Thursday, August 17, 2023

বর্তমান যুগে পায়ে হেঁটে হজে গমন যে ৮টি কারণে তা উচিৎ নয়

 

বর্তমান যুগে পায়ে হেঁটে হজে গমন যে ৮টি কারণে তা উচিৎ নয়


প্রশ্ন: পায়ে হেঁটে হজ করা কি জায়েজ? গত বছর ভারত থেকে এক যুবক পায়ে হেঁটে হজ করেছেন এবং এ বছর বাংলাদেশ থেকে আরেক যুবক হজের নিয়তে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণে এ কাজটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: নিম্নে পায়ে হেঁটে হজ করার বিধান, শর্তাবলী এবং বর্তমান আধুনিক যুগে যে ৮টি কারণে তা উচিৎ নয় সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:

❑ পায়ে হেঁটে হজ করা কি জায়েজ?

ইসলামের দৃষ্টিতে শর্ত সাপেক্ষে পায়ে হেঁটে হজ করা জায়েজ। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ

“এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।” [সূরা হজ: ২৭]

তবে এ জন্য বিজ্ঞ আলেমগণ কতিপয় শর্ত উল্লেখ করেছেন। যেমন:

◆ ১. পায়ে হেঁটে সফর করার মত পর্যাপ্ত শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য, শক্তিশালী মনোভাব ও দৃঢ় সংকল্প থাকা। যেন যাত্রাপথে খুব বেশি কষ্ট অনুভূত না হয় এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে না পড়ে।
◆ ২. যানবাহনের সুব্যবস্থা না থাকা।
◆ ৩. দীর্ঘ যাত্রাপথের জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় ও অর্থকড়ি সাথে থাকা যেন পথিমধ্যে অর্থ সঙ্কটে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় গ্রহণ করতে না হয়।
◆ ৪. পথের নিরাপত্তা থাকা। যদি রাস্তা অনিরাপদ হয় এবং এতে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে পায়ে হাঁটা বৈধ হবে না।
◆ ৫. বিভিন্ন দেশ অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা বা অনুমতিপত্র ও কাগজপত্র সঙ্গে থাকা। যেন পথিমধ্যে যাত্রা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
◆ ৬. কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকা। মানুষের প্রশংসা ও খ্যাতি লাভের নিয়ত থাকলে তা হারাম বরং তা শিরকে আসগর (ছোট শিরক) বলে গণ্য হবে।
◆ ৭. এটিকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে না করা। কারণ পায়ে হেঁটে সফর করা রসুলুল্লাহ-এর সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব নয়। তা সুন্নত বা মুস্তহাব হলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা করতেন বা সাহাবিদেরকে তাতে উৎসাহিত করতেন।

❑ পায়ে হেঁটে হজ করা উত্তম নাকি যানবাহনের মাধ্যমে করা উত্তম?

আলেমগণ দ্বিমত করেছেন যে, পায়ে হেঁটে নাকি যানবাহনে আরোহণ করে হজ করা উত্তম। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনে কাসির রাহ. বলেন,
قد يستدل بهذه الآية من ذهب من العلماء إلى أن الحج ماشيا ، لمن قدر عليه أفضل من الحج راكبا; لأنه قدمهم في الذكر ، فدل على الاهتمام بهم وقوة هممهم وشدة عزمهم ، والذي عليه الأكثرون أن الحج راكبا أفضل; اقتداء برسول الله صلى الله عليه وسلم ، فإنه حج راكبا مع كمال قوته ، عليه السلام
“যে সব আলেম সামর্থ্যবানদের জন্য যানবাহনে আরোহণের চেয়ে পায়ে হেঁটে হজ করা অধিক উত্তম হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা এই আয়াত (সূরা হজ: ২৭) দ্বারা দলিল পেশ করেছেন। কারণ আল্লাহ তাআলা পায়ে হাঁটার বিষয়টি আগে উল্লেখ করেছেন। এটি তাদের আগ্রহ, শক্তিশালী মনোভাব ও সুদৃঢ় সংকল্পের তীব্রতা নির্দেশ করে। তবে অধিকাংশ আলেম যে মত পোষণ করেন তা হল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণে যানবাহনে আরোহণ করে হজ করা উত্তম। কারণ তিনি শারীরিক পূর্ণ শক্তি থাকা সত্ত্বেও যানবাহনে আরোহণ করে হজ করেছেন।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

উল্লেখ্য যে, কারও যদি যাতায়াত করার মত যানবাহন না থাকে বা যানবাহনের খরচ বহন করার মত পর্যাপ্ত অর্থ-কড়ি না থাকে তাহলে তার উপর হজ ফরজ নয়।

❑ দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে হজ সফরে যাওয়া কতটা যৌক্তিক?

আধুনিক উন্নত ও সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার পরেও পায়ে হেঁটে কষ্টসাধ্য এত দীর্ঘ পথ পড়ি দিয়ে হজ করতে আসা উচিত নয় কয়েকটি কারণে। নিম্নে সেগুলো উপস্থাপন করা হল:

✪ ১. নিজেকে সীমাহীন কষ্ট, ক্লান্তি এবং ঝুঁকির মধ্যে ফেলা:

ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে সৌদি আরবের দূরত্ব প্রায় সাড়ে আট হাজার এবং বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার। এত দীর্ঘ বন্ধুর পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার ফলে জীবনকে প্রচণ্ড কষ্ট-ক্লেশ ও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং জীবনকে সীমাহীন ক্লান্তি ও কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করা কোনও সুস্থ বিবেক এবং বুদ্ধিমত্তার কাজ হতে পারে না।

একাধিক হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে হজ করার জন্য মানত কারীকে নিয়ত পরিবর্তন করে সওয়ারিতে আরোহণ করে সফর করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন: হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَلَغَهُ أَنَّ أُخْتَ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ مَاشِيَةً، قَالَ: ‌إِنَّ ‌اللهَ ‌لَغَنِيٌّ عَنْ نَذْرِهَا، مُرْهَا فَلْتَرْكَبْ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন, উকবা ইবনে আমের রা. এর বোন পায়ে হেঁটে হজ করার মানত করেছেন। তখন তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তার এরূপ মানতের মুখাপেক্ষী নন। তাকে যানবাহনে চড়ে হজে আসার নির্দেশ দাও।” [সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নাম্বার: ৩২৯৭, জামে তিরমিজি, হাদিস নাম্বার: ১৫৩৬]

আরেকটি হাদিস: আনাস রা. থেকে বর্ণিত,

أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ قَالَ ‏”‏ مَا بَالُ هَذَا ‏”‏‏.‏ قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ‏.‏ قَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ ‏”‏‏.‏ وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ‏.‏
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেন, তার কী হয়েছে? তারা বললেন, তিনি পায়ে হেঁটে হজ করার মানত করেছেন। তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তাআলার এর কোন দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে আরোহীতে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন।” [সহিহ বুখারী, হাদিস নাম্বার: ১৮৬৫]

➤ লক্ষণীয় বিষয় হল, মানতের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হল, একজন মানুষ যেভাবে মানত করবে তাকে তা সেভাবে পালন করতে হবে যদি তা বৈধ হয়। এটি ফরজ বা আবশ্য পালনীয়। কিন্তু কেউ যদি এমন মানত করে যা তার জন্য পালন করা কষ্টসাধ্য তাহলে উক্ত মানত সেভাবে পালন করা আবশ্যক নয় বরং তার পরিবর্তে যেভাবে তার জন্য সহজ হয় সেভাবে পালন করবে। সে কারণেই উপরোক্ত ব্যক্তিগণ তাদের মানত পালনার্থে যখন হেঁটে হজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি দেখতে পেয়ে পায়ে হাঁটার পরিবর্তে যানবাহনে চড়ে হজে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সুতরাং যদি উক্ত ব্যক্তি দ্বয় পায়ে হেঁটে হজ করার মানত করেও থাকে তারপরও তা পালন করা বৈধ নয়। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিষেধ করেছেন। আর যদি তা মানত না হয়ে থাকে তাহলে এমনটি করা কতটা সঙ্গত তা সহজে অনুমেয়।

✪ ২. এতে রিয়া (ছোট শিরক) হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে:

এত দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি হওয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রমী ঘটনা হওয়ার কারণে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে থাকে। মানুষ এ বিষয়ে প্রচুর আলোচনা-পর্যালোচনা করে।

সুতরাং এ অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করতে গিয়ে অন্তরে রিয়া প্রবেশ করার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। আর কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে মিডিয়ায় কভারেজ পাওয়া বা ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় এমনটি করে তাহলে তা নি:সন্দেহে আরও গর্হিত কাজ। তখন তা শিরকে আসগর (ছোট শিরক) এ রূপান্তরিত হবে।
আর রিয়া এতটাই ভয়ানক বিষয় যে, এর মাধ্যমে একটি ইবাদত শিরকে আসগর বা ছোট শিরকে রূপান্তরিত হয় (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন: মাহমুদ বিন লাবীদ রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوْا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الرِّيَاءُ يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عَندَهُمْ جَزَاءً

“তোমাদের উপর আমার সবচেয়ে অধিক যে জিনিসের ভয় হয় তা হল ছোট শিরক। সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল, ছোট শিরক কী? উত্তরে তিনি বললেন, রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)। আল্লাহ তাআলা যখন (কিয়ামত‌ দিবসে) মানুষকে তাদের আমলের প্রতিদান দান করবেন তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, “তোমরা দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করেছিলে তাদের নিকট গিয়ে দেখ, কোন প্রতিদান পাও কি না!” [মুসনাদে আহমদ, হা/২৩৬৩০, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, বায়হাকির যুহুদ, সহীহ তারগীব, হা/২৯-সহিহ]।

✪ ৩. কৃত্রিমতা বা লৌকিকতা:

আধুনিক যানবাহন রেখে পায়ে হেঁটে এত সুদীর্ঘ কষ্টসাধ্য পথ পাড়ি দেওয়া কৃত্রিমতা তথা অপ্রয়োজনীয় কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। তাতে কোনও সন্দেহ নাই। এর উদাহরণ হল, শুষ্ক স্থান রেখে পানিতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার মত।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কখনো তাকাল্লুফ বা লৌকিকতা প্রদর্শন করতেন না। অন্যদেরকেও তা করতে নিষেধ করেছেন। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ
“(হে নবী আপনি বলুন যে,) আর আমি কৃত্রিমতা কারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” [সূরা স্বাদ: ৮] আর উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نُهينَا عنِ التَّكلُّفِ
“আমাদেরকে তাকাল্লুফ তথা কৃত্রিমতা করতে নিষেধ করা হয়েছে।” [সহিহ বুখারি]

– “উপকার হীন কথা বা কাজে কষ্ট-পরিশ্রম করাকে তাকাল্লুফ বা কৃত্রিমতা বলা হয়।” [রিয়াদুস সালেহিন]।

✪ ৪. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কাজ:

আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা ও সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পরিত্যাগ করে পায়ে হেঁটে কণ্টকাকীর্ণ ও দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কাজ। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নীতি বা আদর্শ ছিল, কোনও কাজের ক্ষেত্রে যদি তাঁর সামনে দুটি সুযোগ থাকতো তাহলে সে ক্ষেত্রে তিনি যেটা অধিকতর সহজ সেটা গ্রহণ করতেন। যেমন: মা-জননী আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

مَا خُيِّرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের এখতিয়ার দেওয়া হত তখন তিনি অধিকতর সহজটিই গ্রহণ করতেন যদি তাতে গুনাহ না থাকতো। গুনাহ থাকলে সেখান থেকে তিনি সবচেয়ে দূরে অবস্থান করতেন।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, পরিচ্ছেদ: ৬১/২৩. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণনা]

✪ ৫.‌ স্ত্রী-পরিবারের হক নষ্ট:

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তথ্য মতে ভারতের কেরালা প্রদেশ থেকে আগত ভাইটির পায়ে হেঁটে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মোট সময় লেগেছে, মোট ৩৭০ দিন। এত দীর্ঘ সময় নিশ্চিতভাবেই তার দ্বারা তার স্ত্রী-পরিবার ও পিতা-মাতার (যদি তারা বেঁচে থাকে) হক আদায় করা সম্ভব হয়নি। অথচ তা তার জন্য ফরজ ছিল। অপ্রয়োজনীয় কাজে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার ফলে তার স্ত্রী-পরিবার তাদের হক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقًّا
“তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের হক আছে।” [সুনান ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ৯/ বিবাহ, পরিচ্ছেদ: ৯/৩. স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার। সহিহ]

✪ ৬. যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয়:

একজন ইমানদারের জীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আল্লাহ তাআলা বান্দার জীবন ও যৌবনকাল সম্পর্কে আখিরাতে প্রশ্ন করবেন। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে যৌবনের এত দীর্ঘ সময় অপচয় করার কারণে আল্লাহর কাছে হয়তো পাকড়াও-এর শিকার হতে হবে। কারণ বর্তমান আধুনিক যুগে উড়োজাহাজ ও যানবাহনের মাধ্যমে অল্প সময়ে যে কাজটা করা সম্ভব ছিল সেটা ইচ্ছাকৃত ভাবে না করে পায়ে হেঁটে এত দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য পথ পাড়ি দেওয়া জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ সময় অপচয়ের মধ্যে গণ্য হবে।

✪ ৭. প্রচুর শক্তির অপচয়:

এত দীর্ঘ সময় (প্রায় এক বছর বা ততোধিক সময় কাল) পায়ে হাঁটার ফলে এ সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্যান্য হালাল কর্মের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব নয়। এমনকি অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগিও সঠিকভাবে করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
সুতরাং হালাল উপার্জন ও ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত যৌবনের প্রচুর মূল্যবান শক্তির অপচয় বলে গণ্য হবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ

“পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন রবের নিকট থেকে আদম সন্তানের পা সরবে না: জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে, কী কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কী কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কী কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল সে তদনুযায়ী কী আমল করেছে?” [সুনান আত তিরমিজি (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪০/ কিয়ামত, পরিচ্ছেদ: কিয়ামত প্রসঙ্গে]

✪ ৮. তাদের এই কাজ অন্যদেরকেও এই পথে পা বাড়াতে প্ররোচিত করবে:

বিষয়টি বিভিন্ন নিউজ কভারেজ পাওয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার কারণে অন্যান্য মানুষও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। (যেমনটি: ইতোমধ্যে ফেসবুকে এ বিষয়ে একাধিক মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে)। ফলে যে বা যারা এহেন কাজ করেছে তারা এ ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক বলে গণ্য হবে।
সুতরাং উপরোক্ত ক্ষয়-ক্ষতি, অনাবশ্যক কাজে যৌবনের মূল্যবান সময় ও শক্তির অপচয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রধানত তারাই দায়ী।

মোটকথা, ভারতের কেরালা প্রদেশ থেকে যে এবার পায়ে হেঁটে হজ পালন করেছে বা সম্প্রতি বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে যে ব্যক্তি ইতোমধ্যে হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে তাদের এ কাজকে উত্তম বলা যাবে না বা সমর্থন করা যাবে না। বরং এহেন কাজকে অনুৎসাহিত করা উচিত। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কোন বাক্যটি কালেমা তাইয়েবা

 

কোন বাক্যটি কালেমা তাইয়েবা


‘কালেমা তাইয়েবা’ কোন বাক্যটি? শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ নাকি ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ সহ উভয়টি? আর আখিরাতে মুক্তির জন্য কি উভয়টির স্বীকৃতি দেওয়া আবশ্যক?

প্রশ্ন: ‘কালেমা তাইয়েবা’ বলতে কী বুঝায়? এর দ্বারা কি শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” উদ্দেশ্য না কি ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ও এর অন্তর্ভুক্ত? আখিরাতে মুক্তির জন্য কি উভয়টির স্বীকৃতি দেওয়া আবশ্যক না কি কেবল ১মটির স্বীকৃতি যথেষ্ট?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কালিমা তাইয়েবা বলতে কী বুঝায়-এ বিষয়ে আমাদের সমাজে যথেষ্ট ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই মনে করে তা হল, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ” পুরোটাই কালিমা তাইয়েবা। কিন্তু তা সঠিক নয়। বরং তা হল, কেবল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই)। এটাকে কালিমাতুত তাওহিদ (একত্ববাদের বাণী) এবং কালিমাতুল ইখলাস (একনিষ্ঠতার বাণী) বলা হয়।

তার অর্থ এই নয় যে, মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল বা প্রেরিত দূত)-এর স্বীকৃতি ও সাক্ষ্যের প্রয়োজন নাই। বরং সঠিক কথা হল, তাওহিদের স্বীকৃতি হিসেবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং রিসালাতের স্বীকৃতি হিসেবে মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ ছাড়া কেউ মুসলিম হতে পারবে না এবং আখিরাতে মুক্তি পাবে না।

নিম্নে এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আলোচনা উপস্থাপন করা হল:

◈ ১. ‘কালিমা তাইয়েবা (পবিত্র বাক্য) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, “লা ইলা হা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই):

আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ
“তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তাআলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন: কালিমা তাইয়েবা বা পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।” [সূরা ইবরাহিম: ২৪]

ইবনে আব্বাস রা. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,

( مثلا كلمة طيبة ) شهادة أن لا إله إلا الله ، ( كشجرة طيبة ) وهو المؤمن ، ( أصلها ثابت ) يقول : لا إله إلا الله في قلب المؤمن ، ( وفرعها في السماء ) يقول : يرفع بها عمل المؤمن إلى السماء
وهكذا قال الضحاك ، وسعيد بن جبير ، وعكرمة وقتادة وغير واحد

“কালিমা তাইয়েবা (كلمة طيبة) হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর সাক্ষ্য প্রদান করা, পবিত্র বৃক্ষ (شجرة طيبة) হল, মুমিন ব্যক্তি, যার শিকড় মজবুত (أصلها ثابت ) অর্থাৎ মুমিনের হৃদয়ে থাকে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর তার শাখা আকাশে উত্থিত (وفرعها في السماء)। এ কথার অর্থ হল, এর মাধ্যমে মুমিনের আমল আসমানের দিকে উত্থিত হয়। এমনটি আরও বলেছেন, যাহ্হাক, সাঈদ বিন জুবাইর, ইকরিমা, কাতাদা প্রমুখ মুফাসরিরগণ। [তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে কুরতুবি ইত্যাদি]। আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন বলেন,
أما المقصود بالكلمة الطيبة فهي كلمة الإخلاص: لا إله إلا الله
“আর কালিমা তাইয়েবা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কালিমাতুল ইখলাস-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” [binothaimeen]

◈ ২. জিকির হবে কেবল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর। (মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ-এর নয়)। কেননা হাদিসে কেবল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে শ্রেষ্ঠ জিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أفضلُ الذِّكْرِ لا إله إلا اللهُ

“শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ।” [তিরমিজি, ইবনে মাজাহ-হাদিসটি সহিহ। উৎস: সহিহুল জামে, হা/১১০৪, সহিহুত তারগিব ১৫২৬]

অত:এব জিকির করার সময় কেবল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতে হবে। (মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ নয়)। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ উভয় বাক্যকে জিকির হিসেবে পাঠ করে থাকে। এটি বিদআতি পদ্ধতি।

◈ ৩. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর স্বীকৃতি কিয়ামতের দিন আল্লাহর রসুলের শাফায়ত লাভের আবশ্যকীয় শর্ত:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ ‏

“কিয়ামতের দিন আমার শাফায়ত লাভ করে সবচেয়ে বেশি ধন্য হবে সে যে একনিষ্ঠ চিত্তে পাঠ করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই)।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী হল, তাঁর প্রেরিত দূত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কেউ যদি তা না করে সে প্রকারান্তরে আল্লাহর উলুহিয়াতকে স্বীকৃতি দিলো না।

◈ ৪. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর স্বীকৃতি জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ:

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‏.‏ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ ‏

“যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে ’লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই বলে ঘোষণা করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন।।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ৫। মাসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: ৪৭. কোন ওজরবশত জামাতে শরিক না হওয়া]
উল্লেখ্য যে, কেউ যদি কেবল মুখেমুখে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে কিন্তু বাস্তব জীবনের তার বিপরীত কাজ করে তাহলে এই সাক্ষ্য প্রদান মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হবে। এই জন্য আলেমগণ এর ৭টি শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো আমাদের জেনে নেওয়া আবশ্যক।

◈ ৫. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ” মূলত: পৃথক পৃথক দুটি বাক্য। যথা:
১ম বাক্য: “লা ইলাহা-ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই)।
২য় বাক্য: “মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ” (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসূল)।

সুতরাং দুটি বাক্যকে কালিমা তাইয়েবা বা ‘একটি পবিত্র বাক্য’ বলা ভাষাগতভাবেও সঠিক নয়। তবে মুসলিম হওয়ার জন্য উভয়টির স্বীকৃতি দেওয়া আবশ্যক।

❑ আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসুল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের আবশ্যকতা:

✪ ক. আল্লাহকে একমাত্র সত্য উপাস্য এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর প্রেরিত দূত হিসেবে স্বীকৃতি ও সাক্ষ্য দেওয়া ছাড়া ইসলামের প্রবেশ করা সম্ভব নয়:

আল্লাহকে ইলাহ (উপাস্য) হিসেবে এবং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর রসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখার নির্দেশ:

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ র বান্দা ও তার রসূল…।” [সুনান আত তিরমিজি (তাহকীককৃত), অধ্যায়: ৩৮/ ঈমান, পরিচ্ছেদ: ২. আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামাজ আদায় করবে]
সুতরাং মুক্তি পেতে হলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’; মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ উভয়টি পাঠ করা আবশ্যক।

✪ খ. যে ব্যক্তি আল্লাহর তাওহিদের সাক্ষ্য দেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর রসুলকে স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এ ক্ষেত্রে অন্তরে সামান্য পরিমাণ সন্দেহ পোষণ করবে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“‏ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং আমি আল্লাহর রসুল। যে ব্যক্তি এ বিষয় দুটোর প্রতি সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস পোষণ করত আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহিহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ১০. যে ব্যক্তি তাওহিদের উপর মৃত্যুবরণ করবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে-এর প্রমাণ।]

✪ গ. জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ইমান আনা আবশ্যক:

শুধু আল্লাহর প্রতি ইমান আনা যথেষ্ট নয়। বরং কেউ যদি এর পাশাপাশি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান না আনে তাহলে সে জাহান্নামে যাবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ

“সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমার উম্মতের ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যক্তি আমার বিষয়ে শুনেছে, অথচ আমি যে রিসালাত নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছি তার উপর ঈমান আনেনি এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৬৯. আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকল মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছেন এবং অন্য সকল ধর্ম তার দ্বীন-ইসলামের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে-এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য]

এ দুটি বাক্যকে এক সাথে পাঠ করতে বা লিখতে কোনও সমস্যা নাই। যারা বলে, এ দুটি বাক্য এক সাথে লিখা শিরক, বরং উপর নিচে করে লিখতে হবে, অথবা মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ-এর আগে অবশ্যই ‘আন্না’ শব্দ উল্লেখ করতে হবে। না হলে তা শিরক হবে। তাদের এ সব কথাবার্তা চরম পর্যায়ের বাড়াবাড়ি, বিভ্রান্তি মূলক এবং ও দ্বীন সম্পর্কে মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মুয়ামালাত, মুয়াশারাত ও আখলাকিয়াত অর্থ

 প্রশ্ন: মুয়ামালাত, মুয়াশারাত ও আখলাকিয়াত অর্থ কী?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬ উত্তর: শাব্দিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুয়ামালাত ও মুয়াশারাত শব্দ দ্বয় খুব কাছাকাছি অর্থ বোধক। তবে ব্যবহার গত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন:
◆ মুয়ামালাত-এর শাব্দিক অর্থ: পারস্পরিক সম্পর্ক, লেনদেন ও আচরণ। তবে ফিকহের পরিভাষায় এর দ্বারা সাধারণত: পারস্পরিক আর্থিক লেনদেন বুঝায়। যেমন: ক্রয়-বিক্রয়, ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি, ধার-কর্জ, বন্ধক, ওকালতনামা, ওয়াকফ, মিরাশ বণ্টন সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি।
◆ মুয়াশারাত এর শাব্দিক অর্থ; মেলামেশা, সঙ্গ, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা।
আর পরিভাষায় এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক, সম্প্রীতি ও ঘনিষ্ঠতা বুঝায়।
◆ আখলাকিয়াত অর্থ: নীতি-নৈতিকতা, স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মানুষের সাথে আচার-আচরণ, শিষ্টাচার, পেশাদার আচরণ ইত্যাদি। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

নাটক-সিনেমা নির্মাণকারী এবং নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা, কলা-কুশলী ইত্যাদির প্রতি সতর্কবার্তা

 হারাম নাটক-সিনেমা, মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি তৈরিতে যেসব নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, কলা-কুশলী প্রমুখগণ জড়িত তারা সকলেই মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ যারা সমাজে পাপ কর্মের প্রসার ঘটায় এবং মানুষকে প্রকাশ্যে পাপাচারে উদ্বুদ্ধ করে তাদের অপরাধ অত্যন্ত ভয়ানক। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি তিনি তাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতে কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
“যারা পছন্দ করে যে, ইমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহা ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা নূর: ১৯]

অশ্লীল, হারাম কার্যক্রম ও পাপকর্ম করা আল্লাহর নিকট ঘৃণিত এবং শাস্তিযোগ্য গুনাহ হলেও আল্লাহ চাইলে এসব গুনাহগারকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু পাপ বিস্তারে জড়িত লোকদের কোন ক্ষমা নেই।

সুতরাং আমাদের সমাজে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হারাম স্টেজ শো, কনসার্ট, গান-বাজনার প্রতিযোগিতা, ছেলে-মেয়েদের মডেলিং, মিউজিক ও নাচ-গান শিক্ষা, মিউজিক ভিডিও, অশ্লীল ওয়েব সিরিজ, নোংরা রোমান্টিক ভিডিও, নাটক-সিনেমা, কাছে আসার গল্প ইত্যাদি নানা ধরনের হারাম জিনিস বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, youtube ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা সবাই উক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। কারণ তারা সমাজে অশ্লীলতা প্রসারকারী।
কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ তাদের এই কাজের কারণে গুনাহ অর্জন করবে এর পেছনের কলাকুশলী, চ্যানেলের মালিক, নির্মাতা, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটর, ডিরেক্টর, প্রযোজক, নায়ক-নায়িকা অভিনেতা, স্পন্সর এবং নানাভাবে সহায়তাকারী ইত্যাদি সকলের আমলনামায় তাদের সকলের সমপরিমাণ গুনাহ অবিরাম ধারায় জমা হতেই থাকবে যদি না তারা জীবদ্দশায় আল্লাহর নিকট লজ্জিত অন্তরে তওবা করে এবং তাদের হারাম কার্যক্রম গুলোকে সাধ্য অনুযায়ী মুছে ফেলার চেষ্টা করে।

▪️পাপকর্ম প্রকাশকারীরা আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না:

মহান আল্লাহ বান্দার অনেক পাপ গোপন রাখেন এবং তিনি চান মানুষ যেন তাদের গোপন পাপাচার প্রকাশ না করে। যারা গোপন পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করে তাদেরকে তিনি ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

كُلُّ أُمَّتِي مُعَافىَ إِلاَّ الْمُجَاهِرِيْنَ، وَإِنّ مِنَ المُجَاهَرَةِ أنْ يَّعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ عَلَيهِ فَيقُولُ : يَا فُلَانُ عَمِلتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْه

“পাপকর্ম প্রকাশকারীরা ছাড়া আমার সকল উম্মত ক্ষমা প্রাপ্ত হবে।
আর পাপকর্ম প্রকাশ করার অর্থ হলো, কোন ব্যক্তি রাতে কোন পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ’হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে সে নিজেই আল্লাহ যা গোপন রেখেছিলেন তা প্রকাশ করে দেয়।” [বুখারী, হা/ ৬০৬৯, মুসলিম, হা/৭৬৭৬]

যারা প্রকাশ্যে পাপাচার করে তারাও সমাজে পাপ ও অশ্লীলতা প্রসারকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ তাদের দেখে অন্যান্য মানুষ আল্লাহর নাফরমানি ও পাপকর্মের পথ খুঁজে পাবে, তাদের দেখে অন্যরা অন্যায়-অপকর্মে অনুপ্রাণিত হয়, যারা সে বিষয়ে জানতো না‌ তারা জানে এবং এর কলা-কৌশল শিখে নেয়। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য মানুষের কাছে আল্লাহর শরিয়ত লঙ্ঘন করা সহজ হয়ে যায়।

▪️আল্লাহ তাআলা তার ঈমানদার বান্দাদের অনেক পাপরাশি গোপন রাখেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏ يُدْنَى الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ فَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ فَيَقُولُ هَلْ تَعْرِفُ فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ أَعْرِفُ ‏.‏ قَالَ فَإِنِّي قَدْ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَإِنِّي أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ ‏.‏ فَيُعْطَى صَحِيفَةَ حَسَنَاتِهِ وَأَمَّا الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيُنَادَى بِهِمْ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ

“কিয়ামতের দিন ঈমানদার ব্যক্তিকে তাদের রবের খুব কাছে নিয়ে আসা হবে। তারপর তিনি তার উপর পর্দা ফেলে দিবেন। এবং তার গুনাহ সম্পর্কে তার থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি (তোমার গুনাহ) স্বীকার কর কি? সে বলবে, হে রব! আমি স্বীকার করছি।
তারপর তিনি বলবেন, তোমার এ গুনাহ দুনিয়ায় আমি গোপন রেখেছিলাম। আজ তোমার এ গুনাহগুলোকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
তারপর তার নেকির আমলনামা তার নিকট দেওয়া হবে। আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে উপস্থিত সমস্ত মানুষের সামনে ডেকে ঘোষণা দেওয়া হবে, এরাই তারা যারা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করেছিল।” [সহি বুখারী ও মুসলিম। ‌সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫১/ তাওবা, পরিচ্ছেদ: ৮. হত্যাকারীর তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য; যদিও সে বহু হত্যা করে থাকে]

▪️কেউ যদি চায় যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুনাহগুলো প্রকাশ না করুন তাহলে সে যেন দুনিয়াতে তার নিজের বা অন্যের গুনাহগুলো প্রকাশ না করে:

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْداً في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ»
“যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ [মুসলিম, হা/২৫৯০, রিয়াদুস সালেহীন, অধ্যায়: বিবিধ, পরিচ্ছেদঃ ২৮: মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা জরুরি এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ]

▪️কেউ পাপ করলে আল্লাহ চান সে যেন তা প্রকাশ না করে:

হাদিস চেয়ে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَلِيمٌ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ
“আল্লাহ তাআলা সহনশীল, লজ্জাশীল, তিনি (মানুষের পাপ) ঢেকে রাখেন। তিনি লজ্জাশীলতাকে এবং মানুষের গুনাহগুলোকে ঢেকে রাখতে পছন্দ করেন।” [সহীহ-আবু দাউদ ৪০১২, ইরওয়াউল গালীল ২৩৩৫, মিশকাত ৪৪৭]

– শাইখ আব্দুল হক দেহলভি বলেন, সিত্তীর নামটির অর্থ, মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে অপদস্থ করেন না এবং তাদের অপকর্মগুলো ঢেকে রাখেন।” [লুময়াতুত তাহকিক ফী শারহে মিশকাতিল মাসাবিহ, ২/১৭৯]

– ইমাম বায়হাকি বলেন,
” ستير ” يعني أنه ساتر يستر على عباده كثيرا ، ولا يفضحهم في المشاهد .
كذلك يحب من عباده الستر على أنفسهم ، واجتناب ما يشينهم ، والله أعلم

“সিত্তীর অর্থ: আল্লাহ মানুষের প্রচুর পরিমাণ (দোষত্রুটি ও গুনাহ) ঢেকে রাখেন। সেগুলোকে জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিয়ে তাদেরকে অপদস্থ করেন না। অনুরূপভাবে তিনি এটাও পছন্দ করেন যে, বান্দাগণ কোনও পাপকর্ম করে ফেললে তা যেন ঢেকে রাখে এবং নোংরা ও অশালীন কাজ থেকে দূরে থাকে। আল্লাহ সবচেয়ে বেশি জানেন।” [আল আসমা ওয়াসিফাত, পৃষ্ঠা নাম্বার ১৪৮]। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মুহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণিত ১৪টি সহিহ হাদিস

 নিম্নে মহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ১৪টি হাদিস পেশ করা হল:

◆১. প্রখ্যাত সাহাবী আবু বাকরা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা আসমান সমূহ এবং জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার তার নিজস্ব কৃতিতে ফিরে এসেছে। এবং বারো মাসে এক বছর। তম্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হল: যুল কা’দাহ [যিলকদ], যুল হিজ্জা [যিলহজ্জ] এবং মুহররম এবং আরেকটি হল মুযার সম্প্রদায়ের রজব মাস যা জুমাদাল ঊলা এবং শাবানের মধ্যখানে রয়েছে। [বুখারি ও মুসলিম]
◆২. আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। আর ফরজ নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।” [মুসলিম]
◆৩. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোজা পালন করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে নিজে আশুরারা রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু‘ যখন রমজানের রোজা ফরজ হল তখন তা পরিত্যাগ করা হল। যার ইচ্ছা রাখত যার ইচ্ছা রাখত না।” [বুখারি]
◆৪. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা আগমন করার পর দেখলেন, সেখানকার ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কিসের রোজা রাখ? তারা বলল: এটি একটি কল্যাণময় দিন। এ দিন বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা পালন করেছিলেন। (বিধায় আমরাও মুসা আ. এর অনুসরণে এ দিনটিতে রোজা পালন করি)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি তোমাদের চেয়ে মুসাকে অনুসরণ করার বেশি হকদার।” অতঃপর তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। [বুখারি-মুসলিম]
◆৫. আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনকে ঈদ মনে করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “অতএব তোমরা এ দিন রোজা রাখ।” [বুখারি-মুসলিম)
◆৬. হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া রা. কে হজ্জের বছর আশুরার দিন মিম্বারের উঠে বক্তব্য দিতে শুনেছি। তিনি বলছেন, “হে মদিনা বাসী, তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আজ আশুরার দিন। আল্লাহ এ দিন রোজা রাখা ফরজ করেন নি। কিন্তু আমি রোজা রেখেছি। অতএব, তোমাদের কেউ চাইলে রোজা রাখতে পারে, নাও রাখতে পারে।” [বুখারি ও মুসলিম]
◆৭. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এই আশুরার দিনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে এত গুরুত্ব সহকারে অন্য কোন দিন রোজা পালন করতে দেখি নি। (অর্থাৎ রমজান মাস ছাড়া) [বুখারি]
◆ ৮. রুবাই বিনতে মুআউওয়ায রা. বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকাল বেলা আনসারদের মহল্লায় মহল্লায় এ ঘোষণা দেয়ার জন্য লোক পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ রোজা অবস্থায় থাকে আর যে রোজা রেখেছে সে যেন রোজা পূর্ণ করে।”
রুবাই রা. বলেন, আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকে রোজা রাখাতাম। আর তাদের জন্য রঙ্গিন পশম দ্বারা খেলনা বানিয়ে রাখতাম। কেউ কান্নাকাটি করলে সেটা তাকে দিতাম যেন ইফতারের সময় পর্যন্ত রোজা অবস্থায় থাকে।” [বুখারি ও মুসলিম]
◆ ৯. সালামা বিন আকওয়া রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে, “যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন দিনের বাকী অংশ রোজা থাকে আর যে খায়নি সেও যেন রোজা অবস্থায় থাকে। কারণ, আজ আশুরার দিন।” [বুখারি-মুসলিম]
◆ ১০. আবু কাতাদা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, “প্রতি মাসে তিন দিন এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান পর্যন্ত রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিন রোজা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে তিনি এর বিনিময়ে আগের ও পরের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দিবেন। আর আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মোচন করবেন।” [সহিহ মুসলিম]
◆ ১১. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, জাহেলি জামানার লোকেরা আশুরার দিন রোজা পালন করত। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুসলমানগণও এ দিন রোজা পালন করতেন। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলার দিন সমূহের মধ্য থেকে একটি দিন। যার ইচ্ছা সে এ দিন রোজা রাখতে পারে আর যার ইচ্ছা রোজা বাদও দিতে পারে।” [সহিহ মুসলিম]
◆ ১২. জাবির বিন সামুরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আশুরার দিন রোজা রাখতে আদেশ করতেন, উৎসাহিত করতেন-এমনকি রোজা রাখার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতেন। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হলে তিনি এ রোজার ব্যাপারে আদেশ করতেন না, নিষেধও করতেন না এবং এ ব্যাপারে খোঁজ-খবরও নিতেন না। [সহিহ মুসলিম]
◆ ১৩. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রাখার জন্য আদেশ করলেন তখন সাহাবিগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল, এ দিনটিকে তো ইহুদিরা সম্মান করে?! তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি আগামী বছর নয় তারিখে রোজা রাখব।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে, (তিনি বলেছেন), ” আগামীতে বেঁচে থাকলে নয় তারিখে রোজা রাখব।” [সহিহ মুসলিম]
◆১৪. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আশুরার দিন রোজা রাখ এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করে এর আগের দিন বা পরের দিন রোজা রাখ।” [মুসনাদ আহমদ, সহীহ ইবনে খুযায়মা ইত্যাদি]
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, “মাসের শুরু চিনতে অসুবিধা হলে (নয়, দশ ও এগার এ) তিন দিন রোজা রাখবে। যেন নয় ও দশ তারিখে রোজা নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন করা যায়।” [মুগনী ৩/১৭৪]
——সমাপ্ত——-

সংকলনে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কবর পূজার নানা রূপ এবং কবর পূজারীদেরকে চেনার আলামত

 প্রশ্ন: কবর পূজা বলতে কী বুঝায়? কবর কেন্দ্রিক শিরক ও বিদআতি কাজগুলো কী কী? কবর পূজারীদেরকে সহজে চেনার কোনও আলামত আছে কী?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: নিম্নে অতি সংক্ষেপে এই সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো: وبالله التوفيق

▪️কবর পূজা বলতে কী বুঝায়?

কবর পূজা বলতে বুঝায়, কবরে শায়িত ওলি বা বুজুর্গের উদ্দেশ্যে কোন ধরনের ইবাদত-বন্দেগি করা যার হকদার কেবল আল্লাহ তাআলা।

▪️কবর পূজার কতিপয় উদাহরণ (শিরকি কার্যক্রম):

ওলি বা বুজুর্গদের কবরে রুকু ও সেজদা করা, তাজিম ও বিনম্রতার সাথে তাদের কবরের সামনে সালাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা, বরকত লাভের উদ্দেশ্যে কবরের দেওয়াল স্পর্শ করা বা তাতে শরীর লাগানো বা কাপড় ঘষে তা নিজের বা বাচ্চাদের শরীরে লাগানো, কবরে শায়িত কথিত ওলির-বুজুর্গদের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল, হাস-মুরগি ইত্যাদি মানত করা বা তাদেরকে খুশি করার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা এবং টাকা-পয়সা, সোনা-গহনা ইত্যাদি দান করা।

অনুরূপভাবে কবরের শায়িত ওলি-বুজুর্গের তার কাছে সন্তান চাওয়া, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি চাওয়া, তার কাছে মনোবাসনা তুলে ধরে কাকুতি-মিনতি ও ফরিয়াদ জানানো, বিপদ-আপদে সাহায্য প্রার্থনা করা অথবা দূর থেকে যে কোন সমস্যা, সংকট ও বিপদ-মসিবতে কবরে শায়িত ওলি-বুজুর্গের কথা স্মরণ করে তার নাম জপ করা বা তার কাছে সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানানো।

তদ্রুপ কবরের উপরে মসজিদে নির্মাণ করা, কবরে শায়িত কথিত ওলি বা বুজুর্গের উসিলা ধরে দুআ করা, তার নামে কসম খাওয়া, কবরের ওয়াল বা মাটি ছুঁয়ে কসম করা, কবরের ওলি বা বুজুর্গেরউদ্দেশ্যে মুরাকাবা বা ধ্যানমগ্ন থাকা, কবরের চারপাশে তওয়াফ করা, কবরকে নামাজের স্থান বানিয়ে নেওয়া, কবরকে তাজিম তথা বিনয়-নম্রতা সহকারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা করা, কবরে শায়িত ওলিকে বিপদ-মসিবতে ত্রাণকর্তা বলে বিশ্বাস করা এবং তার কাছেই বিপদ মুক্তির জন্য আরধনা করা অথবা তাকে উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতাবান বলে বিশ্বাস করা ইত্যাদি। এগুলো সবাই একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হক। কোন মাখলুকের উদ্দেশ্যে এগুলো করা শিরকে আকবর বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।‌ ওলি-বুজুর্গদের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে এগুলো চরম পর্যায়ের বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন। ‌কেউ জেনে-বুঝে এসব কবর পূজা ও শিরকি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং মুশরিক বলে পরিণত হবে। ফলে তার জীবনের সকল নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে এবং মূর্তি পূজারী মুশরিকদের মত চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামি হয়ে যাবে।‌ (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

▪️কবর কেন্দ্রিক কতিপয় বিদআতি কার্যক্রম:

মাটি থেকে অনেক উঁচু করে কবর দেওয়া, কবরের উপরে বিল্ডিং নির্মান করা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কবরের চারপাশে প্রাচীর বা ওয়াল তৈরি করা, তাতে চুনকাম করা, কবরে মৃত অলি বা বুজুর্গের নাম ফলক লাগানো, ঢোল-তবলা ও নানা ধরনের বাজনা বাজাতে বাজাতে লাশ কবরস্থানে নেওয়া, কবরের উপরে সামিয়ানা টাঙ্গানো বা চাদর চড়ানো, গম্বুজ স্থাপন করা, ফুল দেওয়া, তাতে আতর-সুগন্ধি ও গোলাপ জল ইত্যাদি ছিটানো, কবরে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো।

অনুরূপভাবে কথিত বুজুর্গ ও ওলির কবরে বার্ষিক ওরস মাহফিল বা আনন্দ উৎসব করা, ওরসের নামে নাচ-গান করা, নারী-পুরুষ একাকার হয়ে বাজনার তালে তালে গাঞ্জা টানা‌ ও জিকির করা, কবরকে মাজার বলে অভিহিত করা।

মৃতের উদ্দেশ্যে সবিনাখানি, কুলখানি, ফাতেহাখানি, মিলাদ মাহফিল ও দুআ মাহফিলের আয়োজন করা, মৃত্যুবরণের তিন দিন বা সাত দিন পরে জাঁকজমক ভাবে ভোজসভার আয়োজন করা, চল্লিশা পালন করা, মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করা, কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দূর দুরান্ত থেকে সফর করা, জানাজা ও দাফনের পরে কিংবা কবর জিয়ারতে গিয়ে দলবদ্ধ ভাবে মোনাজাত করা, লাশ কবরে দাফন করার পরে কবরের সওয়াল-জওয়াবের জন্য উপর থেকে তালকিন দেওয়া ইত্যাদি সবই বিদআতি কাজ ও হারাম।

যারা এই বিষয়গুলোকে জায়েজ মনে করে এবং নিজেরা করে ও অন্যদেরকেও আহ্বান জানায় তারা বিদআতি।

হ্যাঁ, মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ করার উদ্দেশ্যে যে কোনও কবরে যেকোনো সময় জিয়ারত করা জায়েজ। ইসলামের প্রথম যুগে তাও নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ তাওহিদ ও শিরক-বিদআত সম্পর্কে দৃঢ় জ্ঞান অর্জন করার পর ইসলামে তা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু কবর জিয়ারত করতে গিয়ে সেখানে হাদিসে বর্ণিত সালাম প্রদান এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ ছাড়া সূরা ফাতিহা এত বার, তিন কুল ইত্যাদি পাঠ করা বিদআত।

▪️কবর পূজারী চেনার কিছু আলামত:

কবর পূজারীদের পূজার চেনার আলামত হল, তারা‌ যারা কবর পূজা এবং মাজার কেন্দ্রিক শিরক, বিদআত ও অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের সাথে চরম মাত্রার শত্রুতা পোষণ করে এবং তাদেরকে ওয়াহাবি, ইয়াজিদের বংশধর, জারজ, গোস্তাখে রাসুল সহ বাপ-দাদা ও চৌদ্দগোষ্ঠী তুলে নানা ধরনের অপবাদ মূলক ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহব্বতের ক্ষেত্রে অতিভক্তি ও শরিয়তের সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে, তাদের কথিত ওয়াজ মাহফিলগুলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অলি-বুজুর্গদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের শান, গান ও‌ গজল গায়, এই সময় তারা হেলে-দুলে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে নাচানাচি করে বা চিল্লা-ফাল্লা করে, তারা প্রচুর পরিমাণ আজগুবি কিচ্ছা-কাহিনী, বুজুর্গদের কেরামত এবং জাল ও যেই হাদিস বর্ণনা করে।
এরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর প্রতি প্রতিভক্তি দেখাতে গিয়ে তাঁর নাম শোনার সাথে সাথে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল জমা করে ঠোঁটে লাগিয়ে দু চোখে বুলায়, তাদের অনেকেই, বিশেষ করে তাদের মৌলভিরা মাথায় বড়সড়ো সবুজ পাগড়ি পরিধান করে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথিত জুতার আকৃতি (যাকে নালাইন শরীফাইন বলা হয়) সম্বলিত সবুজ বা বিভিন্ন রংবেরঙের টুপি পরে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বত্র হাজির নাজির বলে বিশ্বাস করে, তাঁর উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে মিলাদ-কিয়াম করে, তিনি অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব অদৃশ্যের খবর জানে বলে বিশ্বাস করে, হায়াতুন্নবী তথা তিনি কবরে দুনিয়ার জীবনের মতই জীবিত আছে বলে বিশ্বাস করে, তাঁকে নুরের তৈরি বলে বিশ্বাস করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা-বাবা এবং চাচা আবু তালেবকে পাক্কা মুমিন এবং জান্নাতি বলে বিশ্বাস করে ইত্যাদি।

🔸প্রিয় বন্ধুগণ, এলাকাভিত্তিক কবর ও মাজার কেন্দ্রিক আরও নানা ধরনের‌ শিরক ও বিদআতি কার্যক্রম থাকতে পারে। আপনারা সেগুলো নিচের কমেন্টে উল্লেখ করতে পারেন।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

পরিশেষে, মহান আল্লাহর কাছে দুআ‌ করি, তিনি যেন আমাদেরকে সব ধরনের শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার মূলক কার্যক্রম থেকে হেফাজত করে করেন এবং যে সকল পথভ্রষ্ট মানুষ এই সকল কার্যক্রম নিজেরা করার পাশাপাশি অন্যান্য মুসলিমদেরকে সেদিকে আহবান করে তাদেরকে জাহান্নামের পথে আহবান করছে তাদের অনিষ্ট থেকে জাতিকে হেফাজত করেন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি কি নিষিদ্ধ

 প্রশ্ন: লোকমুখে শোনা যায় যে, মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। বরং বছরের কোন মাসেই কোন সময়ই বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। এ মর্মে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে সব‌ই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।

◆◆ মুহররম মাস নিয়ে শিয়াদের বাড়াবাড়ি:

মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি করা ঠিক নয়- মর্মে প্রচলিত কথাটি শিয়া-রাফেযি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে। কেননা, এ মাসে (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মিথ্যা মায়াকান্না আর অতিভক্তি দেখিয়ে এ মাসে অনেক বিদআতি কার্যক্রম করে থাকে এবং শরিয়তের অনেক বৈধ জিনিসকে অবৈধ করে থাকে। যেমন তারা বলে, মুহররম মাসে নতুন জামা পড়া যাবে না, গোস্ত-মাছ ইত্যাদি ভালো খাবার খাওয়া যাবে না বরং কেবল নিরামিষ খেতে হবে, বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শুতে হবে, বিয়াশাদী দেয়া বা করা বৈধ নয়…ইত্যাদি। অথচ এ সব কথা শুধু দলীল বহির্ভূত নয় বরং দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইসলামি শরিয়ত যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ করা মানে দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন।

নি:সন্দেহে হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে আমরা বেদনাহত ও মর্মাহত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সবরের পরিচয় দিতে হবে এবং তাদের জন্য দুআ করতে হবে। কারণ হুসাইন রা. এর পূর্বে তার পিতা আলি ইবনে তালিব রা., উসমান বিন আফফান রা., উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সহ অসংখ্য সাহাবি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। অথচ তাদের মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্ব মর্মাহত হলেও এ সব নিয়ে কোন ধরণের বাড়াবড়ি মূলক কার্যক্রম করে না। কেননা ইসলাম কারো মৃত্যু/শাহাদতকে কেন্দ্র করে বিলাপ করা, শরীরে আঘাত করা, শরীর রক্তাক্ত করা, পরিধেয় কাপড় ছেঁড়া, মাটিতে গড়াগড়ি করা, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা, শোক দিবস পালন করা, কালো পোশাক ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক র‍্যালী ও তাজিয়া মিছিল করা…ইত্যাদি কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ হারাম ও জাহেলিয়াতের কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

◈ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ
“সে ব্যক্তি আমাদের লোক নয় যে গালে চপেটাঘাত করে, জামার পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত ডাকে। “ [সহীহ বুখারি: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নম্বর ১২৯৭, মাকতাবা শামেলা]

◈ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
النِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ
“বিলাপ করা (কারও মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, জামা-কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি) জাহেলি যুগের কাজ।” [ইবনে মাজাহ, অনুচ্ছেদ: মৃতকে কেন্দ্র করে চিৎকার করে বিলাপ করা নিষিদ্ধ। আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১২৮৬, মাকতাবা শামেলা]

আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

সুতরাং মুহররম মাসকে কেন্দ্র করে, আমাদের সমাজে যে সেকল বাতিল ও বিদআতি কার্যক্রম এবং ভিত্তিহীন বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে এবং সামাজিকভাবে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন আমাদের সমাজ বিদআত ও কুসংস্কারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধর্মের নামে সকল অধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◈◆◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আমার যতটুকু করার তা আমি করেছি বাকিটা আল্লাহর উপর এ কথা বলার হুকুম

 প্রশ্ন: “আমার যতটুকু করার তা আমি করেছি- বাকিটা আল্লাহর উপর।” এ কথা বলার হুকুম কী?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:
الحمد لله، رب العالمين والصلاة السلام على رسول الله، وبعد:
فمن يقول هذا العبارة مراده أني فعلت السبب الذي أقدر عليه في الأمر الذي أريد تحقيقه، وأما حصول المقصود، وتحقيق النتائج فذلك إلى الله، وهذا المعنى حق، فإن العبد لا يملك تحقيق مقاصده، وبلوغ آماله إلا بتوفيق الله وتيسيره، فمعنى هذه العبارة يرجع إلى ما جاء في الحديث “اعقلها وتوكل”. أخرجه الترمذي (2517)، وابن حبان (731). وهذا هو الذي يليق بالمسلم أن يفعل السبب المشروع ويعتمد في حصول المطلوب على ربه، فيجتهد في فعل الأسباب المشروعة، ويستعين بربه في حصول مطلوبه كما قال صلى الله عليه وسلم “احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجِز”. صحيح مسلم (2664).
ولكن ينبغي أن يقول المتكلم بهذه العبارة (والباقي إلى الله)، بدل (على الله)، والله أعلم
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসুলের উপর। অত:পর, যে ব্যক্তি এই বাক্যটি বলে তার কথার মানে হল যে, আমি যে বিষয়টি অর্জন করতে চাই তার জন্য আমি সাধ্যানুযায়ী উপায় অবলম্বন করেছি (অর্থাৎ আমার যা করণীয় আমি তা করেছি)। কিন্তু লক্ষ্য হাসিল বা ফলাফল অর্জনের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করছি। আর এ অর্থটি সত্য। কারণ আল্লাহর রহমত ও তওফিক ছাড়া বান্দা তার লক্ষ্য অর্জন এবং প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। সুতরাং উক্ত বাক্যটির অর্থ সেটাই, যা এ হাদিসে এসেছে:
اعقلها وتوكل
“আগে উঁট বাধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (অর্থাৎ উটকে না বেঁধে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থেকো না। অন্যথায় উট পালিয়ে যাবে)। এটি তিরমিজি (২৫১৭) এবং ইবনে হিব্বান (৭৩১) বর্ণনা করেছেন। একজন মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো, সে যা চায় তা অর্জনের জন্য তার প্রতিপালকের উপর ভরসা করবে। ফলে সে বৈধ উপায় অবলম্বন করার করার পাশাপাশি তার প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করবে। যেন সে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অর্জন করতে পারে। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجِز
“যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা গুরুত্ব সহকারে করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ো না।” [সহীহ মুসলিম, ২৬৬৪]

তবে যে এমন কথা বলবে, তার “বাকিটা আল্লাহর উপর” না বলে উচিৎ, “বাকিটা আল্লাহর নিকটে।” আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।”
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক, (লেকচারার, ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

Translate