Wednesday, February 28, 2024

আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে দাঈর আচরণ ও ভাষার ব্যবহার

 দাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের গালাগালি, অহংকার, সত্য প্রত্যাখ্যান ও অন্যায় আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ইচ্ছেমত ধোলায় দেন আর মনের ঝাল মিটান তাই না? হ্যাঁ, এতে মনের ঝাল মিটবে ও রাগ প্রশমিত হবে..কিন্তু দাওয়াতি কাজ হবে না। এটা দাওয়াতের পদ্ধতি নয়।

‘শব্দ বোমা’ দ্বারা মানুষের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করা যায় কিন্তু কখনো তা জয় করা যায় না। তাই দাওয়াতের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক ও তির্যক বক্তব্য নয় বরং প্রয়োজন ভালবাসা ও আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ।

◍ আল্লাহ তাআলা কুরআনে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানবিক গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন এভাবে:
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّـهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
“আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রুক্ষ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো” (সূরা আল-ই ইমরান: ১৫৯)

◍ আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের মত পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ধত ও ‘সর্বোচ্চ রব’ বলে দাবী কারী ব্যক্তিটির কাছে আল্লাহর নবী মুসা ও তার ভাই হারুন আ. কে দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিচ্ছেন এভাবে:
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
“অতঃপর তোমরা তাকে নরম ভাষায় কথা বলো-হয়তবা সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।” [সূরা ত্ব-হা: ৪৪]

◍ আপনি দাওয়াতি কাজ করতে চান কিন্তু প্রতিপক্ষকে এমন ভাষায় কথা বলেন, যার কারণে সে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে-তাহলে শুনুন:
মা’মার বিন সোলাইমান বলেন, আমি আমার পিতা সোলাইমান (মৃত্যু: ১৪৩হি:) কে বলতে শুনেছি: “যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে রাগিয়ে দাও সে কখনো তোমার কথা শুনবে না।”
[আল আদাব আশ শারঈয়াহ, মাকদেসী ১/১৯৪]

◍ একটি প্রসিদ্ধ আরবি প্রবাদ বাক্য হল:
مَنْ لانَتْ كلِمَتُه وجبَتْ محبَّتُه
“যার ভাষা নম্র হয় তার প্রতি অপরিহার্য ভাবে ভালবাসা সৃষ্টি হয়।”

◍ বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, রাহবার এবং একজন দরদি ও সফল দাঈ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন:
” هذا العصر عصر الرفق والصبر والحكمة , وليس عصر الشدة . الناس أكثرهم في جهل , في غفلة إيثار للدنيا ,
فلا بد من الصبر , ولا بد من الرفق حتى تصل الدعوة , وحتى يبلغ الناس وحتى يعلموا . ونسأل الله للجميع الهداية . ”
“বর্তমান যুগ হল, নম্রতা, ধৈর্য এবং প্রজ্ঞার যুগ; কঠোরতার যুগ নয়। অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতা, অবহেলা ও পার্থিব স্বার্থপরতায় ডুবে রয়েছে।
অতএব অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে, অবশ্যই নম্র ব্যবহার করতে হবে যেন দাওয়াত পৌঁছে যায়..যেন মানুষের কাছে (আল্লাহর দীন) পৌঁছানো যায়..যেন মানুষ (সঠিক দীন) জানতে পারে।
আল্লাহর নিকট সকলের জন্য হেদায়েত প্রার্থনা করছি।” [মাজমু ফতোয়া/ফতোয়া সমগ্র, ৮/৩৭৬]
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

দাওয়াতি ক্ষেত্রে উগ্রতা ও কঠোরতা নয় প্রয়োজন নরম ভাষা ও সুন্দর ব্যবহার

 ভূমিকা: যে আল্লাহর পথে আহ্বান করে তার চেয়ে উত্তম কথা আর কারও নেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ‎

“তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার আছে যে, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত?” [সূরা ফুসসিলাত/হা-মী-ম সাজদাহ: ৩৩]

আল্লাহর পথে আহ্বান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রসুলদের কাজ। সুতরাং যারা এ পথে কাজ করবে তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে নবী রসুলদের আদর্শ প্রতিবিম্ব হতে হবে। কারণ তাঁরাই দুনিয়ার মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ অনুকরণীয় আদর্শ। আর তাদের আদর্শ হল, নম্রতা পূর্ণ কথা ও সুন্দর আচরণ। দাওয়াতি ময়দানে রুক্ষ ও কর্কশ ভাষা এবং উগ্র আচরণ কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

নিম্নে কুরআন-সুন্নাহ ও মনিষীদের উক্তির আলোকে বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

❖১. আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দাওয়াতের পদ্ধতি শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

“তোমার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান কর হিকমত (প্রজ্ঞা) ও উপদেশপূর্ণ কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সুন্দরতম পন্থায়।” [সূরা নহল: ১২৫]

ইমাম বাগাভি বলেন, কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘উপদেশপূর্ণ কথা’ হল,

هو القول اللين الرقيق من غير غلظة ولا تعنيف ا هـ
[تفسير البغوي : 5/52]

“নরম ও কোমল কথা-যাতে কঠোরতা ও উগ্রতা নেই।” [তাফসীরে বাগাবী ৫/৫২]

❖ ২. আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সবচেয়ে ঔদ্ধত্য ও অহংকারী কাফের বাদশাহ ফেরাউনের নিকট মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামকে দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে বলেন,

فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا

“অতঃপর তোমরা তাকে নরম ভাষায় কথা বলো।” [সূরা ত্ব-হা: ৪৪]

❖ ৩. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথাবার্তা ও আচরণ কেমন ছিল আল্লাহ তাআলা তার বিবরণ দিচ্ছেন:

بِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّـهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ ۚ

“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রুক্ষ ও কঠিন হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

❖ ৪. প্রখ্যাত সাহাবী জারির বিন আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:

من يحرم الرفق يحرم الخير كُله

“যে ব্যক্তি নম্র আচরণ হতে বঞ্চিত সে সকল প্রকার কল্যাণ হতে বঞ্চিত।” [সহীহ মুসলিম]

❖ ৫. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

” ِنَّ الرِّفْقَ لا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلا زَانَهُ ، وَلا نُزِعَ مِنْ شَيْءٍ إِلا شَانَهُ

“নম্রতা ও কোমলতা যে জিনিসেই থাকবে তা সুন্দর ও সুষমা মণ্ডিত হবে আর কঠোরতা যে জিনিসে থাকবে তা কুৎসিত ও অকল্যাণকর হবে।” [সহীহ মুসলিম, আয়েশা রা. হতে বর্ণিত]

❍ একটি প্রসিদ্ধ আরবি প্রবাদ বাক্য হল:

من لانت كلمته وجبت محبته

“যার ভাষা নম্র হয় তার প্রতি অপরিহার্য ভাবে ভালবাসা সৃষ্টি হয়।”

❍ আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন, মানুষের অন্তরে প্রভাব ফেলার জন্য সবচেয়ে উপকারী পদ্ধতি দুটি:

১) নম্র আচরণ
২) কল্যাণ কামনা
– এর মাধ্যমে অপরিচিত লোকের হৃদয় জয় করা যায়
– সাথী-বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় ও ভালবাসা স্থায়ী হয়।
– আর শত্রুর ক্রোধের আগুন নির্বাপিত হয় এবং তার ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়।
[মাদারিজুস সালেকীন, ইমাম ইবনুল কাইয়েম, ২/৫৫১]

❍ আপনি দাওয়াতি কাজ করতে চান কিন্তু প্রতিপক্ষকে এমন ভাষায় কথা বলেন, যার কারণে সে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে সে আপনার কথা শুনবে না।

মা’মার বিন সোলাইমান বলেন, আমি আমার পিতা সোলাইমান [মৃত্যু: ১৪৩হি.] কে বলতে শুনেছি: “যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে রাগিয়ে দাও সে কখনো তোমার কথা শুনবে না।” [আল আদাব আশ শারঈয়াহ, মাকদেসী ১/১৯৪]

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, রাহবার এবং একজন দরদি ও সফল দাঈ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

” هذا العصر عصر الرفق والصبر والحكمة , وليس عصر الشدة . الناس أكثرهم في جهل , في غفلة إيثار للدنيا ,
فلا بد من الصبر , ولا بد من الرفق حتى تصل الدعوة , وحتى يبلغ الناس وحتى يعلموا . ونسأل الله للجميع الهداية ”

“বর্তমান যুগ হল, নম্রতা, ধৈর্য এবং প্রজ্ঞার যুগ; কঠোরতার যুগ নয়। অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতা, অবহেলা ও পার্থিব স্বার্থপরতায় ডুবে রয়েছে।
অতএব অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে, অবশ্যই নম্র ব্যবহার করতে হবে যেন দাওয়াত পৌঁছে যায়..যেন মানুষের কাছে (আল্লাহর দীন) পৌঁছানো যায়..যেন মানুষ (সঠিক দীন) জানতে পারে।
আল্লাহর নিকট সকলের জন্য হেদায়েত প্রার্থনা করছি।” [মাজমু ফতোয়া/ফতোয়া সমগ্র, ৮/৩৭৬]

সুতরাং আসুন, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে দাওয়াতের স্বার্থে আমাদের ব্যক্তিগত সকল রাগ-অভিমান, আক্রোশ ইত্যাদিকে দমন করে আমাদের আচরণ-ব্যবহারকে আরও সুন্দর, আকর্ষণীয় আর ভাষাকে আরও কোমল ও নম্র করি।

তাহলে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের দাওয়াতি কর্মে বরকত দান করবেন। ঘুণে ধরা সমাজকে আমরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হব। সেই সাথে অর্জন করব, আখিরাতে দয়াময় আল্লাহর অবারিত পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
▬▬▬▬◉◯◉▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বরাত অর্থ কী এবং প্রকৃত ভাগ্য রজনী বা মুক্তি রজনী কোনটি

 বরাত শব্দের অর্থ: কপাল, ভাগ্য বা অদৃষ্ট। যেমন: বলা হয়, “বরাত মন্দ” (কপাল খারাপ), “বদ-নসিবের বরাত খারাব।” [জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবিতা: কামাল পাশা]

এর আরেকটি অর্থ, প্রতিনিধিত্ব বা দায়িত্ব ও কার্যভর। এখান থেকেই বলা হয়, বিয়ের বরাত অর্থাৎ বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বলার দায়িত্ব। আরেকটি অর্থ: বরযাত্রীদল। [বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান]

যাহোক, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে আমাদের সমাজে “শবে বরাত” বা ভাগ্য রজনী বলে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ মানুষ মনে করে, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মানুষের ভাগ্য লেখা হয়। কিন্তু এ কথা ভুল। কেননা, মূলত ‘ভাগ্য রজনী’ হল, রমজান মাসের শেষ দশকের ‘শবে কদর’। কেননা, এ রাতেই মানুষের বাৎসরিক ভাগ্য বণ্টিত হয়। আর আমাদের অজানা নয় যে, তা রয়েছে রমজান মাসের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাতে। মহাগ্রন্থ কুরআনে এই রাতকে ১০০০ মাসের থেকেও উত্তম বলা হয়েছে। [সূরাতুল কদরের ব্যাখ্যা পড়ুন]

আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
“আমি ইহা (কুরআনুল কারিম) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। কেননা, আমি মানুষকে সতর্ক কারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞা পূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়।”

❑ এ ‘বরতকময় রাত’ দ্বারা কোন রাত উদ্দেশ্য?

অধিকাংশ তাফসির বিশারদগণ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শবে কদর/লাইলাতুল কদর-যা রমজান মাসে রয়েছে।

ইমাম ইবনে কাসির রহ. উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন,

أي : في ليلة القدر يفصل من اللوح المحفوظ إلى الكتبة أمر السنة ، وما يكون فيها من الآجال والأرزاق ، وما يكون فيها إلى آخرها . وهكذا روي عن ابن عمر ، وأبي مالك ، ومجاهد ، والضحاك ، وغير واحد من السلف

“শবে কদর (কদরের রাতে) লাওহে মাহফুজ থেকে লেখক ফেরেশতাদের নিকট বছর ব্যাপী জীবন-মৃত্যু, রিজিক ইত্যাদি যা কিছু ঘটবে সেগুলো বণ্টন করা হয়। এমনটি বর্ণিত হয়েছে, ইবনে ওমর রা., আবি মালিক, মুজাহিদ, যাহহাক প্রমূখ একাধিক সালাফ থেকে।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

◆ এ রাতটিকে ‘অর্ধ শাবানের রাত’ বলা কুরআন বিরোধী:

যারা বলে, এ রাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ’লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বা অর্ধ শাবানের রাত তাদের কথা সঠিক নয়।
নিম্নে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হল:
– ইবনে কাসির রহ. বলেন, “উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি এ কুরআনকে এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছেন। আর সেটি হল কদরের রাত। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْر

“আমি তো ইহা (কুরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা কাদর: ১] আর এ রাতটি ছিল রমজান মাসে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ

“রমজান মাস হল, সে মা যাতে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা বাকারা: ১৮৫] এ প্রসঙ্গে হাদিসগুলো সূরা বাকারায় উল্লেখ করেছি যা পুণরোল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করছি। আর যারা বলে যে, উক্ত রাতটি হল, অর্ধ শাবানের রাত-যেমন ইকরিমা বর্ণনা করেছেন-তাদের এ মত অনেক দূরবর্তী। কারণ, তা কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী।” [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪র্থ খণ্ড ৫৭০ পৃষ্ঠা]

– যারা বলে, উক্ত আয়াতে বরকতময় রাত দ্বারা অর্ধ শাবানের রাত বলে থাকে তারা উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইকরিমা থেকে বর্ণিত বক্তব্যটি দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি (ইকরামা) বলেন, “এ রাত হল, অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতেই সারা বছরের সকল ফয়সালা চূড়ান্ত করা হয়…।” [আল জামিউল কুরতুবি, ১৬/১২৬।] কিন্তু এ দাবী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তা সরাসরি কুরআন বিরোধী। আর এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ তো নয়ই বরং সেগুলো ভিত্তিহীন। যেমনটি ইবনুল আরবি প্রমুখ গবেষক আলেমগণ দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। সেই সাথে সেগুলো কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক (যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে)।
সুতরাং অবাক হতে হয় সে সকল মুসলমানদের অবস্থা দেখে, যারা কুরআন ও সহিহ হাদিসের দলিল ছাড়া কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধিতা করে!” [তাফসিরে আযওয়াউল বায়ান, ৭/৩১৯]

সুতরাং শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতকে শবে বরাত বা ভাগ্য রজনী (অথবা মুক্তি রজনী) বলা নিতান্তই ভুল।

❑ এই রাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বিদআতি কার্যক্রম:

তথাকথিত ‘শবে বরাত’ উপলক্ষে শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিনে রোজা রাখা এবং রাতে বিশেষ ধরনের ইবাদত-বন্দেগি করা, ১০০ রাকাত নফল নামাজ পড়া, হালুয়া-রুটি খাওয়া, বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি সদৃশ বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরি করা, দল বেধে কবর জিয়ারত করা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, মার্কেট ইত্যাদি আলোক সজ্জা করা, মাজারে আগরবাতি-মোমবাতি জ্বালানো, সম্মিলিত দুআ ও জিকিরের মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, কাওয়ালি বা নাশিদ মাহফিল, এ উপলক্ষে গোসল করা, আতর-সুগন্ধি মাখা, নতুন জামা কাপড় পরা, চোখে কাজল লাগানো ইত্যাদি সব বিদআত। কেননা বিশেষভাবে এই সকল ইবাদতের পক্ষে কোন বিশুদ্ধ দলিল নেই। অনুরূপভাবে ‘এ রাতে ভালো খাবার খেলে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে’-এমন বিশ্বাস নিতান্তই কুসংস্কার আচ্ছন্ন।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের ভুল বিশ্বাস, বিদআতি কার্যক্রম এবং কুসংস্কার থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন

 কথিত শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন:

(আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে)

সুপ্রিয় দীনী ভাই ও বোনেরা, প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর অবারিত নেয়ামত, মাগফিরাত ও রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।

প্রিয় বন্ধুগণ, অর্ধ শাবান বা কথিত শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানামুখী কথাবার্তায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ আজ মহাবিপাকে আছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। এ প্রেক্ষাপটে আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হব আর অপনোদন হবে কিছু ভুল বিশ্বাসের ইনশাআল্লাহ।

❑ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং এ ঘোষণা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে:

হে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী ভাই, আপনি শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারণ আপনি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে চান এবং চান আল্লাহ যেন আপনার দুআ কবুল করেন। মূলত: এটি প্রতিটি মুমিনেরই ঐকান্তিক প্রত্যাশা। তাই না?
কিন্তু আপনি জানেন কি আল্লাহর পক্ষ থেকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং তা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে। তবে শর্ত হল, শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং কারো প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ রাখা যাবে না।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা কেবল প্রতি বছরে একবার তথা অর্ধ শাবানের রাতেই পৃথিবী বাসীর প্রতি উঁকি দেন না বরং তিনি প্রতি রাতেই নিচের আসমানে নেমে এসে বান্দাদেরকে ক্ষমার জন্য আহ্বান করতে থাকেন! আল্লাহু আকবার!

