Monday, April 21, 2025

সময় ও স্থানভেদে ফাতওয়া কি পরিবর্তিত হতে পারে

 প্রশ্ন: সময় ও স্থানভেদে ফাতওয়া কি পরিবর্তিত হতে পারে? কুরআন ও সহিহ হাদিসে কি এর কোনো প্রমাণ আছে? দয়া করে আমাদের এ বিষয়ে জানান।

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর-সময় ও স্থানভেদে ফাতওয়া পরিবর্তিত হওয়া নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
.
(১).সর্বপ্রথম আমাদের এটি বুঝতে হবে যে, নিশ্চয়ই কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে নির্ধারিত ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহ চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। সময়, যুগ,পরিবেশ স্থান ও কালের পরিবর্তন যেমনই হোক না কেন, মদপান, ব্যভিচার, সুদগ্রহণ, পিতামাতার অবাধ্যতা ইত্যাদি কখনো বৈধ হতে পারে না। কেননা, এসব বিধান আল্লাহ তাআলার ওহির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং ইসলামী শরিয়ত ইতোমধ্যেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন:اَلۡیَوۡمَ اَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِیۡنَكُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡكُمۡ نِعۡمَتِیۡ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম..”(সূরা মায়েদাহ: ৩) দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেবার অর্থই হচ্ছে এর মধ্যে জীবনের সমস্ত প্রশ্নের নীতিগত ও বিস্তারিত জবাব এখানে রয়েছে। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এখন আর কোনো অবস্থায়ই তার বাইরে যাবার প্রয়োজন নাই। সুতরাং এ নবীর পরে কোনো নবী নেই। এ শরীআতের পরে কোন শরীআত নেই। এ শরীআতে যা যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে সত্য ও ইনসাফপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, “সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ। তার বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নেই।”(সূরা আল-আন’আম: ১১৫)
.
(২).কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি এই নীতির ভুল ব্যাখ্যা করে শরিয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা সাব্যস্ত বিধানগুলোতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। তারা ইসলামকে নমনীয় করার নামে এমন বিষয়েও ছাড় দিতে চায়, যার উপর ধর্মীয় বিশেষজ্ঞগণ প্রাচীনকাল থেকেই (ইজমা) একমত আছেন। কিন্তু তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে মূলত “ফাতওয়ার” পরিবর্তন সম্পর্কে বলা হয়েছে, “শরিয়তের স্থায়ী বিধান” সম্পর্কে নয়। এই দুইয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি তথা ফাতওয়া এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ইজতিহাদের সুযোগ থাকে এবং বাস্তবতার নিরিখে কিছু পরিবর্তন সম্ভব হয়। তাই, যুগ ও পরিবেশভেদে ফাতওয়া ভিন্ন হতে পারে, তবে ইসলামের মৌলিক বিধান কখনো পরিবর্তন হবে না।
.
সৌদি আরবের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৮৯ হি.] বলেন:
وحكم الله ورسوله لا يختلف في ذاته باختلاف الأزمان ، وتطور الأحوال ، وتجدد الحوادث ؛ فإنه ما من قضية ، كائنة ما كانت ، إلا وحكمها في كتاب الله تعالى ، وسنَّة رسوله صلى الله عليه وسلم ، نصّاً أو ظاهراً أو استنباطاً أو غير ذلك ، علِم ذلك مَن علمهُ ، وجهله من جهله ، وليس معنى ما ذكره العلماء من ” تغير الفتوى بتغير الأحوال ” : ما ظنه من قَلَّ نصيبهم – أو عُدم – من معرفة مدارك الأحكام وعِلَلها ، حيث ظنوا أن معنى ذلك بحسب ما يلائم إراداتهم الشهوانية البهيمية ، وأغراضهم الدنيوية ، وتصوراتهم الخاطئة الوبية ، ولهذا تجدهم يحامون عليها ، ويجعلون النصوص تابعة لها ، منقادة إليها ، مهما أمكنهم ، فيحرفون لذلك الكلِم عن مواضعه ، وحينئذ معنى ” تغير الفتوى بتغير الأحوال والأزمان ” : مراد العلماء منه : ما كان مستصْحَبة فيه الأصول الشرعية ، والعلل المرعية ، والمصالح التي جنسها مراد لله تعالى ، ورسوله صلى الله عليه وسلم .
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর বিধান কোনো যুগের পরিবর্তনে বা নতুন কোনো ঘটনার আবির্ভাবে অথবা পরিস্থিতি জটিলতার কারণে নিজ মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয় না। প্রতিটি বিষয়ের বিধান কুরআন ও সুন্নাহতে কোনো না কোনোভাবে বিদ্যমান তা সরাসরি হোক, সুস্পষ্ট ইঙ্গিতে হোক, অথবা বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে নির্ধারিত হোক। কেউ এ জ্ঞান অর্জন করলে তা উপলব্ধি করতে পারে, আর যে তা জানে না, সে অজ্ঞতার মধ্যেই থেকে যায়। তবে কিছু লোক, যারা শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখে না বা একেবারেই জানে না, তারা মনে করে যে, “ফতোয়ার পরিবর্তন পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে” মানে হলো, শরিয়তের বিধানকে তাদের ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি ও ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে। তারা ধর্মকে তাদের দুনিয়াবি স্বার্থ ও ভুল ধারণার সাথে মানানসই করতে চাই এবং কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করতে চাই। তারা যতটা সম্ভব ধর্মের বক্তব্যকে নিজেদের মত অনুযায়ী টেনে নেয়, ফলে তারা আল্লাহর বাণীকে তার যথাযথ স্থান থেকে সরিয়ে দেয়। সুতরাং, “ফতোয়ার পরিবর্তন স্থান ও কালের ভিন্নতার কারণে হয়” এই কথার প্রকৃত অর্থ হলো, এটি কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য যখন তা শরিয়তের মূলনীতি, যথাযথ কারণ ও ইসলামের স্বীকৃত কল্যাণমূলক উদ্দেশ্যগুলোর ভিত্তিতে করা হয় যেসব কল্যাণমূলক উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর দ্বারা নির্ধারিত।”(শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীমের ফতোয়া সংকলন”খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ২৮৮-২৮৯) ।
.
(৩).ওহী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধানগুলোর পরিবর্তন সম্ভব বলে দাবি করা মূলত দ্বীনকে বিকৃত করার নামান্তর। এটি আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করার দরজা খুলে দেয় এবং নবী করিম (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর যেখানে শরিয়তের বিধান পূর্ণতা পেয়েছে, সেখানে নতুন করে ‘নাসখ’ (রহিতকরণ) এর ধারণাকে বৈধতা দেওয়ার শামিল। এটা মনে রাখা জরুরি যে ইজমা (সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) নিজেও শরিয়তের সুস্পষ্ট কোনো বিধানকে রদ করতে পারে না, যদি না তা কুরআন-সুন্নাহর সুদৃঢ় দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। সুতরাং এ ধরনের মতবাদ গ্রহণ করা আসলে শরিয়তকে নিজ খেয়াল-খুশির মত পরিবর্তন করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:
وكنا نتأول كلام هؤلاء على أن مرادهم أن ” الإجماع ” يدل على نص ناسخ ، فوجدنا من ذُكر عنهم : أنهم يجعلون الإجماع نفسه ناسخاً ! فإن كانوا أرادوا ذلك : فهذا قول يجوِّز تبديل المسلمين دينَهم بعد نبيِّهم ، كما تقول النصارى مِن : أن المسيح سوَّغ لعلمائهم أن يحرِّموا ما رأوا تحريمه مصلحة ، ويحلوا ما رأوا تحليله مصلحة ، وليس هذا دين المسلمين ، ولا كان الصحابة يسوِّغون ذلك لأنفسهم ، ومَن اعتقد في الصحابة أنهم كانوا يستحلون ذلك : فإنه يستتاب ، كما يستتاب أمثاله ، ولكن يجوز أن يجتهد الحاكم ، والمفتي ، فيصيب ، فيكون له أجران ، ويخطئ ، فيكون له أجر واحد .
“আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম যে এসব লোক যখন “ইজমা” (ঐক্যমত্য) সম্পর্কে কথা বলে তখন তারা বোঝাতে চায় যে, এটি কোন পূর্ববর্তী বিধানকে রহিত করার জন্য কুরআন বা সুন্নাহর কোনো স্পষ্ট দলিলের ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু পরে আমরা দেখলাম যে তারা আসলে “ইজমা”কেই সরাসরি পূর্ববর্তী বিধান বাতিলকারী (নাসিখ) হিসেবে গ্রহণ করে! যদি তারা সত্যিই এ কথা বলে থাকে তাহলে এটি এমন এক মতবাদ, যা মুসলমানদের জন্য তাদের নবী (ﷺ)-এর পরে দ্বীন পরিবর্তন করার সুযোগ সৃষ্টি করে, ঠিক যেমন খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, ঈসা (আ.) তাদের ধর্মীয় পণ্ডিতদের এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তারা যখন যা কল্যাণকর মনে করবে, তা বৈধ বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু এটা মুসলমানদের ধর্ম নয়! সাহাবিরাও কখনো এ ধরনের ক্ষমতা নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেননি।যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, সাহাবিরা তাদের ইচ্ছামতো বিধান পরিবর্তন করতেন, তাকে অবশ্যই তওবা করতে বলা হবে, ঠিক যেমন এ ধরনের অন্যদেরও তওবা করতে বলা হয়। তবে, বিচারক ও মুজতাহিদ ইজতিহাদের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যদি তারা সঠিক হন, তবে দ্বিগুণ সওয়াব পাবেন; আর যদি ভুল করেন, তবে অন্তত এক সওয়াব পাবেন।”[মাজমু আল-ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩৩; পৃষ্ঠা: ৯৪] এটি ইসলামী শরিয়তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য ও তার চূড়ান্ত বিধানের একটি অনন্য দিক।
.
ইমাম আশ-শাতিবি (রাহিমাহুল্লাহ) শরিয়তের চূড়ান্ত বিধানের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন:الثبوت من غير زوال ، فلذلك لا تجد فيها بعد كمالها نسخاً ، ولا تخصيصاً لعمومها ، ولا تقييداً لإطلاقها ، ولا رفعاً لحكم من أحكامها ، لا بحسب عموم المكلفين ، ولا بحسب خصوص بعضهم ، ولا بحسب زمان دون زمان ، ولا حال دون حال ، بل ما أثبت سبباً : فهو سبب أبداً لا يرتفع ، وما كان شرطاً : فهو أبداً شرط ، وما كان واجباً : فهو واجب أبداً ، أو مندوباً : فمندوب ، وهكذا جميع الأحكام ، فلا زوال لها ، ولا تبدل ، ولو فُرض بقاء التكليف إلى غير نهاية : لكانت أحكامها كذلك “শরিয়তের বিধান স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। একবার পরিপূর্ণ হওয়ার পর এতে আর কোনো রহিতকরণ (নাসখ), সাধারণ বিধানের কোনো বিশেষীকরণ (তাখসিস), মুক্ত বিধানের কোনো সীমাবদ্ধতা (তাকইদ) বা কোনো বিধান বাতিল হওয়া সম্ভব নয়। তা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য হোক, কোন নির্দিষ্ট জাতির জন্য হোক কিংবা কোন নির্দিষ্ট সময় বা অবস্থার জন্য হোক সব ক্ষেত্রেই এটি চিরস্থায়ী। যা কোন বিষয়ে কারণ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে, তা চিরকাল কারণই থাকবে; যা কোন বিষয়ে শর্ত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে, তা চিরকাল শর্তই থাকবে। যা কোন সময়ে বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব) ছিল, তা চিরকাল ওয়াজিব থাকবে; যা সুপারিশকৃত (মুস্তাহাব) ছিল, তা চিরকাল মুস্তাহাব থাকবে। শরিয়তের সব বিধান এমনই স্থায়ী, কোনো পরিবর্তন বা বিলোপের সুযোগ নেই। যদি কল্পনা করা হয় যে, মানুষের ওপর চিরকাল শরিয়তের দায়িত্ব (তাকলিফ) থাকবে, তবে শরিয়তের বিধানও সেই একইভাবে চিরকাল অপরিবর্তিত থাকবে।”(আল-মাওয়াফাকাত, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৯-১১০)
.
(৪).এই বক্তব্যের মূলত দুটি দিক রয়েছে:
.
(ক) পরিবর্তন কেবল ফাতওয়ার ক্ষেত্রে হয়, কিন্তু দলিল দ্বারা সাব্যস্ত শরিয়তের বিধানে কোনো পরিবর্তন আসে না।
.
(খ) ফাতওয়ার এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো সময়, স্থান ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রীতি ও সংস্কৃতির পার্থক্য।
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] এই দু’টি বিষয় তার বক্তব্যে চমৎকারভাবে বলেছেন: “ফতোয়ার পরিবর্তন ও ভিন্নতা সময়, স্থান,পরিস্থিতি, উদ্দেশ্য এবং প্রথাগত রীতির পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে।” তিনি তাঁর মূল্যবান গ্রন্থ “ই’লামুল মুওয়াক্কিইন”৩/৩-এর পর) অংশে এ বিষয়ে বহু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।
.
আমরা এর কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করছি:
(১).হারানো জিনিস (লুকাতা): এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক সময় থেকে অন্য সময়ে এর বিধান পরিবর্তিত হতে পারে। কী পরিমাণ মূল্যবান হলে তা তুলে নেওয়া এবং মালিকানা গ্রহণ করা যাবে, তা নির্ধারণে পার্থক্য হয়। এমনকি একই দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় যেমন শহর ও গ্রামে, এর বিধান আলাদা হতে পারে। আর বিভিন্ন যুগ ও অঞ্চলে এর বিধান পরিবর্তিত হতে পারে।
.
(২).যাকাতুল ফিতর: নবী (ﷺ) এটি নির্ধারণ করেছিলেন খাদ্যসামগ্রী হিসেবে, যা এক সা’ দেওয়া হবে। হাদিসে “যব”, “খেজুর” এবং “শুষ্ক দুধ” (ইক্বিত) উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অনেক দেশে এগুলো সাধারণ খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। যব এখন পশুখাদ্য, খেজুর বিলাসিতার অংশ, আর ইক্বিত খুব কম মানুষ খায়। তাই উলামারা প্রতিটি দেশের প্রচলিত প্রধান খাদ্যের ভিত্তিতে ফিতরা নির্ধারণ করেন কোথাও চাল, কোথাও ভুট্টা, আবার কোথাও অন্য কিছু। এখানে শরিয়তের মূল বিধান স্থির ও অপরিবর্তনীয়। যেমন যাকাতুল ফিতর প্রদান করা অবশ্যই ফরজ এবং এর নির্ধারিত পরিমাণও নির্দিষ্ট। তবে এর মধ্যে পরিবর্তন আসে মূলত প্রদানযোগ্য খাদ্যের ধরনে, যা স্থান ও সময়ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। এ ধরনের উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যায় তালাক, বিবাহ, শপথ, এছাড়াও শরিয়তের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে। এই প্রসঙ্গে
.
ইমাম আল-কারাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:فمهما تجدد في العُرف : اعتبره ، ومهما سقط : أسقطه ، ولا تجمد على المسطور في الكتب طول عمرك ، بل إذا جاءك رجل من غير أهل إقليمك يستفتيك : لا تُجْرِه على عرف بلدك ، واسأله عن عرف بلده ، وأَجْرِه عليه ، وأفته به دون عرف بلدك ، ودون المقرر في كتبك ، فهذا هو الحق الواضح .“সামাজিক রীতিনীতিতে যা কিছু নতুনভাবে চালু হয়, তা গ্রহণ করতে হবে। আর যা কিছু অচল বা বিলুপ্ত হয়ে যায়, তা পরিত্যাগ করতে হবে। কিতাবসমূহে যা লেখা আছে,তাতে স্থির হয়ে থাকা কোনো সমাধান নয়। যদি অন্য এলাকার কেউ ফাতওয়ার জন্য আসে, তাহলে তাকে তোমার নিজের এলাকার রীতি অনুসারে বা কিতাবের বর্ণিত তথ্যের ভিত্তিতে ফাতওয়া দেওয়া উচিত নয়। বরং তার এলাকার রীতি নীতির ব্যাপারে জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ফতোয়া দিতে হবে।এটিই সঠিক পথ।” তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন ; والجمود على المنقولات أبداً : ضلال في الدِّين ، وجهل بمقاصد علماء المسلمين ، والسلف الماضين ، وعلى هذه القاعدة تتخرج أيمان الطلاق ، والعتاق ، وجميع الصرائح والكنايات ، فقد يصير الصريح كناية فيفتقر إلى النية ، وقد تصير الكناية صريحا فتستغني عن النية “চিরকাল শুধু পূর্ববর্তী মনীষীদের লেখা অনুসরণ করাই যথেষ্ট নয়। এভাবে চললে দ্বীনের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং মুসলিম স্কলারদের ও সালাফদের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ পাবে। এই মূলনীতির ভিত্তিতেই তালাকের শপথ, দাসমুক্তি এবং সকল স্পষ্ট ও অস্পষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দের অর্থ নির্ধারিত হয়। কারণ, কখনো কোনো স্পষ্ট শব্দ অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে নিয়তের প্রয়োজন হয়। আবার কখনো কোনো অস্পষ্ট শব্দ স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে নিয়তের প্রয়োজন পড়ে না।”(আল-ফুরুক; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩২১)
.
আমাদের ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) এই সূক্ষ্ম ও গভীর ফিকহের প্রশংসা করে বলেন উপরোক্ত বক্তব্য উল্লেখ করার পর:وهذا محض الفقه ، ومَن أفتى الناس بمجرد المنقول في الكتب على اختلاف عُرفهم ، وعوائدهم ، وأزمنتهم ، وأحوالهم ، وقرائن أحوالهم : فقد ضلَّ ، وأضل ، وكانت جنايته على الدِّين أعظم من جناية مَن طبَّب الناس كلهم على اختلاف بلادهم ، وعوائدهم ، وأزمنتهم ، وطبائعهم ، بما في كتابٍ من كتب الطب على أبدانهم ، بل هذا الطبيب الجاهل ، وهذا المفتي الجاهل : أضر ما يكونان على أديان الناس ، وأبدانهم ، والله المستعان “এটাই খাঁটি ও পরিপূর্ণ ফিকহ। যে ব্যক্তি শুধু কিতাবের বর্ণিত বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে মানুষের মাঝে ফাতওয়া প্রদান করে, অথচ তাদের সামাজিক রীতি, অভ্যাস,যুগের পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বাস্তব প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে না, সে নিজেই পথভ্রষ্ট এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করছে। তার এই গাফিলতির কারণে দ্বীনের ওপর যে ক্ষতি হয়, তা এমন এক অজ্ঞ চিকিৎসকের ক্ষতির চেয়েও ভয়ংকর, যে একটি সাধারণ চিকিৎসা বই দেখে সবার জন্য একই চিকিৎসা নির্ধারণ করে, অথচ তাদের দেশ, অভ্যাস, সময় ও শারীরিক প্রকৃতি বিবেচনা করে না। বরং এ ধরনের অজ্ঞ চিকিৎসক ও অজ্ঞ মুফতি উভয়ে মানুষের ধর্ম ও স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। “আল্লাহই সহায়ক।”( ইবনু কাইয়ুম; ই’লামুল মুওয়াক্কিইন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭৮)
.
কিছু বিদ্বান এই মূলনীতিটি এইভাবে প্রকাশ করেন: “সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু বিধানও পরিবর্তিত হয়।” এটি মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ-এর ৩৯ নাম্বার ধারায় এবং ইমাম আল-জারকা’র শরহুল কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাহ’র ২২৭ পৃ.-তেও উল্লেখ আছে। এই মূলনীতি মূলত (আল আ’দাতু মুহকামাহ অর্থাৎ প্রচলিত রীতি (উরফ) নির্ধারক হয়) এই বৃহৎ মূলনীতির একটি শাখা। তবে এখানে “বিধান” বলতে শুধুমাত্র সেই বিধান বোঝানো হয়েছে যা عرف (প্রচলিত রীতি) এবং عادات (প্রথা)-এর ওপর নির্ভরশীল। স্থান, কাল ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে শুধুমাত্র এই বিধানগুলো পরিবর্তিত হতে পারে। মাজাল্লাতুল আহকাম এর ব্যাখ্যা দুরারুল হুক্কাম” গ্রন্থে বলা হয়েছে:
( إن الأحكام التي تتغير بتغير الأزمان هي الأحكام المستندة على العرف والعادة ; لأنه بتغير الأزمان تتغير احتياجات الناس , وبناء على هذا التغير يتبدل أيضا العرف والعادة وبتغير العرف والعادة تتغير الأحكام حسبما أوضحنا آنفا , بخلاف الأحكام المستندة على الأدلة الشرعية التي لم تبن على العرف والعادة فإنها لا تتغير . مثال ذلك : جزاء القاتل العمد القتل . فهذا الحكم الشرعي الذي لم يستند على العرف والعادة لا يتغير بتغير الأزمان , أما الذي يتغير بتغير الأزمان من الأحكام , فإنما هي المبنية على العرف والعادة , كما قلنا ,
وإليك الأمثلة : كان عند الفقهاء المتقدمين أنه إذا اشترى أحد دارا اكتفى برؤية بعض بيوتها[غرفها] , وعند المتأخرين لا بد من رؤية كل بيت منها على حدته , وهذا الاختلاف ليس مستندا إلى دليل , بل هو ناشئ عن اختلاف العرف والعادة – في أمر الإنشاء والبناء , وذلك أن العادة قديما في إنشاء الدور وبنائها أن تكون جميع بيوتها متساوية وعلى طراز واحد , فكانت على هذا رؤية بعض البيوت تغني عن رؤية سائرها , وأما في هذا العصر فإذ جرت العادة بأن الدار الواحدة تكون بيوتها مختلفة في الشكل والحجم لزم عند البيع رؤية كل منها على الانفراد)
“যে বিধানসমূহ সময়ের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয় তা মূলত عرف (প্রচলিত রীতি) ও عادات (প্রথা)-এর ওপর নির্ভরশীল। কারণ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজন বদলায়। সেই অনুযায়ী عرف ও عاداتও পরিবর্তিত হয়। ফলে এসব পরিবর্তনের কারণে কিছু বিধানও পরিবর্তিত হয়। তবে যে বিধানগুলো সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট দলিল দ্বারা সাব্যস্ত এবং عرف বা عادات এর ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়নি, সেগুলো কখনো পরিবর্তিত হয় না। উদাহরণ স্বরূপ: ইচ্ছাকৃত খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এটি শরিয়তের একটি সাব্যস্ত বিধান, যা عرف বা عادات এর ওপর নির্ভর করে না। তাই এটি কখনো পরিবর্তিত হবে না। কিন্তু যে বিধান عرف ও عادات এর ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, তা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।”(শাইখ আলী হায়দার; দুরারুল হুক্কাম; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৭; অনুরূপ বর্ণনা আছে ‘শরহুল মাজাল্লাতুল আহকামে; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৬)
.
এখন চলুন একটি বাস্তব উদাহরণ দেখি: জারকা (রাহিমাহুল্লাহ) এই মূলনীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে লিখেছেন: (لما ندرت العدالة وعزت في هذه الأزمان قالوا بقبول شهادة الأمثل فالأمثل والأقل فجورا فالأقل …وجوزوا تحليف الشهود عند إلحاح الخصم ، وإذا رأى الحاكم ذلك؛ لفساد الزمان) “যখন এই যুগে ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীদের পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে, তখন ফকিহগণ মত দিয়েছেন যে, সাক্ষ্য গ্রহণে সর্বোত্তম চরিত্রের ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যদি এমন কেউ না পাওয়া যায়, তাহলে অপেক্ষাকৃত কম পাপী ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে এবং বিচারকের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিপক্ষের জোরালো অনুরোধ থাকলে সাক্ষীদের শপথ করিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি রয়েছে। কেননা সমাজের নৈতিকতা ও পরিবেশের অবনতি হয়েছে।”(শারহুল কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাহ,পৃষ্ঠা: ২২৯)
.
সময় ও স্থানভেদে ফাতওয়া পরিবর্তনের প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ আল-যুহাইলি সতর্ক করে বলেন:“শরিয়তের মূলনীতি হলো, বিধানসমূহ স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। তাই এখানে ‘বিধান’ (أحكام) শব্দটি সর্বজনীন অর্থে ব্যবহৃত হয়নি।” তিনি আরও যোগ করেন:“এই মূলনীতি একটি ব্যতিক্রমী ও বিশেষত অবস্থা বোঝায়। তবে এটিও স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে:
1- إن الأحكام الأساسية الثابتة في القرآن والسنة والتي جاءت الشريعة لتأسيسها بنصوصها الأصلية : الآمرة والناهية، كحرمة الظلم ، وحرمة الزنى والربا، وشرب الخمر والسرقة، وكوجوب التراضي في العقد ، ووجوب قمع الجرائم وحماية الحقوق ، فهذه لا تتبدل بتبدل الزمان ، بل هي أصول جاءت بها الشريعة لإصلاح الزمان والأجيال ، وتتغير وسائلها فقط .
2- إن أركان الإسلام وما علم من الدين بالضرورة لا يتغير ولا يتبدل ، ويبقى ثابتا كما ورد ، وكما كان في العصر الأول لأنها لا تقبل التبديل والتغيير.
3- إن جميع الأحكام التعبدية التي لا مجال للرأي فيها ، ولا للاجتهاد، لا تقبل التغيير ولا التبديل بتبدل الأزمان والأماكن والبلدان والأشخاص.
4- إن أمور العقيدة أيضا ثابتة لا تتغير ولا تتبدل ولا تقبل الاجتهاد، وهي ثابتة منذ نزولها ومن عهد الأنبياء والرسل السابقين ، حتى تقوم الساعة ، ولا تتغير بتغير الأزمان)
(১).যেসব মৌলিক বিধানগুলো কুরআন ও সুন্নায় স্থায়ীভাবে নির্ধারিত রয়েছে এবং শরিয়ত যেগুলোকে স্পষ্ট আদেশ ও নিষেধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেমন: জুলুম নিষিদ্ধ করা, ব্যভিচার, সুদ, মদপান, চুরি হারাম হওয়া; চুক্তিতে পারস্পরিক সম্মতির আবশ্যকতা; অপরাধ দমন ও অধিকার সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা। এসব বিধান সময়ের পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয় না। বরং এগুলো এমন মৌলিক নীতিমালা, যা যুগে যুগে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। শুধুমাত্র এগুলোর প্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু মূল বিধান অপরিবর্তনীয়।
.
(২).ইসলামের স্তম্ভসমূহ এবং দ্বীনের অপরিহার্য বিষয়সমূহ’ (ما عُلِمَ من الدين بالضرورة) যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য জানা জরুরি সেগুলো অপরিবর্তনীয়। প্রথম যুগে যেমন ছিল, তেমনই থাকবে, এবং এগুলোর পরিবর্তন বা বিকৃতির কোনো সুযোগ নেই।
.
(৩).যেসব বিধান সরাসরি ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত এবং যেখানে মতামত বা ইজতিহাদের অবকাশ/সুযোগ নেই সেগুলো সময়, স্থান, সমাজ বা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হবে না।
.
(৪).আক্বীদা বা বিশ্বাস সম্পর্কিত বিষয়সমূহও চিরস্থায়ী, এগুলোর কোনো পরিবর্তন নেই এবং এগুলোর ব্যাপারে ইজতিহাদেরও সুযোগ নেই। এগুলো প্রথম নবীদের যুগ থেকে শুরু হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। সময়ের পরিবর্তন এগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে না।”(ড. মুহাম্মদ আল-যুহাইলি; আল-কাওয়ায়েদ আল-ফিকহিয়্যাহ আলা আল-মাযহাব আল-হানাফী ওয়া আশ-শাফি’ই” পৃষ্ঠা ৩১৯; আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩০৬৮৯)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: সময়, স্থান এবং ব্যক্তির অবস্থার পার্থক্যের কারণে কি ফাতওয়া ভিন্ন হতে পারে? একই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলেও, জিজ্ঞাসাকারীর অবস্থার ভিন্নতার কারণে কি ফাতওয়া ভিন্ন হতে পারে?
উত্তরে শাইখ বলেন:
مثل ما تقدم، تختلف بحسب أحوال البلد، وظروفها، واصطلاحاتها، وأعرافها، حكم الله واحد، حكم الله واحد لا يتغير الحكم، لا يكون الشيء محرمًا في زمان، ومباحًا في زمان، لا، الحكم واحد، المحرم محرم، والمباح مباح، والواجب واجب، والسنة سنة، والمكروه مكروه، لكن يتغير ظروف الفتوى، وما ينبغي أن تطبق عليه. فقد يكون اصطلاح قوم غير اصطلاح الآخرين، فيظن اصطلاحهم مثل اصطلاح الآخرين الذين في مصر، أو في الشام، وهو في بلد أخرى ليست أعرافهم، ولا اصطلاحاتهم في كلماتهم مثل أولئك، فليس عرف أهل الرياض مثلًا، أو أهل بيشة، أو أهل أبها مثل عرف أهل مصر، وأهل الشام في مسائل متعددة، فقد يخطؤون في فهم الكلام؛ فيظن أن مراد هؤلاء هو مراد هؤلاء، وليس الأمر كذلك، فيخطئ من جهة عدم فهم المراد، وعدم معرفة قصد هؤلاء، وقصد هؤلاء، فلا ينطبق الحكم على الوجه الشرعي.فالبصيرة في أحوال الناس، وأعرافهم، واصطلاحاتهم، وما يريدون بكلامهم أمر لا بد منه في حق المفتي كما تقدم، ومثل إنكار المنكر، إنكار المنكر واجب، والأمر بالمعروف واجب، لكن تختلف الأحوال في إنكار المنكر بالنسبة إلى ما يترتب عليه، فقد يكون في بعض الأحيان، أو بالنسبة إلى بعض الناس إذا أنكرت عليه المنكر؛ قد يترتب عليه منكر أكبر، وشر أعظم، فحينئذ تترك إنكاره، لا لأنه غير منكر، بل هو منكر، لكن تترك إنكاره لما قد يترتب عليه مما هو أنكر، وأشد، وقد يترتب على إنكار المنكر منكر مثله؛ فيحار الآمر، والناهي، هل ينكره، أو لا ينكره؟! لأنه يترتب عليه مثله، فينظر، ويتأمل كيف ينكر المنكر هذا.
فالحاصل: أن الأشياء قد يترتب عليها أمور لا لأن إنكار المنكر ليس بواجب، بل هو واجب، لكن قد يتوقف عن إنكاره لما يترتب عليه من شر أكبر، أو شر مماثل، ومما يقرب هذا ما جرى للنبي ﷺ وإن كان غير منكر، لكن مما يقرب هذا المعنى، النبي ﷺ قال لعائشة -رضي الله عنها-: لولا أن قومك حديثو عهد بكفر؛ لنقضت الكعبة، وجعلتها على قواعد إبراهيم، وجعلت لها بابين.فترك نقضها، وتنفيذ ما قال -عليه الصلاة والسلام- خوفًا من أن تنكر قلوب الناس ذلك، فترك هذا الخير، وهذه المصلحة؛ خوفًا من شر أكبر، يربو على هذه المصلحة، وهذا يقع كثيرًا في مسائل متعددة.
“ফাতওয়া পরিবর্তনের এই নীতির মূল ব্যাখ্যা আগেও দেওয়া হয়েছে। এটি নির্ভর করে দেশের অবস্থা, সামাজিক ও পরিবেশগত পরিস্থিতি, পরিভাষা ও প্রথা/রীতিনীতির ভিন্নতা ও সংস্কৃতির ওপর। তবে মনে রাখতে হবে,আল্লাহর বিধান অপরিবর্তনীয়, তা পরিবর্তন হয় না।”কোন বিধান এক যুগে হারাম আর অন্য যুগে হালাল হতে পারে না। হারাম সর্বদা হারাম, হালাল সর্বদা হালাল। যা ফরজ, তা চিরকাল ফরজ; যা সুন্নত, তা সুন্নতই থাকে। অপছন্দনীয় বা মাকরূহ বিষয়গুলোও পরিবর্তিত হয় না। তবে ফাতওয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতির বিবেচনা করা হয় এবং সে অনুযায়ী এর প্রয়োগ নির্ধারিত হয়। এক জাতির প্রচলিত পরিভাষা (অর্থ বা ব্যবহার) অন্য জাতির পরিভাষার মতো নাও হতে পারে। কেউ যদি মনে করে যে, এক দেশের প্রচলিত শব্দের অর্থ অন্য দেশের মতোই, তবে এটি ভুল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রিয়াদ, বিশাহ বা আভা অঞ্চলের মানুষের রীতি ও পরিভাষা মিসর ও শামের মানুষের মতো নয়। ফলে, কোনো বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে। মানুষ কথা বলার সময় কী বোঝাতে চায়, তা বুঝতে ব্যর্থ হলে, ফাতওয়ার প্রয়োগেও ভুল হতে পারে।সঠিক ফাতওয়া দেওয়ার জন্য, মানুষের অবস্থা, সামাজিক রীতিনীতি ও পরিভাষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। একইভাবে, খারাপ কাজ প্রতিহত করাও জরুরি আর ভালো কাজের আদেশ করাও ফরজ। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অসৎ কাজ প্রতিরোধ করতে গিয়ে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। যদি কোনো ভুল কাজের প্রতিবাদ করলে তা আরও ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই অবস্থায় প্রতিবাদ না করাই উত্তম। এর অর্থ এই নয় যে, সেই কাজ ভুল নয়; বরং বৃহত্তর ক্ষতি এড়ানোর জন্য সেটি সাময়িকভাবে উপেক্ষা করা হয়।কিছু ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি আসে, যেখানে কোনো ভুল কাজের প্রতিবাদ করলে ততটাই বড় আরেকটি ভুল ঘটতে পারে। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংশয়ে পড়ে। তিনি কি প্রতিবাদ করবেন, নাকি করবেন না? এ অবস্থায় ভালোভাবে চিন্তা করা দরকার, কীভাবে সেই ভুল কাজের প্রতিবাদ করা উচিত, যাতে ক্ষতির পরিবর্তে উপকারই হয়।
ফলকথা: কোনো খারাপ কাজ প্রতিহত করা ইসলামের মৌলিক দায়িত্ব। তবে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, যেখানে অসৎ কাজের প্রতিবাদ করলে আরও ভয়াবহ বিপদ বা সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। তখন সাময়িকভাবে সেই প্রতিবাদ থেকে বিরত থাকা হয়, যদিও এটি মূলত একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ)-এর একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়, যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। যদিও এটি সরাসরি অসৎ কাজের উদাহরণ নয়, তবে বিষয়টি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একদিন তিনি আয়েশা (রাযি.)-কে বলেছিলেন: “যদি তোমার সম্প্রদায় কেবল নতুন ইসলাম গ্রহণকারী না হতো, তাহলে আমি কাবা ধ্বংস করে একে ইবরাহীম (আ.)-এর মূল ভিত্তির ওপর পুনর্নির্মাণ করতাম এবং এতে দুটি দরজা সংযুক্ত করতাম।” অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, মানুষ এটি মেনে নিতে পারবে না এবং তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তিনি এই কল্যাণকর কাজ থেকে বিরত থাকেন, যাতে বড় কোনো ক্ষতি না হয়, যা এই উপকারের চেয়ে বেশি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেখানে কোনো ভালো কাজ করা হলেও তার ফলে আরও বড় অনিষ্ট হতে পারে।”(বিন বায, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফাতওয়া নং২৭২২)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনার আলোকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শরিয়তের বিধিনিষেধের মহান মূলনীতিগুলোতে কোন ধরনের বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। কেউ যদি যুগের পরিবর্তনের অজুহাতে এ মূলনীতিকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে হারাম কোন কর্মকে হালাল করতে চায় যেমন বিকৃত ব্যাখ্যা করে সুদকে বৈধতা দিতে চায়, নারীদের অবাধ মেলামেশাকে অনুমোদন দিতে চায় কিংবা শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তিসমূহ বাতিল করার প্রয়াস চালায় তবে তা হবে সম্পূর্ণভাবে ভুল ও ভ্রান্ত চেষ্টার নামান্তর। এর কারণ এ বিধানগুলো কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং তা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। যে ব্যক্তি এগুলোর পরিবর্তনের চিন্তা করে সে মূলত ইসলামের মূলভিত্তি ও মৌলিক স্বরূপকেই অস্বীকার করতে চায় যা একজন মুসলিমের পক্ষে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ আমাদের সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ নাসরুল্লাহ আল মাদানী (হাফি.)।
লিসান্স মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়,সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate