Sunday, July 9, 2023

এক নজরে কুরবানী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ৩২ টি মাসআলা বিস্তারিত বর্ননা সহ

 ➤(১) কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য: কুরবানী করা একটি মহান ইবাদাত।কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহভীতি অর্জন করা।কুরবানী হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কে কত বড় কুরবানী দিল, কার কুরবানী দেখতে কত সুন্দর, কতটা মোটাতাজা, এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দেখেন না। বরং তিনি দেখেন মানুষের অন্তর ও তাক্বওয়া।মহান আল্লাহ বলেন, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া’ (সূরা হজ্জ, ৩৭)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ছা.) বলেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক গঠন ও বিত্ত-বৈভবের দিকে দেখেন না; বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল’।(সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৩১৪ ]

.
➤(২) কুরবানীর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কুরবানী হলো পুরো একটি উট কুরবানী দেওয়া, তারপর গরু, তারপর ছাগল, তারপর উট বা গরু ভাগ দেওয়া(ছহীহ বুখারী, হা/৮৮১, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫০)।একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কুরবানীই যথেষ্ট। তবে সামর্থ্য অনুপাতে একাধিক পশু কুরবানী করতে পারে। আনাস (রাঃ)হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) শিংওয়ালা সাদা-কালো রঙের দুটি ভেড়া কুরবানী করেছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৬৪, ৫৫৬৫)। অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল a একসাথে ১০০টি উট কুরবানী করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪)।

➤(৩) ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে: তবে মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই উত্তম। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও যেমন কুরবানী করতে পারবে।আবার একটি পশুতে একাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারেন এটা হোক সফর অথবা মুক্বীম কোনটাই নাজায়েজ নয়।সে হিসাবে গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কুরবানি করা যাবে। এর বেশি করা যাবে না। তবে, সাতের কমে করা যাবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বায় কোনো শরিক রাখা যাবে না। গরু, উট বা মহিষে কুরবানি ২/৩/৪/৫/৬/৭ যে ভাগেই করা হোক, কোনো শরিকই এক-সপ্তমাংশের কম নিতে পারবে না।(সহীহ মুসমি, হা/১৩১৮ তিরমিযী, হা/৯০৫; নাসাঈ, হা/৪৩৯২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩১)]
.
➤(৪) পোষা বা খরিদ করা কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করলে ও সেই মর্মে ঘোষণা দিলে তা আর বদল করা যাবে না। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট না করে থাকেন, তবে তার বদলে উত্তম পশু কুরবানী দেওয়া যাবে। যদি কুরবানীর পশু হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তবে তার পরিবর্তে অন্য কুরবানী যরূরী নয়। যদি ঐ পশু ঈদুল আযহার দিন বা পরে পাওয়া যায়, তবে তা তখনই আল্লাহর রাহে যবহ করে দিতে হবে। যদি কুরবানীর পূর্বে কুরবানী দাতা মৃত্যুবরণ করেন এবং তার অবস্থা এমন হয় যে, ঐ পশু বিক্রয়লব্ধ পয়সা ভিন্ন তার ঋণ পরিশোধের আর কোন উপায় নেই, তখন কেবল ঋণ পরিশোধের স্বার্থেই কুরবানীর পশু বিক্রয় করা যাবে।[মির‘আত, ২/৩৬৮-৬৯; ঐ, ৫/১১৭-১২০; কিতাবুল উম্ম ২/২২৫-২৬)।
.
➤(৫) কুরবানী করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত যদি কোন ব্যক্তি কুরবানী করার নিয়ত করে এরপর সে নিয়তকে বাতিল করে; এ প্রত্যাবর্তনের কারনে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। তবে যদি কুরবানীর পশু নির্দিষ্ট করে ফেলে যে, এই বলে যে, “এটাই কুরবানীর পশু” কিংবা অন্য কোনভাবে কুরবানীর পশুটি নির্দিষ্ট করে ফেলে তাহলে ভিন্ন কথা। অর্থাৎ কুরবানীর পশু নির্দিষ্ট করে ফেললে সে পশু জবাই করা অর্থাৎ কুরবানী করা আবশ্যক হবে এবং এর থেকে প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ নিয়ত পরিবর্তন করা করা জায়েয হবে না। নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে এটি তার মালিকানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে। যদি কেউ কুরবানী করার নিয়তে কোন পশু ক্রয় করে কিন্তু “এটি কুরবানীর পশু” বলে সেটিকে নির্দিষ্ট না করে সেক্ষেত্রে আলেমগণ সে পশুটি জবাই করা আবশ্যক হবে; না কি হবে না— এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। সঠিক মতানুযায়ী আবশ্যক হবে না। যেমনিভাবে কেউ যদি তার বাড়ীটি ওয়াক্‌ফ করার নিয়ত করে এরপর তার নিয়ত থেকে ফিরে আসে তাহলে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। কুরবানীর হুকুমও অনুরূপ।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী: ৯/৩৫৩), ইমাম নববর আল-মাজমু: ৮/৪০২) ও ইমাম উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি ৭/৪৬৬)।
.
➤(৬) যদি একই পরিবারের একাধিক সদস্য থাকে এবং তারা যদি পৃথক পৃথক পরিবার নিয়ে বসবাস করে। এবং তাদের রান্না পৃথকভাবে হয় তাহলে তারা একটি পরিবার হিসেবে একটি পশু কুরবানী দিলে গ্রহনযোগ্য হবেনা এমন পরিবারকে একান্নবর্তী পরিবার বলা হয়না, তাই তাদের সবাইকে সামর্থ্য থাকলে পৃথকভাবে তাদের স্ত্রী সন্তানসহ আলেদা আলেদা একটি পশু অথবা সাত ভাগের এক অংশ করে কুরবানী দিতে হবে (বিন বায,মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৭; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ১১/৪০৬)।

➤(৭) ঋণ করে কুরবানী দেওয়া যাবে যদি উক্ত ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা থাকে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২৬/৩০৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৩৭) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরকে ঋণ দিতেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৮৪ পৃঃ)। তাছাড়া কুরবানীর বিষয়টি সামর্থ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। যার সামর্থ্য আছে সেই কুরবানী করবে।
.
➤(৮) মৃত মানুষের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কুরবানী দেয়া যাবে না,তবে একটি পরিবারের জীবিত মৃত সবার পক্ষ থেকে একটি পশু বা কোন অসিয়ত থাকলে দেওয়া যাবে। কুরবানীর সাথে আক্বীকার নিয়ত করা যাবে না, রাসূল (ﷺ) এর জন্য পৃথকভাবে কুরবানী দেয়া যাবে না কেন না রাসূল সাঃ এবং তার কোন সাহাবী এভাবে কুরবানী করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এসব থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
.
➤(৯) কুরবানীর পশুর মাংস দ্বারা বিবাহের ওয়ালীমা করা: কুরবানীর গোশত দ্বারা বিবাহের ওয়ালীমা খাওয়ানো যাবে। কেননা কুরবানীর গোশত ঈদের পরে জমা রেখে খাওয়া জায়েয।(ইবনু মাজাহ হা/৩১৫৯, মিশকাত হা/১৭৬২)। তুরতুসী বলেন, কেউ যদি বিবাহের ওয়ালীমায় কুরবানীর গোশত খাওয়ায় সেটিই তার জন্য যথেষ্ট হবে’ (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল লি মুখতাছারে খলীল ৪/৩৭৬)।
.
➤(১০) কুরবানীর পশুর রং, বয়স কেমন হওয়া দরকার: কুরবানীর পশুর বয়সঃ যেকোনো রঙের পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ,তবে কালো রঙ অপেক্ষা ধূসর রঙের পশু কুরবানীর জন্য উত্তম। বয়সের দিক দিয়ে উঁটের পাঁচ বছর,গরুর দুই বছর এবং মেষ ও ছাগলের এক বছর হওয়া জরুরী। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায়। গরুর বয়স ২ বছর হওয়াই যথেষ্ট, দাঁত ওঠা জরুরি নয়। তবে, ২ বছরের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। আর ছাগল কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৯৭৬; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৪৩৪৮]উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছ’মাস বয়সী মেষের কুরবানী সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক।(সহীহ বুখারী ২১৭৮, মুসলিম ১৯৬৫)।
.
➤(১১) কোন ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ নয়: যেসকল পশু দ্বারা কুরবানী করা নাজায়েজ: কুরবানীর পশু সুঠাম, সুন্দর ও নিখুঁত হওয়া চাই। চার ধরনের পশু কুরবানী করা নাজায়েয। যেমন: (১) স্পষ্ট খোঁড়া, (২) স্পষ্ট কানা, (৩) স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ এবং (৪) অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা ও অর্ধেক শিং ভাঙ্গা।[আহমাদ হা/১৮৬৯৭, ১০৪৮, ১০৬১; তিরমিযী হা/১৪৯৭; ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৬৫, ১৪৬৩, ১৪৬৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো ছাপাঃ ১৪১২/১৯৯২) ২/৩০ পৃ.) উপরে বর্ণিত চার প্রকার পশুর চাইতে নিম্নস্তরের কোন দোষ যেমন অর্ধেক লেজ কাটা ইত্যাদি থাকলে তার দ্বারাও কুরবানী হবে না। তবে নিখুঁত পশু ক্রয়ের পর যদি নতুন করে খুঁৎ হয় বা পুরানো কোন দোষ বেরিয়ে আসে, তাহ’লে ঐ পশু দ্বারাই কুরবানী বৈধ হবে।[মির‘আত ২/৩৬৩; ঐ, ৫/৯৯ পৃ.) উল্লেখ্য যে, খাসি করা কোন খুঁৎ নয়। বরং এতে পাঁঠা ছাগলের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং গোশত রুচিকর হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে দু’টি মোটাতাজা খাসি দিয়ে কুরবানী করেছেন।[ইবনু মাজাহ হা/৩১২২; ইরওয়া হা/১১৩৮, ৪/৩৫১ পৃ.; মিশকাত হা/১৪৬১]
.
➤(১২) কুরবানীর পশু ক্রয়ের কয়েকদিন পর কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দ্বারা কুরবানী করা: কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা বা ক্রয় করার পর যদি কোন ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহ’লে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর নিকট হজ্জের হাদী সমূহ আনা হ’লে তার মধ্যে একটি এক চক্ষুহীন ট্যারা উট পাওয়া যায়। তখন তিনি বলেন, ক্রয়ের পর এরূপ হ’লে এটা দিয়েই কাজ সম্পন্ন কর। আর ক্রয়ের পূর্বে এরূপ পেলে তা পাল্টে নাও।(বায়হাক্বী হা/১০৫৪৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৩৬৩, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; মির‘আত ৫/৯৯)।

➤(১৩) খাসীকৃত প্রাণী দ্বারা কুরবানী কিভাবে জায়েয: এরূপ পশু কুরবানী করা জায়েয।খাসীকৃত প্রাণী ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি ছাগলের কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে সর্বদা দু’টি করে ‘খাসী’ (خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম হা/৭৫৪৭; আহমাদ হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭,সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেন না রাসূল ﷺ দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন(মির‘আত ৫/৯১)।
.
➤(১৪) কুরবানী মোট কয়দিন করা যায় :কুরবানী সর্বমোট ৪ দিন করা যায় ১০, ১১, ১২,১৩ যিলহাজ্জ চারদিনের রাত-দিন যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে।(মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৪৭৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩০ পৃ. নায়লুল আওত্বার ৬/২৫৩ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাদাবীহ ৫/১০৬-০৯ পৃষ্ঠা)।
.
➤(১৫) কেউ যদি আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিনে কুরবানী করতে চায়, তবে সে ঈদের দিন নখ-চুল কর্তন করতে পারবে না বরং যেদিন কুরবানী করবে সেদিনই নখ ও চুল কাটাবে।(সহীহমুসলিম হা/১৯৭৭; মিশখাত হা/১৪৫৯)। অত্র হাদীছে কুরবানী করাকে শেষ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে (উসাইমীন শারহু রিয়াযিছ সালেহীন হা/১৭০৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
.
➤(১৬) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কুরবানী করেনি, তাদেরকে গোশত দেওয়া যাব, কেননা সামর্থ্য থাকলেই কুরবানী করা বাধ্যতামূলক নয়। বরং কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কোনো সময় কেউ ছেড়ে দিলে গোনাহগার হবে না। আবূ বকর ও উমার (রা:) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কখনো কখনো কুরবানী করেননি (ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৩৯, ৪/৩৫৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ৪/১৭৭)। আবূ মাসঊদ আনছারী বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকার পরও আমি কুরবানী দিই না এই আশঙ্কায় যে, আমার প্রতিবেশীগণ হয়ত মনে করবে কুরবানী দেওয়া আমার জন্য জরুরী।(ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৫৫)। তাই তাদেরকে হাদিয়াস্বরূপ কুরবানীর গোশত দেওয়াতে কোনো বাধা নেই।

➤(১৭) কুরবানীর বদলে তার মূল্য সাদাক্বা করা নাজায়েয। আল্লাহর রাহে রক্ত প্রবাহিত করাই এখানে মূল ইবাদত। যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য সাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ, ২৬/৩০৪; মুগনী, ১১/৯৪-৯৫ পৃ.) ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, কুরবানী সাদাক্বার চাইতে উত্তম, যেমন ঈদের সালাত অন্য সকল নফল সালাতের চাইতে উত্তম।(তাফসীরে কুরতুবী (সূরা সাফফাত ৩৭/১০২), ১৫/১০৮ পৃষ্ঠা মির‘আত ২/৩৬৮-৬৯; ঐ, ৫/১১৭-১২০; কিতাবুল উম্ম ২/২২৫-২৬)।
.
➤(১৮) কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি তার বাচ্চা হয়, তাহলে মায়ের সাথে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এর পূর্বে ঐ পশুর দুধ খাওয়া যাবে; তবে শর্ত হল, যেন ঐ বাচ্চা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়।(বাইহাকী ৯/২৮৮,শারহুল মুমতে ৭/৫১০)।
.
➤(১৯) মহিলারা কুরবানীর পশু সহ যেকোন পশু যবেহ করতে পারে। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তার একটি ছাগল ‘সালআ’ নামক চারণক্ষেত্রে ছিল। তাঁর এক দাসী ছাগলটিকে মরণাপন্ন দেখে পাথর দ্বারা যবেহ করে দেয়। বিষয়টি তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি ছাগলটি খাওয়ার নির্দেশ দেন।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৪০৭২)।
.
➤(২০) একাকী বা একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী দেয়া উত্তম তবে শরিকানা কুরবানি দিলে মাংস,হাড্ডি ইত্যাদি সবকিছু দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করে সমানভাবে ভাগ করতে হবে; অনুমান করে বণ্টন করা যাবে না।(ইমাম ইবনু আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৭)।
.
➤(২১) কুরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিবদের দান করা, এক ভাগ আত্মীয়দের দেওয়া এবং একভাগ নিজেরা খাওয়া মুস্তাহাব (উত্তম), তবে বাধ্যতামূলক নয়। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে গরিব থাকলে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন। একসাথে দুটো নেকি হবে: আত্মীয়তার হক আদায় এবং গরিবকে সাহায্য করা। পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে নিজেদের জন্য বেশি পরিমাণে রেখে কম পরিমাণ দান করলেও দোষের কিছু নেই।(ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫৫৬৯; ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৯৯৭ ও ৪৯৯৮; ইমাম ইবনু কুদামা, আল-মুগনি: ১৩/৩৭৯)।
.
➤(২২) কুরবানির মাংস কাটার জন্য নিয়োজিত শ্রমিককে কুরবানির মাংস থেকে বিনিময় দেওয়া যাবে না। তাকে টাকা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে বিনিময় দিতে হবে। তবে পূর্ণ বিনিময় বা পারিশ্রমিক দেওয়ার পর চাইলে মাংস দান করতে পারবে। কাউকে দিয়ে নাড়ি-ভুড়ি পরিষ্কার করালে কুরবানির পশু থেকে বিনিময় বা পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে না। তাছাড়া, কুরবানির পশুর চর্বি বা নাড়ি-ভুড়ি বিক্রি করা যাবে না। নিজেরা খেতে না পারলে দান করে দিতে হবে।(সহীহ মুসলিম হা/১৩১৭; বুখারী হা/১৭১৭; মিশকাত হা/২৬৩৮)অবশ্য ঐ ব্যক্তি দরিদ্র হ’লে হাদিয়া স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়ায় দোষ নেই।(বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৬৩৮; মির‘আত হা/২৬৬২-এর আলোচনা, ৯/২৩০ পৃ.ইমাম কাসানি, বাদায়িউস সনায়ি’: ৪/২২৫)।
.
➤(২৩) কুরবানীর পশু জবাই করার সময় শরিকদের নাম বলার প্রয়োজন নেই; মহান আল্লাহর নাম নিয়ে জবাইকারী সবার পক্ষ থেকে জবাই করছে, এটা অন্তরে থাকলেই যথেষ্ট।(সহীহ বুখারী, ১ মিশকাত, ১)।
.
➤(২৪) পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে, সিনা কিবলামুখী করে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে জবাই করা উত্তম। এর ব্যতিক্রম হলেও জবাই সহিহ হবে, তবে ইচ্ছা করে এমনটি করা উচিত নয়।(ইমাম ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি: ১০/২১; ইমাম আইনি, উমদাতুল কারি: ২১/১৫৭)।

➤(২৫) পশুর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার চামড়া ওঠানো যাবে না। জবাইয়ের সময় খাদ্যনালী, শ্বাসনালী কাটতে হবে এবং এ দুটোর উভয় পাশের দুটো রক্তনালী থেকে কমপক্ষে একটি কাটতে হবে।(ইমাম সারাখসি, আল-মাবসুত)।
.
➤(২৬) কুরবানীর পশু জবাইকারী মুসলিম হতে হবে। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে। কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে জবাই করতেন।(ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৭৯৪; ইমাম বুখারি আস-সহিহ: ৫৫৬৫)।
.
➤(২৭) পশুর সামনে অস্ত্র ধার না দেওয়া। জীবিত পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। এতে তারা কষ্ট পায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করবে, যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়। জবাই এর সময় নির্দয় হওয়া উচিত নয়।(ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩১৭০; হাদিসটি সহিহ)।
.
➤(২৮) মাংস ভবিষ্যতের জন্য ফ্রিজে রাখা জায়েয। তবে সব মাংস জমা না করে যথাসাধ্য গরিব-মিসকিনদের দেওয়া উচিত। অন্তত ঈদের দিনগুলোতে তারা সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিক।(ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫৫৬৭)।
.
➤(২৯) কুরবানীর পশুর চামড়া নিজেরাও ব্যবহার করতে পারবে আবার দানও করতে পারবে। তবে, উত্তম হবে এটি গরিবদের দান করা। কুরবানির চামড়ার টাকা মসজিদে দান করা যাবে না। কারণ, চামড়ার মূল্য গরিবের হক। [ইমাম আইনি, শারহুল কানয: ২/২০৬; ইমাম ইবনুল হুমাম, ফাতহুল কাদির: ৮/৪৩৮]।
.
➤(৩০) কুরবানির মাংস মুসলিম- অমুসলিম সবাইকেই দেওয়া জায়েয। বিশেষ করে মুসলিমদের ক্ষতি করেনি। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৪২৪)। কেন না এটি যাকাত বহির্ভূত নফল সাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত (আল-মুগনী ৩/৫৮৩, ৯/৪৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাঁর ইহূদী প্রতিবেশীকে দিয়েই গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারী, তিরমিযী হা/১৯৪৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮, সনদ সহীহ, ‘ইহূদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ)। তবে, যুদ্ধরত কাফির সম্প্রদায়কে দেওয়া যাবে না। কুরবানির মাংস দিয়ে বিবাহের ওলিমা করা জায়েয। তবে, যদি কুরবানির মূল উদ্দেশ্যকে সামনে না রেখে কেবল ওলিমাকে টার্গেট করেই কুরবানি করা হয়, তবে তার কুরবানি জায়েয হবে না।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩০০; আল-বাহরুর রায়িক: ৩/৭১)।
.
➤(৩১) যবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল রাখা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েই যায়, তাহলে তা হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।যবাই করে ছেড়ে দেওয়ার পর (অসম্পূর্ণ হওয়ার ফলে) কোন পশু উঠে পালিয়ে গেলে তাকে ধরে পুনরায় যবাই করা যায়। নতুবা কিছু পরেই সে এমনিতেই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। আর তা হালাল।

(৩২) সমাজে প্রচলিত আছে হালাল পশুর যে ৭টি অঙ্গ হারাম সেগুলো হলো-১- প্রবাহিত রক্ত। ২- নর প্রাণীর পুং লিঙ্গ। ৩- অন্ডকোষ। ৪- মাদী প্রাণীর স্ত্রী লিঙ্গ। ৫- মাংসগ্রন্থি। ৬- মুত্রথলি। ৭- পিত্ত উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন যার কোন দলিল নেই হালাল পশুর শুধু মাএ রক্ত ছাড়া বাকি সব হালাল সুতরাং যেকোন হালাল প্রাণী যবেহকালে আল্লাহর নাম নিয়ে যবাই করা (‘বিসমিল্লাহ’ বলা) ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।’’ (সূরা আনআম ৬/১১৮) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

ঈদুল আযহার ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং এই দিনে করণীয়-বর্জনীয় কাজসমূহ

 ➤ভূমিকা: মুসলিম উম্মার জন্য বছরে শরী‘আত সম্মত দু’টি ঈদ রয়েছে। আর তা হল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।ঈদ’ (عيد) শব্দটি আরবী,যা ‘আউদুন’ (عود) মাছদার থেকে এসেছে। শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো— উৎসব, পর্ব, ঋতু, মৌসুম, প্রত্যাবর্তন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি। প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে বলে একে ‘ঈদ’ বলা হয়।(আল-মু‘জামুল ওয়াফী আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান পৃষ্ঠা:৭২৬। আল ফিক্বহুল মানহাজী, ১/২২২)

.
প্রথম হিজরীতেই ঈদ শুরু হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগের নাবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না।মুসলিমদের জন্য ঈদ একটা বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে ঈদের জামাআতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে এক সঙ্গে সালাত আদায় করেন। তারপর বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা, দু‘আ এবং আনন্দ ভাগাভাগি করেন সবাই।প্রথম হিজরী সনে সিয়াম ফরয হওয়ার সাথে সাথে ‘ঈদুল ফিত্বর’-এর সূচনা হয়।(মক্কাবাসীরা যখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর নানা রকমের অত্যাচার শুরু করল, তখন তিনি হিজরত করে মদীনায় আসেন। এসময় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার লোকদের দুটি উৎসবে মেতে উঠতে দেখলেন। আর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এ কীসের উৎসব পালন করছ?’ তারা জবাবে বলল, আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে ধারাবাহিকভাবে এ উৎসবদ্বয় পালিত হয়ে আসছে। আমরা তাদের অনুকরণে প্রতিবছর তা উৎযাপন করে আসছি। তখন রাসূল সাঃ বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের এ দু’দিনের বদলে এমন দুটি দিন দান করেছেন, যা তোমাদের নির্বাচিত দিনদ্বয়ের চেয়ে উত্তম। একটি হচ্ছে— ঈদুল ফিত্বর এবং অন্যটি ঈদুল আযহা’।[আবু দাঊদ, হা/১১৩৪; নাসাঈ, হা/১৫৫৬, সহীহ)
.
➤ঈদের নামকরণ:
.
ঈদকে ‘ঈদ’ হিসেবে নামকরণ করার কারণ,হজ্জ মৌসুমে উদযাপিত ঈদকে ইসলামী পরিভাষায় ঈদুল আযহা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাঃ এ নামকরণ করেছেন। এছাড়া ‘ইয়াওমুন নাহর’ও বলা হয়। আফগানিস্তানসহ এই উপমহাদেশের অধিকাংশ লোকেরা কুরবানীর ঈদ নামে অভিহিত করেন।এছাড়া ও ১) ঈদের দিনে আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ অবতীর্ণ হতে থাকে। ২) অথবা এ দিনের মধ্যে লোকেরা একের পর এক পরস্পরে মিলিত হয় বলে। ৩) প্রতি বছর পুনরায় আগমন করে বলে। ৪) বার বার আনন্দ ফিরে আসে। ৫) কারও মতে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর ক্ষমা ও রহমত পুনরাবৃত্তি করেন। ৬) কারও মতে ঈদের সালাতে বারবার তাকবীর বলতে হয় বিধায় একে ঈদ (عَيْدٌ) নামে আখ্যায়িত করেছে।(বুখারী ৯৫৬, মুসলিম ৮৮৯, মিশকাত, ১৪২৪)
.
‘আযহা’ শব্দটিকে আরবীতে ‘কুরব’ও বলা হয়ে থাকে, যা ফারসী বা উর্দূতে ‘কুরবানী’রূপে পরিচিত হয়েছে। কুরব-এর শাব্দিক অর্থ হল ১. নৈকট্য অর্জন করা। ২. কাছাকাছি যাওয়া। পরিভাষায় ‘কুরবানী’ ওই মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়। প্রচলিত অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ ত্বরীকায় যে পশু যবেহ করা হয়, তাকে কুরবানী বলা হয়।
.
◾➤ঈদুল আযহার লক্ষ্য:
.
সমাজের ধনী-গরীব এতিম-মিসকিন সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয়-নম্র আচরণ করা। মুসলিমদের জীবনে এই সুযোগ সৃষ্টি হয় বছরে মাত্র দু’বার। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে পায়ে পা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাকআত ঈদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যায়। পরস্পরে কুশল বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়, জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং আন্তরিক মহানুভবতায় পরিপূর্ণ করে। মূলত ঈদুল আযহার লক্ষ্য, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে দৈন্য, হতাশা তা দূরীকরণ। যারা অসুখী এবং দরিদ্র তাদের জীবনে সুখের প্রলেপ দেওয়া।
.
◾➤ঈদুল আযহার গুরুত্ব:
.
ঈদুল আযহার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন, ‘আর কুরবানীর পশুসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (আল-হজ্জ, ২২/৩৬)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন,‘আর আমরা তাঁর (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম।’ (আছ-ছাফফাত, ৩৭/১০৭-১০৮)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন, ﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ﴾ ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো’ (আল-কাওছার, ১০৮/২)। নবী করীম সাঃ বলেছেন,সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’।[ইবনে মাজা,৩১২৩ বুলবুল মারাম,১৩৪৮) তাই ঈদুল আযহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতির এই সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে। যিলহজ্জ মাসে হজ্জ উপলক্ষ্যে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলিম সমবেত হয় ইব্রাহীম আঃ-এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদীনায়। হজ্জ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ। যা প্রতি বছরই আমাদেরকে তাওহীদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। আমরা নিবিড়ভাবে অনুভব করি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব।
.
◾➤ঈদুল আযহাকেন্দ্রিক আমল:
.
কুরআনুল কারীমের ভাষ্যমতে চারটি মাস অধিক সম্মানিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত’ (আত–তাওবা, ৯/৩৬)।এই চারটি মাসের অন্যতম হলো যিলহজ্জ মাস। আর এ মাসের ফযীলতপূর্ণ সময় হল ‘আশারায়ে যিলহজ্জ’ অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই দশকের রাত্রির শপথ করেছেন, وَالْفَجْرِ – وَلَيَالٍ عَشْرٍ ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির’ (আল-ফাজর, ৮৯/১-২)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু আনহু) ও মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ)সহ অনেক ছাহাবী, তাবেঈ ও মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজ্জের প্রথম দশ রাতকে বুঝানো হয়েছে।(তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৪/৫৩৫)।
.
➤(১). ঈদগায়ে যাওয়ার পূর্বে গোসল করা:
.
পুরুষগণ ঈদুল আযহার দিন সকালে মিসওয়াক ও ওযূ-গোসল করে, তৈল-সুগন্ধি ব্যবহার ও সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করে সুসজ্জিত হয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।(সহীহ বুখারী, হা/৮৮৬; মিশকাত, হা/১৩৮১)
.
এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) কে গোসল করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল: “তিনি বললেন: তুমি চাইলে তো প্রতিদিন গোসল করতে পার। সে বলল: না; যে গোসল আসলেই গোসল (অর্থাৎ যে গোসলের ফযিলত আছে)। তিনি বললেন: জুমাবারের গোসল, আরাফার দিনের গোসল, কোরবানীর ঈদের দিনের গোসল এবং ঈদুল ফিতরের দিনের গোসল।”[মুসনাদে শাফেয়ি (পৃষ্ঠা-৩৮৫), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’, ১/১৭৬ সনদ বিশুদ্ধ)
.
আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ যাদুল মা‘আদে লিখেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তাঁর এক জোড়া পোশাক ছিল যা দু’ ঈদ ও জুমু‘আর দিন পরিধান করতেন। অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নি‘আমাতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। (তিরমিযী: ২৮১৯ রিয়াদুস সালেহীন, ৮০৭)
.
সহিহ সূত্রে ইবনে উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, “ঈদুল ফিতরের দিন তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন”।[যেমনটি এসেছে ‘ফারইয়াবি’ রচিত ‘আহকামুল ঈদাইন” গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৮৩) ইবনে রজব হাম্বলি (রহঃ) বলেন:মালেক বলেছেন: আমি শুনেছি আলেমগণ প্রত্যেক ঈদের সময় সাজসজ্জা করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। শাফেয়িও মুস্তাহাব মনে করতেন।[ইবনে রজব রচিত ‘ফাতহুল বারী’ (৬/৬৮)]
.
➤(২). নারীরা ঈদগাহ যাওয়ার সময় সুগন্ধি বর্জন করবে:
.
মহিলারা অভ্যন্তরীণভাবে সুসজ্জিত হবে। তারা সুগন্ধি মেখে ও বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রদর্শনী করে বের হবে না। তারা উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর পাঠ করবে না।(তিরমিযী, হা/২৭৮৭; নাসাঈ, হা/৫১১৭-১৮; মিশকাত, হা/৪৪৪৩, সনদ সহীহ)
.
➤(৩). নারীরা পরিপূর্ণ পর্দা করে ঈদগাহ যাওয়া:
.
মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে শরীর আবৃত করে তথা পর্দার বিধান মেনে পুরুষদের পিছনে ঈদের জামাআতে শরীক হবে। ঋতুবতী মহিলারা কাতার থেকে সরে ঈদগাহের এক পার্শ্বে অবস্থান করবে। তারা কেবলমাত্র খুৎবা শ্রবণ এবং দু‘আয় অংশ গ্রহণ করবেন।(সহীহ বুখারী, হা/৯৭১; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯০)এখানে দু‘আ বলতে সম্মিলিত দু‘আ বুঝানো হয়নি।
.
➤(৪). সকাল সকাল ঈদগাহ যাওয়া:
.
ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ যাতে ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসা যায়, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা যায়। তাছাড়া সালাতের জন্য অপেক্ষা করা এসব অতীব সওয়াবের কাজ।(আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭)
.
➤(৫). পায়ে হেটে ঈদগাহ যাওয়া:
.
পায়ে হেঁটে এক পথে ঈদগাহে যাওয়া এবং ভিন্ন পথে ফিরে আসা সুন্নাত। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন এক পথ দিয়ে (ঈদগাহে) আসতেন। আবার অন্য পথ দিয়ে (বাড়ীতে) ফিরতেন।[ইবনু মাজাহ, হা/১৩০১; দারেমী, হা/১৬১৩; আহমাদ, হা/৮১০০; মিশকাত, হা/১৪৩৪ ও১৪৪৭)
.
➤(৬). ঈদুল আযহার সালাতের আগে কিছু না খাওয়া:
.
হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতরে কিছু না খেয়ে ছালাতের জন্য বের হতেন না, আর কুরবানীর ঈদে ছালাতের আগে কিছু খেতেন না।(জামে‘ তিরমিযী, ১/৭১, হা/৫৪২) কেননা রাসূল (ﷺ) স্বীয় কুরবানীর গোশত হতে খেতেন (আহমাদ, হা/২৩০৩৪)। অপর বর্ণনায় আছে, ‘…তিনি ঈদুল আযহার দিন খেতেন না (পশু) যবেহ না করা পর্যন্ত।’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/১৪২৬; বায়হাক্বী, হা/৫৯৫৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৪৮৪৫, সনদ ছহীহ)। অবশ্য কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া উত্তম। বিদায় হজ্জের দিন তিনি ১০০টি উটের প্রতিটি থেকে একটু করে অংশ নিয়ে এক পাত্রে রান্না করে সেখান থেকে গোশত খেয়েছিলেন ও ঝোল পান করেছিলেন।(সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪; মিশকাত, হা/২৫৫৫)
.
➤(৭). খালি মাঠে ঈদের সালাত আদায় করা:
.
ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা বিনা অপারগতায় মসজিদে আদায় না করা।সহীহ বুখারী হা/৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮]
.
➤(৮). শুভেচ্ছা বিনিময় করা:
.
শুভেচ্ছা জ্ঞাপন সেটি যে কোন বৈধ ভাষায় হতে পারে। তবে, সর্বোত্তম ভাষা হচ্ছে‑ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরামের পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন, تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ হতে কবুল করুন!’[তামামুল মিন্নাহ, ১/৩৫৪, সনদ হাসান)মালেক (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে এক মুসলিম যদি অপর মুসলিমকে বলে: ‘তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিন্‌ক, ওয়া গাফারাল্লাহু লানা ও লাক’ (আল্লাহ্‌ আমাদের ও আপনার নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ও আপনাকে ক্ষমা করে দিন) সেটা কি মাকরুহ হবে? তিনি বলেন: মাকরুহ হবে না।[আল-মুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা (১/৩২২)]
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
ঈদের দিন শুভেচ্ছা জ্ঞাপন হচ্ছে নামায পড়া শেষে একজন অপরজনকে বলবে: ‘তাকাব্বালাহু মিন্না ও মিনকুম’ (আল্লাহ্‌ আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করে নিন) এবং “আহালাহুল্লাহু আলাইক” (আল্লাহ্‌ ঈদকে আপনার জীবনে পুনরায় ফিরিয়ে আনুন) বা এ ধরণের কোন কথা। একদল সাহাবী থেকে এ ধরণের শুভেচ্ছা বর্ণিত আছে যারা এভাবে করতেন। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য আলেমগণ এ ধরণের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের অবকাশ দিয়েছেন। কিন্তু আহমাদ বলেন: আমি শুরুতে কাউকে শুভেচ্ছা জানাই না। যদি কেউ আমাকে শুভেচ্ছা জানায় তখন আমি তাকে জবাব দেই। কেননা শুভেচ্ছার জবাব দেয়া ওয়াজিব।পক্ষান্তরে, শুরুতে শুভেচ্ছা জানানো: এটি কোন নির্দেশিত সুন্নাহ্‌ নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। যে ব্যক্তি তা করেন তার পূর্বসূরি রয়েছে। যে ব্যক্তি করেন না তারও পূর্বসূরি রয়েছে।(মাজমুউল ফাতাওয়া ২৪/২৫৩)
.
➤(৯). সামর্থ্য অনুযায়ী দান সদকা করা:
.
দান-সাদাক্বা করা ঈদের দিনের অন্যতম নফল ইবাদত। এদিনে দান-সাদাক্বার গুরুত্ব এত বেশি যে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই খুৎবা শেষ করে বেলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে নিয়ে মহিলাদের সমাবেশে গেলেন ও তাদেরকে দান-সাদাক্বার নির্দেশ দিলেন। মহিলারা নেকীর উদ্দেশ্যে নিজেদের গয়না খুলে বেলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাতে দান করলেন।(সহীহ বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/১৪২৯)
.
➤(১০). বিশেষ তাকবীর পাঠ করা:
.
তাকবীর পড়া এবং তা বেশি বেশি ও উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত তাকবীর দিতে দিতে যেতেন। যেমন,
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবে।(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫)
.
➤(১১). বৈধ খেলা-ধুলা করা:
.
ঈদের দিনগুলো আনন্দ প্রকাশ করা দ্বীনেরই প্রতীক।ঈদের দিন কেউ চাইলে বৈধ খেলাধুলা করতে পারে। যেমন: পরিবারকে নিয়ে কোন স্থল ভ্রমণ বা নৌ-ভ্রমণে যাওয়া, সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো পরিদর্শন করা বা এমন কোন স্থানে যাওয়া যেখানে বৈধ খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে‑ এসবে কোন আপত্তি নেই। অনুরূপভাবে মিউজিকমুক্ত নাশিদ শুনতেও বাধা নেই।(বিস্তারিত জানতে সহীহ বুখারী ৯৮৭, ৩৫২৯, মুসলিম ৮৯২, নাসায়ী ১৫৯৩, ইবনু হিব্বান ৫৮৭৬) আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যাতে এসেছে যে: ঈদের দিনগুলোতে পরিবার ও সন্তানদের জন্য নানা মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন দেওয়া এবং ইবাদতের ক্লান্তি ও ক্লেশ থেকে শরীরকে আরাম দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার হওয়া শরিয়ত স্বীকৃত। অনুরূপভাবে ঈদ-উৎসবে আনন্দ প্রকাশ করা ইসলামী নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। ঈদের দিনগুলোতে খেলাধুলা করা বৈধ; সেটা মসজিদের ভেতরে হোক কিংবা মসজিদের বাহিরে হোক। যেহেতু আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে হাবাশার লোকদের অস্ত্র নিয়ে খেলাধুলা করা উদ্ধৃত হয়েছে।(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যাতে,১৪/১৬৬)
.
(১২). বাড়তি খাবার-দাবারের আয়োজন:
.
বাড়তি খাবার-দাবার ও ভাল খাবার-দাবার খেতে কোন অসুবিধা নেই। সেটা নিজ বাসায় হোক কিংবা বাসার বাহিরে কোন রেস্টুরেন্টে হোক। তবে, যে সব রেস্টুরেন্টে মদ সরবরাহ করা হয় কিংবা যে রেস্টুরেন্ট মিউজিকের ধ্বনিতে প্রকম্পিত এমন রেস্টুরেন্টে নয়। কিংবা যেখানে বেগানা পুরুষেরা নারীদেরকে দেখতে পায় সেখানেও নয়।

কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে: স্থল ভ্রমণ বা নৌ-ভ্রমণে বের হওয়া। যাতে করে ঐ স্থানগুলো থেকে দূরে থাকা যায় যেখানে নারী-পুরুষের বেপরোয়া মেলামেশা ঘটে থাকে কিংবা শরয়ি বিধানগুলো লঙ্ঘনের মহোৎসব যেখানে চলে।নুবাইশা আল-হুযাইলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তাশরিকের দিনগুলো পানাহার ও আল্লাহ্‌র যিকির দিন।(সহিহ মুসলিম হা/১১৪১)
.
➤(১২). ঈদের দিনগুলোতে দায়িত্বশীলগণ তাদের পরিবারের ওপর উদারতা প্রকাশ করবেন যাতে পরিবারে সদস্যরা চিত্তবিনোদন ও আনন্দোৎসব করতে পারে।
.
➤(১৩). ঈদের মাঠে কুরবানী করা:
.
কুরবানী ঈদগাহের মাঠে করা মুস্তাহাব বা ভাল আর হিকমাত হলঃ দরিদ্র ও ফকীররা যেতে পারে এবং কুরবানীর গোশ্‌ত (গোশত/গোস্ত/গোশত) গ্রহণে অংশীদার হতে পারে। কারও মতে কুরবানী হল সাধারণ নৈকট্য। সুতরাং প্রকাশ করাই উত্তম। কেননা সেখানে সুন্নাহকে পুনর্জীবিত করা হয়।(সহীহ বুখারী ৫৫৫২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১১৯। মিশকাত,১৪৩৮)
.
⛔➤ঈদের দিন বর্জনীন কাজ:
_____________________________
➤(১). ঈদের দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়া এবং কবরে গিয়ে দলবদ্ধভাবে দু’হাত তুলে মুনাজাত করা শরী‘আত সম্মত নয়। তবে নিদিষ্ট না করে যেকোন দিন সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে নিজে নিজে দো‘আ পড়বে। এক্ষণে কারো যদি ঈদের দিন বা জুম‘আর দিন ব্যতীত অন্য দিন কবর যিয়ারতের সময় না হয়, তবে সেক্ষেত্রে তিনি করতে পারেন। জানা আবশ্যক যে, জুম‘আর দিন কবর যিয়ারতের বিশেষ কোন ফযীলত নেই।(বিন বায,মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৩৬; উছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ৮/২)।

➤(২). উভয় ঈদের দিন সিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ- হারাম। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার দিন ছিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী হা/১৯৯১, মুসলিম হা/১১৩৭, মিশকাত হা/২০৪৮)।
.
➤(৩). এছাড়া আইয়্যামে তাশরীক্ব তথা ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিনও সিয়াম পালন নিষিদ্ধ। (মুসলিম হা/১১৪১, মিশকাত হা/২০৫০; আবুদাঊদ হা/২৪১৯)। তবে কুরবানীদাতার জন্য ঈদের দিন কুরবানীর গোশত খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত না খেয়ে থাকা সুন্নাত। (তিরমিযী হা/৫৪২, মিশকাত হা/১৪৪০)।
.
➤(৪). ঈদুল আযহার সালাতের পূর্বে কুরবানী না করা: যে ব্যক্তি সালাতের আগে যবেহ করেছে সে যেন এর পরিবর্তে (সালাতের পরে) আর একটি যবেহ করে। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত যবেহ করেনি সে যেন (সালাতের পর) আল্লাহর নামে যবেহ করে।এটাই প্রকৃত কুরবানী।(সহীহ: বুখারী ৫৫০০; মুসলিম: ১৯৬০; মিশকাত: ১৪৩৬)
.
➤(৫). অমুসলিমদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা ও আচার-আচরণ না করা:প্রিয় নবী সাঃ বলেন যে কেউ অন্য জাতির অনুসরণ করবে সে সেই কওমের (বা ধর্মের) লোক বলে বিবেচিত হবে।’’ (আবূ দাউদ: ৪০৩১)
.
➤(৬). ছেলেরা মেয়েদের এবং মেয়েরা ছেলেদের বেশ ধারণ না করা:কারণ এ ধরনের ছেলে ও মেয়েদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী ৫৮৮৪)
.
➤(৭). বেগানা নারী পুরুষ একত্রে দেখা সাক্ষাৎ না করা।(তিরমিযী হা/২১৬৫; মিশকাত হা/৩১১৮)।
.
➤(৮). মহিলাদের বেপর্দা ও খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাট ও বাজার বন্দরে চলাফেলা না করা:যে সকল মেয়েলোক যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত থাকবে, অন্য পুরুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করবে, এরা জান্নাতের সুগন্ধিও তারা পাবে না যদিও জান্নাতের সুগন্ধী বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম: ২১২৮)
.
➤(৯). গানবাদ্য করা ও সিনেমা-নাটক না দেখা: কারন গান ও বাদ্যযন্ত্র শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এটা সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আমার উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোক থাকবে যারা যেনা-ব্যভিচার, রেশমী পোশাক পরিধান, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (বুখারী: ৫৫৯০)
.
ঈদুল আযহার মূল আহ্বান হলো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ করা। সকল দিক হতে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর দিকে রুজূ হওয়া। সম্পদের মোহ, ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ ও স্ত্রীর মহব্বত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি আত্মসমর্পণ করে দেওয়াই হলো ঈদুল আযহার মূল শিক্ষা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয় কর, তাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (আল-মুমতাহিনা, ৬০/৪-৬)।

পরিশেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করছি। হে আল্লাহ! দেশে দেশে মহামারি করোনার কবল থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করো। ঈদুল আযহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝে সবাইকে উৎসবটি পালন করার তাওফীক্ব দাও- আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

কুরবানির দিনে কুরবানির পশু জবাই হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু না খেয়ে থাকার কি কোনো নিয়ম আছে এবং থাকলে এটি কার জন্য প্রযোজ্য

 বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে সালাতের জন্য বের হতেন না,আর কুরবানীর ঈদে সালাতের আগে কিছু খেতেন না। দলিল বুরায়দা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিৎর-এর দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন সালাত শেষ না করে কিছু খেতেন না’ (তিরমিযী, হা/৫৪২; মিশকাত, হা/১৪৪০ ইবনু খুযায়মাহ হা/ ১৪২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম হা/ ১০৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৫৯ সহীহ ইবনু হিব্বান ২৮১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৮৪৫ বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৫৬, ৩/২২৪ পৃ. সনদ সহীহ)।

.
অন্য বর্ণনায় এসেছে,রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিৎরের দিন কিছু না খেয়ে বের হ’তেন না। আর ঈদুল আযহার দিনে কুরবানী না করে কিছু খেতেন না (মুসনাদে আহমাদ হা/২১৯৬৪, সনদ হাসান)।
.
আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম কুরবানীর গোশত বা কলিজা দ্বারা খেতেন (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৩৬৮০-৩৬৮১ মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩৪ সনদ সহীহ)।
.
উপরোক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, সুন্নাহ হল ঈদুল ফিতরে সালাতের পূর্বে খাওয়া আর কুরবানী ঈদে সালাতের পরে খাওয়া। ঈদুল আযহায় দেরী করে খাওয়ার হিকমাত হল, ঐদিনে কুরবানী শুরু করবে আর কুরবানীর গোশত দিয়ে ইফত্বার করবে। যায়ন ইবনু মুনীর বলেছেনঃ দু’ঈদের নির্দিষ্ট সদাক্বাহ রয়েছে ঈদুল ফিতরের সদাক্বাহ্ ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আর ঈদুল আযহার সদাক্বাহ পশু যাবাহের পর।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৪৪০ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
এখন প্রশ্ন হল কুরবানীর ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত কিছু না খেয়ে অতঃপর কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করার এই সুন্নাহটি কি শুধু কোরবানি দাতার জন্য প্রযোজ্য নাকি আমভাবে সকল মুসলিম উম্মার জন্য প্রযোজ্য? এই প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব হল হাদীসের ভাষা থেকে যা প্রমানিত হয় তা হলো: এটি শুধুমাত্র কোরবানী দাতার জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ যিনি তার এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করবেন তার জন্যই প্রযোজ্য সবার ক্ষেত্রে নয়। সুতরাং যে বা যারা কুরবানী করবে না তারা ঈদের পূর্বে চাইলে খেতে পারে আবার নাও পারে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যার কুরবানী রয়েছে সে ফিরে আসার পর খাবে কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবাহকৃত গোশত খেয়েছেন ফিরে আসার পর। আর যার কুরবানী নেই তার খাওয়াতে বাধা নেই।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা /১৪৪০ ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৫৮৩২৬) ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, সুনানুত তিরমিযীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযী’র সম্মানিত মুসান্নিফ (লেখক), আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ‘আব্দুর রহমান বিন আব্দুর রহীম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থে এবং ইমাম যাইলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) তাবঈনুল হাকায়েক গ্রন্থে একই মত দিয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি

প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত

 প্রশ্ন: প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত কি? সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা এবং দীর্ঘ সময় তা থেকে দূরে থাকার বিধান কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন সুন্নার আলোকে যা প্রমানিত তা হল প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যধিক।কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,‘মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করতো। আর যদি জানতো সালাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সালাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করতো। যদি জানতো ‘ইশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত হবার চেষ্টা করতো।(সহীহ বুখারী হা/৬১৫ মুসলিম হা/৪৩৭ মিশকাত হা/৬২৮) রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,সালাতের প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মত। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফযীলত জানতে তাহ’লে অবশ্যই দৌঁড়ে যেতে।(আবূদাঊদ হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬)। তিনি আরো বলেন, প্রথম কাতারের (মুছল্লীদের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’(ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)। তিনি আরো বলেন, পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার।(সহীহ মুসলিম হা/৪৪০ মিশকাত হা/১০৯২)।
.
▪️সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা।
.
যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করছে সে চাইলে কাতারের নিদিষ্ট স্থানে একটি জায়নামাজ ও অনুরূপ জিনিস রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে মসজিদের পিছনে ঘুমাতে পারে অথবা সে যদি অযু করতে যাওয়ার অজুহাতে মসজিদ থেকে বের হয়,অতঃপর সালাতের ইকামতের পূর্বে নিজের জায়গায় ফিরে আসে এটি তার জন্য জায়েজ। এবং সে তার রেখে যাওয়া স্থানের অধিক হকদার যদিও তার জায়নামাজ প্রথম কাতারে থাকে।পক্ষান্তরে যদি সালাতের একামত দেওয়া হয় এবং সে ব্যক্তি যদি কাতারে উপস্থিত না হয় তাহলে সেই স্থানে তার আর কোন অধিকার নাই এবং তখন তার রেখে যাওয়া জায়নামাজটা উঠিয়ে নিতে হবে এবং সেখানে উপস্থিত কেউ দাঁড়াবে কেননা সে যথাসময়ে ফিরে আসার ব্যাপারে অবহেলা বা বিলম্ব করেছে। এ ব্যাপারে দলিল হলো: আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার বসার স্থান থেকে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে-ই উক্ত স্থানের অধিক হকদার।(সহীহ মুসলিম হা/ ২১৭৯ আবূ দাউদ ৪৮৫৩ মুসনাদে আহমাদ হা/ ৭৫১৪, ৭৭৫১, ৮৩০৪, ৮৮১০, ৯৪৬৩, ৯৪৮২, ৯৮৯৪, ১০৪৪২, ১১৫৫৯)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,যদি কোন ব্যক্তি মসজিদের কোন একটা স্থানে বসে থাকেন তারপরে তার যদি মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় অথবা উযু করার প্রয়োজন হয় তাহলে সে বের হতে পারবে অতঃপর সে যদি সেই জায়গাতে অর্থাৎ যে জায়গাতে বসেছিল সেই জায়গাতে ফিরে আসে তাহলে সেই ওই স্থানের বেশি হকদার।কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (যে ব্যক্তি তার আসন থেকে উঠে পুনরায় সেখানে ফিরে আসে, সে হল বেশি হকদার।(ইবনু কুদামা আল মুগনী: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা:১০১)।

তিনি (ইবনু কুদামা) মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা গ্রন্থে বলেছেন :যদি কেউ পবিত্রতা অর্জনের জন্য মসজিদ থেকে সামান্য একটু দূরে যায় অর্থাৎ যেখানে বসেছিল তার থেকে নিকটবর্তী থাকলে যে জায়গাতে বসেছিল সেই জায়গাতেই ফিরে এসে বসার অধিকার বেশি রাখবে। যদি তার সেই জায়গাতে অন্য কেউ বসে যায় তাহলে তার উঠে যাওয়া উচিত। (মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭৮৬)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] মসজিদে একটি স্থান সংরক্ষিত করার পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন:এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে সঠিক কথা হল : মসজিদের কোনো জায়গা দখল করা অত:পর মসজিদ ত্যাগ করা জায়েজ নয়। কেউ এমনটি করলে তার নামাজের মসল্লা অপসারণ করা যেতে পারে,কারণ মূলনীতি হল: “যা অবৈধভাবে রাখা হয়েছিল,তা সরিয়ে ফেলাই ঠিক। তবে যদি বৈধ কোন অজুহাত অব্যাহত থাকার কারণে মসজিদ থেকে বের হয় এবং দীর্ঘ সময় পরে সে ফিরে আসে তবে ঐ স্থানের উপর তার অধিক অধিকার রয়েছে,কিন্তু যদি অজুহাত শেষ হয়ে যায়।আর সে অলসতা করে কিংবা দেরি করে। তাহলে সে ঐ স্থানের হক রাখেনা….।(উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ১৩৫ থেকে সংক্ষেপিত)।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে, তাই সকল মুসলিমদের উচিত আগে ভাগে মসজিদের চলে আসা এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট থাকা। এখন প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষণ করে কোন ব্যক্তি যদি মসজিদের বারিন্দায় অবস্থান করে অথবা জরুরি প্রয়োজনে যেমন: প্রস্রাব-পায়খানা অথবা ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয় অতঃপর যথা সময়ে জামাআতে হাজির হয় তাহলে সংরক্ষিত ওই স্থানের জন্য এই ব্যক্তি অধিক হকদার সুতরাং তার সংরক্ষিত জায়গা থেকে তার মুসল্লা সরানো উচিত হবে না। কিন্তু একজন ব্যাক্তি যদি প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান দখল করে বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় অথবা নিজ বাড়িতে চলে যায় অতঃপর পরবর্তী ওয়াক্তের জামআত শুরু হওয়ার সময় পুনরায় আসে তাহলে এটি জায়েজ নয়,এবং এক্ষেত্রে সে তার সংরক্ষিত জায়গার জন্য উপযুক্ত নয় বরং সেখানে উপস্থিত যারা রয়েছেন তারা তার মুসল্লা সরিয়ে উপস্থিত কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

একজন ধূমপায়ী ব্যক্তি ধূমপান করার সময় তার পাশে বসে থাকার হুকুম কি

 সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রশ্ন করা হয়েছিল: শাইখ ধূমপান সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কারো অজানা নয়; কর্মস্থলে, বাড়ীতে ও পাবলিক স্থানগুলোর সবখানে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ধূমপায়ীদের সাথে বসে থাকা কি জায়েয? কোন ধূমপায়ীর সাথে আপনি নিজগৃহে কিংবা সাধারণ স্থানে বসে থাকলে তাকে রেখে কি উঠে যেতে হবে কিংবা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে?

.
জবাবে শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেমনটি প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন সাধারণ দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে ধূমপান হারাম। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সুনির্দিষ্ট কোন দলিল নেই। কারণ ধূমপান পরবর্তী যামানায় উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে, শরয়ি নীতিমালা সাধারণ এবং কোন কোন দলিলে ধূমপান হারাম হওয়ার ইঙ্গিত একেবারেই সুনির্দিষ্ট। যদি আপনার পাশে কোন ধূমপায়ী থাকে এবং ধূমপান করতে চায় তাহলে আপনি তাকে কোমল ভাষায় উপদেশ দিন; আপনি বলুন: ভাই, ধূমপান করা হারাম ও অবৈধ।

আমার ধারণা আপনি যদি তাকে কোমল কথা দিয়ে উপদেশ দেন সে শুনবে; এটি পরীক্ষিত। আমাদের যেমন এ ধরণের অভিজ্ঞতা আছে; অন্যদেরও অভিজ্ঞতা আছে। যদি এরপরও তিনি ধূমপান চালিয়ে যান তাহলে আপনার কর্তব্য হবে তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া; আল্লাহ তাআলার সে বাণীর কারণে: “কিতাবে তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসো না, নয়তো তোমরা তাদের মত হবে।”[সূরা নিসা৪/ ১৪০] তবে, পাবলিক স্থানগুলোর ক্ষেত্রে এ বিধান। আর কর্মস্থলের ক্ষেত্রে আপনি যদি তাকে নসীহত করেন কিন্তু সে না শুনে এতে করে উক্ত চাকুরীতে বহাল থাকলে আপনার গুনাহ হবে না। কারণ এক্ষেত্রে আপনি নিরুপায়; আপনি এ অবস্থাকে এড়াতে পারবেন না। (শাইখ উসাইমীন লিকাউল বাব আল-মাফতুহ’,৫৪/১০১ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৮২২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

মুসলিম কবিরা গুনাগাহর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা

 প্রশ্ন: মুসলিম কবিরা গুনাগাহর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা কি? তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হলো: সুদখোর, জিনাকারী,ব্যভিচারের অপবাদ-আরোপকারী, চুরিকারী, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যতাকারী, অবৈধ ভাবে হত্যাকারী এবং অলসতা বসত মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগকারী ইত্যাদি এগুলো সবই কাবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে; যতক্ষণ না ব্যক্তি এই পাপগুলাকে হালাল মনে করে। অর্থাৎ যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি সজ্ঞানে অন্তর থেকে বিশ্বাস এবং এই আক্বীদা লালন করে যে উপরোক্ত পাপগুলো হালাল, এগুলো হারাম নয় অথবা এর জন্য কোন শাস্তি নেই। তাহলে মুসলিম উম্মার ঐক্যমতে সে ব্যক্তি কাফের। মৃত্যুর পর তার জানাযা নামায পড়া হবে না। মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না। জীবিত বা মৃত কোন অবস্থায় তাকে সালাম দেওয়া হবে না এবং তার সালামের জবাব দেওয়া হবে না। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে না, আল্লাহর রহমত কামনা করা হবে না। সে কারো থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না এবং তার থেকেও কেউ উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না। বরং তার সম্পত্তি বায়তুল মালের ফান্ডে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে এমন কিছু জায়েজ আছে যখন মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য আছে যে তা হারাম এবং এই হারামের বিধান মুসলিমদের মধ্যে সুপরিচিত ও কুরআন সুন্নাহর গ্রন্থগুলি এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ রাখে না। যেমন: শূকরের গোশত, ব্যভিচার এবং অনুরূপ বিষয়, যা হারাম হওয়ার বিষয়ে ইমামগনের কোন মতানৈক্য নেই সে ব্যক্তি কুফরের অপরাধী অর্থাৎ কাফির।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ২৭৬)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন: প্রসিদ্ধ ওয়াজিব গুলোকে ওয়াজিব এবং সুপরিচিত নিষেধগুলোকে হারাম বলে বিশ্বাস করা ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলোর একটি এবং যে ব্যক্তি তা প্রত্যাখ্যান (অস্বীকার) করে সে আলেমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফির।”(মাজমু’আল-ফাতাওয়া, খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ৪৯৭)।
.
অপরদিকে সুদখোর, জিনাকারী, ব্যভিচারের অপবাদ-আরোপকারী, চুরি করা, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অবৈধ ভাবে কাউকে হত্যাকারী এবং অলসতা বসত মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগকরা ইত্যাদি ব্যক্তিরা যদি এই পাপগুলো হালাল মনে না করে শয়তানের ধোকায় পড়ে লিপ্ত হয় এবং তওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফের নয়। বরং তিনি কবিরা গুনাহগার ফাসিক মুসলিম তার মৃত্যুর পর একজন মুসলিমের ন্যায় গোসল, জানাযা ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। সে কবিরা গুনাহর জন্য নির্ধারিত প্রতিদান তথা শাস্তির হকদার হবে। তবে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না। তার বিষয়টি আল্লাহর কাছেই অর্পিত থাকবে।আল্লাহ চাইলে তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন,আবার শাস্তিও দিতে পারেন। যদি তিনি শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করার পর তাঁর ঈমানের কারণে তাকে জান্নাত দিবেন এবং তার উপর থেকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি তুলে নিবেন।যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সব (গুনাহ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (সূরা আন-নিসা: ৪৮) ইমাম জারীর আত্ব-ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ আয়াত প্রমাণ করে যে, কাবীরা গুনাহগারদের বিষয়গুলো আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত: তিনি ইচ্ছা করলে তাকে এর জন্য ক্ষমা করবেন এবং যদি তিনি চান তবে তিনি তাকে এর জন্য শাস্তি দেবেন যতক্ষণ না তার বড় পাপ আল্লাহর সাথে শরীক করা (শিরক) না হয়।(তাফসীরে আত-তাবারী: খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ৪৫০)।
.
হাদীসের মধ্যে যাদের ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে তারা হলো- পাপী মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ ‘মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৩০৬২, ৪২০৩-৪২০৪, ৬৬০৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১১, ২০৫)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। (সহীহ বুখারী হা/৪২৫; সহীহ মুসলিম হা/৩৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘…এবং আমার উম্মাতের অবশিষ্ট লোকদের জাহান্নামীদের সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। অতঃপর জাহান্নামবাসীরা বলবে, ‘তোমরা যে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করতে না, আজ তা তোমাদের কোন উপকার করতে পারল না। একথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘আমার সম্মানের কসম, আমি অবশ্যই তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবো। সুতরাং তাদের জাহান্নাম থেকে এমতাবস্থায় বের করা হবে যে, তারা জ্বলে-পুড়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তাদের আবে-হায়াত (জীবন) নামক নদীতে প্রবেশ করানো হবে, ফলত স্রোতবাহিত উর্বর পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ললাটে লিখে দেয়া হবে, ‘এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অতঃপর তাদের নিয়ে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামবাসী বলে সম্মোধন করলে, আল্লাহ বলবেন, ‘বরং এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। (মুসনাদে আহমাদ,হা/১২৪৬৯-১২৪৭০; ইবনু খুযাইমা, হা/৬০১; দারেমী, হা/৩৫; ইবনু মানদাহ, হা/৮৭৭,সনদ হাসান)। অন্যত্র নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, ‘…কতকগুলো সম্প্রদায় তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। অতঃপর আল্লাহ নিজ রহমতে তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদেরকে ‘জাহান্নামী’ বলা হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৫৯, ৬৫৬৬, ৭৪৫০)।
.
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইসলাম পুরাতন হয়ে যাবে, যেমন কাপড়ের উপরের কারুকার্য পুরাতন হয়ে যায়। শেষে এমন অবস্থা হবে যে, কেউ জানবে না, সাওম কি, সালাত কি, কুরবানী কি, যাকাত কি? এক রাতে পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহর কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের (মুসলিমদের) কতক দল অবশিষ্ট থাকবে। তাদের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বলবে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই)-এর অনুসারী দেখতে পেয়েছি। সুতরাং আমরাও সেই বাক্য বলতে থাকব। (তাবেঈ) ছিলা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলায় কি তাদের কোন উপকার হবে না? কারণ তারা জানে না সালাত কি, সিয়াম কি, হজ্জ কি, কুরবানী কি এবং যাকাত কি? ছিলা ইবনে যুফার (রহঃ) তিনবার কথাটির পুনরাবৃত্তি করলে হুযায়ফা (রাঃ) প্রতিবার তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তৃতীয় বারের পর তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে ছিলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; সহীহাহ হা/৮৭; সহীহুল জামে হা/৮০৭৭)
.
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, এই হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ ফিক্বহী উপকারিতা রয়েছে। আর সেটি হলো কালেমায়ে শাহাদাতের সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে স্থায়ী অবস্থান থেকে মুক্ত করবে। যদিও সে সালাত বা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের কোন একটি রুকন প্রতিষ্ঠা না করে। (সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা কাবীরা গোনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেন, আমি আমার দু‘আকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মাতের কাবীরা গোনাহগারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম।(মুসনাদে আবি ইয়া‘লা, হা/৫৮১৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,…. যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (আবু দাঊদ, হা/৪০৯১)।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ এই বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে যে, তাওহীদপন্থী (মুসলিম) কাবীরা গোনাহকারীর ব্যাপারে শাফা‘আত করা হবে এবং সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। পক্ষান্তরে খাওয়ারেজ ও মু‘তাযিলারা এটা অস্বীকার করে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১০৮)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট কাবীরা গুনাহগাররা কাফির নয়। তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে না‌। বরং তাদের বিষয়গুলো আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত’ (শারহুন নববী, খন্ড: ১১ পৃষ্ঠা: ১৬৭)।
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা হলো: মুসলিমদের মধ্যে কেউ যদি ব্যভিচার, মিথ্যা অপবাদ-আরোপ,
চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ইত্যাদির মত কাবিরা গুনাহ-তে উপর্যুপরি লিপ্ত অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ইচ্ছার অধীন থাকবে। তিনি চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।অথবা তিনি চাইলে তাকে উপর্যুপরি লিপ্ত কবিরা গুনাহটির জন্য শাস্তি দিবেন। তবে তার শেষ পরিণতি হবে জান্নাত। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন; নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন।(সূরা নিসা, আয়াত: ৪৮)। এবং এই মর্মে সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদিস রয়েছে; যে হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, গুনাহগার ঈমানদারদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। উবাদাহ ইবনুুস সামিত (রাঃ) হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎকাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হলো এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্‌ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।(সহীহ বুখারী হা/১৮ ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭২৮)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহীদ) দৃঢ়তা স্বীকার করে এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে, এমনকি পিতা-মাতার প্রতি অবজ্ঞা, সুদ এর মতো অন্যান্য পাপ, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি করে থাকে। কারণ তার বিষয়টি আল্লাহর কাছেই অর্পিত থাকবে। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, যতটুকু শাস্তি পাওয়ার হক রাখে সে। আবার আল্লাহ চাইলে তাকে মাফও করতে পারেন। যদি সে অনুতপ্ত না হয়ে মারা যায়। আর যদি সে জাহান্নামে প্রবেশ করে এবং সেখানে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, তবুও সে সেখানে চিরকাল থাকবে না; বরং তাকে পবিত্র করার পর সেখান থেকে জান্নাতে নিয়ে আসা হবে।(বিন বায ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দার্ব; ৬/৫১)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: মুসলমানদের মধ্যে পাপী তিন প্রকার: প্রথম দল যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; দ্বিতীয় দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং তাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি পাবে, তারপর তাদেরকে বের করে আনা হবে। এবং তৃতীয় একটি দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং শাস্তি পাবে, তবে তাদের জন্য শাফায়াত করা হবে এবং তাদের প্রাপ্য শাস্তি সম্পূর্ণরূপে পাওয়ার আগেই তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনা হবে (উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ৪/২)।
.
বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শায়খ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন; নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে যেগুলোতে প্রমাণ রয়েছে যে, তাওহীদে বিশ্বাসী লোকদের মধ্যে যারা বড় ধরনের পাপ অর্থাৎ কবিরা গুনাহ করে মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে; তারা সেখানে প্রবেশ করবে কবিরা গুনাহের কারণে যেগুলো থেকে তারা মৃত্যুর পূর্বে তওবা করেনি। কেউ কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে কারণ তারা যিনা থেকে তওবা না করেই মৃত্যুবরণ করেছে; অন্যরা এতে প্রবেশ করবে কারণ তারা সুদ থেকে তওবা না করে, পিতা-মাতার অবাধ্যতা করে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে,গীবত করে, বা মিথ্যাকে সমর্থন করে বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যুবরন করার কারনে। তাদের মধ্যে আল্লাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করবেন। এবং অন্যরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং পাপ অনুযায়ী শাস্তি পাবে। তবে জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। তাদের মধ্যে কেউ তাদের গুনাহ ও কর্ম অনুসারে সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থান করবে এবং অন্যরা স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে থাকবে। একসময় তাওহীদপন্থী সমস্ত পাপীকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হলে এবং তাদের কেউ অবশিষ্ট না থাকলে, আগুন সব ধরণের কাফেরদের উপর ভাঁজ করে ফেলবে। তাওহীদে বিশ্বাসীদের জাহান্নাম থেকে এমতাবস্থায় বের করা হবে যে, তারা জ্বলে-পুড়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল।অতঃপর তাদের আবে-হায়াত (জীবন) নামক নদীতে প্রবেশ করানো হবে, ফলত স্রোতবাহিত উর্বর পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ললাটে লিখে দেয়া হবে, ‘এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অতঃপর তাদের নিয়ে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২০০২৫২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

আযল কি এবং ইসলামী শরীয়তে আযল অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিধান কি

 ভূমিকা: আযল (العزل) শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা, আলাদা করা ইত্যাদি।যেমন আরবিতে বলা হয় –عَزَل الشَّيءَ عن غيره) সে একটি বস্তুকে অন্য বস্তু থেকে পৃথক করেছে। পরিভাষায়: আযল হল সহবাসের সময় পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর গোপনাঙ্গের ভেতর থেকে বের করে নেওয়া যেন শুক্র স্ত্রী অঙ্গের ভেতরে স্খলিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে স্খলিত হয়। যার উদ্দেশ্য স্ত্রীকে গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা।অন্যভাবে বলা চলে আযল হলো জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি ন্যাচারাল পদ্ধতি। যেখানে সহবাসের সময় স্বামীর বীর্য নির্গত হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলে স্ত্রীর যৌনি থেকে লিঙ্গ বের করে নিয়ে আসা হয়।শারীরিক অসুস্থতা অথবা দুই সন্তানের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখার ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে আযল করা শরী‘আতে বৈধ।আযল জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কৌশল মাত্র। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে,মহান আল্লাহ চাইলে আযল করার পরেও গর্ভে সন্তান আসতে পারে। কেননা হাদীসে এসেছে,জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যখন কুরআন মাজিদ নাযিল হচ্ছিল তখন আমরা আযল করতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫২০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪০; তিরমিযী, হা/১১৩৭; মিশকাত, হা/৩১৮৪)।

.
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানী মুসত্বালিক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম এবং এ যুদ্ধে আমরা অনেক ‘আরাবীয় নারী বন্দীনীরূপে করায়ত্ত করি। যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন নারীবিহীন থাকায় অস্বস্থি বোধ করছিলাম, ফলে আমরা নারী সঙ্গমের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমরা ‘আযল করা পছন্দ করলাম এবং আমরা পরস্পরের মধ্যে ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ করে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে সমুপস্থিত থাকতে তাঁকে জিজ্ঞেস না করে এরূপ করা কি ঠিক হবে? অতঃপর আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা ‘আযল করবে না এমনটি নয়, তবে কিয়ামত পর্যন্ত (সৃষ্টিজীব পৃথিবীতে) যা হওয়ার আছে, তা অবশ্যই সৃষ্টি হবে (বুখারী ৪১৩৮, মুসলিম ১৪৩৮, আবূ দাঊদ ২১৭২, আহমাদ ১১৬৪৭ মিশকাত, ৩১৮৬)।
.
অপর বর্ননায়, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর নিকট এসে বলল, আমার দাসীর সাথে আমি মিলিত হ’লেও তার গর্ভধারণ আমি পছন্দ করি না। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আযল করতে পার, তবে আল্লাহ তা‘আলা যা তাক্বদীরে লিখেছেন তা হবেই (সহীহ মুসলিম হা/৩৬২৯; মিশকাত হা/৩১৮৫)।
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা প্রমাণিত যে, ‘আযল করা সত্ত্বেও গর্ভ সঞ্চার সম্ভব। তবে তা কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষিত ছিল তাই গর্ভে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। ফতোয়ায় কাযীখান-এ এরূপ একটি যুক্তিও উপস্থাপন করা হয়েছে যে, পুরুষ ‘আযল করে হয়তো নারীর যৌনাঙ্গের বাহিরে তার রেতপাত করেছে, তা হতে কিছু শুক্রানু তার গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রূণ সঞ্চারিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)।
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে যারা আযল জায়েজ হওয়ার অভিমত দিয়েছেন, তাদের মধ্যে –ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসউদ, জাবির, জায়েদ ইবনু সাবিত, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস প্রমুখ রাদিয়াল্লাহু আনহুম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।’তাবেঈনদের মধ্যে– ইমাম মালিক, ইমাম শাফি আহলে কুফা (হানাফি ) ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আহলে আলিমের অভিমত। (ইমাম ইবনু কাইয়িম যাদুল মায়াদ ৫/১৪৫) ইবনুল হুমাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট ‘আযল জায়িয। পক্ষান্তরে সাহাবীদের একদল এবং তৎপরবর্তী এটাকে অপছন্দ করেছেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো এটা জায়িয। (ফাতহুল কাদীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৭২)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন, নারী যদি এত বেশি সন্তান প্রসব করে যে, তার ফলে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় অথবা সে গৃহস্থালির আবশ্যক কাজ-কর্ম সমূহ সুচারুরূপে আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয় না। আর সে এই গর্ভ সঞ্চারের বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সীমাবদ্ধ করতে চায়, যেমন প্রতি দু’বছর পর একবার গর্ভধারণ, তবে স্বামীর অনুমতিক্রমে সে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা সাহাবায়ে কেরামের যুগে ‘আযল’ করার অনুরূপ। তারা ‘আযল’ করতেন কিন্তু সে সম্পর্কে আল্লাহ বা তাঁর রাসূল কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি।(উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৯/০২ পৃষ্ঠা)।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ) এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমি একজন নারী ডাক্তার। বর্তমানে ইন্টার্নি করছি। ছাত্রাবস্থায় আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। কিন্তু এখনো সন্তান নিইনি। আমি আমার এ পড়াশুনার মাধ্যমে -ইনশাআল্লাহ- মুসলিম নারীদের সেবা করতে আগ্রহী। (ইন্টার্নিকালে) আমার কাজ হচ্ছে নারী-পুরুষের বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট করানো ও তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া। এমতাবস্থায় আমি ও আমার স্বামী চাচ্ছি দেরীতে সন্তান নিতে; যাতে করে উঁচুমানের এ ইন্টার্নি শেষ করতে পারি (অর্থাৎ গ্রাজুয়েট হয়ে)। এ বিলম্ব শুধু পড়াশুনা করা পর্যন্ত। এটি কি জায়েজ হবে?
.
জবাবে শাইখ বলেন: যদি স্বামী-স্ত্রী সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিশেষ কোন জন্ম নিরোধক ব্যবহারে একমত হন বা রাজি হন তাহলে এতে কোন আপত্তি নেই; এ অধিকার তাদের রয়েছে। যদিও সাধারণভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আমরা তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করি।” যদি এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুর কারণে তারা দেরীতে সন্তান নিতে চান তাহলে এতে কোন বাধা নেই। আমি এ নারীকে নসীহত করব তিনি যেন পুরুষদের চিকিৎসা না করেন; যদি এ চিকিৎসা সতর এর সাথে সম্পৃক্ত হয় কিংবা অভ্যন্তরীণ কোন অঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত হয় কিংবা এতে পুরুষকে স্পর্শ করা ও পুরুষের সতর খুলতে হয়। তবে যদি সামান্য কিছু হয় যেমন- চোখের চিকিৎসা বা কানের চিকিৎসা কিংবা দাঁতের চিকিৎসা সম্ভবত সেটা জায়েয হবে।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩০৩৯৫)।
.
জেনে রাখা ভাল যে,অধিক সন্তানের ভরণ-পোষণের ভয়ে ‘আযল’ করা নিষিদ্ধ এবং হারাম। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে সন্তানদেরকে হত্যা করো না। কেননা আমি যেমন তোমাদেরকে রূযী দেই, তেমনি তাদেরকেও রূযী দেব।’ (সূরা আন‘আম: ৬/১৫১)। অপর আয়াতে বলেন,আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা খাদ্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করে থাকি।’ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩১)। তাছাড়া অধিক জনসংখ্যা আল্লাহর একটি নেয়ামত; এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা ও নিরংকুশভাবে তাঁর ইবাদত করা কর্তব্য। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী শুয়াইব (আঃ) এর কথা উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর কিছু নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন: “স্মরণ কর; যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে; তিনি তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৮৬] অধিক জনসংখ্যা উম্মতের মর্যাদা ও শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যম। তাই তো আল্লাহ তাআলা বনী ঈসরাইলদের সম্পর্কে বলেন: “অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।”[সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৭]।
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা অধিক প্রেমানুরাগিণী, অধিক সন্তান জন্মদানকারিণী মহিলাকে বিয়ে করো। কারণ আমি ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করব।’ (আবুদাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭; মিশকাত, হা/৩০৯১, সনদ সহীহ) অপর বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কুমারী রমণী বিয়ে কর, কেননা কুমারী রমণীর মুখের মধুময়তা বেশি, অধিক গর্ভধারণ যোগ্য এবং অল্পতুষ্টের অধিকারী।(ইবনু মাজাহ ১৮৬১, সহীহ আল জামি‘ ৪০৫৩)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে প্রশ্ন: যিনি বলেন: এ যুগে মুসলমানদের দরিদ্রতা, দুর্বলতা ও পিছিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে– অর্থনৈতিক অগ্রগতির তুলনায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও অধিক জন্মহার। আপনাদের দৃষ্টিতে এ ব্যক্তির ব্যাপারে শরয়ি হুকুম কি এবং তার প্রতি আপনাদের নসীহত কি?

উত্তরে শাইখ বলেন, আমরা মনে করি, তার এ দৃষ্টিভঙ্গি ভুল। কারণ যার জন্য ইচ্ছা রিযিকের সমৃদ্ধিদানকারী ও সংকোচনকারী হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। অধিক জনসংখ্যা রিযিক সংকোচনের কারণ নয়। যেহেতু এ পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সকলের রিযিকের ভার আল্লাহর উপরে। তবে, আল্লাহ তাআলা কোন হেকমতের কারণে রিযিক দেন এবং কোন হেকমতের কারণে রিযিক থেকে বঞ্ছিত করেন। যে ব্যক্তি এমন বিশ্বাস করে তার জন্য আমার নসীহত হচ্ছে- সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং এ বাতিল বিশ্বাস ত্যাগ করে। সে যেন জেনে রাখে, এ বিশ্বজগতের সদস্য যতই বৃদ্ধি পাক না কেন আল্লাহ চাইলে তাদের সকলের রিযিকে সমৃদ্ধি দিতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বলেছেন,“যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে রিযিকে সমৃদ্ধি দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত ও সূক্ষ্মদর্শী।[সূরা শুরা, আয়াত: ২৭ উসাইমিন ফাতাওয়া উলামায়িল বালাদিল হারাম, পৃষ্ঠা- ১০৮৪ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১৯৯৯৫৫)।
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] আরো বলেছেন, জন্ম-নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন দেয়া নিঃসন্দেহে এটি মুসলমানদের শত্রুদের চক্রান্ত। শত্রুরা চায় মুসলমানদের সংখ্যা না বাড়ুক। কারণ মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লে শত্রুরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মুসলমানেরা নিজেরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে: নিজেরা চাষাবাদ করবে, ব্যবসা বাণিজ্য করবে- এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে ও আরও নানামুখি কল্যাণ অর্জিত হবে। আর যদি তারা সংখ্যায় অল্প হয়ে থাকে তাহলে লাঞ্ছিত হয়ে থাকবে এবং সবকিছুতে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।(ইসলাম সওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-১১৯৯৫৫)।
.
অতএব আযল পদ্ধতি অথবা বর্তমান যুগে আবিষ্কৃত জন্মনিয়ন্ত্রণের যত পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলো শারীরিক অসুস্থতা অথবা দুই সন্তানের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখার উদ্দেশ্যে অস্থায়ীভাবে গ্রহণ করা জায়েয।যা উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমানিত, কিন্তু স্থায়ীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা নিষিদ্ধ। মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে অধিক সন্তান লাভে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাছাড়া গবেষণায় একথাও প্রমাণিত, যে নারীর সন্তান যত বেশী, সে নারী তত সুখী ও স্বাস্থ্যবর্তী। সন্তান জন্ম দেওয়াই নারীর প্রকৃতি। আর এই প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করলে একদিকে যেমন নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।তেমনি তার মন্দ প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই স্বাভাবিক।(আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)।
_____________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলার নানাবিধ কারণ

 ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলার নানাবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে নেতৃত্বের লোভ একটি, বিস্তারিত জানতে পুড়ুন:

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলার নানাবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে নেতৃত্বের লোভ একটি(মাজমূউ ফাতাওয়া খন্ড: ১৮ পৃষ্ঠা: ৪৬)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া আরো বলেছেন, মানুষের মনে অনেক বাসনাই সুপ্ত থাকে, যা সে বুঝতে পারে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোহ অনেক মানুষের মনের মাঝে লুক্কায়িত তেমনি একটি সুপ্তবাসনা। লোকটা হয়ত খাঁটি মনে আল্লাহর ইবাদত করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সমস্যাবলীই বা কী, আর দোষ-ত্রুটিই বা কোথায় তাও সে হয়ত জানত না। কিন্তু যেকোনভাবে তার সামনে ক্ষমতা লাভের কোন একটি সুযোগ এসে গেল অমনিই সে তা লুফে নিতে তৎপর হয়ে উঠল। অথচ তার মাঝে যে ক্ষমতার বাসনা ছিল তা সে এর আগ মুহূর্তেও বুঝে উঠতে পারেনি। পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় সেই সুপ্ত বাসনা এখন জেগে উঠেছে। ক্ষমতার সিঁড়িতে এভাবে বহু মানুষই পা রেখেছে। এজন্যই ক্ষমতার এই মোহকে ‘সুপ্তবাসনা’ বলা হয়।(মাজমূউ ফাতাওয়া খন্ড: ১৬ পৃষ্ঠা: ৩৪৬)।
.
ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯৫ হি.] বলেছেন, ক্ষমতাবান ও প্রতিপত্তিশালীরা মানুষের মুখ থেকে প্রশংসা ও সুখ্যাতি শুনতে ভালবাসে। তারা জনগণের কাছে তা দাবীও করে। যারা তাদের প্রশংসা করে না তাদেরকে তারা নানাভাবে কষ্ট দেয়। অনেক সময় তারা একাজে এতটাই বাড়াবাড়ি করে বসে যে প্রশংসা থেকে নিন্দাই তাদের বেশী পাওনা হয়ে দাঁড়ায়। আবার কোন কোন সময় তারা তাদের দৃষ্টিতে ভাল কাজ করছে বলে যাহির করে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাদের মন্দ অভিপ্রায় কাজ করে। এভাবে মিথ্যাকে সত্যের আবরণে আচ্ছাদিত করতে পেরে তারা উৎফুল্ল হয় এবং লোকদের থেকে প্রশংসা লাভ ও তাদের মাঝে তাদের নাম ছড়িয়ে পড়ার আকাঙ্খা পোষণ করে। এমন লোকদের প্রসঙ্গেই আল্লাহ বলেন, যেসব লোকেরা তাদের মিথ্যাচারে খুশী হয় এবং তারা যা করেনি, এমন কাজে প্রশংসা পেতে চায়, তুমি ভাব না যে তারা শাস্তি থেকে বেঁচে যাবে। বস্ত্ততঃ তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক আযাব’ (আলে ইমরান ৩/১৮৮)। এ আয়াত এরূপ বিনাকাজে প্রশংসার জন্য লালায়িতদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ মানবকুল থেকে প্রশংসা তলব করা, প্রশংসা পেয়ে খুশি হওয়া এবং প্রশংসা না করার দরুন শাস্তি দেওয়া কেবলমাত্র লা শরীক আল্লাহর জন্যই মানায়। এজন্যই সৎপথপ্রাপ্ত ইমামগণ তাদের কাজ-কর্মের দরুন তাদের প্রশংসা করতে নিষেধ করতেন। মানুষের কোন কল্যাণ করার জন্য তাদের স্বত-স্ত্ততি করতে দিতেন না; বরং সেজন্য অংশীদার শূন্য এক আল্লাহর প্রশংসা করতে তারা বেশী বেশী উদ্বুদ্ধ করতেন। কেননা সকল প্রকার নে‘মত ও অনুগ্রহের মালিক তো তিনিই। খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয এ ব্যাপারে খুবই সংযত ছিলেন। একবার তিনি হজ্জে আগত লোকদের পড়ে শোনানোর জন্য একটি পত্র প্রেরণ করেন। তাতে তিনি তাদের উপকার করতে আদেশ দেন এবং তাদের উপর যে যুলুম-নিপীড়ন জারী ছিল তা বন্ধ করতে বলেন। ঐ পত্রে এও ছিল যে, এসব কল্যাণ প্রাপ্তির দরুন তোমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো প্রশংসা কর না। কেননা তিনি যদি আমাকে আমার নিজের হাতে সোপর্দ করতেন তাহ’লে আমি অন্যদের মতই হ’তাম। তাঁর সঙ্গে সেই মহিলার ঘটনা তো সুপ্রসিদ্ধ, যে তার ইয়াতীম মেয়েদের জন্য খলীফার নিকট ভাতা বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছিল। মহিলাটির চারটি মেয়ে ছিল। খলীফা তাদের দু’জনের ভাতা বরাদ্দ করেছিলেন। ঐ মহিলা আল্লাহর প্রশংসা করে। কিছুকাল পর তিনি তৃতীয়জনের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেন। এবারও মহিলা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। তার শুকরিয়া প্রকাশের কথা জেনে খলীফা তাকে বলেন, আমরা তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ করতে পেরেছি। আপনার এভাবে প্রশংসার প্রকৃত হকদারের প্রশংসা করার জন্যেই। এখন আপনি ঐ তিনজনকে বলবেন, তারা যেন চতুর্থজনের প্রতি সহমর্মিতা দেখায়। তিনি এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, রাষ্ট্রের নির্বাহী পদাধিকারী কেবলই আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নে নিযুক্ত। তিনি আল্লাহর বান্দাদেরকে তাঁর আনুগত্যের হুকুমদাতা এবং তাঁর নিষিদ্ধ জিনিসগুলো থেকে নিষেধকারী মাত্র। আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানানোর মাধ্যমে তিনি তাদের কল্যাণকামী। তার বিশেষ চাওয়া-পাওয়া যে, দ্বীন সর্বতোভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে থাক এবং ইয্যত-সম্মান সব আল্লাহর হোক। তারপরও তার সদাই ভয় হ’ত যে, তিনি আল্লাহর হক আদায়ে কতইনা ত্রুটি করে ফেলছেন। (শারহু হাদীস মাযেবানে জায়ে‘আনে, পৃষ্ঠা: ৪১-৪৩)।
.
আল্লামা ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, কোন লোক ক্ষমতা লাভ করলে তার অনেক সঙ্গী-সাথী ক্ষমতা লাভের আগে সে তাদের সাথে যেমন আচরণ করত, ক্ষমতা লাভের পরেও তার থেকে তেমন আচরণ প্রত্যাশা করে। কিন্তু তা না পাওয়ার দরুন তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টুটে যায়। এটা ঐ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রত্যাশী সঙ্গীর অজ্ঞতা। সে যেন একজন মাতাল সঙ্গী থেকে তার স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থার সময়কালীন আচরণ কামনা করছে। এটা তো কখনো হবার নয়। কেননা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মাদকের মতই এক প্রকার নেশা, এমনকি তার থেকেও মারাত্মক। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নেশাকর না হ’ত তবে এই ক্ষমতার পূজারীরা কখনই চিরস্থায়ী পরকালের বদলে তা গ্রহণ করত না। সুতরাং তার নেশা চা-কফির নেশা থেকেও অনেক অনেক বেশী। আর চরম নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ-সবল মানুষের আচরণ লাভ অসম্ভব। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মহান ব্যক্তিত্ব মূসা (আঃ)-কে মিশরের কিবতী (কপটিক) সম্প্রদায়ের প্রধান নেতা ফেরা‘ঊনের সাথে বিনয়-নম্র ভাষায় সম্ভাষণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন,فَقُوْلاَ لَهُ قَوْلاً لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى ‘তোমরা দু’জন তাকে নরম ভাষায় বুঝাও। হ’তে পারে সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে’ (সূরা ত্বা-হা ২০/৪৪)। সুতরাং রাষ্ট্রনায়ক বা ক্ষমতাসীনদের সাথে বিনম্র বচনে কথা বলা শরী‘আত, বিবেক, প্রথা ইত্যাদি সবকিছুরই দাবী। কিন্তু অনেক সময় লোকে তা করে উঠতে পারে না বলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।(বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৬৫২)।
.
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) আরো বলেছেন,‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতি লালসার ন্যূনতম ক্ষতি এই যে, তা আল্লাহর ভালবাসা ও যিকির থেকে মনকে অন্য দিকে সরিয়ে দেয়। আর যার ধন-সম্পদ, ক্ষমতালিপ্সা তাকে আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ করে দেয়, সে ক্ষতিগ্রস্তদের শ্রেণীভুক্ত। আর মন যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে পড়ে, তখন শয়তান সেখানে বাসা বাঁধে এবং যেদিকে খুশি তাকে পরিচালিত করে’।(উদ্দাতুছ ছাবিরীন, পৃষ্ঠা: ১৮৬) সংকলিত (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

▬▬▬✿◈✿▬▬▬

উপস্থাপনায়:

জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

পুরপুরুষের উপস্থিতিতে মহিলাদের সালাত আদায় করার বিধান

 পুরপুরুষের উপস্থিতিতে মহিলাদের সালাত আদায় করার বিধান। (প্রসঙ্গ: সমুদ্র সৈকতে পরপুরুষের সামনে এক মহিলার সালাত আদায়ের ভাইর‍্যাল ভিডিও)

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম যে, একজন মহিলা সমুদ্র সৈকতে সালাত আদায় করছে। যেখানে দর্শনার্থী অনেক নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল। উল্লেখ্য যে, তাকে বোরখা পরা অবস্থায় নয় বরং তিনি সালোয়ার-কামিজ পরিহিত ছিলেন। আমার প্রশ্ন হল, মহিলারা সালাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় এভাবে রাস্তার পাশে বা জনসম্মুখে সালাত আদায় করতে পারবে কী? অনেক মেয়েকে দেখছি, বর্তমানে রাস্তায় নেমে সালাত আদায় করতে চাচ্ছে। কারণ তাদের সালাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা কতটুকু শরিয়ত সম্মত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:
প্রথমত: জানা দরকার যে, মহিলাদের জন্য নিজ বাড়িতে সালাত আদায় করা উত্তম। তবে মসজিদে যদি পড়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেখানেও পড়া জায়েজ আছে। যেমন:

হাদিসে এসেছে, উম্মে হুমায়েদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন আবু হুমায়েদ রা.-এর স্ত্রী। তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আমি আপনার সাথে মসজিদে নববীতে নামাজ পড়তে ভালবাসি।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,

قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي

“আমি জানি, তুমি আমার সাথে সালাত আদায় করতে ভালবাসো। কিন্তু তোমার জন্যে তোমার নিজের ক্ষুদ্র কক্ষে সালাত আদায় করা, বাড়িতে (প্রশস্ত ঘরের মধ্যে) সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। আর বাড়িতে সালাত আদায় করা, বাড়ির উঠানে সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। নিজ বাড়ির উঠানে সালাত আদায় করা মহল্লার মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে সালাত আদায় করা আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম।’’ তারপর উম্মে হুমাইদ রা. এর কথামত তার জন্যে নিজ ঘরের ভিতরে অন্ধকার স্থানে সালাত আদায় করেছেন। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ ৬/৩৭১, ইবনে খুযায়মা ৩/৯৫, ইবনে হিব্বান ৪/২২-হাসান]

দ্বিতীয়ত: যদি কোনও বিশেষে পরিস্থিতিতে পরপুরুষের সামনে সালাত আদায়ের প্রয়োজন হয় তাহলে তা জায়েজ আছে। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে, লোক চক্ষুর আড়ালে গিয়ে সালাত আদায় করার। যেমন: কোন ঘর, ঝোপঝাড় বা গাড়ি ইত্যাদির আড়ালে। কমপক্ষে চেষ্টা করবে তুলনামূলক যেখানে লোকসমাগম কম সেখানে সালাত আদায় করার। কিন্তু এমন পরিস্থিতি না থাকলে পরপুরুষের সামনেই পূর্ণাঙ্গ পর্দা সহকারে সালাত আদায় করা যাবে। এ ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল এবং হাত সহ পুরো শরীর ভালোভাবে ঢাকবে। এই অজুহাতে সালাত ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়।‌ কারণ ইসলামে সালাতের মর্যাদা অপরিসীম। শরিয়তের ওজর ব্যতিরেকে তা তার নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করে পড়া জায়েজ নাই।

আর মহিলাদের কর্তব্য হল, বাইরে যাওয়ার সময় বোরকা দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করা। কিন্তু যদি কখনো বোরকা না থাকে এবং সালাতের সময় হয়ে যায় তাহলে সে যে পোশাকে আছে সে পোশাকেই সারা শরীর ভালোভাবে ঢেকে সালাত আদায় করবে।

❑ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া:

প্রশ্ন: একজন মহিলা যদি তার কাছে পরপুরুষ থাকে-যেমন: মসজিদুল হারামে, একইভাবে যদি রাস্তায় মহিলাদের জন্য কোন মসজিদ না থাকে তাহলে সে কীভাবে নামাজ পড়বে?
তারা উত্তরে বলেছেন,
إن المرأة يجب عليها ستر جميع بدنها في الصلاة إلا الوجه والكفين لكن إذا صلت وبحضرتها رجال أجانب يرونها وجب عليها ستر جميع بدنها بما في ذلك الوجه والكفان
“একজন মহিলার জন্য তার মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি দ্বয় ব্যতীত নামাজে সমস্ত শরীর ঢাকা ওয়াজিব। তবে যদি সে পরপুরুষদের উপস্থিতিতে নামাজ পড়ে তবে তাকে কব্জি দ্বয় ও মুখমণ্ডলসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে।”
[সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়া কমিটি, ৭/৩৩৯] আল্লাহ আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামের দৃষ্টিতে কবিতা চর্চার বিধান ও শর্তাবলী

 প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে কবিতা চর্চার বিধান কী?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে কবিতা চর্চার বিধান, প্রশংসনীয় কবিতা ও নিন্দনীয় কবিতা এবং কবিতা চর্চা বৈধ হওয়ার শর্তাবলী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল: وبالله التوفيق

মহাগ্রন্থ কুরআনে শুয়ারা (الشعراء) নামক একটি সূরা আছে। এর অর্থ: কবিগণ। এ সূরার ২২৭ ও ২২৮ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ কবিদের সম্পর্কে বলেন,
وَالشُّعَرَاءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ ‎-‏ أَلَمْ تَرَ أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ يَهِيمُونَ وَأَنَّهُمْ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ ‎- إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا
“বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখ না যে, তারা (কবিরা) প্রতি উপত্যকায় উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং এমন কথা বলে, যা তারা করে না? তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে।” [সূরা শুয়ারা: ২২৭ ও ২২৮]

– ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যায় বলেন,
أكثر قولهم يكذبون فيه
“কবিরা তাদের অধিকাংশ কথাবার্তায় মিথ্যা বলে।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

– আল্লামা আব্দুর রাহমান বিন সাদি রহ. এই আয়াতের তাফসিরে বলেন,

أَلَمْ تَرَ ) غوايتهم وشدة ضلالهم ( أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ ) من أودية الشعر، ( يَهِيمُونَ ) فتارة في مدح, وتارة في قدح, وتارة في صدق، وتارة في كذب، وتارة يتغزلون, وأخرى يسخرون, ومرة يمرحون, وآونة يحزنون, فلا يستقر لهم قرار, ولا يثبتون على حال من الأحوال.

“(পথভ্রষ্ট ও সত্য চ্যুত কবিরা) কবিতার সব উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়। কখনো প্রশংসা, কখনো কুৎসা, কখনো সত্য, কখনো মিথ্যা, কখনো প্রেম-প্রণয়, কখনো তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, একবার আনন্দ-বিনোদন তো আরেকবার দুঃখ গাঁথা (এভাবে তারা সব উপত্যকায় উদভ্রান্তের মত উদ্দেশ্যহীণভাবে বিচরণ করে।) মোটকথা, তারা কোন একটি সিদ্ধান্তের উপর অবিচল থাকে না বা এক অবস্থার উপর উপর স্থির থাকে না।” [তাফসিরে বিন সাদি]

❑ কবিতা চর্চার কতিপয় শর্তবলী:

কবিদের কাব্যচর্চার এ ভাবের জগত থেকে এবং কল্পনা প্রবণতা থেকে দূরে রাখা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য নয়। তবে তারা যেন এ ভাবের জগতে বিচরণ করতে গিয়ে অসত্য, ভ্রান্ত ও বিপথগামিতার পথে না হাঁটে সে জন্য আল্লাহ তাআলা কবিতা রচনার জন্য উপরোক্ত আয়াতে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। যেমন:
◆ ১. কবিকে ইমানদার হতে হবে।
◆ ২. ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে সৎকর্ম শীল হতে হবে। সে অন্যায় ও অসৎ কর্ম বর্জন করে সত্য ও সুন্দরের অনুসারী হবে।
◆ ৩. ভাব ও কল্পনা প্রবণতা এবং আবেগী বিচরণ যাতে তাকে সৎ পথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সে জন্য আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে।
◆ ৪. আর যখনই মানবতা বিপন্ন হবে, নিপীড়িত, নির্যাতিত হবে তখনি কবি তার সর্ব শক্তি নিয়োগ করে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করবে। সত্য পন্থী কবিদের অন্যতম দায়িত্ব হল, সত্য, ন্যায় ও সভ্যতার স্বপক্ষে প্রতিবাদ বাণী উচ্চারণ করা।

❑ উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি শরিয়তে কাব্যচর্চার বিধান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তাফসিরে ফাতহুল মাজিদে বলা হয়েছে:

পূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেল কবিতা ও কবি দু প্রকার। যথা:

✪ ১. যারা অশ্লীল-বেহায়া, অসত্য ও কাল্পনিক-অবাস্তব কথা বলে, মানুষের প্রশংসা ও নিন্দা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে কবিতা রচনা করে এবং আল্লাহ তাআলার স্মরণ, কুরআন ও জ্ঞানচর্চার ওপর প্রবল হয়ে যায় ও শরিয়ত বিরোধী বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় তাহলে সে সব কবি ও কবিতা নিন্দনীয়, এরূপ কবি ও কবিতাকে আল্লাহ তাআলা নিন্দা করেছেন যেমন: সূরা শুয়ারা-এর ২২৭ ও ২২৮ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে,
আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আরজ অঞ্চলে ভ্রমণ করছিলাম। সে সময় এক কবি কবিতা আবৃতি করতে করতে আসতে লাগল। তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শয়তানটাকে ধরো। অথবা (বর্ণনায় সংশয়, তিনি বললেন) শয়তানটাকে বাধা দাও। তারপর বললেন,
لأنْ يَمْتلِئَ جَوْفُ أحَدِكم قَيْحًا حتَّى يَرِيَه خيْرٌ له مِن أن يَمْتلِئَ شِعْرًا
“তোমাদের কারো পেট পুঁজ দ্বারা পূর্ণ করুক এটা তার জন্য উত্তম কবিতা দিয়ে পেট পূর্ণ করা থেকে।” [সহীহ বুখারী হা/৬১৫৪, সহীহ মুসলিম হা/ ২২৫৭]
– খলিফা উমর রা. এর গভর্নর আদী বিন নযলাকে অশ্লীল কবিতা বলার অপরাধে পদচ্যুত করেন।
– উমর বিন আব্দুল আজিজ একই কারণে আবুল আহওয়াসকে দেশান্তরিত করেন। [তাফসিরে কুরতুবি]

✪ ২. যে সব কবিতায় অসত্য, বেহায়া, অশ্লীল ও শরিয়ত গর্হিত কোন কথা নেই এবং আল্লাহ তাআলার জিকির, ইবাদত ও কুরআন থেকে গাফেল রাখে না বরং ঈমান ও আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে, জি/হা/দের প্রতি প্রেরণা যোগায় তা ভালো ও প্রশংসনীয়। এরূপ কবি ও কবিতা উভয়কে আল্লাহ তাআলা ও রসূল প্রশংসা করেছেন। যেমন: সূরা শুয়ারা-এর ২২৭ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

– রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ مِنَ الشِّعْرِ حِكْمَةً
“কিছু কবিতা রয়েছে প্রজ্ঞা পূর্ণ।” [সহীহ বুখারী, হা/ ৬১৪৫]
– তিনি আরও বলেন,
الشعرُ بمنزلةِ الكلامِ ، فحسَنُه كحسنِ الكلامِ ، و قبيحُه كقبيحِ الكلامِ
“কবিতা হল, কথার মত। ভালো কবিতা ভালো কথার মত আর খারাপ কবিতা খারাপ কথার মত।” [সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৪৭, সহিহুল জামে, হা/ ৩৭৩৩]

– রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন কবি ছিলেন যার নাম হাসসান বিন সাবেত রা.। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষে কাফিরদের কবিতার প্রত্যুত্তর দিতেন। মদিনায় দশ জন সাহাবি কবি ছিলেন। [তাফসিরে কুরতুবি]।

সুতরাং কবিদের সতর্ক হওয়া উচিত সে কী কবিতা বলছে। যদি ভাল হয় তাহলে তার পরিণাম ভালো আর মন্দ হলে তার মন্দ পরিণাম নিজের ওপর বর্তাবে।”
[শাইখ শহীদুল্লাহ খান মাদানি (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত তাফসিরে ফাতহুল মাজিদ থেকে নেওয়া। সামান্য পরিমার্জিত ও সংযোজিত]

◈ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবি হাসসান বিন সাবিত রা.-এর উদ্দেশ্যে দুআ করেছেন:

হাসসান ইবনে সাবিত রা. হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি। আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে,

‏ يَا حَسَّانُ أَجِبْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ‏

“ওহে হাসসান! তুমি আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে (মুশরিকদের) প্রত্যুত্তর দাও। হে আল্লাহ! তুমি জিবরিল আ.-এর মাধ্যমে তাকে সাহায্য কর।”?
আবু হুরাইরা রা. বললেন, হ্যাঁ।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৭৮/ আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৭৮/৯১. কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের নিন্দা করা।]

◈ কা/ফি/র-মু/শ/রি/কদের বিরুদ্ধে কবিতা আবৃতিকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমর্থন করেছেন:
আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরাতুল কাযায় মক্কায় প্রবেশ করেন। আর তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. এই কবিতা পাঠ করতে করতে তাঁর সামনে হাঁটছিলেন:

خَلُّوا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيلِهِ
الْيَوْمَ نَضْرِبْكُمْ عَلَى تَنْزِيلِهِ
ضَرْبًا يُزِيلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيلِهِ
وَيُذْهِلُ الْخَلِيلَ عَنْ خَلِيلِهِ

অর্থ: “হে কাফির সম্প্রদায়! তাঁর রাস্তা ছেড়ে দাও। তার প্রবেশে বাধা দিলে তোমাদেরকে আঘাত করবো। এমন আঘাত, যা মাথা স্থানচ্যুত করে দেবে এবং বন্ধুকে বন্ধুর কথা তুলিয়ে দেবে।”

তারপর তাকে উমর রা. বললেন, হে ইবনে রাওয়াহা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে হারাম শরিফে তুমি কবিতা আবৃত্তি করছ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। এই কবিতা কাফিরদের অন্তরে তীর নিক্ষেপের চেয়ে দ্রুত প্রভাব বিস্তারকারী।”

[সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ২৪/ হজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি, পরিচ্ছেদ: ১০৯. ইমামের সামনে দিয়ে হারামে কবিতা পাঠ করা ও হাঁটা-চলা করা]

❑ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

هذا فيه تفصيل أيضًا، والشعر مثلما قال الشافعي رحمه الله: “حسنه حسن، وقبيحه قبيح”، فالشعر الذي ينصر الحقَّ ويُؤيد الحقَّ، ويهدم الباطل وأهل الباطل؛ هذا مطلوبٌ، هذا مشروعٌ، وهو الذي كان يقوم به حسان بن ثابت ، وعبدالله بن رواحة، وسعد بن مالك، وغيرهم من الشعراء الذين كانوا في عهده ﷺ وبعده.
أما إذا كان الشعر في ذمِّ الحق، ومدح الخنا والفساد، والدعوة إلى الزنا والفجور؛ فهذا منكرٌ محض لا يجوز.
فالشعر يختلف بحسب مقاصده ومراد صاحبه: فإن أراد الحقَّ والخير ومُقتضى شعره يدل على ذلك؛ فلا بأس في ذلك، ومن الدعوة إلى الخير، والدعوة إلى الحق، وإن كان شعره يدعو إلى الباطل والفساد؛ صار مذمومًا يجب منعه منه

“ইসলামে কবিতা চর্চা জায়েজ-নাজায়েজ হওয়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যেমনটি ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন, “এর ভালোটি ভালো এবং খারাপটি খারাপ।”
সুতরাং যে কবিতা সত্য ও ন্যায়কে সাহায্য ও সমর্থন করে এবং বাতিল এবং বাতিল পন্থীদেরকে ধ্বংস করে সে কবিতা প্রত্যাশিত এবং তা শরিয়ত সম্মত। এ কাজটিই করেছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর-যুগে হাসান বিন সাবিত রা., আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা., সাদ বিন মালিক রা. প্রমুখ যে সব কবিরা ছিলেন তারা।
কিন্তু কবিতা যদি সত্যের সমালোচনা করে, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার প্রশংসা করে এবং ব্যভিচার ও পাপাচারের দিকে আহ্বান জানায় তাহলে তা হল, নিন্দনীয় ও নিকৃষ্ট কাজ-যা জায়েজ নয়।

মোটকথা, কবিতার উদ্দেশ্য এবং কবির অভিপ্রায় অনুসারে কবিতার বিধান ভিন্ন হয়। যদি তার উদ্দেশ্য হয় সত্য ও কল্যাণ এবং তার কবিতার মূল বক্তব্য সে দিকে ইঙ্গিত দেয়, কল্যাণ ও সত্যের দিকে আহ্বান করে তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যদি কবিতা মিথ্যা, বিশৃঙ্খলা ও অন্যায়ের দিকে আহ্বান করে তাহলে তা হয়ে উঠে নিন্দনীয়- যা থেকে তাকে নিবৃত রাখা অপরিহার্য।” [binbaz]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate