Sunday, December 12, 2021

অমুসলিমদের ইসলামে আসার কাহিনী

 

বিক্রয়ের জন্য নহে! [ Not for sale ! ! ! ]

এক ক্যানাডিয়ান নওমুসলিমা ছাত্রী আয়শা (নতুন নাম)- বয়স ১৯, অত্যান্ত সুন্দরী, সৌন্দর্য নিয়ে পড়াশোনা করছে। আমার কাছে আরবী পড়া শেখার পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জেনে নেয়।
ওর সাথে পরিচয় এই রামাদানে। সেদিন ইফতার পার্টি ছিল, রাতে কিয়ামুল লাইল। ইফতারের পর আমরা পাশাপাশি নামাজে দাড়ালাম। সামনে, পেছনে, পাশে এত মহিলা এবং বাচ্চারা গিজ গিজ করছে যে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা যুদ্ধসম কঠিন ব্যাপার। লক্ষ্য করলাম এর মাঝেই সে একমনে স্রষ্টার সাথে বাক্যালাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ময়দানের মধ্যে সে যেন একাই দাঁড়িয়ে! জানতে পারলাম পাঁচ ওয়াক্তের পাশাপাশি সে এমন অনেক এক্সট্রা নামাজ পড়ে যার নামও অনেক জন্মগত মুসলিমের অজানা।
ইসলামের প্রতি ওর আগ্রহ
আমাকে চমৎকৃত করল। সে ইসলাম গ্রহণ করেছে দু’বছর। কিন্তু সে ইসলামকে গ্রহণ করেছে আন্তরিকভাবে, ফলে সে এর সবটুকুই পালন করার জন্য আগ্রহী এবং যত্নশীল। দেখলাম সে এর মাঝেই ভারী সুন্দর বোরকা এবং স্কার্ফের কালেকশন করে নিয়েছে। ওর পোশাক আশাক থেকে সবকিছুতে রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। তবে এর সবটুকুই ইসলামের দৃষ্টিতে যতটুকু গ্রহণযোগ্য সে বিবেচনা মাথায় রেখে। যেমন যেখানে ক্যানাডায় নেইল পলিশ ছাড়া কোন স্টাইলিশ মেয়ের দেখা পাওয়া অস্বাভাবিক, ওর হাতে পায়ে কোথাও নেইল পলিশ নেই। স্কার্ফ বা ওড়না যখন যাই পরে কোনটিতেই একটি চুলও কোনদিন বেরিয়ে থাকতে দেখিনি।
রাতে কুর’আনের আলোচনার সময় বাংলায় আলোচনা হওয়ায় বেচারী বুঝতে পারছিলোনা। আমি তখন ওর আগ্রহ দেখে কিছু অংশ মুখে এবং কিছু অংশ লিখে বুঝিয়ে দিতে লাগলাম। সে কৃতজ্ঞচিত্তে সব শুষে নিতে লাগল এবং মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে সঠিকভাবে বুঝে নিল। যখন আলোচনা শেষে নামাজ শুরু হবে সে এসে আমাকে বলল, “আমি কি আপনার পাশে দাঁড়াতে পারি? তাহলে আমি আপনাকে দেখে আমার posture গুলো ঠিক হচ্ছে কি’না ঠিক করে নিতে পারব”।
আমি তো হতবাক! অনেক সময় অনেক আত্মীয় বন্ধুবান্ধবকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশেষ করে রুকু এবং সিজদায় posture এর ভুলের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তাদের বিরাগভাজন হয়েছি। আর সে কি’না বলে নামাজ সঠিকভাবে পড়ার জন্য posture ঝালাই করে নেবে! ওর আগ্রহ আবারও আমাকে চমৎকৃত করল।
এর পর থেকে কুর’আনের লিঙ্ক নেয়া থেকে শুরু করে ভ্রূ তোলার মাসয়ালা পর্যন্ত নানান বিষয়ে ওর সাথে আলাপ হয়েছে। ভাল লেগেছে যে সে কোন বিষয়ে জানার সাথে সাথে তাকে গ্রহণ করেছে, কুতর্কের আশ্রয় নেয়নি। অথচ এতটা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ইসলামের সকল হুকুম আহকামকে আঁকড়ে ধরার আগ্রহ আমি অনেক ইসলাম জানা মানুষের মাঝেও দেখিনি!
ক’দিন আগে নতুন করে ওর ইসলামের বোধ এবং অনুভূতির পরিচয় পেয়ে আবারও মুগ্ধ হলাম। ক্যানাডার একটি বৃহৎ ফ্যাশন হাউজ একটি ফ্যাশন শোর আয়োজন করছে। একপর্বে সমাপ্য শোটিতে মডেলিং করার জন্য ওকে ৪০,০০০ ক্যানাডিয়ান ডলার অফার করা হয়। সে স্রেফ না করে দেয় এই বলে, ”আমার ধর্ম আমাকে নিজেকে পুঁজি করার অনুমতি দেয়না”। শুনে এত ভাল লাগল! মনে হল এই মেয়েটি খানিকটা দেরীতে ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে, কিন্তু সেই তো পেয়েছে এর আসল আস্বাদ! দোকানে, লাইব্রেরীতে, মসজিদে ওর মত এমন আরো অনেক নওমুসলিমা বোনকে দেখে পুলকিত হই, আশা জাগে আগামী দিনে ইসলামের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত নিয়ে।
আবার ভয় হয় আমরা যারা জন্মগতভাবে একে পেয়েও হেলায় হারিয়েছি তারা বুঝি আবার অপ্রয়োজনীয় এবং অপাংক্তেয় হয়ে পড়ি!
*****************
ফ্রান্সে একজন মহিলা, যিনি কিনা ইসলামী পোশাকের বিধান মেনে হিজাব-নিকাব পরেছিলেন, একটা সুপারমার্কেটে গেলেন। তিনি কিছু জিনিস নিয়ে কাউন্টারে সেগুলো চেক করিয়ে মূল্য পরিশোধের জন্য গেলেন। কাউন্টারে ক্যাশিয়ার হিসেবে একজন মুসলিম মহিলা বসা ছিলেন। যা হোক, ক্যাশিয়ার মহিলাটি কিন্তু খুব স্বাভাবিক পোশাক পরেছিলেন আর তার চুলও ছিল খোলা এবং চেহারায় অনেক সাঁজ-গোছ করা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই ক্যাশিয়ার মহিলাটি নিকাব পরা মহিলাটিকে দেখে একটু বিব্রতবোধ করলেন, আর তার নিয়ে আসা জিনিসগুলো তাচ্ছিল্যভরে চেক করতে লাগলেন।
কয়েক মিনিট পর, ক্যাশিয়ার মহিলাটি নিকাব পরা মহিলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ কেন আপনি এখানে আসলেন? আপনি যদি নিকাব পরতেই চান, তো নিজের দেশে গিয়ে নিজের ঘরে বসেই তো ধর্ম কর্ম করতে পারতেন। আমরা তো ফ্রান্সে এসেছি আমাদের নিজেদের উন্নতির জন্য।
নিকাব পরা ভদ্র মহিলাটি খুব শান্তভাবে তার নিকাবটি খুলে ক্যাশিয়ার মহিলার সামনে তার চেহারা উন্মুক্ত করলেন। ক্যাশিয়ার মহিলাটি তখন হতভম্ব হয়ে গেলেন ! তিনি দেখলেন বাদামী চামড়া ও রঙ্গীন চোখ বিশিষ্ট এক মহিলাকে। জী হ্যাঁ তিনি ফ্রান্সেরই অধিবাসীনী।
নিকাব পরা মহিলাটি তখন ক্যাশিয়ার মহিলাটিকে বললেনঃ তোমরা এখানে এসছো নিজদের ধর্ম বিক্রি করতে , আর আমরা তা ক্রয় করে নিচ্ছি!
দুইটা পথ! 
রঙ্গিন আর সাদাকালো 
মাসুমার সামনে দুইটা পথ.. 
ও বেছে নিতে পারে এমন একটা জীবন যেখানে হাসি-ঠাট্টা-গান আছে, আড্ডা-বন্ধুবান্ধব-মজা আছে! 
অথবা এমন একটা জীবন যেখানে ছেলেমেয়ে একসাথে গল্প করাও নিষিদ্ধ! 
মাসুমা ঢাকা ইউনিভার্সিটির মেয়ে। কয় মাস হলো স্কার্ফ পড়া শুরু করেছে, এক বড় আপুর দেখাদেখি। সেই আপুটা কী সুন্দর করে কথা বলে! ইসলাম মেনে চলতে চায়। তাঁর দেখাদেখি মাসুমাও একদিন স্কার্ফ পরলো। ব্যাস তারপর থেকে চলছে। 
কিন্তু সেই রঙ্গিন লাইফটা মাসুমাকে খুব টানে। জীবন নিয়ে এতো সিরিয়াস হয়ে কি হবে মাঝে মাঝে ও বুঝতে পারে না! এই যে মৃত্যু-জান্নাত-জাহান্নাম এসব কথা এতো ভাবার দরকার টা কি??? 
নববর্ষ গেলো, ইসলাম মানতে গেলে তো নববর্ষের অনুষ্ঠানটা তেও যাওয়া যাবে না, উহহ অসহ্য, মনে মনেই ভাবে মাসুমা! 
মাসুমার খুব শখ শাড়ি পরে হাতে চুড়ি দিয়ে বেড়াতে যাবে…। 
বোরকা পরলে কি এসব সম্ভব? তাই ও এখনো বোরকা পরছে না। আস্তে আস্তে ভেবে দেখবে একসময়… 
মাসুমার মত এমন হাজারো মুসলিমাহ আছে। তারা ডাইলেমায় ভুগছে! দ্বিধা! আইডেন্টিটি ক্রাইসিস! কোন পথ নিব-? এই পথ নাকি ঐ পথ?? তারা ইসলামও মানতে চায়, আবার যারা ইসলাম মানে না, তাদের মতোও হতে চায়!!! দুই নৌকায় একসাথে পা দেয়া তো সম্ভব না! ইসলাম নিলে যে ওটা ছাড়তেই হবে… 
হে আমার মুসলিম বোন, 
পথ একটাই- আমাদেরকে মরতে হবে। তোমার কাছে এই দুনিয়ার রং-চং এতো রঙ্গিন লাগে! চিন্তা করো তো, জান্নাতে আল্লাহ কতো রঙ রেখেছেন! 
আরেহ আপু, জান্নাতে তো তোমাকে বানানো হবে চিরকুমারী। হুরদের কথা শুনেছ? মায়াকাড়া ডাগর চোখ, অপরূপ চেহারা! কোন পুরুষ একবার তাদের দিকে তাকালে আর চোখ ফেরাতে পারে না! 
আপু, আল্লাহ তোমাকে তারচেয়েও সুন্দরি বানাবে! 
এই পৃথিবী টা খুব অল্পদিনের রে বোন খুব অল্প! তুমি এর মায়ায় আটকে যাও!? একটু কষ্ট করো আপু, বৃথা যাবে না। আল্লাহর রাহে তোমার একটা বিন্দু কষ্ট কেয়ামতের দিন রহমতের বারিধারা হয়ে তোমার উপর ঝরে পড়বে! 
বোন আমার! 
এই হাসি-আড্ডা-গানে জীবনটা ভাসিয়ে দেয়া বোকামি… শয়তানের ওয়াদা মনে নেই তোমার? সে তাঁর ষড়যন্ত্রের কথা কতো আগেই ফাঁস করে দিয়েছে! হায়রে আপু, তুমি তার ধোঁকায় পাড়া দিবে?? তোমার কি বিবেক-বুদ্ধি নাই? আত্মসম্মান নাই? আপু, তুমি যে বয়ফ্রেন্ডের জন্য এতো কষ্ট সহ্য করো, সে আখিরাতে তোমার কি উপকারে আসবে? সে তো এখনই তোমাকে কতো কষ্ট দেয়! 
আপু, তোমার স্বামীর কথা শুনে তুমি হিজাব খুলে ফেলো, তোমার এই স্বামী সেদিন কি সাহায্য করতে আসবে, যেদিন তোমার ত্বক জাহান্নামের আগুনে ঝলসে যাবে? 
ভয় করো আপু, ভয় করো! 
এ দুনিয়ার জীবন কয়দিনের? আখিরাতের জীবন আরো দীর্ঘ, আরো দীর্ঘ!! 
কে বলেছে, ইসলাম মানতে চাইলে সুখ নেই? 
আল্লাহর সামনে মাথাটা ঠুকে দেখো কতো শান্তি! আর কেউ না শুনুক, আল্লাহ তোমার সব কথাই শুনে। আল্লাহ তোমার অনুশোচনার অপেক্ষা করছে, একটা বার ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিবে! আল্লাহ তোমাকে সম্মান দিয়েছে বোন। হিজাব তোমার সম্মান! কঠিন লাগুক, আল্লাহর জন্য, শুধু আল্লাহর জন্য একটা বার ইসলামের পথে চলে দেখো, দেখবে শান্তি-ই শান্তি! 
আনন্দ-হাসি-মজা সব পাবে ইনশা আল্লাহ। এই আমি, তোমার মুসলিম বোন তোমাকে কথা দিচ্ছি। আল্লাহর বন্ধু হও রে আপু, শয়তানের চামচা হয়ো না! জান্নাত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে…!!! কেন তুমি জাহান্নামকে নিজের বসতি বানিয়ে নিবে?
(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)

No comments:

Post a Comment

Translate