একটি সুখি দাম্পত্য জীবন
ছোট্ট এই জীবন। অথচ চাহিদা অসীম।
সুখের সংসার গড়ে তোলার জন্য চেষ্টার অন্ত নেই
আমাদের। টাকা ছাড়া নাকি সুখি হওয়া যায়না, আর
টাকা উপার্জনের জন্য হারাম পন্থা অবলম্বন করাতেও
যেন কোন মাথা ব্যথা নেই।
কারন কিভাবে যেন আমাদের মাথায় ঢুকে গেছে,
'ঘরে যখন খাবার না থাকে, ভালবাসা তখন জানালা
দিয়ে পালায়!'
:
সত্যিই কি তাই?
একটু দেখি কেমন ছিল আল্লাহর রাসূল (সা.) ও আয়িশাহ
(রা.) এর সংসার, কতটা বিত্তের মাঝে কাটিয়েছিলেন
সমগ্র জীবন।
একটু দেখি অভাব অনটনের চূড়ান্ত পর্যাযেও তাঁদের
সংসার থেকে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়েছিল
কিনা!
:
আয়িশাহ (রা.) এর ঘরটি ছিল খুবই ছোট। উচ্চতায় মাত্র
৬/৭ হাত। ছাদ ছিল খেজুর পাতার, বৃষ্টির পানি থেকে
রক্ষার জন্য উপরে কম্বল দেয়া ছিল। দরজা ছিল কাঠের।

'আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) যখন নামাযের
সিজদা দিতেন তখন তাঁর হাতের সাথে আমার পা লেগে
যেত, আমি তখন পা গুটিয়ে নিতাম। পা গুটিয়ে নেয়ার
পরই কেবল তিনি সিজদা করতে পারতেন।
. বুখারী, আদব আল মুফরাদ, ১:২৭২

একটি বিছানা, একটি বালিশ, খোরমা খেজুর রাখার
দুটি মটকা, পানির একটি পাত্র এবং পানি করার একটি
পেয়ালা। ছোট ঘরটিতে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা
ছিলনা।
আয়িশাহ (রা.) বলেন, আমরা একাধারে চল্লিশ রাত
কোন আলো বা বাতি ছাড়াই পার করে দিতাম।
. বুখারী, সালাত, ২১(৩৭৫)

আগুন জ্বলত না, কোন খাবার রান্না হত না।
মাঝে মাঝে তিনটি পূর্ণ চাঁদ উঠে যেত তবু খেজুর আর
পানি খেয়েইই কাটিয়ে দিতে হত।
তায়ালিসি, মুসনাদ,২০৭(১৪৭২)

সেদিন এক বাটি যব ছাড়া ঘরে কিছুই ছিল না, এটুকুও এক
ইহুদীর কাছে থেকে রাসূলের তরবারী বন্ধক রেখে ক্রয়
করা হয়েছিল।
. বুখারী, রিকাক, ১৭(৬০৯৪)

যেমন কঠিন ছিল, বিধবা হিসেবে পরবর্তী ৫০বছর এর
কোন ব্যতিক্রম ছিল না। যা পেতেন সবই দান করে
দিতেন। আর নিজে খেজুর আর পানির উপর সন্তুষ্ট
থাকতেন।
তিনি বলেছেন,
রাসূল (সা.) এর ইন্তিকালের পরেও আমি কখনো পেট
ভরে খাবার খাইনি।
বুখারী, জিহাদ, ৮৮(২৭৫৯)

ছিল যে সাহাবিরা আয়িশাহ (রা.) কে 'রাসূলের
প্রিয়তমা' বলে ডাকা শুরু করেছিলেন।
যেদিন আয়িশাহ (রা.) ঘরে থাকার পালা আসত, সেদিন
সাহাবিরা হাদিয়া-তোহফা পাঠাতে পছন্দ করতেন,
কারন ঐদিন রাসূল (রা.) এর হাসিতে অন্যরকম আনন্দ
অনুভব হত।
ইবনে জাওযি, সিফাতুস সফওয়া, ২:৩১

করলেন,
'আপনি কাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন?'
আল্লাহর রাসূল দ্বিধা ছাড়াই বললেন,
'আয়েশা।' (সংক্ষিপ্ত)
বুখারী, হিবা, ৬,৭(২৪৩৫-২৪৪১)

এক মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতেন, ফিরে এসে তিনি
আয়িশাহ (রা.) এর ঘরে আগে যেতেন।
বুখারী, ফাযায়েলুস সাহাবা,৫(৩৪৬২)

(সা.) বললেন, এসো আমরা দৌঁড়াই, দেখি কে আগে
যেতে পারে।
আয়িশাহ (রা.) হালকা পাতলা গড়নের ছিলেন, তাই
স্বাভাবিক ভাবেই তিনি জিতে গেলেন।
কয়েকবছর পর আবারো একই প্রস্তাব দিলেন। ততদিনে
আয়িশাহ (রা.) এর ওজন বেড়ে গিয়েছিল,এবং দৌঁড়ের
গতিও কমে গিয়েছিল। এবার আল্লাহর রাসূল জিতে
গেলেন এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে হেসে বললেন, এ
হচ্ছে ঐদিনের বদলা।
. বুখারী, নিকাহ, ৮৩(৪৮৯৫)

ছিল,পরম ভালবাসা ও মমতায় পরিপূর্ণ। এমন কোন ছোট
থেকেও ছোট সমস্যা হয়নি যা তাঁদের সম্পর্কে ফাটল
ধরাতে পারে। প্রতিদিনই এ ভালবাসা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেত
এবং প্রতিটি ঘটনাই তাঁদের কে আরও নিকটবর্তী করত।
অভাব অনটনের চূড়ান্ত পর্যায়েও এতটুকু অসন্তুষ্ট হননি,
উল্টো কেউ কোন খাবার পাঠালে সন্তুষ্ট চিত্তে তা
দান করে দিয়েছেন অন্যের কষ্টের কথা চিন্তা করে।
আত্মত্যাগের উপর ভিত্তি করে গভীর ভালবাসার বন্ধন
গড়ে উঠেছিল,
এ বন্ধন বর্তমান ও ভবিষ্যতের উপর নির্ভরশীল ছিল না,
বরং তা আখিরাতের অনন্ত পথের দিকেই নিবন্ধ ছিল।
:
জানি হয়ত এ যুগে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা এতটা
দারিদ্রের মাঝে সংসার করতে,
হয়ত সম্ভব হবেনা সামান্য কিছু শুকনো রুটি,খেজুর,পানির
তে সন্তুষ্ট থাকতে, হয়ত সম্ভব হবেনা মহিয়সী উম্মুল
মোমিনীনগণ এবং সাহাবিয়া (রা.) দের পুরোপুরি
অনুসরন করতে।
কিন্তু চেষ্টা তো করা যায়.... অন্তত সেই অনুসরনে
বর্তমান অবস্থার উপর সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করা
No comments:
Post a Comment