অবাক হচ্ছেন? তাহলে পড়ুন নিন্মোক্ত হাদিস দুটি:

➤ ১. আবু হারায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ , فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا , إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ , فَيُقَالُ : أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا »

“সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এমন প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোনও কিছুকে শরীক করে নি; তবে ঐ ব্যক্তি ক্ষমার বাইরে থাকে, যে ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ বা শত্রুতা রয়েছে; অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়: তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।”

ইবনে আবাদাহ এর বর্ণনায় إِلاَّ الْمُتَهَاجِرَيْنِ আছে। আর কুতায়বা, রাহ. বলেছেন, إِلاَّ الْمُهْتَجِرَيْنِ (তবে সম্পর্ক পরিত্যাগকারী দুজনকে ক্ষমা করা হবে না)।
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ৪৭/ সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার, পরিচ্ছদ: শত্রুতা ও সম্পর্ক ত্যাগ করার নিষেধাজ্ঞা, হাদিস নম্বর: ৬৩১২]

➤ ২. আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে নেমে এসে বান্দাদেরকে ক্ষমার জন্য ডাকতে থাকেন। পড়ুন হাদিসটি:

প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ فَيَقُوْلُ مَن يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَّسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَن يَّسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ- وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْهُ: فَلاَ يَزَالُ كَذَالِكَ حَتَّى يُضِيْئَ الْفَجْرُ-

“আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? এভাবে তিনি ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহবান করেন।” [মুত্তাফাক্বুন ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৩, সালাত অধ্যায়-৪, রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান। অনুচ্ছেদ-৩৩; মুসলিম হা/১৭৭৩]

❑ হাদিসদ্বয়ের শিক্ষা:

আমরা উক্ত হাদিসদ্বয় থেকে কী শিক্ষা পেলাম?

✪ ক. ১ম হাদিসের একটি শিক্ষা হল, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই শিরক থেকে মুক্ত হওয়া অপরিহার্য। এর কোন বিকল্প নাই।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম, গুণাবলী ও ইবাদতে অন্যকে অংশীদার করবে তাকে মুশরিক বলা হয়।

– সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কোন অলি-আউলিয়া, পীর-ফকির, জিন-ফেরশতা বা কোন অদৃশ্য শক্তির কাছে ক্ষমতা বহির্ভূত বিষয়ে বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাবে সে শিরক করবে।

– যে ব্যক্তি তাবিজ, কবজ, রিং, সুতা,ইত্যাদি ব্যবহার করবে বা গাছ, মাছ, পাথর ইত্যাদির নিকট মানত করবে বা সন্তান পাওয়া, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ ইত্যাদি সমস্যার জন্য এগুলোর কাছে ধর্না দিবে সে শিরক করবে।

– যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু যবেহ করবে বা মান্নত করবে সে শিরক করবে।

আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে কুরআন ও সহীহ হাদিসে বিভিন্ন স্থানে স্পষ্টভাবে সর্তক করেছেন।

সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই সকল প্রকার শিরক থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য এর কোন বিকল্প রাস্তা নাই।

✪ খ. ২য় শিক্ষা হল, বিদআত থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি আমাদের অন্তরকে পরস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করতে হবে।

ইমাম আওযাঈ রহ. বলেন, হাদিসে ‘বিদ্বেষ পোষণকারী’ বলতে সে সকল বিদআতপন্থীকে বুঝানো হয়েছে, যারা দ্বন্দ্ব-কলহ করে মুসলমানদের জামাআত থেকে বের হয়ে যায়।

সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে চাই তাহলে আমাদের অন্তরকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিদআত পরিহার করে মুসলিম জামাআতের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে হবে। কোনভাবেই বিদআতে লিপ্ত হয়ে মুসলিমদের জামাআত থেকে দুরে সরা যাবে না।

✪ গ. উক্ত হাদীসে প্রতি সোম ও বৃহষ্পতিবারে বিশেষ কোন আমল প্রমাণিত হয় না রোজা ছাড়া। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু দিন রোজা ছাড়া অন্য বিশেষ কোন আমল করেছেন বলে প্রমাণিত নয়। তাই কেউ যদি এ উপলক্ষে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হয় তাহলে তা বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আল্লাহু আলাম।

❑ অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ঘোষণার হাদিসটির অবস্থা কী?

এবার দেখি, যে সকল ভাই অর্ধ শাবানের রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত-বন্দেগির জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছেন তাদের দলিলটি সম্পর্কে।
শবে বরাত পালনের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করা হয় (এটি হল, এ মতের লোকদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه ، إلا لمشرك أو مشاحن

“আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে উঁকি দিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” [ইবনে মাজাহ, সুনান ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ইকমতে সালাত, হা/১৩৯০]

❖ হাদিসটির পর্যালোচনা:

উক্ত হাদিস সহীহ নাকি জঈফ এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। তবে আল্লামা আলবানী রহ. সহ একদল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে বিভিন্ন সনদের সমন্বয়ে হাসান/সহীহ বলেছেন। পক্ষান্তরে অন্য একদল মুহাদ্দিস এটিকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম বূসীরী রহ. তাঁর যাওয়াযেদ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে (২/১০) বলেন, আবু মুসার সনদে বর্ণিত উক্ত হাদিসটি জঈফ। কারণ এর সনদে দুটি সমস্যা রয়েছে:
– ক) আব্দুল্লাহ বিন লাহীআহ একজন সুপ্রসিদ্ধ জঈফ বর্ণনাকারী।
– খ) ওলীদ বিন মূসা তাদলীস করেছেন। (তাদলীস হাদিস জঈফ হওয়ার একটি
অন্যতম কারণ। বিস্তারিত: মুস্তালাহুল হাদিসের গ্রন্থাদি দ্রষ্টব্য)

উক্ত বর্ণনাটিকে আল্লামা আলবানী রহ.ও জঈফ বলেছেন। কিন্তু এ মর্মে বর্ণিত একাধিক হাদিসের সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত হাসান/সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন। [দেখুন, সিলসিলা সহীহাহ মুখতাসারাহ: হাদিস নং ১৫৬৩]

❖ হাদিসের শিক্ষা:

উক্ত হাদিস থেকেও আমরা শিক্ষা পাই যে, আমরা যদি মহান রবের ক্ষমা লাভে ধন্য হতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শিরক-বিদআত মুক্ত জীবন এবং মুসলিম জামাআতের সাথে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। হাদীসের মূল বক্তব্য এটাই।

তবে এখান থেকে কোনভাবেই অর্ধ শাবানে বিশেষ কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামও এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করেন নি বা করতে বলেন নি। এ উপলক্ষে দিনে রোজা রাখা, কবর যিয়ারত করা বা রাতে ১০০ রাকাআত নামায আদায় করা ইত্যাদি সম্পর্কে যে সকল হাদিস পেশ করা হয় সেগুলো একটিও সহীহ নয়। কোনটি জঈফ আর কোনটি জাল। (আমার অন্য একটি লেখায় উক্ত হাদিসগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা রয়েছে)

সুতরাং উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিনে রোজা রাখা, রাতে একশ রাকাত নামায পড়া, মিলাদের আয়োজন করা, সম্মিলিত দুআ অনুষ্ঠান করা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি পালন করা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না যেভাবে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে কেবল রোজা ছাড়া অন্য কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না।

❑ সিদ্ধান্ত: কথিত শবে বরাত বা অর্ধ শাবানের রাতের চেয়ে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ:

উপরোক্ত আলোচনা থেকে অর্ধ শাবানের রাতের চেয়ে প্রতি প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ প্রমাণিত হলো।

কারণ সমূহ নিন্মরূপ:

❖ ১. প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুশরিক ও বিদ্বেষী ব্যক্তি ছাড়া দুনিয়ার সকল মুসলিমের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ মর্মে হাদিসটি সহীহ মুসলিমের বিশুদ্ধ হাদিস। পক্ষান্তরে অর্ধ শাবানের রাতের ক্ষমার হাদিসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিমত রয়েছে।
❖ ২. এ দু দিন জান্নাতের দরজা সমূহ খোলা হয়। (যেমন উপরোল্লিখিত হাদিসটি) অথচ অর্ধ শাবানের ব্যাপারে এমন কোন হাদিসে বর্ণিত হয়নি।
❖ ৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু দিন নফল রোজা রাখতেন এবং রোজা রাখার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। পক্ষান্তরে অর্ধ শাবানের ১৪ তারিখ দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করার হাদিসটি জঈফ।
❖ ৪. সোমবারের দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন।
❖ ৫. এই দিনেই তার উপর সর্বপ্রথম ওহি অবর্তীর্ণ হয়েছে।

যেমন নিম্নোক্ত হাদিস:

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: «فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»

আবু কাতাদা আল আনসারী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জবাবে বলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী এসেছে। [মুসলিম-২/৮২০, হাদিস-১১৬২]

❖ ৬. সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে মানুষের আমলনামা পেশ করা হয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ»

“(মহান আল্লাহর নিকট) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমল সমূহ পেশ করা হয় আর আমি এটি ভালবাসি যে, আমার আমল সমূহ মহান আল্লাহ নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হবে, যে অবস্থায় আমি রোজাদার।” [তিরমিযী-৩/১১৩, হাদিস-৭৪৭, সহীহ-শাইখ আলবানী]

পক্ষান্তরে শাবান মাসে আল্লাহর নিকট বান্দার বার্ষিক আমল পেশ করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে অর্ধ শাবানের ব্যাপারে এমন কোন কথা আসে নি।
মোটকথা: আমরা যদি মহান আল্লাহর ঘোষিত ক্ষমা অর্জন করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শিরক, বিদআত মুক্ত ইবাদত এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত সামাজিক জীবন গঠনে ব্রতী হবে। এটাই হোক আমাদের সকলের প্রত্যয় এবং প্রচেষ্টা। আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
●●●●●●●●●●●●
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

অর্ধ শাবানে দিনে রোজা রাখা ও রাতে নফল সালাত সম্পর্কে বর্ণিত কতিপয় জাল ও জঈফ হাদিস

 সাধারণত: মানুষ অর্ধ শাবানের দিনের বেলা রোজা রাখা ও রাতে নফল নামাজ পড়ে কতিপয় বানোয়াট ও দুর্বল হাদিসের উপরে ভিত্তি করে।

নিম্নে এ ধরণের কিছু হাদিস পেশ করা হল মুহাদ্দিসদের পর্যালোচনা সহ:

● ক) আলী ইবনে আবী তালিব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‌ “যখন শাবান মাসের পনের তারিখ আসে তোমরা দিনে রোজা রাখ আর রাতে নফল নামাজ আদায় কর। কারণ, এ রাতে আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, এমন কেউ আছো যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।‌এমন কেউ আছো যে আমার নিকট রিজিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দিব। এমন কেউ আছো যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিব? এভাবে আল্লাহ তাআলা ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।”

► হাদিসটির মান: মুহাদ্দিসের মতে এ হাদিসটি মাউযু (জাল/বানোয়াট) হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন- ১]

● খ) “হে আলী, যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাত্রিতে এমনভাবে একশত রাকাত নামাজ আদায় করবে যে, প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পরে দশবার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সূরা পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার সে রাত্রির যাবতীয় প্রার্থনা পূরণ করবেন।”

► হাদিসটির মান: এটি একটি মাউযু (জাল/বানোয়াট) হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন-২]

গ) “যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাতে বার রাকাত নামাজ পড়বে: প্রতি রাকাতে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ সূরাটি পড়বে ত্রিশ বার তাহলে সে জান্নাতে তার আসন না দেখে বের হবে না।”

► হাদিসটির মান: এটি একটি মউযু বা বানোয়াট হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন-৪]

● ঘ) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক রাতে আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (আমার ঘরে) না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে তাকে বাকি গোরস্থানে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, “তুমি কি এ আশংকা কর যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসুল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?”
আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, আমি ধারণা করে ছিলাম যে, আপনি হয়ত আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন।
একথা শুনে তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সমপরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন।”
► হাদিসটির মান: এটি জঈফ বা দুর্বল। [ পর্যালোচনা দেখুন-৪]

● ঙ) “রজব আল্লাহর মাস। শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।”
► হাদিসটির মান: এটি যঈফ বা দুর্বল। [ পর্যালোচনা দেখুন-৫]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
টিকা:
[১] ইবনে মাজাহ, নামাজ অধ্যায়: নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। ইমাম বুসীরী যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে বলেন, উক্ত হাদিসের বর্ণনা সূত্রে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে তার নাম ابن أبي سبرة ইবনে আবী সুবরাহ (তার প্রকৃত নাম: আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবী সুবরাহ)।
ইমাম ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন এবং আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, এ ব্যক্তি হাদিস তৈরি করত (অর্থাৎ জাল হাদিস বর্ণনা করত)।
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাকরীব কিতাবে (২/৩৯৭) বলেন, মুহাদ্দিসগণ এই ব্যক্তিকে হাদিস জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। উকাইলী ‘আল যুআফা আল কাবীর’ গ্রন্থে (২/২৭১) একই কথা বলেছেন।

[২ ] ইবনুল জাওযী উক্ত হাদিসটি মাওয়ুআত কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশই পরিচয় অজ্ঞাত। আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দুর্বল।
সুতরাং হাদিসটি নিশ্চিতভাবে জাল। অথচ আমরা অনেক মানুষকে দেখি যারা এ সারা রাত ধরে নামায পড়ার পর এদের ফজর নামায ছুটে যায় কিংবা সকালে যখন উঠে অলসতা সহকারে উঠে। কিছু মসজিদের ইমাম শবে বরাতের এ সব নামাজকে সাধারণ জনগণকে একত্রিত করার এবং এর মাধ্যমে নিজেদের রুটি-রুজি ও উন্নতির মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করেছে। এরা জনগণকে একত্রিত করে তাদের আলোচনা সভাগুলোতে বিভিন্ন কিচ্ছা-কাহিনী আলোচনা করে থাকে। মূলত: এ সবই ভ্রান্ত এবং হকের সাথে সম্পর্ক হীন।

ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়াহ আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন, জাল হাদিস সমূহের মধ্যে অর্ধ শাবানের রাতের নামাজ পড়া সম্পর্কিত উক্ত হাদিসটি অন্যতম। এর পর তিনি বলেন, আজব ব্যাপার হল, কিছু মানুষ যারা হাদিসের কিছু ঘ্রাণ পেয়েছে তারাও এ সকল উদ্ভট হাদিস দেখে প্রতারিত হয়ে শবে বরাতের নামাজ পড়া শুরু করে দেয়।

অনুরূপভাবে ইমাম সুয়ূতী রহ. উপরোক্ত হাদিসটি আল লাআলী আল মাসনূআ ’ কিতাবে উল্লেখ করে সেটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তদ্রূপ ইমাম শাওকানী রা. এটিকে আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ কিতাবে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

[৩] এ হাদিসটিও ইব্‌নুল জাওযী রা. তার আল মাওযূআত কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদিসটিও জাল। এ হাদিসটির সনদে এমন একদল বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের সকলের পরিচয় অজ্ঞাত।
অনুরূপভাবে ইমাম সূয়ূতী রহ. আল লাআলী কিতাবে এবং ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ. আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করে এটিকে জাল হাদিস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

[৪ ] তিরমিযী। অনুচ্ছেদ; অর্ধ শাবানের ব্যাপারে যা এসেছে। তবে তিনি নিজেই এর পরে উল্লেখ করেছেন, মোহাম্মাদ অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি এ হাদিসটিকে জঈফ বলেছেন।
ইমাম দারাকুতনী রহ. বলেন, এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে সনদগুলো মুযতারাব এবং সু প্রমাণিত নয়।
বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ আল্লামা আলবানী রহ.ও এ হাদিসটিকে জঈফ বলে সাব্যস্থ করেছেন। দেখুন: সহীহ ওয়া যঈফ তিরমিযী, হাদিস নং ৭৩৯, মাকতাবা শামেলা)

[৫] ইমাম সুয়ূতী রহ. কর্তৃক লিখিত আল জামিউল কাবীর বা জামউল জাওয়ামি’গ্রন্থে‘র ১২৮৩০ নং হাদিস। তিনি নিজেই বলেছেন: হাদিসটি মুরসাল। আরও হাদিসটি দায়লামী আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন। আল্লামা আলবানী রহ. বলেন, হাদিসটি জঈফ বা দুর্বল। দেখুন: সিলসিলা যঈফা মুখতাসারাহ হাদিস নং ৪৪০০, মাকতাবা শামেলা।

উৎস: ‘আল বিদাআতুল হাউলিয়াহ’ গ্রন্থ থেকে অনুদিত ও সংক্ষেপায়িত।
অনুবাদ ও গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

কথিত শবে বরাত উপলক্ষে প্রচলিত কতিপয় বিদআত

 আমাদের সমাজে ‘শবে বরাত’ নামক রাতটি খুব জমজমাট ভাবে উদযাপন করা হয়। আর এ উপলক্ষে সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে ছড়িয়ে আছে অনেক অজ্ঞতা, অনেক বিদআত ও শরিয়ত বিরোধী বিষয়। নিম্নে এমন কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হল:

◈ ১) কথিত শবে বরাত উপলক্ষে একশত রাকআত নামাজ আদায় করা:

এ রাতে এক অদ্ভুত পদ্ধতিতে একশত রাকআত নামাজ আদায় করা হয়। পদ্ধতিটি হল নিম্নরূপ:
মোট একশত রাকআত নামাজ পড়তে হয়। প্রতি দু রাকাত পর সালাম ফিরাতে হবে। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। একশত রাকআত নামাজে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয় মোট এক হাজার বার। তাই এ নামাজকে ‘সলাতে আলফিয়া’ বলা হয়। [ইমাম গজালি রহ. এ পদ্ধতিটি এহিয়া উলুমুদ্দীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন। দেখুন: ১ম খণ্ড ২০৩ পৃষ্ঠা]

◯ কথিত শবে বরাতে একশত রাকআত নামাজ পড়ার বিধান:

ইসলামে এ ধরণের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত বিদআত। এ ব্যাপারে সর্ব যুগের সমস্ত আলেমগণ একমত। কারণ, তা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদিন কখনো তা পড়েননি। তাছাড়া ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, আহমদ বিন হাম্বল, সুফিয়ান সাওরি, আওযাঈ, লাইস প্রমুখ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ কেউ এ ধরণের বিশেষ নামাজ পড়ার কথা বলেননি। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটি হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে বানোয়াট এবং জাল। যেমন: ইবনুল জাওযী উক্ত হাদিসটি মাওযু’আত (জাল হাদিস সংগ্রহ) কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, “এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিকাংশরেই পরিচয় অজ্ঞাত। আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দুর্বল। সুতরাং হাদিসটি নিশ্চিতভাবে জাল।” [আল মাউযূআত ২য় খণ্ড ১২৭-১৩০ পৃষ্ঠা]

◯ এ নামাজ কে কখন কীভাবে চালু করল?

ইমাম তরতূশী রহ. বলেন, শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে একশত রাকআত নামাজ পড়ার পদ্ধতি সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি চালু করে তার নাম হল ইবনে আবুল হামরা। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের অধিবাসী। তিনি ৪৪৮ হিজরি সনে বায়তুল মাকদিসে আসেন। তার তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর। তিনি শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে মসজিদুল আকসায় এসে নামাজ শুরু করে। আর এক লোক তার পেছনে অনুসরণ করে। অতঃপর আর একজন আসে। কিছুক্ষণ পর আরে আরও একজন। এভাবে নামাজ শেষে দেখা গেল বিরাট জামাআতে পরিণত হয়েছে।
পরিবর্তী বছর শবে বরাতে সে ব্যক্তির সাথে প্রচুর পরিমাণ মানুষ নামাজে শরীক হয়। এভাবে এ নামাজটি মসজিদে আকসা সহ বিভিন্ন মসজিদে পড়া আরম্ভ হয়ে গেল। কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে এ নামাজ পড়া শুরু করে দিল। পরিশেষে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যেন এটি একটি সুন্নত। [আত্‌ ত্বারতুশী রচিত আত্‌তাহযীর মিনাল বিদা। পৃষ্ঠা: ১২১ ও ১২২]

◈ ২) এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া এবং এ রাতেই মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার ধারণা:

কুরআন কোন রাতে অবতীর্ণ হয়? শাবান মাসের শবে বরাতে নাকি রমজান মাসের শবে কদরে? আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ * فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

“আমি এটি (আল কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। কেননা আমি মানুষকে সতর্ক কারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞা পূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়।” [সূরা দুখান: ৩-৪]

◯ এ ‘বরকতময় রাত‘ দ্বারা কোন রাত উদ্দেশ্য?

উক্ত আয়াতে উল্লেখিত রাত দ্বারা কোন রাত বুঝানো হয়েছে? শবে কদর না শবে বরাত?
● অধিকাংশ তাফসির বিশারদগণ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শবে কদর যা রমজান মাসে রয়েছে। যারা বলেন, শবে বরাত তাদের কথা ঠিক নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হল:
● তাফসিরে ইবনে কাসির রহ. বলেন, “উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি এ কুরআনকে এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছেন। আর সেটি হল কদরের রাত। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْر

“আমি তো তা (কুরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা ক্বদর: ১] আর এ রাতটি ছিল রমজান মাসে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ

“রমজান মাস। যে মাসে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা বাকারা. ১৮৫]

এ প্রসঙ্গে হাদিসগুলো সূরা বাকারায় উল্লেখ করেছি যা পুনরুল্লেখ করার নিষ্প্রয়োজন মনে করছি। আর যারা বলে যে, উক্ত রাতটি হল অর্ধ শাবানের রাত-যেমন ইকরিমা বর্ণনা করেছেন-তাদের এ মত অনেক দূরবর্তী। কারণ, তা কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য বিরোধী। [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪র্থ খণ্ড ৫৭০ পৃষ্ঠা]

● ইকরিমা রহ. উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ রাত হল অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতেই সারা বছরের সকল ফয়সালা চূড়ান্ত করা হয়…।” [আল জামিউল কুরতুবী ১৬/১২৬।]

কিন্তু এ দাবী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তা সরাসরি কুরআন বিরোধী। আর এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ তো নই বরং সেগুলো ভিত্তিহীন। যেমনটি ইবনুল আরবি প্রমুখ গবেষক আলেমগণ দৃঢ়তার সাথে করেছেন। সেই সাথে সেগুলো কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক (যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে)।
সুতরাং অবাক হতে হয় সে সকল মুসলমানদের অবস্থা দেখে যারা কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলিল ছাড়া কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধিতা করে। [আযওয়াউল বায়ান ৭/৩১৯]

◈ ৩) হালুয়া-রুটি খাওয়া:

শবে বরাত উপলক্ষে ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। শুধু তাই নয় বরং সে দিন গরিব মানুষও টাকা হাওলত করে হলেও এক বেলা গোস্ত কিনে খায়। কারণ, সে দিন যদি ভালো খাবার খাওয়া যায় তাহলে নাকি সারা বছর ভালো খাবার খাওয়া যাবে। আর হালুয়া-রুটি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পর শক্ত খাবার খেতে পারেন নি। তাই তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে এ দিন ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়।

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? আমরা জানি ওহুদের এক রক্তক্ষয়ী ও অসম যুদ্ধে কাফেরদের আঘাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ভেঙ্গে গিয়ে ছিল। কিন্তু শাবান মাসে তো ওহুদ যুদ্ধ হয়নি। বরং তা হয়েছিল ৩য় হিজরি শাওয়াল মাসের সাত তারিখে। তাহলে এ সমবেদনা শাবান মাসের পনের তারিখে টেনে আনার অর্থ কী?

২য় কথা হল, তিনি নরম খাবার কি শুধু একদিন খেয়ে ছিলেন? তাহলে এ কেমন ভালবাসা?

আপনি শাবান মাসের পনের তারিখে কিছু হালুয়া-রুটি খেলেন আবার কিছুক্ষণ পর গরুর গোস্ত তো ঠিকই চাবিয়ে চাবিয়ে ভক্ষণ করতে থাকেন?

৩য়ত: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কাফেরদের সাথে এক কঠিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরে মত যুদ্ধ করে তার পবিত্র দাঁত হারিয়েছেন কিন্তু আমাদের এসব নবী ভক্তদের (!) অধিকাংশের অবস্থা হল, এরা আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া সাধারণ সুন্নতগুলোও ঠিকমত পালন করে না! অনেকে তো ফরজ নামাজই ঠিকমত আদায় করে না। এটাই হল এদের তথাকথিত ভালবাসার নমুনা!

◈ ৪) ছবি ও মূর্তি তৈরি:

শবে বরাত উপলক্ষে দেখা যায় নানা রং-বেরঙ্গের ছবি ও মূর্তি তৈরি কৃত মিষ্টান্নতে বাজার ছেয়ে যায়। অথচ ছবি ও মূর্তি-প্রকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা ইসলামে হারাম। আবার আল্লাহর দেয়া রিজিক নিয়ে এভাবে খেল-তামাশা?!

◈ ৫) মিলাদ ও জিকির:

শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদ, খানকা ও দরগায় সমূহে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল। চলে মিষ্টি খওয়ার ধুম। চলতে থাকে বিদআতি পন্থায় গরম জিকিরের মজলিশ। এ সব কাজ দ্বীনের মধ্যে বিদআত ছাড়া কিছু নয়।

◈ ৬) কবর জিয়ারত:

এক শ্রেণির মানুষ এ রাতে গোরস্থান বা মাযার জিয়ারতে বের হয়। এমনকি কোথাও কোথাও এ প্রথাও দেখা যায় যে, একদল মানুষ এ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর যিয়ারত করে থাকে। এদের দলিল হল, শাবান মাসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাকি গোরস্থান যিয়ারতের হাদিস অথচ মুহাদ্দিসগণ উক্ত হাদিসটি জঈফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

◯ নিম্নে কবর জিয়ারতের হাদিসটি এবং এ সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। এক রাতে আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে (আমার ঘরে) পেলাম না। তাই তাকে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে তাকে বাকি গোরস্থানে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, “তুমি কি এ আশংকা কর যে, আল্লাহ এবং তার রসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?” আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আমি ধারণা করে ছিলাম যে, আপনি হয়ত আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সমপরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন।”
– তিরমিযী। অনুচ্ছেদ: অর্ধ শাবানের ব্যাপারে যা এসেছে। তবে তিনি নিজেই এর পরে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মদ অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহ. কে বলতে শুনেছি তিনি এ হাদিসটিকে জঈফ বলেছেন। ইমাম দারাকুতনী (রাহ.) বলেন, এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে সনদগুলো মুযতারাব এবং সু প্রমাণিত নয়। বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ আল্লামা আলবানী রাহ: ও এ হাদিসটিকে জঈফ বলে সাব্যস্ত করেছেন। দেখুন: সহীহ ওয়া জঈফ তিরমিযী, হাদিস নং ৭৩৯, মাকতাবা শামেলা

◈ ৭) আলোক সজ্জা:

শবে বরাত উপলক্ষে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হয়। মূলত: এসব কাজ একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু অপচয় করা হয় না তেমনি এটা অগ্নি পূজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

◈ ৮) মৃতদের আত্মার দুনিয়ায় পুনরাগমনের বিশ্বাস:

এ উপলক্ষে দেখা যায়, মহিলাগণ ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর সুগন্ধি লাগিয়ে পরিপাটি করে রাখে। বিশেষ করে বিধবা মহিলাগণ এমনটি করেন। এমনকি তারা কিছু খাবার একটুকরো কাপড়ে পুরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। কারণ তাদের বিশ্বাস হল, তাদের মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা এ রাতে ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে। এটা যে কত বড় মূর্খতা তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।
মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোন একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা মুসলিমদের আকিদা নয়। বরং অনেকটা তা হিন্দুয়ানী বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের জন্য প্রয়োজন সকল প্রমাণ হীন অনুষ্ঠানাদী বর্জন করা এবং সঠিক দ্বীনের দিকে ফিরে আসা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল বিদআত ও গোমরাহি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
[আল বিদা আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে মুল তথ্যগুলো সংগৃহীত]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬

লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate