Wednesday, August 6, 2025

কারো জীবন বাঁচাতে গিয়ে যদি নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে কী করণীয়

 প্রশ্ন: কারো জীবন বাঁচাতে গিয়ে যদি নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে কী করণীয়? খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা।

▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর যখন কোনো মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে, তখন তাকে রক্ষার সামর্থ্য রাখে এমন প্রতিটি ব্যক্তির ওপর তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ওয়াজিব (অবশ্যক কর্তব্য)। এমনকি কেউ যদি সালাতে রত থাকে, তবুও তাকে সেই সালাত ভেঙে উদ্ধারে অগ্রসর হতে হবে যদিও এতে সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই সালাত কাযা করতে হবে। কারণ, ইসলামে মানুষের প্রাণের গুরুত্ব অতুলনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—”ومن أحياها فكأنما أحيا الناس جميعًا“যে কেহ কোনো প্রাণ বাঁচায়, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল।” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩২) ইসলাম এতটাই মানবকেন্দ্রিক যে, কোনো ব্যক্তি যদি খাদ্যাভাবে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তবে তার জন্য সাময়িকভাবে হারাম খাদ্যও হালাল করে দেওয়া হয়েছে শুধু প্রাণ রক্ষার স্বার্থে। তবে যদি কাউকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে, তাহলে সে আত্মত্যাগ জায়েয নয়। কারণ শরিয়ত কাউকে নিজের জান-মালের নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে অন্যের প্রতি এমনভাবে অগ্রাধিকার দিতে অনুমতি দেয়নি, যাতে সে নিজেই ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ একজন ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে যদি কেউ নিজেই ডুবে যায়, অথবা নিজেও অনাহারে ক্লিষ্ট থাকা অবস্থায় অন্য ক্ষুধার্তকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য দিয়ে দেয় এমন যে খাদ্য ছাড়া সে নিজেও জীবন রক্ষা করতে পারবে না তাহলে এরূপ আত্মত্যাগ শরিয়তসম্মত নয়। কারণ ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো নিজের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ“আর তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” (সূরা বাকারা: ১৯৫)আর এ কারণে আল্লাহর দরবারে তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন,فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬) হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন যে,لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না; অন্যের ক্ষতি করাও যাবেনা”(মুসনাদে আহমাদ হা/২২২৭২, সিলসিলা সহীহা হা/২৫০)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন:
” وإذا اشتدت المخمصة في سنة المجاعة ، وأصابت الضرورة خلقا كثيرا ، أو كان عند بعض الناس قدر كفايته وكفاية عياله ، لم يلزمه بذله للمضطرين ، وليس لهم أخذه منه ; لأن ذلك يفضي إلى وقوع الضرورة به ، ولا يدفعها عنهم . وكذلك إن كانوا في سفر ومعه قدر كفايته من غير فضلة ، لم يلزمه بذل ما معه للمضطرين … لأن هذا مفض به إلى هلاك نفسه ، وهلاك عياله ، فلم يلزمه ، كما لو أمكنه إنجاء الغريق بتغريق نفسه . ولأن في بذله إلقاء بيده إلى التهلكة ، وقد نهى الله عن ذلك”
“যখন দুর্ভিক্ষের বছরগুলিতে খাদ্যাভাব চরমে পৌঁছায়, এবং বহু মানুষের উপর তা বিপর্যয় ডেকে আনে, কিংবা কারো কাছে নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য থাকে তবে সে বাধ্য নয় যে, তা দরিদ্রদের দিয়ে দেবে। এমনকি দরিদ্ররাও তার কাছ থেকে সেটা জোর করে নিতে পারবে না। কারণ, এতে করে তার নিজের উপরই সংকট দেখা দেবে, অথচ তাদের সমস্যাও এতে পুরোপুরি দূর হবে না। একইভাবে, যদি তারা সফরে থাকে এবং তার কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার থাকে কিন্তু অতিরিক্ত কিছু না থাকে তাহলে সে বাধ্য নয় তার খাবার দরিদ্রদের দিয়ে দিতে কারণ এতে নিজের এবং পরিবারের ধ্বংস ডেকে আনা হয়, তাই তা তার উপর আবশ্যক নয়। যেমন: কেউ যদি ডুবে যাওয়া একজনকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়ার পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে সেটাও তার জন্য আবশ্যক নয়। আর এটা এই কারণেও বৈধ নয় যে এতে নিজের হাত দিয়ে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করা হয়, অথচ আল্লাহ তা নিষেধ করেছেন। সুতরাং, নিজে ডুবে গিয়ে কাউকে বাঁচানো বৈধ নয়। তেমনি, খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া বৈধ নয়, যদি এতে নিজের ধ্বংস ঘটে।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী,খন্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪২১)
.
শারহু মুনতাহাল ইরাদাত গ্রন্থে বলা হয়েছে: (ومن لم يجد) ما يسد رمقه (إلا طعام غيره : فربه المضطر ، أو الخائف أن يُضطر : أحق به) ؛ لمساواته الآخر في الاضطرار ، وانفراده بالملك؛ أشبه غير حالة الاضطرار .(وليس له) أي: رب الطعام إذا كان كذلك (إيثاره)، أي: غيره به؛ لئلا يلقي بيده إلى التهلكة”যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় পড়ে যে, তার ক্ষুধা নিবারণের (অর্থাৎ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত টিকে থাকার) জন্য নিজের কোনো খাবার নেই এবং কেবল অন্যের খাবারই রয়েছে তাহলে যদি সে চরম প্রয়োজনগ্রস্ত হয় কিংবা আশঙ্কা করে যে, খুব শিগগিরই সে প্রয়োজনের মুখে পড়বে তবে সে ঐ খাবারের প্রতি অধিক হকদার হবে। “কারণ, যেমন করে সে (খাদ্য চাওয়া ব্যক্তি) প্রয়োজনে পড়েছে, তেমনি মালিক নিজেও সেই প্রয়োজনে পড়েছে। কিন্তু মালিকের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে ঐ খাদ্যের উপর, যা তাকে প্রয়োজনের বাইরে অন্য কোনো পরিস্থিতির মতোই অধিকারী করে তোলে। সুতরাং মালিকের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য কাউকে তা দিয়ে নিজের জীবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।”(শারহু মুনতাহা আল-ইরাদাত, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩১৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
إذا اضطر إلى مال الغير، فإن صاحب المال إن كان مضطراً إليه فهو أحق به.مثاله: رجل معه خبزة وهو جائع وصاحبه جائع، وليس معه خبز، فالصاحب محتاج إلى عين مال الغير، لكن الغير ـ أيضاً ـ محتاج إليه، ففي هذه الحال لا يحل للصاحب أن يأخذ مال الغير؛ لأن صاحبه أحق به منه .
ولكن هل يجوز لصاحبه أن يؤثره أو لا؟
الجواب: المذهب أن الإيثار في هذه الحال لا يجوز، وقد سبق لنا قاعدة في ذلك، وهي أن الإيثار بالواجب غير جائز، ومن أمثلتها في باب التيمم إذا كان الإنسان ليس معه من الماء إلا ما يكفي لطهارته، ومعه آخر يحتاج إلى ماءٍ فلا يعطيه إياه والثاني يتيمَّم؛ لأن هذا إيثار بالواجب، والإيثار بالواجب حرام.
وعلى هذا : فإذا كان صاحب الطعام محتاجاً إليه، يعني مضطراً إليه ، كضرورة الصاحب: فإنه لا يجوز أن يؤثر به الصاحب؛ لأن هذا يجب عليه أن ينقذ نفسه، وقد قال النبي عليه الصلاة
والسلام: ابدأ بنفسك ، فلا يجوز أن يؤثر غيره؛ لوجوب إنقاذ نفسه من الهلكة قبل إنقاذ غيره، هذا هو المشهور من المذهب.
وذهب ابن القيم ـ رحمه الله ـ إلى أنه يجوز في هذه الحال أن يؤثر غيره بماله .ولكن المذهب في هذا أصح، وأنه لا يجوز، اللهم إلا إذا اقتضت المصلحة العامة للمسلمين أن يؤثره، فقد نقول: إن هذا لا بأس به، مثل لو كان هذا الصاحب المحتاج رجلاً يُنتفع به في الجهاد في سبيل الله، أو رجلاً عالماً ينفع الناس بعلمه، وصاحب الماء المالك له، أو صاحب الطعام رجل من عامة المسلمين، فهنا قد نقول: إنه في هذه الحال، مراعاة للمصلحة العامة: له أن يؤثره، وأما مع عدم المصلحة العامة فلا شك أنه يجب على الإنسان أن يختص بهذا الطعام الذي لا يمكن أن ينقذ به نفسه، وصاحبه”
“যদি কেউ অপরের সম্পদের প্রতি বাধ্য হন (অর্থাৎ, জীবন রক্ষার জন্য অপরের সম্পদ নিতে বাধ্য হন), তাহলে যদি সেই সম্পদের মালিকও তা গ্রহণে বাধ্য হন, তবে মালিকেরই এতে অধিকার বেশি। উদাহরণস্বরূপ: একজন মানুষের কাছে একটি রুটি আছে এবং সে ক্ষুধার্ত। তার সাথের আরেকজনও ক্ষুধার্ত, কিন্তু তার কাছে রুটি নেই। অর্থাৎ, সাথের লোকটি অপরের রুটির প্রতি প্রয়োজনে পড়েছে। কিন্তু অপরজনও ঠিক একইভাবে এই রুটির প্রয়োজন অনুভব করছে। এমতাবস্থায়, সাথের লোকটির জন্য অপরের রুটি নেওয়া বৈধ নয়; কারণ, রুটির মালিক তার চেয়ে বেশি হকদার। তবে প্রশ্ন হলো: রুটির মালিক কি অপরজনকে এই রুটি নিজের ওপর প্রাধান্য দিয়ে দিতে পারবে?
উত্তর: মাযহাব অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে প্রাধান্য (إيثار) দেওয়া বৈধ নয়। পূর্বে আমরা একটি মূলনীতি আলোচনা করেছি: “যে কাজ ফরজ, তা অন্যের জন্য ত্যাগ করা বৈধ নয়”।এর একটি উদাহরণ হলো তায়াম্মুম (মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন): যদি কারো কাছে এতটুকু পানি থাকে যা কেবলমাত্র তার নিজের অজুর জন্য যথেষ্ট,এবং তার সাথের একজনেরও পানি প্রয়োজন হয় তবে সে সেই পানিটি তাকে দিতে পারবে না। বরং দ্বিতীয়জন তায়াম্মুম করবে। কারণ, এটি ফরজ কাজ অন্যকে প্রাধান্য দিয়ে ত্যাগ করা, আর তা হারাম।
এই ভিত্তিতে, যদি খাবারের মালিক নিজেও এ খাবারের চরমভাবে প্রয়োজনমুখী হন যেমন তা দিয়ে তার জীবন বাঁচাতে হয়, তাহলে তার জন্য সেই খাবার কাউকে দিয়ে দেওয়া বৈধ নয়। বরং তার জন্য আবশ্যক যে, সে নিজেই তা গ্রহণ করে নিজের জীবন রক্ষা করবে। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:“তোমার নিজের থেকে শুরু করো।” অতএব, নিজের জান বাঁচানো অন্যের জান বাঁচানোর চেয়ে অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। এটাই হলো (হাম্বলী) মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত। তবে ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন এই অবস্থায় একজন নিজের সম্পদ অন্যকে দিয়ে দিতে পারে,অর্থাৎ ইসার তথা অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া বৈধ)। কিন্তু মাযহাবের বক্তব্যই অধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য যা হলো: এমন অবস্থায় ইসার (নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া) বৈধ নয়। তবে একটি ব্যতিক্রম হতে পারে যদি মুসলিম সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে কাউকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তখন বলা যায় এতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন: যদি সেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তি এমন কেউ হন যিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশ নেন, কিংবা এমন একজন আলেম যিনি তার জ্ঞানের দ্বারা সমাজ উপকৃত করে থাকেন, আর খাবারের মালিক হন সাধারণ এক ব্যক্তি তাহলে এ জাতীয় ক্ষেত্রে সামষ্টিক কল্যাণ বিবেচনায় প্রাধান্য দেওয়া বৈধ হতে পারে। কিন্তু যদি কোনো সামষ্টিক কল্যাণের দিক বিবেচনায় না থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হবে যে, সে নিজেই সেই খাবার খেয়ে নিজের জীবন রক্ষা করবে।” (ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৪০)
.
শাফেয়ী মাযহাবের বক্তব্য হলো: যদি কোনো মুসলমান এমন কিছু পায় যা তার জীবন রক্ষা করতে পারে এবং সে বাধ্যগত অবস্থায় থাকে, তবে সে তা অপর এক মুসলমানকে দিতে পারবে—অর্থাৎ তাকে নিজের উপর প্রাধান্য দিতে পারবে। তবে যদি সেই ব্যক্তি অমুসলিম হয়, তাহলে তাকে নিজের উপর প্রাধান্য দেওয়া বৈধ নয়।শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
إذا وجد المضطر طعاما حلالا لغيره فله حالان.أحدهما: أن يكون مالكه حاضرا. فإن كان مضطرا إليه، فهو أولى به، وليس للأول أخذه منه إذا لم يفضل عن حاجته …فإن آثر المالك غيره على نفسه، فقد أحسن. قال الله تعالى: (وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ) .وإنما يؤثر على نفسه مسلما.فأما الكافر فلا يؤثره، حربيا كان أو ذميا، وكذا لا يؤثر بهيمة على نفسه”
“যদি কোনো বিপদাপন্ন ব্যক্তি এমন কোনো হালাল খাদ্য খুঁজে পায় যা অপর একজনের মালিকানাধীন, তবে এর দুটি অবস্থা হতে পারে:
(১) যদি মালিক উপস্থিত থাকেন এবং তিনিও সেই খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে থাকেন (অর্থাৎ তিনিও বিপদগ্রস্ত), তবে মালিকই এ খাদ্যের অধিক হকদার। তখন অপর ব্যক্তি তা জোরপূর্বক গ্রহণ করতে পারবে না।
(২) তবে যদি মালিক নিজে ক্ষুধার্ত বা প্রয়োজনীয় অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও অপর ব্যক্তিকে নিজের ওপর অগ্রাধিকার দেন, তাহলে এটি একটি মহান কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:“তারা নিজেদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়।” (সূরা আল-হাশর: ৯) তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই প্রাধান্য দেওয়া কেবল মুসলমানের ক্ষেত্রে বৈধ; কোনো কাফের হোক সে যুদ্ধরত (হারবী) অথবা অমুসলিম নাগরিক (যেমন: জিম্মি) কিংবা কোনো পশুর জন্য নিজেকে বঞ্চিত করা বৈধ নয়।”(রওযাতুত-তালিবীন; পৃষ্ঠা: ৩; পৃষ্ঠা: ২৮৫; নববী আল মাজমু; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
পরিশেষে, উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য একজনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি সাঁতার জানে না, তবুও একজন ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপ দেয় তাহলে তা বৈধ নয়, কারণ এতে নিজের জীবন হুমকির মুখে পড়ে। অনুরূপভাবে যদি কেউ সাঁতার জানে ঠিকই, তবে ডুবন্ত ব্যক্তি তাকে আঁকড়ে ধরার কারণে তার নিজের মৃত্যুর আশঙ্কা হয় তাহলে তার জন্য নিজেকে সেই ব্যক্তির কবল থেকে মুক্ত করে নেওয়া এবং প্রয়োজনে তাকে ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে এমনকি যদি এতে ডুবন্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে নিজের জীবন রক্ষা করাই সর্বাগ্রে আবশ্যক, তা সে ডুবন্ত ব্যক্তি মুসলিম হোক বা অমুসলিম। বরং প্রকৃত কথা হলো নিজের জীবন রক্ষা করা শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি ফরজ (আবশ্যিক কর্তব্য)। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর তোমরা স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না।”(সূরা আল-বাকারা: ১৯৫) তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) এবং তাঁর অনুসারী একদল আলেমের মতে, যদি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি একজন মুসলমান হন এবং তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় তাহলে নিজের ওপর তাকেই প্রাধান্য দেওয়া বৈধ হবে। ইমাম শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) এর মাযহাবেও এটিই গ্রহণযোগ্য মত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বিবেকবান, ভারসাম্যপূর্ণ ও শরিয়তসম্মতভাবে মানবিক দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬◐✪◑▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate