Wednesday, March 27, 2024

সীরাত ১৪ – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে কেন ভালবাসব, কিভাবেই বা ভালবাসব?

 

আমরা মুসলিম মাত্রই জানি প্রিয়নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) কে আমাদের প্রত্যেকেরই ভালবাসা উচিত। আপনি যদি কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন – তোমার জীবনে আদর্শ কে? অনেকেই বলবে – আমার আদর্শ প্রিয়নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)। কিন্তু এই উত্তরের পেছন পেছন অনেক ক্ষেত্রেই দুইধরনের না-বলা জিজ্ঞাসা কাজ করে।

এক – মুখে তো বলছি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে ভালবাসব, কিন্তু এই ভালবাসার পেছনের অনুপ্রেরণা কি? আমাদের আশে-পাশে অনেক স্টারকে আমরা বিভিন্ন কারণে ভালবেসে থাকি। সাকিব-তামিম, মেসি-রোনালদো কে ভালবাসি কারণ তাদের খেলা দেখে আনন্দ পাই, ইলোন মাস্ক-জেফ বেজোকে ভালবাসি কারণ তাদের কথা থেকে জীবনে বড় হওয়ার টিপস পাই – কিন্তু সেই ১৪শ বছর আগের নবী মুহাম্মাদ(সা), যাকে আমি কোনদিন চোখে দেখিনি – তাঁকে ভালবাসার পেছনের অনুপ্রেরণা কি?

আর দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা হলো – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে বলছি তো ভালবাসব, কিন্তু সেই ভালটা বাসব কিভাবে? আমি আমার মা/বাবাকে ভালবাসতে পারি তাদের সেবা করে, তাদের জন্য দু’আ করে; স্বামী/স্ত্রীকে ভালবাসতে পারি তার সাথে গল্প করে, সময় কাটিয়ে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ(ﷺ) তো আমার কাছে ধারে নেই, তাঁকে কিভাবে ভালবাসব? আসুন, প্রশ্ন দুইটির উত্তর খোঁজা যাক।

প্রথম প্রশ্ন- রাসূলুল্লাহ() কে কেন ভালবাসব?

মানব সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নৈতিক সমস্যা। যার পকেটে কানাকড়ি নেই, সেরকম অনেক মানুষ যেমন হিংসা-বিদ্বেষ করে, গীবত করে, সুযোগ পেলে চুরি করতে ছাড়ে না; অন্যদিকে যে লোকের ব্যাঙ্ক ভর্তি কোটি কোটি টাকা আছে – সেও অনেক ক্ষেত্রে অন্যের ঘাড়ের উপর পা দিয়ে আরো উপরে উঠতে চায়, নীতি-দুর্নিতির তোয়াক্কা না করে নিজের লালসার পিছনে ছুটতে থেকে। মানুষের এই ক্রমাগত চাহিদা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে নিজে সুখী হতে হলে, আর আশেপাশের মানুষকে সুখী রাখতে হলে – সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার সেটা হলো নৈতিক গাইডলাইন। আর মহান আল্লাহ ﷻ আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে পাঠিয়েছেন সেই নৈতিক দিকনির্দেশনা দিতে। জীবনে সুখ-শান্তির জন্য যে গাইডলাইন লাগবে – সেই নিঁখুত গাইডলাইন পাওয়া যাবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর কাছ থেকে।

এতো গেল ইহজীবনের সুখের কথা, সাফল্যের কথা। কিন্তু, জীবনের চরম সাফল্য তো এই ৫০-৬০ বছরের জীবনে নয়। চরম সফলতা তো অনন্ত-অসীম জীবনে, তথা পরকালের জীবনে সফল হওয়া। যে ব্যক্তি পরকালে রাসূলুল্লাহর(ﷺ) সান্নিধ্যে থাকতে পারল – সে চরম সফল হল! আর এই সান্নিধ্য পেতে হলে, রাসূলুল্লাহ(সা) কে ভালবাসতে হবে।

এক লোক রাসূলুল্লাহ() এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল – “কেয়ামত কবে হবে?” । রাসূলুল্লাহ () পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন – “(আগে বল) তুমি এর জন্য কি প্রস্তুত করেছ?”

(লোকটা এমন প্রশ্ন করেছিল যেটার উত্তর জেনে তার কিছু আসবে/যাবে না, তাই রাসূলুল্লাহ() তাকে এমন প্রশ্নের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন – যার উত্তর লোকটার কাজে লাগবে। এভাবে রাসূলুল্লাহ() আমাদের শেখালেন, কেউ ভুল ডিরেকশনে কথা বললে তাকে কিভাবে সঠিক ডিরেকশনে নিয়ে আসতে হয়।)

লোকটা জবাবে বলল – “কিছুই না, তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি।”

রাসূলুল্লাহ() বললেন – “(পরকালে) তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি (দুনিয়ায়) ভালবাস।”

আনাস(রা) বলেন – “আমরা সাহাবারা ঐদিনটির মত খুশী আর কোনদিনই হইনি! একারণে আমি ভালবাসি নবী() কে, আবু বকর ও উমারকে। আর আমি আশা রাখি আমার ভালবাসার কারণে আমি পরকালে তাদের সাথে থাকব, যদিও আমার আমল তাদের আমলের সমতুল্য নয়।” (বুখারী ৩৬৮৮)

কাজেই, আমরা যদি ইহকালে ও পরকালে সফল হতে চাই –আল্লাহকে ও তাঁর রাসূল(ﷺ) কে আমাদের ভালবাসতে হবে । কিন্তু, এই ভালবাসার পদ্ধতি কি হবে?   

দ্বিতীয় প্রশ্ন – আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ() কে কিভাবে ভালবাসব?

এই প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা আলে-ইমরানের ৩১ নং আয়াতে দিয়েছেন।

বলুন (হে নবী): “তোমরা যদি আল্লাহকে সত্যিই ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন। আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

কাজেই আমরা যদি দাবী করে থাকি আমরা আল্লাহকে ও তাঁর রাসূলকে (ﷺ) ভালবাসি, আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর রেখে যাওয়া গাইডলাইন। আর, সেই গাইডলাইন বুঝার জন্য আমাদের স্টাডি করতে হবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর জীবনী/সীরাত।  

ইমাম হুসাইন (রা) এর ছেলে আলী বলেন – আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এমনভাবে সীরাত শিক্ষা দিতাম, যেভাবে আমরা কুরআন শিক্ষা দিতাম।

রেফারেন্স:

১) শেইখ ইয়াসির কাদি’র সীরাহ লেকচার – পর্ব ২

২) আনাস(রা) এর হাদিস: https://sunnah.com/bukhari:3688

[মহানবীর মহাজীবন ফেইসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/mohanobir.mohajibon.pbuh) এই লেখাটি পর্ব ১৯ নামে প্রকাশিত হয়েছিল । এই ব্লগে সেই একই লেখা পর্ব ১৪ নামে প্রকাশিত হল। ফেইসবুক পেইজের কিছু ছোট লেখাকে ব্লগে একত্রিত করে প্রকাশ করায় নম্বরের এই ভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এতে পাঠকের অসুবিধা হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ]

No comments:

Post a Comment

Translate