Wednesday, December 8, 2021

ইসলাম নাকি বাপ-দাদার ধর্ম

 সংকলকঃ আবূ মুআয সুহাইল বিন সুলতান

নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছেশুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃযারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যেনিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত। (Aali Imraan 3: 19)

… আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলামতোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। … (Al-Maaida 5: 3)

হে ঈমানদারগনতোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (Al-Baqara 2: 208)

যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করেকস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত। (Aali Imraan 3: 85)

তোমরা অনুসরণ করযা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (Surah Al-A’raaf 7:3)

বরং তারা বাপদাদার ধর্মকেই আঁকড়ে ধরত কোন জ্ঞান ছাড়াঃ

তারা বলল হে সালেহইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপদাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ করকিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহবান জানাচ্ছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যেমন মোটেই সায় দিচ্ছে না। (Hud 11: 62)

তাদের পয়গম্বরগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছেযিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের স্রষ্টাতিনি তোমাদেরকে আহবান করেন যাতে তোমাদের কিছু গুনাহ ক্ষমা করেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের সময় দেন তারা বলতঃ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষতোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাওযার এবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত অতএব তোমরা কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর (Ibrahim 14: 10)

যখন তাদেরকে বলা হয় যেআল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এসতখন তারা বলেআমাদের জন্যে তাই যথেষ্টযার উপর আমরা আমাদের বাপদাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে? (Al-Maaida 5: 104)

আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যেসে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেনতখন তারা বলে কখনো নাআমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপদাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো নাজানতো না সরল পথও। (Al-Baqara 2: 170)

তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপদাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি। (Al-Anbiyaa 21: 53)

তিনি (ইব্রাহীমবললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ এবং তোমাদের বাপদাদারাও। (Al-Anbiyaa 21: 54)

তর্ক করতঃ

তারা বলেরহমান আল্লাহ ইচছা না করলে আমরা ওদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তারা কেবল অনুমানে কথা বলে। আমি কি তাদেরকে কোরআনের পূর্বে কোন কিতাব দিয়েছিঅতঃপর তারা তাকে আঁকড়ে রেখেছেবরং তারা বলেআমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত। এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছিতখনই তাদের বিত্তশালীরা বলেছেআমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলছি। সে বলততোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছআমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকিতবুও কি তোমরা তাই বলবেতারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছতা আমরা মানব না। (Az-Zukhruf 43: 20 – 24)

অপবাদ আরোপ করতঃ

তারা বললতুমি কি আমাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে দিতে এসেছ যাতে আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাদেরকেআর যাতে তোমরা দুইজন (মূসা আলাইহিস সালাম ও হারুন আলাইহিস সালাম) এদেশের সর্দারী পেয়ে যেতে পারআমরা তোমাদেরকে কিছুতেই মানব না। (Yunus 10: 78)

যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হয়তখন তারা বলেতোমাদের বাপদাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে চায়। তারা আরও বলেএটা মনগড়া মিথ্যা বৈ নয়। আর কাফেরদের কাছে যখন সত্য আগমন করেতখন তারা বলেএতো এক সুস্পষ্ট যাদু। (Saba 34: 43)

অজুহাত তৈরী করতঃ

তারা যখন কোন মন্দ কাজ করেতখন বলে আমরা বাপদাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ করযা তোমরা জান না। (Al-A’raaf 7: 28)

স্পর্ধা দেখাতঃ

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছ যে আমরা এক আল্লাহর এবাদত করি এবং আমাদের বাপদাদাযাদের পূজা করততাদেরকে ছেড়ে দেইঅতএব নিয়ে আস আমাদের কাছে যাদ্দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছযদি তুমি সত্যবাদী হও। (Al-A’raaf 7: 70)

অথবা বলতে শুরু কর যেঅংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপদাদারা উদ্ভাবন করেছিল আমাদের পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তানসন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করবেনযা পথভ্রষ্টরা করেছে? (Al-A’raaf 7: 173)

উপহাস করতঃ

তারা বললহে শোয়ায়েব (আলাইহিস সালাম) আপনার নামায কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যেআমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপদাদারা যাদের উপাসনা করতঅথবা আমাদের ধনসম্পদে ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকিতা ছেড়ে দেবআপনি তো একজন খাস মহৎ ব্যক্তি ও সৎপথের পথিক। (Hud 11: 87)

তারা দলীল বিহীন আন্দাজ অনুমানের উপর চলতঃ

এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেনতবে না আমরা শিরক করতামনা আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছেএমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। (Al-An’aam 6: 148)

দলীল না থাকলে বাপদাদা বা অধিকাংশের অনুসরণ করা যাবেনাঃ

তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের এবাদত করসেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যেতিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (Yusuf 12: 40)

মহান আল্লাহ বলেনঃ

অতএবতারা যেসবের উপাসনা করে তুমি সে ব্যাপারে কোনরূপ ধোঁকায় পড়বে না। তাদের পূর্ববর্তী বাপদাদারাযেমন পূজা উপাসনা করতএরাও তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু মাত্রও কম না করেই পুরোপুরি দান করবো। (Hud 11: 109)

মহান আল্লাহ পিতাপুত্রের ব্যাপারে এক সুন্দর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেনঃ

(Surah Maryam 19 : 41 – 50)

আপনি এই কিতাবে ইব্রাহীমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদীনবী।

যখন তিনি তার পিতাকে বললেনঃ হে আমার পিতাযে শোনে নাদেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না,তার এবাদত কেন করহে আমার পিতাআমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছেযা তোমার কাছে আসেনিসুতরাং আমার অনুসরণ করআমি তোমাকে সরল পথ দেখাব। হে আমার পিতাশয়তানের এবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।

হে আমার পিতাআমি আশঙ্কা করিদয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবেঅতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে।

পিতা বললঃ যে ইব্রাহীমতুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছযদি তুমি বিরত না হওআমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।

ইব্রাহীম বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোকআমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান। আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত কর তাদেরকেআমি আমার পালনকর্তার এবাদত করব। আশা করিআমার পালনকর্তার এবাদত করে আমি বঞ্চিত হব না।

অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে এবং তার আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত করততাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলেন,তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম। আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সুখ্যাতি।

Sura: Al-Mumtahana 60: 3 – 6

তোমাদের স্বজনপরিজন ও সন্তানসন্ততি কিয়ামতের দিন কোন উপকারে আসবে না। তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন। তোমরা যা করআল্লাহ তা দেখেন।

তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত করতার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তাআমরা তোমারই উপর ভরসা করেছিতোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।

হে আমাদের পালনকর্তাতুমি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা!আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালীপ্রজ্ঞাময়।

তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করতোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়তার জানা উচিত যেআল্লাহ বেপরওয়াপ্রশংসার মালিক।

>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<

No comments:

Post a Comment

Translate