্তি আসতো। যেমন: মুসলিমদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম সালামের গুরুত্ব এবং সালামে ব্যবহৃত বাক্যাবালী সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সে কারণে সালাম দেয়া যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সওয়াবের কাজ তেমনি সালামের জন্য হাদিসের বাক্য বাদ দিয়ে নতুন কোন বাক্য প্রবর্তন করা জায়েজ নয়।

মোটকথা, ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ হলেও এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা বা বিশেষ কোন বাক্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আসেনি। তবে কেউ যদি সালাফদের অনুসরণে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে তাহলে নি:সন্দেহে ভালো।

জ্ঞাতব্য, এ দুআটি কেবল ঈদের সাথেই সম্পৃক্ত নয় বরং হজ্জ, উমরা ইত্যাদি যে কোন নেক আমল করার পর তা বলা জায়েজ।

❒ ‘ঈদ মোবারক’ বা ‘ঈদের শুভেচ্ছা/কনগ্রাচুলেশন’ ইত্যাদি বলা কি বিদআত বা গুনাহের?

আল্লামা ‍মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং এর জন্য কি বিশেষ কোন বাক্য আছে?
তিনি উত্তরে বলেন,
التهنئة بالعيد جائزة ، وليس لها تهنئة مخصوصة ، بل ما اعتاده الناس فهو جائز ما لم يكن إثماً
“ঈদের শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে এর জন্য বিশেষ কোন শুভেচ্ছা বাক্য নেই। বরং মানুষ যে সব বাক্য বলে অভ্যস্ত সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ যদি তাতে গুনাহ না থাকে।”

তিনি আরও বলেন,

“সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে, ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে তারা বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ কিন্তু শরিয়তে এ বিষয়ে বিশেষ কোনও বাক্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। অতএব লোকসমাজে যে সকল বাক্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে সেগুলো যদি শরিয়তে নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ। কেননা শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি মানুষের রীতি-নীতির সাথে সম্পৃক্ত। এটা শরিয়তের কোন বিষয় নয়। বরং তা রীতি-নীতি ও আভ্যাসগত বিষয়ের অন্তর্গত যা মানুষ নিজেদের মধ্যে প্রচলন করে নিয়েছে।
সুতরাং মানুষ যদি ‘তাকাব্বালাল্লাহ’ অথবা ‘দুআ করি আল্লাহ তোমার ঈদকে বরকত মণ্ডিত করুন’ বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়-যেগুলো বললে পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি পায় এবং নিজেদের মাঝে দূরত্ব দূর হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ এগুলো সাধারণ রীতি-নীতির বিষয়।” [শাইখের লেকচার থেকে অনুদিত। উৎস: ইউটিউব চ্যানেল আল ওয়াহদাহ আল ইসলামিয়া আল ঊলা] এছাড়াও আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. সহ বড় আলেমগণ ঈদ মোবারক (ঈদ বরকতময় হোক) বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কোন আপত্তি করেনি।

পরিশেষে বলব, ঈদের শুভেচ্ছা ও দুআ সম্বলিত বাক্য ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আামদেরও আপনাদের সৎকর্মগুলো কবুল করুন) ব্যবহার করা নি:সন্দেহে উত্তম। কিন্তু ‘ঈদ মোবারক’ (বরকতময় ঈদ), ‘ঈদের শুভেচ্ছা’, ‘কনগ্রাচুলেশন’, বা এ জাতীয় শব্দ/বাক্য ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই-যতক্ষণ না তাতে শরিয়তপরিন্থী বা খারাপ অর্থবোধক কিছু থাকে। এ সব বাক্য ব্যবহার করাকে বিদআত, শরিয়ত বিরোধী..গুনাহের বিষয় ইত্যাদি বলা হল দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ির শামিল ও অজ্ঞতার প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং বাড়াবাড়ি থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদের সালাতের আগে বা পরে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বিধান

 প্রশ্ন: “ঈদ না আসতেই ঈদের শুভেচ্ছা জানানো সালাফদের নীতি নয়।” অনেকে এরূপ করা বিদআত বলেছেন। কথাটির সত্যতা কতটুকু?

উত্তর: ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কোন সুন্নাহ বা হাদিস পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে‌ যে, তারা ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে আসার সময় একে অপরকে বলতেন,
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ
“তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয় মিনকুম।”
অর্থ: ”আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের (নেক আমলগুলো) কবুল করুন।”
, قال محمد بن زياد : كنت مع أبي أمامة الباهلي وغيره من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم ، فكانوا إذا رجعوا من العيد يقول بعضهم لبعض : تقبل الله منا ومنك ، وقال أحمد : إسناد حديث أبي أمامة إسناد جيد ” انتهى من ” المغني ” (2/130) .
এটি মূলত একটি দোয়া। এখানে দোয়া করা হয় যে, আল্লাহ যেন আমাদের নেক কাজগুলো কবুল করেন। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনও মূলত এক ধরনের দোয়া ও কল্যাণ কামনা। তাই ঈদের পরেই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা উত্তম। কিন্তু এ বিষয়টি মূলত মানুষের রীতিনীতি এবং সামাজিকতা হিসেবে পরিগণিত। তাই যদি ঈদের আগে থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের প্রচলন থাকে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আনন্দ ও ভালোবাসা প্রকাশ। এটি ইবাদতের বিষয় নয়।
অতএব ঈদের সালাতের আগে বা পরে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন বলেন,
أن المعايدة والتهنئة قبل العيد لا بأس بها
“ঈদের আগে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ে কোন দোষ নেই।”
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate