Thursday, November 9, 2023

নাকের ছিদ্রের পশম তুলে ফেলার শরয়ী বিধান এবং স্বাস্থ্যগত নির্দেশনা

 প্রশ্ন: নাকের ছিদ্রের পশম তুলে ফেলা জায়েজ কি?

উত্তর:
হাদিসে দাড়ি মুণ্ডন অথবা কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। চোখের ভ্রু তুলে চিকন করা (ভ্রু প্লাক করা) কে অভিসম্পাত যোগ্য কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (কবিরা গুনাহ/বড় পাপ)। সুতরাং এগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

অনুরূপভাবে মোচ কেটে ছোট করতে বলা হয়েছে। বগলের লোম তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং নাভির নিচের লোম চেঁছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অত:এব এগুলো যথানিয়মে করা উচিত (মুস্তাহাব)। কিন্তু নাকের ছিদ্র বা নাসারন্ধ্রের চুল সহ শরীরের অন্যান্য পশম এর ব্যাপারে আদেশ-নিষেধ কোনটাই আসেনি।

সুতরাং মানুষ প্রয়োজনবোধে তা রাখতে পারে আবার তুলে ফেলতে বা কাটতেও পারে। এতে কোনও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, মহান আল্লাহ নাসারন্ধ্রে যে লোম দিয়েছেন তা আমাদের শারীরিক সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত দরকারি। কারণ তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বাহিরের ময়লা-আবর্জনা, কীটপতঙ্গ এবং নানা জীবাণু শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ফিল্টার হিসেবে কাজ করে।

◈ “নাকের ভেতরের চুল ওঠানো কেন স্বাস্থ্যসম্মত নয়?

এ প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাকের ভেতরের চুল আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে দেহে বাইরের জীবাণু প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ড. এরিখ ভয়েট বলেন, নাকের ছিদ্রর ভেতরে যে চুলগুলো রয়েছে তা প্রতিদিন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসকে ফিল্টার করতে সহায়তা করে।
নাকের ভেতর দুই ধরণের চুল রয়েছে। এর একটি ধরণ আপনি দেখতে পাবেন। এটি নাকের বাইরের দিকেই থাকে। অনেকেই এটি তুলে ফেলতে চান। অন্যটি আপনি দেখতে পাবেন না। নাকের ভেতরের দিকে থাকে এ ধরণের চুলগুলো।

নাকের বাইরের দিকের চুলগুলো বড় ধূলিকণা থেকে নাককে রক্ষা করে। অন্যদিকে নাকের ভেতরের দিকের চুলগুলো সূক্ষ্ম কণা ও জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়।
নাকের চুল উঠিয়ে ফেললে তা যেমন বাইরের নানা ধূলিকণা ও জীবাণু প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারে না তেমন উঠিয়ে ফেলা চুলের শূন্যস্থানে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে। নাক অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। কারণ এখানে যে ধমনীর মাধ্যমে রক্ত আসে ঠিক সেই ধমনি দিয়েই রক্ত মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে এখানে যে কোনও সংক্রমণের প্রভাব মস্তিষ্কে পড়তে পারে।

◈ এক্ষেত্রে সমাধান কী?

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাকের পশম টেনে তোলা যাবে না কোনোক্রমেই। তার বদলে কিছুদিন পর পর তা কাঁচি দিয়ে ছেঁটে দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় সেখানে সংক্রমণ হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।” [উৎস: কালের কণ্ঠ অনলাইন পত্রিকা]

সুতরাং নাকের ভিতরের পশম অতিরিক্ত বড় অথবা বিরক্তিকর ও কষ্টের কারণ না হলে না তোলাই উত্তম।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-

সহবাসের দুআ

 প্রশ্ন: সহবাস করার শুরুতে, মাঝে ও শেষে কী কী দুআ পাঠ করতে হয়?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পূর্বের দুআ সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন: ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রী সহবাস করতে চায় সে যেন বলে,
” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ ”
(বিসমিল্লাহ্‌। আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ও জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।)
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান।” তাহলে এ মিলনে তাদের ভাগ্যে যদি কোন সন্তান হয় তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।” [বুখারি হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তাহলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তার উপর কর্তৃত্ব চালাতে পারবে না।” [সহীহ বুখারী (ইফা), অধ্যায়: ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা, পরিচ্ছেদ: ১৯৯৩. ইবলিশ ও তার বাহিনীর বর্ণনা] কিন্তু সহবাসের মাঝে বা সহবাসের পর বিশেষ কোনও দুআ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। তাই নির্দিষ্ট কোনও দুআ নিয়ম করে পাঠ করা যাবে না। হ্যাঁ, কেউ যদি সহবাসের পর সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর কাছে নিজের মত করে দুআ করে, আল্লাহর কাছে সন্তান চায় তাহলে তাতে কোনও আপত্তি নাই। তবে নির্দিষ্ট কোনও দুআ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পড়া যাবে না। অন্যথায় তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিস বা সাহাবিদের আমল দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। কেউ কেউ সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে সহবাসে বীর্যপাতের সময় অথবা সহবাসের পরে স্ত্রী পেটে হাত রেখে নির্দিষ্ট দুআ পড়ার কথা বলে। যেমন: বীর্যপাতের সময় নিম্নোক্ত দুআ পাঠের কথা বলা হয়:
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي جَعَلَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا
“সেই আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” মূলত: সূরা ফুরকানের ৫৫ নাম্বার আয়াতকে কিছুটা বিকৃত করে এ দুআটি বানানো হয়েছে। কিন্তু কুরআন-সুন্নায় স্ত্রী মিলনকালে বীর্যপাতের সময় এই দুআ পাঠ করার কথা কোথাও বর্ণিত হয়নি। অনুরূপভাবে সহবাসের পরে স্ত্রীর পেটে হাত রেখে বিশেষ কোনও দুআ পাঠের ব্যাপারেও কোনও নির্দেশনা আসেনি। সুতরাং তা অবশ্যই বর্জনীয়। অন্যথায় তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মায়ের একটি সুখের হাসি‌ আর একটি কষ্টের নিঃশ্বাস

 “মায়ের একটি সুখের হাসি‌ আটটি বেহেস্তের সমান আর একটি কষ্টের নিঃশ্বাস সাতটি দোজখের চেয়েও ভয়ংকর” একটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদিস:

প্রশ্ন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মায়ের একটি সুখের হাসি আটটি বেহেস্তের সমান আর কষ্টের একটি নিঃশ্বাস সাতটি দোজখের চেয়েও ভয়ংকর।” এটি কি সহিহ হাদিস?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: এটি কোনো হাদিস নয় বরং ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। অর্থাৎ এটি হাদিসের নামে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে মিথ্যাচার। এটি কোন বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে তো দূরের কথা, বানোয়াট হাদিস সংকলন গ্রন্থগুলোতেও উল্লেখিত হয়নি। বরং তা সোশ্যাল মিডিয়ার বকধার্মিক মূর্খ আবেগীদের তৈরি করা হাদিস বলেই প্রতীয়মান হয়। (আল্লাহ তাআলা এদের অনিষ্ট থেকে মুসলিমদেরকে হেফাজত করুন। আমিন) সুতরাং এই জাতীয় হাদিস প্রচার-প্রসার করা বা বর্ণনা করা জায়েজ নেই। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা করলে তার পরিণতি হবে জাহান্নামের আগুন। এ ব্যাপারে হাদিসে সতর্ক বার্তা উচ্চারিত হয়েছে।

তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি, বই-পুস্তক রচনা, ওয়াজ মাহফিল, খুতবার মিম্বর ইত্যাদিতে হাদিস প্রচার বা বর্ণনার ক্ষেত্রে হাদিসের মান যাচাই করা এবং এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। ‌আমিন।
যাহোক, বাবা-মাকে খুশি রাখা এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত আয়াত এবং বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে‌। সেগুলোই যথেষ্ট।
▪️উল্লেখ্য যে, জান্নাত আটটি এবং জাহান্নাম সাতটি নয়। বরং জান্নাত একটি কিন্তু তার দরজা আটটি। এ ব্যাপারে বহু সহিহ হাদিস রয়েছে। আর জাহান্নাম একটি কিন্তু তার দরজা সাতটি। এ বিষয়ে দেখুন, সূরা হিজর-এর ৪৪ নম্বর আয়াত। আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate