Wednesday, August 6, 2025

রাসূল বলেন তুমি তোমার হৃদয়ের কাছ থেকে ফাতওয়া গ্রহণ করো যদিও মুফতিরা তোমাকে ফাতওয়া দিয়ে থাকে

 প্রশ্ন: রাসূল ﷺ বলেন: “তুমি তোমার হৃদয়ের কাছ থেকে ফাতওয়া গ্রহণ করো, যদিও মুফতিরা তোমাকে ফাতওয়া দিয়ে থাকে।”(মুসনাদে আহমেদ হা/১৭৫৩৮) এই হাদিসটির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর:
প্রথমত: প্রশ্ন উল্লেখিত হাদিসটি ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) সংকলন করেছেন।বর্ননাটি হচ্ছে সাহাবী ওয়াবেস্বাহ ইবনে মা‘বাদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।’’(মুসনাদে আহমেদ হা/১৭৫৩৮; ১৭৫৪০; ১৭৫৪৫; সুনানে দারেমী হা/২৫৩৩)
.
এটি ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ)-এর সংকলিত চল্লিশ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত একটি মহামূল্যবান হাদীস। ইমাম নববী, ইমাম মুনযিরি এবং ইমাম শাওকানী হাদিসটিকে সহীহ (বা হাসান)’ হাদীস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ও সহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩৪) গ্রন্থে এটিকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সহীহ (বা হাসান) রূপে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হাদীসটি ওয়াবেস্বাহ ইবনে মা‘বাদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর বর্ণিত অনুরূপ আরেকটি হাদীসের মতোই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। হাদীসটি হলো: নাওওয়াস ইবনু সাম’আন আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি জবাব দিলেন, পূণ্য হলো উন্নত চরিত্র। আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ করো।”(সহীহ মুসলিম হা/৬৪১০)
.
আবূ সা‘লাবাহ খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সৎকর্ম হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খট্‌কা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।’’(মুসনাদে আহমেদ খণ্ড: ২৯; পৃষ্ঠা: ২৭৮-২৭৯; শায়খ শু’আইব আল-আরনা’উত (রাহিমাহুল্লাহ) সহীহ বলেছেন; ইমাম মুনযিরি বলেছেন: এর সনদ উত্তম (জায়িদ)। আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব (৩/২৩) হাফিজ ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) জামি’আল-উলুম ওয়াল-হিকাম; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫১ এ অনুরূপ কিছু বলেছেন, যেমনটি ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহীহ আত-তারগীব; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫১ সহীহ বলেছেন)
.
দ্বিতীয়ত: অনেকেই এই হাদিসটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। তারা নিজেদের ইচ্ছা, প্রবৃত্তি বা পছন্দকে মানদণ্ড বানিয়ে কোন কিছু হালাল বা হারাম বলার জন্য এ হাদীসটি ব্যবহার করেন। এমনকি কেউ কেউ নানা রকম অবৈধ কাজ করেও হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন: “তোমার অন্তরের সাথে পরামর্শ করো, দেখো মন কী বলে!” অথচ হাদীসটির প্রকৃত উদ্দেশ্য এটি নয়।মূলত, হাদীসটির তাৎপর্য হলো— এক মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো বিষয়ে সংশয়ে পড়ে এবং জ্ঞানীদের থেকে ফতওয়া নেয়, তখন যদি তার অন্তর সেই হালাল হারামের ফাতওয়ায় অস্বস্তি অনুভব করে, তবে সে যেন নিজ অন্তরের সততা ও তাকওয়ার অনুসরণে তা পরিত্যাগ করে। কারণ পবিত্র হৃদয় অন্যায়ের প্রতি প্রশান্তি পায় না।
.
শাইখ, আল্লামাহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন:
“لا يجوز العمل بمجرد فتوى المفتي إذا لم تطمئن نفسه ، وحاك في صدره من قبوله ، وتردد فيها ؛ لقوله صلى الله عليه وسلم : (استفت نفسك وإن أفتاك الناس وأفتوك) .
فيجب عليه أن يستفتي نفسه أولا ، ولا تخلصه فتوى المفتي من الله إذا كان يعلم أن الأمر في الباطن بخلاف ما أفتاه ، كما لا ينفعه قضاء القاضي له بذلك ، كما قال النبي صلى الله عليه وسلم : (من قضيت له بشيء من حق أخيه فلا يأخذه ، فإنما أقطع له قطعة من نار) .
والمفتي والقاضي في هذا سواء ، ولا يظن المستفتي أن مجرد فتوى الفقيه تبيح له ما سأل عنه إذا كان يعلم أن الأمر بخلافه في الباطن ، سواء تردد أو حاك في صدره ، لعلمه بالحال في الباطن ، أو لشكه فيه ، أو لجهله به ، أو لعلمه جهل المفتي ، أو محاباته في فتواه ، أو عدم تقيده بالكتاب والسنة ، أو لأنه معروف بالفتوى بالحيل والرخص المخالفة للسنة ، وغير ذلك من الأسباب المانعة من الثقة بفتواه ، وسكون النفس إليها”
“আর যদি তুমি কোনো ফতোয়ার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ো এবং তোমার মনে অস্বস্তি অনুভব করো, তবে এর ভিত্তিতে আমল করা তোমার জন্য হালাল হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তুমি তোমার হৃদয়ের কাছ থেকে ফাতওয়া গ্রহণ করো, যদিও মুফতিরা তোমাকে ফাতওয়া দিয়ে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ হা/১৮০০১; সহীহুল জামে হা/৯৪৮) সুতরাং প্রথমেই তোমার উচিত তোমার হৃদয়ের অনুভূতির দিকে খেয়াল করা। কেননা, যদি তুমি নিশ্চিত হও যে কোনো মুফতির কাছ থেকে তুমি যে ফতোয়া পেয়েছো, তা আল্লাহর সামনে তোমার দায়মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না—যদি তুমি জানো যে বাস্তবে যে বিষয়টি ঘটেছে তা ঐ ফতোয়ার বিপরীত—তাহলে সে ফতোয়া কোনো কাজে আসবে না। একইভাবে, কোনো বিচারক যদি তোমার পক্ষে রায় দেয়, সেটাও তোমার কোনো উপকারে আসবে না, যদি তুমি জানো যে, তুমি যে হক দাবি করছো, তা প্রকৃতপক্ষে তোমার ভাইয়ের ন্যায্য অধিকার। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:”যদি আমি কাউকে তার ভাইয়ের কোন হক দিয়ে ফেলি,(বাস্তবে হয়ত এতে তার কোন অধিকারই নেই) তবে সে যেন তা গ্রহণ না করে; কেননা,এতে যেন আমি তাকে জাহান্নামের এক খণ্ড আগুন প্রদান করলাম।”(সহিহ বুখারী হা/৭১৬৯; সহিহ মুসলিম হা/৪৩৬৫) এই দৃষ্টিকোণ থেকে মুফতি ও বিচারক উভয়েই সমান। আর কোনো প্রশ্নকারী ব্যক্তি যেন এই ভুল ধারণা না করে বসে যে, একজন আলেম ফতোয়া দিয়েছেন বলেই তার জন্য সেটাই হালাল হয়ে গেছে,যখন তিনি জানেন যে বাস্তবে তা সঠিক ফতোয়া থেকে ভিন্ন। সে হয়তো সংশয়বোধ করেছিল, অথবা তার অন্তরে অস্বস্তি অনুভব করেছিল। কারণ, হয় সে জানত বাস্তবতা কী,অথবা সে সন্দেহে ছিল, অথবা সে নিজেই সে বিষয়ে অজ্ঞ ছিল, অথবা সে জানত যে, মুফতিও সে বিষয়ে অজ্ঞ, অথবা সে জানত মুফতি ব্যক্তি পক্ষপাতিত্ব করে, অথবা সে জানে, তিনি (মুফতি) কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ফতোয়া দেন না, অথবা তিনি পরিচিত এমন ফতোয়া দেওয়ার জন্য, যাতে সুন্নাহ পরিপন্থী ছাড় (রুখসাহ্) ও চালাকি (হীলা) রয়েছে। এবং এরকম আরও অনেক কারণ থাকতে পারে—যেগুলোর কারণে সেই ফতোয়ার ওপর আত্মবিশ্বাস স্থাপন করা এবং তার উপর অন্তরকে শান্ত রাখা বৈধ হয় না—যদি সে জানে যে, এই সব বিষয় সত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”(ইমাম ইবনু কাইয়্যিম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ইন খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা: ২৫৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
أي : حتى وإن أفتاك مفتٍ بأن هذا جائز ، ولكن نفسك لم تطمئن ولم تنشرح إليه فدعه ، فإن هذا من الخير والبر ، إلا إذا علمت في نفسك مرضا من الوسواس والشك والتردد فلا تلتفت لهذا ، والنبي صلى الله عليه وسلم إنما يخاطب الناس أو يتكلم على الوجه الذي ليس في قلب صاحبه مرض
অর্থাৎ, যদি কোনো মুফতি তোমাকে ফতোয়া দেন যে — এটি বৈধ, কিন্তু তোমার মন এতে প্রশান্তি অনুভব করে না এবং এটি গ্রহণে তোমার হৃদয় উদার হয় না, তাহলে সেটিকে ছেড়ে দাও। কেননা, এটিই কল্যাণ ও পূণ্যের অন্তর্ভুক্ত। তবে যদি তুমি জানো যে, তোমার মনে কোনো রোগ আছে, যেমন: ওয়াসওয়াসাহ্ (অতিরিক্ত সন্দেহ), সংশয় ও দ্বিধা তাহলে সে অবস্থায় এ অনুভবের প্রতি কর্ণপাত কোরো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উপদেশ কেবল সেইসব লোকদের উদ্দেশ্যেই দিয়েছিলেন যাদের অন্তর রোগমুক্ত, যাদের হৃদয় স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে বিচার করতে সক্ষম।”(ইবনু উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন: খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৪৮)
.
যে ব্যক্তি নিজের হৃদয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক ও ভুলের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে—সে হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার হৃদয় পবিত্র ও আল্লাহভীতি সম্পন্ন।পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির হৃদয় পথভ্রষ্ট ও পাপপ্রবণ,যদি সে কবীরা গোনাহ নিয়ে নিজের হৃদয়ের সাথে পরামর্শ করে,তবে সে নিশ্চয়ই তা বৈধ মনে করবে। কেননা, তার হৃদয়ে আর সত্য-মিথ্যার মাঝে কোনো স্পষ্ট পার্থক্য থাকে না।” এ সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
(الإثم ما حاك في نفسك) أي : تردد وصرت منه في قلق (وكرهت أن يطلع عليه الناس) لأنه محل ذم وعيب ، فتجدك متردداً فيه وتكره أن يطلع عليك الناس .وهذه الجملة إنما هي لمن كان قلبه صافياً سليماً ، فهذا هو الذي يحوك في نفسه ما كان إثماً ، ويكره أن يطلع عليه الناس .أما المُتَمَرِّدون الخارجون عن طاعة الله الذين قست قلوبهم فهؤلاء لا يبالون ، بل ربما يتبجحون بفعل المنكر والإثم ، فالكلام هنا ليس عاماً لكل أحد ، بل هو خاص لمن كان قلبه سليماً طاهراً نقياً ، فإنه إذا هَمَّ بإثم وإن لم يعلم أنه إثم من قبل الشرع تجده متردداً يكره أن يطلع الناس عليه ، فهذا علامة على الإثم في قلب المؤمن”
“পাপ হলো সেই বিষয়, যা তোমার অন্তরে দ্বিধা ও সংশয়ের সৃষ্টি করে” অর্থাৎ, তুমি তাতে দ্বিধায় পড়ে যাও এবং তা নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা ও অস্বস্তি অনুভব করো। আর তুমি চাও না যে মানুষজন এ ব্যাপারে জানুক; কারণ এটি নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক কিছু। ফলে তুমি নিজেকে এতে দ্বিধায় পড়া অবস্থায় পাবে, এবং চাইবে না যে কেউ তা জেনে ফেলুক। এই উপদেশ মূলত তার জন্য, যার অন্তর বিশুদ্ধ ও সুস্থ। এমন ব্যক্তিই হলো সেই ব্যক্তি, যার অন্তরে পাপসমূহ ঘুরপাক খায় (অন্তর তা নিয়ে দোলাচলে পড়ে), এবং যে চায় না মানুষ তা জানুক। অথচ যারা অবাধ্য, আল্লাহর আনুগত্য পরিত্যাগ করেছে এবং যাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে—তারা এসব নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়; বরং কখনো কখনো তারা প্রকাশ্যেই গর্ব করে অন্যায় ও পাপ কাজ করার ব্যাপারে।সুতরাং, এই হাদীসের বক্তব্য সবার জন্য নয়; বরং শুধু তার জন্য, যার অন্তর সুস্থ, নির্মল ও পবিত্র রয়েছে। কারণ, এমন ব্যক্তি যখন কোনো পাপের দিকে মনোনিবেশ করে এমনকি যদি শরিয়তের দৃষ্টিতে তা স্পষ্টভাবে পাপ কি না, সে না জানে—তবুও তার অন্তরে দ্বিধা সৃষ্টি হয় এবং সে চায় না যে মানুষ তা জানুক।এটি একজন মু’মিনের অন্তরে পাপ-সচেতনতার পরিচায়ক।”(ইবনু উসাইমীন; শারহ আরবাইন আন-নববিয়্যাহ পৃষ্ঠা: ২৯৪-২৯৫) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৭২৬৭)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি সৌদি আরব।

নারীদের জন্য ঘরের বাহিরে চাকরি করার শারঈ বিধান এবং শর্তাবলি

 প্রশ্ন: নারীদের জন্য ঘরের বাহিরে চাকরি করার শারঈ বিধান এবং শর্তাবলি কি? একটি দলিল ভিত্তিক পর্যালোচনা।

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর ইসলাম নারীর সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার জন্য এসেছে। ইসলাম এমন কিছু বিধান আরোপ করেছে যাতে করে নারীর এ অধিকারগুলো রক্ষা করা যায়। সুতরাং মূলনীতি হলো একজন নারীর উচিত তার নিজ গৃহেই অবস্থান করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া। এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী:وَقَرۡنَ ‌فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰ “আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো। প্রাচীন জাহেলী যুগের মতো নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িও না।”(সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৩) উক্ত আয়াতটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলা হলেও এর বিধান নিঃসন্দেহে সকল মুমিন নারীকেও অন্তর্ভুক্ত করে।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে বলার কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের মর্যাদা ও অবস্থান। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ ছিলেন নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও আদর্শতম। সুতরাং, যেসব নির্দেশনা তাঁদের প্রতি প্রদান করা হয়েছে, সাধারণ মুমিন নারীদের জন্য তা আরও অধিক গুরুত্বের সঙ্গে পালনীয় হওয়া যুক্তিসঙ্গত। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,“মেয়ে মানুষ (সবটাই) লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন নিজ বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে। সে নিজ বাড়ির অন্দর মহলে অবস্থান করে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী থাকে।”(ত্বাবারানীর আওসাত্ব হা/২৮৯০, সহীহ তারগীব হা/৩৪৪; সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৬৮৮ হাদিসটি বিশুদ্ধ) রাসূল (ﷺ) আরও বলেছেন;”তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।”(মুসনাদে আহমাদ হা/৫৪৬৮; আবু দাউদ হা/৫৬৭)
.
উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিসের ভিত্তিতে বলা যায়, মূল বিধান হলো- নারীরা ঘরে অবস্থান করবে; আবশ্যকীয় বিষয় কিংবা প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না। ইসলাম নারীর ঘরে সলাত আদায়কে মসজিদে সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম ঘোষণা করেছে; এমন কি সেটা যদি মসজিদে হারামও হয় না কেন।এর অর্থ এ নয় যে, নারী ঘরের মধ্যে বন্দীদশায় পড়ে থাকবে। বরং ইসলাম নারীর জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ রেখেছে। নারীর ওপর হজ্জ-উমরা, ঈদের সলাত ইত্যাদি আদায় করা ফরয করেছে। এ ছাড়াও ইসলামী শরিয়ত নারীকে তার পরিবার-পরিজন, মাহরাম আত্মীয়-স্বজনকে দেখার জন্য, আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করার জন্য বের হওয়ার অনুমোদন দেয়। অনুরূপভাবে নারীদের প্রয়োজনে তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়। তবে উল্লেখিত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মনীতি মেনে বের হতে হবে। যেমন সফরের ক্ষেত্রে মাহরাম সাথে থাকা, নিজ এলাকার মধ্যে হলে রাস্তা নিরাপদ হওয়া, পরিপূর্ণ পর্দাসহ বের হওয়া, বেপর্দা না হওয়া, সাজসজ্জা না করা, সুগন্ধি ব্যবহার না করা।সুতরাং কুরআন সুন্নাহ এবং আহলুস সুন্নাহ’র প্রসিদ্ধ আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর জন্য ঘরের বাইরে চাকুরী করা বৈধ। তবে সেটি নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে।শর্তগুলো পাওয়া গেলে নারীর জন্য ঘর ছেড়ে বের হওয়া বৈধ। সেগুলো হলো:
.
(১).পরিবারের অনুমতি থাকা: অর্থাৎ নারীদের চাকরি করার ক্ষেত্রে বিবাহের পর স্বামী এবং বিবাহ পূর্ব অভিভাবকের অনুমতি থাকা জরুরি।
.
(২).নিজের আবশ্যকীয় অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য চাকুরী করা তার প্রয়োজন হতে হবে এবং চাকরির মাধ্যমে সমাজ ও পরিবারের জন্য উপকারী হতে হবে, শুধুমাত্র দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য নয়; যেমনটি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়।
.
(৩).কাজটি নারীর প্রকৃতি ও শারীরিক গঠনের সাথে মানানসই হওয়া। যেমন: চিকিৎসা, নার্সিং, শিক্ষকতা, সেলাই ইত্যাদি।
.
(৪).কাজটি নিছক নারীর অঙ্গনে হওয়া। সেখানে কোনো বেগানা পুরুষের সাথে মেলামেশা না থাকা।
.
(৫).শরীয়াহসম্মত পরিবেশ: কর্মস্থলে নারী তার শরয়ি হিজাব তথা পর্দার বিধান মানার সুযোগ থাকতে হবে।
.
(৬).ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে বাধা না থাকা: সলাত, সিয়াম, হালাল-হারামের বিধান মেনে চলতে হবে।
.
(৭).নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ:যাতায়াত ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে হবে এবং চাকুরীর জন্য তাকে মাহরাম ছাড়া সফর না করা ।
.
(৮).চাকুরীতে যাওয়ার জন্য তাকে কোনো হারামে লিপ্ত হতে না হওয়া। যেমন: ড্রাইভারের সাথে একাকী অবস্থান, এভাবে সুগন্ধি লাগানো যার ঘ্রাণ বেগানা পুরুষ পায়।
.
(৯).নৈতিক ও চারিত্রিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা: কাজের মাধ্যমে ইসলামের মূলনীতি ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু করা যাবে না।
.
(১০).পরিবারের অধিকার রক্ষা: চাকরির কারণে স্বামী, সন্তান ও পরিবারের প্রতি আবশ্যকীয় দায়িত্ব অবহেলা করা যাবে না। যেমন: ঘরের পরিচর্যা, স্বামী ও সন্তানদের দেখভাল করা।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: একজন নারী কি ব্যবসা করতে পারবে সে মুকীম হোক (নিজ শহরে অবস্থানরত) অথবা মুসাফির হোক (ভ্রমণরত)? এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান কী? উত্তরে স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
الأصل إباحة الاكتساب والاتجار للرجال والنساء معا في السفر والحضر ؛ لعموم قوله سبحانه : ( وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبا ) وقوله صلى الله عليه وسلم لما سئل أي الكسب أطيب ؟ قال : (عمل الرجل بيده ، وكل بيع مبرور) ولما هو ثابت أن النساء في صدر الإسلام كن يبعن ويشترين باحتشام وتحفظ من إبداء زينتهن ، لكن إذا كان اتجار المرأة يعرضها لكشف زينتها التي نهاها الله عن كشفها ، كالوجه ، أو لسفرها بدون محرم ، أو لاختلاطها بالرجال الأجانب منها على وجه تخشى فيه فتنة ، فلا يجوز لها تعاطي ذلك ، بل الواجب منعها ؛ لتعاطيها محرما في سبيل تحصيل مباح “
“মূলনীতি হলো,পুরুষ ও নারীদের জন্য উপার্জন করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করা বৈধ,তা সফরে থাকাকালীন হোক বা নিজ গৃহে অবস্থানকালে। কারণ এই বিষয়ে আল্লাহর বাণী সর্বজনীন: “আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।”(সূরা আল-বাকারা: ২৭৫) এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:“কোন্ প্রকারের জীবিকা উত্তম?’ উত্তরে তিনি বললেন— নিজ হাতের উপার্জন এবং সৎ ব্যবসা”।(বাযযার ২য় খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা, বুলুগুল মারাম হা/৭৮২ সনদ সহীহ) এছাড়াও প্রমাণিত রয়েছে যে, ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে নারীরা নিজেদের লজ্জা ও সংযম বজায় রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতেন, এবং তাদের সৌন্দর্য (যেমন সাজ-সজ্জা) প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতেন। তবে যদি কোনো নারীর ব্যবসা তাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি করে যেমন সে নিজের রূপ-সৌন্দর্য (যেমন মুখমণ্ডল) প্রকাশ করতে বাধ্য হয়, যা আল্লাহ প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, অথবা মাহরাম ছাড়া সফর করে,অথবা পুরুষদের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করতে হয় যাতে ফিতনার আশঙ্কা থাকে,তাহলে তার জন্য এধরনের ব্যবসা করা বৈধ নয়। বরং, তাকে তা থেকে বিরত রাখা ওয়াজিব, কারণ সে একটি নিষিদ্ধ পন্থায় একটি বৈধ কাজ (ব্যবসা বা উপার্জন) অর্জন করতে চাচ্ছে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ১৬)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
المجال العملي للمرأة أن تعمل بما يختص به النساء مثل أن تعمل في تعليم البنات سواء كان ذلك عملا إداريّاً أو فنيّاً , وأن تعمل في بيتها في خياطة ثياب النساء وما أشبه ذلك , وأما العمل في مجالات تختص بالرجال ، فإنه لا يجوز لها أن تعمل حيث إنه يستلزم الاختلاط بالرجال ، وهي فتنة عظيمة يجب الحذر منها , ويجب أن يعلم أن النبي صلى الله عليه وسلم ثبت عنه أنه قال : (ما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء وأن فتنة بني إسرائيل كانت في النساء) ، فعلى المرء أن يجنب أهله مواقع الفتن وأسبابها بكل حال
“নারীর জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র হলো সেইসব কাজ যা নারীদের জন্য নির্দিষ্ট, যেমন: নারীদের শিক্ষাখাতে চাকুরী করা; সেটা প্রশাসনিক চাকুরী হোক বা টেকনিক্যাল চাকুরী হোক। ঘরে বসে নারীদের পোশাক সেলাই বা অনুরূপ কাজ করা। কিন্তু পুরুষদের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করা তার জন্য জায়েয নেই। কারণ এতে করে পুরুষদের সাথে তাকে মেলামেশা করতে হয়। এটি বড় ধরনের ফিতনা। এর থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক। এটা জানা জরুরী যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে:“আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিতনা রেখে যাইনি।”এবং বনী ইসরাঈলের ফিতনাও ছিল নারীদের মাধ্যমে। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার পরিবারকে ফিতনার স্থান ও কারণসমূহ থেকে সর্বাবস্থায় নিরাপদে রাখা।”(ইবনু উসাইমীন; আলফাতাওয়া আল্‌জামি‘আহ লিল মারআতিল মুসলিমাহ (মুসলিম নারীর জীবন ঘনিষ্ট ফতোয়াসমগ্র), খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৯৮১)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:আমি কিছু এতিম সন্তানের মা এবং আমি (বাহিরে) চাকরি করতে ইচ্ছুক। তবে এই কাজে পুরুষদের সাথে ফ্রি-মিক্সিং আছে। তো এখন আমার কী করা উচিত, যেহেতু আমি ওয়ালিল্লাহিল হামদ দ্বীন মেনে চলছি? শাইখ জবাবে বলেন:
لا تعملي مع الرجال، وأبشري بالخير إن شاء الله، دوِّري على عملٍ آخر بين النساء، وأبشري بالخير: وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا [الطلاق:2]، وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا [الطلاق:4]، أما مع الرجال: ممرضة مع الممرضين، أو غير ذلك، فلا، هذه فتنةٌ وخطرٌ عظيمٌ على دينك، وعلى عرضك، لا تكوني مع الرجال في العمل، ابتعدي، ولا تكوني سكرتيرة للرجل، ولا مع الطبيب: سكرتيرة الطبيب، ولا تُعاونينه، كل هذا خطر عظيم، مع النساء، مع الطبيبات والممرضات لا بأس، وغيرهم في أعمال النساء، أما مع الرجال فلا، ولو أكلتِ الترابَ، اتَّقي الله وأبشري بالخير: وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا.
“পুরুষদের সাথে কাজ করবেন না। আর ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। মহিলাদের মাঝে করা যায় এমন চাকরি খুঁজুন। সাথে ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। “আর যে কেউ আল্লাহভীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন।”(সুরা তালাক: ২) “আর যে আল্লাহভীতি অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।”(সুরা তালাক: ৪) পক্ষান্তরে একজন মহিলা নার্স পুরুষদের সাথে কাজ করবে, তা হবে না! মনে রাখা উচিত, ফিতনা আপনার দ্বীন ও সম্ভ্রমের জন্য খুবই বিপজ্জনক। পুরুষদের সাথে কাজ করবেন না। তাদের থেকে দূরে থাকুন। কোনো পুরুষের সেক্রেটারি হবেন না। কোনো পুরুষ ডাক্তারের সেক্রেটারি হবেন না। তাকে সহযোগিতা করবেন না। এগুলো সবই চরম বিপজ্জনক। আপনি মহিলাদের মাঝে অবস্থান করবেন। মহিলা ডাক্তার এবং মহিলা নার্সের সাথে কাজ করবেন এবং আরও যে সমস্ত কাজ রয়েছে মহিলাদের সাথে (সেসব করবেন)। এতে কোনো ক্ষতি নেই। পক্ষান্তরে পুরুষদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে বলব, ‘না। এমনকি আপনাকে যদি মাটি খেয়েও থাকতে হয়, তবুও না!’ আল্লাহকে ভয় করুন এবং ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-২১২৬৯)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, যদি কোনো নারীর কাজের পরিবেশ শরিয়তের নির্ধারিত শর্তসমূহ পূরণ করে, তবে ইনশাআল্লাহ্‌ তা তার জন্য নিন্দনীয় নয়। আমরা মহান আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন প্রতিটি ধর্মপরায়ণ, পরহেযগার নারীকে একজন সৎ, নেককার ও সহনশীল জীবনসঙ্গী দান করেন, যে তাকে দ্বীনের পথে সহায়তা করবে। নিঃসন্দেহে তিনিই সকল বিষয়ের সর্বোত্তম অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক। বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৬৮১৫)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

তাওবা সম্পর্কে বিস্তারিত

 প্রশ্ন: তাওবা শব্দের প্রকৃত অর্থ কী? একনিষ্ঠ হৃদয়ে গীবতসহ সমস্ত গুনাহ থেকে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট খাঁটি ও গ্রহণযোগ্য তাওবার শর্তসমূহ এবং সঠিক পদ্ধতি কী?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর তওবা শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসা, গুনাহ ত্যাগ করা, গুনাহকে অপছন্দ করা, নেক কাজে কসুর হওয়ার জন্য অনুতপ্ত হওয়া।কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। যে কেউ তওবা করলে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন। তওবাকারীদের কাফেলা চলমান থাকবে।পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটার পূর্ব পর্যন্ত এ কাফেলা থামবে না।কেউ তওবা করে ডাকাতি থেকে, কেউ তওবা করে যৌনাঙ্গের পাপ থেকে, কেউ তওবা করে মদ্যপান থেকে, কেউ তওবা করে মাদকদ্রব্য থেকে, কেউ তওবা করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে, কেউ তওবা করে নামায না-পড়া থেকে কিংবা জামাতে হাজিরে অলসতা করা থেকে, কেউ তওবা করে পিতামাতার অবাধ্যতা থেকে, কেউ তওবা করে সুদ-ঘুষ থেকে, কেউ তওবা করে চুরি থেকে, কেউ তওবা করে মানুষ হত্যা করা থেকে, কেউ তওবা করে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা থেকে, কেউ তওবা করে সিগারেট খাওয়া থেকে। প্রত্যেক পাপ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবাকারীকে স্বাগতম।খাঁটি তওবার মাধ্যমে সে যেন নবজাতক শিশুর মত হয়ে গেল।কারন আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত অবারিত, বান্দার প্রতি তাঁর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি সহিষ্ণু; তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে পাকড়াও করেন না, শাস্তি দেন না, কিংবা ধ্বংস করে দেন না। বরং আমাদেরকে সময় দেন। তিনি তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তিনি তাঁর মহানুভবতার ঘোষণা দেন: “বলে দিন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ! আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু”।[সূরা যুমার, ৩৯: ৫৩] আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”[সূরা নূর, ২৪:৩ ১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর।”[সূরা আত্‌তাহরীম, ৬৬: ৮] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হামযার পিতা আনাস বিন মালেক আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবাতে এর চেয়েও বেশি খুশি হন।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]আব্দুর রহমানের পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।”[সুনানে তিরমিযি: ৩৫৩৭]
.
হাদিসে সাঈদের পিতা সাদ বিন মালিক বিন সিনান আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে এমন এক লোক ছিল যে নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করেছে। সে ঐ সময়কার সবচেয়ে জ্ঞানবান ব্যক্তির অনুসন্ধান করল। তাকে একজন ধর্মযাজককে দেখিয়ে দেয়া হল। সে ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল: আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি; আমার জন্য কি তওবার সুযোগ আছে? ধর্মযাজক বলল: না। তখন সে উক্ত ধর্মযাজককে হত্যা করে একশজন পূর্ণ করল। এরপর সে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে আছে তার সন্ধান করল? তখন তাকে একজন ধর্মীয় পণ্ডিতকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে (পণ্ডিতকে) বলল যে, সে একশজন মানুষকে হত্যা করেছে; তার জন্যে কি তওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তার তওবা কবুলের পথে কে প্রতিবন্ধক হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হও এবং কখনও তোমার নিজ দেশে ফিরে যাবে না। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার পর তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেল। তখন তাকে নিয়ে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বলল: লোকটি তওবা করে অন্তর থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বলল: লোকটি কখনো কোন পুণ্যের কাজ করেনি। এ সময় একজন ফেরেশতা মানুষের বেশে হাজির হল। তারা এ ব্যক্তিকে তাদের মাঝে বিচারক হিসেবে মেনে নিল। তিনি বললেন: তোমরা উভয় দিকের জায়গা মেপে দেখ। যে দিকের ভূমি কম হবে এ লোক তার ভাগের হিসেবে গণ্য হবে। তখন তারা জায়গা মেপে দেখল যে, ঐ ব্যক্তি যে স্থানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল সে স্থানের কাছাকাছি। ফলে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ কেড়ে নিল।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিঘত এগিয়ে ছিল। ফলে তাকে নেককার গ্রামের অধিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়”।(সহীহ মুসলিম হা/২৭১৬) সহিহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে:“আল্লাহ্‌ তাআলা এ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং ঐ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি দূরে যাও। লোকটি বলল: তোমরা এ দুই ভূমির মধ্যবর্তী জায়গা মেপে দেখ। মেপে পাওয়া গেল যে, নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিঘত কাছে। তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।”(সহীহ বুখারী
হা/৩৪৭০) সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে,“ঐ ব্যক্তি তার বুক দিয়ে ঐ স্থানের দিকে আগাচ্ছিল।”(সহীহ মুসলিম হা/২৭৬৬)
.
▪️দ্বিতীয়ত: তাওবাহ্ খাঁটি হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। সে শর্তসমূহ পূরণ না করে তাওবাহ্ করলে সে তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না আর তা আল্লাহর নিকট কবূলও হবে না। শর্তাবলীর সংখ্যা সর্বনিম্ন ৩টি আর সর্বোচ্চ ৬টি। যদি গুনাহের সম্পর্ক শুধু আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তাওবাহ্ ক্ববূলের জন্য ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ও সাউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শাইখ ‘আবদুল ‘আযীয বিন ‘আবদুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) সহ অনেক আলিমের মতে শর্ত ৩টি। তবে কোন গুনাহ যদি মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আরও একটি শর্ত বেড়ে তা হয়ে যাবে ৪টি। তবে সাউদী আরবের আরেক বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তাওবার শর্ত মোট ৫টি। তবে মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার জন্য অতিরিক্ত ১টি শর্ত যোগ হবে। তা হলো পাওনাদারকে তার হক বা অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। সুতরাং যদি এগুলোর মধ্যে একটি শর্তও বাদ পড়ে, তাহলে সেই তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না। নিম্নে ঐ সকল শর্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :
.
(১).তাওবাহ্ একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে করতে হবে।
(২).গুনাহর কাজ করার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
(৩).যে গুনাহ হতে তাওবাহ্ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
(৪).ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
(৫).নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবে।
(৬).মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
أن كلَّ من ارتكب معصيةً لزمه المبادرةُ إلى التوبة منها، والتوبةُ من حقوق الله تعالى يُشترط فيها ثلاثة أشياء: أن يُقلع عن المعصية في الحال، وأن يندمَ على فعلها، وأن يَعزِمَ ألاّ يعود إليها. والتوبةُ من حقوق الآدميين يُشترط فيها هذه الثلاثة، ورابع: وهو ردّ الظلامة إلى صاحبها أو طلب عفوه عنها والإِبراء منها، فيجبُ على المغتاب التوبة بهذه الأمور الأربعة، لأن الغيبة حقّ آدمي، ولا بدّ من استحلاله مَن اغتابَه،
“পাপে লিপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্য করণীয় হল অনতিবিলম্বে তওবা করা। আর আল্লাহর অধিকাররের সাথে সম্পৃক্ত পাপ থেকে তওবা করার শর্ত তিনটি:
(১) কৃত পাপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হওয়া।
(২) কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
আর বান্দার সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তওবা করার ক্ষেত্রে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটা হ’ল-
(৪) যার অধিকার নষ্ট করা হয়েছে তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া। সুতরাং গীবতকারীকে উপরিউক্ত চারটি শর্ত মেনে তওবা করা ওয়াজিব। কেননা গীবত বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ। সেজন্য যার গীবত করা হয়েছে তার কাছ থেকেই দায়মুক্ত হওয়া আবশ্যক”।(ইমাম নববী, আল-আযকার, পৃষ্ঠা: ৩৪৬)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:
قَالَ العلماءُ: التَّوْبَةُ وَاجبَةٌ مِنْ كُلِّ ذَنْب، فإنْ كَانتِ المَعْصِيَةُ بَيْنَ العَبْدِ وبَيْنَ اللهِ تَعَالَى لاَ تَتَعلَّقُ بحقّ آدَمِيٍّ، فَلَهَا ثَلاثَةُ شُرُوط:
أحَدُها: أنْ يُقلِعَ عَنِ المَعصِيَةِ. والثَّانِي: أَنْ يَنْدَمَ عَلَى فِعْلِهَا.والثَّالثُ: أنْ يَعْزِمَ أَنْ لا يعُودَ إِلَيْهَا أَبَدًا. فَإِنْ فُقِدَ أَحَدُ الثَّلاثَةِ لَمْ تَصِحَّ تَوبَتُهُ. وإنْ كَانَتِ المَعْصِيةُ تَتَعَلقُ بآدَمِيٍّ فَشُرُوطُهَا أرْبَعَةٌ: هذِهِ الثَّلاثَةُ، وأنْ يَبْرَأ مِنْ حَقّ صَاحِبِها، فَإِنْ كَانَتْ مالًا أَوْ نَحْوَهُ رَدَّهُ إِلَيْه، وإنْ كَانَت حَدَّ قَذْفٍ ونَحْوَهُ مَكَّنَهُ مِنْهُ أَوْ طَلَبَ عَفْوَهُ، وإنْ كَانْت غِيبَةً استَحَلَّهُ مِنْهَا، ويجِبُ أنْ يَتُوبَ مِنْ جميعِ الذُّنُوبِ، فَإِنْ تَابَ مِنْ بَعْضِها صَحَّتْ تَوْبَتُهُ عِنْدَ أهْلِ الحَقِّ مِنْ ذلِكَ الذَّنْبِ، وبَقِيَ عَلَيهِ البَاقي. وَقَدْ تَظَاهَرَتْ دَلائِلُ الكتَابِ، والسُّنَّةِ، وإجْمَاعِ الأُمَّةِ عَلَى وُجوبِ التَّوبةِ
“আলেমগণ বলেছেন: প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। যদি গুনাহটি আল্লাহ তা‘আলার হক (অধিকার) সংক্রান্ত হয় এবং তাতে কোনো মানুষের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে, তাহলে তাওবার তিনটি শর্ত পূরণ করা আবশ্যক:
(১).গুনাহ পরিত্যাগ করা।
(২).কৃত গুনাহর জন্য আন্তরিক অনুতপ্ত হওয়া।
(৩).ভবিষ্যতে ঐ গুনাহে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
এই তিন শর্তের একটি শর্তও যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তাওবা সহীহ (গ্রহণযোগ্য) হবে না। আর যদি গুনাহটি কোনো মানুষের হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে উপরোক্ত তিনটি শর্তের সঙ্গে আরও একটি চতুর্থ শর্ত সংযুক্ত হবে, তা হলো: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির হক আদায় করে তাকে মুক্ত করা। যদি তা সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয়, তাহলে তা মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি তা অপবাদ বা মানহানিকর কথা হয়, তবে তাকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।আর যদি তা গীবত হয়ে থাকে, তাহলে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এছাড়াও, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা। তবে কেউ যদি কিছু গুনাহ থেকে তাওবা করে, তাহলে আহলুস-সুন্নাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ সে গুনাহসমূহের তাওবাকারী হিসেবে গণ্য হবে যদিও অন্যান্য গুনাহ থেকে এখনো দায়মুক্ত হয়নি। আর কুরআন, সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর ইজমা (ঐক্যমত) দ্বারা তাওবার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়েছে।”(বিন বায; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯৮; আরও দেখুন; অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফাতওয়া নং-৫৬১/০২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
وذكر العلماء أن التوبة النصوح هي التي جمعت خمسة شروط :
1- أن تكون خالصة لله عز وجل .
2- أن يكون نادماً حزنا على ما سلف من ذنبه , يتمنى أنه لم يحصل منه .
3- أن يقلع عن المعصية فوراً ، فإن كانت المعصية بفعل محرم تركه في الحال , وإن كانت المعصية بترك واجب فعله في الحال , وإذا كانت المعصية فيما يتعلق بحقوق الخلق لم تصح التوبة منها حتى يتخلص من تلك الحقوق .
4- أن يعزم على أن لا يعود في المستقبل إلى المعصية .
5- أن لا تكون بعد انتهاء وقت قبول التوبة , كما سبق .
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে,”তাওবাতুন নাসূহ” হলো সেই তাওবাহ যা নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করে—
(১).তা যেন আল্লাহর জন্যই খালিস (বিশুদ্ধভাবে নিবেদিত) হয়: (অর্থাৎ তাওবাহটি একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে কোনো লোক দেখানো বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়)।
(২).ব্যক্তি নিজের পূর্ববর্তী গোনাহের জন্য সত্যিকারের অনুতপ্ত ও দুঃখিত থাকবে, এমনকি তার অন্তরে এই আকাঙ্ক্ষা থাকবে—ইশ! যদি এ গোনাহ সে কখনও না করতো!
(৩).সে যেন অবিলম্বে সেই গুনাহ ত্যাগ করে যদি গুনাহটি কোনো হারাম কাজ করে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা ছেড়ে দেবে; আর যদি গুনাহটি কোনো ফরয (আবশ্যিক) কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করবে। আর যদি গুনাহটি মানুষের হক বা অধিকার সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেই তওবা তখনো শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মানুষের সেই অধিকার থেকে নিজেকে মুক্ত করে না নেয়।
(৪).ভবিষ্যতে সেই পাপে আর ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।( অর্থাৎ তাওবাহকারী ব্যক্তির মনে দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে যে, সে ভবিষ্যতে আর কখনও সেই গোনাহে লিপ্ত হবে না।
(৫).তাওবাহ এমন সময় যেন না হয় যখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে যেমন ইতঃপূর্বে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।(অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।”(ইমাম ইবনু উসাইমীন; মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা: ১৪৩; ইবনু উসাইমীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-৫৩/৭৩)
.
একনিষ্ঠ হৃদয়ে গীবতসহ সমস্ত গুনাহ থেকে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট খাঁটি ও গ্রহণযোগ্য তাওবার শর্তসমূহ ৬ টি। এই ৬ টি শর্ত নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
(১).তাওবাহ্ একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে করতে হবে: খাঁটি তাওবাহ্ কেবল আল্লাহর জন্যই হতে হবে।
আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কারো খাতিরে যেমন লোক দেখানো, প্রশংসা কুড়ানো, কারো চাপে, মন রক্ষায় বা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য—তাওবাহ্ করলে তা কবুল হবে না, বরং নতুন গুনাহর কারণ হতে পারে। তাওবাহ্ হলো আল্লাহর কাছে সরাসরি নিজের গুনাহর জন্য ক্ষমা চাওয়া, নিঃস্বার্থ অন্তরে ফিরে আসা। কোনো পাদ্রী, পীর, মাশায়েখ বা পুরোহিত কারো কাছেই তাওবাহ্ করার সুযোগ নেই; তারা কারো গুনাহ মাফ করতে পারে না। ইসলামে পাপ মোচনের একমাত্র পথ আল্লাহর দরবারে আন্তরিক তাওবাহ্। হ্যাঁ, আলেমগণ তাওবাহ্ করার পদ্ধতি শেখাতে বা পরামর্শ দিতে পারেন; কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার কাজটি একান্তই ব্যক্তির আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়। শুধু মুখে কিছু বললেই হয় না, বরং তা হতে হবে হৃদয় নিঃসৃত, গুনাহ থেকে সরে দাঁড়ানোর দৃঢ় সংকল্পসহ।
.
(২). গুনাহের কাজ করার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে: গুনাহ করার পর তা থেকে তাওবাহ্ করতে চাইলে তাওবাকারীকে অবশ্যই তার কৃতকর্মের জন্য অন্তর থেকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। অপরাধকর্মের কারণে লজ্জিত হওয়া খাঁটি তাওবার শর্ত। তাইতো নাবী ﷺ বলেছেন :النَّدَمُ تَوْبَةٌ ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই হল তাওবার মূল বিষয়।’’(ইবনু মাজাহ হা/৪২৫২) কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত না হয়ে, অনুতপ্ত না হয়ে যত তাওবাই করা হোক তা আল্লাহ গ্রহণ করবেন না।ইসলামের নীতিমালায় প্রসিদ্ধ নীতি হলো, ‘পাপকাজ করে লজ্জিত হলে পাপ কমে যায়। আর পুণ্য কাজ করে গর্ববোধ করলে পুণ্য বাতিল হয়ে যায়।’ যে পাপ কাজ করে, সে সাধারণ মানুষ। যে পাপ করে অনুতপ্ত হয়, সে নেককার মানুষ; কিন্তু যে পাপ করে তা প্রকাশ করে বেড়ায়, সে শয়তানের অনুসারী। রাসূল (ﷺ) বলেন:“আমার উম্মতের সব গুনাহ মাফ করা হবে, তবে যারা প্রকাশ্যে পাপ করে তাদের নয়।”(সহীহ বুখারী হা/৬০৬৯) তাই পাপ হলে গোপন রাখুন, লজ্জিত হন, এবং একান্তভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তবেই তাওবা কবুলের আশা করা যায়।
.
(৩).যে গুনাহ হতে তাওবাহ্ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে: যে ব্যক্তি কোনো গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চায়, তার প্রথম করণীয় হলো সেই গুনাহ সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা। এটি খাঁটি তাওবার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। যদি কেউ কোনো ফরয ইবাদত যেমন যাকাত না দেয়ার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চায়, তাহলে তাকে আগে পূর্বের হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। কারণ যাকাত আল্লাহ ও গরীবের হক কেবল তাওবাহ্ করলেই গরীবের হক আদায় হয় না। একইভাবে পিতা-মাতার অবাধ্যতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ, মদ্যপান, ধূমপান বা সুদের মতো হারাম কাজ ত্যাগ করে, সংশ্লিষ্টদের হক আদায় করে তাওবাহ্ করতে হবে। সুদের সম্পদ থাকলে তা হালাল অর্থ থেকে আলাদা করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়াই কল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করতে হবে।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৬১১৯) সুতরাং তাওবার পরও যদি কেউ সেই গুনাহ চালিয়ে যায়, তাহলে তা আল্লাহর সঙ্গে ঠাট্টা করার নামান্তর। এটি এমন, যেমন কেউ পা ধুয়ে আবার ময়লায় রেখে দেয় এতে ধোয়ার কোনো অর্থ থাকে না।এ প্রসঙ্গে একটি শিক্ষণীয় কাহিনি রয়েছে: এক ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত কুয়ার পানি পবিত্র করতে বারবার পানি তুলেও ব্যর্থ হচ্ছিল। পরে জানা গেল, কুয়ার তলদেশে একটি মৃত বিড়াল ছিল। যতক্ষণ না পচা-গলা সেই মৃতদেহ সরানো হলো, ততক্ষণ পানি বিশুদ্ধ হয়নি। এই গল্প কাল্পনিক হলেও এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই বোঝা গেল যে, কুয়ার মধ্যে বিড়ালের পচা-গলা দেহ রেখে কুয়ার পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত ও পবিত্র করার চেষ্টা করা আর পাপরত অবস্থায় তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করা প্রায় একই কথা। পাপে রত অবস্থায় তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করার কী মূল্য হতে পারে? মদ খেতে খেতে ‘তাওবা-তাওবা’ বললে, ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ‘আস্তাগফিরুল্লাহ-আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়লে কী লাভ হতে পারে? তাই আগে পাপ বর্জন করতে হবে, তারপর তাওবাহ্ করতে হবে। তবেই সেই তাওবাহ্ কবূল হবে। নয়তো তা হবে পন্ডশ্রম। তবে ইস্তিগফার সবসময়ই করতে থাকতে হবে।
.
(৪).ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে: খাঁটি তাওবাহ্ করার জন্য কৃত গুনাহর জন্য লজ্জিত হয়ে গুনাহ বর্জন করলেই হবে না। ভবিষ্যতে আর এই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। যদি তাওবাহ্ করার সময় মনে মনে নিয়ত থাকে যে সুযোগ পেলে আবার ঐ গুনাহর কাজ করবো তাহলে সেই তাওবার কোন গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। সেই তাওবাহ্ কোন তাওবাই নয়। যেমন কোন ব্যক্তি অঢেল অর্থ-সম্পত্তির মালিক। এমতাবস্থায় সে ক্ষমতাধর নারী নিয়ে যেনা-ব্যভিচার করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিদেশ গেলো। হঠাৎ কোন এক কারণে তার অর্থ-সম্পদ শেষ হয়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়লো। তখন সে তাওবাহ্ করতে লাগলো। অথচ তার মনে আকাঙ্খা আছে যে, সে যদি আবার অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারে তাহলে সে আবার যেনা করবে। মদ পান করবে। তাহলে তার এই তাওবাহ্ আল্লাহর নিকট কবূল হবে না। তার তাওবাহ্ হচ্ছে অপারগের তাওবাহ্। কোন পাপ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে তা থেকে তাওবাহ্ করলে তা তাওবাহ্ হয় না। তবে যৌবন বয়সে করা পাপের তাওবাহ্ বৃদ্ধকালে করলে আশা করা যায় আল্লাহ কবূল করবেন। কারণ সে হয়তো যৌবনকালে বুঝতে পারেনি। বৃদ্ধকালে নিজের অপরাধের কথা বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ্ করলে সেই তাওবাও আল্লাহ কবূল করবেন, ইনশা-আল্লা-হ।তবে কখনো কখনো পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যদি আবার তা করে ফেলে, তাহলে বলা যাবে না যে, পাপীর আগের তাওবাহ্ কবূল হয়নি, তা বাতিল হয়ে গেছে। কারও আগের তাওবাহ্ কবূল হওয়ার পরও সে আবার পাপে লিপ্ত হতে পারে। তখন সে আবার তাওবাহ্ করবে। ভবিষ্যতে পাপ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও যদি অনিচ্ছা সত্ত্বে বারবার সে পাপে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে বারবারই তাওবাহ্ করবে। তবে মনে রাখতে হবে পাপী ব্যক্তি কোন অবস্থায় সেই পাপে লিপ্ত হয়েছে তা কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা জানেন। তাই আল্লাহকে ফাঁকি দিয়ে তাওবাহ্ করা যায় না। সাধারণভাবে কেউ যদি অনিচ্ছকৃত বা না জেনে গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আবার গুনাহ করে মাফ চায় আল্লাহ ক্ষমা করবেন। সে কথাই নাবী (ﷺ) হাদীসে কুদসীতে বর্ণনা করেন।তিনি বলেন:”কোন বান্দা একটি পাপ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ অতঃপর সে আবার পাপ করল এবং বলল, ‘হে আমার রব! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সুতরাং সে যা ইচ্ছা করুক।’’(সহীহুল বুখারী হা/ ৭৫০৭; সহীহ মুসলিম হা/৭১৬২) এই হাদীসে “সে যা ইচ্ছা করুক’ কথার অর্থ হল, সে যখন এরূপ করে; অর্থাৎ পাপ করে সাথে সাথে তাওবাহ্ করে এবং আমি তাকে মাফ করে দেই, তখন সে যা ইচ্ছা করুক, তার কোন চিন্তা নেই। যেহেতু তাওবাহ্ পূর্বকৃত পাপ মোচন করে দেয়। অবশ্য একই পাপ জেনেশুনে বারবার করলে অথবা তাওবার সময় পাপ বর্জনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা না করলে সে ক্ষমার যোগ্য নাও হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন, আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তারা তার পুনরাবৃত্তি করে না।’’(সূরা আলে ইমরান: ১৩৫) তাই, আসল তাওবাহ্ হলো আল্লাহকে ফাঁকি না দিয়ে, আন্তরিক অনুতাপে ভবিষ্যতে পাপ না করার প্রতিজ্ঞা করে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া। আর তাওবাহ্ করেও যদি আবার পাপ হয়ে যায়, তবে আলস্য না করে আবার তাওবাহ্ করতে হবে।কোন অবস্থাতেই গুনাহর উপর অটল থাকা যাবে না। কারণ কেউ জানে না সে কখন মৃত্যুবরণ করবে, আদৌ সে তাওবার সুযোগ পাবে কিনা।
.
(৫).নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবে: তাওবাহ্ করার নির্ধারিত সময় আছে। আর তাওবার নির্ধারিত সময় দুই ধরনের: (এক). প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাওবার সর্বশেষ সময় হচ্ছে তার মৃত্যু। তাই মৃত্যু আসার আগেই তাওবাহ্ করতে হবে। (দুই).সকল মানুষের জন্য তাওবাহ্ করার সর্বশেষ সময় হচ্ছে ক্বিয়ামাতের আলামত হিসেবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। তাই সাধারণভাবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই তাওবাহ্ করতে হবে।মূলত পাপ করার পরক্ষণেই তাওবাহ্ করা উচিত। অনেকে শেষ জীবনে দাড়ি-চুল পাকলে পরে তাওবাহ্ করবেন বলে অপেক্ষায় থাকে, অবহেলা করে। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু এসে যাওয়ায় সে আর তাওবার সুযোগ পায় না।মহান আল্লাহ বলেছেন:‘নিশ্চয় তাদের তাওবাহ্ কবূল করা আল্লাহর দায়িত্ব যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে। তারপর অনতিবিলম্বে তারা তাওবাহ্ করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবাহ্ কবূল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতিপ্রজ্ঞাময়। আর তাওবাহ্ নেই তাদের, যারা অন্যায় কাজসমূহ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবাহ্ করলাম; আর তাওবাহ্ তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমরা এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব।”(সূরা আন্ নিসা: ১৭-১৮) হাদিসে রাসূল ﷺ বলেছেন; “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবাহ্ সে পর্যন্ত কবূল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয় (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ঘ্যার ঘ্যার করা শুরু করে)।(মুসনাদ আহমাদ হা/৬১৬০; জামি‘ আত তিরমিযী হা/৩৫৩৭) পক্ষান্তরে, মহান আল্লাহর ‘আযাব দেখার পরে করা তাওবাও কোন উপকারে আসবে না। মৃত্যুর সময় ফির‘আওনের ঈমান তার কোন উপকার করেনি। সুতরাং কেউ আল্লাহর ‘আযাব গ্রাস করার মুহূর্তে তাওবাহ্ করলে তা তার কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন; তারপর তারা যখন আমার ‘আযাব দেখল তখন বলল, ‘আমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, আর যাদেরকে আমরা তার সাথে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম’। সুতরাং তারা যখন আমার ‘আযাব দেখল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকার করল না। এটা আল্লাহর বিধান, তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে। আর তখনই ঐ ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’(সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০: ৮৪-৮৫) তাই মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার বা পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে হবে। আগামীকাল নয়, আজই এখনই তাওবাহ্ করতে হবে।
.
(৬).মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে: যদি কোন গুনাহর সম্পর্ক কোন মানুষের অধিকারের সাথে হয়, তাহলে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা ক্ষমা চেয়ে তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু গ্রহণ-হরণ করে থাকে, তাহলে তা মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে জমহুর ওলামাদের মতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যার প্রতি যুল্ম করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে গিয়ে বলতে হবে, ভাই/বোন! আমি আপনার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি বা আপনার গীবত করে আপনার সম্মান নষ্ট করেছি বা যুলুম করেছি। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে তাওবাহ্ করছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। এভাবে যত মানুষের সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ করেছে তত মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তবে গীতের ক্ষেত্রে যার গীবত করা হয়েছিল তিনি যদি সেটা না জানেন তাহলে সরাসরি তার গিয়ে গীবতের কথা স্বীকার না করে বরং তার কল্যানের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করা,তার ভাল গুনাবলি অন্যদের সামনে বলা অধিক উত্তম।আর যদি সেই ব্যক্তি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, অর্থ-সম্পদ হরণ করে থাকলে তা ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকারের নিকট পৌঁছে দিবে, তার পক্ষ থেকে দান-সদাক্বাহ্ করবে এবং নিজে বেশি বেশি করে সৎ কাজ/সাওয়াবের কাজ করে সাওয়াব বাড়িয়ে নেবে। কেননা ঐ যার অধিকার নষ্ট করেছে সে ব্যক্তি যদি জাহান্নামী হয় তাহলে সে ক্বিয়ামাতের মাঠে এই ব্যক্তির কাছে তার অধিকার ফেরত চাইতে পারে। তখন তাকে সাওয়াব দিয়ে প্রতিদান দিতে হবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: ‘‘যদি কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি তার সম্ভ্রম বা অন্য কিছুতে কোন যুলুম ও অন্যায় করে থাকে, তাহলে সেদিন আসার পূর্বেই সে যেন আজই তার নিকট হতে (ক্ষমা চাওয়া অথবা প্রতিশোধ/পরিশোধ দেয়ার মাধ্যমে) নিজেকে মুক্ত করে নেয়; যে দিন (ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য) না দীনার হবে না দিরহাম, টাকা-পয়সা, মাল-ধন (সেদিন) যালেমের নেক ‘আমল থাকলে তার যুল্ম অনুপাতে নেকী তার নিকট থেকে কেটে নিয়ে (মাযলুমকে দেয়া) হবে। পক্ষান্তরে যদি যদি তার নেকি না থাকে (অথবা নিঃশেষ হয়ে যায়) তাহলে তার বাদীর (মাযলূমের) গুনাহ নিয়ে তার ঘাড়ে চাপানো হবে।’’(সহীহুল বুখারী হা/২৪৪৯; জামি‘ আত তিরমিযী হা/২৪১৯) আর কেউ যদি কোন বান্দার হক নষ্ট করে কিন্তু যার হক নষ্ট করেছে শত চেষ্টা করেও তাওবাহ্ করার সময় তাকে খুঁজে না পায় বা তার কাছে পৌঁছতে না পারে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা গুনাহকারীকে মাফ করবেন। ইন-শা-আল্লাহ। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হক নষ্ট করার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার জন্য প্রথম ৫টি শর্ত যথেষ্ট। তবে আল্লাহর হকের মধ্যে কিছু হক আছে যা তাওবার মাধ্যমে মাফ হয় না সেগুলো কাযা আদায় করে হক পূরণ করতে হয়। যেমন, সলাত, সিয়াম ইত্যাদি। উপরে উল্লিখিত সকল সকল শর্ত পালন করে যে পাপী তাওবাহ্ করবে, তার তাওবাহ্ হবে খাঁটি তাওবাহ্। এই তাওবাই আল্লাহ চান এবং তিনি এই তাওবাই গ্রহণ করেন। বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হল ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী মা‘ইয বিন মালিক এর মত তাওবা। যার ব্যাপারে নাবী (ﷺ) বলেছিলেন :لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ‘‘সে এমন তাওবাহ্ করেছে যে, যদি তা একটি জাতির মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হত, তাহলে সকলের জন্য তা যথেষ্ট হত।’’(সহীহ মুসলিম হা/৪৫২৭) বিশুদ্ধ তাওবার উদাহরণ স্বরূপ ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী জুহায়নাহ্ গোত্রের নারীটির তাওবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যার ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেছেন :لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أهْلِ المَدِينَةِ لَوَسِعَتْهُمْ‘‘এই মহিলাটি এমন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করেছে যদি তা মদীনার ৭০ জন লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তাহলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত।’’(সহীহ মুসলিম হা/ ৪৫২৯) বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হল, যার পরে গুপ্ত ও প্রকাশ্যভাবে ‘আমলে কোন প্রকার পাপের আচরণ থাকবে না। যে তাওবাহ্ তাওবাকারীকে বিলম্বে ও অবিলম্বে সাফল্য দান করে। বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হল তাই, যার পরে তাওবাকারী বিগত অপরাধ জীবনের জন্য কান্না করে, পুনরায় সেই অপরাধ যেন ঘটে না যায় তার জন্য ভীত-আতঙ্কিত ও সতর্ক থাকে, অসৎসঙ্গীদের সংসর্গ বর্জন করে এবং সৎসঙ্গীদের সাহচর্য অবলম্বন করে। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় পাপকর্ম থেকে হেফাজতে রাখুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত

 প্রশ্ন: কুফু অর্থ কি? বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর ‘কুফু’ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর আরবি (كُفُو) ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমান, সমতা, সাদৃশ্য, সমকক্ষতা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় বর-কনের দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় কিছুতে সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে “কুফু” বলে। অথবা বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের মধ্যে দ্বীনদারিতা, সামাজিক মর্যাদা, আচার-আচরণ, নৈতিকতা, সম্পদ, বংশগৌরব ও ব্যক্তিগত রুচিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সামঞ্জস্য বা সমতা।বিয়ের ক্ষেত্রে “কুফু” একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ“তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং ‘কুফু’ বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও ‘কুফুর’ প্রতি লক্ষ্য রাখো।’’(ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৯৬৮; হাদিসটি বিশুদ্ধ)
.
▪️বিয়ের ক্ষেত্রে কুফু (সামঞ্জস্যতা) রক্ষা করা কেন জরুরি?
.
বিবাহের ক্ষেত্রে “কুফু” বা সামঞ্জস্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ, সুখী, সুন্দর ও মধুর দাম্পত্য জীবনের অন্যতম শর্ত হলো পাত্র-পাত্রীর মধ্যে চারিত্রিক, ধর্মীয় ও মানসিক দিক থেকে সামঞ্জস্যতা বা কুফু বিদ্যমান থাকা। কারণ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, বিপরীত চরিত্রের নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করলেও দাম্পত্যজীবনে প্রকৃত শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।যেমন, একজন মুত্তাকী, পরহেযগার ও নেককার ব্যক্তি (নারী পুরুষ) যদি কোনো ব্যভিচারী, চরিত্রহীন ও দুরাচারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও বোঝাপড়া গড়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন:اَلزَّانِیۡ لَا یَنۡکِحُ اِلَّا زَانِیَۃً اَوۡ مُشۡرِکَۃً ۫ وَّ الزَّانِیَۃُ لَا یَنۡکِحُہَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوۡ مُشۡرِکٌ ۚ وَ حُرِّمَ ذٰلِکَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ”ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকেই বিবাহ করে, আর ব্যভিচারিণী নারীকে বিবাহ করে কেবল ব্যভিচারী বা মুশরিক পুরুষ। এটি মুমিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে।”(সূরা আন-নূর: ৩) এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, নেককার ও চরিত্রবান মুমিন ব্যক্তি কখনোই ব্যভিচারী ও পথভ্রষ্ট ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে না; এবং দাম্পত্যজীবনে তাদের মধ্যে ‘কুফু’ বা সামঞ্জস্যতা থাকে না। অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:اَفَمَنۡ کَانَ مُؤۡمِنًا کَمَنۡ کَانَ فَاسِقًا ؕؔ لَا یَسۡتَوٗنَ”যে ব্যক্তি ঈমানদার, সে কি ফাসিকের মত হতে পারে? তারা কখনো সমান নয়।”(সূরা আস-সাজদাহ: ১৮) এই আয়াতগুলো আমাদেরকে দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করে, যার মধ্যে দ্বীন, চরিত্র ও শালীনতার অনুপম গুণাবলি বিদ্যমান। কারণ ভালোবাসা, শান্তি ও সুখ তখনই টেকসই হয়,যখন দু’জন মানুষের মধ্যে অন্তরের ও চারিত্রিক সামঞ্জস্য থাকে।
.
তাছাড়া একজন ধার্মিক ও পরহেযগার নারী-পুরুষ এবং একজন গুনাহগার ও অবাধ্য নারী পুরুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনা ও জীবনধারায় বিপুল ফারাক থাকে যা সংসার জীবনে সংঘাত ও অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দ্বীনদারির উপস্থিতি থাকলে বংশমর্যাদা, সামাজিক অবস্থান কিংবা অন্যান্য পার্থিব ব্যবধান ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়া যায়। তবে এর অর্থ এই নয় যে বংশমর্যাদা বা সামাজিক সামঞ্জস্যের বিষয়গুলো একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। বরং আজকের সময়ে প্রকৃত দ্বীনদার মানুষের অভাব এতটাই প্রকট যে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে এসব বিষয়ও পরিমিত গুরুত্বের দাবিদার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে দ্বীন ও চরিত্রের বিশুদ্ধতা। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকার “কুফু” বা উপযুক্ততা বিবাহ বৈধ হওয়া বা না হওয়ার শর্ত নয়; বরং এটি একটি উত্তম ও পরামর্শযোগ্য দিক মাত্র। কুফুর শর্ত পূর্ণ না হলেও বিয়ে শরীয়তে দৃষ্টিতে বৈধ। তবে অনেক সময় কুফুর প্রতি অমনোযোগিতা মানুষকে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, একজন কুরআনের হাফিজা ও পরহেযগার নারীর বিয়ে যদি এমন একজন পুরুষের সঙ্গে হয়, যে দাড়ি কামাতে অভ্যস্ত, হারাম উপার্জনে লিপ্ত এবং ইসলামের নির্দেশাবলিকে তুচ্ছজ্ঞান করে তাহলে সেই নারীকে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। হয়তো তাকে বলা হবে আধুনিক পোশাক পরতে, গান-বাজনায় অংশ নিতে বা ইসলামী জীবনদর্শন থেকে সরে আসতে।অন্যদিকে, কোনো ধর্মভীরু পুরুষ যদি এমন কোনো নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, যে তার দ্বীনদারিতে বাধা দেয়, হারাম পথে উপার্জনের জন্য তাকে প্ররোচিত করে, বা মা-বাবার হক আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে সেই সংসার হবে পাপ, কলহ ও অন্তরজ্বালায় পূর্ণ এক ঘোর অন্ধকার। এই কারণেই বিবাহের পূর্বে দ্বীন, চরিত্র, চিন্তাধারা, জীবনদর্শন ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে সামঞ্জস্যতা তথা কুফুর বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন। নচেৎ পারিবারিক সুখ-শান্তি ও দ্বীনি স্থিরতার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে।
.
▪️পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে কোন কোন ক্ষেত্রে কুফু বিবেচনা করতে হবে?
.
শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়েতে বংশীয় কুফুর গুরুত্ব সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে।অধিকাংশ আলেমগন চারটি বিষয়কে কুফুর অন্তর্ভূক্ত বলেছেন। সেগুলো হলো: দ্বীনদারি, স্বাধীন হওয়া (ক্রীতদাস না হওয়া), বংশমর্যাদা এবং পেশা। তাঁদের মতে, অতি উচ্চ বংশের কারও সাথে একদম নিচু বংশের কারও বিবাহ দেওয়া উচিত নয়। এমনকি সাহাবীগণের মাঝেও এসব কারণে অমিল হয়েছে (তবে সেটি কিছু সাহাবীর ক্ষেত্রে হয়েছে)। যেমন: নবীজির মুক্ত দাস যায়েদ (রা.)-এর সাথে কুরাইশ বংশের রমণী যাইনাব (রা.)-এর বিবাহ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ তাঁদের রুচি ভিন্ন ভিন্ন ছিলো।
.
পক্ষান্তরে আলেমদের অন্যদল প্রথম মতের বিরোধিতা করে বলেছেন যে,কুফু হবে দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে অর্থাৎ দ্বীনি কুফু ছাড়া কোন কুফু নেই। এই মতের অনুসারীগণ হলেন প্রখ্যাত সাহাবী উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু), ইবনু মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা), মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন, উমার ইবনু আব্দুল আযীয, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ,শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইবনু ক্বাইয়িম (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ। দলিলের আলোকে এই মতটিই সবচেয়ে বিশুদ্ধ। ইতিহাসে সেরা তিনজন ধনী সাহাবির একজন কুরাইশ বংশের আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.)-এর বোনকে নবিজি বিয়ে দেন দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া বিলাল (রা.)-এর সাথে। এমন অসম বিবাহের ঘটনা সাহাবিগণের মাঝে অনেক ছিলো। মূল বিষয় হলো: দ্বীনদারি ঠিক থাকলে অন্য কিছু সেভাবে ম্যাটার করে না। অল্প কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটে। সেজন্য নবিজি দ্বীনদারিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদীসে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘‘তোমরা যে ছেলের দ্বীনদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারবে, সে যদি প্রস্তাব দেয়, তাহলে তার কাছে (তোমাদের মেয়েকে) বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তা না করো, তবে পৃথিবীতে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’’ সাহাবীগণ বলেন, ‘যদি তার মাঝে কিছু ত্রুটি থাকে?’ নবীজি তখন আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করেন। (ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ১০৮৫; হাদিসটি হাসান সহিহ) অপর বর্ননায় এসেছে বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‘মনে রেখো! আরবের ওপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং অনারবের ওপরও কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং কোনো শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যায় কেবল তাকওয়া তথা আল্লাহ-ভীতির মাধ্যমে।’’ [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৩৪৮৯; হাদিসটি সহিহ]
.
তাছাড়া বংশীয় সমতার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। বরং এর বিপরীতে এমন অনেক ঘটনা ও রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (ﷺ) ও সাহাবীদের যুগে বংশীয় সমতা লক্ষণীয় বিষয় ছিল না। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) (১৯৪-২৫৬ হি./৮১০-৮৭০ খ্রি.) তাঁর ছহীহুল বুখারীতে بَابُ الْأَكْفَاءِ فِى الدِّيْنِ ‘স্বামী ও স্ত্রী একই দ্বীনভুক্ত হওয়া’ শীর্ষক শিরোনাম নির্ধারণ করেছেন। সেখানে তিনি চারটি হাদীছ উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন যে, বংশীয় সমতা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং তাক্বওয়া, দ্বীনদারিতাই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,”আবূ হুযাইফাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইবনু উতবাহ ইবনু রাবি‘আ ইব‌নু আবদে শামস, যিনি বদ‌রের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ‌ (ﷺ)-এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সালিমকে পালক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তার সঙ্গে তিনি তাঁর ভাতিজী ওয়ালীদ ইব‌নু উতবাহ ইবনু রাবি‘আর কন্যা হিন্দাকে বিয়ে দেন। সে ছিল এক আনছারী মহিলার আযাদকৃত দাস”।(সহীহ বুখারী, হা/৫০৮৮) আবার মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সহধর্মিণী ছিলেন যুবা‘আহ বিনতে যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহা)। অথচ তিনি ছিলেন অভিজাত বংশের সম্ভ্রান্ত মেয়ে।(সহীহ বুখারী, হা/৫০৮৯) এমনকি দারিদ্র্যতা কুফুর ক্ষেত্রে বাধা তাও ঠিক নয়। যেমন সাহল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,”এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ‌ (ﷺ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন তিনি (সাহাবীবর্গকে) বললেন, তোমাদের এর সম্পর্কে কী ধারণা? তারা উত্তর দিলেন, যদি কোথাও কোন মহিলার প্রতি এ লোকটি বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার সঙ্গে বিয়ে দেয়া যায়। যদি সে সুপারিশ করে, তাহলে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, যদি কথা বলে, তবে তা শোনা হয়। রাবী বলেন, অতঃপর নবী করীম (ﷺ) চুপ করে থাকলেন। এরপর সেখান দিয়ে একজন গরীব মুসলিম অতিক্রম করতেই রাসূলুল্লাহ‌ (ﷺ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? তারা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যক্তি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব করে, তার সাথে বিয়ে দেয়া হয় না। যদি কারও জন্য সুপারিশ করে, তবে তা গ্রহণ করা হয় না। যদি কোন কথা বলে, তবে তা শোনা হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ‌ (ﷺ) বললেন, দুনিয়া ভর্তি ঐ ধনীদের চেয়ে এ দরিদ্র লোকটি উত্তম”।(সহীহ বুখারী, হা/৫০৯১)
.
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেক আলিম কেবল দ্বীনদারির ক্ষেত্রে বর-কনের মাঝে সমতাবিধানকে জরুরি বলেছেন। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] কুফু সম্পর্কে বলেন, وَعِفَّةٌ فَلَيْسَ فَاسِقٌ كُفْءَ عَفِيْفَةٍ ‘চারিত্রিক নিষ্কলুষতার সাথে নাফরমানীর কোন কুফু নেই”(যাকারিয়া মুহাম্মাদ ইবনু যাকারিয়া আল-আনছারী আশ-শাফেঈ, মাবহাজুত তুল্লাবি ফী ফিক্বহি ইমাম আশ-শাফেঈ পৃষ্ঠা: ১৮৩) কুফুর আলোচনায় অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, وَالْمُبْتَدِعُ مَعَ السُّنِّيَّةِ كَالْفَاسِقِ مَعَ الْعَفِيْفَةِ ‘চারিত্রিক নিষ্কলুষতার সাথে নাফরমানীর যেমন কোন কুফু নেই। অনুরূপভাবে সুন্নাহপন্থীদের সাথে বিদ‘আতীদের কোন কুফু নেই”( মুগনীউল মুহতাজ, ৩য় খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১৬৬) ইমাম ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:৬২০ হি.] বলেন,والكفء ذو الدين والمنصب “কুফু হল দ্বীন ও সম্মান-মর্যাদার’।(মাওক্বিফু আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আতি মিন আহলিল হাওয়া ওয়াল বিদাঈ, ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৩৮৫)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তাঁর বিখ্যাত ‘যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থে الكفاءة في النكاح ‘বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা’ এর বিধানাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনই মূলত কুফু বা সমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু। সুতরাং দ্বীনদারিতার উপর ভিত্তি করে মুসলিম নারী-পুরুষের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। কেননা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাপন্থী যদি বিদ‘আতী কোন ছেলে বা মেয়ের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তাহলে দ্বীন মানার ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে। যা পারিবারিক সুখ-শান্তি ও দাম্পত্যময় জীবনের জন্য চরম অন্তরায়। অনুরূপভাবে দ্বীন মানার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হবে। মূলত তাক্বওয়া, পরহেযগারিতা তথা দ্বীনদারিতাই হলো বিবাহের ক্ষেত্রে কুফু বা সমতা। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত দলীলগুলো উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ.”হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহ‌র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ‌ সবকিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন’ (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই’ (সূরা আল-হুজুরাত: ১০)। তিনি আরো বলেন, وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু’ (সূরা আত-তাওবাহ: ৭১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, فَاسۡتَجَابَ لَہُمۡ رَبُّہُمۡ اَنِّیۡ لَاۤ اُضِیۡعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنۡکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی ۚ بَعۡضُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ ‘অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কর্মনিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ’ (সূরা আলে ‘ইমরান: ১৯৫)। হাদীছে এসেছে,لَا فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى أَعْجَمِىٍّ وَلَا لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلَا لأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى اَلنَّاسُ مِنْ آدَمَ وَآدَمَ مِنْ تُرَابٍ.”আযমীদের উপর আরবীদের কোন মর্যাদা নেই। আরবীদের উপর আযমীদেরও কোন মর্যাদা নেই। কালোর উপর লালের এবং লালের উপর কালোর কোন মর্যাদা নেই, তাক্বওয়া ব্যতীত। মানুষ আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে” (আলী ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবিল ঈয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়্যাহ, তাহক্বীক্ব: মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), হা/৪০৬) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আবূ হাতিম আল-মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِيْنَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوْهُ إِلَّا تَفْعَلُوْا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الْأَرْضِ وَفَسَادٌ.”তোমরা যে লোকের দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে”(তিরমিযী, হা/১০৮৫, সনদ হাসান) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইবনু ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ, যাদুল মা‘আদ ফী হাদই খায়রিল ‘ইবাদ (বৈরূত: মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২৭শ সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ৫ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১৫৯-১৬০ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ, ফাতাওয়া সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৫৫১০)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! বিবাহের ক্ষেত্রে যেখানে ছেলে-মেয়ের দ্বীনদারিতাই মূলত কুফু। সেখানে আক্বীদার বিষয়টি আরো জোরালোভাবে মূল্যায়ন করা কর্তব্য। কারণ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পথের একজন মেয়ের সাথে বিদ‘আতপন্থী কোনো ছেলের বিয়ে হলে, তা দাম্পত্য জীবনে দ্বীনী সংঘাত, অন্তরদ্বন্দ্ব ও কলহ সৃষ্টি করবে।সহীহ আক্বীদা ও আমলের পরিবেশ নষ্ট হবে, সন্তানরাও সঠিক দীন থেকে বঞ্চিত হবে। এমন সম্পর্ক হৃদয়কে বিদ‘আতের গন্ধে ব্যাধিগ্রস্ত করে দেয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই বিবাহে অবশ্যই সুদৃঢ় আক্বীদা ও সহীহ মানহাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,مَنْ أَحَبَّ صَاحِبَ بِدْعَةٍ أَحْبَطَ اللهُ عَمَلَهُ وَأَخْرَجَ نُوْرَ الْإِسْلَامِ مِنْ قَلْبِهِ، وَمَنْ زَوَّجَ كَرِيْمَتَهُ مِنْ مُبْتَدِعٍ فَقَدْ قَطَعَ رَحِمَهَا، وَمَنْ جَلَسَ مَعَ صَاحِبِ بِدْعَةٍ لَمْ يُعْطَ الْحِكْمَةَ، وَإِذَا عَلِمَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ أَنَّهُ مُبْغِضٌ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ رَجَوْتُ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَهُ.”যে ব্যক্তি বিদ‘আতীকে ভালোবাসে আল্লাহ তা‘আলা তার আমলকে ধ্বংস করে দেন এবং তার অন্তর থেকে ইসলামের জ্যোতিকে বের করে দেন। আর যে কোন বিদ‘আতীর কন্যাকে বিবাহ করে তার প্রতি রহম বা আল্লাহর দয়া কেটে যায়। যে বিদ‘আতীর সাথে উপবেশন করে তাকে হেকমত বা প্রজ্ঞা দান করা হয় না। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন ব্যক্তির ব্যাপারে জানেন যে, সে বিদ‘আতীর সাথে বিদ্বেষপরায়ণ, আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন”।(আল-জামিঊ লি আহকামিল কুরআন, ৭ম খন্ড; পৃষ্ঠা: ১৩) বিদ‘আতীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমামগণ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত;১৭৯ হি.] বলেন, لَا يُنْكَحُ أَهْلُ الْبِدَعِ وَلَا يُنْكَحُ إلَيْهِمْ وَلَا يُسَلَّمُ عَلَيْهِمْ وَلَا يُصَلَّى خَلْفَهُمْ وَلَا تُشْهَدُ جَنَائِزُهُمْ ‘বিদ‘আতীকে বিয়ে করা যাবে না। তাদের সাথে কাউকে বিয়ে দেয়া যাবে না, তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে না, তাদের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে না এবং তাদের জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না”।(মালিক ইবনু আনাস, আল-মুদাওয়ানাতু (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.); ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১৭৭) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, مَنْ لَمْ يَرْبَعْ بِعَلِّي ابْنِ أَبِي الطَّالِبِ فِي الخِلَافَةِ فَلَا تُكَلِّمُوْهُ وَلَا تَنَاكِحُوُهْ ‘যারা আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতকালে তাঁর সাথে থাকেনি তার সাথে তোমরা কথা বলবে না এবং তার সাথে বিবাহ করবে না”।(আবুল হুসাইন ইবনু আবূ ই‘আলা, মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ, ত্বাবাক্বাতুল হানাবালাহ (বৈরূত: দারুল মা‘আরিফাহ, তাবি), ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৪৫)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

কারো জীবন বাঁচাতে গিয়ে যদি নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে কী করণীয়

 প্রশ্ন: কারো জীবন বাঁচাতে গিয়ে যদি নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে কী করণীয়? খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা।

▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর যখন কোনো মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে, তখন তাকে রক্ষার সামর্থ্য রাখে এমন প্রতিটি ব্যক্তির ওপর তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ওয়াজিব (অবশ্যক কর্তব্য)। এমনকি কেউ যদি সালাতে রত থাকে, তবুও তাকে সেই সালাত ভেঙে উদ্ধারে অগ্রসর হতে হবে যদিও এতে সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই সালাত কাযা করতে হবে। কারণ, ইসলামে মানুষের প্রাণের গুরুত্ব অতুলনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—”ومن أحياها فكأنما أحيا الناس جميعًا“যে কেহ কোনো প্রাণ বাঁচায়, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল।” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩২) ইসলাম এতটাই মানবকেন্দ্রিক যে, কোনো ব্যক্তি যদি খাদ্যাভাবে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তবে তার জন্য সাময়িকভাবে হারাম খাদ্যও হালাল করে দেওয়া হয়েছে শুধু প্রাণ রক্ষার স্বার্থে। তবে যদি কাউকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে, তাহলে সে আত্মত্যাগ জায়েয নয়। কারণ শরিয়ত কাউকে নিজের জান-মালের নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে অন্যের প্রতি এমনভাবে অগ্রাধিকার দিতে অনুমতি দেয়নি, যাতে সে নিজেই ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ একজন ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে যদি কেউ নিজেই ডুবে যায়, অথবা নিজেও অনাহারে ক্লিষ্ট থাকা অবস্থায় অন্য ক্ষুধার্তকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য দিয়ে দেয় এমন যে খাদ্য ছাড়া সে নিজেও জীবন রক্ষা করতে পারবে না তাহলে এরূপ আত্মত্যাগ শরিয়তসম্মত নয়। কারণ ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো নিজের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ“আর তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” (সূরা বাকারা: ১৯৫)আর এ কারণে আল্লাহর দরবারে তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন,فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬) হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন যে,لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না; অন্যের ক্ষতি করাও যাবেনা”(মুসনাদে আহমাদ হা/২২২৭২, সিলসিলা সহীহা হা/২৫০)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন:
” وإذا اشتدت المخمصة في سنة المجاعة ، وأصابت الضرورة خلقا كثيرا ، أو كان عند بعض الناس قدر كفايته وكفاية عياله ، لم يلزمه بذله للمضطرين ، وليس لهم أخذه منه ; لأن ذلك يفضي إلى وقوع الضرورة به ، ولا يدفعها عنهم . وكذلك إن كانوا في سفر ومعه قدر كفايته من غير فضلة ، لم يلزمه بذل ما معه للمضطرين … لأن هذا مفض به إلى هلاك نفسه ، وهلاك عياله ، فلم يلزمه ، كما لو أمكنه إنجاء الغريق بتغريق نفسه . ولأن في بذله إلقاء بيده إلى التهلكة ، وقد نهى الله عن ذلك”
“যখন দুর্ভিক্ষের বছরগুলিতে খাদ্যাভাব চরমে পৌঁছায়, এবং বহু মানুষের উপর তা বিপর্যয় ডেকে আনে, কিংবা কারো কাছে নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য থাকে তবে সে বাধ্য নয় যে, তা দরিদ্রদের দিয়ে দেবে। এমনকি দরিদ্ররাও তার কাছ থেকে সেটা জোর করে নিতে পারবে না। কারণ, এতে করে তার নিজের উপরই সংকট দেখা দেবে, অথচ তাদের সমস্যাও এতে পুরোপুরি দূর হবে না। একইভাবে, যদি তারা সফরে থাকে এবং তার কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার থাকে কিন্তু অতিরিক্ত কিছু না থাকে তাহলে সে বাধ্য নয় তার খাবার দরিদ্রদের দিয়ে দিতে কারণ এতে নিজের এবং পরিবারের ধ্বংস ডেকে আনা হয়, তাই তা তার উপর আবশ্যক নয়। যেমন: কেউ যদি ডুবে যাওয়া একজনকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়ার পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে সেটাও তার জন্য আবশ্যক নয়। আর এটা এই কারণেও বৈধ নয় যে এতে নিজের হাত দিয়ে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করা হয়, অথচ আল্লাহ তা নিষেধ করেছেন। সুতরাং, নিজে ডুবে গিয়ে কাউকে বাঁচানো বৈধ নয়। তেমনি, খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া বৈধ নয়, যদি এতে নিজের ধ্বংস ঘটে।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী,খন্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪২১)
.
শারহু মুনতাহাল ইরাদাত গ্রন্থে বলা হয়েছে: (ومن لم يجد) ما يسد رمقه (إلا طعام غيره : فربه المضطر ، أو الخائف أن يُضطر : أحق به) ؛ لمساواته الآخر في الاضطرار ، وانفراده بالملك؛ أشبه غير حالة الاضطرار .(وليس له) أي: رب الطعام إذا كان كذلك (إيثاره)، أي: غيره به؛ لئلا يلقي بيده إلى التهلكة”যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় পড়ে যে, তার ক্ষুধা নিবারণের (অর্থাৎ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত টিকে থাকার) জন্য নিজের কোনো খাবার নেই এবং কেবল অন্যের খাবারই রয়েছে তাহলে যদি সে চরম প্রয়োজনগ্রস্ত হয় কিংবা আশঙ্কা করে যে, খুব শিগগিরই সে প্রয়োজনের মুখে পড়বে তবে সে ঐ খাবারের প্রতি অধিক হকদার হবে। “কারণ, যেমন করে সে (খাদ্য চাওয়া ব্যক্তি) প্রয়োজনে পড়েছে, তেমনি মালিক নিজেও সেই প্রয়োজনে পড়েছে। কিন্তু মালিকের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে ঐ খাদ্যের উপর, যা তাকে প্রয়োজনের বাইরে অন্য কোনো পরিস্থিতির মতোই অধিকারী করে তোলে। সুতরাং মালিকের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য কাউকে তা দিয়ে নিজের জীবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।”(শারহু মুনতাহা আল-ইরাদাত, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩১৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
إذا اضطر إلى مال الغير، فإن صاحب المال إن كان مضطراً إليه فهو أحق به.مثاله: رجل معه خبزة وهو جائع وصاحبه جائع، وليس معه خبز، فالصاحب محتاج إلى عين مال الغير، لكن الغير ـ أيضاً ـ محتاج إليه، ففي هذه الحال لا يحل للصاحب أن يأخذ مال الغير؛ لأن صاحبه أحق به منه .
ولكن هل يجوز لصاحبه أن يؤثره أو لا؟
الجواب: المذهب أن الإيثار في هذه الحال لا يجوز، وقد سبق لنا قاعدة في ذلك، وهي أن الإيثار بالواجب غير جائز، ومن أمثلتها في باب التيمم إذا كان الإنسان ليس معه من الماء إلا ما يكفي لطهارته، ومعه آخر يحتاج إلى ماءٍ فلا يعطيه إياه والثاني يتيمَّم؛ لأن هذا إيثار بالواجب، والإيثار بالواجب حرام.
وعلى هذا : فإذا كان صاحب الطعام محتاجاً إليه، يعني مضطراً إليه ، كضرورة الصاحب: فإنه لا يجوز أن يؤثر به الصاحب؛ لأن هذا يجب عليه أن ينقذ نفسه، وقد قال النبي عليه الصلاة
والسلام: ابدأ بنفسك ، فلا يجوز أن يؤثر غيره؛ لوجوب إنقاذ نفسه من الهلكة قبل إنقاذ غيره، هذا هو المشهور من المذهب.
وذهب ابن القيم ـ رحمه الله ـ إلى أنه يجوز في هذه الحال أن يؤثر غيره بماله .ولكن المذهب في هذا أصح، وأنه لا يجوز، اللهم إلا إذا اقتضت المصلحة العامة للمسلمين أن يؤثره، فقد نقول: إن هذا لا بأس به، مثل لو كان هذا الصاحب المحتاج رجلاً يُنتفع به في الجهاد في سبيل الله، أو رجلاً عالماً ينفع الناس بعلمه، وصاحب الماء المالك له، أو صاحب الطعام رجل من عامة المسلمين، فهنا قد نقول: إنه في هذه الحال، مراعاة للمصلحة العامة: له أن يؤثره، وأما مع عدم المصلحة العامة فلا شك أنه يجب على الإنسان أن يختص بهذا الطعام الذي لا يمكن أن ينقذ به نفسه، وصاحبه”
“যদি কেউ অপরের সম্পদের প্রতি বাধ্য হন (অর্থাৎ, জীবন রক্ষার জন্য অপরের সম্পদ নিতে বাধ্য হন), তাহলে যদি সেই সম্পদের মালিকও তা গ্রহণে বাধ্য হন, তবে মালিকেরই এতে অধিকার বেশি। উদাহরণস্বরূপ: একজন মানুষের কাছে একটি রুটি আছে এবং সে ক্ষুধার্ত। তার সাথের আরেকজনও ক্ষুধার্ত, কিন্তু তার কাছে রুটি নেই। অর্থাৎ, সাথের লোকটি অপরের রুটির প্রতি প্রয়োজনে পড়েছে। কিন্তু অপরজনও ঠিক একইভাবে এই রুটির প্রয়োজন অনুভব করছে। এমতাবস্থায়, সাথের লোকটির জন্য অপরের রুটি নেওয়া বৈধ নয়; কারণ, রুটির মালিক তার চেয়ে বেশি হকদার। তবে প্রশ্ন হলো: রুটির মালিক কি অপরজনকে এই রুটি নিজের ওপর প্রাধান্য দিয়ে দিতে পারবে?
উত্তর: মাযহাব অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে প্রাধান্য (إيثار) দেওয়া বৈধ নয়। পূর্বে আমরা একটি মূলনীতি আলোচনা করেছি: “যে কাজ ফরজ, তা অন্যের জন্য ত্যাগ করা বৈধ নয়”।এর একটি উদাহরণ হলো তায়াম্মুম (মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন): যদি কারো কাছে এতটুকু পানি থাকে যা কেবলমাত্র তার নিজের অজুর জন্য যথেষ্ট,এবং তার সাথের একজনেরও পানি প্রয়োজন হয় তবে সে সেই পানিটি তাকে দিতে পারবে না। বরং দ্বিতীয়জন তায়াম্মুম করবে। কারণ, এটি ফরজ কাজ অন্যকে প্রাধান্য দিয়ে ত্যাগ করা, আর তা হারাম।
এই ভিত্তিতে, যদি খাবারের মালিক নিজেও এ খাবারের চরমভাবে প্রয়োজনমুখী হন যেমন তা দিয়ে তার জীবন বাঁচাতে হয়, তাহলে তার জন্য সেই খাবার কাউকে দিয়ে দেওয়া বৈধ নয়। বরং তার জন্য আবশ্যক যে, সে নিজেই তা গ্রহণ করে নিজের জীবন রক্ষা করবে। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:“তোমার নিজের থেকে শুরু করো।” অতএব, নিজের জান বাঁচানো অন্যের জান বাঁচানোর চেয়ে অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। এটাই হলো (হাম্বলী) মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত। তবে ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন এই অবস্থায় একজন নিজের সম্পদ অন্যকে দিয়ে দিতে পারে,অর্থাৎ ইসার তথা অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া বৈধ)। কিন্তু মাযহাবের বক্তব্যই অধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য যা হলো: এমন অবস্থায় ইসার (নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া) বৈধ নয়। তবে একটি ব্যতিক্রম হতে পারে যদি মুসলিম সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে কাউকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তখন বলা যায় এতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন: যদি সেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তি এমন কেউ হন যিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশ নেন, কিংবা এমন একজন আলেম যিনি তার জ্ঞানের দ্বারা সমাজ উপকৃত করে থাকেন, আর খাবারের মালিক হন সাধারণ এক ব্যক্তি তাহলে এ জাতীয় ক্ষেত্রে সামষ্টিক কল্যাণ বিবেচনায় প্রাধান্য দেওয়া বৈধ হতে পারে। কিন্তু যদি কোনো সামষ্টিক কল্যাণের দিক বিবেচনায় না থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হবে যে, সে নিজেই সেই খাবার খেয়ে নিজের জীবন রক্ষা করবে।” (ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৪০)
.
শাফেয়ী মাযহাবের বক্তব্য হলো: যদি কোনো মুসলমান এমন কিছু পায় যা তার জীবন রক্ষা করতে পারে এবং সে বাধ্যগত অবস্থায় থাকে, তবে সে তা অপর এক মুসলমানকে দিতে পারবে—অর্থাৎ তাকে নিজের উপর প্রাধান্য দিতে পারবে। তবে যদি সেই ব্যক্তি অমুসলিম হয়, তাহলে তাকে নিজের উপর প্রাধান্য দেওয়া বৈধ নয়।শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
إذا وجد المضطر طعاما حلالا لغيره فله حالان.أحدهما: أن يكون مالكه حاضرا. فإن كان مضطرا إليه، فهو أولى به، وليس للأول أخذه منه إذا لم يفضل عن حاجته …فإن آثر المالك غيره على نفسه، فقد أحسن. قال الله تعالى: (وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ) .وإنما يؤثر على نفسه مسلما.فأما الكافر فلا يؤثره، حربيا كان أو ذميا، وكذا لا يؤثر بهيمة على نفسه”
“যদি কোনো বিপদাপন্ন ব্যক্তি এমন কোনো হালাল খাদ্য খুঁজে পায় যা অপর একজনের মালিকানাধীন, তবে এর দুটি অবস্থা হতে পারে:
(১) যদি মালিক উপস্থিত থাকেন এবং তিনিও সেই খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে থাকেন (অর্থাৎ তিনিও বিপদগ্রস্ত), তবে মালিকই এ খাদ্যের অধিক হকদার। তখন অপর ব্যক্তি তা জোরপূর্বক গ্রহণ করতে পারবে না।
(২) তবে যদি মালিক নিজে ক্ষুধার্ত বা প্রয়োজনীয় অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও অপর ব্যক্তিকে নিজের ওপর অগ্রাধিকার দেন, তাহলে এটি একটি মহান কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:“তারা নিজেদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়।” (সূরা আল-হাশর: ৯) তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই প্রাধান্য দেওয়া কেবল মুসলমানের ক্ষেত্রে বৈধ; কোনো কাফের হোক সে যুদ্ধরত (হারবী) অথবা অমুসলিম নাগরিক (যেমন: জিম্মি) কিংবা কোনো পশুর জন্য নিজেকে বঞ্চিত করা বৈধ নয়।”(রওযাতুত-তালিবীন; পৃষ্ঠা: ৩; পৃষ্ঠা: ২৮৫; নববী আল মাজমু; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
পরিশেষে, উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য একজনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি সাঁতার জানে না, তবুও একজন ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপ দেয় তাহলে তা বৈধ নয়, কারণ এতে নিজের জীবন হুমকির মুখে পড়ে। অনুরূপভাবে যদি কেউ সাঁতার জানে ঠিকই, তবে ডুবন্ত ব্যক্তি তাকে আঁকড়ে ধরার কারণে তার নিজের মৃত্যুর আশঙ্কা হয় তাহলে তার জন্য নিজেকে সেই ব্যক্তির কবল থেকে মুক্ত করে নেওয়া এবং প্রয়োজনে তাকে ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে এমনকি যদি এতে ডুবন্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে নিজের জীবন রক্ষা করাই সর্বাগ্রে আবশ্যক, তা সে ডুবন্ত ব্যক্তি মুসলিম হোক বা অমুসলিম। বরং প্রকৃত কথা হলো নিজের জীবন রক্ষা করা শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি ফরজ (আবশ্যিক কর্তব্য)। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর তোমরা স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না।”(সূরা আল-বাকারা: ১৯৫) তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) এবং তাঁর অনুসারী একদল আলেমের মতে, যদি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি একজন মুসলমান হন এবং তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় তাহলে নিজের ওপর তাকেই প্রাধান্য দেওয়া বৈধ হবে। ইমাম শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) এর মাযহাবেও এটিই গ্রহণযোগ্য মত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বিবেকবান, ভারসাম্যপূর্ণ ও শরিয়তসম্মতভাবে মানবিক দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬◐✪◑▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

Translate